ইসরাফিল খলীল - শেরপুর

৫১২৩. প্রশ্ন

মক্কা শরীফে আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত অনেক সময় পাওয়া যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তখন দুটি তাওয়াফ করা যায়। আমাদের মুআল্লিম সাহেব বলেছেন, তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। আমি একবার আসরের পর একটি তাওয়াফ শেষ করে নামাযের জন্য দাঁড়াচ্ছিলাম তখন এক ভাই বললেন, আসরের পর নামায পড়া যায় না। জানার বিষয় হল, ঐ লোকের কথা কি ঠিক? যদি ঠিক হয় তাহলে তাওয়াফের নামায কখন পড়ব?

উত্তর

আসরের নামাযের পর তাওয়াফ করলে তাওয়াফের নামায মাগরিবের পর আদায় করবে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন-

إذَا أَرَدْتَ الطّوَافَ بِالْبَيْتِ بَعْدَ صَلاَةِ الْفَجْرِ، أَوْ بَعْدَ صَلاَةِ الْعَصْرِ فَطُفْ وَأَخِّرَ الصّلاَةَ حَتّى تَغِيبَ الشّمْسُ أَوْ حَتّى تَطْلُعَ، فَصَلِّ لِكُلِّ أُسْبُوعٍ رَكْعَتَيْنِ.

তুমি যদি ফজর ও আসরের নামাযের পর তাওয়াফ করতে চাও তাহলে তাওয়াফের নামায সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পর আদায় করবে। প্রতি সাত চক্করের জন্য দুই রাকাত নামায পড়বে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৩৪২২; ফাতহুল বারী ৩/৫৭২)

অতএব আসরের পর একাধিক তাওয়াফ করলে প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য মাগরিবের পর দুদুরাকাত করে পড়ে নেবে। তবে যদি কেউ সূর্যাস্তের পূর্বে তাওয়াফের নামায পড়ে নেয় তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে তা মাকরূহ হবে।

-সহীহ বুখারী, বর্ণনা ১৬২৮; শরহু মাআনিল আছার, তাহাবী ১/৪২২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৮; ফাতহুল কাদীর ১/২০৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ২৩৮

শেয়ার লিংক

রাহাত - শেরপুর

৫১২৪. প্রশ্ন

হজ্বের একটি প্রশিক্ষণে হুজুর থেকে জেনেছি যে, যেই তাওয়াফের পর সাঈ করা হয় সেই তাওয়াফে রমল করতে হয়। কিন্তু আমি তাওয়াফে যিয়ারতের সময় প্রথম চক্কর এবং দ্বিতীয় চক্করের কিছু অংশে রমল করতে ভুলে গিয়েছিলাম। তারপর স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় চক্করের বাকি অংশে এবং তৃতীয় চক্করে রমল করেছি। জানার বিষয় হল, প্রথম চক্কর এবং দ্বিতীয় চক্করের কিছু অংশে ভুলে রমল না করার কারণে কি আমার উপর দম বা সদকা ওয়াজিব হয়েছে?

উত্তর

রমল করা সুন্নত। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তবে তা ছুটে গেলে দম বা জরিমানা ওয়াজিব হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রমল না করার কারণে আপনার উপর কেনো কিছুই ওয়াজিব হয়নি।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৫৬৬৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৪৬; আদ্দুররুল মুনতাকা ১/৪০২; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ১৮৫

শেয়ার লিংক

শাহাদাত হুসাইন - ঢাকা

৫১২৫. প্রশ্ন

আল্লাহর মেহেরবানিতে আমি এবছর আমার আম্মাকে নিয়ে হজ্ব করতে গিয়েছিলাম। প্রথম দুই দিন প্রচুর ভিড়ের ভেতর আম্মাকে সাথে নিয়ে আমরা কংকর মেরেছি। ১২ই যিলহজ্ব কাফেলার মুআল্লিম আমাকে বললেন, কংকর মারার সময় তো প্রচুর ভির থাকে তাই আজ আপনার মাকে কষ্ট না দিয়ে নিজেই তার পক্ষ থেকে কংকর মেরে দিন। এতে তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। মুআল্লিমের কথা অনুযায়ী আমি নিজে সেদিন আম্মার পক্ষ থেকে কংকর মেরেছি। হজ্ব থেকে দেশে ফেরার পর একজন আলেমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নিজে কংকর মারতে পারলে অন্যকে দিয়ে কংকর মারানো জায়েয নেই।তার কথা কি ঠিক? ঠিক হলে এখন করণীয় কী?

উত্তর

উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। যথাযথ ওজর ছাড়া অন্যকে দিয়ে কংকর মারালে তা আদায় হয় না। কংকর মারার ক্ষেত্রে ভিড় ওজর হিসাবে ধর্তব্য নয়। আর ভিড়ের কারণে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য তো রাতেও কংকর মারার অবকাশ রয়েছে। তাই ওজর ছাড়া অন্যকে দিয়ে কংকর মারানোর কারণে তা আদায় হয়নি। সুতরাং আপনার মায়ের উপর এ কারণে জরিমানা হিসাবে দমওয়াজিব হয়েছে।

উল্লেখ্য, দম হল এক বছর বয়সী ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা। তা মক্কায় হেরেমের এলাকায় জবাই করতে হয়। নিজে না গিয়ে অন্য কাউকে দিয়েও তা আদায় করা যেতে পারে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৬৯; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৯৭; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ২৪৫, ৩৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫২৮; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৮৭, ১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১৫

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম - কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

৫১২৬. প্রশ্ন

গত কুরবানীর ঈদে আমার বড় ভাই দুটি গরু কুরবানী দেন। একটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে। অপরটি নিজের পক্ষ থেকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে দেওয়া কুরবানীর গোস্ত পুরোটা গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেন। জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কুরবানীর গোস্ত নিজেরা খাওয়া যায় না। গরীবদেরকে দিয়ে দিতে হয়। জানার বিষয় হল, আমার বড় ভাইয়ের কথা কি ঠিক? অন্যথায় সঠিক মাসআলা কী?

উত্তর

আপনার ভাইয়ের কথা ঠিক নয়। মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া কুরবানীর গোস্ত নিজেরাও খাওয়া যায় এবং অন্যদেরকেও দান করা যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী দিলে সে কুরবানীর গোস্তের একই হুকুম। সে গোস্ত গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া জরুরি নয়; বরং নিজেরাও তা থেকে খেতে পারবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬

শেয়ার লিংক

আবু জাফর - যশোর

৫১২৭. প্রশ্ন

ঈদের দিন আমরা একে অপরকে ঈদ মোবারকবলে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকি। কেউ কেউ বলেন, এটি বলা যাবে না। এটি শরীয়তসম্মত নয়। এ বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা জানালে উপকৃত হতাম।

উত্তর

ঈদ মোবারকএকটি দুআ বাক্য। ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার জন্য তা বলতে অসুবিধা নেই। তবে এটিকে সুন্নত মনে করা যাবে না। কারণ কোনো বর্ণনায় এভাবে বলার কথা পাওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, হাদীসের কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন একে অপরকে تَقَبّلَ اللهُ مِنّا وَمِنْك (অর্থ : আল্লাহ আমাদের এবং তোমার নেক আমল কবুল করুন) বলতেন। (আদ দুআ, তবারানী, হাদীস ৯২৮; ফতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৫১৭)

তাই ঈদের দিন একে অপরকে উক্ত দুআ বাক্যটি বলা এবং এর প্রচলন করাই উত্তম হবে।

-হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৫১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/২৯৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রেজাউল করিম - ঢাকা

৫১২৮. প্রশ্ন

কালো খেজাব ব্যবহার করার শরয়ী বিধান কী? কোনো ইমাম সাহেব যদি ব্যবহার করেন তাহলে তার পেছনে ইকতিদার বিধান কী হবে?

উত্তর

বয়সের কারণে চুল-দাড়ি পেকে গেলে কালো খেযাব ব্যবহার করা নাজায়েয। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত জাবের রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আবু কুহাফাকে নিয়ে আসা হল। তার চুল ছাগামা উদ্ভিদের ন্যায় (একেবারে) সাদা ছিল। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

غَيِّرُوا هَذَا بِشَيْءٍ، وَاجْتَنِبُوا السّوَادَ.

এটাকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকো। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১০২

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِي آخِرِ الزّمَانِ بِالسّوَادِ، كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ، لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنّةِ.

শেষ যামানায় কিছু লোক কবুতরের পেটের (কালো রঙের) ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে। তারা  (কিয়ামতের দিন) জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২১২)

আর হাদীসে যে কালো খেযাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে তার মূল কারণ এতে অন্যদের সামনে বয়স গোপন করা হয়। যাতে ধোঁকার বিষয়টি থাকে। ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, নিষিদ্ধ কালো খেযাব হচ্ছে, যে খেযাব দ্বারা ধোঁকা দেওয়া উদ্দেশ্য থাকে। যেমন বৃদ্ধা মহিলা চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করে স্বামীকে ধোঁকা দিল, এমনিভাবে বৃদ্ধ লোক কালো খেযাব ব্যবহার করে স্ত্রীকে ধোঁকা দিল। কারণ এটি সুস্পষ্ট প্রতারণা। (যাদুল মাআদ ৪/৩৬৮)

তবে কারো যদি অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে বয়সের আগেই চুল পেকে যায় তাহলে তার জন্য কোনো কোনো ফকীহের মতে কালো খেযাব ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী যুহরী রাহ. বলেন-

كُنّا نُخَضِّبُ بِالسّوَادِ إِذْ كَانَ الْوَجْهُ جَدِيدًا فَلَمّا نَغَضّ الْوَجْهَ وَالْأَسْنَانَ تَرَكْنَاهُ.

যখন আমাদের চেহারা সতেজ ছিল তখন আমরা কালো খেযাব ব্যবহার করতাম। কিন্তু যখন চেহারায় ভাঁজ পড়ে গেল এবং দাঁত নড়বড়ে হল তখন কালো খেযাব ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি। (ফাতহুল বারী ১০/৩৬৭)

অবশ্য যুবক অবস্থায় দাড়ি-চুল পেকে গেলে কালো খেজাব ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও হাদীসে যেহেতু সরাসরি কালো খেযাব ব্যবহার করতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তাই একেবারে কালো খেযাব ব্যবহার না করে তাতে সামান্য হলেও অন্য রং মিশ্রিত করে নেওয়া উচিত।

আর কোনো ইমাম যদি কালো খেযাব ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে কেনো ওজর আছে কি না, তাঁর বয়স কত- এসব বিষয় জানার পরই তার পিছনে ইকতিদার মাসআলা বলা যাবে। কিন্তু ঘটনা যাই হোক, ইমামগণ যেহেতু সমাজের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব তাই তাঁদের উচিত এমন বিষয় থেকে বিরত থাকা।

-উমদাতুল কারী ২১/৫১; ফয়যুল কাদীর ১/৩৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২১৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২২; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/১৭০

শেয়ার লিংক