একদিন বাড়িতে যোহরের নামাযের সময় ওযু করে চামড়ার মোজা পরিধান করি। হঠাৎ ঐদিন রাতেই আমাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হতে হয়। এখন আমি কতদিন মোজার ওপর মাসেহ করতে পারব? মোজা পরিধানের সময় তো মুকীম ছিলাম, পরে সফরে বের হয়েছি।
একদিন বাড়িতে যোহরের নামাযের সময় ওযু করে চামড়ার মোজা পরিধান করি। হঠাৎ ঐদিন রাতেই আমাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হতে হয়। এখন আমি কতদিন মোজার ওপর মাসেহ করতে পারব? মোজা পরিধানের সময় তো মুকীম ছিলাম, পরে সফরে বের হয়েছি।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু মুকীম অবস্থায় মোজা পরার পর মুকীমের জন্য মাসেহের নির্ধারিত সময়সীমা- এক দিন এক রাত পূর্ণ হওয়ার আগেই সফরে বের হয়েছেন, তাই এক্ষেত্রে আপনি মুসাফিরের জন্য মাসেহের সময়সীমা তিন দিন তিন রাত পূর্ণ করতে পারবেন। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মোজা পরিধানের পর প্রথমবার ওযু ভাঙার সময় থেকে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত এর ওপর মাসেহ করতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৭৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ১/৪৫৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৬২; ফাতহুল কাদীর ১/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭৮
আমার হায়েযের সাধারণ সময়সীমা হল প্রতি মাসে সাত দিন। কিন্তু এ মাসে হায়েয শুরু হয়ে দশম দিন পর্যন্ত চলমান থাকে। এগারোতম দিন থেকে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পঁচিশতম দিনের শুরুতে অর্থাৎ চৌদ্দ দিন পর আবার রক্ত আসা শুরু হয়ে দুই দিন চালু থাকে। এরপর আর দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে আমি কতদিন হায়েয গণ্য করব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দশম দিনে রক্ত বন্ধ হওয়ার পর যেহেতু পনের দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই পুনরায় রক্ত দেখা গেছে তাই এক্ষেত্রে আপনার সাধারণ অভ্যাস অনুযায়ী এ মাসে প্রথম যখন রক্ত দেখা গেছে তখন থেকে সাত দিন হায়েয গণ্য হবে। এর অতিরিক্ত দিনগুলো ইস্তেহাযা গণ্য হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অষ্টম দিন থেকে নামায পড়া আপনার ওপর জরুরি ছিল। যদি তখন ফরয গোসল করে উক্ত দিনগুলোতে নামায না পড়ে থাকেন, তাহলে তা কাযা করে নিতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৯০
আমার বাসার ফ্লোর টাইলস করা। অনেক সময় ঘরে বাচ্চারা তার ওপর পেশাব করে দেয়। এক্ষেত্রে তা পবিত্র করার পদ্ধতি কী? টাইলস তো মসৃণ, পানি শুষে না। সুতরাং তা কি পানি দিয়ে ধুতে হবে, না কাপড় দিয়ে মোছাই যথেষ্ট হবে?
উক্ত টাইলসের উপরিভাগ যেহেতু মসৃণ এবং তা পানি শুষে না, তাই তাতে পেশাব লাগলে পবিত্র কাপড় দিয়ে যদি এমনভাবে মুছে নেওয়া হয় যে, তা থেকে নাপাকির চিহ্ন, গন্ধ দূর হয়ে যায় তাহলে তা পাক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পানি দিয়ে ধোয়া জরুরি নয়।
শেয়ার লিংক-শরহু মুখতাসারিল কারখী ১/১৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৮৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৩
অনেক সময় কুরআন তিলাওয়াত চলাকালীন আযান শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কী করণীয়? তিলাওয়াত অব্যহত রাখা উচিত, নাকি তিলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জবাব দেওয়া উচিত?
কুরআন তিলাওয়াতের সময় আযান শুনতে পেলে তিলাওয়াত বন্ধ রেখে আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। তবে এক্ষেত্রে তিলাওয়াত অব্যাহত রাখাও জায়েয আছে।
শেয়ার লিংক-উয়ূনুল মাসয়িল, পৃ. ২২৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৩; আলমুহীতুর রাযাবী ১/২১৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৮
গতকাল চাশতের সময় চার রাকাত নফলের নিয়তে নামায শুরু করি। প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে দরূদ শরীফ পড়ে ফেলি। কিন্তু নামায শেষ করে সাহু সিজদা করা হয়নি। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা না করে নামায শেষ করা কি ঠিক হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছেন। কেননা চার রাকাতবিশিষ্ট সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা ও নফল নামাযের প্রথম বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়া যায়; বরং ফকীহগণ এক্ষেত্রে তাশাহহুদের পর দরূদ ও দুআয়ে মাসূরা পড়া উত্তম বলেছেন। তাই এক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না।
অবশ্য ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযের প্রথম বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
শেয়ার লিংক-আলগায়া, আবুল আব্বাস সারুজী ৪/৩২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৩৩; ফাতহুল কাদীর ১/৩৯৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/১৮২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬; ইমদাদুল আহকাম ১/৬১১
কোনো কোনো মুসল্লীকে দেখা যায়, সিজদা থেকে ওঠার সময় হাত দিয়ে জমিনের ওপর ভরে দিয়ে ওঠেন। আবার অনেক মুসল্লি এমনটি না করে সরাসরি দাঁড়িয়ে যান। জানার বিষয় হল, এই দুটি পদ্ধতির মাঝে কোন্টি উত্তম?
সিজদা থেকে ওঠার ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হল, হাত দিয়ে জমিনের ওপর ভর না দিয়ে সরাসরি দাঁড়িয়ে যাওয়া। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَضُ فِي الصَّلَاةِ عَلَى صُدُورِ قَدَمَيْهِ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে পায়ের পাতার ওপর ভর করে সিজদা থেকে দাঁড়াতেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৮৮
তবে অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওযরবশত হাতের ওপর ভর দিয়ে ওঠা যাবে। হারেস রাহ. হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণনা করেন-
أَنَّهُ كَانَ يَكْرَهُ ذَلِكَ، إِلاَّ أَنْ يَكُونَ شَيْخًا كَبِيرًا أَوْ مَرِيضًا.
বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে তিনি সিজদা থেকে ওঠার সময় হাতের ওপর ভর দেওয়াকে অপছন্দ করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪০১৫
তাই কোনো ওযর না থাকলে সিজদা থেকে ওঠার সময় হাত দিয়ে জমিনের ওপর ভর দিয়ে ওঠা অনুত্তম।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫০৬
গত শনিবার আসর নামাযের আযান হলে জামাতের সাথে নামায আদায়ের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করি। ইকামতের পর নতুনভাবে নামাযের নিয়ত না করেই জামাতে শরীক হয়ে যাই।
এখন আমার জানার বিষয় হল, তাকবীরে তাহরীমার সময় পুনরায় নিয়ত না করার কারণে আমার আসরের নামায কি আদায় হয়েছে?
আপনার উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা নিয়ত মূলত অন্তরের সংকল্প বা ইচ্ছার নাম। আর তা তো আপনার ছিলই। কেননা আপনি আসরের নামায আদায়ের নিয়তেই মসজিদে প্রবেশ করেছেন এবং সে উদ্দেশ্যেই তাকবীরে তাহরীমা বলে নামায শুরু করেছেন। আর নামায সহীহ হওয়ার জন্য এই নিয়তই যথেষ্ট।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৩০, ৩৩০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৯; আননাহরুল ফায়েক ১/১৮৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/১৯৩
আমি একদিন যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ার সময় দ্বিতীয় রাকাতে ফাতেহা ও সূরা মেলানোর পর ভুলক্রমে পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলি এবং সাহু সিজদাও করিনি।
এখন আমার জানার বিষয় হল, পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়ার কারণে আমার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল কি?
না, প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে আপনার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কারণ সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মেলানোর পর পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা না করা ঠিকই হয়েছে। তবে সূরা মেলানোর পর ইচ্ছাকৃত পুনরায় সূরা ফাতেহা পড়বে না।
শেয়ার লিংক-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬০
আমাদের মাদরাসার মসজিদে প্রতিদিন আসরের পর হাফেয ছাত্রদের তিলাওয়াত করে শোনানোর নিয়ম আছে। যারা তিলাওয়াত করে শোনায় তাদের অনেকেই নাবালেগ।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, নাবালেগ ছাত্রদের থেকে কখনো সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা আদায় করা ওয়াজিব হবে?
হাঁ, নাবালেগ ছাত্রদের থেকে বালেগ ব্যক্তি সিজদার আয়াত শুনলেও সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে। যদিও নাবালেগের নিজের ওপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২৭২; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; রদ্দুল মুহতার ২/১০৭
গতকাল আমি বাসায় যোহরের ফরয নামায পড়ছিলাম। তখন পাশের রুম থেকে আমার বৃদ্ধ বাবা আমাকে কয়েকবার ডাকেন; কিন্তু তার আওয়াজ থেকে আমি বুঝতে পেরেছি বড় কোনো সমস্যা নয় যে এখনই সাড়া দিতে হবে, তাঁর ডাকে তখনই সাড়া না দিয়ে নামায চালিয়ে যাই। নামায শেষে তাঁর কাছে গিয়ে জানতে পারি, জরুরি কোনো প্রয়োজনে নয়, এমনিই কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছিলেন। তো এক্ষেত্রে আমার জন্য তৎক্ষণাৎ বাবার ডাকে সাড়া না দিয়ে নামায অব্যহত রাখা কি ঠিক হয়েছে, নাকি তখনই নামায ভেঙে তাঁর ডাকে সাড়া দেওয়া উচিত ছিল?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতার ডাকে সাড়া না দিয়ে ফরয নামাযটি সম্পন্ন করা ঠিক হয়েছে। কেননা ফরয নামায পড়া অবস্থায় পিতা-মাতাও যদি ডাকেন, তাহলে সাধারণ ক্ষেত্রে ফরয নামায ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়; বরং নামায শেষ করে তাদের ডাকে সাড়া দেবে। তবে এক্ষেত্রে দীর্ঘ কেরাত না পড়ে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি নামায সম্পন্ন করতে চেষ্টা করবে। অবশ্য পিতা-মাতা বা অন্য কেউ যদি কোনো বিপদে বা দুর্ঘটনায় পড়ে ডেকেছেন বলে মনে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ তার ডাকে সাড়া দেওয়া জরুরি। যদিও এর জন্য ফরয নামায ছেড়ে দিতে হয়। তাদের প্রয়োজন পূরণের পর ঐ নামায আবার পড়ে নেবে।
শেয়ার লিংক-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৬৯; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৭১; উমদাতুল কারী ৭/২৮২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১
আমার বাবা বৃদ্ধ ছিলেন। গত বছর রমযানের কদিন আগে তিনি ব্যবসায়িক কাজে পাঁচ দিনের জন্য ঢাকা থেকে রাজশাহী সফরে যান। যেহেতু সফরে রোযা না রাখার অনুমতি আছে এবং শারীরিকভাবেও তার কিছুটা দুর্বলতা ছিল, তাই তিনি প্রথম তিনটি রোযা রাখেননি। চতুর্থ দিন রোযা রাখেন এবং সেদিন তারাবীহের নামাযের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এ রাতেই সফরে থাকা অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়ে যায়।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে কি বাবার প্রথম তিন দিনের রোযার ফিদইয়া দিতে হবে? যদি দিতে হয়, তাহলে এক রোযার পরিবর্তে কী পরিমাণ টাকা দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু তিনি মুকীম হওয়ার আগেই সফর অবস্থাতেই ইন্তেকাল করেছেন, তাই সফর অবস্থায় তার ছুটে যাওয়া ঐ তিনটি রোযার ফিদয়া আদায় করা জরুরি নয়, কেননা সফর অবস্থায় রোযা রাখা ফরয নয়, এবং মুকীম হওয়ার পর ঐ রোযাগুলোর কাযা করার সময় পাওয়ার আগেই মারা গেলে তার ওপর এর কাযার বিধানও আরোপিত হয় না। তাই এক্ষেত্রে ঐ রোযাগুলোর ফিদইয়া দেওয়াও ওয়াজিব নয়।
ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ যদি রমযান মাসে সফর অবস্থায় কয়েকটি রোযা না রাখে, অতঃপর সেই সফরেই তার ইন্তেকাল হয়ে যায় (তার ক্ষেত্রে কী বিধান?) তিনি বলেন-
لَيْسَ عَلَيْهِ شَيْءٌ، وَلَا يُطْعَمُ عَنْهُ.
তার ওপর কিছুই জরুরি নয় এবং তার পক্ষ থেকে (ফিদইয়া স্বরূপ) আহারও করাতে হবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৭৬৫২)
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৯১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৩
আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার দোকানে এমন কিছু পণ্য আছে, যেগুলো অনেক দিন ধরে দোকানে পড়ে থাকার কারণে এখন আর বিক্রির উপযোগী নেই। এখন সর্বোচ্চ এগুলো ভাঙ্গারী হিসেবে বিক্রি করা যাবে।
জানতে চাই, এই পণ্যগুলোরও কি যাকাত আদায় করতে হবে?
দোকানের প্রশ্নোক্ত পণ্যগুলো যেহেতু একেবারে মূল্যহীন হয়ে পড়েনি; বরং সেগুলো ভাঙ্গারী হিসেবে বিক্রি করলেও কিছু মূল্য পাওয়া যাবে, তাই এই মূল্য হিসেবে সেগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, যদি আপনার যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ না থাকে এবং ভাঙ্গারী হিসেবে এগুলোর মূল্য নেসাব পরিমাণ না হয়, তাহলে এর কারণে আপনার ওপর যাকাত ফরয হবে না।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫১; ফাতহুল কাদীর ২/১৬৮; আননাহরুল ফায়েক ১/৪৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩০২
আমি এক মাদরাসায় খেদমত করি। মাদরাসায় আমার গত পাঁচ মাসের বেতন পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওনা আছে। এদিকে গত এক বছর যাবৎ আমার কাছে আশি হাজার টাকা আছে। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এখন কি আমাকে আশি হাজারের সাথে পাওনা বেতন পঞ্চাশ হাজার টাকারও যাকাত দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু বেতনের ঐ টাকা বুঝেই পাননি, তাই আপনাকে উক্ত বকেয়া বেতনের টাকার যাকাত দিতে হবে না। কেননা বেতনের টাকা হস্তগত হওয়ার আগে এর ওপর যাকাত ফরয নয়।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৯৩; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৮; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ৩৯৮
কয়েকদিন আগে জুমার নামাযের পর মসজিদ থেকে বের হলে মসজিদের সামনে অনেক ফকীর দেখতে পাই। আমার কিছু যাকাতের টাকা ছিল। সেখান থেকে কিছু টাকা ঐ ফকীরদের দান করি। দূর থেকে আমার পাশের বাসার প্রতিবেশী এ দৃশ্য দেখছিল। তার কাছে পৌঁছলে সে আমাকে দুইজন ফকীরের দিকে ইশারা করে হেসে হেসে বলে-
ভাই! আপনি তাদের ব্যাপারে জানেন না, এদের অনেক সম্পদ আছে। ফকীর সেজে ভিক্ষা করে করে আজ তারা অনেক টাকার মালিক। পাশের আরো কয়েকজন তার কথায় সম্মতি জানাল। তারাও বলল, কথা একেবারে বাস্তব। তখন আমার চিন্তা হল যে, আমার যাকাতের কী হবে? তা কি আদায় হয়েছে, নাকি পুনরায় আদায় করতে হবে?
হুজুরের কাছে বিনীত অনুরোধ, এ বিষয়ে সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তারা যে সম্পদশালী ছিল- তা যেহেতু আপনি জানতেন না; বরং আপনি তাদেরকে যাকাতের উপযুক্ত দরিদ্র মনে করেই যাকাত দিয়েছেন, তাই এর দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় দেওয়া লাগবে না। তবে ভবিষ্যতে এরকম ঢালাওভাবে যাকাত না দেওয়া উচিত। কারণ দরিদ্রের ভান করে ভিক্ষা করার রেওয়াজ এখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১২; তুহফাতুল ফুকাহা ১/৩০৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫২
আমার বড় ভাইয়ের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। তাকে যাকাতের সম্পদ থেকে দিতে মন চাচ্ছে। অন্যদিকে যাকাত বলে দিতেও আমার লজ্জা হচ্ছে।
হুজুর, আমি জানতে চাচ্ছি, তাকে যাকাতের টাকা যাকাতের নিয়তে হাদিয়া বলে দেওয়া জায়েয হবে?
হাঁ, আপনার ভাই যেহেতু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত, তাই তাকে যাকাতের নিয়তে যাকাতের টাকা হাদিয়া বলে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৮; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২১২; মাজমাউল আনহুর ১/২৯০
যথা-বিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকার ইউকে প্রবাসী এক দানবীর পরিবারের বড় দুই ভাই দেশে এসে পরিবারের সবার সম্মতিতে সকলের পক্ষ থেকে প্রায় সমস্ত এলাকাবাসীর সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদগাহ নির্মাণের জন্য ৪০ শতক জায়গা মৌখিকভাবে ওয়াক্ফ করে দেন। পরিবারের সবাই একসাথে দেশে আসা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় লিখিত রেজিস্ট্রি করে ওয়াক্ফ করে দিতে পারেননি। এলাকার কতিপয় মুরব্বী উক্ত জায়গা রেজিস্ট্রিকৃত ওয়াকফ না হওয়ার কারণে তাতে ঈদগাহের সংস্কারমূলক কাজ ও ঈদের জামাত আদায় করতে অনিচ্ছুক। এভাবে প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এদিকে সংস্কারমূলক কাজ ও ঈদের জামাত আদায় না হওয়ার কারণে উক্ত দাতা পরিবার একজন আলেমের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঈদগাহের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গাটি এখন মাদরাসা নির্মাণের জন্য দিয়ে দিতে চায়।
উল্লেখ্য, উক্ত এলাকায় একটি ঈদগাহের প্রয়োজন রয়েছে, বর্তমানে এলাকাসী তাদের মসজিদের মাঠে ঈদের নামায আদায় করে আসছে। অতএব, হযরত মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল-
ক. ঈদগাহের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গা মাদরাসার জন্য দেওয়া যাবে কি না?
খ. ঈদগাহের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গায় ঈদগাহ নির্মাণের পাশাপাশি স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে কোনো মাদরাসা নির্মাণ করা যাবে কি না?
উক্ত বিষয়গুলোর বিস্তারিত শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ পাক আপনাকে বরকতময় হায়াত দান করুন।
শরীয়তের দৃষ্টিতে ওয়াক্ফ সহীহ হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রি করা আবশ্যক নয়। রেজিস্ট্রি একটি ব্যবস্থাপনা ও আইনগত বিষয়। তাই প্রশ্নোক্ত জমিটি মৌখিকভাবে ওয়াক্ফ করার দ্বারাই তা ঈদগাহের জন্য ওয়াক্ফ হয়ে গেছে। এখন তা ঈদগাহের জমি। যেহেতু এটি এখন ঈদগাহের জমি, তাই এখন আর এই ওয়াক্ফ পরিবর্তন করে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে তা মাদরাসার নামে করে দেওয়া বা অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। আর উক্ত জমিটি যেহেতু ঈদগাহ হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব এবং এর প্রয়োজনও আছে, তাই এখন থেকেই এটিকে সংস্কার করে এলাকার ঈদগাহ হিসাবে ব্যবহার শুরু করা উচিত। রেজিস্ট্রি না করার কারণে তাতে সংস্কারমূলক কাজ না করা এবং ঈদের নামায আদায় করা থেকে বিরত থাকা ঠিক হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ওয়াক্ফকারীগণের দায়িত্ব হল, যত শীঘ্র সম্ভব জমিটি ঈদগাহের নামে রেজিস্ট্রি দলীল করে দেওয়া। যেন ভবিষ্যতে এ সংক্রান্ত বিতর্ক ও ঝামেলা এড়ানো যায়।
শেয়ার লিংক-আহকামুল আওকাফ, খাস্সাফ, পৃ. ১৭; ফাতহুল কাদীর ৫/৪২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৯০, ৩৬২; আলফাতাওয়াল কামিলিয়া, পৃ. ৫৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৪৯
জনৈক ব্যক্তি বছরখানেক আগে ২৯ লক্ষ টাকায় চারতলা নির্মাণাধীন মার্কেটের একটি দোকানের পজিশন ক্রয় করে। দোকান মালিকের সাথে ক্রেতার একটি চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয় এবং উভয় পক্ষই সরকারি স্ট্যাম্পে লিখিয়ে সাক্ষীর উপস্থিতিতে তা সই করে। এখন দোকানের পজিশন ক্রয়কারী ব্যক্তি উক্ত দোকান অপর আরেকজনের নিকট গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়েছে মাসিক ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে।
অতএব আমার প্রশ্ন হল-
১. উক্ত পজিশন ক্রয় চুক্তিটি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না? এবং দোকানঘরটি অন্যত্র গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া বৈধ কি না?
২. চুক্তিগুলো বৈধ না হয়ে থাকলে বর্তমানে এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
বর্তমানে দোকান অফিস ইত্যাদির পজিশন বিক্রির প্রচলিত যে পদ্ধতি রয়েছে, অর্থাৎ দোকান/মার্কেট মালিক প্রথমে কারো নিকট চড়া মূল্যে দোকানের পজিশন বিক্রি করে; অতঃপর পজিশন ক্রেতার কাছ থেকে উক্ত দোকান বা অফিসের আবার মাসে মাসে জমিদারির নামে ভাড়াও আদায় করা হয়। তো এ ধরনের পজিশন বিক্রি শরীয়তসম্মত নয়। এটি না بيع (বেচাকেনা) না إجارة (ভাড়া চুক্তি); বরং এটি একটি জগাখিচুড়ি পদ্ধতি, যা শরীয়তে স্বীকৃত কোনো আকদ ও চুক্তির আওতায়ই পড়ে না। পজিশন বিক্রির নামে একমুঠে যে অঙ্ক প্রথমে নেওয়া হয়, তা শরীয়তের দৃষ্টিতে একপ্রকারের রিশওয়াতের অন্তর্ভুক্ত; যা সম্পূর্ণ নাজায়েয। সুতরাং এ পদ্ধতির লেনদেন থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
সঠিকভাবে লেনদেনটি করতে চাইলে হয়তো দোকান/অফিস সাফ কবলা দলীলমূলে বিক্রি করে দেবে এবং ক্রেতাকে তার সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেবে। এরপর বিক্রেতার উক্ত দোকান বা অফিসে কোনো ধরনের অধিকার থাকবে না। আর সাফ কবলা দলীলমূলে বিক্রি না করতে চাইলে শুরু থেকেই কেবল ভাড়া পদ্ধতি অবলম্বন করবে। এক্ষেত্রে মালিক যদি ভাড়া গ্রহীতা থেকে একমুঠে বেশি অর্থ নিতে চায়, তাহলে মাসিক ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে কয়েক বছরের ভাড়া এককালীন অগ্রিম নিয়ে নেবে।
উল্লেখ্যে, প্রচলিত পদ্ধতিতে পজিশন বিক্রি যেহেতু জায়েয নয়, তাই এভাবে দোকান নিয়ে তা অন্যত্র ভাড়া দিলে সেটিও জায়েয হবে না। কোনো দোকান অন্যত্র ভাড়ায় খাটাতে চাইলে بيع (বেচাকেনা) বা إجارة (ভাড়া চুক্তি)-এর কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে দোকান নিয়ে তারপর ভাড়া দিতে হবে। তবে ভাড়া পদ্ধতি গ্রহণ করে পরবর্তীতে তা অন্যত্র ভাড়া দিতে চাইলে ভাড়ায় নেওয়া বস্তু অন্যত্র ভাড়া দেওয়ার শরীয়তের নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে সে অনুযায়ী আমল করবে।
শেয়ার লিংক-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৫৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৫১; মুফীদাতুল হুসনা বিযান্নিল খুলুয়ী বিসসুকনা, পৃ. ৪৬; গামযু উয়ূনিল বাসায়ির ২/৩১৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২১
আমার দোকানে দীর্ঘদিন যাবৎ এক হিন্দু কর্মচারী কাজ করে। আমাদের দেখতে দেখতে সেও হাঁচি দেওয়ার পর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে। এখন আমার জানার বিষয় হল, তার হাঁচির জবাবে কি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা যাবে?
কোনো অমুসলিম হাঁচি দেওয়ার পর যদি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে তাহলে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ না বলে
يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ
(আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করে দিন) বলবে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. বলেন-
كَانَ اليَهُودُ يَتَعَاطَسُونَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْجُونَ أَنْ يَقُولَ لَهُمْ: يَرْحَمُكُمُ اللهُ، فَيَقُولُ: يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ.
ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাঁচি দিত, যাতে এর জবাবে তিনি তাদেরকে يَرْحَمُكُمُ اللهُ (আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন) বলেন। কিন্তু তিনি তাদের উত্তরে বলতেন-
يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ
[আল্লাহ তোমাদের হেদায়েত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করে দিন।] (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৩৯)
শেয়ার লিংক
-ফাতহুল বারী ১০/৬১৯; উমদাতুল কারী ২২/২২৬; তাবয়ীনুল মাহারিম, পৃ. ৭৫৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৪