জনৈক ব্যক্তি বলেছে, কুরআন তেলাওয়াতের সময় অযু নষ্ট হয়ে গেলে মুখ বা ঠোঁটের দ্বারা কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা উল্টানো যায় এবং এর দ্বারা অযু ছাড়া কুরআন ধরার গুনাহ হয় না। জানতে চাই, তার কথাটি কি ঠিক?
জনৈক ব্যক্তি বলেছে, কুরআন তেলাওয়াতের সময় অযু নষ্ট হয়ে গেলে মুখ বা ঠোঁটের দ্বারা কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা উল্টানো যায় এবং এর দ্বারা অযু ছাড়া কুরআন ধরার গুনাহ হয় না। জানতে চাই, তার কথাটি কি ঠিক?
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। অযু ছাড়া যেমনিভাবে হাত দিয়ে কুরআন মজীদ স্পর্শ করা যায় না, তেমনিভাবে বিনা অযুতে মুখ, ঠোঁট, জিহবা দিয়েও কুরআন মজীদ স্পর্শ করা নাজায়েয।
-সুনানে দারেমী ২/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৯; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১/২০৩; আলমুতহাফ ফী আহামিল মুসহাফ ৪৪৬শেয়ার লিংক
অনেক সময় নামায পড়ার সময় সেজদায় মাথা থেকে টুপি পড়ে যায়। যার কারণে নিজের কাছে খুবই অস্বস্তি বোধ হয়। এর থেকে বাঁচার জন্য সেজদা থেকে উঠার সময় যদি টুপি তুলে মাথায় দেই তাহলে এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?
নামায অবস্থায় মাথা থেকে পড়ে যাওয়া টুপি সেজদা থেকে উঠা কিংবা বসা অবস্থায় এক হাত দিয়ে মাথায় তুলে নিলে নামাযের কোনো ক্ষতি হয় না; বরং এমনটি করাই উত্তম। কিন্তু এক্ষেত্রে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। কেননা এতে নামায ফাসেদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই আপনি যদি এক হাত দিয়ে মাথায় টুপি তুলে দেন তবে আপনার নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।
-সহীহ বুখারী ১/১৫৭; শরহুল মুনইয়া ৪৪২-৪৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৮৫৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৮শেয়ার লিংক
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ইমামতি ছাড়াও এলাকার সিনিয়র মাদরাসায় (আলিয়া) শিক্ষকতা করেন। ঐ মাদরাসায় সহশিক্ষা চালু আছে। ছেলেমেয়ে একত্রে ক্লাস করে। (তবে মেয়েরা বোরকা বা নেকাব পরে থাকে।)
আবার কিছু মুসল্লী তাকে অপছন্দ করেন। এ অবস্থায় ঐ ইমামের পিছনে ইক্তিদা করাতে শরীয়তে কোনো সমস্যা আছে কি না? থাকলে দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
মূল উত্তরের আগে ভূমিকাস্বরূপ কয়েকটি বিষয় জানা দরকার।
১. সহশিক্ষা তথা নারী-পুরুষের যৌথ শিক্ষা-ব্যবস্থা ইসলাম সমর্থিত নয়। এটি বিজাতীয় শিক্ষা-পদ্ধতি। একসময় স্কুল-কলেজেও আলাদা ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীতে পাশ্চাত্যের অনুকরণে সহশিক্ষা চালু করা হয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন আলিয়া পদ্ধতির দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী।
মেয়েরা বোরকা পরা থাকলেও সহশিক্ষা ব্যবস্থা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পাঠশালায় একজন ছাত্রী শুধু নীরব শ্রোতা নয়; তাকে যেমন শিক্ষকের কথা শুনতে হয়, তেমনি পড়া শুনাতে হয় এবং প্রয়োজনে প্রশ্নও করতে হয়। এমনিভাবে তাকে লেখা দেখাতে হয়, বাড়ির কাজ দেখাতে হয়। এসব কিছুই হয়ে থাকে তার সহপাঠি বেগানা ছাত্রদের কাছে বসে এবং বেগানা পুরুষ শিক্ষকের সাথে সামনাসামনি ও সরাসরি। বলাবাহুল্য যে, এ সকল কর্মকান্ড কুরআন মজীদের মৌলিক নির্দেশনা পরিপন্থী। সূরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
২. শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে এর গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। এক হাদীসে ইরশাদ করেছেন, ইমাম মুসল্লীদের নামাযের যিম্মাদার। (জামে তিরমিযী ১/২৯)
অন্য হাদীসে আছে, যদি তোমরা চাও, তোমাদের নামায কবুল হোক তাহলে তোমাদের ইমাম যেন হয় তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি। কারণ ইমাম হল তোমাদের ও তোমাদের রবের মধ্যকার প্রতিনিধি। (মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৩৭)
তাই ফকীহগণ বলেন, ইমামকে হতে হবে সহীহ আকীদাসম্পন্ন, খোদাভীরু-পরহেযগার, সুন্নতের অনুসারী, বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী আলেম।
৪. মসজিদকমিটি বা মহল্লাবাসীর কর্তব্য হল, দ্বীনদার-পরহেযগার যোগ্য আলেমকে ইমাম বানানো। সম্পূর্ণ সততা ও নিষ্ঠার সাথে এই কর্তব্য পালন করা তাদের উপর ওয়াজিব। যদি তারা এতে অবহেলা করে তাহলে গুনাহগার হবে।
উপরোক্ত ভূমিকার পর এবার মূল জবাব এই-
যেহেতু সহশিক্ষা ইসলামে জায়েয নয় এবং একজন ইমামের এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার অর্থ হল শরীয়ত পরিপন্থী কাজে সহযোগিতা করা, যা কোনো মতেই কাম্য হতে পারে না। তাই এক্ষেত্রে মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, ঐ ইমামকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা। যদি তিনি এরপরও তা না ছাড়েন তাহলে একজন দ্বীনদার পরহেযগার ও উপরোক্ত গুণাবলি সম্পন্ন আলেমকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিবে।
-সূরা আহযাব : ৫৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৬৯; জামে তিরমিযী ১/২৯; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৩৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৭; ইবনে মাজাহ পৃ. ৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; ইলাউস সুনান ৪/৩৫২; ফাতহুল কাদীর ১/৩০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬০৩; মারাকিল ফালাহ ১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫১৩শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় মৃতকে কবরে চিৎ করে শোয়ানো হয় এবং শুধু মুখ কেবলার দিকে করে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিটি কি ঠিক? নাকি ডান দিকে কাত করে শোয়াতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মৃতকে চিৎ করে কবরে রাখা সুন্নত নিয়ম নয়। বরং ডান কাত করে সীনা কেবলামুখী করে শোয়ানোই সুন্নত। আর এভাবে শোয়ানোর জন্য এমনভাবে কবর বানানো উচিত, যেন লাশ রাখার পর তা সহজেই কেবলার দিকে কাত হয়ে যায়।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯৩; আলইখতিয়ার ১/৩১৯; ফাতহুল কাদীর ২/৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৫; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৪২৮; আহকামে মাইয়্যেত ২৪২শেয়ার লিংক
সওম
একটি বইয়ে পড়েছি, বালেগ হওয়ার কোনো আলামত প্রকাশ না পেলেও ছেলে-মেয়েদের বয়স ১৫ বছর হলে তাদের উপর নামায-রোযা ফরয হয়ে যায়। এ কথাটি কি সঠিক?
হ্যাঁ, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার বাহ্যিক নিদর্শন প্রকাশ না পেলেও চন্দ্রবর্ষ হিসেবে ছেলে বা মেয়ের বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হলেই শরীয়তের দৃষ্টিতে সে বালেগ। সুতরাং তখন থেকেই তার জন্য নামায-রোযাসহ শরীয়তের অন্যান্য বিধিবিধান আরোপিত হবে।
-সহীহ বুখারী হাদীস : ২৬৬৪, ৪০৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩; আললুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৬শেয়ার লিংক
আমি প্রতি রমযানেই রোযাগুলো নিয়মিত রাখি। কিন্তু অধিকাংশ রোযাতেই মুখে রোযার নিয়ত উচ্চারণ করি না; বরং রোযা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরীর জন্য উঠে সেহরী খেয়ে নেই এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী ঠিক মতো করতে থাকি। এমন করার দ্বারা আমারা রোযাগুলো সহীহ হয়েছে কি না? নাকি আবার কাযা করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার রোযা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সেহরী খাওয়াটাই রোযার নিয়তের শামিল। নিয়ত মনের ইচ্ছার নাম, এক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই আপনার রোযাগুলো সহীহভাবে আদায় হয়েছে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৪৫২; আলজাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ ১/১৭৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫শেয়ার লিংক
কোনো মুসাফির যদি রমযানের রোযা রেখে দিনের বেলা ইচ্ছাকৃত তা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তার উপর কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে, নাকি কাযা করলেই যথেষ্ট?
মুসাফিরকে ঐ রোযার কাযা করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না। তবে বিনা ওজরে এভাবে রোযা ভেঙ্গে ফেলা অন্যায়। কেননা মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় দিনের শুরু থেকেই রোযা না রাখার অনুমতি আছে। সুতরাং কোনো মুসাফির রোযা না রাখার ইচ্ছা করলে রোযা না রাখা অবস্থায় দিন শুরু করবে। কিন্তু যদি এই ছাড়ের উপর আমল না করে রোযা শুরু করে দেয় তবে বিনা ওজরে তার জন্য তা ভঙ্গ করা জায়েয নয়; বরং ঐ রোযা পুরো করা তার উপর জরুরি হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি এ রোযা ভেঙ্গে ফেলে তবে এর কারণে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না। পরবর্তীতে শুধু কাযা করে নিলেই চলবে।
-মুসনাদে আবু হানীফা ১০৯-১১০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৩২; কিতাবুল আছল ২/২০৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৮৪; সহীহ বুখারী ১/২৬১; সহীহ মুসলিম ১/৩৫৫-৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৫০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪০শেয়ার লিংক
যাকাত-সদকাতুল ফিতর
জনৈক ব্যক্তির উপর দশ হাজার টাকা যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। সে এ টাকা দিয়ে কিতাব ক্রয় করে মাদরাসার কুতুবখানায় ওয়াকফ করতে চায়। আর কুতুবখানার কিতাব পড়ে যে কেউ-ই উপকৃত হতে পারে, কিন্তু কিতাব কেউ অন্যত্র নিতে পারে না। এখন প্রশ্ন হল, যাকাতের টাকা দিয়ে কিতাব ক্রয় করে কুতুবখানায় ওয়াকফ করলে যাকাত আদায় হবে কি না?
যাকাত আদায়ের জন্য শর্ত হল যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে তার মালিক বানিয়ে দেওয়া।
আর কিতাব ক্রয় করে কুতুবখানায় ওয়াকফ করলে যেহেতু এ শর্তটি পাওয়া যায় না তাই এভাবে কিতাব কিনে দেওয়ার দ্বারা যাকাত আদায় হবে না।
অবশ্য যাকাতদাতা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ছাত্রদেরকে যাকাতের নিয়তে কিতাব দিয়ে দিলে এবং মালিক বানিয়ে দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
-সূরা তাওবা : ৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৩৯; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/২০৭-২০৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২,২৪৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১৯শেয়ার লিংক
বর্তমান বিশ্বের প্রায় দেশে দেখা যায়, অধিকাংশ বিত্তবান ব্যক্তিরা নিজেদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ের নামে ব্যাংক-একাউন্ট খুলে টাকা জমা রাখে। যেন তারা বড় হয়ে ঐ টাকা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, জমাকৃত টাকা যদি নেসাব পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাদের উপর সদকাযে ফিতর ওয়াজিব হবে কি না? আর ওয়াজিব হলে কার মাল থেকে তা আদায় করতে হবে? পিতা নিজের মাল থেকে আদায় করবে, না বাচ্চার মাল থেকে?
নেসাবের মালিক নাবালেগ ছেলে-মেয়ের উপর সদকাতুল ফিতর তার সম্পদ থেকে আদায় করাই নিয়ম। তাই অভিভাবক বাচ্চার সম্পদ থেকে ফিতরা আদায় করে দিবে। তবে পিতা ইচ্ছা করলে নিজ সম্পদ থেকেও তা আদায় করে দিতে পারেন।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৬৩; সহীহ বুখারী ১/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩৯-৪৪০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৪; হেদায়া ২/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪২৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩১২; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৪/২৮৩শেয়ার লিংক
আমার কয়েকটি মাইক্রোবাস আছে। এগুলো ভাড়ায় খাটাই। জানতে চাই, বছর শেষে ঐ গাড়িগুলোর কি যাকাত দিতে হবে?
না। ঐ গাড়ির যাকাত দিতে হবে না। কেননা এগুলো যাকাতযোগ্য সম্পদ নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেছেন, যে সকল আসবাবপত্র বিক্রির জন্য কেনা হয় শুধু সেগুলোতেই যাকাত ফরয হয়। অন্যান্য আসবাবপত্রে যাকাত ফরয হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১০৫৬০) তবে ভাড়া বাবদ যে অর্থ আসে তা যাকাতযোগ্য সম্পদ।
শেয়ার লিংক
হজ্ব-উমরাহ
জনৈক ব্যক্তি মদীনা থেকে ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় এসেছে। কিন্তু সে ইহরাম ছাড়াই মীকাত অতিক্রম করেছে। অতপর মক্কাবাসীদের মীকাত অর্থাৎ হিল্ল থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরা সম্পন্ন করেছে। এখন জানার বিষয় হল, তার এই ওমরা আদায় হয়েছে কি না এবং ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করার কারণে তার উপর কোনো দম ওয়াজিব হয়েছে কি না? যদি দম ওয়াজিব হয় তাহলে মক্কায় থাকা অবস্থায় পুনরায় মদীনাবাসীদের মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরা আদায় করলে ঐ দম মাফ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ঐ ব্যক্তির ওমরা আদায় হয়ে গেছে। তবে ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে। আর সে যেহেতু হিল্ল থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরা সম্পন্ন করেছে তাই এখন মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলেও দম মাফ হবে না। অবশ্য ওমরার কাজ শুরু করার আগে মক্কার বাইরের মীকাতে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলে দম দেওয়া লাগত না।
-হেদায়া ৩/৩৯; মানাসিক, মোল্লা আলী ৮৪-৮৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৬২শেয়ার লিংক
১. এক ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে তামাত্তু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধেন এবং হারাম শরীফে গমনের পর যথানিয়মে উমরা পালন করে হালাল অবস্থায় মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করতে থাকেন। পরবর্তীতে হজ্বের পূর্বেই মদীনা মুনাওয়ারা যান এবং ফিরতি পথে যুলহুলাইফা থেকে ইফরাদ হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধেন এবং হারাম শরীফের যিয়ারত না করে মক্কা শহরের বাইরে অবস্থান করেন। সেখান থেকে সরাসরি মিনায় গমন করেন এবং আরাফা-মুযদালিফা ও মিনা এরপর মক্কা শরীফের যিয়ারতের মাধ্যমে যথানিয়মে হজ্বের আহকাম সম্পন্ন করেন।
জানার বিষয় হল, ক) প্রথমে তামাত্তু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মীকাতের ভিতর প্রবেশ করা এবং উমরাহ শেষে মদীনা শরীফ গিয়ে সেখান থেকে ইফরাদ হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধা ও হজ্ব সমাপন করা কি শরীয়তের দৃষ্টিতে সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ করা হয়েছে?
খ) যদি ঐ ব্যক্তি যুলহুলাইফা থেকে পুনরায় তামাত্তু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বাঁধতেন এবং হারাম শরীফে প্রবেশ না করে এবং নতুন করে উমরাহ পালন না করে এবং হালাল না হয়ে ঐ একই ইহরাম অবস্থায় সরাসরি মিনায় গমন করতেন এবং হজ্বের পরবর্তী আহকামগুলো সম্পন্ন করতেন তবে কি তার এই হজ্ব সমাধা করা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী হত?
২. যারা ইতিপূর্বে হজ্ব পালন করেননি বা বদলী হজ্বের নিয়তে পবিত্র ভূমিতে আগমন করেননি শুধু নিজের ফরয হজ্ব আদায় করার জন্য গিয়েছেন তারা যদি উমরাহ পালন ব্যতিরেকে ইফরাদ হজ্ব পালন করেন তবে কি তাদের জিম্মায় যে হজ্ব ফরয ছিল তা কি আদায় হবে?
১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মদীনা মুনাওয়ারা থেকে পুনরায় মক্কা মুকাররমা আসার সময় মীকাত যুলহুলাইফা থেকে শুধু হজ্বের ইহরাম করাও জায়েয। তবে এক্ষেত্রে তার উপর তাওয়াফে কুদুম করা সুন্নত। তাই সরাসরি মিনায় চলে যাওয়া ঠিক হবে না। অবশ্য এই তাওয়াফ বাদ দিলে কোনো জরিমানাও আসবে না। মদীনা মুনাওয়ারা থেকে ফেরার সময় শুধু উমরার ইহরাম করাও জায়েয। তবে উভয় ক্ষেত্রে তার হজ্বটি তামাত্তু হজ্বই হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি মদীনা মুনাওয়ারা থেকে ফেরার সময় ইফরাদ হজ্বের ইহরাম করলেও এর পূর্বে হজ্বের মৌসুমে (মদীনা মুনাওয়ারা যাওয়ার আগে) উমরাহ করার কারণে তার এ হজ্বটি তামাত্তু হজ্ব বলেই গণ্য হবে, ইফরাদ হজ্ব নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি যদি পুনরায় তামাত্তুর উদ্দেশ্যে উমরার ইহরাম করে তবে নিয়ম হল সে প্রথমে এই উমরাহর কাজ সম্পন্ন করবে এরপর হজ্বের ইহরাম করে হজ্ব পালন করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সে যদি উমরার কার্যাদি আদায় না করে বরং হজ্বের সময় হজ্বের ইহরাম করে নেয় (অর্থাৎ হজ্বের নিয়তে তালবিয়া পড়ে নেয়) এবং উকূফে আরাফা করে ফেলে তাহলে তার উমরাহর ইহারামটি বাতিল হয়ে যাবে। তখন সে যথানিয়মে হজ্বের কার্যাদি সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রেও তার হজ্বটি তামাত্তু হজ্ব হবে। সে কারণে দমে শোকর আদায় করতে হবে। আর উমরার ইহরামটি বাতিল করে দেওয়ার কারণে তাকে একটি জরিমানার দমও আদায় করতে হবে। আর ১৩ যিলহজ্বের পর তাকে ঐ বাতিলকৃত উমরাহটি কাযা করে নিতে হবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৭২; আলজামিউস সগীর ১৫৭; আততারজরীদ ৪/১৭২৮; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/২৮৮; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৩৫; মানাসিক ২৫৮; গুনইয়াতুন নাসিক ২০৫, ২১৫
২. তিন প্রকার হজ্বের মধ্যে কিরান ও তামাত্তু হজ্বই উত্তম। হ্যাঁ, ইফরাদ করলেও হজ্বের ফরয আদায় হয়ে যাবে। কেননা, এটিও কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হজ্বের একটি প্রকার। ফরয হজ্বের জন্য তামাত্তু কিংবা কিরান করা জরুরি নয়। অবশ্য সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার উমরাহ আদায় করা যেহেতু সুন্নতে মুয়াক্কাদা তাই যারা ইতিপূর্বে কখনো উমরাহ করেনি তাদের জন্য সম্ভব হলে তামাত্তু বা কিরান হজ্ব আদায় করাই উচিত হবে। যেন ফরয হজ্বের সাথে উমরার সুন্নতও আদায় হয়ে যায়। অবশ্য ইফরাদ হজ্বকারী ব্যক্তিও হজ্বের কাজ শেষ করে ইচ্ছা করলে উমরাহ করে নিতে পারবে এবং এতেও উমরার সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।-আলবাহরুল আমীক ৪/২০১১; মানাসিক ৪৬৬, ২৫৬; গুনইয়াতুন নাসিক ১৯৬, ২০১
শেয়ার লিংক
আমার চাচা এক ব্যক্তির নিকট থেকে ৮ লক্ষ টাকায় একটি প্রাইভেট কার ক্রয় করেছে। নগদ ৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছে। আর বাকি ৪ লক্ষ টাকা এক বছর পর পরিশোধ করবেন বলে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু চার মাস পর ঐ ব্যক্তির টাকার প্রয়োজন হওয়ায় চাচাকে অবশিষ্ট ৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে বলেন। তখন চাচা বলেছেন, যদি ৫০ হাজার টাকা কম নেওয়া হয় তাহলে তিনি বাকি মূল্য পরিশোধ করবেন। অন্যথায় এক বছর পরই টাকা নিতে হবে। ঐ ব্যক্তি চাচার কথায় ৫০ হাজার টাকা কম নিতে রাজি হয়েছে এবং চাচা তাকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন।
জানার বিষয় হল, চাচার জন্য ৫০ হাজার টাকা কম দেওয়া কি ঠিক হয়েছে?
বাকি বা কিস্তিতে বেচা-কেনার ক্ষেত্রে নির্ধারিত মেয়াদের আগে মূল্য পরিশোধ করলে নির্ধারিত মূল্য থেকে কম নিবে-এমন শর্ত করা হারাম। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচার জন্য নির্ধারিত মেয়াদের আগে পরিশোধের শর্তে ৫০ হাজার টাকা কম দেওয়া হারাম হয়েছে। ঐ টাকা বিক্রেতাকে ফেরত দেওয়া জরুরি।
হযরত আবু সালেহ রাহ. বলেন, আমি বাজারের লোকদের কাছে বাকিতে কিছু কাপড় বিক্রি করেছি। (চুক্তি হয়েছে) একটি নির্দিষ্ট সময় তারা মূল্য পরিশোধ করবে। অতপর আমি (যখন) কূফা সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম তখন (নির্ধারিত মেয়াদের আগে) তারা আমার কাছে এসে বলল, যদি তাদের থেকে মূল্যের কিছু অংশ কমিয়ে দেই তবে তারা এখনই পরিশোধ করে দিবে। (আবু সালেহ বলেন) আমি এ বিষয়টি যায়েদ ইবনে ছাবিত রা.কে জানালাম। তিনি বললেন, আমি তোমাকে এটি গ্রহণ করা কিংবা অন্যকে দেওয়ার অনুমতি দিতে পারি না। (সুনানে বায়হাকী, হাদীস : ১১৩৮)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে-হযরত মায়সারা রাহ. বলেন, আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.কে জিজ্ঞাসা করলাম, এক ব্যক্তির নিকট আমার কিছু মেয়াদি ঋণ ছিল। (মেয়াদের আগেই) তাকে বললাম, আমার পাওনা দিয়ে দাও, কিছু কমিয়ে দিব। (এটা বৈধ কি না?) তিনি বললেন, এমনটি করা সুদ। (আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/৪৬৭)
প্রকাশ থাকে যে, মেয়াদের আগে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে যদি কম নেওয়ার বা দেওয়ার শর্ত না করা হয় এবং এমন কোনো প্রচলিত রীতিও না থাকে; বরং পাওনাদার নিজ থেকেই কিছু মূল্য কমিয়ে নেয় তবে তা সুদ বা নাজায়েয হবে না। এক্ষেত্রে বিক্রেতা স্বেচ্ছায় কিছু টাকা কম নিলে ক্রেতার জন্য ঐ পরিমাণ টাকা রেখে দেওয়া বৈধ হবে।
-মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২৭৮-২৭৯; সুনানে বায়হাকী, হাদীস : ১১৩৮; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/৭১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৭; হেদায়া ৩/২৫১; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৫৭; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৬/১০৯; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরা ১/২৫-২৯শেয়ার লিংক
একদিন আমাদের ক্লাসের এক সহপাঠির সঙ্গে বিজ্ঞান স্যারের পাঠদান নিয়ে তর্ক হয়। আমি বলেছি, (একটি বিষয়ে) স্যার এমন বলেছেন। আর সে আমার বিপরীত বলছে। একপর্যায়ে সে বলল, আগামীকাল স্যারকে জিজ্ঞাসা করব। যদি আমার কথা ঠিক হয় তাহলে তুমি আমাকে ২০০/- টাকা দিবে। আর যদি তোমার কথা ঠিক হয় তাহলে আমি তোমাকে ২০০/- টাকা দিব। আমি তার কথা মেনে নিয়েছি এবং আরেক সহপাঠির নিকট দুজনই ২০০/- টাকা করে জমা দিয়েছি। পরদিন স্যারকে জিজ্ঞাসা করা হল এবং আমার কথা সঠিক হল। কথামতো টাকাটাও আমি পেয়েছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার জন্য ঐ টাকা নেওয়া কি ঠিক হয়েছে?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার জন্য ঐ টাকা নেওয়া জায়েয হয়নি। ঐ টাকা মালিককে ফেরত দিতে হবে। কারণ দুজনের মধ্যে যার কথা সঠিক হবে, অন্যজন তাকে টাকা দিবে-এমন শর্ত করা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। আর শরীয়তে জুয়া হারাম। তাতে লিপ্ত হওয়া কবীরা গুনাহ। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) হে মুমিনগণ! নিঃসন্দেহে মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর এসব নিকৃষ্ট শয়তানী কর্মকান্ড। এগুলো থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা মায়েদা (৫) : ৯০)
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-(তরজমা) তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, উভয়টার মধ্যেই মহাপাপ রয়েছে। (সূরা বাকারা (২) : ২১৯
হাদীস শরীফে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের জন্য মদ ও জুয়াকে হারাম করেছেন। (মুসনাদে আহমদ ২/১৬৫, হাদীস : ৬৫৪৭)
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জুয়ার লেনদেনের গুনাহে জড়িত হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে সংশ্লিষ্টদের তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
-সুরা বাকারা : ২১৯; সূরা মায়েদা : ৯০-৯১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৭/১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৪, ৩৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৩, ৫/৩৮৫শেয়ার লিংক
ক) এক মহিলার ছেলের নামে মামলা হয়েছে। আদালত ঘোষণা করেছে, মঙ্গলবার এ মামলার ফয়সালা হবে। এ কথা শুনে মহিলা মান্নত করেছে যে, যদি তার ছেলের পক্ষে ফয়সালা হয় তাহলে তিনি সারা জীবন প্রতি মঙ্গলবার রোযা রাখবেন। মঙ্গলবার দিন আদালত তার ছেলের পক্ষেই ফয়সালা দিয়েছে। এখন কি সারা জীবন প্রতি মঙ্গলবার তাকে রোযা রাখতে হবে?
খ) কসম ভঙ্গের কারণে আমার উপর একটি কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। আমরা জানি, দশজন মিসকীনের প্রত্যেককে এক সদকাতুল ফিতর পরিমাণ গম বা এর মূল্য দিলে কাফফারা আদায় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হল, আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব প্রতি জুমআয় মসজিদের জেনারেটরের তেলের জন্য টাকা তোলেন। কাফফারার টাকা গরীবকে না দিয়ে জেনারেটরের তেলের জন্য দিয়ে দিলে আমার কাফফারা আদায় হবে কি?
ক) হ্যাঁ, ঐ মহিলাকে সারা জীবন মঙ্গলবার দিন রোযা রাখতে হবে। ওজরের কারণে কোনো মঙ্গলবার রোযা রাখতে না পারলে অন্যদিন তা কাযা করতে হবে। আর ভবিষ্যতে বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে রোযা রাখা সম্ভব না হলে প্রতি মঙ্গলবারের রোযার পরিবর্তে ফিদয়া দিতে হবে।-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৯
খ) মসজিদে দান করা অনেক সওয়াবের কাজ। তবে এতে কাফফারা আদায় হবে না। তা নফল সদকা বলেই গণ্য হবে। কেননা, কাফফারা আদায়ের জন্য শর্ত হল, দশজন গরীবের প্রত্যেককে নির্ধারিত সম্পদের মালিক বানিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ দশজন মিসকীনের প্রত্যেককে দুই বেলা পরিতৃপ্ত হয়ে খাবার খাওয়ানো বা এর মূল্য দিয়ে দেওয়া। কিংবা প্রত্যেককে জোড়া করে কাপড় দেওয়া অথবা একটি গোলাম আযাদ করা।
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) কসমের কাফফারা হল দশজন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাবার দিবে। যা তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে খাইয়ে থাক। অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করবে কিংবা একজন গোলাম আযাদ করবে। তরে কারো কাছে যদি (এসব জিনিসের মধ্য হতে) কিছুই না থাকে তবে সে তিন দিন রোযা রাখবে।-সূরা মায়েদা : ৮৯; কিতাবুল আছল, ইমাম মুহাম্মাদ ৪/২২০; আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯
শেয়ার লিংক
আমার উপর একটি কসমের কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। শুনেছি, দশ জন ফকিরকে দু’ বেলা তৃপ্তি সহ খাবার খাওয়ালে কাফফারা আদায় হয়। আমি যদি দশজনকে দু’ বেলা খাওয়ানোর পরিবর্তে বিশজনকে এক বেলা খাওয়াই তাহলে কি কাফফারা আদায় হবে?
না, এভাবে কাফফারা আদায় হবে না। প্রত্যেককে দু’ বেলা খাবার খাওয়াতে হবে। এক বেলা খাওয়ানো যথেষ্ট নয়। কাফফারা আদায়ের জন্য শর্ত হল, দশজন মিসকীনকে দু’ বেলা খাবার খাওয়ানো। তদ্রূপ একজন মিসকীনকে দশ দিন দু’ বেলা করে খাবার খাওয়ালেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।
হারেস রাহ. বলেন, হযরত আলী রা. কুরআন মজীদের আয়াত (তরজমা) (কসমের কাফফারা এই যে, দশজন মিসকীনকে মধ্যমমানের খাবার দেবে, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক।) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, দশ জনের প্রত্যেককে দিনে ও রাতে (দু’ বেলা) খাওয়াবে।-ইবনে কাসীর ২/১৪৩; জাসসাস ২/৪৫৭
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা রাহ. বলেন, প্রত্যেক মিসকীনকে দিনে ও রাতে (দু বেলা) খাওয়াবে।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৬১; মাবসূত, সারাখসী ৭/১৫শেয়ার লিংক
আমার এক বন্ধু মান্নত করেছে, তার অমুক কাজ সমাধা হলে সে মাযারে একটি ছাগল দিবে। পরে কাজটি সমাধা হওয়ার পর সে জানতে চাচ্ছে, ঐ মান্নত আদায় করা তার জন্য জরুরি কি না? আর ছাগলটি মাযারে না দিয়ে অন্য কোথাও দেওয়া যাবে কি না?
মাযারের নামে মান্নত করলে মান্নত হয় না। মান্নত একটি ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর নামেই করা যায়। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারো নামে, যেমন পীরের নামে, মাযারের নামে মান্নত করা হারাম। অতএব প্রশ্নোক্ত নিয়ত পূর্ণ করা যাবে না; বরং অবৈধ মান্নত করার জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৫৭৫; সুনানে আবু দাউদ ২/৪৬৯; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৮৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৬৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৩৯; ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৭/৭৭, ২৬/৩০৭শেয়ার লিংক
আমার এক চাচার ৫০ শতক জমি আছে। তিনি ইন্তিকালের আগে বাড়ির পাশের ৪ শতক জমি তার এক সন্তানের জন্য। আর ৩ শতক জমি তার এক মামার জন্য ওসীয়ত করেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার ওয়ারিশরা জানতে চায়, পিতার ঐ ওসীয়ত কার্যকর হবে কি না? তা পূরণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জরুরি কি না?
কোনো ওয়ারিশের (অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পদে যারা এমনিতেই অংশ পায়) জন্য ওসীয়ত করা শরীয়তসম্মত নয়। ওসীয়ত করলেও তা কার্যকর হবে না। অবশ্য যেসব ব্যক্তি ওয়ারিশ নয় তাদের জন্য ওসীয়ত করা যাবে। কেউ করলে তা সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে কার্যকর করা জরুরি হবে। বিশিষ্ট সাহাবী আবু উমামা বাহিলী রা. বলেন, বিদায় হজ্বের ভাষণে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক হকদারকে তার হক দিয়েছেন। অতএব ওয়ারিশের জন্য ওসীয়ত করা যাবে না। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২১২৬; মুসনাদে আহমদ ৪/১৮৬)
অন্য বর্ণনায় আছে, ওয়ারিশের জন্য ওসীয়তের বিধান নেই। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০২২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২০০৮)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচা তার মামার জন্য যে ওসীয়ত করেছেন তা সহীহ হয়েছে, কিন্তু সন্তানের জন্য ওসীয়ত করা শরীয়তসম্মত হয়নি। তাই তা কার্যকর হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, সন্তান এবং অন্যান্য ওয়ারিশের জন্য ওসীয়ত করা যদিও সহীহ নয় তা সত্ত্বেও কেউ যদি করে এবং অন্যান্য সকল ওয়ারিশ যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং তারা সকলে সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঐ ওসীয়তকে কার্যকর করতে চায় তবে তাদের জন্য তা করা জায়েয হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওয়ারিশের জন্য ওসীয়ত করা কার্যকর নয় তবে অন্যান্য ওয়ারিশরা যদি অনুমতি দেয় তবে তা বৈধ হবে। (সুনানে দারাকুতনী ৪/৯৮; সুনানে বায়হাকী ৬/২৬৩)
আরো প্রকাশ থাকে যে, ওয়ারিশের জন্য ওসীয়ত যেহেতু কার্যকর হয় না তাই সন্তানের জন্য ওসীয়তকৃত জমিটি সকল ওয়ারিশের উত্তরাধিকার সম্পত্তি বলে গণ্য হবে।
আর প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী মামার জন্য ওসীয়তকৃত জমিটি যেহেতু ওসীয়তকারীর সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের কম তাই ওসীয়ত অনুযায়ী তা তারই প্রাপ্য হবে।
শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকার মসজিদের অনেক ফলজগাছ আছে এবং এগুলোতে প্রচুর ফল হয়। এখন প্রশ্ন হল, মুসল্লীদের জন্য বিনামূল্যে মসজিদের গাছের ফল খাওয়া বৈধ হবে কি না?
মসজিদের জায়গার গাছের ফলমূল মসজিদের সম্পদ। তাই মুসল্লী বা অন্য কারো জন্য বিনামূল্যে তা খাওয়া বৈধ হবে না। এ সকল ফল বিক্রি করে তার মূল্য মসজিদ ফান্ডে জমা দিতে হবে।
-আলইসআফ ২২; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪-২০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩১০-৩১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৫, ৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩২শেয়ার লিংক
শুনেছি, সূরা তাহরীমের ৮ নং আয়াতে ‘তাওবাতান নাসূহা’-এর نصوح শব্দটি নাকি এক ব্যক্তির নাম এবং ‘তাওবাতান নাসূহা’ দ্বারা ঐ ব্যক্তির তাওবার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। জানতে চাই, এ কথাটি কি সঠিক? আর উক্ত শব্দের মূল অর্থ কী?
আপনার শোনা কথাটি ঠিক নয়। উক্ত আয়াতে نصوح শব্দটি কোনো ব্যক্তির নাম নয়। বরং এটি তার পূর্বের শব্দ توبة এর বিশেষণ (সিফাত)। শব্দটি نصحথেকে উদগত, যার অর্থ খাঁটি করা এবং এ অনুযায়ী ‘তাওবাতান নাসূহা’- এর অর্থ হল বিশুদ্ধ এবং খাঁটি তওবা।
হযরত নুমান বিন বশির রা. বলেন, আমি হযরত উমর রা.কে বলতে শুনেছি, ‘তাওবাতান নাসূহা’ হল কোনো গুনাহ ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় সংকল্প করা এবং এরপর কখনো সে কাজ না করা।-শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৭০৩৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬১২; তাফসীরে তবারী ১২/১৫৯; মাজমূ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১৬/৫৭, ৫৯শেয়ার লিংক
আমি জানতে চাই, الساكت عن الحق شيطان أخرى (সত্য গোপনকারী বোবা শয়তান।) এ বাক্যটি হাদীস কি না? হাদীস হলে কোন কিতাবে আছে এবং সনদের মান কী? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত উক্তিটি হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। আল্লামা কুশাইরী রাহ., ইমাম নববী রাহ. ও আবদুর রউফ
মুনাভী রাহ. একে প্রখ্যাত ফকীহ ও বুযুর্গ আবু আলী আদ্দাক্বাক রাহ. (মৃত্যু ৪০৬ হি.) এর উক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
-আররিসালাতুল কুশাইরিয়া পৃ. ১২০; শরহুন নববী ২/১৯; শাযারাতুয যাহাব ৩/১৮০শেয়ার লিংক
আমরা জানি, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সপ্তম দিন চুল কাটা, আকীকা এবং নাম রাখতে হয়। আমার জানার বিষয় হল, এ তিনটির মধ্যে কোনটি আগে আর কোনটি পরে করতে হয়। এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কোনো নিয়ম শরীয়তে আছে কি?
এই তিনটি কাজের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি নয়। আগে পরে যেভাবেই করা হোক তা আদায় হয়ে যায়। তবে সন্তানের মাথার চুল কাটার আগে আকীকা করা মুস্তাহাব। হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, বাচ্চার মাথার চুল কাটার পূর্বে যবাই করবে। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৩০)
আর আকীকার আগে বা পরে এমনকি সপ্তম দিনের আগেও সন্তানের নাম রাখা যায়। তবে আকীকা করার আগেই নাম রেখে নেওয়া উত্তম।
তাবেয়ী কাতাদাহ রাহ. বলেন, প্রথমে বাচ্চার নাম রাখা হবে। অতপর সপ্তম দিন (পশু) যবাই করা হবে এবং এরপর মাথা মুন্ডানো হবে।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৩৩; কিতাবুল মাজমূ’ ৪/৪০৭, ৮/৪১৫; আলমুফাসসাল ফী আহকামিল আকীকাহ; তুহফাতুল মাওদূদ বিআহকামিল মাওলূদ ৮৬, ৯৯; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৯৭শেয়ার লিংক
রবিউল আউয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা ও যিলকদ এ মাসগুলোতে বিশেষ কোনো রোযা-নামাযের কথা কুরআন-হাদীসে আছে কি?
প্রশ্নোক্ত মাসগুলোতে বিশেষ কোনো নামায বা রোযার কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তবে যিলকদ মাস যেহেতু আশহুরে হরম তথা চারটি সম্মানিত মাসের একটি তাই এ মাসে নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা, আশহূরে হুরুমে নফল রোযা রাখার কথা হাদীসে রয়েছে। একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেন, (হাতের আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে) তুমি হরম মাসে ৩দিন রোযা রাখবে। এরপর তিন দিন রোযা রাখবে না। এরপর আবার তিন দিন রোযা রাখবে। এরপর তিন দিন রাখবে না। (এভাবে শেষ পর্যন্ত) (সূনানে আবু দাউদ ১/৩৩০)
শেয়ার লিংক
আমরা জানি, হাবশার বিখ্যাত বাদশা নাজাশী মুসলমানদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কি তাঁর মুলাকাত হয়েছিল বা তিনি কি সাহাবী বলে গণ্য হবেন? জানতে চাই।
হাবশার বাদশা নাজাশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়নি। তাই তিনি সাহাবী নন; বরং তাবেয়ী।
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৭২৭৬; রাফউ শানিল হাবশান পৃ. ১২০; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪/১১৪শেয়ার লিংক
শুনেছি, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রা.-এর জন্য জান্নাতে একটি বাঁশের ঘর থাকবে। কথাটি কি সত্য? হাদীস শরীফে কি এমন কোনো বর্ণনা আছে? থাকলে সেই বাঁশ দ্বারা কি আমাদের পরিচিত বাঁশই উদ্দেশ্য, নাকি ভিন্ন কিছু? জানিয়ে বাধিত করবেন।
সহীহ হাদীসে আছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার হযরত জিবরীল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই যে খাদীজা রা. আপনার কাছে আসছেন, তাঁর সাথে একটি পাত্র রয়েছে, যাতে তরকারি আছে বা (বর্ণনাকারী বলেন) খাবার অথবা পানীয়। তিনি আপনার কাছে এসে পৌঁছলে তাঁকে তাঁর রবের পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং তাঁকে জান্নাতে একটি বাঁশের ঘরের সুসংবাদ দিবেন, যেখানে কোনো শোরগোল এবং ক্লান্তি থাকবে না।-সহীহ বুখারী ৫৩৯; সহীহ মুসলিম ২/২৮৪
তবারানী শরীফের একটি রেওয়ায়েতে আছে, হযরত ফাতেমা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, ঘরটি কি (দুনিয়ার) এই বাঁশের তৈরি হবে? উত্তরে তিনি বলেছেন, না; তা হবে মুক্তা ও ইয়াকূত পাথরে গাঁথা বাঁশের দ্বারা তৈরি। (তবারানী, কাবীর, ১/২৭৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ৯/৩৫৮)
সুতরাং উক্ত হাদীসে বাঁশ দ্বারা দুনিয়ার সাধারণ বাঁশ উদ্দেশ্য নয়। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. আল্লামা ইবনুত ত্বীনী রাহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, হাদীসে বাঁশ দ্বারা উদ্দেশ্য হল ফাঁপা প্রশস্ত মণি-মুক্তা।-ফাতহুল বারী ৭/১৭১; শরহু মুসলিম, নববী ১৫/২০০শেয়ার লিংক