মুহাম্মাদ রোকনুজ্জামান - দৌলতপুর, কুষ্টিয়া

৬১৬৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি, সূযোর্দয়ের আর অল্প সময় বাকি আছে। ঐসময় ওযু করতে গেলে ওয়াক্ত চলে যাবে। তাই আমি দ্রুত তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নিই।

মুহতারামের নিকট আমার জানার বিষয় হল, এভাবে তায়াম্মুম করে কি আমার নামায আদায় সহীহ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার তায়াম্মুম করা সহীহ হয়নি। কেননা পানির ব্যবস্থা থাকলে ওযু করতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলেও ওযু করাই জরুরি; তায়াম্মুম করলে তায়াম্মুম সহীহ হয় না। সুতরাং উক্ত তায়াম্মুম দ্বারা আদায়কৃত নামায সহীহ হয়নি। পুনরায় তা পড়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য, জানাযা ও ঈদের নামাযের হুকুম এর থেকে ভিন্ন। উক্ত দুই নামাযে কখনো যদি এমন হয় যে, ওযু করতে গেলে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করা সহীহ আছে।

কিতাবুল আছল ১/১০৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৮৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩১; আলমুহীতুর রাযাবী ১/১৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৪৬

শেয়ার লিংক

শামীম - ঢাকা

৬১৬৭. প্রশ্ন

গতকাল আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব মাগরিবের নামাযে তাকবীরে তাহরীমার পর ভুলবশত জোরে ছানা পড়ে ফেলেন। এবং নামায শেষে সাহু সিজদা না করেই সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। আমরা জানি, নামায যদি সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার  মতো কোনো ভুল হয়, আর সাহু সিজদা না করে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে ঐ নামাযটি পুনরায় পড়তে হয়।

জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেব যেহেতু ভুলবশত জোরে ছানা পড়ার পরেও নামায শেষে সাহু সিজদা করেননি তাই এখন কি আমাকে গতকালের ঐ নামাযটি পুনরায় পড়ে নিতে হবে?

উত্তর

নামাযে ভুলবশত ছানা জোরে পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই উক্ত নামাযে ইমাম সাহেব সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছেন। ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।

ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, পৃ. ১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৩৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৫১

শেয়ার লিংক

নজরুল ইসলাম - যশোর

৬১৬৮. প্রশ্ন

মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব ছুটিতে থাকলে আমাকেই ইমামতি করতে হয়। তখন কখনো কখনো কেরাত পড়ার সময় আয়াতের মাঝে আটকে যাই। অথবা পরবর্তী আয়াত স্মরণ করতে পারি না। তখন খুব পেরেশানীতে পড়তে হয়। তাই হুজুরের কাছে জানতে চাই, ইমাম সাহেব যদি কেরাতের মাঝে আটকে যায়, তাহলে করণীয় কী?

উত্তর

ইমাম নামাযে কেরাতে আটকে গেলে যদি ঐ নামাযের মাসনূন কেরাত পরিমাণ পড়া হয়ে যায় তাহলে ইমাম রুকুতে চলে যাবে। আর যদি কেরাতের ওয়াজিব পরিমাণ পড়া হয়ে যায়, কিন্তু ঐ নামাযের মাসনূন কেরাত পরিমাণ পড়া না হয়ে থাকে, তাহলে সম্ভব হলে অন্যস্থান থেকে পড়া শুরু করবে। এক্ষেত্রেও অন্যস্থান থেকে না পড়ে মুক্তাদীর লোকমার অপেক্ষা করা অনুত্তম। আর যদি তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কোথা থেকে পড়বে তা স্মরণে না আসে, আর লোকমা দেওয়ার মতো কেউ না থাকে তাহলে যেহেতু কেরাতের ওয়াজিব পরিমাণ পড়া হয়ে গেছে, তাই চাইলে রুকুতেও চলে যাতে পারবে। 

মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, বর্ণনা ২৮২৪, ২৮২৭; কিতাবুল আছল ১/১৭১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৯৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫২৪; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১৮৩

শেয়ার লিংক

আবু উমামা হারুন - মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

৬১৬৯. প্রশ্ন

জুমার খুতবার যে আযান দেওয়া হয় এর জবাব দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে শরয়ী বিধান কী? এক লোক বলেছে, এই আযানের জবাব দেওয়া যাবে না। তার কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে সঠিক শরয়ী সমাধান জানতে চাই। আশা করি, বিষয়টি জানাবেন।

উত্তর

জুমার খুতবার পূর্বে যে আযান দেওয়া হয় এর জবাব দেওয়া যাবে কি না এ ব্যাপারে ফকীহগণ থেকে দুই ধরনের মতামতই রয়েছে। একটি মতে, এ আযানের জবাব দেওয়া যাবে না। এক বর্ণনায় এসেছে

عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَابْنِ عُمَرَ؛ أَنَّهُمَا كَانَا يَكْرَهَانِ الصَّلاَة وَالْكَلاَمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بَعْدَ خُرُوجِ الإِمَامِ.

আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত আছে, তাঁরা জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবার জন্য বের হওয়ার পরে (মুসল্লীদের জন্য) নামায পড়া এবং কথা বলা অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৩৪০)

এই বর্ণনা এবং অন্যান্য আরও বর্ণনার আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, খুতবার আযানের জবাব দেওয়া যাবে না।

পক্ষান্তরে সহীহ বুখারীর একটি হাদীস এবং অন্য আরও বর্ণনার আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, জুমার খুতবার আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে।

সহীহ বুখারীতে হযরত আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন

سَمِعْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ، وَهُوَ جَالِسٌ عَلَى المِنْبَرِ، أَذَّنَ المُؤَذِّنُ، قَالَ: اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، قَالَ مُعَاوِيَةُ: اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، قَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: وَأَنَا، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: وَأَنَا، فَلَمَّا أَنْ قَضَى التَّأْذِينَ، قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى هَذَا المَجْلِسِ، حِينَ أَذَّنَ المُؤَذِّنُ، يَقُولُ مَا سَمِعْتُمْ مِنِّي مِنْ مَقَالَتِي.

আমি মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.-কে দেখেছি, তিনি মিম্বারে বসা ছিলেন এবং মুআযযিন আযান দিলেন। মুআযযিন যখন বললেন, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ তখন মুআবিয়া রা. বললেন, اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ। ... যখন আযান শেষ হল তখন তিনি বললেন, হে লোকসকল! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই মজলিশে যখন মুআযযিন আযান দেয় তখন এমনটিই বলতে শুনেছি, যেমনটি তোমরা আমাকে বলতে শুনলে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯১৪)

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. বলেন

خُرُوجُ الإِمَامِ يَقْطَعُ الصَّلاَةَ، وَكَلاَمُهُ يَقْطَعُ الْكَلاَمَ.

ইমাম খুতবার জন্য বের হলে নামায পড়া যাবে না এবং খুতবা শুরু করে দিলে আর কথা বলা যাবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৩৪২)

উল্লিখিত হাদীস ও আছারের আলোকে অনেক ফকীহ বলেছেন, খুতবা শুরু করার আগে আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে। হিন্দুস্তানের একাধিক ফকীহ এ মত দিয়েছেন। আব্দুল হাই লখনোভী রাহ., মুফতী কিফায়াতুল্লাহ রাহ., যফর আহমাদ উসমানী রাহ., মুফতী আব্দুর রহীম লাজপুরী রাহ. প্রমুখ ফকীহগণ জুমার আযানের জবাব দেওয়া জায়েয আছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।

সুতরাং কেউ যদি জুমার খুতবার আযানের জবাব দেয় তাহলে তাকে নিষেধ করা যাবে না।

কিতাবুল আছল ১/৩০৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯৫আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৮২; আসসিআয়াহ ২/৫৩; ফাতহুল বারী ২/৪৬০; উমদাতুল কারী ৬/২১৩; কিফায়াতুল মুফতী ৫/২০৫; ইমদাদুল আহকাম ১/৪১৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মারুফ হুসাইন - ঘোপ সেন্ট্রাল রোড, যশোর

৬১৭০. প্রশ্ন

মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী ও মিশকাত এর হাওলায় লেখা আছে বায়ুর শব্দ বা গন্ধ ছাড়া পুনরায় ওযু আবশ্যক নয়। তাহলে এই অবস্থায় নামায পড়া যাবে কি না? আবার বুখারী শরীফের ১৩৪, ১৭২, ১৯১৪ নম্বর হাদীসে আছে যে, কেউ যেন (বায়ু নির্গত) শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পেয়ে নামায না ছাড়ে। মুহতারামের কাছে আমার প্রশ্ন হল বায়ু নির্গত হল, কিন্তু শব্দ হল না ও গন্ধ পাওয়া গেল না, তাহলে ওযু থাকবে কি না? ঐ অবস্থায় নামায পড়া যাবে কি না?

উত্তর

মূল জবাবের পূর্বে দুটি বিষয় বোঝা দরকার :

১. বায়ু নির্গত হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ।

২. বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়টি যেহেতু দৃশ্যমান নয়, তাই যতক্ষণ তা বের হওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ওযু নষ্ট হবে না।

বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো মিলিয়ে পড়লেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য নিচে এ বিষয়ে কিছুটা বিশদ আলোচনা করা হল।

আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ، قَالَ رَجُلٌ مِنْ حَضْرَمَوْتَ: مَا الحَدَثُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ قَالَ: فُسَاءٌ أَوْ ضُرَاطٌ.

যার হদস হয়েছে সে (পুনরায়) ওযু না করে নামায পড়লে তার নামায আদায় হয় না। (আবু হুরায়রা রা.-এর নিকট হাদীসটি শুনে) হাযরামউতের অধিবাসী এক ব্যক্তি তাকে বললেনহে আবু হুরায়রা, হদস, হওয়ার মানে কী?

তিনি বললেন, শব্দহীন অথবা শব্দবিশিষ্ট বায়ু নির্গত হওয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৫)

আলী ইবনে তল্ক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

إِذَا فَسَا أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ، فَلْيَنْصَرِفْ فَلْيَتَوَضَّأْ وَلْيُعِدِ الصَّلَاةَ.

কারও যদি নামাযের মধ্যে শব্দহীন বায়ু নির্গত হয় তাহলে সে যেন নামায ছেড়ে দেয়। তারপর ওযু করে পুনরায় নামাযটি আদায় করে নেয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২০৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ১১৬৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২২৩৬)

 প্রশ্নে সহীহ বুখারীর উদ্ধৃতিতে যে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গ  উল্লেখ করা হয়নি; বরং হাদীসের শুধু শেষাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। সহীহ বুখারীর যে অধ্যায়ে হাদীসটি আনা হয়েছে সে অধ্যায়ের শিরোনামসহ পুরো হাদীসটি পড়লেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেত। কেননা উক্ত বর্ণনায় শব্দ ও গন্ধের কথা বলা হয়েছে বায়ু নির্গত হওয়ার সন্দেহে আক্রান্ত এক ব্যক্তির ব্যাপারে। শব্দ ও গন্ধের কথা তাকে এজন্যই বলা হয়েছে যে, সে যেন বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে কেবল সন্দেহের কারণেই ওযু ভেঙ্গে গেছে মনে করে নামায ছেড়ে না দেয়। শিরোনামসহ পুরো হাদীসটি এই

بَابُ مَنْ لاَ يَتَوَضَّأُ مِنَ الشَّكِّ حَتَّى يَسْتَيْقِنَ

...عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّهُ شَكَا إِلَى رَسُولِ اللهِ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلُ الَّذِي يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ يَجِدُ الشَّيْءَ فِي الصَّلاَةِ؟ فَقَالَ: لاَ يَنْفَتِلْ أَوْ لاَ يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا.

অধ্যায় : (ওযু ভঙ্গের ব্যাপারে) নিশ্চিত না হয়ে শুধু সন্দেহের কারণে নতুন ওযু আবশ্যক না হওয়া

...আব্বাদ ইবনে তামীম রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন তার মনে হয় যে, নামাযের মধ্যে কিছু (বায়ু নির্গত) হয়ে গেছে। (অর্থাৎ এমনটি মনে হলে তখন তার করণীয় কী?)

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শব্দ বা গন্ধ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সে যেন নামায না ছাড়ে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৬১)

অতএব সহীহ বুখারী থেকেই পরিষ্কার যে, বায়ু নির্গত হওয়া নিশ্চিত হলেই ওযু ভেঙে যায়। আর সন্দেহে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যম শব্দ ও গন্ধ। এই মাসআলা এবং সহীহ বুখারীর বর্ণনার এই ব্যাখ্যা মুসলিম উম্মাহ্র ইজমা দ্বারাও প্রমাণিত। ইমাম নববী রাহ. বলেন

حتى يسمع صوتا أو يجد ريحا، معناه : حتى يعلم وجود أحدهما، ولا يشترط السماع والشم بإجماع المسلمين.

শব্দ বা গন্ধ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সে (বায়ু নির্গত হওয়ার সন্দেহগ্রস্ত ব্যক্তি) যেন নামায না ছাড়ে, হাদীসের উক্ত কথাটির অর্থ হল, দুটোর কোনো একটি ঘটেছে বলে নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারা। শব্দ শোনা বা গন্ধ পাওয়া শর্ত নয়। এটি মুসলিম উম্মাহ্র ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। (আলমিনহাজ শরহে মুসলিম, নববী ৪/৪৯)

ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবী রাহ. বলেন

معناه : حتى يتيقن الحدث، ولم يرد به الصوت نفسه ولا الريح نفسها حسب، وقد يكون أطروشاً لا يسمع الصوت، وأخشم لا يجد الريح، ثم تنتقض طهارته إذا تيقن وقوع الحدث منه.

শব্দ বা গন্ধ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সে যেন নামায না ছাড়ে হাদীসের উক্ত কথাটির অর্থ হল, বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে সে যেন নামায না ছাড়ে। সরাসরি শব্দ শোনা কিংবা গন্ধ পাওয়া এখানে উদ্দেশ্য নয়। কারণ কোনো ব্যক্তি বধির হয়, যে কোনো শব্দ শুনতে পায় না। আবার কেউ হয় ঘ্রাণশক্তিহীন, যে কোনো গন্ধ পায় না। তা সত্ত্বেও সে যখন বায়ু নির্গত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় তখন তার ওযু ভেঙ্গে যায়। (মাআলিমুস সুনান, খাত্তাবী ১/৬৪)

ইবনে হাযম রাহ. বলেন

والريح الخارجة من الدبر خاصة لا من غيره بصوت خرجت أم بغير صوت. وهذا أيضا إجماع متيقن، ولا خلاف في أن الوضوء من الفسو والضراط.

শব্দসহ হোক কিংবা শব্দ ছাড়া, পায়ু পথ থেকে বায়ু নির্গত হলেই ওযু ভেঙ্গে যাবে। এটি নিঃসন্দেহে ঐক্যমত্যপূর্ণ বিষয়। শব্দবিশিষ্ট এবং শব্দহীন বায়ু নির্গত হওয়ার কারণে ওযু আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে কোনো মতভিন্নতা নেই। (আলমুহাল্লা, ইবনে হাযম ১/২১৮; মারাতিবুল ইজমা, পৃ. ৪০)

আল্লামা আইনী রাহ. বলেন

قال الإسماعيلي : هذا من رسول الله عليه الصلاة والسلام فيمن شك في خروج ريح منه، لا نفي الوضوء إلا من سماع صوت أو وجدان ريح.

ইসমাঈলী রাহ. বলেন, শব্দ বা গন্ধ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সে যেন নামায না ছাড়ে কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়ে সন্দেহগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যাপারে বলেছেন। কথাটির উদ্দেশ্য এই নয় যে, শব্দ বা গন্ধ পাওয়া ব্যতিরেকে ওযু ভাঙ্গবে না। (উমদাতুল কারী ২/২৫২)

আল্লামা আইনী রাহ. আরও বলেন

ثم اعلم أن حقيقة المعنى في قوله حتى يسمع صوتا أو يجد ريحا حتى يعلم وجود أحدهما ولا يشترط السماع والشم بالإجماع.

শব্দ বা গন্ধ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সে (অর্থাৎ বায়ু নির্গত হওয়ার সন্দেহগ্রস্ত ব্যক্তি) যেন নামায না ছাড়ে কথাটির আসল অর্থ হল, দুটোর কোনো একটি হয়েছে বলে নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারার আগ পর্যন্ত সে যেন নামায না ছাড়ে। শব্দ শোনা বা গন্ধ পাওয়া শর্ত নয়। এটি ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। (উমদাতুল কারী ২/২৫৩)

আরো দেখুন সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/৫৯; শরহুস সুন্নাহ, বাগাবী ১/৩৫৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী, জাসসাস ১/৩৬৭; আরিযাতুল আহওয়াযী, ইবনুল আরাবী ১/১০০; ফাতহুল বারী ১/২৮৭

সুতরাং প্রশ্নোক্ত হাদীস শরীফে শব্দ ও গন্ধের কথা ব্যাপকভাবে বলা হয়নি। বরং বায়ু নির্গত হওয়ার সন্দেহগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে। কিন্তু যার নিশ্চিতভাবে বায়ু নির্গত হয়েছে সে শব্দ বা গন্ধ না পেলেও ওযু ভেঙ্গে যাবে।

অতএব নিশ্চিতভাবে বায়ু নির্গত হওয়ার পরও শুধু শব্দ বা গন্ধ না পাওয়ার কারণে ওযু নষ্ট না হওয়ার ধারণা এবং এর স্বপক্ষে উক্ত হাদীসগুলো পেশ করা নিতান্তই ভুল।

শেয়ার লিংক

হুসাইন আহমাদ - মিরপুর, ঢাকা

৬১৭১. প্রশ্ন

আমি একজন নাজেরা বিভাগের শিক্ষক, ছাত্রদেরকে পড়ানোর সময় কখনো এমন হয় যে, একটি সিজদার আয়াত প্রথমে আমি পড়িয়ে দিই। অতঃপর ছাত্ররা পড়লে পুনরায় তা আমি শুনি। এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় আমার ওপর সিজদা তিলাওয়াত একটি ওয়াজিব হবে, না একাধিক? সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে একটি সিজদা তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে। কেননা এক মজলিসে একটি সিজদার আয়াত নিজে তিলাওয়াত করা এবং উক্ত আয়াত এই মজলিসেই অন্য কারও থেকে শোনার দ্বারা একটি সিজদাই ওয়াজিব হয়।

বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৬৬; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩২৭

শেয়ার লিংক

রাহাত - ঢাকা

৬১৭২. প্রশ্ন

কোনো বাচ্চা জন্মের কয়েকদিন পরেই যদি মারা যায়, তাহলে তার কাফনের শরীয়তসম্মত পদ্ধতি কী হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

ছোট্ট শিশু মারা গেলেও বড়দের মতো তিন কাপড়েই কাফন দেওয়া উত্তম। তবে দুটি কাপড়ে এমনকি প্রয়োজনে একটি কাপড়েও কাফন দেওয়া যাবে।

কিতাবুল আছল ১/৩৪৬; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৯; আযযিয়াউল মানাবী ২/৪৭৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/২০৪

শেয়ার লিংক

আবিদ মুহসিন - নেত্রকোণা

৬১৭৩. প্রশ্ন

আমি প্রতি বছর যাকাতের কিছু টাকা আমার গরীব আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে থাকি। তাদের মধ্যে যাদের বাড়ি দূরে তাদের কাছে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিই। হুজুরের কাছে জানতে চাই, বিকাশে যাকাতের টাকা পাঠালে যে খরচ লাগে তা কি যাকাতের টাকা থেকে দেওয়া যাবে, নাকি তা আলাদা আমার পক্ষ থেকে দিতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি যাকাত গ্রহীতার পক্ষ থেকে বিকাশে পাঠানোর আবেদন ছাড়া নিজ থেকেই বিকাশের মাধ্যমে যাকাতের টাকা পাঠান, তাহলে ক্যাশআউট খরচ যাকাতের টাকা থেকে দেওয়া যাবে না। তা আলাদা নিজের পক্ষ থেকে দিতে হবে। কেননা যাকাতের টাকা হকদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাকাতদাতার দায়িত্ব। এতে কোনো খরচের প্রয়োজন হলে তাকেই তা বহন করতে হবে। অবশ্য যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি যদি নিজ থেকেই যাকাতদাতার কাছে যাকাতের টাকা বিকাশ ইত্যাদিতে পাঠাতে বলে, তাহলে সেক্ষেত্রে যাকাতদাতার জন্য ক্যাশআউট খরচ দেওয়া আবশ্যক নয়।  এক্ষেত্রে এই খরচ বহন করা যাকাতগ্রহীতারই দায়িত্ব। অবশ্য এক্ষেত্রেও যাকাতদাতা যদি খরচ বহন করে তবে তার জন্য এটি উত্তম ও সাওয়াবের কাজ হবে।

শরহু মুখতাসারিল কারখী, কুদূরী ২/১৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২; তুহফাতুল ফুকাহা ১/৩০৫; মুগনিল মুহতাজ ৩/১৫২

শেয়ার লিংক

হাসিবুল ইসলাম - লালমনিরহাট

৬১৭৪. প্রশ্ন

আমার দাদার উপর হজ্ব ফরয হওয়া সত্ত্বেও অসুস্থতার কারণে তিনি হজ্বে যেতে পারছিলেন না। এই বছর তিনি কিছুটা সুস্থতা অনুভব করছেন। তাই তিনি এই বছর হজ্বে যেতে চাচ্ছেন। তবে বার্ধক্যের কারণে দাদার জন্য হাঁটা খুব কষ্টকর। বিশেষ করে ভিড়ের মধ্যে মাতাফে পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করা তার জন্য প্রায় অসম্ভব। এখন আমি জানতে চাচ্ছি, আমার দাদা যদি হুইলচেয়ারে বসে তাওয়াফ করেন তাহলে তার তাওয়াফ সহীহ হবে কি? এবং এর জন্য কোনো জরিমানা দিতে হবে কি?

উত্তর

আপনার দাদা যেহেতু পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করার সক্ষমতা রাখেন না, তাই তার জন্য হুইলচেয়ারে বসে তাওয়াফ করা জায়েয হবে। এজন্য তার উপর কোনো জরিমানা আসবে না। কেননা পায়ে হেঁটে তাওয়াফ করার শক্তি না থাকলে হুইলচেয়ার বা বাহনে চড়ে তাওয়াফ করা জায়েয।

সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৩৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০৭; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯০; আলবাহরুল আমীক ২/১১৪৩; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১১৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রুহুল আমীন - মিরপুর, কুষ্টিয়া

৬১৭৫. প্রশ্ন

গত মাসে আমি উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ গমন করি। সেখানে থাকা অবস্থায় একদিন বিকেলে ভুলে ওযু ছাড়া নফল তাওয়াফ করে ফেলি। তাওয়াফের কিছুক্ষণ পর যখন বিষয়টি মনে পড়ল তখন ওযু করে মাগরিব আদায় করলাম এবং বিকেলের তাওয়াফের পরিবর্তে আরেকটি তাওয়াফ করলাম।

মুহতারাম হুজুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, ভুলে ওযু ছাড়া নফল তাওয়াফ করলে কি কোনো জরিমানা দম ওয়াজিব হবে?

উত্তর

নফল তাওয়াফ বিনা ওযুতে করলে কোনো দম ওয়াজিব হয় না। তবে একারণে প্রত্যেক চক্করের পরিবর্তে সদকাতুল ফিতর পরিমাণ আদায় করা ওয়াজিব হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে ওযু করে পুনরায় তাওয়াফ করে নিলে জরিমানা মাফ হয়ে যাবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ওযু করে পুনরায় তাওয়াফ করেছেন তাই উক্ত জরিমানা মাফ হয়ে গেছে।

আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৩৮; আলগায়া, আবুল আব্বাস সারুজী ৯/২১৩; আলবাহরুল আমীক ২/১১১৬; মানাসিকে মোল্লা আলী কারী, পৃ. ৩৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫০

শেয়ার লিংক

মুশাররফ হুসেন - লিংকরোড, কক্সবাজার

৬১৭৬. প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ, এবছর আমি হজ্ব করে এসেছি। হজ্ব চলাকালে আরাফাহ থেকে মুযদালিফায় যাওয়ার পথে হোঁচট খেয়ে ডান পায়ের এক আঙ্গুলের নখ উপড়ে যায়। কেবলমাত্র তার একটি পাশই গোশতের সাথে লেগে ছিল। এমতাবস্থায় আমি তা নেইলকাটার দিয়ে কেটে ফেলি। পরে আমাদের মুআল্লিম সাহেবকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এতে সমস্যা নেই। কোনো জরিমানা আসবে না।

জনতে চাই, মুআল্লিম সাহেবের কথা কি ঠিক? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

হাঁ, ঐ মুআল্লিম ঠিকই বলেছেন। উপড়ে যাওয়া নখটি কেটে ফেলার কারণে আপনার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। কেননা ইহরাম অবস্থায় ভালো নখ কাটা নিষেধ। উপরে যাওয়া নখ কাটা নিষেধ নয়।

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২৯০১; আলমাবসূত, সারাখসী, ৪/৭৮; আলমুহীতুর রাযাবী ২/২৪৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৭৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৪; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী, পৃ. ৩৩১

শেয়ার লিংক

আবদুল জলীল - চট্টগ্রাম

৬১৭৭. প্রশ্ন

আলহামদু লিল্লাহ কয়েক বছর পর পরই আমার ওমরা করার সুযোগ হয়। কিছুদিন আগেও একবার ওমরা করে আসলাম। কিন্তু এবার ওমরার তাওয়াফ করার সময় চক্কর ছয়টি হয়েছে মনে করে আরও একটি চক্কর পূর্ণ করি। পরে জানতে পারি যে, সেটা ছিল অষ্টম চক্কর। আগেই সাত চক্কর পুরো হয়ে গেছে। অতঃপর ওভাবেই আমি ওমরার বাকি কাজ আদায় করি। পরে বিষয়টি এক বন্ধুকে জানালে সে বলল, অষ্টম চক্করটি শুরু করার কারণে আপনার ওপর নতুন তাওয়াফ আবশ্যক হয়ে গেছে।

জানতে চাই, ঐ কথা কি ঠিক? যদি তাই হয় এখন আমার করণীয় কী? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

আপনার বন্ধুর উক্ত কথা ঠিক নয়। অতিরিক্ত চক্করটি যেহেতু সপ্তম চক্কর মনে করে করেছেন, নতুন তাওয়াফের নিয়তে করেননি তাই এ কারণে নতুন আরেকটি তাওয়াফ করা আবশ্যক হয়নি। ভুলবশত অতিরিক্ত কোনো চক্কর করা হলে এর কারণে নতুন করে আরেকটি তাওয়াফ আবশ্যক হয়ে যায় না।

আলমুহীতুর রাযাবী ২/২০০; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২৯; আলবাহরুল আমীক ২/১২৪৮; মাজমাউল আনহুর ১/৪০২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৯৮

শেয়ার লিংক

রহমত আলী - হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ

৬১৭৮. প্রশ্ন

কয়েক সপ্তাহ আগে আমাদের গ্রামের এক মহিলার স্বামী মারা যায়। ঐ মহিলার শুধু দুজন মেয়ে আছে। মহিলাটি আগে থেকেই সামান্য দূরে এক বাড়িতে কাজ করত। এখন তার এটা ছাড়া উপার্জনের অন্য কোনো মাধ্যম নেই।

তাই মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, ইদ্দত চলাকালে সে দিনে ঐ বাড়িতে গিয়ে কাজ করতে পারবে কি? শরীয়ত এ ব্যাপারে কী বলে? আশা করি দ্রুত জানাবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বাস্তবেই যদি ঐ মহিলার ইদ্দতের সময় বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করা ছাড়া ভরণপোষণের অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকে তাহলে উপার্জনের জন্য দিনে বাইরে যেতে পারবে। রাতে অবশ্যই নিজ ঘরেই অবস্থান করতে হবে।

কিতাবুল আছল ৪/৪০৫; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৩; আলমুহীতুর রাযাবী ৩/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩৬

শেয়ার লিংক

নূরজাহান - বগুড়া

৬১৭৯. প্রশ্ন

গতবছর আমার বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকেই বিভিন্ন কারণে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মিল হচ্ছিল না। বিশেষ করে আমার স্বামীর কিছু বিষয় আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই এ বছরের শুরুতে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে তার কাছ থেকে খোলা তালাক নিয়ে নিই। সে মহরের একটি অংশ আদায় করেছিল। আর কিছু অংশ বাকি ছিল এখন সে ঐ পঞ্চাশ হাজার টাকার সাথে আদায়কৃত মহরও ফেরত চাচ্ছে। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমি কি মহরের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য? অন্যথায় মহরের অপরিশোধিত অংশ কি আমি দাবি করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মহর বাবদ যে টাকা গ্রহণ করেছিলেন খোলা তালাকের পর তা ফেরত দিতে হবে না। তবে মহরের যে অংশ আপনার পাওনা আছে তালাকের পর তা আর দাবি করতে পারবেন না। কেননা মহর ছাড়া অন্য কিছুর বিনিময়ে খোলা তালাক হলে সেক্ষেত্রে স্বামী মহর বাবদ যা আদায় করেছে তা ফেরত পায় না এবং মহরের কোনো অংশ বাকি থাকলে তাও মাফ হয়ে যায়।

কিতাবুল আছল ৪/৫৬৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/১৮৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১০১; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/২০৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ যাকওয়ান - গুলিস্তান, ঢাকা

৬১৮০. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় রোযার মাধ্যমে কসমের কাফফারা আদায় করতে শুরু করেছে। দুদিন রোযা রাখার পর তৃতীয় রোযার দিন সম্পদের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করার মতো কিছু সম্পদ সে পেয়ে যায়। তাই সে নতুন করে সম্পদের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করার নিয়তে উক্ত রোযাটি ভেঙে ফেলে।

প্রশ্ন হল, উক্ত রোযাটির কি কাযা আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত রোযাটি ভেঙে ফেলা অনুত্তম হয়েছে। তবে পরবতীর্তে তা কাযা করতে হবে না। কেননা কেউ যদি অর্থ-ব্যয়ের মাধ্যমে কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য না থাকার কারণে রোযার মাধ্যমে কাফফারা আদায় শুরু করে আর উক্ত রোযা অবস্থায় সে আর্থিক সামর্থ্য ফিরে পায় তাহলে তার ওপর সম্পদ দ্বারা কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায় এবং উক্ত রোযাটি আর কাফফারার রোযা থাকে না। তাই উক্ত রোযা ভেঙে ফেললে এর কাযা করা জরুরি নয়। তবে এটিকে নফল হিসেবে পূর্ণ করা উত্তম।

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৪০৭; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ২/২৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৭

শেয়ার লিংক

রেজাউল হক - খুলনা

৬১৮১. প্রশ্ন

আমি জনৈক ব্যক্তিকে ব্যবসার জন্য কিছু টাকা প্রদান করার ইচ্ছা করেছি। কিন্তু লোকটি খুব একটা বিশ্বস্ত নয়। তাই আমার এক ছেলেকে ব্যবসার কাজে সহযোগী হিসেবে তার সাথে রাখতে চাই এবং আমরা ব্যবসার লভ্যাংশ নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে বণ্টন করতে চাই। আমার জন্য ৪৫%, মুযারিবের (অর্থাৎ যে ব্যবসা করবে তার) জন্য ৪০% এবং আমার ছেলের জন্য ১৫%। এখন হুজুরের কাছে প্রশ্ন হল, আমার ছেলেকে মুযারিবের সহযোগী হিসেবে রাখতে পারব কি না? এবং তার জন্য ব্যবসার লাভের অংশ নির্ধারণ করা বৈধ হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছেলেকে উক্ত ব্যবসায়ীর সহযোগী হিসাবে রাখতে পারবেন এবং তার জন্য শতকরা হারে লভ্যাংশ নির্ধারণ করাও বৈধ হবে। এক্ষেত্রে মূল মুযারিবের সাথে সেও মুযারিব হিসাবে গণ্য হবে এবং মুযারাবার যাবতীয় বিধানাবলি তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১৪৮; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/১৪৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৫৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৫৪

শেয়ার লিংক

খালেদ মাহমুদ - সাভার, ঢাকা

৬১৮২. প্রশ্ন

আমাদের একটি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান আছে। এ দোকানে আমরা বিভিন্ন কোম্পানীর ফ্রিজ, এসি, ফ্যান ইত্যাদি বিক্রি করে থাকি। আমাদের দোকানের উল্লিখিত পণ্যগুলোর কোনো কোনোটিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে গ্যারান্টি অথবা ওয়ারেন্টি দেওয়া থাকে। তাই আমরা উক্ত ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টি সহকারেই পণ্য বিক্রি করে থাকি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এভাবে গ্যারান্টি অথবা ওয়ারেন্টি সহকারে পণ্য বিক্রি করা কি জায়েয আছে?

উত্তর

হাঁ, গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টি সহকারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে। এতে অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে কোম্পানির কর্তব্য হল, ক্রেতার সাথে তার কৃত প্রতিশ্রম্নতি পূর্ণ করা। আর ক্রেতাও ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির শর্তগুলো রক্ষা করবে।

আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩৯৩; আলবাহরুর রায়েক ৬/৮৮; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৬৫

শেয়ার লিংক

মাহফুজুর রহমান - ফরিদাবাদ, ঢাকা

৬১৮৩. প্রশ্ন

আমি একটি মাকতাবা (লাইব্রেরি)-এর মালিক। আমি যখন মাকতাবা থেকে কোনো কিতাব ছাপি তখন আমার অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এদিকে কিতাবটি ছাপার পর কী পরিমাণ বিক্রি হবেÑ সেটাও অনিশ্চিত থাকে। তাই এক্ষেত্রে যদি বেশ কিছু কপি অগ্রিম বিক্রি করতে পারি তাহলে আমার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। এজাতীয় ক্ষেত্রে সাধারণত অনেক মাকতাবা অল্প দামে অগ্রিম কিতাব বিক্রি করে দেয়।

মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, এভাবে অগ্রিম বেচা-কেনা করতে কোনো সমস্যা আছে কি না?

উত্তর

কিতাব ছাপানোর পূর্বে তা বিক্রি করা পন্যের আগাম ক্রয়-বিক্রয় (বাইয়ে সালাম)-এর অন্তভুর্ক্ত। সুতরাং এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হওয়ার জন্য কিতাবের মান ও অবস্থা পূর্বেই সুস্পষ্ট করে নিতে হবে। নিম্নে এ সংক্রান্ত শর্তগুলো উল্লেখ করা হল

১. কিতাবের নাম, পরিচিতি, কলেবর, কত কপি তা সুনির্ধারিত করে নিতে হবে।

২. কাগজ, ছাপা ও বাধাইয়ের গুণগত মান উল্লেখ থাকতে হবে।

৩. কিতাব হস্তান্তরের সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে।

এসব শর্তসাপেক্ষে লেনদেন করলে তা জায়েয হবে। মোটকথা, এক্ষেত্রে বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার যাবতীয় শর্ত পাওয়া যেতে হবে।

আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দাহ ১৩৬৭-১৩৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফেরদৌস আলআমান - শ্রীপুর, গাজীপুর

৬১৮৪. প্রশ্ন

দেশের কোনো কোনো এলাকায় কুরবানীর গোশত বণ্টনের একটি সমাজপ্রথা চালু আছে। এই সমাজের নিয়ম হল, এলাকার যারা কুরবানী করেন, তাদের কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের একভাগ বাধ্যতামূলকভাবে সমাজে জমা করতে হয়। পরবতীর্তে এই গোশত নির্দিষ্ট সমাজভুক্ত সকল ব্যক্তিবর্গ, যারা কুরবানী করেছেন এবং যারা কুরবানী করেননি সবার মধ্যে বণ্টন করা হয়। এরূপ বণ্টন কি শরীয়মসম্মত? এক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর

কুরবানীর গোশত বণ্টনের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকায় প্রচলিত একটি সমাজপ্রথা। সাধারণ দৃষ্টিতে এটি একটি ভালো উদ্যোগ মনে হতে পারে; কিন্তু কোনো সামাজিক প্রথা বা রীতি পালন করার জন্য তা শরীয়তের দৃষ্টিতে শুদ্ধ ও আমলযোগ্য কি না তাও নিশ্চিত হতে হয়। ভালো নিয়ত থাকলেও শরীয়ত সমর্থন করে না অথবা ইসলামের নীতির সাথে মানানসই নয় এমন কোনো কাজ করা বা এমন কোনো রীতি অনুসরণ করার সুযোগ নেই।

প্রশ্নোক্ত সমাজপ্রথাটিতে উদ্দেশ্য ভালো হলেও যে পদ্ধতিতে তা করা হয় এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মৌলিক কিছু আপত্তি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, সামাজিক এ প্রথার কারণে সকলেই তার কুরবানীর এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজের লোকদের হাতে দিতে বাধ্য থাকে। এবং এর বিলি-বণ্টন ও গ্রহিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু সমাজপতিদেরই হাত থাকে। গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা শরীয়তসম্মত নয়। কেননা শরীয়তে কুরবানী ও গোশত বণ্টন একান্তই কুরবানীদাতার নিজস্ব কাজ।

ঈদের দিন সম্মিলিতভাবে জামাতে নামায আদায় করতে বলা হলেও কুরবানীর জন্য কত মূল্যের পশু কিনবে, সে পশু কোথায় জবাই করবে, গোশত কীভাবে বণ্টন করবেএ বিষয়গুলো কুরবানীদাতার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শরীয়তে কুরবানীর কিছু গোশত সদকা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃখীদের কুরবানীর গোশত দিতে তাকিদও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কুরবানীদাতার উপর অপরিহার্য করা হয়নি। বরং কুরবানীদাতা কী পরিমাণ গোশত নিজে রাখবে, কী পরিমাণ সদকা করবে এবং কাকে কাকে বিলি করবে আর কী পরিমাণ আগামীর জন্য সংরক্ষণ করবে এগুলো কুরবানীদাতার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার এবং ব্যক্তিগতভাবে করার কাজ। এটিকে সামাজিক নিয়মে নিয়ে আসা ঠিক নয়।

তাই শরীয়তের মাসআলা জানা না থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোশত বণ্টনের প্রশ্নোক্ত যে পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে, তা পরিহারযোগ্য। নিম্নে সংক্ষেপে প্রশ্নোক্ত প্রথাটির কিছু ক্ষতির দিক উল্লেখ করা হল

১. অনেক কুরবানীদাতার পরিবারের সদস্য-সংখ্যা বেশি হওয়ায় অথবা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে নিজ পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখার প্রয়োজন হয়; ফলে সে পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখতে চায়। আবার অনেকে তার কোনো দরিদ্র আত্মীয়কে কুরবানীর গোশত দিতে চায়। কিন্তু সামাজিক এই বাধ্যবাধকতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সামাজিক রীতি অনুযায়ী কুরবানীর এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজে দিতে বাধ্য হয়। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

إِنَّهُ لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ.

কোনো মুসলমানের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল নয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৬৯৫)

২. প্রশ্নোক্ত প্রথায় গোশতদাতা তার দানের অংশটি কাকে দেবে সে স্বাধীনতা হারায়। হয়তো সে তার নিকটাত্মীয় অথবা পরিচিত কাউকে একটু বেশি পরিমাণে দিত, কিন্তু এক্ষেত্রে তার জন্য এমনটি করার সুযোগ থাকে না।

৩. অনেক মানুষ এমন আছেন, যারা প্রত্যেকের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে চান না। আর শরীয়তও কাউকে সকলের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু সামাজিক এই রীতির কারণে গোশত গ্রহণকারী প্রত্যেকেই অন্য সকলের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বলাবাহুল্য এ ধরনের ঐচ্ছিক বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা মোটেই উচিত নয়।

৪. এ ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপের আরেকটি ক্ষতির দিক হল, সমাজের কিছু মানুষ এমন থাকে, যাদের আয় রোজগার হারাম পন্থায় হয়। সেক্ষেত্রে জেনে বুঝে তাদের কুরবানীর গোশত সমাজের সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়। অথচ হারাম উপার্জনের মাধ্যমে কুরবানীকৃত পশুর গোশত খাওয়া জায়েয নয়।

মোটকথা, শরীয়তের শিক্ষা মোতাবেক প্রত্যেককে তার কুরবানীর অংশ দান করার বিষয়ে স্বাধীন রাখতে হবে। প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে বা অন্য কোনোভাবে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। কুরবানীদাতা নিজ দায়িত্ব ও বিবেচনা মতো যাকে যে পরিমাণ হাদিয়া করতে চায় করবে এবং গরীব-মিসকীনকে যে পরিমাণ সদকা করতে চায় করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে শত শত বছর যাবৎ এ পদ্ধতিই চলমান আছে। এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা জরুরি। শরীয়ত যা চালু করতে বলেনি এমন কোনো প্রথা চালু করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭২; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮

শেয়ার লিংক

আসগর আলী - টেকনাফ, কক্সবাজার

৬১৮৫. প্রশ্ন

এবার কুরবানীর পশু কেনার জন্য হাটে গেলাম। একটি গরু খুবই পছন্দ হয়ে গেল। বিলম্ব করলে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ভেবে তখনই গরুটি কিনে ফেললাম। কেনার সময় মনে মনে নিয়ত ছিল, ঐ গরুতে পরিচিতদের শরীক করার চেষ্টা করব। গরুটি বাড়িতে আনার পর আমার এক চাচাত ভাই ও দুই প্রতিবেশী ঐ গরুতে শরীক হতে রাজি হয়ে গেল।

মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, গরুটি কেনার সময় তো তারা আমার সঙ্গে ঐ গরুতে শরীক ছিল না। পরে এভাবে তাদেরকে শরীক করে নেওয়া কি ঠিক হয়েছে? এতে কি সকলের কুরবানী আদায় হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কুরবানী পশুটি ক্রয়ের সময়ই যেহেতু তাতে অন্যকে শরীক নেওয়ার নিয়ত ছিল তাই পরে শরীক নেওয়া ঠিক হয়েছে। এতে কোনো সমস্যা হয়নি।

প্রকাশ থাকে যে, পুরা গরু নিজে কুরবানী দেওয়ার নিয়তে ক্রয় করলে তাতে অন্যদের শরীক নেওয়া মাকরূহ। যদিও এক্ষেত্রেও সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে ফকীহগণ বলেন, এক্ষেত্রে পশু ক্রেতার জন্য উচিত হবে, শরীকদের থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া।

কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৫; খিযানাতুল আকমাল ৩/৫৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৭

শেয়ার লিংক

রেজাউল করিম - গোয়াইনঘাট, সিলেট

৬১৮৬. প্রশ্ন

গত বছর আমি কুরবানীর জন্য একটি গরু ক্রয় করি। কিন্তু পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে আমি কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে গরুটি কুরবানী করতে পারিনি।

হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এখন আমার করণীয় কী? আশা করি সঠিক সমাধান জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার করণীয় হল, উক্ত গরুটি অথবা তার সমমূল্য সদকা করে দেওয়া।

ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২০

শেয়ার লিংক

শাহরিয়ার চৌধুরী - ডুমুরিয়া, খুলনা

৬১৮৭. প্রশ্ন

গত কুরবানীতে আমি একটি ষাঁড় গরু ক্রয় করি। গরুটি ছিল বেশ শক্তিশালী। কুরবানী সময় গরুটিকে জবাই করার জন্য শোয়াতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। সামনের দুই পায়ে রশি বেঁধে গরুটিকে মাটিতে ফেলার চেষ্টা করা হয়। জোরাজুরির একপর্যায়ে গরুটির পেছনের একটি পা নিচে পড়ে ভেঙে যায়। তখন গরুটি খঁুড়িয়ে খুঁড়িয়ে একটু ছোটাছুটি করে। পরে আরও কিছু লোকের সাহায্যে গরুটিকে শুইয়ে কুরবানী করা হয়। ওই সময় কেউ কেউ  বলছিল, কুরবানীর আগে যেহেতু গরুর একটি পা ভেঙে গেছে, তাই এই গরু দিয়ে কুরবানী সহীহ হয়নি।

জানার বিষয় হল, ওপরের বিবরণ অনুযায়ী আমার কুরবানী কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ গরুটি দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হয়েছে। কেননা জবাইয়ের জন্য পশু শোয়ানোর সময় বা জবাই করার সময় যদি পশুর পা ভেঙে যায় অথবা অন্য কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে ওই পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হয়ে যায়। কেননা শোয়াতে গিয়ে এমন হওয়াটা স্বাভাবিক ও বাস্তবসম্মত ওজর। তাই শরীয়ত এতে ছাড় দিয়েছে।

অতএব, যারা বলেছে আপনার কুরবানী সহীহ হয়নি তাদের কথা ঠিক নয়।

কিাতাবুল আছল ৫/৪১০; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৩; আদ্দুরুল মুখতার ৬/৩২৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

শেয়ার লিংক

কাজী আমজাদ হোসেন - নগরকান্দা, ফরিদপুর

৬১৮৮. প্রশ্ন

আমি জানি, কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য গরীব-মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হয়। কিন্তু এবার কুরবানীর সময় শুনলাম যে, কুরবানীর পশুর চামড়া নাকি কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে পারে। কথাটি কি ঠিক? বিষয়টি ভালোভাবে জানতে চাই।

উত্তর

হাঁ, কুরবানীদাতা চাইলে কুরবানীর পশুর চামড়া নিজের ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে পারবে; তা সদকা করা জরুরি নয়। কিন্তু বিক্রি করে দিলে মূল্য অবশ্যই সদকা করে দিতে হবে

আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল মুমিন - কুড়িগ্রাম

৬১৮৯. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে বাসায় আমাকে মুরগি জবাই করতে বলা হয়। জবাইয়ের সময় অসতর্কতা বশত আমি মুরগির মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। তখন আমার আব্বা বলেন, এই মুরগির গোশত খাওয়া মাকরূহ। আমি এই গোশত খাব না। পরে বাসার সকলেই সেই গোশত খেয়েছে; কিন্তু তিনি খাননি। তাই এখন হুজুরের নিকট জানার বিষয় হল, জবাই করার সময় জবাইকৃত প্রাণীর মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ওই প্রাণীর গোশত খেতে কোনো অসুবিধা আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

জবাইকৃত প্রাণীর মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এভাবে জবাই করা মাকরূহ। কেননা এতে প্রাণীকে প্রয়োজন অতিরিক্ত কষ্ট দেওয়া হয়। অবশ্য মাকরূহ হলেও জবাইকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া মাকরূহ বা নাজায়েয হয়ে যায় না; বরং তার গোশত খাওয়া হালাল।

কিতাবুল আছল ৫/৩৯৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/২৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৪৯; মাজমাউল  আনহুর ৪/১৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ উবাইদুল্লাহ - ফেনী

৬১৯০. প্রশ্ন

গ্রামগঞ্জে প্রচলন আছে যে, কারও হাত থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কুরআন মাজীদ পড়ে গেলে কুরআন মাজীদের ওযন পরিমাণ চাল, গম বা এজাতীয় কোনো কিছু সদকা করতে হয়। জানতে চাই, প্রচলনটি কি শরীয়তসম্মত?

উত্তর

কুরআন মাজীদের কপি হাত থেকে পড়ে গেলে তার ওযন পরিমাণ চাল, গম বা এজাতীয় কোনো কিছু সদকা করার বিধান শরীয়তে নেই। তাছাড়া কুরআন মাজীদ ওযন করাও এক ধরনের বেয়াদবী। তাই এমনটি করা যাবে না। বরং ভুলে কখনো কুরআন মাজীদের কপি হাত থেকে পড়ে গেলে তখন তাওবা-ইস্তিগফার করে নেবে এবং ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে, যেন এমনটি না হয়। আর সম্ভব হলে এমনিতেই সাধ্য অনুযায়ী কোনো কিছু সদকা করতে পারে। এটি বাধ্যতামূলক নয়। বরং যে কোনো ক্ষেত্রেই সদকা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।

ফাতাওয়া রশীদিয়্যাহ, পৃ. ৫৯৮

শেয়ার লিংক