আবদুর রহমান - কুমিল্লা

৫৫৪৩. প্রশ্ন

আমি গতকাল পুরাতন ঢাকায় ছিলাম। সেখানে তখন বৃষ্টি হয়। এর কিছু সময় পর আমি অন্যত্র যাওয়ার জন্য বের হই। দেখি, রাস্তায় কাদা হয়ে আছে, দুপাশের ড্রেনের পানিও রাস্তায় উঠে এসেছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর তা চলে যায়। তবে কাদা তখনো শুকায়নি। তাই ঐ সময় চলতে গিয়ে আমার কাপড়ের নিচের দিকের অনেকাংশে সে কাদা লেগে যায়। উল্লেখ্য, রাস্তার সে কাদা ছিল সেখানকার ধুলোবালি, ড্রেনের কাদা নয়। মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, ঐ কাদা কি পবিত্র না অপবিত্র? তা নিয়ে কি আমি নামায পড়তে পারব?

উত্তর

রাস্তার কাদা নাপাক নয়। বিশেষত কাদায় নাপাকী দেখা না গেলে তা পবিত্র। সুতরাং তা কাপড়ে লাগলে কাপড় অপবিত্র হবে না। তাই এ অবস্থায় নামায পড়লে তা সহীহ হবে। তবে ধোয়ার সুযোগ থাকলে এমন ময়লা কাপড়ে নামায না পড়াই ভালো।

-কিতাবুল আছল ১/৫২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১১; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/১৫৯; আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ২০; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫১৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩২৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জুবাইর আহমদ - বগুড়া

৫৫৪৪. প্রশ্ন

ট্যাপ ছেড়ে পানিতে সরাসরি নাপাক কাপড় ধোওয়া হলে তা পবিত্র করার পদ্ধতি কী হবে? এক্ষেত্রে কি তিনবার নিংড়ানো আবশ্যক?

উত্তর

কাপড়ে যদি দৃশ্যমান নাপাকী লাগে তাহলে ঐ নাপাকী দূর করে নিলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে। নাপাকী দূর হয়ে যাওয়ার পর যদি এর দাগ বা চিহ্ন বাকি থাকে (যা দূর করা কষ্টকর হয়) তবে এতে কোনো অসুবিধা নেই। এ ধরনের দাগ থাকার কারণে তা অপবিত্র গণ্য হবে না। আর যদি কাপড়ে এমন তরল নাপাকী লাগে, যা দৃশ্যমান নয় (যেমন পেশাব ইত্যাদি) তাহলে কলের নিচে এমনভাবে ধুতে হবে, যেন নাপাকী দূর হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা সৃষ্টি হয়। তাহলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে। আর কলের নিচে ধোয়ার ক্ষেত্রে তিন বার ধোয়া বা নিংড়ানো আবশ্যক নয়; বরং নাপাকী দূরীভূত হওয়াই হল এক্ষেত্রে মূল কথা।

-মুখতাসারুল কুদূরী, পৃ. ১১; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/১৫০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৮; আননাহরুল ফায়েক ১/২৩৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৩

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান - কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

৫৫৪৫. প্রশ্ন

একদিন নামায শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বলল যে, আপনার পায়ে এক থেকে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ স্কচটেপ লেগে আছে। ওযুর সময় যেহেতু লেগে ছিল তাই আপনার ওযু পরিপূর্ণ হয়নি। জানতে চাচ্ছি যে, এতটুকুর কারণে কি ওযু পরিপূর্ণ হয়নি?

উত্তর

বাস্তবেই ওযুর সময় থেকেই যদি আপনার পায়ে উক্ত স্কচটেপ লেগে থাকে তাহলে আপনার ওযু হয়নি। এখন পায়ের ঐ অংশ ধুয়ে নিতে হবে। অতঃপর উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৬৮; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫; হালবাতুল মুজাল্লী ১/১৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪

শেয়ার লিংক

আফযাল - বরিশাল

৫৫৪৬. প্রশ্ন

ওযু করার সময় আমার কাপড়ে ওযুর পানি এসে লাগে, কখনো কখনো বুকের অধিকাংশ কাপড় ভিজে যায়। জানার বিষয় হল, আমি কি ঐ কাপড়ে নামায পড়তে পারব, না কাপড় পরিবর্তন করতে হবে?

উত্তর

ওযুতে ব্যবহৃত পানি নাপাক নয়। তাই এই পানি লেগে  কাপড় ভিজে গেলেও তা নিয়ে নামায আদায় করতে পারবেন। নামাযের ক্ষতি হবে না। তবে সতর্কতার সাথে ওযু করলে কাপড় বা শরীর এতো বেশি ভেজার কথা নয়।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, পৃ. ২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২১২; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৭৬; আলইখতিয়ার ১/৭১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭; রদ্দুল মুহতার ১/২০০

শেয়ার লিংক

মোসাম্মাত উসাইমা - বগুড়া

৫৫৪৭. প্রশ্ন

আমি যখন বাসায় নামায পড়ি তখন আমার ছোট ছেলে (বয়স আড়াই বছর) আমার কোলে এসে বসে। শরীর জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সিজদায় গেলে পিঠে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু তার শরীর ও কাপড়ে প্রায়ই পেশাব ইত্যাদি নাপাকী লেগে থাকে। তাই মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই যে, উক্ত ক্ষেত্রে আমার নামায নষ্ট হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাচ্চার শরীর বা কাপড়ের নাপাকী যদি আপনার শরীর/কাপড়ে না লেগে থাকে তাহলে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। কেননা যে বাচ্চা কোল ধরে রাখতে পারে তার শরীরে নাপাকী থাকলেও একারণে নামাযী ব্যক্তির নামায নষ্ট হয় না। কিন্তু বাচ্চা থেকে যদি নামাযীর শরীরে বা কাপড়ে নাপাকী লেগে যায় এবং এর  পরিমাণ এক দিরহামের (অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা সমপরিমাণের) বেশি হয় তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৫২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৯৬; জামিউ আহকামিস সিগার ১/৩২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৭

শেয়ার লিংক

মোসাম্মাত ছালমা - কুমিল্লা

৫৫৪৮. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আমি যোহরের নামায পড়ছিলাম। রুকুতে যাওয়ার আগে কান চুলকাতে গিয়ে হিজাব আলগা হয়ে যায় এবং এক কান থেকে হিজাব সরে যায়। তারপর ওই অবস্থাতেই রুকু আদায় করে কান ঢেকে বাকি নামায শেষ করি। মাসআলা জানা না থাকায় পুনরায় সেই নামায আদায় করি। আমার জানার বিষয় হল, পুনরায় নামায পড়া কি জরুরি ছিল, না প্রথম নামাযটি সঠিক ছিল?

উত্তর

কান খোলা অবস্থায় রুকু করার দ্বারা আপনার নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। সুতরাং পুনরায় ঐ নামায পড়ে ঠিকই করেছেন।উল্লেখ্য, নামাযে মহিলাদের কান সতরের অন্তর্ভুক্ত। তা ঢেকে রাখা ফরয। এক রুকন সমপরিমাণ সময় কোনো কানের চার ভাগের এক ভাগ বা তার বেশি খোলা থাকলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৪১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫৬; ফাতহুল কাদীর ১/২২৮; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৯

শেয়ার লিংক

আলাউদ্দীন - কুমিল্লা

৫৫৪৯. প্রশ্ন

গতকাল আমি মসজিদে এশার নামাযের ইমামতি করি। ভুল করে শেষের দুই রাকাতে আমি উঁচু আওয়াজে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলি। একারণে সাহু সিজদা দিই। তবে বিষয়টি আমার কাছে সুস্পষ্ট নয়। তাই মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে আমার সাহু সিজদা দেওয়া কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, উক্ত ভুলের কারণে আপনার উপর সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়েছিল। তাই আপনার সাহু-সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করা যথার্থই হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১১; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪১; রদ্দুল মুহতার ২/৮১

শেয়ার লিংক

যহীরুল ইসলাম - ফেনী

৫৫৫০. প্রশ্ন

সেদিন আমি বাড়িতে একাকী আছরের নামায পড়ছিলাম। এসময় এক লোক এসে তার কোনো প্রয়োজনে আমাকে ডাকাডাকি শুরু করে। তার ডাক শুনে আমি তাড়াতাড়ি নামায শেষ করতে গিয়ে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ পড়তে ভুলে যাই। মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, ভুলে দরূদ শরীফ ছুটে যাওয়ার কারণে কি আমার নামায নষ্ট হয়ে গিয়েছে?

উত্তর

না, দরূদ শরীফ ছুটে যাওয়ার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। তবে দরূদ শরীফ নামাযের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তা ছেড়ে দেওয়া মাকরূহ। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির ডাক শুনে তাড়াহুড়া করে নামায পড়া ঠিক হয়নি। নামায সর্বদা খুশু-খুজু ও ধীরস্থিরতার সাথেই পড়া কর্তব্য।

-আলইখতিয়ার ১/১৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২২; জামেউল মুযমারাত ১/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৭৩

শেয়ার লিংক

ইলিয়াছ - মোমেনশাহী

৫৫৫১. প্রশ্ন

একদিন আমি নামায শেষে ভুলে প্রথমে বামে দিকে সালাম ফেরাই। স্মরণ হতেই ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে আবার বামে সালাম ফিরাই। মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, এভাবে সালাম ফেরানোর কারণে কি আমার নামাযে কোনো ক্ষতি হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার প্রথমে বাম দিকে সালাম ফেরানোটা সুন্নত পরিপন্থী হয়েছে। তবে একারণে নামায নষ্ট হয়নি। আর প্রথমেই যেহেতু বামে সালাম ফিরিয়েছেন তাই ডান দিকে সালাম ফেরানোর পরে দ্বিতীয়বার আবার বাম দিকে সালাম ফেরানোর প্রয়োজন ছিল না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২১৪, ৫০২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪৫৩; ফাতহুল কাদীর ১/২৭৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫২৪

শেয়ার লিংক

আয়েশা খাতুন - পাঁচবিবি, জয়পুরহাট

৫৫৫২. প্রশ্ন

চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর কখনো কখনো আমি ভুলে দরূদ শরীফ পড়া শুরু করে দিই। কখনো শুরুতেই মনে পড়ে, কখনো অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশি পড়ার পর মনে পড়ে, আবার কখনো পূর্ণ দরূদ শরীফ পড়ে ফেলি, তারপর মনে পড়লে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। এখন মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফের কতটুকু অংশ পড়লে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে?

উত্তর

ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুআক্কাদা নামাযসমূহের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরূদ শরীফ اللهم صل على محمد পর্যন্ত পূর্ণবাক্য অথবা তার চেয়ে বেশি পড়লে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে। আর যদি اللهم صل على محمد এই পূর্ণ বাক্য না পড়ে এর চেয়ে কম পড়া হয় তাহলে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫১০

শেয়ার লিংক

জহুরুল ইসলাম - বগুড়া

৫৫৫৩. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আমাদের মহল্লার মসজিদে মাগরিবের নামায পড়ছিলাম। প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার সময় আমার হাঁচি আসে। আমি অনিচ্ছাকৃতভাবে আলহামদু লিল্লাহবলে ফেলি। নামাযান্তে ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আপনার নামায নষ্ট হয়ে গেছে। ইমাম সাহেবের কথা মতো আমি পুনরায় মাগরিবের নামায আদায় করে নিই। পরে জনৈক আলেমের সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি ঘটনাটি তার কাছে বর্ণনা করি। তিনি বলেন, হাঁচি আসার পর আলহামদু লিল্লাহবললে নামায নষ্ট হয় না। তাই আপনার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। এখন বিষয়টি নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। তাই মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের কথা সঠিক, নাকি জনৈক আলেম যে কথা বলেছেন সেটিই সঠিক। জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁচির পর নামাযে আলহামদু লিল্লাহবলা ঠিক নয়। তবে কেউ বলে ফেললে তার নামায নষ্ট হয় না। তাই আপনার প্রথম নামাযই সহীহ হয়েছে। নামায পুনরায় পড়ার প্রয়োজন ছিল না।

উল্লেখ্য, নামাযী ব্যক্তি কারো হাঁচির আলহামদু লিল্লাহ’-এর জবাবে ইয়ারহামু কাল্লাহবললে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৩৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪৯৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৩৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৬৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আতীক - ফেনী

৫৫৫৪. প্রশ্ন

কয়েক দিন আগে আমার বড় চাচার কাশি হয়। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দেন আর বলেন, মাঝে মাঝে তালমিছরি খাবেন। তাই তিনি প্রায় তালমিছরি মুখে দিয়ে রাখেন। কখনো এমন অবস্থায় নামাযে দাঁড়িয়ে যান যে, তাঁর মুখে তালমিছরির বড় টুকরা থাকে, যা চিবানো ছাড়া আস্তে আস্তে গলে পেটে পৌঁছাতে থাকে। তাঁর মাসআলা জানা না থাকায় এরকম করেন। এখন জানার বিষয় হল, এভাবে তালমিছরি মুখে রেখে নামায আদায় করলে কি নামাযের কোনো সমস্যা হয়?

 

উত্তর

তালমিছরি মুখে রেখে নামায পড়লে যেহেতু এর রস মুখে যাওয়াই স্বাভাবিক, তাই এর দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এভাবে তালমিছরি মুখে রেখে যেই নামাযগুলো পড়া হয়েছে তার কাযা পড়ে নিতে হবে।

-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৩৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১১

শেয়ার লিংক

মাহদী হাসান - সাভার, ঢাকা

৫৫৫৫. প্রশ্ন

জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব মায়্যেতের কোন্ বরাবর দাঁড়াবেন? এক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার কোনো পার্থক্য আছে কি না? অনেকে পার্থক্যের কথা বলেন। আমি জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি কী? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

 

উত্তর

জানাযার নামাযে সুন্নাহসম্মত পন্থা হল, ইমাম মায়্যেতের সীনা বরাবর দাঁড়াবেন। পুরুষ-মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই একই হুকুম প্রজোয্য।

ইমাম শাবী রাহ. বলেন-

يَقُومُ الّذِي يُصَلِّي عَلَى الْجِنَازَةِ عِنْدَ صَدْرِهَا.

যিনি জানাযার নামায পড়াবেন তিনি মায়্যেতের সীনা বরাবর দাঁড়াবেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ১১৬৬৭)

অনুরূপ হযরত ইবরাহীম নাখায়ী ও আতা রাহ. প্রমুখ তাবিয়ী থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত রয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ১১৬৭১-১১৬৭২)

-কিতাবুল আছল ১/৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৬; ইলাউস সুনান ৮/২৭৪

শেয়ার লিংক

যায়েদ - নরসিংদী

৫৫৫৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার বড় চাচা ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি বড় ছেলেকে ওসিয়ত করেছিলেন, যেন তাকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী জায়গাটিতে দাফন করা হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর পর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পরামর্শক্রমে তাকে বাড়ির পাশেই একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু এখন কেউ কেউ বলাবলি করছে, ওসিয়ত পূরণ করা উচিত ছিল। জানার বিষয় হল, ওসিয়তকৃত জায়গায় দাফন না করে অন্য জায়গায় দাফন করায় কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নিকটস্থ কবরস্থানে দাফন করা সহীহ ও শরীয়তসম্মত হয়েছে। কারণ, মায়্যেতকে কোথায় দাফন করা হবে এ ব্যাপারে সে ওসিয়ত করে গেলেও তা পূর্ণ করা জরুরি নয়। এ ব্যাপারে মৃতের ওসিয়ত কার্যকর হয় না। এছাড়া দাফনের জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে কবরস্থান। বিনা ওজরে কোনো স্বতন্ত্র জায়গায় কবর দেওয়া উচিত নয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৪০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৩৫; ফাতহুল কাদীর ২/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২২১, ২৩৫

শেয়ার লিংক

আশরাফ আলী - বগুড়া

৫৫৫৭. প্রশ্ন

আমি মুহাররমের দশ তারিখ রোযা রাখার ইচ্ছা করি এবং সাহরীতে গোশত দিয়ে সাহরী করি। ফজরের নামাযের পর যখন বিশ্রামের জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ি তখন অনুভব করি যে, দাঁতে গোশতের সামান্য আঁশ লেগে আছে। আমি তা দাঁত  থেকে বের করতে গিয়ে গিলে ফেলি। উল্লেখ্য, তখন আমার রোযার কথা স্মরণ ছিল। তাই মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, আমার উক্ত রোযা সহীহ হয়েছে কি না? জানালে অনেক উপকৃত হব।

উত্তর

দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকা খাবারের পরিমাণ যদি ছোলা-বুটের চেয়ে কম হয় তাহলে তা ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললেও রোযা নষ্ট হয় না। আর যদি তা পরিমাণে ছোলা-বুটের সমান বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দাঁতে লেগে থাকা গোশতের পরিমাণ যদি ছোলাবুটের চেয়ে কম হয় তাহলে তা গিলে ফেলার দ্বারা আপনার রোযা নষ্ট হয়নি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৭৩; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ৩/৫৮; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩

শেয়ার লিংক

মাওলানা আবদুল আউয়াল - ডেমরা, ঢাকা

৫৫৫৮. প্রশ্ন

গতকাল আমি মসজিদে এক ছেলের বিবাহ পড়াই। বিবাহের পর যখন সবাই চলে যায় তখন একজন এসে আমাকে বলে যে, হুজুর, আপনি তো বিবাহের খুতবা পড়েননি। তখন আমারও স্মরণ হয় যে, আসলেই তো খুতবা পড়িনি। জানার বিষয় হল, খুতবা না পড়ার কারণে কি বিবাহের কোনো ক্ষতি হবে?

উত্তর

বিবাহের আকদের আগে খুতবা পড়া মুস্তাহাব। খুতবা না পড়লেও শুধু সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ইজাব-কবুলের মাধ্যমে বিবাহ সহীহ হয়ে যায়। তাই উক্ত বিবাহ সহীহ হয়েছে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮৫; উমদাতুল কারী ২০/১৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৮; বাযলুল মাজহুদ ১০/১৪৬

শেয়ার লিংক

কাউসার আহমাদ - তালতলা, ঢাকা

৫৫৫৯. প্রশ্ন

স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার কারণে মাঝেমধ্যে আমি তাকে আপু বলে ডাকি। কিছুদিন আগে হঠাৎ আমার ভেতর খটকা লাগে যে, এই শব্দে স্ত্রীকে সম্বোধন করা কি ঠিক? তো আমি জানতে চাই, স্ত্রীকে আপু বলে সম্বোধন করার বিধান কী?

উত্তর

স্ত্রীকে আপু বলে ডাকা উচিত নয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে এভাবে বলতে শুনে তা থেকে বারণ করেছেন। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২১০)

তাই স্ত্রীকে এভাবে সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে এর দ্বারা বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না।

-ফাতহুল কাদীর ৪/৯০; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৮; আননাহরুল ফায়েক ৩/৪০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৭০; বাযলুল মাজহুদ ১০/৩২২

শেয়ার লিংক

আলাউদ্দিন - বাগেরহাট

৫৫৬০. প্রশ্ন

গতকাল রাতে আমি স্বপ্নে দেখি, আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার প্রচণ্ড ঝগড়া হচ্ছে। ঝগড়ার একপর্যায়ে আমি তাকে বলে ফেলি, তোকে তিন তালাক দিলাম, তুই আমার ঘর থেকে চলে যা। ঘুম থেকে উঠে বেশ আতঙ্কে পড়ে যাই যে, আমার স্ত্রী কি সত্যিই তালাক হয়ে গেল কি না। তো এখন আমার করণীয় কী? জানালে অনেক উপকৃত হতাম।

উত্তর

স্বপ্নে তালাক দিলে তালাক পতিত হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে-

رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النّائِمِ حَتّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ المُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ، وَعَنِ الصّبِيِّ حَتّى يَكْبُرَ.

তিন ধরনের মানুষের উপর থেকে কলম (অর্থাৎ হুকুম) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত। শিশু বালেগ হওয়া পর্যন্ত এবং পাগল সুস্থ হওয়া পর্যন্ত। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৩৯৮)

হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-

لَيْسَ طَلَاقُ النّائِمِ بِشَيْءٍ.

ঘুমন্ত ব্যক্তির তালাক পতিত হয় না। (কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৫০০)

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘুমন্ত অবস্থায় তালাক দেওয়ার কারণে তা কার্যকর হবে না। আপনারা পূর্বের মতই স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে পারবেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৯১; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৫০; আলজাওহারাতুন নায়্যিরাহ ২/৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩০২

শেয়ার লিংক

আহমাদুল্লাহ - রামপুরা, ঢাকা

৫৫৬১. প্রশ্ন

আমার ছোট চাচা ছোট বেলায় আমার মায়ের দুধ পান করেছেন। এখন আমি কি আমার ফুফাতো বোন-অর্থাৎ ঐ চাচার আপন বোনের মেয়েকে বিবাহ করতে পারব?

উত্তর

হাঁ, আপনি উক্ত ফুফাতো বোনকে বিবাহ করতে পারবেন। কারণ, আপনার চাচা আপনার মায়ের দুধ পান করলেও তার বোন অর্থাৎ আপনার ফুফুর সাথে আপনার দুধ-সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি। তাই তার মেয়েকে বিবাহ করা আপনার জন্য বৈধ।

-আলহাবিল কুদসী ১/৩৭৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১২; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৭৭; জামেউর রুমূয ১/৫০১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১৭

শেয়ার লিংক

আব্দুল্লাহ - মিরপুর, ঢাকা

৫৫৬২. প্রশ্ন

আমি একজন নওমুসলিম, কিছুদিন আগে আমি এবং আমার পরিচিত একটি মেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। এরপর আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং বিবাহের সময় আমি কিছু মোহর পরিশোধ করি। বিবাহের পর অনেকদিন আমরা একসাথে থাকি। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্মে ফিরে যায়, নাউযুবিল্লাহ। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, আমার জন্য কি আমার স্ত্রীর অবশিষ্ট মোহর আদায় করা জরুরি?

দ্রুত সময়ের মধ্যে মাসআলার সমাধান জানানোর অনুরোধ করছি।

উত্তর

আপনার স্ত্রী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার কারণে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। আর বিবাহের পর আপনাদের মাঝে যেহেতু দাম্পত্য সম্পর্ক হয়েছে তাই মহিলাটি পূর্ণ মোহররের অধিকারী হয়েছে। অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তার অবশিষ্ট মোহর আদায় করে দেওয়া আপনার উপর জরুরি।

-আলহাবিল কুদসী ১/৪০১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৯০; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ৩/৩৮৭; আলবাহরুর রায়েক ৩/২১৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৯৩

শেয়ার লিংক

বশীর আহমাদ - মৌলভীবাজার, সিলেট

৫৫৬৩. প্রশ্ন

আমরা ইংল্যান্ডে থাকি। আমাদের একজন প্রতিবেশী মহিলা বিবাহের পর তার স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করেছে, তবে তার কোনো সন্তান হয়নি। ইতিমধ্যে তার স্বামী ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়। (মাআযাল্লাহ) এখন সে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়। তাই জানতে চাচ্ছি, তার জন্য কি এখন অন্যত্র বিবাহ করা সহীহ হবে, নাকি ইদ্দত পালন করতে হবে। এবং ইদ্দত পালন করতে হলে তার সময়সীমা কতদিন?

উত্তর

স্বামী মুরতাদ হওয়ার পর তাদের বিবাহ ভেঙে গেছে। এমন ঘটনার পর উক্ত মহিলাকে ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত পূর্ণ হওয়া ছাড়া অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে না। ইদ্দতের সময়সীমা হল, ঋতুমতি মহিলার জন্য পূর্ণ তিন ঋতুস্রাব আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত।

-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা ২/৩০৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/৪৯; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/৩২১; ফাতহুল কাদীর ৩/২৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৯৩

শেয়ার লিংক

মাহমুদা আক্তার - টঙ্গী, গাজীপুর

৫৫৬৪. প্রশ্ন

গত কয়েকদিন আগে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। আমি তার সাথে আমাদের পুরোনো ঘরে থাকতাম। সাথেই আমাদের নতুন ঘর। সেটা আমার স্বামীই বানিয়েছে। সেখানে আমার ছেলে স্ত্রী নিয়ে থাকে। স্বামীর মৃত্যুর পর একাকী পুরোনো ঘরে থাকা কষ্টকর। আবার একাকী থাকলে ভয়ও লাগে। তাই সম্মানিত মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমি কি নতুন ঘরে ইদ্দত পালন করতে পারব? জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নতুন ঘরটি যেহেতু একই বাড়িতে অবস্থিত এবং তা আপনাদেরই ঘর তাই আপনি সেখানে ইদ্দত পালন করতে পারবেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩৫

শেয়ার লিংক

রিমা আক্তার - বরগুনা

৫৫৬৫. প্রশ্ন

গত বছর বিবাহের পর আমার স্বামী আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। আমরা ছোট একটা বাসায় থাকি। বিবাহের পর থেকে আমার স্বামী আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আমাকে বায়েন তালাক দিয়ে দেয়। এরপর আমি ইদ্দত পালন শুরু করি। কিন্তু বাসায় জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে আমার স্বামী থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না এবং আমার স্বামীকে এক্ষেত্রে নিরাপদ মনে হচ্ছে না। তাই হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, আমি কি এই পরিস্থিতিতে বাপের বাড়ি গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকায় আপনার জন্য তালাকদাতা স্বামীর বাসায় থাকা জায়েয হবে না। আপনি পিতার বাসায় গিয়ে নিরাপদে ইদ্দত পালন করতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, বায়েন তালাকের ইদ্দত অবস্থায় তালাকাদাতা স্বামীর সাথেও পূর্ণ পর্দার বিধান রক্ষা করে চলা আবশ্যক।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৫/২৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৭; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৭

শেয়ার লিংক

মামুনুর রশীদ - পাবনা

৫৫৬৬. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে থামানোর জন্য স্ত্রীকে বলে, ‘তুই আমার মায়ের মতোএকথা বলার সময়  ভিন্ন কোনো নিয়ত ছিল না। এতে কি তাদের বিবাহে কোনো সমস্যা হয়েছে? হয়ে থাকলে এখন যদি তারা একসাথে থাকতে চায় তাহলে তাদের করণীয় কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি উক্ত বাক্যটি যেহেতু শুধু তার স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছে এবং তার ভিন্ন কোনো নিয়ত ছিল না তাই এর কারণে তাদের বিবাহে কোনো সমস্যা হয়নি। তারা পূর্বের মতোই স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বহাল আছে। সুতরাং তাদের একসাথে থাকতে কোনো বাধা নেই।উল্লেখ্য, স্ত্রীকে মা বা মায়ের মত বলা জায়েয নয়। ভবিষ্যতে এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-কিতাবুল আছল ৫/১০; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/২২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৮৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৪২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭০

শেয়ার লিংক

আযীযুর রাহমান - বারিধারা, ঢাকা

৫৫৬৭. প্রশ্ন

একদিন ঝগড়া ও রাগারাগির একপর্যায়ে আমার স্ত্রীকে বলেছি, আজ থেকে তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত কথা বলার সময় তালাকের চিন্তা আমার মাথায় ছিল না। জানার বিষয় হল, উক্ত কথার কারণে কি আমার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়েছে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আজ থেকে তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেইকথাটি যেহেতু আপনি তালাকের উদ্দেশ্যে বলেননি, তাই এর দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পূর্বের ন্যায় বহাল আছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের বাক্য উচ্চারণ থেকে বিরত থাকবেন।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৯৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/৩০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/৪১৭

শেয়ার লিংক

রাশেদ - বারিধারা

৫৫৬৮. প্রশ্ন

আমরা বারিধারায় থাকি। কিছুদিন আগে আমাদের প্রতিবেশী একটি পরিবারের সকলে (স্বামী-স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে) খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছিল। তখন আমরা খবর পেয়ে সেখানে যাই এবং তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি। দীর্ঘ সময় বুঝানোর পর তারা আবার ইসলাম ধর্মে ফিরে আসে। এতে কি তাদের পূর্বের বিবাহ সম্পর্ক বহাল থাকবে? যদি না থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে এখন করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু তারা পরিবারের সকলে একইসঙ্গে খ্রিস্টান হয়ে গিয়েছিল এবং পরে আবার তওবা করে সকলে একসাথেই ইসলামে ফিরে এসেছে, তাই তাদের পূর্বের বিবাহ বহাল আছে। এখন তারা পূর্বের ন্যায় দাম্পত্য সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে। পূণরায় বিবাহের প্রয়োজন নেই।

-মুখতাসারুত তাহাবী, পৃ. ২৫৮; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১৯৫; ফাতহুল কাদীর ৩/২৯৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/২১৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৯৬

শেয়ার লিংক

মাহফুযুর রহমান - যশোর

৫৫৬৯. প্রশ্ন

ছোট বেলায় আমার মামাতো বোন আর আমি একসঙ্গে আমার আম্মুর দুধ পান করেছি। মামির কোনো ছেলে নেই। তাই তিনি আমাকে ছোট বেলা থেকেই নিজের ছেলের মত আদর করতেন এবং এই উদ্দেশ্যেই তার মেয়েকে আমার সাথে আমার আম্মুর দুধ পান করিয়েছেন। যাতে আমি বড় হলেও তার সামনে যেতে পারি। কিন্তু আমি নিজে মামির দুধ পান করিনি। এখন আমি কি আমার মামির সাথে এই কারণে দেখা করতে পারব?

উত্তর

আপনার মামাতো বোন আপনার মায়ের দুধ পান করার কারণে সে আপনার দুধ বোন হয়েছে। কিন্তু এ কারণে তার মা অর্থাৎ আপনার মামির সাথে আপনার দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি। তাই এক্ষেত্রে মামাতো বোন মাহরাম হলেও তার মা আপনার মাহরাম নয়। সুতরাং তার সাথে আপনার পর্দা আবশ্যক।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬২; ফাতহুল কাদীর ৩/৩১১; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২১৪

শেয়ার লিংক

ফারযানা - শ্যামবাগ, ঢাকা

৫৫৭০. প্রশ্ন

গত বছর লকডাউনের সময় আমার বিবাহ হয়। বিবাহের সময় মোহর ধার্য করা হয়েছিল দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। এর মধ্যে আমার স্বামী নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিল। কিছুদিন আগে আমরা জানতে পারি যে, আমার স্বামী বেশ কিছু অবৈধ কাজের সাথে জড়িত। তাই পরামর্শক্রমে আমি আমার স্বামীর কাছে সত্তর হাজার টাকার বিনিময়ে খোলার আবেদন করি। সে এতে সম্মত হয়ে উক্ত টাকার বিনিময়ে খোলা করে। তখন নগদ আমি তাকে সত্তর হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন সে আমাকে মোহর বাবদ যে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিল সেটারও দাবি করছে এবং বলছে এটা তার পাওনা। অথচ সে আমাকে মোহরের যে এক লক্ষ টাকা দেয়নি আমি সেটারও দাবি ছেড়ে দিয়েছি। এক্ষেত্রে এখন আমার করণীয় কী? জানালে খুব উপকৃত হতাম।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে সত্তর হাজার টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটাই আপনার স্বামীর প্রাপ্য। আর আপনার স্বামী আপনাকে মোহর বাবদ যে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পূর্বেই আদায় করে দিয়েছে সেটার মালিক আপনিই। খোলার পূর্বে শর্ত না করায় খোলা হয়ে যাওয়ার পর এখন স্বামীর জন্য ঐ টাকা ফেরত চাওয়া জায়েয নয়। অবশ্য মোহরের যে এক লক্ষ টাকা অনাদায়ী ছিল তা খোলার কারণে বাতিল হয়ে গিয়েছে। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি নিজেই যার দাবি ছেড়ে দিয়েছেন।

-কিতাবুল আছল ৪/৫৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১০১; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/২০৩; ফাতহুল কাদীর ৪/৭৬

শেয়ার লিংক

আমিরুল ইসলাম - ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

৫৫৭১. প্রশ্ন

আমি একটি সরকারি অফিসে চাকরি করতাম। গত দুই সপ্তাহ আগে আমার চাকরি চলে যায়। তখন আমি মান্নত করেছিলাম, আগামী বিশ দিনের ভেতর যদি আমার নতুন চাকরি হয়ে যায় তাহলে আমি আল্লাহর রাস্তায় একটা ছাগল সদকা করব। আল্লাহর রহমতে এখন একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। ওদিকে আমার এক দরিদ্র আত্মীয় কিছুদিন আগে আমার কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল। আমি চাচ্ছি যে, তাকে একটা ছাগলের মূল্য পরিমাণ টাকা মান্নত আদায়ের নিয়তে দিয়ে দিব। জানার বিষয় হল, আমার এই কাজ কি সহীহ হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছাগল না দিয়ে উক্ত আত্মীয়কে (যদি সে যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয়) এক বছর বয়সী একটি ছাগলের মূল্য দিলেও আপনার মান্নত আদায় হয়ে যাবে।

-মুখতারাতুন নাওয়যিল ২/২৪৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪০

শেয়ার লিংক

যায়েদ - রাজশাহী

৫৫৭২. প্রশ্ন

এক বছর আগে আমি কুরআনের কসম খেয়ে বলেছিলাম, আগামী বছরেই আমি আমার ফরয হজ্বটি আদায় করব। কিন্তু বিভিন্ন কারণে গত বছরও হজ্বটি আদায় করা হয়নি। এখন জানার বিষয় হল, আমার ঐ কথার কারণে কি কসম হয়েছে? এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত কথার দ্বারা কসম সংঘটিত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ঐ বছর হজ্ব না করায় কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে। এখন আপনাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করতে হবে। কসম ভঙ্গের কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে দুই বেলা তৃপ্তিসহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা তাদেরকে এক জোড়া করে পরিধেয় বস্ত্র দান করা। এ দুটির কোনোটির সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিনটি রোযা রাখতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; জামেউল মুযমারাত ৪/৭১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১২; ইমদাদুল আহকাম ৩/৩৩

শেয়ার লিংক