রকিবুল ইসলাম - রূপগঞ্জ

২৬৬০. প্রশ্ন

ক) গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম। কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিও রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত অবস্থায় কি শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়লেই যথেষ্ট হবে নাকি তায়াম্মুমের সাথে অযুও করতে হবে?

খ) জনৈক ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা বা শক্ত শক্ত অনুভব করেছে। কিন্তু তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই এবং এটা কি বীর্য না অন্য কিছু তাও বুঝতে পারছে না। আমার প্রশ্ন হল,উল্লেখিত অবস্থায় কি ঐ ব্যক্তির উপর গোসল করা ফরয?

 

 

উত্তর

ক) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়বে, অযু করবে না। তায়াম্মুমের সাথে অযু করার বিধান নেই। 

উল্লেখ্য, গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পরে ঐ ব্যক্তি থেকে অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করা জরুরি। কেননা সে অযু করতে সক্ষম।-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩, ৩৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৩০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৯৪

খ) ঘুম থেকে উঠে কাপড়ে ভিজা পেলে কিংবা বীর্যের আলামত পেলে স্বপ্নের কথা স্মরণ না হলেও গোসল করা ফরয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্য গোসল করা ফরয। হাদীস শরীফে এসেছে, আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠার পর ভিজা অনুভব করে, কিন্তু তার স্বপ্নের কথা স্মরণ নেই তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, তাকে গোসল করতে হবে। আর ঐ ব্যক্তি যার স্বপ্নের কথা স্মরণ আছে কিন্তু সে কাপড়ে বা শরীরে কোনো ভিজা পায়নি তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, না, তার জন্য গোসল করা জরুরি নয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪০; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪৮-১৪৯; মাবসূত, সারাখসী ১/৬৯; ফাতহুল কাদীর ১/৫৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৩০-২৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩

শেয়ার লিংক

আরিফ বিল্লাহ - টাঙ্গাইল

২৬৬১. প্রশ্ন

আমার মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ফজরের সময় মসজিদে গিয়ে দেখি নামাযের ইকামত হচ্ছে বা জামাত শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জামাতের কতটুকু অংশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমি সুন্নত পড়ব? দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নাকি ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ফজরের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না। যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়।-মুসনাদে আহমদ ২/৪০৫

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস ও আবু দারদা রা.-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন আবু দারদা রা. ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সাথে জামাতে শরিক হতেন।-শরহু মাআনিল আছার, তহাবী ১/২৫৬

সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো ফকীহ সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহর মত তা-ই, যা উপরে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-

ক. কাতারের সাথে মিলিত হয়ে পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো পিলারের আড়ালে সুন্নত পড়বে।

খ. জামাত থেকে পিছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে।

-আলজামিউস সগীর ৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; মাবসূত, সারাখসী ১/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৬

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - কুমিল্লা

২৬৬২. প্রশ্ন

নফল নামায বসে পড়ার হুকুম কি?

 

 

উত্তর

নফল নামায কোনো ওজর ছাড়াও বসে পড়া জায়েয। তবে বসে পড়লে দাঁড়িয়ে পড়ার তুলনায় অর্ধেক সওয়াব হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বসে নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এতে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার তুলনায় অর্ধেক সওয়াব হবে।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৬৮৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২২১; ফাতহুল কাদীর ১/৪০০; আলবাহরুর রায়েক ২/৬২

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম - বদলপুর, আড়াইহাজার

২৬৬৩. প্রশ্ন

১. কোনো কিরানকারী মহিলার উমরার তাওয়াফ করার পূর্বে বা তাওয়াফের মাঝে যদি মাসিক শুরু হয়ে যায় এবং হজ্বের পূর্বে পাক হতে না পারে তবে হজ্বের পর উমরার কাযা আদায় করলে দম লাগবে কি না? উজরের কারণে পূর্বে উমরা করতে না পারায় হেরেমের সীমানার ভিতরে হজ্বের নিয়ত করে ইফরাদ হজ্ব আদায় করতে পারবে কি না? এক্ষেত্রে কোনো দম লাগবে কি না?

২. উমরার তাওয়াফ করার পূর্বে বা মাঝে তামাত্তুকারী মহিলার যদি মাসিক শুরু হয়ে যায় এবং হজ্বের পূর্বে পাক হতে না পারে তবে উমরাহ সম্পন্ন না করে ইফরাদ হজ্বের ইহরাম করতে পারবে কি না? এই মহিলা যদি হজ্বের পরে উমরার কাযা করে নেয় তবে সে তামাত্তুকারী হবে কি না? উভয়ক্ষেত্রে কোনো দম দিতে হবে কি না?

৩. হজ্বের মাসসমূহে কেউ যদি নফল উমরার ইহরাম করে উমরা সমাপ্ত করার পর হালাল হয়ে হজ্বের পূর্বে মদীনায় চলে যায় তবে মদীনা থেকে আসার সময় কিরান বা ইফরাদ হজ্বের নিয়ত করতে পারবে কি না?

৪. কোনো তামাত্তুকারী যদি উমরা সমাপ্ত করে হজ্বের পূর্বে মদীনায় চলে যায় তবে মদীনা থেকে আসার সময় ইফরাদ বা কিরান হজ্বের নিয়ত করতে পারবে কি না?

 

উত্তর

১. কিরান হজ্বের নিয়তে ইহরাম করার পর কোনো মহিলা যদি উমরার তাওয়াফের অন্তত চার চক্কর আদায় করতে পারে এবং এরপর ঋতুস্রাবের কারণে আরাফায় অবস্থানের পূর্বে তাওয়াফের অবশিষ্ট চক্করগুলো আদায় করতে না পারে তাহলে সে হজ্বের কার্যাদি যথানিয়মে আদায় করতে থাকবে। অতপর তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে উমরার তাওয়াফের অবশিষ্ট চক্করগুলো এবং উমরার সায়ী আদায় করে নিবে। এরপর তাওয়াফে যিয়ারতসহ হজ্বের কাজগুলো সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রে তার হজ্বটি কিরান হজ্বই হবে। তাই তাকে হজ্বের কুরবানিও (দমে শোকর) দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে কোনো জরিমানা দম দিতে হবে না।

কিন্তু আরাফায় অবস্থানের পূর্বে যদি উমরার তাওয়াফের অন্তত চার চক্কর আদায় করতে না পারে তাহলে তার উমরার ইহরামটি বাতিল হয়ে যাবে এবং তার হজ্বটি ইফরাদ হজ্ব হবে। কিরান হবে না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ইফরাদ হজ্বের  জন্য নতুন করে ইহরাম করতে হবে না; বরং পূর্বের ইহরামই যথেষ্ট হবে। আর এ অবস্থায় তার উপর দমে শোকর (হজ্বের কুরবানী) ওয়াজিব হবে না। তবে উমরার ইহরামটি বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে একটি জরিমানা দম দিতে হবে। এবং হজ্ব সম্পন্ন করার পর ১৩ যিলহজ্বের পরে ঐ উমরাটির কাযা করে নিতে হবে।

২. তামাত্তু হজ্বকারী মহিলা উমরার ইহরাম করার পর তাওয়াফের তিন চক্কর বা এর কম আদায়ের পর যদি ঋতুস্রাব আসে এবং আরাফায় অবস্থানের পূর্বে তাওয়াফের অবশিষ্ট চক্করগুলো আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে তার উমরার ইহরামটি বাতিল হয়ে যাবে। এখন সে হজ্বের ইহরাম করে যথানিয়মে হজ্বের কার্যাদি সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রে তার হজ্বটি ইফরাদ হজ্ব হবে। হজ্বের পরে উমরা আদায় করলেও তামাত্তুকারী বলে গণ্য হবে না। তাই এক্ষেত্রে তার উপর দমে শোকর (হজ্বের কুরবানী) ওয়াজিব হবে না। তবে উমরার ইহরামটি বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে তাকে একটি জরিমানা দম দিতে হবে এবং হজ্ব সম্পন্ন করার পর ১৩ যিলহজ্বের পরে ঐ উমরাটির কাযা আদায় করে নিতে হবে।

আর আরাফায় অবস্থানের পূর্বে যদি উমরার তাওয়াফের অন্তত চার চক্কর আদায় করে নিতে পারে তাহলে সে উমরার ইহরামটি বহাল রেখেই হেরেম থেকে হজ্বের ইহরাম করে নিয়ে যথানিয়মে হজ্বের কার্যাদি আদায় করবে। অতপর তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে উমরার তাওয়াফের অবশিষ্ট চক্কর আদায় করে উমরার সায়ী করে নিবে। এরপর তাওয়াফে যিয়ারতসহ হজ্বের বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রে তার হজ্বটি তামাত্তু হজ্বই হবে। অতএব তাকে দমে শোকর (হজ্বের কুরবানী) আদায় করতে হবে। তবে কোনো জরিমানা দম আদায় করতে হবে না।-সহীহ বুখারী ১/৪৫; গুনইয়াতুন নাসিক ২০৩, ২০৫, ২১২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭৭; আলমাসালিক ফিলমানাসিক ১/৬৪৮; আলবাহরুল আমীক ২/৭৩৩; মানাসিক ২৫৮

৩-৪. হজ্বের মাসসমূহে নফল উমরার নিয়তে কিংবা তামাত্তু হজ্বের নিয়তে উমরা আদায় করার পর মদীনা গিয়ে সেখান থেকে কিরান হজ্বের ইহরাম করা জায়েয নয়। বরং এমন ব্যক্তি সেখান থেকে শুধু হজ্ব বা শুধু উমরার ইহরাম করবে। যদি সে মদীনা থেকে কিরান হজ্বের ইহরাম করে ফেলে তাহলে উমরার ইহরামটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি। তাই সে মনে মনে উমরার ইহরামটি ছেড়ে দিবে এবং হজ্বের সময় যথানিয়মে হজ্বের কার্যাদি আদায় করবে। এক্ষেত্রে উমরার ইহরামটি বাতিল করার কারণে তাকে একটি জরিমানা দম আদায় করতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, ঐ ব্যক্তি যেহেতু মদীনা মুনাওয়ারা যাওয়ার আগে হজ্বের মৌসুমেই উমরা করেছে তাই উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে ঐ উমরাসহ তার হজ্বটি তামাত্তু হজ্ব হবে। তাই তাকে দমে শোকর (হজ্বের কুরবানী) আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, ঐ ব্যক্তি মদীনা থেকে আসার সময় যদি ইফরাদ হজ্বেরও ইহরাম করে তাহলেও তার হজ্বটি তামাত্তু হজ্বই হবে। তাই এক্ষেত্রেও তাকে দমে শোকর (হজ্বের কুরবানী) আদায় করতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইফরাদ হজ্বের নিয়ত গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৭২; আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/২৮৮; আলজামিউস সগীর ১৫৭; ইলাউস সুনান ১০/৩১৮; গুনইয়াতুন নাসিক ২১৫; মানাসিক ২৯৭

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান শেখ - গোপালগঞ্জ

২৬৬৪. প্রশ্ন

আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়ে হজ্ব করার নিয়ত করেছি। আমরা জানি যে, বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করার ক্ষেত্রে প্রথম তিন তাওয়াফে রমল করতে হয়। কিন্তু এক হাজী সাহেবকে বলতে শুনেছি, মহিলারা রমল করবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছি। মুফতী সাহেবের নিকট আমার বিনীত আবেদন এই যে, দয়া করে মহিলাদের রমল সম্পর্কিত হুকুম কি জানাবেন।

 

 

 

 

উত্তর

উক্ত হাজী সাহেব ঠিকই বলেছেন। তাওয়াফের মধ্যে রমল করার হুকুম শুধু পুরুষের জন্য, মহিলার জন্য নয়। মহিলারা রমল করবে না।  আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা এবং সাফা-মারওয়া সায়ী করার ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য রমল নেই।

-সুনানে দারা কুতনী ২/২৯৫; কিতাবুল আসল ২/৩৮৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫২৭

শেয়ার লিংক

শিহাবুদ্দীন - বরিশাল

২৬৬৫. প্রশ্ন

আমি একজন সরকারী চাকুরিজীবী। গত বছর আমি হজ্বে গিয়েছিলাম। হজ্বের বিভিন্ন আমল করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাই। এরপর ১০ই যিলহজ্ব কংকর নিক্ষেপ করতে গিয়ে প্রচন্ড ভিড় দেখে বাসায় ফিরে আসি। পরবর্তীতে অলসতা করে বাকি দিনগুলোতে আর কংকর নিক্ষেপ করতে যাইনি। এখন আমার করণীয় কী? দয়া করে জানাবেন।

 

 

উত্তর

যিলহজ্ব মাসের ১০, ১১  ও ১২ তারিখ নির্ধারিত সংখ্যক কংকর নিক্ষেপ করা হজ্বের অন্যতম ওয়াজিব। ভিড়ের কারণে বা অন্য কোনো ওজরে যদি কেউ দিনে নিক্ষেপ করতে না পারে তাহলে রাতে হলেও তা নিক্ষেপ করতে হবে, অন্যথায় দম ওয়াজিব হবে।

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী আপনার কর্তব্য ছিল ভিড় কমার পর জামারাতে গিয়ে কংকর নিক্ষেপ করা। ইচ্ছাকৃতভাবে এ ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়াটা অন্যায় হয়েছে। এজন্য আপনাকে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং হেরেমের এলাকার মধ্যে একটি দম (একটি ছাগল, দুম্বা অথবা উট বা গরুর এক সপ্তমাংশ) দিতে হবে। যদি আপনি দেশে এসে গিয়ে থাকেন তবে কারো মাধ্যমে হেরেম এলাকায় দম আদায়ের ব্যবস্থা করবেন।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৭; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮২; মানাসিক ৩৫৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৪

শেয়ার লিংক

মেহেদী হাসান - ক্যান্টনমেন্ট, সিলেট

২৬৬৭. প্রশ্ন

আমার দাদার বয়স ষাট বছর। কয়েক বছর আগে হঠাৎ তিনি দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখনও তিনি ফরয হজ্ব আদায় করেননি। তাই তিনি হজ্ব নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। বলে উঠেন, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থতা দান করেন তাহলে আমি আগামী বছর হজ্ব করব। সুস্থ হয়ে পরের বছর তিনি হজ্ব করেছেন। এখন তার ফরয হজ্বটি কি আদায় হয়েছে, না তাকে আবার হজ্ব করতে হবে? বিষয়টি স্পষ্ট করে জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার দাদা যদি ফরয হজ্ব ব্যতীত অন্য কোনো হজ্বের নিয়ত না করে থাকেন তাহলে তা ফরয হজ্বই আদায় হয়েছে। তাকে নতুন করে ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রকিবুল ইসলাম - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

২৬৬৮. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসে। কয়েকদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে ইতিকাফ ছেড়ে বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে। যার কারণে পরবর্তী দিনগুলোতে ইতিকাফ করা সম্ভব হয়নি। জানার বিষয় হল, এখন তার কী করণীয়? ইতিকাফটি তাকে কাযা করতে হবে কি না?

উত্তর

ঐ ব্যক্তিকে নফল রোযাসহ একদিনের ইতিকাফ কাযা করে নিতে হবে। এজন্য সে কোনো একদিন সূর্যাস্ত থেকে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করবে এবং দিনের বেলা রোযা রাখবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪; আহকামে ইতিকাফ পৃ. ৫০

শেয়ার লিংক

মিসেস শাকিলা - টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ

২৬৬৯. প্রশ্ন

বিবাহে আমার মোহর ধার্য করা হয়েছিল দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। বিবাহ হয়েছে প্রায় ২ বছর আগে। মোহর বাবদ কোনো টাকা আমাকে আমার স্বামী দেয়নি। প্রশ্ন হল, মোহরের টাকা হাতে না আসলেও বছর অতিবাহিত হওয়ার কারণে ধার্যকৃত মোহরের উপর যাকাত ফরয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

 

 

উত্তর

না, মোহর হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে এর যাকাত দিতে হবে না; বরং হস্তগত হওয়ার পরই তা যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে।

-কিতাবুল আসল ২/৯০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৩০৬; ফাতহুল কাদীর ২/১২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ উবায়দুল হক - গোপালগঞ্জ

২৬৭০. প্রশ্ন

মাদরাসার একজন এতীম ছাত্রকে যাকাত প্রদানের নিয়তে আমি নিয়মিত তার টিফিন ক্যারিয়ারের বক্সে খানা দিয়ে আসছি। প্রশ্ন হল, এ পদ্ধতিতে আমার যাকাত প্রদান করা সহীহ কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

হ্যাঁ, এ পদ্ধতিতে আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে খাবারের মূল্য যথাযথভাবে হিসাব করতে হবে, বেশি ধরা যাবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ২৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু সায়েম - আদর্শনগর, ঢাকা

২৬৭২. প্রশ্ন

এক বছর পূর্বে জনৈক ব্যক্তি আমার থেকে নেসাব পরিমাণ টাকা ধার নেয়। এক বছর পর এক পঞ্চমাংশ টাকা পরিশোধ করেছে। এ টাকা ব্যতীত আমার কাছে অন্য কোনো টাকা জমা নেই। জানার বিষয় হল, এখন কি উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরয?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার ঐ টাকার মেয়াদ এক বছর অতিক্রম হওয়ায় এর উপর যাকাত ফরয হয়েছে। আপনি ইচ্ছা করলে এখনই পুরো ঋণের টাকার যাকাত আদায় করে দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে যতটুকু হস্তগত হয়েছে এখন শুধু সে অংশের যাকাত প্রদান করতে পারেন। এরপর অবশিষ্ট টাকা যখন হস্তগত হবে তখন সেগুলোর বিগত দিনের যাকাতও আদায় করতে হবে।

-মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০, ৩০৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রহমতুল্লাহ - কিশোরগঞ্জ

২৬৭৩. প্রশ্ন

আমার ভাই এক মহিলার দুধপান করেছে। ঐ ভাইয়ের বিবাহের বয়স হয়েছে। ভাইয়ের দুধ মা নিজ ননদের সাথে (অর্থাৎ ভাইয়ের দুধ সম্পর্কীয় ফুফু) ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। দুধ সম্পর্কীয় ফুফুর সাথে বিবাহ সহীহ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

দুধ মাতার ননদের সাথে ঐ ছেলের বিবাহ বৈধ নয়। কেনন ঐ ননদ ছেলেটির দুধ সম্পর্কীয় ফুফু। আর রক্তের (বংশীয়) সম্পর্কের  ফুফুর সাথে যেমনিভাবে বিবাহ হারাম তদ্রূপ দুধ সম্পর্কের ফুফুর সাথেও বিবাহ হারাম।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৩, ৯৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নাজমুল হক - পিরোজপুর

২৬৭৪. প্রশ্ন

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব? কী পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে একজনের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়?

উত্তর

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ যাকারিয়া - পাবনা

২৬৭৫. প্রশ্ন

প্রতি বছর আমরা নির্দিষ্ট পাঁচ শরিক মিলে কুরবানী করি। এ বছরও কুরবানীর এক সপ্তাহ আগে ৫জন মিলে একটি গরু ক্রয় করি। কুরবানীর আগের দিন আমাদের এক প্রতিবেশী তাতে শরিক হতে চাইলে আমরা তাকে শরিক করে নিই। জানার বিষয় হল, এভাবে শরিক করার কারণে আমাদের কুরবানী আদায়ে কোনো ত্রুটি হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উল্লেখ্য, কুরবানী দাতা প্রত্যেক শরিকই সচ্ছল এবং নেসাব পরিমাণ মালের মালিক।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সকলের কুরবানী সহীহ হয়েছে। তবে পাঁচ জনে মিলে কুরবানী দেওয়ার নিয়তে পশু ক্রয়ের পর নতুন করে শরিক নেওয়া অনুত্তম হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ শরিক থেকে প্রাপ্য টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। অবশ্য সদকা না করলেও কোনো সমস্যা নেই।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৭; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাসুম - দিনাজপুর

২৬৭৬. প্রশ্ন

 

প্রতি বছর আমরা ছয় ভাই একটি গরু কুরবানী করি। একটি গরুতে যেহেতু সাতজন শরিক হতে পারে তাই এবার আমরা পশুর ৭ম ভাগটি ইছালে ছওয়াবের উদ্দেশে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী দিতে চাচ্ছি। এভাবে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে কি এবং ঐ অংশের গোশত কি আমরা খেতে পারব?

 

 

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ৬ জন মিলে ৭ম অংশ পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে এবং আপনারা ঐ অংশের গোশত খেতে পারবেন। তবে এটি উত্তম পদ্ধতি নয়। এক্ষেত্রে উত্তম হল, সবাই মিলে এক অংশের টাকা এক ভাইকে মালিক বানিয়ে দিবে। আর ঐ ভাই পিতার পক্ষ থেকে কুরবানী করবে। এতে কাজটি নিয়মসম্মত হবে এবং সকলে সওয়াবও পেয়ে যাবে। আর এ অবস্থায়ও মৃত পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া অংশের গোশত কুরবানীদাতার হবে। সে তা নিজেও খেতে পারবে, সদকাও করবে পারবে এবং অন্য শরিককে হাদিয়াও দিতে পারবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ - কাপাসিয়া, গাজিপুর

২৬৭৭. প্রশ্ন

এক ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে এক ক্রেতার (বায়ারের) একটি চুক্তি হল যে, ফ্যাক্টরি মালিক তাকে ১ লক্ষ টি-শার্ট তৈরি করে দিবে। বায়ার শার্ট তৈরি করার উপকরণ, যেমন-কাপড়, বোতাম, সুতা ইত্যাদি সরবরাহ করবে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বায়ার টি-শার্ট তৈরির উপকরণ একটু বেশি দেয়, যা দ্বারা ফ্যাক্টরি মালিক চুক্তির চেয়ে বেশি টি-শার্ট তৈরি করে। এই অতিরিক্ত শার্টের  মালিক কে হবে? ফ্যাক্টরির মালিক এই অতিরিক্ত টি-শার্ট অন্যত্র বিক্রি করতে পারবে কি না? এমনিভাবে অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে তা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে কমিশন নিতে পারবে কি?

 

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত চুক্তি অনুযায়ী যেহেতু ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ কেবল সেলাইয়ের কাজ আঞ্জাম দিবে, আর ওয়ার্ডার দাতা বায়ারই শার্ট তৈরির সকল উপকরণ সরবরাহ করবে তাই এক্ষেত্রে তৈরিকৃত সকল মালের মালিক ওয়ার্ডারদাতা বায়ারই হবে। তাই এক লাখ পিসের অতিরিক্ত শার্ট প্রস্ত্তত হলে সেগুলোর মালিকও ঐ বায়ার। সুতরাং তার অনুমতি ব্যতীত ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের জন্য তা অন্যত্র বিক্রি করা বৈধ হবে না। তেমনিভাবে অন্য কারো জন্য অতিরিক্ত টি-শার্টগুলো বিক্রি করে দিয়ে কমিশন নেওয়া বৈধ হবে না। তবে অর্ডারকৃত সংখ্যার অতিরিক্ত শার্টগুলোর জন্য কারখানা মালিক আলাদা চার্জ নিতে পারবে। অবশ্য যদি এ ব্যাপারে বায়ারকে অবগত করা হয় এবং তিনি দাবি ছেড়ে দেন অথবা চুক্তিতেই এমন কথা লেখা থাকে যে, অতিরিক্ত পোশাকের ব্যাপারে বায়ারের কোনো দাবি থাকবে না তাহলে তা ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের হবে। সে চাইলে তা অন্যত্র বিক্রি করতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে অন্য কেউ কমিশনের বিনিময়ে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের পক্ষ হয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিতে পারবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২০০; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ১/২৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৯৭

শেয়ার লিংক

হুমায়ুন কবীর - মোমেনশাহী

২৬৭৮. প্রশ্ন

হুজুর শব্দ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খাছ নাকি যে কারো সাথে ব্যবহার করা যাবে? বিস্তারিত প্রমাণাদিসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

বাংলা ভাষায় জনাব, মহাশয় যেমনভাবে সম্মানসূচক শব্দ অনুরূপভাবে হুজুর শব্দটিও ফার্সী, উর্দু ও বাংলাভাষায় একটি সম্মানসূচক শব্দ। যা সাধারণত আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তিন ভাষার অভিধান গ্রন্থগুলো দেখলেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন ফার্সী অভিধান গিয়াসুল লুগাতে (পৃ. ১৭৪) দেখুন : ‘‘হুজুর শব্দটির অর্থ হল, উপস্থিত হওয়া। তবে পরিভাষায় এটি বুযুর্গ ব্যক্তিদের সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।’’ একই কথা উর্দু অভিধান ফীরুযুল লুগাত (পৃ. ৫৭১) এবং বাংলা অভিধান বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (পৃ. ১২১২) ও সংসদ বাংলা অভিধান (পৃ. ৭২৩) এ উল্লেখ করা হয়েছে। উপরোল্লেখিত অভিধানগুলোর আলোকে একথাই স্পষ্ট হয় যে, হুজুর শব্দটি ফার্সী, উর্দু ও বাংলা ভাষায় নিছক একটি সম্মানসূচক শব্দ। আর এ অর্থেই এই তিন ভাষার অনেক মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যও এটি ব্যবহার করে থাকে। শরয়ী পরিভাষা হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয় না। শব্দটি যেহেতু ব্যাপক তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য তা ব্যবহার করা হলে সাধারণত অধিক সম্মান বোঝানোর জন্য এর সাথে আকরাম শব্দ যোগ করে হুজুরে আকরাম বলা হয়। মোটকথা, হুজুর শব্দটি সম্মানসূচক বটে তবে এটি এমন কোনো শব্দ নয়, যা শুধু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ব্যবহৃত হয়। বরং তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি শব্দ।

-গিয়াসুল লুগাত ১৭৪; ফীরুযুল লুগাত ৫৭১; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৩/৩৪২

শেয়ার লিংক

আসাদুজ্জামান - আড়াইহাজার

২৬৭৯. প্রশ্ন

হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলার হুকুম কী? এবং তা কি উচ্চস্বরে বলবে না নিম্নস্বরে?

উত্তর

হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার জন্য উচ্চ স্বরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় তখন সে যেন আলহামদুলিল্লাহ বলে। এবং তার সাথী যেন উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে। যখন তার সাথী ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে তখন হাঁচিদাতা যেন উত্তরে ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’ বলে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২২৪ অন্য হাদীসে এসেছে, ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছির তার এক উস্তাদ থেকে বর্ণনা করেন, হাঁচিদাতার জন্য উচিত হল উচ্চস্বরে আলহামদুলিল্লাহ বলা, যাতে করে আশপাশের লোকেরা তা শুনতে পায়। আর ঐ ব্যক্তির আলহামদুলিল্লাহ বলার পর শ্রোতাদের জন্য জরুরি হল ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৯৬৮০; কিতাবুল আযকার পৃ. ৪৪১; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/২৪৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৮৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রুহুল আমীন - দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর

২৬৮০. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হল, মসজিদে বসে ইজতিমায়ীভাবে উচ্চস্বরে যিকির করার নিয়ম আছে কি না। তিনি বললেন, আছে। কিন্তু তার কথায় কিছুটা জটিলতা অনুভব হল। আমার জানার বিষয় হল, এভাবে মসজিদে বসে সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে যিকির করার নিয়ম কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

একাকী যিকির করা বা কয়েকজন একত্রিত হয়ে উঁচু আওয়াজে যিকির করা উভয়টিই শরীয়তে অনুমোদিত। তা মসজিদে হোক বা অন্য কোথাও।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার প্রতি বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে থাকি। সে যদি একাকী আমার যিকির করে তাহলে আমি গোপনে তাকে স্মরণ করি। সে কোনো মজলিসে আমার যিকির করলে আমি তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে তার আলোচনা করি।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৪০৫

ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, জামাতে যিকির করলে আওয়াজ তো হবেই।-আলহাবী লিলফাতাওয়া ২/১২৯

তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে কয়েকটি শর্ত পূরণ করা অত্যাবশ্যক। যথা :

১. লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া।

২. কোনো ব্যক্তির নামাযে বা অন্য কোনো ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটানো।

৩. কোনো ব্যক্তির বিশ্রামে সমস্যা না হওয়া।

৪. আওয়াজ স্বাভাবিক হওয়া, চিৎকার করে বা অতিরিক্ত উঁচু আওয়াজে না হওয়া এবং মাইক ব্যবহার না করা।

৫. সাধারণভাবে এবং সহীহ-শুদ্ধ করে যিকির করা। যিকিরের শব্দ উচ্চারণে লাহনে জলী থেকে বেঁচে থাকা। যদি উল্লেখিত শর্তাবলি পাওয়া যায় তবে ইজতিমায়ী যিকির করতে কোনো অসুবিধা নেই। আর যদি কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্তসমূহ বা তা থেকে কোনো একটি শর্ত না পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে কাজটি শরীয়তসম্মত হবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেক যিকিরের মজলিসে উল্লেখিত শর্তগুলোর অনেক কিছুই লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়, যা সংশোধনযোগ্য।

-রদ্দুল মুহতার ১/৬৬০; সিবাহাতুল ফিকরি ফিলজাহরি বিযযিকর, আবদুল হাই লাখনৌভী পৃ. ৩৮; নতীজাতুল ফিকরি ফিলজাহরি বিযযিকর, (আলহাবী লিল ফাতাওয়া ২/১২৮) ইমাম সুয়ূতী; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/১৫১

শেয়ার লিংক