ফরয গোসলকারী ব্যক্তি নাপাক কাপড় পরা অবস্থায় যদি শরীরে পানি ঢেলে অথবা কল ছেড়ে গোসল করে এবং ঐ কাপড় পরনে থাকা অবস্থায় পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুয়ে নেয় তাহলে সে কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে, নাকি তা খোলার পর তিনবার ধুয়ে নিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ফরয গোসলকারী ব্যক্তি নাপাক কাপড় পরা অবস্থায় যদি শরীরে পানি ঢেলে অথবা কল ছেড়ে গোসল করে এবং ঐ কাপড় পরনে থাকা অবস্থায় পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুয়ে নেয় তাহলে সে কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে, নাকি তা খোলার পর তিনবার ধুয়ে নিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
নাপাক কাপড় পরে গোসল করার ক্ষেত্রে যদি বেশি পরিমাণ পানি কাপড়ের উপর ঢালা হয় এবং কাপড় ভালোভাবে কচলে ধোয়া হয় যার ফলে কাপড় থেকে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় তাহলে এর দ্বারা কাপড়টি পাক হয়ে যাবে। আর দৃশ্যমান কোনো নাপাকি থাকলে ঐ নাপাকি কচলে ধুয়ে দূর করে নিলে কাপড় পাক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, শরীর বা কাপড়ের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা গোসলের আগেই পৃথকভাবে ধুয়ে পাক করে নেওয়া উচিত।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৩; শরহুল মুনইয়া ১৮৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৮; আননাহরুল ফায়েক ১/১৫০শেয়ার লিংক
অনেককে দেখা যায়, তারা নামাযে ইমামের আগে আগে রুকুতে বা সিজদায় চলে যায়। আবার বসা থেকে উঠার সময়ও ইমামের আগে আগেই দাঁড়িয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এরকম করাটা কি ঠিক আছে? এতে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হবে?
নামাযের প্রত্যেক রুকনেই মুকতাদির জন্য ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। ইমামের আগে মুকতাদির রুকু বা সিজদায় চলে যাওয়া কিংবা ইমামের আগেই মুকতাদির দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং ইমাম যখন রুকু করবে তখন তোমরা রুকু করবে, যখন ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠাবে তখন তোমরাও মাথা উঠাবে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪১২
সহীহ বুখারীতে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মাঝে যে ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলে সি কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মতো অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দিবেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭শেয়ার লিংক
আমরা জানি নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ঢেকে রাখা ফরয। কোনো মহিলা যদি এতটা পাতলা উড়না পরে নামায পড়ে যে, উড়না পরার পরও মাথার চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে কি তার নামায হবে?
নামাযের ভিতর মহিলাদের মাথা ও চুল ঢেকে রাখা ফরয। তাই উড়না এমন মোটা হতে হবে যা মাথায় দিলে চুল দেখা যায় না। উড়না যদি এত পাতলা হয়, যা পরার পরও চুল স্পষ্ট দেখা যায় তাহলে তা মাথায় দিয়ে নামায সহীহ হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১৪-৫১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫২-২৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৩শেয়ার লিংক
গ্রামে বা শহরে কোনো পুরুষ বা নারী মৃত্যুবরণ করলে লাশের কাফন-দাফনে অনেক ক্ষেত্রে বেশ বিলম্ব করা হয়। গ্রাম থেকে শহরে বা শহর থেকে গ্রামে আত্মীয়স্বজন আসার অপেক্ষা করা হয়। কিংবা শহর থেকে লাশকে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রয়োজনে হিমাগারেও রাখা হয়। আর মৃত ব্যক্তি নামি-দামি বা বিশেষ ব্যক্তি হলে বিভিন্ন স্থানে লাশ রাখা হয়, কয়েক দফা জানাযার নামায আদায় করা হয়। আবার কেউ দেশের বাইরে মারা গেলে তাকে দেশে এনে দাফন করা হয়। এতে ২, ৪, ৬ মাসও বিলম্ব হয়ে যায়। তাই জানার বিষয় হল, লাশের প্রতি এরূপ আচরণ সম্পর্কে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কী? দয়া করে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নে মূলত দুটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এক. মৃতের জানাযা বিলম্ব করার হুকুম।
দুই. মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছে সেখান থেকে অন্যত্র নিয়ে দাফন করার হুকুম।
নিম্নে উভয় প্রশ্নের উত্তর প্রদত্ত হল।
এক. কোনো ব্যক্তি মারা গেলে শরীয়তের নির্দেশনা হল বিলম্ব না করে তাকে গোসল দিবে, কাফন পরাবে। অতপর জানাযা নামায পড়ে দ্রুত দাফন করে দিবে। একাধিক হাদীসে মৃত্যুর পর থেকে দাফন পর্যন্ত সকল কাজ দ্রুত আঞ্জাম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং বিলম্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে।
যেমন, সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, তালহা ইবনে বারা রা. অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। অতপর বললেন, আমি তালহার মধ্যে মৃত্যুর আলামত দেখতে পাচ্ছি। অতএব (সে মারা গেলে) এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করবে। আর তোমরা দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে। কেননা কোনো মুসলমানের মৃতদেহকে পরিবারস্থ লোকদের মাঝে আটকে রাখা উচিত নয়। হাদীস : ৩১৫৯
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তোমরা তাকে আটকে রেখো না। তাকে দ্রুত দাফন করে দিও।-আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী, হাদীস : ১৩৬১৩; ফাতহুল বারী ৩/২১৯
সুনানে ইবনে মাজাহ্য় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জানাযার জন্য লাশ উপস্থিত হলে জানাযা নামায পড়তে বিলম্ব করো না।
সহীহ বুখারীর এক হাদীসে জানাযা নামাযের পর লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিলম্ব না করার নির্দেশ এসেছে।
যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জানাযাকে দ্রুত নিয়ে যাও। কেননা মৃত ব্যক্তি যদি নেক লোক হয় তবে তো তাকে তার শুভ পরিণতির দিকেই নিয়ে যাচ্ছ। আর যদি সে মন্দ হয় সেক্ষেত্রে তোমাদের ঘাড় থেকে আপদ সরিয়ে দিচ্ছ।-হাদীস : ১৩১৫
উল্লেখিত হাদীসের পাশাপাশি এখানে সাহাবাদের দুয়েকটি আছারও পেশ করা হল।
* আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. মঙ্গলবার রাতে ইন্তেকাল করেন এবং সে রাতেই তাঁকে দাফন করা হয়।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২১২৮
* উরওয়াহ রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা.-এর পরিবারের কেউ মারা গেলে তিনি বলতেন, জলদি কর, জলদি কর। তাকে নিয়ে চল, নিয়ে চল।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২০০২
উপরোক্ত হাদীস ও আছারে মৃত্যুর পর বিলম্ব না করে কাফন, জানাযা দ্রুত সম্পন্ন করে তাড়াতাড়ি দাফন করে দেওয়ার তাকিদ করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত দলিলের আলোকে ফকীহগণ মৃতের গোসল, কাফন-দাফন ও জানাযা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করাকে উত্তম বলেছেন এবং বিনা ওজরে বিলম্ব করাকে মাকরূহ বলেছেন।
অতএব শরীয়তের উক্ত নির্দেশনার প্রতি সকলকে যত্নবান হতে হবে।
তাই স্বাভাবিক সময়ের ভিতরে মৃতের জানাযা-দাফনের প্রস্ত্ততি সম্পন্ন হয়ে গেলে মৃতের ওলি উপস্থিত লোকদেরকে নিয়ে জানাযা পড়ে দ্রুত দাফন করে দিবে। এ সময়ের ভিতর কোনো আত্মীয়-স্বজন বা বিশেষ কোনো ব্যক্তির উপস্থিত হওয়া সম্ভব না হলে তার জন্য বিলম্ব করা সমীচীন হবে না।
অবশ্য ওলি নিজেই যদি দূরে অবস্থান করার কারণে স্বাভাবিক সময়ের ভিতরে তার উপস্থিত হওয়া সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ওলির জন্য উচিত তো এটাই যে, তার জন্য অপেক্ষা করতে না বলে দ্রুত দাফন করে দিতে বলবে। এতে শরীয়তের হুকুমের প্রতি যথাযথ আমল হবে।
কিন্তু ওলি যদি তার জন্য অপেক্ষা করতে বলে তাহলে তার জন্য বিলম্ব করার অবকাশ রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রেও এ পরিমাণ বিলম্ব করার অবকাশ নেই, যার কারণে লাশের মধ্যে পরিবর্তন হওয়ার আশংকা হয়। এত অধিক বিলম্ব করা ওলি-গায়রে ওলি কারো জন্যই জায়েয নয়।
আর দাফনে দীর্ঘ বিলম্বের উদ্দেশ্যে লাশের পরিবর্তন ও বিকৃতি রোধে লাশকে হিমাগারে রাখা, ফর্মালিন মেডিসিন ইত্যাদি পচনরোধক ঔষধ দিয়ে রাখা জায়েয নয়; বরং লাশের স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন হওয়ার পূর্বেই দাফন করে দেওয়া জরুরি। এর অধিক বিলম্ব করা গুনাহ।
এছাড়া মৃতদেহকে হিমাগারে রাখা ফর্মালিন, মেডিসিন ইত্যাদি দিয়ে রাখা সম্মানপরিপন্থী ও কষ্টদায়ক। অথচ মৃত ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, কোনো মুমিন ব্যক্তিকে তাঁর মৃত্যুর পর কষ্ট দেওয়া তেমনই যেমন জীবিত অবস্থায় তাকে কষ্ট দেওয়া।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১১৯৯০
এ সংক্রান্ত হাদীস ও আছারের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, জীবিত ব্যক্তি যে সকল বস্ত্ত দ্বারা আরাম বোধ করে মৃত ব্যক্তি তা দ্বারা আরাম বোধ করে। ইবনুল মালাক রাহ. বলেছেন, মৃত ব্যক্তি কষ্টদায়ক বস্ত্ত দ্বারা কষ্ট পায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৭০) তাই মৃত ব্যক্তিকে হিমাগারে রাখা মূলত তাকে কষ্ট দেওয়ারই নামান্তর। এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
অনুরূপ লাশ জানাযা-দাফনের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক, রাজনৈতিক বা দলীয় প্রথা পালনের উদ্দেশ্যে লাশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মকান্ড করা যেমন, লাশকে স্থানে স্থানে নিয়ে প্রদর্শন করা, শ্রদ্ধা নিবেদন করা, পুষ্পস্তবক অর্পণ করা, ভিডিও করা, লাশকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে জীবনালোচনা করা, বিভিন্নমুখী ভাষণ-বক্তৃতা দেওয়া ইত্যাদি সবই গর্হিত। এগুলোর মধ্যে জীবিত মৃত কারোরই কোনো কল্যাণ নেই। এসব অনর্থক ও বেহুদা কর্মকান্ড পরহেয করা সকলের জন্য জরুরি।
আর মৃতের একাধিক জানাযা পড়া জায়েয নয়। মৃতের ওলি কিংবা তার অনুমতি সাপেক্ষে জানাযা নামায আদায় হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার ঐ মৃতের জানাযা পড়ার অবকাশ নেই। সাহাবায়ে কেরাম কোনো মৃতের একাধিক জানাযা পড়া থেকে বিরত থাকতেন। নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. কোনো জানাযায় পৌঁছতে পৌঁছতে জানাযা নামায শেষ হয়ে গেলে মৃতের জন্য দুআ করে ফিরে আসতেন। দ্বিতীয়বার জানাযা পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৬৫৪
বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. এক মাইয়্যেতের একাধিক জানাযা পড়তে নিষেধ করেছেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৬৫
এছাড়া একাধিক জানাযা পড়ার কারণে দাফনে অযথা বিলম্বও হতে থাকে। অথচ ফকীহগণ জুমার দিনের প্রারম্ভে জানাযা প্রস্ত্তত হয়ে যাওয়ার পর শুধু অধিক সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে জানাযা নামায পড়ার উদ্দেশ্যে জুমা পর্যন্ত বিলম্ব করাকেও মাকরূহ বলেছেন।
মোটকথা এসব কর্মকান্ড, রেওয়াজ-প্রথা এবং জানাযা দাফনে বিলম্ব করার প্রবণতা যতই ব্যাপক হোক না কেন তা গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয় নয়। বরং সবকিছুর উর্ধ্বে শরীয়তের হুকুমকে প্রাধান্য দিতে হবে।
জেনে রাখা দরকার, মৃতের জানাযা-দাফনে অংশ নিতে পারাটাই জীবিতদের একমাত্র কর্তব্য নয়। বরং দাফনের পরও মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের অনেক করণীয় থাকে। যেমন, মৃত ব্যক্তির জন্য দুআয়ে মাগফিরাত করা, কবর যিয়ারত করা, শরয়ী-তরীকায় ইসালে সওয়াব করা ইত্যাদি।
তাই জানাযা-দাফনে উপস্থিত হতে না পারলেও এর পরবর্তী অন্যান্য করণীয় যেমন কবর যিয়ারত ইসালে সওয়াব ইত্যাদির সুযোগ তো সব সময়ই উন্মুক্ত রয়েছে।
দুই. কোনো ব্যক্তি যে এলাকায় মারা গেছে সেখানের কবরস্থানে দাফন না করে অন্যত্র দাফন করার হুকুম।
শরীয়তের নির্দেশনা হল, কোনো ব্যক্তি যে এলাকায় মারা যাবে তাকে সেখানের কবরস্থানে বা নিকটের কোনো কবরস্থানে দাফন করে দিবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের রা. বর্ণনা করেন, উহুদ যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতাকে দাফন করার জন্য নিজেদের কবরস্থানে নিয়ে আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, তোমরা শহীদদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত নিয়ে আস।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৭১৭
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. হুবশী নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন, তাঁকে ঐ স্থান হতে মক্কায় এনে দাফন করা হয়। আয়েশা রা. হজ্ব বা উমরা করতে মক্কায় গমন করলে তিনি তাঁর কবরের নিকট আসেন অতপর বলেন, আমি তোমার মৃত্যুর সময় উপস্থিত থাকলে তোমাকে সে স্থানেই দাফন করতাম যেখানে তোমার মৃত্যু হয়েছে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১১৯৩৩
উপরোক্ত দলিলের আলোকে ফকীহগণ বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যে এলাকায় মারা যাবে তাকে সে এলাকার কবরস্থানে বা নিকটবর্তী কোনো কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া উত্তম। ওজর ব্যতিত দূরবর্তী এলাকায় নিয়ে দাফন করা অনুত্তম।
তাই শহর বা গ্রামের মৃতকে নিজ নিজ এলাকার কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। সাধারণ অবস্থায় শহরের মৃতকে গ্রামে নিয়ে বা গ্রামের মৃতকে শহরে এনে দাফন করা ঠিক নয়। বরং এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্য ওজরবশত মৃত ব্যক্তিকে অন্যত্র নিয়ে দাফন করাও জায়েয আছে। যেমন-
মৃত ব্যক্তি যে এলাকায় মারা গেছে সেখানে বা নিকটের কোথাও কবরস্থান বা দাফনের সুব্যবস্থা না থাকা।
এলাকার কবরস্থানে স্বাভাবিক সময় পর্যন্ত লাশ সংরক্ষিত না থাকার আশঙ্কা থাকা।
কোনো ব্যক্তির এমন স্থানে মৃত্যু হল, যেখানে গিয়ে আত্মীয়স্বজনের জন্য দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা কষ্টকর।
এ ধরনের ওজরের কারণে দাফনের পূর্বে লাশ অন্যত্র নিয়ে কবরস্থ করা জায়েয আছে। কোনো কোনো সাহাবীকে মৃত্যুর স্থান হতে অন্যত্র নিয়ে দাফন করা প্রমাণিত আছে। দেখুন : আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৫/৫৭৪
তবে ওজরবশত লাশ স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা কর্তব্য-
স্থানান্তর ও দাফনকার্য ইত্যাদি দ্রুততার সাথে আঞ্জাম দিতে হবে।
লাশ স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে একাধিক জানাযা না হয়-সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমনটি প্রায়ই হতে দেখা যায়। কেননা মৃত ব্যক্তির একাধিক জানাযা পড়ার বিধান শরীয়তে নেই।
স্থানান্তরের কারণে এমন বিলম্ব না হতে হবে, যার কারণে লাশে পরিবর্তন আসে বা বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা হয়। এমন আশঙ্কা হলে স্থানান্তর জায়েয হবে না।
তাই প্রবাসে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাকে সেখানেই মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া কর্তব্য। কেননা, প্রবাস থেকে লাশ দেশে আনার ক্ষেত্রে অকারণেই তার দাফনে বিলম্বিত হয়।
-শরহুস সিয়ারিল কাবীর ১/২৩৬-২৩৭; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫, ১৮০শেয়ার লিংক
গত রোযার মাসে আমি কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম। একদিন দিনের বেলায় প্রচুর বমি হয়েছিল। তবুও আমি রোযা ভাঙতে চাইনি, কিন্তু আমার এক আত্মীয় আমাকে বললেন, তোমার রোযা তো ভেঙ্গে গেছে। অতএব তুমি উপোস না থেকে কিছু খেয়ে নাও। আমি তার কথামতো তখন খাবার খেয়ে নেই। পরে জানতে পারি, অনিচ্ছাকৃত বমির কারণে রোযা ভাঙ্গে না। হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, এ কথা কি ঠিক? ঠিক হলে এ অবস্থায় আমার জন্য করণীয় কী? আমাকে কি এর কারণে কাফফারা আদায় করতে হবে?
অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোযা ভাঙ্গে না-এ কথা ঠিক। তাই বমি হওয়ার পর আপনার জন্য ঐদিন পানাহার করা বৈধ হয়নি। অবশ্য ঐ রোযার জন্য আপনাকে শুধু একটি রোযা কাযা করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭২০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; কিতাবুল আছল ২/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪শেয়ার লিংক
গত রমযানে একদিন আমি রোযা রাখার পর ঢাকায় সফর করি। যাওয়ার পথে পিপাসা লাগায় সফরে আছি বলে পানি পান করি এবং অল্প নাস্তাও করি। পরে মনে পড়ে, আমি তো মুকীম অবস্থায় রোযা রেখেছি। তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, ঐ রোযা ভাঙ্গার কারণে কি আমার উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় রোযা রাখার পর সফরের অজুহাতে রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয হয়নি। রোযা ভাঙ্গার কারণে গুনাহ হয়েছে। ঐ রোযাটি কাযা করে নিতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
উল্লেখ্য, সফর অবস্থায় রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু মুকীম বা মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখলে শুধু সফরের অজুহাতে তা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নয়।-কিতাবুল আছল ২/১৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪০৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৭শেয়ার লিংক
গত রমযান মাসে একদিন তারাবীর পর আমার খুব বমি হয়। ফলে শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে পরের দিন রোযা রাখার নিয়ত করিনি। এমনকি সাহরীও খাইনি। কিন্তু সকাল ৮ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে শরীর খুব হালকা বোধ হয়। তাই তখন রোযার নিয়ত করে ফেলি। প্রশ্ন হল, বিলম্বে নিয়ত করায় আমার উক্ত রোযা কি সহীহ হয়েছে? উল্লেখ্য, সুবহে সাদিক থেকে রোযার নিয়ত করা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের কোনো কাজ করা হয়নি।
রমযানের রোযার নিয়ত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের পূর্বে করলেও রোযা সহীহ হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি এ সময়ের ভেতরেই রোযার নিয়ত করেছেন এবং এর মধ্যে রোযা ভঙ্গের কোনো কাজও করেননি তাই আপনার ঐ রোযা সহীহ হয়েছে। অবশ্য রাতেই রোযার নিয়ত করে নেওয়া উত্তম।
প্রকাশ থাকে যে, সাহরী খাওয়া সুন্নত। সাহরী না খেয়ে শুধু নিয়ত করে নিলেও রোযা সহীহ হয়ে যায়।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯, ২৬৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৩৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯শেয়ার লিংক
কোন্ কোন্ আত্মীয়কে যাকাত দেওয়া যায়? নানী ও খালাকে কি যাকাত দিতে পারব?
নানীকে যাকাত দেওয়া যাবে না। তদ্রূপ নানা, দাদা-দাদী, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানাদি ও তাদের অধস্তনকে যাকাত দেওয়া যাবে না। এরা দরিদ্র হলে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে এমনি সহায়তা করা কর্তব্য।
এছাড়া খালাসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তবে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে এবং এ ধরনের আত্মীয়দেরকে যাকাত দেওয়া অধিক উত্তম।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/৫৪৪; কিতাবুল আছল ২/১২৪; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২শেয়ার লিংক
প্রায় দুই মাস আগে একটা ছেলের সাথে মালিহার বিবাহ হয়। বিবাহের একমাস পর সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামী মারা যায়। মালিহা এখন তার বাবার বাড়িতে ইদ্দত পালন করছে। ইতোমধ্যে তার বিবাহের প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে। মালিহার কানাডা প্রবাসী খালাতো ভাই সপনের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব এসেছে। সপন একমাস পর আবার কানাডায় চলে যাবে। তাই সে চাচ্ছে, এই মাসের মধ্যেই বিবাহের কার্য সম্পন্ন করে ফেলতে। কিন্তু মালিহার ইদ্দত শেষ হতে এখনো প্রায় তিন মাস বাকি। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় সপনের জন্য কি মালিহাকে বিবাহ করা জায়েয হবে?
স্ত্রী অন্তসত্ত্বা না হলে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব।
ইদ্দতকাল পূর্ণ হওয়ার আগে তাদেরকে বিয়ে করা ও বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সবই নাজায়েয। ইদ্দতের ভেতর কোনো নারী বিবাহ করলে তা সহীহ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) তোমরা (ইদ্দতের) নির্দিষ্টকাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করার সংকল্পও করো না।-সূরা বাকারা : ২৩৫
অন্যত্র ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমাদের মধ্য হতে যারা স্ত্রীদের রেখে মৃত্যুবরণ করে তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় থাকবে।-সূরা বাকারা : ২৩৪
অতএব প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সপনের জন্য মালিহাকে ইদ্দতের ভেতর বিবাহ করা জায়েয হবে না। এক্ষেত্রে সুযোগ থাকলে সপন তার সফরকে বিলম্বিত করবে। অন্যথায় মালিহার ইদ্দত চার মাস দশ দিন শেষ হওয়ার পর সপন তার কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করিয়ে নিবে।
-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪২৬, ১/৪৩০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৪শেয়ার লিংক
কিছুদিন আগে আমি দশটি মেহগনি গাছ বিক্রি করি। ক্রেতা গাছগুলো শেকড়সুদ্ধ কেটে নিতে চায়। এ নিয়ে আমাদের মাঝে ঝগড়া হয়। আমি চাচ্ছি, ক্রেতা সেগুলো মাটির উপর থেকেই কেটে নিয়ে যাক। কেননা দুটো গাছ একেবারে আমার বাড়ি লাগোয়া। যেগুলো শেকড়সুদ্ধ উপড়াতে গেলে আমার বাড়ির দেয়াল ধ্বসে পড়ার প্রবল আশঙ্কা আছে।
এ ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের আলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত জানালে কৃতার্থ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাড়ির সাথে লাগোয়া গাছ দুটো শেকড়সহ কেটে নিলে যেহেতু মালিকের ক্ষতি হবে তাই ক্রেতার জন্য গাছ দুটো শেকড়সহ কেটে নেওয়া বৈধ হবে না। মাটির উপর থেকেই কেটে নিতে হবে।
আর অবশিষ্ট গাছগুলো আপনার এলাকার প্রচলন অনুসারে ক্রেতা কেটে নিতে পারবে। যদি শেকড়সহ নেওয়ার প্রচলন থাকে তবে ক্রেতার এ অধিকার থাকবে।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৫৫৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৩৫শেয়ার লিংক
এক লোকের ঘরে অনেক ধান আছে। সে চার মাস পর ধানের দাম বাড়লে তা বিক্রি করবে। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি এসে তাকে বলল, এই ধান আমার কাছে বিক্রি করে দাও। চার মাস পর ধানের যে বাজার মূল্য হবে সে হিসেবে তোমার ধানের মূল্য পরিশোধ করে দিব।
জানার বিষয় হল, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা শরীয়তে বৈধ কি না?
না, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয নয়। কেননা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির সময়ই পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। তাই কারবারটি জায়েযভাবে করতে চাইলে ধান দেওয়ার আগেই চুক্তির সময় মূল্য নির্ধারণ করে নিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৭; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ২৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৯শেয়ার লিংক
আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি চাল ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ ব্যবসা। গত বছর সে ব্যবসায় বড় ধরনের লস খায়। যার কারণে সে অনেক ঋণী হয়ে পড়ে এবং অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করার মতো তার কাছে কোনো ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থা দেখে তার এক ভাই তাকে সহায়তা করার জন্য সোনালী ব্যাংকে একটি ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খুলে। উদ্দেশ্য হল, ডিপেজিট থেকে যে মুনাফা আসবে তার পুরোটাই তাকে দিয়ে দিবে। প্রশ্ন হল উক্ত উদ্দেশ্যে তার এ ডিপোজিট খোলা জায়েয হয়েছে কি?
প্রশ্নে বর্ণিত ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টটি সুদভিত্তিক। এই একাউন্টের আয় সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের একাউন্ট করলে একে তো সুদী চুক্তি করার গুনাহ হবে। আর অতিরিক্ত গ্রহণ করলে সুদ গ্রহণেরও গুনাহ হবে। এ টাকা নিজে ভোগ না করলেও যেহেতু মূল চুক্তিটি সুদী। তাই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে সহায়তা করার উদ্দেশ্যেও এই একাউন্ট খোলা জায়েয হবে না।
সতুরাং ঋণগ্রস্ত বা দুস্থ-অসহায়কে সহায়তা করার জন্যও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। বরং শরীয়তসম্মত কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেমন দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সুদমুক্ত কর্জে হাসান দেওয়া, দান-সদকা করা, যাকাত ইত্যাদির মাধ্যমে সহায়তা করা ইত্যাদি।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/৩৪২শেয়ার লিংক
আমি একটি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির যাবতীয় কাঁচামাল বাজার থেকে ক্রয় করে আনা। জনৈক ব্যবসায়ী আমার সাথে এই মর্মে চুক্তি করতে চাচ্ছে যে, আমি যদি তার থেকে ফ্যাক্টরির সকল কাঁচামাল ক্রয় করি তাহলে সে আমাকে শতকরা হারে কিছু কমিশন দিবে। জানতে চাই, আমার এ কমিশন গ্রহণ করা জায়েয হবে কি না? এ টাকা কি নিজের কাছে রেখে দিতে পরব? না মালিককে ফেরত দিতে হবে। জানালে উপকৃত হব।
আপনার জন্য উক্ত কমিশন ভোগ করা জায়েয হবে না। কেননা আপনি ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে ক্রয় প্রতিনিধি। বিক্রেতা এক্ষেত্রে যদি কোনো মূল্যছাড় বা কমিশন দেয় তবে তা ফ্যাক্টরি মালিকেরই প্রাপ্য। সেখান থেকে আপনার জন্য কিছুই নেওয়া জায়েয হবে না। এছাড়া বিক্রেতা যদি স্বয়ং আপনাকে দিতে চায় তবুও তা আপনার জন্য নেওয়া জায়েয হবে না। কেননা আপনি কোম্পানির পক্ষ থেকে এ কাজের জন্য মাসিক বেতন পাচ্ছেন। সুতরাং এ বাবদ দোকানদার থেকে কোনো কমিশন নেওয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে।
-সুনানে আবু দাউদ ৪/২১০; কিতাবুল আছল ১১/২৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৬; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৪৭৮শেয়ার লিংক
এক লোক গত মাসে উমরায় গিয়েছিল। তার জানা ছিল না যে, তাওয়াফের জন্য অযু জরুরি। তাই সে অযু ছাড়াই উমরার তাওয়াফ করেছে এবং উমারা সম্পন্ন করার পর সে আরো কিছু নফল তাওয়াফও করেছে। যেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি অযু ছাড়া করেছে। এখন সে দেশে চলে এসেছে। তার এখন কী করণীয়? তাকে কি এজন্য কোনো জরিমানা দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অযু ছাড়া উমরার তাওয়াফ করার কারণে ঐ ব্যক্তির উপর একটি দম ওয়াজিব হয়েছে। এজন্য হেরেমের সীমানায় তাকে একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করতে হবে। আর যে কয়টি নফল তাওয়াফ অযু ছাড়া করেছে এগুলোর প্রত্যেক চক্করের জন্য একটি করে সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। সুতরাং সে যদি দুটি নফল তাওয়াফ অযু ছাড়া করে থাকে তবে সাতটি করে মোট চৌদ্দটি সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। এ সদকা হেরেমের এলাকায় করা উত্তম। হেরেমের বাইরে করলেও আদায় হয়ে যাবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৫২শেয়ার লিংক
আমাদের বাড়ির পাশে একটি ছোট হেফযখানা আছে। ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৬০ জনের কাছাকাছি। কিছুদিন আগে আমি এক বিষয়ে ঐ মাদরাসার সকল ছাত্রকে একবেলা খাওয়ানোর মানত করেছিলাম। পরবর্তীতে আমার উদ্দেশ্য হাসিল হলে আমি মুহতামিম সাহেবের সাথে আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, এখানে একজন অসহায় ছাত্র আছে। সকলকে এক বেলা খাওয়ানোর পরিবর্তে আপনি তার এক মাসের খানার খরচ দিয়ে দিন। এটা বেশি ভালো হবে। জানতে চাই, এক্ষেত্রে একজনের জন্য এক মাসের খানার ব্যবস্থা করলে আমার মানত আদায় হবে কি? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ষাটজনকে খাওয়াতে যে পরিমাণ টাকা লাগবে তা একজনকে দিয়ে দিলেও আপনার মানত আদায় হয়ে যাবে।
-রদ্দুল মুহতার ৩/৭৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/২৭১; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৫শেয়ার লিংক
আমার বয়স ৩৫ বছর। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমি হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছি। হুজুরের নিকট জানতে চাই যে, এ বয়সে আমার জন্য খতনা করার হুকুম কি? আর খতনার জন্য ডাক্তারের সামনে সতর খোলা জায়েয হবে কি?
খতনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং শাআয়েরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের প্রতীকী বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। অতএব আপনাকে খতনা করে নিতে হবে। আর এজন্য ডাক্তারের সামনে প্রয়োজন পরিমাণ সতর খোলারও অবকাশ আছে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৫৬, ৬২৯৭; ফাতহুল বারী ১১/৯২; সুনানে নাসায়ী ১/৬৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭০; হেদায়া ৪/৪৪৩; কিফায়া ৮/৪৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০৯শেয়ার লিংক
আমি একটি হাইস্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক। এ হাই স্কুলে অনেক হিন্দু ছাত্রও আছে। বিভিন্ন সময় দেখা-সাক্ষাতে হিন্দু ছাত্ররা আমাকে সালাম দেয়। প্রশ্ন হল, তাদের সালামের জওয়াব দেওয়া কি জায়েয হবে?
হিন্দু বা অমুসলিরা সালাম দিলে উত্তরে শুধু ওয়া আলাইকুম বলা যাবে। পুরো উত্তর দেওয়া যাবে না।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২০; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১২শেয়ার লিংক