আহমাদুল্লাহ - মতিঝিল, ঢাকা

৪৬৫৩. প্রশ্ন

আমার একটি ফটো স্টুডিও আছে, এর আয় দিয়ে আমার পরিবার চলে। একদিন আমার এক আত্মীয়কে আমাদের বাড়ীতে দাওয়াত দিলে সে বলে, আপনার আয় হারাম, তাই আমি দাওয়াত গ্রহণ করতে পারব না।

জানতে চাই, আমার এ ব্যবসা ও তা থেকে প্রাপ্ত আয় বৈধ কি না?  বৈধ না হলে এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর

প্রচলিত ফটো স্টুডিওগুলোর অধিকাংশ কাজই নাজায়েয। মানুষ সাধারণত শখের বশবর্তী হয়ে ছবি তোলে। বড় বড় ছবি টানানো হয়, বেপর্দা নারীর ছবি তোলা হয়। এসবই নাজায়েয। তাই এ ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ও নাজায়েয। সুতরাং ঐ ব্যক্তির দাওয়াত গ্রহণ না করা ঠিকই হয়েছে। অবশ্য পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং এর চেয়ে ছোট ছবি, যা অফিসিয়াল প্রয়োজনে তোলা হয় তা জায়েয এবং এ থেকে অর্জিত আয়ও জায়েয। কিন্তু স্টুডিওতে এর পরিমাণ খুবই কম। তাই স্টুডিওতে আপনার অধিকাংশ কাজ নাজায়েয এবং অধিকাংশ উপার্জনও নাজায়েয। অতএব আপনার কর্তব্য এ ব্যবসা বাদ দিয়ে অন্য কোনো হালাল ব্যবসা করা। তবে যদি স্টুডিওটি এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারেন যে, তাতে শুধু মানুষের পাসপোর্ট বা স্ট্যাম্প সাইজের প্রয়োজনীয় ছবিই তোলা হবে, যেমন কোনো কোনো ভূমি রেজিষ্ট্রি অফিসে দেখা যায়; তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ কাজ জায়েয হবে এবং এর ইনকামও হালাল হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৮; মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫০; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৬৪

শেয়ার লিংক

পারভেজ - ধানমণ্ডি, ঢাকা

৪৬৫৪. প্রশ্ন

আকীকা করার সময় একটি মেয়ে শিশুর নাম রাখা হয়েছিল ‘শীলা আহমাদ’। নামটি আরবী-বাংলা মিশ্রিত। বাচ্চার অভিভাবক এখন এই ভুল বুঝতে পেরেছে। তারা সম্পূর্ণ আরবী নাম রাখতে চায়। আকীকা করার পর কি আবার নাম পরিবর্তন করা যাবে? আর পরিবর্তন করলেও যেহেতু ডাক নাম শীলা পরিচিত হয়ে গেছে সুতরাং এটি থাকলে কোনো অসুবিধা আছে কি?

উত্তর

আকীকার পরেও প্রয়োজনে নাম পরিবর্তন করা যায়। এতে আকীকার কোনো ক্ষতি হয় না। আর অসুন্দর বা ভুল নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখা সুন্নাহসম্মত কাজ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন (পুরুষ ও নারী) সাহাবীর নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রেখে দিয়েছিলেন।

সহীহ বুখারীসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এ মর্মে একটি অধ্যায়ই রয়েছে-

باب تحويل الاسم إلى اسم هو أحسن منه

‘নাম পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রেখে দেওয়া সংক্রান্ত অধ্যায়।’ এ অধ্যায়ের অধীনে মুহাদ্দিসীনে কেরাম ঐসকল হাদীস জমা করেছেন, যেগুলোতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সাহাবায়ে কেরামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

অতএব প্রশ্নোক্ত  ঐ মেয়েটির বর্তমান নাম পরিবর্তন করে একটি সুন্দর নাম রাখা উত্তম হবে। এক্ষেত্রে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম নির্বাচনের জন্য কোনো আলেমের সহযোগিতা নিতে পারেন। এরপর সামনে থেকে ঐ সুন্দর নামেই তাকে ডাকবেন। পূর্বের নামে ডাকবেন না।

শেয়ার লিংক

আলী হায়দার - সদর, সিলেট

৪৬৫৫. প্রশ্ন

আমার বড় ভাইয়ের শাশুড়ি তার ছেলেদের সাথে ঝগড়া-বিবাদের কারণে আমাদের বাড়িতে চলে আসেন। আমার ভাই তার যাবতীয় ভরণ-পোষণ ও দেখাশুনার দায়িত্ব নেন। এতে তিনি খুশি হয়ে তার যাবতীয় সম্পত্তি ভাইকে মৌখিকভাবে দিয়ে দেন। এবং ভাই চাইলে যে কোনোদিন তা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলেন। (নগদ কোনো অর্থ তার কাছে না থাকলেও রাস্তার পাশে তার একটি জমি রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা) মানুষ কী বলবে এ কারণে ভাই প্রথমে এটাকে তেমন গুরুত্ব দেননি।  পরে তার বারবার বলাতে রাজি হয়ে যান। এবং সামনের মাসে জমি রেজিস্ট্রি করতে যাবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। এমতাবস্থায় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং গত ২৮/০৬/১৮ ঈ. ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর ছেলেরা জমি দিতে নারাজ। জানার বিষয় হল, স্বেচ্ছায় দানকৃত এ জমি আমার ভাইয়ের প্রাপ্য কি না? তিনি যদি জোরপূর্বক জমি নিতে চান তাহলে এতে শরয়ী সমস্যা হবে কি না?

উত্তর

যদি শাশুড়ির জীবদ্দশায় আপনার ভাই ঐ জমির দখল বুঝে না নিয়ে থাকেন তাহলে এই দান কার্যকর হয়নি। এবং এর দ্বারা উক্ত জমিতে আপনার ভাইয়ের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেক্ষেত্রে ঐ মহিলার মৃত্যুর পর তার ছেলে এবং অন্যান্য ওয়ারিসরা মিরাছ হিসাবে উক্ত জমির হক্বদার হবে। এক্ষেত্রে ওয়ারিসরা চাইলে আপনার ভাইকে পুরো জমি বা তার অংশবিশেষ দিতে পারে। আর তাদের মায়ের কথা রক্ষা ও তার খেদমত করার কারণে ছেলেরা মার সম্পত্তি থেকে আপনার ভাইকে যদি কিছু দিয়ে দেয় তবে তা উত্তম হবে। আর যদি শাশুড়ির জীবদ্দশায় আপনার ভাই তার জমিগুলোর দখল বুঝে নিয়ে থাকে তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে এর মালিক আপনার ভাই হবে। ওয়ারিসগণ এক্ষেত্রে উক্ত সম্পদের কোনো অংশ পাবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৫০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৫৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৯০; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪৭১

শেয়ার লিংক

ইদ্রিস হাসান - মাদারিপুর

৪৬৫৬. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির সন্তানরা তার দেখাশোনা করে না এবং তাকে খরচাদিও দেয় না। তাই সে চাচ্ছে তার সম্পদ থেকে সন্তানদেরকে বঞ্চিত করে সমুদয় সম্পত্তি স্ত্রীর নামে লিখে দিতে। এটা জায়েয হবে কি না?

উত্তর

সম্ভাব্য কোনো ওয়ারিসকে বঞ্চিত করে সমুদয় সম্পত্তি কাউকে দিয়ে দেওয়া অবৈধ। সন্তানরা বাবার খোঁজ না নেওয়া ও তাকে না মানা অন্যায়। কিন্তু এ কারণে তাদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া যাবে না।

সন্তানদের কর্তব্য, পিতামাতার দেখাশোনা করা ও খোঁজ-খবর রাখা এবং তাদের অবাধ্য না হওয়া। পিতামাতার অবাধ্যতাকে হাদীসে কবীরা গুনাহ বলা হয়েছে। হযরত আবু বাকরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِر؟ قُلْنَا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ...

আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলে দিব না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই (বলে দিন)। বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া,...। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৭৬)

উল্লেখ্য, মীরাস হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার মৃত্যুপরবর্তী সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি। বান্দার উচিত এতে নিজ থেকে হস্তক্ষেপ না করা এবং এমন কিছু না করা, যাতে তার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী পুরোপুরি বঞ্চিত হয়ে যায়। অবশ্য কখনো কোনো সন্তানের ফাসেকী বা অবাধ্যতা চরম পর্যায়ে চলে গেলে সেক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে ভুক্তভোগী নিজে কোনো ফতোয়া বিভাগে গিয়ে অবস্থা বর্ণনা করে তাদের মাসআলা অনুযায়ী আমল করবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩১৬৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭

শেয়ার লিংক

শিহাব খান - মেজর ঢিলা, সিলেট

৪৬৫৭. প্রশ্ন

বর্তমানে গজল বা নাশীদকে ইসলামী সংগীত বলা হয় এবং এই ইসলামী সংগীতের নামে অনেক শিল্পী সেই সংগীতে মিউজিক ব্যবহার করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অনেক পরিচিত মুখ রয়েছে। এই ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী?

উত্তর

বাদ্য-বাজনা শোনা নাজায়েয। তাই হামদ-নাতের সাথে বাদ্য-বাজনা থাকলে ঐ হামদ-নাত শোনা জায়েয হবে না। এছাড়া হামদ-নাত, গজলের সাথে এটা যুক্ত করা বেয়াদবিও বটে। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। তবে হামদ-নাত, গজল যদি সম্পূর্ণ বাজনা ও মিউজিক মুক্ত হয় এবং তার কথা যদি সহীহ হয়, শরীয়তের কোনো আকীদা বা নির্দেশের পরিপন্থী না হয় তাহলে তা বলা ও শোনা জায়েয।

উল্লেখ্য যে, যারা হামদ-নাত বা ইসলামী ধাঁচের গজল পরিবেশন করবে তাদের দায়িত্ব হল এতে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা এবং গানের সুরে তা না বলা। তদ্রƒপ এসব ক্ষেত্রে অন্যদের পরিভাষা যেমন কনসার্ট, গান ইত্যাদি শব্দও পরিহার করা উচিত।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৯০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৬৯০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৫; ফাতহুল কাদীর ৬/৪৮১; আলবাহরুর রায়েক ৭/৮৮; ইসলাম আওর মূসিকী, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.

শেয়ার লিংক