আবদুল হামীদ - বারিধারা, ঢাকা

৬২৭১. প্রশ্ন

আমি এক মাদরাসার বাবুর্চি। রান্নার আগে বড় ডেকচিতে পানি নিই। তারপর সবজি কেটে ধোয়ার জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখি। যার ফলে পানিতে সবজির গন্ধ ভালোভাবেই অনুভূত হয়। মাঝে মাঝে নামাযের সময় কাছে পানি থাকে না। কিছুটা দূরে থাকে। অলসতাবশত পানি আনতে মন চায় না। ওযুর প্রয়োজনে আমি কি ঐ পানি দিয়ে ওযু করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ পানির স্বাভাবিক তরলতা যদি ঠিক থাকে, তাহলে ওযু সহীহ হয়ে যাবে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি দ্বারা যে ওযু করা ভালো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

-আলআজনাস, নাতিফী ১/৪৬; আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১

         

শেয়ার লিংক

মুতাসিম বিল্লাহ - যশোর

৬২৭২. প্রশ্ন

আমার নানা দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। একা চলাফেরা করতে পারেন না। তার পক্ষে নিজে নিজে ওযু করা সম্ভব নয়। কিন্তু পানি ব্যবহারে তার সমস্যা নেই। হুজুরের নিকট জানার বিষয় হল, এখন কি তিনি তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারবেন?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নানাকে যদি ওযু করিয়ে দেওয়ার মতো কোনো লোক থাকে তাহলে তার জন্য লোকের সাহায্যে ওযু করাই জরুরি। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করা যাবে না। কিন্তু যদি তাকে ওযু করিয়ে দেওয়ার মতো কোনো লোকের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তিনি তায়াম্মুম করতে পারবেন।

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৪৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৩৩

শেয়ার লিংক

কামরুজ্জামান - ঢাকা

৬২৭৩. প্রশ্ন

আমাদের হোস্টেলে ছারপোকার উপদ্রব অনেক বেশি। একদিন ফজরের সময় একটি জামা পরে নামায পড়ি। সকালে দেখলাম তাতে বিভিন্ন জায়গায় ছারপোকার রক্ত লেগে আছে। রক্তমাখা জামা পরে কি আমার ফজরের নামায শুদ্ধ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়। কেননা তা প্রবাহিত রক্ত নয়। সুতরাং ঐ জামা পরে আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে। অবশ্য নাপাক না হলেও যেহেতু তা ময়লা, তাই নামাযের আগে সম্ভব হলে  ধুয়ে নেওয়া ভালো।

Ñকিতাবুল আছল ১/৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩২০

শেয়ার লিংক

তারিকুল ইসলাম - মাদারীপুর

৬২৭৪. প্রশ্ন

একটি আকস্মিক দুর্ঘটনায় আমার পায়ে জখম হয়ে যায়। কিছুদিন ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখার পর ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ঘা যেহেতু এখনো শুকায়নি তাই সেখানে পানি লাগানো যাচ্ছে না। আমার এই জখমটি হয়েছে পায়ের পাতার উপরের অংশে। তাই পায়ের তলায় পানি ব্যবহার করতে চাইলে করা যাবে। এক্ষেত্রে ওযু করার সময় আমার উপর কি পায়ের তলা ধৌত করা জরুরি, নাকি তাও মাসাহ করে নিলে চলবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু পায়ের তলায় পানি ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই, তাই ওযুতে পা ধোয়ার সময় পায়ের তলা পানি দ্বারা ধোয়া জরুরি; মাসেহ করলে হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে কখনো পায়ের তলায় পানি ব্যবহার করলে যদি যখমের ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে তখন ঐ অংশও পানি দ্বারা না ধুয়ে মাসাহ করা যাবে।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬২; আলমুহীতুর রাযাবী ১/১৮৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫; আদ্দুররুর মুখতার ১/২৮০

শেয়ার লিংক

উম্মে হানী - লক্ষীপুর

৬২৭৫. প্রশ্ন

একজন মহিলার ঋতুস্রাব প্রতি ইংরেজি মাসের নয় তারিখ থেকে শুরু হয়ে ষোল তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকত। কিন্তু গত মাসে তা বিশ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এরপর আর আসেনি। জানার বিষয় হল, গত মাসে এই মহিলার ঋতুস্রাব কি আগের নিয়মে ধরা হবে, নাকি পরিপূর্ণ দশ দিন?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গত মাসে ঐ মহিলার ঋতুস্রাব যেহেতু দশ দিন অতিক্রম করে গেছে, তাই এক্ষেত্রে তার আগের নিয়ম বহাল থাকবে। অর্থাৎ নয় তারিখ থেকে ষোল তারিখ পর্যন্ত হায়েয গণ্য হবে আর ষোল তারিখ থেকে বিশ তারিখ পর্যন্ত ইস্তেহাযা গণ্য হবে।

Ñকিতাবুল আছল ১/২৮৯; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৮; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা, পৃ. ৮; রদ্দুল মুহতার ১/৩০০

শেয়ার লিংক

আলীমুর রহমান - যশোর

৬২৭৬. প্রশ্ন

গত শুক্রবার ফজরের নামাযের জন্য যখন মসজিদে প্রবেশ করি, তখন ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন। আমি নামাযে শরীক হওয়ার আগেই ইমাম সাহেব তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করে ফেলেন। ইমাম সাহেব সিজদায়ে তিলাওয়াত থেকে ওঠার পর রুকুর আগে আমি নামাযে শরীক হই। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, এখন কি আমাকে এ তিলাওয়াতের সিজদাটি আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে রাকাতে সিজদায়ে তিলাওয়াত করা হয়েছে আপনি যেহেতু সে রাকাতের রুকু পেয়েছেন তাই এর দ্বারা আপনার সিজদায়ে তিলাওয়াতও আদায় হয়েছে বলে ধর্তব্য হবেপরবর্তীতে আপনাকে তা আর আদায় করতে হবে না।

Ñকিতাবুল আছল ১/২৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৮; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪০; রদ্দুল মুহতার ২/১১০

শেয়ার লিংক

হাসিবুর রহমান - যশোর

৬২৭৭. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব একবার রোড এক্সিডেন্টে পায়ে ব্যথা পান। ফলে তিনি স্বাভাবিকভাবে মাটিতে বসে নামায পড়তে পারছিলেন না। তখন কয়েকদিন তিনি চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামায পড়েন। সে সময় মুয়াযযিন সাহেব নামায পড়িয়েছেন। আমরা তার পেছনে নামায আদায় করি। একদিন মুয়াযযিন সাহেব না থাকায় ইমাম সাহেব চেয়ারে বসেই ইশারায় রুকু-সিজদা করে আমাদের নামায পড়িয়েছেন। এরপর একদিন বেহেশতী জেওরে দেখতে পেলাম, ইশারাকারীর পেছনে সুস্থ ব্যক্তির ইক্তেদা সহীহ নয়। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, তাহলে কি আমাদের ঐ দিনের নামায সহীহ হয়নি?

উত্তর

ইশারায় সিজদা করে নামায আদায়কারীর পেছনে জমিনে সিজদা করে নামায আদায়ে সক্ষম ব্যক্তির ইকতেদা সহীহ নয়। তাই উক্ত ইমামের পেছনে আদায়কৃত আপনার ঐ ফরয নামায সহীহ হয়নি। পুনরায় তা পড়ে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, অসুস্থ ব্যক্তি নিচে বসে জমিনে সিজদা করে নামায পড়লে তার পেছনে অন্যদের ইক্তেদা সহীহ আছে।

Ñকিতাবুল আছল ১/১৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৫০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৮

শেয়ার লিংক

রায়হান - কুমিল্লা

৬২৭৮. প্রশ্ন

গতকাল আমি যোহরের তৃতীয় রাকাতে ভুলে সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়ে ফেলি। এক্ষেত্রে কি আমার উপর সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে? আমি সিজদা সাহু করিনি, তো আমার নামাযের কী হুকুম?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সিজদা সাহু না করে ঠিকই করেছেন। কেননা ফরয নামাযের তৃতীয়, চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা মিলালে সিজদা সাহু ওয়াজিব হয় না। তবে ফরয নামাযের তৃতীয়, চতুর্থ রাকাতে সূরা না মিলানো সুন্নত। হযরত আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন Ñ

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ فِي الأُولَيَيْنِ بِأُمِّ الكِتَابِ، وَسُورَتَيْنِ، وَفِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُخْرَيَيْنِ بِأُمِّ الكِتَابِ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতেহা এবং সাথে আরো দুটি সূরা পড়তেন। আর শেষ দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়তেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৭৬)

তাই এসব রাকাতে ইচ্ছাকৃত সূরা মিলানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

Ñআলমুহীতুর রাযাবী ১/৩২১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯২; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯

শেয়ার লিংক

শওকত - নোয়াখালী

৬২৭৯. প্রশ্ন

ফরয নামায একাকী আদায় করার সময় মাঝে মাঝে ভুলে প্রথমে রাকাতের কেরাতে সূরা নাসপড়ে ফেলি। শুনেছি, এক্ষেত্রে নাকি দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা নাসপড়তে হবে। তাই এমন ভুল হয়ে গেলে এর ওপর আমল করে থাকি। জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতি কি ঠিক? বা এক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তর

ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা নাসপড়ে ফেললে দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা নাসপড়াই ভালো। তাই এ ধরনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাতও সূরা নাসপড়া নিয়মসম্মতই হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে অন্যস্থান থেকে পড়লেও নামাযের ক্ষতি হবে না। তবে বারবার এমন ভুল হওয়া উচিত নয়।

Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬

শেয়ার লিংক

রায়হান - কুমিল্লা

৬২৮০. প্রশ্ন

আমি সর্বদা তাকবীরে উলার সঙ্গে নামায আদায় করি। গতকাল হঠাৎ যোহরের নামাযে তাকবীরে উলা ছুটে যায়। ইমামের সঙ্গে তৃতীয় রাকাতে শরীক হই। চতুর্থ রাকাতের বৈঠকে আমি সন্দেহে পড়ে যাই যে, আমি কি শুধু তাশাহহুদ পড়ব? কারণ তা আমার জন্য প্রথম বৈঠক। নাকি দরূদ ও দুআয়ে মাসূরাও পাঠ করতে পারব?

বিষয়টি সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

মাসবুক ইমামের সঙ্গে শেষ বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়বে। কারণ ইমামের এটি শেষ বৈঠক হলেও মাসবুকের তা প্রথম বৈঠক। অবশ্য এক্ষেত্রে মাসবুক তাশাহহুদ ধীরে ধীরে পড়বে। যেন তা ইমামের সালাম পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়। আর যদি সালামের আগেই পড়া শেষ হয়ে যায়, তাহলে সে পুনরায় শুরু থেকে তাশাহহুদ পড়তে পারে। আবার চাইলে সে চুপও থাকতে পারে। অবশ্য ইমামের অনুসরণ করে সে দরূদ ও দুআ মাসুরাও পড়তে পারবে। ইমাম সারাখসী রাহ. এমনটিই বলেছেন।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ১/৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪০৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১১; রদ্দুল মুহতার ১/৫১১

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম - যশোর

৬২৮১. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে মাগরিবের নামাযের ইমামতি করতে গিয়ে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার কিছু অংশ অর্থাৎ اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ পর্যন্ত আস্তে আস্তে পড়ে ফেলি। পরে আবার জোরে পড়ার কথা মনে পড়লে শুরু থেকে পুনরায় উচ্চ আওয়াজে পাঠ করি। মনে কিছুটা সংশয় ও সন্দেহের ভিত্তিতে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমার ওপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল এবং আমাদের নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার তিন আয়াত যেহেতু নিঃশব্দে পড়া হয়েছে, তাই একারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। অতএব এক্ষেত্রে সাহু সিজদা করা ঠিকই হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নিয়ম হল, ভুল স্মরণ হওয়ার পর শুরু থেকে না পড়ে যতটুকু পড়া হয়েছে এর পর থেকে  উচ্চৈঃস্বরে পড়া।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮; আননাহরুল ফায়েক ১/৩২৫; শরহুল মুনইয়াহ, পৃ. ৪৫৭, ৬১৮;

শেয়ার লিংক

শাকের - নোয়াখালী

৬২৮২. প্রশ্ন

ইমাম সাহেবকে সিজদায় পেলে করণীয় কী? তাকবীরে তাহরীমা বলে তখনই ইমামের সাথে সিজদায় শরীক হওয়া, নাকি ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর অপেক্ষা করা, এরপর নামাযে শরীক হওয়া?

উত্তর

ইমামকে সিজদায় পেলে তখনই ইমামের সাথে সিজদায় শরীক হয়ে যাবে; ইমামের সিজদা থেকে ওঠার অপেক্ষা করবে না। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الصَّلَاةَ وَالإِمَامُ عَلَى حَالٍ فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الإِمَامُ.

তোমাদের কেউ যখন নামাযে আসে তখন ইমামকে যে অবস্থায় পায় সে যেন তাই করে (অর্থাৎ যে অবস্থায়ই ইমামকে পাবে, জামাতে শরীক হয়ে যাবে।) (জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৯১)

অপর একটি হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ

وَإِذَا وَجَدْتُّمُ الْإِمَامَ قَائِمًا فَقُومُوا، أَوْ قَاعِدًا فَاقْعُدُوا، أَوْ رَاكِعًا فَارْكَعُوا، أَوْ سَاجِدًا فَاسْجُدُوا، أَوْ جَالِسًا فَاجْلِسُوا.

যখন তোমরা ইমামকে দাঁড়ানো অবস্থায় পাবে তখন দাঁড়ানো অবস্থায় নামাযে শরীক হয়ে যাবে। বসা অবস্থায় পেলে বসাতে শরীক হয়ে যাবে। রুকুতে পেলে রুকুতে শরীক হয়ে যাবে। আর সিজদায় পেলে সিজদায় শরীক হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৩৭৩)

তবে সিজদা পাওয়ার দ্বারা ঐ রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে না; বরং রাকাত পাওয়ার জন্য ইমামের সাথে রুকু পাওয়া শর্ত।

Ñআলমাবসূত, সারাখসী ১/৩৫; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; ফাতহুল বারী ২/১৪০

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ঢাকা

৬২৮৩. প্রশ্ন

আমাদের বাসায় আমার আম্মা খাটের উপর নামায আদায় করে থাকেন। ঐ রুমের বারান্দায় যেতে হলে খাটের সামনে দিয়ে যেতে হয়। প্রশ্ন হল, খাটের উপর নামায পড়া অবস্থায় কি তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা বৈধ হবে?

উত্তর

খাটের উপর নামায আদায়কারী ব্যক্তির সামনে দিয়েও অতিক্রম করা যাবে না। বরং এক্ষেত্রে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে সুতরা ব্যবহার করতে হবে। অবশ্য যদি খাটের সমতল অংশের থেকে নিচু হয়ে অতিক্রম করা হয়, তবে তাতে অসুবিধা নেই।

Ñআলআজনাস, নাতিফী ১/৭৪; শরহুল মুনইয়াহ, পৃ. ৩৬৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৪

শেয়ার লিংক

মাহমুদ - গোপালগঞ্জ

৬২৮৪. প্রশ্ন

ক. রমযান মাসে তারাবীর নামাযের সময় অনেক সুস্থ সবল মানুষকে দেখা যায়, বসে বসে তারাবীর নামায পড়ে। জিজ্ঞাসা করলে বলে যে, সারা দিন কাজ-কর্ম করে এত লম্বা নামায দাঁড়িয়ে পড়তে কষ্ট হয়।

জানার বিষয় হল, কারো যদি বিশ রাকাত তারাবীর নামায দাঁড়িয়ে পড়তে কষ্ট হয় তাহলে কি সে বসে বসে পড়তে পারবে?

খ. অনেক মুসল্লিকে দেখা যায়, তারাবীর নামাযের সময় ইমাম নামায শুরু করে দেয়ার পরও বসে থাকে। অতঃপর ইমাম যখন কেরাত শেষ করে রুকুতে যান তখন তাড়াতাড়ি উঠে তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাযে শরীক হয়। জানার বিষয় হল, এ কাজটি কি ঠিক?

উত্তর

ক. বিনা ওজরে তারাবীর নামায বসে পড়া মাকরূহ। তবে অসুস্থতা বা কোনো ওজরের কারণে যদি দাঁড়িয়ে পড়তে কষ্টকর হয় তাহলে বসে পড়তে পারবে। তবে এক্ষেত্রে নিচে বসে জমিনে সেজদা করে নামায পড়বে। এভাবে জমিনে সেজদা করে নামায পড়তে সক্ষম হলে চেয়ারে বসে নামায পড়তে পারবে না।

খ. প্রশ্নোক্ত কাজটি মাকরূহ। এটা নামাযের ব্যাপারে অলসতা ও উদাসীনতার প্রমাণ বহন করে। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। Ñআলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮

শেয়ার লিংক

মামুন - বরিশাল

৬২৮৫. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের বড় একটি বারান্দা রয়েছে, যা খোলা চত্বরের ন্যায় এবং তা মসজিদেরই অংশ। গরমের মৌসুমে আসর-মাগরিবের সময় মসজিদের ভেতর তীব্র গরম হয়, তাই কিছু লোক সেই বারান্দায় দাঁড়িয়েই ইমামের ইক্তেদা করে নামায আদায় করে থাকে, অথচ তখনও মসজিদের ভেতর কয়েক কাতার ফাঁকা রয়ে যায়। প্রশ্ন হল, উক্ত সূরতে কি তাদের ইক্তদা সহীহ হবে?

উত্তর

সামনের কাতার খালি রেখে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো মাকরূহে তাহরীমী। হাদীস শরীফে কাতার সোজা করার এবং খালি জায়গা পূরণ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং সামনে খালি রেখে পেছনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কঠিন ধমকি এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ

أَقِيمُوا الصُّفُوفَ، وَحَاذُوا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ، وَسُدُّوا الْخَلَلَ، وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ، وَلَا تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ، وَمَنْ وَصَلَ صَفًّا وَصَلَهُ اللهُ، وَمَنْ قَطَعَ صَفًّا قَطَعَهُ اللهُ.

তোমরা কাতার সোজা কর। পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। খালি জায়গা পূরণ কর এবং (কাতার পূরণ ও সোজা করার ক্ষেত্রে) তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও। আর শয়তানের জন্য জায়গা খালি রেখ না। যারা বিচ্ছিন্ন কাতারকে মিলিয়ে নেবে বা যুক্ত করবে আল্লাহ তাদেরকে (তাঁর রহমতের সাথে) মিলিয়ে নেবেন। আর যারা কাতার বিচ্ছিন্ন করবে আল্লাহ তাদেরকে (তাঁর রহমত থেকে) বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৬)

তাই মসজিদের ভেতর জায়গা ফাঁকা রেখে মসজিদের বারান্দা থেকে ইক্তেদাকারীদের নামায মাকরূহ হয়েছে। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য কাজটি মাকরূহ হলেও তাদের নামায আদায় হয়ে গেছে।

Ñমুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ২৪৬৭; কিতাবুল আছার, বর্ণনা ৮৯; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩০৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, ইসবিজাবী ১/৪১০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৫; মুলতাকাল আবহুর ১/১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৭০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭০

শেয়ার লিংক

রাকিব - কুমিল্লা

৬২৮৬. প্রশ্ন

গত মে মাসের পনের তারিখ সোমবার দুপুর প্রায় তিনটার দিকে আমার নানা ব্রেইন স্ট্রোক করে বেহুঁশ হয়ে পড়েন। পরদিন দ্বিপ্রহর পর্যন্ত বেহুঁশ ছিলেন। এখন সুস্থ আছেন।

জানার বিষয় হল, বেহুঁশ অবস্থায় তার যে চার ওয়াক্ত নামায ছুটে গিয়েছিল তা কি এখন তার উপর কাযা করা আবশ্যক?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নানার জন্য ছুটে যাওয়া চার ওয়াক্ত নামায কাযা করা আবশ্যক। কেউ যদি এক দিন বা তার চেয়ে কম সময় (পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা তার চেয়ে কম) বেহুঁশ থাকে তাহলে বেহুঁশ অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামায হুঁশ ফিরে আসার পর কাযা করতে হবে।

সাঈদ আলমাকবুরী রাহ. ও মুহাম্মাদ ইবনে কায়েস রাহ. বলেনÑ

أَنَّ عَمَّارَ بْنِ يَاسِرٍ أُغْمِيَ عَلَيْهِ الظُّهْر وَالْعَصْر وَالْمَغْرِب وَالْعِشَاء، فَأَفَاقَ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ فَصَلّى الظّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْربَ وَالْعِشَاءَ.

আম্মার বিন ইয়াসির রা. যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার সময় বেহুঁশ ছিলেন। পরে রাতে জ্ঞান ফিরলে তিনি যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামায পড়ে নেন। (কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা ১/১১৩; মুআত্তা মুহাম্মাদ, বর্ণনা ২৭৮)

হারেস রাহ. বলেন, ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বেহুঁশ ব্যক্তির ব্যাপারে বলতেনÑ

إِذَا أُغْمِيَ عَلَيْهِ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ أَعَادَ، وَإِذَا كَانَ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ لَمْ يُعِدْ.

কেউ যদি এক দিন এক রাত বেহুঁশ থাকে, তাহলে ছুটে যাওয়া নামায কাযা করবে। আর যদি এর চেয়ে বেশি সময় বেহুঁশ থাকে, তাহলে কাযা করবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৬৬৫৪)

Ñকিতাবুল আছল ১/১৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১৭; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৪০৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০২; রদ্দুল মুহতার ২/১০২

শেয়ার লিংক

মাসুম বিল্লাহ - যশোর

৬২৮৭. প্রশ্ন

অনেক সময় আমরা বাসায় দুই-তিনজন মিলে জামাত করি। মাঝেমধ্যে মাহরাম নারী জামাতে শরীক হয়। এক্ষেত্রে কাতারে দাঁড়ানোর সঠিক পদ্ধতি কী?

উত্তর

ইমামের সাথে একজন পুরুষ মুক্তাদী থাকলে সে ইমামের ডানপাশে দাঁড়াবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ

 بِتُّ عِنْدَ خَالَتِي، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ، فَقُمْتُ أُصَلِّي مَعَهُ، فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَأَخَذَ بِرَأْسِي، فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ.

একবার আমি আমার খালার (উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.) ঘরে রাতযাপন করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সঙ্গে নামাযে দাঁড়ালাম। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথা ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯৯)

 

এক্ষেত্রে নিয়ম হল, ঐ মুসল্লি ইমামের ডানদিকে তার বরাবর দাঁড়াবে। অবশ্য ঠিক বরাবর দাঁড়ালে যেহেতু কখনো মুক্তাদী ইমামের সামনে চলে যাওয়ার আশংকা থাকে; তাই কোনো কোনো ফকীহ ইমাম বলেছেন, মুক্তাদী এভাবে দাঁড়াবে যে, তার পায়ের আঙ্গুল ইমামের পায়ের গোড়ালী বরাবর থাকবে।

আর মুক্তাদী একাধিক পুরুষ হলে তারা ইমামের পেছনে কাতার করবে। পক্ষান্তরে নারীদের কাতার সর্বাবস্থায় পুরুষদের কাতারের পেছনে হবে। এমনকি নারী মুক্তাদী একজন হলেও এবং মাহরাম হলেও সে পেছনে দাঁড়াবে। হাদীস শরীফে এসেছে। আনাস রা. বলেনÑ

صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِ أُمِّ سُلَيْمٍ، فَقُمْتُ وَيَتِيمٌ خَلْفَهُ وَأُمّ سُلَيْمٍ خَلْفَنَا.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইম রা.-এর ঘরে নামায আদায় করেন। (তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহরাম ছিলেন) আমি ও একজন বালক তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। আর উম্মে সুলাইম রা. আমাদের পেছনে দাঁড়ালেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৭১)

উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইচ্ছাকৃত মসজিদের জামাত তরককারীর ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর সতর্কবার্তা এসেছে। তাই মসজিদে জামাতে নামায পড়ার ব্যাপারে অধিক যত্নবান হওয়া কর্তব্য।

Ñকিতাবুল আছল ১/১৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯১; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৭৩; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৪৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জাওয়াদ - হালিশহর, চট্টগ্রাম

৬২৮৮. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি রমযানের একটি রোযা রেখে ভেঙে ফেলেছিল। এখন সে ঐ রোযার কাফফারা আদায় করতে চায়। এজন্য সে মার্চের প্রথম তারিখ থেকে দুই মাস রোযা রাখার নিয়ত করে। কিন্তু মার্চের প্রথম তারিখের রাতে তার ঐ রোযা রাখার কথা স্মরণ ছিল না। এভাবে সে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুম থেকে ওঠার পর সকাল হলে তার ঐ রোযার কথা স্মরণ হয়। যেহেতু সে সুবহে সাদিকের পর থেকে তখন পর্যন্ত কিছুই খায়নি, তাই সে ঐ অবস্থাতেই ঐ রোযার নিয়ত করে নেয়।

মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, তার ঐ রোযা কি কাফফারার রোযা হিসেবে আদায় হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত রোযাটি কাফফারার রোযা হিসাবে আদায় হবে না; বরং তা নফল হিসেবে ধর্তব্য হবে। কেননা কাফফারার রোযার নিয়ত রাতেই করতে হয়। সুবহে সাদিকের পর কাফফারার রোযার নিয়ত করা সহীহ নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে তাকে নতুন করে ধারাবাহিক ষাটটি রোযা রাখতে হবে।

Ñশরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৪০১; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৮০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০

শেয়ার লিংক

রায়হান মাহমুদ - চট্টগ্রাম

৬২৮৯. প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ, গত কয়েকদিন আগে হজ্ব করে এসেছি। সেখানে গিয়ে প্রথমে ওমরার কাজ সম্পন্ন করি। অতঃপর হজ্বের অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু যিলহজ্বের আট তারিখ হালকা হালকা জ্বর ও মাথাব্যথা শুরু হয়। সন্ধ্যায় জ্ব ও মাথাব্যথা বেড়ে যাওয়ায় ঐদিন মিনায় যেতে পারিনি। এমনকি ঐ তারিখ দিবাগত রাতেও মক্কায় অবস্থান করি। পরদিন সকালে শরীর কিছুটা ভালো লাগলে বাসা থেকে সরাসরি আরাফার ময়দানে চলে যাই। পরে এব্যাপারে মুআল্লিম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এতে কোনো জরিমানা আসবে না।

জানতে চাই, আসলেই কি আমার ওপর উক্ত অবস্থায় কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

৮ যিলহজ্ব সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মিনায় গমন করা মুস্তাহাব। আর ঐদিন মিনায় রাত্রিযাপন করা সুন্নত। সুতরাং বিশেষ ওজর ছাড়া মিনায় অবস্থান ত্যাগ করা যাবে না। অবশ্য ছুটে গেলে কোনো জরিমানা আসবে না। বিশেষ ওযরে ছুটে গেলে গোনাহও হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অসুস্থতার কারণে আপনি যেহেতু মিনায় যেতে পারেননি তাই এতে কোনো সমস্যা হয়নি।

Ñআলমুহীতুর রাযাবী ২/১৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩৫; আলইখতিয়ার ১/৪৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

শেয়ার লিংক

ফয়সাল আমীন - লিংকরোড, কক্সবাজার

৬২৯০. প্রশ্ন

বাংলাদেশ থেকে এক ব্যক্তি তামাত্তু হজ্বের নিয়তে ওমরার ইহরাম করে মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করেছে। অতঃপর ওমরা করে হালাল হয়ে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা মুনাওরায় চলে যায়। এখন জানার বিষয় হলÑ

ক. সে মদীনা যাওয়ার পরেও কি তার ওমরাটি তামাত্তু হজ্বের ওমরা হিসেবে বহাল থাকবে?

খ. যদি বহাল থাকে তাহলে সে ফিরে আসার সময় পুনরায় ওমরার ইহরাম করতে পারবে কি না? এক্ষেত্রে সে হজে¦র ইহরাম করলে কোন্ প্রকার হজ্বের ইহরাম করবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ক. হজ্বের মাসসমূহের ভেতর ওমরা করার পর কেউ যদি মদীনা মুনাওয়ারা যায় এবং মদীনা থেকে ফিরে আসার সময় শুধু হজ্বের ইহরাম করে, তাহলেও আগের ওমরাসহ তার এ হজ্বটি তামাত্তু হজ্বই হবে। তাই এক্ষেত্রে তাকে দমে শোকরও দিতে হবে।

খ. অবশ্য এক্ষেত্রে মদীনা থেকে ফেরার সময় ওমরার ইহরাম করেও আসতে পারবে। সেক্ষেত্রে ওমরা সম্পন্ন করার পর হজ্বের সময় হজ্বের ইহরাম করবে এবং এক্ষেত্রেও এটি তামাত্তু হজ্ব হবে।

প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মদীনা থেকে ফেরার সময় শুধু ওমরা কিংবা শুধু হজ্বের ইহরাম করতে পারবে; কিন্তু কিরান হজ্বের ইহরাম (অর্থাৎ হজ্ব ও ওমরার নিয়তে একত্রে ইহরাম) করা তার জন্য বৈধ হবে না। 

Ñআলজামিউস সাগীর, পৃ. ৯৫; আহকামুল কুরআন, তাহাবী ২/২৩০; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৫০৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৮২; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২১৫

শেয়ার লিংক

হাসান মুহাম্মাদ - নোয়াখালী

৬২৯১. প্রশ্ন

আমার দাদা আমাদের এলাকার এক লোককে তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করার জন্য পাঠাতে চান। প্রথমে ঐ লোক এতে রাজি হচ্ছিল না। আবার দাদাও অন্য কারো মাধ্যমে বদলী হজ্ব করাতে চাচ্ছিলেন না। এরপর ঐ লোক হজ্বে যেতে রাজি হলে দাদা তাকে হজ্বের যাবতীয় খরচাদি বুঝিয়ে দেন। কিন্তু আমরা পরবর্তীতে জানতে পারি যে, ঐ লোক নিজে বদলী হজ্বে না গিয়ে অন্য একজনকে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে একজন আলেমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সেই লোক নিজে না গিয়ে অন্যকে বদলী হজ্বে পাঠানোর কারণে নাকি এই হজ্বটি আমার দাদার পক্ষ থেকে আদায় হয়নি।

এ বিষয়টির সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনার দাদা যেহেতু ঐ লোকটিকেই তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করতে বলেছেন এবং লোকটি তাতে সম্মত হয়ে তার থেকে হজ্বের খরচাদি গ্রহণ করেছে; তাই এক্ষেত্রে সে নিজে বদলী হজ্বে না গিয়ে অন্যকে পাঠানো জায়েয হয়নি। এবং এর দ্বারা আপনার দাদার বদলী হজ্ব আদায় হয়নি। কেননা বদলী হজ্বে প্রেরকের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ব্যক্তিরই বদলী হজ্ব আদায় করা জরুরি। প্রেরকের অনুমতি ছাড়া তার জন্য অন্যকে দিয়ে করানো জায়েয নয়।

সুতরাং আপনার দাদা ঐ লোকটিকে যে টাকা দিয়েছিলেন তার ওপর আবশ্যক হল তা ফিরিয়ে দেওয়া। আর আপনার দাদার ওপর হজ্ব ফরয হয়ে থাকলে আবার কারো মাধ্যমে তা আদায় করে নিতে হবে। ­

Ñআলমুহীতুর রাযাবী ২/২৬০; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৫১; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬৪; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৪৪; জাওয়াহিরুল ফিক্হ ৪/২১০

শেয়ার লিংক

আমিন সরদার - হিজলা, বরিশাল

৬২৯২. প্রশ্ন

হুযুর! আমরা এক ভাই, এক বোন। আলহামদু লিল্লাহ! আমাদের আব্বা আম্মা এখনো হায়াতে আছেন। তবে তাদের অনেক বয়স হয়েছে। তাদের স্বাভাবিক খরচ ছাড়াও ঔষধের পেছনে মাসে অনেক টাকা চলে যায়। যা বহন করা আমার একার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। এদিকে আমার বোনের আর্থিক অবস্থা আমার থেকে অনেক ভালো। তার স্বামীর টাকা-পয়সা ছাড়াও সে ব্যক্তিগতভাবে অনেক টাকার মালিক।

এখন আমার জানার বিষয় হল, এ অবস্থাতে আমার বোনের ওপর আব্বা-আম্মার খরচ নির্বাহের কোনো দায়িত্ব আছে কি না? যদি থেকে থাকে, তাহলে কী পরিমাণ? বিষয়টি জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

পিতা-মাতা সামর্থ্যবান না হলে সামর্থ্যবান ছেলে-মেয়ের ওপর সামর্থ্য অনুযায়ী পিতা-মাতার খরচ বহন করা জরুরি। এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়ে সামর্থ্যবান হলে শরীয়তের নির্দেশনা হল, খরচের অর্ধেক ছেলে বহন করবে আর অর্ধেক মেয়ে বহন করবেসুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা মতে আপনার বোন যেহেতু নিজে সামর্থ্যবান, তাই পিতা-মাতার খরচের অর্ধেক তার বহন করা কর্তব্য। অবশ্য এক্ষেত্রে আপনি চাইলে তার থেকে কমও নিতে পারেন।

Ñকিতাবুল আছল ১০/৩৪০; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/২২২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/১৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬৪

শেয়ার লিংক

হিবাতুল্লাহ - রংপুর

৬২৯৩. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার ছেলে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। দিন দিন তার অসুস্থতা বেড়েই চলছিল। তখন আমি তার রোগমুক্তির উদ্দেশ্যে মান্নত করেছিলাম যে, আল্লাহ তাআলা যদি আমার ছেলেকে সুস্থ করে দেন, তাহলে আমি এক মাস রোযা রাখব। এরপর আলহামদু লিল্লাহ আমার ছেলে সুস্থ হয়েছে। এখন আমার জানার বিষয় হল, মান্নতের এই এক মাস রোযা কি লাগাতার রাখতে হবে, নাকি ভেঙে ভেঙে রাখলেও চলবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু কোনো মাস নির্ধারণ না করে অনির্দিষ্টভাবে এক মাস রোযা রাখার মান্নত করেছেন, তাই এক্ষেত্রে রোযাগুলো লাগাতার রাখা আবশ্যক নয়; বরং চাইলে লাগাতারও রাখতে পারেন আবার পৃথক পৃথকভাবেও রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে মোট ত্রিশটি রোযা রাখতে হবে। তাবেয়ী আতা রাহ. ও ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেনÑ

إذَا جَعَلَ الرَّجُلُ عَلَيْهِ صَوْمَ شَهْرٍ، وَلَمْ يُسَمِّ شَهْرًا مِنَ الشُّهُورِ، قَالَ : إِنْ شَاءَ تَابَعَ، وَإِنْ شَاءَ فَرَّقَ.

কোনো ব্যক্তি যদি এক মাস রোযা রাখার মান্নত করে এবং এক্ষেত্রে কোনো মাস নির্ধারণ না করে, তাহলে সে চাইলে (এই রোযাগুলো) লাগাতারও রাখতে পারে আবার চাইলে পৃথক পৃথকও রাখতে পারে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২৬৩৬)

অবশ্য মান্নত করার সময় যদি আপনি রোযাগুলো লাগাতার রাখার নিয়ত করে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে এই রোযাগুলো লাগাতারই রাখতে হবে।

Ñকিতাবুল আছল ২/১৬৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৩; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ করিম মোল্লা - বগুড়া

৬২৯৪. প্রশ্ন

মৃত্যুর পর মীরাছ বণ্টনে যেন কোনো সমস্যা না হয় তাই আমার সকল জমি জমা ও অন্যান্য সম্পদ সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দিয়েছি। মা-বাবার ইছালে সওয়াবের উদ্দেশ্যেও ৪ কাঠা জমি মহল্লার মসজিদে ওয়াক্ফ করেছি। ঐ ওয়াক্ফকৃত জমিতে কাটার উপযুক্ত অনেক ফসল রয়েছে। কিন্তু ওয়াক্ফের সময় ঐ ফসলগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়নি।

এখন প্রশ্ন হল, ঐ ফসলগুলোও কি ওয়াক্ফের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, নাকি তা আমরা কেটে নিয়ে আসতে পারব? আশা করি উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু উক্ত ৪ কাঠা জমি ওয়াক্ফ করার সময় ফসলসহ ওয়াক্ফ করা হয়েছেÑ এমন কোনো কথা বলা হয়নি, তাই উক্ত জমির সাথে ফসলগুলো ওয়াক্ফের অন্তর্ভুক্ত হয়নি; বরং তা আপনার মালিকানাতেই আছে। সুতরাং আপনি তা কেটে নিতে পারবেন।

Ñআলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, পৃ. ৫৪৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/১০৪; জামেউল মুযমারাত ৩/৩৪৩; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৬১

শেয়ার লিংক

আনোয়ার হুসেন - মহেশখালী, কক্সবাজার

৬২৯৫. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদের ওয়াকফকৃত অনেকগুলো জমিন আছে। এগুলোর আয় থেকে ইমাম-মুআযযিনের  বেতন ও সংশ্লিষ্ট খরচের পরেও অনেক টাকা বেঁচে যায়। একপর্যায়ে ঐ অতিরিক্ত টাকাগুলো জমা করে মসজিদের নামে দুটি দোকান ক্রয় করা হয়। ইদানীং মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন হওয়ায় মসজিদ কমিটি উক্ত দোকানদুটি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে।

জানার বিষয় হল, ওয়াকফিয়া সম্পদের আয় দিয়ে ক্রয়কৃত উক্ত দোকানদুটি বিক্রি করা বৈধ হবে কি না? আশা করি সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

দোকান দুটি যেহেতু ওয়াকফের সম্পদের আয় দিয়ে কেনা হয়েছিল, তাই বাস্তবেই মসজিদের জরুরত থাকলে তা বিক্রি করা জায়েয হবে। কেননা ওয়াকফিয়া সম্পদের আয় দ্বারা কেনা সম্পত্তি মূল ওয়াকফের মতো নয়। ওয়াক্ফের জরুরতবশত এধরনের সম্পত্তি বিক্রি করা জায়েয।

Ñআলহাবিল কুদসী ১/৫৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪১৬

শেয়ার লিংক

হুমায়ূন কবির - কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা

৬২৯৬. প্রশ্ন

আমি একজন দোকানদার। কখনো এমন হয় যে, ক্রেতারা অনেকগুলো জিনিস একসাথে ক্রয় করার ক্ষেত্রে বেচা-কেনা সম্পন্ন হওয়ার পর ভুলে তার কিছু জিনিস রেখে যায়। তখন আমি ঐ জিনিস আমার হেফাজতে রাখি এবং মালিক আসলে দিয়ে দিই। কিন্তু গত সপ্তাহে এক লোক এক বোতল তেল রেখে যায়। কয়েকদিন পর্যন্ত তা হেফাজতে রাখার পর মালিক না পেয়ে এলাকার এক গরীব লোককে সদকা করে দিই। এর এক দিন পর মালিক এসে আমার কাছে ওটা দাবি করে এবং ক্ষতিপূরণ চায়।

মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে সে কি আমার কাছে তা দাবি করতে পারবে? এবং ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবে? আশা করি মাসআলাটি জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তেলের মালিক যেহেতু উক্ত সদকার ওপর রাজি হচ্ছে না; বরং সে তার তেলই দাবি করছে, তাই তাকে ঐ পরিমাণ তেল বা এর মূল্য দিয়ে দেওয়া আপনার উপর আবশ্যক। আর ঐ তেল আপনার পক্ষ থেকে সদকা হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। আপনি এর সওয়াব পাবেন।

Ñমুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৮৬৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮০

শেয়ার লিংক

ফাহাদ - লিসবন, পর্তুগাল

৬২৯৭. প্রশ্ন

আমি পরিবারসহ পর্তুগাল বসবাস করি। আমি পড়াশোনা করতাম। আব্বুর চাকরি দিয়েই আমাদের পরিবার চলত। কিছুদিন আগে হঠাৎ আব্বু মারা যান। এখন পড়াশোনার পাশাপাশি আমাকে পরিবারের প্রয়োজনে হোম ডেলিভারির কাজ করতে হয়। সেখানে প্রায়ই বিভিন্নজন মদ বিয়ার বা এজাতীয় হারাম পানীয় অর্ডার করে। অর্ডারকারীরা সাধারণত অমুসলিমই হয়ে থাকে।

জানার বিষয় হল, অমুসলিমদের কাছে এসব হারাম বস্তু ডেলিভারি করা কি জায়েয? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

মদ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

لَعَنَ اللهُ الْخَمْرَ، وَشَارِبَهَا، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَمُبْتَاعَهَا، وَعَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ.

অর্থাৎ আল্লাহর লানত মদের ওপর, তা যে পান করে তার ওপর, যে পান করায় তার ওপর, যে বিক্রি করে তার উপর এবং যে খরিদ করে তার ওপর, যে তা নিংড়ায় তার ওপর এবং যার নির্দেশে নিংড়ায় তার ওপর, যে তা বহন করে এবং যার জন্য বহন করে সকলের ওপর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৪)

তাই অমুসলিমদের কাছেও মদ ডেলিভারি করা জায়েয হবে না। আপনাকে শরীয়তসম্মত কোনো চাকরি অথবা জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনো হালাল উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। এমন কোনো চাকরির ব্যবস্থা হয়ে গেলে এ চাকরিটি ছেড়ে দিতে হবে। এর আগ পর্যন্ত যদি জীবিকা নির্বাহের জন্য আপাতত এ চাকরিটি করতে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে এর জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করতে থাকবেন। এবং হালাল রোযগারের ব্যবস্থা হওয়া মাত্রই এ চাকরিটি ছেড়ে দেবেন।

Ñকিাতবুল আছল ৪/১৭; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৯১

শেয়ার লিংক

মাহবুব এলাহী - এ কে খান, চট্টগ্রাম

৬২৯৮. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির কাছে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার মতো নেসাব পরিমাণ সম্পদ ছিল না। তা সত্ত্বেও সে কুরবানীর নিয়তে একটি ছাগল ক্রয় করে এবং কুরবানীর প্রথম দিন সেটি কুরবানীও করে। কিন্তু যিলহজ্বের ১২ তারিখ সকালে হঠাৎ তার বাবা মারা যান। ফলে সে মীরাছসূত্রে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ পেয়ে যায়।

জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির উপর পুনরায় কুরবানী করা কি ওয়াজিব? মাসআলাটি জানানোর অনুরোধ রইল।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর পুনরায় কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। বরং ১০ যিলহজ্ব যে কুরবানীটি করেছে এক্ষেত্রে সেটিই যথেষ্ট হবে। ­

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৮১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৯২; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

শেয়ার লিংক

খোরশিদ আলম - সিলেট

৬২৯৯. প্রশ্ন

আমার ওপর কুরবানী ওয়াজিব। এ বছর আমি কুরবানীর জন্য একটি পশু ক্রয় করি। পরে দেখা গেল যে, সেই পশুটি পাঁচ মাসের গর্ভবর্তী। তাই আমি চাচ্ছি, পশুটি নিজেরা পালার জন্য রেখে দেব। কারণ সেটি তো গর্ভবর্তী। আর কুরবানীর জন্য আরেকটি পশু ক্রয় করব। জানতে চাই, আমি কি এটা করতে পারব?

উত্তর

হাঁ, গর্ভবতী পশুটি পালার জন্য রেখে দিয়ে এর পরিবর্তে অন্য পশু দ্বারাও কুরবানী করতে পারবেন। বরং এক্ষেত্রে গর্ভবর্তী পশু দ্বারা কুরবানী না করাই ভালো। তবে এর পরিবর্তে যে পশুটি কুরবানী করা হবে সেটি যদি পূর্বের পশুর চেয়ে কম মূল্যের হয় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য কম হবে সে পরিমাণ টাকা সদকা করে দেবে।

Ñকিতাবুল আছল ৫/৪০৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৩; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৪

শেয়ার লিংক

হুজাইফা ইমরান - যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

৬৩০০. প্রশ্ন

গত বছর আমার নানীর ইন্তেকাল হয়েছে। আমার মামা চাচ্ছেন সামনের ঈদুল আযহায় নানীর জন্য ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে একটি খাসি কুরবানী দেবেন। আমার জানার বিষয় হল, মৃত ব্যক্তির ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে যদি কুরবানী দেওয়া হয়, তাহলে তার গোশত কি নিজেরা খেতে পারবে, নাকি তা গরীবদেরকে সদকা করে দেওয়া জরুরি?

উত্তর

মৃত ব্যক্তির ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয। এবং এর গোশতের বিধান সাধারণ কুরাবনীর মতোই। অর্থাৎ তা নিজে খেতে পারবে, আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়াতে পারবে এবং সদকাও করতে পারবে। এর পুরো গোশত গরীবদেরকে সদকা করে দেওয়া জরুরি নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি তার পক্ষ থেকে কুরবানীর ওসিয়ত করে যায় এবং ওসিয়ত অনুযায়ী তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কুরবানী করা হয়, তাহলে সেই কুরবানীর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না; বরং তা পুরোটা সদকা করে দেওয়া জরুরি।

Ñআলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৪৬৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৪; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৯৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৩২ 

শেয়ার লিংক