হাসান - সিলেট

৩৮০৩. প্রশ্ন

আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান-মাহফিল ইত্যাদি কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু করে থাকি। কুরআন আল্লাহ তাআলার কালাম ও তা তিলাওয়াত করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। তাই সওয়াব ও বরকতের উদ্দেশ্যেই আমরা কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানাদি শুরু করে থাকি। কিন্তু আরবের কোনো কোনো আলেম বলেন, অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা নাকি ঠিক নয়। কেউ কেউ এটাকে বিদআতও বলেন। তাদের বক্তব্য হল, অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াতের কোনো প্রমাণ নেই। তাই তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। তাদের এ বক্তব্য কি সঠিক? এসব ক্ষেত্রে কুরআন তিলাওয়াতের কী হুকুম? দলীল-প্রমাণসহ জানতে চাই।


উত্তর

বৈধ কোনো অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েয এবং বরকতপূর্ণ কাজ। তা সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

এক হাদীসে আছেআবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন,

أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم إذا جلسوا كان حديثهم - يعني الفقه - إلا أن يقرأ رجل سورة أو يأمر رجلا بقراءة سورة.

রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ যখন পরস্পর একত্রে বসতেন (এবং তারা ফিকহ ও দ্বীনী বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন) তখন তারা কথাবার্তা শুরুই করতেন না যতক্ষণ না তাদের মাঝে কেউ কোনো সূরা তিলাওয়াত করতেনঅথবা তাদের মাঝে কাউকে আদেশ করতেন কুরআনের কোনো সূরা পাঠ করার জন্য। -মুসতাদরাকে হাকেমহাদীস ৩২২আততাবাকাতুল কুবরাইবনে সাআদ ২/৩৭৪আলমাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরাবায়হাকীহাদীস ৪১৯

খতীব বাগদাদী রাহ. আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে’ কিতাবে হাদীস ইমলার মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনহাদীস ইমলা শুরু করার আগে উচিত হলমজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা। কেননামুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেন ... আবু নাযরা রা. বলেন,

كان أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا اجتمعوا تذاكروا العلم وقرءوا سورة.

রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ পরস্পর যখন একত্রিত হতেন তখন তাঁরা ইলমের মুযাকারা করতেন। এবং কুরআনের কোনো সূরা তিলাওয়াত তরতেন। -আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে ২/৬৪

হাফিয সামআনি রাহ. ইবনে কাসীর রাহ. ইমাম নববী রাহ. ও হাফিয সাখাবী রাহ. প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ থেকেও অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে এবং তাঁরা এর সপক্ষে উক্ত হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। -আদাবুল ইমলা ওয়াল ইসতেমলাসামআনী ১/৪৮আলবা-ইসুল হাসীসইবনে কাসীর ১/১৫৩ফাতহুল মুগীস ৩/২৫৪তাদরীবুর রাবী ২/৫৭৩

আর সাহাবায়ে কেরামের আমলও শরীয়তের দলীল। যে ব্যপারে সাহাবায়ে কেরামের আমল প্রমাণিত আছে তা কখনো বিদআত হতে পারে না।

সুতরাং অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিলের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও সালাফের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। এটিকে ভুল বা বিদআত বলা খুবই অন্যায় কাজ।

প্রকাশ থাকে যেকোনো বৈধ অনুষ্ঠান বা মাহফিলে কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে তা অবশ্যই কুরআন মাজীদের আদব রক্ষা করেই করতে হবে। এবং নি¤œাক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

ক) মাইক পরীক্ষার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা কুরআনের আদব পরিপন্থী।

খ) মজলিস এলোমেলো থাকলে মজলিস জমানোর উদ্দেশ্যে কেরাত পড়া হয়। এটাও ঠিক নয়।

গ) শ্রোতাগণ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং তারা তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতে প্রস্তুত থাকে না। তখন তিলাওয়াত করা হয়। এতে মনোযোগসহ শোনা হয় না। তাই এটাও ঠিক নয়।

ঘ) যে অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য হবে এ জাতীয় অনুষ্ঠান তিলাওয়াত দ্বারা শুরু করাও অন্যায়।

ঙ) যেসব অনুষ্ঠানে পর্দা পুশিদার ব্যবস্থা নেই কিংবা শরীয়ত গর্হিত বিভিন্ন জিনিস বা কর্মকা- বিদ্যমান সে সব অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করাও ঠিক নয়। এতে কুরআন কারীমের অসম্মান হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

শেয়ার লিংক

আযহার উদ্দীন - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৮০৪. প্রশ্ন

চিঠি বা মেইলে যদি কেউ সালাম লিখে পাঠায় তাহলে আমি উত্তর মনে মনে দিব, নাকি আমাকে সালামের উত্তর লিখে পাঠাতে হবে?


উত্তর

লিখিত সালামের জবাব লিখেও দেওয়া যায় আবার মুখে উচ্চারণ করেও দেওয়া যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি চাইলে জবাব লিখেও পাঠাতে পারেন অথবা নিজে নিজে মুখে জবাব দিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মৌখিক জবাব তাকে শুনিয়ে দেওয়া জরুরি নয় এবং সালামের জবাবের জন্য তাকে পাল্টা উত্তর লেখা কিংবা ফোন করে জানানো কোনোটিই জরুরি নয়। বরং একাকী মুখে জবাব দিয়ে দিলেই হবে।

-ফয়যুল কাদীর ৪/৩১; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবরাহীম - ভূজপুর, চট্টগ্রাম

৩৮০৫. প্রশ্ন

নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা, লেখক : মাওলানা বেলায়েত হুসাইন। বইটিতে একটি হাদীস পেয়েছি-

ما أسفل من الكعبين من الإزار في النار .

সেখানে অর্থ লেখা হয়েছে, টাখনুর নিচের যেই অংশ পায়জামা বা লুঙ্গি দ্বারা ঢাকা থাকে তাহা দোযখে যাইবে।

জানার বিষয় হল, হাদীসটিতে কি শুধু পায়জামা ও লুুঙ্গি উদ্দেশ্য? কেউ যদি এমন লম্বা জুব্বা পরিধান করে যা টাখনুর নিচে গিয়ে পড়ে। তাহলে কি এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে? হাদীসটির ব্যাখ্যা বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।


উত্তর

হাদীসের উক্ত বিধান এবং ধমকিবাণী শুধু লুঙ্গি বা পায়জামার সাথে সীমাবদ্ধ নয়বরং জুব্বা বা যেকোনো পোশাক টাখনুর নিচে পরিধান করলেই তা এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই ব্যাপক হুকুম অন্যান্য হাদীস-আসার দ্বারা প্রমাণিত।

হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

الإسبال في الإزار والقميص والعمامة، من جر منها شيئا خيلاء لم ينظر الله إليه يوم القيامة.

লুঙ্গিজামাপাগড়ি এর কোনোটাকে যে অহংকারবশত (টাখনুর নিচে) ঝুলিয়ে পড়বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস ২৫৩৩৭

অপর এক বর্ণনায় এসেছেআবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,

ما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم في الإزار، فهو في القميص.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি/পায়জামার সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন তা জামার ব্যাপারেও প্রযোজ্য। -সুনানে আবু দাউদহাদীস ৪০৯২ 

প্রখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন,

جر القميص والإزار سواء.

জামা ঝুলিয়ে পড়া আর লুঙ্গি ঝুলিয়ে পড়া একই সমান।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৫৩৩৮

শেয়ার লিংক