মুহাম্মাদ মুতাররিফ - চিরিরবন্দর, দিনাজপুর

৫১২৯. প্রশ্ন

সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি জন্মসূত্রে এই এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। আমাদের এই গ্রামে (দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ৯নং ভিয়াইল ইউনিয়নের জয়পুর গ্রাম) একটি ফাজিল মাদরাসা ও মাদরাসা মাঠের সাথেই এলাকার কবরস্থান অবস্থিত। এই কবরস্থানের সাথেই একটি মাজার ও তাঁর কয়েক হাত সামনেই একটি বিশেষ পুকুর অবস্থিত।

মাদরাসা মাঠেই প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ১ম সপ্তাহে (নির্র্ধারিত) দিনব্যাপি ওয়াজ-মাহফিল ও ঈসালে সাওয়াব হয়। উল্লিখিত দুই দিন মাজার ও পুকুরের আসল কার্যক্রম চলে। আর সারা বছরই মানুষের আসা-যাওয়ার মাধ্যমে তা অব্যাহত থাকে।

মাজারের দানবক্সে মানুষ দান করে এবং পুকুরের পানি পান করে এবং বোতলে করে নিয়ে যায়। মানুষের ধারণা, এই মাজারে দান করলে ও পুকুরের পানি পান করলে তাঁদের সমস্যা সমাধান, অসুস্থতা দূর হবে এবং সন্তান লাভ হবে ইত্যাদি। এখানে প্রচুর মুরগি, ছাগল, চাল ও টাকা মানুষ দান ও মান্নত করে। এই মাজার ও পুকুরে নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, মুসলিম-অমুসলিম সকলেই আসে। হিন্দুরা তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী হাত নমস্কার করে, দান করে ও পানি নিয়ে যায়। আর মুসলিমরা হাত তুলে দুআ করে ও শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ইত্যাদি।

এই মাজারের উপরে একটা বিশাল গাছ আছে ও তাঁর পাশেই আরেকটা বিশাল গাছ আছে। এই গাছ দুটির ব্যাপারেও মানুষের মাঝে ভয় কাজ করে। বৃদ্ধ লোকেরা এই মাজার ও পুকুরের আশ্চর্য ঘটনাবলি বর্ণনা করে। এখানে বর্তমানেও কোনো স্বাভাবিক কাজে বিঘœতা ঘটলে এই মাজারের কারামত বলে মনে করে ও ভয় করে।

এখন আমার বিশেষ জানার  বিষয় হল,

১. যে কোনো প্রয়োজনে মাজারে দান, দুআ ও মান্নত করার হুকুম কী?

২. নিয়ত অনুযায়ী পুকুরের পানি পান করলে উপকার হয় বা সমস্যা দূর হয়- এরকম বিশ্বাসের হুকুম কী?

এবং তা যদি কেউ আল্লাহ্র ওয়াস্তেই করে। (আমাদের এলাকার লোকজন বিশ্বাস করে আল্লাহ্র ওয়াস্তে করলে সমস্যা নেই)

আমাদের এলাকার লোকজন ইসলাম প্রিয় ও আলেম-উলামাদের ভালোবাসে তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে তাদের ধারণা স্পষ্ট নয়। আমার ধারণা আপনাদের দলীলভিত্তিক জবাব  পেলে বিষয়টি এলাকার লোকজন ও কমিটি অবশ্যই মানবে।

অতএব এই কার্যক্রমের উপর বিবেচনা করে শরীয়তের দৃষ্টিতে এর হুকুম ও আমাদের করণীয় বলবেন কি।

 

উত্তর

১. যে কোনো মাজারওয়ালা বা কবরবাসী, এমনকি ওলী-বুযুর্গ হয়ে থাকলেও তার কাছে কিছু চাওয়া শিরক। কেননা, দুআ ও সাহায্য প্রার্থনা শুধু আল্লাহ তাআলার কাছেই করা যায়। দুআ একটি ইবাদত। আর সমস্ত ইবাদত আল্লাহ্র জন্য নির্ধারিত। সূরা ফাতিহায় আছে-

اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.

আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য চাই। [সূরা ফাতেহা (১) : ৪]

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ.

আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন, তোমরা একমাত্র তারই ইবাদত করবে। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৪০

সূরা রাদে (আয়াত : ১৪) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ  وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.

এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্য প্রার্থনা সেটিই, যা আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য যে কারো কাছেই প্রার্থনা করা হোক তা বৃথা এবং তা কাফেরদেরই কাজ।

হাদীস শরীফে  এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ.

দুআই ইবাদত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করেন-

وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ اِنَّ الَّذِیْنَ یَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِیْ سَیَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیْنَ.

তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দুআ কর, আমি তোমাদের দুআ কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ হবে তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সূরা মুমিন (৪০) : ৬০] -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৬৯

মাজারে গিয়ে দুআ করার ব্যাপারে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. বলেন-

كل من ذهب إلى بلدة أجمير أو قبر سالار مسعود، أو ما ضاهاها لأجل حاجة يطلبها فإنه آثم إثما أكبر من القتل والزنا، أليس مثله إلا مثل من كان يعبد المصنوعات أو مثل من كان يعبد اللات والعزى.

যারা আজমীর, সালার মাসউদ প্রমুখ বুযুর্গদের মাজারে গিয়ে স্বীয় উদ্দেশ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করে তারা হত্যা ও ব্যভিচারের চাইতে জঘন্য পাপ করে। তাদের উপমা হল ঐ মুশরিকদের ন্যায়, যারা স্বহস্তে বানানো মূর্তির পূজা করে এবং লাত উযযার পূজা করে। -তাফহীমাতে ইলাহিয়্যাহ ২/৪৯

অনুরূপভাবে মান্নতও একমাত্র আল্লাহ তাআলার নামেই করা যায়। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারো নামে মান্নত করা হারাম ও শিরক। প্রসিদ্ধ ফিকহগ্রন্থ আলবাহরুর রায়েকে আছে-

...فهذا النذر باطل بالإجماع لوجوه منها أنه نذر لمخلوق والنذر للمخلوق لا يجوز؛ لأنه عبادة والعبادة لا تكون للمخلوق.

মাজার ও পীরদের নামে মান্নত করা সকলের ঐক্যমতে বাতিল। এর একাধিক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, এ মান্নত মাখলুকের নামে হচ্ছে। আর  কোনো মাখলুকের জন্য মান্নত করা জায়েয নেই। কেননা, মান্নত করা একটি ইবাদত। আর ইবাদত  কোনো মাখলুকের জন্য হতে পারে না। -আল বাহরুর রায়েক ২/২৯৮

আর মাজার ও কবর দান-সদকার জায়গা নয়। সেখানে দান-সদকার টাকা দিয়ে বহুবিধ শিরক এবং বিদআত কাজ সংঘঠিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে মাজারে দান করার মানে এসকল গুনাহে সহযোগিতা করা। আর দানের উদ্দেশ্য যদি মাজারওয়ালার নৈকট্য অর্জন বা কোন উপকার লাভ করা হয় তবে তো এভাবে দান করাটাই শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তাই মাজারে টাকা পয়সা দেওয়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

২. কোনো পুকুরের ক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত বিশ্বাস রাখাও শিরকের শামীল। এটি সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভ্রান্ত ধারণা। মতলবী লোকেরা এসব শিরকী কর্মকাÐ চালু করেছে। তাই এমন বিশ্বাস ও কর্ম থেকে বিরত থাকা ফরয। এমনকি উক্ত বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে পানি পান করাও জায়েয হবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা ঐ পুকুরের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলে দেননি। কুরআন-হাদীসের কোথাও বিশেষ কোনো পুকুরের ব্যাপারে আলাদা বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ নেই। এ ধরনের শিরকী কর্মকাÐের সাথে আল্লাহ্র নাম ব্যবহার করা আরো মারাত্মক গুনাহ। তাই মুসলমানদের এসব কিছু থেকে বিরত থাকা ফরয। -রুহুল মাআনী ১৭/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯; ইমদাদুল আহকাম ১/১২৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রবিউল ইসলাম - চাঁদপুর, চট্টগ্রাম

৫১৩০. প্রশ্ন

আমি একদিন ফজরের নামায পড়তে পারি নাই। সূর্য উদয় হলে পড়ে নিব ভাবছিলাম। কিন্তু আমার মনে ছিল না। তারপর যোহরের নামায পড়ার পর আমি ফজরের কাযা নামায আদায় করি। এখন কি আমার যোহরের ফরয নামায বাতিল হয়ে যাবে?

বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমি মালা-বুদ্দা মিনহু কিতাবে সালাতের অধ্যায়ে পেয়েছি যে, কোনো ব্যক্তির এক ওয়াক্ত নামায তার জিম্মা থেকে ছুটে গেল পরবর্তী ওয়াক্তের পরে তা কাযা আদায় করলে পূর্ববর্তী নামাযের ফরযিয়াত বাতিল হয়ে যাবে। (মালা-বুদ্দা মিনহু, সালাত অধ্যায়)

অতএব, হুজুরের নিকট আকুল আবেদন এই যে, আমার উক্ত বিষয়ের ব্যাখ্যাটি মাসিক আলকাউসারেপ্রকাশ করলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

পুনশ্চ : আমার অনেক ওয়াক্তের নামায কাযা আছে।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার যোহর নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে। প্রশ্নে যে মাসআলার কথা আপনি উল্লেখ করেছেন তা সাহিবে তারতীব (যার কাযা নামাযের সংখ্যা ছয়ের কম) ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্তের সাথে প্রযোজ্য। আর আপনার যিম্মায় যেহেতু ছয় ওয়াক্তের বেশি নামায কাযা আছে তাই এই মাসআলা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৪৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৪৫; শরহুর মুনয়া পৃ. ৫২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১

শেয়ার লিংক

শরীফ মুহাম্মাদ তোফাজ্জল হোসেন - ঢাকা

৫১৩১. প্রশ্ন

১) নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে হাদীসে  নিষেধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হল এই সামনের দূরত্ব কতটুকু বা সামনের কতটুকু দূরত্ব দিয়ে নামাযীকে অতিক্রম করা যাবে।

২) নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় সুতরার ব্যবস্থা করে অতিক্রম করা যাবে কি না। যদি সুতরার ব্যবস্থা করে অতিক্রম করা যায়, তবে কোন ধরনের জিনিষ দ্বারা করা যাবে। যেমন কাঠের বা প্লাস্টিকের বিশেষ ধরনের স্ট্যান্ড, চেয়ার, টুল ইত্যাদি।

৩) একজন সামনের কাতারের নামাযী, পিছনের কাতারের মুসল্লির নামায শেষ হওয়ার পূর্বেই উঠে যেতে চাইলে তার করণীয় কী।

উক্ত বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

১) নামাযীর সামনে যদি সুতরা না থাকে এবং মসজিদ বেশ বড় ও অনেক প্রশস্ত হয় তাহলে নামাযী ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। তবে বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে এভাবে অতিক্রম না করাই উত্তম। -আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪

২) নামাযীর সামনে সুতরার ব্যবস্থা করে অতিক্রম করা যাবে। আর এক হাত বা তার চেয়ে দীর্ঘ কোনো বস্তু যেমন, চেয়ার, টুল ও কাঠের স্ট্যান্ড ইত্যাদি সুতরা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। নামাযীর সামনে তা দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৮৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১০; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৭

৩) প্রয়োজন থাকলে নামাযীর সামনে উপস্থিত ব্যক্তি ডানে বা বামে সরে যেতে পারবে। কেননা সামনে থেকে সরে যাওয়া অতিক্রমের হুকুমে নয়। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন-

لَقَدْ رَأَيْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي، وَإِنِّي لَبَيْنَهُ وَبَيْنَ القِبْلَةِ، وَأَنَا مُضْطَجِعَةٌ عَلَى السّرِيرِ، فَتَكُونُ لِي الحَاجَةُ، فَأَكْرَهُ أَنْ أَسْتَقْبِلَهُ، فَأَنْسَلّ انْسِلاَلًا.

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামায আদায় করছেন আর আমি তাঁর  ও কিবলার মাঝে খাটে শুয়ে থাকতাম। কোনো কোনো সময় আমার বের হবার দরকার হত। কিন্তু আমি তার সামনে দিয়ে যেতে অপছন্দ করতাম। তাই আমি চুপে চুপে সরে পড়তাম। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১১)

অবশ্য প্রয়োজন না থাকলে এক্ষেত্রে অপেক্ষা করাই উত্তম। বিশেষ করে যখন সরে গেলে অন্য মানুষদের নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার আশংকা থাকে তখন বিনা প্রয়োজনে না সরাই উচিত। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৬

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - সিলেট

৫১৩২. প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মাসিক আলকাউসারের সেপ্টেম্বর ২০১৮ ঈ. সংখ্যায় মুহিউদ্দীন ফারূকী সাহেবের লেখায় আজানের দুআর শেষে যুক্ত করা হয়েছে, إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ সুনানে কুবরার বর্ণনায় অংশটি যুক্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, বর্ণনাটি شاذ বা অগ্রহণযোগ্য। এর সত্যতা কতটুকু জানতে চাই।

উত্তর

বাইহাকী রাহ.-এর সুনানে কুবরার বর্ণনায় আযানের পরের দুআয় إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ এই বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে, যা আলী ইবনে আইয়্যাশ থেকে মুহাম্মাদ ইবনে আওফ আলহিমসী বর্ণনা করেন। মুহাম্মাদ ইবনে আওফ আলহিমসী একজন প্রসিদ্ধ নির্ভরযোগ্য রাবী। ইমাম নাসায়ী ও মাসলামা রাহ. বলেন, তিনি ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য)। খল্লাল রাহ. বলেন, তাঁর যামানায় তিনি ইমাম ও হাফেযে হাদীস ছিলেন, ইলম ও মারেফাতে তাঁর অগ্রগণ্যতা সুপ্রসিদ্ধ ছিল। ২৭৩ হিজরীতে একবার আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর নিকট তাঁর আলোচনা করা হলে তিনি বলেন, চল্লিশ বছর ধরে শাম এলাকায় মুহাম্মাদ ইবনে আওফের মত কেউ ছিল না। (দেখুন, তাহযীবুল কামাল, ১৭/১২৮)

তার একটি বিশেষত্ব ছিল, তিনি হিমসবাসীর (যা শামের একটি শহর) হাদীস সম্পর্কে অধিক অবগত ছিলেন।

ইবনে আদী রাহ. বলেন, শামের শুদ্ধ-অশুদ্ধ হাদীস সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত। আহমদ ইবনে উমায়ের ইবনে জাওছা (যার সম্পর্কে ইবনে আসাকির রাহ. বলেন, তিনি তার যামানায় শামের শায়েখ ছিলেন) মুহাম্মাদ ইবনে আওফের উপর নির্ভর করতেন এবং তাকে হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, বিশেষ করে হিমসের হাদীস সম্পর্কে। (আলকামিল, মুকাদ্দিমা পৃ. ১৩৪)

একবার ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন রাহ.-এর কাছে শামবাসীর একটি হাদীস বর্ণনা করা হলে তিনি বললেন, এই বর্ণনাটি এভাবে শুদ্ধ নয়। তখন মজলিসের একজন বললেন, ইবনে আওফ হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করে থাকেন। ইবনে মায়ীন রাহ. বললেন, ইবনে আওফ যদি এভাবে বর্ণনা করে থাকেন (তাহলে এভাবেই ঠিক আছে) কারণ ইবনে আওফ তাঁর এলাকার হাদীস সম্পর্কে অধিক অবগত। (তাহযীবুল কামাল ১৭/১২৮)

আর সহীহ বুখারীর কোনো কোনো নুসখায় إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ (এই অতিরিক্ত অংশটি) পাওয়া যায়। (দেখুন, আল মাকাসিদুল হাসানাহ ৪৮৪, ইরশাদুস সারী ২/৯, ফয়যুল বারী ২/২১৪)

তাই কাশ্মীরী রাহ. বলেন, إِنّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ অংশটি বাইহাকীতে শক্তিশালী সনদে বর্ণিত হয়েছে। (আলআরফুয শাযী ১/১১২)

এছাড়া বিভিন্ন হাদীস বিশারদগণ যেমন, হাফেয ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে ২/৯৫; আইনী রাহ. উমদাতুল কারীতে ৫/১২৩; ইবনে রাসলান আবু দাউদের ভাষ্যগ্রন্থে ৩/৮৯২; সুয়ূতী রাহ. নাসায়ীর ভাষ্যগ্রন্থে ২/২৭; মোল্লা আলী কারী রাহ. মিরকাতুল মাফাতিহে ২/৩৩১; আরো অনেকে তাদের কিতাবে আযানের পরের দুআ উল্লেখ করার সময় সুনানে কুবরার এই অতিরিক্ত অংশটুকু উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই একে شاذ (শায) বলেননি। তাই এই অংশটিকে শায বলা ঠিক নয়।

শেয়ার লিংক

আফনান - মুহাম্মাদপুর

৫১৩৩. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে এশার নামায পড়ার সময় কোনো কারণে প্রচÐ হাসি আসে। হাসি চেপে রাখতে গিয়ে হাল্কা একটু আওয়ায হয়। আমি মনে করছিলাম যে, আওয়াজটি শুধু আমি নিজেই শুনেছি কিন্তু পাশের ভাই বলে উঠলেন, যান ওযু করে আসেন, আমি আপনার হাসির আওয়াজ শুনেছি। তখন আমি ওযু করে পুনরায় নামায পড়ি। জানতে চাচ্ছি, এতটুকু হাসির কারণে ওযু করা ঠিক হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যদি আপনার হাসির শব্দ শুধু পাশের ব্যক্তিই শুনতে পেয়ে থাকে এবং তা এত জোরে না হয়ে থাকে যে, পিছনের কোনো মুসল্লি শুনতে পায়, তাহলে আপনার জন্য শুধু নামায পুনরায় পড়ে নেয়াই যথেষ্ট ছিল। কারণ যে হাসির শব্দ পিছনের কাতারের মুসল্লি শুনতে পায় না তা দ্বারা ওযু নষ্ট হয় না; তবে নামায নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য আরো উঁচু শব্দে হেসে থাকলে আপনার ওযু নষ্ট হয়ে গেছে। এমনটি হয়ে থাকলে আপনার ওযু করা ঠিক হয়েছে। এ তো গেল ওযু-নামায নষ্ট হওয়া-না হওয়ার বিষয়। কিন্তু নামাযে হাসা যে অন্যায় কাজ তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। নামায খুশু-খুযু ও একাগ্রতার সাথে পড়া উচিত। নামাযের মধ্যে হাসা গাফলতের পরিচয়।

-কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ১৩৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১০; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২১৩; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৫

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ ফাইয়ায - বাগেরহাট

৫১৩৪. প্রশ্ন

গতকাল মাগরিবের নামাযে মসজিদে যেতে আমার দেরি হয়ে যায়। আমি ইমামকে তৃতীয় রাকাতে পাই। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর আমি ছুটে যাওয়া দুই রাকাত নামায পড়তে দাঁড়াই। অন্য মুসল্লিরাও সুন্নত পড়তে দাঁড়ায়। আমি সুন্নত পড়ার মত দুই রাকাত পড়ি। আমার প্রথম রাকাতের পর বৈঠক করার কথা ভুলে যাই। সাহু-সিজাদও করিনি। এরপর সুন্নাত পড়ার সময় বিষয়টি মনে পড়ে। আমার উক্ত নামায কি হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এক রাকাতের পর বসাই নিয়ম ছিল। কিন্তু না বসে সরাসরি দুরাকাত পড়ে ফেললেও নামায আদায় হয়ে যায়। কেউ ভুলে এমনটি করলে তার উপর সাহু-সিজদা ওয়াজিব হবে না। তাই আপনার উক্ত নামায সহীহ হয়ে গেছে। হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أَدْرَكَ مَسْرُوقٌ وَجُنْدُبٌ رَكْعَةً مِنَ الْمَغْرِبِ، فَلَمَّا سَلَّمَ الإِمَام قَامَ مَسْرُوقٌ فَأَضَافَ إلَيْهَا رَكْعَةً ثُمَّ جَلَسَ، وَقَامَ جُنْدُبٌ فِيهَما جَمِيعًا ثُمَّ جَلَسَ فِي آخِرِهَا، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِعَبْدِ اللهِ، فَقَالَ : كِلاَهُمَا قَدْ أَحْسَنَ وَأَفْعَلُ كَمَا فَعَلَ مَسْرُوقٌ أَحَبُّ إلَيَّ.

হযরত জুনদুব ও মাসরুক রাহ. একদিন মাগরিবের নামাযে ইমামের সাথে এক রাকাত পান। ইমামের সালামের পর মাসরুক রাহ. দাঁড়িয়ে এক রাকাত পড়ার পর তাশাহহুদের জন্য বসেন। কিন্তু জুনদুব রাহ. তখন বসেননি; বরং তিনি নামাযের শেষে তাশাহহুদের জন্য বসেন।  এরপর তারা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, তোমাদের উভয়ের নামায হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে মাসরুক যেমনটি করেছে আমি এমনটি করাই পছন্দ করি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং ৮৫৬৯)

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহম্মাদ ১/১৫০; কিতাবুল আছল ১/১৬৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৭

শেয়ার লিংক

জাওয়াদ সাকী - লালমোহন, ভোলা

৫১৩৫. প্রশ্ন

লঞ্চে করে লালমোহন থেকে ঢাকায় আসার পথে খালের মাঝে অতিরিক্ত বাঁক থাকায় আমরা আসরের নামায বিলম্ব করে সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে আরম্ভ করি। নামাযের মাঝে হঠাৎ লঞ্চটি ঘুরতে শুরু করে। তখন ইমাম সাহেবও ঘুরতে থাকেন। আর ইমাম সাহেবের দেখাদেখি মুসল্লিরাও ঘুরতে থাকে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ইমাম সাহেব ঘুরার সাথে সাথে ডান দিকে ঘেষে এক-দু পা করে হাঁটতেও থাকেন। বিষয়টি আমার কাছে অদ্ভুত লাগায় পাশের ভাইকে জিজ্ঞেস করলে সে এ বলে উত্তর দেয় যে, হয়ত কিবলা ঠিক রাখার জন্য সকলে ঘুরতে থাকে। অন্যথায় পূর্বদিকে ফিরে নামায আদায় করা হত। আর ইমাম সাহেব যদি তখন না হাটতেন তাহলে মুসল্লিদের পিছনে চলে যেতেন। তাই হয়ত তিনিও হেঁটেছেন। হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমাদের উক্ত নামায আদায় হয়েছে কি?

উত্তর

লঞ্চ বা স্টীমারের ঘুরে যাওয়ার কারণে যদি নামাযীর কিবলাও ঘুরে যায় তাহলে কিবলা ঠিক রাখার জন্য তাকেও ঘুরে যেতে হবে। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় কিবলা ঠিক রাখার জন্য আপনাদের ঘুরে যাওয়া ঠিক হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে এক-দু পা করে হাঁটারও অবকাশ আছে। তাই উক্ত ইমামের হেঁটে মুসল্লিদের সামনে যাওয়া দূষণীয় হয়নি।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৬৬৪০; কিতাবুল আছল ১/২৬৯; আলহাবিল কুদসী ১/২২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/১০২

শেয়ার লিংক

আবু যর বিন মুশফিক - উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ

৫১৩৬. প্রশ্ন

গত রমযানে তাবলীগের এক সফরে আমি ইন্ডিয়া ছিলাম। রোখের এক মসজিদে আমরা দেখলাম, একজন বৃদ্ধ হাফেজ হুইল চেয়ারে বসে তারাবীহ পড়াচ্ছেন। আর মুক্তাদীগণ সকলেই তার পিছনে দাঁড়িয়ে তারাবীহ পড়ছেন। এমন অবস্থার সম্মুখীন আমরা প্রথম হলাম। তাই কী করব-  এ নিয়ে আমরা বেশ সংশয়ে ছিলাম। এবং শেষ পর্যন্ত আমরাও এলাকার ভাইদের মতই তার পিছনে তারাবীহ আদায় করি।

এখন মুহতারামের কাছে আমি জানতে চাচ্ছি যে, এভাবে হুইল চেয়ারে বসে ইমামতি করা ও তার পিছনে ইক্তিদা করা কি জায়েয আছে? এবং আমাদের উক্ত দিনগুলির তারাবীহ কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

চেয়ারে বসে নামায আদায়কারী ব্যক্তি যেহেতু রুকু-সিজদা ইশারায় করেন। তাই তার জন্য ক্বিয়াম ও রুকু-সিজদায় সক্ষম ব্যক্তিদের ইমামতি করা জায়েয নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মাজুর ব্যক্তির পিছনে আপনাদের ইক্তিদা সহীহ হয়নি। তবে যেহেতু তারাবীহের কাযা নেই তাই এখন ঐ নামাযগুলো দোহরাতে হবে না।

-আলজামেউস সাগীর পৃ. ৭৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৭৯

শেয়ার লিংক

শামসুল আলম - নোয়াখালী

৫১৩৭. প্রশ্ন

আমি গত ঈদুল আযহার দিন আসরের নামাযে মাসবুক হই। ইমাম সাহেব সালাম  ফেরানোর পর সবাই যখন তাকবীরে তাশরীক বলে তখন আমারও তাকবীরের কথা স্মরণ হয়। কিন্তু অবশিষ্ট নামায শেষ করে সালাম ফেরানোর পর তাকবীর বলতে ভুলে যাই। বাসায় যাওয়ার পর তাকবীরের কথা স্মরণ হলে তৎক্ষণাৎ একবার তাকবীর বলে নেই। জানার বিষয় হল, আমার ঐ ওয়াক্তের তাকবীর কি আদায় হয়েছে? না হয়ে থাকলে এখন করণীয় কী?

উত্তর

ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর কোনো প্রকার কথাবার্তা বলার আগেই তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। তাই অবশিষ্ট নামায শেষ করে সালাম ফেরানোর পর আপনার জন্য তাকবীর বলা আবশ্যক ছিল। কিন্তু আপনি যেহেতু তাকবীরের কথা ভুলে গিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেছেন তাই বাসায় গিয়ে তা আর পড়ার সময় থাকেনি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৪১; ফাতহুল কাদীর ২/৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৯৪

শেয়ার লিংক

শাকিল আহমাদ - সাদুল্লাহপুর, পাবনা

৫১৩৮. প্রশ্ন

মুহতারাম, আমাদের গ্রামে প্রচলিত আছে যে, কোন মায়্যেতকে দাফন করার পর তার কবরের উপর কিছু সরিষার দানা ছিটিয়ে দেয় এবং খেজুর গাছের পাতা ১/২ হাত লম্বা করে কেটে কবরের চার কোণে চারটা এবং কবরের মাঝে একটা গেড়ে দেয় এবং এক একটা গাড়ার সময় সূরা কাফিরূন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস ও  আয়াতুল কুরসি এগুলোর একটি করে পাঠ করে।

মহোদয়ের নিকট আমার জানার বিষয় হল, উপরোক্ত কাজ করা কি বৈধ? যদি না হয় তাহলে এর দ্বারা কি কোনো সমস্যা হবে? দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

দাফনের পর কবরের উপর সরিষা ছিটিয়ে দেয়া এবং গাছের ডাল পুঁতে দেয়ার প্রশ্নোক্ত বিশেষ পদ্ধতি অর্থাৎ কবরের চার কোণে চারটি ও মাঝখানে একটি আবার প্রতিটি গেড়ে দেয়ার সময় নির্ধারিত আয়াত বা সূরা পড়া এ সবগুলোই ভিত্তিহীন মনগড়া কাজ; যা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। মায়্যেতের কাফন, দাফন এবং ততপরবর্তী করণীয় বিষয়গুলো শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে। এক্ষেত্রে নিজ থেকে কোনো কিছু যোগ করার সুযোগ নেই। মুসলমানদের এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৬; কেফায়াতুল মুফতী ৫/৪৯০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলমামুন - হরিপুর, ঠাকুরগাঁও

৫১৩৯. প্রশ্ন

বাড়ির মহিলা মানুষ মারা গেলে সবাই কি ঐ লাশকে দেখতে পারবে? আমাদের এলাকায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই উক্ত লাশ দেখে। হযরত মুফতী সাহেবের কাছে আবেদন হল, বিষয়টি বিস্তারিতভাবে দলীলসহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

জীবিত অবস্থায় যাকে দেখা নাজায়েয মৃত্যুর পরও তাকে দেখা না জায়েয। অতএব কোনো মহিলা মারা গেলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ তাকে দেখার প্রথাটি শরীয়ত পরিপন্থী। এক্ষেত্রে শুধু তার ঐ আত্মীয়রাই দেখতে পারবে। যাদের সাথে তার পর্দা করা জরুরি নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; ; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৭১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলমামুন -

৫১৪০. প্রশ্ন

এক আলেম বলেছেন, দাফনের পর দেড় দুই ঘণ্টা কবরের পাশে থাকলে ভালো। এতে মায়্যিতের প্রশ্নোক্তর পর্ব সহজ হয়। এটা কি ঠিক? দলীলসহ জানালে খুবই ভাল হত।

উত্তর

দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর কবরের পাশে কিছু সময় অবস্থান করা এবং মৃতের জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং সাওয়াল জাওয়াবে দৃঢ় থাকার দুআ করার বিষয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত উসমান রা. বলেন-

كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتّثْبِيتِ، فَإِنّهُ الْآنَ يُسْأَلُ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর কবরের পাশে কিছু সময় অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং সাওয়াল-জাওয়াবের দৃঢ় থাকার দুআ কর। কেননা এখন সে জিজ্ঞাসিত হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩

অতএব দাফনের পর কবরের পাশে কিছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করে দুআ ও ইস্তেগফার করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে নির্দিষ্টভাবে দেড়-দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার কথা বলা ঠিক নয়।

-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৪/৫৬; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/১৪১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৫/২৬০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আসলাম - জুরাইন, ঢাকা

৫১৪১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি তার ছেলের জানাযা পড়াবার সময় সশব্দে কেঁদে ফেলে। নামায শেষ হওয়ার পর পাশের ভাইকে বললাম, নামায তো সহীহ হয়নি। কেননা যে সকল কারণে নামায নষ্ট হয়ে যায় সে সকল কারণে জানাযার নামাযও নষ্ট হয়ে যায়। আর বালা-মুসিবতের কারণে সশব্দে কাঁদলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি উত্তরে সে বলল, সে তো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিল। তাই নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করার পরও যদি সশব্দে কান্না চলে আসে তাহলে এর দ্বারা নামায ভাঙে কীভাবে?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত জানাযার নামায সহীহ হয়েছে। নামাযে নিজেকে শোক-বেদনা থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে সশব্দে কান্না চলে আসলে এর দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায় না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া  ১/১১৯; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩২২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬১৯

শেয়ার লিংক

ইমরান - আজিমপুর

৫১৪২. প্রশ্ন

আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলিতে সরকারের পক্ষ থেকে গণকবরস্থান থাকে। সেখানে সাধারণত একদিক থেকে এক এক করে কবর দিতে থাকে। এক সময় গিয়ে পুরো কবরস্থান পূর্ণ হয়ে যায়। পরে পুনরায় পুরাতন কবর খনন করে তাতে নতুন কবর দেওয়া হয়। জানার বিষয় হল, এভাবে পুরাতন কবর খনন করে নতুন কবর দেওয়ার শরঈ বিধান কী?

উত্তর

কবরস্থানে নতুন কবরের জন্য খালি জায়গা না থাকলে পুরাতন যে কবরে মৃত দেহ মাটি হয়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হবে তাতে কবর দেয়া জায়েয। অবশ্য তা খনন করতে গিয়ে পুরাতন কবরে হাড্ডি ইত্যাদি কিছু পাওয়া গেলে সেগুলি একত্র করে দাফন করে দেবে।

-আততাজনীস ওয়ালমাযীদ ২/২৮৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩

শেয়ার লিংক

আফিদ রহমান - রাজশাহী

৫১৪৩. প্রশ্ন

আমার বড় ভাই একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। পেশায় তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। বড় ভাইয়ের এক ছেলে এসএসসি পাশ করার পর খালেছ দ্বীনী-শিক্ষার উদ্দেশ্যে মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে। এতে আমার বড় ভাই সম্মত হননি। একারণে তিনি ঐ ছেলের লেখা-পড়ার খরচ দেন না। আর এ ব্যাপারে তিনি খুবই কট্টর। এহেন পরিস্থিতিতে আমি কি তাকে যাকাতের টাকা দিতে পারব?

উত্তর

ছেলেটি যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয় তাহলে আপনি আপনার ঐ ভাতিজাকে যাকাত দিতে পারবেন। কেননা ভাতিজাকে যাকাত দেওয়া জায়েয। বরং হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী আপনি এক্ষেত্রে দ্বিগুণ সওয়াব পাবেন। ছদকার সওয়াব এবং আত্মীয়তার হক আদায়ের সওয়াব। উপরন্তু ইলমে দ্বীনের একজন শিক্ষার্থীকে সহযোগীতা করার সওয়াবও পাবেন।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৬২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৩৮; আলহাবিল কুদসী ১/২৯৯

শেয়ার লিংক

রিদওয়ান - মহাখালি

৫১৪৪. প্রশ্ন

আমি বে-সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। প্রতিষ্ঠানটি বাসা থেকে দূরে হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাকে একটি গাড়ি গিফ্ট করা হয়। কোনো এক কারণে গাড়িটি এক ভদ্র লোকের কাছে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিই। গাড়িটির মূল্য নগদ দেওয়ার কথা থাকলেও সে বিলম্ব করে ৫ বছর পর পরিশোধ করে। হুযুরের কাছে যে বিষয়টি জানতে চাচ্ছি তা হচ্ছে, মসজিদের ইমাম সাহেব বিষয়টি আগ থেকেই জানতেন। গত রাতে তার সাথে দেখা হলে তিনি আমাকে বললেন, আপনাকে ৫ বছরের যাকাত দিতে হবে। তাই সত্যি কি আমাকে ৫ বছরের যাকাত দিতে হবে? জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনাকে উক্ত মূল্যের উপর বিগত পাঁচ বছরের যাকাত দিতে হবে না। কারণ ব্যবহৃত বস্তুর মূল্য হস্তগত হওয়ার পর যাকাতবর্ষ অতিক্রম না হলে তার উপর যাকাত ফরয হয় না।

প্রকাশ থাকে যে, এক্ষেত্রে ভিন্ন মতও আছে। কিন্তু বিশুদ্ধ মত সেটিই, যা এখানে উল্লেখ করা হল।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৪৪; আলহাবিল কুদসী ১/২৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৩০৬

শেয়ার লিংক

যুলফা - সদর দৌলত খান, ভোলা

৫১৪৫. প্রশ্ন

গত শুক্রবার রাতে এশার নামাযের কিছুক্ষণ আগে ঘরে তালা দিয়ে পাঁচ তলায় আমার বড় বোনের বাসায় যাই। ঘণ্টা দু-একের মত থাকার পর ফিরে এসে দেখি ঘরের দরজা খোলা ও তালাটি ভাঙা অবস্থায় আঙটার সাথে ঝুলে আছে। অতঃপর ভিতরে প্রবেশ করে দেখি আমার অনেক দামি সামানাসহ দশ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়ে গেছে। হুযুরের কাছে আমি যে বিষয়টি জানতে চাচ্ছি তা হল, বছর অতিক্রম হওয়ায় উক্ত স্বর্ণগুলোর উপর যাকাত ওয়াজিব ছিল। তাই চুরি হয়ে যাওয়া সত্তে¡ও আমাকে কি যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

চুরি হয়ে যাওয়া উক্ত স্বর্ণের যাকাত আদায় করতে হবে না। কারণ যে সম্পদের উপর যাকাত ফরয হয়েছে এর পুরোটা চুরি হয়ে গেলে তার যাকাত আদায় করতে হয় না।

-কিতাবুল আছল ২/১০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৩৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬১

শেয়ার লিংক

শোয়াইব - পটিয়া

৫১৪৬. প্রশ্ন

আমার একটা দোকান আছে কাপড়ের। যাতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার কাপড় ছিল। প্রতি বছর তার যাকাত আদায় করে থাকি। এ বছর রমযানের প্রথম তারিখে সে পণ্যের যাকাত হিসেব করে রাখি। কিন্তু বিশেষ সমস্যা ও ব্যস্ততার কারণে তা আদায় করতে পারিনি। এভাবে প্রায় তিন মাস হয়ে যায় গড়িমসি করে এখনো দেয়া হয়নি। এদিকে এর কিছুদিন পর দোকানের সব পণ্য ৩০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিই এবং সে টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে ফেলি। জানার বিষয় হল, আমাকে কি এখন দোকানের পণ্য বিক্রির ৩০ লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যাকাতবর্ষ যে দিন পূর্ণ হয়েছে সে দিনের হিসেবে ২.৫% যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর দোকান বিক্রির টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট ক্রয়ের কারণে উক্ত যাকাত মাফ হয়ে যায়নি। অবশ্য ফ্ল্যাটটি যদি বিক্রির জন্যে না কেনা হয় তাহলে পরবর্তী বছর থেকে এর মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে না।

-ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ১২৫; আলহাবিল কুদসী ১/২৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৮১; আননাহরুল ফায়েক ১/৪৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৮৪

শেয়ার লিংক

ত্বহা - বরিশাল

৫১৪৭. প্রশ্ন

গত রজব মাসে আমার স্ত্রীর বাবা মারা গেছেন। রমযানের কয়েক দিন আগে সম্পত্তি ভাগ করা হয়। আমার স্ত্রী কিছু জমি-জমাসহ নগদ দশ লক্ষ টাকা ক্যাশ পায়। এদিকে তার আগে থেকেই বিশ ভরির মত স্বর্ণ রয়েছে। আল্লাহ্র রহমতে প্রতি রমযানে তার যাকাত আদায় হয়ে থাকে। হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এবার সে কি শুধু অলংকারের যাকাত দেবে না, মীরাস বাবদ যে টাকা পেয়েছে সেগুলোরও যাকাত দেবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীকে বিশ ভরি স্বর্ণের সাথে মীরাস হিসেবে পাওয়া দশ লক্ষ টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/৮৯; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪২৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৫

শেয়ার লিংক

হাসান জামীল - নরসিংদী

৫১৪৮. প্রশ্ন

একই দিনে আমার ভাগনি ও তাদের পাশের বাড়ির একটি মেয়ের বিবাহ ঠিক হয়। যে মুরব্বি বিয়ে পড়ান তিনি একটু ভুল করেন। আমার ভাগনির বিয়ে পড়ানোর সময় ভুলে তার নাম না বলে অন্যজনের নাম বলে ফেলেন। তবে সেসময় যার নাম বলা হয় সে সামনে ছিল না; বরং আমার ভাগনি তার সামনে ছিল। তিনি তার দিকে হাত উঠিয়ে ইশারাও করেছিলেন। বিষয়টি তাকে বললে তিনি বলেন, সমস্যা নেই, বিবাহ হয়ে গেছে। তিনি আস্থাভাজন ও বিজ্ঞ হওয়ায় আমরা তাকে জোরাজুরি করিনি। পরে তিনি ২য় বার বিয়ে না পড়িয়ে অন্যজনের বিয়ে পড়াতে চলে যান। কিন্তু এখন আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা চলছে। তাই হুযুরের কাছে বিষয়টির সঠিক সমাধান জানতে চাচ্ছি; ঐ মুরুব্বির কথা ঠিক কি না? আমার ভাগনির বিয়ে সহীহ হয়েছে কি না? দয়া করে জানিয়ে আমাদের উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বক্তব্য অনুযায়ী আপনার ভাগনির নাম ভুল হলেও সে যেহেতু সামনেই উপস্থিত ছিল এবং বিবাহের প্রস্তাবের সময় তার দিকে ইশারা করা হয়েছে তাই তার বিবাহ সহীহ হয়েছে। কেননা বিবাহের মজলিসে উপস্থিত মেয়ের দিকে ইশারা করে বিবাহ পড়ানো হলে সেক্ষেত্রে নাম বলতে ভুল হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। উপস্থিত পাত্রীর সাথেই বিবাহ সংঘঠিত হয়ে যায়। যার নাম বলা হয়েছে তার সাথে বিয়ে হয় না। সুতরাং এ বিবাহ নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের কানাঘুষা করা বা কোনো প্রকার সংশয় প্রকাশ করা ঠিক হবে না।

-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/২৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/৩১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৪; ফাতহুল কাদীর ৩/১০৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদদুর ২/১২; রদ্দুল মুহতার ৩/২৬

শেয়ার লিংক

বকুল আহমাদ -

৫১৪৯. প্রশ্ন

অনেককে দেখা যায়, আকীকা করার পর বাড়িতে বাড়িতে গোশত পাঠিয়ে দেয়।  আবার অনেকে দাওয়াত করে খাওয়ায়। দুই পদ্ধতির কোন্টি উত্তম? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

আকীকা করার পর তার গোশত রান্না করে খাওয়ানো যায়। আবার শুধু গোশত হাদিয়াও দেওয়া যায়। তবে সাধারণ অবস্থায় গোশত হাদিয়া দেওয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়ানো উত্তম। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. আকীকার গোশতের হুকুম বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-

تُجْعَلُ جُدُولاً، فَيُطْبَخُ، فَيَأْكُلُ وَيُطْعِمُ.

টুকরো টুকরো করে কেটে রান্না করে নিজে খাবে এবং খাওয়াবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ২৪৭৪৪)

ইমাম নববী রাহ. বলেন-

قال جمهور أصحابنا يستحب أن لا يتصدق بلحمها نيا بل يطبخه.

মুস্তাহাব হল আকীকার গোশত কাঁচা সদকা করবে না; বরং তা রান্না করে খাওয়াবে। (আল মাজমূ ৮/৪১০)

ইবনে কুদামা রাহ. বলেন-

وإن طبخها، ودعا إخوانه فأكلوها، فحسن.

আকীকার গোশত রান্না করে ভাই-বেরাদার (আত্মীয়-স্বজনকে) দাওয়াত করে খাওয়ানো উত্তম। -আল মুগনী ১৩/৪০০

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে বিভিন্ন দাওয়াতের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আকীকার দাওয়াতেও বেগানা নারী-পুরুষের একসাথে খাওয়া, একই স্থানে বসা এবং উপঢৌকন দেওয়া-নেওয়ার আয়োজন করা হয়। আবার অনেক জায়গায় এটিকে জরুরিও বানিয়ে ফেলা হয়েছে। অথচ এসবই শরীয়তে নিষিদ্ধ। তাই দাওয়াত করে আকীকার গোশত খাওয়াতে চাইলে শরীয়তে নিষিদ্ধ এমন সব কাজ থেকে দাওয়াতের অনুষ্ঠানকে মুক্ত রাখতে হবে।

-তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ২/২৩৩; এলাউস সুনান ১৭/১২০

শেয়ার লিংক

আরিফ খাঁন - পাহাড়তলি, চট্টগ্রাম

৫১৫০. প্রশ্ন

আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে এখন খামারগুলোতে ভেড়ার সাথে দুম্বা ও ছাগলের সাথে হরিণ দিয়ে ক্রসব্রিড করে অধিক মুনাফার আশায় নতুন নতুন জাতের ছাগল ও ভেড়ার জন্ম বিস্তার করছে। এই ধরনের প্রজনন শরীয়তসম্মত কি না?

উত্তর

হাঁ, ভেড়ার সাথে দুম্বা এবং ছাগলের সাথে হরিণ কিংবা এজাতীয় কোনো হালাল প্রাণীর পরস্পর ক্রসব্রিড করে প্রাণী প্রজনন করা বৈধ। তবে শর্ত হল, হালাল প্রাণীর সাথে ক্রসব্রিড করতে হবে। কোনো হারাম প্রাণীর ডিম্বাণুর সংমিশ্রন করা যাবে না।

-কিতাবুল আছল ৫/৪১১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৬৮, ৭/৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩০৪, ৩১১

শেয়ার লিংক

সুমাইয়া হুমাইরা - মানিকগঞ্জ

৫১৫১. প্রশ্ন

আমার বড় ভাগনির ছেলে যখন ছোট ছিল আমি তখন ওর অনেক সেবাযতœ করতাম। এখন ওকে আমার নিজের ছেলের মত মনে হয়। আমি হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, সে বড় হলে আমার সাথে কি তার পর্দা করতে হবে?

উত্তর

আপনার ভাগ্নির ছেলে মাহরাম। তার সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। তাই আপনারা পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন।

-কিতাবুল আছল ৪/৩৫৮; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/১২৩; আলহাবিল কুদসী ১/৩৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া

শেয়ার লিংক