মহিলাদের অপবিত্রতার সময় তিলাওয়াতের নিয়ত ব্যতীত দলিল পেশ করার উদ্দেশ্যে এক শ্বাসে অথবা শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে একাধিক আয়াত একসাথে পড়া যাবে কি?
মহিলাদের অপবিত্রতার সময় তিলাওয়াতের নিয়ত ব্যতীত দলিল পেশ করার উদ্দেশ্যে এক শ্বাসে অথবা শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে একাধিক আয়াত একসাথে পড়া যাবে কি?
না, হায়েয বা নেফাস অবস্থায় দলিল-প্রমাণ পেশ করার উদ্দেশ্যেও এক শ্বাসে বা শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে কুরআনের কোনো আয়াত পড়া যাবে না। কেননা হায়েয-নেফাস অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,ঋতুমতি মহিলা ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি যেন কুরআন মাজীদ না পড়ে।
Ñআল ইলাল, ইবনে আবী হাতিম ১/৪৯; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩শেয়ার লিংক
আমরা জানি, নামাযে আস্তের স্থানে জোরে পড়লে বা জোরের স্থানে আস্তে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হয়।
আমার প্রশ্ন হল, আস্তের স্থানে কতটুকু জোরে আওয়াজে পড়লে বা জোরের স্থানে কতটুকু আস্তে আওয়াজে পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী উভয়ের মাসআলাই কি এক? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
নামাযে শব্দ করে পড়ার অর্থ হল, অন্তত এতটুকু আওয়াজে পড়া যাতে নিজের পিছনে দাঁড়ানো কিছু লোক তা শুনতে পায়। আর নামাযে আস্তে পড়ার অর্থ হল, মাখরাজ আদায় করে জিহŸা ও ঠোঁট নেড়ে ভালোভাবে উচ্চারণ করে পড়া। সুতরাং উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে ইমাম সাহেব যদি জাহরী (উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ আস্তে পড়েন তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে সিররী (নি¤œস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত যদি এতটা উঁচু আওয়াজে পড়েন যে, পিছনে দাঁড়ানো লোকজনও শুনতে পায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
উল্লেখ্য, এ হুকুম কেবল জামাতের সাথে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আর একাকী নামাযী ব্যক্তি জাহরী নামাযে চাইলে আস্তেও কেরাত পড়তে পারে। তবে তার জন্য উত্তম হল জোরে পড়া। আর সিররী নামাযে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী একাকী নামায আদায়কারীর জন্যও আস্তে কেরাত পড়া ওয়াজিব। সুতরাং বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত জোরে পড়লে সেক্ষেত্রে তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।Ñরদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫; শরহুল মুনয়াহ ৪৫৫-৪৫৬; আসসিআয়াহ ২/২৬৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১২৩শেয়ার লিংক
ক) নামাযে ইমাম রুকুতে থাকলে আগত মুক্তাদির করণীয় কী? এ সময় মুক্তাদি হাত বাঁধবে কি?
খ) ইমামের শেষ বৈঠকে মাসবুকের করণীয় কী? মাসবুক কি কিছু পড়বে? বিস্তারিত জানালে খুব উপকার হত।
ক) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে তাহরীমা বলে নামাযে শরিক হবে। অতপর আবার তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমার পর হাত বাঁধবে না এবং সানাও পড়বে না। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৫২৮; ফাতাওয়ায়ে খানিয়া ১/৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭; শরহুল মুনয়াহ ৩০১
খ) মাসবুক ব্যক্তি ইমামের শেষ বেঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়বে এবং কিছুটা ধীর গতিতে পড়বে। যাতে ইমাম সালাম ফেরানো পর্যন্ত তাশাহহুদ পড়া চলতে থাকে। আর যদি ইমামের সালামের আগে তাশাহহুদ শেষ হয়ে যায় তাহলে এক্ষেত্রে বাকি সময় তাশাহহুদের শেষে যে কালিমায়ে শাহাদাত আছে তা বার বার পড়তে থাকবে।Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৩০৯১; ফাতওয়া খানিয়া ১/১০৩; ইমদাদুল মুফতীন ২৯৬;আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১১শেয়ার লিংক
একদিন ফজরের সময় আমাদের মসজিদে ইমাম ছাহেব উপস্থিত না থাকায় আমাকে ইমামতি করতে দেওয়া হয়। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে কোনো আলেম বা হাফেয না থাকায় বাধ্য হয়ে আমি ইমামতি করতে যাই। কুরআন মাজীদের শেষের কয়েকটি সূরা ছাড়া অন্য বড় কোনো সূরা আমার মুখস্থ নেই। আর আমি জানতাম, ফজর নামাযে কেরাত একটু লম্বা পড়া সুন্নত। তাই আমার মুখস্থ সূরাগুলো থেকে এক রাকাতে আমি ধারাবাহিকভাবে চার-পাঁচটি করে সূরা তিলাওয়াত করি। নামায শেষে কয়েকজন মুসল্লি এ নিয়ে আপত্তি করেন। তারা বলেন, এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়তে কাউকে তো দেখিনি। তুমি এটি ঠিক করনি।
আমি জানতে চাই, ফরয নামাযে এভাবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়ার হুকুম কী? এ কারণে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হয়েছে?
ফরয নামাযে এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা না পড়াই উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক সূরার পর রুকু এবং সিজদা করে তার হক আদায় কর। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭৩০
তবে এক রাকাতে একাধিক সূরা পড়াও জায়েয আছে। কোনো কোনো সাহাবী এবং তাবেয়ী থেকে ফরয নামাযেও এক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একাধিক সূরা পড়ার কথা বর্ণিত আছে, যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ফরয নামাযের এক রাকাতে একত্রে দুটি সূরা পড়তেন। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭১৪
আতা রাহ. বলেন, ফরয নামাযে এক রাকাতে দুটি সূরা বা দুই রাকাতে একটি সূরা পড়লে অসুবিধা নেই। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৭১৫
উল্লেখ্য, এখানে মূল বিষয় হল, মাসনূন কিরাতের প্রতি লক্ষ্য রাখা। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেহেতু উযরের কারণে এমন হয়েছে তাই তাকে অনুত্তমও বলা যায় না।
Ñফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; ফতহুল বারী ২/৩০৪; ইলাউস সুনান ৪/১৩৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭শেয়ার লিংক
ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
না, ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে তাশাহহুদ পড়ে ফেললে এ কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না।
Ñআল মুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭শেয়ার লিংক
ঢাকায় তিন কাঠা পরিমাণ আমার একটি জমি আছে। বাড়ি বানানোর জন্য আমি তা কিনেছিলাম পরে আমি তা ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে দেই। কোম্পানির সাথে আমার এই মর্মে চুক্তি হয়েছে, কোম্পানি ৭ তলা বিশিষ্ট একটি এপার্টম্যান্ট নির্মাণ করবে। নির্মিত ভবন ও গ্যারেজের ৫০% মালিক হব আমি আর বাকি ৫০% মালিক হবে কোম্পানি। পাশাপাশি কোম্পানি কাঠা প্রতি ৫ লক্ষ টাকা করে মোট ১৫ লক্ষ টাকা সাইনিং মানি দিবে। এই টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ইতিমধ্যে কোম্পানি দুই কিস্তিতে ১০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছে। আর ৩য় কিস্তি গত ১৫/১২/২০১৩ তারিখে প্রদান করার কথা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল। কিন্তু এত দিন অতিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও কোম্পানি সেই কিস্তি (৫ লক্ষ টাকা) পরিশোধ করেনি। টাকা পরিশোধের জন্য বারবার অবগত করা হলে কোম্পানির চেয়ারম্যান দেশের চলমান পরিস্থিতি, ব্যবসার মন্দা ইত্যাদি ওযর পেশ করে এবং অতি শীঘ্রই তা পরিশোধের ওয়াদা করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই টাকা পরিশোধ করেনি।
আমার জানার বিষয় হল, প্রতি বছর মার্চ মাসে আমার যাকাতবর্ষ শুরু হয়। তখন আমি যাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাব করে যাকাত নির্ধারণ করে থাকি। সুতরাং বর্তমানে আমাকে কি উক্ত ৫ লক্ষ টাকারও যাকাত দিতে হবে, যা এখনো আমার হস্তগত হয়নি?
না, ঐ ৫ লক্ষ টাকা হস্তগত করার পূর্বে আপনাকে এর যাকাত দিতে হবে না। বরং ঐ টাকা হস্তগত হওয়ার পর তা আপনার যাকাতযোগ্য সম্পদ বলে বিবেচিত হবে এবং এরপর থেকে এর যাকাত আদায় করতে হবে।
Ñশরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৩৪১, রদ্দুল মুহতার ২/৩০৬; আততাজরীদ ৩/১১৬৬শেয়ার লিংক
আমরা তো জানি, ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত কাপড় পরা জায়েয নয়। প্রশ্ন হল, লুঙ্গির ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম? না এক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন?
ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য শরীরের কোন অঙ্গের আকৃতিতে সেলাই করা পোশাক পরা নাজায়েয। যেমন, পাঞ্জাবী, পায়জামা, গেঞ্জি ও মোজা ইত্যাদি। আর লুঙ্গি যেহেতু পায়জামার মত কোনো অঙ্গের আকৃতিতে বানানো নয় তাই সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরা নাজায়েয নয়। তবে খোলা চাদর পরলে যাদের সতরের অঙ্গগুলো বা তার অংশবিশেষ খুলে যাওয়ার আশংকা না থাকে তাদের জন্য সেলাইযুক্ত লুঙ্গি না পরাই উচিত। কেননা ইহরামের কাপড় একেবারে সেলাইমুক্ত হওয়া উত্তম। তাই সম্ভব হলে ইহরাম অবস্থায় সেলাইবিহীন চাদরই পরবে। কিন্তু সেলাইবিহীন চাদর পরলে কারো যদি সতর খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে তার জন্য সেলাই করা লুঙ্গি ব্যবহার করা অনুত্তম হবে না।
Ñমানাসিক, পৃ. ৯৮, ১২০; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৮/৭৫; আহকামে হজ্ব, মুফতী মুহাম্মাদ শফী পৃ.৩৪শেয়ার লিংক
হজ্বের সফরে আমি একটি সমস্যায় পড়ে থাকি। তা হল, হজ্বের সময় কখনও কখনও ঋতুস্রাব এসে যায়। এ নিয়ে খুব পেরেশান হয়ে যাই। মুফতী ছাহেবের নিকট আমার জিজ্ঞাসা হল, হজ্বের সময় যদি আমার স্রাব এসে যায় তাহলে হজ্বের আমলগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে আমার কী হুকুম হবে। কোনটি স্রাব অবস্থায় আদায় করা যাবে আর কোনটি আদায় করা যাবে না। সুস্পষ্টভাবে জানালে আমি পেরেশানীমুক্ত হব। আল্লাহ আপনাদের খেদমতকে কবুল করুন।
স্রাব অবস্থায় কেবল বাইতুল্লাহর তাওয়াফ এবং মসজিদে হারামে প্রবেশ করা নিষেধ। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত হজ্ব ও উমরার ইহরাম করা থেকে নিয়ে হালাল হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য সকল আমল আপনি স্রাব অবস্থায় আদায় করতে পারবেন। যেমন, মিনায় থাকা,মুযদালিফা ও আরাফার উকুফ, মিনার পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী ইত্যাদি কাজ এ সময়েও আঞ্জাম দেওয়া যাবে। এমনকি উমরার তাওয়াফের পর স্রাব আসলে এ অবস্থায় সায়ীও করতে পারবেন। আর স্রাবের দরুন তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করতে বিলম্ব হয়ে গেলেও কোনো জরিমানা দম আসবে না।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯শেয়ার লিংক
মহিলাদের জন্য কি ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা, পা-মোজা পরা জায়েয আছে? দলীল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব। সহীহ বুখারীতে নাকি আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরতে নিষেধ করেছেন?
মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা, পা-মোজা পরা জায়েয।
হাদীস শরীফে আছে, সালেম রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা কেটে দিতেন। কিন্তু সফিয়া বিনতে আবু উবাইদা রা. তাঁর কাছে আয়েশা রা.-এর এ হাদীস যখন বর্ণনা করলেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন’ এরপর থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা আর কেটে দিতেন না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩১
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা ও পা-মোজা পরিধান করতে পারবে। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৪
সাআদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ইহরাম অবস্থায় তার কন্যাদেরকে হাত-মোজা পরার নির্দেশ দিতেন। Ñকিতাবুল উম ২/২২৩
কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ, হাসান বসরী, হাকাম ও হাম্মাদ রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীগণ থেকেও ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরা জায়েয হওয়ার কথা বর্ণিত আছে। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৫৯৬৭, ১৪৪৪১
আর প্রশ্নে সহীহ বুখারীর উদ্ধৃতিতে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত মাওক‚ফ হাদীস। অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর উক্তি। (আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৪/৪৭; ফাতহুল বারী ৪/৬৪)
আর উপরে আমরা দেখেছি, একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ীর মত এক্ষেত্রে এটিই যে, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা পরবে। ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী রাহ.-সহ অনেক ফকীহের মতে এ অভিমতটিই অধিক শক্তিশালী।
Ñকিতাবুল উম ২/২২৩; আলমাবসূত সারাখসী ৪/৩৩শেয়ার লিংক
আমরা হজ্বের বিভিন্ন বইয়ে পড়েছি, ইহরাম করার আগে দুই রাকাত নফল নামায পড়া সুন্নাত। কিন্তু কিছুদিন আগে এক ভাই থেকে শুনলাম, ইহরামের আগে কোনো নামায নেই। বরং তা বিদআত। কথাটি শোনার পর বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী? দলীল প্রমাণসহ জানতে চাই।
একাধিক হাদীসে নামাযের পর ইহরাম করার কথা এসেছে। অতএব ফরয নামায আদায় করলে এরপর ইহরাম করবে নতুবা ইহরামের উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে এরপর ইহরাম করবে। এটিই সুন্নত। সহীহ বুখারীতে আছে, উমর রা. বলেন, আকীক নামক স্থানে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আজ রাতে আমার রবের পক্ষ থেকে আগমনকারী (অর্থাৎ জিবরীল আলাইহিস সালাম) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, এই বরকতময় স্থানে নামায পড়ুন এবং বলুন, আমি হজ্বের সাথে উমরার ইহরাম করলাম। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৫৩৪
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজ্বের বিবরণ সম্বলিত হাদীসগুলোতেও আছে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলাইফাতে দুই রাকাত নামায পড়ার পর ইহরাম করেছিলেন। Ñদেখুন সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৮৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৮১৯
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে এক বর্ণনায় স্পষ্টভাবে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলাইফার মসজিদে দুই রাকাত নামায পড়ার পর ঐ মজলিসেই হজ্বের ইহরাম করেছিলেন। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৭৭০; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৬৯৯
প্রকাশ থাকে যে, এই মাসআলায় চার মাযহাবের সিদ্ধান্ত এক ও অভিন্ন। ইমাম নববী রাহ.“আল মাজমূ শরহুল মুহাযযাব” লিখেছেন, ইহরাম করার সময় দুই রাকাত নামায পড়া উত্তম। এ ব্যাপারে সবার ঐকমত্য রয়েছে। Ñআলমাজমূ ৭/২৩২
সুতরাং ইহরামের পূর্বের নামাযকে বিদআত বলা সম্পূর্ণ ভুল ও মনগড়া কথা।
শেয়ার লিংক
নওশীনের মা ও মাহরোস আহসানের মা সহোদর বোন। নওশীনের বয়স ৬মাস কালে তার মা অসুস্থ হওয়াতে তার খালার (মাহরোস আহসানের মায়ের) দুধ পান করে। আমাদের জানামতে নওশীন ও মাহরোস আহসানের মধ্যে বিবাহ বৈধ নয়।
জানার বিষয় হল, মাহরোস আহসানের সাথে নওশীনের ছোট বোন নোভার বিবাহ হতে পারবে কি না? নোভা তো মাহরোস আহসানের মার দুধ পান করেনি।
মাহরোস আহসান ও নোভার মধ্যে বিয়ে হওয়া জায়েয ও নাজায়েয নিয়ে মত পার্থক্য দেখা দিয়েছে বিধায় বিষয়টি বিস্তারিতভাবে দলীলাদি দিয়ে সমাধান দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নোভা যেহেতু মাহরোস আহসানের মায়ের দুধ পান করেনি তাই তারা একে অন্যের দুধ সম্পর্কের মাহরাম নয়। বোন দুধ পান করার কারণে নোভার সাথে দুধ সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টি হয়নি।
সুতরাং মাহরোস আহসানের সাথে নোভার বিবাহ জায়েয হবে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০; আল মাবসূত ইমাম সারাখসী ৫/১৩৭শেয়ার লিংক
আমার প্রতিবেশী এক লোক এক মাস আগে কাদিয়ানী হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ। তার স্ত্রী ও এলাকার লোকজন তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে। তবুও সে ইসলামে ফিরে আসেনি। তখন স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যায়। এখন তার স্ত্রী জানতে চায়, স্বামী কাদিয়ানী হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক কি ছিন্ন হয়ে গেছে? যদি তাই হয় তাহলে সে অন্যত্র বিবাহ করতে চাইলে তার করণীয় কী? তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে কি না? ইদ্দত পালন করতে হলে কীভাবে পালন করবে?
কাদিয়ানী স¤প্রদায় কাফের। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি কাদিয়ানী হয়ে যাওয়ার কারণে সে মুরতাদ ও কাফের হয়ে গেছে। এবং কাদিয়ানী হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন স্ত্রীকে তালাকের ইদ্দতের মতো ইদ্দত পালন করতে হবে। অর্থাৎ সে অন্তঃসত্ত¡া হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত আর ঋতুমতী হলে পূর্ণ তিনটি ঋতুস্রাব শেষ হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে সে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এর আগে অন্যত্র বিবাহ করা বৈধ হবে না।
Ñআলমাবসূত ৫/৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১৯৫ আলহীলাতুন নাজিযা ১৮১শেয়ার লিংক
আমার আব্বা দুই বিবাহ করেন। প্রথম পক্ষে তিন মেয়ে হওয়ার পর ঐ স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে আমার আম্মাকে বিবাহ করেন। আব্বার প্রথম পক্ষের বড় মেয়ের মেয়ের মেয়ে তথা বড় মেয়ের নাতনীর সাথে আমি কিছুদিন পূর্বে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু ধর্মীয় দিক থেকে কেউ কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠালে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হই।
অতএব মহোদয়ের কাছে আমি এ বিষয়ে মাযহাব বর্ণনাসহ ফকীহদের বিস্তারিত মতামত জানতে একান্ত আগ্রহী।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মেয়েটি আপনার মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তার সাথে আপনার বিবাহ শুদ্ধ হয়নি। কুরআন মাজীদের সূরা নিসার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন,তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগ্নিকন্যা ...।
উক্ত আয়াতে মাহরামের আলোচনায় যে ভগ্নিকন্যা এসেছে তাতে বোনের মেয়েসহ তার অধস্তন সকল কন্যা অন্তর্ভুক্ত। এতে আপন বোনের মেয়ে, বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে এবং বৈমাত্রেয় বোনের মেয়ে এবং এদের অধস্তন সকল কন্যার হুকুম সমান।
তাই এখন আপনাদের কর্তব্য হল, এখনি পৃথক হয়ে যাওয়া এবং নিজেদের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করা।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হুকুমটি (ভগ্নিকন্যার অধস্তনগণ মাহরাম হওয়া) সর্বসম্মত মাসআলা। এতে কোনো ইমাম বা কোনো মাযহাবের দ্বিমত নেই।Ñআহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১২৩; তাফসীরে মাযহারী ২/২৬৫; কিতাবুল আছল ৪/৩৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬০; ফাতহুল কাদীর ৩/১১৭; আল মাজমু ১৭/৩১৪; ফাতহুল বারী ৯/৫৮; আলইকনা ফী মাসাইলিল ইজমা ২/৬২শেয়ার লিংক
এক দরিদ্র ব্যক্তির ছেলে অসুস্থ হলে সে মান্নত করে, ছেলে সুস্থ হলে গরিব-মিসকিনদেরকে খাবার খাওয়াবে। কিছুদিন আগে তার ছেলে সুস্থ হয়েছে।
জানার বিষয় হল, তার জন্য কতজন গরিব-মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে হবে? আর ঐ খাবার কি তার ছেলেকে খাওয়াতে পারবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির মান্নত পূরণের জন্য অন্তত দশজন মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে হবে। তবে ঐ দশ জনের মাঝে ছেলেকে বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে গণ্য করা যাবে না। উল্লেখ্য, মান্নত আদায়ের জন্য মান্নতের খাবার ভিন্নভাবে রান্না করা জরুরী নয়। একই রান্না থেকে ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা খেতে পারবে এবং দশজন মিসকিনকেও খাওয়াতে পারবে।
Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৩, ৩৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪২; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬শেয়ার লিংক
যদি কোনো ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তাহলে সে চাকরি থেকে যে বেতন পাবে তা তার জন্য হালাল হবে না কি হারাম? কুরআন হাদীস দ্বারা সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ হব।
ঘুষ দেওয়া-নেওয়া হারাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহিতাকে অভিসম্পাত করেছেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭
তাই ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া জায়েয হবে না। এতে একদিকে ঘুষ প্রদানের কবীরা গুনাহ হয়,অন্যদিকে ঘুষদাতা অযোগ্য হলে অন্য চাকরিপ্রার্থীর হক নষ্ট করারও গুনাহ হয়। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
অবশ্য কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে চাকরির যোগ্য হয় এবং ঘুষ প্রদান হারাম হওয়া সত্তে¡ও ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় আর পরবর্তীতে সে যথাযথভাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেয় তাহলে এভাবে চাকরি নেওয়া নাজায়েয হলেও বেতন হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে তার কর্মক্ষেত্রের অযোগ্য হয় এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার জন্য ঐ চাকরিতে থাকা বৈধ হবে না। আর ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়াও বৈধ হবে না।
শেয়ার লিংক
ক) যে ব্যক্তির উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত হয় আর সে কাউকে কোনো কিছু হাদিয়া দেওয়ার সময় আমি এ হাদিয়াটি আমার হালাল উপার্জন হতে দিচ্ছি,Ñ এ কথা উল্লেখ না করে তাহলে কি এ হাদিয়াটি তার হালাল উপার্জন থেকে দিয়েছে এরূপ ধরে তা গ্রহণ করা এবং ব্যবহার করা যাবে?
খ) উপরোক্ত শ্রেণীর ব্যক্তিদের হাদিয়া কেউ কবুল করার পর হাদিয়া গ্রহিতা তা কিছুদিন ব্যবহার করে অথবা ব্যবহার না করেই অন্যকে আবার যদি তা হাদিয়া দিয়ে দেয় তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য এই হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
ক) হারাম মাল থেকে হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। আর যার উপার্জন হালাল-হারাম মিশ্রিত সে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে তা হালাল মাল থেকে দিয়েছে বলে জানা গেলে তা নেওয়া বৈধ হবে। হারাম মাল থেকে দিয়েছে জানা গেলে তা গ্রহণ করা বৈধ হবে না। আর যদি হাদিয়া কোন মাল থেকে দিয়েছে তা জানা না যায় তাহলে এক্ষেত্রে তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল হলে উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে। আর যদি তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল না হয়ে থাকে তাহলে তার হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না। Ñমাবসূত, সারাখসী ১০/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০০; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩
খ) উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে যাদের থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা হারাম তাদের থেকে কেউ হাদিয়া গ্রহণে করে ফেললে তা নিজে ব্যবহার করতে পারবে না; বরং যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে সদকা করে দিতে হবে। তা কোনো সামর্থ্যবানকে দেওয়া যাবে না। সামর্থ্যবান কাউকে দিলে সে যদি জানে যে, এটা হারাম তাহলে তার জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। Ñসূরা তাওবা : ৬০; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৮; আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর ৪/৫০
শেয়ার লিংক
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বিক্রেতা থেকে চুক্তিকৃত পণ্য আদায় করা পর্যন্ত কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয হবে কি?
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতা থেকে কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয আছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., শাবী রাহ., প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ী থেকে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন, আগাম বিক্রিতে বিক্রেতা থেকে বন্ধক নিলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ১৪০৮৬, ১৪০৮৭, ১৪০৯০; কিতাবুল আসার, হাদীস ৭৪২; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৬/১৯
তবে ক্রেতার জন্য ঐ বন্ধক থেকে কোনোভাবে উপকৃত হওয়া বৈধ হবে না।Ñকিতাবুল আছল ২/৩৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/২১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২
শেয়ার লিংক
একজন মহিলাকে বলতে শুনেছি, কুরবানীর দিন পশু জবাই করার আগ পর্যন্ত রোযা রাখতে হয়। শরীয়তে এরূপ কিছু আছে কি না?
কুরবানী দিনের অংশ বিশেষে রোযা রাখতে হবেÑ এ কথা ঠিক নয়। ঈদের দিনে রোযা রাখার বিধান নেই। তবে এক্ষেত্রে মাসআলা হল, কুরবানীর দিন কুরবানীর গোশত দিয়ে খাবার শুরু করা মুস্তাহাব। তাই এর আগ পর্যন্ত যথাসম্ভব খানাপিনা থেকে বিরত থাকা উত্তম।
হযরত বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদুল আযহার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর গোশত খাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য কিছু খেতেন না।
Ñসুনানে দারাকুতনী ২/৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১১২৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২৯৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩শেয়ার লিংক
গরু-ছাগলের যদি অধিকাংশ দাঁতই না থাকে, এমনকি দু-একটি ছাড়া সবগুলো পড়ে যায় তবে তা দ্বারা কুরবানী করা কি সহীহ হবে?
গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কুরবানী সহীহ হয়ে যায়। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ঐ পশু কুরবানীর উপযুক্ত নয়। সুতরাং দু-একটি ছাড়া সব দাঁত পড়ে গেলে সে পশু ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারার সম্ভাবনাই যেহেতু বেশি তাই এমন জন্তু দ্বারা কুরবানী না করাই বাঞ্ছনীয়।
Ñশরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৫৫; ফাতাওয়া কাযী খান ৯৩/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় দেখি যে, অনেক সময় কুরবানীর পশুকে মাটিতে শোয়ানোর সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পশুর পা ভেঙ্গে যায়। এমতাবস্থায় কেউ বলে যে, এ পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। কেউ বলে যাবে। মুফতী সাহেবের নিকট সঠিক মাসআলা জানতে চাই।
কুরবানীর পশু জবাইর সময় শোয়াতে গিয়ে পা ভেঙ্গে গেলে তা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।
Ñআলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৭; মাজমাউল আনহুর ৪/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৫শেয়ার লিংক
কোন কোন প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যায় এবং ঐ প্রাণীসমূহের বয়সসীমা সম্পর্কে জানালে উপকৃত হব।
গৃহপালিত পশু তথা উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল দ্বারা কুরবানী করা যায়। উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু বা মহিষ কমপক্ষে দু’বছরের হতে হবে। আর দুম্বা, ভেড়া বা ছাগল এক বছরের হতে হবে। তবে কোনো ভেড়া যদি ছয়মাস বা তদুর্ধ্ব বয়সের হয় কিন্তু শরীরের গঠনের দিক থেকে এক বছরের ভেড়ার মত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে যায় তাহলে সেটি দ্বারাও কুরবানী সহীহ হবে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭শেয়ার লিংক
কুরবানীর সময় আমাদের এলাকার অনেককেই এমন করতে দেখা যায়, ৬ শরীক মিলে একটি পশু কুরবানী করে। ঐ পশুতে নিজেদের ৬ অংশ রাখে আর ৭ম অংশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য রাখে। এ ৭ম অংশের টাকা তারা সকলে মিলে দিয়ে থাকে। আমি জানতে চাই, এমনটি করা সহীহ কী না?
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা সহীহ। কেননা এ ক্ষেত্রে কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম নয়। প্রত্যেকের অংশ পুরো হওয়ার পর সপ্তমাংশ শরীকদের নফল কুরবানী হিসাবে গণ্য হবে এবং সকলের কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৬শেয়ার লিংক
আমরা তিন ভাই। মা জীবিত আছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বণ্টন করা হয়নি। অবশ্য বাবা খুব বেশি সম্পত্তি রেখে যাননি। আমরা তিন ভাই চাকুরি করি। প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু কিছু সম্পদ আছে। কুরবানীর সময় আমরা তিনভাই মিলে মায়ের নামে একটি ছাগল কুরবানী করে থাকি। আমি জানতে চাই, এভাবে আমাদের কুরবানী করা সহীহ হচ্ছে কি না?
আপনার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বণ্টন করলে আপনারা প্রত্যেকে যে পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হবেন তার সাথে প্রত্যেকের নিজস্ব মালিকানাধীন সম্পত্তি যোগ করলে যার মালিকানায় মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য সমপরিমাণ সোনা-রূপা, টাকা পয়সা বা অন্যান্য সম্পত্তি থাকবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। সে হিসেবে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে তাকে পৃথকভাবে অন্তত: একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা অথবা বড় পশুতে এক সপ্তমাংশে শরীক হয়ে নিজের কুরবানী আদায় করতে হবে। কয়েক ভাই মিলে মায়ের নামে ছাগল কুরবানী করার দ্বারা আপনাদের ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য যদি আপনাদের কারো উপরোক্ত পরিমাণে সম্পদ না থাকে সেক্ষেত্রে কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কেউ করলে তা নফল হিসাবে আদায় হবে।
-ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৮১; এলাউস সুনান ১৭/২১০শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন মনে করে, একটা গরু বা একটা মহিষে কুরবানী আকীকা ইত্যাদি সাত ভাগই করা লাগে। সাত ভাগের কম হলে কুরবানী সহীহ হয় না। তাই তারা কখনো পশুতে শরীক কম হয়ে গেলে বাকি অংশগুলো তাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনের নামে দিয়ে সাত ভাগ পূর্ণ করে থাকে।
এখন আমার জানার বিষয় হল, তাদের উক্ত ধারণা কি সঠিক? একটি পশুতে কি সাত ভাগই পূর্ণ করা লাগে এবং মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সাওয়াবের নিয়তে কুরবানী করা যাবে কি? করা জায়েয হলে এ ভাগের গোশত কি সদকা করে দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ধারণাটি ঠিক নয়। গরু, মহিষ এ ধরনের পশু সাত ভাগে এবং তার কম যে কোনো অংশে কুরবানী বা আকীকা ইত্যাদি করা জায়েয। তবে কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হতে হবে। এক সপ্তমাংশের কম হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। আর এ ধরনের পশুতে মৃত ব্যক্তির জন্যও ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে অংশ নেওয়া যাবে এবং এই অংশ সদকা করা জরুরি নয়। বরং এর হুকুম নিজের সাধারণ কুরবানীর মতই। তা থেকে নিজেরাও খেতে পারবে এবং সদকাও করতে পারবে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৭৪,৮৭৪; রদ্দুল মুহতার ৬/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৩১, ৩১৬, ৩৩৫শেয়ার লিংক
আমাদের বাড়ির পাশেই এক হিন্দুর বাড়ি। খুব গরীব মানুষ তারা। কুরবানীর সময় যখন গরীবদেরকে গোশত বণ্টন করি তখন সেও কখনো কখনো গোশত চায়। আর না চাইলেও সে যেহেতু আমাদের পাশেই থাকে আবার গরীব মানুষ তাই না দিতেও খারাপ লাগে। তাই আমি জানতে চাই ঐ হিন্দুকে কুরবানীর গোশত দেওয়া যাবে কি না?
কুরবানীর গোশত অমুসলিমদের দেওয়া জায়েয আছে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি আপনার পড়শী হিন্দুকে কুরবানীর গোশত দিতে পারবেন।
Ñইলাউস সুনান ১৭/২৫৮; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩০০শেয়ার লিংক
আমাদের গ্রামে অনেক বাড়িতে এরকম প্রচলন আছে যে, কুরবানীর সময় কসাইয়ের সাথে তারা এভাবে চুক্তি করে, এই গরুটা বানিয়ে দিলে এত টাকা পাবা আর এত কেজি গোশত পাবা।
প্রশ্ন হল, এভাবে টাকা ও গোশতের বিনিময়ে চুক্তি করা কি বৈধ? কেউ যদি এমনটি করে তাহলে সেক্ষেত্রে তার করণীয় কী?
কুরবানীর পশুর গোশত বা অন্য কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া বৈধ নয়। সহীহ মুসলিমে আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন, যেন আমি তাঁর উটের দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং তার গোশত, চামড়া ও আনুষাঙ্গিক আচ্ছাদনবস্ত্র সদকা করি এবং (তিনি আদেশ করেছেন) এসব থেকে কোনো কিছু যেন কসাইকে না দেই। তিনি বলেছেন, তাকে (কসাইকে) তো আমরা নিজেদের থেকেই পারিশ্রমিক দিব।Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৭
সুতরাং কেউ যদি না জেনে এভাবে গোশতের মাধ্যমে পারিশ্রমিক আদায় করে দেয় তাহলে যে পরিমাণ গোশত পারিশ্রমিক হিসাবে দিয়েছে তার মূল্য গরীবদের মাঝে সদকা করা ওয়াজিব হবে।Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮শেয়ার লিংক
কোনো কোনো গ্রামে দেখা যায়, ঈদুল আযহার দ্বিতীয় দিন অথবা তৃতীয় দিন বিবাহ বা ওলিমা অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয় এবং কুরবানীর গোশত দিয়েই এসব অনুষ্ঠানের দাওয়াত খাওয়ানো হয়। আমার প্রশ্ন হল, কুরবানীর গোশত দিয়ে বিবাহ বা ওলিমা অনুষ্ঠানের দাওয়াত খাওয়ানো কি জায়েয হবে এবং এ উদ্দেশ্যে কুরবানি করা কি বৈধ হবে?
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তা কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই হতে হবে। বিবাহ বা ওলিমার গোশত লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা সহীহ নয়। অবশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরবানী করে সেই গোশত নিজে খেতে পারবে। অন্যকেও খাওয়াতে পারবে। তদ্রƒপ সেই গোশত দিয়ে বিবাহ বা ওলিমা অনুষ্ঠানে দাওয়াতও খাওয়াতে পারবে। এতে কোনো বাধা নেই।
Ñআলবাহরুর রায়েক ৩/৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৯শেয়ার লিংক
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে, কুরবানীর গোশত তিনভাগে বণ্টন করা জরুরি এবং এতে সামান্য ত্রæটি করলেও কুরবানী হবে না। অথচ অনেক সময় এমন হয়, বিশেষ করে পরিবারের লোকজন বেশি হলে এবং অভাবী হলে নিজের অংশ থেকে এক ভাগ রেখে দুই ভাগ দিয়ে দিলে সে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে তৃপ্তির সাথে খেতেই পারে না। আবার দূরের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত করে খাওয়াতে বা তাদের জন্য কিছু গোশত পাঠাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই প্রশ্ন হল, এভাবে প্রথমেই গোশত মেপে মেপে তিনভাগ করে এক ভাগ রেখে বাকি দুই ভাগ বিলিয়ে দেওয়া কতটুকু জরুরি? এতে কমবেশি করার হুকুম কী? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
কুরবানী করা এবং কুরবানীর গোশত দান করা ভিন্ন ভিন্ন দুটি আমল। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইখলাসের সাথে পশু জবাই করার দ্বারাই কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। আর কুরবানীকারীর জন্য তার কুরবানীর গোশতের ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা হল, সে নিজ পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খাবে এবং পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, যারা কুরবানীর সামর্থ্য রাখে না তাদেরও দান করবে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ... (কুরবানীর গোশত) তোমরা খাও, জমা করে রাখো এবং (গরীব-অসহায়দেরও) দান করো।Ñহাদীস : ১৯৭১
অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা খাবে এবং অন্যদেরও খাওয়াবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭৩
তবে দানের ব্যাপারে কুরবানীকারীর উপর শরীয়ত কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি;বরং প্রত্যেককে তার অবস্থা অনুপাতে দান করতে বলা হয়েছে। অবশ্য সামর্থ্যবানদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তম হল, মোটামুটি তিন ভাগ করে এক অংশ গরিব-মিসকিন ও অসহায়দেরকে দান করা, এক অংশ গরীব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া। আর এক অংশ নিজের জন্য রাখা।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন। আরেক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক ভাগ ভিক্ষুক ও অসহায়দের দান করতেন। Ñআল মুগনী ১৩/৩৭৯
উল্লেখ্য, এ বণ্টন উত্তম জরুরি বা আবশ্যক নয়। তেমনি একেবারে ওজন করে তিন ভাগ করাও আবশ্যক নয়। বরং কুরবানীকারীর জন্য এতে তারতম্য করার অবকাশ আছে।
আরো উল্লেখ্য যে, এটি যেহেতু একটি মুস্তাহাব আমল তাই সামর্থ্যবানদের এর উপর আমল করা উচিত। আর কারো পরিবারের সদস্য বেশি হলে কিংবা নিজেদের প্রয়োজন বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের প্রয়োজন পরিমাণ গোশত রাখতে পারবে, এটা তাদের জন্য অনুত্তম হবে না।Ñফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৩৭; বযলুল মাজহূদ ১৩/৪৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৬; ইলাউস সুনান ১৭/২৬২শেয়ার লিংক
আমার নানার দুই ছেলে। বড় ছেলে সরকারি চাকরি করে। ছোট ছেলে সিংগাপুর থাকে। ছোট ছেলে সিংগাপুর যাওয়ার পর নানা বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করে। ছোট মামা বলেছিল, বিল্ডিংয়ের পুরো টাকা সে পাঠিয়ে দিবে। আর বিল্ডিংটি নেওয়া হয়েছে তার কথা অনুযায়ী। কিন্তু সিংগাপুর যাওয়ার পর কিছু টাকা পাঠিয়ে আর কোনো টাকা দেয়নি। হয়তো তার স্ত্রী কোনো বদনাম করেছে এবং নানার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি নানীর সাথেও। বর্তমানে বংশের কারো সাথে কথা বলে না। তাই নানা রাগ করে ছেলেকে বাড়িতে আসতে মানা করে দিয়েছে। মামাও তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। এদিকে নানা তার সকল সম্পত্তি বড় মামার নামে লিখে দিয়েছে।
প্রশ্ন হল, তার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি রাখা কি ঠিক হয়েছে? আর নানার মৃত্যুর পর বড় মামা যদি উত্তরাধিকার হিসেবে ছোট মামাকে কিছু সম্পত্তি দিতে চায় তাহলে তা বৈধ হবে কি?
মা-বাবার সাথে সর্বাবস্থায় সদাচরণ করা সন্তানের কর্তব্য। কুরআন মাজীদে অনেক আয়াতে এবং অসংখ্য হাদীসে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, অর্থ, তোমার রব আদেশ করেছেন যে, তিনি ছাড়া আর কারো ইবাদত তোমরা করবে না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায় তবে তুমি তাদের ‘উফ’ বলবে না এবং তাদের ধমক দিবে না; বরং তাদের সঙ্গে নম্রভাবেকথা বলবে। আর করুণাভরে তাদের সামনে বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।
আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,আমি কি তোমাদেরকে জঘন্যতম কবীরা গুনাহ কী তা বলব? এভাবে তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ অবশ্যই বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (জঘন্যতম কবীরা গুনাহ হল) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭
এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে।
এছাড়া পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়াও কবীরা গুনাহ। এতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ হবে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৫৬
আর আত্মীয় বা কোনো মুসলমানের সাথে কথা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলমানের জন্য অপর ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা বৈধ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৭৮
সুতরাং আপনার মামার কর্তব্য, তার মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা,মা-বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করা এবং তাদের দেখাশুনা ও খোঁজ-খবর নেওয়া। উল্লেখ্য, ছেলের উক্ত অপরাধের কারণে বাবার জন্যও তাকে মীরাস থেকে একেবারে বঞ্চিত করে দেওয়া এবং সব সম্পত্তি বড় ছেলের নামে লিখে দেওয়া ঠিক হয়নি। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত মীরাস থেকে কাউকে বঞ্চিত করল আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মীরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৪৬৮৮
তাই আপনার নানার কর্তব্য, উভয় ছেলেকেই সম্পত্তি দেওয়া। প্রয়োজনে বড় ছেলেরও এ ব্যাপারে পিতাকে সহযোগিতা করা উচিত। আবার সে নিজে থেকেও ছোট ভাইকে সম্পত্তির অংশ দিয়ে বাবাকে দায়মুক্ত করতে পারে।Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩১৯শেয়ার লিংক
বৃদ্ধ লোকদের জন্য কালো খেযাব বা অন্য রঙের খেযাব ব্যবহারের হুকুম কী? দলিলসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। এছাড়া যুবকদের অসুস্থতা বা কোনো কারণে চুল সাদা হয়ে গেলে তারা কালো খেযাব ব্যবহার করতে পারবে কি?
বার্ধক্যের কারণে চুল-দাড়ি পেকে গেলে তাতে কালো খেযাব ব্যবহার করা নাজায়েয। একাধিক হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ার এসেছে।
হাদীস শরীফে এসেছে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর পিতা আবু কুহাফা রা.-এর চুল এবং দাড়ি পাকা দেখে বললেন, এটাকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন কর। তবে কালো থেকে বিরত থাক।Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৪৬৬
আরেক হাদীসে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শেষ যমানায় কিছু লোক কবুতরের ঝুঁটির মতো কালো খেযাব ব্যবহার করবে তারা কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ৪২০৯
অবশ্য কোনো যুবকের অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে যদি চুল-দাড়ি পাকার বয়সের আগেই সাদা হয়ে যায় তবে সে কালো খেযাব ব্যবহার করতে পারবে। আহমাদ আলী সাহারানপুরী বলেন, হাদীসে কালো খেযাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মূল কারণ অন্যদের সামনে বয়স গোপন করা এবং অন্যকে ধোঁকা দেওয়া। Ñহাশিয়া সহীহ বুখারী ১/৫৩০
যুবকের ক্ষেত্রে ধোঁকার এই দিকটি অনুপস্থিত। তাই কোনো কোনো ফকীহ যুবকদের জন্য কালো খেযাব জায়েয হওয়ার মত দিয়েছেন। (ফায়যুল কাদীর ১/৩৩৬; ইমদাদুল আহকাম ৩/৩৭৬) তাবেয়ী ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, আমাদের চেহারা যখন সতেজ ছিল তখন আমরা কালো খেযাব ব্যবহার করতাম। আর যখন আমাদের চেহারা মলিন হয়ে গেল এবং দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেল তখন আমরা কালো খেযাব ছেড়ে দিয়েছি।Ñফাতহুল বারী ১০/৩৬৭
অবশ্য হাদীসে যেহেতু কালো খেযাবকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তাই যুবকদের জন্যও একেবারে কালো খেযাব ব্যবহার না করে লাল কালো মিশ্রিত খেযাব ব্যবহার করাই উচিত হবে। Ñতুহফাতুল আহওয়াযী ৫/১৫৪; ফায়যুল কাদীর ১/৩৩৬
আর বার্ধক্যের কারণে চুল পেকে গেলে কালো খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করা মুস্তাহাব। যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু কুহাফা রা.কে কালো খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অন্য এক হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হলুদ রং ব্যবহার করতে দেখেছি তাই আমিও হলুদ রং ব্যবহার করতে পছন্দ করি।
-সহীহ বুখারী, হাদীস, ১৬৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২১৫-২২০; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/১৬৬-১৭০শেয়ার লিংক