মুহাম্মাদ তাহিয়া আদনান - ময়মনসিংহ

১৭৬৭. প্রশ্ন

কারো ঢাকা শহরে ও গ্রামের বাড়িতে নিজস্ব বাসস্থান রয়েছে। গ্রামের বাড়ি সফরসম দূরত্বে। স্বামী ঢাকায় কর্মরত ছিলেন বিধায় ঢাকাতেই তারা বসবাস করেন। ছুটির সময় বা ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে গেলে গ্রামের বাড়িতেও থাকেন। স্বামী মৃত্যু বরণ করার পর গ্রামের বাড়িতে স্বামীকে দাফন করা হয়েছে। এখন স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে স্বামীর মালিকানাধীন ঘরে ইদ্দত পালন করতে পারবে কি না? অথবা কিছু দিন শহরের বাড়ি আর কিছু দিন গ্রামের বাড়িতে ইদ্দত পালন করতে পারবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা মতে যেহেতু স্ত্রী মৃত্যু পর্যন- স্বামীর শহরস্থ বাড়িতেই ছিল তাই তার জন্য সেখানে ইদ্দত পালন করা জরুরি। অবশ্য যদি স্ত্রী লাশের সাথে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়ে থাকে তাহলে শহরে না এসে গ্রামের বাড়িতেই ইদ্দত পালন করবে। তবে যে বাড়িতেই ইদ্দত শুরু করা হোক সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। একান- কোনো ওজরে সেখানে ইদ্দত পালন করা কঠিন হয়ে গেলে এর কাছাকাছি কোনো উপযুক্ত স্থানে ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দত অবস্থায় শরয়ী ওজর ছাড়া সফর করা নিষিদ্ধ। তদ্রূপ একাধিক স্থানে রাত্রি যাপনও নিষিদ্ধ। তাই ইদ্দত চলাকালীন শহর ও গ্রাম দুই জায়গা মিলে ইদ্দত পালন করা বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শরয়ী ওজর ব্যতীত যাতায়াত করা যাবে না।

সূরা তালাক : ১; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫২; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শামসুদ্দীন - মাদরাসা দারুর রাশাদ

১৭৬৮. প্রশ্ন

তাবলীগে যখন চিল্লায় বের হই তখন কাকরাইলের বড়দের কাছে শুনেছি, আমরা চিল্লায় মুসাফিরের হুকুমে থাকব। কিন্তু বেহেশতি জেওরে বা অন্যান্য কিতাবে দেখলাম যে, ১৫ দিনের নিয়ত করলে মুকীম হিসেবে গণ্য হবে। তবে এই ক্ষেত্রে ৪০ দিন থাকার নিয়ত করা সত্ত্বেও কিভাবে আমরা মুসাফিরের হুকুমে রইলাম?

উত্তর

সফর সম দূরত্ব অতিক্রম করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছলে মুকীম হওয়ার জন্য কোনো একটি গ্রাম বা একটি শহরে ১৫ দিন বা তার বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করা জরুরি। এক ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম বা ভিন্ন ভিন্ন দুই সিটি কিংবা এক থানার বিভিন্ন স্থানে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে মুকীম হবে না। মুসাফিরই থাকবে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চিল্লায় বের হয়ে যদি কোনো গ্রাম বা সিটিতে ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত থাকে তবে মুকীম গণ্য হবে। চাই ঐ গ্রাম বা সিটির বিভিন্ন মসজিদ মিলেই ১৫ দিন থাকা হোক বা এক জায়গাতেই থাকা হোক। বেহেশতী জেওর-এ মুকীম হওয়ার অর্থও তাই। চিল্লায় যেহেতু কোনো এক গ্রাম বা সিটিতে সাধারণত ১৫ দিন একাধারে থাকা হয় না তাই এক্ষেত্রে ১৫ দিনের বেশি সফর হলেও মুকীম হবে না। এজন্যই কাকরাইল থেকে মুসাফির হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬৮-২৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩১-১৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৫-১২৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হোদায়েতুল্লাহ - মিরপুর, ঢাকা

১৭৬৯. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি মান্নত করেছে যে, তার অমুক কাজটি পূর্ণ হলে এতীমখানায় একটি বকরী দিবে। ফলে তার কাংখিত কাজটি পূর্ণ হওয়ার পর সে একটি বকরীর বাচ্চা, যার বয়স আনুমানিক তিন-চার মাস, এতীমখানায় দান করেছে। তার এই মান্নত আদায় হয়েছে কি না? আর পশুর মান্নত পুরা হওয়ার জন্য সেগুলো কুরবানীর বয়সের হওয়া জরুরি কি না?

উত্তর

ছাগলের ঐ বাচ্চা দেওয়ার দ্বারা মান্নত আদায় হয়নি। কারণ মান্নতের জন্যও কুরবানীর যোগ্য পশু হওয়া শর্ত। অর্থাৎ ছাগল দিলে অন্তত এক বছর বয়সী হওয়া জরুরি।

বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৩৩; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৩৪০; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/২৭১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৩৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহবুবুল আলম - হাজারীবাগ, ঢাকা

১৭৭০. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের মসজিদের ইমাম একদিন বিতর নামাযে ভুলে দুআয়ে কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গিয়েছিলেন। মুকতাদীরা পিছন থেকে আল্লাহু আকবার বলে লুকমা দিলে তিনি রুকু থেকে ফিরে আসেন এবং দুআ কুনূত পড়েন। অতঃপর আবার রুকু করেন এবং সাহু সিজদা করে নামায শেষ করেন। প্রশ্ন হল, তার এ নামায সহীহ হয়েছে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করার দ্বারা নামায সহীহ হয়ে গেছে। তবে রুকু থেকে ফিরে আসা নিয়ম পরিপন্থী হয়েছে। দুআ কুনূত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে দুআ কুনূতের জন্য রুকু ছেড়ে উঠে দাঁড়াবে না; বরং নামায শেষে সাহু সিজদা করে নিবে। আর যদি দুআ কুনূত পড়ার জন্য রুকু থেকে উঠে দাঁড়ায় তবে তা নিয়মের খেলাফ হলেও নামায হয়ে যাবে। অবশ্য এ অবস্থাতেও সাহু সিজদা দিতে হবে।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৮২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জাবেদ হুসাইন - হাজীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

১৭৭১. প্রশ্ন

ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের আলোচনা কি দুনিয়াবী কথাবার্তার অন্তর্ভুক্ত? মসজিদে বসে সরাসরি বা মোবাইল ফোনে ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের আলোচনা করা বৈধ হবে কি না? কেউ কেউ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইবাদতের অন-র্ভুক্ত। তাই ইতিকাফকারী ছাড়াও অন্যদের জন্য এর আলোচনা মসজিদে করতে কোনো অসুবিধা নেই। তাদের এ কথা কতুটুক সঠিক? আসলে কি ইতেকাফকারী ব্যতীত অন্য কেউ ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসা-বণিজ্যের আলোচনা মসজিদে করতে পারবে?

উত্তর

মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করাকে সরাসরি হাদীস শরীফে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কাউকে মসজিদে বেচাকেনা করতে দেখ তাহলে তোমরা বলবে আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসা লাভজনক না করেন।-জামে তিরমিযী ১/১৫৮

হালাল বেচাকেনা ও ব্যবসা-বাণিজ্য অবশ্যই ছওয়াবের কাজ। তবে সব ধরনের ছওয়াবের কাজের স্থান মসজিদ নয়; বরং এই হালাল ও ছওয়াবের কাজের স্থান হল বাজার। তবে শুধু ইতিকাফকারীর জন্য পণ্য মসজিদে উপস্থিত না করার শর্তে প্রয়োজনীয় লেনদেনের আলোচনার অনুমতি রয়েছে।

জামে তিরমিযী ১/১৫৮; ইবনে মাজাহ পৃ. ৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৭; ফাতহুল কাদীর ২/৩১২

শেয়ার লিংক

মুসল্লী ও মসজিদ কমিটি - চুড়িহাট্টা

১৭৭২. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের প্রধান গেটের বাইরে রাস্তার অপর পার্শ্বে আনুমানিক ২৫ হাত দূরে অবসি'ত মসজিদের ওয়াকফকৃত একটি চার তলা বিল্ডিং রয়েছে। যার ৩য় তলায় একটি হেফযখানা মাদরাসা রয়েছে। উক্ত মসজিদের ওয়াকফকৃত বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। উক্ত হোটেল রমযান মাসে দিনের বেলা খোলা রাখা হয়। উল্লেখ্য চুড়িহাট্টা মহল্লার সবাই মুসলমান। আমাদের জানার বিষয় হল, মসজিদের উক্ত বিল্ডিংয়ে রোযার মাসে দিনের বেলা প্রকাশ্যে হোটেল খোলা রেখে খাওয়া দাওয়া করানো জায়েয হবে কি না? রোযার মাসে দিনের বেলা হোটেল খোলা রাখতে নিষেধ না করা ও প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানি প্রতিরোধ না করার কারণে মসজিদ কমিটি গুনাহগার হবে কি না?

উত্তর

রোযা ইসলামের পাঁচটি রোকনের অন্যতম। ইসলামের মৌলিক ফরযের অন-র্ভুক্ত। বিনা ওজরে রোযা না রাখা কবীরা গুনাহ। আখেরাতে এর জন্য কঠিন শাসি- রয়েছে। আর রমযান মাসে রোযা না রেখে প্রকাশ্যে পানাহার করা আরো ভয়াবহ গুনাহ। এটা আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট হুকুমের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন, যা মূলত কুফরীতুল্য গুনাহ। তাই রমযানে দিনের বেলা হোটেল খোলা রাখা এবং পানাহার করানো সম্পূর্ণ হারাম।

উপরন্তু মসজিদ হল আল্লাহর ঘর, শেয়ারে ইসলাম ও ইসলামের হুকুম আহকাম হেফাযত ও সংরক্ষণের পবিত্র কেন্দ্র। তাই মসজিদের ওয়াকফিয়া ভবনে এরূপ শরীয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড হওয়া আরো কঠিন গুনাহ। সুতরাং এ নিয়ম বন্ধ করা জরুরি। অন্যথায় মসজিদ কমিটি ও সংশ্লিষ্ট সবাই গুনাহগার হবে। এলাকাবাসীরও দায়িত্ব তা বন্ধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।

সূরা বাকারা : ১৮৩; সূরা আলইমরান : ১০৪; সূরা মায়েদা : ২; সূরা হজ্ব : ৩২; আহকামুল কুরআন জাসসাস ২/২৯৯; সহীহ মুসলিম হাদীস : ৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ - ঢাকা

১৭৭৩. প্রশ্ন

কোনো ব্যক্তি যদি ফরয গোসলে নাকের ভিতর পানি প্রবেশ না করিয়ে শুধু আঙ্গুল ভিজিয়ে নাকের ভিতরটা তিনবার মুছে নেয় তাহলে তার গোসল হবে কি এবং নাকের ভিতরে পানি প্রবেশ করানো ও তা পরিষ্কার করার পদ্ধতি কী?

উত্তর

ফরয গোসলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরি। শুধু ভেজা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভিতর মুছে নেওয়া যথেষ্ট নয়। এর দ্বারা নাকে পানি পৌঁছানোর ফরয আদায় হবে না।

নাকের ভিতর পানি পৌঁছানোর উত্তম তরীকা হল, ডান হাতে পানি নিয়ে তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত টেনে নেওয়া। হাত দিয়েও পানি ভেতরে দেওয়া যেতে পারে। অতঃপর বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভিতরটা পরিষ্কার করে নেওয়া। যেন কোনো অংশ শুকনা না থেকে যায়। এভাবে তিনবার পানি প্রবেশ করানো।

সুনানে আবু দাউদ ১/১৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/১০৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রহীম - আরামবাগ, ঢাকা

১৭৭৪. প্রশ্ন

বিনা অযুতে আযান দেওয়া কি অশুদ্ধ? আযানের জন্য অযু কি শর্ত?

উত্তর

আযানের জন্য অযু শর্ত নয়। অযু অবস্থায় আযান দেওয়া সুন্নত। বিভিন্ন হাদীসে অযু অবস্থায় আযান দেওয়ার প্রতি তাগিদ করা হয়েছে। তাই বিনা অযুতে আযান দেওয়া অনুত্তম। তবে আযান শুদ্ধ হয়ে যাবে।

সহীহ বুখারী ১/৮৮; জামে তিরমিযী ১/২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩৩৬; ইলানউস সুনান ২/১৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম - শানি-নগর, ঢাকা

১৭৭৫. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন স্বেচ্ছায় চাচ্ছে যে, তার কাযা নামায ও রোযার ফিদয়া আদায় করবে। প্রশ্ন হল, ফিদয়ার এ টাকা কি মসজিদ ও মাদরাসার নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যাবে?

উত্তর

মৃত ব্যক্তি যেহেতু কাযা নামায ও রোযার ফিদয়া আদায়ের অসিয়ত করে যায়নি তাই ওয়ারিসদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় আদায়কৃত টাকা মসজিদ-মাদরাসার নির্মাণ কাজেও ব্যবহার করা যাবে। কারণ এক্ষেত্রে টাকাগুলো নফল সদকা হিসাবে গণ্য হবে।

হিদায়া ১/২২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৬; খানিয়া ১/২০৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৭২, ৪২৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জিয়াউল হুদা - রামপুরা, ঢাকা

১৭৭৬. প্রশ্ন

আমি আসরের নামায পড়ছিলাম। ভুলে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা শেষ করে সূরা মিলিয়েছি এবং সাহু সিজদা করেছি এই মনে করে যে, আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। পরে জানতে পারি যে, আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। এখন আমার নামাযের হুকুম কী?

উত্তর

বিনা কারণে সাহু সিজদা দেওয়াটা মাকরূহ হয়েছে। তবে নামায আদায় হয়ে গেছে। ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে না।

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৯; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৫৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মামুন - মাদানী নগর, ঢাকা

১৭৭৭. প্রশ্ন

টিউব ওয়েলের ভিতর নাপাক পড়লে পানি নাপাক হবে কি? যদি হয় তাহলে তা পবিত্র করার নিয়ম কী?

উত্তর

টিউব ওয়েলের ভিতরে নাপাক পড়লে পাইপের সকল পানি নাপাক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পবিত্র করার নিয়ম হল, দৃশ্যমান নাপাকি পড়লে প্রথমে তা বের করতে হবে। এরপর টিউব ওয়েলের উপর থেকে পুরো পাইপে কতটুকু পানি ছিল তা দুইজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির মতামত নিয়ে অনুমান করে নিবে। এরপর সে পরিমাণ পানি বের করার পরই উক্ত টিউব ওয়েলের পানি পবিত্র হবে।

বাদায়েউস সানায়ে ১/২২৩; হিদায়া ১/৪১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৭; ফাতহুল কাদীর ১/৮৬; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ১৫৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুশাররফ হুসাইন - গফরগাও, ময়মনসিংহ

১৭৭৮. প্রশ্ন

আমি রমযান মাসে দিনের বেলায় মেসওয়াক করছিলাম। এ অবস্থায় মেসওয়াকের একটি ছোট আঁশ গলার ভিতর চলে যায়। প্রশ্ন হল, আমার ঐ রোযাটি কি সহীহ হয়েছে? নাকি এর কাযা করতে হবে?

উত্তর

ঐ কারণে আপনার রোযা নষ্ট হয়নি। তাই কাযাও করতে হবে না।

মাবসূত সারাখসী ৩/৯৩; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফাহিমা আক্তার - পল্লবী, ঢাকা

১৭৭৯. প্রশ্ন

আমার বাবা মারা গেছেন। আমরা ৫ বোন। আমাদের জন্য কি শোক পালন করা আবশ্যক? যদি শোক পালন করা আবশ্যক হয় তাহলে কীভাবে ও কতদিন আমরা শোক পালন করব?

উত্তর

পিতার মৃত্যুতে আপনাদের শোক পালন করা আবশ্যক নয়। তবে তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করার অনুমতি আছে এবং এ শোকে সাজ-সজ্জা ত্যাগ করারও অবকাশ আছে।

মুসনাদে আহমদ ৬/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৭২; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মামুনুর রশীদ - টাঙ্গাইল

১৭৮০. প্রশ্ন

জনৈক ইমাম সাহেব চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযের তৃতীয় রাকাতে ভুলে আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন পর্যন্ত উচ্চস্বরে পড়ে ফেলেন। এতে কি তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে? কতটুকু উচ্চস্বরে পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়?

উত্তর

চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযের শেষের দুই রাকাতে কেরাত আস্তে- পড়া ওয়াজিব। একাকি পড়া হোক কিংবা জামাতে। অতএব তাতে ছোট তিন আয়াত বা বড় এক আয়াত পরিমাণ জোরে পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। প্রশ্নোক্ত নামাযে যেহেতু মাত্র ছোট একটি আয়াত উচ্চস্বরে পড়া হয়েছে তাই এক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়নি।

আলবাহরুর রায়েক ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭১৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৫১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু জর - ঢাকা

১৭৮১. প্রশ্ন

কবরের নিকট কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা জায়েয আছে কি? তিলাওয়াত শেষে মৃতের জন্য হাত তুলে দুআ করা জায়েয হবে কি না? দুআর সময় কোন দিকে ফিরে দুআ করা উত্তম?

উত্তর

কবরের নিকট কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা জায়েয। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে করব যিয়ারতের সময় বিভিন্ন সূরা পড়া প্রমাণিত আছে। তিলাওয়াত শেষে কিবলামুখী হয়ে কবরকে পিছনে রেখে দু’হাত তুলে মৃতের জন্য দুআ করাও জায়েয।-(কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত)

সুনানে আবু দাউদ ২/৮৯; ইলাউস সুনান ৮/৩২৯; ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন ১০/৩৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; মাজমাউল আনহুর ১/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬ (দুআয় হাত তোলা) : সহীহ মুসলিম ১/৩১৩; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮ (দুআয় কিবলামুখী হওয়া) : সহীহ বুখারী ২/৯৩৯; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০

শেয়ার লিংক

নাজমুল হাসান - রামপুরা, ঢাকা

১৭৮২. প্রশ্ন

আমি এক মসজিদে রমযানের শেষের দশ দিন সুন্নতে মুয়াক্কাদার নিয়তে ইতিকাফ করেছি। সে মসজিদে অনেক লোক ইতিকাফ করেন। তাই আমরা কিছু লোক দ্বিতীয় তলায় ইতিকাফ করেছি। সে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় যাতায়াতের সিড়ি মসজিদের অংশ থেকে বাইরে। প্রশ্ন হল, আমরা যারা দোতলায় ইতিকাফ করেছি নামাযের জন্য কি প্রথম তলায় খালি কাতার থাকা অবস্থায় আসতে পারব? না আসলে আমাদের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইতিকাফকারী ব্যক্তি ঐ সিড়ি ব্যবহার করে নিচ তলায় এসে কাতারের সাথে মিলে দাঁড়াতে পারবে। এক্ষেত্রে মসজিদের বাইরের সিড়ি ব্যবহার করার কারণে তার ইতিকাফ নষ্ট হবে না।

মাবসূত সারাখসী ৩/১১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১১; ফাতহুল কাদীর ২/৩০৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইসহাক - কাযিরবাগ, ঢাকা

১৭৮৩. প্রশ্ন

যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকে চুল, নখ ইত্যাদি না কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল, দশ তারিখ কখন কাটবে? কুরবানীর আগে নাকি পরে?

উত্তর

নিজের কুরবানী সম্পন্ন হওয়ার পর নখ, চুল কাটবে। হাদীসে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। নিম্নে উদ্ধৃতি পেশ করা হল।

সহীহ মুসলিম হাদীস : ১৯৭৭; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৭৯১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৪৩৬২-৪৩৬৪; মিরকাত ৩/৩০৬; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১২; শরহুল মুহাযযাব ৮/৩৬২; আলইনসাফ ৪/১০৯; আশশরহুল কাবীর ২/৩০০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নূর হুসাইন - চট্টগ্রাম

১৭৮৪. প্রশ্ন

জনৈকা মহিলার যিলহজ্ব মাসের তিন তারিখে মাসিক শুরু হয়েছে। মোট দশ দিন মাসিক থাকে। এ অবস্থায় তার হজ্বে যাওয়ার ফ্লাইটের তারিখও এসে গেছে। এখন সে কীভাবে হজ্ব আদায় করবে?

উত্তর

উক্ত মহিলা গোসল করে ইফরাদ হজ্বের ইহরাম বাঁধবে। তবে ইহরামের নামায পড়বে না এবং কোনো প্রকার তাওয়াফ করবে না। আট তারিখের আগে মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে মিনায় যাওয়ার আগে তাওয়াফে কুদূম করে নিবে। কিন্তু যদি তখনও বন্ধ না হয় তবে এ অবস্থায় মিনায় চলে যাবে এবং হজ্বের সকল আমল যথাযথভাবে করতে থাকবে। ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের আগে যদি এতটুকু পূর্বে হায়েয বন্ধ হয়ে যায় যে, গোসল করে তাওয়াফের চার চক্কর দিতে পারবে তাহলে ঐ সময়ই তাওয়াফ করা ওয়াজিব। যদি এতটুকু সময় পাওয়ার পরও সে সময় তাওয়াফ না করে তাহলে তার উপর দম (পশু কুরবানী করা) ওয়াজিব হবে। কিন্তু যদি এতটুকু পূর্বে বন্ধ না হয় তাহলে পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফে যিয়ারত করবে। এক্ষেত্রে বিলম্বে আদায় করার কারনে দম ওয়াজিব হবে না।

সহীহ বুখারী ১/৪৪; সহীহ মুসলিম ১/৩৮৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৭১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রবিউল ইসলাম - মগবাজার, ঢাকা

১৭৮৫. প্রশ্ন

আমার হজ্ব করার খুব ইচ্ছা। কিন্তু হজ্ব করার মতো টাকা আমার নেই। তাই আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা করয করে হজ্ব করি। আর টাকাগুলো কয়েক বছরে আদায় করে দিয়েছি। বর্তমানে আমার আর্থিক অবস্থা খুব ভালো যে, আমি হজ্ব করতে পারি। প্রশ্ন হল, অসচ্ছল অবস্থায় আদায়কৃত হজ্ব ফরয হজ্ব হিসাবে আদায় হয়েছে কি না? স্বচ্ছল অবস্থায় কি পুনরায় হজ্ব করতে হবে?

উত্তর

অস্বচ্ছল অবস্থায় আদায়কৃত হজ্বটি ফরয হজ্ব হিসাবেই আদায় হয়েছে। পরবর্তীতে হজ্ব করলে তা নফল হিসাবে আদায় হবে।

বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৪; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৪১; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৩২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম - ঢাকা

১৭৮৬. প্রশ্ন

আমি ইহরাম অবস্থায় একদিন পায়ের গোছা খুব চুলকিয়েছিলাম। এতে আমার পায়ের ৬-৭টা পশম পড়ে যায়। এতে কি কোনো কাফফারা দিতে হবে?

উত্তর

ঐ কারণে আপনার উপর একটি ফেতরা পরিমাণ খাদ্য-শস্য বা তার মূল্য সদকা করা ওয়াজিব এবং তা হেরেম এলাকার গরীবদেরকে দেওয়া উত্তম।

বাদায়েউস সানায়ে ২/৪২২; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৩২৭; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ২৬৩, ২৫৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শামসুল হুদা - ঢাকা

১৭৮৭. প্রশ্ন

আমি একবার খুব জটিল রোগে আক্রান্ত হলাম। অসুস্থ অবস্থায় মান্নত করলাম যে, আল্লাহ তাআলা যদি আমাকে সুস্থ করেন তাহলে আমি হজ্ব করব। তখন আমার আর্থিক অবস্থা এমন ছিল যে, আমার উপর হজ্ব ফরয়।

প্রশ্ন হল, আমার উপর আগে থেকেই হজ্ব ফরয হয়ে আছে এখন যদি হজ্ব করি তাহলে কি এর দ্বারা আমার ফরয হজ্ব এবং মান্নতের হজ্ব উভয়টি আদায় হবে? এক সফরেই উভয় হজ্ব আদায়ের কোনো পদ্ধতি আছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি নিজের ফরয হজ্ব এবং মান্নতের হজ্ব উভয়টির আদায়ের নিয়তে হজ্ব করবেন। এতে এক সাথে দুটি দায়িত্বই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি আপনি যে কোনোটি নির্দিষ্ট করে আদায় করেন তাহলে যেটির নিয়ত করবেন শুধু সেটিই আদায় হবে। অন্যটি আদায় হবে না।

গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৩৪৮; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃ. ৪৬৭-৪৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ লুৎফুর রহমান - রাজশাহী

১৭৮৮. প্রশ্ন

আমি নফল হজ্ব আদায়ের ইচ্ছা করলে আমার বৃদ্ধ পিতা বললেন, আমি যেন তাঁর পক্ষ হতে উমরা করি। এরপর আমি তামাত্তুর নিয়তে বাবার কথামতো প্রথমে তার পক্ষ হতে উমরা আদায় করেছি এরপর যথানিয়মে হজ্ব করেছি। জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতিতে হজ্ব আদায় করা শুদ্ধ হয়েছে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ঐ হজ্বটি তামাত্তুই হয়েছে। ঐভাবে তামাত্তু করাটা দোষণীয় নয়।

গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ২১৪; মানাসিক মোল্লা আলী কারী পৃৃ. ২৮৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন - কচুয়া, চাঁদপুর

১৭৮৯. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। আমরা স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করি। বর্তমানে আমি ঢাকার মিরপুর ১২ এর একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করি। বিভিন্ন সময় ছুটিতে বাড়ি যাই। আর বাকি সময় ঢাকাতেই থাকি।

প্রশ্ন হল, বাড়িতে যাওয়ার সময় পথে আমাকে নামায পূর্ণ পড়তে হবে নাকি কসর? আর কসর করলে কখন থেকে শুরু করব এবং কোথায় গিয়ে কসর করা বন্ধ করব?

উত্তর

ঢাকা থেকে চাঁদপুরের দূরত্ব সফরসম। তাই এ পথে সফর অবস্থায় নামায কসর পড়তে হবে। আপনার বর্তমান আবাসস্থল ঢাকার সিটি কর্পোরেশনের সীমানা অতিক্রম করার পর থেকে মুসাফির গণ্য হবেন। অর্থাৎ নদীপথে পোস্ত-গোলা ব্রীজ এলাকা এবং সড়ক পথে যাত্রাবাড়ি-শনির আখড়া এলাকা অতিক্রম করলে (ঢাকা সিটির দক্ষিণাঞ্চলের জন্য) মুসাফিরের হুকুম শুরু হবে। শেষ হবে আপনার স্থায়ী বসবাসের এলাকা গ্রামে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত। নিজ গ্রাম বা শহরে প্রবেশ করলেই মুকীম হয়ে যাবেন।

ইলাউস সুনান ৭/৩১০; ফাতহুল বারী ২/৪৭১; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৬২; মাবসূত সারাখসী ১/২৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৫৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শাহাদাত হুসাইন - ঢাকা

১৭৯০. প্রশ্ন

আমরা শুনেছি যে, হযরত উসমান রা.- যে রসমে খতে কুরআন মজীদ লিখিয়েছেন তা পরিবর্তন করা জায়েয নয়। প্রশ্ন হল, কোনো বিষয়ের উপর লিখতে গিয়ে যদি কুরআনের এক দুই আয়াত লিখতে হয় এক্ষেত্রেও কি কুরআনে যেভাবে আছে সেভাবেই লেখা জরুরি?

উত্তর

কুরআন মজীদের অল্প সংখ্যক আয়াত, যা উদ্ধৃতি বা কোনো প্রয়োজনে লিখতে হয় এতে উসমানী রাসমুল খত-এর অনুকরণ জরুরি নয়। অন্যান্য আরবী রাসমুল খত ব্যবহার করাও জায়েয। এছাড়া বড় সূরা বা পুরো কুরআন মজীদ লেখার ক্ষেত্রে ‘উসমানী রসমুল খত’-এর অনুকরণ অপরিহার্য। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ইজমা রয়েছে।

আলইতকান ২/৪০৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ১/১৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল হামীদ - ঢাকা

১৭৯১. প্রশ্ন

কুরআন মজীদের সূরা কাহাফের তাফসীরে ‘আসহাবে কাহাফের’ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেককে বলতে শোনা যায় যে, ‘আসহাবে কাহাফের’ সঙ্গী কুকুরটি জান্নাতে যাবে। এই কথা কতটুকু সঠিক? কুরআন, হাদীস ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রনে'র আলোকে উত্তর কাম্য।

উত্তর

কুরআন মজীদ বা কোনো সহীহ হাদীসে এ বিষয়টি উল্লেখ নেই। কোনো সাহাবী থেকেও সহীহ সনদে তা পাওয়া যায় না।

তবে তাফসীরে আবুস সউদ, তাফসীরে মাযহারী ও রূহুল মাআনী ইত্যাদি তাফসীর-গ্রন্থের লেখকগণ প্রখ্যাত তাবেয়ী খালেদ ইবনে মা’দান রাহ. এর উদ্ধৃতিতে আসহাবে কাহাফের সঙ্গী কুকুরটির জান্নাতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর কোনো সনদ বা সূত্র পাওয়া যায় না।

উল্লেখ্য যে, এ বিষয়টি যেহেতু কোনোকীদা বা আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তাই এ নিয়ে প্রশ্নোত্তর, আলোচনায় মূল্যবান সময় ব্যয় করা উচিত নয়।

তাফসীরে আবুস সাউদ ৪/১৭৮; তাফসীরে মাযহারী ৬/২১; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৮/২২৮; হায়াতুল হাইওয়ান ২/২৬২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন - শানি-বাগ, ঢাকা

১৭৯২. প্রশ্ন

জনৈক আলেম বলেছেন, সূরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াত শুধু তামাত্তু হজ্বকারীর জন্য প্রযোজ্য। তার কথা কতটুকু সঠিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আয়াতটিতে হজ্বে তামাত্তু ও হজ্বে কিরান দু’টোরই হুকুম বলা হয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-(তরজমা) যে ব্যক্তি হজ্বের প্রাক্কালে উমরা দ্বারা লাভবান হতে চায়, সে যা সহজলভ্য তা দ্বারা কুরবানী করবে।-সূরা বাকারা : ১৯৬

হজ্বের প্রাক্কালে উমরার দ্বারা লাভবান হওয়ার সুযোগ কিরান এবং তামাত্তু উভয় ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। কেননা উভয় ক্ষেত্রেই একই সফরে উমরা ও হজ্ব আদায় করা হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সকল তাফসীরগ্রনে' হজ্বে কিরানকেও ওই আয়াতের মর্মার্থের অন-র্ভুক্ত করা হয়েছে। অতএব শুধু তামাত্তু হজ্বকে একমাত্র মর্মার্থ বলা ঠিক হবে না।

তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/২৫০; তাফসীরে মাযহারী ১/২২৬; তাফসীরে তাবারী ২/২৫৫; আহকামুল কুরআন মুফতী শফী রাহ. ১/৩১৮; মাআরিফুল কুরআন ১/৪৮২; তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ১/৩৪০; তাফসীরে আবুস সাউদ ১/২৫০; আদ্দুররুল মানছূর ১/২১৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফয়জুর রহমান - ঝিগাতলা, ঢাকা

১৭৯৩. প্রশ্ন

একটি দোকানে আমরা কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম। তখন জামাতের সময় হয়ে গেলে আমাদের একজন দোকানদারকে নামাযের দাওয়াত দিল। আমরা জানি সে মুসলমান। কিন্তু সে উত্তরে বলল, আমি নামায পড়ব না। আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু। তাকে বলা হল, আপনি এটা কেমন কথা বলছেন? সে আরো জোরের সঙ্গে বলল, হাঁ, আমি হিন্দু। যান, যান। প্রশ্ন হল, এ কথা বলার পর সে মুসলমান থাকবে কি না?

উত্তর

‘আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু’ এ ধরনের বাক্য কুফরী কথার অন্তর্ভুক্ত। স্বেচ্ছায় কেউ এমন কথা বললে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব এ কথা বলার কারণে ঐ ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। বিবাহিত হলে বিবাহ ভেঙ্গে গেছে। অতএব এক্ষুণি কালিমা শাহাদাত পড়ে ঈমান আনতে হবে এবং বিয়েও দোহরিয়ে নিতে হবে।

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৪৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৫৭, ২৬৮ ও ২৭৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১২৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আফজাল - চট্টগ্রাম

১৭৯৪. প্রশ্ন

কাফেরদের সন্তান যদি নাবালেগ অবস্থায় মারা যায় তাহলে তারা জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে? এ বিষয়ে আমাদের মাঝে বিতর্ক রয়েছে। দয়া করে বরাতসহ জানাবেন।

উত্তর

কাফের-মুশরিকদের নাবালেগ সন্তান মারা গেলে তাদরে সাথে কি আচরণ করা হবে-এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মত রয়েছে। জান্নাতে যাবে-এ মতটি অধিক শক্তিশালী। তবে এর সঠিক ফয়সালা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। এটি এমন কোনো বিষয় নয়, যা জানার উপর শরীয়তের কোনো আমল নির্ভরশীল। তদ্রূপ এটা এমন কোনো আকীদাগত বিষয় নয়, যা জানা জরুরি; বরং এ জাতীয় বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়। এটা অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়ার অন-র্ভুক্ত।

উমদাতুল কারী ৮/২১২-২১৩, তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৫/৫০২; লামিউদ দারারী ২/১৩৭; রদ্দুল মুহতার ২/১৯২; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - সিলেট

১৭৯৫. প্রশ্ন

কালিমা তাইয়্যিবার সঙ্গে দরূদ পড়া যাবে কি? এ বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্যই শুনতে পাওয়া যায়।

উত্তর

দরূদ শরীফ কালিমা তাইয়্যিবার অংশ নয়। কালিমা তাইয়্যিবা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উচ্চারণ করলে দরূদ পড়তে হয় এই নিয়ম হিসাবে কালিমা তাইয়্যিবার পর দরূদ শরীফ পড়া যাবে। তবে কিছুটা বিরতি দিয়ে পড়বে। যেন দরূদ শরীফ কালিমার অংশ বলে মনে না হয়।

ফাতাওয়া উসমানী ১/৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হানীফ - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

১৭৯৬. প্রশ্ন

আমরা বিভিন্ন ওয়াজে শুনি যে, যখন হযরত নূহ আ.-কিশতীতে আরোহণ করলেন তখন তাঁর এক সন্তান, যে কাফের ছিল সে বন্যাতে ডুবে গিয়েছিল। জানতে চাই, নূহ আ.-এর ঐ সন্তানের নাম কী? কেউ বলেন, ‘ইয়াম’ কেউ বলেন, কিনআন। সঠিক কোনটি?

উত্তর

ঐ সন্তানের নাম কিনআন এবং ইয়াম উভয়টিই। তারীখ ও তাফসীরের গ্রন'সমূহে দুটি নামই এসেছে। কেউ কিনআন বলেছেন আবার কেউ বলেছেন ইয়াম। তবে তারীখের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন' ‘আলকামিল ফিততারীখ’ এ বলা হয়েছে, ঐ সন্তানের নাম কিনআন, যাকে ইয়ামও বলা হয়।

আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/১৭৬; আলকামিল ফিততারীখ ১/৭৩; আলকাশশাফ যমখশারী ২/৩৯৬; তাফসীরে তাবারী ৭/৪৫; তাফসীরে মাযহারী ৫/৮৮; মাআরিফুল কুরআন ৪/৬২৪; তাফসীরে কুরতুবী ৯/৩৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৪৮৯

শেয়ার লিংক