মুহাম্মাদ যাকারিয়া সিরাজী - সিরাজগঞ্জ

১৯৭৮. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার পুরাতন টিনের মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের কাছাকাছি নতুন আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন মসজিদের কারণে পুরাতন টিনসেড মসজিদটি অনাবাদ হয়ে পড়ে। এখন সে স্থান অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। জানতে চাই, এ সম্পর্কে আমাদের করণীয় কী?

উত্তর

কোনো স্থানে মসজিদ হয়ে গেলে ঐ স্থান কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। ঐ স্থান মসজিদ ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করা জায়েয নয়। তাই নতুন মসজিদের কারণে পুরাতন মসজিদের প্রয়োজন না থাকলেও তা মসজিদ হিসাবে হেফাযত করতে হবে। অস্থায়ীভাবে তাতে কুরআন মজীদের তা’লীম ইত্যাদি দ্বীনী কাজ চালু রাখা যেতে পারে। তবে মসজিদের আদাব বজায় রেখে কাজ করতে হবে। পরবর্তীতে যখন নিয়মিত জামাত করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তখন তাতে জামাত চালু করবে। অবশ্য যদি সম্ভব হয় তাহলে দুই মসজিদকে মিলিয়ে একটি বড় মসজিদ বানিয়ে নিবে। কিন্তু কোনো অবস্থায় তা বে-দখল বা অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

সূরা জিন : ১৮; তাফসীরুল মুহাররারিল ওয়াজীয, ইবনে আতিয়্যাহ ১৫/১৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৪৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৪; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৮/২২৩; কিতাবুল মাজমু’ ১৬/৩৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম - ময়মনসিংহ

১৯৭৯. প্রশ্ন

আমি একজনের কাছে ১০০/-টাকা পেতাম। সে টাকাটা নিয়েছিল আমাকে একটি জিনিস কিনে দিবে বলে। কিন্তু সে তা কিনে দেয়নি। টাকা চাইলে সে একাধিকবার তারিখ করেও তা পরিশোধ করেনি। এখন আমার বিষয় হল, আমি কি সে টাকা যাকাত হিসেবে ধরতে পারব? উল্লেখ্য যে, সে যাকাত গ্রহণের যোগ্য।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ১০০/-টাকা যাকাত হিসাবে গণনা করা যাবে না; বরং আপনার উপর ফরয হওয়া যাকাতের সমুদয় অর্থ পৃথকভাবে আদায় করা ফরয। তবে উক্ত দেনাদারকে যাকাতের অর্থ দেওয়ার পর তা থেকে নিজের পাওনা উসুল করা যাবে।

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৬৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৭১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শাহ ইমরা - শর্শদী মাদরাসা, ফেনী

১৯৮০. প্রশ্ন

ক) মুসাফিরের জন্য জুমআর নামাযের হুকুম কী? অর্থাৎ বিষয়টি কি এমন যে, তার জন্য জুমআর নামায না পড়ে যোহর পড়ারও অনুমতি আছে, তবে জুমআ পড়লেও পড়তে পারবে, নাকি জুমআর নামায না পড়া তার জন্য বাধ্যতামূলক। খ) মুসাফির জুমআর ইমামত করতে পারবে কি?

উত্তর

ক) মুসাফিরের জন্য জুমআ পড়া ফরয নয়। সে যোহর বা জুমআ যে কোনোটি পড়তে পারে। খ) হ্যাঁ, মুসাফির জুমআর ইমামতিও করতে পারবে। এবং তার পিছনে মুকীমের ইক্তিদা সহীহ হবে। খ) হ্যাঁ, মুসাফির জুমআর ইমামতিও করতে পারবে। এবং তার পিছনে মুকীমের ইক্তিদা সহীহ হবে।

আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৩, ১৫৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ তুষার মানসুর - মুহাম্মাদ তুষার মানসুর

১৯৮১. প্রশ্ন

অনেককে বলতে শোনা যায় যে, ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার সময় শুধু سمع الله لمن حمده বলবেন। ربنا لك الحمد বলবেন না। এ কথাটি কি সঠিক?

উত্তর

ইমাম সাহেব রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ربنا لك الحمد বলবে কি না-এ বিষয়ে একাধিক মত রয়েছে। তবে অগ্রগণ্য মত অনুযায়ী ইমামের জন্যও ربنا لك الحمد বলা উত্তম।

সহীহ বুখারী ১/১০৯; ফাতহুল কাদীর ১/২৬০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৬; আসসিআয়াহ ২/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/১৯০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/৪৪৩, হাদীস : ২৫৬২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩১৯; ফাতহুল বারী ২/৩৩১; মাআরিফুস সুনান ৩/২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৩৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সালমান - ফরিদাবাদ, ঢাকা

১৯৮২. প্রশ্ন

আমাদের দেশে শীতকালে অনেকে মাথায় রুমাল পরে থাকে। সাধারণত তারা রুমালটিকে তিন কোণ করে এক কোণ পেছনে পিঠের উপর ফেলে রাখে। অবশিষ্ট দুই কোণ দুই কাঁধের উপর দিয়ে সামনে বুকের উপর ঝুলিয়ে দিয়ে ডানের কোণটিকে ঘুরিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে রাখে। আর বামের কোণটিকে এমনিতেই ঝুলন্ত রাখে। রুকু-সিজদার সময় তা সম্মুখে ঝুলতে থাকে। প্রশ্ন হল, এভাবে নামাযে রুমালের একটি কোণ না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত রেখে দিলে নামায কি মাকরূহ হবে?

উত্তর

না। নামায অবস্থায় প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে রুমালের এক কোণ সম্মুখে ঝুললে এর দ্বারা নামায মাকরূহ হবে না। তবে উত্তম হল নামায অবস্থায় দুই প্রান্তকে কাঁধের সাথে পেঁচিয়ে রাখা। কেননা, তা নামাযীর সম্মুখে ঝুলতে থাকলে তার নামাযের একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।

হেদায়া (ফাতহুল কাদীর) ১/৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১৯২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৪৭; আননাহরুল ফায়েক ১/২৮১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুশাহীদ দেওয়ান - সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ

১৯৮৩. প্রশ্ন

ক) কোনো ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি। কিন্তু সে কুরবানীর দিন আকীকা দিতে চায়। তার জন্য আকীকা দেওয়া বৈধ হবে কি না? একজন আলিম বলেছেন, কুরবানীর দিনের ভিতর আকীকা দেওয়া এমন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয়। প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব। খ) ডেকোরেটরের জিনিসপত্রে কীভাবে যাকাত আসে? ধরুন, কারো দুই লক্ষ টাকার ডেকোরেটর সামগ্রী আছে। আবার পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণও আছে। তার আয় খুব কম। সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। নগদ কোনো অর্থ নেই। এমন ব্যক্তির উপরও কি যাকাত আসবে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ক) কুরবানীর দিন আকীকা করা নিষিদ্ধ নয়। এমনকি কুরবানীর পশুতেও আকীকার অংশ দেওয়া জায়েয। অতএব কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ব্যক্তিও কুরবানীর দিনগুলিতে আকীকা করতে পারবে। বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬ উত্তর : খ) ডেকোরেটর সামগ্রী যদি বিক্রয়ের জন্য না হয়; বরং তা ভাড়ার জন্য তবে সেগুলোতে যাকাত আসবে না। তাই ঐ সামগ্রীর কারণে মালিককে যাকাত দিতে হবে না। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৯; ফিকহি মাকালাত ৩/১৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল বারী - নেত্রকোণা

১৯৮৪. প্রশ্ন

যদি কোনো ব্যক্তি কুরআন মজীদের উপর হাত রেখে কোনো কাজ করার কসম করে তাহলে কি কসম হয়ে যাবে? ঐ কাজ না করতে পারলে কি কাফফারা দিতে হবে?

উত্তর

কুরআন মজীদের উপর হাত রেখে কসম করলে কসম হয়ে যায়। যে বিষয়ের কসম করা হয়েছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হলে কৃত কসম পূরণ করা জরুরি। কসম ভঙ্গ করলে কাফফারা দিতে হবে।

মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৭/৫৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১২; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৬; আননাহরুল ফায়েক ৩/৫৫; তাকরীরাতুর রাফেয়ী পৃ. ১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৫; হেদায়া ২/৪৭৯, ৪৮১; মাবসূত সারাখসী ৮/১৩২; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল বারী - নেত্রকোণা

১৯৮৫. প্রশ্ন

অর্ধ রাত্রির পর এশার নামায পড়া মাকরূহ কি না? মাকরূহ হলে মাকরূহ তাহরীমী না তানযিহী? যদি সফরের কারণে বিলম্ব হয় তাহলেও কি মাকরূহ?

উত্তর

বিনা ওজরে মধ্য রাতের পর পর্যন্ত ইশার নামায বিলম্বিত করা মাকরূহ। এ বিষয়ে ফকীহগণ একমত। তবে এটিকে কেউ কেউ মাকরূহে তাহরীমী বললেও আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রাহ. ইমাম তহাবী রাহ.-এর উদ্ধৃতিতে মাকরূহ তানযিহীর মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। পরবর্তী ফকীহদের অনেকে এ মতকে গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য যে, সফরের কারণে বিলম্বিত হলে তা ওজরের অন্তর্ভুক্ত।

শরহু মাআনিল আছার ১/১৮; মাবসূত সারাখসী ১/১৪৭; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯; হেদায়া (ফাতহুল কাদীর) ১/২০১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪০৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৯; মুখতাসারুত তহাবী পৃ. ২৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩২৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রবীউল ইসলাম - দোহার, ঢাকা

১৯৮৬. প্রশ্ন

অনেকে বড়শিতে কেঁচো বা ছোট মাছ বিদ্ধ করে মাছ শিকার করেন। এটা জায়েয আছে কি না?

উত্তর

বড়শিতে মাছ বা কেঁচো গাঁথার আগে তা মেরে নিলে তা দ্বারা মাছ ধরা জায়েয হবে। কিন্তু জ্যান্ত মাছ বা কেঁচো বড়শিতে গেঁথে মাছ শিকার করা জায়েয নয়।

সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৫১৩; সহীহ মুসলিম হাদীস : ৫০১৭; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৫৪০; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৭৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল মামুন - উত্তরা, ঢাকা

১৯৮৭. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লায় একটি মকতব আছে। যেখানে সকাল বেলা কুরআন শিখানো হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া হয়। মূলত জায়গাটা ওয়াকফ করা হয়েছে মকতবের জন্য। বর্তমানে মুসল্লিরা সেটাকে জুমআর মসজিদ করতে চায়। জুমআর মসজিদের কথা শুনে মসজিদের পূর্ব পশ্চিম পাশের জায়গার মালিক তাও ওয়াকফ করতে আগ্রহী হয়েছেন। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় মকতবের জায়গাসহ পুরোটার উপর কি জুমআর মসজিদ বানানো যাবে? বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াকফকারী যেহেতু জায়গাটি মকতবের জন্য ওয়াকফ করেছে তাই সেখানে মসজিদ বানানো জায়েয হবে না; বরং ওয়াকফের শর্তানুযায়ী এ স্থান মকতব ও মাদরাসার জন্য নির্ধারিত থাকবে। মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন হলে পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করে সেখানে তা বানানো যাবে। পার্শ্ববর্তী জায়গার মালিক যেহেতু মসজিদের জন্য ওয়াকফ করতে ইচ্ছুক তাই তাদের থেকে জায়গা নিয়ে সেখানে মসজিদ বানানো যাবে।

আলআশবাহ ওয়ান নাযায়ের ২/২২৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২৩৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৪৩৩

শেয়ার লিংক

উম্মে আবদুল্লাহ - উত্তর মুগদা, ঢাকা

১৯৮৮. প্রশ্ন

ক) আমি শৈশবে গ্রামের বাড়িতে কাচারি ঘরের হুজুরের কাছে কুরআন তিলাওয়াত শিখেছিলাম। অতঃপর গত চার-পাঁচ বছর ঢাকায় সহীহ নূরানী পদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়ে উক্ত পদ্ধতিতে কুরআন তিলাওয়াত করতে শিখি। এরপর হতে নামাযে ও নামাযের বাইরে নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন তিলাওয়াত করি। আমি বুঝতে পারছি যে, পূর্বের পদ্ধতি অশুদ্ধ ছিল। এখন আমার প্রশ্ন এই যে, পূর্বের পদ্ধতিতে আমি যে তেলাওয়াত করেছি সে বিষয়ে আমার কী করণীয়? সেভাবে পড়ার কারণে আমার নামায কি নষ্ট হয়েছে? জানালে উপকৃত হব। খ) আলহামদুলিল্লাহ, আমি যথাসাধ্য পর্দার বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করি। কিন্তু গ্রামে গেলে চাচাতো বা মামাতে ভাইরা (বিশেষত যারা বয়সে ছোট) খোঁজ খবর নিতে আসে এবং কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে। আবার কখনো কখনো (বছরে হয়তো ২/১বার) তাদের কেউ কেউ ঢাকায় বেড়াতে আসে। তখনও একই অবস্থার উদ্ভব হয়। এ সকল অবস্থায় তাদের সাথে দেখা না করলে হয়তো আত্মীয়তার সম্পর্কই ছিন্ন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ঘরে নামাযের সময় যেভাবে সতর ঢাকি সেভাবে কাপড় পরা অবস্থায় তাদের সাথে দেখা করা জায়েয কি না জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

ক) নামায সহীহ এবং কবুল হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ তিলাওয়াত জরুরি। সুতরাং অন্তত ফরয কিরাত পরিমাণ শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখা ফরয। তবে যে বিশুদ্ধ কিরাত জানে না তার জন্য সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার আগ পর্যন্ত হুকুম এই যে, সে যতটুকু জানে তা দিয়েই নামায পড়তে থাকবে। আর যথাসাধ্য দ্রুত শুদ্ধ তিলাওয়াত শিখে নিবে। এক্ষেত্রে পূর্ণ শুদ্ধ হওয়া পর্যন্ত যত নামায পড়া হয়েছে তা যেহেতু তখনকার সামর্থ অনুযায়ী পড়া হয়েছে তাই তা আদায় হয়ে গিয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। পরবর্তীতে কিরাত শুদ্ধ হওয়ার পর সেগুলোর কাযা করা জরুরি নয়। তবে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। অন্যথায় গুনাহ হবে। অতএব আপনার পূর্বের নামাযগুলো আদায় হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৬২ খ) চেহারাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। বিনা ওজরে বেগানা পুরুষের সামনে তা খোলা নিষেধ। আর আপনি যেহেতু আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের লক্ষে তার সন'ষ্টির উদ্দেশ্যেই পর্দা করছেন তাই বিষয়টি তাদেরকে বুঝিয়ে বললে আশা করি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হওয়ার মতো সমস্যা হবে না। এছাড়া প্রয়োজনে পর্দার আড়ালে থেকে (কোমলতা বর্জন করে) কুশলাদি বিনিময় ও প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারবেন। আল্লাহর উপর ভরসা করে পরিপূর্ণ পর্দার চেষ্টা করুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহর নুসরত পাবেন। সূরা আহযাব :৩২, ৩৩ ও ৫৯; আহকামুল কুরআন জাসসাস ৩/৩৭২; আদিল্লাতুল হিজাব পৃ. ২৪৪; আহকামুন নযর পৃ. ২৬০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুশতাক আহমদ - বালিপাড়া বাজার, ত্রিশাল

১৯৮৯. প্রশ্ন

গত কয়েক বছর পূর্বে আমরা এলাকর মহিলাদের জন্য তালীমের ব্যবস্থা করেছি। একটি আলাদা ঘরে পূর্ণ পর্দার সাথে সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও সোমবার বাদ যোহর দ্বীনি বিষয় ও মাসআলা মাসায়েল আলোচনা করা হয়। একজন মহিলা মজলিসটি পরিচালনা করেন। এতে আশপাশের মহিলারাই অংশগ্রহণ করেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূরবর্তী এলাকার স্বল্প সংখ্যক মহিলাও অভিভাবকের অনুমতিক্রমে মাহরাম ছাড়া এসে থাকেন। পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে মাহরাম ছাড়া আসাকে কেন্দ্র করে এলাকার কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছে। অতএব হুজুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল : প্রশ্ন : ক) পার্শ্ববর্তী ও পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে পর্দার সাথে মহিলাদের মাহরাম ছাড়া আসাটা কেমন? প্রশ্ন : খ) পর্দা রক্ষা করে কোনো মহিলা নিজ বাড়িতে তালীমের ব্যবস্থা করতে পারবে কি না? প্রশ্ন : গ) মহিলাদের কাছ থেকে কোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাহায্য গ্রহণ করা যাবে কি না?

উত্তর

ক) মহিলাদের শিক্ষার ব্যবস্থা প্রধানত নিজ ঘরেই হওয়া চাই। তারা মাহরাম পুরুষ যথা বাপ, দাদা, আপন ভাই, চাচা, মামার কাছে দ্বীন শিক্ষা করবে। হ্যাঁ, মাহরামদের মধ্যে যোগ্য আলেম না পাওয়া গেলে নিজ মহল্লার কোনো দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনদার মহিলার নিকট গিয়ে দ্বীন শিক্ষা করবে। তবে শর্ত হল, স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে পূর্ণ শরয়ী পর্দার সাথে আসা যাওয়া করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বেই ঘরে পৌঁছে যাবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মহল্লার মহিলারা উক্ত তালীমের মজলিসে আসতে পারেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে এভাবে তালীমে আসা সমীচীন নয়; তারা নিজেদের মহল্লায় তালীমের ব্যবস্থা করবেন এবং ঘরে বসে দ্বীনী কিতাবপত্র পাঠ করবেন। সূরা আহযাব : ৩৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৬০ খ) প্রত্যেক নর-নারীর প্রয়োজনীয় দ্বীন শিক্ষা করা ফরয। আর পূর্ণ পর্দার সাথে অভিজ্ঞ শিক্ষিকা দ্বারা দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রশংসণীয় ও ছওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদীস শরীফে আছে, একদিন মহিলা সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, পুরুষদের কারণে আমরা আপনার নিকটবর্তী হতে পারি না। তাই আপনি আমাদের জন্য আলাদা একটি দিন নির্ধারণ করুন। তিনি তাদের জন্য বিশেষভাবে এক দিনের ওয়াদা করলেন এবং বললেন, তোমরা অমুক দিন অমুকের বাড়িতে একত্র হও। এরপর তিনি সেদিন তাদের কাছে গিয়ে ওয়াজ করলেন। সহীহ বুখারী ১/২০; উমদাতুল কারী ২/১২৩ গ) হ্যাঁ, মহিলারা দান করলে তা গ্রহণ করা যাবে। তবে স্বামীর সম্পদ থেকে তার অনুমতি ছাড়া দান করলে সেক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য কেবল ঐ পরিমাণ দান করা জায়েয যা সাধারণত স্ত্রী হিসাবে স্বামীর সম্পদ থেকে দেওয়ার অনুমতি থাকে। সাধারণ নিয়ম ও পরিমাণের চেয়ে বেশি দেওয়া বৈধ হবে না। সহীহ বুখারী ১/২০; উমদাতুল কারী ২/১২৪; আহকামুন নিসা ৫/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/৯৩; শরহু মাআনিল আছার ২/৩৭৪; ইলাউস সুনান ১৬/১৩৩

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - কাকরাইল মারকায মসজিদ মাদরাসা

১৯৯০. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি পোস্ট অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে ইচ্ছুক। তার জন্য কি ঐ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা জায়েয হবে? জায়েয না হলে তার সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করে বাধিত করবেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্র এর ৪র্থ পৃষ্ঠায় রয়েছে, ‘২ লক্ষ টাকায় তিন মাস অন্তর ৫৫০/- টাকা মুনাফা প্রদান করা হবে। ... এক বছরান্তে ৭.৫০%, দুই বছরান্তে ৮.২৫% হারে মুনাফা দেওয়া হবে। অর্থাৎ মূলের উপর এত হারে মুনাফা দেওয়া হবে।

উত্তর

পোস্ট অফিস পেনশনার সঞ্চয়পত্র-এর বিবরণ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এটি পুরোপুরি সুদী প্রকল্প। যেখানে জমাকারীকে মেয়াদান্তে নির্দিষ্ট অংকে লাভ দেওয়া হয়। বলাবাহুল্য যে, এটিই হল কুরআন মজীদের নিষিদ্ধ সুদ-রিবান নাসিআহ। এই সুদ সম্পর্কেই কুরআন মজীদে ঘোষণা করা হয়েছে, (তরজমা) ‘ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস'ত হয়ে যাও।’ (সূরা বাকারা : ২৭৮,২৭৯) আরো দেখুন : সূরা বাকারা : ২৭৫, ২৭৬; সূরা আল-ইমরান : ১৩০; আহকামুল কুরআন, যফর আহমদ থানভী ১/৬৬৬, ৬৭০; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৭ অতএব প্রশ্নোক্ত পেনশনার সঞ্চয়পত্রে জমা করা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। নিম্নে আরো কয়েকটি বরাত পেশ করা হল। জামে তিরমিযী ১/২২৯; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৭৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১০/৬৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৮০; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬

জামে তিরমিযী ১/২২৯; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৭৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১০/৬৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৮০; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুঈনুদ্দীন - রাহাত হুসাইন তাহফিজুল কুরআন মাদরাসা, মিরপুর-১৩, ঢাকা

১৯৯১. প্রশ্ন

আমাকে একজন বলেছেন, পবিত্র কুরআনের যের, যবর, পেশ ও নুকতা খলীফা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ নিজ হাতে লিখেছেন। এ কথাটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এত বড় অত্যাচারী শাসক এ মহৎ কাজের উদ্যোগ কীভাবে নিল? সত্যিই কি তিনি এই কাজ করেছেন?

উত্তর

হযরত উসমান রা. যে মুসহাফ তৈরি করেছেন তাতে হরফসমূহে নুকতা ও হরকত যের, যবর ও পেশ ছিল না। পরবর্তীতে কে এই মহৎ কাজটি করেছেন-এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতভেদ আছে। তবে আল্লামা তকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম ‘উলূমুল কুরআন’-এ বলেন, এ সম্পর্কিত সকল বর্ণনা সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয় যে, হরকত (যের, যবর ও পেশ) সর্বপ্রথম হযরত আবুল আসওয়াদ দুয়ালী রাহ. আবিষ্কার করেন। কিন্তু হরকতের রূপ এখন যেমন দেখা যায় তেমন ছিল না। তখন ছিল ফোঁটার মতো। যবরের জন্য উপরে এক ফোঁটা দেওয়া হত, যেরের জন্য নিচে এক ফোঁটা আর পেশের জন্য সামনে এক ফোঁটা দেওয়া হত। তানভীনের জন্য দুই ফোঁটা ব্যবহৃত হত। এরপর খলীল বিন আহমদ রাহ. হামযাহ ও তাশদীদের বর্তমান রূপটি আবিষ্কার করেন। এরপর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ইয়াহইয়া বিন ইয়ামার রাহ. ও নাসর বিন আসেম রাহ.-এর মাধ্যমে কুরআনে কারীমে হরফসমূহে নুকতা লাগানোর ব্যবস্থা করেন। এই সময়ই মূলত নুকতা ও হরকতের পার্থক্যের উদ্দেশ্যে হরকতের বর্তমান রূপটি অবলম্বন করা হয়।

আলইতকান ২/৪১৯; সুবহুল আ‘শা ৩/১৬০-১৬১; আলবুরহান ১/২৫০; উলূমুল কুরআন পৃ. ১৯৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুশ শুকুর - গুলশান, ঢাকা

১৯৯২. প্রশ্ন

আমাদের দেশে রজবের ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে শবে মেরাজ পালন করা হয়। বইপুস্তুকেও ২৭ তারিখকেই মেরাজ রজনী বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইদানীং কিছু মৌলভী সাহেব থেকে এ ব্যাপারে কিছু সংশয়ের কথা শুনলাম। বাস্তব বিষয়টি কি?

উত্তর

মেরাজের ঘটনা রজবের ২৭ তারিখে হয়েছিল-একথা প্রমাণিত নয়। এই তারিখটি শুধু এমন একটি রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়, যার সনদ সহীহ নয়। কোনো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা এটি প্রমাণিত নয়। মেরাজ কখন হয়েছিল সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সনদে শুধু এটুকু পাওয়া যায় যে, তা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু কোন দিন, মাস বা তারিখে সংঘটিত হয়েছে এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কিছুই নেই। তাই এই তারিখকে মেরাজ-রজনী হিসাবে ধরে নেওয়া যেমন ভুল তেমনি তা উদযাপন করাও ভুল। সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন কেউ কখনো মেরাজ রজনী উদযাপন করেছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। এটি একটি কুসংস্কারও বিদআত।

আলমাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ ও শরহুল মাওয়াহিব ৮/১৮-১৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ২/৪৭১; লাতায়িফুল মাআরিফ পৃ. ১৩৪

শেয়ার লিংক

মুাহম্মা ফরীদুদ্দীন - নোয়াখালী

১৯৯৩. প্রশ্ন

খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী রা.-এর জানাযা কে পড়িয়েছিলেন? তিনি কার হাতে শাহাদাত বরণ করেন? তিনি তার পুত্রদ্বয়কে যে নসীহত করেছিলেন তা কী ছিল? সঠিকভাবে উল্লেখ করে বাধিত করবেন।

উত্তর

হযরত আলী রা. ৪০ হিজরী ১৭ রমযান আবদুর রহমান বিন মুলজিম খারেজীর আক্রমণের শিকার হন। অতঃপর তিন দিন পর শাহাদাত বরণ করেন। তার জানাযা হযরত হাসান রা. পড়িয়েছেন। তিনি হযরত হাসান ও হুসাইন রা.কে যে গুরুত্বপূর্ণ ওসীয়ত করেছিলেন তা হল নিম্নরূপ : অর্থ, আল্লাহকে ভয় করা, নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, ক্রোধ সংবরণ করা, আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, অজ্ঞ ও জাহেল লোকদের সাথে বুদ্ধিমত্তার সাথে চলা, দ্বীনী বুঝ সৃষ্টি করা। দ্বীনের প্রতিটি মাসআলার উপর অটল ও অবিচল হয়ে আমল করা। কুরআন মজীদের হেফাযত করা, ভালোর আদেশ এবং মন্দের প্রতি বাধা প্রদান করা, অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।

আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৫/৪৩৭; তবাকাতে সা’দ ৩/২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সীরাজ - পাবনা

১৯৯৪. প্রশ্ন

পীরকে কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক মনে করা, তার কাছে গিয়ে সন্তান চাওয়া, বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি কামনা করা ইত্যাদি কাজের হুকুম কী? কিছু লোক মাজারে গিয়ে এসব চায়। আবার জিন্দা পীরকেও এসব বিষয়ে ক্ষমতাবান মনে করে। জানতে চাই এমন ধারণা করা ঠিক কি না? এতে কোনো ক্ষতি আছে কি না?

উত্তর

কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। রিযিকদাতা,সন্তানদাতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতিদানকারী এবং মনোবাঞ্ছা পূরণকারী একমাত্র আল্লাহ। কোনো পীর, তিনি জীবিত হোন বা মৃত এসব কাজের ক্ষমতা রাখেন না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ তাআলা আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁর উপরই নির্ভর করে।’ (সূরা যুমার : ৩৮) বোঝা গেল, কল্যাণ-অকল্যাণএবং উপকার-অপকারের মালিক একমাত্র আল্লাহ। অন্যত্র এসেছে, (তরজমা) ‘আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো স্রষ্টা আছে কি যে তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। অতএব তোমরা কোথায় ঘুরপাক খাচ্ছ।’ (সূরা ফাতির : ৩) রিযিকের বরকত একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। সন্তানসন্ততিও আল্লাহই দান করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। এ মর্মে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ (সূরা শুরা : ৪৯-৫০) অতএব বোঝা গেল আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো কাছে সন্তান চাওয়া, কাউকে লাভক্ষতির মালিক মনে করা, আয়-উপার্জনে উন্নতিদানকারী মনে করা সম্পূর্ণ শিরক ও ঈমান পরিপন্থী আকীদা। কেউ যদি কখনো এমন কাজ করে থাকে তাহলে তাকে খাঁটি অন্তরে তওবা করে নতুনভাবে ঈমান আনয়ন করতে হবে এবং এগুলো যে একমাত্র আল্লাহ তাআলারই ক্ষমতা এ ব্যাপারে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবরাহীম - ধানমণ্ডি, ঢাকা

১৯৯৫. প্রশ্ন

ধারণা করা হয় যে, পীর হেদায়েতদাতা। পীর ধরলে সে হেদায়েত পেয়ে যাবে। এ কথা কি ঠিক?

উত্তর

: সুন্নত ও শরীয়তের অনুসারী হক্কানী পীর হেদায়েতের পথ প্রদর্শক। কোনো পীর হেদায়েতদাতা নয়। এমনকি কোনো নবীও হেদায়েতের মালিক ছিলেন না। হেদায়েতদাতা একমাত্র আল্লাহ তাআলা। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে পরিষ্কার বলা হয়েছে, (তরজমা) (হে নবী!) আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে সৎ পথে আনতে পারবেন না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা করেন সৎ পথে আনয়ন করেন। কে সৎ পথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন। ’ (সূরা কাসাস : ৫৬) অতএব কাউকে হেদায়েত দান করার ক্ষমতা কোনো মাখলুকের নেই। মাখলুক শুধু পথ দেখাতে পারে। হেদায়েত দেওয়ার মলিক একমাত্র আল্লাহ। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদের সূরা মায়েদা (আয়াত ৪১), সূরা জিন (আয়াত ২১-২৩) ও উল্লেখ আছে।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন - শরীয়তপুর

১৯৯৬. প্রশ্ন

আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পরপরই তার জন্য দুআ করা হয়। কেউ কেউ তা বৈধ মনে করেন আবার কেউ অবৈধ তথা বেদআত মনে করেন। কোন মতটি সঠিক তা জানতে চাই। এর সপক্ষে কোনো হাদীস থাকলে তাও জানতে ইচ্ছুক?

উত্তর

মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করার পর কিবলামুখী হয়ে তার জন্য দুআ করা মুস্তাহাব। এটি একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এক হাদীসে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘(তাবুক যুদ্ধে) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন রা.কে কবরে শায়িত করলেন এবং দাফনের পর কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে তাঁর জন্য দুআ করলেন। (দুআতে) তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট, তুমিও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও।’ (হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১৬৯; আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৪/৬৭৩; আসসিরাতুন নাবাবিয়্যাহ, ইবনে হিশাম ২/৫২৭; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮) অন্য হাদীসে আছে, হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা কর এবং সে যেন কবরের সওয়ালের জওয়াব সঠিকভাবে দিতে পারে এজন্য দুআ কর। কেননা এখনি তাকে সওয়াল করা হবে।’ (সুনানে আবু দাদউ, হাদীস : ৩২২১) এসব হাদীসের আলোকে ফকীহগণ দাফনের পর দুআ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। সুতরাং একে অবৈধ বা বিদআত বলা ঠিক নয়।

বযলুল মাজহূদ ১৪/১৯০; ইলাউস সুনান ৮/৩৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ লোকমান - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

১৯৯৭. প্রশ্ন

লোকমুখে শোনা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছলেন তখন হযরত জিবরাঈল আ. এই বলে সামনে অগ্রসর হতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন যে, আমি আর এক কদম অথবা আর এক চুল পরিমাণ অগ্রসর হলে আমার ডানাসমূহ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে-একথা সহীহ কি না?

উত্তর

: একথা ভিত্তিহীন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ ইবনে সিদ্দীক আলগুমারী রাহ. বলেন, ‘‘এরূপ ধারণা করা নিকৃষ্টতম বাড়াবাড়ি যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলেন তখন জিবরাঈল আ. পিছনে সরে গেলেন এবং বললেন, যদি আমি আর এক পা অগ্রসর হই তাহলে জ্বলে যাব। এটি একটি মিথ্যা ও বাজে কথা। বস্তুত সে রাতে জিবরাঈল আ. এক মুহূর্তের জন্যও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গ ত্যাগ করেননি। সিদরাতুল মুনতাহা এবং অন্যান্য স্থানেও তিনি তাঁর সাথেই ছিলেন। শরহুল মাওয়াহেবে এই বর্ণনা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এগুলো নিঃসন্দেহে মিথ্যা।

শরহুল মাওয়াহিব ৮/২০০

শেয়ার লিংক