মাসউদুর রহমান - পটিয়া, চট্টগ্রাম

৪৪৯৬. প্রশ্ন

আমাদের মাদরাসার মাঠে ব্যাপকহারে পশু কুরবানী করা হয়েছিল। প্রবাহিত রক্তের নিষ্কাশন বা নির্গমনের ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে প্রচুর পরিমাণ পানি প্রবাহিত করা হয়েছিল। ফলে রক্তের চিহ্নও দূর হয়ে যায়। দুই-একদিন পর সে মাঠে অনুষ্ঠিত একটি জানাযার নামায আমরা ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে আদায় করি। প্রশ্ন হল, আমাদের এ নামায সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর

এ ধরনের অপবিত্র মাঠ শুকিয়ে গেলে এবং নাপাকীর চিহ্ন ও গন্ধ দূর হয়ে গেলেই তা পাক হয়ে যায়। সুতরাং দাঁড়ানোর স্থানে নাপাকীর চিহ্ন না থাকলে সেখানে খালি পায়ে জানাযার নামায পড়া সহীহ হয়েছে। আর জমিন নাপাক হলে জুতা খুলে জুতার উপর দাঁড়ালেও জানাযার নামায সহীহ হয়ে যায়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২১৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১/৪৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬২

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

৪৪৯৭. প্রশ্ন

প্রায় তিন মাস পূর্বে আমার সন্তান হয়। এরপর ৩৫ দিন পর্যন্ত স্রাব চলতে থাকে। এই স্রাব বন্ধ হওয়ার ৭ দিন পর নিয়মিত মাসিকের তারিখ অনুযায়ী পুনরায় স্রাব শুরু হয় এবং অন্যান্য সময়ের মত স্বাভাবিকভাবেই ৬ দিন পর্যন্ত স্রাব আসে। আমি এ ৬ দিন মাসিকের সময় হিসেবে নামায আদায় করিনি।

কিছুদিন পূর্বে আমার এক আলেমা আত্মীয়া বললেন, দুই স্রাবের মাঝে যেহেতু ১৫ দিন ব্যবধান হয়নি তাই পরবর্তী ৬ দিন ইস্তেহাযা বলে গণ্য হবে। তাই ঐ দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে। তবে মাসআলাটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি আপনাদের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আমি জানতে চাচ্ছি, তার কথা ঠিক কি না? এবং ঐ ছয় দিনের নামায কাযা করতে হবে কি না?

উত্তর

হাঁ, আপনার ঐ আত্মীয়া ঠিকই বলেছেন। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নেফাস (সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব) বন্ধ হওয়ার পর পনের দিন পার হওয়ার আগেই যেহেতু স্রাব এসেছে তাই তা হায়েয (মাসিক স্রাব) হিসাবে গণ্য হবে না; বরং ইস্তিহাযা হিসাবে গণ্য হবে। তাই আপনাকে ঐ দিনগুলোর নামায কাযা করে নিতে হবে।

-মাজমূউ রাসাইলি ইবনি আবিদীন ১/১৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৮৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৭৬

শেয়ার লিংক

আবুল হাসান লায়েক - জামিয়াতুল উলূম আলইসলামিয়া

৪৪৯৮. প্রশ্ন

আমরা জানি, সূর্যোদয়ের সময় ১০-১৫ মিনিট নামায পড়া যায় না। জানার বিষয় হল, তা সত্ত্বেও যদি কেউ এ সময় ফজরের নামায পড়ে ফেলে তাহলে কি এর দ্বারা তার ফরয আদায় হয়ে যাবে? না তা পরে আবার পড়তে হবে? অনুরূপ যদি সূর্যোদয়ের পূর্বে নামায শুরু করার পর নামায অবস্থায় সূর্যোদয় হয়ে যায় তাহলে এ নামাযের কী হুকুম?

উত্তর

সূর্যোদয়ের সময় নামায আদায় করা নিষেধ।  এ সময় ফজরের ফরয নামায বা কোনো কাযা পড়াও সহীহ নয়। পড়লে তা আদায় হবে না। তাই পরে তা কাযা করে নিতে হবে। অনুরূপ যদি সূর্যোদয়ের পূর্বে নামায শুরু করার পর নামায অবস্থায় সূর্য উদিত হয়ে যায় তবে সেটিও পরবর্তীতে কাযা করে নিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৩২৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫০; খিযানাতুল আকমাল ১/১৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৩

শেয়ার লিংক

আলীমুদ্দীন - মবুদনগর, কুমিল্লা

৪৪৯৯. প্রশ্ন

আমাদের পুরাতন মসজিদটি ভেঙে এখন কয়েক তলাবিশিষ্ট নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম তলার কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। এখন ছাদ ঢালাইয়ের অপেক্ষায়। কিন্তু এর মধ্যেই একটা বিষয় নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে কিছুটা মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তা হল, মুসল্লিদের বড় একটা অংশ বলছে যে, আমরা আলেমদের মুখে শুনেছি, প্রত্যেক তলার ছাদে খানিকটা ফাঁকা রাখতে হয় নিচ তলার সাথে সংযোগ থাকার জন্য। অপর অংশের বক্তব্য হল, ছাদে এভাবে ফাঁকা রাখলে মসজিদের সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। কাজেই ছাদে ফাঁকা রাখা যাবে না।

এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা হল, এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কী? প্রত্যেক তলার ছাদের একাংশ ফাঁকা রাখা কি জরুরি? দয়া করে দ্রুত জানালে কৃতার্থ হব।

উত্তর

মসজিদের প্রত্যেক তলায় ইমাম সাহেবের অন্তত তাকবীর ও সালামের আওয়াজ ভালোভাবে পৌঁছার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যেন সব তলা থেকে মুসল্লিগণ নির্বিঘেœ ইমাম সাহেবের অবস্থা জানতে পারে এবং যথাযথভাবে ইমামের অনুসরণ করতে পারে।

বর্তমানে মসজিদগুলোতে মাইক ও স্পিকার দ্বারা এ প্রয়োজন অনেকটা পূরণ হয়ে যায়। তাই তলায় তলায় ফাঁকা না রাখলেও  তেমন সমস্যা নেই।

অবশ্য ইমামের বরাবর প্রত্যেক তলার ছাদে কিছু অংশ ফাঁকা রাখলে সকল তলার মুসল্লিদের জন্য ইমাম সাহেবের অবস্থা জানা অধিক সহজ হয়। পূর্ব থেকে মুকাব্বির প্রস্তুত না থাকাবস্থায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে উপর তলার মুসল্লীদের জন্য ইমামের অবস্থা জানা মুশকিল হয়ে যায়। তাই ইমাম বরাবর ফাঁকা রাখলে তখন অসুবিধা হয় না। অতএব এ ব্যবস্থা ভালো ও নিরাপদ।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯১; মিনহাতুল খালিক ১/৩৬২; মারাকিল ফালাহ পৃ. ১৬০

শেয়ার লিংক

সাইফুল্লাহ - বাগেরহাট

৪৫০০. প্রশ্ন

আমার এক সহপাঠী ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। অতপর ইমাম সাহেবের সালামের শব্দ শুনে সিজদা থেকে উঠে সাথে সাথে সালাম ফিরিয়েছে। জানতে চাই, তার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

লোকটির নামায হয়নি। কারণ শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা ফরয। এই ফরয আদায় না হওয়ায় তার নামায নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে পুনরায় উক্ত নামায পড়ে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/৯২; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪৫২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৫৫

শেয়ার লিংক

মাও: মাহফুজ আহমদ - দারুল আরকাম মাদরাসা সিলেট

৪৫০১. প্রশ্ন

কেউ যদি সফরে বের হয়ে সফরের দূরত্ব অতিক্রম করার আগেই ফেলে যাওয়া কোনো কিছু নিতে আবার বাড়িতে ফিরে আসে তাহলে বাড়িতে আসার পথে সে কসর করবে, না পূর্ণ নামায আদায় করবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি বাড়িতে ফেরার নিয়ত করার সাথে সাথেই মুকীম গণ্য হবে এবং তখন থেকেই পুনরায় সফর শুরু করে নিজ এলাকা অতিক্রম করার আগ পর্যন্ত পূর্ণ নামায আদায় করবে; কসর করবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩১; মাজমাউল আনহুর ১/২৪০

শেয়ার লিংক

উম্মে ফাইয়াজ - আশকোনা, ঢাকা

৪৫০২. প্রশ্ন

আমি কুদূরী জামাত পর্যন্ত মাদরাসায় পড়েছি। আমরা নূরুল ইযাতে পড়েছি তারতীব সাকিত হওয়ার একটি কারণ হল কাযা নামাযের কথা স্মরণ না থাকা।

জানার বিষয় হল, কোনো ছাহিবে তারতীব যদি কাযা নামাযের কথা ভুলে কয়েক ওয়াক্তের ওয়াক্তিয়া পড়ে ফেলে তাহলে যখন ঐ কাযা নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন কী করবে? আগে কাযা পড়বে, নাকি ভুলে একবার তারতীব সাকিত হয়ে যাওয়ার কারণে আর তারতীব রক্ষা করতে হবে না।

আমার কখনো এমন হয়, ফজর কাযা হয়ে গেছে। মনে না থাকার কারণে যোহর আসর পড়ে ফেলেছি। পরে মাগরিবের আগে ফজরের কথা স্মরণ হয়েছে। তখন আমার কী করণীয়? আগে ফজর পড়ব, নাকি পরে পড়লেও চলবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্মরণ হওয়ার পর আপনাকে পরবর্তী ওয়াক্তিয়ার আগে ফজরের কাযা পড়তে হবে। ভুলে যোহর আসর পড়ার কারণে ঐ দুই ওয়াক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু স্মরণ হওয়ার পর আবার তারতীবের প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে এটিই নিয়ম।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৮৮; ফাতাওয়া কাযীখান ১/১০৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫১৭

শেয়ার লিংক

খলিল ভূঁইয়া - সোনাকান্দা, মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৫০৩. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় জানাযার খাটিয়া বহন করার সময় লোকজন উচ্চস্বরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও বিভিন্ন কালিমার যিকির করে। কয়েকদিন আগের ঘটনা। এক জানাযার খাটিয়া নেওয়ার সময় লোকজন সমস্বরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর যিকির করছিল। এ দেখে আমাদের নতুন ইমাম সাহেব বললেন যে, এভাবে উচ্চস্বরে কালিমা পড়া বিদআত। এ কথা বলতেই কিছু লোকজন ইমাম সাহেবের উপর খেপে যায়।  তাদের কথা হল, কালিমা পড়ছি এখানে বিদআতের কী হল? এ নিয়ে বেশ ঝামেলা সৃষ্টি হয়।

তাই মুফতী সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা হল, এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের নির্দেশনা কী? এবং এক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের আমল কী ছিল? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানানোর জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল।

উত্তর

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম জানাযা বহনের সময় চুপ থাকতেন। আখেরাতের বিষয়ে চিন্তামগ্ন থাকতেন। ইবনু জুরাইজ রাহ. বলেন-

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا تَبِعَ الْجِنَازَةَ أَكْثَرَ السّكُاتَ، وَأَكْثَرَ حَدِيثَ نَفْسِهِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাযার পিছনে চলতেন তখন অধিক চুপ থাকতেন এবং চিন্তায় খুব মগ্ন থাকতেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬২৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

لَا تُتْبَعُ الْجَنَازَةُ بِصَوْتٍ، وَلَا نَارٍ.

জানাযার পিছনে যেন শব্দ না করা হয় এবং আগুন না নেওয়া হয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৫১৫

সুনানে কুবরা বায়হাকী ও ইবনুল মুনযিরের আলআওসাতের এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, সাহাবায়ে কেরামের আমল ব্যাপকভাবে এমনি ছিল; তাঁরা জানাযার পিছনে যাওয়ার সময় কোনো আওয়াজ করতেন না। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৭৪; আল আওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/৪২২ (৩০৩৪)

এ সমস্ত হাদীস ও আছারের আলোকে ফকীহগণ বলেছেন, জানাযার পিছনে চলার সময় মূল কাজ হল আখেরাতের ফিকিরে থাকা। যিকির করতে চাইলে তা হবে অনুচ্চ স্বরে। এক্ষেত্রে যিকির করতে গিয়ে আওয়াজ উঁচু করা মাকরূহ।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪০৮; ফাতহুল কাদীর ২/৯৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৬৩৮

শেয়ার লিংক

আবুল কাশেম - মাদারীপুর

৪৫০৪. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে একজন প্রসিদ্ধ কবর খননকারী আছে। নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সে কবর খুঁড়ে থাকে। প্রয়োজন হলে আশপাশের গ্রাম থেকেও তার ডাক আসে।

প্রশ্ন হল তার জন্য এভাবে পারিশ্রমিক নিয়ে কবর খনন করা এবং তাকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে কবর খনন করানো কি জায়েয হবে?

উত্তর

কবর খনন করা সওয়াবের কাজ। যে এ কাজ করে সে তো সওয়াবের উদ্দেশ্যেই করে। তবে এক্ষেত্রে কেউ যদি তাকে হাদিয়া দিয়ে ইকরাম করে তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয আছে। আর যেখানে এ কাজের জন্য একাধিক ব্যক্তি রয়েছে সেখানে কেউ যদি নির্ধারিত পারিশ্রমিক নিয়ে এ কাজ করতে চায় তবে সেটিও নাজায়েয নয়। তবে এমন না করাই ভালো।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৫; ফাতাওয়া কাযীখান ১/১৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৫৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৯

শেয়ার লিংক

মামুন - চাটখিল, নোয়াখালী

৪৫০৫. প্রশ্ন

প্রতি রমযানে সাধারণত পুরো পরিবারের ফিতরা আদায় করে দেই। কিন্তু এ বছর আমি ঈদের সময় বাড়িতে ছিলাম না। পরে শুনলাম এ বছরের ফিতরা আদায় করা হয়নি।

এখন মুহতারামের নিকট প্রশ্ন হল, আমি যদি এখন ফিতরা আদায় করে দেই তাহলে আদায় হবে কি না?

উত্তর

সদাকাতুল ফিত্র আদায় করা ওয়াজিব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় না করলে পরবর্তীতে আদায় করে দেওয়া আবশ্যক। তাই আপনাকে ঐ ফিতরার টাকা যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সদাকাতুল ফিত্র আদায় করে  দেওয়া মুস্তাহাব। সামনে থেকে এ ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصّائِمِ مِنَ اللّغْوِ وَالرّفَثِ، وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ، مَنْ أَدّاهَا قَبْلَ الصّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدّاهَا بَعْدَ الصّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصّدَقَاتِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিত্রের বিধান দিয়েছেন- রোযাদারকে অনর্থক ও অশ্লীল কথা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে তা আদায় করবে তার জন্য তা মাকবুল সদকা হবে। আর নামাযের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সদকার মতো হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৬০৯

সুতরাং ঈদের আগে আদায় করলে যথাযথ সওয়াব এবং রোযার পবিত্রতা নসীব হবে। কিন্তু কোনো কারণে ঈদের আগে দিতে না পারলে পরে হলেও দিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে যথা সময়ে আদায় না করার কারণে হাদীসে বর্ণিত সওয়াব ও ফযীলত লাভ হবে না।

-কিতাবুল আছল ২/২০৭, ২১১; ফাতহুল কাদীর ২/২৩১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৮

শেয়ার লিংক

আবু লুবাবা - সাভার, ঢাকা

৪৫০৬. প্রশ্ন

আমার এক ভগ্নিপতি তার যাকাত আদায়ের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়। আমিও যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আমি কি তার অগোচরে উক্ত যাকাতের কিছু অংশ গ্রহণ করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি ভগ্নিপতির পক্ষ থেকে যাকাত বণ্টনের প্রতিনিধিমাত্র। তাই এক্ষেত্রে আপনি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হলেও ভগ্নিপতির অনুমতি ছাড়া তার দেওয়া যাকাত থেকে আপনার জন্য কিছুই নেওয়া জায়েয হবে না। বরং তিনি যেখানে ও যেভাবে বলেছেন সেভাবেই ব্যয় করতে হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯

শেয়ার লিংক

আবীদুর রহমান - গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

৪৫০৭. প্রশ্ন

কোনো দরিদ্র ব্যক্তি কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্বে গেল। এখন বাইতুল্লাহ দেখামাত্র নাকি তার উপর হজ্ব ফরয হয়ে যায়। তদ্রƒপ কেউ যদি ওমরায় যায়, বিশেষত রমযানে, তাহলেও নাকি বাইতুল্লায় পৌঁছলেই হজ¦ ফরয হয়ে যায়। এ কথা কতটুকু ঠিক? যদি এটা সঠিক হয় তাহলে তার করণীয় কী? সে যদি পরবর্তীতে কখনো হজ্বে যেতে না পারে তবে কী হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

‘কাবা শরীফ দেখলে কিংবা উমরা করতে গেলে হজ্ব ফরয হয়ে যায়’- এ ধারণা ঠিক নয়। কাবা শরীফ দেখা না দেখার সাথে হজ্ব ফরয হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য সামর্থ্য থাকা শর্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ لِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا.

যাদের নিকট এই ঘর (কাবা শরীফ) পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে তাদের উপর এই ঘরের হজ্ব করা ফরয। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭

তাই হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য হজ্বের মৌসুমে হজ্বে যাওয়া-আসার খরচসহ সফরে থাকাকালীন দিনগুলোতে পরিবারের লোকদের স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এছাড়া বর্তমানে হজ্বের জন্য সৌদি সরকার কর্তৃক অনুমতি থাকা এবং বৈধ ভিসাও প্রয়োজন। উমরা ভিসায় গিয়ে হজ্ব করার অনুমতি থাকে না। তাই উমরা করতে গিয়ে হজ্বের জন্য থেকে যাওয়া আইনত নিষেধ। সুতরাং উমরা করতে যাওয়ার কারণে হজ্ব ফরয হবে না।

-রদ্দুল মুহতার ২/৬০৩; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮, ২২, ৩৩৮; আলমাসালিক ১/২৬২; মানাসিক ৪২-৪৩, ৫৩; জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৫০৭

শেয়ার লিংক

সাইফুল্লাহ খালেদ - সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জ

৪৫০৮. প্রশ্ন

মহিলাদের জন্য কি ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা, পা-মোজা পরা জায়েয আছে? দলীল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব। সহীহ বুখারীতে নাকি আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরতে নিষেধ করেছেন?

উত্তর

মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা, পা-মোজা পরা জায়েয। হাদীস শরীফে আছে, সালেম রাহ. বলেন-

أَنّ عَبْدَ اللهِ يَعْنِي ابْنَ عُمَرَ كَانَ يَصْنَعُ ذَلِكَ يَعْنِي يَقْطَعُ الْخُفّيْنِ لِلْمَرْأَةِ الْمُحْرِمَةِ، ثُمّ حَدّثَتْهُ صَفِيّةُ بِنْتُ أَبِي عُبَيْدٍ أَنّ عَائِشَةَ حَدّثَتْهَا أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَدْ كَانَ رَخّصَ لِلنِّسَاءِ فِي الْخُفّيْنِ فَتَرَكَ ذَلِكَ.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা কেটে দিতেন। কিন্তু সফিয়্যা বিনতে আবু উবাইদা রা. তাঁর কাছে যখন আয়েশা রা.-এর এ হাদীস বর্ণনা করলেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন’ এরপর থেকে আর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা কেটে দিতেন না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩১

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

تَلْبَسُ الْمُحْرِمَةُ الْقُفّازَيْنِ وَالسّرَاوِيلَ.

মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা ও পায়জামা পরিধান করতে পারবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৪৪০)

সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ইহরাম অবস্থায় তার কন্যাদেরকে হাতমোজা পরার নির্দেশ দিতেন। -কিতাবুল উম্ম ২/২২৩

কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন-

تَلْبَسُ الْمُحْرِمَةُ الْخُفّيْنِ والسّرَاوِيلَ وَالْقُفّازَيْنِ ، وَتُخَمِّرُ وَجْهَهَا كُلّهُ.

ইহরাম অবস্থায় মহিলাগণ পা-মোজা, পায়জামা ও হাতমোজা পরবে এবং পুরো চেহারা ঢেকে রাখবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৫৯৬৭)

হাসান বসরী, হাকাম ও হাম্মাদ রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীগণ থেকেও ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরা জায়েয হওয়ার কথা বর্ণিত আছে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৫৯৬৭, ১৪৪৪১

আর প্রশ্নে সহীহ বুখারীর উদ্ধৃতিতে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত মাওকূফ হাদীস। অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর উক্তি। (আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৪/৪৭; ফাতহুল বারী ৪/৬৪)

আর উপরে আমরা দেখেছি, একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ীর মত এক্ষেত্রে এটিই যে, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা ও পা-মোজা পরবে। ইমাম আবু হানীফা  ও ইমাম শাফেয়ী রাহ.-সহ অনেক ফকীহের মতে এ অভিমতটিই অধিক শক্তিশালী।

-কিতাবুল উম্ম ২/২২৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৩৩

শেয়ার লিংক

মাকসূদুর রহমান - বারিধারা, ঢাকা

৪৫০৯. প্রশ্ন

আমি আমার পরিবারসহ হজে¦ যাওয়ার নিয়ত করেছি। এর মাঝে আমার ছোট একটি ছেলে আছে, যার বয়স  সাত বছর।  প্রশ্ন হল, নাবালেগ বাচ্চাদের হজ্ব আদায়ের পদ্ধতি কী? আর ইহরাম অবস্থায় তারা যদি ইহরাম পরিপন্থী কোনো কাজ করে তবে এর হুকুম কী?

উত্তর

নাবালেগ বুঝমান হলে বালেগদের মতো তারাও যথানিয়মে ইহরাম বাঁধবে এবং হজ্বের কার্যাদি আদায় করবে। আর বুঝমান না হলে তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবক ইহরাম করবে। তবে নাবালেগ অবস্থায় আদায়কৃত হজ্ব তাদের জন্য নফল হবে। তাই বালেগ হওয়ার পর হজ্বের সামর্থ্য হলে পুনরায় তাদের উপর হজ্ব করা ফরয হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন-

إِذَا حَجّ الصّبِيّ فَهِيَ لَهُ حَجّةٌ حَتّى يَعْقِلَ، وَإِذَا عَقَلَ فَعَلَيْهِ حَجّةٌ أُخْرَى.

অর্থাৎ, কোনো নাবালেগ যদি হজ্ব করে তাহলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর (সামর্থ্যবান হলে) তাকে পুনরায় হজ্ব করতে হবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৮১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ৩০৫০; আলবাহরুল আমীক ১/৩৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৬; ফাতহুল কাদীর ২/৩৩২)

আর ইহরাম অবস্থায় নাবালেগ থেকে ইহরাম পরিপন্থী কোনো কাজ প্রকাশ পেলেও কোনো জরিমানা ওয়াজিব হবে না। তবে অভিভাবকের কর্তব্য হল তাদেরকে যথাসম্ভব ইহরামের নিষিদ্ধ কার্যাদি থেকে বিরত রাখা।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৮৪

শেয়ার লিংক

হাফিযুর রহমান - খিলগাঁও, ঢাকা

৪৫১০. প্রশ্ন

আমাদের কাফেলার এক ব্যক্তি ভুলে উমরার সায়ী না করে মাথা মু-িয়ে হালাল হয়ে যায়। স্মরণ হওয়ামাত্রই হেরেমে গিয়ে সায়ী করে নেয়। জানতে চাই, তার এই উমরা কি সহীহ হয়েছে? আর যদি না হয় তাহলে করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি যেহেতু পরবর্তীতে সায়ী আদায় করে নিয়েছে তাই তার উমরা সহীহ হয়ে গেছে। তবে সায়ীর পূর্বে মাথা মু-ানোর কারণে তার উপর একটি জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে। এই জরিমানা দম হেরেমের এলাকাতেই আদায় করতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, মাথা মুণ্ডানোর পর ইহরাম নিষিদ্ধ কোনো কাজ, যার কারণে দম ওয়াজিব হয় এমন কিছু করে থাকলে সেজন্যও পৃথক জরিমানা দম দিতে হবে। এজন্য বিস্তারিত অবস্থা কোনো বিজ্ঞ মুফতীকে জানিয়ে সমাধান নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/৪৩৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৩২, ২৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪২৯

শেয়ার লিংক

আলাউদ্দীন সরদার - দক্ষিণ সুরমা

৪৫১১. প্রশ্ন

আমি বিদেশ থাকা অবস্থায় আমার মা বোনদের সাথে আমার স্ত্রীর ঝগড়া হওয়াতে সে তার পিত্রালয়ে চলে যায়। পরিবারের লোকেরা তাকে তালাক দিতে বলে। কিন্তু আমি দেইনি। দেড় বছর আগে দেশে আসলে পরিবারের লোকেরা আবারো তালাক দিতে চাপ দিতে থাকে। এমনকি একদিন রাতে কয়েকজন আমাকে নিয়ে বসে স্ত্রীকে তালাক দিব কি না জানতে চায়। আমি কোনো উত্তর না দেওয়াতে তারা আমার উপর ক্ষেপে যায়। এক পর্যায়ে আমার ছোট ভাই  (বেয়াদবীর সব সীমা অতিক্রম করে) পূর্ব থেকে সংগৃহীত একটি তালাকনামা আমার হাতে দিয়ে বলে যে তালাক না দিলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে, বিদেশে যেতে দিবে না ইত্যাদি। অন্যান্যরাও তার কথার সমর্থন করে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। আচমকা এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে আমি তালাকনামা পূর্ণ করি। যাতে ‘আমি তোমাকে তিন তালাক দিলাম’ উল্লেখ করে নিচে দস্তখত করি। পুরো ঘটনায় আমি মুখ দিয়ে কিছুই বলিনি; বরং মনে মনে বলি ‘তালাক না তালাক না।’ এরপর তারা তালাকনামাটি আমার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। ছুটি শেষে আমি আবারো বিদেশ চলে আসি। এখনো আমি আমার স্ত্রীর উপর সন্তুষ্ট। তার সাথে সংসার করতে চাই। জানার বিষয় হল, কোনো সুযোগ আছে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী বাস্তবেই যদি ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক চাপের মাধ্যমে আপনার থেকে তালাকনামায় স্বাক্ষর নেয়া হয়ে থাকে এবং আপনি মুখে তালাক উচ্চারণ না করে থাকেন তাহলে এর দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি এবং আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল রয়েছে। তাই এখন আপনাদের ঘর-সংসার চালিয়ে যেতে সমস্যা নেই।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৮৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭৯; রদ্দুল মুহতার ৩/২৩৬

শেয়ার লিংক

হাফেয মুসলেহউদ্দীন - লালমোহন, ভোলা

৪৫১২. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য আমরা গ্রামবাসী থেকে বাঁশ উঠাই। পাঁচ মাস হল ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাঁশগুলো এখন কোনো কাজে লাগছে না। মসজিদ কমিটি বাঁশগুলো বিক্রি করে দিয়ে সে টাকাগুলো মসজিদের জন্য কার্পেট কেনার কাজে ব্যয় করতে চাচ্ছে। জানার বিষয় হল, তাদের জন্য এমনটি করা জায়েয হবে কি না?

উত্তর

হাঁ, বাঁশগুলো বিক্রি করে মসজিদের কার্পেট কেনা বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা জায়েয হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৭

শেয়ার লিংক

রায়হান আহমাদ - সিলেট

৪৫১৩. প্রশ্ন

আমার বাড়ি নদীর পাড়ে অবস্থিত। বর্ষা মৌসুমে নদীতে বিভিন্ন গাছের ডালপালা ভেসে আসে। কখনো কখনো গাছের বড় বড় টুকরাও তাতে পাওয়া যায়। জানার বিষয় হল, নদীতে ভেসে আসা এসব জিনিস ব্যবহার করা জায়েয হবে কি না?

উত্তর

নদীতে ভেসে আসা ছোট ছোট ডাল পালা সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই। অনুরূপ যদি গাছের এমন টুকরা পাওয়া যায়, যা সাধারণত মালিক খোঁজ নিতে আসবে না সেটিও ব্যবহার করা যাবে। তবে কাঠ যদি ভালো ও মূল্যবান হয় তাহলে সেটি উঠিয়ে ব্যবহার করা যাবে না। কারণ মূল্যবান হলে অন্যদের ব্যবহারের জন্য মালিকের অনুমতি বা সম্মতি আছে কি না তা জানা নেই। সাধারণত মালিক এগুলোর সন্ধান করে থাকে। তাই মালিকের অনুমতি ব্যতীত বৈধ হবে না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৯০; মাজমাউল আনহুর ২/৫২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৫০৪

শেয়ার লিংক

সালমান - লালমোহন, ভোলা

৪৫১৪. প্রশ্ন

বাজারে আমার একটি দোকান ছিল। দোকানে যাওয়ার জন্য আমি একটি মটরসাইকেল কিনেছি। বর্তমানে দোকানটি ছেড়ে দিয়ে আমি ঢাকায় এসে পড়েছি। ফলে মোটরসাইকেলটি আমার  কাজে লাগছে না। তাই মোটরসাইকেলটি আমার চাচাত ভাইয়ের কাছে এ শর্তে বিক্রি করে দিয়েছি যে, বাড়িতে আসলে প্রয়োজনে আমাকে ব্যবহার করতে দিতে হবে।

জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত চুক্তিটি কি বৈধ হয়েছে? এবং বাড়িতে গেলে চুক্তি অনুযায়ী মোটরসাইকেলটি আমি ব্যবহার করতে পারব কি না? যদি সহীহ না হয় তাহলে আমরা কী করতে পারি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দেওয়ার পরও বাড়িতে গেলে আপনাকে ব্যবহার করতে দিতে হবে, এ শর্ত করার কারণে চুক্তিটি ফাসেদ তথা নাজায়েয হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় শর্তযুক্ত বিক্রি নিষেধ করেছেন। তাই আপনাদের কর্তব্য হল, পূর্বের চুক্তিটি বাতিল করে দিয়ে পুনরায় শর্তহীনভাবে বেচাকেনা করা।

-আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী, হাদীস ৪৩৬১; ফাতহুল কাদীর ৬/৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৮৪; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৬০

শেয়ার লিংক

হাফেয সানাউল্লাহ - বাংলাবাজার, ভোলা

৪৫১৫. প্রশ্ন

আমাদের মাদরাসায় প্রতি বছর তাহফীযুল কুরআন প্রতিযোগিতা হয়। এ বছর আমরা সকল প্রতিযোগীদের থেকে টাকা নিয়ে তাদের মধ্য থেকে অগ্রগামীদেরকে কিতাব পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একজন মাওলানা সাহেব বলেছেন, এভাবে পুরস্কার দেওয়া জায়েয নয়। জানতে চাই, মাওলানা সাহেব কি ঠিক বলেছেন?

উত্তর

হাঁ, মাওলানা সাহেব ঠিক বলেছেন। প্রতিযোগিদের থেকে টাকা নিয়ে বিজয়ীদেরকে সে টাকায় পুরস্কার দেওয়া নাজায়েয। কেননা এটা শরীয়ত নিষিদ্ধ ‘ক্বিমার’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর কুরআন-হাদীসে ‘ক্বিমার’কে হারাম বলা হয়েছে এবং তা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৪৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০৩

শেয়ার লিংক

শামসুর রহমান - কানাইঘাট, সিলেট

৪৫১৬. প্রশ্ন

আমি একজন মাইক্রোবাস চালক। আমার প্রতিবেশী শিহাব ভাইয়ের একটা মাইক্রোবাস আছে। তিনি একদিন আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন যে, তুমি আমার মাইক্রোটা চালাও। গাড়ীর প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত যা আয় হবে তার ৩০% তোমার আর ৭০% আমার। আমাদের উক্ত চুক্তিটি কি সহীহ হয়েছে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনাদের প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়নি। কারণ এক্ষেত্রে চালকের পারিশ্রমিক সুনির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। গাড়ির আয়ের শতকরা হারে পারিশ্রমিক দেওয়ার চুক্তি সহীহ নয়। ঐ কাজটি সহীহভাবে করতে চাইলে নিম্নোক্ত যে কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে :

১. চালককে নির্ধারিত হারে পারিশ্রমিক/বেতন দিতে হবে। এক্ষেত্রে গাড়ির সব আয় হবে মালিকের।

২. চালক নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে গাড়িটি  মালিক থেকে ভাড়া নিবে। সেক্ষেত্রে মালিক গাড়ির নির্ধারিত ভাড়া পাবে আর গাড়ির যাবতীয় আয় চালক একাই পাবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫৫; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৫৪২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৬

শেয়ার লিংক

হাসান জামিল - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৪৫১৭. প্রশ্ন

প্রায় এক বছর পূর্বে আমি আমার এক বন্ধুকে এক লক্ষ টাকা এ শর্তে বিনিয়োগ করি যে, আমি লাভের ৬০% পাব। আর সে পাবে ৪০%। তেমনি লোকসান হলে উভয়ে উক্ত হারে তা বহন করব। কিছুদিন আগে আমি জানতে পেরেছি যে, এভাবে চুক্তি সহীহ নয়।

এখন আমি জানতে চাচ্ছি, এতদিন পর্যন্ত এ চুক্তি থেকে আমরা যে লাভ ভোগ করেছি এর ব্যাপারে আমাদের করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনাকারীর উপর আংশিক লোকসানের ভার দেওয়া সহীহ হয়নি। কারণ এ ধরনের লেনদেনে লোকসান হলে পুরোপুরি মূলধন জোগানদাতাকেই বহন করতে হয়। তবে এ কারণে আপনাদের উক্ত চুক্তিটি ফাসেদ হয়ে যায়নি। বরং শর্তটিই বাতিল হয়ে গেছে। তাই সামনের জন্য লোকসানের শর্তটি সংশোধন করে নিবেন এবং ব্যবসার ক্ষতি হলে আপনি একাই বহন করবেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৮৭; আলইখতিয়ার ২/৪৬১; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮

শেয়ার লিংক