আমি সবসময় পকেটে দশ পারার মুসহাফ (কুরআনের কপি) রাখি। যাতে যখন ইচ্ছা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি। মুসহাফটি পকেটে রাখার সময় গিলাফে আবৃত করে রাখি। আমার প্রশ্ন হল, গিলাফে আবৃত মুসহাফ পকেটে থাকা অবস্থায় আমি টয়লেটে প্রবেশ করতে পারব কি না?
আমি সবসময় পকেটে দশ পারার মুসহাফ (কুরআনের কপি) রাখি। যাতে যখন ইচ্ছা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি। মুসহাফটি পকেটে রাখার সময় গিলাফে আবৃত করে রাখি। আমার প্রশ্ন হল, গিলাফে আবৃত মুসহাফ পকেটে থাকা অবস্থায় আমি টয়লেটে প্রবেশ করতে পারব কি না?
টয়লেট অপবিত্র ও দুর্গন্ধযুক্ত স্থান। তাই মুসহাফ গিলাফে আবৃত হলেও তা পকেটে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ না করা কর্তব্য। কেননা এটা কুরআনের সম্মান ও আদব পরিপন্থী। সুতরাং মুসহাফ বাইরে রেখে যাওয়ার সুযোগ থাকলে বাইরেই রেখে যাবে।
শেয়ার লিংক—আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২১৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩০
ক) সাধারণত প্রতি মাসে আমার টানা ৭ দিন হায়েয থাকে। কিন্তু কোনো কোনো মাসে ৩/৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর স্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ১/২ দিন পর আবার চালু হয়ে সপ্তম দিন পর্যন্ত থাকে। তো মাঝের এই ১/২ দিন পর আমার করণীয় কী?
খ) গত মাসে প্রথমে ৪ দিন স্রাব আসার পর ২ দিন বন্ধ থাকে। এরপর আবার ৩ দিন স্রাব এসে শেষ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় গত মাসে কত দিন হায়েয গণ্য হবে?
ক) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হায়েয শুরু হওয়ার ৩/৪ দিন পর যে ওয়াক্তে স্রাব বন্ধ হয়ে যাবে ঐ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে আগে গোসল করে আপনি নামায পড়ে নেবেন। এক্ষেত্রে সাধারণ মেয়াদ অর্থাৎ ৭ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। অতঃপর ১/২ দিন পর যদি আবার স্রাব শুরু হয় তখন নামায বন্ধ রাখবেন। আর আপনার সাধারণ নিয়ম যেহেতু ৭ দিন তাই স্রাব আগে আগে বন্ধ হয়ে গেলেও সপ্তম দিন পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। —কিতাবুল আছল ১/২৯১; আলহাবিল কুদসী ১/১৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩১; আলগায়া, আবুল আব্বাস সারুজী ১/৬৫০
খ) গতমাসে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর যেহেতু ১০ দিন অতিক্রম করেনি, বরং এর পূর্বেই নবম দিনে স্রাব বন্ধ হয়ে গেছে তাই এক্ষেত্রে মাঝে দুই দিন বন্ধ থাকলেও পুরো ৯ দিনই হায়েয গণ্য হবে। —কিতাবুল আছল ১/২৮৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯
শেয়ার লিংক
আমার স্ত্রীর ২৭ তম দিনে গর্ভপাত হয়। এতে একটি গোশতের টুকরো বের হয়ে আসে। তাতে কোনো অঙ্গ প্রকাশ পায়নি। এর পর থেকে এক দিনের বেশি হল রক্ত আসছে। এখন এ রক্ত কি নেফাস হিসাবে গণ্য হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো অঙ্গ প্রকাশ পায়নি তাই উক্ত গর্ভটি নষ্ট হওয়া পরবর্তী রক্ত নেফাস নয়; বরং এই স্রাব যদি তিন দিন দীর্ঘায়িত হয় এবং তা শুরু হওয়ার আগে ১৫ দিন পবিত্র অবস্থায় কাটে তাহলে এই স্রাব হায়েযের রক্ত হিসেবে গণ্য হবে। তবে যদি বর্তমান স্রাব তিন দিন দীর্ঘায়িত না হয় তাহলে ইস্তিহাযার রক্ত হিসেবে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় হায়েয মনে করে ছেড়ে দেওয়া নামাযগুলোর কাযা করতে হবে।
শেয়ার লিংক—বাদায়েউস সানায়ে ১/১৬১; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৭০; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০২; রদ্দুল মুহতার ১/৩০২
কয়েকদিন আগে ঘুমের কারণে আসরের নামায দেরী হয়ে যায়। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখি, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত ওযু করে আসি। তখন সময় ছিল ৫:৫৫ মিনিট। আমি আসরের নামাযে দাঁড়িয়ে যাই। কিন্তু নামায শেষ করার আগেই মাগরিবের আযান শুনতে পাই। তখন আমি আসরের নামায পূর্ণ করে তারপর মাগরিবের নামায আদায় করি। নামাযের পর জানতে পারলাম, সেদিনের সূর্যাস্তের সময় ছিল ৫:৫৭ মিনিটে। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার উক্ত আসরের নামায কি সহীহ হয়েছে, নাকি এর কাযা করতে হবে?
আপনার উক্ত আসরের নামায আদায় হয়ে গেছে; তা পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা সূর্যাস্তের সময়ও ঐদিনের আসরের নামায আদায় করা জায়েয আছে। তবে তা মাকরূহ। আর আসরের নামাযে থাকাবস্থায় সূর্যাস্ত হয়ে গেলেও আসরের নামায নষ্ট হয় না। তবে এ অবস্থায় নামায আদায় হয়ে গেলেও যেহেতু তা মাকরূহে তাহরীমী হয়, তাই সূর্য হলুদ বর্ণের হওয়ার আগেই মুস্তাহাব ওয়াক্ত থাকতেই আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে।
শেয়ার লিংক—কিতাবুল আছল ১/১৩০; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫২; আলমুহীতুর রাযাবী ১/২০২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৪৬,২৪৮; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৮৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩০৩
আমি ঢাকা যাত্রাবাড়ি থাকি। সেখানেই এক কোম্পানিতে চাকরি করি। কোম্পানির বিভিন্ন কাজে চট্টগ্রামে যেতে হয়। গত সপ্তাহে একদিন যাত্রাবাড়ি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। দাউদকান্দি ব্রিজ পার হওয়ার পরপরই অফিস থেকে ফোন করে পুনরায় যাত্রাবাড়ি ফিরে যেতে বলে। যেহেতু তখনও আমি ৭৮ কি. মি. অতিক্রম করিনি, তাই ফেরার পথে আসরের নামায কসর পড়ব, না পুরা পড়ব এ নিয়ে সংশয়ে পড়ে যাই। এক ভাইকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, যেহেতু আপনি সফরের নিয়তে বের হয়েছেন তাই পুনরায় আপনার এলাকায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মুসাফির থাকবেন এবং নামায কসর পড়বেন। তাই আমি উক্ত আসরের নামায কসর পড়ি। হযরতের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত নামায কসর পড়া কি ঠিক হয়েছে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সফর বাতিল করার পর ফিরতি পথে উক্ত আসরের নামায কসর পড়া সহীহ হয়নি। পূর্ণ চার রাকাত পড়া আবশ্যক ছিল। সুতরাং আপনাকে পুনরায় উক্ত আসরের নামায পূর্ণ চার রাকাত কাযা পড়ে নিতে হবে। কেননা সফরের নিয়তে বের হওয়ার পর সফরসম দূরত্বে যাওয়ার আগেই যাত্রা বাতিল করলে যাত্রা বাতিলের নিয়ত করার সাথে সাথেই মুকীম হয়ে যায়। সুতরাং এক্ষেত্রে ফিরতি পথে চার রাকাতবিশিষ্ট নামায পূর্ণ চার রাকাতই পড়তে হবে; কসর পড়া যাবে না।
শেয়ার লিংক—বাদায়েউস সানায়ে ১/২৬৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/১৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১২; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪৬৮
সেদিন এক মসজিদে ইমামের পেছনে এশার নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সূরা ‘লাইল’ পড়ার সময়—
وَ سَیُجَنَّبُهَا الْاَتْقَی،الَّذِیْ یُؤْتِیْ مَالَهٗ یَتَزَكّٰی.
—আয়াতের الْاَتْقَی -এর জায়গায় الْاَشْقَی পড়ে ফেলেন এবং ওভাবেই নামায শেষ করেন। নামায শেষে এক আলেম বললেন, আমাদের নামায হয়নি; পুনরায় পড়তে হবে। তাই নামায পুনরায় পড়া হয়। জানার বিষয় হল, উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক? পুনরায় নামায পড়া কি দরকার ছিল?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যদি وَسَیُجَنَّبُهَا الْاَشْقَی -এর সাথে الَّذِیْ یُؤْتِیْ مَالَهٗ یَتَزَكّٰی মিলিয়ে পড়ে থাকেন এবং উভয় আয়াতের মাঝে ওয়াকফ না করে থাকেন তাহলে উক্ত নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে উক্ত নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ঠিকই হয়েছে। কিন্তু যদি উক্ত স্থানে ওয়াকফ করে পরবর্তী অংশ পড়ে থাকেন তাহলে উক্ত নামায শুদ্ধ বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে আদায়কৃত নামায নফল গণ্য হবে।
শেয়ার লিংক—আলহাবিল কুদসী ১/২১৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৪৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৫; ফাতহুল কাদীর ১/২৮৩; যাদুল ফাকীর, পৃ. ১৪২; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৩
আমরা জানি, মুসাফির যদি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযে কোনো মুকীমের ইকতিদা করে তাহলে তার জন্য চার রাকাত পূর্ণ করা আবশ্যক হয়ে যায়। এ সম্পর্কে হুযুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, যদি কোনো মুসাফির চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযে মুকীমের ইকতিদা করার পর কোনো কারণে উক্ত নামায ফাসেদ সাব্যস্ত হয় তাহলে তার কাযা সে কয় রাকাত আদায় করবে? দুই রাকাত, না চার রাকাত? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সে মুসাফির অবস্থার উক্ত নামাযের কাযা দুই রাকাতই আদায় করবে। কেননা তার ওপর চার রাকাত আবশ্যক হয়েছিল মুকীমের ইকতিদা করার কারণে। পরে যেহেতু সেই ইকতিদা ফাসেদ সাব্যস্ত হয়েছে, তাই মুসাফিরের ওপর আসল যে ফরয ছিল তা-ই কাযা আদায় করতে হবে।
শেয়ার লিংক—কিতাবুল আছল ১/২৫৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪০৪; মাজমাউল আনহুর ১/২৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৪; রদ্দুল মুহতার ২/১৩০
আমি এক মসজিদের ইমাম। গতকাল ফজরের নামাযের প্রথম রাকাত কেরাত পড়তে গিয়ে—
اِنَّمَا یَخْشَی اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمٰٓؤُا.
—আয়াতের اللهُ পেশ দিয়ে এবং الْعُلَمَاءَ যবর দিয়ে পড়ে ফেলি। অতঃপর ওভাবেই নামায শেষ করি। নামায শেষে আমি সংশয়ে পড়ে যাই যে, নামায সহীহ হয়েছে কি না। তাই সে সম্পর্কে মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, তা কি সহীহভাবে আদায় হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে যদিও সাধারণ মূলনীতি অনুযায়ী নামায ফাসেদ হয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ভিন্ন একটি উসূলের ভিত্তিতে মুতাআখখিরীন (পরবর্তী যুগের) ফকীহগণ নামায নষ্ট না হওয়ার ফতোয়া প্রদান করেছেন। সে হিসেবে আপনার উক্ত ফরয নামায আদায় হয়ে গেছে।
শেয়ার লিংক—ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৩৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, পৃ. ১২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৬৭; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩১
গত কয়েকদিন আগে আমি যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত নামায শুরু করি। প্রথম বৈঠকে বসার পর জামাত শুরু হয়ে যায়। তাই আমি সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরীক হই। নামাযের পর আর সেই সুন্নত নামাযটি পুনরায় পড়া হয়নি। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, এখন কি আমাকে ঐ চার রাকাত সুন্নতের কাযা করতে হবে? কারণ আমি শুনেছি, নফল ও সুন্নত নামায শুরু করলে তা ওয়াজিব হয়ে যায়।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এখন ঐ চার রাকাতের কাযা আদায় করতে হবে না। কেননা চার রাকাত সুন্নতের নিয়ত করার পর দুই রাকাত সম্পন্ন করে সালাম ফিরালে নিয়তের কারণে চার রাকাত পড়া ওয়াজিব হয়ে যায় না। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু যোহরের চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা জামাতের পূর্বে পড়তে পারেননি, তাই জামাতের পর চার রাকাত সুন্নত আদায় করে নেওয়া উচিত ছিল। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
إِذَا فَاتَتْهُ الْأَرْبَعُ قَبْلَ الظُّهْرِ، صَلَّاهَا بَعْدَ الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়তে না পারলে তা যোহর-পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নতের পর পড়ে নিতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১১৫৮)
সুতরাং কখনো যোহরের পূর্বের চার রাকাত যোহরের আগে পড়তে না পারলে তা পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নতের পরে পড়ে নেবে।
শেয়ার লিংক—বাদায়েউস সানায়ে ২/৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৯; গুনইয়াতু যাবিল আহকাম ১/১১৭
আমাদের এলাকার কবরস্থানে আমার দাদীকে কবর দেওয়া হয়। আমরা সাধারণত কবর যিয়ারতের সময় কবরের কাছে চলে যেতাম। কিন্তু এখন সামনে আরো কিছু নতুন কবর হওয়াতে দাদীর কবরের কাছে যেতে হলে কয়েকটি কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। এছাড়া যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে কি আমাদের জন্য কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া ঠিক হবে?
কবরের উপর দিয়ে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া হাঁটাচলা করা মাকরূহ। হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের রা. বর্ণনা করেন—
نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُجَصَّصَ القُبُورُ، وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهَا، وَأَنْ تُوطَأَ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে চুনা লাগাতে এবং তাতে লিখতে, এর উপর ঘর নির্মাণ করতে ও পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। —জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫২
তাই যিয়ারতের সময় নিজ আত্মীয়-স্বজনের কবরের কাছে পৌঁছার উদ্দেশ্যে অন্য কবরের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে না। তা মাকরূহ হবে। যিয়ারত দূর থেকেও করা যায়। যিয়ারতের জন্য কবরের একেবারে কাছে আসা জরুরি নয়। সুতরাং কবরের কাছে পৌঁছার ভিন্ন কোনো রাস্তা না থাকলে দূর থেকেই যিয়ারত করবে।
শেয়ার লিংক—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ১১৮৯৫, ১১৯০০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৮৮; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪৭০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৪৫
আমাদের গ্রামে একটি কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, কবর খনন করে এবং মৃতকে গোসল দিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়। কিন্তু গ্রামে যারা কবর খনন করেন এবং মৃতকে গোসল দিয়ে থাকেন তারা সকলেই এর বিনিময় গ্রহণ করে থাকেন এবং মৃতের অভিভাবকগণও খুশিমনে দিয়ে থাকেন।
এখন জানতে চাই, আসলে এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
মানুষ মারা গেলে তার কবর খনন করা এবং কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা জীবিতদের নৈতিক দায়িত্ব ও বড় সওয়াবের কাজ। এসব কাজ বিনিময়হীন হওয়াই কাম্য। যদিও কবর খনন করে এবং মৃতকে গোসল দিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা নাজায়েয নয়।
শেয়ার লিংক—আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৩১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/৭৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৩১২
যাত্রাবাড়িতে আমার একটি পানি শোধন করার ফ্যাক্টরি আছে। সেখানে আমি সরকারি নিয়ম-কানুন বজায় রেখে ওয়াসার পানি ক্রয় করে শোধন করি এবং জারে করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে থাকি। প্রতিদিন আমাকে অনেক পানি শোধন করতে হয়। যাকাতবর্ষ পূর্তির দিন দেখা যায়, জারের মধ্যে অনেক শোধনকৃত পানি আমার ফ্যাক্টরিতে থাকে।
এখন জানার বিষয় হল, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হলে অন্যান্য মালের সাথে ঐ জারের পানিগুলোরও কি হিসাব করে যাকাত দিতে হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
আপনি যেহেতু ওয়াসার পানি ক্রয় করে শোধন করে তা বিক্রি করেন, সেহেতু এই পানি আপনার ব্যবসার পণ্য। সুতরাং ব্যবসার অন্যান্য সম্পদের মত যাকাতবর্ষ শেষে এর যাকাত দিতে হবে।
শেয়ার লিংক—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৫৫৭; কিতাবুল আছল ১/৯৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৩৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮
আমার দোকানে মাঝে মাঝে একজন ভিক্ষুক আসে। আমি তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু সাহায্য করে থাকি। গত দুই বছর ধরে আমার যাকাতের কিছু টাকাও তাকে দিচ্ছি। কয়েকদিন আগে ঐ ভিক্ষুকের এলাকার এক লোকের কাছে শুনলাম, ঐ ভিক্ষুক নাকি অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক এবং তার অনেক জায়গা-জমিও আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে ভিক্ষা করে বেড়ায়। এরপর ঐ এলাকার আরো কয়েকজন নির্ভরযোগ্য লোক থেকেও এমনটি শুনি। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমি এ লোককে যে আগে যাকাতের টাকা দিয়েছি তা কি আদায় হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের যোগ্য না হলেও সে যেহেতু ভিক্ষুক হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছে এবং আপনি এই অবস্থা দেখেই তাকে যাকাত দিয়েছেন তাই তাকে যাকাত হিসাবে যা দিয়েছেন তা আদায় হয়ে গেছে। যদিও তার জন্য এ টাকা ভোগ করা হালাল হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো ব্যক্তি নিজেকে ভিক্ষুক হিসাবে উপস্থাপন করলে কিংবা কারো বাহ্যিক অবস্থা দেখে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত বলে প্রবল ধারণা হলেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে এবং তা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার বাস্তব অবস্থার যাচাই-বাছাই করা আবশ্যক নয়।
শেয়ার লিংক—কিতাবুল আছল ২/১২৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১২ ও ১৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৩; আননাহরুল ফায়েক ১/৪৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫২
গত বছর বাবা মারা গেলে তার সমুদয় সম্পত্তি শরয়ী পন্থায় বণ্টিত হয়। ভাইদের মধ্যে আমি সবার বড় এবং সকলের ছোটজন নাবালেগ, ৯ বছর বয়স। তার প্রাপ্ত সম্পদ (যা নেসাব পরিমাণ)-এর রক্ষণাবেক্ষণ আমি করে থাকি। হুজুরের নিকট প্রশ্ন হল, আমার এ নাবালেগ ভাইয়ের সম্পদে কি যাকাত ও সদাকাতুল ফিতর আবশ্যক? তা থেকে কি যাকাত-সদকা আদায় করতে হবে? জানালে উপকৃত হব।
নাবালেগের ওপর যাকাত ফরয নয়। তাই আপনার নাবালেগ ভাইয়ের সম্পদের যাকাত দিতে হবে না। কিন্তু সদাকাতুল ফিতর নাবালেগের সম্পদেও ওয়াজিব হয়। তাই তার সম্পদ থেকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। অবশ্য আপনি তার সদাকাতুল ফিতর আপনার সম্পদ থেকে আদায় করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
শেয়ার লিংক—কিতাবুল আছল ২/১৭৬; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৫২০ ও ৫৭০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০২ ও ২৫৬; খিযানাতুল আকমাল ১/২৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৯ ও ৩৬৩
গত রমযানের শেষ তিন দিন এবং ঈদের দিনেও সফরে ছিলাম। সফরে থাকাকালীন আমি রোযা ছিলাম না এবং সদাকাতুল ফিতরও আদায় করা হয়নি। সফর থেকে বাড়িতে ফিরে এসে সেই ৩টি রোযা কাযা করি। সেদিন এক ভাই বললেন, এবারের সদাকাতুল ফিতরও আপনার ওপর ওয়াজিব। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হল—
(১) সফরে থাকলেও কি সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়?
(২) যদি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে আমার করণীয় কী? ঈদের দিন চলে যাওয়ার পর এখন তা আদায় করতে হবে কি না— জানিয়ে বাধিত করবেন।
উল্লেখ্য, আমি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক ঈদুল ফিতরের দিন মুসাফির থাকলেও তার ওপর সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যায়। কেননা, সদাকাতুল ফিতর নেসাবের মালিক মুকীম-মুসাফির, বালেগ-নাবালেগ সকলের উপর ওয়াজিব। আর কোনো কারণে ঈদের দিন সদাকাতুল ফিতর আদায় করা না হলে তা মাফ হয়ে যায় না; বরং পরবর্তীতে হলেও তা আদায় করা ওয়াজিব। তাই আপনার অনাদায়ী সদাকাতুল ফিতর আদায় করে দেওয়া আবশ্যক।
শেয়ার লিংক—আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ৮৫-৮৬; জামিউর রুমূয ১/৩৪৩; মাজমাউল আনহুর ১/৩৩৪; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, পৃ. ২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৯
হজ্বের সফরে ইহরাম অবস্থায় এক জুমার দিন অভ্যাসবশত ভুলে আমি হাতের নখ কাটা শুরু করি। তিনটি আঙ্গুলের নখ কাটার পর স্মরণ হয় যে, ইহরাম অবস্থায় তো নখ কাটা নিষেধ। একথা স্মরণ হওয়ার পর আমি খুব অনুতপ্ত হই এবং নখ কাটা বন্ধ করে দিই।
মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? এভাবে ভুলে নখ কাটার কারণে কি জরিমানা দম ওয়াজিব হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি শুধু তিনটি আঙ্গুলের নখই কেটেছেন, তাই আপনার ওপর দম ওয়াজিব হয়নি। কেননা দম ওয়াজিব হয় পুরো এক হাত বা এক পায়ের সব নখ কাটলে। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রত্যেক নখ কাটার জন্য একটি করে মোট তিনটি সদাকাতুল ফিতর পরিমাণ নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে।
শেয়ার লিংক—বাদায়েউস সানায়ে ২/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩৬; আলইখতিয়ার ১/৫০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৪; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৩৯; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী, পৃ. ২৯৮
এক মহিলার বিবাহ হয় এবং স্বামীর সাথে ঘর-সংসার হয়; কিন্তু কোনো সন্তান হয়নি। কিছুদিন পর মহিলাকে তার স্বামী তালাক দিয়ে দেয়। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর মহিলার দ্বিতীয় বিবাহ হয়। দ্বিতীয় স্বামী থেকে তার একটি মেয়ে সন্তান জন্মলাভ করে।
জানার বিষয় হল, এ মেয়েটি তার মায়ের প্রথম স্বামীর মাহরাম হবে কি না এবং বড় হওয়ার পর তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে কি না?
মেয়েটি তার মায়ের প্রথম স্বামীর মাহরাম গণ্য হবে। কেননা মেয়েটির মার সাথে তার প্রথম স্বামীর মিলন হয়েছে। তাই উক্ত মহিলার গর্ভজাত মেয়ে অন্য স্বামী থেকে হলেও প্রথম স্বামীর জন্য নিজ স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান হওয়ার কারণে সে তার মাহরামের অন্তভুর্ক্ত। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
وَ رَبَآىِٕبُكُمُ الّٰتِیْ فِیْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَآىِٕكُمُ الّٰتِیْ دَخَلْتُمْ بِهِنَّ .
(তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) ... তোমাদের এমন স্ত্রীদের গর্ভজাত কন্যা, যেই স্ত্রীদের সাথে তোমাদের সহবাস হয়েছে। [সূরা নিসা (৪) : ২৩]
শেয়ার লিংক—তাফসীরে কাবীর, ইমাম রাযী ১০/৩৪; কিতাবুল আছল ৪/৩৬১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬২; আলবাহরুর রায়েক ৩/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৪
সম্মানিত মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল, উলামায়ে কেরাম বলেন, ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা হারাম। সাধারণ মুসলিম হিসেবে আমরা আলেমগণের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখি এবং তাঁদের কথা ও ফতোয়া এবং দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে থাকি। কিন্তু হারাম হওয়ার কারণগুলো স্পষ্টভাবে জানা না থাকার কারণে বাস্তব জীবনে ফাতাওয়ার উপর আমল করতে গিয়ে পরিবার ও সমাজের কিছু লোকের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে পরিবারের লোকেরা বিষয়টির প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে। এমতাবস্থায় মুফতী সাহেবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কেন হারাম— তা বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
বি. দ্র. আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র। পিতার অর্থের উপর নির্ভর করে আমার চলতে হয়। যেহেতু আমার বাবা ব্যাংকে চাকরি করেন এবং সেই উপার্জন থেকেই আমার প্রয়োজনীয় খরচ দেয়া হয়, তাই এখন আমি এই টাকা গ্রহণ করতে পারব কি না— এব্যাপারে মুহতারাম মুফতী সাহেবের মূল্যবান দিকনির্দেশনা কামনা করছি। জাযাকুমুল্লাহ।
ক) প্রচলিত ধারার ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো সুদী অর্থব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। আর প্রচলিত বীমাব্যবস্থায় ‘কিমার’ তথা জুয়াও বিদ্যমান। এসব ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা হারাম হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যার কয়েকটি নিম্নরূপ :
১. কুরআন ও হাদীসে সুদের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে; যা কারো অজানা নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ. فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ.
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং যা কিছু সুদ কারো কাছে বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও— যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা জেনে নাও। —সূরা বাকারা (২) : ২৭৮-২৭৯
হাদীস শরীফে সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার পাশাপাশি সুদী চুক্তির লেখক ও সাক্ষীকেও অভিস¤পাত করা হয়েছে এবং এদের সবাইকে সমান অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছে। জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
أنَّ النبيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لعَنَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ.
অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদী চুক্তির লেখক এবং সুদী লেনদেনের সাক্ষী— সবাইকে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮
বলা বাহুল্য, যারা প্রচলিত ধারার ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তারা সকলেই কোনো না কোনোভাবে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুদী চুক্তিগুলো সম্পাদনে ভূমিকা রাখেন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণের কাজটাই নাজায়েয।
২. প্রচলিত বীমাব্যবস্থায় সুদ ছাড়া ‘কিমার’ তথা জুয়াও বিদ্যমান। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা জুয়াকে হারাম সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَ الْمَیْسِرُ وَ الْاَنْصَابُ وَ الْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّیْطٰنِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ.
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, পূজার বস্তু এবং জুয়ার তীর— এসবই অপবিত্র, শয়তানের কাজ। অতএব এসব থেকে দূরে থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হও। —সূরা মায়েদা (৫) : ৯০
৩. গুনাহের কাজে সহায়তা করা স্বতন্ত্র গুনাহ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা গুনাহের কাজে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ.
অর্থাৎ তোমরা গুনাহের কাজে ও জুলুমে একে-অপরের সাহায্য করো না। —সূরা মায়েদা (৫) : ২
৪. শরীয়তের দৃষ্টিতে যে কোনো শ্রমের পারিশ্রমিকই জায়েয হয় না; বরং পারিশ্রমিক জায়েয হওয়ার জন্য শ্রম ও পারিশ্রমিক দুটিই হালাল হতে হয়। নাজায়েয শ্রম বাবদ পারিশ্রমিকের অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম বলে গণ্য। আবু মাসঊদ আনসারী রা. থেকে বর্ণিত—
أنَّ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم نَهَى عن ثَمَنِ الكَلْب، ومَهْر البغيِّ، وحُلْوانِ الكاهِنِ.
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন— কুকুরের মূল্য থেকে, পতিতার উপার্জন থেকে এবং জ্যোতিষীর পারিশ্রমিক থেকে। —সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৩৭
যেহেতু প্রচলিত ধারার ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোতে শ্রম দেওয়া নাজায়েয, তাই এর পারিশ্রমিকের অর্থও হারাম।
৫. প্রচলিত ধারার ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির কর্মচারীদের যে বেতন দেওয়া হয় তা স্বাভাবিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের আয় বা মুনাফা থেকেই দেওয়া হয়। আর জানা কথা যে, যাদের কারবার হারাম তাদের আয়ের মুখ্যঅংশই হারাম। হারাম অর্থ থেকে কোনো জায়েয শ্রমেরও পারিশ্রমিক নেওয়া বৈধ নয়। সুতরাং প্রচলিত ধারার ব্যাংক ও বীমার কাজে শ্রম দেওয়াই প্রথমত নাজায়েয, উপরন্তু এর পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়ে থাকে প্রধানত হারাম অর্থ থেকে, তাই এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা এবং এর আয় ভোগ করা সবই নাজায়েয।
হাদীস শরীফে হারাম অর্থ ভোগ করার ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
لَا يَدْخُلُ الجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِحَرَامٍ.
অর্থাৎ যে শরীরকে হারাম খাওয়ানো হয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। —মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৭৮
কা‘ব ইবনে উজরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ وَدَمٌ نَبَتَا عَلَى سُحْتٍ، النَّارُ أَوْلَى بِهِ.
অর্থাৎ হারাম অর্থ থেকে উৎপন্ন রক্ত-মাংস জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জাহান্নামই তার জন্য উপযুক্ত। —সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৫৭৬
খ) যদি আপনার উপার্জনের সুযোগ না থাকে এবং আপনি আপনার পিতার উপর নির্ভরশীল হন তাহলে উপার্জনে সক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রয়োজন পরিমাণ খরচ আপনার পিতা থেকে নিতে পারবেন। —ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪০২; রদ্দুল মুহতার ৬/১৯১
শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় একটি বিল আছে। এলাকার প্রায় সকলেরই সেখানে জমি আছে। বর্ষার মৌসুমে প্রায় পাঁচ-ছয় মাস বিলে পানি থাকে। পাশে নদী থাকায় বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে বিলে আমার জমিগুলো মাছ ধরার জন্য ভাড়া দিয়ে আসছি। আমরা এভাবে ভাড়া দিই যে, নিলামের মাধ্যমে কাউকে জমিগুলো বর্ষার মৌসুমের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, যেন সে সেখানকার মাছগুলো ধরে নিতে পারে। ভাড়া নেওয়ার পর ভাড়াগ্রহীতা নির্ধারিত এলাকায় বিভিন্ন খাবার জাতীয় জিনিস দেয়, যেন মাছগুলো ঐ জায়গায় গিয়ে বেশি জমা হয়। এরপর সে নির্ধারিত এলাকার চারপাশে বাঁশ-নেট দিয়ে ঘেরাও করে দেয়। ঐ নির্ধারিত এলাকা থেকে অন্য সবার জন্য মাছ ধরা নিষেধ থাকে।
ইজারা থেকে প্রাপ্ত পুরো টাকা আমরা সবার সম্মতিক্রমে এলাকার মসজিদ-মাদরাসায় দান করে দিই। আমরা নিজেরা এখান থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করি না।
সম্মানিত মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, উল্লিখিত পদ্ধতিতে কারবার করা আমাদের জন্য শরীয়তসম্মত হচ্ছে কি? যদি এই পদ্ধতিতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত সঠিক পদ্ধতি কী হবে? আশা করি বিষয়টির সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।
শুধু মাছ ধরার জন্য পুকুর বা জলাশয় ভাড়া দেওয়া জায়েয নয়। তবে মাছ চাষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিল বা জলাশয় ভাড়া দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তাই এক্ষেত্রে বৈধভাবে কারবার করতে চাইলে শুরু থেকেই নির্ধারিত মেয়াদের জন্য ভাড়া গ্রহীতাকে মাছ চাষের/পরিচর্যার জন্য পুকুর ভাড়া নিতে হবে। এরপর সে তাতে মাছ ছাড়া বা বর্ষার মাছ প্রবেশ করা, মাছ আটকানো এবং মাছের চাষ ও পরিচর্যার জন্য যা যা করা দরকার এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, এভাবে ভাড়া নেওয়ার পর নির্ধারিত এলাকার চারপাশে ঘেরাও দিলে সেখানে থাকা মাছগুলো শিকার করার ব্যাপারে তার হক সাব্যস্ত হবে। এক্ষেত্রে উক্ত এলাকা থেকে অন্যের জন্য মাছ ধরা জায়েয হবে না।
আরো উল্লেখ থাকে যে, এভাবে ভাড়া নেওয়ার পর ঘেরাও দেওয়া মাছ পরিচর্যা ও খাবার দিয়ে চাষাবাদ করা যাবে। চাষাবাদের জন্য নতুন মাছ ছাড়া জরুরি নয়।
প্রকাশ থাকে যে, ইজারা থেকে প্রাপ্ত টাকা মসজিদ-মাদরাসা অথবা কোনো জনকল্যাণমূলক ফান্ডে দান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। তবে এর জন্য শর্ত হল, তা অবশ্যই সকল শরীকের সন্তুষ্টিতে হতে হবে। কেউ যদি চাপের কারণে অথবা লজ্জায় পড়ে দান করতে বাধ্য হয়, তাহলে ঐ শরীকের অংশ নেওয়া বৈধ হবে না। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে—
لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ.
কারো সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত (অন্যের জন্য) বৈধ না। —মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৬৯৫
তাই কোনো শরীক সন্তুষ্টচিত্তে দিতে না চাইলে তাকে তার হিস্যার টাকা দিয়ে দেবে। বাকিটুকু দান করবে।
শেয়ার লিংক—বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩২৯; ফাতহুল কাদীর ৬/৪৯; আলবাহরুর রায়েক ৬/৭৩; তাকরীরাতে রাফেয়ী ৫/১৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬১, ৬০ ও ৬/৬৩; রদ্দুল মুহতার ৫/৬০
আমার এক আত্মীয় নিজ টাকা দিয়ে এক ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল সেল দেয়। যত বেশি সেল দিতে পারে তত বেশি লাভ হয়। আমি ২ লক্ষ টাকা দিয়ে তার সাথে ব্যবসায় শরীক হতে চাইলে সে এ শর্তে রাজি হয় যে, মাস শেষে ব্যবসায়িক খরচ বাদ দিয়ে লভ্যাংশের যতটুকু ইচ্ছা দেবে। কোনো শতকরা হার নির্ধারণ করেনি। আমিও উক্ত চুক্তিতে তার সাথে রাজি হয়ে যাই। এভাবে কয়েক মাস গত হয়। সে যতটুকু লভ্যাংশ দেয় আমি তা খুশি মনে নিয়ে নিই।
এখন জানার বিষয় হল, শতকরা হার নির্ধারণ ছাড়া উক্ত চুক্তিতে ব্যবসা জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় তাহলে এতদিন অর্জিত লভ্যাংশের শরয়ী বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
কারো ব্যবসায় অর্থ দিয়ে শরীক হতে চাইলে লভ্যাংশের শতকরা হার নির্ধারণ করে নেওয়া আবশ্যক। লভ্যাংশের হার নির্ধারণ না করে অনির্দিষ্ট হারে লাভ দেওয়া জায়েয নয়। তদ্রূপ লভ্যাংশের যতটুকু ইচ্ছা দেবে— এভাবে চুক্তি করাও নাজায়েয।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শতকরা হারে লভ্যাংশ নির্ধারণ না করে ব্যবসা পরিচালনাকারীর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়ার কারণে উক্ত চুক্তিটি ফাসেদ হয়ে গেছে। এখন আপনি যদি সঠিকভাবে উক্ত ব্যবসায় শরীক হতে চান, তাহলে পূর্বের চুক্তিটি বাতিল করে দিয়ে শতকরা হারে লভ্যাংশ নির্ধারণ করতঃ নতুন করে চুক্তিতে আবদ্ধ হবেন।
আর প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি যেহেতু ফাসেদ হয়েছে তাই এতদিন ঐ ২ লক্ষ টাকা দিয়ে ব্যবসা করে যা লাভ অর্জিত হয়েছে তার পুরোটার মালিক আপনি। আর ব্যবসা পরিচালনাকারী এত দিনের ন্যায্য পারিশ্রমিক পাবে।
শেয়ার লিংক—কিতাবুল আছল ৪/১২৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/২৭; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/১৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮
ডেভেলপার কোম্পানি থেকে এক লোক একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে। তাদের চুক্তি এভাবে হয় যে, দুই বছর পর নির্ধারিত তারিখে ডেভেলপার কোম্পানি গ্রাহককে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখ আসার পর দেখা গেল, ফ্ল্যাটের কাজ শেষ হতে আরো চার-পাঁচ মাস লাগবে। তখন ডেভেলপার কোম্পানি গ্রাহককে বলে যে, ফ্ল্যাট পুরো প্রস্তুত করে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত তারা গ্রাহককে বাসা ভাড়া প্রদান করবে। এক্ষেত্রে ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর নাকি এটিই নিয়ম।
জানার বিষয় হল, গ্রাহকের জন্য এক্ষেত্রে ডেভেলপার কোম্পানি থেকে বাসাভাড়া গ্রহণ করা বৈধ হবে কি না? আর গ্রাহক যদি ভাড়া বাসায় না থাকে; বরং নিজের বাসাতেই বসবাস করে— তখন কী হুকুম হবে? মাসআলাটি বিস্তারিত বুঝিয়ে বাধিত করবেন।
ডেভেলপার কোম্পানির কর্তব্য হল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করে ফ্ল্যাট গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করা। যদি ফ্ল্যাটটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করতে চুক্তির শর্তে উল্লেখ আছে এমন কোনো অনিবার্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, (যেমন, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি বা প্রাকৃতিক দুযোর্গ ইত্যাদি) বরং ডেভেলপার কোম্পানি নিজ অবহেলা ও ত্রুটির কারণে যথা সময়ে ফ্ল্যাট তৈরি ও হস্তান্তর করতে না পারে, সেক্ষেত্রে ডেভেলপার কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী যে টাকা ক্রেতাকে দেয়ার চুক্তি করা হয়, ক্রেতার জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে। এটি ভাড়ার নামে দেওয়া হলেও মূলত তা ভাড়া নয়। ফ্ল্যাট ক্রেতা বা জমি মালিক তো তার কাছে কোনো ঘর ভাড়া দেয়নি যে, সে তার ভাড়া পরিশোধ করবে; বরং এটি হচ্ছে সময়ের ভেতর হস্তান্তর করতে না পারায় মূল্য কর্তন ও মূল্য পুনঃনির্ধারণ। যা নতুন মূল্য হিসাবে ধর্তব্য হবে। শরীয়তে তা জায়েয।
শেয়ার লিংক—মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, ১২/২/৩০৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৭২
আমি বাজারে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে মোবাইল ফোন ইত্যাদি সার্ভিসিং করি। কয়েকদিন আগে রাতের বেলা আগুন লেগে আমার দোকানসহ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। আমাদের ধারণা কেউ শত্রুতা বশতঃ এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। ঐ সময় আমার দোকানে মেরামতের জন্য দামি কয়েকটি মোবাইল ছিল। এখন মোবাইলের মালিকগণ আমার কাছ থেকে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।
তাই হুজুরের নিকট জানার বিষয় হল, মোবাইলের মালিকগণকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া কি আমার জন্য আবশ্যক? এক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে যেহেতু মোবাইলগুলো পুড়ে গেছে। তাই আপনার উপর এর ক্ষতিপূরণ দেওয়া আবশ্যক নয়। কেননা মোবাইলগুলো পুড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কোনো হাত ছিল না; বরং আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে তা পুড়ে গেছে। তাই এর দায় আপনার উপর আসবে না।
শেয়ার লিংক—কিতাবুল আছল ৩/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৭২; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৫৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৫ ও ৬২; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৭২৪
আমি এক মাদরাসার উচ্চতর বিভাগে পড়াশোনা করি। আমার এক সহপাঠী ভাই আমার কাছ থেকে পনের হাজার টাকা ধার নেয়। পরে কোনো এক কারণে সে মাদরাসা থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় তার কাছে ঋণ পরিশোধ করার মতো টাকা না থাকায় সে আমার নিকট তার কিছু বিদেশি কিতাব ‘তাহযীবুল কামাল’, ‘তাকরীবুত তাহযীব’ ইত্যাদি বন্ধক হিসেবে রেখে যায়। এখন মাঝে মাঝে রাবীদের জীবনী খুঁজতে গিয়ে কিতাবগুলো দেখার খুব প্রয়োজন পড়ে। তাই মুহতারামের নিকট জানতে চাই, উক্ত কিতাবগুলো থেকে প্রয়োজনের সময় ইস্তিফাদা করতে পারব কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
না, উক্ত বন্ধকী কিতাবগুলো থেকে উপকৃত হওয়া আপনার জন্য বৈধ হবে না। কেননা ঋণের বিনিময়ে যে জিনিস বন্ধক রাখা হয়। ঋণদাতার জন্য তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। তাই এ থেকে বিরত থাকতে হবে।
শেয়ার লিংক—শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/১৪৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ৪/২৪৩; আলইখতিয়ার ২/১৬২; মাজমাউল আনহুর ৪/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২
গত কুরবানী ঈদের আগে কুরবানী করার উদ্দেশ্যে একটি ছাগল ক্রয় করি। কিন্তু ঈদের আগের দিন বিকালে হঠাৎ আমার বাবা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। বাবার অবস্থা তখন দ্রুত অবনতির দিকে চলে যেতে থাকে। ঈদের চতুর্থ দিন তিনি হাসপাতালের আইসিওতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এসব ঝামেলার কারণে ঈদের দিনগুলোতে ছাগলটি কুরবানী করতে পারিনি। জানতে চাই, এখন আমার করণীয় কী? ছাগলটি দিয়ে এখন আমি কী করব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ছাগলটি জীবিত সদকা করে দিতে পারেন অথবা এর ন্যায্যমূল্যও সদকা করে দিতে পারেন। এভাবে সদকা করে দিলে আপনার কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
শেয়ার লিংক—ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৮; আলইনায়া ৮/৪৩২; তাকমিলাতুল বাহরির রায়েক ৮/১৭৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৪
প্রায় সাত বছর যাবৎ আমার আম্মার মালিকানায় ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত দুই বিঘা জমি রয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দশ লক্ষ টাকা। আমার নানার মৃত্যুর পর মিরাছসূত্রে তিনি ওই জমির মালিক হয়েছেন। কিন্তু মাসআলা না জানার কারণে বিগত বছরগুলোতে তিনি কুরবানী আদায় করেননি। তাই এখন আমার আম্মার করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আম্মার জন্য করণীয় হল, বিগত সাত বছরের প্রত্যেক বছরের অনাদায়ী ওয়াজিব কুরবানীর জন্য কুরবানীযোগ্য ন্যূনতম এক বছর বয়সী ছাগলের মূল্য গরীব-মিসকীনকে সদকা করা।
শেয়ার লিংক—বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৪; তাকমিলাতুল বাহরির রায়েক ৮/১৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১
গত বছর আমার দাদার ইন্তেকাল হয়েছে। আমার আব্বা চাচ্ছেন, এবার কুরবানীর সময় গরুর এক ভাগ দাদার পক্ষ থেকে কুরবানী করতে। হুযুরের কাছে জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে এই কুরবানীর গোশতের কী হুকুম? আমরা তা খেতে পারব কি না?
ঐ কুরবানী যদি মরহুমের অসিয়ত ছাড়াই আপনার আব্বা তার ঈসালে সাওয়াবের নিয়তে করে থাকেন তাহলে উক্ত ভাগের গোশত আপনার আব্বা নিজে খেতে পারবেন, অন্যকেও খাওয়াতে পারবেন এবং সদকা করতে পারবেন।
আর যদি ঐ কুরাবনী আপনার দাদার অসিয়ত অনুযায়ী হয় এবং তার সম্পদ থেকেই করা হয় তাহলে উক্ত কুরবানীর গোশত পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে।
শেয়ার লিংক—আলফাতাওয়া মিন আকাবিলীল মাশায়েখ, পৃ. ৪৬৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১ ও ৩৫২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ৩/৭৪; খিযানাতুল আকমাল ৩/৫৪৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬ ও ৩৩৫
আমরা সাত শরীক মিলে সবসময় এক গরু দিয়ে কুরবানী করে থাকি। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, আমাদের সাত শরীকেরই গরুর খুরের প্রতি সমানভাবে আগ্রহ থাকে। এক্ষেত্রে সবার মন রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এজন্য আমরা এ বছর খুরগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দিই। যে নেবে ঐ নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করে নেবে। আর এ ব্যাপারেও সকলেই একমত হয় যে, বিক্রিলব্ধ মূল্য সদকা করে দেওয়া হবে। সে হিসেবে এ বছর আমরা খুরগুলো বিক্রি করে টাকাগুলো সদকা করে দিই। কারো মনে আর কষ্ট থাকেনি।
জানার বিষয় হল, উক্ত খুরগুলো বিক্রি করে দেওয়া এবং বিক্রিত মূল্য সদকা করে দেওয়া আমাদের জন্য জায়েয হয়েছে কি? এতে শরীয়ত পরিপন্থী কোনো কিছু হয়নি তো? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে কুরবানীর পশুর খুর বিক্রি করা নাজায়েয হয়নি। বিশেষত প্রশ্নোক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা ভুল হয়নি।
প্রকাশ থাকে যে, মূল্য সদকার নিয়ত না থাকলে কুরবানীর গোশত, চর্বি বা খুর ইত্যাদি কোনো কিছুই বিক্রি করা জায়েয় নয়।
শেয়ার লিংক—খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৮/৩৪২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৬; তাকমিলাতুল বাহরির রায়েক ৮/১৭৮; ফাতহুল কাদীর ৮/৪৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮
অনেক মহিলাদেরকে দেখা যায়, তারা শিশুদেরকে পেশাব-পায়খানা করানোর জন্য বসানোর সময় খেয়াল করে বসায় না। অনেক সময় কিবলামুখী করেই বসিয়ে দেয়। আমরা জানি, বড়দের জন্য কিবলামুখী হয়ে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ।
জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে শিশুদের জন্য বিধান কী? অর্থাৎ শিশুদেরকে পেশাব-পায়খানা করানোর জন্য কিবলামুখী করে বসানো কি জায়েয আছে?
শিশুদেরকে পেশাব-পায়খানার সময় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে বসানো নিষিদ্ধ। পেশাব-পায়খানার সময় শিশুদেরকে কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে বসালে যদিও শিশুর গুনাহ হবে না, কিন্তু যিনি শিশুকে ওভাবে বসাবেন তার গুনাহ হবে। তাই বড়দের কর্তব্য হল, শিশুদেরকে পেশাব বা পায়খানার জন্য বসানোর সময় উত্তর বা দক্ষিণ দিক করে বসানো।
শেয়ার লিংক—আযযিয়াউল মা‘নবী ১/২৯০; মাজমাউল আনহুর ১/১০০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৪২
আমাদের ঠোঁটের নিচে এবং গলার নিচে যে পশমগুলো উঠে সেগুলোকে ছোট করা কিংবা সেভ করা বৈধ হবে কি না? এবিষয়ে জানতে চাই।
ঠোঁটের নিচে যেসব পশম গজায় তা মুণ্ডিয়ে বা উপড়ে ফেলা নিষেধ। একে নিমদাড়ি বলে। একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিমদাড়ি রাখতেন। হযরত হারীয ইবনে উসমান রাহ. হতে বর্ণিত—
أَنَّهُ سَأَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ بُسْرٍ صَاحِبَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: أَرَأَيْتَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ شَيْخًا؟ قَالَ: كَانَ فِي عَنْفَقَتِهِ شَعَرَاتٌ بِيضٌ.
তিনি সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে বুসরকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কি বৃদ্ধ দেখেছেন?
তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিমদাড়িতে কয়েকটি চুল সাদা ছিল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৫৪৬)
অবশ্য গলার নিচে যেসব পশম গজায় তা প্রয়োজনে কাটা যাবে।
শেয়ার লিংক—শরহু সহীহি মুসলিম, নববী ৩/১৪৯; ফায়যুল বারী ৪/৩৮০; আলইয়ানাবী‘ ২/৪২৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৭
মেয়েরা নাক-কান ফুঁড়িয়ে নাকফুল, কানের দুল পরে থাকে। একজন বলল, মেয়েদের নাক-কান ফোঁড়ানো নাকি জায়েয নেই। ওই লোকের কথা কি সত্যি? এক্ষেত্রে শরীয়তের সঠিক বিধান জানতে চাই।
অলংকার ব্যবহারের জন্য মেয়েদের নাক-কান ফোঁড়ানো জায়েয আছে। প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। নারী সাহাবীগণ কানে অলংকার পরিধান করতেন, তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন—
خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عِيدٍ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَمْ يُصَلِّ قَبْلُ وَلاَ بَعْدُ، ثُمَّ مَالَ عَلَى النِّسَاءِ، وَمَعَهُ بِلاَلٌ فَوَعَظَهُنَّ، وَأَمَرَهُنَّ أَنْ يَتَصَدَّقْنَ، فَجَعَلَتِ المَرْأَةُ تُلْقِي القُلْبَ وَالخُرْصَ.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন বের হলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। আগে-পরে কোনো নামায পড়লেন না। অতঃপর বিলাল রা.-কে সাথে নিয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন। তাদেরকে উপদেশবাণী শোনালেন এবং সদকা করার নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলারা তাদের কানের দুল এবং হাতের কংকন খুলে দিতে লাগলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৩১)
ফকীহগণ বলেছেন, এই হাদীস দ্বারা মহিলাদের নাক ফোঁড়ানো জায়েয হওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।
শেয়ার লিংক—খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৭; আলহাবিল কুদসী ২/৩২৩; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/৩৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২০