আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ সালেহ - শিবচর, মাদারীপুর

৪৫২৯. প্রশ্ন

আমার ফুফুর চোখে অপারেশন হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হলেও ডাক্তার এক মাস পর্যন্ত চোখে পানি লাগাতে নিষেধ করেছেন। এখন তিনি কীভাবে অযু করবেন?

উত্তর

আপনার ফুফুর যতদিন চোখে পানি লাগানো নিষেধ থাকে ততদিন অযুর সময় চোখের আশপাশ ও কপালের অংশ ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করে নিবেন। চোখের অংশ মাসাহ করাটাও যদি ক্ষতিকর হয় তাহলে তা মাসাহ না করলেও চলবে। আর চেহারার নিম্নাংশ ধোয়া সম্ভব হলে ধুবে। কিন্তু যদি এ অংশও ধোয়া ক্ষতিকর হয় তাহলে ধোয়ার পরিবর্তে পুরো মুখমণ্ডল মাসাহ করবে। আর অযুর অন্যান্য অঙ্গ ধোয়া সম্ভব হলে এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করা যাবে না বরং অন্যান্য অঙ্গ যথানিয়মে ধুয়ে নিবে।

-আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ১৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৭৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ১১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪২৫

শেয়ার লিংক

ফুয়াদ মুহাম্মাদ আনওয়ারি - বাইতুল আমান মসজিদ, ধানমণ্ডি, ঢাকা

৪৫৩০. প্রশ্ন

কুরআন মাজীদের কোনো সূরা বা আয়াত মোবাইল সেট বা আই-প্যাডের স্ক্রিনে লেখা থাকলে তা অযু ব্যতীত স্পর্শ করা যাবে কি?

উত্তর

মোবাইলে বা আই-প্যাডের স্ক্রিনে কুরআনের সূরা বা আয়াত দৃশ্যমান থাকলে আয়াতের উপর অযু ছাড়া স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে স্ক্রিনের যে অংশে আয়াত লেখা থাকবে না সে অংশে হাত লাগাতে পারবে।

-রদ্দুল মুহতার ১/১৭৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৭৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ দেলওয়ার হোসেন - রামগড়, খাগড়াছড়ি

৪৫৩১. প্রশ্ন

আমার এক ফুফা যখন ঘরে একাকী ফরয নামায পড়েন যোহর আসরসহ সকল নামাযে স্বশব্দে ইকামত দেন ও স্বশব্দে কেরাত পড়েন। প্রশ্ন হল, যেসকল নামাযে ইমাম সাহেব নিম্নস্বরে কেরাত পড়ে থাকেন ঐসকল নামাযেও জোরে পড়েন। এসব নামাযেও তার জন্য উচ্চস্বরে কিরাত পড়া কি ঠিক হচ্ছে? আর ঠিক না হলে তার আদায়কৃত নামাযগুলোর বিধান কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী যেসব নামাযে নিম্নস্বরে কেরাত পড়তে হয় সেসব ওয়াক্তের নামায একাকী আদায় করলেও নিম্নস্বরে কেরাত পড়া ওয়াজিব। ভুলে উচ্চস্বরে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হবে। অবশ্য ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর কিতাবুল আছলের বর্ণনা অনুযায়ী নিম্নস্বরে কেরাত পড়তে হয় এমন নামায একাকী পড়ার সময় জোরে কেরাত পড়লে সাহু সিজদা না দিলেও চলবে। তাই সে অনুযায়ী আপনার ফুফার বিগত দিনের আদায়কৃত নামাযগুলি সহীহ হয়েছে।

তবে সামনে থেকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ যোহর, আসর নামায একাকী আদায় করলেও কেরাত নিম্নস্বরেই পড়বে। ভুলে উচ্চস্বরে পড়ে ফেললে সাহু সিজদা দিবে।

-কিতাবুল আছল ১/১৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/২৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৩

শেয়ার লিংক

মাহবুব হাসান - হবিগঞ্জ, সিলেট

৪৫৩২. প্রশ্ন

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের সাথে দরূদ ও দুআ মাসূরা পড়বে নাকি শুধু তাশাহহুদ পড়বে? এ ব্যাপারে সঠিক পদ্ধতিটি জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়বে। আর তাশাহহুদ পড়ার সময় ধীরে ধীরে পড়ার চেষ্টা করবে। যেন তা ইমামের সালাম ফিরানো পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়।

তবে কোনো কোনো ফকীহের মতে মাসবুকের জন্য তাশাহহুদের সাথে দরূদ ও দুআ মাসূরাও পড়ার অবকাশ আছে। তাই কেউ পড়ে ফেললে তাতেও সমস্যা হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৩-১০৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫১১

শেয়ার লিংক

ইমদাদুল্লাহ - পানছড়ি, খাগড়াছড়ি

৪৫৩৩. প্রশ্ন

অনেক সময় মসজিদে কিছু মুসল্লী ভাইকে দেখা যায় তারা এমন খাটো শার্ট, প্যান্ট বা গেঞ্জি-ট্রাউজার ইত্যাদি পরে নামায পড়তে আসে যে, রুকু-সিজদায় গেলে পিছনের দিকে নিম্নাংশের কাপড় সরে গিয়ে শরীর দেখা যায়। এতে অনেক সময় তার পিছনের মুসল্লীদের বিব্রত হতে হয়। এখন আমি জানতে চাই, এমন কাপড় পরিধান করে নামায পড়ার কী হুকুম? এতে পিছনের মুসল্লীদের নামাযের কোনো সমস্যা হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

যে কাপড় পরলে সতর খুলে যায় এমন পোশাক ব্যবহার করা জায়েয নয় এবং এ ধরনের পোশাকে নামায আদায় করাও নাজায়েয। আর নামাযে যদি সতরের কোনো অঙ্গের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ খুলে যায় এবং তা এক রুকন (অর্থাৎ তিন তাসবীহ) পরিমাণ সময় খোলা থাকে তাহলে সে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ ধরনের পোষাক পরা থেকে (বিশেষত নামাযের সময়) বিরত থাকা আবশ্যক।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮

শেয়ার লিংক

মইনুল ইসলাম - সদর, রাজশাহী

৪৫৩৪. প্রশ্ন

আমি চাকরির সুবাদে রাজশাহীর একটি আহলে হাদীস অধ্যুষিত এলাকায় থাকি এবং তাদের মতাদর্শী এক ইমামের পিছনে জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় করি। তিনি আরবীর পরিবর্তে বাংলায় জুমার খুতবা প্রদান করেন। অথচ আমরা জানি, আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় খুতবা দেওয়া জায়েয নয়। জানার বিষয় হল, বাংলাতে খুতবাদাতা ঐ ইমামের পিছনে আমার জুমার নামায সহীহ হবে কি না? সহীহ না হলে এখন কি আমাকে এতদিনের আদায়কৃত নামাযগুলোর কাযা করতে হবে?

উত্তর

জুমার খুতবা আরবী ভাষায় হওয়া সুন্নাতে মুতাওয়ারাছা তথা যুগ পরম্পরায় চলে আসা অনুসৃত আমল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের যুগে আরবীতেই খুতবা প্রদান করা হত। অনারবি ভাষায় খুতবা দেওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই আরবীতে খুতবা দেওয়া হয় এমন কোনো মসজিদেই জুমার নামায পড়া উচিত। অবশ্য বাংলা ভাষায় যে খুতবা দেওয়া হয় তার শুরুতে বা মাঝে হামদ-সানা ও আয়াত তিলাওয়াতের কারণে খুতবার ফরয আদায় হয়ে যায়। তাই বিগত দিনের নামাযগুলোর কাযা করতে হবে না। তবে ভবিষ্যতে এমন ইমামের পিছনে নামায আদায়ের চেষ্টা করতে হবে, যিনি সুন্নাহ অনুযায়ী নামায পড়ান। তবে কোথাও যদি এরকম ব্যবস্থা  না থাকে তাহলে এমন খতীবের পিছনে জুমা পড়লেও নামায আদায় হয়ে যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৭; রদ্দুল মুহতার ১/৪৮৫; মুসাফফা শরহুল মুআত্তা ১/১৫৪; আহকামুন নাফাহিস ৪৩-৪৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রহমান - মোল্লাহাট, বাগেরহাট

৪৫৩৫. প্রশ্ন

জনৈক আলেম তিরমিযী শরীফে বর্ণিত-

إِيّاكُمْ وَالنّعْيَ، فَإِنّ النّعْيَ مِنْ عَمَلِ الجَاهِلِيّةِ.

‘মৃত্যু-সংবাদ উচ্চস্বরে প্রচার থেকে বিরত থাক’- হাদীসটিসহ অনেক সাহাবী তাদের মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করেছেন মর্মের হাদীসগুলো দিয়ে মৃত্যু সংবাদ উচ্চস্বরে বা মাইকে প্রচার করতে নিষেধ করেন। আর বুখারীতে বর্ণিত বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যুর খবর নবীজী দিয়েছিলেন- হাদীসটি তিনি সাধারণভাবে ফোনে বা মৌখিকভাবে আত্মীয়-স্বজনকে জানানোর উপর প্রয়োগ করেন। সত্যি কি মৃত্যু-সংবাদ উচ্চস্বরে বলা বা মাইকিং করা নিষেধ? তিরমিযীতে বর্ণিত হাদীস এবং সাহাবীদের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত আছার দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর

মায়্যেতের জানাযায় অধিক সংখ্যক মুসল্লীর উপস্থিতি শরীয়তে কাম্য। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ مَيِّتٍ تُصَلِّي عَلَيْهِ أُمّةٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ مِائَةً، كُلّهُمْ يَشْفَعُونَ لَهُ، إِلاّ شُفِّعُوا فِيهِ.

কোনো মায়্যেতের জানাযার নামায একশ জন মুসলমান পড়ল, যারা সকলে তার মাগফিরাতের জন্য শাফাআত করে তবে তাদের এ শাফাআত অবশ্যই কবুল করা হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৪৭

আর জানাযার নামাযে শরীক হওয়া সওয়াবের কাজ এবং জীবিতদের উপর মৃত মুসলমানের হক। এজন্যই কিছু হাদীস ও আছারে জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করার ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে। সহীহ বুখারীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে-

مَاتَ إِنْسَانٌ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَعُودُهُ، فَمَاتَ بِاللّيْلِ، فَدَفَنُوهُ لَيْلًا، فَلَمّا أَصْبَحَ أَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: مَا مَنَعَكُمْ أَنْ تُعْلِمُونِي؟

এক ব্যক্তি রাতে ইন্তিকাল করলে সাহাবীগণ তাকে রাতেই দাফন করে দেন। সকালে সংবাদটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তিনি বলেন, কেন তোমরা আমাকে (তখন) জানালে না? -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪৭

এক হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে-

أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَعَى النّجَاشِيّ فِي اليَوْمِ الّذِي مَاتَ فِيهِ خَرَجَ إِلَى المُصَلّى، فَصَفّ بِهِمْ وَكَبّرَ أَرْبَعًا.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশী বাদশার ইন্তেকালের দিন তাঁর মৃত্যু-সংবাদ দিয়ে জানাযার স্থানে গেলেন, অতপর সাহাবায়ে কেরামকে কাতার বন্দি করে চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৫১

সুনানে বায়হাকীর (৪/৪৭) এক বর্ণনায় এসেছে, রাফে ইবনে খাদীজ রা. আসরের পর ইন্তেকাল করলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-কে তাঁর মৃত্যু-সংবাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করা হল, তাঁর জানাযা কি এখন পড়া যেতে পারে? তিনি বলেন-

إِنّ مِثْلَ رَافِعٍ لَا يُخْرَجُ بِهِ حَتّى يُؤْذَنَ بِهِ مَنْ حَوْلنَا مِنَ الْقُرَى.

আশপাশের গ্রামসমূহে খবর না দিয়ে রাফের মত ব্যক্তির জানাযা পড়া যায় না।

এ জাতীয় হাদীস-আছারের আলোকে ফকীহগণ বলেন, জানাযার নামাযে অংশগ্রহণের জন্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের মৃত্যু-সংবাদ দেওয়া মুস্তাহাব। কিন্তু জানাযার উদ্দেশ্য ছাড়া মায়্যেতের গুণাবলী বর্ণনার উদ্দেশ্যে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা বা বিলাপ-আর্তনাদের সাথে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করার ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., হযরত হুযায়ফা রা.  প্রমুখ সাহাবীগণ নিজেদের মৃত্যু-সংবাদ এভাবে প্রচারিত হওয়ার ভয় করেই মৃত্যু-সংবাদ কাউকে না জানাতে বলেছেন। (দ্রষ্টব্য : জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৮৪-৯৮৬)

প্রশ্নে জামে তিরমিযীর বরাতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীস-

إِيّاكُمْ وَالنّعْيَ، فَإِنّ النّعْيَ مِنْ عَمَلِ الجَاهِلِيّةِ.

ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীস-আছার দ্বারা মৃত্যুর কারণে বিলাপ আর্তনাদ করা বা মৃতের গুণাবলী বর্ণনাসহ মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ এমনই বলেছেন। এতে জানাযা ও দাফনে শরীক হওয়ার জন্য মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করাকে নিষেধ করা হয়নি। নিম্নে তাঁদের কিছু ব্যাখ্যা ও উক্তি উদ্ধৃত হল।

ইমাম নববী রাহ. বলেন-

وَفِيهِ اسْتِحْبَابُ الْإِعْلَامِ بِالْمَيِّتِ لَا عَلَى صُورَةِ نَعْيِ الْجَاهِلِيّةِ، بَلْ مُجَرّدِ إِعْلَامِ الصّلَاةِ عَلَيْهِ وَتَشْيِيعِهِ وَقَضَاءِ حَقِّهِ فِي ذَلِكَ، وَالّذِي جَاءَ مِنَ النّهْيِ عَنِ النّعْيِ لَيْسَ الْمُرَادُ بِهِ هَذَا، وَإِنَّمَا الْمُرَادُ نَعْيُ الْجَاهِلِيّةِ الْمُشْتَمِلُ عَلَى ذِكْرِ الْمَفَاخِرِ وَغَيْرِهَا.

অর্থাৎ, ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগের মত না করে শুধু জানাযার নামাযের সংবাদ দেওয়ার জন্য মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা মুস্তাহাব। কেননা হাদীসে জাহেলী যুগের মত মৃতের গুণগান গেয়ে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। -আল মিনহাজ, শরহে নববী ৭/২১

হাফেজ ইবনে হাজার রাহ. বলেন, মৃত্যু-সংবাদ প্রচার নিষেধ নয়, নিষেধ তো হল জাহেলী যুগের কর্মকাণ্ড। -ফাতহুল বারী  ৩/১৪০

ইবনুল আরাবী রাহ. বলেন, মৃত্যু-সংবাদ প্রচার সংক্রান্ত হাদীসগুলোর সারকথা হল-

১. আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও নেককারদের মৃত্যু-সংবাদ দেওয়া সুন্নাত।

২. মৃতের প্রভাব-প্রতিপত্তি উল্লেখ করে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা মাকরূহ।

৩. বিলাপ, আর্তনাদের সাথে প্রচার করা হারাম। -ফাতহুল বারী ৩/১৪০

আরো দ্রষ্টব্য : আরেযাতুল আহওয়াযী, ইবনুল আরাবী কৃত ৪/২০৬

ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, জানাযার কথা প্রচার করতে সমস্যা নেই। -আল জামেউস সগীর পৃ. ৭৯

ইবরাহীম হালাবী রাহ. বলেন, বিশুদ্ধ মত হল, মৃতব্যক্তির গর্ব-গৌরবের উল্লেখ ছাড়া সাধারণভাবে অলিতে-গলিতে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা দোষণীয় নয়। কেননা (نعي الجاهلية) জাহেলী যুগের প্রচার তো হল, বিলাপ-আর্তনাদের সাথে মৃত্যু-সংবাদ প্রচার করা। -শরহুল মুনয়া, পৃষ্ঠা ৬০৩

মোটকথা, জামে তিরমিযীর উক্ত হাদীসে সাধারণভাবে মৃত্যু-সংবাদ ঘোষণা করতে নিষেধ করা হয়নি।

সুতরাং সাধারণভাবে মৃত্যু-সংবাদ পৌঁছাতে কোনো সমস্যা নেই। আর তা মৌখিকভাবে যেমন করা যায়, তদ্রূপ বর্তমানে মাইকের মাধ্যমে আরো সহজেই পৌঁছানো যায়।

উল্লেখ্য যে, জানাযা কখন হবে এটি কোনো এলাকায় একবার জানিয়ে  দেওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু কোথাও কোথাও দেখা যায় দীর্ঘ সময় নিয়ে মাইকে  একই ঘোষণা বহুবার করা হয়ে থাকে। এমনটি করা ঠিক নয়। কেননা এতে অন্যদের কষ্ট হতে পারে।

শেয়ার লিংক

আবুল খায়ের - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৫৩৬. প্রশ্ন

আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে আমাদের বাড়ির পাশে একখণ্ড জমি ক্রয় করি ১১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। জমিটি ক্রয় করার সময় মনে মনে এমন নিয়ত ছিল যে, ভবিষ্যতে যখন জমির দাম বাড়বে এবং ভালো লাভ হবে তখন তা বিক্রি করে দিব।

গত বছর এই জমিটা আমার এক প্রতিবেশীর কাছে ১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করি। জমি বিক্রির সময় এ মর্মে চুক্তি হয় যে, সে প্রতি বছর ৩ লক্ষ টাকা করে ৫ বছরে এ টাকা পরিশোধ করবে।

এখন হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এ টাকার যাকাত দিব কীভাবে? জমি বিক্রির পুরো টাকার যাকাত দিতে হবে, না প্রতি বছর যে ৩ লক্ষ টাকা দিবে তার যাকাত আদায় করলে হবে? বিষয়টা নিয়ে পেরেশানীতে আছি। জানালে কৃতার্থ হব।

উত্তর

বিক্রিত পণ্যের বকেয়া মূল্যও যাকাতের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। তাই আপনার উক্ত জমির পুরো মূল্যেরই যাকাত দিতে হবে। আপনি চাইলে প্রতি কিস্তির টাকা হস্তগত হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর যাকাতও হিসাব করে আদায় করতে হবে।

আবার ভবিষ্যতে আদায়যোগ্য কিস্তিগুলোর যাকাত প্রত্যেক বছরও আদায় করে দিতে পারেন। 

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০-৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮

শেয়ার লিংক

তাওফীকুল ইসলাম - পটুয়াখালী

৪৫৩৭. প্রশ্ন

বাজারে আমার ডেকোরেটরের দোকান আছে। তাতে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মালামাল আছে। জানতে চাই, বছরান্তে এগুলোর কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

না, ডেকোরেটরের মালামাল, যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেয়া হয় তা যাকাতযোগ্য সম্পদ নয়। সেগুলোর যাকাত দিতে হবে না। তবে ডেকোরেটরের দোকান থেকে অর্জিত আয় নেসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে তার যাকাত দিতে হবে।

-ফাতাওয়া কাযীখান ১/২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০

শেয়ার লিংক

রহমাতুল্লাহ - চাঁদপুর

৪৫৩৮. প্রশ্ন

আমি যাকাত গ্রহণের যোগ্য এক ব্যক্তিকে তার বড় একটি বিপদে অনেক টাকা ঋণ দিয়েছিলাম। লোকটি অভাবগ্রস্ত হওয়ার কারণে এক বছর পর তার পুরো ঋণ ক্ষমা করে দেই। প্রশ্ন হল, এভাবে ক্ষমা করার দ্বারা উক্ত ঋণের যাকাত কি আদায় হয়ে যাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ঋণের যাকাত আদায় হয়ে গেছে। আপনাকে উক্ত ঋণের যাকাত দিতে হবে না। কেননা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যেহেতু গরীব তাই পুরো ঋণই ক্ষমা করে দেওয়ার কারণে উক্ত ঋণের যাকাতও আদায় হয়ে গেছে। তবে আপনার যদি আরো যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে তাহলে সে সম্পদের যাকাত এভাবে মাফ করে দেওয়ার দ্বারা আদায় হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪

শেয়ার লিংক

উম্মে সাদ - পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম

৪৫৩৯. প্রশ্ন

আমরা কয়েকজন আল্লাহর ঘরে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। আমরা একটি পত্রিকায় পড়েছি যে, ইহরামের সময় মহিলাদের চেহারায় কাপড় না লাগে এমন হ্যাট জাতীয় উঁচু কিছু ব্যবহার করে তার উপর নেকাব ঝুলিয়ে পর্দা করা ওয়াজিব। এখন আমাদের প্রশ্ন হল, কারো যদি এভাবে চেহারার পর্দা করা কষ্টকর হয় এবং এজন্য চেহারা খোলা রাখতে বাধ্য হন তবে কি তিনি গুনাহগার হবেন? ইহরাম ধারণ কালীন সময়ের জন্য কি তিনি শরীয়তের দৃষ্টিতে এতটুকু ছাড় পাবেন?

উত্তর

ইহরাম অবস্থাতেও মহিলাদের চেহারার পর্দা করার বিধান আছে- এসময়ে চেহারায় কাপড় লাগানো নিষেধ। কিন্তু ঢাকা নিষেধ নয়। হযরত আয়েশা রা. থেকে বার্ণিত আছে, তিনি বলেন-

كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ، فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.

ইহরাম অবস্থায় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। লোকেরা যখন আমাদের পাশ দিয়ে যেত তখন আমরা আমাদের চাদর মাথায় সামনে ঝুলিয়ে দিতাম। আর চলে যাওয়ার পর তা সরিয়ে ফেলতাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩৩)

এ হাদীস থেকেই ইহরাম অবস্থায় চেহারা ঢাকার হুকুম ও গুরুত্ব বুঝা যায়।

মনে রাখা দরকার যে, হজে¦র কাজগুলো সাধারণত পুরুষ-মহিলা সম্মিলিতভাবেই আদায় করা হয়। তাই এক্ষেত্রে মহিলাগণের দায়িত্ব যথাসম্ভব পর্দায় থাকা এবং পুরুষদের দায়িত্ব নিজ নিজ চোখের হেফাজত করা। সুতরাং ক্যাপ বা হ্যাট জাতীয় কিছু মাথায় লাগিয়ে চেহারা ঢেকে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য রাস্তায় চলাচলের সময় অথবা বেশি ভিড়ের মধ্যে প্রয়োজনে চেহারা খোলারও অবকাশ আছে। আর কারো জন্য যদি কোনো কারণে ক্যাপ ব্যবহার করা কষ্টকর হয়ে যায় তাহলে তার জন্য ছাড় গ্রহণের অবকাশ থাকবে ইনশাআল্লাহ। অবশ্য সতর্কতামূলক এজন্য ইস্তিগফার করতে থাকবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৫৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৬; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ.১১৫

শেয়ার লিংক

আরিফুর রহমান - বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

৪৫৪০. প্রশ্ন

আমার ভগ্নিপতি ছোটবেলাতেই পিতা-মাতার সাথে সৌদিআরব চলে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। চার-পাঁচ বছর পর পর বাংলাদেশে এসে দু’-এক মাস থেকে যেতেন। তিনি গত বছর সৌদিতেই হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হন। তিনি তখন বলেছিলেন, আমি পূর্ণ সুস্থ হলে আমার ফরয হজ্ব পালন করে নেব। আর না পারলে তোমরা আমার পক্ষ থেকে হজ্ব করে নিবে। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়ে ইন্তিকাল করেন। পরে সৌদিআরব থেকে তাকে বাংলাদেশে এনে দাফন করা হয়।

এখন মুহতারামের নিকট প্রশ্ন হল, আমার ভগ্নিপতির ওসিয়তকৃত হজ্ব সৌদিআরবে অবস্থানরত তার বাবা/ভাই বা অন্য কারো মাধ্যমে করালে হবে, নাকি বাংলাদেশ থেকে কাউকে পাঠিয়ে তার ওসিয়তকৃত হজ্ব করাতে হবে?

উত্তর

আপনার ভগ্নিপতি বাংলাদেশী হলেও তিনি যেহেতু সপরিবারে সৌদিআরবে বসবাস করছিলেন তাই সেখান থেকেই হজ্ব করা তার উপর ফরয ছিল। সুতরাং তার মৃত্যুর পর ওসিয়তকৃত হজ্বও সেখান থেকে আদায় করলেই চলবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২৭/১৭৩; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ২/৯০৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৪

শেয়ার লিংক

গোলাম কাদের - মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি

৪৫৪১. প্রশ্ন

আমার বড় ছেলে অনেক দিন থেকে মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছে। তার অসুস্থতার এক পর্যায়ে আমি একটি মান্নত করেছিলাম। আল্লাহ আমার ছেলেকে সুস্থ করে দেন। সে সুস্থ হলে আমি একটি হজ্ব করব। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে সে এখন সুস্থ। আরেকটি বিষয় হল, আমার উপরও হজ্ব ফরয। কিন্তু এখনো তা আদায় করার সুযোগ হয়নি।

এখন জানার বিষয় হল, আমাকে কয়টি হজ্ব আদায় করতে হবে। একটি হজ্ব আদায় করলে উভয়টির ক্ষেত্রে (ফরয ও মান্নত) যথেষ্ট হবে কি না? জানালে খুব উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি এখনো যেহেতু ফরয হজ্ব আদায় করেননি তাই তা আদায় করার সময় মান্নতেরটাসহ একত্রে নিয়ত করে নিলেই একইসাথে উভয়টি (ফরয ও মান্নত হজ্ব) আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মান্নতের জন্য পৃথক হজ্ব আদায় করতে হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭; আলবাহরুল আমীক ৪/২২১০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৭৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/২৬৭

শেয়ার লিংক

আরবিন - কাজীপাড়া, ঢাকা

৪৫৪২. প্রশ্ন

কিছুদিন আগের ঘটনা। আমাদের কলেজের সহপাঠি দু’জন ছেলে-মেয়ে তাদের পরিবারের অগোচরে ঢাকার এক কাজী অফিসে গিয়ে উভয়ে সম্মতিক্রমে নিকাহনামায় স্বাক্ষর করেছে। সেখানে ছেলের ভগ্নিপতি এবং আরো দু’জন বন্ধুও উপস্থিত ছিল। তারাও সাক্ষী হিসাবে স্বাক্ষর করে। তবে ছেলে-মেয়ে দু’জনের কেউই মুখে ইজাব-কবুল করেনি। ফলে তার এক বন্ধুর নিকট বিষয়টা খটকা লাগে। কেননা সাধারণত আমরা যেসব বিবাহের আকদ দেখে থাকি এতে বর-কণে উভয়েই মৌখিকভাবে ইজাব-কবুল করে। তারপর নিকাহনামায় স্বাক্ষর করে।

তাই হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, উপরোল্লেখিত অবস্থায় তাদের বিবাহ কি শরীয়ত মোতাবেক সহীহ হয়েছে? দ্রæত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী তাদের উক্ত বিবাহ সহীহ হয়নি। কেননা বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য দু’জন সাক্ষীর সামনে মৌখিকভাবে ইজাব-কবুল করা জরুরি। শুধু নিকাহনামায় স্বাক্ষর করার দ্বারা বিবাহ হয় না।

নিকাহনামা হচ্ছে একটি সরকারী নিবন্ধন মাত্র। যা বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর পূরণ করাই নিয়ম। তাতে বর-কণে ও সংঘটিত বিবাহ সম্পর্কে বিভিন্ন বিবরণ থাকে। বিবাহের আকদ করা ছাড়া তা পূরণ করাই নিয়ম-বহির্ভূত।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৫৪৩. প্রশ্ন

আমার ভগ্নিপতির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। ঢাকাতেও তাদের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। তার কর্মস্থান ঢাকায় ছিল বিধায় ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকাস্থ বাড়িতেই বসবাস করতেন। বিশেষ ছুটির সময়গুলোতে হোমনায় এসে থাকতেন। গত কয়েকদিন আগে আমার ভগ্নিপতি তার ঢাকাস্থ বাড়িতে হার্ট এ্যাটাক করেন। হসপিটালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন তাকে হোমনার গ্রামের বাড়িতে কবরস্থ করা হয়। এ অবস্থায় এখন আমার বোন কি হোমনায় এসে ইদ্দত পালন করতে পারবে? না ঢাকাতেই ইদ্দত পালন করতে হবে? অথবা যদি কিছুদিন সে ঢাকায় আর কিছুদিন হোমনায় ইদ্দত পালন করে তাহলে কি কোনো অসুবিধা আছে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার বোন যেহেতু ঢাকার বাড়িতেই বসবাস করতেন এবং স্বামীর মৃত্যুর সময় সেখানেই ছিলেন তাই বিশেষ কোনো অসুবিধা না হলে তার জন্য ঢাকাতেই ইদ্দত পালন করা জরুরি। তবে একান্ত কোনো ওজরের কারণে যদি এখানে ইদ্দত পালন করা কঠিন হয়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তার স্বামীর হোমনার বাসাতে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারবেন।

কিন্তু দুই স্থান মিলে ইদ্দত পালন করা যাবে না; বরং যেখানে ইদ্দত পালন শুরু করবে সেখানেই শেষ করবে। তবে কোনো স্থানে ইদ্দত শুরু করার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে বা অন্য কোনো বিশেষ ওজরে ইদ্দতের স্থানে থাকা সম্ভব না হলে অন্যত্র গিয়ে ইদ্দত সম্পন্ন করতে পারবে।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৫-৩২৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৫

শেয়ার লিংক

আবুল কালাম মোল্লা - ফরিদপুর

৪৫৪৪. প্রশ্ন

বাইতুস সালাম জামে মসজিদের নামে একটি দোতলা মার্কেট ওয়াকফ করা আছে। ঐ মার্কেটের ভাড়া দিয়ে মসজিদের যাবতীয় খরচ নির্বাহের পরও মাস শেষে অনেক টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এভাবে বেশ কিছু টাকা জমে গেলে ঐ টাকা দিয়ে বড় শপিংমলে আরো দুটি দোকান কেনা হয়। বর্তমানে বিশেষ জটিলতায় দোকানদুটি বিক্রি করে ফেলা প্রয়োজন। মসজিদ কমিটি  ইতিমধ্যে সেগুলোর বায়নাও করে ফেলেছে। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য এগুলো বিক্রি করা কি বৈধ হবে? নাকি মূল ওয়াকফিয়া সম্পত্তির মত এগুলোর বিক্রিও অবৈধ?

উত্তর

ওয়াকফের আয় দিয়ে কেনা দোকান মূল ওয়াকফিয়া সম্পত্তির মত নয়। এ ধরনের সম্পত্তি প্রয়োজনে মসজিদের স্বার্থে বিক্রি করা জায়েয। সুতরাং মসজিদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জন্য প্রশ্নোক্ত দোকানদুটি বিক্রি করা জায়েয হবে। তবে সে বিক্রি ন্যায্য মূল্যে হতে হবে এবং বিক্রিত মূল্য মসজিদের কাজে ব্যয় হতে হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৮-১৩৯; আলইসআফ পৃ. ৫৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪১৬

শেয়ার লিংক

ইয়াসিন আহমদ - মাদারিপুর

৪৫৪৫. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদটি মুসল্লি বেশি হওয়ার কারণে আরো সম্প্রসারিত করা দরকার। তাই মসজিদেরই ওয়াকফকৃত জমি, যেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করা হবে, সেখানে তিনটি কবর রয়েছে। তিনটির মধ্য থেকে সবার শেষে যে কবরটি স্থাপন করা হয়েছে সেটার বয়স ৮ বছর। কবরওয়ালাদের পরিবার মসজিদ সম্প্রসারণের কথা শুনে তারা কবর থেকে মাটি ও হাড্ডি উঠিয়ে পাশে অন্যত্র নিয়ে তাদের কবরের চিহ্ন রাখার জন্য দাফন করেছে। জানার বিষয় হল, উক্ত কবরের জায়গায় মসজিদ সম্প্রসারণ করা যাবে কি না? অনেকে বলেন, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে নামায পড়া শিরক। কথাটি কতটুকু সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন। আরো জানতে চাই, কবর কতদিনের পুরাতন হলে তার উপর প্রয়োজনে বাড়ি, মসজিদ বা সড়ক নির্মাণ করা যায়?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরগুলো যেহেতু স্থানান্তর করা হয়েছে এবং এখন সেখানে কবর নেই, আর ঐ জায়গাটি মসজিদেরই তাই জায়গাটি সমান করে দিয়ে সেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করতে কোন অসুবিধা নেই। আর মসজিদ সম্প্রসারণ করে মসজিদের ভেতর কবর রেখে দেওয়া কোনোভাবেই জায়েয নয়। আর কবরকে সরাসরি সিজদা করা শিরক। এমনিভাবে মসজিদের ভেতর কবর থাকলে কবরকে সামনে রেখে নামায পড়া হারাম। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সেখানে যেহেতু কবর নেই তাই সেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করলে এসব প্রশ্নই আসে না।

প্রকাশ থাকে যে, কবরের জায়গা যদি ওয়াকফিয়া না হয়; বরং ব্যক্তি মালিকানধীন হয় এবং কবর এত পুরাতন হয় যে লাশ মাটির সাথে মিশে যাওয়ার প্রবল ধারণা হয় তাহলে ঐ কবরের চিহ্ন সমান করে এর উপর বাড়ী-মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে। কেননা লাশ মাটি হয়ে গেলে তা আর কবরের হুকুমে থাকে না।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৩৬; উমদাতুল কারী ৪/১৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; ইমদাদুল আহকাম ৩/২৮৬

শেয়ার লিংক

আবু কুতাইবা - ঢাকা

৪৫৪৬. প্রশ্ন

দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমার বাড়ীর জমি নিয়ে মামলা চলছিল। এর পেছনে আমার অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। একবার মান্নত করি যে, উক্ত জমির ব্যাপারে যদি আদালত আমার পক্ষে রায় দেয় তাহলে আমার চরের জমিটি মাদরাসায় গরীব ছাত্রদের জন্য সদকা করে দিব। অনেক মামলা-মুকাদ্দামার পর আদালত আমার পক্ষে রায় দেয়। এদিকে ভবিষ্যতে চরের জমিটির দামও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমি চাচ্ছি, জমির পরিবর্তে তার বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করে মাদরাসার গোরাবা ফান্ডে দিয়ে দিতে। জানার বিষয় হল, আমি নির্দিষ্টভাবে একটি জমি সদকা করার মান্নত করেছি। তাই তার মূল্য আদায়ের দ্বারা কি আমার মান্নত আদায় হবে?

উত্তর

আমাদের দেশে জমি সাদকা করে দিব বললে সাধারণত ওয়াকফই বুঝানো হয়। তাই উক্ত জমিটিই মাদরাসায় দিয়ে দিতে হবে। এটি নিজে রেখে দিয়ে মূল্য সদকা করা ঠিক হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু কুতাইবা - ঢাকা

৪৫৪৭. প্রশ্ন

আমার বাবা তিন বছর আগে মাদরাসায় একটি জমি ওয়াকফ করেছেন। সে জমিতে অনেকগুলো কাঠের গাছ আছে। বাবার ইন্তেকালের পর আমরা গাছগুলো ওয়ারিসদের সম্পদের মধ্যে হিসাব করেছি এবং বিভিন্ন সময় প্রয়োজনে ব্যবহার করেছি। কারণ বাবা এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলে যাননি। এখন সেখানে একটি মাদরাসা হবে। তারা মাদরাসার নির্মাণকাজে গাছগুলো ব্যবহার করতে চাচ্ছে। হুজুরের কাছে জানতে চাই, উক্ত গাছগুলোর প্রকৃত হকদার কে? যদি এর হকদার মাদরাসা হয় তাহলে এ পর্যন্ত যে গাছগুলো কেটে ব্যবহার করেছি সেগুলোর মূল্য কীভাবে পরিশোধ করব? কারণ গাছ আর কাঠ তো আর ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনার বাবা যখন জমিটি ওয়াকফ করেছেন তখন জমিতে যে গাছগুলো ছিল সেগুলো ওয়াকফের অন্তর্ভুক্ত নয়- এ কথা বলেননি। বরং গাছগুলোসহই মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট জমিটি হস্তান্তর করেছেন। তাই ঐ গাছগুলোও ওয়াকফের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। কেননা জমি ওয়াকফের সময় বড় গাছ বা কাঠ গাছ ওয়াকফ থেকে বাদ না দিলে তা জমির সাথেই ওয়াকফ হয়ে যায়। তাই মাদরাসাই এসকল গাছের হকদার। আপনাদের জন্য সেগুলো কেটে নিয়ে আসা ও ব্যবহার করা জায়েয হয়নি। এ পর্যন্ত আপনারা যে গাছগুলো নিয়েছেন সেগুলোর বাজারমূল্য অর্থাৎ গাছ কাটার দিন এর যে মূল্য ছিল সে মূল্য হিসাব করে মাদরাসার ফান্ডে দিয়ে দিতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/২৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৮

শেয়ার লিংক

এম এম এ মান্নান - সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী

৪৫৪৮. প্রশ্ন

মুহতারাম, বিনীত নিবেদন এই যে, আমার পিতা মরহুম হাজী মাওলানা আবদুল মজিদ রাহ. তার নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মসজিদ-মাদরাসা সংলগ্ন চার শতক জমি ক্রয় করেন হেফজ খানার জন্য ওয়াকফ করার উদ্দেশ্যে। তবে আমার পিতার আকস্মিক মৃত্যু হওয়ায় তিনি নিজ ওয়াকফের কাজ লিখিতভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হন নাই বিধায় আমাকে এবং আমাদের সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ওয়াকফের কাজ সমাপ্ত করার আদেশ করে যান।

অতএব, আমি আমার পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে ওসিয়্যতকৃত জমি লিখিত দলিলের মাধ্যমে ওয়াকফের কাজ সমাপ্ত করি।

সুতরাং উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে আমাদের প্রশ্ন হল, মসজিদ-মাদরাসা কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দের সর্ব সম্মতিক্রমে ওসিয়তকারীর উত্তরাধিকারী জীবিত থাকা অবস্থায় ওয়াকফকৃত জমি ফেরত নেওয়া অথবা রদবদল করা অথবা সামাজিক কোনো কাজে ব্যবহার করা (যেমন পারিবারিক কবরস্থান বানানো) জায়েয হবে কি না?

সুতরাং এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের বিধানমত সঠিক সমাধান দিলে আমি এবং আমাদের এলাকাবাসী আপনাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা মতে ঐ জমিটি হেফজখানার জন্যই ওয়াকফ হয়ে গেছে। আপনার পিতার মৌখিক বলার দ্বারাই এ ওয়াকফ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর তার ওয়ারিসদের জন্য জমিটি ফেরত নেয়া বা অন্য কোনো দ্বীনী বা সামাজিক কাজে ব্যবহার করা যেমন কবরস্থান বানানো ইত্যাদি জায়েয নয়। এমনকি মুতাওয়াল্লী বা কমিটির সদস্যগণ একমত হয়েও জমিটি অন্য কাজে লাগাতে পারবেন না।

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে উমর রা. নিজের কিছু সম্পত্তি সদকা করেছিলেন, তা ছিল ‘ছামগ’ নামক একটি খেজুর বাগান। উমর রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি সম্পদ পেয়েছি যা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। আমি এটি সদকা করতে চাচ্ছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

تَصَدّقْ بِأَصْلِهِ، لاَ يُبَاعُ وَلاَ يُوهَبُ وَلاَ يُورَثُ، وَلَكِنْ يُنْفَقُ ثَمَرُهُ.

মূল সম্পদটি এভাবে সদকা করো যে, তা বিক্রি করা যাবে না। দান করা যাবে না এবং কেউ ওয়ারিস হবে না; বরং তার ফল দান করা হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৬৪)

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ওয়াকফ-সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব, উক্ত জমি ফেরত নেওয়া বা রদবদল করা কিংবা অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকা এবং জমিটিতে দ্রুত হিফজখানার জন্য দলীল করে তাতে হিফজখানা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৪৯, ৩৮৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৭

শেয়ার লিংক

তাওহীদুল ইসলাম - মাধবদী, নরসিংদী

৪৫৪৯. প্রশ্ন

কয়েক বছর আগে সরকারি অনুমোদন ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় মাতব্বরদের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তখন আমাদের পরিবারেও গ্যাস সংযোগ নিয়ে গ্যাস ব্যবহার করা হয় এবং এর জন্য সরকারকে কোনো বিল দেওয়া হয়নি। কোনো কোনো লোকের কাছে শুনেছি, এভাবে গ্যাস ব্যবহার বৈধ হয়নি। আমার প্রশ্ন হল, যদি বৈধ না হয় তাহলে গ্যাস ব্যবহার করার কারণে কি এর ন্যায্য বিল সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে? যদি পৌঁছে দিতে হয় তাহলে কীভাবে এবং কোথায় পৌঁছে দিব?

উল্লেখ্য যে, অনুমোদন ছাড়া যারা গ্যাস ব্যবহার করেছে সরকার তাদের ব্যাপারে জরিমানা বা এ জাতীয় কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়নি। তবে অনুমোদন ছাড়া যারা গ্যাস সংযোগ নিয়েছিল প্রশাসনিকভাবে তাদের গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

উত্তর

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ব্যতীত আপনাদের জন্য গ্যাস সংযোগ নেওয়া এবং তা ব্যবহার করা অন্যায় হয়েছে। এতে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার গুনাহ হয়েছে। এখন আপনাদের কর্তব্য হল, যে ক’দিন এভাবে গ্যাস ব্যবহার করেছেন এর ন্যায্য বিল গ্যাসঅফিসে যোগাযোগ করে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে সরকারি খাতে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করা। যদি তা সম্ভব না হয় তবে সমপরিমাণ টাকা গরীব-মিসকিনদের দিয়ে দেওয়া। এবং এই অবৈধ কাজের জন্য তওবা-ইস্তিগফার করা।

-আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮৩; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যা আলকুওয়াইতিয়্যা ৮/২৬২

শেয়ার লিংক

ডা. মফিজুর রহমান - বিজয়রামপুর, মণিরামপুর, যশোর

৪৫৫০. প্রশ্ন

হযরত মুফতী সাহেব (আল্লাহ আপনাকে দ্বীনের খেদমতের সাথে দীর্ঘজীবী করুন) আমার কয়েকটি বিষয়ে জানার খুবই প্রয়োজন।

১. কোনো মুসলমানের জন্য  বিধর্মীর সাথে পার্টনার হিসেবে ব্যবসা করা জায়েয হবে কি? শরীয়ত এ সম্পর্কে কী বলে?

২. এক ব্যক্তি কারো থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নেন সাত কাঠা জমি বন্ধক রেখে। এরপর বন্ধকগ্রহিতা পুনরায় উক্ত জমি ঋণগ্রহিতার নিকট ফেরত দেন এই শর্তে যে, উক্ত জমি থেকে প্রতি বছর আমাকে পনের মন ধান দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ঋণগ্রহিতা উক্ত জমিতে ধান চাষ নাও করতে পারেন। তবুও তাকে পনের মন ধান অথবা তার মূল্য দিতে হবে। পুরো বিষয়ে শরীয়ত কী বলে?

অনুগ্রহ করে মাসআলাগুলোর সমাধান দিলে খুবই  দয়া হয়। দ্বীনের উপর চলা আমার জন্য সহজ হবে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

উত্তর

 ১. কোন অমুসলিম বা বিধর্মীর সাথে যৌথভাবে ব্যবসা করা বা তাকে ব্যবসায় অংশীদার করা নাজায়েয নয়। তবে সর্বক্ষেত্রে বৈধতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে শরীয়তের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকতে হবে।

উল্লেখ্য যে, অমুসলিমদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ গাঢ় সম্পর্ক স্থাপন করতে কুরআনুল কারীমে বারণ করা হয়েছে। তাই একান্ত বাধ্য না হলে ব্যবসার মত গুরুত্বপূর্ণ কারবারে তাদেরকে অংশীদার না করাই উচিত। কেননা এর দ্বারা কিছুটা হৃদ্যতার সম্পর্ক হয়েই যায় এবং তাদের কৃষ্টিকালচারের প্রভাব পড়ে। -বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬১৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৩৯

২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বন্ধকী জমির পরিবর্তে ১৫ মন ধান দেওয়ার চুক্তি করা বৈধ নয়। কেননা এক্ষেত্রে সে এ ১৫ মন ধান অতিরিক্ত নিচ্ছে ঋণের বিনিময়ে। আর কাউকে ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত নেওয়া সুদ। এ ধরনের কারবার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। -আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান - বরিশাল

৪৫৫১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার কিছু লোককে দেখেছি, তারা এলাকার নেতাদেরকে কিছু টাকা দিয়ে রাস্তার পাশের সরকারি গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে নিষেধ করলে তারা বলে এসব সরকারি মাল। জনগণ নিলে কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া আমরা তো টাকা দিয়েই নিচ্ছি। জানার বিষয় হল, তাদের জন্য উক্ত গাছ কেটে নেওয়া বৈধ হয়েছে কি না? যদি না হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে তারা এর মূল্য আদায় করবে?

উত্তর

রাস্তার পাশে সরকারিভাবে রোপণকৃত গাছের মালিক সরকার। এলাকার নেতারা এগুলোর মালিক নয়। তাই ওদেরকে টাকা দিয়ে এসব গাছ কেটে নেওয়া বৈধ হবে না। ব্যক্তিগত সম্পদ যেভাবে মালিকের অনুমতি ছাড়া ভোগ করা বৈধ নয়। তদ্রূপ সরকারি সম্পদও সরকারি কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া ভোগ করা নাজায়েয। তাই এভাবে সরকারি সম্পদ নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

আর যে গাছগুলো কাটা হয়ে গেছে সেগুলোর মূল্য সরকারি কোনো খাতে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে ঐ পরিমাণ টাকা গরীব-মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করে দিবে। এবং এজন্য তওবা-ইস্তিগফার করবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৪৭; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যা আলকুওয়াইতিয়্যা ৮/২৬২

শেয়ার লিংক

সালমান - সিলেট

৪৫৫২. প্রশ্ন

ঞ্চটার্মিনালে এমন কিছু লোক থাকে, যাদেরকে টাকা দিলে তারা যাত্রীদের মালামাল হেফাযত করে। আমার পরিচিত এমন এক লোকের কাছে এক শত টাকা দিয়ে বলেছি, ব্যাগটা তোর কাছে রেখে গেলাম। এক ঘণ্টা পর আমি আসছি। সে বলল, ঠিক আছে, আপনি যান আমি দেখছি। এক ঘণ্টার আগেই আমি ফিরে এসেছি। এসে দেখি, আমার ব্যাগটি নেই। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সে অন্য একজনের কাছে ব্যাগটি দিয়ে তার কোনো কাজে লঞ্চে গিয়েছে। কিন্তু যার কাছে দিয়ে গেছে সে তখনই বলেছে, মালগুলো সে রাখতে পারবে না। ব্যাগের ভেতর প্রায় পাঁচ হাজার টাকার জিনিস-পত্র ছিল। হুযূরের কাছে জানতে চাই, এগুলোর ক্ষতিপূরণ কি আমি তাদের থেকে নিতে পারব? নিতে পারলে কার কাছ থেকে নিব? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তির নিকট ব্যাগটি আমানত ছিল। তার কর্তব্য ছিল, ব্যাগটির যথাযথ হেফাজত করা । দ্বিতীয় ব্যক্তি দায়িত্ব না নেওয়া সত্তে¡ও তার কাছে ব্যাগটি রেখে যাওয়া তার অন্যায় হয়েছে এবং দায়িত্ব পালনে তার অবহেলা হয়েছে। তাই এর ক্ষতিপূরণ আদায় করা প্রথম ব্যক্তিরই কর্তব্য।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৮৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়্যা ৫/৮১, ৮৬; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৭৭৭; দুরারুল হুক্কাম ১/৭১২

শেয়ার লিংক

এনায়েতুল্লাহ - ভোলা, আলীনগর

৪৫৫৩. প্রশ্ন

তিন বছর আগে আমি আমার পরিচিত এক লোককে দু’বস্তা চাল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা ধার দিয়েছিলাম। সে দিবে দিবে বলে তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখনো টাকাগুলো পরিশোধ করেনি। তখন তিন হাজার টাকা দিয়ে দু’বস্তা চাল পাওয়া যেত। এখন তা দিয়ে সোয়া বস্তার মত চাল পাওয়া যায়। জানার বিষয় হল, আমি কি তার কাছ থেকে বর্তমান মূল্য অনুযায়ী দু’বস্তা চালের মূল্য উসূল করতে পারব?

উত্তর

বর্তমানে চালের দাম বেড়ে গেলেও আপনি যত টাকা ঋণ দিয়েছেন তত টাকাই নিতে হবে। অতিরিক্ত নিতে পারবেন না। কেননা ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত নেওয়া সুদ। আর যদি টাকার পরিবর্তে চাল নিতে চান তাহলে তিন হাজার টাকা দ্বারা বর্তমানে যে পরিমাণ চাল পাওয়া যায় তাই নিতে হবে। এর বেশি নেওয়া যাবে না।

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ৩/২২৬১; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইয়াসিন - মিরপুর, ঢাকা

৪৫৫৪. প্রশ্ন

সিক আলকাউসারের সফর সংখ্যা ১৪৩৯ (নভেম্বর-২০১৭) ৪২২৩ নং প্রশ্নের উত্তর থেকে জেনেছি যে, ব্যাংকে চাকরি উপার্জিত টাকা হারাম। ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে। তাই তার উপার্জন দ্বারা মা-বাবা হজ্ব করতে পারবেন না। এই উত্তর থেকে আমার মনে সংশয় এসেছে যে-

১. বিভিন্ন বিধর্মী বিদেশী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানী করে থাকে। তারা সুদকে হারাম মনে করে না। ব্যাংক থেকে সুদী লোন নিয়ে থাকে এবং ব্যাংক থেকে সুদ দেওয়া হলে তাও গ্রহণ করে। আমি উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসাবে বাংলাদেশে তাদের অফিসে কাজ পরিচালনা করে থাকি। এক্ষেত্রে আমার কাজ পোষাকশিল্প নিয়েই। প্রস্তুত করা থেকে নিয়ে শিপমেন্ট পর্যন্ত সকল কাজের  পরিচালনা আমার দায়িত্বে। তো এ বাবদ তারা যে বিনিময় প্রদান করে থাকে তা গ্রহণ করা হালাল না হারাম?

২. আমার এক দ্বীনী ভাইয়েরও প্রশ্ন হল, উপরোক্ত কোম্পানী ও এধরনের প্রতিষ্ঠানের আমদানীকৃত পণ্য সে এদেশ থেকে বিদেশে পরিবহন করে থাকে। এ বাবদ তাদের থেকে প্রাপ্ত টাকা হালাল না হারাম। তার পরিবহন সংক্রান্ত কার্যাদিও বৈধ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তার পরিবহন খরচ পরিশোধ করছে তো উক্ত ইহুদী-খ্রিস্টানদের কোম্পানী, যারা সুদী লোন নেয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে সুদ গ্রহণও করে। এ কারণে আমাদের বেতন ও পারিশ্রমিক অবৈধ গণ্য হবে কি না?

দয়া করে মাসআলা দু’টির সমাধান কুরআন-হাদীসের আলোকে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের মূল কাজটি (অর্থাৎ পোশাক আমদানীতে সহযোগিতা ও পণ্যপরিবহনের কাজ) যেহেতু জায়েয তাই এ চাকরি করা বা সেবা দেওয়াও জায়েয। আর আপনাদের পারিশ্রমিক তো দৃশ্যত আপনাদের কাজের মাধ্যম থেকেই আসে। অর্থাৎ আমদানীকারকগণ কম মূল্যে পোশাক কিনে বেশি মূল্যে তা বিক্রয় করে থাকে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত মুনাফা তাদের কর্মচারী ও সেবাদাতাদেরকে দিয়ে থাকে। সুতরাং এটি অবৈধ নয়। তবে ঐ প্রতিষ্ঠানটি যে সুদী লোন নিয়ে কারবার করে থাকে, এটি তো অবশ্যই ঘৃণিত কাজ এবং সাধ্য থাকলে এমন প্রতিষ্ঠানের কাজ না করা তাকওয়ারও দাবি। কিন্তু এ কারণে এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত আয়কে নাজায়েয বলা যাবে না। কারণ তারা তো আর সুদের টাকা থেকে এ কর্মচারী বা সেবাদানকারীকে বেতন/পারিশ্রমিক দিচ্ছে এমনটি বলা যায় না এবং সুনিশ্চিতভাবে তা জানাও যায় না। তাই এ নিয়ে সংশয়ের প্রয়োজন নেই।

আর প্রশ্নে উদ্ধৃত মাসিক আলকাউসারের উক্ত মাসআলায় ব্যাংকে চাকরি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ হারাম হওয়ার কারণ হল, ব্যাংকে চাকরির অর্থই হল, সুদী কারবারে সহায়তা করা এবং সুদী লেনদেন, সুদী চুক্তি লেখা বা তা সম্পাদনের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো পর্যায়ে সরাসরি অংশগ্রহণ করা। আর এগুলোর সবই হারাম। এছাড়া ব্যাংকের উপার্জনের মূল অংশই আসে সুদ থেকে। তাই তা থেকে প্রদত্ত পারিশ্রমিকও হারাম হবে। তাই ব্যাংকের চাকরির সাথে প্রশ্নোক্ত দুটি কর্মস্থলের কোনো মিল নেই।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৫, ১৫/১৩২; ফাতাওয়া হিন্দয়া ৪/৪১০; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৪

শেয়ার লিংক

জিয়াউল হক - ভোলা

৪৫৫৫. প্রশ্ন

আমরা দুই ভাই মিলে একলক্ষ আশি হাজার টাকা দিয়ে যাত্রী বহনের জন্য একটি মোটর সাইকেল কিনেছি। আমার ছোট ভাই ষাট হাজার টাকা আর আমি এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিয়েছি। চুক্তি হয়েছিল আমরা আমাদের মূলধন অনুপাতে লাভ নিব। মোটর সাইকেল নিয়মিত আমার ছোটভাই-ই চালায়। যার কারণে সে এত অল্প লাভে সন্তুষ্ট নয়। এজন্য আমি বলেছি, তুই প্রতিদিন লাভের সাথে দুইশত টাকা অতিরিক্ত নিবি। জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত চুক্তিটি বৈধ হয়েছে কি না? বৈধ না হলে সঠিক পদ্ধতি কী হতে পারে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মোটর সাইকেলের মালিকানা অনুযায়ী লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। আর আপনার ছোট ভাই যেহেতু মোটর সাইকেলটি চালায় তাই তাকে দৈনিক যে দুইশত টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে তা তার পারিশ্রমিক হিসাবে ধর্তব্য হবে। শরীয়তের  দৃষ্টিতে এতে সমস্যা নেই।

-রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৬; মিনহাতু খালিক ৫/১৮৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ১০৭৩

শেয়ার লিংক

মোশারেফ হোসাইন - ঢাকা

৪৫৫৬. প্রশ্ন

ঈদের তিন দিন পূর্বে কুরবানীর জন্য একটি খাসি ক্রয় করি। ঈদের দিন দুপুরে ব্যবসায়িক জরুরি কাজের জন্য আমি সিঙ্গাপুর চলে যাই। তাই ঈদের দিন কুরবানী করতে পারিনি। বাসায় যেহেতু অন্য কোনো পুরুষ মানুষ ছিল না তাই পরেও আর খাসিটি কুরবানী করা হয়নি। ঈদের ৫ দিন পর আমি দেশে আসি। এখন আমার কী করা উচিত? খাসিটি কুরবানী করতে হবে নাকি গরীবদেরকে সদকা করে দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনি যেহেতু কুরবানীর শেষ সময়ে মুসাফির ছিলেন তাই আপনার উপর বিগত কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খাসিটির কুরবানী করা বা সদকা করা কোনোটিই আবশ্যক নয়। তারপরও যদি আপনি ছগলটিকে সদকা করে দিতে চান তাহলে সদকা করে দিতে পারবেন। এতে আপনি সদকার সওয়াব পেয়ে যাবেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৮১৪২, ৮১৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফারুক - গুঁইমারা, খাগড়াছড়ি

৪৫৫৭. প্রশ্ন

আমাদের পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি কুরবানীর জন্য একটি গরু ক্রয় করে। কিন্তু ঘটনাক্রমে কুরবানীর আগের দিন গরুটি চুরি হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তির করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির নিকট যদি কুরবানীর দিনসমূহে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে আরেকটি পশু খরিদ করে কুরবানী করতে হবে। সেক্ষেত্রে একটি ছাগল কুরবানী দিলেও চলবে। আর কুরবানীর দিনসমূহে যদি তার নিকট প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে তাহলে তাকে নতুন করে কুরবানী করতে হবে না।

-কিতাবুল আছল ৫/৪১০; শরহু মুখতাছারিত তাহাবী ৭/৩৬১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

শেয়ার লিংক

মিহাদ নাবীহ - লালবাগ, ঢাকা

৪৫৫৮. প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম, কোনো ভূমিকা ছাড়াই মূল বিষয় তুলে ধরছি। আমরা আমাদের বাড়ি-ঘর, মসজিদ-মাদরাসার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কুরআনের আয়াত ও হাদীস লিখিত ওয়ালমেট, ক্যালেন্ডার, শোপিছ ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ব্যবহার করে থাকি। এগুলোর কোনোটির মধ্যে সরাসরি আরবী লেখা থাকে, কোনোটির মধ্যে তরজমা, কোনোটির মধ্যে কেলিওগ্রাফির মাধ্যমে আয়াত বা হাদীস লেখা থাকে। আমার প্রশ্ন হল, এগুলো ব্যবহার কি জায়েয, না নাজায়েয? এগুলোর হুকুম কী? এ ধরনের ক্যালেন্ডার দিয়ে দরসি গায়রে দরসি কিতাব বাঁধাই করার, পড়ার টেবিলে বিছিয়ে ব্যবহার করার এবং বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে লাগানোর হুকুম কী?

বিষয়টি ছোট করে না দেখে উপযুক্ত দলিলসহকারে বিস্তারিত সমাধান পেশ করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি। বারাকাল্লাহু ফীকুম, ওয়াসসালামু আলাইকুম।

উত্তর

ওয়া আলাইকুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। কুরআন মাজীদ আল্লাহ তাআলার কালাম। এটি প্রদর্শনের বস্তু নয়। তাই শুধু প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কুরআন-হাদীস লিখিত বা ক্যালিওগ্রাফি করা ওয়ালমেট বা শোপিছ ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে কেউ যদি এ উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করে যে, এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ হবে, এতে লিখিত বাণীর হেদায়েত ও শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে তাহলে শর্ত সাপেক্ষে তা করা যেতে পারে। সে শর্তগুলো হল, আয়াত ও হাদীসের মর্যাদার প্রতি খেয়াল রাখা, যেন তা নিচে পড়ে না যায় বা নাপাক কিছুর সাথে স্পর্শ না হয়, আর ধুলাবালি থেকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।

কুরআন-হাদীস লিখিত ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রেও একই বিধান। কুরআন-হাদীসের মর্যাদার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। বাতাসে যাতে উড়াউড়ি না করে সে ব্যবস্থাও করতে হবে। তবে ক্যালেন্ডারে কুরআনের আয়াত বা হাদীস না লেখাই উচিত; কারণ মানুষ এটিকে সেভাবে মর্যাদা দিয়ে ব্যবহার করে না এবং মাস ও বছর শেষে তা হেফাযত করে না; যেখানে সেখানে তা ফেলে দেয়।

কুরআন-হাদীস লিখিত ক্যালেন্ডার দ্বারা কিতাব বা বই-পুস্তক বাঁধাই করা মাকরূহ। এটা কুরআন-হাদীসের মর্যাদা পরিপন্থী। এ ধরনের ক্যালেন্ডার প্রয়োজন শেষে হেফাজত করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে পুড়িয়ে ছাইগুলো কোনো পবিত্র স্থানে দাফন করে দিবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৬৭, ৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯, ৫/৩২২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/১৩০

শেয়ার লিংক