নাসিম খান - বাঘারপাড়া, যশোর

৬৫৪১. প্রশ্ন

হুজুর, এক্সিডেন্টে আমার বাম হাত ভেঙে যাওয়ায় ডাক্তার পুরো হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। তাই আমি ট্যাপ ছেড়ে ডান হাতের সাহায্যে ওযুর অঙ্গগুলো ধৌত করি আর বাম হাতের ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করি। আজ ভোরে ওযু করার সময় হাতের ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করলেও বেখেয়ালে আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগের ব্যান্ডেজের অংশ মাসেহ করা হয়নি। এরপর ঐ ওযু দিয়েই ফজর নামায পড়েছি।

জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, আপনার উক্ত নামায আদায় হয়েছে। কেননা ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহের ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজের পুরো অংশ মাসেহ করা জরুরি নয়; ব্যান্ডেজের অধিকাংশ স্থান মাসেহ করা হলেই ওযু সহীহ হয়ে যায়।

অতএব, আপনি যেহেতু ব্যান্ডেজের অল্প কিছু অংশ ছাড়া এর অধিকাংশ স্থানই মাসেহ করেছেন, তাই এক্ষেত্রে আপনার ওযু সহীহ হয়েছে এবং ঐ নামাযও সহীহ হয়েছে।

Ñআলমুহীতুর রাযাবী ১/১৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৪৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৮২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম - মুরাদ নগর, কুমিল্লা

৬৫৪২. প্রশ্ন

এক মহিলার প্রতি মাসে হায়েয আসে তিন তারিখ থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত। মোট সাত দিন। কিন্তু এই মাসে অনেক উলট-পালট হয়ে যায়। তিন তারিখে এক দিন হায়েয আসার পরই বন্ধ হয়ে যায়। দশ দিনের ভেতর আর আসেনি। এসেছে বারোতম দিন। তখন তিন দিন এসে আবার বন্ধ হয়ে যায়। বিশ নম্বর দিন আবার আসে। এখনো এভাবে চলছে। আজ বাইশ নম্বর দিন।

জানার বিষয় হল, এই মহিলার কোন্ দিনগুলো হায়েয গণ্য হবে। আর কোন্ দিনগুলো ইসতেহাযা? নাকি সবগুলোই ইসতেহাযা গণ্য হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তিন তারিখে রক্ত দেখার পর এক দিন পরই তা বন্ধ হয়ে গেলেও যেহেতু ১৫ দিনের আগেই ১২তম দিনে আবার রক্ত দেখা গেছে, তাই মাঝের এই দিনগুলোতে রক্ত দেখা না গেলেও প্রথম যেদিন রক্ত দেখেছে সেদিন থেকে আগের অভ্যাস অনুযায়ী মোট সাত দিন অপবিত্রতা তথা হায়েয গণ্য করবে। আর এর পর থেকে বাকি দিনগুলো ইসতেহাযা গণ্য করবে। সুতরাং বাকি দিনগুলোতে স্রাব দেখা দিলেও তখন নামায পড়তে হবে।

Ñকিতাবুল আছল ২/১৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৫৪, ১৭৯; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৯৪; ফাতহুল কাদীর ১/১৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৮

শেয়ার লিংক

আরাফাত হুসাইন - কুমিল্লা

৬৫৪৩. প্রশ্ন

আমরা জানি, নাজাসাতে খফীফা (যেমন, হালাল প্রাণীর পেশাব ইত্যাদি) যদি শরীরের কোনো অঙ্গে লাগে এবং তা ঐ অঙ্গের এক চতুর্থাংশের কম স্থানে লাগে, তবে তা নিয়ে নামায পড়ে ফেললে নামায হয়ে যায়। এখন আমার প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে কি পুরো হাত ও পুরো পা-কে একটি করে অঙ্গ ধরা হবে, নাকি হাতের কব্জি পর্যন্ত এক অঙ্গ এবং কনুই পর্যন্ত ভিন্ন অঙ্গ ধরা হবে? অনুরূপভাবে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত এক অঙ্গ এবং হাঁটু পর্যন্ত ভিন্ন অঙ্গ ধরা হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

নাজাসাতে খফীফার পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে হাতের আঙ্গুল থেকে কাঁধ পর্যন্ত পুরোটা এক অঙ্গ, অনুরূপভাবে পায়ের আঙ্গুল থেকে রানসহ পুরো পা এক অঙ্গ ধরা হবে। সুতরাং হাতে নাজাসাতে খফীফা লাগলে তা যদি পুরো হাতের এক চতুর্থাংশের কম স্থানে লাগে, তবে তা নিয়ে নামায পড়ে ফেললে নামায হয়ে যাবে। পায়ের ক্ষেত্রেও একই বিধান। তবে এক্ষেত্রে নামায হয়ে গেলেও যথাসম্ভব তা ধুয়ে নেবে।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ১/২৩২; রদ্দুল মুহতার ১/৩২২; কিফায়াতুল মুফতী ৩/৪২৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শুভ্র - শাহাবাগ, ঢাকা

৬৫৪৪. প্রশ্ন

কলেজের এক দ্বীনদার বন্ধুর প্রচেষ্টায় আলহামদু লিল্লাহ আমার দ্বীনের বুঝ এসেছে। তার কাছে নামায শিখে এখন নিয়মিত নামায আদায় করছি। কিন্তু এর পূর্বে দ্বীনের বুঝ না থাকায় বালেগ হওয়ার পর থেকে আমার অনেক নামায কাযা হয়ে গেছে। ঠিক মনেও নেই কত ওয়াক্ত কাযা হয়েছে। এখন সেগুলো কাযা করতে চাচ্ছি।

মুহতারামের নিকট জানতে চাই, বিগত জীবনের কাযা (ছুটে যাওয়া) নামাযগুলো আমি কীভাবে আদায় করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি বালেগ হওয়ার পর থেকে কোন্ ওয়াক্তের ফরয নামায এবং বিতির নামায কী পরিমাণ ছুটেছে- প্রথমে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে এর একটি হিসাব বের করবেন। এর পর উক্ত নামাযগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবেন-আমার যিম্মায় থাকা প্রথম ফজর (উদাহরণস্বরূপ) নামাযের কাযা পড়ছিএভাবে প্রত্যেক নামাযের জন্য নিয়ত করে এ কাযা নামাযগুলো পড়তে থাকবেন। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত এ নামাযগুলো কাযা করার কারণে আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনোবাক্যে তওবা-ইস্তেগফার করবেন।

-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৬৯; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ১/৩৪৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪৯৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৪৩

শেয়ার লিংক

মিসবাহ রহমান - দড়াটানা, যশোর

৬৫৪৫. প্রশ্ন

আজ যোহর নামাযে আমি একটি ভুলের কারণে সাহু সিজদা করি। সাহু সিজদা থেকে ওঠার পর তাশাহহুদ না পড়ে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়ে ফেলি। এরপর স্মরণ হলে তাশাহহুদ দরূদ ও দুআ পড়ে নামায শেষ করি। দ্বিতীয়বার সাহু সিজদা করিনি।

প্রশ্ন হল, দ্বিতীয়বার সাহু-সিজদা না করা কি ঠিক হয়েছে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি দ্বিতীয়বার সাহু-সিজদা না করে ঠিকই করেছেন। কেননা এক নামাযে একাধিকবার সাহু-সিজদা করার বিধান নেই। তাই সাহু সিজদা করার পর আবার কোনো ভুল হলেও পুনরায় সাহু সিজদা করতে হবে না।

-ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৩; গায়াতুল বায়ান ২/২৬১; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩৩১; আলবিনায়া ২/৬০৬

শেয়ার লিংক

উম্মে আফনান - উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ

৬৫৪৬. প্রশ্ন

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে কয়েকদিন আগে স্বামীর সাথে আমি ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় এসে উঠি। প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম ১ সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারব। তাই শুরু থেকেই কসর পড়ছিলাম। ঢাকায় অবস্থানের দ্বিতীয় দিন আমার স্বামী হাসপাতাল থেকে রাতে ফিরে এলে কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমাদের আরো দুই সপ্তাহেরও বেশি ঢাকায় থাকতে হবে।এজন্য সেদিন যোহর থেকেই উনি পূর্ণ নামায পড়ছিলেন। এদিকে আমি বিষয়টি না জানার কারণে সেদিন যোহর, আসরও কসর পড়েছি। মুহতারাম হুজুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় এ দুই ওয়াক্তে (যোহর ও আসরে) আদায়কৃত আমার কসর নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি এখন এ দুই ওয়াক্তের নামায পূর্ণ চার রাকাত করে কাযা করতে হবে? আশা করি উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু আপনার স্বামীর ঢাকাতে দুই সপ্তাহের বেশি অবস্থানের নিয়ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, তাই উক্ত দুই ওয়াক্তের নামায আপনার কসর পড়া সহীহ হয়েছে। সুতরাং তা পুনরায় পড়তে হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭৬; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৪

শেয়ার লিংক

রাবেয়া খাতুন - টাঙ্গাইল

৬৫৪৭. প্রশ্ন

গতকাল আমার এশার ফরয নামায পড়া অবস্থায় মাসিক শুরু হয়। আমার প্রশ্ন হল, মাসিক শেষে কি আমাকে ঐ নামাযের কাযা পড়তে হবে?

উত্তর

না, আপনাকে ঐ এশার নামাযের কাযা আদায় করতে হবে না। তবে নফল নামাযের বিধান এ থেকে ভিন্ন। নফল নামায শুরু করার পর মাসিক শুরু হয়ে গেলে পরবর্তীতে তা কাযা পড়ে নিতে হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩২; আলবাহরুর রায়েক ১/২০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯১

শেয়ার লিংক

হেদায়েতুল্লাহ - মানিকগঞ্জ

৬৫৪৮. প্রশ্ন

আমাদের বাড়ি থেকে ছোট বোনের বাড়ি যেতে দুটি রাস্তা। একটি প্রধান সড়ক হয়ে, যা ৮০ কিলোমিটারের। অন্যটি সংক্ষিপ্ত রাস্তা, ৬৫ কিলোমিটারের। এমতাবস্থায় আমরা বোনের বাড়ি গেলে নামাযে কসর করব কি না জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বোনের বাড়ি যে রাস্তা দিয়ে যাবেন সে অনুযায়ী হুকুম হবে। অর্থাৎ প্রধান সড়ক দিয়ে গেলে তা ৭৮ কিলোমিটারের বেশি হওয়ার কারণে তখন সেখানে কসর পড়বেন। আর ৬৫ কিলোমিটারের রাস্তায় সেখানে গেলে তখন মুকিম থাকবেন। অতএব তখন পূর্ণ নামাযই পড়বেন।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৩

শেয়ার লিংক

আরশাদ - উত্তরা, ঢাকা

৬৫৪৯. প্রশ্ন

আমাদের এলাকাতে একটি মসজিদ পুনঃনির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে মসজিদের কাজ চলমান। পাশে অস্থায়ীভাবে একটি জায়গা এলাকার লোকেরা মিলে নির্ধারণ করেছে, যেখানে অস্থায়ীভাবে নামাযের জন্য একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। মুসল্লিরা জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায এখানেই আদায় করেন।

রমযানের শেষ দশকে এলাকার কিছু লোক এ মসজিদে নিয়মিত ইতিকাফ করতেন। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ বছর উক্ত অস্থায়ী নামায-ঘরে ইতিকাফ করা যাবে কি না? অবশ্য এলাকাতে আরো কয়েকটি মসজিদ আছে। তবে আমাদের অত্র মসজিদের মুসল্লিদের জন্য যেহেতু এটি কাছে, তাই শরীয়তে অনুমোদন থাকলে তারা এখানেই ইতিকাফ আদায় করতে ইচ্ছুক। অন্যথায় ভিন্ন মসজিদেই ইতিকাফ আদায় করবে। দয়া করে বিষয়টি জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

ইতিকাফের জন্য মসজিদ শর্ত। আর অস্থায়ী নামাযের জায়গা বা ঘর মসজিদ নয়। তাই উক্ত অস্থায়ী নামায ঘরে ইতিকাফ করা সহীহ হবে না। নির্মাণাধীন কোনো মসজিদে ইতিকাফের ব্যবস্থা না করা গেলে ওজরের কারণে তা দূষণীয় বা গুনাহের কাজ বলে বিবেচিত হবে না। এই মসজিদের মুসল্লিগণ চাইলে অন্য কোনো মসজিদে ইতিকাফ করবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১৫; খিযানাতুল আকমাল ১/৩০৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৫৬

শেয়ার লিংক

মোছাম্মাদ ফিরোজা আক্তার - মিরপুর, ঢাকা

৬৫৫০. প্রশ্ন

আমি একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করি। আমার স্বামী একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ইন্তেকাল করেন। আমার বিবাহিতা এক মেয়ে ও দুই ছেলে। ছেলে দুজন অপ্রাপ্ত বষয়স্ক। একজন ১১ বছর এবং অন্যজন ৮ বছর বয়সীএ দুই ছেলের লেখাপড়াসহ যাবতীয় ব্যয়ভার আমিই বহন করে থাকি।

মুহতারাম হুজুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল, এ দুই বাচ্চার সদকাতুল ফিতর কি আমার ওপর আবশ্যক?

উল্লেখ্য, আমার বাচ্চাদ্বয় নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়।

উত্তর

আপনার বাচ্চাদের সদকাতুল ফিতর আদায় করা আপনার ওপর ওয়াজিব নয়। কেননা নাবালেগ সন্তানের সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় বাবার ওপর; মায়ের ওপর নয়।

-কিতাবুল আছল ২/১৭৭; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৫৭০; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬১

শেয়ার লিংক

নাসির খান - যশোর

৬৫৫১. প্রশ্ন

শুনেছি, হজ্বের সায়ী তাওয়াফে যিয়ারতের পরে না করে আগেও করা যায়। অনেকে মিনায় রওয়ানা হওয়ার আগমুহূর্তে সায়ী করে নেয়। যার কারণে এখন সে সময়ও ভিড় থাকে।

জানার বিষয় হল, আমি যদি হজ্বের ইহরাম না করেই মিনায় রওনা হওয়ার দু-একদিন আগে নফল তাওয়াফের পরে সায়ী করে ফেলি, তাতে কি কোনো সমস্যা আছে?

উত্তর

হজ্বের ইহরাম করার আগে হজ্বের সায়ী করলে তা আদায় হবে না। কেননা হজ্বের সায়ী তাওয়াফে যিয়ারতের আগে করার সুযোগ থাকলেও তা সহীহ হওয়ার জন্য এর আগে হজ্বের ইহরাম করা শর্ত। হজ্বের ইহরাম করার আগেই হজ্বের সায়ী করলে তা আদায় হবে না।

এক্ষেত্রে দ্বিতীয় আরেকটি শর্ত হল, ইহরাম করার পর সায়ীর আগে একটি নফল তাওয়াফও করতে হবে। নতুবা সায়ী আদায় হবে না।

উল্লেখ্য, তাওয়াফে যিয়ারতের আগে হজ্বের সায়ী করার সুযোগ থাকলেও তাওয়াফে যিয়ারতের পরে আদায় করাই উত্তম।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৫৩২; মানাসিকে মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ১৭৪; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৩২; রদ্দুল মুহতার ২/৫০০, ৫৩৮

শেয়ার লিংক

মুহসিন - ফেনী

৬৫৫২. প্রশ্ন

আমি আমার এক মামির দুধ পান করেছি। তিনি আমার দুধ মা। কখনো ঐ দুধ মায়ের আপন বোন মামার বাড়িতে আসেন। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, দুধ মায়ের আপন বোনের সাথে কি দেখা-সাক্ষাৎ করতে পরব? জানিয়ে বাধিত করবেন

উত্তর

হাঁ, আপনি তার সাথে দেখা করতে পারবেন। কেননা দুধ মায়ের বোন মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাই তার সাথে দেখা করা জায়েয।

-কিতাবুল আছল ৪/৩৫৯; তুহফাতুল ফুকাহা ২/২৩৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৮

শেয়ার লিংক

শরীফ হাসান - খুলনা

৬৫৫৩. প্রশ্ন

হুজুর, আমার স্ত্রী মাঝে মাঝেই সামান্য বিষয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয় এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও খারাপ আচরণ করে। তাকে কিছু বললে সে বলে, ভালো না লাগলে আমাকে তালাক দিয়ে দিতে পারো। একদিন ঝগড়ার সময় এরকম তালাকের কথা বললে আমি তাকে বলেছি, তোমাকে তালাক দিয়ে দিলাম। একথা বলার পরই সে কান্নাকাটি শুরু করে এবং বলে, সে ভালো হয়ে চলবে আর খারাপ আচরণ করবে না।

আমার জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে?

উল্লেখ্য, আমি বায়েন তালাকের নিয়তে তালাক দিয়েছি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বায়েন তালাকের নিয়তে ঐ কথা বললেও এর দ্বারা আপনার স্ত্রীর ওপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। বায়েন তালাক পতিত হয়নি। কেননা এটি রজয়ী তালাকের শব্দ। বায়েন তালাকের শব্দ নয়। তাই এক্ষত্রে বায়েনের নিয়ত করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না; বরং এর দ্বারা তালাকে রাজয়ীই পতিত হবে।

সুতরাং এক্ষেত্রে চাইলে আপনি তাকে ইদ্দতের মধ্যে বিবাহ ছাড়াই ফিরিয়ে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে মৌখিকভাবে আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিলামÑ একথা বললেই আপনাদের সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে যাবে। তাছাড়া ইদ্দতের ভেতর তার সাথে স্বামী-স্ত্রীসূলভ কোনো আচরণ হলেও আপনাদের বিবাহ পুনর্বহাল হয়ে যাবে। কিন্তু ইদ্দতের ভেতর কোনোভাবেই যদি তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নেওয়া না হয়, তাহলে ইদ্দত শেষে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তাকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে বিবাহ নবায়ন করে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, মহিলাটিকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া হোক বা ইদ্দত শেষে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেওয়া হোক, উভয় ক্ষেত্রে আপনি কেবল দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে দুই তালাক দিলেই পূর্বের এক তালাকসহ তিন তালাক হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে এবং আপনারা একে অপরের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে পুনরায় তাকে বিবাহ করারও সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে সতর্কতা কাম্য।

আরো উল্লেখ্য, তালাক বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। বিনা কারণে তালাক দেওয়া কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায় ও গুনাহের কাজ। ক্ষেত্রবিশেষে তা স্ত্রী-সন্তানের ওপর জুলুমও বটে। তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ১৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৮৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৩৯; ফাতহুল কাদীর ৪/১৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৩০৬

শেয়ার লিংক

হাবীবুর রহমান - খুলনা

৬৫৫৪. প্রশ্ন

আমার একমাত্র পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করার সময় তার মা ইন্তেকাল করে। বাচ্চা এখন আমাদের ঘরেই। আমার এক বোন (যে বাচ্চার মামিও হয়) চাচ্ছে, সে-ই তাকে লালনপালন করবে। অন্যদিকে বাচ্চার এক বিধবা খালা তাকে নিতে চাচ্ছে। তার স্বামী মারা গিয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। তো আমি নিশ্চিত যে, উভয়ে সুন্দরভাবে লালনপালন করবে। কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে কে বেশি হকদার? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন। উল্লেখ্য, বাচ্চার কোনো বোন নেই এবং দাদি  নানিও দুনিয়াতে নেই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশুটির খালাই তাকে লালনপালন করার অধিক হকদার। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে শিশুর লালনপালনের ক্ষেত্রে ফুফুর চেয়ে খালা অগ্রগণ্য। অবশ্য শিশুটির খালা যদি তাকে লালনপালনের হক ছেড়ে দেয় বা শিশুর মাহরাম নয় এমন কারো সাথে তার বিবাহ হয়, সেক্ষেত্রে শিশুর ফুফু বিবাহিত হলেও ফুফু যেহেতু তার মাহরামের অর্থাৎ মামার স্ত্রী, তাই সেক্ষেত্রে খালার পরিবর্তে এই ফুফু তাকে লালনপালনের হকদার হবে।

-কিতাবুল আছল ১০/৩৫২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৫/৩২১, ৩২৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪৫৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৬৩

শেয়ার লিংক

জাবের - নোয়াখালী

৬৫৫৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক নারীকে তার স্বামী গর্ভাবস্থায় তালাক প্রদান করে। ঐ সময়ে সে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তালাকের পর ঐ নারী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তার গর্ভস্থ শিশুটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার গর্ভপাত করানো হয়। ততদিনে গর্ভের (প্রায় পাঁচ মাসের) শিশুটির হাত পায়ের কিছুটা আকৃতি চলে এসেছে। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় ঐ মহিলার ইদ্দতের কী হুকুম? তার ইদ্দত কীভাবে শেষ হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তানের যেহেতু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকৃতি চলে এসেছিল। তাই এই গর্ভপাতের দ্বারাই মহিলাটির ইদ্দত শেষ হয়ে গেছে। তাবেয়ী হারেছ রাহ.-কে গর্ভবতী তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা নারীর ইদ্দত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, যার গর্ভস্থ সন্তান পূর্ণ আকৃতি লাভের আগেই গর্ভপাত হয়ে গেছে। উত্তরে তিনি বলেন-

إذَا اسْتَبَانَ مِنْهُ شَيْءٌ حَلَّتْ لِلزَّوْجِ.

যদি গর্ভস্থ সন্তানের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পেয়ে থাকে, তাহলে (এর দ্বারা মহিলাটির ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যাবে এবং এর পরই) অন্য স্বামীর সাথে তার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯৬২৩)

-কিতাবুল আছল ৪/৪১৫; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১০; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৫১১

শেয়ার লিংক

রজিবুল হক - যশোর

৬৫৫৬. প্রশ্ন

হুজুর, আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে একটি বিষয়ে মনোমালিন্য হয়। এরপর তাকে একদিন আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। নাস্তা দেওয়ার পর সে খেতে অস্বীকৃতি জানায়। আমি অনেক জোরাজুরি করি। একপর্যায়ে বলি, আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, তুই নাস্তা খা। কিন্তু এর পরও সে না খেয়ে চলে যায়।

জানার বিষয় হল, সে না খাওয়ার কারণে কি আমাকে কসমভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে?

 

উত্তর

আপনার প্রশ্নোক্ত কথার দ্বারা কসম সংঘটিত হয়নি। তাই ঐ কথা বলার পর সে নাস্তা না খেলেও আপনাকে এর কাফফারা দিতে হবে না। তবে এভাবে কাউকে আল্লাহর কসম দিয়ে কোনো কাজ করতে বলা অনুচিত। এমনটি বলা থেকে বিরত থাকবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৮৪৮; তাকরীরাতে রাফেয়ী ৩/৩৬

শেয়ার লিংক

ফয়সাল - ঢাকা

৬৫৫৭. প্রশ্ন

হুজুর, আমি ধুমপান করতাম। কোনোভাবে তা ছাড়তে পারছিলাম না। একবার কসম করে বলি, আমি আর ধূমপান করব না, কিন্তু কিছুদিন পর আবার ধূমাপন শুরু করি এবং এরপর চার দিন ধূমপান করে ফেলি। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমাকে কয়টি কাফফারা দিতে হবে?

উত্তর

উক্ত কসমের পর কয়েকবার ধূমপান করলেও এক্ষেত্রে আপনার ওপর একটি কাফফারাই ওয়াজিব হয়েছে। একাধিকবার ধূমপান করার কারণে একাধিক কাফফারা আবশ্যক হয়নি।

আর কসমের কাফফারা হল, দশজন মিসকিনকে দুইবেলা খাওয়ানো অথবা তাদের প্রত্যেককে একজোড়া কাপড় দেওয়া। কিংবা এগুলোর মূল্য দেওয়া। এর সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোযা রাখা।

উল্লেখ্য, ধূমপান এমনিতেই নাজায়েয। এটি স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পাশাপাশি অন্যের জন্য কষ্টের কারণও। তাই তা থেকে বিরত থাকা এমনিতেই জরুরি। উপরন্তু ধূমপান না করার ব্যাপারে কসম করার পর তা ভঙ্গ করা অধিক অন্যায় কাজ হয়েছে। এজন্য তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। এবং সামনে তা আর কিছুতেই খাবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ৪/৩৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৫, ৮৪৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৩৮৫

শেয়ার লিংক

কাসেম - চট্টগ্রাম

৬৫৫৮. প্রশ্ন

আমরা কয়েজন বন্ধু আমাদের আরেক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলাম। খাবারের দস্তরখানে এক বন্ধু আমার প্লেটে গরুর গোশত তুলে দেওয়ার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি রকমের জোর করলে আমি বলে ফেলি, ‘আল্লাহর কসম, আমি গোশত খাব না।

আমার উক্ত কসম দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, ঐ সময় আমাকে জোর করে যে গোশত খাওয়াতে চাচ্ছিল তার ব্যাপারে কসম করা। কিন্তু আমার ব্যবহৃত বাক্যটি যেহেতু ব্যাপক ধরনের ছিল, তাই আমার সংশয় হচ্ছে যে, আগামীতে যে কোনো সময় গোশত খেলেও কসম ভঙ্গ হবে কি না? দয়া করে বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনামতে আল্লাহর কসম, আমি গোশত খাব না- কথাটি ব্যাপক শব্দে বললেও এর দ্বারা যেহেতু আপনার উদ্দেশ্য ছিল, কেবল সে সময়ই গরুর গোশত না খাওয়া। পরবর্তীতে গরুর গোশত খাবেন না বা অন্য কোনো গোশত খাবেন না- এমন উদ্দেশ্য ছিল না। তাই পরবর্তীতে গোশত খেলে এর দ্বারা আপনার কসম ভঙ্গ হবে না।

-কিতাবুল আছল ২/৩১৬; তুহফাতুল ফুকাহা ২/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৮৪

শেয়ার লিংক

নাহীদ - বরিশাল

৬৫৫৯. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ৭ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। মসজিদের ক্যাশিয়ার সাহেব কাজে প্রচুর সময় দেওয়ায় তার ব্যবসায়িক কাজে কিছুটা ঘাটতি হচ্ছে। এজন্য সে এ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে অন্য কারো ওপর অর্পণ করতে চাচ্ছে। কিন্তু তার মতো এমন বিশ্বস্ত ও যোগ্য লোক আরেকজন খুুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এজন্য মুতাওয়াল্লীসহ মসজিদ কমিটি চাচ্ছে, ক্যাশিয়ারের জন্য মসজিদ ফান্ড হতে কিছু বেতন ধার্য করে দিতে। যাতে তার ব্যবসায়িক কাজের ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি মসজিদের কাজে আরো সময় দিতে পারেন।

মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে আমরা জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমাদের এ কাজটি কেমন? তা জায়েয হবে কি? আশা করি, জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদের নির্মাণ কাজের তদারকির জন্য ক্যাশিয়ার সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া এবং এজন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক ধার্য করা জায়েয হবে। আর তার জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হলে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যও নির্ধারিত করে দিতে হবে।

-ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৬; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৫০; আলইসআফ, পৃ. ১৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হানিফ - গেণ্ডারিয়া, ঢাকা

৬৫৬০. প্রশ্ন

আমার পরিচিত এক লোক ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করতে চায়। ব্যবসায়ীদের সাথে তার তেমন জানাশোনা নেই। এলাকায় আমার পরিচিতি আছে। কোনো কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমার বিনিয়োগও আছে। একদিন তিনি আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বলেন যে, এই টাকা আপনি ব্যবসায় খাটান। আপনি নিজেও তা দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। আবার চাইলে অন্য ব্যবসায়ীকেও দিতে পারেন। আমাকে লাভের ৫০% দেবেন। পরে আমি সেই টাকা একজন ব্যবসায়ীকে দিয়েছি এই চুক্তিতে যে, ব্যবসায় লাভ হলে ব্যবসায়ী ৪০% নেবে এবং বাকিটা আমাকে দেবে।

মুফতী সাহেবের সমীপে আমার প্রশ্ন হল, আমাদের চুক্তিটি কি সহীহ হয়েছে? সহীহ হয়ে থাকলে লাভ-লোকসানের বণ্টন কীভাবে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, আপনাদের প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ঐ ব্যক্তি টাকা দেওয়ার সময় আপনাকে এই অনুমতি দিয়েছে যে, এ টাকা দিয়ে আপনি নিজে ব্যবসা না করে আপনি চাইলে অন্য ব্যবসায়ীকেও সে টাকা ব্যবসার জন্য দিতে পারেন, তাই অন্য ব্যবসায়ীর সাথে আপনার চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। আর এক্ষেত্রে লাভ বণ্টনের নিয়ম হল, পুঁজিদাতা তার শর্ত মোতাবেক ৫০% পাবে, আর উক্ত ব্যবসায়ী ৪০% পাবে, আর আপনি বাকি ১০% পাবেন। আর ব্যবসা পরিচালনাকারীর কোনো ত্রুটি ছাড়া ব্যবসায় লোকসান হলে পুরো লোকসান পুঁজিদাতাকেই বহন করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/১৪৬, ২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৯, ৬৫৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আতিকুল্লাহ - কুড়িগ্রাম

৬৫৬১. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে গাভী বর্গা দেওয়ার প্রচলন আছে। সাধারণত নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে গাভী বর্গা দেওয়া হয়, এক ব্যক্তি গাভী কিনে অন্যজনকে এই শর্তে পালতে দেয় যে, উভয়পক্ষ সমান-সমানভাবে গাভীর দুধ ও বাছুরের অংশীদার থাকবে। তবে গাভীর খাদ্য ও চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ বহন করবে লালন-পালনকারী। গাভীর মালিক কোনো খরচ দেবে না। জানতে চাই, উক্ত পদ্ধতিতে গাভী বর্গা দেওয়া কি জায়েয আছে?

উত্তর

দুধ ও বাছুরে লালন পালনকারীর অংশ থাকবে- এ শর্তে গাভী পালতে দেওয়া জায়েয নয়। সুতরাং তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। সঠিক পন্থায় গাভী লালনপালন করতে চাইলে পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে করতে হবে। অর্থাৎ চুক্তির সময় লালনপালনকারীর জন্য মাসিক বা বাৎসরিক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে হবে। আর লালন পালনের যাবতীয় খরচ মালিককেই দিতে হবে। এক্ষেত্রে দুধ ও বাছুরসহ সবই এককভাবে গাভীর মালিকেরই থাকবে। এতে লালনপালনকারীর কোনো অংশ থাকবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২৩/১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/১৪০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৫/৩৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৭

শেয়ার লিংক

ফারজানা - বরিশাল

৬৫৬২. প্রশ্ন

গ্রামের মহিলারা মাথা আঁচড়ানোর পর চিরুনির সাথে চলে আসা চুলগুলো এক জায়গায় জমা করে রাখে। যখন গ্রামে ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসে। তখন কোনো কিছু ক্রয় করে টাকার পরিবর্তে বিনিময় হিসাবে ঐ ছেঁড়া চুলগুলো দেয়। অনেক ফেরিওয়ালা তা গ্রহণ করে। কিন্তু বিষয়টা আমার কাছে কেমন কেমন মনে হয়।

উত্তর

মানুষের চুল ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। কেননা, মানুষের চুল ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনিময়যোগ্য নয়। এছাড়া নারীদের কর্তিত চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ফেরিওয়ালাদের তা দেখা গুনাহ। এসব চুল মাটিতে দাফন করে দিবে।

-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৩২৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩৩৪; ফাতহুল কাদীর ৬/৬৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭১, ৪০৫

শেয়ার লিংক

আবদুস সালাম শেখ - সালথা, ফরিদপুর

৬৫৬৩. প্রশ্ন

আমার এক প্রতিবেশী কৃষি কাজ করে। তার খেতে অনেক পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। গত দুই মাস আগে আমি তাকে সত্তর হাজার টাকা দিই যে, তিন মাস পর সে আমাকে আশি মন পেঁয়াজ দেবে। কিন্তু আমি প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ হার্টের সমস্যায় ভুগছি। চিকিৎসার জন্য আমার বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। তাই আমার এক চাচাতো ভাই থেকে আমি এই শর্তে চল্লিশ হাজার টাকা ঋণ নিই যে, ঐ কৃষক আমাকে যে আশি মন পেঁয়াজ দেবে চাচাতো ভাই তা থেকে ঋণের বিনিময়ে পঞ্চাশ মন পেঁয়াজ নিবে। ক্যাশ টাকা নিবে না।

মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, চাচাতো ভাইয়ের সাথে আমার উক্ত চুক্তিটি কি সহীহ হয়েছে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

আপনার চাচাতো ভাইয়ের সাথে আপনার উক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়নি। কেননা আপনাদের এ লেনদেনটি মূলত কৃষক থেকে অগ্রিম চুক্তিতে ক্রয়কৃত পেঁয়াজের বিক্রি চুক্তি। আর পণ্যের আগাম ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে ক্রয়কৃত পণ্য হস্তগত করার পূর্বে তা অন্যত্র বিক্রি করা জায়েয নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হল চল্লিশ হাজার টাকাই চাচাতো ভাইকে ফেরত দেওয়া।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৬৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৩/১৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৪৩; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৮

শেয়ার লিংক

মিযানুর রহমান - সিলেট

৬৫৬৪. প্রশ্ন

আমার এক বন্ধু আমেরিকা প্রবাসী। গত ২০১৭ সালে সে সেখানকার এক খ্রিস্টান মেয়ের সাথে হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এবং এই হারাম সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের একটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। আগে থেকেই আমার বন্ধু মেয়েটিকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিল। অবশেষে উক্ত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার তিন মাস পর মেয়েটি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এরপর আমার বন্ধু তাকে শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে বিবাহ করে নেয়। বিবাহের পর তাদের আরো দুটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার বন্ধুর মৃত্যুর পর এই তিন মেয়ে কোন্ হারে তার থেকে সম্পদ পাবে? এর সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে বিবাহের পূর্বেই যে কন্যা সন্তানটি জন্মগ্রহণ করেছে, শরীয়তের দৃষ্টিতে সে আপনার বন্ধুর ওয়ারিশ নয়। তার থেকে সে মীরাসের কোনো অংশ পাবে না। অবশ্য এই মেয়েটি তার মায়ের সম্পদ থেকে মীরাসের অংশ পাবে। আর ঐ ব্যক্তির পরবর্তী দুই মেয়ে, যারা তার বৈধ সন্তান, তার থেকে তারা মীরাসের কতটুকু অংশ পাবেÑ এ মাসআলা ঐ ব্যক্তির ইন্তেকালের সময় তার ওয়ারিশ কে কে জীবিত থাকবেÑ সেই বিবরণের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং তার ইন্তেকালের পর ওয়ারিশগণ কে কতটুকু অংশ পাবেÑ সেটা তখনকার ওয়ারিশদের বিবরণ পেশ করে জেনে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৮/১০৬; আলমুহীতুর রাযাবী ৯/৭২২; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩৬৪; তাকমিলাতুল বাহরির রায়েক ৮/৫০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/১২৭

শেয়ার লিংক

রাজিয়া সুলতানা - রাজশাহী

৬৫৬৫. প্রশ্ন

সন্তান প্রসবের কারণে কোনো মহিলা মারা গেলে তার জন্য কোনো সওয়াবের ঘোষণা আছে কি? দয়া করে জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তর

সন্তান প্রসবের কারণে কোনো স্ত্রীলোক মারা গেলে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। হাদীস শরীফে এসেছে, সফওয়ান ইবনে উমাইয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

الطَّاعُونُ شَهَادَةٌ، وَالْغَرَقُ شَهَادَةٌ، وَالْبَطْنُ شَهَادَةٌ، وَالنُّفَسَاءُ شَهَادَةٌ.

প্লেগে যে মারা যায়, সে শহীদ। পানিতে ডুবে যে মারা যায়, সে শহীদ। পেটের পীড়ায় যে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ এবং যে স্ত্রীলোক সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যায়, সেও শহীদ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৩০৭)

ইমাম ইবনে হাজার রাহ. বলেন-

 قال ابن التين: هذه كلها ميتات فيها شدة، تفضل الله على أمة محمد صلى الله عليه وسلم بأن جعلها تمحيصا لذنوبهم وزيادة في أجورهم، يبلغهم بها مراتب الشهداء.

ইবনুত তীন রাহ. বলেন, এগুলো অনেক কষ্টের মৃত্যু। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর অনুগ্রহ করে এগুলোকে তাদের জন্য গুনাহ মাফ ও সওয়াব বৃদ্ধির মাধ্যম বনিয়েছেন এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শহীদের মর্যাদায় উন্নীত করবেন। (ফাতহুল বারী ৬/৫২)

উল্লেখ্য যে, তারা শুধু সওয়াব ও মর্যাদার দিক থেকে শহীদের মতো। তাদের গোসল ও কাফন সাধারণ মৃতদের মতোই হবে।

-ফাতহুল কাদীর ২/১০৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫২

শেয়ার লিংক

রাকীবুল ইসলাম - শিবচর, মাদারীপুর

৬৫৬৬. প্রশ্ন

প্রতিবেশী এক হিন্দু ছেলে এক্সিডেন্টে মারা গেছে। তার এ মৃত্যুতে তার বাবাকে সমবেদনা জানানো যাবে? জানানো গেলে কী বলে জানাব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

অমুসলিমের মৃত্যুতে তার পরিবারকে সমবেদনা জানানো জায়েয আছে। আপনিও প্রতিবেশী হিন্দু ছেলেটির মৃত্যুতে তার শোকার্ত পিতাকে সমবেদনা জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাকে সান্ত্বনা দেবেন ও ধৈর্য ধারণের কথা বলবেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৯৯৪৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, ইসবীজাবী ৪/২২৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭০; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮

শেয়ার লিংক

আবদুল কাদের - নোয়াখালী

৬৫৬৭. প্রশ্ন

জন্ম ও মৃত্যু তারিখ পালন বা এ তারিখে বিশেষ দুআর আয়োজন ইসলামী শরীয়ত মতে কেমন? বিভিন্ন মসজিদে ইমাম সাহেবকে সরকারি ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের জন্ম ও মৃত্যু তারিখে আয়োজন-ভিত্তিক দুআ করার জন্য বলা হয়। সরকার নিয়ন্ত্রিত মসজিদগুলোতে তো করতেই হয় এ ব্যাপারে ইমামদের করণীয় কি? বিশুদ্ধ প্রমাণসহ এর শরয়ী সমাধান জানানোর জন্য আরয করছি, জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

উত্তর

জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা এবং একে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ইসলামের শিক্ষা নয়। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। এসকল অহেতুক কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা আবশ্যক। শরীয়তে জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবসের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। বিশেষভাবে এই দিনে কোনো ধরনের দুআ বা আমল-ইবাদতের বিধান নেই।

আর মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করা, ঈসালে সাওয়াব করা শরীয়ত স্বীকৃত। তবে এর জন্য কোনো দিনক্ষণ নির্দিষ্ট নেই। বরং যে কোনো দিন যে কোনো সময় তাদের জন্য দুআ করা, নফল নামায, দান-সদকা, ইত্যাদির মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করা যেতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে এমনটি করলে বিশেষ সওয়াব পাওয়া যাবেÑ এমন নয়। সালাফে সালেহীনের যুগেও নির্দিষ্ট দিনে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ-ঈসালে সওয়াবের আয়োজনের প্রমাণ নেই। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, মৃতের সন্তান-আত্মীয়স্বজন সব সময়ই মরহুমদের মাগফিরাতের দুআ করবে, সাধ্যমতো ঈসালে সওয়াব করবে। বছরে কেবল নির্দিষ্ট এক-দুদিন এসব রসমী দুআ, ঈসালে সওয়াবের আয়োজন করে সারা বছর এ থেকে গাফেল থাকা- এটা যেমন ইসলামের শিক্ষা নয়; তেমনি তা আদর্শ সন্তানেরও আচরণ হতে পারে না। সুতরাং জন্মদিবস, মৃত্যু দিবস পালন বা বিশেষভাবে এ দিনগুলোতে ঈসালে সওয়াবের আয়োজন থেকে বিরত থাকা জরুরি।

কোনো মুসল্লি মসজিদে এজাতীয় আয়োজন করতে চাইলে ইমাম সাহেব প্রজ্ঞা ও হেকমতের সাথে বিষয়টির শরয়ী দিকটা তাদের বুঝিয়ে বলবেন। এবং এসব রসমী আয়োজনের পরিবর্তে মৃত ব্যক্তির জন্য সুন্নাহসম্মত ঈসালে সওয়াবের প্রতি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবেন। এতদসত্ত্বেও কেউ এমন আয়োজন করলে বা এসব দিনে ইমাম সাহেবকে কারো জন্য দুআ করতে বললে সেক্ষেত্রে ফিতনা-ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা থেকে বাঁচতে ইমাম সাহেব সাধারণভাবে (একজন মুমিনের মাগফিরাতের নিয়তে, বিশেষ দিবস হিসেবে নয়) ঐ মৃত ব্যক্তিসহ সকল মুসলমানের জন্য দুআ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে দুআ-মজলিসের আগে বা পরে মূল শরয়ী বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করবেন।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭; শরহে মুসলিম, ননবী ১২/১৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৯; আলবায়িছ আলা ইনকারিল বিদায়ি ওয়াল হাওয়াদিছ, পৃ. ১০৭; আলইতিসাম ১/৫৩, ৪৮৬

শেয়ার লিংক

সিয়াম - মোমেনশাহী

৬৫৬৮. প্রশ্ন

হুজুর, আমি বিদেশে চাকরি করি। কয়েক মাস আগের কথা। একদিন আমার এক দূর সম্পর্কের চাচা আমার কাছে ফোন করে বলেন, তোমাদের বাড়ির পাশের জায়গাটা মাত্র বিশ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। রেজিস্ট্রি করতে খরচ পড়বে দেড় লাখ টাকা। তুমি কিনলে বল, আমি তোমার জন্য কিনে রেজিস্ট্রি করে রাখি। আমি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে জায়গাটা কেনার জন্য রাজি হয়ে যাই এবং আমার জন্য ঐ জায়গাটি তাকে কিনতে বলি। রেজিস্ট্রি খরচসহ ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু আমার চাচা ঐ বিশ লাখ টাকা দিয়ে জায়গাটা কিনে নিজের ছোট ছেলের নামে রেজিস্ট্রি করে ফেলেন। সেখানে নিজের ছেলেকে পরিবারসহ থাকার জন্য একটি টিনশেড ঘর করে দেন। বিষয়টা জানার পর আমি আমার চাচাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার সাথে কথা-বার্তা বলার পর নাকি তার ছোট ছেলের কথা চিন্তা করে জায়গাটা কেনার প্রতি তার আগ্রহ হয়েছে। তাই তিনি জায়গাটা কিনে তার ছোট ছেলের নামে রেজিস্ট্রি করে ফেলেছেন। এখন তিনি চাচ্ছেন, আমার টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে দায়মুক্ত হয়ে যেতে; কিন্তু আমি বিষয়টা মেনে নিতে পারছি না। এবং তিনিও জমিটি ছাড়তে চাচ্ছেন না। তবে ঝগড়া-বিবাদ এড়ানোর জন্য আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি যে, কোনো মুফতী সাহেবের কাছে ফতোয়া চাওয়া হবে। তিনি যে ফতোয়া দেবেন, দুই পক্ষ তা মেনে নেবে। এখন মুফতী সাহেবের কাছে আবেদন হল, এ বিষয়ে সঠিক ফতোয়া দিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু নির্দিষ্ট ঐ জমিটি আপনার নামে কেনার জন্য আপনার চাচাকে ক্রয়প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন। উপরন্তু তিনি উক্ত জমিটি আপনার জন্য কিনে রেজিস্ট্রি করার কথা বলে আপনার থেকে টাকাও নিয়েছেন, তাই পরবর্তীতে জায়গাটি কিনে তার ছেলের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। তার নামে রেজিস্ট্রি করে দিলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে এ জমির মালিক আপনিই। এখন যদি আপনি ঐ জমি তার জন্য ছেড়ে দিতে সম্মত না হন, তাহলে আপনার চাচার কর্তব্য হল, নিজ খরচে আপনার নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করে আপনাকে বুঝিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে উক্ত জমির উপর নির্মিত টিনশেড ঘরটি যদি আপনি নিতে চান, তাহলে তাদের সম্মতিক্রমে এর মূল্য দিয়ে তা আপনি রাখতে পারেন। আর যদি আপনি তা নিতে না চান কিংবা তারা সেটি বিক্রি করতে না চায়, তাহলে তাদেরকে নিজ খরচে সেটি সরিয়ে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১১/২৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/১৪০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৭; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৪/৫২৩ 

শেয়ার লিংক