খালেদ - চান্দিনা, কুমিল্লা

৬৫৬৯. প্রশ্ন

গতকাল আমি ডায়াবেটিস মাপাতে গেলাম। ডায়াবেটিস মাপানোর সময় গ্লুকোমিটারের কলম দিয়ে আঙুল থেকে সামান্য রক্ত বের করা হয়, যা গড়িয়ে পড়া পরিমাণ ছিল না। সেটা মেশিনে লাগানোর পর এর তেমন কিছু আঙুলে অবশিষ্ট ছিল না। পরে কাটা অংশটা আমি বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে ঘষে মুছে ফেলি। এরপর ঐ অবস্থাতেই পুনরায় ওযু না করে এবং হাত না ধুয়ে এশার নামায আদায় করি।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে রক্ত বের হওয়ার পরও পুনরায় ওযু না করে এবং হাতও না ধুয়ে নামায আদায় করা কি ঠিক হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আঙুল থেকে বের হওয়া রক্ত যেহেতু এতই অল্প ছিল যে, তা নিজ স্থান থেকে গড়িয়ে পড়া পরিমাণ ছিল না, তাই এর কারণে ওযু নষ্ট হয়নি। অতএব এরপর পুনরায় ওযু না করে এবং হাতও না ধুয়ে আপনি যে নামায পড়েছেন তা আদায় হয়ে গেছে।

Ñকিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ২৩; কিতাবুল আছল ১/৪৪; শরহুল জামিইস সাগীর, কাযীখান ১/৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৪০

শেয়ার লিংক

আইনুল ইসলাম - চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা

৬৫৭০. প্রশ্ন

একদিন যোহরের সময় মসজিদে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। জামাত শুরু হয়ে যাওয়ায় আমি তাড়াহুড়া করে ওযু করে জামাতে শরীক হই। কিন্তু ওযুর সময় থুতনির নিচের অংশ ধুতে ভুলে যাই।

হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, থুতনির নিচের অংশ না ধোয়াতে কি আমার ওযুতে কোনো সমস্যা হয়েছে? এ ওযু দ্বারা আমি যে নামায পড়েছি, তা কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

আপনার ওযু সহীহ হয়েছে। কেননা, ওযুতে থুতনির নিচের অংশ ধোয়া জরুরি নয়। অতএব এ ওযু দ্বারা আপনি যে নামায পড়েছেন, তা আদায় হয়ে গেছে।

Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১; জামিউর রুমুয ১/২৪; আলবিনায়া ১/৬৩; রদ্দুল মুহতার ১/৯৬; আসসিআয়া ১/৪৬

শেয়ার লিংক

সাফওয়ান সিদ্দীক - বগুড়া

৬৫৭১. প্রশ্ন

একদিন এশার নামায পড়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ আমার পাশের মুসল্লির ওপর দৃষ্টি পড়ে। তিনি নামায পড়ছিলেন। দেখি যে তিনি কেবল কপালের ওপর সিজদা করে আছেন। তার নাক মাটি থেকে ওপরে। সিজদার পুরো সময় তিনি এভাবেই ছিলেন। নাক মাটিতে লাগাননি।

হুজুরের নিকট জানার বিষয় হল, মাটিতে নাক না লাগিয়ে শুধু কপালের ওপর সিজদা করলে কি সিজদা আদায় হবে?

উত্তর

জমিনে নাক না লাগিয়ে শুধু কপালের ওপর সিজদা করলে নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে বিনা ওযরে নাক না লাগিয়ে শুধু কপাল দ্বারা সিজদা করা মাকরূহ। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। সিজদা আদায়ের ক্ষেত্রে কপালের সাথে নাকও মাটিতে লাগিয়ে রাখা সুন্নত।

হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুমাইদ  সায়েদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا سَجَدَ أَمْكَنَ أَنْفَه وَجَبْهَتَه مِنَ الأَرْضِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন তিনি নাক ও কপাল উভয়টি জমিনে লাগিয়ে রাখতেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৩৪)

Ñকিতাবুল আছল ১/১৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৩; আননাহরুল ফায়েক ১/২১৬

শেয়ার লিংক

হাবীবুল্লাহ - মিরপুর, ঢাকা

৬৫৭২. প্রশ্ন

একদিন যোহরের সময় মসজিদে যেতে দেরি হওয়ায় আমরা দুজন সাথি মিলে কামরায় জামাত করি। আমি তার থেকে একটু পেছনে দাঁড়াই। কিন্তু তিনি আমাকে তার বরাবর দাঁড় করান এবং বলেন, এটাই মূল নিয়ম। একটু পিছিয়ে দাঁড়ানোর মাসআলা মূলত সাধারণ মানুষের জন্য, যাতে নামাযের মধ্যে ভুলক্রমে ইমামের থেকে এগিয়ে না যান। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তার কথাটি কি ঠিক? দুজন মিলে জামাত করলে মুক্তাদি কোথায় দাঁড়াবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

দুজন মিলে জামাত করলে মুক্তাদি ইমামের বরাবর ডান পাশে দাঁড়াবে, নাকি কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়াবেÑ এক্ষেত্রে ফকীহগণ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য রয়েছে। কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, এক্ষেত্রে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে ঠিক বরাবর দাঁড়াবে। অর্থাৎ মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের পায়ের গোড়ালি বরাবর থাকবে। আর কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, এক্ষেত্রে মুক্তাদি ইমামের ঠিক বরাবর না দাঁড়িয়ে তার পায়ের আঙুলের অগ্রভাগ ইমামের পায়ের গোড়ালি বরাবর রাখবে। তবে ফকীহগণ শুধু সাধারণ মানুষের জন্য এ পদ্ধতির কথা বলেছেনÑ বিষয়টি এমন নয়; বরং এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ও অন্যদের জন্য একই মাসআলা।

মূলত এক্ষেত্রে ফকীহগণ থেকে বক্তব্য দুটি। এ দুই বক্তব্যের যে কোনোটি অনুযায়ী আমল করা যেতে পারে। তবে মুক্তাদি ইমামের আগে বেড়ে গেলে মুক্তাদির নামায নষ্ট হয়ে যায়। তাই মুক্তাদির আগে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে ইমামের ঠিক বরাবর না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বক্তব্য অনুযায়ী কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ানোই নিরাপদ।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০১; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৮, ১০৩ইলাউস সুনান ৪/২৪৬

শেয়ার লিংক

কবির চৌধুরি - উত্তরা, ঢাকা

৬৫৭৩. প্রশ্ন

আমার ছেলে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। তাকে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে এক মাস আগে কোলকাতা নিয়ে যাই। পরিকল্পনা ছিল, দশ-বারো দিনের মধ্যে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে আসব। প্রথম দিন থেকেই যেহেতু পনেরো দিন অবস্থানের নিয়ত করিনি, তাই নামায কসর করে পড়তে থাকি। নির্দিষ্ট দিন শেষ হওয়ার পরও কিছু টেস্ট বাকি থাকায় ডাক্তার সাহেব আরো চার-পাঁচদিন থাকতে বলেন। অতঃপর টেস্টগুলো করিয়ে রেজাল্ট পেতে পেতে আরো ছয় দিন লেগে যায়। সব মিলিয়ে কোলকাতায় আমাদের আঠারো দিন থাকা হয়েছে। এ সময়গুলোতে যেহেতু একবারও পূর্ণ পনেরো দিন থাকার নিয়ত করিনি, তাই পুরো সফরেই নামায কসর করে পড়েছি।

জানার বিষয় হল, এসময়গুলোতে নামায কসর করে পড়া কি ঠিক হয়েছে? আমাকে কি এ নামাযগুলো কাযা করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায কসর পড়া ঠিক হয়েছে। পুনরায় তা পড়তে হবে না। কেননা, মুসাফির ব্যক্তির কোনো স্থানে মুকীম গণ্য হওয়ার জন্য পনেরো দিন অবস্থানের নিয়ত করা শর্ত। পনেরো দিন অবস্থানের নিয়ত না করে অল্প অল্প করে যদি পনেরো দিন বা এর বেশিও থাকা হয়ে যায়তবুও সে উক্ত স্থানে মুসাফির হিসেবেই থাকবে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ১/২৩৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৩৪; আলহাবিল কুদসী ১/২২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫২৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৬

শেয়ার লিংক

সুহাইমা সালেহা - নবাবগঞ্জ

৬৫৭৪. প্রশ্ন

আমরা প্রতি ঈদে নানুবাড়ি এসে থাকি। এখানে দুইভাবেই আসা যায়। বাসযোগে ও ট্রেনে। আমরা সাধারণত ট্রেনেই যাতায়াত করি। কিন্তু এবার ট্রেনের টিকেট না পাওয়ার কারণে আমরা বাসে এসেছি। এদিকে ট্রেনে এলে যে পথ আমাদের ৪৮ মাইলের বেশি অতিক্রম করতে হত, বাসে আসার কারণে বাড়ি পর্যন্ত সে পথের দূরত্ব কমে ৪২ মাইল হয়।

জানতে চাচ্ছি, আমরা তো ট্রেনে এলে মুসাফির হিসেবে কসরই পড়তাম। তো এখন কি আমরা আগের মতো কসর পড়ব, নাকি বাসে আসার কারণে মুকীম গণ্য হব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাসের রাস্তায় ঐ স্থানের দূরত্ব যেহেতু ৪২ মাইল হয়, ৪৮ মাইল হয় না; তাই বাসের রাস্তায় যাতায়াতকালে আপনারা সেখানে মুকীম গণ্য হবেন; মুসাফির নয়। অতএব এ যাত্রায় সেখানে কসর না করে আপনাদের পূর্ণ নামায পড়াই জরুরি।

Ñশরহু মুখতাসারিল কারখী, কুদূরী ১/৪৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৫; আলমুজতাবা, যাহেদী ১/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৩

শেয়ার লিংক

হুমাইরা - সিরাজগঞ্জ

৬৫৭৫. প্রশ্ন

আমি আমার নানুবাড়ি পিরোজপুর এসেছি। মুসাফির হিসেবে কসর পড়ছি। কিন্তু একদিন একাকী এশার নামায পড়ার সময় ভুলে চার রাকাত পড়ে ফেলি।

হুযুরের নিকট জানতে চাই, আমি যে সফরের হালতে এশার নামায চার রাকাত পড়েছি, এতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে? আমার উক্ত নামায আদায় হয়েছে, নাকি কাযা করে নিতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ দিনের এশার নামায আদায় হয়ে গেছে। ভুলে চার রাকাত আদায় করে ফেলায় নামায নষ্ট হয়নি।

তবে মুসাফিরের জন্য কসর করাই নিয়ম। ইচ্ছাকৃত পুরো নামায পড়া যাবে না।

Ñকিতাবুল আছল ১/২৩৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২৩৯; আলমুজতাবা, যাহেদী ১/৩৯৫

শেয়ার লিংক

ইবরাহীম খলীল - কচুয়া, চাঁদপুর

৬৫৭৬. প্রশ্ন

একদিন যোহরের সুন্নতের শেষ বৈঠকে ভুলে তাশাহহুদ না পড়ে সূরা ফাতেহা পড়ে নিই। পরে স্মরণ হওয়ার পর তাশাহহুদ পড়ি। তখন দ্বিধায় পড়ে যাইÑ সাহু সিজদা দিতে হবে কি না। সতর্কতামূলক সাহু সিজদা দিয়ে দেই। প্রশ্ন হল, তাশাহহুদের স্থানে সূরা ফাতেহা পড়ে নেওয়ার কারণে কি আমার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার সাহু সিজদা করা নিয়মসম্মতই হয়েছে। কেননা তাশাহহুদের আগে সূরা ফাতেহা পড়লে সাহু সিজদা করা ওয়াজিব। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু সাহু সিজদা করেছেন, তাই আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।

Ñআলহাবিল কুদসী ১/১৯১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ২/২৬২; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৫০

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ঢাকা

৬৫৭৭. প্রশ্ন

আমাদের মাদরাসা একটি মসজিদের পাশে। মাদরাসাটি মসজিদের সাথেই লাগানো বিল্ডিংয়ে। এক্ষেত্রে মাদরাসার লোকজন কি দরস-তাদরীসের কারণে নিজেরা আলাদা জামাত করতে পারবে? যেমন মসজিদে যোহর নামায সোয়া একটায়। মাদরাসার লোকেরা চাচ্ছে, তাদের দরসের সুবিধার্থে ছাত্রদের নিয়ে ১:৩০ মিনিটে আলাদা জামাত করবে।

প্রশ্ন হল, দরস-তাদরীসের বিষয়কে সামনে রেখে জামে মসজিদের জামাত বাদ দিয়ে নিজেরা জামাত করলে কোনো অসুবিধা আছে কি?

মাদরাসার এক হুজুর বললেন, ইলম ও ফিকহের তাদরীসের কারণে মসজিদের জামাতে নামায না পড়ে দরসের পর মাদরাসায় নিজেরা মিলে জামাত করে নিলে কোনো অসুবিধা নেই। তার কথা কি ঠিক?

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদের জামাতে না গিয়ে মাদরাসায় পৃথক জামাতের নিয়ম করা Ñবিশেষ করে যেখানে মাদরাসাটি মসজিদের সাথে লাগানো বিল্ডিংয়েইÑ কিছুতেই শরীয়তসম্মত হবে না। বরং মাদরাসার লোকজন মসজিদে গিয়েই নামায আদায় করবে।

ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার, পুরুষের জন্য ফরয নামায আদায়ের স্থান হল মসজিদ। গ্রহণযোগ্য ওযর ছাড়া নিয়মিত মসজিদ ছেড়ে অন্যত্র নামায পড়া এবং এটিকে অভ্যাস ও নিয়ম বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই। বহু সংখ্যক হাদীস-আছারে মসজিদের জামাতে নামায আদায়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, মসজিদের জামাতে উপস্থিত না হওয়ার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে এবং একে মুনাফিকদের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْ عُلِمَ نِفَاقُه، أَوْ مَرِيْضٌ، إِنْ كَانَ الْمَرِيْضُ لَيَمْشِيْ بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتّى يَأْتِيَ الصَّلَاةَ، وَقَالَ: إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلَاةَ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِيْ يُؤَذَّنُ فِيْهِ.

আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, নামায (-এর জামাত) থেকে পিছিয়ে থাকত কেবল এমন মুনাফিক, যার নিফাক স্পষ্ট ছিল অথবা অসুস্থ ব্যক্তি। তবে আমরা কোনো কোনো অসুস্থকেও দেখতাম, দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর করে তারা নামাযের জন্য চলে আসত।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আরো বলেন, নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সুনানুল হুদা অর্থাৎ হেদায়েতের তরীকাসমূহ শিখিয়েছেন। হেদায়েতের এই তরীকাসমূহের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যেখানে আযান হয় সেখানে অর্থাৎ মসজিদে এসে নামায আদায় করা। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৪

আরো বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেনÑ

مَنْ سَرَّه أَنْ يَلْقَى اللهَ غَدًا مُسْلِمًا، فَلْيُحَافِظْ عَلَى هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ، فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى، وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّيْ هذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِه، لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ.

যে ব্যক্তি কাল (হাশরের ময়দানে) মুসলিমঅবস্থায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে চায়, তার উচিত এই নামাযগুলো মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা। কেননা আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্য সুনানুল হুদা অর্থাৎ হেদায়েতের তরীকাসমূহ সুনির্ধারিত করে দিয়েছেন। আর এই নামাযগুলো মসজিদে গিয়ে আদায় করা এই হেদায়েতের তরীকাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যদি তোমরা ঘরে নামায পড়তে থাকো, যেভাবে পিছিয়ে থাকা লোক (মুনাফিক) ঘরে নামায আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর পথ ছেড়ে দিলে। আর নবীর পথ ছেড়ে দিলে তোমরা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৫৪

আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

لَا صَلَاةَ لِجَارِ الْمَسْجِدِ إِلَّا فِيْ الْمَسْجِدِ. (قَالَ الثَّوْرِيُّ فِي حَدِيْثِه) قِيْلَ لِعَلِيٍّ: وَمَنْ جَارُ الْمَسْجِدِ؟ قَالَ: مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ.

মসজিদের প্রতিবেশী ব্যক্তির নামায মসজিদ ব্যতীত হবে না। আলী রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, মসজিদের প্রতিবেশী কে?

তিনি বললেন, যার কাছে আযানের ধ্বনি পৌঁছে। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৯১৫

এছাড়া আরো বহু হাদীস-আছারে মসজিদের জামাত ছাড়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ধমকি এসেছে। ফকীহগণও পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আযান শোনার পর নামায আদায়ের জন্য মসজিদে আসা এবং মসজিদের জামাতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। কেউ যদি সক্ষমতা সত্ত্বেও নিয়মিত মসজিদের জামাত ছেড়ে দেয়, তাহলে সকল ফকীহের মতেই এটি বড় অন্যায় কাজ এবং এ কারণে সে গোনাহগার হবে।

ফকীহগণ একথাও স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, দ্বীনী ইলম এবং মাসআলা-মাসায়েলের দরস-মুযাকারার জন্যও যদি কেউ নিয়মিত মসজিদের জামাতে না আসে, তাহলেও সে গোনাহগার হবে। নিয়মিতভাবে মসজিদের জামাত ছাড়ার জন্য ইলম ও ফিকহের দরস-মুযাকারাও ওযর হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু একে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম বানিয়ে ফেলা আরো বড় অন্যায় ও গোনাহের কাজ।

এক্ষেত্রে ইলম ও ফিকহের তাদরীসের কারণে মসজিদের জামাতে নামায না পড়ে দরসের পর মাদরাসায় নিজেরা মিলে জামাত করে নিলে কোনো অসুবিধা নেইবলে যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। ইলম ও ফিকহের দরসের ওযরে বিশেষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তালিবে ইলমের জন্য কখনো মসজিদের জামাত ছাড়া জায়েয হওয়ার কথা কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন। কিন্তু সবসময়ের জন্য এটিকে আগে থেকেই নিয়ম বানিয়ে নেওয়াকে কোনো ফকীহ জায়েয বলেননি। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

Ñফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; আলগায়া, সারুজী ৩/৩২১; মিরাজুদ দিরায়া ১/৭৬৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৫; ইলাউস সুনান ৪/১৮৬-১৮৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মদ আলমামুন - মেগেলপাড়া, টাঙ্গাইল

৬৫৭৮. প্রশ্ন

আমাদের সমাজে কবর খনন করার প্রচলিত পদ্ধতি এমন যে, লাশ চিত করে শোয়াতে হয়। শুধু চেহারাটা কিছুটা কেবলামুখী করার চেষ্টা করা হয়। আমার জানার বিষয়, কবর খনন করার মাসনূন তরীকা কী এবং কবরে লাশ রাখার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি কী?

উত্তর

কবরে মায়্যেতকে শোয়ানোর প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি সঠিক নয়। চিত করে শুইয়ে শুধু চেহারা কেবলার দিকে করে দেওয়া মাসনূন পদ্ধতির পরিপন্থী। এক্ষেত্রে সুন্নত নিয়ম হল, মায়্যেতকে কবরে সম্পূর্ণ ডান কাত করে কেবলামুখী করে শোয়ানো। আর তা নিশ্চিত করতে কবর খনন করতে হবে শরীয়ত ও সুন্নাহসম্মত পদ্ধতিতে। শরীয়তে কবর খননের দুটি পদ্ধতি রয়েছে।

এক. প্রথমে চার কোণ বিশিষ্ট একটি গর্ত খনন করবে। যা লম্বায় মায়্যেতের দৈর্ঘ্য পরিমাণ হবে এবং চওড়ায় লম্বার অর্ধেক পরিমাণ। আর তা একজন মানুষের উচ্চতার সমান কিংবা অন্তত সীনা বরাবর গভীর করে খনন করা উত্তম। অবশ্য সর্বনিম্ন একজন মানুষের উচ্চতার অর্ধেক পরিমাণ গভীর করে খনন করার সুযোগ আছে। এভাবে প্রথমে চার কোণ করে বড় একটি গর্ত খনন করার পর পশ্চিম দিকে ভেতরে আরেকটি গর্ত খনন করবে।  যার উচ্চতা মায়্যেতের দুই কাঁধের প্রশস্ততার চেয়ে একটু বেশি হবে। এভাবে গর্তটি খনন করার পর মায়্যেতকে তাতে ডান কাত করে রেখে বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে ঐ গর্ত বন্ধ করে দেবে। এরপর বড় গর্তটি মাটি দ্বারা পূর্ণ করে দেবে। এ পদ্ধতিতে খনন করা কবরকে لحد (লাহ্দ) Ñঅনেক অঞ্চলে বুগলী কবরÑ বলা হয়।

দুই. পূর্বের নিয়মানুযায়ী প্রথমে চার কোণ বিশিষ্ট একটি বড় গর্ত খনন করে মাঝ বরাবর আরেকটি ছোট গর্ত খনন করবে। যার প্রশস্ততা হবেÑ মায়্যেতকে কেবলামুখী করে শোয়াতে যতটুকু প্রয়োজন হয় সে পরিমাণ আর গভীরতা হবে মায়্যেতের দুই কাঁধের প্রশস্ততার চেয়ে একটু বেশি। এভাবে গর্ত খনন করার পর মায়্যেতকে তাতে রেখে উপরে বাঁশ ইত্যাদি বিছিয়ে দেবে। তারপর পুরো গর্ত মাটি দ্বারা ভরাট করে দেবে। এ পদ্ধতিতে খনন করা কবরকে  شق (শাক্ক) Ñকোনো কোনো অঞ্চলে সিন্দুক কবরÑ বলা হয়।

যেসব জায়গার মাটি শক্ত ও মজবুত, সেখানে লাহ্দ তথা বুগলী কবর খনন করাই উত্তম। তবে যেসব জায়গার মাটি নরম সেখানে সিন্দুক কবর খনন করবে।

Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৬৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২১৩৭; মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ৬০৬০, আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২২; জামিউর রুমুয ১/২৮৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৪

শেয়ার লিংক

মীযান আহমাদ - সেনবাগ, নোয়াখালী

৬৫৭৯. প্রশ্ন

আমি একটি ইটের ভাটায় ইট কেনার জন্য সত্তর হাজার টাকা দেই। ভাটার মালিক বলেন, আপনাকে দুই মাস পরে ইট দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারি লাইসেন্স না থাকায় ভাটাটি বন্ধ করে দেয়। এদিকে ঐ লোক টাকাও দেয় না, ইটও দেয় না। আমার সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। সে পালিয়ে থাকে। আজ ছয় বছর হয়ে গেছে আমার টাকা পাচ্ছি না। তার টাকা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই মনে হয়। সেক্ষেত্রে জানতে চাই, এই পাওনা টাকা আমার যাকাত দ্বারা পরিশোধ করে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কী?

উত্তর

তার নিকট পাওনা টাকা আপনার যাকাত আদায়ের নিয়তে যদি আপনি ছেড়ে দেন কিংবা আপনার যাকাতের সাথে কাটাকাটি করে নেন, তবে এর দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে আপনি এ পন্থা অবলম্বন করতে পারেন যে, লোকটি যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র হয়, তাহলে আপনি তাকে সরাসরি যাকাতের টাকা দিয়ে দেবেন। অতঃপর সে যখন যাকাত বাবদ এ টাকা বুঝে পেল তখন আপনি তার থেকে আপনার পাওনা টাকা নিয়ে নিতে পারবেন। এতে আপনার যাকাতও আদায় হয়ে যাবে এবং লোকটির পাওনাও পরিশোধ হয়ে যাবে।

Ñকিতাবুল আছল ২/১০৫; আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ঢাকা

৬৫৮০. প্রশ্ন

আমি কয়েকটি ফ্যামিলি ফ্ল্যাটের মালিক। ভাড়াটেদেরকে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার সময় দুই মাসের ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা জামানত হিসাবে আমার কাছে রাখা হয়। ভাড়াটে যদি প্রতি মাসের ভাড়া ও বিল যথারীতি আদায় করে, তাহলে বাড়ি ছাড়ার সময় ঐ জামানতের টাকা ভাড়াটেকে পুরোপুরি ফেরত দেওয়া হয় এবং আমার কোনো পাওনা থাকলে সে টাকা থেকে সমন্বয় করা হয়। এই ভাড়াচুক্তি এক বছরের জন্য করা হয়। প্রয়োজনে আবার নবায়ন করা হয়। সকল ভাড়াটেদের জামানতের টাকার মোট পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। এই টাকা আমি আমার নিজস্ব টাকার সাথে সুদমুক্ত একাউন্টে জমা রাখি। ভাড়াটে বাড়ি ছাড়ার সময় ঐ জামানতের টাকা তাকে পরিশোধ করে দিতে হবে। এই হিসাবে আমি ঐ টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকার যাকাত দীর্ঘদিন যাবৎ পরিশোধ করে আসছি।

 

কিছুদিন পূর্বে একজন আমাকে বললেন যে, আপনি যেহেতু ঐ জামানতের টাকা থেকে নিজ প্রয়োজনে খরচ করার অধিকার রাখেন, কাজেই আপনি ঐ টাকার মালিক গণ্য হবেন এবং ঐ টাকার যাকাত আপনাকেই আদায় করতে হবে। কারণ কোনো টাকা যাকাত বহির্ভূত হতে পারে না।

উল্লেখ্য, দশ বছর পূর্বে এই জামানতের টাকা প্রায় অর্ধেক ছিল। কাজেই ঐ জামানতের টাকার যাকাত আদায় করার দায়িত্ব আমার ওপর আসবে, নাকি ভাড়াটের ওপর আসবে? আমাকে আদায় করতে হলে কত বছরের জন্য করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের থেকে গৃহীত ঐ টাকাগুলো যেহেতু আপনি তাদের থেকে জামানত (সিকিউরিটি মানি) হিসেবে নিয়েছেন এবং জামানতের টাকা হিসেবে সেগুলো সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছেন, আপনি তা খরচও করেননি, তাই আপনি ঐ টাকার মালিক হননি; বরং এর মালিক টাকাদাতা ভাড়াটিয়াগণ। আপনার কাছে টাকাগুলো আমানতস্বরূপ আছে। তা আপনার নিজে ভোগ করা বা নিজ প্রয়োজনে খরচ করাও বৈধ নয়। অতএব ঐ টাকার যাকাত আপনার ওপর আসবে না; বরং টাকাগুলোর যাকাত এর মালিকগণ প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে (যদি তা এককভাবে বা তার অন্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে মিলে নেসাব পরিমাণ হয়) প্রদান করবেন।

Ñকিতাবুল আছল ৩/১৭৫; আলমাবসূত, সারাখসী ২১/১২২, ১৫/১১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৩৫

শেয়ার লিংক

আবদুর রাকীব - মাইজদি, নোয়াখালী

৬৫৮১. প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ এ বছর আমার উমরা করার সৌভাগ্য হয়। উমরার তাওয়াফ শেষ করার পর আমি ওযু-ইস্তিঞ্জার জন্য বাইরে যাই। পরে সেখান থেকে একটা গেইট দিয়ে মারওয়ায় পৌঁছি। তখন আমি মারওয়া থেকেই সায়ী শুরু করি এবং সাফাতে গিয়ে সায়ীর সাত চক্কর পূর্ণ করি। আমার ধারণা ছিল, সায়ীতে সাত চক্কর পূর্ণ হলেই চলবে; সাফা থেকে শুরু হোক বা মারওয়া থেকে।

এখন হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, মারওয়া থেকে সায়ী শুরু করার কারণে আমার সায়ী আদায়ে কোনো সমস্যা হয়নি তো? উমরা শেষ করে এখন দেশে চলে এসেছি। সায়ী আদায়ে কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে এখন আমার জন্য করণীয় কী?

উত্তর

সায়ী সাফা থেকে শুরু করা ওয়াজিব। মারওয়া থেকে সায়ী শুরু করলে প্রথম চক্করটি সায়ীর চক্কর হিসেবে ধর্তব্য হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার সায়ীর চক্কর হয়েছে ছয়টি। সাত চক্কর পূর্ণ হয়নি। তাই সায়ীর একটি চক্কর আপনার অনাদায়ী রয়ে গেছে। একারণে আপনার ওপর একটি সদকাতুল ফিতর পরিমাণ সদকা আদায় করা জরুরি। কেননা সায়ীর তিন চক্কর বা এর কম ছেড়ে দিলে প্রতি চক্করের জন্য একটি করে সদকাতুল ফিতর পরিমাণ আদায় করা ওয়াজিব।

আর এ সদকা হেরেমের এলাকায় আদায় করা উত্তম। অবশ্য দেশের গরীব-মিসকীনকে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ৪/৫০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১৯, ৩১৮; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৩/১৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৮

শেয়ার লিংক

আবুদ দারদা - মাইজদী, নোয়াখালী

৬৫৮২. প্রশ্ন

আমার ছেলের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একুশ মাস বয়সে তার দুধ পান বন্ধ করানো হয়। এর দুই মাস পর দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তার চাচি বিদেশ থেকে আসলে আমার আম্মু তাকে তার চাচির দুধ পান করিয়ে দেন। ততদিনে সে অন্য খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু এই দুধ পান তার মায়ের দুধ পান বন্ধের এবং সে অন্য খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরে হওয়ায় উভয়ের মাঝে দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে কি নাÑ এ নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি। তাই মুহতারাম আমাদেরকে এবিষয়ে শরীয়তের সঠিক সমাধানটি জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

কোনো শিশু অন্য খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পরও দুই বছরের ভেতর কোনো নারীর দুধ পান করলে তার সাথে দুধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছেলে যেহেতু দুই বছরের ভেতর তার চাচির দুধ পান করেছে, তাই এর মাধ্যমে তাদের মাঝে দুধ-সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে গেছে। শিশুটি তার উক্ত চাচির দুধ ছেলে এবং এ মহিলা তার দুধ মা গণ্য হবেন।

Ñ আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৭; আননাহরুল ফায়েক ২/৩০০; আদ্দুররুল  মুখতার ৩/২১১

শেয়ার লিংক

আসেম খান - কুমিল্লা

৬৫৮৩. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি এক মাস ইতিকাফ করার মান্নত করে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সে মান্নত পুরা করতে পারছিল না। বছরখানেক পর তার ইন্তেকাল হয়ে যায়। জানতে চাই, এখন তার পক্ষ থেকে কোনো ফিদইয়া দিতে হবে কি?

উল্লেখ্য, লোকটি ফিদইয়া আদায়ের জন্য ওসিয়ত করে যেতে পারেনি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি ফিদইয়া আদায়ের ওসিয়ত না করলেও ওয়ারিশদের উচিত হবে, তার পক্ষ থেকে এর ফিদইয়া আদায় করে দেওয়া। যদিও ফিদইয়ার ওসিয়ত না করার কারণে ওয়ারিশদের ওপর তার পক্ষ থেকে ফিদইয়া আদায় করা আবশ্যক নয়; কিন্তু মৃতের পরকালের প্রতি লক্ষ করে আদায় করে দেওয়াই হবে উত্তম কাজ। আর ইতিকাফের ফিদইয়া হল, প্রতিদিনের ইতিকাফের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুই বেলা খাবার খাওয়ানো বা এর মূল্য দেওয়া।

Ñমুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৯২৯; কিতাবুল আছল ২/১৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৭

শেয়ার লিংক

শাহেদ - চাঁদপুর

৬৫৮৪. প্রশ্ন

একটা বিপদে আমি খুব পেরেশান ছিলাম। তখন আমি আল্লাহর নামে মান্নত করি যে, এ পেরেশানী থেকে মুক্ত হলে কয়েকটি রোযা রাখব। ঐ সময় নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা আমার মাথায় ছিল না। আলহামদু লিল্লাহ, আমার পেরেশানী দূর হয়ে গেছে। এখন আমার জন্য কয়টি রোযা রাখা জরুরি?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐভাবে মান্নত করার কারণে আপনার ওপর তিনটি রোযা রাখা আবশ্যক হয়েছে। কেননা, নির্দিষ্ট সংখ্যার নিয়ত না করে কয়েকটি রোযা রাখার মান্নত করলে অন্তত তিনটি রোযা রাখা আবশ্যক।

Ñকিতাবুল আছল ২/২১৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৩৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪২

শেয়ার লিংক

মামুনুল হক - রাজশাহী

৬৫৮৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মাদরাসার জামে মসজিদের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য জেলা শহরে একটি মার্কেট ওয়াকফ করা আছে। ঐ মার্কেটের ভাড়া দিয়ে মসজিদের যাবতীয় খরচ পরিচালনার পর মাস শেষে অনেক টাকা রয়ে যায়। এভাবে বেশ কিছু টাকা জমা হওয়ার পর ঐ টাকা দিয়ে শহরের বড় একটি মার্কেটে আরো দুটি বড় বড় দোকান কেনা হয়। বর্তমানে মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য টাকার প্রয়োজনে দোকানদুটি বিক্রি করা দরকার। কিন্তু মসজিদ কমিটির কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দোকানদুটি বিক্রি করা বৈধ হবে, নাকি ওয়াকফের সম্পত্তির মতো এগুলোর বিক্রিও অবৈধ? দয়া করে বিষয়টি সম্পর্কে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

ওয়াকফের আয় দিয়ে কেনা সম্পত্তি মূল ওয়াকফ সম্পত্তির মতো নয়। ওয়াকফের আয় দ্বারা কেনা সম্পত্তি মূল ওয়াকফের প্রয়োজনে বিক্রি করা জায়েয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদের নির্মাণ কাজের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ চাইলে দোকানদুটি বিক্রি করতে পারবে। এতে অসুবিধা নেই।

Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪১৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সালমান - গাজিপুর

৬৫৮৬. প্রশ্ন

নিচের তথ্যগুলো এক ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টের। উক্ত ব্যাংকের কর্মচারীদের থেকে আমি তা জেনেছি।

১. Interest (সুদ)। আমি যে পরিমাণ টাকা রাখি আমার একাউন্টে এক বছরে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক আমাকে এটা প্রদান করে।

২. TDS (Tax deduction at source) on interest amount এটা এক ধরনের ট্যাক্স, যা আমার একাউন্ট থেকে কেটে নেয়। এটা সরকারি ফান্ডে যায়। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ইন্টারেস্টের ওপর। অর্থাৎ যে পরিমাণ ইন্টারেস্ট {১নং} দেয় সেখান থেকে এটা কেটে নেয়। ইন্টারেস্টের পরিমাণ বেশি হলে বেশি কাটে, আর ইন্টারেস্টের পরিমাণ কম হলে কম কাটে।

৩. Excise duity (এক্সাইজ ডিউটি)। বছরের কোনো সময় যদি একাউন্টে এক লক্ষ টাকার ওপর থাকে, তাহলে ১৫০ টাকা কেটে নেয়। এটা সরকারের ফান্ডে যায়।

৪. SMS চার্জ। এটা ব্যাংক কেটে নেয়। একাউন্টে টাকা রাখলে বা তুললে ব্যাংক টাকার পরিমাণসহ এসএমএস দেয় আমাকে। তাই এটা কেটে নেয়।

৫. SMS চার্জ ভ্যাট। এই ট্যাক্স সরকার নেয় ৪ নং-এর জন্য।

৬. স্টেটমেন্ট চার্জ। কত টাকা কবে আমার একাউন্টে রাখলাম বা তুললাম তার হিসাব প্রিন্ট করে ব্যাংক থেকে নিলে এই কাগজের নাম স্টেটমেন্ট। জুলাই এবং ডিসেম্বর ব্যতীত অন্য মাসে এটা নিলে ব্যাংক এই চার্জ কাটে।

৭. ভ্যাট অন স্টেটমেন্ট চার্জ। এটা সরকারের ফান্ডে যায়। ৬ নং-এর জন্য এটা কাটে।

৮. মেইনটেনেন্স চার্জ। এটা ব্যাংক কাটে। দশ হাজার টাকার ওপরে যদি লেনদেন করা হয়, তাহলে এটা কাটা হয়।

৯. ভ্যাট অন মেইনটেনেন্স চার্জ। এটা আমার একাউন্ট থেকে সরকার কেটে নেয়। এটা ৮ নং-এর ওপর নির্ভরশীল। ৮ নং-এ যে পরিমাণ কাটবে তার ১৫% এই ভ্যাট কাটে।

এখন আমার প্রশ্ন হল, ১ নং-এর ইন্টারেস্ট বা সুদ হারাম এবং এটা সদকা করতে হবে সওয়াবের নিয়ত না করে; এটা আমি জানি। বাকি ২ থেকে ৯নং পর্যন্ত যে ভ্যাট, চার্জ, ট্যাক্স আমার থেকে কেটে নিচ্ছে, সেখান থেকে কোন্টা কোন্টা বিয়োগ করতে পারি ১ নং থেকে? বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ জানালে ভালো হয়।

আর সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম? সরকারি ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ সরকারি ট্যাক্স বা ভ্যাট প্রদানে ব্যবহার করা যাবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ব্যাংক একাউন্টের সুদ থেকে সরকার সরাসরি TDS (উৎসে কর) নামে যে পরিমাণ অর্থ কেটে রেখে দেয়, সেই পরিমাণ অর্থ নিজ থেকে আর সদকা করতে হবে না। কেননা এই কর সরাসরি সুদের অর্থের ওপরই আরোপিত হয়ে থাকে। এটি হিসাবধারীর একাউন্টের ওপর আরোপিত কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স কিংবা সার্ভিস চার্জ নয়। কিন্তু TDS ছাড়া ব্যাংকের বাকি কোনো চার্জ সুদের টাকা থেকে কর্তন করা যাবে না; বরং নিজের টাকা থেকেই সেগুলো পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য নেই। সরকারি ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদের টাকাও (উৎসে কর ব্যতীত) সরকার কর্তৃক আরোপিত ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায়ে ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এটি সুদের টাকা নিজের কাজে ব্যবহার করে তা দ্বারা সুবিধা ভোগের নামান্তর। যার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, এখানে দুটি বিষয় সম্পূর্ণ পৃথকভাবে দেখা আবশ্যক :

১. নিজ জমাকৃত অর্থের ওপর প্রাপ্ত সুদ। এটি সম্পূর্ণরূপে (উৎসে কর কর্তনের পর) সদকা করে দেওয়া আবশ্যক।

২. একাউন্টের ওপর আরোপিত ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন চার্জ এবং সেগুলোর সাথে সংযুক্ত ভ্যাট। এগুলো একাউন্ট পরিচালনা ফি হিসাবে ব্যাংক নিয়ে থাকে। সুদের টাকা দিয়ে তা আদায় করলে প্রকারান্তরে সুদ গ্রহণ হয়ে যায়। তাই এটা পরিহার করতে হয়।

Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৬০; বাযলুল মাজহুদ ১/১৪৮

শেয়ার লিংক

আবু হুরায়রা - চৌমুহনী, নোয়াখালী

৬৫৮৭. প্রশ্ন

আমি একটি দ্বীনী মাহফিলে শুনেছি যে, মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে খাদ্য-জাতীয় জিনিস মজুদ করে রাখা না জায়েয ও লানতযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমাদের এলাকার অনেক লোক বৈশাখ মাসে (ধানের মৌসুমে) নিজেদের ধান বিক্রি না করে আশ্বিন বা কার্তিক মাসের দিকে এসে বিক্রি করে। কারণ তখন ধানের মূল্য একটু বেশি পাওয়া যায়। তবে এর কারণে বাজারে প্রভাব পড়ে না এবং সংকটও তৈরি হয় না। কারণ আশপাশের এলাকার ধান দ্বারা বাজারের চাহিদা পূর্ণ হয়ে যায়।

এখন আমি জানতে চাই, এধরনের মজুতকরণও কি শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ মজুতকরণের অন্তর্ভুক্ত হবে?

উত্তর

কাক্সিক্ষত মুনাফা লাভের আশায় নিজের খেতের ফসল বিক্রি না করে মূল্য বৃদ্ধির অপেক্ষায় রেখে দেওয়া নাজায়েয নয়। তা শরীয়ত নিষিদ্ধ احتكار (ইহতিকার)-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ ইহতিকার হল, বিপুল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য কিনে নিয়ে অধিক মুনাফাখোরির উদ্দেশ্যে তা মজুদ করে বাজারে পণ্যসংকট তৈরি করা এবং ক্রেতা সাধারণকে কষ্টে ফেলা। বর্তমানে যেটিকে মনোপলি বা সিন্ডিকেট বলা হয়ে থাকে। দেখা যায়, মুষ্টিমেয় কতক ব্যবসায়ীর হাতেই খাদ্য-পণ্যের মূল কারবারগুলো থাকে এবং অনেক সময় তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে থাকে। কিন্তু নিজেরই উৎপন্ন ফসল বিক্রি না করে জমা করে রাখা ইহতিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়।

অবশ্য কেউ যদি অনেক জমির মালিক হয় এবং তার গোডাউনে অনেক বেশি পরিমাণে খাদ্যশস্য জমা করে রাখে, অন্যদিকে বাজারে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে তার ফসলগুলো বিক্রি করে দিয়ে বাজারের খাদ্য সংকট দূর করা এবং গণমানুষের কষ্ট লাঘব করা তার জন্য আবশ্যক হবে।

Ñআলহাবিল কুদসী ২/৩২৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুহিবুল্লাহ - ফেনী

৬৫৮৮. প্রশ্ন

কিছু মানুষকে দেখা যায়, তারা মহিলাদের মতো পিঠ পর্যন্ত দীর্ঘ চুল রাখে। অনেকের আবার দাড়ি না থাকার কারণে দেখতে পুরো মহিলাদের মতো মনে হয়।

জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো পুরুষের জন্য নারীদের মতো লম্বা চুল রাখা কি জায়েয আছে?

উত্তর

পুরুষের জন্য নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে এবং নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদের ওপর অভিশাপ দেওয়া হয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদের ওপর এবং পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারীদের ওপর অভিশাপ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৮৫)

সুতরাং কোনো পুরুষের নারীদের মতো চুল রাখা বা নারীদের বেশভূষা অবলম্বন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গুনাহের কাজ। এ থেকে বেঁচে থাকা সকল মুসলমানের কর্তব্য।

অবশ্য বাবরি চুল রাখতে কোনো সমস্যা নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বাবরি রাখতেন। কাতাদা রাহ. বলেন, আমি আনাস রা.-এর নিকট নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেনÑ

كَانَ شَعرُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجِلًا، لَيْسَ بِالسَّبطِ وَلاَ الجَعْدِ، بَيْنَ أُذُنَيْهِ وَعَاتِقِه.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল ছিল মধ্যম ধরনের, একেবারে সোজাও নয় আবার বেশি কোঁকড়ানোও নয়। তা ছিল দুই কান ও দুই কাঁধের মাঝ পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩৮)

আনাস রা. আরো বলেনÑ

كَانَ يَضْرِبُ شَعْرُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْكِبَيْهِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল (কখনো) কাঁধ পর্যন্ত লম্বা হত। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩৮)

অতএব কোনো পুরুষ চুল লম্বা রাখতে চাইলে কানের নিচ পর্যন্ত বা কাঁধ পর্যন্ত রাখতে পারবে। কিন্তু এর চেয়েও বেশি লম্বা রাখলে নারীদের চুলের সাদৃশ্য হয়ে যায়; তাই তা নিষিদ্ধ।

Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৫৬০২, ২৫৬০৪; ফাতহুল বারী ১০/৩৪৫; ফয়যুল কাদীর ৫/২৭১; বাযলুল মাজহুদ ১৬/৪২৬

শেয়ার লিংক

রাশেদুল ইসলাম - পটিয়া, চট্টগ্রাম

৬৫৮৯. প্রশ্ন

বেশ কিছুদিন ধরে একটি বিষয় নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিষয়টি হল, কুরআন তিলাওয়াতের সময় কোথাও কোথাও আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম পড়া হয়। যেমনÑ

مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ.

তো জানার বিষয় হল, তিলাওয়াতের সময় কোনো আয়াতে এরকম আমাদের নবীর নাম পড়া হলে দরূদ পড়তে হবে কি না? নাকি তিলাওয়াতের সময় দরূদ পড়ার বিধান আদৌ নেই? তিলাওয়াতের মাঝে কারো থেকে শুনলে কী হুকুম? আশা করি জানাবেন।

উত্তর

যেসকল আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুবারক রয়েছে, তা তিলাওয়াত করলে বা অন্য কারো তিলাওয়াতে নবীজীর নাম মুবারক শুনলে এক্ষেত্রে দরূদ শরীফ পড়া জরুরি নয়। অবশ্য তিলাওয়াত শেষে চাইলে দরূদ শরীফ পড়ে নিতে পারে।

Ñউয়ূনুল মাসাইল, পৃ. ২২৩; আলমুলতাকাত, পৃ. ২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩১৬; রদ্দুল মুহতার ১/৫১৯

শেয়ার লিংক