যদি কেউ হালাল ও হারাম উভয় প্রকারের মাল দ্বারা বাড়ি-ঘর তৈরি করে আর সেখানে হারাম মালের পরিমাণ কম থাকে তাহলে সেই বাড়ি-ঘর ব্যবহার করা শরীয়তসম্মত হবে কি না? যদি শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে জায়েয হওয়ার কোনো পদ্ধতি আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
যদি কেউ হালাল ও হারাম উভয় প্রকারের মাল দ্বারা বাড়ি-ঘর তৈরি করে আর সেখানে হারাম মালের পরিমাণ কম থাকে তাহলে সেই বাড়ি-ঘর ব্যবহার করা শরীয়তসম্মত হবে কি না? যদি শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে জায়েয হওয়ার কোনো পদ্ধতি আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হারাম মাল চাই কম হোক বা বেশি উভয় ক্ষেত্রেই তা ব্যবহার করা হারাম। প্রশ্নোক্ত বাড়িতে যেহেতু হারাম মালের মিশ্রণ রয়েছে (যদিও পরিমাণে কম) তাই তা ভোগ করা জায়েয হবে না।
বাড়ি থেকে বৈধ উপায়ে উপকৃত হতে চাইলে তাতে ব্যয়িত হারাম মালের সমপরিমাণ সম্পদ মালিকদের ফেরত দিতে হবে। মালিক জানা না থাকলে সেই পরিমাণ মাল তাদের পক্ষ থেকে সাদকা করে দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-শরহুল মাজাল্লা ২/৫৪০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৮; তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৯২
গত মার্চ ’০৮ সংখ্যার আলকাউসারের একটি প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে যে, প্রথম বৈঠক থেকে ভুলে দাড়িয়ে গেলে দাড়ানোর কাছাকাছি না পৌছলে বসে যাবে। এ ক্ষেত্রে সিজদা সাহু করতে হবে না। অথচ হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকীতে বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সোজা হয়ে না দাড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত বসতে পারবে। এখন প্রশ্ন হল, উভয় বক্তব্যের মধ্যে কোনটা সঠিক?
প্রশ্নোক্ত মাসআলায় দুটি বক্তব্য রয়েছে। আলকাউসারের গৃহীত বক্তব্যটি অধিক নির্ভরযোগ্য। অধিকাংশ ফকীহগণ এ অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন। সুতরাং ইমাম অথবা একাকী নামায আদায়কারী প্রথম বৈঠক ছেড়ে ভুলে দাড়িয়ে গেলে যতক্ষণ পর্যন্ত বসার নিকটবর্তী থাকবে, স্মরণ হওয়ামাত্রই বসে পড়বে এবং এক্ষেত্রে সিজদা সাহু করতে হবে না।
আর যদি দাড়ানোর নিকটবর্তী হয়ে যায় তাহলে আর বসবে না। এক্ষেত্রে নিয়ম হল, না বসে যথারীতি নামায চালিয়ে যাওয়া এবং নামায শেষে সিজদা সাহু করে নেওয়া। কিন্তু যদি কেউ এ অবস্থায়ও বসে যায় তবে তার এ কাজ নিয়ম পরিপন্থী হলেও নামায হয়ে যাবে। এক্ষেত্রেও নামায শেষে সিজদা সাহু করা জরুরি।
শেয়ার লিংক-ইলাউস সুনান ৭/২০০; আল মুহীতুল বুরহানী ২/৩৩০; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৭১; রদ্দুল মুহতার ২/৮৩; আল বাহরুর রায়েক ২/১০০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৮
বর্তমানে মশা মারার আধুনিক যন্ত্র ইলেক্ট্রিক ব্যাট বের হয়েছে। সুইচ চালু করার পর তাতে কোনো মশা পড়লে তা পুড়ে যায়। আমরা আলেমদের মুখে শুনেছি, কোনো প্রাণীকে পোড়ানো ঠিক নয়। আমার এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি। আমি জানতে চাই উক্ত যন্ত্র দ্বারা মশা মারা জায়েয হবে কি না?
অনিষ্টকারী প্রাণীকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা জায়েয নেই। প্রশ্নোক্ত ব্যাট দ্বারা যেহেতু মশা পুড়ে যায় তাই মশা মারার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না।
শেয়ার লিংক-সহীহ বুখারী ২/১০২৩; শরহু মুসলিম (নববী) ২/২৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬১
এক ব্যক্তি প্রায়ই নামাযের রাকাত সংখ্যা খেয়াল রাখতে পারে না, ফলে নামাযের মাঝেই সন্দেহে পড়ে যায় যে, আর কয় রাকাত পড়বে? প্রশ্ন হল, নামাযের মাঝে এভাবে সন্দেহ সৃষ্টি হলে নামায কীভাবে আদায় করবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি কত রাকাত পড়েছে এ ব্যাপারে মনস্থির করতে চেষ্টা করবে। এ পর্যায়ে কোনো সংখ্যার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয়ে গেলে তার উপর ভিত্তি করেই অবশিষ্ট নামায আদায় করবে।
আর যদি রাকাত-সংখ্যার ব্যাপারে কোনো প্রবল ধারণা না হয় তাহলে সন্দেহযুক্ত সংখ্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সংখ্যাটি ধরে অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করবে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশিষ্ট নামাযের প্রত্যেক রাকাতের শেষে বৈঠক করবে এবং তাশাহহুদ পড়বে। অতঃপর সাহু সিজদা করে নামায শেষ করবে।
শেয়ার লিংক-সহীহ মুসলিম ১/২১১; কিতাবুল আছল ১/২২৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৪৫; শরহুল মুনিয়্যা ৪৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৯৩
আমাদের গ্রামের বাড়ি যশোর। বর্তমানে আমরা স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস শুরু করছি। গ্রামে শুধু চাষাবাদের জমি আছে। ঘর-বাড়িও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বসবাসের উপযোগী সমস্ত আসবাবপত্র নিয়ে আসা হয়েছে। আর ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে যশোরে বসবাসের কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।
এখন জিজ্ঞাসার বিষয় এই যে, মাঝে-মধ্যে আমরা যদি গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাই তাহলে সেখানে গিয়ে নামায পূর্ণ পড়তে হবে নাকি কসর করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনারা যেহেতু পূর্বের বাসস্থান ত্যাগ করেছেন এবং সেখানে বসবাসের আর কোনো ইচ্ছা নেই তাই এমতাবস্থায় যশোর আপনাদের জন্য স্থায়ী আবাসস্থল বলে গণ্য হবে না এবং সেখানে আপনারা ১৫ দিনের কম অবস্থান করলে মুকীম হবেন না। বরং কসর করতে হবে।
শেয়ার লিংক-আল মুহীতুল বুরহানী ২/৪০২; আল বাহরুর রায়েক ২/১৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২
আমার বাড়ি নোয়াখালী। আমাদের থানা থেকে ঢাকায় আসার জন্য অনেক কোম্পানির গাড়ি আছে। একটি কোম্পানির গাড়ির কাউন্টার নিয়ে আমাদের স্টেশনে বসতে চাচ্ছি। তাদের নিয়ম হল, আমার এ কাউন্টারের জন্য নির্ধারিত দুটি সিট বরাদ্ধ থাকবে। আমি প্রত্যেক গাড়িতে ঐ দুই সিটের যাত্রী দিব। প্রত্যেক সিটে কোম্পানির নির্ধারিত ভাড়ার ২০/- টাকা আমাকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যদি অতিরিক্ত কোনো সিট খালি থাকে তবে আমি তাতেও যাত্রী দিতে পারব এবং সে ক্ষেত্রেও প্রতি সিটে আমাকে বিশ টাকা করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রতি সিটের মূল্য ১৬০/- টাকা হলে ২০/- টাকা আমি পাব। আর ১৪০/- টাকা কোম্পানি পাবে। আর যদি ঐ দুই সিটে যাত্রী দিতে না পারি তবে কোম্পানির কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। জানতে চাই এ পদ্ধতিতে চুক্তি করা শরীয়তসম্মত কি না? অর্জিত টাকা হালাল হবে কি না?
হ্যাঁ, ঐভাবে চুক্তি করা জায়েয এবং এ থেকে অর্জিত টাকা হালাল।
শেয়ার লিংক-সহীহ বুখারী ১/৩০৩; উমদাতুল কারী ১২/৯৩; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩
আমি আইসক্রিম বিক্রি করি। পদ্ধতি এই যে, আমার গাড়িতে একটি গোল চরকা লাগানো আছে এবং এর চারপাশে কোটা কোটা করে এক থেকে চার পর্যন্ত সংখ্যা দেওয়া আছে। ক্রেতারা এক টাকার বিনিময়ে একবার চরকা ঘুরানোর সুযোগ পায় এবং যে চিহ্নিত সংখ্যায় চরকা থেমে যায় এক টাকার বিনিময়ে তাকে সে কয়টি আইসক্রিম দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, কোনো ক্রেতাই আইসক্রিম থেকে বঞ্চিত হয় না। তবে সংখ্যায় কম বেশি হয়। প্রশ্ন হল, এ পদ্ধতিতে আইসক্রিম বিক্রি করা বৈধ হবে কি না?
এ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় না জায়েয। কারণ এতে একাধিক নাজায়েয বিষয় রয়েছে। (১) চুক্তির সময় পণ্যের পরিমাণ অজানা থাকে। (২) এ কারবার জুয়ার সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। (৩) এতে ধোকাও রয়েছে। এসব কারণের যে কোন একটি থাকলেই কারবার না জায়েয হয়ে যায়।
শেয়ার লিংক-সহীহ মুসলিম ২/২;তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৩১৮; ফাতহুল কাদীর ৬/৫৫; শরহুল মাজাল্লা ২৫/৮৮
আমি এক মা-হারা সন্তান। এমতাবস্থায় এক গায়রে মাহরাম মহিলা আমাকে তার ছেলের মতো আদর করে এবং আমিও তাকে আপন মায়ের মতো জানি, শ্রদ্ধা করি। তার প্রতি আমার ভীষণ মায়া জন্মে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের মা-ছেলের সম্পর্ক শরীয়তসম্মত কি না? এ মায়ের মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারব কি না?
গায়রে মাহরাম মহিলাকে ‘মা’ সম্বোধন করার দ্বারা সে ‘মা’ হয়ে যায় না এবং মাহরামও হয় না। বরং পূর্বের মতই তার সাথে পর্দা করা জরুরি।
আর এভাবে ‘মা’ সম্বোধন করার দ্বারা তার মেয়ে হারাম হয় না। তাই মহিলাটির মেয়ের সাথে আপনার বিবাহ জায়েয।
শেয়ার লিংক-সূরা আহযাব ৪ও ৫; সূরা নিসা ২৪; তাফসীরে কুরতুবী১৪/১১৯ ও ৫/১২৪; সহীহ বুখারী ২/১০০১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৯৩; ফাতহুল কাদীর ৩/১১৭; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯২
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, ধান চাষের সময় আসলে কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে বীজধান বিক্রয় করে। আবার কেউ এভাবে বিক্রয় করে যে, সাধারণ ধান দেড় মন দিলে বীজ ধান এক মন দেওয়া হয়। জানতে চাই, এক মন বীজ ধান দিয়ে দেড় মন সাধারণ ধান নেওয়া বৈধ কি না?
বীজ ধানের পরিবর্তে সাধারণ ধান আদান-প্রদান করলেও কম বেশি করে নেওয়া জায়েয হবে না। ধানের পরিবর্তে ধান লেনদেন করতে চাইলে অবশ্যই সমান সমান হতে হবে। তাই এক মন বীজ ধানের পরিবর্তে দেড় মন সাধারণ ধান নেওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে সহীহভাবে কারবার করতে চাইলে বীজ ধান টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবে এরপর টাকা দিয়ে সাধারণ ধান ক্রয় করবে।
শেয়ার লিংক-সহীহ মুসলিম ২/২৫; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৫৭৮; ফাতহুল কাদীর ৬/১৫১; আল বাহরুর রায়েক ৬/১২৬;আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৭৪
আমরা বিশজন সদস্য মিলে একটি সমবায় সমিতি করেছি। এতে প্রত্যেক সদস্যকে এককালীন ২০০০/- টাকা করে জমা দিতে হয়েছে। ফলে মূলধন দাড়িয়েছে ৪০,০০০/- টাকা। বিগত চার বছর ব্যবসায় খাটিয়ে লাভ হয়েছে ১০,০০০/- টাকা। কিন্তু আমরা এ টাকার যাকাত পরিশোধ করিনি। এখন আমাদের জানার বিষয় হল, আমাদেরকে কি উক্ত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে?
সমিতির ঐ টাকাগুলোর উপর যৌথভাবে যাকাত ফরয নয়। যাকাত সব সময় প্রত্যেকের নিজ নিজ মালিকানাধীন সম্পদের উপর ফরয হয়। কিন্তু প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সমিতির সমগ্র মূলধন ও লাভ যদি সদস্যদের মাঝে বন্টন করে দেওয়া হয় তবে তাদের প্রত্যেকের ভাগে ২,৫০০/- করে আসে। এ পরিমাণ টাকা যেহেতু নেসাব সমপরিমাণ নয় তাই এর উপর যাকাত ফরয হবে না। তাই এ টাকাসহ অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদ মিলে যে সদস্যের নিকট নেসাব সমপরিমাণ সম্পদ থাকবে তার উপর যাকাত ফরয হবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ২/১০১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৯৭; মাজমাউল আনহুর ১/৩০০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৪
আমি একটি যুব সংগঠনের সদস্য। আমাদের এ সংগঠনে অনেক আলেম সদস্য রয়েছে। উক্ত সংগঠনের টাকা বাইয়ে সালাম তথা আগাম খরিদের ভিত্তিতে বিভিন্ন লোকের কাছে লগ্নি করা হয়। যেমন : ১,০০০/- (এক হাজার) টাকা দেওয়া হয় তার পরিবর্তে ৫ মাস পর ৩ মণ ধান দিবে। কিন্তু পূর্বশর্ত অনুযায়ী যখন লগ্নি গ্রহিতার কাছ থেকে ধান উসুল করার নির্ধারিত তারিখ আসে তখন তার থেকে ধান উসুল করা ব্যতিতই ধানের পরিবর্তে মার্কেট রেইট হিসেবে ধানের মূল্য গ্রহণ করা হয়।
তাই আমাদের সংগঠনের কোনো কোনো আলেম বলেন, লগ্নিগ্রহিতার কাছ থেকে ধান কবজা করা ব্যতিত তার পরিবর্তে ধানের মূল্য উসুল করা জায়েয হবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, জায়েয হবে। তাই প্রকৃতপক্ষে উপরোক্ত মাসআলার ক্ষেত্রে সঠিক সমাধান কী? জানতে চাই।
বাইয়ে সালাম তথা আগাম খরিদ এর ক্ষেত্রে পণ্য হস্তগত করার আগে তা যেমনিভাবে অন্য কোথাও বিক্রয় করা জায়েয নেই তদ্রূপ বিক্রেতার নিকটও পুনঃবিক্রি করা জায়েয হবে না। তাই আগাম খরিদ (বাইয়ে সালাম) চুক্তির সময় বিক্রেতার নিকট আবার পণ্য বিক্রির শর্ত করাও না জায়েয।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিক্রেতা ধান হস্তগত না করে তার মূল্য গ্রহণের শর্ত করার অর্থ দাড়ায়, পণ্যটি তার নিকট পুনরায় বিক্রির শর্ত করা, যা না জায়েয।
অবশ্য পূর্ব থেকে এ ধরনের শর্ত না থাকলে ক্রেতা ধান বুঝে নেয়ার পর চাইলে তা যেমনিভাবে অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারে তদ্রূপ লগ্নিগ্রহিতার কাছেও বিক্রি করতে পারবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৫১; ফাতহুল কাদীর ৬/২৩০; আল বাহরুর রায়েক ৬/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৮
আমার একটি গাড়ি ছিল। বর্তমানে আরেকটি নতুন গাড়ি কিনেছি। ইতিমধ্যে একদিন আমার এক বন্ধু এসে বলল, তোমার পুরাতন গাড়িটি আমার তত্ত্বাবধানে রাখ। আমি তা অন্যান্য লোকদের কাছে ভাড়ায় প্রদান করব। বিনিময়ে যা ভাড়া আসবে তা আমরা দু’জনে সমান হারে বন্টন করে নিব। আমি তার কথায় রাজি হয়ে তাকে আমার পুরাতন গাড়িটি দিয়ে দেই। এখন আমার প্রশ্ন হল, উল্লেখিত পদ্ধতিতে আমার বন্ধুর সাথে কৃত চুক্তিটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
চুক্তিটি সহীহ হয়নি। এটি যৌথকারবার নয়। বরং আপনার বন্ধু এ ক্ষেত্রে আপনার কারবার পরিচালনাকারী। অতএব তাকে আয়ের অংশ প্রদানের চুক্তি করা সহীহ হবে না। সহীহ নিয়ম হল, উক্ত কাজের বিনিময়ে তার জন্য একটি পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করে দেওয়া। যা নির্ধারিত মেয়াদান্তে তাকে দিয়ে দিতে হবে। চাই গাড়ি থেকে কোনো আয় হোক বা না হোক।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া কাযিখান ৩/৬২৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪১১; আল বাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৮
আমি একবার আমার বন্ধুকে বলেছিলাম, তুই যদি এখন রুম থেকে বের হস তাহলে কসম, আমি এখন বিষ খাব, আমার বন্ধু তখন সাথে সাথেই বের হয়ে বলল, তুই কসম করেছিস, এবার বিষ খা। তখন আমি খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি এবং ইমাম সাহেবকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন, বিষ খাওয়া যেহেতু হারাম। আর হারাম জিনিসের কসম করলে তা পুরো করা নিষেধ এবং কাফফারা দিতে হয় না। তাই এখন কাফফারা দিতে হবে না। আরেকজন বললেন, যেহেতু তুমি আল্লাহর নামে কসম খাওনি তাই এটি কসম হয়নি। এজন্য কাফফারা দিতে হবে না। আরেকজন বললেন, সতর্কতা মূলক কাফফারা দিতে হবে। এখন আমার কী করণীয়? আমাকে কি সত্যিই কাফফারা দিতে হবে?
ঐ কথার কারণে কসম সংঘটিত হয়েছে। তবে বিষ খাওয়া যেহেতু হারাম। আর হারাম কাজের কসম করলে তা পূরণ করা নিষেধ। তাই আপনি কখনো এই কসম পুরো করতে পারবেন না; বরং আপনাকে ঐ কসমের কাফফারা আদায় করা জরুরি।
উল্লেখ্য, আল্লাহ তাআলার নাম ছাড়া শুধু ‘কসম’ বলে কোনো কিছুর অঙ্গীকার করলেও তা কসমে পরিণত হয়ে যায়। ফলে তা না করলে বা না করা গেলে তার কাফফারা ওয়াজিব হয়।
শেয়ার লিংক-আল বাহরুর রায়েক ৪/২৮৩, ২৯১; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৯; আন নাহরুল ফায়েক ৩/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১৫, ৭২৮
শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব, আমি এক মালিক থেকে ৩টি মাইক্রোবাস ৫০,০০০/- টাকার বিনিময়ে এই শর্তে ভাড়া নিয়েছি যে, মাসের শুরুতেই অগ্রিম ৫০,০০০/- টাকা তাকে দিয়ে দিব। তারপর সারা মাস এ ৩টি বাস ভাড়ায় খাটিয়ে যা টাকা পাব, ড্রাইভারের বেতন, তেলখরচ ও মেরামত (যদি প্রয়োজন হয়) বাবদ খরচ করে যা লাভ থাকবে সব আমার হবে। এখন জানতে চাচ্ছি, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমাদের এ কারবার সঠিক হয়েছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নে বর্ণিত কারবারে মেরামত সংক্রান্ত সবধরনের খরচ ভাড়া গ্রহীতার উপর চাপানো জায়েয নয়। বরং নিয়ম হল, ভাড়া গ্রহীতার সীমালংঘন ও ত্রুটি ছাড়া গাড়ির কোন রূপ ক্ষতি হলে বা গাড়ির স্বাভাবিক ব্যবহারের ফলে যে মেরামতের প্রয়োজন দেখা দেয় তার খরচ গাড়ির মালিকের বহন করতে হবে। তাই সব ধরনের মেরামত খরচব ভাড়াগ্রহীতাকে দিতে হবে এ শর্ত করার কারণে উক্ত কারবার ফাসিদ হয়েছে। কারবারটি সহীহ উপায়ে করতে চাইলে ভাড়াগ্রহীতার সীমালংঘন ও ত্রুটি ছাড়া গাড়ি মেরামতের সাধারণ খরচ গাড়ির মালিককেই বহন করতে হবে। এ খরচ ভাড়াগ্রহীতার উপর চাপানো যাবে না।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২১; শরহুল মাজাল্লাহ লিল আতাসী ২/৬২২
আমি একটি সমিতির পরিচালক। আমাদের একটি কার্যক্রম হল, জনগণকে সুদ বিহীন ঋণ প্রদান করা। কিন্তু ঋণ প্রদানের এ কার্যক্রম আঞ্জাম দিতে আমাদের দাপ্তরিক কিছু খরচ হয়। যেমন-ফাইলপত্র ক্রয়, ফরম ছাপানো, ফটোকপি করা ইত্যাদি। তাই আমরা গ্রাহক থেকে ‘লোন প্রসেসিং ফি’ নামে ৩০/- টাকা নিয়ে থাকি। ঋণের কম-বেশিতে এতে কোনো পরিবর্তন হয় না। জানতে চাই, আমাদের এ ‘ফি’ নেয়াতে কোনো অসুবিধা আছে কি?
ঋণপ্রদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দাপ্তরিক বাস্তব খরচ ঋণগ্রহীতা থেকে নেওয়া জায়েয। তবে মনে রাখতে হবে যে, ঋণের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ঋণ প্রদান করে কোনো হীলা-বাহানার মাধ্যমেও অতিরিক্ত কিছু নেওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই ঐ সার্ভিস চার্জ যেন কোনো ক্রমেই বাস্তব খরচকে অতিক্রম না করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
শেয়ার লিংক-বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারাহ ১/২০৭; মাজাল্লাতু মাজমায়িল ফিকহিল ইসলামী ৩/২/৩০৫
মাননীয় মুফতী সাহেব, জনৈক ব্যক্তির নিকট আমাদের মসজিদের কিছু টাকা ছিল। সে তা থেকে সামান্য কিছু টাকা তার নিজের কাজে ঋণ হিসেবে খরচ করেছে। এভাবে ঋণ হিসেবে মসজিদের টাকা খরচ করা জায়েয হয়েছে কি না? শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
মসজিদের টাকা কর্তৃপক্ষের নিকট আমানত হিসেবে থাকে। এ টাকা ঋণ হিসেবে খরচ করাও না জায়েয। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব মসজিদের টাকা আদায় করে দিতে হবে এবং আল্লাহর দরাবারে ক্ষমা চাইতে হবে।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪১৫৫
শুনেছি বিতরের নামাযে দুআ কুনুতের পর দরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব এবং এ সময় দরূদ শরীফ পড়লে শেষ বৈঠকে আর দরূদ শরীফ পড়া লাগে না। কথাটি কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
হ্যাঁ, বিতরের নামাযে দুআ কুনুতের পর দরূদ শরীফ পড়া ভালো। হাদীস শরীফেও এ সময় দরূদ শরীফ পড়ার কথা এসেছে। তবে প্রশ্নের এ কথাটি ঠিক নয় যে, এ সময় দরূদ শরীফ পড়লে শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়তে হবে না। বরং শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়া পৃথক সুন্নত যা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। তা সর্বাবস্থায় আমলযোগ্য। তাই কুনুতের পর দরূদ শরীফ পড়লেও শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়তে হবে।
শেয়ার লিংক-মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল ৩০০; সহীহ ইবনে খুযাইমা ১/৫৪৬-৫৪৭; সুনানে নাসাঈ ১/১৯৫; শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৭৮; আল বাহরুর রায়েক ২/৪৪; শরহুল মুনিয়্যাহ ৪২২
আমাদের দেশে পুকুর মালিকগণ জেলেদেরকে এই শর্তে মাছ ধরার অনুমতি দেয় যে, মাছ ধরে সেগুলো বিক্রি করবে। এরপর বিক্রিত মাছের ১০% মূল্য সে পাবে। আর বাকি ৯০% মূল্য পুকুর মালিক পাবে। প্রশ্ন হল, এ ধরনের চুক্তি বৈধ কি না?
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ নয়। কারণ, এ ধরনের কারবারে পারিশ্রমিক ও এর পরিমাণ একেবারে সুনির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। বিক্রিত মূল্যের অংশ উল্লেখ করা যথেষ্ট নয়। কারণ হতে পারে তেমন কোনো মাছই পাওয়া যাবে না, বা পাওয়া গেলেও পরিমাণ অনিশ্চিত। তাই সহীহ পদ্ধতিতে কারবার করতে চাইলে জেলেদের পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। মাছ যাই পাওয়া যাক সেটার সাথে তাদের পাওনা ঝুলন্ত থাকবে না। তারা শর্ত মতো কাজ করে দিলে তাদের পারিশ্রমিক ঠিকই পেয়ে যাবে।
শেয়ার লিংক-আল বাহরুর রায়েক ৮/৩; মাজমাউল আনহুর ৩/৫১২; ফাতহুল কাদীর ৮/৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫
শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব, আমাদের মহল্লার জামে মসজিদটিকে মহল্লার জনগণ বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্থানান্তর করতে ইচ্ছুক। সমস্যাগুলো হল :
মসজিদটি প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ২০০ গজ ভিতরে হওয়ায় মুসল্লীদের যাতায়াতে সমস্যা হয়। বিশেষ করে পথিক মুসল্লীদের বেশি কষ্ট হয়।
মসজিদটি বাড়ির ভিতরে হওয়ায় চলাচলে পর্দার ব্যাঘাত ঘটে।
মসজিদের জায়গা কম হওয়ায় মুসল্লিদের সংকুলান হয় না ।
মসজিদের আশপাশ থেকে টি.ভি, ভিসিডির গানের আওয়াজে নামাযে বিঘ্ন ঘটে।
মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবের হুজরাখানা দূরে হওয়ায় তাঁর যাতায়াতে কষ্ট হয়।
মসজিদটি অনেক আগের নির্মিত হওয়ায় স্থানে স্থানে ধ্বসে গিয়ে ভাংগনের উপক্রম হওয়ায় তা ভেঙ্গে ফেলা হয়।
সড়ক থেকে মসজিদ দূরে হওয়ায় পাঞ্জেগানা নামাযের জামাতে লোকজন খুবই কম হয়।
উপরোক্ত সমস্যাগুলোর কারণে মুসল্লীগণ চাচ্ছেন, মসজিদটি স্থানান্তর করে প্রধান সড়কের নিকটে নতুন করে নির্মাণ করতে।
এখন প্রশ্ন হল :
১. উপরোক্ত সমস্যাবলির কারণে মসজিদ স্থানান্তর করে অন্যত্র নির্মাণ করা যাবে কি?
২. যদি স্থানান্তর করা জায়েয হয় তবে মসজিদের জায়গাটিকে কী করবে? যদি সংরক্ষণ করতে হয় তাহলে কীভাবে সংরক্ষণ করবে?
মুফতী সাহেব, মহল্লাবাসী এ নিয়ে খুবই সমস্যায় আছে। তাই কুরআন ও হাদীসের আলোকে দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে সমাধান দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
বি.দ্র. বর্তমানে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলায় মাদরাসায় নামায আদায় করা হচ্ছে। ফাতাওয়ার অপেক্ষায় সবাই অপেক্ষমান।
(১ ও ২) কোনো স্থানে মসজিদ প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে তা আবাদ রাখা এবং মসজিদ হিসাবে বহাল রাখা জরুরি। এর স্থানান্তর বৈধ নয়। তাই প্রশ্নোল্লিখিত পরিস্থিতিতে মসজিদটি স্থানান্তর করা যাবে না। বরং একে যথাস্থানে বহাল রেখে যথারীতি তা আবাদও রাখতে হবে। আর মুসল্লীদের প্রয়োজন ও সুবিধার্থে সুবিধাজনক স্থানে আরেকটি মসজিদ তৈরি করা যেতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই।
শেয়ার লিংক-ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৮; শরহুল মুহাযযাব ১৬/৩২৯৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮
আমাদের গ্রামের একটি মাদরাসায় ছাত্রদের জন্য টয়লেটের সুব্যবস্থা নেই। আমি সে মাদরাসায় পাঁচটি টয়লেট বানিয়ে দেওয়ার ওয়াদা করি। পরবর্তীতে আমার যাকাতের টাকা দ্বারা টয়লেটগুলো বানিয়ে দেই। জনৈক ব্যক্তি ঘটনা শুনে বলল, এভাবে যাকাত আদায় হবে না। জানতে চাই, টয়লেট বানিয়ে দেওয়া দ্বারা আমার যাকাত আদায় হয়েছে কি না?
আপনার যাকাত আদায় হয়নি। যাকাত আদায়ের জন্য শর্ত হল, যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের মালিক বানিয়ে দেওয়া। অতএব, উক্ত খরচ নফল সাদকা হিসাবে গণ্য হবে। যাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে।
শেয়ার লিংক-তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৮; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২০৬