কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করার সময় আমার কখনো ওযু চলে যায়। তখন পাশে ওযু আছে এমন কাউকে না পেলে গিলাফ দিয়েই কুরআন মাজীদ বন্ধ করি।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই, আমার এ কাজটি কি ঠিক হচ্ছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করার সময় আমার কখনো ওযু চলে যায়। তখন পাশে ওযু আছে এমন কাউকে না পেলে গিলাফ দিয়েই কুরআন মাজীদ বন্ধ করি।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই, আমার এ কাজটি কি ঠিক হচ্ছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
গিলাফ দিয়ে কুরআন বন্ধ করা জায়েয হবে। কেননা, গিলাফ পৃথক একটি কাপড়। তাই অন্যান্য পবিত্র কাপড়ের মত তা দিয়েও কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা যাবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৯; হালবাতুল মুজাল্লী ১/১৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৩
কিছুদিন আগে আমি একটি টিউব মেহেদি ক্রয় করে হাতে লাগাই। এরপর যখন এই মেহেদির রঙ হাত থেকে ওঠা শুরু করে তখন দেখি রঙের সাথে এক ধরনের প্রলেপ উঠে যাচ্ছে।
জানার বিষয় হল, এ প্রলেপের কারণে কি আমার ওযু-গোসলে কোনো সমস্যা হয়েছে?
বি. দ্র. প্রশ্নের সাথে উক্ত মেহেদিটি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমরা উক্ত টিউব মেহেদিটি পরীক্ষা করে দেখেছি। এতে দেখা গেছে, উক্ত মেহেদি ব্যবহারের কারণে যে সূক্ষ্ম ধরনের আবরণ বা প্রলেপ পড়ে, তা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয় না; বরং তা হাতে-পায়ে থাকা অবস্থায়ও চামড়ায় পানি পৌঁছে এবং তা ভিজে যায়। অতএব উক্ত মেহেদি হাতে থাকা অবস্থায় আপনার ওযু-গোসলে সমস্যা হবে না; শুদ্ধভাবেই আদায় হবে।
শেয়ার লিংক-আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ১/৩৩৬; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৯; জামেউল মুযমারাত ১/১৪৫; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪
আমার বাড়ি চট্টগ্রাম। মাঝে মাঝে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আমাকে ঢাকা যেতে হয়। যাত্রাপথে বাস কর্তৃপক্ষ নামাযের বিরতি দেয়। তখন মসজিদে জামাত চলতে থাকলে আমি এই ভেবে জামাতে অংশগ্রহণ করি না যে, আমি মুসাফির আর ইমাম সাহেব মুকীম। তিনি চার রাকাত পড়াবেন আর আমার উপর দুই রাকাত ওয়াজিব।
জানার বিষয় হল, আমার এই ধারণা কি ঠিক? আসলে এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী? মুসাফিরের জন্য মুকীম ইমামের পেছনে কি ইকতেদা করা সহীহ? যদি সহীহ হয় তাহলে মুসাফির তখন কত রাকাত পড়বে?
মুসাফির ব্যক্তি মুকীমের পেছনে ইকতেদা করলে তাকে পূর্ণ নামায পড়তে হয়। বিশিষ্ট তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
إذَا دَخَلَ الْمُسَافِرُ فِي صَلاَةِ الْمُقِيمِينَ صَلّى بِصَلاَتِهِمْ.
মুসাফির যদি মুকীমদের নামাযে অংশগ্রহণ করে তাহলে সে মুকীমদের মতো নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৮৬৯)
অতএব আপনি যদি সফর অবস্থায় মুকীম ইমামের পেছনে ইকতেদা করেন তাহলে ইমামের অনুসরণে আপনাকে পূর্ণ চার রাকাত নামায পড়তে হবে। অবশ্য আপনি যদি একা নামায পড়েন অথবা কোনো মুসাফির ইমামের পেছনে নামায আদায় করেন অথবা যদি আপনি নিজেই ইমাম হন তাহলে এসব ক্ষেত্রে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত আদায় করবেন।
শেয়ার লিংক-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/১১১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৭৮; আলইখতিয়ার ১/২৬৯; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৩৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৪২; রদ্দুল মুহতার ২/১৩০
আমার দাদা অনেক অসুস্থ। আগে তিনি বসে নামায পড়তেন। এখন প্রচ- অসুস্থতার কারণে বসে নামায পড়তে পারেন না। ইতিমধ্যে তাঁর অনেক নামায কাযা হয়ে গেছে। তিনি চাচ্ছেন, জীবদ্দশায় কাযা নামাযগুলোর ফিদইয়া আদায় করতে। জানার বিষয় হল, আমার দাদার জীবদ্দশায় কি তাঁর কাযা নামাযগুলোর ফিদইয়া আদায় করা যাবে, করলে তা আদায় হবে?
জীবদ্দশায় যতক্ষণ মাথার ইশারাতেও নামায আদায়ের সক্ষমতা থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত নামাযের ফিদইয়া দেওয়া যাবে না। এ রকম ক্ষেত্রে ফিদইয়া দিলে ফিদইয়া আদায় হবে না। বরং অসুস্থ হলেও তাঁর কর্তব্য হল, যথাসম্ভব মাথার ইশারায় বিগত কাযা নামাযগুলো আদায় করতে থাকা এবং ওসিয়ত করে যাওয়া- যে নামাযগুলো কাযা করতে পারবে না ওয়ারিশগণ সেগুলোর ফিদইয়া আদায় করে দেবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৫; রদ্দুল মুহতার ২/৭৪
আমার নানু মাসে দুই-তিনবার হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দুই তিন ঘণ্টা এভাবে অচেতন থাকেন। এরপর বিভিন্ন তদবীর চালানোর পর জ্ঞান ফিরে পান। নানু জানতে চেয়েছেন, তাঁর এই অজ্ঞান অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর হুকুম কী? তিনি নাকি কার থেকে শুনেছেন, অজ্ঞান অবস্থায় নামাযের ওয়াক্ত চলে গেলে সেই নামাযের কাযা আদায় করতে হয় না। এ কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
অজ্ঞান অবস্থায় কোনো নামায ছুটে গেলে তার কাযা আদায় করতে হয় না- একথা এতটা ব্যাপক নয়; বরং পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা এর চেয়ে কম সময় অজ্ঞান থাকলে সেই নামাযগুলোর কাযা আদায় করা জরুরি। আর ছয় ওয়াক্ত বা এর চেয়ে বেশি সময় অজ্ঞান থাকলে, সেই নামাযগুলোর কাযা আদায় করা জরুরি নয়। সুতরাং আপনার নানুর অজ্ঞান অবস্থায় এক দুই ওয়াক্ত চলে গেলে, তার কাযা অবশ্যই আদায় করতে হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ১৭০; কিতাবুল আছল ১/১৯০; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৪০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪৮২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০২
মাসিক আলকাউসার ফেব্রুয়ারি ২০২২ সংখ্যার ‘আপনি যা জানতে চেয়েছেন’ অংশের ৫৬৩১ নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ‘মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে ইচ্ছাকৃত সাহু সিজদার সালাম ফিরালে তার নামায ফাসেদ হয়ে যায়।’ উক্তিটি আমার বোধগম্য হয়নি। আমার জানা ছিল, ‘মাসবুক ব্যক্তির ওপর সাহু সিজদার সালামসহ সাহু সিজদাহ এবং নামাযের শেষ পর্যন্ত ইমাম সাহেবের ইক্তিদা করা ওয়াজিব।’ এরপর ইমাম সাহেব সালাম ফিরাবেন, আর মাসবুক ব্যক্তি সালাম না ফিরিয়ে একাকী বাকি নামায শেষ করবেন।’ কিন্তু আপনার উত্তরে জানলাম যে, সাহু সিজদার সালামে মাসবুক ব্যক্তি ইমাম সাহেবের ইক্তিদা না করে বসে থাকবেন, এরপর সাহু সিজদাতে মাসবুক ব্যক্তি ইমাম সাহেবের ইক্তিদা করবেন। এখানে সাহু সিজদার সালামে ইক্তিদা না করে মাসবুক ব্যক্তি ‘মুক্তাদির জন্য ইমামের ইক্তিদা ওয়াজিব’ এই হুকুম লঙ্ঘন করলেন কি না? বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
‘মাসবুক সাহু সিজদার সালামে ইমামের অনুসরণ না করে শুধু সিজদায়ে সাহুতে ইমামের অনুসরণ করবে’- এই মাসআলাটি ফিকহ-ফতোয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতির আলোকেই লেখা হয়েছে। ফকীহগণের মত অনুযায়ী মাসবুক ব্যক্তি সাহু সিজদায় ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না। তাঁরা এর কারণ হিসেবে বলেছেন, ইমাম সালাম ফিরাচ্ছেন নামাযের মূল আমলগুলো শেষ হওয়ার পর। আর মাসবুক ব্যক্তির যেহেতু এখনো নামাযের রাকাত বাকি রয়েছে তাই সে এই সালামে ইমামের অনুসরণ করবে না।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৪; তুহফাতুল ফুকাহা ১/২১৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১০০; রদ্দুল মুহতার ২/৮২
জুমার খুতবায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম এলে পূর্ব অভ্যাসের কারণে আমি দরূদ শরীফ পড়ে ফেলি। আমরা জানি, খুতবার সময় কথা বলা নিষেধ। তাই বিষয়টি নিয়ে আমার মনে খটকা আছে। আমার প্রশ্ন হল, খুতবার সময় দরূদ শরীফ পড়ার বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
খুতবা চলাকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম এলে মুখে উচ্চারণ করে দরূদ শরীফ পড়া যাবে না। কেননা খুতবা অবস্থায় কথাবার্তা এবং সকল প্রকার যিকির নিষিদ্ধ। তবে মনে মনে দরূদ শরীফ পড়ে নেওয়ার অবকাশ রয়েছে। কেননা এতে চুপ থেকে খুতবা শোনার বিধান লঙ্ঘিত হয় না।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ২/২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৬০; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৬
আমার এ বছর আইয়ামে তাশরীকের তিন ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে যায়। এই নামাযগুলো পরবর্তীতে কাযা করলে আমাকে কি তাকবীরে তাশরীক বলতে হবে?
আইয়ামে তাশরীকে ছুটে যাওয়া ফরয নামাযগুলো যদি উক্ত আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলোতেই আদায় করেন তাহলে প্রত্যেক ফরযের কাযার পর তাকবীরে তাশরীকও বলতে হবে। কিন্তু যদি উক্ত আইয়ামে তাশরীকে আদায় না করে পরে আদায় করা হয় তাহলে তাকবীরে তাশরীক বলতে হবে না। এমনিভাবে যদি এই বছরের আইয়ামে তাশরীকের ছুটে যাওয়া নামাযগুলো পরবর্তী বছরের আইয়ামে তাশরীকে কাযা করা হয় সে ক্ষেত্রেও তাকবীর বলতে হবে না।
শেয়ার লিংক-আলজামেউল কাবীর, পৃ. ১৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯
কয়েকদিন আগে আমি একটি জানাযার নামাযের জন্য বাড়ি থেকে ওযু করে গিয়ে দেখি, ইমাম সাহেব নামায শুরু করে দুটি তাকবীর বলে ফেলেছেন। তখন আমি দ্রুত নামাযে শরীক হয়ে যাই। এরপর নামায শেষ হলে আমি ইমাম সাহেবের সাথে নামায শেষ করে দেই। আমার ছুটে যাওয়া দুটি তাকবীর আর বলিনি।
মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাচ্ছি, ওই সময় আমার জন্য করণীয় কী ছিল? সর্ঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
আপনার উক্ত জানাযার নামায আদায় হয়নি। কেননা, জানাযার নামাযে চার তাকবীর বলা ফরয। কোনো একটি তাকবীর ছুটে গেলে নামায সহীহ হয় না। সুতরাং জানাযার নামাযে মাসবুক হয়ে গেলে করণীয় হল, ইমাম সাহেবের পরবর্তী তাকবীরের জন্য অপেক্ষা করা এবং ইমামের সাথে তাকবীর বলে নামাযে শরীক হওয়া। এরপর ইমাম সাহেব যখন সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করেন তখন জানাযার খাটিয়া উঠানোর পূর্বে শুধু ছুটে যাওয়া তাকবীরগুলো একে একে বলে নেওয়া।
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হল, জানাযার খাটিয়া উঠানোর পূর্বেই ছুটে যাওয়া তাকবীরগুলো বলে নিতে হবে। খাটিয়া উঠিয়ে ফেলার পরে আর তাকবীর বলা যাবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৩৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৫; রদ্দুল মুহতার ২/২১৬
আমাদের এলাকায় কোনো মানুষ মারা গেলে লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় যারা লাশের সঙ্গে যায় তারা সবাই উচ্চৈঃস্বরে কালিমায়ে তাইয়েবা পড়তে থাকে। জানতে চাই, এই আমলটি কি সহীহ? এই সময় যারা লাশের সঙ্গে যায় তাদের করণীয় কী?
মৃতব্যক্তির সঙ্গে গমণকারীদের উচ্চৈঃস্বরে যিকির করা মাকরূহ। তখন তাদের করণীয় হল, নীরবে নিঃশব্দে চলা এবং আখেরাতের ফিকিরে নিমগ্ন থাকা। ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إذَا كَانَ فِي جِنَازَةٍ أَكْثَرَ السُّكُوتَ وَحَدَّثَ نَفْسَهُ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃতব্যক্তির সঙ্গে যেতেন তখন অধিক পরিমাণে নীরব থাকতেন এবং চিন্তামগ্ন থাকতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৫)
হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, কায়েস ইবনে উবাদা রা. বলেন-
كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم يَسْتَحِبُّونَ خَفْضَ الصَوْت عِنْدَ ثَلاَثٍ، عِنْدَ الْقِتَالِ، وَعِنْدَ الْقُرْآنِ، وَعِنْدَ الْجَنَائِزِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা তিন সময় চুপ থাকতে পছন্দ করতেন। যুদ্ধ, কুরআন তিলাওয়াত এবং লাশের নিকট। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৩)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চৈঃস্বরে কালিমায়ে তাইয়েবা পড়ার আমলটি সহীহ নয়। হাঁ, কেউ যদি যিকির করতেই চায় তাহলে নিঃশব্দে মনে মনে যিকির করতে পারবে, উচ্চৈঃস্বরে নয়।
শেয়ার লিংক-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৫৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৩০; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৯৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯২; মাজমাউল আনহুর ১/২৭৪
আমার ভাই গত বছর পাঁচ লাখ টাকায় একটি জমি বিক্রি করে। বিক্রয়লব্ধ সেই পাঁচ লাখ টাকা থেকে খরচ হওয়ার পর দুই লাখ টাকা তার কাছে এখনো রয়ে গেছে। তবে গত বছর ঐ জমি বিক্রি করার কিছুদিন পর সে পাগল হয়ে যায় এবং সাত-আট মাস পাগল অবস্থায় থাকে। তবে এখন আলহামদু লিল্লাহ সুস্থ। আর কয়েকদিন পর তার ঐ টাকার উপর এক বছর পূর্ণ হয়ে যাবে। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এমতাবস্থায় বছর পূর্ণ হওয়ার পর কি তার ঐ দুই লাখ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর যেহেতু কিছুদিন সুস্থ ছিল তাই বছরের মাঝে পাগল থাকলেও তা ধর্তব্য হবে না। তাকে ওই দুই লক্ষ টাকার উপর বিগত বছরের যাকাত আদায় করতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৬৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮
আমি মাদরাসার ছাত্র। এবছর মেশকাত জামাতে পড়ি। আমার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ইবতেদায়ী জামাত থেকেই আমি পড়ার জন্য আগ্রহের সাথে কিতাব সংগ্রহ করতে থাকি। বর্তমানে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, আদব ইত্যাদি বিষয়ে প্রায় লাখ টাকার কিতাব আমার সংগ্রহ হয়েছে। কিতাবগুলো আমার পড়াশোনার জন্য লাগে। তবে এ ছাড়া আমার কাছে যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এ অবস্থায় আমার জন্য কি যাকাত গ্রহণ করার সুযোগ আছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কাছে যেহেতু প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনো সম্পদ নেই, আর কিতাবগুলো আপনার জন্য প্রয়োজনীয় তাই তা নেসাব পরিমাণ হলেও আপনার জন্য যাকাত গ্রহণ করা বৈধ।
শেয়ার লিংক-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ১০৯; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতহুল কাদীর ২/১২০
দেড় বছর আগে আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে পাঁচটি ল্যাপটপ ক্রয় করে দোকানে উঠাই। কিছুদিন পর সেখান থেকে দেড় লাখ টাকা দামের একটি ল্যাপটপ আমি নিজে ব্যবহার করার নিয়ত করি এবং পাঁচ-ছয় মাস ব্যবহার করি। ইতিমধ্যে আমার বাকি চারটি ল্যাপটপ বিক্রি হয়ে যায়। টাকার সংকট দেখা দেয়ায় তখন আমি আমার ব্যবহারের ল্যাপটপটিও বিক্রি করে দেয়ার নিয়তে দোকানে রেখে দেই। এরপর এক বছর চলে গেছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমি ল্যাপটপটি বিক্রি করতে পারিনি। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এখন কি আমাকে উক্ত ল্যাপটপটির যাকাত আদায় করতে হবে?
না। আপনার উক্ত ল্যাপটপটির যাকাত আদায় করতে হবে না। কেননা, ব্যবসার নিয়তে ক্রয় করা পণ্য ব্যবহারের নিয়ত করলে তা আর যাকাতযোগ্য থাকে না। অতএব, উক্ত ল্যাপটপটি ব্যবহারের নিয়ত করার দ্বারাই তা যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বের হয়ে গেছে। পরবর্তীতে তা বিক্রি করার নিয়ত করলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা ব্যবসার সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে না। তা বিক্রি করার আগ পর্যন্ত যাকাতের হিসাবে আসবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৯৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮; ফাতহুল কাদীর ২/১২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭২
আমি প্রতি বছর রমযান মাসে আমার সম্পদের যাকাত আদায় করে থাকি। গত কয়েকদিন আগে আমার এক গরীব চাচাতো ভাই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। এখন আমি আমার যাকাতের একটি অংশ তাকে দিতে চাই। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, এ বছর রমযানের আগেই যাকাত দিলে আমার যাকাত আদায় হবে কি?
হাঁ, বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলেও আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কেননা নেসাবের মালিকের জন্য অগ্রীম যাকাত দেওয়া জায়েয।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৬২; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৮৪; ফাতহুল কাদীর ২/১৫৭
কয়েক বছর আগে একবার শাবান মাসের ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে রমযানের চাঁদ ওঠার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরের দিন আমাদের এলাকার অনেকেই এ নিয়তে রোযা রাখে যে, যদি আজকে রমযান হয় তাহলে তো রমযানের রোযাই হয়ে গেল, আর যদি শাবানের ৩০ তারিখ হয় তাহলে নফল রোযা হিসাবে রেখে ফেলব। পরের দিন সকালবেলা আমরা জানতে পারি যে, রমযানের চাঁদ ওঠেনি। আজ শাবানের ৩০ তারিখ। তখন যারা রোযা রেখেছিল তাদের অনেকেই রোযা ভেঙে ফেলে। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, যারা উক্ত নিয়তে রোযা রেখে ভেঙে ফেলেছে তাদেরকে উক্ত রোযার কাযা করতে হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতেও ২৯ শাবানের পরের দিন ‘রমযানের রোযা অথবা নফল রোযা’ এভাবে নিয়ত করে রোযা রাখাটা মাকরূহ ও গুনাহ হয়েছে। কেননা ঐ তারিখ এভাবে রোযা রাখা নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে তারা যেহেতু উভয় নিয়তই করেছে; এককভাবে শুধু নফলের নিয়ত ছিল না, তাই ঐ দিন রমযান না হওয়ায় যারা রোযা ভেঙে ফেলেছে তাদেরকে এর কাযা করতে হবে না।
শেয়ার লিংক-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ১৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৭; শরহুল জামিয়িস সাগীর, পৃ. ২২৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৩০; ফাতহুল কাদীর ২/২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬৫
এ বছর রমযান মাসে একদিন আমি ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বে মোটর সাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলাম। তখন হঠাৎ ছোট্ট একটি পোকা আমার মুখের ভেতর ঢুকে গলায় চলে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেও পোকাটিকে গলা থেকে বের করতে পারিনি। মুহতারামের কাছে জানতে চাই। গলার ভেতর ঐ পোকা ঢোকার কারণে কি আমার রোযা ভেঙে গেছে?
গলার ভেতর পোকা ঢুকে যাওয়ার কারণে আপনার রোযা ভাঙেনি। কেননা অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর পোকা ঢুকে গেলে রোযা ভাঙ্গে না।
عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ؛ فِي الرَّجُلِ يَدْخُلُ حَلْقَهُ الذُّبَابُ، قَالَ : لاَ يُفْطِرُ.
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির গলায় মাছি ঢুকে গেলে তার ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তার রোযা ভাঙবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৯৮৮৬)
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/১৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ৩/৬১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫
গত বছর আমার পিতা ইনতেকাল করেন। তিনি অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন। কিন্তু তিনি হজ্ব করে যাননি। এখন আমি তাঁর পক্ষ থেকে হজ্ব করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হল, আমি তাঁর পক্ষ থেকে হজ্ব করলে কি সেটি তাঁর পক্ষ থেকে আদায় হবে?
হাঁ, আপনার পিতার পক্ষ থেকে হজ্ব করলে তা তাঁর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَت رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَبِيهَا مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ قَالَ: حُجِّي عَنْ أَبِيكِ.
এক মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার পিতার ব্যাপারে প্রশ্ন করল, যিনি হজ্ব না করে মারা গেছেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্ব করে নাও। (আসসুনানুল কুবরা, নাসায়ী, বর্ণনা ৩৬০০)
প্রকাশ থাকে যে, হজ্ব ফরয হলে বিলম্ব না করে হজ্ব করে নেওয়া আবশ্যক। কেননা, বিলম্ব করলে হজ্ব করার আগেই মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। আর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব না করে মৃত্যুবরণ করলে হাদীসে কঠোর হুঁশিয়ারী এসেছে। এছাড়া কোনো কারণে মৃত্যুর আগে ফরয হজ্ব আদায় করতে না পারলে হজ্বের ওসিয়ত করে যাওয়া আবশ্যক। যেন ওয়ারিশগণ তার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে হজ্ব করে নেয়। কিন্তু কোনো কারণে ওসিয়তও করতে না পারলে সম্ভব হলে সন্তানদের কর্তব্য হয়ে যায় তার পক্ষ থেকে হজ্ব করে নেওয়া।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৩, ৪৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; আলবাহরুল আমীক ৪/২৩৪৭; গুনয়াতুন নাসিক, পৃ. ৩২২
আমার জানামতে হজ্বের মধ্যে ১৩ তারিখ রমী করা আবশ্যক নয়। কারো যদি ১৩ তারিখ রমী করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে তাকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই মিনা থেকে ফিরে আসতে হবে। সূর্যাস্তের আগে আসতে না পারলে ১৩ তারিখের রমী না করে আসা যাবে না। প্রশ্ন হল, এর পরও কেউ যদি সূর্যাস্তের পর মিনা থেকে চলে আসে তাহলে কি তাকে দম দিতে হবে?
১২ তারিখ দিবাগত রাতে মিনায় থেকে পরবর্তী দিন (১৩ তারিখ) রমী করা উত্তম, ওয়াজিব নয়। ১৩ তারিখ রমী করার ইচ্ছা না থাকলে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগেই মিনা থেকে ফিরে আসতে হবে। কেননা ঐ দিন মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে গেলে পরবর্তী দিন পাথর না মেরে রাতে মিনা থেকে ফিরে আসা মাকরূহ। কিন্তু এ কারণে দম বা সদকা কোনোটাই দিতে হবে না। তবে যদি মিনায় থাকা অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে যায় তাহলে তার জন্য ১৩ তারিখ রমী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। ফলে এক্ষেত্রে রমী না করে চলে এলে দম দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৫৩৯; আলমুহীতুর রিযাবী ২/১৮৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩১৩; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/৬০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫২১
কিছুদিন আগে আমার উমরার সফর হয়। উমরার তাওয়াফের সাত চক্কর পূর্ণ হওয়ার পরও সাত চক্কর হয়নি ভেবে আমি আরেকটি চক্কর পূর্ণ করে ফেলি। এরপর বুঝতে পারি যে, এটা অষ্টম চক্কর ছিল। আমি তখন তাওয়াফ বন্ধ করে তাওয়াফের দুই রাকাত নামায আদায় করি। একজন আমার ঘটনা শুনে বললেন, অষ্টম চক্কর করার দ্বারা আপনার দ্বিতীয় তাওয়াফ শুরু হয়ে গেছে। তাই আপনার দ্বিতীয় তাওয়াফ সম্পন্ন করা জরুরি ছিল।
মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার কাজটি কি সঠিক ছিল, নাকি ঐ ব্যক্তির কথা অনুযায়ী দ্বিতীয় তাওয়াফ সম্পন্ন করা উচিত ছিল?
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। আপনি যেহেতু ভুলবশত সপ্তম চক্কর হয়নি মনে করে অষ্টম চক্কর দিয়েছেন, তাই এর দ্বারা দ্বিতীয় তাওয়াফ শুরু হয়নি। তাই তা পূর্ণ করা জরুরি নয়।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুর রিযাবী ২/২০০; আলবাহরুল আমীক ২/১২৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৬; শরহুল মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ১৬৬
জনাব, আমার আব্বু, আম্মুকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। আমরা দুই ভাই ঢাকা থাকি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার আব্বু গত সপ্তাহে ইন্তেকাল করেন। গ্রামের বাড়িতে আমাদের অন্য কোনো আত্মীয়ও নেই। এখন আমার আম্মুর জন্য সেখানে ইদ্দতের সময় একা থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি কখনও আব্বুর কথা মনে করে আবার কখনও ভয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। এদিকে আমরাও অফিস থেকে ছুটি পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় আমাদের জন্য কি আম্মুকে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আমাদের বাসায় নিয়ে আসার কোনো সুযোগ আছে? জানালে খুব উপকৃত হতাম।
স্বাভাবিক অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা জরুরি। বিশেষ ওজর ছাড়া অন্য কোথাও ইদ্দত পালন করা জায়েয নয়।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মায়ের ওযরটি যেহেতু খুব গুরুতর বিধায় স্বামীগৃহে থাকা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে আপনাদের কাছে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। তবে নিরাপত্তা ও খেদমতের সুবিধার্থে যেখানেই তিনি স্থানান্তরিত হবেন সেখানেই বাকি ইদ্দত পূর্ণ করবেন।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছার, বর্ণনা ৫০৭; শরহু মাআনিল আছার, হাদীস ৪৫০০; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৩; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৪
আমি আমার পরিবারকে না জানিয়ে গোপনে বিবাহ করি। এর কিছুদিন পর আমার বাবা মারা যান। আমার ভাইয়েরা বাবার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কোনোভাবে জানতে পারে যে, আমি বিবাহ করেছি। তখন তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে আমার বাবার সম্পত্তি থেকে আমার ভাগ দিতে অস্বীকার করে। আমি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে, তুই আমাদেরকে না জানিয়ে কেন বিবাহ করেছিস?
তখন আমি তা অস্বীকার করি এবং বলি ‘আমার কোনো স্ত্রী নেই, আমি অবিবাহিত।’
তখন তারা আমাকে বলে, তুই যা বলেছিস তা লিখিত দে, তাহলে আমরা তোকে বাবার সম্পত্তি লিখে দিব।
তখন তারা একটি কাগজে আমাকে দিয়ে লেখায় যে, ‘আমি অবিবাহিত, আমার কোনো স্ত্রী নেই।’ এবং এর উপর আমাকে দিয়ে দস্তখত করায়। তারপর আমাকে আমার বাবার সম্পদ থেকে আমার মীরাসী সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়।
সম্মানিত মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমি তো ঐ কথাগুলো আমার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলিনি; বরং তাদের থেকে আমার বাবার সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বলেছি এবং বলা ও লেখার সময় এমন কিছু আমার উদ্দেশ্যও ছিল না। এর পরও কি আমার স্ত্রী ঐ কথাগুলোর কারণে তালাক হয়ে যাবে?
বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও মিথ্যা বলে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দেওয়া এবং স্ত্রী নেই বলা গুনাহের কাজ। এজন্য আল্লাহর কাছে খাস দিলে ইস্তেগফার করতে হবে। অবশ্য এভাবে বলা ও লেখার কারণে আপনাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেনি এবং আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাকও পতিত হয়নি। আপনাদের বিবাহ যথারীতি বহাল রয়েছে।
উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে মীরাস বলে। মৃত্যুর সাথে সাথে উক্ত সম্পতিতে তার জীবিত ওয়ারিশদের শরীয়তকর্তৃক নির্ধারিত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এটা শরীয়তের স্বীকৃত বিধান। তাই শরীয়ত নির্ধারিত কারণ ছাড়া কেউ চাইলেই কোনো ওয়ারিশকে তার প্রাপ্য হক থেকে বাদ দিতে পারে না।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ১৮৬৭১; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৮১; আলআজনাস, নাতিফী ১/২৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৮৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৪৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৮২
একদিন আমার বড় বোন বাড়ি থেকে পালিয়ে মা-বাবাকে না বলে একটি ছেলের সাথে বিবাহ করে। তারপর শ^শুর বাড়ি চলে যায়। মা-বাবা জানার পর রাগের মাথায় বলে ফেলে, আমি আমার মেয়ের মুখ দেখব না এবং তার সাথে কথা বলব না। যদি কথা বলি, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ থেকে আমি বঞ্চিত হব। হুজুরের কাছে আমার আকুল আবেদন, উক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমার করণীয় জানালে খুব উপকৃত হব।
মেয়েটি যদিও অত্যন্ত গর্হিত ও নাজায়েয কাজ করেছে; তথাপি রাগ করেও এ ধরনের কথা বলা মারাত্মক অন্যায়। এর জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকবে।
তবে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলার দ্বারা কোনো কসম সংঘটিত হয়নি। তাই আপনার বাবা-মা ঐ মেয়ের সাথে কথা বললে কোনো কাফফারা দিতে হবে না।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৭৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৮; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৬৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৭১৯
আমার বাসা এবং এলাকার বাজারের মাঝখানে আমাদের মহল্লার মসজিদ। মসজিদের ভেতর দিয়ে বাজারে গেলে বাসা থেকে বাজারে পৌঁছতে লাগে মাত্র এক-দুই মিনিট। আর রাস্তা দিয়ে গেলে প্রায় পাঁচ সাত মিনিট লেগে যায়। আমি সংক্ষিপ্ততার জন্য সাধারণত মসজিদের ভেতর দিয়ে বাজারে যাই। একদিন মসজিদের খাদেম সাহেব বললেন, মসজিদের ভেতর দিয়ে এভাবে নিয়মিত আসা-যাওয়া করা ঠিক নয়। জানার বিষয় হল, ঐ খাদেমের কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে শরীয়তের মাসআলা কী? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
মসজিদ আল্লাহর ঘর, যা ইবাদত-বন্দেগীর জন্য নির্ধারিত। তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদকে চলাচলের মাধ্যম বানানো (অর্থাৎ পথ বানানো) নাজায়েয। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
لَا تَتّخِذُوا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا إِلّا لِذِكْرٍ أَوْ صَلَاةٍ.
অর্থাৎ তোমরা মসজিদকে চলাচলের রাস্তা বানিও না, তাতে ইবাদত ও নামাযের উদ্দেশে গমন ছাড়া। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১৩২১৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ২০৪২)
শেয়ার লিংক-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৭৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬
আমি একটি মসজিদ কমিটির সভাপতি। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আমার এক খ- জমি উক্ত মসজিদের জন্য ওয়াকফ করার নিয়ত করি। জমিটি বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। গত বছর আমার ছেলেকে আমার ইন্তেকালের পর বাজারের উক্ত জমিটি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করলাম মর্মে মৌখিকভাবে অবগত করি। ইতিমধ্যে আমি আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মসজিদসংলগ্ন একটি জমি খরিদ করি। এখন এলাকাবাসীর দাবি হল, বাজারের জমির পরিবর্তে মসজিদ সংলগ্ন জমিটি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করলে মসজিদ সম্প্রসারণ করা যাবে। এখন আমার প্রশ্ন হল, বাজারের জমি ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে গেছে কি? যদি না হয় তাহলে বাজারের জমির পরিবর্তে মসজিদ সংলগ্ন জমিটি ওয়াকফ করা বৈধ হবে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাজারের জমিটির ওয়াকফ আপনার মৃত্যুর পরের সাথে সম্পৃক্ত করার কারণে ওয়াফকটি এখানো সম্পন্ন হয়নি। ফলে জমিটির উপর এখনো আপনার মালিকানা বহাল আছে। সুতরাং এ জমির পরিবর্তে আপনি আপনার মসজিদ সংলগ্ন জমি মসজিদে ওয়াকফ করতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৮৮; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৯৩; আলইসআফ, পৃ. ১২৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৪৫
আমার একটা ফার্মেসি আছে। সেখানে আমার কিছু এমন কাস্টমার আছে, যারা আমার ফার্মেসি থেকে বাকিতে ঔষধ কেনে। কখনো এমন হয় যে, কারো কাছে আমার পাওনা টাকার পরিমাণ ১০ থেকে ২০ হাজার পর্যন্ত হয়ে যায়। এরপর দেখা যায়, মাস শেষ হলে সে কিছু টাকা পরিশোধ করে।
যেমন কেউ ১০,০০০/- টাকা বাকি করল। আর মাস শেষে ৫,০০০/- টাকা পরিশোধ করল। এভাবে মাসের পর মাস বাকির সিলসিলা চলতেই থাকে।
এজন্য গত কিছুদিন থেকে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা আমার এমন কাস্টমার, তাদের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিটি বস্তু, যা তারা বাকিতে নেবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে গজচ থেকে ৫% মূল্য বৃদ্ধি করে টালী খাতায় উঠাব।
আমার জানার বিষয় হল, এভাবে মূল্য বৃদ্ধি করা শরীয়তে বৈধ হবে কি না? যদি বৈধ হয় তাহলে বিষয়টি কাস্টমারকে অবহিত করার প্রয়োজন আছে কি?
নোট : অনেক সময় কাস্টমারগণ নগদে মাল কিনলে তারা ৫% মূল্য কম দিতে চায় বা দেয়।
বাকি বিক্রির ক্ষেত্রে নগদ মূল্যের চেয়ে কিছু বেশি নেওয়া জায়েয। তাই যেসকল ক্রেতা দীর্ঘদিন বাকি রাখবে বলে মনে হয় তাদের থেকে দাম বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে তা অবশ্যই ক্রেতার জ্ঞাতসারে এবং তার সাথে সুস্পষ্ট চুক্তির ভিত্তিতেই হতে হবে। তাকে কিছু না জানিয়ে নিজ থেকে খাতায় বেশি মূল্য লিখে রাখা যাবে না। আর বাকিতে বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্য কবে পরিশোধ করবে তা-ও নির্ধারণ করে নিতে হবে।
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রেতাকে না জানিয়ে ঔষধের গায়ের দাম থেকে বাড়িয়ে মূল্য ধরা জায়েয হবে না।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, বর্ণনা ২০৮২৬; কিতাবুল আছল ২/৪৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৫, ৩৯১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ২৩৭, ২৪৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/৩৬০
আমরা দুই ভাই মিলে ছয় লক্ষ টাকা দিয়ে একটি সিএনজি কিনেছি। আমি দিয়েছি তিন লক্ষ টাকা। আমার ভাই দিয়েছে তিন লক্ষ টাকা। আমি যেহেতু সিএনজি চালাতে পারি, তাই সিদ্ধান্ত হয়, আমিই সিএনজি চালাব। যা লাভ হবে তার ৬৫% আমি নিব। আর ৩৫% আমার ভাই নেবে। কয়েকমাস এভাবেই চলছে।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, লাভ বণ্টনের উক্ত পদ্ধতি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সিএনজি-র মধ্যে আপনাদের দুই ভাইয়ের মালিকানা যেহেতু সমান, তাই লভ্যাংশের হার কম-বেশি করে নির্ধারণ করা সহীহ হয়নি। এক্ষেত্রে যা আয় হয়েছে, সবই আপনাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মালিকানার ভিত্তিতে সমান হারে বণ্টিত হবে। তবে আপনি যেহেতু গাড়ি চালিয়েছেন সেজন্য আপনি ভিন্নভাবে এর ন্যায্য পারিশ্রমিকের অধিকারী হবেন। এক্ষেত্রে আপনার পারিশ্রমিকটা শতকরা হারে নেওয়া সহীহ হবে না; বরং নির্দিষ্ট অংকে নির্ধারণ করতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩০২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৬; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ৩/২৭
সাত বছর আগে আমি মুদি দোকান দেই। দোকান দেওয়ার সময় আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় আমি আরো দুইজন থেকে দুই লক্ষ করে মোট চার লক্ষ টাকা এই শর্তে নিই যে, তারা আমার ব্যবসায় সাত বছর পর্যন্ত শরীক থাকবে। সাত বছর পর তাদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তাদের সাথে কথা হয়েছে, তারা ব্যবসায় কিছু শ্রমও দেবে আর ২০% করে লভ্যাংশ পাবে। এখন যেহেতু সাত বছর পূর্ণ হয়ে গেছে, তাই আমি তাদের টাকা বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছি। কিন্তু তারা ব্যবসায় লাভ দেখে টাকা নিয়ে চলে যেতে রাজি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে তারা এক ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে যে, তিনি বলেছেন, শরীকানা ব্যবসায় এধরনের শর্ত করা শরীয়তসম্মত নয়। এভাবে তাদের অংশীদারিত্ব বাতিল করা ঠিক হবে না।
জানার বিষয় হল, ওই ব্যক্তির কথা কি ঠিক? এখন আমার করণীয় কী? জানালে উপকৃত হব।
যৌথ ব্যবসায় শরীকদের সাথে চুক্তির মেয়াদ নির্ধারণ করা জায়েয। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু তাদেরকে সাত বছরের জন্য ব্যবসায় শরীক করেছিলেন তাই সাত বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর শরীকদের সাথে চুক্তি বাতিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের মূলধন ও বিগত দিনের লভ্যাংশ যথাযথভাবে হিসাব করে বুঝিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে চুক্তি নিষ্পত্তির ব্যাপারে শরীকদের আপত্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে গৃহীত হবে না। অতএব, তাদেরকে ব্যবসা থেকে বাদ দিতে অসুবিধা নেই।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৫৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/২২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩০২
আমাদের এলাকায় পান চাষে বেশ লাভ হয়। তাই আমি এবছর পান চাষ করার ইচ্ছা করেছি। পান চাষের জন্য জমিটা একটু উঁচু হওয়া লাগে। কিন্তু আমার কাছে এরকম কোনো জমি নেই। তবে নিচুতে আমার অনেক জমি আছে। সেগুলোতে আমি ধান চাষ করি। অপরদিকে আমার এক প্রতিবেশীর উঁচুতে একটি জমি আছে। সেখানে সে তেমন কিছু করে না। আমি তাকে বললাম, ‘পাঁচ বছরের জন্য তোমার জমিটা দাও। আমি তাতে পান চাষ করব। বিনিময়ে তুমি আমার এ পরিমাণ জমি নিয়ে ধান চাষ কর।’ সে এ চুক্তিতে রাযি হয়ে যায়।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত চুক্তি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি শরীয়তসম্মত হয়নি। কেননা কোনো জমি চাষাবাদের জন্য নিয়ে বিনিময়ে অন্য জমি চাষাবাদের জন্য দেওয়া বৈধ নয়। তবে এক্ষেত্রে বৈধভাবে চুক্তি করতে চাইলে একে-অপরের জমি টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিতে হবে। সুতরাং আপনি তার উঁচু জমি টাকার বিনিময়ে ভাড়া নেবেন এবং আপনার নিচু জমি ঐ ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে ভাড়া নেবে। এভাবে একজনের জমি অপরজন টাকার বিনিময়ে ভাড়া নেওয়ার পর উভয়ে চাইলে পরস্পরের পাওনা কাটাকাটি করে নিতে পারবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২১৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬২; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৫৪১
আমরা অনেক সময় ঢাকার ভেতর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য বাসে উঠি। ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের থেকে ভাড়া নিয়ে নেয়। কিন্তু আমাদের গন্তব্যে পৌঁছার আগেই গাড়িটিকে আইনি কোনো কারণে পুলিশ আটকে দেয়। অথবা অন্য কোনো কারণে গাড়িটি আর সামনে যায় না। সে সময় আমরা অবশিষ্ট ভাড়া চাইলে তারা আর দিতে চায় না।
জানার বিষয় হল, উপরোক্ত অবস্থায় অবশিষ্ট ভাড়া বাসওয়ালাদের জন্য ফেরত দেওয়া আবশ্যক কি না? ফেরত দিতে গড়িমসি করা কি ঠিক? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
যাত্রী থেকে নির্ধারিত স্থানের ভাড়া নেওয়ার পর পথিমধ্যে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে অথবা অন্য কোনো কারণে যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব না হলে, যে পরিমাণ স্থান অতিক্রম করেছে, শুধু ততটুকুর ভাড়াই রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে বাকি টাকা যাত্রীদেরকে ফেরত দেওয়া বাসওয়ালাদের কর্তব্য। এক্ষেত্রে বাকি টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করা ঠিক নয়।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৩; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৬৩৫
আমরা কয়েকজন ডাক্তার একত্রে প্র্যাকটিস করি। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি আমাদের ফিজিশিয়ান স্যাম্পল দেয়। আমাদের নীতি হল, আগে থেকে বাজারে আছে এবং নতুন করে অবগতির প্রয়োজন নেই- এমন মেডিসিন আমরা গ্রহণ করি না। কেবলমাত্র নতুন প্রোডাক্টগুলো গ্রহণ করি। কিন্তু অনেক সময় এমন পুরোনো প্রোডাক্ট দেয়, যেগুলোর তেমন বাজারমূল্য নেই। অনেক ক্ষেত্রে কলম, প্যাডের মূল্য এসব মেডিসিন থেকে বেশি হয়ে থাকে। এখন আমাদের প্রশ্ন হল, এমন স্বল্প মূল্যের মেডিসিন আমরা গ্রহণ করতে পারব কি? আরেকটি বিষয় হল, আমাদের উপরোক্ত নীতি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিগণ অবগত আছে। সাধারণত তারা পুরোনো প্রোডাক্ট আমাদের দেয় না। কিন্তু আমাদের অনেক রোগী এমন আসে, যারা গরীব ও অভাবগ্রস্ত। তাদেরকে ফ্রি বিতরণের জন্য এসব ঔষধ আমরা রাখতে পারব কি?
যেসব ঔষধ আগে থেকে বাজারে চালু আছে এবং যেগুলোর ব্যাপারে নতুন করে পরিচিতি বা গুণগত মান ও কার্যকারিতা যাচাই করার প্রয়োজন নেই, এমন ফিজিশিয়ান স্যাম্পল স্বল্প মূল্যের বা পুরোনো হলেও তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে যদি খোদ কোম্পানির যথাযথ কর্তৃপক্ষ গরীব বা কম আয়ের লোকদের বিলির কথা বলে, অথবা ডাক্তারদের বলার পর তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঔষধগুলো দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ উদ্দেশ্যে তা গ্রহণ করা যাবে এবং গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১৬/৮২; মাআলিমুস সুনান ৪/১৬১; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১১৬