মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আনসারী - ফেনী

২৮৭৭. প্রশ্ন

অসুস্থতার কারণে আমি গোসল করতে পারি না। কিন্তু অযু করতে পারি। প্রশ্ন হল, আমি কি ফরয গোসলের পরিবর্তে অযু করতে পারব? নাকি তায়াম্মুম করব।

 

উত্তর

ফরয গোসল করতে সক্ষম না হলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবেন। এক্ষেত্রে অযু করার প্রয়োজন নেই। কেননা এক্ষেত্রে এই তায়াম্মুমই গোসল এবং অযুর জন্য যথেষ্ট। আর এই তায়াম্মুম দ্বারা তিলাওয়াত, নামায ইত্যাদি পড়তে পারবেন। অবশ্য এরপর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করতে হবে। আর পরবর্তীতে যখন গোসল করার সামর্থ্য হবে তখন গোসল করে নিতে হবে।

-কিতাবুল আস্ল ১/১০৭; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া খানিয়া ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ দেলোয়ার হুসাইন - মুসলিম বাজার, ঢাকা

২৮৭৮. প্রশ্ন

আমি একজন মাছ বিক্রেতা। খরীদদারদের প্রয়োজনে অনেক সময় মাছ কেটে দিতে হয়। সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও কখনো কখনো মাছের রক্ত লুঙ্গিতে লেগে যায়। নামায পড়ার আগে যথাসম্ভব ধুয়ে নিই। কিন্তু মাঝে মধ্যে নামাযের পর দেখি লুঙ্গিতে রক্ত লেগে আছে। এখন কি আমাকে ঐ নামাযগুলো পুনরায় পড়তে হবে?

 

উত্তর

মাছের রক্ত নাপাক নয়। তাই তা কাপড়ে লেগে থাকা অবস্থায় যে নামাযগুলো পড়েছেন সেগুলো আদায় হয়ে গেছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫-১৯৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফখরুল ইসলাম - কলাখাল, বরুড়া, কুমিল্লা

২৮৭৯. প্রশ্ন

একবার আমি মসজিদে আসরের নামাযের জামাত না পাওয়ায় একা একা নামায পড়ছিলাম। আমার নামায দ্বিতীয় রাকাত শেষ হয়ে তৃতীয় রাকাত চলছে। এরই মধ্যে একজন মুসল্লি আমার পেছনে ইকতেদা করেন। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে উঁচু আওয়াজে তাকবীর শুরু করি। আমার নামায শেষে তিনি তার বাকী নামায আদায় করে নেন।  এ অবস্থায় আমার ও উক্ত মুসল্লির নামায হয়েছে কি?

আমি আরো জানতে চাই যে, একাকী নামায শুরু করার পর কারো জন্য তার পেছনে ইকতিদা করা সহীহ আছে কি এবং এর কোনো দলিল-প্রমাণ আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনাদের উভয়ের নামাযই সহীহ হয়েছে। কোনো ব্যক্তি একাকী নামায শুরু করার পর তার পিছনে ইক্তিদা করা সহীহ আছে। এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

 

আয়েশা রা. বলেন, একদা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাঁর কামরায় নামায পড়ছিলেন। তাঁর কামরার দেয়াল ছিল নিচু। ফলে সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযরত দেখতে পান এবং তাঁর পিছনে ইক্তিদা করে নামাযে দাঁড়িয়ে যান। সকাল বেলা বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। দ্বিতীয় রাতেও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দাঁড়ালেন এবং সাহাবীগণ তাঁর ইক্তিদা করলেন।

-সহীহ বুখারী ১/১০১; ইলাউস সুনান ৪/৩৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৫০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আদীব - ডেমরা, ঢাকা

২৮৮০. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের পাশের এলাকার এক লোকের জানাযায় শরিক হই। দাফন শেষ হওয়ার পর দেখলাম এক লোক মৃতের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আযান দিচ্ছে। তার কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলল, আমাদের পূর্বপুরুষ থেকেই এ আমলটি চলে আসছে। জানতে চাই, দাফনের পর মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে আযান দেওয়ার প্রচলনটি কি ইসলামী শরীয়তে বৈধ?

 

উত্তর

দাফনের পর কবরের পাশে আযান দেওয়া বিদআত। এক্ষেত্রে আযান দেওয়া শরীয়তের কোনো দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে দাফনের পর কবরে আযান দেওয়া প্রমাণিত নেই। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

-রদ্দুল মুহতার ২/২৩৫; ফাতাওয়াল কুবরা আলফিকহিয়্যাহ ২/১৭; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৬

শেয়ার লিংক

মাসুম - দিনাজপুর

২৮৮১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় ঈদের খুতবায় ইমাম সাহেব যখন তাকবীর বলেন তখন সকল মুসল্লি উচ্চস্বরে ইমামের সাথে সাথে তাকবীর বলতে থাকে। খুতবা চলাকালীন মুক্তাদীদের এভাবে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা কতটুকু শরীয়তসম্মত? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

খুতবা চলাকালীন চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা ও কাজকর্ম নাজায়েয। এমনকি যিকির-আযকার, তাসবিহ-তাহলীল পড়াও নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমামের খুতবার সময় তুমি যদি (কাউকে) বল, চুপ কর, তাহলে তুমি অনর্থক কাজ করলে। (সহীহ বুখারী ১/১২৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ১১০৫)

ইবনে জুরাইজ রা. থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে আছে, তিনি বলেন, আমি আতা রাহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম, আরাফার দিন অথবা ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম যখন খুতবা দেয় তখন কি লোকেরা আল্লাহ তাআলার যিকির করতে পারবে অথচ সে খুতবা শুনতে পারছে? তিনি বললেন, না। কোন ঈদেই (খুতবা চলাকালীন) কথা বলবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮৩, হাদীস : ৫৬৪০)

 

সুতরাং ঈদের খুতবা চলাকালীন মুসল্লীগণ তাকবীর বলবে না। বরং নিরব থেকে খুতবা শ্রবণ করবে।

-কিতাবুল আস্ল ১/৩৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮৪

শেয়ার লিংক

হামীদুল্লাহ - সিলেট

২৮৮২. প্রশ্ন

একবার জানাযার নামাযে ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় তাকবীরের পর সালাম ফিরিয়ে দেন। কিন্তু সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই পেছন থেকে মুক্তাদীগণ লোকমা দেয়। তখন ইমাম সাহেব দ্বিতীয় সালাম না বলে এ সময়ের দুআ পড়ে এবং চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরান।

জানার বিষয় হল, এ নামাযটি কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় পড়তে হবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ জানাযা নামায আদায় হয়ে গেছে। কেননা ইমাম ভুলবশত সালাম ফিরানোর পর নামায পরিপন্থী কোন কাজ করার পূর্বেই যেহেতু চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরিয়েছেন তাই তা আদায় হয়ে গেছে; পুনরায় পড়তে হবে না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ৩২২; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬২১

শেয়ার লিংক

ফারহানা - দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি

২৮৮৩. প্রশ্ন

এক মহিলা কোনো কারণবশত রমযানের একটি রোযা ভেঙ্গে ফেলেছিল। এখন সে এর কাফফারা আদায় করবে। কিন্তু মহিলাদের তো মাঝে বিরতির দিন থাকে। তখন তারা রোযা রাখতে পারে না। অথচ আমরা জানি, কাফফারার রোযা বিরতি না দিয়ে লাগাতার ষাট দিন রাখা জরুরি। এখন প্রশ্ন হল, ঐ মহিলা কীভাবে কাফফারার রোযা রাখবে?

 

উত্তর

কাফফারার রোযা আদায়ের মাঝে যদি হায়েয (মাসিক স্রাব) এসে যায় তাহলে পবিত্র হওয়ার পর কোনো দিন বাদ না দিয়ে লাগাতার ষাটটি রোযা পূর্ণ করবে। তাই কাফফারার রোযা শুরু করার পর থেকে শেষ পর্যন্ত হায়েযের দিনগুলো ছাড়া মাঝে অন্য কোনো দিন বিরতি না দিলে তার কাফফারার রোযা আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭

শেয়ার লিংক

সাঈদুর রহমান - সিলেট

২৮৮৪. প্রশ্ন

শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখার নিয়ম কী? এগুলো এক সাথে লাগাতার ছয় দিন রাখা জরুরি, না মাঝে বিরতি দিয়ে রাখা যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

শাওয়ালের ছয় রোযা ধারাবাহিকভাবে একত্রে রাখা যায়, আবার বিরতি দিয়েও রাখা যায়। যেভাবেই রাখা হোক তা আদায় হয়ে যাবে এবং নির্ধারিত ফযীলতও লাভ হবে।

-লাতাইফুল মাআরিফ ৪৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৫; আলমাজমূ ৬/৪২৬-৪২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬২; ফাতহুল মুলহিম ৩/১৮৭; আলমুগনী ৪/৪৩৮

শেয়ার লিংক

সারোয়ার মোর্শেদ - ময়মনসিংহ

২৮৮৫. প্রশ্ন

আমি গত রমযানে আমাদের মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করি। কিন্তু সমস্যা হল মসজিদের কোনো ইস্তেঞ্জাখানা নেই। এ অবস্থায় বাসায় এসে জরুরত সারা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। তাই বাসা থেকে ইস্তেঞ্জা সেরে মসজিদে এসে অযু করি এবং এভাবে দশ দিন অতিবাহিত করি। জানতে চাই, এভাবে আমার ইতিকাফ কি আদায় হয়েছে?

 

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ইতিকাফ সহীহ হয়েছে। কেননা ইস্তেঞ্জার জরুরুতে মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েয। আর মসজিদের ইস্তেঞ্জাখানা না থাকলে এজন্য বাসা-বাড়িতে  যাওয়াও জায়েয। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত অবস্থায় ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না।

-সহীহ বুখারী ১/২৭২; সহীহ মুসলিম ১/১৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২

শেয়ার লিংক

আলহাজ আজমল হক বিশ্বাস - কলেজ রোড, ঈশ্বরদী, পাবনা

২৮৮৬. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক ব্যক্তির হজ্ব কাফেলা আছে। তিনি বলেন, মাহরাম ছাড়াও মহিলাদের হজ্বে যাওয়া জায়েয আছে। তিনি নিজেও গত বছর এমন দুজন মহিলাকে হজে নিয়ে গেছেন, যাদের সাথে কোনো মাহরাম ছিল না।

তাই আমি জানতে চাই-

ক) মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজ্বে যাওয়া জায়েয কি না এবং মাহরাম ব্যতীত মহিলাদেরকে হজ্বের সফরে নিয়ে যাওয়াটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন হয়েছে? অর্থাৎ কী ধরনের অন্যায় হয়েছে?

উত্তর

মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজ্বের সফরে যাওয়া নাজায়েয। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, কোনো পুরুষ বেগানা মহিলার নিকট একাকীত্বে অবস্থান করবে না এবং কোনো মহিলা মাহরাম পুরুষ ব্যতীত সফর করবে না। তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো অমুক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি অথচ আমার স্ত্রী হজ্বের সফরে বের হয়ে গেছে (এখন আমি কী করব?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্বে যাও। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩০০৬)

আরেক বর্ণনায় এসেছে, আবু হুবায়রা রাহ. বলেন, রাই এলাকার অধিবাসীনি জনৈকা মহিলা ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-এর নিকট এ মর্মে পত্র প্রেরণ করলেন যে, তিনি একজন বিত্তবান নারী। তার স্বামী ও কোনো মাহরাম পুরুষ নেই এবং এ পর্যন্ত তিনি হজ্বও করেননি। (এখন তিনি স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ব্যতীত হজ্বে যেতে পারবেন কি?) প্রতি উত্তরে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. লিখেছেন-

إن هذا من السبيل الذي قال الله وليس لك محرم فلا تحجي إلا مع بعل أو محرم

অর্থাৎ স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা হওয়া মহিলাদের হজ্বের সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত, যে সামর্থ্যের কথা আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছেন-

ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا

 (তরজমা : মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বাইতুল্লাহ শরীফ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর জন্য এ ঘরের হজ্ব করা ফরয।) আর আপনার যেহেতু কোনো মাহরাম নেই তাই আপনি স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ব্যতীত হজ্ব করতে যাবেন না।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫৪০০

সুতরাং স্বামী বা মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত মহিলা অপেক্ষা করবে। অবশেষে যদি মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হয় আর সে হজ্বে যেতে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ্ব করাবে কিংবা বদলি হজ্বের জন্য অসিয়ত করে যাবে। এর দ্বারাই তার হজ্বের ফরয দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে।

 

অতএব মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজ্বে যাওয়া জায়েয- এ সংক্রান্ত প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি ঠিক নয়। আর মাহরাম ব্যতীত মহিলাদেরকে হজ্বে নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয কাজ ও অন্যায় হয়েছে। তাছাড়া মাহরাম ব্যতীত মহিলাকে হজ্বে নিয়ে যেতে হলে সৌদী দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অফিসগুলোতে অন্যকে মাহরাম পরিচয় দিতে হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ধোঁকা। তাই ঐ ব্যক্তির কর্তব্য হল, এ সকল গুনাহ থেকে খাঁটি মনে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৭, ২/২৯৯, ১/৩৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাফি - কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

২৮৮৭. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি সুস্থ থাকা অবস্থায় তার উপর হজ্ব ফরয হয়। কিন্তু সে তখন হজ্ব আদায় করেনি। পরবর্তীতে সে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, যা থেকে তার জন্য সুস্থতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

প্রশ্ন হল, তার জন্য এ অবস্থায় কি অন্যকে দিয়ে বদলি হজ্ব করানো জায়েয হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা মতে লোকটি যেহেতু শারীরিকভাবে হজ্বে যেতে সক্ষম নয় আর বাহ্যত সামনেও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাই তার জন্য নিজের পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব করানো জায়েয হবে। তবে বদলি হজ্ব করানোর পর মৃত্যুর পূর্বে কখনো সুস্থ হয়ে গেলে তখন সামর্থ্য হলে পুনরায় নিজের হজ্ব আদায় করতে হবে।

-সহীহ বুখারী ১/২৫০; আততাজরীদ ৪/১৬৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৫; ফাতহুল কাদীর ৩/৬৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭

শেয়ার লিংক

ফারহান নাদীম - ফেনী

২৮৮৮. প্রশ্ন

আমার অনেক ফসলী জমি আছে। যেগুলো থেকে উপার্জিত অর্থ সংসারের পেছনে খরচ করার পরও অতিরিক্ত থাকে। এই জমিগুলোর কোনো একটি বিক্রি করলে হজ্বে যাওয়া-আসার খরচ হয়ে যাবে এবং বাকি জমিগুলোর উপার্জন আমার সংসারের ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু আমার কাছে নগদ অর্থ নেই। এখন কি আমার জন্য জমি বিক্রি করে হজ্ব করা জরুরি?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার উপর হজ্ব ফরয। তাই যতদ্রুত সম্ভব আপনার হজ্ব আদায় করে নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে হলেও হজ্বে যেতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮২; গুনইয়াতুন নাসিক ২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৭২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬২

শেয়ার লিংক

রফিকুল ইসলাম - লালমনিরহাট

২৮৮৯. প্রশ্ন

আমার চাচা সাধারণত রমযানের শুরুতেই ফিতরা আদায় করে থাকেন। ইদানীং কয়েক বছর ধরে তিনি রমযানের পূর্বেই ফিতরা আদায় করে দিচ্ছেন। আমি জানতে চাই, সদকাতুল ফিতর রমযানের শুরুতে অথবা রমযানের পূর্বেই আদায় করা যাবে কি?

উত্তর

সদকাতুল ফিতর ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন ঈদের নামাযের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫০৯

অবশ্য কোনো কোনো সাহাবী থেকে ঈদের কয়েকদিন পূর্বেও ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু একদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬০৬

আর নাফে রাহ. থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু তিনদিন পূর্বে ফিতরা উসূলকারীর নিকট সদকাতুল ফিতর পাঠিয়ে দিতেন।-মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৩১৬

সুতরাং সদকাতুল ফিতর রমযানের শেষ দিকেই আদায় করা উচিত। এতে করে গরীব লোকদের জন্য ঈদের সময়ের প্রয়োজন পূরণেও সহায়তা হয়। 

 

আর রমযানের পূর্বে ফিতরা আদায় করলেও অধিকাংশ ফকীহগণের মতে তা আদায় হয়ে যায়। সুতরাং আপনার চাচার সদকায়ে ফিতর আদায় হয়ে গেছে। তবে এ ব্যাপারে যেহেতু মতানৈক্য রয়েছে তাই সামনে থেকে সদকায়ে ফিতর রমযানেই আদায় করবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৪২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাফী - কটিয়াদী

২৮৯০. প্রশ্ন

আযাদের বয়স সাত বছর। সে গত বছর উত্তরাধিকার সূত্রে নগদ দুই লক্ষ টাকার মালিক হয়েছে। প্রশ্ন হল, তার উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে কি?

 

উত্তর

না, আযাদ যেহেতু নাবালেগ তাই সম্পদ থাকলেও তার উপর যাকাত ফরয নয়। কেননা যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়াও শর্ত।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফয়যুল্লাহ - কে ডি হাট, ফেনী

২৮৯১. প্রশ্ন

আমার বোনের নিকট দশ ভরি স্বর্ণালংকার আছে। গত তিন বছর সেগুলোর যাকাত দেওয়া হয়নি। এখন তিনি তা আদায় করতে চাচ্ছেন। আমার জানার বিষয় হল, গত তিন বছরের যাকাত কিভাবে আদায় করবেন? বর্তমান মূল্য হিসাবে? না কি প্রত্যেক বছরের স্বর্ণের যে মূল্য ছিল সে হিসাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

বিগত বছরগুলোর যাকাত যখন আদায় করা হবে তখনকার স্বর্ণের বাজার মূল্য হিসাবেই যাকাত দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিগত বছরের মূল্য ধরা যাবে না। তাই এখন যাকাত আদায় করলে স্বর্ণের বর্তমান মূল্য হিসাবেই আদায় করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/২২১; রদ্দুল মুহতার ২/২৮৬

শেয়ার লিংক

মাওলানা এমদাদুল্লাহ - কে ডি. হাট, ফেনী

২৮৯২. প্রশ্ন

আমার এক দরিদ্র প্রতিবেশী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে আমি হাসপাতালে দেখতে যাই। সাথে তার জন্য আমার যাকাতের টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যাই। তন্মধ্যে যাকাতের নিয়তে এক হাজার টাকার কিছু জিনিস কিনে নিয়ে যাই। আর বাকি চার হাজার টাকা তাকে প্রদান করি। জানার বিষয় হল, আমার পুরো পাঁচ হাজার টাকা যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে কি?

 

উত্তর

অসুস্থ লোকটি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হলে আপনার পুরো পাঁচ হাজারই যাকাত হিসাবে আদায় হয়েছে। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তিকে নগদ টাকা প্রদান করলে যেভাবে যাকাত আদায় হয় তেমনিভাবে যাকাতের নিয়তে কোনো পণ্য কিনে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। তবে কোনো পণ্য দ্বারা যাকাত আদায় করার চেয়ে নগদ অর্থ দ্বারা আদায় করাই শ্রেয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৬-২৫৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২০১; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪

শেয়ার লিংক

শাহ ইমরান - শর্শদী, ফেনী

২৮৯৩. প্রশ্ন

আমি একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী। গত মাসে আমার যাকাত বর্ষ পূর্ণ হয়েছে। বছরান্তে আমি ব্যবসার নীট লাভ এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হিসাব করে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করি। এক্ষেত্রে স্টক কাঁচামালের হিসাব করিনি। কিন্তু একজন আলেম আমাকে বললেন, আপনার ব্যবসার কাঁচামালেরও যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, আমার ব্যবসার কাঁচামালগুলো হচ্ছে সুতা, রং, স্টীকার, প্যাকেটিং সামগ্রী ইত্যাদি। আমার জানার বিষয় হল, আমাকে কি এসব কাঁচামালেরও যাকাত আদায় করতে হবে?

 

উত্তর

হ্যাঁ, বছরান্তে যাকাতযোগ্য অন্যান্য সম্পদের সাথে ঐ সব মজুদ কাঁচামালেরও যাকাত দিতে হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; ফাতহুল কাদীর ২/১২১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০

শেয়ার লিংক

এম যুবাইর হুসাইন - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

২৮৯৪. প্রশ্ন

গত বছর কুরবানীর উদ্দেশ্যে আমি একাই গরু ক্রয় করি। ঈদের নামায শেষে কয়েকজন মিলে যবেহ করার জন্য গরুটাকে শোয়াতে গেলে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে গরুটির একটি পা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায়। তা সত্ত্বেও এক ভাইয়ের পরামর্শক্রমে আমরা সেটিকে যবেহ করি। এখন জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার পক্ষ থেকে কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়েছে কি?

 

উত্তর

যবহের জন্য পশু শোয়ানোর সময় পশুর পা ভেঙ্গে গেলেও তা কুরবানী করা জায়েয। সুতরাং আপনার ঐ কুরবানী সহীহ হয়েছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সালমান মানসুর - হোমনা, কুমিল্লা

২৮৯৫. প্রশ্ন

সাজ্জাদ সাহেব সরকারি চাকুরিজীবী এক ছেলের সাথে তার মেয়ে বুশরার বিয়ে ঠিক করেছেন। কিন্তু মেয়ে বলল, আমি এ বিয়ে করব না। সাজ্জাদ সাহেব মেয়ের কথা শুনে বললেন, তুমি যদি এ বিয়েতে রাযি না হও তাহলে আমার মরামুখ দেখবে। মেয়েটি বাবার এ কথা শুনে বিয়েতে রাযি হয়। সাজ্জাদ সাহেব মেয়েকে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দেন। মেয়েটি এখন ঐ ছেলের সংসার করছে। প্রশ্ন হল, সাজ্জাদ সাহেব তো মেয়েকে এক ধরনের জোর করেই বিয়ে দিলেন। এভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়ার কারণে কি উক্ত বিবাহ সহীহ হয়েছে? প্রমাণাদির আলোকে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু মেয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাযি হয়ে গিয়েছিল তাই উক্ত বিবাহ সহীহ হয়েছে। তবে পিতার জন্য এভাবে মেয়ের পছন্দের বাইরে পাত্রকে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। অভিভাবকদের কর্তব্য হল, বিয়েতে ছেলে-মেয়ের মতামতেরও মূল্যায়ন করা। আর মেয়েদেরও কর্তব্য হল, পিতামাতা তাদের জন্য উপযুক্ত পাত্র নির্বাচন করলে অমত না করে তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নেওয়া।

 

হাদীস শরীফে এসেছে, একজন নারী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা তার ভাতিজার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন, (অথচ বিষয়টিতে আমি রাযি নই) তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি মেয়েটির ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলেন। তখন মেয়েটি বলল, আমার পিতার এ কাজকে আমি সমর্থন করলাম। কিন্তু আমি তা এজন্য করেছি যে, যাতে করে মুসলিম নারীরা অবগত হয় যে, (তাদেরকে তাদের অমতে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে)  তাদের পিতাদের কোনো অধিকার নেই।

-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৭৪ (হাদীসটির সনদ সহীহ); হাশিয়াতুশ শিলবী ২/৪৯৫; রদ্দুল মুহতার ৩/২১; ফাতাওয়া আলওয়ালওয়ালিজিয়াহ ১/৩১১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবরাহীম - রূপগঞ্জ

২৮৯৬. প্রশ্ন

এক লোক ঢাকা থাকে। আমার বাড়ির পাশে এক খন্ড জমি ক্রয় করে মাটি ভরাট করেছে। ভবিষ্যতে তার সন্তানের জন্য বাড়ি তৈরি করবে। আমি তাকে প্রস্তাব দিয়েছি যে, এ জমিতে আমি মেহগনির চারা রোপন করে পরিচর্যা করব। অতপর যখন বাড়ি বানাবেন তখন গাছগুলো বিক্রি করে প্রাপ্য টাকা উভয়ে অর্ধেক করে ভাগ করে নিব। আমাদের এ চুক্তি বৈধ হবে কি না জানাবেন।

 

উত্তর

হ্যাঁ, জমির মালিকের সাথে আপনার ঐ চুক্তি বৈধ হবে, তবে এ ক্ষেত্রে কতদিন পর গাছ বিক্রি করা হবে এর একটি সময় নির্দিষ্ট করে নেওয়া আবশ্যক। গাছ বিক্রির সময় নির্ধারণ করা না হলে এ চুক্তি সহীহ হবে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/২৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২০২; শরহুল মাজাল্লা ৪/৩৯৭; রদ্দুল মুহতার ৬/২৮৯

শেয়ার লিংক

আবদুস সবুর - লক্ষ্মীপুর

২৮৯৭. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য আমাকে বারবার অনুরোধ করেছে। সে বলছে, এ বাবদ আমাকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিবে। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে, তিনি সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার। এই চাকুরিই তার আয়ের একমাত্র উৎস। এছাড়া তার অন্য কোনো হালাল উপার্জন নেই। আমি তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়ালে সে তার ঐ আয় থেকেই বেতন দিবে। এখন আমি জেনেশুনে তার ঐ আয় থেকে বেতন নিতে পারব কি না?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি ঐ ব্যক্তির অন্য কোনো হালাল উপার্জন না থাকে তবে তার ছেলেকে পড়ানোর বিনিময়েও তার থেকে বেতন গ্রহণ করা জায়েয হবে না। কেননা ছাত্র পড়ানোর পেশা যদিও বৈধ কিন্তু এক্ষেত্রে বেতন যে টাকা থেকে দেওয়া হচ্ছে তা হারাম হওয়ার বিষয়টি আপনার জানা আছে। সুতরাং জেনেশুনে হারাম অর্থ থেকে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ হবে না।

-আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর ৩/২৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২; ইতরুল হিদায়া ৬৮

শেয়ার লিংক

ওসমান গণি - রূপগঞ্জ

২৮৯৮. প্রশ্ন

কিছু দিন আগে আমার একটি ছেলে হয়েছে। ছেলের বড় মামা দেখতে আসেন। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ভাগিনার জন্য তো কিছুই নিয়ে আসিনি। এই ২,০০০/- টাকা তাকে দিলাম। আপনার পছন্দমত তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিবেন। এখন এ টাকা আমাদের সাংসারিক কাজে খরচ করতে পারব কি না?

 

উত্তর

না, ঐ টাকা সংসারের কাজে খরচ করা যাবে না। কেননা সে টাকা ঐ সন্তানেরই। তার প্রয়োজনেই তা খরচ করতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৪৪০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৯৬

শেয়ার লিংক

এম এম হাসান - আটিয়াতলী, লক্ষ্মীপুর

২৮৯৯. প্রশ্ন

ক) আমি ভবিষ্যতে একজন আইনজীবী (অ্যাডভোকেট) হতে ইচ্ছুক। কিন্তু কয়েকমাস যাবত আমি এ বিষয়ে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছি যে, এই পেশাটি কি হালাল না হরাম? আমাদের দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে আশা করি  অবগত আছেন। এই আইনের বেশীরভাগই (দেওয়ানী, ফৌজদারীসহ অন্যান্য আইন) মানব রচিত এবং ইসলামী আইনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আমার প্রশ্নটি হচ্ছে এই সব বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ও বিবেচনায় রেখে জানতে চাই যে, এই পেশাটি হালাল নাকি হারাম। যদি হালাল হয় তাহলে কীভাবে এই পেশায় নিয়োজিত থেকে অর্থ উপার্জন করা যাথাযথ হালাল হবে।

খ) বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব ইসলামী ব্যাংক রয়েছে সেখানে চাকরি করা জায়েয কি না এবং ঐ সব ব্যাংকে বিশেষ একাউণ্ট যথা-হজ্ব একাউণ্ট করা জায়েয কি না?

উত্তর

ক) দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের প্রচলিত আইনগুলো মানবরচিত একথা সঠিক। তবে এই আইনগুলোর মধ্যে অনেক আইন এমন আছে যা শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। আপনি ঐ সকল মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। আর যে সকল আইন ইসলামী শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলোতে প্র্যাকটিস করা জায়েয হবে না।-ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৩২০

খ) ইসলামী ব্যাংকগুলোর কারবার পর্যবেক্ষণ করে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, তারা নিজেদের বিনিয়োগ ইত্যাদিতে যথাযথ পন্থায় শরীয়ার অনুসরণ করে না। এই ব্যাংকগুলো সম্পর্কে এ অভিযোগটি অনেকেরই রয়েছে। তাই তাকওয়ার উপর চলতে চায় এমন ব্যক্তিদেরকে আমরা ব্যাংকে চাকুরির বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে থাকি।

 

আর হজ্ব করা দরকার নিরঙ্কুশ হালাল সম্পদ খরচ করে। এতে সন্দেহযুক্ত কোনো অর্থ যোগ করা ঠিক নয়।

শেয়ার লিংক

শহীদুল্লাহ ফাহীম - তাড়াইল, কিশোগঞ্জ

২৯০০. প্রশ্ন

আমার বন্ধু সুহাইলের বাসা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। তার সাথে আমার এ মর্মে চুক্তি হয় যে, সে একটি রুম দেবে এবং আমি একটি ফটোকপি মেশিন দিব। এ দিয়ে দুজনে একসাথে ফটোকপির ব্যবসা করব এবং উভয়েই শ্রম দিব। আর লাভ দুজনের মাঝে সমান হারে ভাগ হবে। জানার বিষয় হল, এ ধরনের শরিকানা কারবার কি বৈধ?

 

উত্তর

হ্যাঁ, আপনার বন্ধুর সাথে এভাবে চুক্তি করা সহীহ হবে। ব্যবসায় লাভ হলে চুক্তি অনুযায়ী তা দুজনের মাঝে সমান হারে বণ্টিত হবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৫০৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৬

শেয়ার লিংক

আরিফ - কুড়িগ্রাম

২৯০১. প্রশ্ন

কয়েকজন ছাত্রের অভিভাবক প্রায়ই আমার কাছে টাকা আমানত রাখে। তাদের টাকা অন্য টাকার সাথে মিলে যায়। তাই আমি তাদের থেকে এভাবে রাখার অনুমতি নিয়ে নিই। কয়েকদিন আগে আমার কিছু টাকাসহ তাদের আমানতের টাকাগুলো তালাবদ্ধ আলমারি থেকে হারিয়ে যায়। আমানত হেফাযতে আমি কোনো ত্রুটি করিনি। এখন টাকাগুলো ফেরত দেওয়া কি আমার জন্য জরুরি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যদি সকল মালিকের অনুমতিক্রমেই আমানতের টাকাগুলো একত্রে যথাযথভাবে হেফাযত করে থাকেন, আর সতর্কতার সাথে রাখা সত্ত্বেও তা হারিয়ে যায় তাহালে ঐ টাকাগুলোর জরিমানা আদায় করতে হবে না।

-মাজাল্লা ১৫১; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৭৬; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৭১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু নোমান - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

২৯০২. প্রশ্ন

আমি আমাদের বাড়ির পাশের স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার পথে একটি বাড়ি আছে। সে বাড়িতে একটি আম গাছ রয়েছে। গাছটির নিচে আম পড়লে সেখান থেকে আমরা অনেকেই আম কুড়িয়ে খাই। গাছের মালিক দেখেও নিষেধ করেন না। জানতে চাই, এমতাবস্থায় ঐ গাছের ফল কুড়িয়ে খাওয়া জায়েয হয়েছে কি না?

 

উত্তর

আম কুড়িয়ে নিতে যেহেতু মালিকের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা বা নিষেধ করা হয় না তাই আপনাদের জন্য উক্ত গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল কুড়িয়ে খাওয়া জায়েয হয়েছে। অবশ্য কখনো যদি এ ব্যাপারে মালিকের অসম্মতি বা অসন্তুষ্টি বুঝা যায় তখন পড়ে থাকা ফলও কুড়িয়ে নেওয়া জায়েয হবে না।

-আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫৪; আননাহরুল ফায়েক ৩/২৮৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ খালেদ - মিরপুর, ঢাকা

২৯০৩. প্রশ্ন

আমার খালা একজন এতীম দরিদ্র মেয়েকে নিজের কাছে রেখে লালনপালন করছেন এবং তিনিই তার সব ব্যয়ভার বহন করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। মেয়েটির বয়স এখন ১৫ বছর। মেয়েটির জন্য অনেকেই খালার কাছে টাকা দিয়েছে। সব জমে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা হয়ে গেছে। টাকাগুলো এখন খালার কাছেই আছে। এই মুহূর্তে তাকে টাকাগুলো দিলে সে আজেবাজে খরচ করতে পারে। তাই খালা টাকাগুলো আরো কয়েক বছর পর তার হাতে দিতে চান, যেন সে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়েটির জন্য দেওয়া টাকাগুলো আপনার খালার কাছে আমানত। দাতারা এটাকাগুলো মেয়েটির হাতে না দিয়ে আপনার খালার হাতে এজন্যই দিয়েছে যেন উপযুক্ত সময়ে মেয়েটির তা কাজে আসে। তাই আপনার খালার জন্য উচিত হবে ঐ টাকাগুলো এখনই তার হাতে না দিয়ে উপযুক্ত সময়ে তাঁকে দিয়ে দেওয়া। যেন সে যথাসময়ে টাকাগুলো কাজে লাগাতে পারে।

-সুরা নিসা : ৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৬৩; আহকামুল কুরআন, থানভী ২/১১৬; আহকামুল কুরআন, কুরতুবী ৫/২৬; রূহুল মাআনী ৪/২০৬; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৬৮২ ���

শেয়ার লিংক

আবুল কালাম - নেত্রকোনা

২৯০৪. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক ওয়ায়েয  বললেন, কোনো ব্যক্তি যদি মসজিদে প্রবেশ করে নামাযের জন্য অপেক্ষা করা অবস্থায় এ দুআটি পড়ে তাহলে তার অপেক্ষার সময়টি নামাযের মধ্যে গণ্য হবে। দুআটি হল :

أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

 কিন্তু ইতিপূর্বে বিভিন্ন আলেমের মুখ থেকে শুনেছি যে, মসজিদে শুধু নামাযের জন্য অপেক্ষা করলেই অপেক্ষার সময়টি নামাযের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়। সেখানে তো কোনো দুআ পড়ার কথা নেই।

বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ওয়ায়েযের কথাটি ঠিক নয়। বরং এ ব্যাপারে আপনি আলেমগণ থেকে যা শুনেছেন তাই সঠিক। অর্থাৎ মসজিদে এসে বেহুদা কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে নামাযের জন্য অপেক্ষা করলেই নামাযের সওয়াব হতে থাকে।  এর জন্য উক্ত দুআ পাঠ করার শর্ত নেই। কেননা হাদীস শরীফে কোনো প্রকার দুআ পড়ার শর্ত ছাড়াই ঐ ফযীলতের কথা এসেছে। যেমন : সাহল বিন সাদ রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি মসজিদে এসে নামাযের অপেক্ষা করবে (ঐ সময়টি) সে নামাযে আছে বলে গণ্য হবে।-সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৭৩৩

আর শুধু এ অপেক্ষার দ্বারাই উক্ত ফযীলত লাভ হলেও এর অর্থ এ নয় যে, ঐ সময় কোন যিকির-আযকার বা দুআ-দরূদ পড়া যাবে না; বরং চুপ-চাপ বসে না থেকে যিকির-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল পড়া উচিত। বিশেষত সুন্নাত আদায়ের পর হাদীস শরীফে যে সকল দুআ-দরূদ পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে তা পড়া উত্তম হবে। যেমন : একটি বর্ণনায় এসেছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত আদায়ের পর নিম্নোক্ত দুআটি তিনবার পড়তেন। সম্ভব হলে তখন সেটি পড়বেন দুআটি এই :

اَللّهُمَّ رَبَّ جِبْرِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَافِيْلَ وَمُحَمَّدٍ صَلّىٰ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.

মুস্তাদরাক হাকেম ৬৬৬৯

 

প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নে উল্লেখিত দুআটি একটি মাসনুন দুআ, যা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় পড়তেন। আর এ দুআ পড়ার ফযীলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি এটি পাঠ করবে শয়তান তার ব্যাপারে ঘোষণা দেয় যে, এ ব্যক্তি গোটা দিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৬৬

শেয়ার লিংক

আমীনুল ইসলাম - আড়াইহাজার

২৯০৫. প্রশ্ন

অনেককেই বলতে শুনি, বিদায়ের সময় মুসাফাহা করা ঠিক নয়। কেননা তা প্রমাণিত নয়। কথাটি কতটুকু সত্য? দলিলপ্রমাণসহ জানতে চাই।

উত্তর

কথাটি ঠিক নয়। বিদায়ের সময় মুসাফাহা করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কাযাআ রাহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর নিকট ছিলাম। যখন সেখান থেকে ফিরে আসবো তখন তিনি আমাকে বললেন, থামো, আমি তোমাকে এভাবে বিদায় দিবো যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিদায় দিয়েছেন। তখন তিনি আমার হাত ধরে মুসাফাহা করলেন এরপর বললেন,

أًسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِمَ عَمَلِكَ

 (আসসুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদীস : ১০৩৪৭)

আর হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. এর প্রমাণ হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীসটিও উল্লেখ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাউকে বিদায় দিতেন তখন তার হাত ধরতেন। অতপর ঐ ব্যক্তি হাত টেনে না নেওয়া পর্যন্ত তিনি তার হাত ছাড়তেন না।

(জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৪৪২) মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৮৪, হাদীস : ১৭০৯২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৪৫১

শেয়ার লিংক