আমার জামার নিচের অংশে এক শিশুর পেশাব লেগেছিল। তখন জামাটি ধোয়া হয়নি। পরে ভেজা স্থান শুকিয়ে যায় এবং কোন জায়গায় পেশাব লেগেছিল তাও ভুলে যাই। এখন জামাটি নিয়ে নামায পড়তে চাইলে তা কীভাবে পবিত্র করব?
আমার জামার নিচের অংশে এক শিশুর পেশাব লেগেছিল। তখন জামাটি ধোয়া হয়নি। পরে ভেজা স্থান শুকিয়ে যায় এবং কোন জায়গায় পেশাব লেগেছিল তাও ভুলে যাই। এখন জামাটি নিয়ে নামায পড়তে চাইলে তা কীভাবে পবিত্র করব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নাপাকির স্থান যেহেতু নিশ্চিতভাবে জানা নেই। তাই জামাটির নিচের অংশের যতটুকুতে পেশাব লেগেছে বলে সন্দেহ হয় পুরোটাই ধুতে হবে, যেন নাপাকির স্থান নিশ্চিতভাবে ধোয়া হয়ে যায়।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৭৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৬; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৮শেয়ার লিংক
অনেক মানুষকে দেখি, নামাযের মধ্যে কল আসলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে আগে দেখে নেয় কার কল আসল তারপর মোবাইল বন্ধ করে। এটা কি ঠিক? এটা কি আমলে কাছীর বলে গণ্য হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
মোবাইল ফোন দেখে দেখে এক হাত দ্বারা বন্ধ করলে নামায নষ্ট হবে না। কেননা এটা আমলে কাছীরের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে কার কল আসল এটা ইচ্ছাকৃত দেখার কারণে নামায মাকরূহ হবে। কেননা নামায অবস্থায় কোনো লেখা দেখা এবং বোঝার চেষ্টা করা মাকরূহ। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি। কল আসামাত্রই মোবাইলটি এক হাত দিয়ে দ্রুত বন্ধ করে দিবে। বন্ধ করার জন্য বাটন দেখার প্রয়োজন হলে দেখতে পারবে।
প্রকাশ থাকে যে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের কর্তব্য হল, মসজিদে প্রবেশের পূর্বেই অথবা অন্ততপক্ষে নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়া। কেননা নামাযের মধ্যে মোবাইল বেজে উঠলে অন্য নামাযীদেরও ব্যাঘাত ঘটে। তাই যথাসময়ে ফোন বন্ধ করার প্রতি যত্নবান হতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; শরহুল মুনইয়াহ, পৃষ্ঠা : ৪৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪, ৬২৪শেয়ার লিংক
ক) ফজরের নামাযে আওসাতে মুফাসসাল পড়লে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি? আর এই তিলাওয়াত নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি সমালোচনা করে যে, নামায হবে না তাহলে সে শরীয়তের দৃষ্টিতে গুনাহগার হবে কি না?
খ) শরীয়তের মধ্যে কবর দেখভাল করার সঠিক পদ্ধতি কী? দলিল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
ক) ফজর নামাযে সাধারণ অবস্থায় তিওয়ালে মুফাসসালের সূরাগুলো থেকে তিলাওয়াত করা সুন্নত। অবশ্য তিওয়ালে মুফাসসালের সূরা সমপরিমাণ অন্য জায়গা থেকে পড়লেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় ফজর নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল থেকেই তিলাওয়াত করতেন। আবার মুফাসসালাতের বাইরে থেকেও এ ধরনের লম্বা কিরাত পড়তেন। এ মর্মে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
সিমাক ইবনে হারব বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা.কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ... রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযে সূরা কাফ এবং এ ধরনের অন্য সূরাও পাঠ করতেন।-সহীহ মুসলিম ১/১৮৭
সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আবু বারযা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর নামাযে ষাট থেকে একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতেন।-সহীহ মুসলিম ১/১৮৭
তাই কোনো ওজর না থাকলে ফজর নামাযে অধিকাংশ সময় তিওয়ালে মুফাসসাল থেকেই পড়া উচিত।
আর ওজর অবস্থায় কিংবা কখনো কখনো ফজর নামাযেও ছোট সূরা পড়া যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর নামাযে কিসারে মুফাসসাল থেকে সূরা যিলযাল তিলাওয়াত করেছেন বলে প্রমাণিত আছে।-সুনানে আবু দাউদ ১/১২৩
অনুরূপ বাকি চার ওয়াক্তের কিরাতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো মুফাসসালাতের বাইরে থেকেও তিলাওয়াত করেছেন এমন বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে।&
তাই কোনো ইমাম কখনো যদি মুফাসসালাতের বাইরে থেকে তিলাওয়াত করেন তাহলে এ নিয়ে আপত্তি করা ঠিক নয়। আর এ কারণে নামায হবে না এমন কথা তো সম্পূর্ণ ভুল।
বিশেষত যেখানে মুসল্লীদের অধিকাংশ শ্রেণী এমন হয়, যাদের জন্য দীর্ঘ কিরাতে নামায পড়া কষ্টসাধ্য, যেমন অধিকাংশ মুসল্লী ফ্যাক্টরির শ্রমিক বা বয়োবৃদ্ধ সেক্ষেত্রে ইমামের জন্য তাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে কেরাত পড়া উচিত। (ইলাউস সুনান ৪/২৪)
তবে এ ধরনের মুসল্লীদেরকেও সুন্নতের গুরুত্ব ও ফযীলত বলে কিরাতের ন্যূনতম পরিমাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা উচিত।
উত্তর : খ) কবর ও কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে জীবিতদের উপর গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল, কবর ও কবরস্থানকে সর্বপ্রকার শিরক-বিদআত ও শরীয়তবিরোধী কর্মকান্ড থেকে মুক্ত রাখা।
কবরকে সিজদা না করা, চুম্বন না করা, তাজীম-সম্মানার্থে মাথা না ঝুকানো, কবরওয়ালার কাছে কিছু না চাওয়া। কেননা কবরের সাথে এসব আচরণ করা সম্পূর্ণ হারাম এবং এগুলোর কোনো কোনোটি শিরক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (অর্থ) আল্লাহ তাআলা ইহুদ-নাসারাকে ধ্বংস করুন! তারা তাদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৩০
অপর বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলা ঐ সকল লোকের প্রতি অভিসম্পাত করুন, যারা তাদের নবীগণের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়ে নিয়েছে।-সুনানে নাসায়ী ১/২২৩
তদ্রূপ কবরকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার উরস-উৎসব না করা, আলোকসজ্জা, মোমবাতি-আগরবাতি না জ্বালানো। কেননা কবরকে কেন্দ্র করে এগুলো করাও হারাম।
কবরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনকারীদের প্রতি হাদীস শরীফে অভিসম্পাত এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনকারীদের উপর লানত করেছেন।-সুনানে নাসায়ী ১/২২৩
কবরকে পাকাপোক্ত ও চাকচিক্যময় না করা। কবরের উপর ছাদ না করা। কেননা হাদীসে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
জাবের রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরকে পাকাপোক্ত ও চুনকর্ম করতে নিষেধ করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৯৭০
মোটকথা কবরকে সব ধরনের বিদআত রুসূমাত থেকে মুক্ত রাখা জীবিতদের কর্তব্য।
দ্বিতীয়ত কবরের বাহ্যিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকটি। সেক্ষেত্রে কর্তব্য হল মৃত ব্যক্তির সম্মানহানী হয় এমন কোনো আচরণ কবরের সাথে না করা। যেমন কবরের উপর চলাচল করা, বসা ইত্যাদি।
আবু মারসাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কবরে বসবে না এবং কবরকে সামনে রেখে নামায পড়বে না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৯৭২
অন্য বর্ণনায় এসেছে, উমারা ইবনে হাযম রা. বলেন, একদা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কবরের উপর বসা দেখতে পেয়ে বললেন, কবর থেকে নেমে যাও। কবরস্থ ব্যক্তিকে কষ্ট দিও না।-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী , মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৯১
জামে তিরমিযীতে জাবের রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপর চলাচল করতে নিষেধ করেছেন।
অনুরূপ কবরে যেন গরু-ছাগল প্রবেশ না করে এবং কবর অপবিত্র না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা। কবরের উপর গাছ তরু-লতা বা ঘাস ইত্যাদি থাকলে তা না কাটা। কেননা এগুলোর তাসবীহাত দ্বারা মৃতের উপকার হতে পারে। অবশ্য ঘন জঙ্গল হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করা যাবে। অনুরূপ শুকনো ঘাস, ডালপালা থাকলে তা পরিষ্কার করা যাবে।-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৭৬
বাহ্যিক পরিচর্যার আরেকটি বিষয় হল, বৃষ্টি বা কোনো কারণে কবরের মাটি সরে গেলে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি ভরাট করে দেওয়া যাবে। অনুরূপ কবরের চিহ্ন মুছে গেলে পাথরখন্ড বা কোনো কাঠ ইত্যাদি দিয়ে চিহ্নিতও করা যাবে। এরূপ চিহ্নিত করে রাখা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। দেখুন : সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩১৯৮
জীবিতদের প্রতি হাদীসের আরেকটি নির্দেশনা হল, কবর যিয়ারত করা। হাদীস শরীফে কবর যিয়ারতের প্রতি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা তা মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৬
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তা আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩২১৬
তাই মৃত্যুর কথা স্মরণ হওয়ার দ্বারা একদিকে যেমন যিয়ারতকারীর ঈমানী ফায়েদা হয় তেমনি এতে মৃতেরও বড় উপকার হয়। কেননা মৃত ব্যক্তি যিয়ারতকারীর দুআ-ইস্তিগফার ও নেক আমলের ইসালে ছওয়াব দ্বারা উপকৃত হয়।
শেয়ার লিংক
ধুমপান করার হুকুম কী এবং জর্দা দিয়ে পান খাওয়া যাবে কি না? আর সিগারেট অথবা জর্দা দিয়ে পান খাওয়া লোক যদি নামায পড়ে এবং নামাযের মধ্যে মুখ থেকে গন্ধ আসে তাহলে ঐ নামাযের হুকুম কী হবে? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।
ধুমপান করা নাজায়েয। এতে আর্থিক অপচয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত ক্ষতিও রয়েছে। জেনে শুনে নিজের জান-মালের ক্ষতি করা গুনাহ। অধিকন্তু ধুমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে অন্যের কষ্ট হয়, যা পৃথক একটি গুনাহ। তাই ধুমপান থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আর দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থায় নামাযে দাঁড়ানো মাকরূহে তাহরীমী। বরং এ অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করাও মাকরূহ। হাদীস শরীফে ধুমপানের চেয়ে অনেক কম দুর্গন্ধ বস্ত্ত কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
অতএব বিড়ি-সিগারেটের তীব্র দুর্গন্ধের সাথে মসজিদে প্রবেশ করা যে নিষিদ্ধ হবে তা তো সহজেই অনুমেয়। অবশ্য এ কারণে নামায ত্যাগ করা যাবে না এবং মসজিদে গমনাগমনও বন্ধ করা যাবে না। বরং অতি দ্রুত এ বদ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। আর নামায আদায়ের পূর্বে এবং মসজিদে প্রবেশের আগে ভালো করে মেসওয়াক বা ব্রাশ করে দুর্গন্ধ দূর করে নিতে হবে।
আরো প্রকাশ থাকে যে, ধুমপানের দুর্গন্ধ নিয়েও যদি কেউ নামায পড়ে নেয় তাহলে তার নামায আদায় হয়ে যাবে।
আর পানের সাথে জর্দা বা তামাক খাওয়াও ডাক্তারি মতে শারীরিক ক্ষতির কারণ। তাই যথাসম্ভব এ থেকেও বিরত থাকা উচিত। আর কারো ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর প্রমাণিত হলে তার জন্য তা খাওয়া নাজায়েয হবে।
উল্লেখ্য যে, যারা পান-জর্দা খায় তাদের জন্যও নামায আদায়ের পূর্বে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া কর্তব্য। যেন পানের কণাগুলো বের হয়ে যায় এবং গন্ধও না থাকে।
আরো উল্লেখ থাকে যে, মিসওয়াক ইসলামের দায়েমী একটি সুন্নত। এ সুন্নতটির প্রতি যত্নবান হয়ে দাঁত এবং মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য।
-ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দাইমা ১৩/৫৬; আলফাতাওয়াশ শারইয়্যাহ ১০/১৪৫; রদ্দুল মুহতার ১/৬৬১শেয়ার লিংক
আমাদের গ্রাম ফেনী শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে আমি গ্রামের বাড়ি থেকে ফেনী শহর পর্যন্ত আসি। তখন যোহরের সময় হলে দুই রাকাত কসর পড়ে গাড়িতে উঠি। কিছুদূর যাওয়ার পর বাড়ি থেকে একটি জরুরি ফোন আসে। ফলে সেখান থেকে বাড়ি চলে আসি। বাড়ি ফেরার পরও যোহরের সময় বাকি ছিল। এতে আমার মনে সংশয় সৃষ্টি হয় যে, আমি সফরের উদ্দেশে বের হলেও যেহেতু সফরসম দূরত্ব অতিক্রম করার আগেই যোহরের সময়ের মধ্যে বাড়ি ফিরে এসেছি তাই আমাকে পুনরায় ঐ যোহরের নামায পড়তে হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যখন যোহরের নামায আদায় করেছেন তখন যেহেতু আপনি সফর মুলতবি করেননি বরং ঐ সসয় মুসাফির অবস্থায়ই ছিলেন তাই আপনার ঐ যোহর নামায যথাযথভাবে আদায় হয়েছে। তাই পরবর্তীতে যোহরের ওয়াক্তের মধ্যে সফর বাতিল করে মুকীম হয়ে গেলেও ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ২/১২২, ১১৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫১৭শেয়ার লিংক
জনৈক দরিদ্র মহিলা কসমের কাফফারা হিসাবে তিন দিন রোযা রাখে। তৃতীয় দিন রোযা অবস্থায় তার অপবিত্রতা শুরু হয়। ফলে পবিত্র হওয়ার পর সে আরো একদিন রোযা রাখে। জানতে চাই, তার কসমের কাফফারা কি আদায় হয়েছে?
না, মহিলাটির কসমের কাফফারা আদায় হয়নি। কেননা রোযার মাধ্যমে কসমের কাফফারা আদায়ের জন্য তিন দিন লাগাতার রোযা রাখা শর্ত। মাঝে বিরতি হলে তা দ্বারা কাফফারার রোযা আদায় হয় না।
মহিলাটি বাস্তবেই যদি দশজন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খানা খাওয়ানোর অথবা তাদেরকে এক জোড়া করে বস্ত্র দান করার সামর্থ্য না রাখে তাহলে পুনরায় তাকে লাগাতার তিনটি রোযা রাখতে হবে।
-সূরা মায়েদ : ৮৯; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৭/১৪; কিতাবুল আছার ২/৬০০; কিতাবুল আছল ২/২৯৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৭৩শেয়ার লিংক
আমাদের একটি ঔষধ ফ্যাক্টরি আছে। আমার আববা বছরান্তে যাকাত প্রদান করে থাকেন। একজন আলেম বলেছেন, যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে ঔষধ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি ইত্যাদির যাকাত দিতে হবে না। জানতে চাই, ঐ হুজুর কি ঠিক বলেছেন?
জ্বী! ঐ আলেম ঠিকই বলেছেন। ঔষধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কল-কারখানা ও যন্ত্রপাতির যাকাত দিতে হবে না। তবে ঔষধ তৈরির জন্য কাঁচামাল, প্রস্ত্ততকৃত ঔষধ এবং আয়ের উপর যাকাত দিতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ২/১২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৬৯শেয়ার লিংক
একজন সাধারণ সরকারী চাকুরিজীবীর নিজের প্রয়োজন অতিরিক্ত তেমন কোনো অর্থ নেই। কিন্তু সরকারী চাকুরিজীবী হিসেবে তো প্রভিডেন্ট ফান্ডে তার একটা বড় অংক জমা হয়, যা সে রিটায়ার্ডের পরে পাবে। লোকটির বেতনের টাকা দিয়ে চলা খুব মুশকিল। কিছু ঋণ আছে। এখন সে ঋণ আদায় ও খরচের জন্য যাকাত নিতে পারবে কি? এ ব্যক্তিকে যাকাত দিতে কোনো অসুবিধা আছে কি? প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ এক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কি? প্রকাশ থাকে যে, সরকার বাধ্যতামূলকভাবে যতটুকু কেটে রাখে ততটুকুই সে জমা করে এর বেশি জমা করে না।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। সরকারী বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা যেহেতু চাকুরি অবস্থায় চাকুরিজীবীর হস্তগতই হয় না এবং এতে তার মালিকানাও প্রতিষ্ঠিত হয় না তাই এই ফান্ড থাকা সত্ত্বেও লোকটি দরিদ্র বা ঋণগ্রস্ত হলে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে। এই ফান্ডের টাকা তার যাকাত গ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধক হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল মুফতীন পৃষ্ঠা : ৩৯৪; ইমদাদুল আহকাম ২/১৬শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তির নিজের কোনো অর্থ-সম্পদ নেই। কিন্তু পিতার ইন্তিকালের কারণে মিরাসের একটি বড় অংশ সে পাবে। যদিও এখনও তা বণ্টন করা হয়নি। ঐ বক্তিকে কি যাকাত দেওয়া যাবে?
মিরাস বণ্টন না হলেও উত্তরাধিকার সম্পদের মালিক ওয়ারিশগণ। তাই লোকটি পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে যা পাবে তা যদি নেসাব পরিমাণ হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয় তবে এ কারণে সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না।
তাকে যাকাত দিলে আদায়ও হবে না। অবশ্য উত্তরাধিকার সম্পত্তি যদি নেসাব পরিমাণ বা প্রয়োজন অতিরিক্ত না হয় অথবা তার নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত এমন কোনো সম্পদও না থাকে যার সাথে মিলে নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তবে সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে।-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দা : ১০৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৪২শেয়ার লিংক
আমি এক মসজিদে ইমামতি করি। দু বছর আগে আমাদের এলাকার এক ধনাঢ্য ব্যক্তি মারা যায়। তার উপর হজ্ব ফরয ছিল। কিন্তু সে হজ্ব করেনি। তাই ওয়ারিসরা আমাকে তার বদলি হজ্ব করার জন্য অনুরোধ করছে। আর আমার উপর হজ্ব ফরয না হওয়ার কারণে আমি হজ্ব করিনি। এখন জানার বিষয় হল, আমি ঐ ব্যক্তির বদলি হজ্ব করতে পারব কি না? দয়া করে জানাবেন।
বদলি হজ্বের জন্য এমন ব্যক্তিকে প্রেরণ করা উত্তম যিনি নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছেন এবং হজ্বের আহকামও ভালোভাবে জানেন। আর যে ব্যক্তি হজ্বে যায়নি এবং তার উপর হজ্ব ফরযও নয় তাকে বদলি হজ্বের জন্য পাঠানো মাকরূহ তানযিহি তথা অনুত্তম। তবে এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ্ব করালেও হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৮/১৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৭২; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৩; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৫২; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৭শেয়ার লিংক
১৯৯০ সালে রমযানে আমরা প্রায় বিশজন একসাথে উমরাহ করতে গিয়েছিলাম। আগে মদীনায় রওযা শরীফ যিয়ারত করে তারপর আমরা মক্কায় যাই। মক্কায় রওনা হওয়ার সময় দলের প্রায় সবাই মদীনা মুনাওয়ারা হতে ইহরাম বেঁধে নেন। শুধু আমরা চার/পাঁচজন ইহরাম ছাড়াই মদীনা মুনাওয়ারা থেকে বের হই। উদ্দেশ্য নির্ধারিত মীকাত হতে ইহরাম বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করব। কিন্তু ড্রাইভার ইহরাম ছাড়া কেউ নেই মনে করে মীকাতে গাড়ি না থামিয়ে আমাদেরকে ভেতরে নিয়ে যায়। টের পাওয়ার পর আমরা সাথে সাথেই মীকাতে ফিরে এসে ইহরাম বাঁধি অতপর উমরাহ করি। প্রথমবার ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করার কারণে আমাদের উপর দম ওয়াজিব হয়েছিল কি? সাথে একজন আলেম ছিলেন তিনি বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। তার কথা কি ঠিক?
হ্যাঁ, ঐ আলেম ঠিকই বলেছেন। ইহরাম ব্যতীত মীকাতের ভেতর প্রবেশ করলেও উমরার কাজ শুরু করার আগেই যেহেতু মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধেছেন তাই আপনাদের ভুল সংশোধন হয়ে গেছে এবং দমও মাফ হয়ে গেছে। তাই এখন আপনাকে কোনো জরিমানা দম দিতে হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৩/৪৮; ফাতহুল কাদীর ৩/৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩৯৬শেয়ার লিংক
গত বছর আমি ইহরাম অবস্থায় ভুলে আমার মোচ কেটে ফেলি। জানতে চাই, এ কারণে আমার উপর কি কোনো সদকা বা দম ওয়াজিব হয়েছিল? আর তা দেশে এসে আদায় করলে চলবে নাকি হেরেমে আদায় করা জরুরি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর এক সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্ধারিত খাদ্য বা তার মূল্য আদায় করা ওয়াজিব হয়েছে। আর তা দেশে আদায় করলেও চলবে। হেরেমের এলাকায় আদায় করা জরুরি নয়। তবে হেরেমে আদায় করা উত্তম।
-গুনইয়াতুন নাসিক ২৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৬; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৯৫; কিতাবুল আছল ২/৪৩২শেয়ার লিংক
হজ্বের মধ্যে কোনো ত্রুটির কারণে দম ওয়াজিব হলে তা কি হেরেমের ভিতরেই জবাই করতে হবে? নাকি দেশে ফিরে জবাই করলেও চলবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
হজ্বের সকল প্রকার দম হেরেমের ভিতরেই জবাই করা জরুরি। হেরেমের বাইরে দমের নিয়তে জবাই করলে তা আদায় হবে না। তাই দম আদায় না করে দেশে এসে গেলে কারো মাধ্যমে দমের পশু হেরেমের মধ্যেই জবাই করাতে হবে।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪; ফাতহুল কাদীর ২/৪৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৮শেয়ার লিংক
আমাদের পরিবারে কুরবানীর গোশত দিয়ে গরীব মহিলাদেরকে দাওয়াত খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে। কিন্তু আমি ছোট বেলা থেকে লক্ষ্য করেছি, হিন্দু মহিলাদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া হয় না। তাদের জন্য পৃথক গোশত আনিয়ে নেওয়া হয়। জানতে চাই, হিন্দুদেরকে কুরবানীর গোশত দিতে অসুবিধা আছে কি?
কুরবানীর গোশত হিন্দু বা অমুসলিমকেও দেওয়া জায়েয। এতে অসুবিধার কিছু নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; ইমদাদুল আহকাম ৪/২০৬শেয়ার লিংক
আমার আববু কুরবানীর পশু ঈদের আগের দিন ক্রয় করেন। গত বছর ঈদের দুদিন আগে আমাদের বাসায় ডাকাতি হয়। তাই আববু গত বছর কুরবানী দিতে পারেননি। তবে তখন আববুর হাতে নগদ টাকা না থাকলেও বাড়িতে দেড় বিঘা জমি আছে, যা থেকে বাৎসরিক আয় আসে বিশ হাজার টাকা। ঐ বিশ হাজার টাকা না হলেও আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। গত বছর কি আববুর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব ছিল? যদি হয়ে থাকে তাহলে এখন কী করবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ দেড় বিঘা জমির আয় না হলেও যেহেতু আপনাদের সংসার চলে যায় তাই ঐ দেড় বিঘা জমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ। এ সম্পদের কারণে আপনার পিতার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। কিন্তু তিনি যেহেতু গত বছর কুরবানী করেননি তাই ঐ বছরের জন্য নূন্যতম এক বছর বয়সী একটি ছাগল বা তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৬শেয়ার লিংক
একজনকে বলতে শুনেছি, ছয় মাসের ছাগল যদি এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে এক বছর বয়সী ছাগলের মতো দেখায় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এই কথাটি কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
আপনার শোনা কথাটি ঠিক নয়। ছাগল দ্বারা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য তা অন্তত এক বছর বয়সী হওয়া জরুরি। হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার কারণে এক বছরের ছাগলের মতো দেখালেও ১২ মাসের কম বয়সী ছাগল দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে না। অবশ্য ছয় মাস বয়সী ভেড়া বা দুম্বা যদি হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার কারণে এক বছর বয়সীর মতো দেখায় তাহলে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে। হাদীস শরীফে জাবের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উট পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে ষষ্ঠ বছরে উপনীত না হলে আর গরু-মহিষ দু বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ না করলে আর ছাগল-ভেড়ার এক বছর পূর্ণ না হলে তোমরা তা দ্বারা কুরবানী করো না। তবে এ বিষয়টি যদি তোমাদের জন্য কঠিন হয় তাহলে ছয়মাসের দুম্বা, ভেড়া কুরবানী করতে পারবে।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৩৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৬৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় প্রসিদ্ধ আছে যে, বাকিতে কুরবানীর পশু ক্রয় করলে কুরবানী সহীহ হয় না। কুরবানীর পশু নগদমূল্যে ক্রয় করতে হবে। বাকিতে ক্রয় করলেও কুরবানীর আগে তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় কুরবানী সহীহ হবে না। এই কথাটি কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন। বাকিতে পশু ক্রয় করলেও তা দ্বারা কুরবানী জায়েয। আর বাকিতে ক্রয় করলে কুরবানীর আগেই মূল্য পরিশোধ করতে হবে এ কথাও ঠিক নয়। নগদ বা বাকি যেভাবেই পশু ক্রয় করা হোক তা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।
শেয়ার লিংক
আমি প্রতিবছরই কুরবানী করি। গত বছর কুরবানীর জন্য আঠারো হাজার টাকা দিয়ে একটি গাভি ক্রয় করি। পরে দেখা গেল, গাভিটি অন্তসত্ত্বা। বাচ্চা হওয়ার সময় অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আমাদের কেউ কেউ গাভিটি কুরবানী করতে বাধা দিল। তখন বিশ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি গরু কিনে কুরবানী করি। প্রথম ক্রয়কৃত গাভিটি কুরবানী না করে নতুন গরু কিনে কুরবানী করাতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন। এছাড়া ঐ গাভি ও তার বাচ্চার মালিক কি আমি, নাকি তা সদকা করতে হবে?
প্রথম ক্রয়কৃত গাভিটির বাচ্চা হওয়ার সময় যেহেতু নিকটবর্তী ছিল তাই তা কুরবানী না করে অন্য গরু দ্বারা কুরবানী করা ঠিকই হয়েছে। কেননা বাচ্চা হওয়ার সময় নিকটবর্তী এমন গাভি দ্বারা কুরবানী করা মাকরূহ। তাই আপনার ঐ সিদ্ধান্ত মাসআলা সম্মতই হয়েছে। এখন ঐ গাভি ও বাছুরের মালিক আপনি। তা সদকা করতে হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৭; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০০শেয়ার লিংক
কুরবানীর পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি আমরা নিজেরা পরিষ্কার করতে পারি না বলে সাধারণত এলাকার কোনো মহিলাকে এ ভিত্তিতে পরিষ্কার করতে দেই যে, পারিশ্রমিক হিসাবে তাকে ৫০ টাকা এবং নাড়ি-ভুঁড়ির এক তৃতীয়াংশ দেওয়া হবে। জানার বিষয় হল, এ ধরনের চুক্তি করা কি বৈধ? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কুরবানীর পশুর কোনো অংশ বিনিময় বা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়। আলী রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর চামড়া ছাড়ানোর পারিশ্রমিক হিসেবেও চামড়ার কোনো অংশ প্রদান করতে নিষেধ করেছেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭১৭
অতএব প্রশ্নোক্ত চুক্তি সহীহ নয়। নাড়ি-ভুঁড়ি পরিষ্কারের পারিশ্রমিক হিসেবে ভুড়ির অংশবিশেষও দেওয়া যাবে না। বিগত বছরগুলোতে এমন করে থাকলে যে পরিমাণ অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হয়েছে তার ন্যায্যমূল্য সদকা করে দিতে হবে।
আর সামনে থেকে ভুঁড়ি পরিষ্কারের পারিশ্রমিক হিসেবে ভুড়ির অংশবিশেষ দেওয়ার শর্ত করবে না। বরং তার শ্রমের বিনিময়ে টাকা দিয়ে দিবে। চুক্তির সময় গোশত বা ভুড়ি দেওয়ার শর্ত না থাকলে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়ার পর কুরবানীর পশুর ভুড়ি বা গোশত হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
-সহীহ মুসলিম ৩/৩৫০; সহীহ বুখারী (ফাতহুল বারী) ৩/৬৫০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৪; ইলাউস সুনান ১৭/২৬৩শেয়ার লিংক
আমার নাবালেগ মেয়ের সাথে আমার বন্ধু রায়হানের নাবালেগ ছেলে রাকিবের বিবাহ হয় গত দুই বছর আগে। কিছুদিন আগে তার সাথে আমার ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে সে তার নাবালেগ ছেলের পক্ষ থেকে আমার মেয়েকে তালাক দেয়। কিন্তু এখন পুনরায় আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। তাই সে তার ছেলের সাথে আমার মেয়ের পূর্বের বিবাহকে বহাল রাখতে চাচ্ছে। আমার জানার বিষয় হল, তার পূর্বের ঐ তালাক কি সহীহ হয়েছে?
তালাক দেওয়ার অধিকার শুধু স্বামীর। ছেলে নাবালেগ হলেও পিতা ছেলের স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার রাখেন না। তাই রায়হান সাহেব তার নাবালেগ সন্তানের স্ত্রীকে যে তালাক দিয়েছেন তা কার্যকর হয়নি। অতএব আপনার মেয়ের ঐ বিবাহ পূর্বের মতোই বহাল আছে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫৪; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ২৯/১৪শেয়ার লিংক
আমার এক বন্ধু গত তিন মাস আগে বিয়ে করেছে। কিন্তু বউকে নিজের বাড়িতে তুলে আনেনি। কারণ বাড়ি নির্মাণ কাজ এখনো পুরাপুরি শেষ হয়নি। তাই আরো কয়েক মাস পরে তুলে আনবে। তবে সে তার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া-আসা করে। এখন তার স্ত্রী তার কাছে খরচাদি চেয়েছে। তাই জানার বিষয় হল, স্ত্রীর খরচাদি দেওয়া তার উপর জরুরি কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রীর খরচাদি দেওয়া স্বামীর উপর ওয়াজিব। কেননা এক্ষেত্রে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর বাড়ি যেতে অসম্মতি নেই। স্বামীই বরং স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেনি। সুতরাং এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামী থেকে খোরপোষ দাবি করতে পারবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/২৭৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৭৫শেয়ার লিংক
জনৈক ব্যক্তিকে এক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে তার কবরের উপর বাঁশ, গাছ ইত্যাদি উদগত হয়। এখন জানার বিষয় হল, উক্ত বাঁশ, গাছ কাটার হুকুম কী? কাটলে তার হকদার কে হবে? মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ নাকি কবরস্থান ফান্ড? জানিয়ে বাধিত করবনে।
প্রশ্নোক্ত কবরস্থানটি যদি ওয়াকফিয়া হয় তাহলে বাঁশের মালিক হবে ঐ কবরস্থান নিজে। মৃতের ওয়ারিছদের জন্য তা নেওয়া জায়েয হবে না। কবরস্থান কর্তৃপক্ষ ঐ বাঁশ কেটে তা কবরস্থানের কল্যাণে ব্যয় করতে পারবে। আর যদি কবরের জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে জায়গার মালিকই ঐ বাঁশের মালিক হবে। তখন তারা নিজ প্রয়োজনে তা কাটতে পারবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৩শেয়ার লিংক
আমার এক বন্ধুকে আমি আমার মোটর সাইকেল ব্যবহারের জন্য দেই। সে এক দোকানের সামনে নিয়ে রাখে। সেখান থেকে গাড়িটি চুরি হয়ে যায়। আমার দাবির কারণে বন্ধু আমাকে এর আর্থিক জরিমানা প্রদান করে। এখন আমার জানার বিষয় হল, সে যে জরিমানা আমাকে দিয়েছে তা কি আমার জন্য বৈধ হবে। অনুগ্রহ করে জানাবেন।
প্রশ্নের কথায় মনে হচ্ছে মোটর সাইকেলটি ঐ বন্ধুর অবহেলার কারণেই চুরি হয়েছে। যদি এমনটিই হয়ে থাকে তবে তার থেকে জরিমানা আদায় করা আপনার জন্য জায়েয হয়েছে। আর যদি এটি হেফাযতের ক্ষেত্রে তার কোনো ত্রুটি না থাকে; বরং সে তা যথাযথ হেফাযত করা সত্ত্বেও চুরি হয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে তার থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা জায়েয হয়নি। অবশ্য এক্ষেত্রেও আপনার বন্ধু যদি নিজ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু দেয় তবে তা গ্রহণ করা আপনার জন্য জায়েয।
-শরহুল মাজাল্লাহ ৩/২২৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৬৬শেয়ার লিংক
আমি বিগত ২০০৯ সালে ই-লিংকস নামক একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে জয়েন করি এবং ৩ বছর কাজ করি। তাতে আমার কাছে ২ লক্ষ টাকার মতো সঞ্চয় হয়েছে। প্রশ্ন হল, এই টাকা আমার জন্য হালাল হবে নাকি হারাম?
কোম্পানির প্রোডাক্ট : বায়ো এনার্জেটিক ব্রেসলেট। প্রজেক্ট সিস্টেম : কোম্পানি থেকে কেউ বেনিফিটেড হতে চাইলে তাকে প্রথমে একটা প্রোডাক্ট ক্রয় করতে হবে। প্রডাক্ট ক্রয় করলে সে কোম্পানির একজন মেম্বার হয়ে যাবে। মেম্বার হওয়ার জন্য আলাদা কোনো চার্জ দিতে হয় না বা টাকা দিয়ে মেম্বার হওয়া যায় না। বরং প্রোডাক্ট ক্রয়ের মাধ্যমেই মেম্বার হতে হয়। মেম্বার হওয়ার পর যদি একটি প্রোডাক্ট সেল করাতে পারি তাহলে সাথে সাথে এসপি (ডাইরেক্ট সেল) বাবদ ৩৫০/- টাকা দেওয়া হয়। মনে করি, আমি একটি প্রোডাক্ট সেল করার কারণে ডিরেক্ট সেল বাবদ আমাকে ৩৫০/- টাকা দিয়ে দিল কোনো শর্ত ছাড়া। আবার আরেকটি সেল করার দ্বারা আবার কোনো শর্ত ছাড়া আমাকে ৩৫০/- টাকা দিয়ে দিত। এবং আমার বাম ও ডানে জোড়া মিলার কারণে আরো ৫০০/- টাকা দিয়ে দিত।
এখন আমার নিচে যদি সেল হয় তাহলে যে স্পন্সর করবে সে সেলের জন্য ৩৫০/- টাকা পেয়ে যাবে। এবং আমার ডান-বামে জোড়া মিলে যাওয়ার কারণে আমি কমিশন পেয়ে যাব। মোটকথা হল আমি ঐ কোম্পানিতে ৩ বছর ছিলাম। তাতে যা উপার্জন করেছি তার ৯৫ ভাগ আমি সবার মাঝে খরচ করেছি (যা সবাই করে না।) এখন ৬ মাস আগে আমি তা ছেড়ে দিয়েছি। আমার কাছে আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা লাভ আছে। আমার জন্য এ টাকা হালাল হবে নাকি হারাম? কেননা এই টাকাটা একটা ব্যবসায় লাগিয়েছি, যা থেকে প্রত্যেক মাসে কিছু লাভ আসে।
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং শরীয়ত পরিপন্থী একটি কারবার। এতে শরীয়ত নিষিদ্ধ আলগারার, উজরত বিলা-আমল ও আকলুল মাল বিলবাতিল ইত্যাদি বড় বড় খারাবি বিদ্যমান রয়েছে। একই কারণে ই-লিংকস কোম্পানির প্রশ্নে বর্ণিত কারবারও বৈধ নয়। সুতরাং এই কোম্পানির মার্কেটিং পদ্ধতিতে জড়িত হয়ে মূলধনের অতিরিক্ত যত টাকা অর্জন করেছেন তা হালাল নয়। তাই তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু মূলধনই নেওয়া জায়েয হবে।
প্রকাশ থাকে যে, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কেন অবৈধ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়তে পারেন মাসিক আলকাউসার, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ ২০১২ সংখ্যাগুলো। যা পরবর্তীতে মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে ‘মাল্টি লেভেল মার্কেটিং : তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও শরয়ী হুকুম’ নামে পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
শেয়ার লিংক
আমরা কয়েকজন ছাত্র মিলে একটি সংগঠন করতে চাই। এবং এই সংগঠনের কাজ হবে, যে মানুষের টাকা প্রয়োজন তাকে টাকা করজ দেওয়া। তো এক্ষেত্রে আমরা একটি হিলা (কৌশল) করতে চাই তা এই যে, সংগঠনটির পক্ষ থেকে কিছু নিয়মানুপাতে ফরম তৈরি করা হবে। ঋণ গ্রহিতা ফরমটি ক্রয় করবে এবং যে পরিমাণ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে সে পরিমাণ টাকা করজ নিবে। আর এক্ষেত্রে করজকৃত টাকার পরিমাণ যত বেশি হবে ফরমের মূল্যও তত বেশি হবে। ফরমের এই টাকা দ্বারা আমরা উপকৃত হব। যথা সময়ে টাকা না দিলে পুনরায় ফরম কেনা জরুরি। এখন জানতে চাই, এই ধরনের সংগঠন এবং এই হিলা করা জায়েয আছে কি না? দয়া করে এর সমাধান জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন।
প্রশ্নোক্ত হীলা সম্পূর্ণ হারাম। এটি ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণেরই নামান্তর। ফরম বিক্রি একটি ছুতামাত্র। কেননা ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে ফরমের দামও বাড়ে। অথচ ফরমের খরচ একই। আবার মেয়াদ শেষে ঋণের মেয়াদ বাড়াতে চাইলে সেক্ষেত্রে নতুন ফরম কিনতে হয়। এসব কিছু থেকে প্রমাণিত হয় যে, এটি প্রকৃতপক্ষে ফরম বিক্রির অন্তরালে ঋণের উপর অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের অপকৌশলমাত্র। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ সুদ ও হারাম।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; ইলাউস সুনান ১৪/১৭৯শেয়ার লিংক
সালামের জওয়াবের হুকুম কি? সালামের জওয়াব মনে মনে দিব না সালামদাতাকে শুনিয়ে দিব? আর যেভাবে দিব তার হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
সালামের জওয়াব সালামদাতাকে শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। শুধু মনে মনে উত্তর দেওয়া বা নিম্নস্বরে দেওয়া যথেষ্ট নয়।
অবশ্য সালামদাতা যদি এতটা দূরে থাকে যে, তাকে উত্তর শুনিয়ে দেওয়া কষ্টসাধ্য হয় সেক্ষেত্রে শুনিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মৌখিক উত্তরের পাশাপাশি সম্ভব হলে হাত দ্বারা ইশারাও করবে। যেন সালামদাতা বুঝতে পারে যে, তার সালামের উত্তর নেওয়া হয়েছে।-ফাতহুল বারী ১১/২১; তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম ৪/২৪৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৭৫শেয়ার লিংক