আমাতুল্লাহ রিহানা - ৬৫১৭

নেত্রকোনা. প্রশ্ন

গরমকালে আমি মাঝে মাঝে থ্রি-কোয়ার্টার হাতাবিশিষ্ট জামা পরিধান করি। এসব জামার হাতা কব্জি ও কনুইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা হয়। এসব জামার সাথে ছোট ওড়না পরে নামায পড়লে রুকুর সময় ও রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় হাতের খালি অংশ খোলা দেখা যায়। জানতে চাই, হাতের এতটুকু অংশ খোলা থাকলে কি নামাযে কোনো সমস্যা হবে?

 

উত্তর

থ্রি-কোয়ার্টার হাতাবিশিষ্ট জামা  পরে নামায পড়া অবস্থায় হাতের খালি অংশ যদি এক রোকন পরিমাণ (তিন তাসবীহ পরিমাণ) বা তার চেয়ে বেশি সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে নামায সহীহ হবে না। কেননা নামাযে মহিলাদের হাত কব্জি পর্যন্ত ঢেকে রাখা আবশ্যক। হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত এ অংশ থেকে এক চতুর্থাংশ বা তার বেশি যদি এক তাসবীহ পরিমাণ খোলা থাকে এবং এ অবস্থায় এক রোকন পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়, তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ ধরনের জামায় ছোট ওড়না দিয়ে নামায আদায় করা নিরাপদ নয়। সামান্য অসতর্কতার কারণে নামায নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অতএব, এ ধরনের ছোট হাতাবিশিষ্ট জামা পরে নামায পড়তে চাইলে জরুরি হল, বড় ওড়না বা হিজাব পরিধান করা। যেন হাতের খোলা এ অংশ নামাযে অনাবৃত না হয়ে যায়। এবং নামায নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি না হয়।

-কিতাবুল আছল ১/১৭৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২৯৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২১৫; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৯

শেয়ার লিংক

আশরাফ আলী - ফরিদপুর

৬৫১৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার জন্ডিস হয়। ডাক্তার প্রতিদিন একটা করে স্যালাইন দেন। একদিন আমি ওযু অবস্থায় ছিলাম। ডাক্তার স্যালাইন দিতে আসেন। স্যালাইনের সুঁই রগে প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রক্ত স্যালাইনের নলে চলে আসে। ঔষধ ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করলে তা আবার ভেতরে চলে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর যোহরের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাই আমি উঠে স্যালাইনসহই পূর্বের ওযু দিয়ে যোহরের নামায আদায় করে নিই। আমার উক্ত নামাযটি আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পুনরায় ওযু না করে পূর্বের ওযু দ্বারা আদায়কৃত ঐ নামাযটি আদায় হয়নি। কেননা স্যালাইন লাগানোর সময় শরীর থেকে রক্ত বের হওয়ার দ্বারাই আপনার ওযু ভেঙে গিয়েছিল। এরপর তা আবার শরীরে প্রবেশ করলেও এ কারণে পূর্বের ওযু ভঙ্গের হুকুম পরিবর্তন হবে না। সুতরাং এরপর পুনরায় ওযু না করে যে নামাযটি পড়া হয়েছে, তা ওযু ছাড়াই পড়া হয়েছে। সুতরাং তা পুনরায় পড়ে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৪৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৩৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৪৮

শেয়ার লিংক

হানযালা - নরসিংদী

৬৫১৮. প্রশ্ন

আজকে যোহরের সুন্নত পড়ছিলাম। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর বেখেয়াল হয়ে যাই। ফলে আমি আবার তাশাহুদ পড়ি। স্বাভাবিক নিয়মে নামায শেষ করি, সাহু সিজদা করিনি। এখন জানতে চাচ্ছি, আমার এ নামায কি সহীহ হয়েছে? তাছাড়া মাঝে মাঝে কখনো একই বৈঠকে ভুলে দুইবার তাশাহহুদ পড়া হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?

উত্তর

জী, আপনার উক্ত নামায সহীহ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কেননা শেষ বৈঠকে দুইবার তাশাহহুদ পড়লেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। যদিও তা নিয়মসম্মত নয়। তাই ইচ্ছাকৃত এমনটি করা যাবে না।

তবে উল্লেখ্য, প্রথম বৈঠকে ভুলে দুইবার তাশাহহুদ পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই প্রথম বৈঠকে ভুলবশত দুইবার তাশাহহুদ পড়া হলে সাহু সিজদা করতে হবে।

-উয়ূনুল মাসায়িল, পৃ. ২৫, আলআজনাস, নাতিফী ১/১০৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৭

শেয়ার লিংক

উবাইদুল্লাহ - বাঘারপাড়া, যশোর

৬৫১৯. প্রশ্ন

গতকাল মাগরিবের নামাযের সুন্নত পড়ছিলাম। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়ি। দ্বিতীয় রাকাতেও ভুলে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়ে ফেলি। এভাবেই নামায শেষ করি। জানতে চাই, আমার এ নামায কি আদায় হয়েছে, নাকি আমার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল?

উত্তর

আপনার উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। তাই সাহু সিজদা না করা ঠিকই হয়েছে। কেননা নামাযের দুই রাকাতেই একই সূরা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তবে ফরয নামাযে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা অনুত্তম।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৮১২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৪; আননাহরুল ফায়েক ১/২৩৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৮১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬

শেয়ার লিংক

রাশেদ - নারায়ণগঞ্জ

৬৫২০. প্রশ্ন

আমাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। আমাদের কিছু আত্মীয়-স্বজন চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। যেমন কেউ সাতকানিয়া, কেউ ফটিকছড়ি, কেউ পটিয়াতে। এগুলো প্রত্যেকটি আলাদা থানা। সামনে এক মাসের ছুটিতে আমরা সপরিবারে চট্টগ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাব। ৯-১০ দিন করে এক এক বাড়িতে সময় কাটাব। এভাবে মোট ১ মাস চট্টগ্রামে থাকব। এ সময় আমরা কি নামায কসর করব, নাকি মুকীম হিসেবে পূর্ণ নামায পড়ব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম জেলায় এক মাস অবস্থানের নিয়তে থাকলেও যেহেতু একটি এলাকা বা একটি শহরে একত্রে ১৫ দিন থাকা হবে না; বরং প্রশ্নোল্লিখিত এলাকাগুলোর একেকটিতে ১৫ দিনের কম সময় থাকা হবে, তাই এক্ষেত্রে আপনারা সেখানে পূর্ণ সময় মুসাফির হিসেবেই থাকবেন। তাই চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায একাকী বা মুসাফির ইমামের পেছনে পড়লে কসর করবেন।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৩৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/১২৬

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ফেনী

৬৫২১. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের বাড়িতে নিজেদের একটি পারিবারিক কবরস্থান আছে। কবরস্থানটি ওয়াকফিয়া কবরস্থান। কবরস্থানের অদূরে একটি নদী আছে। কিছুদিন আগে নদীটিতে ভাঙন শুরু হয় এবং ভাঙতে ভাঙতে নদীটি কবরস্থানের একদম নিকটে চলে আসে। একদিন রাতের বেলা দুটি কবর নদীগর্ভে চলে যায়। অবস্থা দেখে প্রবল ধারণা হচ্ছে যে, বাকি কবরগুলোও ভাঙনের কবলে পরবে।

মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল, এখন কবরগুলো হেফাজতের জন্য কি স্থানান্তর করা যাবে?

উল্লেখ্য, কবরস্থানটিতে এখন ৪টি কবর আছে। একটি কবর ৬ মাস আগের। আর দুটি তিন থেকে চার বছর আগের। আর একটি ২২ বছর আগের।

উত্তর

লাশ দাফনের পর সাধারণ অবস্থায় কবর থেকে লাশ বের করা এবং অন্যত্র স্থানান্তর করা জায়েয নয়। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নদী ভাঙনের কারণে কবরগুলো যেহেতু নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে এবং প্রবল ধারণা যে, বাকি কবরগুলো যদি স্থানান্তর করা না হয়, তাহলে সেগুলোও নদীগর্ভে চলে যাবে। তাই এক্ষেত্রে কবরগুলো খুঁড়ে লাশ ও হাড়গোড় বের করে অন্যত্র দাফন করা জায়েয হবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫০; মুসান্নাফে  ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২২২২; উমদাতুল কারী ৮/১৬৫; জামিউল মুযমারাত ২/৩০৭; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩৩৭

শেয়ার লিংক

ফখরুল ইসলাম - নরসিংদী

৬৫২২. প্রশ্ন

রমযানের অনেক আগ থেকেই আমার বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে যান। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। দীর্ঘ কয়েক মাস দেশে চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু ক্যান্সার মারাত্মক রূপ ধারণ করার কারণে তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। যেহেতু তখন তার রোযা রাখার সক্ষমতা একেবারেই ছিল না, তাই আমরা তার রমযানের রোযাগুলোর ফিদইয়া আদায় করে দেই। পরে দেশের বাইরে চিকিৎসা করানো হয়। আল্লাহর রহমতে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। আলহামদু লিল্লাহ এখন তিনি সুস্থ আছেন। হযরতের কাছে জানার বিষয় হল, আমরা তো তার রোযাগুলোর জন্য ফিদইয়া আদায় করে দিয়েছি, এখন কি তার জন্য রমযানের রোযাগুলো কাজা করা জরুরি?

উত্তর

আপনার বাবা যেহেতু পরবর্তীতে সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন এবং এখন রোযা রাখতে সক্ষম, তাই পূর্বে তার পক্ষ থেকে যে ফিদইয়া আদায় করা হয়েছে, তা বাতিল হয়ে গেছে। এখন তার ওপর রমযানের রোযাগুলো কাযা করা জরুরি। পূর্বের আদায়কৃত ফিদইয়া এক্ষেত্রে নফল সদকা হিসেবে গণ্য হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৫; ফাতহুল কাদীর ২/২৭৬; জামিউর রুমুয ১/৩৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৬

শেয়ার লিংক

আশরাফুজ্জামান - যশোর

৬৫২৩. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি এতীমখানা আছে। সেখানে বিভিন্ন বয়সের ত্রিশজন পথশিশু ও এতীমদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমি আমার দাদার ত্রিশ দিনের রোযার ফিদইয়া হিসেবে তাদেরকে দুই বেলা খাওয়াতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হল, সেখানে চার-পাঁচ বছর বয়সী কয়েকজন বাচ্চা আছে। এই বয়সের বাচ্চারা তো খুব সামান্যই খায়। তাদেরকে খাওয়ালে কি ফিদইয়া আদায় হবে?

উত্তর

না, চার-পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানোর দ্বারা ফিদইয়া আদায় হবে না। কেননা খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদইয়া আদায়ের জন্য শর্ত হল, এমন ব্যক্তিকে খওয়ানো, যে পূর্ণ খাবার খেতে পারে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দাদার ত্রিশটি রোযার ফিদইয়া উক্ত এতীমখানার বাচ্চাদের খাওয়ানোর মাধ্যমে আদায় করতে চাইলে তা এমন বাচ্চাদেরকেই খাওয়াতে হবে, যারা পূর্ণ খাবার খেতে পারে। আর যে কয়জন অল্পবয়সী বাচ্চা পূর্ণ খাবার খেতে পারে না, তাদেরকে ফিদইয়ার বাইরে সাধারণ সদকার নিয়তে খাওয়াতে পারেন। এতে আপনি সদকার সওয়াব পাবেন।

-কিতাবুল আছল ২/২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭৮

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম - যশোর

৬৫২৪. প্রশ্ন

হুজুর, দুই সপ্তাহ আগে আমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে আমি তাকে এক তালাকে বায়েন দিই। এখন আমি উক্ত আচরণে অনুতপ্ত এবং তার সাথে সংসার করতে চাই। এর আগে আমি তাকে কোনো তালাক দেইনি। শুনেছি, এক তালাকে বায়েন দেওয়ার পরও স্ত্রীকে বিয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেওয়া যায়।

জানার বিষয় হল, আমি কি এখনই ইদ্দত অবস্থায় তাকে বিয়ে করতে পারব, না ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি তাকে যেহেতু শুধু এক তালাকে বায়েন দিয়েছেন, তাই ইদ্দতের ভেতরেই নতুন মোহর ধার্য করে আপনি তাকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে মহিলাটি অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে ইদ্দত শেষ হওয়া জরুরি। এর আগে অন্যত্র বিবাহ করা তার জন্য জায়েয নয়।

উল্লেখ্য, আপনি তাকে ইদ্দতের ভেতর বিবাহ করেন বা ইদ্দতের শেষে, উভয় অবস্থায় আপনি কেবল দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে দুই তালাক দিলেই পূর্বের এক তালাকসহ তিন তালাক হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে এবং আপনারা একে অপরের জন্য হারাম হয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে পুনরায় বিবাহ করারও সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে সতর্কতা কাম্য।

আরো উল্লেখ্য, তালাক বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। বিনা কারণে তালাক দেওয়া কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায় ও গুনাহের কাজ। ক্ষেত্রবিশেষে তা স্ত্রী-সন্তানের ওপর জুলুমও বটে। তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৩, ২৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/১৬২; আলবাহরুর রায়েক ৪/৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/১৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪০৯

শেয়ার লিংক

বিনতে মুহসিন - চট্টগ্রাম

৬৫২৫. প্রশ্ন

বিবাহের সময় আমার মোহর ধার্য হয় আশি হাজার টাকা। আমার ইচ্ছা ছিল, মোহর আরেকটু বেশি ধার্য হোক। কিন্তু মুরব্বিদের সিদ্ধান্তের বাইরে কথা বলার আমার কোনো সাহস ছিল না। যাইহোক, উক্ত মোহরেই আমার আকদ সম্পন্ন হয়ে যায়। বিবাহের মাসখানেক পর আমার স্বামীকে বিষয়টি খুলে বলি। তিনি তখন বললেন, তোমার কী পরিমাণের ইচ্ছা ছিল?

আমি বললাম, কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা।

তিনি বললেন, ঠিক আছে, তোমার মোহর আমি দেড় লাখই করে দিলাম। বাকি টাকা পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে আদায় করে দেব।

আমার জানার বিষয় হল, বাস্তবেই কি বিবাহ-পরবর্তী সময়ে মোহর হিসেবে বর্ধিত অংক আমি পাওয়ার অধিকার রাখি? উক্ত অংক কি মোহরের মধ্যে গণ্য হবে?

উত্তর

আকদ সম্পন্ন হওয়ার পরও স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক সম্মতিতে মোহর বৃদ্ধি করতে পারে এবং সেক্ষেত্রে বর্ধিত মোহর স্বামীর ওপর পরিশোধ করা আবশ্যক হয়ে যায়। সুতরাং আপনার স্বামী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আপনার মোহর বৃদ্ধির প্রস্তাবটি গ্রহণ করে এবং ৮০ হাজার  টাকার পরিবর্তে মোহর দেড় লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে বর্ধিত ৭০ হাজার টাকাও মোহরের মধ্যে গণ্য হবে। সুতরাং আপনি বর্ধিত ঐ টাকা মোহর হিসাবে পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন।

-কিতাবুল আছল ১০/২৪০; মুখতাসারুত তাহাবী, পৃ. ১৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৮৩; মাজমাউল আনহুর ১/৫১৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১১১

শেয়ার লিংক

নাইমুদ্দীন - চট্টগ্রাম

৬৫২৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে এক মসজিদে আমার খালাতো ভাইয়ের বিবাহের আকদ হয়। আকদের মজলিসে যদিও উভয়পক্ষের মুরব্বিগণ ও মসজিদের অন্য মুসল্লিগণ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কাউকে সাক্ষী বানানো হয়নি। অবশ্য পরে কাবিননামাতে আকদের সময় উপস্থিত ছিলেন এমন দুইজন সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন।

মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, আকদের সময় নির্দিষ্ট করে সাক্ষী বানানো কি জরুরি? এ বিয়েতে নির্দিষ্ট করে সাক্ষী না বানানোর কারণে কোনো সমস্যা হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

না, নির্দিষ্ট করে কাউকে সাক্ষী না বানানোর কারণে কোনো সমস্যা হয়নি। উক্ত বিবাহ সহীহভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। কেননা বিবাহের আকদ সহীহ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করে সাক্ষী বানানো জরুরি নয়; বরং বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল সাক্ষী উপস্থিত থাকা। পাত্র-পাত্রী বা তাদের প্রতিনিধি ছাড়া আকদের মজলিসে প্রাপ্তবয়স্ক যারাই উপস্থিত থাকবে, তারা সকলেই সাক্ষী গণ্য হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আকদের মজলিসে উপস্থিত যারাই ইজাব-কবুল শুনেছে। তারা সবাই উক্ত বিবাহের সাক্ষী। সুতরাং এ নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই।

-আলমুহীতুর রাযাবী ৩/৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৭

শেয়ার লিংক

নাহিদ - রাজশাহী

৬৫২৭. প্রশ্ন

এসএসসি পরীক্ষার আগে আমি মান্নত করেছিলাম, যদি পরীক্ষায় এ প্লাস পাই, তাহলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ৫০ রাকাত নামায আদায় করব। আল্লাহর রহমতে আমি এ প্লাস পেয়েছি।

মুহতারামের কাছে জানতে চাই, উক্ত মান্নত আদায়ের জন্য কি বায়তুল মোকাররম মসজিদেই নামায পড়া জরুরি, নাকি অন্য কোনো মসজিদে পড়লেও মান্নত আদায় হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যেহেতু বায়তুল মোকাররম মসজিদেই ৫০ রাকাত নামায পড়ার মান্নত করেছেন, তাই সম্ভব হলে সেখানে পড়াই ভালো হবে। তবে সেখানেই পড়া আবশ্যক নয়; বরং অন্য কোনো জায়গায় মান্নত আদায়ের নিয়তে ৫০ রাকাত নামায পড়ে নিলেও আপনার মান্নত আদায় হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪৫, ২৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৩৫

শেয়ার লিংক

উম্মে তায়্যিব - নেত্রকোনা

৬৫২৮. প্রশ্ন

হুজুর, অনেক আগে আমি একটি উদ্দেশ্যে ৮ আনা স্বর্ণ সদকা করার মান্নত করেছিলাম। আলহামদু লিল্লাহ, উদ্দেশ্যটি পুরা হয়েছে। এখন আমি মান্নতটি আদায় করতে চাচ্ছি। তাই সে সম্পর্কে আমার কয়েকটি জিজ্ঞাসা-

১. উক্ত স্বর্ণের পরিবর্তে স্বর্ণের মূল্য দেওয়া যাবে কি না?

২. স্বর্ণের মূল্য হিসাব করে কিছু টাকা দিয়ে গরীব ছাত্রদেরকে কিতাব কিনে দেওয়া যাবে কি না?

৩. আমার বাসায় কয়েকজন কাজের মেয়ে থাকে, তাদেরকে ঐ মান্নতের জিনিস দেওয়া যাবে কি না?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ পরিমাণ স্বর্ণের বাজারমূল্য গরীবদের সদকা করলেও মান্নত আদায় হয়ে যাবে। তদ্রূপ মূল্য হিসাবে কিতাব বা অন্য কোনো বস্তুও গরীবদেরকে সদকা করা যাবে। কোনো বস্তু সদকা করার মান্নত করলে তা হুবহু না দিয়ে তার উপযুক্ত মূল্য সদকা করাও জায়েয। আর বাসার কাজের লোকজন যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র হলে বেতন-বোনাসের বাইরে তাদেরকেও মান্নতের জিনিস দেওয়া যাবে। তবে এর বিনিময়ে তাদের থেকে অতিরিক্তি সেবা নেওয়া যাবে না। তাই তাদেরকে বলে দেবে, এটি বেতন/ভাতা নয়; বরং এটি তোমাদেরকে এমনিতেই দিলাম। এক্ষেত্রে সদকার কথা স্পষ্টভাবে বলে দিতে পারলে সবচেয়ে নিরাপদ।

এক্ষেত্রে আরো জরুরি হল, তাদের যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া। কেননা অনেক কাজের লোকের নিকট নেসাব পরিমাণ ব্যাংক-ব্যালেন্স, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি থাকে; যারা ওয়াজিব সদকা গ্রহণের উপযুক্ত থাকে না।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ২৮৭; আলমুহীতুর রাযাবী ৪/৫৪২; আলইখতিয়ার ১/৩৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪১

শেয়ার লিংক

তাবাসসুম - ফেনী

৬৫২৯. প্রশ্ন

আমার যিম্মায় কসমের একটি কাফফারা ওয়াজিব হয়ে আছে। অর্থের মাধ্যমে উক্ত কাফফারা আদায় করার সামর্থ্য না থাকায় রোযার মাধ্যমে তার কাফফারা আদায় করা শুরু করি। দুটি রোযা রাখার পর তৃতীয় দিন সকালে আমার মাসিক স্রাব শুরু হয়ে যায়ে। ফলে ঐ দিনের রোযাটি রাখতে পারিনি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এখন আমার করণীয় কী? নতুন করে তিনটি রোযা রাখা, নাকি একটি রাখলেই হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে উক্ত তিনটি রোযা পুনরায় লাগাতারভাবে রাখতে হবে। কেননা কসমের কাফফারার রোযাগুলো লাগাতার রাখা আবশ্যক। ঋতুস্রাব বা অন্য কোনো ওজরের কারণেও যদি ধারাবাহিকতা ছুটে যায়, তাহলে নতুন করে আবার লাগাতার তিনটি রোযা রাখা জরুরি। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-

إذَا صَامَتِ الْمَرْأَةُ فِي كَفَّارَةِ الْيَمِينِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَحَاضَتْ قَبْلَ أَنْ تُتِمَّ صَوْمَهَا فَلْتَسْتَقْبِلْ صَوْمَ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ.

কোনো মহিলা কসমের কাফফারা-স্বরূপ তিন দিন রোযা রাখা শুরু করার পর রোযাগুলো পূর্ণ করার আগেই যদি তার ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়, তাহলে সে নতুন করে লাগাতার তিন দিন রোযা রাখবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২৩৫৬

উল্লেখ্য, রমযানের রোযার কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে দুই মাস লাগাতার রোযা রাখার মাঝে যদি কোনো মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হয়, তাহলে তাকে নতুন করে আবার দুই মাস রোযা রাখতে হবে না; বরং সেক্ষেত্রে পবিত্র হওয়ার পর থেকেই কোনো দিন বাদ না দিয়ে বাকি রোযাগুলো পুরা করে নিলে উক্ত কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আছল ২/২৯৫; আলহাবিল কুদসী ১/৫৩৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৫; আলমুহীতুর রাযাবী ৪/৫৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৭

শেয়ার লিংক

উম্মে আবরার - রাজশাহী

৬৫৩০. প্রশ্ন

এক নারী মান্নত করেছে, আগামী মঙ্গলবার আমার ছেলে বিদেশ থেকে আসলে পরদিন বুধবার আমি রোযা রাখব। মঙ্গলবার তার ছেলে আসে। কিন্তু সেদিন থেকে তার হায়েয শুরু হয়ে যায় এবং বুধবার হায়েযের কারণে আর রোযা রাখা হয়নি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এখন ঐ নারী তার মান্নত কীভাবে আদায় করবে- জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ নারী হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর একটি রোযা আদায় করে নেবে। এর দ্বারাই তার মান্নত আদায় হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৮০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/১০৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৩৭

শেয়ার লিংক

রবিউল আলম - উত্তরা, ঢাকা

৬৫৩১. প্রশ্ন

নির্মাণাধীন ভবনে ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়াতে কি সমস্যা আছে? আমি একটি ফ্ল্যাট বুকিং দিতে চাচ্ছি, যেটা হবে ৭ তলায়, কিন্তু কাজ হয়েছে শুধু প্রথম তলার। ৩০% টাকা এখন, ৪০% টাকা ২৬ মাসে ও ৩০% টাকা ফ্ল্যাট বুঝে নেওয়ার সময় দিতে হবে।

জানার বিষয় হল, এ ধরনের চুক্তিতে কি শরীয়তে কোনো আপত্তি আছে? বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বাইয়ুল ইস্তিছনা’ (তথা অর্ডার দিয়ে কারো থেকে কোনো বস্তু বানানোর) অন্তর্ভুক্ত। আর ইস্তিছনার চুক্তি শর্ত সাপেক্ষে জায়েয আছে। শর্তগুলো হল, চুক্তির সময়ই পণ্যের গুণগত মান, পরিমাণ, সাইজ, মূল্য ইত্যাদি সকল বিষয় স্পষ্ট থাকতে হবে। অন্যথায় উক্ত চুক্তি সহীহ হবে না।

সুতরাং তৈরি হয়নি- এমন ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার সময় ফ্ল্যাট কোন্ তলায় হবে, কত স্কয়ার ফিটের, রুম কয়টি ও কী কী, কোন্ রুমের সাইজ কত হবে ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় স্পষ্ট করে নিতে হবে। এভাবে সকল শর্ত অনুযায়ী হলে তা জায়েয আছে। সুতরাং ফ্ল্যাট বুকিং দেওয়ার সময় চুক্তিপত্র কোনো বিজ্ঞ মুফতী সাহেবকে দেখিয়ে নেবেন।

-কিতাবুল আছল ৩/৪৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৪৪; আলহাবিল কুদসী ২/৯৫; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী ৭/২/৫১৫

শেয়ার লিংক

হাশেম - কুমিল্লা

৬৫৩২. প্রশ্ন

আমার একটি কাপড় ইস্ত্রির দোকান আছে। বছরের কিছু কিছু মৌসুমে কাজের অনেক চাপ থাকে। বিশেষত ঈদের মৌসুমে। তাই আমি এবার ঈদের সময়ে ১০ দিনের জন্য একজন কর্মচারী নিই। সে কাপড় ইস্ত্রি করতে গিয়ে একদিন একটি শার্ট পুড়িয়ে ফেলে। পরে আমাকে শার্টটির জরিমানা দিতে হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, আমি কি তার থেকে শার্টটির জরিমানা নিতে পারব? তার কারণেই তো উক্ত জরিমানা দিতে হয়েছে। আশা করি মাসআলাটি জানাবেন।

উত্তর

যদি সতর্কতার সাথে ইস্ত্রি করার পরও ভোল্টেজ উঠানামা বা অন্য কোনো কারণে পুড়ে গিয়ে থাকে, যা থেকে সতর্কতার পরও সাধারণত বাঁচা সম্ভব হয় না, তাহলে এমন ক্ষেত্রে ঐ কর্মচারী থেকে আপনি ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন না। কিন্তু যদি পুড়ে যাওয়ার পেছনে তার অবহেলা কিংবা ত্রুটি প্রমাণিত হয়, তাহলে আপনি তার থেকে এর ক্ষতিপূরণ নিতে পারবেন। আর কাপড়ওয়ালা সর্বক্ষেত্রেই কাপড় নষ্ট হয়ে গেলে আপনার (লন্ড্রি মালিক) কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৭৪; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৩১৫; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দাহ ৬১১; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৭২৯

শেয়ার লিংক

শাফাআত হোসেন - মোমেনশাহী

৬৫৩৩. প্রশ্ন

আমার চাচাতো ভাই এক কোম্পানির ডিলার। কোম্পানি তাকে অফার করেছে, পণ্যের মূল্য বাবত কোম্পানিকে ১ লাখ টাকা অগ্রিম দিলে কোম্পানি তাকে ৬ হাজার টাকা কমিশন দেবে। এখন তার কাছে কোম্পানিকে দেয়ার মত ৮০ হাজার টাকা আছে। তাই সে আমাকে বলেছে, তুমি আমাকে ২০ হাজার টাকা দাও, যাতে আমি কোম্পানিকে ১ লাখ টাকা পুরা করে দিতে পারি। এজন্য কোম্পানি আমাকে যে ৬ হাজার টাকা কমিশন দেবে, তা থেকে তোমাকে ২ হাজার টাকা দেব। তার কথা মতো আমি তাকে ২০ হাজার টাকা দিই।

মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এখন আমার জন্য আমার দেওয়া ২০ হাজার টাকার অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা নেয়া বৈধ হবে কি?

উত্তর

না, এক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা নেওয়া আপনার জন্য বৈধ হবে না। এটি সুস্পষ্ট সুদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী কোম্পানির ডিলার (আপনার চাচাতো ভাই)-কে আপনি ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন, অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা নেওয়ার চুক্তিতে। শরীয়তের দৃষ্টিতে যা সুদী ঋণের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যে পরিমাণ টাকা তাকে দিয়েছেন, শুধু ঐ পরিমাণ টাকাই তার থেকে ফেরত নিতে পারবেন; এর অতিরিক্ত কিছুতেই নয়।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২১০৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬

শেয়ার লিংক

মুহিউদ্দিন - মোমেনশাহী

৬৫৩৪. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি উমরাহ করতে যাবেন; কিন্তু তার কাছে টাকা নেই। এজন্য তিনি একটি সমিতি থেকে উমরাহ করার জন্য দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ হিসেবে নিতে চান। উমরাহ করতে টিকিট করা লাগবে। হোটেল বুকিং করতে হবে। আরো বিভিন্ন খরচ আছে। এসবকিছু বাবদ তিনি এজেন্সিকে যে টাকা দেবেন তা তিনি উক্ত সমিতি থেকে নিতে চান। সমিতি লাভের ভিত্তিতে তাকে এ টাকা প্রদান করবে। একজন বলেছেন, এটি জায়েয হবে। কেননা এখানে টিকিট আছে, হোটেল আছে। এগুলো পণ্য, সুতরাং পণ্যের বিনিময়ে এখানে সমিতির জন্য লাভের ভিত্তিতে টাকা দেওয়া জায়েয হবে।

আমার জানার বিষয় হল, তার এ কথা কি ঠিক? এটি কি বাস্তবেই জায়েয হবে? বিষয়টি বুঝিয়ে বলে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উমরাহ গমনেচ্ছু ব্যক্তির টিকিট, হোটেল ইত্যাদি বাবদ এজেন্সিকে যে টাকা পরিশোধ করতে হবে, তা সমিতি থেকে লাভ দেওয়ার শর্তে অর্থাৎ বিনিয়োগের ভিত্তিতে গ্রহণ করা বৈধ হবে না। কেননা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের রুম ও ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা এজেন্ট থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামেই ইস্যু হয়। তখন এজেন্সির শুধু টাকা পাওনা থাকে। সে টাকা অন্য কেউ (যেমন সমিতি) প্রদান কারলে তা অন্যের পাওনা পরিশোধ করেছে বলে গণ্য হবে; যা মূলত তাকে নগদ টাকা ঋণ প্রদানের অন্তর্ভুক্ত। তাই এক্ষেত্রে টাকা দিয়ে লাভ নিলে সেটি সুদ বলে গণ্য হবে। এটি যেহেতু পাওনা পরিশোধ, তাই একে শরীয়তের শিরকত, মুদারাবা বা বেচা-বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং এক্ষেত্রে সমিতির জন্য বিনিয়োগ করা সহীহ হবে না। সমিতি ঐ ব্যক্তির পক্ষে এজেন্সিকে টাকা দিলে তা ঋণ গণ্য হবে এবং শুধু ঐ পরিমাণ টাকাই ফেরত নেবে। অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা সুদ হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২১০৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬

শেয়ার লিংক

সাদেকুল ইসলাম - মোমেনশাহী

৬৫৩৫. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি আমার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তার মোটর সাইকেলটি আমার নিকট বন্ধক রাখে। আমি তার সাথে কোনো ধরনের কথাবার্তা ছাড়াই তার মোটর সাইকেলটি অন্যদের নিকট ভাড়া দিয়ে কিছু টাকা আয় করি। পরবর্তীতে সে ঋণ পরিশোধ করে দিলে মোটর সাইকেলটি তাকে ফেরত দিয়ে দেই।

আমার জানার বিষয় হল, এই মোটর সাইকেলটি দ্বারা অর্জিত টাকা ভোগ করা কি আমার জন্য জায়েয হবে, নাকি তা মালিককে ফেরত দিয়ে দিতে হবে?

উত্তর

ঋণদাতার জন্য বন্ধকী বস্তু ভাড়া দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়; তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই মোটর সাইকেলটি দ্বারা অর্জিত টাকা ভোগ করা আপনার জন্য জায়েয হবে না। আর আপনি যেহেতু বন্ধকদাতার অনুমতি ছাড়াই তার মোটর সাইকেলটি অন্যদের নিকট ভাড়া দিয়েছেন, তাই তা থেকে উপার্জিত সকল টাকা সদকা করে দিতে হবে। মোটর সাইকেলের মালিকও তা ভোগ করতে পারবে না।

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৫০৭১; কিতাবুল আছল ৩/২২৭; আলমুহীতুর রাযাবী ৮/৩৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৫২৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান - ফুলগাজী, ফেনী

৬৫৩৬. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কুরবানীর ঈদের সময় ঈদের দিন সকালে গরু জবাই করার আগেই চামড়া ব্যবসায়ীরা এসে দরদাম করে চামড়া ক্রয় করে রাখে এবং চামড়ার মূল্যও তখন পরিশোধ করে দেয়। তারপর গরু জবাই ও চামড়া ছেলা হয়ে গেলে দুপুরের দিকে এসে চামড়া নিয়ে যায়। জানতে চাই, পশু জবাই করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা কি জায়েয?

উত্তর

না, পশু জবাই করার পূর্বে উক্ত চামড়া বিক্রি করা জায়েয নয়। তাই চামড়া ছেলার আগে ক্রেতার সাথে বিক্রির ওয়াদা করা (প্রাথমিক কাথাবার্তা বলা) যেতে পারে। কিন্তু তখনই চূড়ান্ত ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না; চূড়ান্ত ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে চামড়া ছেলার পর।

-আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৯/৪৪০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৩৬৭; ফাতহুল কাদীর ৬/৫১; আননাহরুল ফায়েক ৩/৪২১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৩

শেয়ার লিংক

মারুফ বিল্লাহ - যশোর

৬৫৩৭. প্রশ্ন

গত বছর আমার বাবা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি আমাকে ডেকে দুটি ওসিয়ত করেন। আমি যেন প্রতি মাসে তার জন্য এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করি। আর সামর্থ্য থাকলে প্রতি বছর নিজ খরচে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করি। আমি বাবার ওসিয়ত পালনার্থে এ বছর তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার নিয়ত করেছি। হুযুরের কাছে জানতে চাই, উক্ত কুরবানীর গোশত আমরা খেতে পারব কি?

উত্তর

এ কুরবানীর গোশত আপনারা নিজেরাও খেতে পারবেন। এর গোশত সদকা করে দেওয়া আবশ্যক নয়। কেননা বাবার কথা অনুযায়ী পরবর্তীতে কুরবানী করলেও এটি মূলত ছেলের নিজের সম্পদ দ্বারা তার পিতার পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের কুরবানী। বাবার সম্পদ দ্বারা তার ওসিয়তের কুরবানী নয়। অতএব এ কুরবানীর গোশতের হুকুম সাধারণ কুরবানীর মতোই। তেমনি এর গোশত ধনী-গরীব যে কাউকেই দিতে পারবে।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৪৬৯; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬

শেয়ার লিংক

মাসুম বিল্লাহ - যশোর

৬৫৩৮. প্রশ্ন

আমার চাচা একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। গত বছর ঈদুল আযহার এক সপ্তাহ আগে তিনি কুরবানীর একটি পশু ক্রয় করেন। কিন্তু ঈদের আগের দিন কোম্পানির পক্ষ থেকে ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্যে তাকে ছয় দিনের সফরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার অনুপস্থিতিতে পশুটি কুরবানী করার মতো বাড়িতে কেউ ছিল না। কুরবানীর পাঁচ দিন পর তিনি সফর থেকে ফিরে আসেন। তখন তিনি এক হুজুর থেকে জানতে পারেন যে, তিনি যেহেতু কুরবানীর সময় মুসাফির ছিলেন, তাই তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল না। ফলে তিনি পশুটি বিক্রি করে দেন। জানতে চাই, এক্ষেত্রে কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সদকা না করে বিক্রি করে দেওয়া কি বৈধ হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচা যেহেতু কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির ছিলেন, তাই তার জন্য কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশুটি বিক্রি করে দেওয়া নাজায়েয হয়নি। কেননা কুরবানীর দিনগুলোতে কিংবা অন্তত এর শেষ সময়ে কেউ মুসাফির অবস্থায় থাকলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব থাকে না। তবে মনে রাখতে হবে, কারো ওপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পরও কুরবানী না করার জন্য যদি এ মাসআলাকে বাহানা হিসেবে অবলম্বন করে, তবে তা খুবই অন্যায় ও গুনাহের কাজ হবে।

-আলআজনাস, নাতিফী ১/৫০৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জহীরুল ইসলাম - ফেনী

৬৫৩৯. প্রশ্ন

আমার বড় চাচা অনেক সম্পত্তির মালিক। চাচাজানের একজন বন্ধু আছেন, যিনি আর্থিকভাবে অনেক অসচ্ছল, তবে খুবই ভালো মনের মানুষ। চাচাজানের জীবনে তিনি চাচাজানের অনেক উপকার করেছেন। একবার এক ঘটনায় চাচাজান তার ওপর খুশি হয়ে বলেন, ‘আমি ওসিয়ত করছি, আমার মৃত্যুর পর আমার অমুক জমিটি তুমি নেবে।কিন্তু আমার চাচি এবং চাচাতো ভাইয়েরা চাচার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে চাচাজানের সঙ্গে তাদের কয়েকবার কথা কাটাকাটিও হয়। বিষয়টি জানতে পেরে চাচাজানের সেই বন্ধু চাচাজানকে বলেন, ‘আমার জমি লাগবে না। আমি চাই নাÑ আমার কারণে আপনার ঘরে ঝগড়া-বিবাদ হোক।চাচাজান তখন বলেছিলেন, ‘না, আমি ওসিয়ত করছি, জমিটি তুমি পাবে।

কয়েকদিন আগে চাচাজান ইন্তেকাল করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নিজ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। এদিকে চাচার মৃত্যুর পর থেকে চাচার সেই বন্ধু জমিটি নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন। অপরদিকে চাচার ওয়ারিশদের দাবি হল, যেহেতু তিনি চাচা জীবিত থাকতেই জমিটি প্রত্যাখান করেছেন, তাই এখন তিনি আর উক্ত জমির হকদার নন।

মুহতারামের নিকট আমাদের জানার বিষয় হল, উক্ত জমির প্রকৃত হকদার এখন কে? চাচার ওয়ারিশরা, নাকি ঐ ব্যক্তি, যার জন্য চাচাজান ওসিয়ত করেছেন?

উত্তর

ওসিয়ত কার্যকর হয় ওসিয়তকারীর মৃত্যুর পর। তাই ওসিয়তকারীর মৃত্যুর পরই কেবল যার জন্য ওসিয়ত করা হয়েছে, তিনি গ্রহণ বা  প্রত্যাখান করার অধিকার রাখেন। এর আগে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করলেও তা ধর্তব্য হয় না।

অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচা যার জন্য ওসিয়ত করেছেন, তিনিই জমিটির মূল পাওনাদার। সুতরাং জমিটি পাওয়ার জন্য তার দাবি জানানো সঠিক হয়েছে। সুতরাং মৃতের কাফন-দাফনের খরচ এবং কোনো ঋণ থাকলে তা আদায়ের পর মৃতের ওসিয়তকৃত জমিটি যদি তার অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ বা তার কম হয়, তাহলে মৃতের ওসিয়ত অনুযায়ী উক্ত জমি লোকটিকে বুঝিয়ে দেওয়া ওয়ারিশদের ওপর ওয়াজিব।

-কিতাবুল আছল ৫/৫১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২৮/৪৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৫/৩৬৭; মাজমাউল আনহুর ৪/৪২১আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫৭

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - কুমিল্লা

৬৫৪০. প্রশ্ন

মসজিদে বিভিন্ন সময় ফকির-মিসকীন ও বিপদগ্রস্ত লোক ইমাম সাহেবকে এসে মুসল্লিদেরকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য বলার অনুরোধ করে। ইমাম সাহেব না বললে সে নিজেই সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে সাহায্যের কথা বলে, এমতাবস্থায় ইমাম সাহেব, মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের করণীয় কী? বিশুদ্ধ প্রমাণসহ এর শরয়ী সমাধান জানানোর আরয করছি, জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

উত্তর

শরীয়তে একান্ত মাজবুরি বা অপারগ অবস্থা ছাড়া অন্যের কাছে হাত পাতা নাজায়েয। আর একে অভ্যাস ও পেশা বানিয়ে নেওয়া আরো অন্যায় ও নিন্দনীয়। ভিক্ষাবৃত্তি ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। কোনো ভিক্ষুকের ব্যাপারে যদি ধারণা হয়, সে মাজবুর-অপারগ নয়; বরং ভিক্ষাবৃত্তি তার পেশা, তাহলে তাকে ভিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

কেউ মাজবুরি ও অপারগতাবশত সাহায্য চাইলে এক্ষেত্রেও জামাত শেষ হওয়ার পর মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে এভাবে সাহায্য চাওয়া ঠিক নয়। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। হাদীস শরীফে এসেছে, এক ব্যক্তি তার হারানো জন্তু সন্ধানের জন্য মসজিদে ঘোষণা করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেন-

لَا وَجَدْتَ، إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ.

তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। মসজিদ কেবল সে কাজেরই জন্য, যার জন্য (তথা নামায, ইবাদত-বন্দেগীর) তা বানানো হয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৯)

হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবী রাহ. বলেন-

ويدخل في هذا كل أمر لم يبن له المسجد، من البيع والشراء ونحو ذلك من أمور معاملات الناس واقتضاء حقوقهم، وقد كره بعض السلف المسألة في المسجد، وكان بعضهم لا يرى أن يتصدق على السائل المتعرض في المسجد.

অর্থাৎ এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত, যার জন্য মসজিদ বানানো হয়নি। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, পারস্পরিক লেনদেন ও নিজেদের হক ও অধিকার আদায় সংক্রান্ত বিষয়াদি। সালাফের অনেকেই মসজিদে সাহায্য চাওয়া অপছন্দ করতেন। এবং তাঁদের কেউ কেউ মসজিদে সাহায্যপ্রার্থী লোকদের দান করা পছন্দ করতেন না। (মাআলিমুস সুনান ১/১৪৩)

আল্লামা আইনী রাহ.-সহ অন্যান্য অনেক মুহাদ্দিসও হাদীসটির ব্যাখ্যায় একই কথা বলেছেন। (দেখুন, শরহু সুনানে আবি দাউদ, আইনী ২/৮৭)

তাছাড়া ফরয নামাযের সালামের পর এভাবে সাহায্য চাওয়াতে মাসবুক ও তাৎক্ষণিক সুন্নতে দাঁড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। মুসল্লিদের মাসনূন দুআ ও যিকির-আযকারের মধ্যেও বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এমনিভাবে এর দ্বারা মসজিদে আওয়াজ-শোরগোল এবং কখনো কখনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। যা সম্পূর্ণরূপে মসজিদের আদব-ইহতেরাম পরিপন্থী। বিশেষত কোনো কোনো সাহায্যপ্রার্থী যে ভাষায় ও পদ্ধতিতে সাহায্যের আবেদন করে, তাতে আরো নানান আপত্তিকর বিষয়াদি থাকে। সুতরাং মসজিদে এমনটি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।

এক্ষেত্রে ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের করণীয় হচ্ছে- যারা এভাবে মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে সাহায্য চায়, তা থেকে তাদের বারণ করা। সম্ভব হলে মসজিদের ইমামগণ জুমাসহ বিভিন্ন বয়ানে এ বিষয়গুলো আলোচনা করতে পারেন। যাতে এ ধরনের লোকদের কাছে এ বার্তাগুলো পৌঁছে যায়। ব্যক্তিগতভাবেও এমন লোকদেরকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা যেতে পারে। কোনো নামাযের পর কাউকে এভাবে সাহায্যের জন্য দাঁড়াতে দেখলে মসজিদের দায়িত্বশীলগণ শান্ত ও নরম ভাষায় বুঝিয়ে তাকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে যদি মনে হয়, বারণ করলেও সে মানবে না বা আরো বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, তাহলে তৎক্ষণাৎ কিছু না বলে নামাযের পর বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলবেন। এবং সামনে থেকে মসজিদে এমনটি করতে নিষেধ করবেন।

আরো উল্লেখ্য, রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বশীল ও বিত্তবান লোকদের দায়িত্ব হচ্ছে- গরীব ও অসহায় লোকদের নিজ থেকে সহযোগিতা করা। তাদের প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করা। সমাজের কর্মহীন ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান এবং বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী লোকদের ভরণ-পোষণের ভার বহন করা। যেন বাস্তব ওযরেও কেউ হাত পাততে বাধ্য না হয়। অনুরূপভাবে রাষ্ট্র ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। রাষ্ট্র ও সমাজের বিত্তবানরা এ বিষয়ে মনোযোগী হলে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া ভিক্ষাবৃত্তি কমে আসবে ইনশাআল্লাহ।

সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৭৪; আততামহীদ ২৩/৩১৯; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৩০৯; বাযলুল মাজহুদ ৬/৫৩১; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ ১/১০৬; আলবিনায়া ৩/৯৪; শরহুল মুনইয়া ৬১২ 

শেয়ার লিংক