মুহতারাম! আমি অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে আমার হাত ভেঙ্গে যায়। পরে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি হাতে প্লাস্টার করে দেন। এখন আমি এই প্লাস্টারসহ কীভাবে ওযু করব?
মুহতারাম! আমি অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে আমার হাত ভেঙ্গে যায়। পরে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি হাতে প্লাস্টার করে দেন। এখন আমি এই প্লাস্টারসহ কীভাবে ওযু করব?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সম্ভব হলে ওযুর জন্য আপনি সকল অঙ্গ স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই ধুবেন আর প্লাস্টার করা হাত মাসেহ করে নেবেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مَنْ كَانَ بِهِ جُرْحٌ مَعْصُوبٌ فَخَشِيَ عَلَيْهِ الْعَنَتَ، فَلْيَمْسَحْ مَا حَوْلَهُ، وَلاَ يَغْسِلْهُ.
অর্থাৎ ব্যান্ডেজের উপর অযু করতে কারো ক্ষতির অশংকা হলে সে ঐ জায়গাটি না ধুয়ে মাসেহ করে নেবে। (মুসান্নাফে ইবেন আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৫৮)
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৬১৮, ৬২৫; কিতাবুল আছল ১/৪২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৪৪১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬০; ফাতহুল কাদীর ১/১৪০; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১১৬; রদ্দুল মুহতার ১/২৭৮
আমার দাঁতের মাড়ি খুব দুর্বল। যে কারণে অনেকসময় আপেল বা শক্ত কোনো খাবারে কামড় দিলে তাতে খুব সামান্য রক্তের ছাপ দেখতে পাই। কিন্তু সাথে সাথে থুথু ফেললে এর সাথে কোনো রক্তের ছাপ দেখতে পাই না। এর কারণে কি আমার ওযু ভেঙে যাবে এবং আমাকে পুনরায় অযু করতে হবে? জানালে খুব ভালো হত।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী খাবারের সাথে দৃশ্যমান রক্তের পরিমাণ যেহেতু খুবই কম তাই এর দ্বারা ওযু নষ্ট হবে না। ওযু ভঙ্গের জন্য গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হতে হবে। আর থুথুর সাথে রক্ত দেখা দিলে থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ বেশি অথবা সমান হতে হবে। নতুবা ওযু ভাঙবে না।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৩৩৯, ১৩৪৪; কিতাবুল আছল ১/৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৩২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৮; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/১৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৮
কিছুদিন আগে বাসে করে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। ওযু করেই বাসে উঠি। বাস কিছু দূর যেতেই অপরিচিত এক লোক আমার পাশে এসে বসে। কিছুক্ষণ পর লোকটি আমার মুখে একটি রুমাল চেপে ধরে। ফলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার সাথে বেশ কিছু টাকা ছিল। সে টাকাগুলো নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আশপাশের লোকজন টের পেয়ে যাওয়ায় নিতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফেরে। জ্ঞান ফেরার পর পুনরায় ওযু না করেই শুকরিয়া স্বরূপ দুই রাকাত নামায আদায় করি।
পরে সন্দেহ তৈরি হল, পুনরায় ওযু না করে নামায পড়াটা ঠিক হল কি না? তাই মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এতটুকু সময় অজ্ঞান হওয়ার কারণে কি আমার ওযু নষ্ট হয়ে গেছে? আর আমার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
অল্প সময় অজ্ঞান থাকলেও ওযু নষ্ট হয়ে যায়। হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
فِي رَجُلٍ غُشِيَ عَلَيْهِ وَهُوَ جَالِسٌ، قَالَ: يَتَوَضّأُ.
কোনো ব্যক্তি যদি অজ্ঞান হয়ে যায় এবং সে বসা অবস্থায়ও থাকে তবেও তার ওযু ভেঙে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৯০)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
إِذَا أَفَاقَ الْمُصَابُ تَوَضّأَ.
অজ্ঞান ব্যক্তি জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর (পবিত্রতা অর্জনের জন্য) ওযু করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৯১)
তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওযু নষ্ট হয়ে গেছে। অতএব পরবর্তী দুই রাকাত নফল নামায ওযুবিহীন পড়ার কারণে তা সহীহ হয়নি। আর ওযু না থাকার কারণে নামায শুরুই হয়নি। তাই ঐ নামাযের কাযাও করতে হবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১৪৫, ১৮২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৩৭৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৫৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১৫০
স্বাভাবিকভাবে আমার ঋতুস্রাব সাত দিনের মাথায় এসে বন্ধ হয়। কিন্তু চলতি মাসে তা দশ দিন অতিক্রম করে। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার উপর নামাযের বিধান সাত দিনের পর থেকে শুরু হবে, নাকি দশ দিনের পর থেকে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার ঋতুস্রাব যেহেতু স্বাভাবিকভাবে সাত দিন হয় এবং চলতি মাসে তা দশ দিন অতিক্রম করেছে, তাই এক্ষেত্রেও আপনার ঋতুস্রাব সাত দিনই ধর্তব্য হবে। সাত দিনের পরের নামাযগুলো কাযা করে নেবেন।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১১৫৩, ১১৫৫; কিতাবুল আছল ১/২৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৮৫
কিছুদিন আগে এক মসজিদে তাফসীর শুনছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে ইমাম সাহেব সূরা ‘আররাহমান’ নাযিলের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। তখন তিনি বলেন, এই সূরাটি নাযিল হয়েছে আরেকটি আয়াতকে কেন্দ্র করে। সেই আয়াতটি সিজদার আয়াত। তাই আমি আয়াতের অনুবাদটি আপনাদেরকে বলছি। তারপর তিনি ঐ আয়াতের অনুবাদ বলেন।
জানার বিষয় হল, সিজদার আয়াতের অনুবাদ পড়লে বা শুনলে কি সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে? ঐদিন সিজদার আয়াতের অনুবাদ শোনার কারণে কি আমাদের উপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়েছিল?
সিজদার আয়াত পাঠ করলে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়। কিন্তু সিজদার আয়াতের অনুবাদ পাঠ করলে বা অনুবাদ শ্রবণ করলে সেক্ষেত্রে সিজদা ওয়াজিব হয় না। অবশ্য কোনো কোনো ফকীহের মতে এক্ষেত্রেও সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়। তাই সতর্কতামূলক কেউ চাইলে সিজদা করে নিতে পারে। কিন্তু কেউ সিজদা না দিলে সে গুনাহগার হবে না।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৩৩, বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১২০; আকামুন নাফাইস, পৃ. ৪০ (মাজমূআতু রাসাইলিল লাখনাবী ৪/৩৭৩)
চোখ বন্ধ করে নামায পড়লে আমার মনোযোগ একটু বেশি হয়। তাই আমি নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় সাধারণত চোখ বন্ধ করে রাখি। কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই চোখ বন্ধ করে নামায পড়তে দেখে বললেন, ‘নামাযে চোখ বন্ধ করে রাখ কেন? এভাবে নামায পড়া ঠিক না।’ জানার বিষয় হল, তিনি কি ঠিক বলেছেন? চোখ বন্ধ করে নামায পড়লে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হবে? সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই।
নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখবে। বিনা প্রয়োজনে নামাযে চোখ বন্ধ করে রাখা মাকরূহ।
عَنْ إِبْرَاهِيمَ النّخَعِيِّ، أَنّهُ كَانَ يُحِبّ لِلْمُصَلِّي أَنْ لاَ يُجَاوِزَ بَصَرُهُ مَوْضِعَ سُجُودِهِ.
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি দৃষ্টি সিজদার স্থান অতিক্রম করে না যাওয়া পছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৬৫৬৩)
عَنْ مُجَاهِدٍ؛ أَنّهُ كَرِهَ أَنْ يُصَلِّيَ الرّجُلُ وَهُوَ مُغْمِضُ الْعَيْنِ.
মুজাহিদ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি নামাযে চোখ বন্ধ করে রাখা অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৬৫৬৫)
অবশ্য যদি সামনে এমন কিছু আসে, যা নামাযে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক, সেক্ষেত্রে মনোযোগ রক্ষার জন্য তখন চোখ বন্ধ করে রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত চোখ বন্ধ রেখে নামায পড়া মাকরূহ।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৭; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, পৃ. ৮৪; যাদুল ফাকীর, পৃ. ১৫২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৫৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৫
নামায সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন :
১. মুক্তাদীকে ইমামের সাথে প্রত্যেক ওঠা-বসায় তাকবীরগুলো বলতে হবে কি?
২. মাসবুক, যে ইমামকে দ্বিতীয় রাকাতের সিজদায় পেয়েছে, তাকে ইমামের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়তে হবে কি না বা তখন তার করণীয় কী?
১. হাঁ, মুক্তাদী ইমামের সাথে প্রত্যেক ওঠা-বসায় তাকবীর বলবে। এ তাকবীরগুলো বলা মুক্তাদীর জন্যও সুন্নত (আর তাকবীরে তাহরীমা ফরয)। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمّ بِهِ، فَإِذَا كَبّرَ فَكَبِّرُوا، وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا.
ইমাম নির্ধারণ করাই হয়েছে তার অনুসরণের জন্য। সুতরাং যখন তিনি তাকবীর বলেন তোমরাও তাকবীর বল, তিনি যখন রুকু করেন তোমরাও রুকু কর। ... (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৩৪) -ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩১৯; হাশিয়াতুত তাহাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৮২
২. হাঁ, মাসবুক ইমামের প্রথম বৈঠকে শরীক হলেও তাশাহহুদ পড়বে। এক্ষেত্রে তার দুই রাকাত পূর্ণ না হলেও ইমামের অনুসরণে তাশাহহুদ পড়বে। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-
رجُل سَبَقَهُ الْإِمَامُ بِشَيْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ، أَيَتَشَهَّدُ كُلَّمَا جَلَسَ الْإِمَامُ؟ قَالَ: نَعَمْ.
অর্থাৎ মাসবুক ইমামের সাথে প্রত্যেক বৈঠকেই তাশাহহুদ পড়বে। (কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ১৩১) -বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬৩; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১০১; রদ্দুল মুহতার ২/৮৫
শেয়ার লিংক
একাধিক মসজিদের আযান একসাথে শোনা গেলে কোন্টার জবাব দিব? আর পরপর হলে প্রত্যেক আযানের জবাব দেওয়া সুন্নত হবে কি?
একাধিক মসজিদের আযান একসাথে শোনা গেলে নিজ এলাকার মসজিদের আযানের জবাব দেবেন। আর একসাথে না হয়ে পরপর হলে প্রথম আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। প্রত্যেক আযানের জবাব দিতে হবে না।
শেয়ার লিংক-ফাতহুল কাদীর ১/২১৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৭৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯; আননাহরুল ফায়েক ১/১৭৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/১৮৮
আমার দাদী দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে নামাযের রাকাত সংখ্যা ও নিয়ম-কানুন ভুলে গেছেন। নিজে নামায আদায়ে সক্ষম নন। তার সন্তানেরা পাশে থেকে বলে বলে নামায পড়াচ্ছেন। আমার জানার বিষয় হল, এখন কি তাঁর উপর নামায পড়া আবশ্যক?
ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামায। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দাদী অন্যের সাহায্যে নামায আদায়ে সক্ষম হলে আপনারা তাকে নামায পড়িয়ে দেবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের কর্তব্য হবে, তাকে নামায আদায়ে যথাসম্ভব সহযোগিতা করা। এটা করলে আপনারা সওয়াবের ভাগি হবেন ইনশাআল্লাহ! তবে যদি কখনো সাহায্য করার কেউ না থাকে অথবা কখনো কোনো কারণে তার নামায ছুটে যায় তাহলে প্রশ্নে বর্ণিত অপারগতার কারণে ঐ নামাযের কাযা করতে হবে না। এক্ষেত্রে নামায আদায়ে সক্ষম নয় হিসেবে তা মাফ হয়ে যাবে।
শেয়ার লিংক-শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০০
আমার অফিস থেকে বের হতে মাঝে মাঝে দেরি হয়ে যায়। তখন বাসায় এসে নামায আদায় করি। আমি কি তখন ফরযের পূর্বে ইকামত বলব, নাকি সরাসরি নামায শুরু করব?
একাকী নামায পড়লেও ফরয নামাযের পূর্বে ইকামত বলা উত্তম। আতা
রাহ. বলেন-
فِي الرّجُلِ يُصَلِّي فِي بَيْتِهِ عَلَى غَيْرِ إِقَامَةٍ، قَالَ : إِنْ أَقَامَ فَهُوَ أَفضل، وَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ أَجْزَأَهُ.
অর্থাৎ ঘরে একাকী নামায আদায়কারীর জন্য ইকামত বলা উত্তম। অবশ্য যদি তা না করে তবে নামায আদায় হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৩০১)
সুতরাং একাকী ফরয নামায আদায়ের সময়ও ইকামত বলে নেবেন।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১১১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৭; আলবাহরু রায়েক ১/২৬৫
কয়েকদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাঁচের দরজার সাথে ধাক্কা লেগে মারাত্মকভাবে হাত কেটে যায়। ডাক্তার তাঁর হাতের ক্ষতস্থানে সেলাই করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেন এবং এক সপ্তাহ পরে খোলার কথা বলেন। তাই এখন তিনি ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করে নামায পড়ান। প্রশ্ন হল, তাঁর পিছনে আমাদের ইক্তিদা কি সহীহ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হাঁ, এ অবস্থায় উক্ত ইমামের পিছনে আপনাদের ইক্তিদা সহীহ হবে। কেননা ব্যান্ডেজের উপর মাসেহকারীর পিছনে স্বাভাবিক ওযুকারী ব্যক্তির ইক্তিদা সহীহ।
তবে ক্ষতের স্থান যদি এমন হয় যে, ব্যান্ডেজের পরেও তা থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হতে থাকে তাহলে ঐ ধরণের লোকের পিছনে সুস্থ লোকদের ইক্তিদা করা সহীহ হবে না।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৮
আমাদের মসজিদে প্রতি শুক্রবার ফজরের নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা সিজদাহ তিলাওয়াত করা হয়। গত শুক্রবার আমি যখন মসজিদে প্রবেশ করি তখন ইমাম সাহেব সিজদার আয়াতটি তিলাওয়াত করছিলেন। আমি ইমাম সাহেবের সাথে নামাযে শরীক হবার আগেই তিনি সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করেন। পরে আমি ঐ রাকাতে রুকুর আগে জামাতে শরীক হই। জানার বিষয় হল, ঐ সিজদাটি আমি কখন আদায় করব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামের সাথে ঐ রাকাত পাওয়ার কারণে আপনি সিজদায়ে তিলাওয়াত পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। পৃথকভাবে সিজদা আদায় করা লাগবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৩
মুহতারাম! আমি সাধারণত তাহাজ্জুদের নামায পড়ার চেষ্টা করি। কয়েকদিন আগে ঘড়ি না দেখে তাহাজ্জুদের সময় আছে মনে করে দুই রাকাত নামায শুরু করি এবং ছানাও পড়ে ফেলি। ঠিক তখন ফজরের আযান শুনতে পাই। তখন আমি ঐ নামায পূর্ণ করি। আমার এই নামাযের কী হুকুম?
উল্লেখ্য, আমি পরে দুই রাকাত নামায ফজরের সুন্নতের নিয়তে পড়ে নিয়েছিলাম।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি উক্ত মুাআযযিন ওয়াক্ত হওয়ার কিছুক্ষণ পর আযান দিয়ে থাকেন, তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, আপনি ঐ দুই রাকাত নামায ফজরের ওয়াক্ত হবার পর আদায় করেছেন। তাই তা ফজরের সুন্নত হিসেবে আদায় হয়েছে। তাহাজ্জুদ হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে নতুন করে আবার ফজরের সুন্নত পড়া ঠিক হয়নি। আর যদি ঐ মুআযযিন সময় হওয়ার সাথে সাথেই আযান দিয়ে থাকেন তাহলে সময়ের পূর্বে আরম্ভ করায় তা নফল হিসেবেই আদায় হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য পৃথকভাবে সুন্নত পড়া সহীহ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য কোনো নফল বা সুন্নত নামায পড়া নিষেধ। সুতরাং শেষ সময়ে তাহজ্জুদে দঁড়ালে সময়ের প্রতি খেয়াল করে দাঁড়াবে।
শেয়ার লিংক-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১২; ফাতহুল কাদীর ৩/১৮৭; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪০২; আননাহরুল ফায়েক ১/২৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫
আমি আজ রাতে খাবার খাওয়ার পর এশার নামায পড়ছিলাম। নামাযের মধ্যে দাঁতে বেধে থাকা ভাতের কণা অনিচ্ছাকৃত গলার ভিতর ঢুকে যায়। আমার জানার বিষয় হল, নামাযের মধ্যে উক্ত ভাতের কণা অনিচ্ছাকৃত গলার ভিতর ঢুকে যাওয়ার কারণে কি আমার নামায ভেঙে গিয়েছে? উক্ত নামায কি আমার পুনরায় পড়তে হবে?
ছোলার দানার চেয়ে ছোট খাবারের এমন কোনো অংশ দাঁত থেকে বেরিয়ে গলায় চলে গেলে নামায ভাঙে না। এর চেয়ে বেশি হলে ভেঙে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় নামাযের মধ্যে উক্ত ভাতের কণা গলার ভিতর ঢুকে যাওয়ার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১৭১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৫৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৩
আমার এক আত্মীয় অনেক দরিদ্র। লকডাউনে তার অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। আমি চাচ্ছি, আমার এ বছরের যাকাত থেকে তার ঋণ পরিশোধ করে দিব। জানার বিষয় হল, এভাবে তার ঋণ পরিশোধ করার দ্বারা কি আমার যাকাত আদায় হবে?
আপনি যদি আপনার যাকাতের টাকা দিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করতে চান তাহলে আপনি তার পক্ষ থেকে ঋণ পারিশোধ করে দিচ্ছেন তার থেকে আগে এই অনুমতি নিতে হবে। এরপর আপনার যাকাত দ্বারা ঋণ পরিশোধ করে দিতে পারবেন। কিন্তু উক্ত দরিদ্র ঋণী ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ঋণ আদায় করে দিলে এর দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হবে না।
এখানে উল্লেখ্য, আপনি যাকাতের টাকা দিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করছেন- এ কথা তাকে জানানো জরুরি নয়।
শেয়ার লিংক-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪২; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৮; আলজাওহারাতুন নায়্যিরা ১/১৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৫
আমাদের এলাকায় ঈদুল ফিতরের দিন গরীব-মিসকীনরা ধনী মানুষের বাড়িতে আসে। এক পরিবারের যৌথ সদাকাতুল ফিতর একজনের দায়িত্বে থাকে। তিনি প্রত্যেক গরীবকে ২০/৩০ টাকা করে দিয়ে থাকেন। এভাবে একজনের সদাকাতুল ফিতর একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়ে থাকে। জানার বিষয় হল, এভাবে একজনের সদাকাতুল ফিতর কি একাধিক গরীবকে দেয়া যাবে?
হাঁ, একজনের সদাকাতুল ফিতর একাধিক গরীব ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েয আছে। তাই প্রশ্নোক্ত ফিতরাগুলো আদায় হয়ে গেছে।
তবে একটি ফিতরার পুরো টাকা একজন মিসকীনকে দেওয়াই উত্তম।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৬১; ফাতহুল কাদীর ২/১৩২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩৯৫
গত বছর আমার কাছে দুই লক্ষ টাকা ছিল। ভেবেছিলাম, টাকাগুলো দিয়ে ঘরের ছাদের কাজ ধরব। কিন্তু কিছুদিন পর আমার বড় ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের সময় টাকাগুলো আমার কাছ থেকে ধার নেয়। এক বছর হয়ে গেছে এখনও টাকাগুলো দিতে পারেনি। জানার বিষয় হল, আমার উপর কি উক্ত দুই লক্ষ টাকার যাকাত দেওয়া ফরয? জানালে উপকৃত হব।
ধার দেওয়া টাকার উপরও যাকাত ফরয। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাইকে ধার দেওয়া দুই লক্ষ টাকার বছরান্তে যাকাত দিতে হবে। তবে তা এখনই আদায় না করে সেই টাকা হস্তগত হওয়ার পরও আদায় করা যাবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৯৩; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৫
আমি প্রতি বছর ৭০/৮০ হাজার টাকা যাকাত হিসাবে দিয়ে থাকি। আমার একজন দুধ-মা আছেন, যিনি অত্যন্ত দরিদ্র। এ বছর আমি চাচ্ছি, আমার দুধ-মাকে যাকাতের কিছু টাকা দিব। এক্ষেত্রে জানার বিষয় হল, দুধ-মাকে যাকাতের টাকা প্রদান করা কি শরীয়তসম্মত হবে?
নিজ মাকে যাকাত দেওয়া যায় না। কিন্তু দুধ-মাকে যাকাতের টাকা দিতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/১২৪; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৬
২০১৮ সালে আমি প্রথম হজে¦ যাই। কিরান হজ¦ করায় প্রায় ১৫ দিনের মতো ইহরাম অবস্থায় থাকতে হয়। ইহরাম অবস্থায় বেশ কয়েকদিন সুগন্ধিযুক্ত বিরিয়ানী খাই। জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় উক্ত খাবার খাওয়ার কারণে কি আমার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে?
ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা নিষেধ নয়। তাই উক্ত খাবার খাওয়ার কারণে হজে¦র কোনো ক্ষতি হয়নি। কোনো জরিমানাও আসেনি। তবে রান্নার পর তাতে পৃথকভাবে সুগন্ধি যোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৩; ফাতহুল কাদীর ২/৪৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪১
এক ব্যক্তি উমরা করতে যায়। উমরা শেষ করার পর সে তায়েফ যায়। সেখান থেকে ফেরার সময় মাসআলা না জানার কারণে সে ইহরাম করে আসেনি। এভাবেই সে মক্কায় চলে আসে। এরপর সে মসজিদে আয়েশা থেকে ইহরাম করে আবার উমরা আদায় করে। এরপর একজন মুফতী সাহেব থেকে সে জানতে পারে যে, তায়েফ থেকে তার ইহরাম করে আসা জরুরি ছিল। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মাসআলা হল, পুনরায় কোনো মীকাত থেকে ইহরাম করে আসা বা দম দেওয়া। এখন সে মদীনা মুনাওয়ারা যাবে। তাই জানার বিষয় হল, সেখান থেকে আসার সময় সে আবার উমরার ইহরাম করে যদি আবার মক্কায় আসে তবে কি তার দম মাফ হবে? এক্ষেত্রে তার করণীয় কী? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি তায়েফ থেকে আসার পর যেহেতু মীকাতে না গিয়ে হিল থেকে ইহরাম করে উমরা আদায় করে নিয়েছে তাই এক্ষেত্রে তার উপর দম দেওয়া অপরিহার্য হয়ে গেছে। সুতরাং এখন কোনো মীকাত থেকে ইহরাম করে আসার দ্বারা তার উক্ত দম মাফ হবে না। এক্ষেত্রে তাকে হেরেমের এলাকায় একটি পশু জবাই করার মাধ্যমে উক্ত দম আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, যদি লোকটি মসজিদে আয়েশা থেকে ইহরাম করে উমরা না করতো তবে মদীনা মুনাওয়ারা থেকে ফেরার পথে ইহরাম করে উমরার মাধ্যমে তার ক্ষতিপূরণ হয়ে যেত এবং দম মওকুফ হয়ে যেত।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪১৪; ফাতহুল কাদীর ৩/৪০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৭৯
পাঁচ মাস পূর্বে আমার স্বামী ঝগড়ার সময় বলে, ‘তুই তালাক’। তারপর সে আমাকে বলেছিল যে, শুধু মুখে তালাক দিলে তালাক হয় না। তাই আমরা একসাথে ঘর-সংসার করতে থাকি। ঘটনার কিছুদিন পর এক হুজুরের ওয়াজ শুনে জানতে পারলাম, শুধু মৌখিকভাবে তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়। এরপর থেকে আমি তার থেকে আলাদা থাকতে শুরু করি এবং তাকে সঠিক মাসআলা জেনে আসতে বলি। সে আজ-কাল করে তিন মাস পার করে দেয়। সে আমাকে তালাক দিয়ে দিয়েছে তাই এখন আমি তার সাথে আর সংসার করতে চাই না।
আমার জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় আমি কি অন্যেত্র বিবাহ করতে পারব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামী আপনাকে ‘তুই তালাক’ বাক্যটি বলার কারণে আপনার উপর এক তালাকে রাজয়ী পতিত হয়েছে। এরপর আপনাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে থাকার দ্বারা রাজআত হয়ে বিবাহ পুনঃবহাল হয়ে গিয়েছে। এখন আপনি আপনার স্বামীর বিবাহে পূর্ণ বিবাহধীন স্ত্রী। তাই এ অবস্থায় আপনি অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন না।
প্রকাশ থাকে যে, আপনার স্বামী ভবিষ্যতে শুধু দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই ভবিষ্যতে কখনো দুই তালাক দিলেই আপনাদের বিবাহ সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন নতুন বিবাহের মাধ্যমেও আপনারা একে অপরের জন্য হালাল হবেন না।
আরো প্রকাশ থাকে যে, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারেই জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা থেকে নিরসনের কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই বিনা
কারণে বা রাগের মাথায় তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৩৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৬১, ২৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৫৫, ২৩৫, ৪/৫০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৪৮
আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি পূর্ণরূপে দ্বীনের উপর চলতে চাই এবং আমার পরিবারকেও দ্বীনের উপর চালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আমার স্ত্রী দ্বীনের উপর চলতে আগ্রহী নয়। সে পর্দা-পুশিদার গুরুত্ব দেয় না এবং আমার অনুমতি ছাড়া মার্কেটে ঘুরতে যায়। মার্কেটে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আমি অনেকদিন নিষেধ করি। সে তা মানে না। অবশেষে গতকাল আমি আমার দোকানে ছিলাম, বাড়িতে আসার পর শুনতে পাই, আমার স্ত্রী মার্কেটে ঘুরতে গিয়েছিল। তখন আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং অনেক বাড়াবাড়ি করে। একপর্যায়ে আমি তাকে বলি, ‘তোমার সাথে ঘর-সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আজ থেকে তুমি আমার জন্য হারাম, হারাম, হারাম।’ এবং উক্ত কথাটি আমি তালাকের নিয়তে বলেছিলাম। পরবর্তীতে আমার স্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় এবং পূর্ণ দ্বীনের উপর চলার প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ হয়। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, আমার স্ত্রীকে ‘তুমি আজ থেকে আমার জন্য হারাম, হারাম, হারাম’ বলার কারণে কি তালাক পতিত হয়েছে? এবং এখন কি আমরা পুনরায় ঘর-সংসার করতে পারব। জানিয়ে উপকৃত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাকের উদ্দেশ্যে ‘হারাম’ শব্দটি একবার উচ্চারণের পরই তার উপর একটি ‘বায়েন তালাক’ পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। পরবর্তী দুটি দ্বারা কোনো তালাক পতিত হয়নি। এখন পুনরায় আপনারা সুষ্ঠুরূপে ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন করে মহর ধার্য করে যথানিয়মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু এক তালাক হয়ে গেছে তাই ভবিষ্যতে আপনি শুধু দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কখনো দুই তালাক হলেই আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন নতুন করে বিবাহের মাধ্যমেও আপনারা একে অপরের জন্য হালাল হবেন না।
উল্লেখ্য, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথমাত্র। বিনা কারণে কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া, কথায় কথায় তালাক দেওয়া সবই গুনাহের কাজ। এ থেকে বিরত থাকা যে কোনো মুসলমানের কর্তব্য।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১৮৮; ফাতহুল কাদীর ৩/৪০৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩০৮; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ৫২৫
প্রায়ই আমার নানীর সাথে নানীর ছোট বোন আমাদের বাড়ী আসেন। নানীর বোনের সাথে পর্দার বিধান আছে কি না জানা না থাকায় আমি তার সামনে যাই না। কিন্তু তিনি আমার সামনে চলে আসেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত।
মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, নানীর বোন কি মাহরামের অন্তর্ভুক্ত? আমি কি তার সামনে যেতে পারব? জানালে উপকৃত হব।
নিজের খালার ন্যায় মায়ের খালাও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। আর নানীর বোন হচ্ছে মায়ের খালা। তাই আপনি আপনার নানীর বোনের সাথে দেখা করতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/২৫২; তাফসীরে মাযহারী ২/২৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৩০
গত বছর আমার মা ইন্তেকাল করেন। এরপর আমার বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। সৎ মায়ের মা মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমি তাকে নানী ডাকি এবং তার সামনে যাই। কিছুদিন আগে আমার এক ভাই, যে মাদরাসায় পড়ে সে বলল, সৎ মা’র মায়ের সাথে নাকি পর্দা করতে হয়। তার কথা কি ঠিক?
হাঁ, সে ঠিকই বলেছে। সৎ মায়ের মা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত নন। তিনি যদি খুব বৃদ্ধা না হয়ে থাকেন তবে তার সাথে পর্দা করা জরুরি।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/২১১; ফাতাওয়া খাইরিয়া ১/৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১
মায়মুনা আক্তারের স্বামী মারা যায়। এরপর সে অন্যত্র বিবাহ করে। সেই স্বামীর অন্য স্ত্রী থেকে একটি মেয়ে আছে। ঐ মেয়ে বড় হওয়ার পর তাকে বিবাহ দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হল, মায়মুনা আক্তার কি ঐ মেয়ের স্বামীর সাথে দেখা করতে পারবে? জানালে উপকৃত হব।
স্বামীর অন্য স্ত্রীর মেয়ের জামাই মাহরাম নয়। তাই ঐ মহিলার জন্য তার সাথে দেখা করা জায়েয হবে না।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৬৬৭১; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১০৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৯
একবার আমি একটি বড় রোগে আক্রান্ত হই। চিকিৎসা করছিলাম তবুও ভালো হচ্ছিল না। এদিকে আমার একটি ছাগল ছিল। তখন আমি মান্নত করি, ‘যদি আমি এই রোগ থেকে মুক্তি পাই, তাহলে এই ছাগলটি মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সদকা করব।’ কিন্তু কিছুদিন পর সেই ছাগলটিকে কয়েকটি কুকুর কামড়ে মেরে ফেলে। এর প্রায় এক মাস পর আমি উক্ত রোগ থেকে মুক্তি পাই।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এখন আমি উক্ত মান্নত কীভাবে আদায় করব? জনৈক হুজুর বলেছেন, এখন উক্ত ছাগলের সমপরিমাণ মূল্য সদকা করতে হবে। তার কথা কি ঠিক? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার শর্তে নির্দিষ্ট ওই ছাগলটি সদকা করার মান্নত করেছিলেন আর আপনি সুস্থ হওয়ার আগেই ছাগলটি মারা গেছে। তাই এক্ষেত্রে আর মান্নতটি প্রযোজ্য হবে না। আপনাকে এজন্য কিছুই করতে হবে না। উক্ত ছাগলের মূল্য সদকা করতে হবে- প্রশ্নের কথাটি ঠিক নয়।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
আমার আব্বু কয়েক মাস আগে হঠাৎ
করেই খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আমি এই বলে মান্নত করি যে, আমার বাবা যদি সুস্থ হয়ে যান তাহলে আমি কয়েকটা রোযা রখব এবং গরীব-মিসকীনদের খাবার খাওয়াব। দশ-পনেরো দিন হল আমার আব্বুর অবস্থা আগের থেকে অনেক ভালো। এখন আমি আমার মান্নত পূর্ণ করতে চাচ্ছি। এজন্য আমার কয়টি রোযা রাখতে হবে এবং কতজন গরীব-মিসকীনকে খাওয়াতে হবে? আমি তো তখন কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করিনি। বিষয়টি জানালে খুব উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উক্ত মান্নত পূরণের জন্য কমপক্ষে তিনটি রোযা ও অন্তত দশজন মিসকীনকে খাবার খাওয়াতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলজামেউল কাবীর, পৃ. ৬০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪২
আমার চাচা এক বছর আগে আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন যে, তিনি মারা গেলে একটি হাউজিং-এ তার যে দশ কাঠা জমি আছে তা তার পক্ষ থেকে মাদরাসা-মসজিদের জন্য ওয়াকফ করতে। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার চাচি একটি বড় রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই আমার চাচা চাচ্ছেন, এ দশ কাঠা জমি থেকে ৪ কাঠা বিক্রি করে ঐ টাকা দিয়ে চাচির চিকিৎসা করাতে। মুহতারাম, আমার চাচার জন্য ঐ জমি বিক্রি করা জায়েয হবে কি না এবং ঐ টাকা চাচির চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারবে কি না?
ওসিয়ত কার্যকর হয় ওসিয়তকারীর মৃত্যুর পর। তাই ওসিয়তকারী চাইলে জীবদ্দশায় তার কৃত ওসিয়ত প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করতে পারে। অতএব প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার চাচা যদি বাস্তবেই শুধু ওসিয়ত করে থাকেন, জমিটি মাদরাসা-মসজিদকে দান করে না দিয়ে থাকেন, তাহলে এক্ষেত্রে তিনি ঐ জমি বা তার অংশবিশেষ বিক্রি করতে পারবেন এবং বিক্রিলব্ধ টাকা আপনার চাচির চিকিৎসায় খরচ বা অন্য কোনো কাজে লাগাতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩১৪৪৯; আলমাবসূত, সারাখসী ২৭/১৬২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২২/৪২৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৩১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫৮
আমাদের মহল্লায় মাত্র দুটি মসজিদ। ঘন বসতি হওয়ায় সেখানে আমাদের মহল্লায় সব লোকের জায়গা হয় না। আর কিছু কিছু স্থান থেকে মসজিদ এত দূরে যে, সেখান থেকে মসজিদে গিয়ে জামাতে শরীক হওয়াও মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের মহল্লার সবাই পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, মহল্লায় আরেকটা মসজিদ নির্মাণ করা হবে। তো এ উদ্দেশ্যে আমার বাবা পাঁচ কাঠা জমি ওয়াকফ করেছেন এবং ঐ জায়গা মসজিদের জন্য লিখে দিয়েছেন। কিন্তু ঐ জায়গায় আমাদের কিছু সবজি ক্ষেত ও ধান ক্ষেত আছে। আমরা চাচ্ছি যে, মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে আমাদের ধান ও সবজিগুলো কেটে নেব। কিন্তু এলাকার কিছু লোক বলেছেন যে, না। আপনাদের এই জমি যেহেতু মসজিদের জন্য ওয়াকফ হয়ে গেছে তাই এখানকার সবকিছু মসজিদের কল্যাণেই ব্যবহার করতে হবে। সুতরাং আপনারা কিছুই কেটে নিতে পারবেন না। সঠিক বিধান জানালে উপকৃত হব।
জমি ওয়াকফ বা বিক্রি করলে মৌসুমি ফসল তার অন্তর্ভুক্ত হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত জমির ধান ও সবজি যারা লাগিয়েছে তারাই এর মালিক হবে। এগুলো কেটে নিয়ে তারা নিজ কাজে ব্যবহার করতে পারবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
শেয়ার লিংক-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, পৃ. ৫৪৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/১০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৩
কয়েকদিন আগে ফিল্টার কেনার জন্য মার্কেটে যাই। এক দোকানে দাম জিজ্ঞাসা করলে বলে ১১০০/= টাকা। আমি বলি ৯০০/= টাকায় হলে নিব। দোকানদার ঐ দামে বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় দোকান থেকে বের হয়ে যাই। তখন দোকানদার ডাক দিয়ে বলল, নিয়ে যান। তখন আমার মত পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই বললাম, নিব না। দোকানদার বলল, আপনার বলা দামেই তো দিচ্ছি। নেবেন না কেন? এখন আপনাকে নিতে হবে। এরপর ঐ পণ্যটি বিক্রি করার জন্য জোরাজুরি শুরু করে। তার অবস্থা এমন ছিল যে, পণ্যটি গ্রহণ না করা আমার জন্য অন্যায় হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পণ্যটি তার দোকান থেকে না নিয়ে অন্য দোকান থেকে আরো কম মূল্যে ক্রয় করি।
আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে কি আমাদের মধ্যে বিক্রয় সংঘটিত হয়ে গিয়েছিল? পণ্যটি তার থেকে গ্রহণ না করা কি আমার জন্য অন্যায় হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিক্রেতা আপনার প্রস্তাবিত মূল্যে পণ্যটি দিতে রাজি না হওয়ার পর আপনি যেহেতু তার দোকান থেকে বের হয়ে গেছেন তাই আপনার ঐ প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে সে আপনার উক্ত প্রস্তাবিত দামে বিক্রি করতে সম্মত হলেও তখন তা গ্রহণ করা আপনার উপর জরুরি নয়; বরং এক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছাধীন থাকবে- উক্ত দামে পণ্যটি গ্রহণ করা বা না করা। তাই এক্ষেত্রে তার থেকে পণ্যটি না কেনা আপনার অন্যায় হয়নি।
শেয়ার লিংক-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/১১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২২১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১৮৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫২৭