মুহতারাম, নাক পরিষ্কার করার সময় নাক থেকে জমাট রক্ত বের হলে কি ওযু ভাঙবে?
মুহতারাম, নাক পরিষ্কার করার সময় নাক থেকে জমাট রক্ত বের হলে কি ওযু ভাঙবে?
না, নাক থেকে জমাট রক্ত বের হলে ওযু ভাঙবে না। কেননা, শরীর থেকে প্রবহমান রক্ত বেরিয়ে গড়িয়ে পড়লে ওযু ভেঙে যায়। এই রক্ত যেহেতু প্রবহমান নয়; বরং জমাট রক্ত, তাই এর কারণে ওযু ভাঙবে না।
শেয়ার লিংক-আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ১/২৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩
আমার স্ত্রী কিছুদিন গর্ভ ধারণ করার পর তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ডিএনসি করে গর্ভটি ফেলে দেওয়া হয়। তখন গর্ভটা একটা রক্তপি- ছিল মাত্র। ডিএনসি-এর পর পাঁচ দিন তার স্রাব এসেছে। জানার বিষয় হল, এই স্রাবের কী হুকুম? এই পাঁচ দিনের নামাযের কী হুকুম হবে? কারণ, সে এই পাঁচ দিন সন্দেহের কারণে নামায পড়েনি।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীর গর্ভটি যেহেতু কেবল রক্তপিণ্ড ছিল; কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি, তাই ডিএনসি পরবর্তী যে স্রাব দেখা দিয়েছে তা হায়েয গণ্য হবে। অতএব এই সময় নামায না পড়া মাসআলাসম্মতই হয়েছে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৮৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৯; হাশিয়াতুশ শিলবী আলাত্তাবয়ীন ১/১৮৮
কিছুদিন পূর্বে একটি জরুরি কাজে এক দিনের জন্য ঢাকা গিয়েছিলাম। সেখানে মুসাফির অবস্থায় আমার আসরের নামায ছুটে যায়। এখন আমি মুকীম। বাড়িতে ফিরে এসেছি।
প্রশ্ন হল, সেই ছুটে যাওয়া আসরের নামায এখন কত রাকাত পড়ব? মুসাফির অবস্থায় ছুটে যাওয়া চার রাকাতবিশিষ্ট নামায মুকীম অবস্থায় কত রাকাত পড়তে হয়?
মুসাফির অবস্থায় কাযা হয়ে যাওয়া চার রাকাতবিশিষ্ট নামায মুকীম অবস্থায় দুই রাকাত পড়তে হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুসাফির অবস্থায় ছুটে যাওয়া আসরের নামায দুই রাকাত কাযা করতে হবে। হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
إِذَا نَسِيَ صَلَاةً فِي الْحَضَرِ فَذَكَرَهَا فِي السّفَرِ صَلّى صَلَاةَ الْحَضَرِ وَإِذَا نَسِيَ صَلَاةً فِي السّفَرِ فَذَكَرَهَا فِي الْحَضَرِ صَلّى صَلَاةَ السّفَرِ.
কোনো ব্যক্তি যদি মুকীম অবস্থায় কোনো নামায পড়তে ভুলে যায় তারপর মুসাফির অবস্থায় সে নামাযের কথা স্মরণ হয় তাহলে সে মুকীমের মত তা কাযা করবে। আর যদি মুসাফির অবস্থায় কোনো নামায পড়তে ভুলে যায় তারপর মুকীম অবস্থায় সে নামাযের কথা স্মরণ হয় তাহলে সে মুসাফিরের মত তা কাযা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৭৭৬)
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২৩৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৩৫; আলহাবিল কুদসী ১/২২১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৭
সেদিন মসজিদে গিয়ে দেখি, এখনো ফজরের আযান হয়নি। মুসল্লীদের অনুরোধে আযান শুরু করি। কিন্তু আযানের মধ্যে ভুলেالصلاة خير من النوم না বলে দুইবার الله أكبر বলে ফেলি। স্মরণ আসা মাত্র الصلاة خير من النوم বলে পুনরায় الله أكبر বলি। এবং স্বাভাবিকভাবে আযান শেষ করি।
জানার বিষয় হল, আমার উক্ত ফজরের আজান কি ঠিক হয়েছে? অন্যথায় এক্ষেত্রে আমার জন্য করণীয় কী ছিল? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ছুটে যাওয়া বাক্যটিসহ পরবর্তী বাক্যগুলো বলেছেন, তাই আপনার আযান সহীহ হয়েছে। আযানের মধ্যে কোনো বাক্য ছুটে যাওয়ার পর সাথে সাথে বা আযানের ভেতর স্মরণ হলে তৎক্ষণাৎ ছুটে যাওয়া বাক্যটি থেকে পরবর্তী আযান সম্পন্ন করা নিয়ম।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১১৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩৮৯
আমি প্রতি বছর একটি মসজিদে খতমে তারাবীহের জামাতে ইমামতি করি। গত রমযানে একদিন তারাবীহের নামাযে আয়াতে সিজদা তিলাওয়াতের পর সিজদা করি এবং সিজদা থেকে উঠে পরবর্তী আয়াত থেকে তিলাওয়াত না করে ভুলে সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করি। তিন-চার আয়াত তিলাওয়াত করার পর খেয়াল হয়; তখন সূরা ফাতিহা বাদ দিয়ে আয়াতে সিজদার পরবর্তী আয়াত থেকে তিলাওয়াত শুরু করি। উক্ত কারণে আমি সাহু সিজদা করিনি। মুহতারামের কাছে প্রশ্ন হল, আমার সাহু সিজদা না করা কি ঠিক হয়েছে?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সেজদা না করা ঠিকই হয়েছে। কেননা সূরা ফাতিহার সঙ্গে সূরা মেলানোর পর পুনরায় সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।
শেয়ার লিংক-আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/২৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৬০
গত ঈদে কোনো এক কারণে ঈদগাহে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। ঈদগাহে পৌঁছে দেখি, ইমাম সাহের প্রথম রাকাতের কেরাত শেষ করে রুকুতে চলে গেছেন। তখন আমিও ইমামের সাথে দ্রুত রুকুতে শরীক হই। এবং অতিরিক্ত তিন তাকবীর আদায় করা ছাড়াই বাকি নামায ইমামের সাথে শেষ করি। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমার জন্য করণীয় কী ছিল? ছুটে যাওয়া তাকবীরগুলো আদায় করার পদ্ধতি কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ঈদের নামাযে ইমামকে রুকুতে পেলে করণীয় হল, তাকবীরে তাহরীমার পর ইমামের সাথে রুকু ছুটে যাওয়ার আশংকা না হলে দাঁড়ানো অবস্থায় অতিরিক্ত তিন তাকবীর আদায় করে রুকু করা। আর রুকু ছুটে যাওয়ার আশংকা হলে রুকুতে গিয়েই তাকবীরগুলো আদায় করা। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি রুকুতে তাকবীরগুলো বলে নিতে পারতেন। তবে তাকবীর না বলে থাকলেও ইমামের সাথে রুকু পাওয়ার কারণে আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।
শেয়ার লিংক-আলজামেউল কাবীর, পৃ. ১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৮; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬১; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৪
জামাতের প্রথম রাকাতে কোনো মুসল্লী এক্তেদা করলে তার জন্য সানা পড়ার বিধান জানতে চাই।
এক্ষেত্রে ইমামকে আস্তে কেরাত পড়া অবস্থায় পেলে মুক্তাদী সানা পড়বে আর ইমামের জোরে কেরাত পড়া অবস্থায় নামাযে শরীক হলে সানা পড়বে না।
শেয়ার লিংক-আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৫৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩০৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪৮৮
মসজিদে জামাতে নামাম শেষ হওয়ার পর মানুষ সুন্নত নফল নামায পড়তে থাকে। সাধারণত তখন তারা তাদের সামনে সুতরা রাখে না। অন্যান্য মুসল্লীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে চলে যায়। অনেকে আবার বসে অপেক্ষা করতে থাকে।
মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে সুতরা ব্যতীত অতিক্রম করা যাবে? বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।
নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা মাকরূহ তাহরীমি। হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আবূ জুহাইম রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَوْ يَعْلَمُ المَارُّ بَيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ، لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرّ بَيْنَ يَدَيْهِ.
নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত যে, এটা তার কত বড় অপরাধ তাহলে সে চল্লিশ (দিন/মাস/বছর) অপেক্ষা করত। এবং এই অপেক্ষা করাটা তার জন্য মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে উত্তম হত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১০
এক্ষেত্রে ফকীহগণ বলেন, যদি নামাযী ব্যক্তির সামনে সুতরা স্থাপন করা না থাকে, তাহলে যদি তা বড় কোনো খোলা ময়দান কিংবা বড় মসজিদ (যার পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য অন্তত চল্লিশ হাত) হয় তাহলে নামাযী ব্যক্তির দাঁড়ানোর স্থান থেকে দুই কাতার পর থেকে চলাচল করা যাবে। আর এর চেয়ে ছোট মসজিদ অথবা ঘরে নামায পড়লে সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না। অবশ্য যদি সুতরা থাকে তাহলে এর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯২; জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, পৃ. ১২৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪০১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫; মাজমাউল আনহুর ১/১৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৩
ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে আমাদের লঞ্চে করে নদী পার হতে হয়। লঞ্চে থাকা অবস্থায় নামাযের সময় হয়ে গেলে নামায আদায় করে নিই। এক্ষেত্রে প্রথমে কিবলার দিক ঠিক করে নামায শুরু করি। পরে নামায অবস্থায় কখনো লঞ্চ ঘুরতে থাকে।
মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, নামাযের মধ্যে থাকা অবস্থায় লঞ্চ ঘুরতে থাকলে আমাকেও কি সে অনুযায়ী ঘুরতে হবে, নাকি প্রথমে যে দিকে ফিরে নামায শুরু করেছিলাম সেদিকে ফিরেই নামায পূর্ণ করে নিব? সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
লঞ্চে কিবলার দিকে ফিরে নামায শুরু করার পর লঞ্চ ঘুরে গেলে আপনাকেও কিবলার দিকে ঘুরে যেতে হবে এবং কিবলার দিকে ফিরেই নামায সম্পন্ন করতে হবে। নামাযের মধ্যে লঞ্চ ঘুরে গেছে জানা সত্ত্বেও কেবলামুখী না হলে নামায হবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৩২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০১
নামামের মধ্যে মহিলাদের পায়ের পাতা ঢেকে রাখা কি আবশ্যক?
নামাযের মধ্যে মহিলাদের পায়ের পাতা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই নামাযে তা ঢেকে রাখা আবশ্যক নয়।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৪; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৪৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮
কোনো কারণে বেশ কিছুদিন আমাকে কারাগারে বন্দি থাকতে হয়। সেখানে বন্দিদের জন্যে নামাযের একটি নির্ধারিত স্থান রয়েছে। বন্দিরা সেখানে জামাতের সাথে শুধু যোহর এবং আছরের নামায পড়তে পারে। কারাগারের কর্মকর্তারা সাধারণত ঐ স্থানে নামায পড়ে না।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই, নামাযের ঐ নির্ধারিত স্থানে বন্দিরা কি জুমার নামায আদায় করতে পারবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু কারাগারে বন্দিদের জামাতে নামায পড়ার অনুমতি আছে তাই সেখানে তারা জুমার নামায পড়তে পারবে। আর বাইরের লোকদের সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা যেহেতু নিরাপত্তাজনিত কারণে তাই এ নিষেধাজ্ঞা জুমা আদায়ের জন্য প্রতিবন্ধক হবে না।
শেয়ার লিংক-মাজমাউল আনহুর ১/২৪৬; রদ্দুল মুহতার ২/১৫২
আমি এক মসজিদের ইমাম। মাঝেমধ্যে আমার কিছু পরিচিত মুসল্লি তাদের নবজাতক সন্তানের কানে আযান দেওয়ার জন্য নিয়ে যায়। দুয়েকদিন আগেও একজন মুসল্লী আমাকে দিয়ে তার সন্তানের কানে আযান দেওয়ায়। তখন হঠাৎ আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে, সাধারণত আযান দেওয়ার সময় আমরা حي على الصلاة এবং حي على الفلاح বলার সময় ডানে-বামে মুখ ফিরাই। তো নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার সময়ও কি ডানে-বামে মুখ ফেরাতে হবে। বিষয়টির শরয়ী হুকুম জানালে অনেক উপকৃত হব।
হাঁ, নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার ক্ষেত্রেও حي على الصلاة বলার সময় ডান দিকে এবং حي على الفلاح বলার সময় বাম দিকে মুখ ফেরানো মুস্তাহাব।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৮৮; জামেউর রুমূয ১/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৮; মাজমাউল আনহুর ১/১১৬; রদ্দুল মুহতার ১/২৮৭
লকডাউনের সময় মসজিদে জুমা ও ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন এক জুমার দিন যোহরের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে আমি যোহরের নামায পড়ে নেই। তারপর বেলা একটার দিকে মসজিদের মাইকে এলান হয়, আপনারা যারা মসজিদে জুমার নামায় আদায় করতে ইচ্ছুক তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে এসে জুমা আদায় করতে পারেন। তখন আমি মসজিদে গিয়ে জুমার নামায আদায় করি। আমার জানার বিষয় হল, জুমার দিন যোহরের নামায আদায়ের পর জুমা আদায় করার দ্বারা আমার জুমা আদায় হয়েছে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জুমার নামাযে শরীক হওয়ার কারণে আপনার ঐ দিনের যোহরটি নফল গণ্য হয়েছে। আর জুমা ওয়াক্তের ফরয হিসেবে আদায় হয়েছে। কেননা কোনো ওজর না থাকলে মুকীমের উপর জুমা আদায় করা ফরয।
সুতরাং ওযর (সরকারি বাধা) চলে যাওয়ার কারণে যখন জুমা আদায় করা সম্ভব হয়েছে, তখন জুমা পড়াই কর্তব্য।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৩০৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩২; ফাতহুল কাদীর ২/৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩১২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৫
আমি নেভিতে চাকরি করি। বিভিন্ন সময় আমাকে রাষ্ট্রীয় কাজে সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশে সফর করতে হয়। গত বছর এক রাষ্ট্রীয় কাজে দশ সদস্যের একটি টিম সামুদ্রিক জাহাজে ম্যাক্সিকো যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমাদের এক সহকর্মী হঠাৎ মৃত্যুবরণ করে। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য তখনও দশ দিনের দূরত্বে ছিল। কোনো উপায় না দেখে আমরা তার লাশটি সমুদ্রে ভাসিয়ে দিই। মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, সমুদ্রপথে জাহাজে কেউ মারা গেলে করণীয় কী?
সমুদ্রপথে জাহাজে কেউ মারা গেলে সাধারণ সময়ের মত যথানিয়মে মৃতদেহের গোসল, কাফন ও জানাযার নামায সম্পন্ন করতে হবে। তারপর লাশের কোনো ক্ষতি হওয়ার আগে যদি জমিনে নিয়ে দাফন করা সম্ভব হয় তাহলে জমিনে নিয়েই দাফন করতে হবে। আর যদি জমিনে নিয়ে দাফন করতে গেলে লাশ নরম হয়ে যাওয়া বা পঁচে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে লাশের সাথে ভারী কোনো বস্তু বেঁধে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিবে।
আতা ইবনে আবী রবাহ্ রাহ. থেকে বর্ণিত, সমুদ্রে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন-
يُغَسّلُ، وَيُكَفّنُ، وَيُحَنّطُ، وَيُصَلّى عَلَيْهِ، ثُمّ يُرْبَطُ فِي رِجْلَيْهِ شَيْءٌ، ثُمّ يُرْمَى بِهِ فِي الْبَحْرِ.
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে, কাফন পড়াবে, কর্পূর লাগাবে এবং তার জানাযার নামায পড়বে। তারপর তার দুই পায়ে কোনো বস্তু বেঁধে সমুদ্রে ছেড়ে দেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১১৯৭৩)
শেয়ার লিংক-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪০১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১০৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৫; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৩; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৩৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৫
এক বছর আগে আমার স্ত্রীর দশ ভরি স্বর্ণের অলংকার হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পরও কোথাও তা পাওয়া যায়নি। কয়েকদিন আগে আমাদের এক প্রতিবেশী তাবলীগে চিল্লা দিয়ে এসে অলংকারগুলোর চুরির দায় স্বীকার করে। তারপর অনুতপ্ত মনে ক্ষমা চেয়ে সেগুলো ফিরিয়ে দেয়।
মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, অলংকারগুলোর গত বছরের যাকাত কি আদায় করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অলংকারগুলোর গত বছরের যাকাত দেওয়া লাগবে না। কেননা অলংকারগুলো হারিয়ে যাওয়ার কারণে গত বছর তা আপনার স্ত্রীর যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্তই ছিল না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবাইদ রাহ., বর্ণনা ১১৮৫; কিতাবুল আছল ২/১১৩; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৫২; আলমুগনী, ইবনে কুদামাহ ৪/২৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭
কয়েকমাস আগে আমার এক ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার একটি নাবালেগ ছেলে আছে। বর্তমানে ছেলেটি উত্তরাধিকারসূত্রে বড় অংকের টাকার মালিক। টাকাগুলো তার পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করার জন্য রাখা হয়েছে।
মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল, এই টাকাগুলোর কি যাকাত ও সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে?
নাবালেগের সম্পদের উপর যাকাত ফরয নয়। তবে নাবালেগ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নাবালেগ ছেলেটির মালিকানাধীন সম্পদের যাকাত দেওয়া লাগবে না। তবে তার অভিভাবক তার সম্পদ থেকে তার ফিতরা আদায় করে দেবে।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৬৯৯৪; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৬১, ৩৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯, ১৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৯, ১৩২; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮, ৩৫৮
আমার একটি ঔষধের ফার্মেসি আছে। প্রতিদিন সকাল বেলা যখন আমি ফার্মেসি খুলি, তখন একের পর এক অনেক গরীব লোক সাহায্য চাইতে আসে। আমি তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন যাকাতের নিয়তে দশ বা পাঁচ টাকা করে দিয়ে থাকি। তারপর বছর শেষে ওই সব টাকা হিসাব করে যত টাকা হয় যাকাতের টাকা থেকে কেটে নেই। আমার জানার বিষয় হল, এভাবে বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যাকাত প্রদান করার দ্বারা কি আমার যাকাত আদায় হবে?
যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেও অগ্রিম যাকাত আদায় করা জায়েয। আলী রা. থেকে বর্ণিত-
أَنّ العَبّاسَ سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي تَعْجِيلِ صَدَقَتِهِ قَبْلَ أَنْ تَحِلّ، فَرَخّصَ لَهُ فِي ذَلِكَ.
অর্থাৎ আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে নিজের যাকাত আদায় করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি প্রদান করেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৭৮)
তাই উক্ত টাকা গরীবদেরকে যাকাতের নিয়তে প্রদান করার পর বছর শেষে আপনার উপর যা যাকাত আসে তার সাথে সমন্বয় করে নেওয়া জায়েয হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/১২৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৬৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৯২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৯১; ফাতহুল কাদীর ২/১৫৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৬৬
আমার একটি মুদি দোকান আছে। দোকানে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মালামাল আছে। এছাড়া আমার আর কোনো যাকাতযোগ্য সম্পদ নেই। আমি প্রতি বছর রমযান মাসে দোকানের যাবতীয় মালামালের যাকাত প্রদান করে থাকি। এ বছর রমযানের কয়েক মাস আগে আমার বড় মেয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। তার চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা খরচ করতে হয়। ফলে আমি প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণী হয়ে যাই। জানার বিষয় হল, এই বছর কি আমার ওই দোকানের মালামালের যাকাত দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দোকানের মালামালের চেয়ে আপনার ঋণের পরিমাণ যেহেতু বেশি, তাই এ বছর দোকানের মালামালের যাকাত দিতে হবে না। কেননা যাকাতযোগ্য সম্পদের চেয়ে ঋণ বেশি হলে যাকাত ফরয হয় না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৯০; মাবসূত, সারাখসী ২/১৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২২৮; হাশিয়তুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৬১
আমি একজন টাইলস ব্যবসায়ী। আলহামদু লিল্লাহ প্রতি বছর রমযানের শেষ দশকে আমার দোকানের নিকটবর্তী এক মসজিদে ইতিকাফে বসি। তখন আমার কর্মচারীরা দোকান পরিচালনা করে। অনেক সময় কোনো কোনো ক্রেতা সরাসরি আমার সঙ্গে দরদাম করার জন্য মসজিদে চলে আসে। মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, ইতিকাফ অবস্থায় বেচা-কেনার চুক্তি করা কি জায়েয? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রথমত, মসজিদ ইবাদত-বন্দেগীর জায়গা। দ্বিতীয়ত, ইতিকাফ হল দুনিয়াবী ব্যস্ততা ত্যাগ করে ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করা। সুতরাং পণ্য উপস্থিত না করলেও ব্যাপকভাবে বেচা-বিক্রি ও কাস্টমারদের সাথে আলোচনায় লিপ্ত হওয়া ইতিকাফের উদ্দেশ্য পরিপন্থি ও মাকরূহ। সুতরাং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফ অবস্থায় এভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। আর পণ্য কোনো অবস্থাতে হাজির করা যাবে না। কেননা মসজিদে পণ্য হাযির করা মাকরূহে তাহরীমী তথা নাজায়েয।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২২; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ৩/১২০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৮
গত রমযানে একদিন এক সমস্যার কারণে আমাকে ডাক্তার দেখাতে হয়েছিল। ডাক্তার সাহেব তখন আমাকে ব্ল্যাড টেস্ট দেন। তারপর টেস্টের প্রয়োজনে আমার হাত থেকে এক সিরিঞ্জ রক্ত নেওয়া হয়।
রোযা অবস্থায় এভাবে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নেওয়ার কারণে আমার সেদিনের রোযার কি কোনো ক্ষতি হয়েছে? যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে এখন আমার করণীয় কী?
রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযা ভাঙ্গে না। তাই সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নেওয়ার কারণে আপনার রোযার কোনো ক্ষতি হয়নি।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/১৪৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৬৯; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯
আমি প্রতি রমযানের শেষ দশক ইতেকাফ করি। আমার প্রশ্ন হল, ওযু থাকা অবস্থায় শুধু নতুন ওযুর জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে কি?
ওযু থাকা অবস্থায় শুধু নতুন ওযুর জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। তাই উক্ত উদ্দেশ্যে ইতেকাফকারীগণ মসজিদ ত্যাগ করবেন না।
শেয়ার লিংক-আলমুগনী ৪/৪৮৪; আহকামুল কুরআন, থানভী ১/২৭০
গত হজ্বে আমি এক হজ্ব কাফেলার সাথে হজ্ব করতে যাই। আমি আমার সাথীদের সাথে তওয়াফের পর সায়ী করি। সায়ী করার পর স্মরণ হয়, সায়ী অবস্থায় আমার ওযু ছিল না। জানতে চাচ্ছি, বিনা ওযুতে সায়ী করার কারণে আমার উপর কি কোনো কিছু ওয়াজিব হয়েছে?
সায়ীতে ওযু থাকা মুস্তাহাব; জরুরি নয়। তাই ওযু না থাকা অবস্থায় সায়ী করা অনুত্তম হলেও এ কারণে আপনার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। আপনার সায়ী আদায় হয়ে গেছে।
শেয়ার লিংক-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৫৩১; খিযানাতুল আকমাল ১/৩৩৬; আলবাহরুল আমীক ২/১২৯৫; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/৪৭০
দুই বছর আগে আমি বিবাহ করি। কিছুদিন থেকে একটা ঘটনা কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে ঝগড়া চলছে। গতকাল বিকালে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী আমাকে বলে, আমি যদি তোমার কাছে এতই খারাপ হয়ে থাকি তাহলে আমাকে তালাক দিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে করে তাকে নিয়ে থাকো। কথাটি শুনে আমার মাথায় আরো রাগ উঠে যায়। তখন বলি যে, তোর সাথে সংসার করা হবে না বুঝতে পেরে গত মাসেই তোকে তালাক দিয়েছিলাম।
উল্লেখ্য, বাস্তবে আমি আগে তাকে কখনো তালাক দেইনি এবং কথাটি বলার সময় তালাক দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না। পূর্বে তালাক দেওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে শুধু ভয় দেখানো উদ্দেশ্য ছিল। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার উক্ত কথার দ্বারা কি আমার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মিথ্যা তালাকের তথ্য দ্বারা যেহেতু তাকে ভয় দেখানো উদ্দেশ্য ছিল, তালাক দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না, তাই এর দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক পূর্বের মতো বহাল আছে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৫১৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/১৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৪০১; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৪৬; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ৪৯৯
কয়েক মাস যাবৎ আমার স্ত্রীর সাথে একটা বিষয় নিয়ে খুব ঝগড়া হচ্ছে। একপর্যায়ে সে বাপের বাড়ি চলে যায়। তাই আমি রাগে তাকে তালাক দিয়ে তার সাথে সংসার না করার সিদ্ধান্ত নিই। তাকে তালাক দেওয়ার জন্য মোবাইলে মেসেজ লিখি ‘আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম’ মেসেজটি শ্বশুরের নম্বরে পাঠাবো এমন সময় আমার রাগ কমে যায়। তখন ভাবি যে, তাকে তালাক দিয়ে কাকে নিয়ে সংসার করব। তাই মেসেজটি না পাঠিয়ে ডিলিট করে দিই। ঘটনাটি আমার পরিচিত একজন হুজুরকে জানালে তিনি বলেন, তালাকের কথাটি যেহেতু শুধু লিখেছেন, পাঠাননি তাই আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। কিন্তু আমার এক বন্ধু কোনো দারুল ইফতা থেকে মাসআলাটি ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। তাই আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে মোবাইলে শুধু উক্ত কথাটি লেখার কারণে কি আমার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়েছে? এখন স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চাই। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেসেজে ‘আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম’ লিখেছেন, তাই তা না পাঠালেও পূর্ণভাবে লেখার দ্বারাই আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রাজয়ী পতিত হয়ে গেছে। কারণ তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে শুধু তালাকের কথা লিখলেও তালাক কার্যকর হয়ে যায়। তা কার্যকর হওয়ার জন্য স্ত্রী বা অন্য কাউকে পাঠানো কিংবা জানানোর প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে তালাকের মেসেজটি না পাঠানোর কারণে তালাক পতিত হয়নি- এ কথা সঠিক নয়।
এখন তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিতে চাইলে ইদ্দতের ভেতর তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত বা প্রকাশ করলেই সে আপনার স্ত্রী হয়ে যাবে। কিন্তু ইদ্দতের ভেতর যদি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করেন বা এ সময়ের মধ্যে আপনাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসুলভ কোনো আচরণও না হয় তাহলে তালাকটি বায়েন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনারা একত্রিত হতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে সাক্ষীদের সামনে পুনরায় বিবাহ করতে হবে। এভাবে পুনরায় একত্রিত হলে আপনি শুধু দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। পরবর্তীতে কখনো দুই তালাক হলেই স্ত্রী সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিবাহের মাধ্যমেও একত্রিত হওয়া সম্ভব হবে না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি।
প্রকাশ থাকে যে, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই বিনা কারণে বা রাগের সময় তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৭৩, ২৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৪৬, ৪৫৩; গামযু উয়ূনিল বাসাইর ৩/৪৪৭; রদ্দুল মুহতার ৩/২৪৬
আমার স্ত্রীর পান খাওয়ার অভ্যাস ছিল, যা আমার কাছে মোটেও পছন্দ না। তাকে অনেকবার বারণ করার পরও সে পান খাওয়া ছাড়েনি। একদিন রাগ করে আল্লাহর কসম করে তাকে বলি, তোর সাথে আর এক চালের নিচে একসাথে থাকব না। আমার ঐ কথা শোনার পর আমার স্ত্রীও রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায়। এভাবে পাঁচ মাস পার হয়ে যায়। আমিও আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকি। কিন্তু সে এখন পান খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আমার কাছে চলে আসতে চাচ্ছে। যেহেতু সে পান খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে তাই আমিও তাকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছি। এখন হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, আমার উক্ত কথাটি বলার কারণে কি আমাদের বিবাহে কোনো সমস্যা হয়েছে? আমরা কি একসাথে থাকতে পারব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত কথাটি বলার কারণে এবং এতদিন পৃথক থাকার কারণে আপনাদের বিবাহে কোনো সমস্যা হয়নি। আপনারা পূর্বের মতো এখনো স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে বসবাস করতে পারবেন। তবে যেহেতু তার সঙ্গে একসাথে থাকবেন না বলে কসম করেছিলেন। তাই একত্র হওয়ার কারণে আপনাকে কসম ভঙ্গের জন্য একটি কাফ্ফারা দিতে হবে। কসমের কাফফারা হল, দশজন মিসকিনকে দুই বেলা তৃপ্তিসহকারে খাবার খাওয়ানো। অথবা তাদের প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। আর এ দুটির কোনোটিতে সমর্থ না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোযা রাখতে হবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৫৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২০০; আলইখতিয়ার ৩/৩৮৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৫
কয়েকদিন আগে আমার শাশুড়ীর সাথে আমার ঝগড়া হয়। এতে আমার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বলে, তোকে ছেড়ে দিলাম। পরবর্তীতে এ কথার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি বললেন, তালাকের কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। আমাকে সাবধান করা উদ্দেশ্য ছিল। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমার উপর তালাক পতিত হয়েছে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামীর উক্ত কথার কারণে আপনার উপর এক তালাকে রাজয়ী পতিত হয়েছে। আমাদের দেশে এ বাক্য তালাকের জন্যই ব্যবহৃত হয়। তাই তালাকের নিয়ত না থাকলেও একথা বলার দ্বারা তালাক হয়ে গেছে। আর তালাকটি যেহেতু রাজয়ী হয়েছে তাই এখন যদি আপনারা সুষ্ঠুভাবে ঘর-সংসার করতে চান তাহলে আপনার স্বামী আপনাকে ইদ্দতের মধ্যেই ফিরিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার স্বামী আপনাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনার স্বামী দুই তালাকের অধিকারী থাকবে। পরবর্তীতে কখনো দুই তালাক হলেই পূর্বের তালাকসহ মোট তিন তালাক হয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন নতুন করে বিবাহ করারও সুযোগ থাকবে না। তাই আপনাদের তালাকের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৮৭২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৩১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৯৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৩৬
হামযা ও হুযাইফা আপন দুই ভাই। তারা হাফসার আম্মার দুধ পান করেছে। এখন প্রশ্ন হল, হামযা ও হুযাইফার বাবা হাফসার সাথে দেখা দিতে পারবে কি? উল্লেখ্য, হাফসার ছোট বোন সুবাইতা তাদের মায়ের দুধ পান করেছে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হামযা ও হুযাইফার বাবা তাদের দুধবোন হাফসার সাথে দেখা দিতে পারবে না। তাদের পরস্পরে পর্দা করা জরুরি। দুধ সম্পর্কের পরিধি দুধপানকারীর পিতা পর্যন্ত গড়ায় না।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১৮
কিছুদিন আগে আমার বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন আমি মান্নত করেছিলাম, যদি আমার বাবা সুস্থ হয়ে যান তাহলে আমি একটি গরু সদকা করব এবং হারাম শরীফে গিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করব। আলহামদু লিল্লাহ আমার বাবা সুস্থ হয়েছেন এবং আমি একটি গরুও সদকা করেছি। কিন্তু সৌদি আরব যাওয়ার বর্তমানে আমার সামর্থ্য নেই। তাই আমি হারাম শরীফে গিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করতে পারছি না। মুহতারাম, আমি এখন কী করতে পারি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হারাম শরীফে গিয়ে নামায পড়া জরুরি নয়; বরং যে কোনো স্থানে থেকে ঐ উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নামায আদায় করলেই আপনার মান্নত পুরা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে নামায আদায় করাই মুখ্য। স্থানের বিষয়টি আবশ্যক নয়।
শেয়ার লিংক-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩০৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৩২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/২৪৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৯
আমাদের এলাকার মসজিদের পাশে মসজিদের নামে একটা ওয়াকফিয়া ভবন আছে। ঐ ভবনের প্রথম দ্ইু তলা দুটি ফার্নিচার শো-রুমের কাছে ভাড়া দেওয়া আছে। সেখান থেকে ভাড়া বাবদ প্রত্যেক মাসে অনেক টাকা আসে। মসজিদের সব খরচের পরও অনেক টাকা থেকে যায়। এভাবে মসজিদের ফান্ডে অনেক টাকা জমা হয়ে যায়। গত বছর মসজিদের ভবন থেকে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত টাকা দিয়ে মুতাওয়াল্লি সাহেবের আদেশে মসজিদের জন্য আরো দুটি দোকান কেনা হয়। বর্তমানে দুই-তিন মাস যাবৎ দোকানদুটি খালি পড়ে আছে, ভাড়া হচ্ছে না। তাই এখন দোকানগুলো থেকে মসজিদের কোনো লাভ তো হচ্ছেই না; বরং অতিরিক্ত খরচ হয়ে যাচ্ছে। যেমন বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ। তাই এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মসজিদ কমিটি চাচ্ছে, ঐ দোকানদুটি বিক্রি করে দিতে। জানার বিষয় হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে দোকানদুটি বিক্রি করে দিতে কোনো অসুবিধা আছে কি?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বাস্তবেই যদি ঐ দোকানদুটি দ্বারা মসজিদের তেমন কোনো লাভ বা আয় না হয়; বরং এর দ্বারা মসজিদ আরো অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্মুখীন হয় তাহলে দোকানদুটি বিক্রি করে দেওয়া বৈধ হবে। এই সম্পদ কেনাই হয়েছে মসজিদের আয়ের জন্য। তাই যদি এর দ্বারা কাক্সিক্ষত ফায়দা বা আয় না হয় তাহলে তা বিক্রি করে দেওয়া বৈধ হবে।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪১৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৪১৬
আমার দশজন বন্ধু তাদের জমাকৃত ৫ লক্ষ টাকা আমাকে ব্যবসার জন্য দেয়। গত ছয় মাস যাবৎ এ টাকা দিয়ে আমি ব্যবসা করে আসছি। ব্যবসার যাবতীয় মালামাল আমি চকবাজার থেকেই আনি। গত সপ্তাহে মাল আনতে চকবাজার যাওয়ার সময় মটরসাইকেল এক্সিডেন্ট হই। এতে আমি গুরুতর আহত হই। আমার একটি পা ভেঙ্গে যায়। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার।
মুহতারামের কাছে জানতে চাই, যেহেতু ব্যবসায়িক পণ্য কেনার উদ্দেশ্যে বের হয়েই আমি আহত হয়েছি, তাই ব্যবসার টাকা থেকে আমার চিকিৎসা খরচ নিতে পারব কি না? পারলে কতটুকু নিতে পারব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবসার মাল থেকে আপনার চিকিৎসা খরচ নিতে পারবেন না। অবশ্য পুঁজিদাতারা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনাকে এ বাবদ কিছু দিতে চায় তবে তা নেওয়া জায়েয হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ২২/৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৪৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫৫১; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৫৪