আমাদের গ্রামের ঈদগাহে ঈদের নামায পড়ছিলাম। এমন সময় একটি কবুতর এসে আমার জামায় বিষ্ঠা ছাড়ে। উক্ত কবুতরের বিষ্ঠাসহই আমি নামায শেষ করি।
আমার জানার বিষয় হল, শরীরে কবুতরের বিষ্ঠাসহ ঈদের নামায সহীহ হয়েছে কি?
আমাদের গ্রামের ঈদগাহে ঈদের নামায পড়ছিলাম। এমন সময় একটি কবুতর এসে আমার জামায় বিষ্ঠা ছাড়ে। উক্ত কবুতরের বিষ্ঠাসহই আমি নামায শেষ করি।
আমার জানার বিষয় হল, শরীরে কবুতরের বিষ্ঠাসহ ঈদের নামায সহীহ হয়েছে কি?
হাঁ, আপনার ঈদের নামায সহীহ হয়েছে। কেননা কবুতর ও এধরনের হালাল পাখির বিষ্ঠা নাপাক নয়। তাই উক্ত অবস্থায় ঈদের নামায সম্পন্ন করা সহীহ হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, কবুতরের বিষ্ঠা নাপাক না হলেও এধরনের ময়লা নামাযের আগে লাগলে এবং তা ধোয়া সম্ভব হলে ধুয়ে নেওয়াই উচিত।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২৬১, ১২৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৪৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩২০
আমার এক আত্মীয়া প্রতি মাসে সাত দিন অপবিত্র থাকে। এ মাসে ৫ দিন টানা অপবিত্র ছিল। এরপর থেকে স্রাব বন্ধ আছে। এখন সে কি অভ্যাস অনুযায়ী অপেক্ষা করবে, নাকি প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায পড়তে থাকবে? এ অবস্থায় তার জন্য স্বামীর সাথে মিলন কি জায়েয হবে? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাত দিনের আগেই তার স্রাব বন্ধ হলেও গোসল করে সে নামায পড়তে থাকবে।
তবে এ অবস্থায় সাত দিন অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত স্বামীর সাথে মিলন বন্ধ রাখবে। অভ্যাস অনুযায়ী সাত দিন অতিবাহিত হওয়ার পর স্রাব দেখা না দিলে এর পর থেকে তার জন্য স্বামীর সাথে মিলন জায়েয হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯; মাজমুউ রাসাইলি ইবনি আবিদীন ১/৯২
সুবহে সাদিক থেকে ফজরের নামায পড়া পর্যন্ত’ সময়ের মধ্যে কি কোনো নফল নামায পড়া যাবে? দলীলসহ জানিয়ে উপকৃত করবেন।
সুবহে সাদিক থেকে ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য কোনো নফল নামায পড়া নিষেধ। এব্যাপারে হাদীসে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত হাফসা রা. বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ، لَا يُصَلِّي إِلَّا رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ.
যখন ফজর উদিত হত, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সংক্ষেপে (ছোট সূরা দিয়ে) পড়তেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৩)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا صَلَاةَ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ إِلَّا رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ.
সুবহে সাদিক হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল) নামায পড়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৭৫৭)
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন-
لَا صَلَاةَ بَعْدَ النِّدَاءِ إِلّا رَكْعَتَيِ الْفَجْرِ.
(ফজরের) আযানের পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল) নামায নেই। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৭৫৬)
হযরত হাসান বসরী, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, আতা রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীগণও একই কথা বলেছেন। (দ্র. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৪১০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৭৫৩)
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৮; ফাতহুল কাদীর ১/২০৮-৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৩৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫
কিছুদিন আগে এক মসজিদে জুমা পড়তে যাই। দরজার পাশে একটি জুতার বাক্সে জুতা রেখে নামাযে দাঁড়াই। নামায চলাবস্থায় এক চোর আমার জুতা নিয়ে পালিয়ে যায়। যার মূল্য ছিল ১৭০০ টাকা। আমি টের পাওয়া মাত্রই নামায ছেড়ে দিই এবং তাকে ধরার চেষ্টা করি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে ধরতে পরিনি। ততক্ষণে জামাত শেষ হয়ে যায়। পরে আমি বাসায় গিয়ে যোহর আদায় করি।
জানার বিষয় হল, উক্ত কারণে জুমার নামায ছেড়ে দেয়া জায়েয হয়েছে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়া অন্যায় হয়নি। কারণ নামায অবস্থায় মোটামুটি মূল্যের কোনো জিনিস নষ্ট কিংবা চুরি হওয়ার আশঙ্কা হলে এর হেফাজতের জন্য নামায ছেড়ে দেয়া জায়েয আছে।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৩২৯১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪০৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১
আমার দাদা হার্টের রোগী। গত শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে তার বুকে ব্যথা শুরু হয় এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। তাই তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে জুমার নামাযের সময় হয়ে যায়। হাসপাতলে পৌঁছে দেখি জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। আমার দাদার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল যে, তাকে ঐ মুহূর্তে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি না করে জামাতে শরীক হলে বড় ধরনের ক্ষতির প্রবল আশঙ্কা ছিল। তখন আমি ছাড়া যেহেতু তার সাথে কেউ ছিল না, তাই জামাতে শরীক না হয়ে তাকে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করি। তাকে ডাক্তারের কাছে সোপর্দ করার পর যোহরের নামায আদায় করি।
জানার বিষয় হল, উক্ত পরিস্থিতিতে কি জুমা আদায় না করে তাকে ডাক্তারের কাছে সোপর্দ করার পর যোহরের নামায আদায় করা শরীয়তসম্মত হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে আপানার দাদার অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকার কারণে আপনার জন্য জুমায় শরীক না হয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়া ঠিক হয়েছে। এক্ষেত্রে তাকে ডাক্তারের কাছে পৌঁছে দেওয়া আপনার কর্তব্য ছিল। যা আপনি আদায় করেছেন। এ কারণে আপনার গোনাহ হবে না, ইনশাঅল্লাহ। জুমা না পাওয়ায় পরবর্তীতে যোহর আদায় করাও নিয়মসম্মত হয়েছে।
শেয়ার লিংক-হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৩৫; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫২; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/১১৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৩
আমাদের মাদরাসায় প্রায় প্রতি শুক্রবার ফজরের নামাযে সূরা সিজদা তিলাওয়াত করা হয়। আজ ওজু-ইস্তিঞ্জা সেরে আসতে বিলম্ব হওয়ায় ইমাম সাহেব তিলাওয়াতের সিজদা করার পরে প্রথম রাকাতের কেরাত চলা অবস্থায় আমি তার ইক্তিদা করি এবং যথারীতি নামায শেষ করি।
উল্লেখ্য, আমি মসজিদে আসার পথে ইমাম সাহেবকে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনি।
এখন জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় নামায শেষ করার পরে কি আমার উপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি যেহেতু উক্ত রাকাতেই ইমামের সাথে শরীক হয়েছেন তাই রাকাত পাওয়ার কারণে তিলাওয়াতের সিজদাও পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। তাই পৃথকভাবে আর সিজদায়ে তিলাওয়াত করতে হবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৩
একদিন যোহরের নামাযে ইমামের সাথে প্রথম রাকাত ছুটে যাওয়ায় দ্বিতীয় রাকাতে শরীক হই। ইমাম সাহেব ভুলে প্রথম বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে সাহু সিজদা করেন। আমি তার সাথে সাহু সিজদা করি। এরপর ফাতিহার পর অন্য সূরা না পড়ে ভুলে রুকুতে চলে যাই। তাই আমি দ্বিতীয়বার সাহু সিজদা করে নামায শেষ করি। জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় দ্বিতীয়বার সাহু সিজদা করা ঠিক হয়েছে, নাকি ইমামের সাথে কৃত সাহু সিজদা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল?
মাসবুক ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের ক্ষেত্রে মুনফারিদ তথা একাকী নামায আদায়কারীর হুকুমে। তাই ইমামের সাথে সাহু সিজদা করলেও মাসবুক হিসেবে ছুটে যাওয়া নামায আদায় করার সময় সাহু সিজদার কারণ পাওয়ার গেলে পুনরায় সাহু সিজদা করতে হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য দ্বিতীয়বার সাহু সিজদা করা ঠিক হয়েছে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২০১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৫; ফাতহুল কাদীর ৫২৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১০৮
আমাদের এলাকার এক লোক মারা যান। আমি তার জানাযায় শরীক হই। আমার যেতে বিলম্ব হওয়ায় আমি প্রথম তাকবীর পাইনি। দ্বিতীয় তাকবীরের পর শরীক হই। কিন্তু বিষয়টা আমার জানা ছিল না বিধায় আমি স্বাভাবিকভাবে নামায চালিয়ে যাই। আমার দ্বিতীয় তাকবীরের পর ইমাম সালাম ফিরালে বুঝতে পারলাম আমি প্রথম দুই তাকবীর পাইনি। তখন আমি দ্রুত দুই তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামায পূর্ণ করি। এরপর খাটিয়া উঠানো হয়। এখন জানার বিষয় হল, আমার আদায়কৃত জানাযা নামায সহীহ হয়েছে কি?
হাঁ, আপনার জানাযা নামায আদায় হয়েছে।
উল্লেখ্য, জানাযা শুরু হওয়ার পর প্রথম তাকবীর না পেলে সে ব্যক্তি মাসবুক গণ্য হবে। সুতরাং সে যদি বুঝতে পারে যে ইমাম কত তম তাকবীরে আছেন তবে সে ঐ তাকবীরের নির্ধারিত দুআ পড়বে, অন্যথায় শুরু থেকে দুআ পড়বে। অতঃপর ইমাম সালাম ফিরালে খাটিয়া জমিন থেকে ওঠানোর আগে আগে ছুটে যাওয়া তাকবীর পূর্ণ করবে। সময় না থাকলে শুধু তাকবীরগুলো আদায় করবে। এক্ষেত্রে দুআ পড়া জরুরি নয়। তবে খাটিয়া উঠিয়ে নেয়ার পূর্বে দুআসহ তাকবীরগুলো বলার মত সময় পেলে তাকবীরের সাথে দুআও পড়ে নেবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৩৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৫৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৪-৫; রদ্দুল মুহতার ২/২১৬
আমার স্বামী একজন বড় ব্যবসায়ী। বছরে দুই ঈদ ও অন্যান্য উপলক্ষ্যে তিনি আমাকে কাপড় কিনে দেন। কখনো এমনিতেই দেন। তা ছাড়া আমার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরাও বিভিন্ন সময় শাড়ি, থ্রি-পিস ইত্যাদি গিফট করে। এতে আমার কাছে অনেক কাপড় চোপড় জমে গেছে। প্রায় দুই আলমারি কাপড় পড়ে আছে, যেগুলো সাধারণত ব্যবহার হয় না। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমাকে কি এ কাপড়গুলোর যাকাত আদায় করতে হবে?
না, আপনার ঐ পোশাকগুলোর উপর যাকাত আসবে না।
উল্লেখ্য যে, কারো কাছে যদি প্রয়োজন অতিরিক্ত এ পরিমাণ কাপড় থাকে যার মূল্য নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তবে তার উপর যাকাত ফরয না হলেও সে যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না এবং তার উপর কুরবানী ও সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৮, ৩/১২০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯১, ১৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২
আমি কাঠের ব্যবসা করি। বছরের শুরুতে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। পরিবারের খরচ শেষে বছরের মাথায় এখনো তিন লক্ষ টাকা বা তার চেয়ে কমবেশি অবশিষ্ট আছে। দুই লক্ষ টাকার মত কাঠ আছে আর দেড় লক্ষ টাকা বিভিন্ন জনের কাছে পাওনা আছি। জানার বিষয় হল, আমার উপর কি যাকাত ফরয? যে টাকাগুলো পাওনা আছি সেগুলোরও কি যাকাত আসবে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার উপর যাকাত ফরয। কারণ ব্যবসার পণ্যের মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে তাতে যাকাত ফরয হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দোকানে বিদ্যমান কাঠ বাবদ দুই লক্ষ টাকার যাকাত আপনাকে বছর শেষে আদায় করে দিতে হবে।
আর বিক্রিত পণ্যের বকেয়া মূল্যও যেহেতু যাকাতের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। তাই উক্ত দেড় লক্ষ টাকার যাকাতও আপনাকে আদায় করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনি চাইলে এই টাকা হস্তগত হওয়ার আগেই নিজ থেকে তার যাকাত আদায় করে দিতে পারেন। অথবা টাকা হস্তগত হওয়ার পরও আদায় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পেছনের কোনো বছরের যাকাত অনাদায়ী থাকলে ঐ বছরের যাকাতও দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯০; খিযানাতুল আকমাল ১/২৮২; বাদায়েউস সানায়ে ২/১১০; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৯
আমি একজনের পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব করি। হজ্বের খরচ বাবদ আমাকে যা টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা থেকে অবশিষ্ট কিছু রয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, উক্ত টাকা নেওয়া আমার জন্য কি বৈধ হবে?
উলেখ্য, টাকা প্রদানকারী হজ্বে যাওয়ার আগে ও পরে খরচের অতিরিক্ত টাকার ব্যাপারে কিছুই বলেনি। আবশিষ্ট কিছু আছে কি না সে ব্যাপারেও কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
বদলী হজ্বের জন্য প্রদত্ত টাকা থেকে যা উদ্বৃত্ত থাকবে, তা মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া আবশ্যক। মালিকের সম্মতি ছাড়া বদলী হজ্বকারী তা নিজে গ্রহণ করতে পারবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত সমুদয় টাকা ফেরত দেওয়া আপনার জন্য জরুরি।
عَنِ الْحَسَنِ فِي الرّجُلِ يَحُجُّ عَنِ الرّجُلِ فَيَفْضُلُ مَعَهُ، قَالَ : يُعْلِمُهُمْ، فَإِنْ سَلّمُوهُ وَإِلاَّ رَدَّهُ.
হযরত হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি আরেক জনের পক্ষ থেকে হজ্ব করার পর কিছু উদ্বৃত্ত রয়ে গেলে প্রেরণকারীদের তা জানাবে। যদি তারা তাকে তা দিয়ে দেয় (তাহলে নিতে পারবে)। অন্যথায় ফেরত দিয়ে দেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৯৭১)
অবশ্য হজ্বে প্রেরণকারী যদি টাকা দেওয়ার সময় হজ্বকারীকে সুস্পষ্টভাবে এর মালিক বানিয়ে দেয় তাহলে অবশিষ্ট টাকা ফেরত দিতে হবে না বা এর কোনো হিসাব দেওয়া লাগবে না।
শেয়ার লিংক-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৯৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪২৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১২; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৫৯
গত সপ্তাহে আমার মামাতো ভাই শাকিলের বিবাহ হয়। বিবাহের পর বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শাকিলসহ- গাড়ির সবাই মারাত্মকভাবে আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার স্ত্রী মারা যায়। পরদিন শাকিলও মারা যায়। এরপর থেকে শাকিলের শ্বশুর বাড়ি থেকে তার স্ত্রীর জন্য ধার্যকৃত মহর (৫ লক্ষ টাকা) পরিশোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে শাকিলের স্ত্রী থেকে তার উত্তরাধিকার সম্পতি চাইলে তারা তা দিতে অসম্মতি জানাচ্ছে। এ নিয়ে বর্তমানে দুই বাড়ির মধ্যে বেশ ঝামেলা চলছে।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, (ক) উক্ত ক্ষেত্রে শাকিল তো সদ্য বিবাহ করেছে মাত্র। তার স্ত্রীর সাথে নির্জনবাসও করতে পারেনি। তারপরও কি তার ওয়ারিসরদেরকে ধার্যকৃত পূর্ণ মহর পরিশোধ করতে হবে?
(খ) শাকিল তার স্ত্রীর উত্তরাধিকার হিসাবে কি কোনো অংশ পাবে?
উল্লেখ্য, এটিই মেয়েটির প্রথম বিবাহ
(ক) বিবাহের পর নির্জনবাসের পূর্বেও যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো একজনের মৃত্যু ঘটে তাহলে পূর্ণ মহর পরিশোধ করা আবশ্যক হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শাকিলের পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তার স্ত্রীর পূর্ণ মহরই পরিশোধ করা জরুরি। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১০৮৯৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/৪১২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৮৪; আলইখতিয়ার ৩/৯১; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪২
(খ) হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শাকিলের স্ত্রী যেহেতু আগে মারা গিয়েছে তাই শাকিল স্ত্রীর ওয়ারিস (উত্তরাধিকারী) গণ্য হবে। এক্ষেত্রে শাকিল তার স্ত্রীর পরিত্যাক্ত সম্পত্তির ৫০% পাবে। -সূরা নিসা (৪) : ১২; কিতাবুল আছল ৫/৫৮১; আলমাবসূত সারাখসী ২৯/১৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/৫০৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৯৮
শেয়ার লিংক
এক বছর আগে আমার ফুফাতো বোন পালিয়ে এক ছেলের কাছে বিয়ে বসে। বছর খানেক তারা একসাথে ঘর-সংসার করে। কিন্তু তার পরিবার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছিল না। একপর্যায়ে তারা ছেলের নামে মামলা করে। তখন ছেলে চাপের মুখে আমার বোনকে তালাক দিয়ে দেয়। ঐসময় আমার বোন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বাড়ি আসার পর ঘরের মানুষের গালমন্দে সে ঔষধ খেয়ে তার গর্ভপাত ঘটায়। প্রায় এক মাস হল। ইতিমধ্যে তার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করেছে। তারা জানতে চায়, গর্ভপাত ঘটানোর দ্বারা কি তার ইদ্দত পূর্ণ হয়েছে, না তাকে তিন স্রাব পার করে ইদ্দত পূর্ণ করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গর্ভপাত করার দ্বারা মহিলাটির ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে। কারণ, গর্ভস্থ সন্তানের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পেলে গর্ভপাতের দ্বারা ইদ্দত সম্পন্ন হয়ে যায়। তাই এর পর সে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।
উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটানোটা সম্পূর্ণ হারাম ও বড় ধরনের গুনাহের কাজ হয়েছে।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৯৬২৩; কিতাবুল আছল ৪/৪১৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/২১৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৫
এক মহিলাকে তার স্বামী এক তালাকে রাজয়ী দিয়েছে। তালাক দেয়ার দেড় মাস পর ঐ ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছে। জানার বিষয় হল, এখন ঐ মহিলা কত দিন ইদ্দত পালন করবে? মাসিক হিসেবে যে ইদ্দত পালন করছিল সেটাই পূর্ণ করবে, নাকি স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালন করবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইদ্দত চলাবস্থায় ঐ মহিলার স্বামীর ইন্তেকালের কারণে তাকে এখন স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালন করতে হবে। অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। তালাকের ইদ্দত এখন আর পালন করতে হবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৪১২; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩১; রদ্দুল মুহতার ৩/৫১৩
আম্মুকে নিয়ে আমার আব্বু গ্রামের বাড়ি থাকতেন। আমরা দুই ভাই ঢাকা থাকি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার আব্বু গত সপ্তাহে ইন্তেকাল করেছেন। গ্রামের বাড়িতে আমাদের অন্য কোনো আত্মীয়ও নেই। এখন আমার আম্মুর জন্য সেখানে ইদ্দতের সময় একা থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি কখনও আব্বুকে মনে করে আবার কখনও ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। এদিকে আমরাও অফিস থেকে ছুটি পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় আমাদের জন্য কি আম্মুকে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আমাদের বাসায় নিয়ে আসার কোনো সুযোগ আছে? জানালে খুব উপকৃত হতাম।
স্বাভাবিক অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা জরুরি। বিশেষ ওজর ছাড়া অন্য কোথাও ইদ্দত পালন করা জায়েয নয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সূরা তালাকের প্রথম আয়াতে ইরশাদ করেছেন-
لَا تُخْرِجُوْهُنَّ مِنْۢ بُیُوْتِهِنَّ وَ لَا یَخْرُجْنَ اِلَّاۤ اَنْ یَّاْتِیْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَیِّنَةٍ.
তাদেরকে (ইদ্দতরত মহিলাকে) তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না। আর তারা নিজেরাও যেন বের না হয়। যদি না তারা কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। [সূরা তালাক (৬৫) : ০১]
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মায়ের ওযরটি যেহেতু যথাযথ এবং সে কারণে স্বামীগৃহে থাকা তার জন্য যেহেতু কঠিন হয়ে পড়েছে, তাই তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। তবে নিরাপত্তা ও খেদমতের সুবিধার্থে যেখানেই তিনি স্থানান্তরিত হবেন সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবেন।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছার, বর্ণনা ৫০৭; শরহু মাআনিল আছার, তহাবী, বর্ণনা ৪৬০০; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৯; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬, ৫৩৭
আমার এক আত্মীয় দুই বছর আগে বিবাহ করেছে। বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বনিবনা হচ্ছে না। স্ত্রী সবসময় স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে এবং তার হুকুম অমান্য করে। এখন স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে থাকতে চাচ্ছে না এবং তার থেকে তালাক চাচ্ছে। স্বামী বলেছে, পাঁচ লক্ষ টাকা দিলে সে তাকে খোলা তালাক দেবে।
উল্লেখ্য, বিয়েতে স্ত্রীর মহর ধার্য করা হয়েছিল আড়াই লক্ষ টাকা; যার পুরাটা আকদের পরপরই আদায় করা হয়েছে। এখন হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, খোলা তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর জন্য স্ত্রী থেকে কী পরিমাণ বিনিময় নেয়া বৈধ?
স্ত্রীর দোষত্রুটির কারণে যদি সংসার ভাঙার উপক্রম হয় এবং স্ত্রী নিজেই স্বামী থেকে তালাক নিতে চায় তাহলে স্বামীর জন্য স্ত্রী থেকে খোলা তালাকের বিনিময়ে কোনো সম্পদ বা টাকা-পয়সা নেয়া জায়েয আছে।
তবে এক্ষেত্রেও মহরের চেয়ে বেশি নেয়া অনুত্তম।
আর যদি স্বামীর দোষের কারণে স্ত্রী তালাক নিতে বাধ্য হয় তাহলে স্বামীর জন্য কোনো কিছু নেয়া জায়েয হবে না। বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-
إِذَا جَاءَ الْأَمْرُ مِنْ قِبَلِهَا حَلّ لَهُ مَا أَخَذَ مِنْهَا فَإِنْ جَاءَ مِنْ قِبَلِهِ لَمْ يَحِلّ لَهُ مَا أَخَذَ مِنْهَا.
অর্থাৎ যদি স্ত্রীর দোষের কারণে তালাক হয় তাহলে স্বামীর জন্য স্ত্রী থেকে কিছু নিলে তা বৈধ হবে। আর যদি স্বামীর দোষের কারণে হয় তাহলে স্বামীর জন্য স্ত্রী থেকে কিছু নেয়া জায়েয হবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১১৮২৫)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি বাস্তবে স্ত্রীর দোষের কারণেই স্ত্রী তালাকের দাবি করে থাকে তাহলে স্বামী খোলা তালাক দিয়ে স্ত্রী থেকে বিনিময় নিতে পারবে। তবে মহর সমপরিমাণ তথা আড়াই লক্ষ টাকা বা তার চেয়ে কম নেয়া উচিত হবে। তার চেয়ে বেশি নেয়া অনুত্তম হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৫৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৩৫; ফাতহুল কাদীর ৪/৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৪৫
ফরএভার বিজনেস পদ্ধতি কতটুকু শরীয়তসম্মত? এর ব্যবসায়িক পদ্ধতি হল-
(ক) আমি ফরএভারের পণ্য ক্রয় করতে হলে প্রথমে কোম্পানির একজন রেজিস্টার্ড কাস্টমার হতে হবে। কাস্টমার না হয়েও পণ্য ক্রয় করা যাবে। রেজিস্টার্ড কাস্টমারদের জন্য সকল পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৫% ছাড় দেওয়া হয়।
(খ) এরপর আমি কাস্টমার থেকে কোম্পানির একজন স্বাধীন ডিস্ট্রিবিউটর হতে চাইলে আমি আমার আইডি থেকে ২ সিসি পরিমাণ পণ্য ক্রয় করতে হবে। ২ সিসি পরিমাণ মানে ২০০০ পয়েন্ট। ১ পয়েন্ট ১৮.৫০ টাকা। ২০০০ পয়েন্টের পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৭০০০ টাকা। ৫% কাস্টমার ডিসকাউন্ট অনুযায়ী, যা ৩৫০০০ টাকা প্রদান করতে হয়। ৩৫০০০ টাকা দিয়ে ২০০০ পয়েন্টের পণ্য ক্রয়ের পরে আমি কোম্পানির একজন স্বাধীন ডিস্ট্রিবিউটর অথবা কোম্পানির একজন বিজনেস পার্টনার হিসেবে বিবেচিত হব।
(গ) ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার কারণে কোম্পানি আমাকে ৩০% ছাড়ে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ দিচ্ছে। যার ফলে আমার স্পন্সরকৃত কাস্টমারকে ৫% ছাড়ে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ দিচ্ছে। বাকি ২৫% আমাকে দিচ্ছে।
(ঘ) আমার কাস্টমার যখন অমার ন্যায় ডিস্ট্রিবিউটর হবেন তখন আমার এবং আমার ডিস্ট্রিবিউটরের কমিশন সমান। সেক্ষেত্রে আমি আর আমার ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে কোনো লভ্যাংশ পাব না।
(ঙ) আমার আইডিতে আমার অধীনের সকলের সিসি মিলিয়ে ২৫ সিসি সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমার স্তর পরিবর্তন হবে। আমি সুপারভাইজার হিসাবে বিবেচিত হব। সেক্ষেত্রে আমার পূর্বের কমিশন বেড়ে ৩৫%-এ রূপান্তরিত হবে।
(চ) ঠিক একইভাবে অমার টোটাল টিমের সিসি মিলিয়ে যখন অমার অইডিতে ৭৫ সিসি পরিমাণ হবে তখন কোম্পানি আমাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসাবে বিবেচিত করবে। এবং ১৫০ সিসি পরিমাণ হলে ম্যানেজার বিবেচিত হব।
(ছ) Assistant Manager ৪৩% কমিশন, Manager ৪৮% কমিশন।
এইগুলো মূলত আমার প্রমোশন হবার কারণে অমাকে যোগ্যতা অনুযায়ী কোম্পানি দিয়েছে।
সারকথা, ফরএভার বিজনেস পদ্ধতি এভাবেই যে, ফরএভার কোম্পানির কারখানা যেহেতু একটা সেহেতু তাদের ব্যবসার সিস্টেম হল, সরাসরি কারখানা থেকে পণ্য ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে আসে। এবং ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছায়।
কোম্পানি তার একটি পণ্যের খুচরা মূল্যের ৫২% নিয়ে বাকি ৪৮% তার পণ্যের ক্রেতা, সুপারভাইজার, ম্যানেজার-এর মধ্যে বণ্টন করে দিচ্ছে।
অতএব, এখন আমার জানার বিষয়, উক্ত সুরতে ব্যবসা করা বৈধ হবে কি না? কোনো পদ্ধতি শরীয়তসম্মত না হলে সেটার শুদ্ধ পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট যে, ‘ফরএভার লিভিং প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড’ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতি অনুসৃত একটি কোম্পানি। আর এমএলএম পদ্ধতি বহু কারণে শরীয়তসম্মত নয়। দেশের বিজ্ঞ মুফতীগণের সমন্বয়ে গঠিত বেফাকুল মাদারিস মুফতী বোর্ড ঢাকা দীর্ঘ গবেষণা ও পর্যালোচনার পর উক্ত পদ্ধতির কারবারকে বহু আগেই সম্পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী ও নাজায়েয ফতোয়া প্রদান করেছে। দেশে ইতিপূর্বে এ ধরনের বহু প্রতিষ্ঠান শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সরকার কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ‘ডেসটিনি ২০০০’-এর কথা অনেকেরই জানা রয়েছে। এর আগেই বন্ধ হয়েছে টংচেং, ‘জিজিয়ান’সহ অনেক প্রতিষ্ঠান।
এ পদ্ধতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত এক এলাকায় এক নামে অনেকদিন ব্যবসা করে না। আসলে করতে পারেও না। সাধারণ ব্যবসায়িক নীতিতেও এ ধারণা ভ্রান্ত ও লোকঠকানো। ব্যবসা বিষয়ক বহু গবেষক এমনই বলেছেন। একটি উদাহরণই দেখা যাক, প্রশ্নোক্ত কোম্পানি যে মধ্যস্বত্বভোগীদের না দিয়ে তাদের একেকজন এজেন্টকে সর্বোচ্চ ৪৮% পর্যন্ত বিক্রয় মূল্যের অংশ দিয়ে নিজেদের কৃতিত্বের কথা প্রকাশ করছে, আসলেই কি তাতে ভোক্তার কোনো লাভ হচ্ছে? বরং এক্ষেত্রে তো দেখা যাচ্ছে, সে চাইলে যে পণ্যটি ৬০ টাকায় বিক্রি করতে পারত, তা সে ১০০ টাকায় বিক্রি করছে তার কর্মী বা এজেন্টদের কমিশন দেয়ার জন্য, যার বোঝা বইছে সাধারণ ভোক্তা। এজেন্টকে না দিয়ে সে যদি সরাসরি মার্কেটিং করত তাহলে তার খরচাদি বাদ দিয়ে লাভ রেখে বিক্রি করলেও ভোক্তা পণ্যটি অন্তত ৪০% কম মূল্যে পেত। অথচ তারা এটিকেই তাদের ব্যবসার ভালো দিক বলে প্রচার করে থাকে।
যেহেতু প্রশ্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে তাই বিষয়টি খোলাসা করে দেয়া হল। এভাবে সাধারণ ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে এ কারবারে আরো অনেক ত্রুটি রয়েছে। আমরা শুধু কারবারটির শরয়ী ত্রুটিগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করছি-
এক. ফরএভার লিভিং প্রোডাক্টসের ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে কাজ করতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্টার্ড কাস্টমার হয়ে নির্ধারিত মূল্যের পণ্য ক্রয় করার শর্ত করা হয়েছে। এভাবে ডিস্ট্রিবিউটরের মান উন্নত করতে হলে তার নিজের কিংবা তার অধীনস্থ নেটের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করে নির্ধারিত সিসি (পয়েন্ট) অর্জন করার শর্ত করা হয়েছে। শরীয়তে এভাবে একটি কারবারের চুক্তির জন্য আরেকটি চুক্তির শর্ত করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن صفقتين في صفقة واحدة.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এক কাজের চুক্তির সাথে অন্য চুক্তি করতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩)
দুই. ডিস্ট্রিবিউটরের অধীনে বা টিমের লোকদের সিসি বৃদ্ধির কারণে তার নিজের স্তর পরিবর্তন ও পদোন্নতি করা হচ্ছে এবং অতিরিক্ত কমিশন দেওয়া হচ্ছে। তাদের সিসি বৃদ্ধির পিছনে মূল ডিস্ট্রিবিউটরের কোনো পরিশ্রম নেই। এটি শরীয়তে الأجر بلا عمل তথা শ্রমবিহীন পারিশ্রমিক গ্রহণ ও বাতিল পন্থায় অন্যের সম্পদ ভোগ করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ لَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ.
তোমরা নিজেদের মাঝে একে-অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। [সূরা বাকারা (২) : ১৮৮, সূরা নিসা (৪) : ২৯]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
أنه يأكله بغير عوض.
বিনিময়হীন উপার্জন হল বাতিল পন্থায় উপার্জন। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৭২)
হযরত হাসান বসরী রাহ.-সহ আরো অনেক তাফসিরবিদ এই আয়াতের একই ধরনের ব্যাখ্যা করেছেন। (দেখুন, রুহুল মাআনী ৫/১৫)
উক্ত কোম্পানিতে ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য যেহেতু পণ্য কেনা শর্ত, তাই উক্ত ক্রেতা কোম্পানিকে তার নির্ধারিত টাকাগুলো দিচ্ছে দুটি জিনিসের বিনিময়ে। ১. নির্ধারিত পণ্যের জন্য। ২. ডিস্ট্রিবিউটর হিসাবে কমিশন প্রাপ্তির জন্য। এখানে উক্ত বিনিময়ের প্রথমটি (নির্ধারিত পণ্য) জানা থাকলেও দ্বিতীয়টির পরিণাম ও পরিমাণ অজানা। কেননা, কমিশন পাওয়ার জন্য নিজে পণ্য ক্রয় করে বা কাস্টমার জোগাড় করে টিম গঠন করার মাধ্যমে নির্ধারিত সিসি পূর্ণ করা শর্ত। অথচ সে আদৌ কাস্টমার জোগাড় করতে পারবে কি না বা পারলে কতজন পারবে, টিমের লোকদের নির্ধারিত সিসি পূর্ণ হবে কি না- ইত্যাদি বিষয়াদি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সিসি সংগ্রহ করতে না পারলে সে কোনো কমিশন পাবে না। সুতরাং শুরুতে সে উক্ত কোম্পানীতে ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে কমিশন ভোগ করার নিয়তে যে অর্থ বিনিয়োগ করেছে তার প্রাপ্তি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এটি শরীয়তে নিষিদ্ধ الغرر (আলগারার)-এর অন্তর্ভুক্ত।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন-
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن بيع الغرر.
অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল লেনদেনে الغرر (গারার)-কে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫১৩, জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩০)
الغرر -এর ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট হানাফী ফকীহ শামসুল আইম্মাহ সারাখসী রাহ. বলেন-
الغرر مايكون مستور العاقبة.
অর্থাৎ, যার পরিণাম অস্পষ্ট তাই গারার। (মাবসূত ১২/১৯৪)
ইমাম ইবনুল আছীর জাযারী রাহ. বলেন-
الغرر ما له ظاهر تؤثره و باطن تكرهه، فظاهره يغر المشتري و باطنه مجهول.
গারার হল, যে কারবারে একটি প্রকাশ্য রূপ রয়েছে, যা দ্বারা মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এতে অভ্যন্তরীণ এমন ত্রুটি রয়েছে, যা জানলে মানুষ এ থেকে বিরত থাকবে। ফলে এর প্রকাশ্য রূপ ক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে দেয় আর অভ্যন্তরীণ রূপ অজানা থেকে যায়। (জামিউল উসূল ১/৪৩২)
তিন. বেচাকেনার ক্ষেত্রে শরীয়তের আরেকটি মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি হল, বিনা কারণে বিক্রেতা ও ভোক্তার মাঝে অযাচিত মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। কিন্তু উক্ত পদ্ধতিতে শরীয়তের এই মৌলিক বিষয়টিরও লঙ্ঘন হচ্ছে। অধিকন্তু ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে কমিশন ভোগের প্রলোভন দেখিয়ে পণ্য ক্রয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বরং শর্ত করার কারণে না চাইলেও পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এভাবে চাপে ফেলে কোনো বস্তু বিক্রি করাও বৈধ নয়।
এসকল শরয়ী নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর কারণে প্রশ্নোক্ত পদ্ধতির ব্যবসা সম্পূর্ণ নাজায়েয। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের জন্য উক্ত পদ্ধতির ব্যবসা করে আয় করা বা অন্যদের জন্য এদের সাথে যুক্ত হয়ে উপার্জন করা সবই নাজায়েয।
শেয়ার লিংক-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৭১-১৭২; মাজমাউল আনহুর ৩/৫৪৪
মুহতারাম, আমাদের একটি অনলাইন শপ আছে। যেখানে আমরা বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল প্রোডাক্ট বিক্রি করি। এখন আমরা যদি এমন প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিই, যে প্রোডাক্টটা আমাদের মালিাকানায় নেই। কিন্তু সেটা কেউ অর্ডার করলে আমরা অন্য কারো থেকে কিনে তাকে ডেলিভারি দিই। ডেলিভারির সময় ক্রেতা থেকে মূল্য হস্তগত করে পণ্য হস্তান্তর করে থাকি। এক্ষেত্রে এটা কি জায়েয হবে?
‘নিজেদের মালিকানায় নেই’ এমন পণ্যের বিক্রির ব্যাপারে হাদীস শরীফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কেননা এতে ধোঁকা ও প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে। বিক্রেতা পরবর্তীতে পণ্য পাবে কি না বা পেলেও পণ্যের যে গুণাবলির কথা উল্লেখ ছিল, সে ধরনের পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে পারবে কি না- এসবের নিশ্চয়তা কম থাকে। তাই অনলাইনে হোক বা অফলাইনে, পণ্য বিক্রি করতে চাইলে আগে পণ্য ক্রয় করে নিজের হস্তগত হওয়ার পরই তা অন্যের কাছে বিক্রি করবে। অবশ্য বর্তমানে প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে অনলাইনে পণ্য বিক্রির যে প্রচলন রয়েছে সেক্ষেত্রে ক্রেতাগণ সাধারণত অর্ডার করার সময়ই অবগত থাকে যে, অনেক অনলাইন বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য মজুদ থাকে না; বরং অর্ডার পাওয়ার পর সে অন্যের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ডেলিভারি দেয়। তাই এক্ষেত্রে ক্রেতার অর্ডারটিকে ক্রয় না ধরে সরবরাহের আদেশ হিসাবে গণ্য করা যায়। এ হিসাবে তা নাজায়েয হবে না। এক্ষেত্রে পণ্য ডেলিভারির পর ক্রেতা এর মূল্য প্রদান করে তা বুঝে পাওয়ার মাধ্যমেই বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এ ধরনের বেচা-কেনাতেও শরীয়তের যাবতীয় নিয়ম-নীতি মেনে চলা আবশ্যক। প্রদর্শিত পণ্য ও সরবরাহকৃত পণ্যের মাঝে যেন কোনো অমিল না হয় তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
শেয়ার লিংক-সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪২২৭; মাআলিমুস সুনান ৩/১৪০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩৫৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৪; রদ্দুল মুহাতার ৪/২৭৪
আমি কিছুদিন পূর্বে আমার এক পরিচিত ব্যক্তিকে একটি মধ্যম ধরনের গরু পালতে দিই। প্রথমে গরুটি বাজারে উঠাই। যে দাম ওঠে ঐ দাম ধরে তাকে দিই। যখন গরুটি বড় হবে তখন তা বিক্রি করে ঐ বাজারমূল্য আমি পাব। বাকি যা লাভ হবে তা আমাদের মাঝে সমানভাবে বণ্টিত হবে। হুজুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, আমাদের উক্ত চুক্তি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে?
না, আপনাদের উক্ত চুক্তি বৈধ হয়নি। গরু লালন-পালনের বিনিময়ে এভাবে অতিরিক্ত মূল্য ভাগাভাগির চুক্তি করা সহীহ নয়। উক্ত চুক্তি বাতিল করে দিতে হবে। এরপর জায়েয পন্থায় করতে চাইলে, ঐ ব্যক্তির গরু পালার জন্য মাসিক বা বাৎসরিক বেতন নির্ধারণ করে দিতে হবে।
আর গরুর খাবার, ঔষধ ইত্যাদির জন্য যা খরচ হবে তা আপনাকে দিতে হবে। এক্ষেত্রে পুরো গরুর মালিক আপনিই থাকবেন। সুতরাং সেটি বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্যই আপনার প্রাপ্য। আর লালন-পালনকারী তার নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৩০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৫
এক ব্যক্তির স্টেশনারির দোকান রয়েছে। সেখানে সে কলম খাতা বিক্রির পাশাপাশি ফটোস্ট্যাটের কাজও করে থাকে। পরিচিত এক ভদ্রলোক তার দোকানের কোনো এক সাইডে নিজের কম্পিউটার নিয়ে বসতে চায়। সে কম্পোজের কাজ করবে। এজন্য স্টেশনারিওয়ালা তার সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, কম্পোজের দ্বারা সে যত টাকা আয় করবে তার থেকে ৫০% তাকে দিতে হবে। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, তার এ চুক্তি কি সহীহ আছে? এবং চুক্তি অনুযায়ী আয় থেকে ৫০% কি তাকে দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু পুঁজি ও কারবার যৌথ নয় এবং শ্রমও যৌথ নয় তাই এক্ষেত্রে লভ্যাংশ বণ্টনের পদ্ধতি সহীহ হয়নি। এক্ষেত্রে ভাড়া চুক্তিই করতে হবে। অর্থাৎ দোকানের ঐ স্পেস ব্যবহারের জন্য সে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করবে। আর কম্পিউটার থেকে যা আয় হবে সব ঐ ব্যক্তির হবে। সুতরাং তাদের কর্তব্য, উক্ত চুক্তি বাতিল করে দিয়ে সহীহভাবে ভাড়া চুক্তি করা।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/১৪২; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ১১/৫১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৭; আলবাহরুর রায়েক ৮/২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৫
আমি উবারে গাড়ি চালাই। কয়েক মাস আগে এক যাত্রী ইনটেক করা একটি নতুন মোবাইল গাড়িতে ফেলে রেখে চলে যায়। মোবাইল পাওয়ার পর আমার সাধ্যমত মালিক খোঁজার চেষ্টা করি। মালিক না পেয়ে আমার পরিচিত একজন গরিব মানুষকে মোবাইলটি সদকা করে দিই। সে মোবাইলটি তার প্রয়োজনে বিক্রি করে ফেলে। ঘটনাক্রমে কিছুদিন আগে সেই যাত্রীর সাথে আমার দেখা হয়। সে আমার কাছে মোবাইলটির মূল্য (২০০০/- টাকা) দাবি করে। সে তাৎক্ষণিক মোবাইলটির মূল্য আদায় করতে না পেরে আমার ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর রেখে দেয়। এখন সে বারবার মোবাইল করে বিরক্ত করছে।
আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে তার মোবাইলের মূল্য পরিশোধ করা কি আমার জন্য জরুরি? যদি জরুরি হয়ে থাকে তাহলে আমি উক্ত গরিব লোকটি থেকে মোবাইলটির মূল্য নিতে পারব?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় মোবাইল সেটটির মূল্য আপনার আদায় করে দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে উক্ত গরিব লোকটি যেহেতু পণ্যটি বিক্রি করে ফেলেছে তাই তার থেকে সেটি বা এর মূল্য চাওয়া যাবে না। গরিব লোকটির টাকা আপনার পক্ষ থেকে সাদকা হিসাবে গণ্য হবে। এর সওয়াব আপনি পাবেন।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৯/৫০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২১৬; আলইখতিয়ার ২/৪৯২; মাজমাউল আনহুর ২/৫২৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮০
আমার প্রিমিয়ো গাড়িটি নষ্ট হয়ে গেলে তা মেরামত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার হাতে কোনো টাকা না থাকায় আমি একটি সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন তারা আমার সাথে এ মর্মে কারবার করতে আগ্রহ প্রকাশ করে যে, স্বতন্ত্র দুটি চুক্তির মাধ্যমে তারা কারবারটি সম্পন্ন করবে। প্রথম চুক্তি হচ্ছে, তারা মুরাবাহা ভিত্তিতে কাজ করবে। অর্থাৎ গাড়ি ঠিক করাতে যত টাকা লাগবে তত টাকা দেওয়ার সময় অতিরিক্ত আরো ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। দ্বিতীয় চুক্তি হচ্ছে, তারা আমাকে তাদের ওকিল বানাবে অর্থাৎ টাকা দিয়ে গাড়িটি ঠিক করে আনতে বলবে।
উল্লেখ্য, দুটি চুক্তিই আলাদা ও স্বতন্ত্র হবে। অতঃপর আমি রাজি হই এবং প্রথম চুক্তিতে স্বাক্ষর করি। এরপর অন্য আরেকটি কাগজে দ্বিতীয় চুক্তিতেও স্বাক্ষর করি এবং চুক্তি অনুযায়ী গাড়ি ঠিক করে আনার জন্য তারা আমাকে এক লক্ষ টাকা প্রদান করে। (ফলে হিসাব করলে দেখা যায় যে, তাদেরকে আমার এক লক্ষ দশ হাজার টাকা দিলে কারবারটি সম্পন্ন হয়ে যাবে)
হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার উপরোক্ত কারবারটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? না হলে বলবেন, আমি চুক্তিটি ভেঙে ফেলব।
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সমিতির সাথে গাড়ি ঠিক করানোর ব্যাপারে মুরাবাহা চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কেননা এটা মূলত শ্রমনির্ভর কাজ। এধরনের কাজে মুরাবাহা হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত লেনদেনকে মুরাবাহা নাম দেওয়া হলেও তা এক প্রকারের সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ সমিতি অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা নেওয়ার শর্তে গাড়ি ঠিক করার নামে এক লক্ষ টাকা ঋণ দিচ্ছে। আর এক্ষেত্রে পৃথকভাবে দুটি চুক্তি করা হচ্ছে বলা হলেও তা বাস্তবসম্মত নয়। এক্ষেত্রে শুধু ফিকহের পরিভাষাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে এবং এসব নামকে সুদ গ্রহণের জন্য হীলা-বাহানা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাড়ি ঠিক করতে গিয়ে যেসকল পার্টসের প্রয়োজন হয় তাতে সমিতি বিনিয়োগ করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি মেকানিক থেকে কাক্সিক্ষত পার্টসের তালিকা এনে দেবেন আর আপনার চাহিদা মত সমিতির কোনো লোক তা বাজার থেকে কিনে এনে তাতে পরস্পরের সমঝোতার ভিত্তিতে মুনাফা যোগ করে বাকিতে আপনার নিকট পার্টসগুলো বিক্রি করবে। আপনি র্নিধারিত সময়ে সে মূল্য পরিশোধ করে দেবেন। আর গাড়ি ঠিক করতে যে মজুরি লাগবে তা আপনি দেবেন। এতে মুরাবাহা চলবে না।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়াল মুআমালাতিল মালিয়া ১/৩১২, ৩২৬; আলমাআয়ীরুশ শারইয়্যাহ, পৃ. ২২৯, ৩১০
আমার খালু ইন্তিকালের সময় ব্যাংকে তার কিছু টাকা ছিল। তিনি এ টাকার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলে যাননি। কিন্তু তার স্ত্রীর (আমার খালার) নামে নমীনি করে গিয়েছেন। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, উক্ত টাকার হকদার কে হবে? শুধু কি তার স্ত্রী (আমার খালা) এ টাকার মালিক হবে, নাকি অন্যান্য উত্তরাধিকাররাও তার অংশ পাবে?
ব্যাংকের নমীনি পদ্ধতি রাখা হয় একাউন্টধারীর মৃত্যুর পর যেন নমীনি মৃতের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিতে পারে। তাকে মালিক বানানোর জন্য নমীনি করা হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার খালুর ব্যাংকে রেখে যাওয়া টাকা তার সকল উত্তরাধিকারীর মাঝে মিরাছনীতি অনুসারে বণ্টিত হবে। এক্ষেত্রে তার স্ত্রী (আপনার খালা) এককভাবে উক্ত টাকার মালিক হয়ে যাবে না।
শেয়ার লিংক-আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১০৯২