গতকাল অযুর পাত্রে তেলাপোকা বা টিকটিকির বিষ্ঠা দেখতে পেলাম। ঐ অযু দিয়ে আসরের নামায পড়েছি, আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?
গতকাল অযুর পাত্রে তেলাপোকা বা টিকটিকির বিষ্ঠা দেখতে পেলাম। ঐ অযু দিয়ে আসরের নামায পড়েছি, আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?
হাঁ, আপনার উক্ত অযু সহীহ হয়েছে। কারণ টিকটিকি বা তেলাপোকার বিষ্ঠা নাপাক নয়। তা পানিতে পড়ার কারণে পানি নাপাক হয়ে যায়নি। সুতরাং ঐ পানি দ্বারা অযু করা সহীহ হয়েছে এবং আপনার নামাযও আদায় হয়েছে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/৫৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৫১; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ২৮; ইমদাদুল আহকাম ১/৩৮৩
আমাদের মসজিদে ট্যাংকের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে, পরে দেখা গেল তাতে একটি মেঠো ইঁদুর পড়ে আছে এবং ফুলে গেছে। এমতাবস্থায় উক্ত পানি দিয়ে অযু করে আদায়কৃত নামাযের হুকুম কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইঁদুর কখন পড়েছে তা যদি জানা যায়, তাহলে তখন থেকে উক্ত পানি দ্বারা অযু-গোসল করে যেসকল ফরয ও ওয়াজিব নামায আদায় করা হয়েছে তা পুনরায় পড়ে নিতে হবে। কিন্তু ইঁদুর পড়ার সময় যদি জানা না যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে ইঁদুর পড়ার বিষয়টি অবগত হওয়ার সময় থেকে পেছনের তিন দিন, তিন রাত পর্যন্ত উক্ত পানি দ্বারা অযু-গোসল করে যেসকল ফরয বা ওয়াজিব নামায আদায় করা হয়েছে সেই নামাযগুলো পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/২৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/২২৯; আলহাবিল কুদসী ১/১০১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৬০; আদ্দুররুল মুখতার ১/২১৮
মাটির ঘরের মেঝেতে অনেকসময় বাচ্চারা পেশাব করে। পেশাব শুকিয়ে যাওয়ার পর সেই জায়গায় কি নামায পড়া যাবে এবং সেই মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করা কি সহীহ হবে?
মাটির মেঝেতে পেশাব লেগে তা শুকিয়ে গেলে এবং দুর্গন্ধ চলে গেলে ঐ স্থান পবিত্র হয়ে যায়। এ অবস্থায় জায়গাটিতে নামায পড়া যাবে। কিন্তু তাতে তায়াম্মুম করা সহীহ হবে না
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৬৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১১; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ১২৩
একজন মহিলার প্রতি মাসে প্রথম দশকে আটদিন হায়েয থাকে। কিন্তু এ মাসে প্রথম আটদিনের পর যথারীতি বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৬তম দিন অর্থাৎ আটদিন পবিত্র থেকে আবার স্রাব দেখা দেয়। এটা তিন চার দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে চলছে। এখন সে কী করবে?
দুই হায়েযের মাঝে পবিত্রতার ন্যূনতম সময় ১৫ দিন। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আটদিনের পর যেহেতু স্রাব শুরু হয়ে গেছে তাই এটি হায়েয নয়; বরং তা ইস্তিহাযা। অর্থাৎ মহিলাটি এ সময়ে পবিত্র অবস্থার মত নামায-রোযা আদায় করবে এবং প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের জন্য নতুন করে ওযু করে নেবে।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭; রদ্দুল মুহতার ১/ ২৮৫, ৩০০; আলবাহরুর রায়েক ১/২১২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৭৯
একদিন আমাদের মসজিদে ইমাম সাহেব এশার নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে ভুলে বৈঠক না করেই উঠে যান এবং দাঁড়ানোর কাছাকাছি হওয়ার পর মুক্তাদীদের লোকমার কারণে বৈঠকে ফিরে আসেন এবং সাহুসিজদা ছাড়াই নামায শেষ করে ফেলেন। নামায শেষে এ ব্যাপারে মতানৈক্য দেখা দেয় যে, নামায সহীহ হয়েছে কি না। তখন একজন আলেম বললেন যে, নামায সহীহ হয়ে গেছে এবং সাহুসিজদা ওয়াজিব হয়নি। কারণ মুক্তাদিদের লোকমার সাথেসাথে ইমাম সাহেব যেহেতু ফিরে চলে এসেছেন, তাই তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হয়নি। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় আসলে কি ইমাম সাহেবের উপর সাহুসিজদা ওয়াজিব হয়েছিল? এবং যদি ওয়াজিব হয়ে থাকে এবং তিনি যে সাহুসিজদা করলেন না- এতে কি নামায সহীহ হয়েছে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যেহেতু দাঁড়ানোর কাছাকাছি চলে গিয়েছেন তাই তার উপর সাহুসিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; বরং পরবর্তী রোকনের কাছাকাছি চলে যাওয়াও সাহুসিজদা ওয়াজিব হওয়ার একটি কারণ। আর ইমাম সাহেব যেহেতু সাহুসিজদা ছাড়া নামায শেষ করেছেন, তাই ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ১/১৯৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৮; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১০০; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১৯; রদ্দুল মুহতার ১/৮৪
কয়েকদিন আগে আমি মসজিদে আসরের নামায পড়তে যাই। নীচতলায় জায়গা না পেয়ে ২য় তলায় গিয়ে জামাতে শরীক হই। নামাযের ২য় রাকাতের ২য় সেজদা থেকে ওঠার সময় ইমাম সাহেব একটু লম্বা করে তাকবীর বলেন। ফলে আমরা যারা ২য় তলায় ছিলাম তারা সকলেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে গিয়েছেন ভেবে ৩য় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাই এবং পরবর্তী তাকবীর শুনে রুকুতে চলে যাই। অতঃপর ইমাম সাহেব যখন রুকুর জন্য তাকবীর বলেন তখন আমরা বুঝতে পারি যে, ইমাম সাহেব ২য় রাকাতের সেজদা থেকে ওঠার সময় তাকবীর লম্বা করে বললেও ৩য় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাননি বরং বৈঠক যথাযথভাবেই আদায় করেছেন এবং এখন ইমাম সাহেব রুকুতে আছেন। তাই আমরা রুকু থেকে না উঠে
ইমামের সাথে রুকুতেই থাকি এবং বাকি নামায ইমামের সাথে শেষ করি। নামায শেষ হওয়ার পর আমরা অনেকে সতর্কতামূলক উক্ত নামায পুনরায় আদায় করে নিই। জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছিল? এ ধরনের পরিস্থিতিতে করণীয় কী?
মুক্তাদী যদি নামাযের কোনো একটি পূর্ণ রুকন (যেমন কিয়াম, রুকু, সিজদা) ইমামের আগে আদায় করে ফেলে এবং এরপর ইমামের সাথে পুনরায় তা আদায় না করে তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ২য় তলার মুক্তাদীদের পূর্ণ একটি রুকন তথা কিয়াম যেহেতু ইমামের কিয়ামের আগেই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে, তাই তাদের উক্ত নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। যারা পুনরায় নামায আদায় করে নিয়েছেন তারা ঠিকই করেছেন।
প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দোতলার মুক্তাদীগণ যদি ভুল বোঝার পর দাঁড়িয়ে গিয়ে কিয়াম এর জন্য এক তাসবীহ পরিমাণ দাঁড়িয়ে পুনরায় রুকু করতেন তাহলে তাদের নামায সহীহ হয়ে যেত। এক্ষেত্রে পুনরায় নামায আদায় করার প্রয়োজন হত না। কারণ, কোনো রুকন ইমাম সাহেবের সাথে আদায় করতে না পারলেও মুক্তাদী যদি ইমামের সাথে বা পরেও তা আদায় করে নেয় তাহলে সেটি সহীহ হয়ে যায়।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১১৯; আলহাবিল কুদসী ১/২১১; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৬৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১৮৫; রদ্দুল মুহতার ১/৪৭০
আমাদের মসজিদটি পুরাতন হয়ে ব্যবহারের অনুপযুক্ত হওয়ায় আমরা মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের মসজিদের জায়গাটি সোজা বায়তুল্লাহর দিক থেকে প্রায় ১০ ডিগ্রি বাঁকা। সোজা বায়তুল্লাহর দিকে নির্মাণ করলে মসজিদটির দুই পাশে কিছু জায়গা খালি থেকে যায়। আর জায়গার সাথে মিল রেখে নির্মাণ করলে কেবলা দিক থেকে প্রায় ১০ ডিগ্রি বাঁকা করে নির্মাণ করতে হয় এবং মসজিদের ভেতরে সোজা কেবলা দিক হিসাব করে কাতারের দাগ টানলে অসুন্দরও দেখা যায়। শুনেছি সোজা বায়তুল্লাহর দিক থেকে ডানে-বামে প্রতি দিকে ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকা হয়েও নামায আদায় করলে নামায সহীহ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমাদের মসজিদটি কীভাবে নির্মাণ করলে শরীয়তসম্মত হবে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
মসজিদ ইসলাম ও মুসলমানদের এক সুমহান নিদর্শন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পাশাপাশি এটি মুসলমানদের জন্য কেবলার দিকনির্দেশকও বটে। ফুকাহায়ে কেরাম কেবলার দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এলাকায় পূর্ব থেকে বিদ্যমান মসজিদসমূহের দিক অনুসরণ করতে বলেছেন। তাই নতুন কোনো মসজিদ নির্মাণ করতে হলে তা অবশ্যই যথাসম্ভব কেবলা দিক করেই নির্মাণ করা কর্তব্য। আপনাদের মসজিদটিও যথাসম্ভব কেবলা দিক করেই নির্মাণ করবেন। এক্ষেত্রে কিছু জায়গা বাদ পড়ে গেলে বা দেখতে কিছু অসুন্দর দেখা গেলেও ইচ্ছাকৃতভাবে কেবলা থেকে বাঁকা করা উচিত নয়।
উল্লেখ্য, যদিও কা‘বা থেকে দূরবর্তী লোকদের ক্ষেত্রে নামায সহীহ হওয়ার জন্য সরাসরি কিবলামুখী হওয়া শর্ত নয়, বরং ডানে-বামে সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকা হয়ে দাঁড়ালেও নামায সহীহ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো মসজিদ নির্মাণ করতে এমনটি করা উচিত নয়। আর ঐ মাসআলাটি হল নামায আদায় হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে; মসজিদকে ইচ্ছাকৃত কিবলা থেকে বাঁকা করে নির্মাণ প্রসঙ্গে নয়। মসজিদ নির্মাণ করতে হবে যথাযথভাবে কিবলার দিক করেই। -
মসজিদ ইসলাম ও মুসলমানদের এক সুমহান নিদর্শন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পাশাপাশি এটি মুসলমানদের জন্য কেবলার দিকনির্দেশকও বটে। ফুকাহায়ে কেরাম কেবলার দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এলাকায় পূর্ব থেকে বিদ্যমান মসজিদসমূহের দিক অনুসরণ করতে বলেছেন। তাই নতুন কোনো মসজিদ নির্মাণ করতে হলে তা অবশ্যই যথাসম্ভব কেবলা দিক করেই নির্মাণ করা কর্তব্য। আপনাদের মসজিদটিও যথাসম্ভব কেবলা দিক করেই নির্মাণ করবেন। এক্ষেত্রে কিছু জায়গা বাদ পড়ে গেলে বা দেখতে কিছু অসুন্দর দেখা গেলেও ইচ্ছাকৃতভাবে কেবলা থেকে বাঁকা করা উচিত নয়।
উল্লেখ্য, যদিও কা‘বা থেকে দূরবর্তী লোকদের ক্ষেত্রে নামায সহীহ হওয়ার জন্য সরাসরি কিবলামুখী হওয়া শর্ত নয়, বরং ডানে-বামে সর্বোচ্চ ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকা হয়ে দাঁড়ালেও নামায সহীহ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো মসজিদ নির্মাণ করতে এমনটি করা উচিত নয়। আর ঐ মাসআলাটি হল নামায আদায় হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে; মসজিদকে ইচ্ছাকৃত কিবলা থেকে বাঁকা করে নির্মাণ প্রসঙ্গে নয়। মসজিদ নির্মাণ করতে হবে যথাযথভাবে কিবলার দিক করেই।
শেয়ার লিংক-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/৯১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২১৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৫; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ৩৫৫; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/১৫১
আমি একজন শ্রমিক। ইট ভাঙ্গার কাজ করি। বছরের অন্যান্য সময়ের ন্যায় রমযান মাসেও কাজ করতে হয়। কাজ করার সময় মুখে কাপড় বেধে রাখি। তারপরও কিছু ধুলা নাকে-মুখে চলে যায়।
আমার জানার বিষয় হল, রোযা অবস্থায় উক্ত ইটের ধুলা নাকে-মুখে ঢুকার কারণে কি আমার রোযার কোনো ক্ষতি হবে?
নাকে-মুখে ধুলা-বালু ঢুকার কারণে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। সুতরাং ইট ভাঙ্গার কাজ করতে গিয়ে নাকে-মুখে ধুলা ঢুকলেও রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। তাই আপনি রোযা রেখে ঐ কাজ করতে পারেন।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৮৮৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৭৭
গত রমযানে একদিন সেহরিতে খাওয়া বেশি হয়ে যায়। যার কারণে ফজরের নামাযের পরও বারবার ঢেকুর উঠতে থাকে। কয়েকবার এমন হয়েছে যে, ঢেকুরের সাথে সামান্য কিছু খাদ্য গলার উপর চলে এসে আবার তা গলার নিচে নেমে যায়।
আমার জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় ঢেকুরের সাথে সামান্য কিছু খাদ্য গলার উপর আসার পর এমনিতেই তা গলার নিচে নেমে যাওয়ার কারণে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে?
ঢেকুরের সাথে অল্প খাবার মুখে চলে আসার পর নিজ থেকেই তা পেটে চলে গেলে রোযা নষ্ট হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার রোযা নষ্ট হয়নি। তবে কখনো ঢেকুরে সাথে খাবার মুখে চলে আসলে ইচ্ছাকৃত তা গিলে ফেলবে না; বরং বাহিরে ফেলে দেবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৫৬; শরহুল জামিইস সাগীর, সাদরুশ শাহীদ, পৃ. ২৩৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৪
আমার দাদার বয়স আশি বছরের বেশি। গত বছর তিনি একটি রোযাও রাখতে পারেননি। আর শরীরের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে, তা কাযাও করতে পারবেন না। তাই তিনি ফিদইয়া দিতে চাচ্ছেন। এখন একজন ফকীরকে একসঙ্গে ৩০ দিনের ফিদইয়া দিতে পারবে কি?
একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে একাধিক রোযার ফিদইয়াও দেওয়া যায়। চাইলে পুরা রমযানের ফিদইয়াও একত্রে একজনকে দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে একসঙ্গে না দিয়ে প্রতিদিনের রোযার ফিদইয়া পৃথকভাবে দেওয়া উত্তম।
শেয়ার লিংক-আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; জামিউর রুমূয ২/৩৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪২৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৫১
কোনো কারণে এ বছর আমি এলাকার মসজিদে ইতিকাফে বসার মান্নত
করেছি। মসজিদ থেকে চার-পাঁচ মিনিট দূরত্বে একজন আলেম প্রতিদিন তারাবীহের পর ইসলাহী মজলিস করে থাকেন। মান্নত করার সময় উক্ত সময়টিকে বাদ দিয়ে মান্নত করি। অর্থাৎ এভাবে মান্নত করি যে, হে আল্লাহ এ বছর আমি মসজিদে রমযানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফে বসার মান্নত করছি, তবে অমুক আলেম তারাবীহের পর যে মজলিস করে থাকেন তারাবীহের পর সেখানে এসে শরীক হব। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার জন্য উক্ত মজলিসে আসার সুযোগ আছে কি না?
অনুরূপভাবে আরো দুটি বিষয় জানতে চাচ্ছি-
১. সুন্নত ইতিকাফের মাঝেও কি এভাবে নিয়ত করার (কিছু সময় বাদ দেওয়ার) সুযোগ আছে?
২. যদি সুন্নত ইতিকাফের মাঝে কেউ এ ধরনের নিয়ত করে যে, প্রতিদিন যোহরের পর এক ঘণ্টা করে চেম্বারে বসব বা প্রতিদিন দশ মিনিট করে গোসল করব, তাহলে এসকল নিয়তের উপর আমল করার অবকাশ আছে কি? দয়া করে দ্রুত জানাবেন।
মান্নতের ইতিকাফের ক্ষেত্রে কিছু সময় বাদ দিয়ে ইতিকাফের নিয়ত করা সহীহ। তাই প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনি প্রতিদিন তারাবীহের পর উক্ত ইসলাহী মজলিসে যেতে পারবেন। তবে মজলিস শেষ হওয়ার পর সাথে সাথে মসজিদে ফিরতে হবে। একটু দেরী করলে মান্নতের ইতিকাফটি ভেঙে যাবে। সেক্ষেত্রে তা পুনরায় আদায় করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার ইতিকাফটি সুন্নত ইতিকাফ হিসেবে আদায় হবে না। কেননা সুন্নত ইতিকাফের ক্ষেত্রে কিছু সময় বাদ দিয়ে নিয়ত করার সুযোগ নেই। তাই সুন্নত ইতিকাফে পূর্ণ সময় মসজিদে থাকা আবশ্যক।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩১২; জামেউর রুমূয ১/৩৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪৮
আমি অনেকদিন যাবৎ একটি সুদী ব্যাংকে চাকরি করতাম। পরে এক হুজুরের পরামর্শে সেটি ছেড়ে দিই। কিন্তু তখন দ্বীনের বুঝ না থাকার কারণে ঐ অবৈধ টাকা দিয়েই ফরয হজ্ব আদায় করি। জানার বিষয় হল, ঐ হজ¦ দ্বারা কি আমার ফরয হজ্ব আদায় হয়েছে?
হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের অন্যতম রুকন তথা স্তম্ভ। এটি এমন ইবাদত, যাতে শারীরিক ও আর্থিক উভয় দিক রয়েছে। তাই হজ্ব করতে হবে হালাল সম্পদ দ্বারা। হারাম সম্পদ দ্বারা হজ্ব কবুল হয় না এবং সওয়াব পাওয়া যায় না। অবশ্য অপনার ঐ হজ্ব দ্বারা ফরয আদায় হয়ে গেছে। এখন আপনার কর্তব্য ঐ পরিমাণ হালাল টাকা (কিছু কিছু করে হলেও) সদকা করে দেওয়া। এতে করে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর কাছে হজ্বটি কবুল হওয়ার আশা করা যায়।
শেয়ার লিংক-ফাতহুল কাদীর ২/৩১৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৯; আলবাহরুল আমীক ১/৪৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২০; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৮
এক বছর হল আমার বিবাহ হয়েছে। বিবাহের পরই আমি স্বামীর বাড়ি চলে যাই। আত্মীয়দের অনেকেই আমাকে দেখতে সেখানে বেড়াতে যান। আমার সমবয়সী এক খালাতো ভাই আছে। ছোট সময় আমরা একইসাথে খেলাধুলা করতাম। সেও আমাকে দেখতে গিয়েছিল। তারপর তার সাথে অনেক গল্প হয়। একদিন আমার স্বামী বললেন, খালাতো ভাইয়ের সাথে এত গল্প কিসের? সামনে কোনদিন তার সাথে কথা বললে তুমি তালাক। তারপর আমি খালাতো ভাইকে মোবাইলে মেসেজ করে বিষয়টি জানিয়েছি। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এতে কি আমার উপর তালাক পতিত হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ঘটনার পর আপনি যদি সরাসরি কিংবা মোবাইলে আপনার খালাতো ভাইয়ের সাথে কথা না বলে থাকেন; বরং শুধু মেসেজ পাঠিয়ে বিষয়টি অবগত করে থাকেন তাহলে এ কারণে আপনার উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। তাই বিবাহ বিচ্ছেদমূলক অন্য কোনো ঘটনা না ঘটে থাকলে আপনাদের বিবাহ পূর্বের অবস্থায় বহাল আছে। আপনারা স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন যাপন করতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৯/২২; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১০৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/৩৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৯২
আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি কয়েক বছর যাবৎ কানাডায় থাকেন। গত ৯ই ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে আকস্মিক এক সড়ক-দুর্ঘটনায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। সেসময় এদেশে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছায়নি। তবে এরপর থেকে তার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে না পারার কারণে পরিবারের লোকজন তার ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন হন। তারা কানাডায় থাকা বাংলাদেশী লোকজন ও বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। একপর্যায়ে মৃত্যুর এক মাস পর ৮ই জানুয়ারি বাংলাদেশ দূতাবাস লোকটির পরিবারের নিকট ৯ই ডিসেম্বরে তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে। জানতে চাই, উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী কোন্ দিন থেকে স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত গণনা শুরু করবে? মৃত্যুর দিন থেকে, নাকি সংবাদ পাওয়ার দিন থেকে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মহিলা তার স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকেই ইদ্দত গণনা শুরু করবে। কারণ, স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুর খবর না পেলেও স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তার ইদ্দত শুরু হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
عِدّتُهَا مِنْ يَوْمِ طَلّقَهَا وَمِنْ يَوْمِ يَمُوتُ عَنْهَا.
(তালাকের ক্ষেত্রে) স্ত্রীকে তালাক প্রদানের দিন থেকেই তার ইদ্দত শুরু হয়ে যায়। আর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে মৃত্যুর দিন থেকেই তার ইদ্দত শুরু হয়ে যায়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৯২৪৯
সুতরাং উক্ত মহিলা অন্তঃসত্ত্বা না হলে ৯ই ডিসেম্বর স্বামীর মৃত্যুর দিন হতে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে।
এক্ষেত্রে যদিও বিলম্বে খবর পৌঁছার কারণে মহিলাটি স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে ইদ্দতের বিধানাবলী পালন করতে পারেনি, তথাপি ঐদিন থেকেই ইদ্দতের হিসাব করতে হবে। এবং মৃত্যুর সংবাদ না জানায় ইদ্দতের শুরু থেকে ইদ্দতের যথাযথ বিধানাবলী পালন করতে না পারার কারণে গুনাহগার হবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৪১৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০১; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৪৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪৪; মাজমাউল আনহুর ২/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫২০
গত তিন দিন আগে আমার দুলাভাই আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। মাত্র কয়েকমাস হল তার সাথে আমার বোনের বিবাহ হয়। তার শ্বশুরবাড়িতে দ্বীনদারী ও পর্দার পরিবেশ খুবই নগণ্য। সে বাড়িতে থেকে ইদ্দত পালন করা আমার বোন কোনোভাবেই নিরাপদ মনে করছে না। আমাদের অন্তরও সায় দিচ্ছে না। সেখানে অনিরাপত্তার আশঙ্কাই বেশি। জানতে চাই, আমার বোনের জন্য এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের বাড়ি এসে ইদ্দত পালন করার সুযোগ আছে কি?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বাস্তবেই যদি স্বামীর বাড়িতে আপনার বোনের ইদ্দত পালন করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থাকে তাহলে তার জন্য অন্য নিরাপদ স্থানে গিয়ে ইদ্দত পালনের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সে চাইলে আপনাদের বাড়িতেও ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে নিরাপদে ইদ্দত পালনের জন্য যেখানে স্থানান্তরিত হবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে।
শেয়ার লিংক-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৯১৭২; কিতাবুল আছল ৪/৪০৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৬; আলইখতিয়ার ২/২৬৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৪৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৫
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কসম করার সময় কুরআন শরীফ মাথায় বা হাতে স্পর্শ করে বলে, আমি কুরআন শরীফ ছুঁয়ে বা মাথায় নিয়ে বলছি, অমুক কাজ আর করব না। এভাবে কসম করলে কি কসম সংঘটিত হয়ে যায়? অনরূপভাবে মাথায় নেওয়া বা হাতে ছোঁয়া ব্যতীত শুধু মুখে আল্লাহর কুরআনের কসম করে শপথ করলেও কি তা সংঘটিত হয়ে যায়?
উল্লেখ্য, অনেক অঞ্চলে কসমকে ‘কিরা’ বলে থাকে। তাদের জন্য কিরা দিয়ে শপথ করার ক্ষেত্রে কী হুকুম? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
কসম বা তার সমার্থক শব্দ উচ্চারণ না করে শুধু কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে বা হাত দ্বারা স্পর্শ করে কোনো কিছুর অঙ্গীকার করলে তা দ্বারা কসম সংঘটিত হয় না। তবে কুরআন স্পর্শ করে কসম করছি বললে অথবা কুরআনের কসম করছি বললে তা দ্বারা কসম সংঘটিত হয়ে যাবে। আর কসম এর সমার্থক কোনো আঞ্চলিক শব্দ যেমন ‘কিরা’ বললেও কসম হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ স্পর্শ করে কসম করলে যদিও কসম হয়ে যায়। কিন্তু এমনটি করা ঠিক নয়। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কসম করার প্রয়োজন হলে তা শুধু আল্লাহর নামেই করবে।
আরো উল্লেখ্য, কথায় কথায় কসম করা বা অপ্রয়োজনীয় কসম করা নিষেধ।
শেয়ার লিংক-ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; রামযুল হাকায়েক ১/২০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ২/১৫৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১২
কিছুদিন আগে কোনো এক বিষয়ে আমি কসম করি, কিন্ত কোনো কারণে কসমটি ভাঙতে হয়। এখন আমি কাফফারা দিতে চাচ্ছি। কাফফারা বিষয়ে আমার এতটুকু জানা আছে যে, দশজন গরীবকে মধ্যম পন্থায় দুই বেলা খাওয়াতে হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আমি আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাই। তা হচ্ছে-
(ক) আমার পরিচিত পাঁচজন দরিদ্র ব্যক্তি রয়েছে; আমি কি তাদেরকে দুই বেলা করে দুই দিন খাওয়াতে পারব বা তার মধ্যে যে কোনো একজনকে এক বেলা করে বিশ দিন খাওয়াতে পারব?
(খ) তাদেরকে না খাইয়ে প্রতিদিন খাবারের মূল্য দেওয়া যাবে কি?
(গ) দুই বেলায় পাঁচজনকে দশজনেরটা খাওয়ানো যাবে কি?
(ঘ) আমার এক অসহায় নিকটাত্মীয় আছে। তাকে যাকাতের মত পূর্ণ দশ জনের খাবারের মূল্য একসাথে দেওয়া যাবে কি? বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ করছি।
কসমের কাফফারা খাবারের দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে আপনি চাইলে পাঁচজন গরিবকে দুই বেলা করে দুই দিন বা একজনকে এক বেলা করে বিশ দিনও খাওয়াতে পারেন অথবা খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রতিদিনের খাবারের মূল্যও দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু পাঁচজনকে দুই বেলা যেভাবেই খাওয়ানো হোক এর দ্বারা পূর্ণ কাফফারা আদায় হবে না; বরং পাঁচ জনেরটা আদায় হবে এবং আরো পাঁচ জনেরটা আদায় করতে হবে।
অনুরূপভাবে কসমের কাফফারার জন্য একজনকে একসাথে দশ জনের খাবারের মূল্যও দেওয়া যাবে না। একজনকে দশ জনের খাবারের মূল্য দিতে চাইলে প্রতিদিনেরটা পৃথকভাবে দশ দিনে দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলহাবিল কুদসী ১/৫৩৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২১৯; মাজমাউল আনহুর ২/২৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৪/১১০; রদ্দুল মুহতার ৩/৭২৫
আমাদের মসজিদের জমিতে কয়েকটি কাঁঠাল গাছ আছে। এতে অনেক কাঁঠাল ধরে থাকে। ক্রয় করা ব্যতীত মসজিদের ইমাম বা মুআযযিনের জন্য উক্ত গাছ থেকে কাঁঠাল খাওয়া বৈধ হবে কি?
মসজিদের গাছের ফল মসজিদের সম্পদ। ইমাম বা মুআযযিন অথবা অন্য কেউ তা নিতে চাইলে ক্রয় করে নেবে। তবে মসজিদ কমিটি যদি ইমাম-মুআযযিন অথবা মসজিদ স্টাফদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ ফল বিনা মূল্যে গ্রহণের অনুমতি দেয় তখন তাদের জন্য তা নেওয়া জায়েয হবে। এক্ষেত্রে তা তাদের বেতন-ভাতার অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
শেয়ার লিংক-আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ৯/৮৪; আলহাবিল কুদসী ১/৫৪৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৮৭; আলইসআফ, পৃ. ৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪
বর্তমান দেশের বিখ্যাত ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি তাদের ফ্রিজের উপর ক্রেতাদের জন্য একটি বিশেষ অফার দিচ্ছে। যেটাকে তারা নাম দিয়েছে ‘মিলিওনিয়ার অফার’। অফারটির ধরন হল-
কেউ শো-রুম থেকে একটি ফ্রিজ কিনলে তাকে একটি স্ক্র্যাচ কার্ড দেওয়া হয়। কার্ড ঘষলে তাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার অংক লেখা পাওয়া যায়, যা ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। স্ক্র্যাচ কার্ডে টাকার যে অংশ লেখা থাকে তা গ্রাহককে তারা নগদ পরিশোধ করে দেয়। অনেকসময় কিছু টাকার পণ্য নিতে বলে, আর বাকি টাকা নগদ প্রদান করে।
আমি জানতে চাচ্ছি যে, অফার চলাকালীন
এই অফারের আওতাধীন পণ্য কিনে স্ক্র্যাচ কার্ডে লিখিত পুরস্কার গ্রহণ করা কি জায়েয আছে? এবং গ্রাহকদের এই ধরনের অফার প্রদান করা কি বৈধ?
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে কেউ ঐ ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে চাইলে নিম্নোক্ত শর্তগুলো পালন করলে তার জন্য পণ্য ক্রয় করা এবং প্রাপ্ত পুরস্কার গ্রহণ সবই জায়েয হবে-
১. অফারের কারণে পণ্যের দাম স্বাভাবিক মূল্য থেকে বৃদ্ধি না হতে হবে। এমন যেন না হয় যে, প্রথমে দাম বাড়িয়ে ধরল, এরপর লটারির মাধ্যমে পুরস্কার দিল।
২. পণ্য ক্রয় মূল উদ্দেশ্য হওয়া। শুধু লটারি বা পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যে টাকা না খাটানো।
মোটকথা, অফারটি একতরফা হওয়া। অর্থাৎ শুধু বিক্রেতার পক্ষ থেকে দেওয়ার ঘোষণা থাকবে। ক্রেতার পক্ষ থেকে শর্ত থাকবে না।
উপরোক্ত শর্তাদি পাওয়া গেলে অফারযুক্ত পণ্য ক্রয় করা বা বিক্রেতা কর্তৃক কোনো পণ্যে পুরস্কার দেওয়া হলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে।উল্লেখ্য, পণ্য মার্কেটিং ও বাজারজাতকরণের শরীয়াহ নীতি হল, পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা কিংবা সরাসরি মূল্য ছাড় দেওয়া। কিন্তু তা না করে মূল্যের কিছু অংশ অনিশ্চিত পুরস্কারের সাথে ঝুলিয়ে রাখা এবং লাখ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা অতঃপর অল্প কয়েকজনকে সামান্য পুরস্কার দেওয়াটা সম্পূর্ণ ধোঁকা। শরীয়াহ নীতির সাথে এই পদ্ধতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে শিবহুল গারার (شبه الغرر) তথা এক প্রকার প্রতীকী প্রতারণা পাওয়া যায়। এভাবে বাজারকে প্রভাবিত করা ইসলামের বাণিজ্যনীতি পরিপন্থি। এসবই পুঁজিবাদের বানানো অপকৌশল। পুঁজিবাদীদের আবিষ্কৃত এসব কার্যকলাপ অনেকসময় বাজারকে অসৎ উপায়ে পরিচালিত করে এবং বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করে। মুসলমানদের এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
শেয়ার লিংক-মাআলিমুস সুনান ৩/৪০০; আলমুগনী ১৩/৪০৮; মাজমূআতুল ফাতাওয়াশ শারইয়্যাহ ১১/১৭১; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরাহ ২/১৫৮
আমার এক আত্মীয় মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত এবং এটাই তার একমাত্র উপার্জন। তিনি এই উপার্জনের টাকা থেকেই একটি বাড়ি বানিয়েছেন এবং একটি গাড়ি ক্রয় করেছেন। তাই জানতে চাই-
১. সেই গাড়ি এবং বাড়ি কি অবৈধ?
২. অবৈধ হলে কি চিরকালের জন্য? না সাময়িক?
৩. এগুলোকে বৈধ করার কোনো পদ্ধতি আছে কি?
মাদকের ব্যবসা সম্পূর্ণ নাজায়েয। হাদীস শরীফে মদ পানকারী, ক্রয়-বিক্রয়কারী ও মূল্য ভক্ষণকারী সকলের উপর লানত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَعَنَ اللهُ الْخَمْرَ وَلَعَنَ شَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ وَآكِلَ ثَمَنِهَا.
আল্লাহ তাআলা লানত করেন- মদের উপর, লানত করেন তা পানকারী, পরিবেশনকারী, মদ প্রস্তুতকারী, যে প্রস্তুত করতে বলে, বিক্রেতা-ক্রেতা, বহনকারী, যার নিকট বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার মূল্য ভক্ষণকারী- সকলের উপর। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৭১৬
সুতরাং আপনার আত্মীয়ের জন্য মাদকের ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত টাকা ভোগ করা এবং তা দিয়ে বাড়ি নিমার্ণ এবং গাড়ি ক্রয় করা জায়েয হয়নি। এ সবই অবৈধ সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। তাই বর্তমানে উক্ত বাড়িতে বসবাস করা বা ভাড়া ভোগ করা এবং গাড়ি ব্যবহার করা কোনোটিই তার জন্য বৈধ নয়। লোকটি যদি সৎপথে ফিরে আসতে চায় তবে তার জন্য আবশ্যক হল, যত দ্রুত সম্ভব কোনো হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং উক্ত বাড়ি ও গাড়িতে যে পরিমাণ হারাম টাকা লাগানো হয়েছে সে পরিমাণ অর্থ হালাল টাকা থেকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকিনদের সদকা করে দেওয়া। এমনটি করলে এগুলো ব্যবহার করা তার জন্য বৈধ হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছার, বর্ণনা ৭৫০; কিতাবুল আছল ২/৫১৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২২৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৬; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ১১২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮৩
আমার একটি ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। নিজের কাঠ দিয়ে অর্ডারের ভিত্তিতে অধিকাংশ মাল তৈরি করি। অর্ডারকারী নির্ধারিত সময়ে তা বুঝে নেন। কিন্তু অনেকসময় অর্ডারি মাল নির্দিষ্ট দিনের আগে তৈরির পর অন্য ক্রেতা এসে তা পছন্দ করেন এবং অধিক মূল্যে তার কাছে বিক্রির জন্য অনুরোধ জানান। এখন জানার বিষয় হল, আমি যদি অর্ডারকারীর কাক্সিক্ষত মাল সময়মত আবার বানিয়ে দিতে পারি তাহলে অর্ডারি মাল অন্যত্র বিক্রি করা বৈধ হবে কি? যদি বৈধ হয় তাহলে অর্ডার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা জায়েয হবে কি না।
আপনি যদি অর্ডারকারীর কাক্সিক্ষত পণ্যটি পুনরায় যথাযথভাবে নির্ধারিত সময়ের ভেতরেই গুণগত মান ঠিক রেখে বানিয়ে দিতে পারেন এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিত হন, তাহলে অর্ডারকারী ব্যক্তি পণ্যটি দেখে চূড়ান্ত করার আগে তা অন্যত্র বিক্রি করা জায়েয। কারণ অর্ডারদাতা তা দেখে চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত উক্ত পণ্যে তার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। তবে উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে অন্যত্র বিক্রি করা জায়েয হলেও একজনের অর্ডারী পণ্য অন্যের কাছে বিক্রি করে দেওয়া অনুচিত। নতুন ক্রেতাকে আরেকটি বানিয়ে দেওয়াই উত্তম। আর অন্যত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ন্যায়-সঙ্গত যে কোনো দামে তা বিক্রি করা যাবে। তাই পূর্বে অর্ডারকারীর সাথে ঠিক করা মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে (ন্যায়-সঙ্গত ও বাজার মূল্যের ভেতর হলে) বিক্রি করতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৩/৪৩৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১০/৯০; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৬৬; ফাতহুল কাদীর ৬/২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২০৮; রদ্দুল মুহতার ৫/২২৫
১. আমার নিকট একজন লোক জমি বন্ধক রেখে কিছু টাকা নিয়েছে। প্রতি বছর কিছু ভাড়া নির্ধারণ করে উভয়ের সম্মতিতে বন্ধককৃত জমিতে ফসলাদি করে আমি ভোগ করতে পারব কি না?
২. আমি জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে অগ্রিম হিসেবে বেশি পরিমাণ টাকা জমির মালিককে দিতে পারব কি না? পরবর্তীতে ভাড়া কর্তন করে বাকি টাকা মালিকের কাছ থেকে নিয়ে জমি ফেরত দেওয়া ঠিক হবে কি না? যদি উপরোক্ত দুইটিই জায়েয হয় তবে কোন্টি উত্তম?
১. বন্ধকি জমি ভোগ করা জায়েয নয়। এটা ঋণ দিয়ে সুবিধা ভোগ করার অন্তর্ভুক্ত। যা এক প্রকারের সুদ। তবে জমিটি বৈধভাবে ভাড়া নিতে চাইলে নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রেখে ভাড়া নেওয়া জায়েয হবে-
(ক) পূর্বের বন্ধকি চুক্তিটি বাতিল করে আলাদাভাবে নতুন ভাড়া চুক্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে জমিটি আর উক্ত ঋণের বন্ধক হিসাবে বহাল থাকবে না; বরং তা ভাড়া চুক্তির অধীন বলে বিবেচ্য হবে।
(খ) যেহেতু লোকটির কাছে আপনার টাকা পাওনা রয়েছে তাই ভাড়া যৌক্তিক ও প্রচলিত বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এত কম ভাড়া নির্ধারণ করা যাবে না, যার কারণে এমন সন্দেহ হয় যে, ঋণের কারণে ভাড়া অস্বাভাবিক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনটি হলেও তা ঋণ দিয়ে সুবিধা ভোগ করা হবে, যা সুদ গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত।
(গ) ঋণ আদান-প্রদানের সাথে জমি ভাড়া দেওয়ার শর্ত করা যাবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৬৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২
২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে জমি ভাড়া নিয়ে যদি অনেক টাকা অগ্রিম দেওয়া হয় তবে তাতে দোষ নেই। সেক্ষেত্রে প্রদানকৃত পুরো টাকাই অগ্রিম ভাড়া হিসাবে ধর্তব্য হবে এবং ভাড়ার হার হতে হবে বাজারদর অনুযায়ী, বাস্তবসম্মত। অর্থাৎ মোটা অংকের টাকা অগ্রিম ভাড়া প্রদানকালে বাজারে যে হারে ভাড়া নির্ধারিত হয় ঠিক সে হারে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। ছলচাতুরী করে নামমাত্র ভাড়া ধরা বৈধ হবে না।
উল্লেখ্য, মুসলমানদের জন্য লেনদেনের ক্ষেত্রে শরীয়তের মাসআলার খেয়াল রাখা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা কর্তব্য। সুদ গ্রহণের জন্য কোনো হিলা-বাহানা তালাশ করা কোনোক্রমেই বৈধ নয়। এহেন কাজ থেকে সকল মুমিনের বিরত থাকা জরুরি। -আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪২২
শেয়ার লিংক
আমার সাথী ভাই ঝিনাইদহ যাওয়ার সময় আমার নতুন মোবাইলটি অনুমতি নিয়ে সঙ্গে নিয়ে যায়। রাস্তায় গজল শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলে স্টেশন আসার পর মোবাইলটি রেখেই বাস থেকে নেমে পড়ে। এখন তার উপর আমাকে নতুন একটি মোবাইল কিনে দেওয়া আবশ্যক কি না?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার সাথী ভাইকে মোবাইলটির জরিমানা আদায় করতে হবে। কেননা তার ত্রুটির কারণেই মোবাইলটি হারানো গেছে। সুতরাং যেই ফোন হারিয়েছে সে ধরনেরই একটি ফোন কিনে দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, সামারকান্দী, পৃ. ৫১৫; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ৮/১৩৮; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৮৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৭৩
গত কুরবানীর ঈদের আগে সপরিবারে রাজশাহী যাওয়ার জন্য আমি একটা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়েছিলাম। কথা ছিল ভাড়া ঈদের পর ঢাকা এসে পরিশোধ করব। রওয়ানা হওয়ার পর থেকেই গাড়িটা কিছু সমস্যা করছিল। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর গাড়িটা পুরাই বিকল হয়ে যায়। কোনোভাবেই গাড়ি ঠিক করতে না পেরে গাড়ি চালকের হাওয়ালা করে আমরা বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছি। ঈদের পর ঢাকায় এসে আমি এখন তাদেরকে ভাড়া পরিশোধ করতে চাচ্ছি, তাই জানতে চাই যে, গাড়ির মালিককে আমার কি পরিমাণ ভাড়া পরিশোধ করতে হবে? শরয়ী সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু গাড়িওয়ালা আপনাকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারেনি তাই যতটুকু পথ আপনাকে নিয়ে গেছে সে হিসাবে ভাড়া প্রাপ্ত হবে। আর যতটুকু পথ আপনাকে ভিন্ন ব্যবস্থায় যেতে হয়েছে ততটুকুর ভাড়া সে পাবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৩/৫৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৬৮, ৪১৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৫৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬১
কিছুদিন আগে মসজিদ থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে ৫০০ টাকার একটি নোট পেয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে ইমাম সাহেবের সাথে আলোচনা করলে তিনি বললেন, আপনি এলান করেন, অমুক জায়গায় কিছু টাকা পাওয়া গেছে, যার হয় সে যেন উপযুক্ত দলীল দিয়ে টাকাটা নিয়ে যায়। এভাবে কয়েকদিন যাবৎ এলান করার পরও যখন কেউ আসল না, তখন ইমাম সাহেব বললেন, কোনো গরিব ব্যক্তিকে দিয়ে দেন।
এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমি জানতে চাচ্ছি, আমি জানি, যাকাতের টাকা ছেলে-মেয়েদেরকে দেয়া যায় না। আমার প্রশ্ন হল, আমার এক মেয়ে গরিব। সে ও তার স্বামী দু’জনই খুবই কষ্টের সাথে জীবন যাপন করে। আমি কি আমার মেয়েকে উক্ত টাকা দিতে পারব? নাকি যাকাতের মতো- পড়ে পাওয়া টাকাও দেয়া যাবে না। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যথাযথ প্রচারের পরও যদি প্রবল ধারণা হয় যে, টাকাগুলোর মালিকের সন্ধান পাওয়া যাবে না তাহলে তা কোনো গরিবকে সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মেয়ে যদি গরিব (যাকাত-ফেতরা গ্রহণের যোগ্য) হয় তাহলে তাকেও উক্ত ৫০০ টাকা সদকা হিসাবে দিতে পারবেন। এই টাকা তো আপনার মালিকানাধীন নয়। তাই এর বিধান আপনার যাকাতের মতো হবে না। টাকাগুলো দেওয়া হচ্ছে মূলত মালিকের পক্ষ থেকে। তাই আপনার গরিব মেয়েকেও দিতে পারবেন। এমনকি নিজে গরিব হলে নিজেও নিতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৭১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২২১; আলইখতিয়ার ২/৪৯০; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫৭; মাজমাউল আনহুর ২/৫৩০
আমার দাদা দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবৎ মসজিদের সভাপতি। গত বছর তিনি তার সকল সম্পতি ওয়ারিশদেরকে প্রাপ্য অনুযায়ী লিখে দেন। আর নিজের নামে দশ কাঠা জমি রাখেন এবং অসিয়ত করেন যে, ‘আমার মৃত্যুর পর এই জমি মসজিদে দান করবে’। তবে কিছুদিন আগে আমার ছোট ভাই গুরুতর কিডনিরোগে আক্রান্ত হয়। ডাক্তার বলেছেন, তার চিকিৎসার জন্য চার লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। এত বড় ব্যয় বহন করা আমার বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দাদা বলেছেন, ঐ জমির পাঁচ কাঠা বিক্রি করে তা দিয়ে দ্রুত চিকিৎসার করাও, আর বাকি পাঁচ কাঠা মসজিদে দিও।’ জানতে চাই, দাদার জন্য উক্ত জমি বিক্রি করার সুযোগ আছে কি? দ্রুত জানালে উপকৃত হব।
ওসিয়ত কর্যকর হয় ওসিয়তকারীর মৃত্যুর পর। তাই জীবদ্দশায় সে তার ওসিয়ত পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারে। যদিও বিনা ওজরে দান-খয়রাতের ওসিয়ত বাতিল করা অনুচিত। সুতরাং আপনার দাদার জন্য উক্ত জমি বিক্রি করে তার অর্থ আপনার ভাইয়ের চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করা জায়েয হবে।
শেয়ার লিংক-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩১৪৪৯, ৩১৪৬০; কিতাবুল আছল ৫/৫২৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২৭/১৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৩১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৪/৩৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৯২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫৮