মুহাম্মাদ জসীম - নোয়াপাড়া, টেকনাফ

৩১১৪. প্রশ্ন

ছোটবেলায় মকতবে অযু ভঙ্গের কারণসমূহ শিখেছিলাম। সেগুলোর মধ্যে একটা হল, হেলান দিয়ে ঘুমানো। এখন অনেক মুসল্লি ভাইকে দেখি যে, তারা ফজরের নামাযের আগে মসজিদের দেওয়ালে বা খুঁটিতে হেলান দিয়ে ঘুমাতে থাকে। যখন ইকামত দেওয়া হয় তখন তারা পুনরায় অযু করা ছাড়াই নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের উক্ত নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে বিষয়টি একটু স্পষ্ট করবেন।


উত্তর

হেলান দিয়ে ঘুমালে সর্বাবস্থায় অযু ভেঙ্গে যায়-বিষয়টি এমন নয়; বরং কেউ যদি এভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে, তার কোমরের নিম্নাংশ জমিন থেকে পৃথক হয়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে অযু ভেঙ্গে যাবে। আর যদি আসন গেড়ে বা জমিনের সাথে ভালোভাবে লেগে বসে বসে ঘুমায় তাহলে হেলান দিয়ে ঘুমালেও অযু নষ্ট হবে না।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৫৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৯৮-৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/১৪১

শেয়ার লিংক

রেজাউল কারীম - মাগুরা

৩১১৫. প্রশ্ন

রাস্তাঘাটে এমন অনেক কুকুর চলাফেরা করে যেগুলো পথেই ঘুমায়, পথেই থাকে। এরা সর্বদা ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা খেয়েই বাঁচে। পথ দিয়ে চলাফেরার সময় এসব কুুকর কখনো পাশ ঘেষে অতিক্রম করে। যার ফলে জামাকাপড় এদের গায়ে লেগে যায়। আমার প্রশ্ন হল, এর ফলে কি জামা-কাপড় নাপাক হয়ে যাবে?


উত্তর

কুকুরের দেহ মূলত নাপাক নয়। তাই কুকুরের শরীরে কোনো নাপাকি লেগে না থাকলে তার সাথে কাপড় বা কোনো কিছু লাগলে নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। সেটি শরীরে বা কাপড়ে লাগলে নাপাক হয়ে যাবে। তাই কুকুরের মুখের লালা লেগে যদি তার দেহ ভিজে থাকে এবং ঐ ভেজা অংশ কাপড়ে লাগে তাহলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে।

-ফাতহুল কাদীর ১/১৩১; মারাকিল ফালাহ ২১; শরহুল মুনিয়া ১৫৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১০১; আননাহরুল ফায়েক ১/৯৩

শেয়ার লিংক

শফিউল্লাহ - টেকনাফী

৩১১৬. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে উভয় ঈদের নামাযের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় এবং ঠিক সময়েই নামায শুরু করা হয়। যার কারণে অনেক মুসল্লি মাসবুক হয়। তাই আমি ঈদের নামাযের মাসবুক সম্পর্কে কিছু মাসআলা জানতে চাই।

ক) ইমাম সাহেবকে প্রথম রাকাতে কিরাত অবস্থায় পাওয়া গেলে তখন কী করবে?

খ) আর এক রাকাত ছুটে গেলে তা পরবর্তীতে কোন নিয়মে আদায় করবে?

গ) ইমাম সাহেবকে তাশাহহুদে পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ঈদের নামায পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে কি? হলে এক্ষেত্রে সালামের পর দু রাকাত কীভাবে আদায় করবে?


উত্তর

ঈদের নামাযে প্রথম রাকাতের কিরাত অবস্থায় শরিক হলে তাকবীরে তাহরীমার পর নিজে নিজে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে। অতপর বাকি নামায যথানিয়মে ইমামের সাথে আদায় করবে। আর ঈদের নামাযের এক রাকাত ছুটে গেলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে আগে সূরা-কিরাত পড়বে এরপর রুকুর আগে অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলবে।

আর কোনো ব্যক্তি ইমামের তাশাহহুদ অবস্থায় জামাতে শরিক হলে তার নামাযও সহীহ হবে। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের সালামের পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই দুই রাকাত নামায পড়বে। অর্থাৎ প্রথম রাকাতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে নিবে। অতপর সূরা-কিরাত পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুর আগে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯২; কিতাবুল আছল ১/৩২২; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, আছর : ৫৮৬৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সমীরুদ্দীন - লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

৩১১৭. প্রশ্ন

রমযান মাসে দোকানে বেচা-কেনার ব্যস্ততার কারণে নির্ধারিত সময়ে তারাবীর নামায পড়ার জন্য মসজিদে যেতে পারি না। প্রায় সময় ইমাম সাহেব তারাবীর নামায কয়েক রাকাত পড়ার পর যাই। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমি ইশা এবং তারাবীর নামায কীভাবে আদায় করব।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথমে ইশার ফরয ও সুন্নত আদায়ের পর ইমাম সাহেবের সাথে তারাবীর নামাযে শরিক হবে। তারাবীর জামাত শেষে ইমাম সাহেবের সাথে বিতর নামাযও জামাতে পড়ে নিবেন। এরপর তারাবীর বাকি নামায আদায় করবেন।

উল্লেখ্য যে, রমযান মাস অধিক গুরুত্বপূণৃ ও ফযীলতপূর্ণ মাস এই মাসে ইবাদতের ছাওয়াব অনেক বেশি। তাই এই মাসে নামায ও জামাতের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হওয়া উচিত এবং নির্ধারিত সময়ের আগে আগে মসজিদে চলে যাওয়া উচিত।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; শরহুল মুনইয়াহ ৪১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭

শেয়ার লিংক

আহসান হাবীব - কুমিল্লা

৩১১৮. প্রশ্ন

গত রমযানে আমার এক বন্ধু একাকী তারাবীর নামায পড়াতে গিয়ে একসাথে চার রাকাত পড়ে ফেলে। দুই রাকাতের পর তাশাহহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং আরো দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরায়। এভাবে চার রাকাত পড়ার দ্বারা কত রাকাত আদায় হয়েছে?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এক সালামে চার রাকাত পড়লেও দুই রাকাতের পর বৈঠক করার কারণে চার রাকাতই তারাবীহ হিসেবে আদায় হয়েছে। তবে তারাবীহ নামায ইচ্ছাকৃতভাবে একসাথে চার রাকাত পড়া ঠিক নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪০

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান - নোয়াপাড়া, টেকনাফ

৩১১৯. প্রশ্ন

গত রমযানে এক হাফেয সাহেবের পিছনে তারাবীহ নামায পড়ছিলাম। তিনি এক রাকাতে সিজদার আয়াত পড়ে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করলেন। সিজদায়ে তিলাওয়াত থেকে উঠে ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়ে আয়াতে সিজদার পর থেকে কিরাত শুরু করলেন। জানার বিষয় হল, সূরা ফাতিহা দুইবার পড়লে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

না, উক্ত কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কারণ সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। কিন্তু কেউ যদি সূরা মিলানোর আগেই পর পর দুবার সূরা ফাতিহা পড়ে তবে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

৩১২০. প্রশ্ন

জানাযার নামায পড়ার সময় কিছু মানুষকে দেখা যায়, জুতার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়ে। আবার কিছু লোক জুতা খুলে জমিনের উপর দাঁড়ায়।

জানার বিষয় হল, জুতার উপর দাঁড়িয়ে জানাযার নামায পড়লে সহীহ হবে কি? কেননা জুতার নিচে তো নাপাকি লেগে থাকার সম্ভাবনা থাকে।


উত্তর

উভয় পদ্ধতিই সহীহ। জুতা থেকে পা বের করে জুতার উপর দাঁড়ালে সেক্ষেত্রে জুতার নিচে নাপাকি থাকলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩; শরহুল মুনইয়াহ ২০৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আমান - শ্যামলী, ঢাকা

৩১২১. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে লক্ষ্য করেছি যে, কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় চিৎ করে শোয়ানো হয় এবং শুধু তার মুখমন্ডলকে কিবলামুখী করা হয়। উক্ত পদ্ধতি কি সুন্নাহসম্মত? যদি না হয় তাহলে সুন্নত নিয়ম কোনটি? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সুন্নত নিয়ম হল, ডান কাতে কিবলামুখী করে শোয়ানো। যেন মুখ ও সীনা কিবলার দিকে থাকে। এজন্য কবর এমনভাবে বানাবে যেন মাইয়্যেতকে সহজেই কিবলামুখী করা যায়। কিন্তু চিৎ করে রেখে শুধু চেহারা কিবলামুখী করে রাখলে সুন্নত আদায় হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮৭৫; মাজমূআ রাসাইলে লাখনবী ২/২৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল কুদ্দুস - নোয়াপাড়া

৩১২২. প্রশ্ন

আমার লিভারে ঘা হয়েছে। ডাক্তার আমাকে একমাস পর পর চার বার এন্ডোস্কপি করতে বলেছেন। সামনে রমযান। তাই জানার বিষয় হল, এন্ডোস্কপি করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?


উত্তর

এন্ডোস্কপির পাইপের মাধ্যমে পাকস্থলিতে ঔষধ, পানি ইত্যাদি কোনো কিছু যদি না দেওয়া হয় তবে শুধু এন্ডোস্কপির কারণে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু এন্ডোস্কপি করার সময় রক্ত বা ময়লার কারণে পাইপের বাল্ব প্রায়ই ঘোলাটে হয়ে যায়। যার কারণে পাইপের মাধ্যমে পানি দিয়ে ঐ বাল্ব পরিষ্কার করতে হয়। এমন হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই যে ডাক্তার পরীক্ষা করবেন তার থেকে জেনে নিতে হবে যে, পাইপের সাথে কোনো ঔষধ দেওয়া হয়েছে কি না বা ভেতরে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে কি না।

উল্লেখ্য, রমযান মাসে এন্ডোস্কপি করার প্রয়োজন হলে ইফতারের পর করতে চেষ্টা করবেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুদ্দাসসির - সাবরাং, কক্সবাজার

৩১২৩. প্রশ্ন

গত রমযানে আমাদের এক নির্ভরযোগ্য দ্বীনী প্রতিষ্ঠান থেকে রমযানের ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়। আর তাতে রোযার বেশ কিছু মাসাইল দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি মাসআলা ছিল, ইঞ্জেকশন নিলে রোযা ভেঙ্গে যায়। তাই আমি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে খাবার খেয়ে ফেলি। জানার বিষয় হল, ঐ মাসআলা কি সঠিক? যদি সঠিক না হয় তাহলে আমার সেই রোযার কাযা করলে হবে? নাকি কাফফারাও জরুরি হবে?


উত্তর

ইঞ্জেকশন নিলে রোযা নষ্ট হয় না। যেহেতু আপনার জানামতে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছেন তাই আপনাকে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাযা আদায় করে নিলেই চলবে।

উল্লেখ্য যে, মাসআলা জানার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা কাম্য।

-ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; আননাহরুল ফায়েক ২/১৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৭; আলাতে জাদীদাহ কে শরয়ী আহকাম ১৫৩

শেয়ার লিংক

নাজমুল হক - ঢাকা

৩১২৪. প্রশ্ন

রোযা অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করার হুকুম কী? আমার এক বন্ধু বলেছে, রোযা অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মাকরূহ। সঠিক বিষয়টি জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

আপনার বন্ধুর কথা ঠিক নয়। রোযা অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। কাঁচা, শুকনা সব রকম ডাল দিয়েই মিসওয়াক করতে পারবে। তবে কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করলে সতর্ক থাকতে হবে যেন এর রস গলায় চলে না যায়।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯; ফাতাওয়া তাতাখানিয়া ৩/৩৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৭

শেয়ার লিংক

উবায়দুল্লাহ - ফরিদাবাদ, ঢাকা

৩১২৫. প্রশ্ন

এ বছর রমযান মাসে আমি ইতিকাফ করার নিয়ত করেছি। কিন্তু আমার বাসা থেকে মসজিদে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমি কি বাসায় গিয়ে খাবার আনতে পারব? যদি খাবার আনতে যাই তাহলে আমার ইতিকাফ কি ভেঙ্গে যাবে?


উত্তর

মসজিদে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে খাবার আনার জন্য আপনি বাসায় যেতে পারবেন। এ কারণে ইতিকাফ ভাঙবে না। তবে খাবার আনার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে অন্য কোনো কাজে বিলম্ব করা যাবে না। অন্য কাজে অল্প সময় ব্যয় করলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য ঘটনাক্রমে খাবার প্রস্ত্তত না হলে সেজন্য অপেক্ষা করতে পারবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২২৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রহমান - ঢাকা

৩১২৬. প্রশ্ন

আমার প্রস্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা আছে। এজন্য আগে মাঝেমধ্যে ক্যাথেটারও ব্যবহার করতে হয়েছে। সামনে রমযান আসছে, তাই আমি জানতে চাচ্ছি যে, রোযা অবস্থায় ক্যাথেটার ব্যবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?


উত্তর

ক্যাথেটার ব্যবহার করলে রোযার ক্ষতি হয় না। সুতরাং রোযা অবস্থায় প্রয়োজন হলে তা ব্যবহার করতে পারবেন।

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী সংখ্যা : ১০, ২/৪৫৪; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; আলমাকালাতুল ফিকহিয়্যাহ ২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৬২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইয়াকুব - ফেনী

৩১২৭. প্রশ্ন

আমার চাচা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। রোযা অবস্থায় তিনি কি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নিতে পারবেন?


উত্তর

হ্যাঁ, রোযা অবস্থায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নেওয়া যাবে। এ কারণে রোযার ক্ষতি হবে না।

-ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; আলাতে জাদীদাহ কে শরয়ী আহকাম পৃষ্ঠা :১৫৩

শেয়ার লিংক

জয়নাল আবেদীন - ছাগলনাইয়া, ফেনী

৩১২৮. প্রশ্ন

আমার নানী একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। তার চোখ থেকে সবসময় পানি ঝরে। এজন্য নিয়মিত তাকে চোখের ড্রপ বা মলম ব্যবহার করতে হয়। চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে মুখে ঔষধের তিক্ততা অনুভূত হয়। তাই জানতে চাই, রোযা অবস্থায় তিনি চোখে ড্রপ বা মলম ব্যবহার করতে পারবেন কি? এর কারণে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?


উত্তর

রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ বা মলম ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে গলায় ঔষধের স্বাদ অনুভূত হলেও রোযা ভাঙ্গবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা : ১০, ২/৪৫৪; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭

শেয়ার লিংক

আবদুল আওয়াল - পল্লবী, মিরপুর

৩১২৯. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় মশার উপদ্রব খুব বেশি। তাই দিনের বেলায়ও মশার কয়েল বা ধূপ জ্বালানোর প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি মসজিদ সুরভিত রাখার জন্য মাঝেমধ্যেই আগরবাতি জ্বালানো হয়। এসবের ধোঁয়া অনিচ্ছাকৃতভাবে নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি? রমযানের দিনের বেলা এগুলো জ্বালানো কি জায়েয? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

রমযান মাসে দিনের বেলা মশার কয়েল, ধূপ, আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালানো জায়েয। এতে রোযার ক্ষতি হবে না। কারণ ধূপ, কয়েল, আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালানোর পর আশপাশে সাধারণত এর ঘ্রাণই ছড়ায়। এর ধোঁয়া নাক পর্যন্ত পৌঁছে না। এরপরও অনিচ্ছাকৃত তা নাকে-মুখে চলে গেলে রোযা নষ্ট হবে না। তবে রোযা অবস্থায় কেউ যদি নাক বা মুখ দিয়ে এগুলোর ধোঁয়া টেনে নেয় সেক্ষেত্রে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; আশশুরুনবুলালিয়া ১/২০২; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০

শেয়ার লিংক

জারহাদ হাসান - শেওড়াপাড়া, ঢাকা

৩১৩০. প্রশ্ন

রমযান মাসে অনেক লোককে দেখা যায়, অযুর সময় তারা কুলি করে বারবার থুথু ফেলতে থাকে যেন মুখ থেকে পানির ভেজাভাবটাও কেটে যায়। জানার বিষয় হল, কুলি করার পর মুখে স্বাভাবিকভাবে যে ভেজা থাকে তা থুথুর সাথে গিলে ফেললে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?


উত্তর

কুলি করার পর বারবার থুথু ফেলার প্রয়োজন নেই। কেননা কুলি ক রে সব পানি ফেলে দেওয়ার পর মুখে যে ভেজা থাকে সেটা পানি নয়। কাজেই এর দ্বারা রোযার কোনো ক্ষতি হবে না।

-সহীহ বুখারী ১/২৫৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৪২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩

শেয়ার লিংক

তাসমিয়া নাশাত - ঢাকা

৩১৩১. প্রশ্ন

অনেক মহিলা রমযানে ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রাখেন। আমি জানতে চাই, এভাবে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রেখে ঐ নির্দিষ্ট দিনগুলোতে রোযা রাখা সহীহ হবে কি?


উত্তর

ঔষধ সেবনের মাধ্যমে কোনো মহিলা স্রাব বন্ধ রাখলে তাকে নামায, রোযা ইত্যাদি সকল হুকুমই পালন করতে হবে। অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে বন্ধ রাখলে পবিত্রতার অবস্থার সকল বিধান তার জন্য প্রযোজ্য হবে।

উল্লেখ্য, স্রাব বন্ধের জন্য ঔষধ ইত্যাদির ব্যবহার না করাই ভালো। একান্ত কেউ করতে চাইলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেন তা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যার সৃষ্টি না করে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৩১৮; আলমওসূআতুত তিবিবয়া আলফিকহিয়্যাহ ৪১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮

শেয়ার লিংক

আকবর হোসেন - লক্ষ্মীপুর

৩১৩২. প্রশ্ন

ভাইবোন মিলে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। সকলের সদকাতুল ফিতর আমাদের পিতা আদায় করে দেন। তিনি প্রত্যেক ফকীরকে ১৫/২০ টাকা করে দিয়ে থাকেন। হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, এভাবে আদায় করলে কি ফিতরা আদায় হবে? নাকি একজন ফকীরকে এক সদকাতুল ফিতর পুরোটা দিতে হবে?


উত্তর

একটি সদকা ফিতর একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া জায়েয। তাই ১৫/২০ টাকা করে ফিতরা দেওয়া সহীহ। তবে একটি ফিতরা একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়ার চেয়ে একজনকে দেওয়াই উত্তম।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭

শেয়ার লিংক

রবিউল হক - কেন্দুয়া, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা

৩১৩৩. প্রশ্ন

আমার বড় ভাই বিদেশে থাকেন। দেশে আমাদের আত্মীয়স্বজন আছে। তিনি চাচ্ছেন তার সদকায়ে ফিতর এ দেশে আদায় করতে। প্রশ্ন হল, এখানে তার সদকায়ে ফিতর আদায় করলে কত টাকা দিতে হবে? আমাদের সদকা ফিতর আমরা যত টাকা আদায় করি ততটাকাই দিবে নাকি তিনি যে দেশে আছেন সে দেশের ফিতরা হিসাবে বাংলাদেশী যত টাকা আসে ততটাকা দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাইয়ের সদকায়ে ফিতর বাংলাদেশে আদায় করলেও তিনি যে দেশে থাকেন সে দেশের সদকায়ে ফিতর হিসাবেই আদায় করতে হবে। যেমন তিনি যদি সৌদি আরবে থাকেন আর সেখানকার হিসাবে ফিৎরার মূল্য হয় বিশ রিয়াল, তবে এখানে আদায় করলে বিশ রিয়াল বা তার মূল্য প্রায় চারশত টাকা আদায় করতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ২/২১৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫০; গমযু উয়ূনিল বাছাইর ২/৭৬; ইমদাদুল আহকাম ২/৪০

শেয়ার লিংক

আয়েশা আক্তার - রংপুর

৩১৩৪. প্রশ্ন

বিয়ের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে মহর বাবদ তিন ভরি স্বর্ণ পেয়েছি। পিত্রালয় থেকে পেয়েছি আরো এক ভরি স্বর্ণ। বর্তমানে এই চার ভরি স্বর্ণ ছাড়া আমার নিকট রূপা, নগদ টাকা-পয়সা কিংবা ব্যবসায়ী পণ্য কোনোটাই নেই। এই চার ভরি স্বর্ণের মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে কি আমাকে রূপার নেসাব ধার্য করে উক্ত স্বর্ণের মূল্য হিসেবে যাকাত দিতে হবে?

 

উত্তর

স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত ভরি। স্বর্ণের সাথে যাকাতযোগ্য সম্পদ না থাকলে যাকাত ফরয হওয়ার জন্য সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ থাকা জরুরি। এছাড়া যাকাত ফরয হবে না। সুতরাং আপনার নিকট যেহেতু স্বর্ণের পূর্ণ নেসাব নেই আর যাকাতযোগ্য অন্য সম্পদও নেই তাই আপনাকে ঐ চার ভরি স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে না।  এক্ষেত্রে চার ভরি স্বর্ণের মূল্য রূপার নেসাবের সমপরিমাণ হলেও যাকাত ফরয হবে না। মূল্য তখন ধর্তব্য হবে যখন স্বর্ণের সাথে রূপা বা নগদ টাকা অথবা ব্যবসার পণ্য থাকে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৫৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৭-১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৭

শেয়ার লিংক

মোল্লা ফিরুয আহমদ - মধ্যবাড্ডা, ঢাকা

৩১৩৫. প্রশ্ন

আমি আমার যাকাতের অর্থ দিয়ে তিনটি ছাত্রের মাসিক খরচ বহন করি। তাদের প্রত্যেককে মাসে ২৫০০/- টাকা করে দেই। তিনজনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক তবে দুজন বুঝমান, তাদের টাকা আমি তাদের হাতেই দিয়ে দেই। আর একজন হল ছোট বাচ্চা ৬/৭ বছর বয়স। তার টাকা আমি তার হুজুরের কাছে দিয়ে আসি। হুজুর প্রয়োজন মতো তার জন্য খরচ করে। জানতে চাই, এভাবে যাকাতের অর্থ প্রদান করা কি বৈধ হচ্ছে? এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে কি?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বুঝমান দুজনকে সরাসরি যাকাতের অর্থ দিয়ে দেয়া ঠিক আছে। তাদের হাতে পৌঁছার দ্বারাই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। আর ছোট শিশুটির শিক্ষক যদি তার দেখাশোনার দায়িত্বশীল হয়ে থাকেন তাহলে তাঁর হাতে টাকা দিয়ে দিলেই আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে অবুঝ শিশুর হাতে সরাসরি যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। কেননা তাকে সরাসরি যাকাত দিলে আদায় হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, নাবালেগকে যাকাত দেওয়া তখনই বৈধ যখন তার পিতা যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; ফাতহুল কাদীর ২/২১০; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৬

শেয়ার লিংক

রেজাউল করীম - লক্ষ্মীপুর

৩১৩৬. প্রশ্ন

আমরা জানি, তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়তে হয়। কিন্তু কখনো ভিড়ের কারণে নির্ধারিত স্থানে নামায পড়তে কষ্ট হয় তখন কি একসাথে কয়েকটি তাওয়াফ করার পর একত্রে সব তাওয়াফের নামায পড়ার অবকাশ আছে? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। এই দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পর বিলম্ব না করে পড়া সুন্নত। তবে অন্য তাওয়াফ শুরু করার আগে পড়ে নেওয়া ওয়াজিব। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই তাওয়াফ শেষ করতেন দুই রাকাত নামায পড়ে নিতেন।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৫/৫৯

আর এই দুই রাকাত নামায মাকামে ইবরাহীমীর পেছনে পড়তে কষ্ট হলে অন্য স্থানেও পড়া যাবে। তাওয়াফ শেষে নামাযের মাকরূহ ওয়াক্ত হলে তখন তাওয়াফের নামায পড়বে না; বরং মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এক্ষেত্রে তাওয়াফের নামায না পড়ে একসাথে একাধিক তাওয়াফ করা যাবে। মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হলে সকল তাওয়াফের জন্য দুই দুই রাকাত নামায পড়ে নিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩১; গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬-১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৪৭; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৭৬; আলবাহরুল আমীক ২/১২৪৫-১২৪৭; ইলাউস সুনান ১০/৮৭

শেয়ার লিংক

সাদিয়া আক্তার - মিরপুর, ঢাকা

৩১৩৭. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার স্বামী মারা যান। তার ইন্তেকালের মাসখানেক পর আমার গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমি ডিএনসি করাই। গর্ভটি ছিল খুব অল্প দিনের। এখনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি। কেবলমাত্র জমাট রক্ত হয়েছে। জানতে চাই, এক্ষেত্রে ডিএনসি করার দ্বারা আমার ইদ্দত পূর্ণ হয়েছে কি? যদি না হয় তাহলে এখন আমার করণীয় কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু গর্ভটির কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি তাই এ গর্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ডিএনসি করার দ্বারা আপনার ইদ্দত পূর্ণ হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনাকে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে পুরো চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/৪০০; রদ্দুল মুহতার ৩/৫১১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১১; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৯

শেয়ার লিংক

উবায়দুল্লাহ কাফী - মিরপুর, ঢাকা

৩১৩৮. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে রাগের মাথায় বলে, তোর মায়ের মতো তুইও আমার জন্য হারাম। এ কথা বলার দ্বারা স্ত্রীকে তালাক দেওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না। মেলামেশা হারাম বুঝোনো উদ্দেশ্য ছিল। জানতে চাই, উক্ত কথার কারণে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক কি ছিন্ন হয়ে গেছে? শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এখন করণীয় কী?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যদি বাস্তবেই উল্লেখিত উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে ঐ কথা বলে থাকে এবং তালাকের নিয়ত না করে থাকে তাহলে এর দ্বারা স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। তবে এ কারণে স্ত্রীর সাথে তার মেলামেশা করা হারাম হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত কাফফারা আদায় না করা পর্যন্ত তাদের জন্য মেলামেশা করা বৈধ হবে না। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপনের জন্য তাকে আগে কাফফারা আদায় করতে হবে।

কাফফারা হল, লাগাতার দুই মাস রোযা রাখা। আর রোযা রাখতে সক্ষম না হলে ষাটজন মিসকীনকে দু বেলা তৃপ্তিসহকারে খানা খাওয়ানো।

প্রকাশ থাকে যে, রোযার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করার ক্ষেত্রে এই দুই মাসও স্ত্রীর সাথে মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে খানা খাওয়ানোর মাধ্যমে কাফফারা আদায়কালে বিরত থাকার হুকুম নেই।

-সূরা মুজাদালা : ৩-৪; তাফসীরে কুরতুবী ১৭/১৮৫; কিতাবুল আছল ৫/১৯, ২২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৬৭, ৩৭০; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৮৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৪

শেয়ার লিংক

আবদুস সুবহান - ফেনী

৩১৩৯. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার পিতা মাদরাসায় একটি গরু দেওয়ার মানত করেন। বর্তমানে আমাদের একটি গরু আছে, যার বয়স দুই বছর থেকে সামান্য কম। এ গরু দান করলে আমার পিতার মানত আদায় হবে কি?


উত্তর

নির্দিষ্ট গরু সদকা করার মানত না করলে সেক্ষেত্রে মানত আদায়ের জন্য গরুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। দুই বছরের কম বয়সী গরু সদকা করলে তা দ্বারা মানত আদায় হবে না। তাই আপনাদের ঐ গরু দ্বারা দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মানত আদায় করা যাবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৩৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৪০; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬

শেয়ার লিংক

যাকারিয়া - মতলব, চাদপুর

৩১৪০. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি দুপুরে কর্মস্থল থেকে বাড়িতে এসে দেখে যে, দুপুরের খাবার রান্না হয়নি। এতে সে স্ত্রীকে রাগ করে বলে যে, তোমার রান্না আর খামু না। যদি তোমার হাতের খানা খাই তাহলে হারাম খাই।

পরবর্তীতে স্বামী তার ঐ কথার জন্য অনুতপ্ত হয়েছে এবং স্ত্রীর হাতের রান্নাই খাচ্ছে। এটা জানতে পেরে এক ব্যক্তি স্বামীকে বলল, তোমার উক্ত কথার দ্বারা কসম হয়েছিল? জানতে চাই, কসম হয়ে থাকলে এখন করণীয় কী?


উত্তর

যদি তোমার হাতের খানা খাই তাহলে হারাম খাই-এ কথার দ্বারা কসম সংঘটিত হয়েছে। এরপর স্বামী স্ত্রীর হাতের রান্না খাওয়ার দ্বারা তার কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে। এ কারণে তার উপর কসম ভঙ্গের কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে।

তাই কাফফারা হিসেবে দশজন মিসকীনকে দু বেলা তৃপ্তিসহকারে খানা খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এক জোড়া করে বস্ত্র দিতে হবে। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) সুতরাং কসমের (ভঙ্গের) কাফফারা হল দশজন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাবার খাওয়ানো, যা তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে খাইয়ে থাক, অথবা দশজন মিসকীনকে বস্ত্র প্রদান করা, অথবা গোলাম আযাদ করা।-সূরা মায়েদা : ৮৯

তবে কারো পক্ষে এ তিন পদ্ধতির কোনোটি দ্বারা কাফফারা আদায় করা সম্ভব না হলে তার কর্তব্য হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে তিন দিন রোযা রাখা। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তবে যে (উপরোল্লেখিত তিনটির কোনোটিরই) সমার্থ্য না রাখে তার করণীয় হচ্ছে তিনদিন (ধারাবাহিক) রোযা রাখা। এটা তোমাদের কসম ভঙ্গের কাফফারা, যখন তোমরা কসম করবে (এবং পরে তা ভেঙ্গে ফেলবে)।

-সূরা মায়িদা : ৮৯; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭২; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৯; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৬১; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/৩৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৪৩০-৪৩২

শেয়ার লিংক

আবদুর রশীদ হাওলাদার - লক্ষ্মীপুর

৩১৪১. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমি এক ব্যক্তির কাছে কিছু জমি বিক্রি করি। জমিগুলোর মধ্যে একটি জমিতে বাঁশঝাড় ছিল। বিক্রির সময় আমার নিয়ত ছিল, দু-একদিনের মধ্যেই আমি তা কেটে নিব। তবে বিক্রির সময় সেটা বলা হয়নি। এখন ক্রেতা বলছে, সে বাঁশসহ পুরো জমিটাই কিনেছে সুতরাং বাঁশগুলো তার। মূলত বাঁশগুলো কে পাবে? এ ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশনা জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

জমি বিক্রির সময় যেহেতু বাঁশ বিক্রির কথা উল্লেখ করা হয়নি তাই বাঁশগুলোর মালিক জমি বিক্রেতাই। অতএব বিক্রেতার কর্তব্য হল, বাঁশগুলো কেটে নিয়ে ক্রেতাকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া।

এ ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বাঁশগুলো দাবি করা বৈধ হবে না।

-রদ্দুল মুহতার ৪/৫৫১; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২৮৫

শেয়ার লিংক

নূরুল হুদা - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৩১৪২. প্রশ্ন

 

কয়েক বছর আগে আমি আইপিও এর মাধ্যমে সামিট পাওয়ার-এর কিছু শেয়ার ক্রয় করেছিলাম। এ শেয়ার আমি এখনও বিক্রি করিনি। সামিট পাওয়ার প্রতিবছরই বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার প্রভৃতি প্রদান করে থাকে। বর্তমানে আমার শেয়ার সংখ্যা আইপিও শেয়ার থেকে পাঁচগুণ বেশি। এ পদ্ধতিতে শেয়ার বৃদ্ধি করা কি জায়েয হবে।

উল্লেখ্য, আমি সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করি না।  


 

উত্তর

 

প্রশ্নোক্ত কোম্পানী মৌলিকভাবে জ্বালানী খাতের হলেও অন্যান্য অধিকাংশ কোম্পানির মতো তাদের মূলধনের বড় অংশও সুদের ভিত্তিতে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা। কোম্পানিটির ব্যালেন্স শীট ও বার্ষিক প্রতিবেদন দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। 

তাই উক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনার অর্থ হচ্ছে এর সুদী লেনদেনে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং শেয়ারের আনুপাতিক হারে নিজেকে সুদের সাথে জড়িত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহিতার পাশাপাশি সুদদাতার উপরও লানত করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৭ 

সুতরাং সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন না করলেও আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের দ্বারা যেহেতু সুদের সাথে জড়িত হয়ে যাচ্ছেন তাই আইপিও-এর মাধ্যমেও এ কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা জায়েয হয়নি।

এখন এই অবৈধতা থেকে বাঁচার জন্য করণীয় হচ্ছে উক্ত শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিয়ে বিনিয়োগকৃত মূল টাকার অতিরিক্ত সদকা করে দেওয়া।

 

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সপ্তম সংখ্যা, ১/৭১২; সিদ্ধান্ত নং ৬৫/১/৭; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১৭২; আছরে হাযের কে পেচিদা মাসাইল কা শরঈ হল ২৬৬

শেয়ার লিংক

মাহমুদ - টেকনাফ

৩১৪৩. প্রশ্ন

 

আমরা সাত ভাই। প্রতি বছর আমরা সবাই মিলে একটি গরু কুরবানী করে থাকি। গত বছর আমরা প্রত্যেকে সমানভাবে টাকা দিয়ে দুইটি গরু খরিদ করেছি। উভয়টি সবার পক্ষ থেকে কুরবানী করে উভয়টির গোশত একত্র করে সবাই সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছি। আমাদের এই কুরবানী কি সহীহ হয়েছে?

 

 

উত্তর

হ্যাঁ, আপনাদের সকলের কুরবানী সহীহ হয়েছে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

শেয়ার লিংক