মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - মগবাজার, ঢাকা

২৫৬৯. প্রশ্ন

 

আমাদের এক সহপাঠী রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার জন্য নিকটবর্তী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যায়। ডাক্তার সিরিঞ্জের সাহায্যে তার শরীর থেকে প্রায় এক সিরিঞ্জ রক্ত সংগ্রহ করে। তবে সিরিঞ্জের সুঁই স্থাপনের স্থান থেকে রক্ত বের হয়নি। সে নতুন অযু না করেই পুরনো অযুতে আসরের নামায আদায় করে। জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতিতে শরীর থেকে রক্ত নেওয়ার দ্বারা অযু নষ্ট হয় কি না। জানালে উপকৃত হব।


 

উত্তর

শরীরের যে কোনো জায়গা থেকে যদি এ পরিমাণ রক্ত বের হয়, যা গড়িয়ে পড়ার মতো তাহলে এর দ্বারা অযু নষ্ট হয়ে যায়। যদিও তা কোনো কারণে গড়িয়ে না পড়ে বা শরীরে না লাগে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নেওয়ার দ্বারাই ঐ ব্যক্তির অযু ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাই পূর্বের অযু দিয়ে ঐ দিনের আসরের নামায আদায় করা সহীহ হয়নি। তা কাযা করে নেওয়া জরুরি।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৯৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শরীফ - দনিয়া, ঢাকা

২৫৭০. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় পানির খুব সঙ্কট। তাই আমরা বাসা-বাড়িতে টেপ কলে অযু করলে ব্যবহৃত পানি নিচে রাখা পাত্রে জমা হয়। বাহ্যত তাতে কোনো ময়লা বা নাপাকি দেখা যায় না। অযুর আগে হাত-পায়েও কোনো নাপাকি থাকে না। তাই এ পানি কি গাড়ি ধোয়া, ঘরের মেঝে মোছার কাজে ব্যবহার করা যাবে, না তা নাপাক ও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

অযুতে ব্যবহৃত পানি অপবিত্র নয়। তাই এ পানি প্রশ্নে উল্লেখিত কাজে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না। আর তা পানাহারের কাজে ব্যবহার করা মাকরূহ

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৪; আসসিআয়াহ ১/৪০০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৭৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২০০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলম - বরিশাল

২৫৭১. প্রশ্ন

 

একদিন ভুলে যোহরের ফরয নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা না মিলিয়ে রুকু-সিজদা করে ফেলি। পরের তিন রাকাত সাধারণ নিয়মে আদায় করি। অর্থাৎ দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ি। আর শেষ দু রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ি এবং তাশাহহুদ ইত্যাদি পড়ে সালাম ফিরাই। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায পড়ার কারণে আমার নামায নষ্ট হয়েছে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


 

উত্তর

ফরযের প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা বা কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করা ওয়াজিব। ভুলবশত তা ছুটে গেলে তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একটি সূরা মিলিয়ে নেওয়া মুস্তাহাব। আর তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে সূরা মিলানো হোক বা না হোক যথাস্থানে না পড়ার কারণে নামায শেষে সাহু সিজদা করা ওয়াজিব। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সাহু সিজদা করা আবশ্যক ছিল। কিন্তু যেহেতু সাহু সিজদা করা হয়নি তাই ঐ নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৭৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাশেদ - বরিশাল

২৫৭২. প্রশ্ন

সেদিন আসরের নামাযে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব ভুলে তৃতীয় রাকাতে বসে পড়েছেন। কিন্তু কেউ লোকমা দেয়নি। এরপর চতুর্থ রাকাতে ইমাম সাহেব না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যান। কেননা তিনি ভেবেছেন, এটি তৃতীয় রাকাত। মুসল্লিরা শেষ বৈঠকে বসে লোকমা দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম সাহেব শেষ বৈঠকে আর ফিরে আসেননি। বাধ্য হয়ে মুসল্লিরা বৈঠক ছেড়ে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেবের অনুসরণ করেন। মাসআলা জানা থাকায় আমি ও কয়েকজন মুসল্লি শেষ বৈঠকে বসেছিলাম। এরপর ইমাম সাহেব যখন পঞ্চম রাকাতের সিজদা করেছেন তখন আমরা সালাম ফিরিয়েছি। এরপর অবশ্য আমরাও সকলের সাথে সতর্কতাবশত পুনরায় আসরের নামায আদায় করে নিয়েছি। জানার বিষয় হল, আমাদের প্রথম নামায সহীহ হয়েছিল কি না।

উল্লেখ্য, তৃতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব বসার কারণে যে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে আমরা তা আদায় করিনি।


উত্তর

নামাযের শেষ বৈঠক ফরয। তা তরক করলে বা ভুলে ছুটে গেলে নামায ফাসেদ হয়ে যায়। প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম সাহেব শেষ বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে এবং পঞ্চম রাকাতের সিজদার আগ পর্যন্ত বৈঠকে ফিরে না আসার কারণে ইমাম-মুক্তাদি সকলের নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। যে সকল মুক্তাদি পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়ায়নি তাদেরও নামায হয়নি। কারণ ইমামের নামায ফাসেদ হয়ে গেলে মুক্তাদির নামাযও ফাসেদ হয়ে যায়। সুতরাং উল্লেখিত অবস্থায় ইমাম ও সকল মুক্তাদির পুনরায় নাযায পড়ে নেওয়া সঠিক হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩২০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আরমান - বিশ্বনাথ, সিলেট

২৫৭৩. প্রশ্ন

 

অনেক সময় আমার এমন হয় যে, ফরয নামাযের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পরিবর্তে সূরা ফাতেহা পড়ে ফেলি। পরে স্মরণ হলে তাশাহহুদ পড়ি। এ অবস্থায় কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


 

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাসুম - মোমেনশাহী

২৫৭৪. প্রশ্ন

আমার দাদা অসিয়ত করেছেন যে, আমার মৃত্যুর পর আমার নাতি আমার জানাযা পড়াবে। এখন তিনি শয্যাশায়ী। মৃত্যুর পর তার এই অসিয়ত পূর্ণ করা কি জরুরি? উল্লেখ্য, তার যোগ্য ছেলে আছে।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু মৃতের যোগ্য ছেলে আছে তাই আপনার দাদার ঐ অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি নয়। বরং শরীয়ত কর্তৃক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার ছেলেই জানাযার ইমামতির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। হ্যাঁ, ইমামতির হকদার ব্যক্তি যদি নাতিকে ইমামতির অনুমতি দেয় তবে সে তা করতে পারবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২; ফাতহুল কাদীর ২/৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ - দিনাজপুর

২৫৭৫. প্রশ্ন

আমি প্রতি বছর রমযানের শেষ দশ দিন শহরের জামে মসজিদে ইতিকাফ করে থাকি। সাধারণত সেখানে প্রতি সপ্তাহে ২/১টি জানাযা আসে। মসজিদের সামনে একটি ছোট্ট মাঠ আছে। সেখানেই জানাযার নামায হয়। আমি ইতিকাফ অবস্থায় ঐ জানাযার নামাযগুলোতে শরিক হতে পারব কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

জানাযার উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হলেও ইতিকাফ থাকে না। তাই আপনি ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরের জানাযার নামাযে শরিক হতে পারবেন না। বের হলে সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৬৫; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম - গাজীপুর

২৫৭৬. প্রশ্ন

আমি ধুমপানে অভ্যস্ত। গত রমযান মাসে রোযা রাখা অবস্থায়ও যখন ধুমপান না করার কারণে অস্থিরতা অনুভব হয়েছে তখন একটু ধুমপান করেছি। এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে ?


উত্তর

হ্যাঁ, সামান্য পরিমাণ ধুমপান করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। আর স্বেচ্ছায় ধুমপান করার কারণে কাযা-কাফফারা উভয়টি আদায় করা আবশ্যক হয়।

অতএব আপনি রোযা অবস্থায় যে কয়দিন ধুমপান করেছেন প্রত্যেক রোযার ভিন্ন ভিন্ন কাযা আদায় করবেন এবং সবগুলোর জন্য একটি কাফফারাও আদায় করবেন। কাফফারার পদ্ধতি জানা না থাকলে পুনরায় প্রশ্ন করে জেনে নিন।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৮১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম - গাজীপুর

২৫৭৭. প্রশ্ন

আমি এ বছর রমযানে বাস এক্সিডেন্টে পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোযা  অবস্থায় ১০ রমযান থেকে ১৫ রমযান পর্যন্ত তিন বেলা ব্যথানাশক ইনজেকশন নিতে হয়েছে। এতে আমার ঐ দিনগুলোর রোযা কি ভেঙ্গে গেছে? সেগুলো কি কাযা করতে হবে?


উত্তর

ইনজেকশন নেওয়ার কারণে রোযার ক্ষতি হয় না। তাই আপনার ঐ রোযাগুলো নষ্ট হয়নি। অতএব ওগুলোর কাযাও করতে হবে না।

উল্লেখ্য, রোযা অবস্থায় গ্লুকোজজাতীয় ইনজেকশন (যা খাদ্যের কাজ দেয়) ব্যবহার করা মাকরূহে তাহরীমী। বিশেষ প্রয়োজন, যেমন-মারাত্মক অসুস্থতা ছাড়া তা নেওয়া বৈধ নয়।

-ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; যাবিতাতুল মুফাততিরাত ফী মাজালিত তাদাবী ৬৯; মাজমূআতুল ফাতাওয়াশ শরইয়াহ ১/২৪৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৩৭৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম - দিনাজপুর

২৫৭৮. প্রশ্ন

 

এক ব্যক্তি চোখের অসুস্থতার কারণে ড্রপ ব্যবহার করে এবং ঔষধের তিক্ততা গলায় অনুভব করে। প্রশ্ন হল, রোযা অবস্থায় এ ধরনের ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কি? দয়া করে জানাবেন।


 

উত্তর

না, রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার কারণে গলায় ঔষধের তিক্ততা অনুভূত হলেও রোযা নষ্ট হয় না। সুতরাং রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার সুযোগ আছে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আজমল হাসান (নবাব) - চালাকচর, মনোহরদী

২৫৭৯. প্রশ্ন

আমি প্রতি বছরের যাকাত রমযানের শেষ দশকে আদায় করে থাকি। তখন মুসলমান ভাইদের পাশাপাশি হিন্দুরাও যাকাত চায়। হিন্দুদেরকে যাকাত দিলে কি আমার যাকাত আদায় হবে? দয়া করে জানাবেন।



উত্তর

হিন্দু বা কোনো অমুসলিমকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না। একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুআয রা.কে লক্ষ করে বলেছেন, তুমি ধনী মুসলমানদের থেকে যাকাত নিয়ে তাদেরই দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরণ কর।-সহীহ মুসলিম ১/৩৬

এই হাদীস উল্লেখ করে ইমাম কাসানী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধনী মুসলমানদের থেকে যাকাত নিয়ে দরিদ্র মুসলমানদেরকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া যাবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬১

আরো দেখুন : রদ্দুল মুহতার ২/৩৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৭; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রহমত খান - আলোর মেলা, কিশোরগঞ্জ

২৫৮০. প্রশ্ন

 

গত ঈদুল ফিতরে আমি আমার বড় বোনকে নিয়ে হাসপাতালে থাকার দরুণ ঈদের কয়েকদিন পর সদকাতুল ফিতর আদায় করি। এমতাবস্থায় আমার সদকাতুল ফিতর কি আদায় হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে করণীয় কী? সদকাতুল ফিতর আদায়ের উত্তম সময় কোনটি? দয়া করে জানাবেন।


 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার সদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে গেছে। কেননা ঈদের আগে আদায় করতে না পারলে ঈদের পরে আদায় করার বিধান আছে।

উল্লেখ্য, ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। হাদীস শরীফে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাযে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ করেছেন।-সহীহ বুখারী ১/২০৪; সহীহ মুসলিম ১/৩১৮

আরো উল্লেখ্য যে, ঈদের দিন আসার আগেও গরীবের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ রেখে সদকাতুল ফিতর আদায় করার সুযোগ আছে। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এক দু দিন আগে আদায় করাও প্রমাণিত। যেমন সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সদাকাতুল ফিতর ঈদের এক দিন বা দুদিন আগেই দিয়ে দিতেন।

-সহীহ বুখারী ১/২০৫; কিতাবুল আছল ২/২৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাকিব - বগুড়া

২৫৮১. প্রশ্ন

আমার সাত একর আবাদি জমি আছে, যার মূল্য সত্তর-আশি লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রতি বছর জমি থেকে যে ফসল হয় তা বছরের খরচে শেষ হয়ে যায়। বছর শেষে কোনো সঞ্চয় থাকে না। আমার সমপরিমাণ জমি আছে এমন অনেকে কিছু জমি বিক্রি করে হজ্বে যাচ্ছে।

পঁচিশ-ত্রিশ শতাংশ জমি বিক্রি করলে আমার হজ্বের খরচ হয়ে যাবে এবং পরিবারের ভরণ-পোষণে আমার কোনো সমস্যা হবে না। এ অবস্থায় জমি বিক্রি করে হজ্বে যাওয়া আমার উপর ফরয

কি না?


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী জমির সকল উৎপাদন যদিও পরিবারের ভরণ-পোষণে ব্যয় হয়ে যায়, কিন্তু হজ্বের খরচ পরিমাণ জমি বিক্রি করলেও যেহেতু পরিবারের স্বাভাবিক ভরণ-পোষণ ব্যাহত হবে না তাই এ পরিমাণ জমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলে গণ্য হবে। এবং এ কারণে আপনার উপর হজ্ব আদায় করা ফরয হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮২; আলবাহরুল আমীক ১/৩৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮১; গুনইয়াতুন নাসিক ২০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আনাস - জিদ্দা, সৌদী আরব

২৫৮২. প্রশ্ন

আমি জেদ্দায় থাকি এবং জেদ্দা টু মক্কা রুটে গাড়ি চালাই। সাধারণত ইহরাম ছাড়াই হারামে প্রবেশ করি। গতবার হজ্বের সময় একজন বাঙ্গালি আলেম আমাদের মতো গাড়ি চালকদের জন্য হারামে প্রবেশের পূর্বে ইহরাম বাধা জরুরি বলে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেছেন। তার এই মত সঠিক কি না জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

জেদ্দা হিল্ অর্থাৎ মীকাতের ভিতরের এলাকা। আর হিল এ অবস্থানকারীদের জন্য হজ্ব-উমরার নিয়ত ব্যতীত অন্য প্রয়োজনে ইহরাম ছাড়াও হারামে প্রবেশের অনুমতি আছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত বক্তব্য আপনার ক্ষেত্রে যথার্থ নয়। আপনি ইহরাম ছাড়াও হারামে প্রবেশ করতে পারবেন।

-মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ২১৯; কিতাবুল আছল ২/৫১৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৮; গুনইয়াতুন নাসিক ৫৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সেলিম - সিলেট

২৫৮৩. প্রশ্ন

গতমাসে স্ত্রীর সাথে আমার ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সে আমাকে বলল, আমারে ছাইড়া দে। তোর ভাত আমি খামু না। তোর ঘরও আমি করমু না। উত্তরে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে বললাম, ঠিক আছে, আমিও তোরে ছাইড়া দিলাম। জানার বিষয় হল, এর দ্বারা কি তালাক হয়েছে? যদি তালাক হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে আমার স্ত্রীকে স্ত্রীরূপে পেতে পারি?

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে আমাদের মাঝে তালাক বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটেনি।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রজঈ পতিত হয়েছে। ইদ্দতের ভিতরে মৌখিক বা লিখিতভাবে তাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করে নিলেই আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে যাবে। এভাবে ইদ্দতের ভিতরে ফিরিয়ে নিলে নতুন করে বিবাহ করা লাগবে না। কিন্তু ইদ্দত অবস্থায় তাকে এভাবে ফিরিয়ে না নিলে কিংবা  তার সাথে স্ত্রী সুলভ আচরণও না হলে এই ইদ্দত শেষে তালাকটি বায়েনে পরিণত হবে এবং আপনারা একে অপরের জন্য হারাম হয়ে যাবেন। তখন পুনরায় সুষ্ঠুভাবে দাম্পত্যজীবন গড়তে চাইলে নতুন মোহর ধার্য করে যথানিয়মে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৩১; রদ্দুল মুহতার ৩/২৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/১৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭৯, ১/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৪/৪৯; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৫/১৪৩

শেয়ার লিংক

মুসাম্মত নাবিলা আক্তার - ভাদুঘর, শহীদবাড়িয়া

২৫৮৪. প্রশ্ন

 

পাঁচ বছর আগে মুহাম্মাদ আদনান নাজিবের সাথে আমার বিয়ে হয়। ইতিমধ্যে আমাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়েছে। বিয়ের কাবিন নামার ১৮ নং ধারায় আমার স্বামী আমাকে তালাক গ্রহণের অধিকার দেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে মৌখিকভাবে আমাকে এই বলে তালাক গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে যে, আমি যদি কোনো দিন তোমার গায়ে হাত তুলি অর্থাৎ মারধর করি তাহলে তুমি স্বেচ্ছায় তালাক গ্রহণ করতে পারবে। গত বছর থেকে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। সে ঠিকমতো ভরণ-পোষণ দেয় না। আমার ছেলে মেয়ের যত্ন নেয় না। আমি খরচ চাইলে রাগারাগি করে। বেশ কয়েকবার সে আমাকে খুব মারধরও করেছে। তাই আমি গত ২/১/২০১২ তারিখে আমাকে তালাক গ্রহণের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এক তালাকে বায়েন গ্রহণ করেছি। কিন্তু এখন সে আমার ও আমার পরিবারের কাছে কান্নাকাটি করে ও বার বার ক্ষমা চেয়ে আমাকে পুনরায় নিতে চাচ্ছে। জানার বিষয় হল, উল্লেখিত অবস্থায় আমার তালাক গ্রহণ সঠিক হয়েছে কি না? যদি হয়ে থাকে তাহলে আমার জন্য তার কাছে পুনরায় ফিরে যাওয়ার শরীয়তসম্মত কোনো পন্থা আছে কি না? জানালে উপকৃত হব।


 

উত্তর

 

প্রশ্নের বর্ণনা সত্য হলে  আপনি যেহেতু স্বামীপ্রদত্ত ক্ষমতাবলেই এক তালাকে বায়েন গ্রহণ করেছেন তাই এর দ্বারা আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ইদ্দত শেষে আপনি ইচ্ছা করলে অন্যত্র বিবাহ করতে পারেন। আর পূর্বের স্বামীর সাথে পুনরায় ঘরসংসার করতে 

চাইলে ইদ্দতের ভিতরে বা পরে নতুন মোহর ধার্য করে যথানিয়মে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

 

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪০১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৫১৪; রদ্দুল মুহতার ৩/৩২৬

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

২৫৮৫. প্রশ্ন

আমার স্বামী বিদেশে থাকেন। তিনি নির্দিষ্ট আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্য কারো সাথে ফোনে কথা বলতে ও অপরিচিত নাম্বারের কোনো ফোন রিসিভ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তা আমি কয়েকবার করে ফেলেছি। তিনি আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমি  অস্বীকার করি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস না করায় একপর্যায়ে বলেছি, আপনি বিশ্বাস করুন, আল্লাহর কসম, আমি এরূপ করিনি।

এখন এ মিথ্যা কসমের পাপ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাব? কসমের কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি কী জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

মিথ্যা বলা কবীরা গুনাহ। আর আল্লাহর পবিত্র নাম নিয়ে মিথ্যা কসম করা আরো জঘণ্য অপরাধ। সহীহ বুখারীতে ইবনে উমর রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, মাতাপিতার কথা অমান্য করা, হত্যা করা ও মিথ্যা কসম করা কবীরা গুনাহ।-সহীহ বুখারী ২/৯৮৭

এছাড়া শরীয়তসম্মত বিষয়ে স্বামীর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাও স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি সর্বাবস্থায় তার অনুগত থাকা এবং পর্দার বিধান মেনে চলা স্ত্রীর অবশ্যকর্তব্য। প্রশ্নোক্ত মিথ্যা কসমের জন্য আপনাকে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমনটি না করার ব্যাপারে অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে হবে। অবশ্য এ জন্য কোনো কাফফারা দেওয়া লাগবে না।

-সূরা বাকারা (২) : ২২৫; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৫৪; সহীহ বুখারী ২/৯৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৪৫১; মাবসূত, সারাখসী ৮/১২৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৭০৫; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৪৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ - মিরপুর, ঢাকা

২৫৮৬. প্রশ্ন

কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোনো মাসের, যেমন মুহাররম মাসের দশ দিন ইতিকাফের মান্নত করে, তাহলে কি রমযানের শেস দশকে ইতিকাফ করলে তার মান্নত আদায় হবে? অর্থাৎ রমযানের রোযা কি ঐ মান্নতের জন্য যথেষ্ট হবে না অন্য মাসে নফল রোযাসহ তা আদায় করতে হবে?

প্রশ্ন : খ) আর যদি কোনো নির্দিষ্ট মাসে নয়; বরং যে কোনো মাসের ১০ দিন ইতিকাফের মান্নত করল তাহলে সে কি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করলে  মান্নত আদায় হবে, না নফল রোযাসহ অন্য মাসে তা আদায় করতে হবে?


উত্তর

ক ও খ) রমযান ছাড়া অন্য কোনো নির্দিষ্ট মাসে ইতিকাফের মান্নত করলে রমযানে ইতিকাফ করার দ্বারা মান্নত আদায় হবে না। রমযান ছাড়া অন্য কোনো মাসে নফল রোযাসহ তা আদায় করা আবশ্যক। তদ্রূপ মাস উল্লেখ না করে কিছুদিনের ইতিকাফের মান্নত করলেও রমযান ছাড়া অন্য মাসে নফল রোযাসহ ইতিকাফ করতে হবে। এক্ষেত্রেও রমযানের ইতিকাফ যথেষ্ট নয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মান্নতকৃত দশ দিনের ইতিকাফ রমযানের শেষ দশকের ইতিকাফ দ্বারা আদায় করা যাবে না; বরং অন্য কোনো মাসে নফল রোযাসহ তা আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, রমযানের ইতিকাফ ছাড়া অন্য কোনো মাসের ইতিকাফের মান্নত করলে তাতে একত্রে দুটি কাজের মান্নত হয়ে যায় : ১. ইতিকাফ করা ও ২. ইতিকাফের দিনে রোযা রাখা।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৩; উমদাতুল ফিকহ ৩/৩১৯

শেয়ার লিংক

মাওলানা নূরুল্লাহ - মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা

২৫৮৭. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের চতুর্দিকের বেড়াগুলো ছিল টিনের। এবার মসজিদ কমিটি সাইডে ওয়াল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে মুসল্লিদের কাছ থেকে নগদ টাকা, ইট, সিমেন্ট ইত্যাদি উঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে মোটামুটি ক্যাশ জমা হয়েছে। কিছুদিন পর মসজিদের কাজ শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। কয়েক মাস থেকে মসজিদের জেনারেল ফান্ডে কোনো টাকা নেই। তাই ইমাম-মুয়াযযিনের কয়েক মাসের বেতন বাকি হয়ে গেছে। জানতে চাই, মসজিদ নির্মাণের জন্য উঠানো টাকা থেকে কি ইমাম-মুয়াযযিনের বেতন দেওয়া যাবে?


উত্তর

মসজিদের নির্মাণ কাজের কথা বলে উঠানো টাকা নির্মাণ কাজেই ব্যয় করতে হবে। ঐ টাকা দ্বারা ইমাম-মুয়াযযিনের বেতন দেওয়া জায়েয হবে না।

উল্লেখ্য, ইমাম-মুয়াযযিনের বেতন পরিশোধ করার জন্য মুসল্লিদেরকে সাধারণ ফান্ডে দান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেন এ খাত থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া যায়।

-ইলামুস সাজিদ ৪০১; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নুসরাতুল্লাহ - শিমরাইলকান্দি, বি. বাড়িয়া

২৫৮৮. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি মসজিদ আছে। সে মসজিদের উন্নয়নের জন্য এক লোক একটি মার্কেট ওয়াকফ করেছে। প্রতি মাসে মার্কেট থেকে ভাড়া বাবদ যে টাকা আসে মসজিদের কাজে ব্যয়ের পরও অনেক টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়। যা বর্তমানে এই মসজিদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ভবিষ্যতে মসজিদ সম্প্রসারণ করলে তখন প্রয়োজন হতে পারে। মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার্থে মহল্লায় আরেকটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন মসজিদের নির্মাণের জন্য প্রচুর টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই নতুন মসজিদের আয়ের নির্দিষ্ট কোনো উৎস নেই। তাই পুরাতন মসজিদের জন্য যে ব্যক্তি মার্কেট ওয়াকফ করেছিল সে চাচ্ছে, পুরাতন মসজিদের খরচের পর মার্কেটের আয়ের অবশিষ্টাংশ নতুন মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য দিয়ে দিতে। মসজিদ কমিটিও এতে রাজি আছে। জানার বিষয় হল, উল্লেখিত অবস্থায় নতুন মসজিদের জন্য পুরাতন মসজিদের মার্কেটের আয়ের অবশিষ্ট অংশ নেওয়া বৈধ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত পুরাতন মসজিদের মার্কেটের আয়ের উদ্ধৃত্ত অংশও নতুন মসজিদের জন্য নিতে পারবে না। প্রতিটি মসজিদ স্বতন্ত্র ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। তাই একটির সম্পদ অন্যটিতে ব্যয় করা যাবে না। প্রত্যেক মসজিদের পুরো আয় সে মসজিদের খরচের জন্যই গচ্ছিত রাখতে হবে। বর্তমানে তা প্রয়োজন না হলেও পরবর্তীতে মসজিদের নির্মাণ-সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজে প্রয়োজন হতে পারে। তাই সে টাকা সংরক্ষণ করা জরুরি।

আর নতুন মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করা মহল্লাবাসীর ঈমানী দায়িত্ব। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহ তাআলার কাছে মহা ছওয়াবের অধিকারী হবেন। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে গৃহ নির্মাণ করবেন।

-সহীহ বুখারী ১/৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩৬

শেয়ার লিংক

মাওলানা কাওছার হাবীব - রাজশাহী

২৫৮৯. প্রশ্ন

 

বাদ সালাম আরয এই যে, আমি বিগত জানুয়ারি মাসের মাসিক আলকাউসারের প্রশ্নোত্তর বিভাগে ২৩৮৬ নং প্রশ্নের উত্তরে দেখতে পেলাম যে, সেখানে পাঁচ দিনের জন্যও বাইয়ে সালাম সহীহ বলা হয়েছে। উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে বাদায়েউস সানায়ে ও খুলাসাতুল ফাতাওয়ার। সেখানে এ ব্যাপারে শুধু ইমাম কারখী রাহ.-এর মত উল্লেখ আছে। কিন্তু উভয় কিতাবেই এরপরে এর সর্বনিম্ন মেয়াদ এক মাস উল্লেখ করা হয়েছে এবং সে মতটিকে তাসহীহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফিকহের আরো অনেক কিতাবে (যেমন আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ফাতহুল কাদীর ইত্যাদি) দেখলাম, এক মাসের মতটিকেই তাসহীহ করা হয়েছে।

সুতরাং ফতওয়া কোন মতের উপর-সেটি জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।

আর প্রশ্নে  শুধু কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার জন্য আরো কিছু শর্ত আছে। অতএব কোন সূত্রে বলা হল যে, উক্ত নিয়মে অগ্রিম বেচা-কেনা বৈধ হবে? আর তা বাইয়ে সালামের অন্তর্ভুক্ত হবে?


 

উত্তর

আপনার ইলমী প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি ঠিকই বলেছেন। অনেক ফকীহ কর্তৃক বাইয়ে সালামের সর্বনিম্ন মেয়াদ এক মাস হওয়ার বিষয়টিকে তাসহীহ করা হয়েছে। তথাপি আলকাউসারে পাঁচ দিন মেয়াদী সালামকে জায়েয বলা হয়েছে। আলকাউসার মূলত বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইমাম তহাভী, ইমাম কারখী, ইমাম জাসসাস প্রমুখ কাদীম ফুকাহায়ে কেরামের মতটিকেই অধিক গ্রহণযোগ্য মনে করেছে। যেটির তাসহীহ করেছেন ছাদরুশ শহীদ ও সাহেবে ফতোয়া সিরাজিয়া প্রমুখ ফকীহগণ। আর এ মতটি গ্রহণ করেছেন এ যুগের আরব আলেম শায়েখ ছিদ্দিক মুহাম্মাদ আমীন আযযারীর এবং হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম প্রমুখ আলেমগণ।

আর হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রাহ. তো এক্ষেত্রে সরাসরি শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী যেকোনো মেয়াদের জন্য বাইয়ে সালামকে জায়েয বলেছেন।

যেহেতু বাইয়ে সালামের সর্বনিম্ন মেয়াদের বিষয়টি মানসূস আলাইহি নয় এবং বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বল্প মেয়াদী বাইয়ে সালামের ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে তাই এক্ষেত্রে এক মাসের কম মেয়াদেও বাইয়ে সালাম সহীহ হওয়ার ব্যাপারে যে সকল ফুকাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন তাদের কথার উপর আমল করা এবং ফতোয়া দেওয়ার অবকাশ রয়েছে বলে মনে হয়।

 

তাঁদের মতামত জানার জন্য নিম্নের কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে :

মুখতাছারু ইখতিলাফিল উলামা ৩/৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/২৭৮; আলবেনায়া ১১/২৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১০৬; মাজাল্লা মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, নবম সংখ্যা ১/৩৮৭, ৬৪৩, ৬৫১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/২১; ইসলামী বেনকারী কী বুনিয়াদে, মুফতী তাকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম, পৃষ্ঠা : ২০০

আরেকটি বিষয়ে আপনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তা হল, আলকাউসারের ঐ জবাবে বাইয়ে সালামের সকল শর্ত উল্লেখ  করা হয়নি। আসলে বাইয়ে সালামের শর্তগুলো এর পূর্বেও আলকাউসারের একাধিক সংখ্যায় ছেপেছে। এখানে যেহেতু প্রশ্নকারীর জানার মূল বিষয় ছিল মেয়াদের বিষয়টি তাই সকল শর্ত উল্লেখ করা জরুরি মনে করা হয়নি। আপনার পর্যবেক্ষণের জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ খাদেমুল ইসলাম - ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকা

২৫৯০. প্রশ্ন

 

সূরা বনী ইসরাইলের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, পিতামাতাকে উফ শব্দটি বলা যাবে না। আর বাহ্যত এমনই বোঝা যায়। কিন্তু একজন আলেম বলেছেন, উফ শব্দ বলা যাবে না-এর অর্থ হল পিতামাতাকে এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যার কষ্টের কারণে তারা উফ শব্দ বলেন। এ বিষয়ে দলিল-প্রমাণসহ সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।


 

উত্তর

সূরা বনী ইসরাইলের উক্ত আয়াতের তরজমা এবং সঠিক তাফসীর নিম্নে পেশ করা হল।

তরজমা : পিতামাতার কোনো একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে (উফ) পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না; বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।-সূরা বনী ইসরাইল : ২৩

 

আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর

ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, পিতামাতা উভয় থেকে কিংবা কোনো একজন থেকে কষ্টদায়ক কোনো কিছু দেখলে বিরক্ত হয়ে উফ বলো না।-তাফসীরে তবারী ৮/৫৯

অর্থাৎ আলোচ্য আয়াতে পিতামাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের কোনো আচরণে কষ্ট পেয়ে সন্তানের জন্য উফ বলতে এবং বিরক্তি প্রকাশমূলক কোনো আচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে সন্তানকে উফ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আর উফ শব্দ বলে এমন আচরণ বোঝানো হয়েছে, যদ্দারা বিরক্তি প্রকাশ পায়। তাফসীরবিদগণ বলেন, এক্ষেত্রে পিতামাতার কথায় বা কাজে বিরক্ত হয়ে তাদেরকে শুনিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেয়াও এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।-তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৫/৪৬৬

হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পীড়াদানের ক্ষেত্রে উফ বলার চেয়ে যদি আরো হালকা কোনো শব্দ থাকত তবে তাও উল্লেখ করা হত। (অর্থাৎ উফ শব্দটি তৎকালীন আরবে সর্বনিম্ন স্তরের পীড়াদায়ক শব্দ বলে বিবেচিত হত।)-আলজামিউ লি আহকামিল কুরআন ১০/১৫৯

মোটকথা সন্তানের যে কথা বা কাজে পিতা-মাতা উভয়ে কিংবা কোনো একজন সামান্যতমও কষ্ট পান, সে কথা বা কাজ উক্ত আয়াতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যাখ্যা সঠিক নয়।

-তাফসীরে তাবারী ৮/৫৯; আলজামিউ লিআহকামিল কুরআন ১০/১৫৯; রুহুল মাআনী ১৫/৫৫; মাআরিফুল কুরআন ৫/৪৬৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ৩/১১৯৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রেদওয়ান - হবিগঞ্জ, সিলেট

২৫৯১. প্রশ্ন

এক ওয়াযে শুনেছি, আয়াতুল কুরসীর ব্যাপারে শয়তান নিজেই নাকি বলেছে, শোয়ার আগে এটি পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারে না। একথা কি হাদীসে আছে? থাকলে তা কি সহীহ হাদীস?


উত্তর

হ্যাঁ, সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত। এ সংক্রান্ত পূর্ণ হাদীসটি হল, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সদকাতুল ফিতরের মাল পাহারা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করলেন। হঠাৎ এক রাতে দেখলাম, অপরিচিত এক লোক সদকাতুল ফিতরের মাল (খাদ্যশস্য) থেকে অঞ্জলিভরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, তোমাকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে তুলে দিব। লোকটি বলল, দেখুন, আমি অভাবগ্রস্ত। একটি পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার উপর। আমাকে ছেড়ে দিন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, এ কথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা! গতকাল রাতে তোমার বন্দীর কী হল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, প্রচন্ডভাবে সে অভাবগ্রস্ত। তার পরিবারও রয়েছে। তখন তার প্রতি আমার দয়া হল তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। আবারো সে আসবে। আমি তখন নিশ্চিত হলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু বলেছেন সে আসবে তাহলে সে অবশ্যই আসবে। তাই আমি দ্বিতীয় রাতে ওঁৎপেতে থাকলাম। ঠিকই সে দ্বিতীয় রাতে এসে অঞ্জলিভরে খাবার নিতে লাগল। আমি তাকে আবারো ধরলাম। এবং বললাম, তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে তুলে দিব। সে আবারো একই কথা বলল। আমিও তাকে পূর্বের ন্যায় ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব শুনে পূর্বের ন্যায় বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। আবারো সে আসবে। এভাবে তৃতীয়বার যখন ধরা পড়ল তখন আমি বললাম, এ নিয়ে তিনবার হল। প্রতিবারই তুমি বলেছ আর আসবে না, কিন্তু তুমি আবারো এসেছ। আজ আর তোমাকে ছাড়ব না। তখন সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আপনাকে আমি কিছু কালিমা শিখিয়ে দিব, যা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা আপনাকে উপকৃত করবেন। আমি তার কথায় রাজি হয়ে বললাম, সেই কালিমাগুলো কী? সে বলল, আপনি রাতে যখন ঘুমাতে যাবেন তখন শোয়ার আগে আয়াতুল কুরসী পড়বেন। তাহলে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাযতকারী আপনার জন্য নিযুক্ত থাকবে এবং শয়তান সকাল পর্যন্ত আপনার নিকট আসতে পারবে না। এরপর আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব শুনে বললেন, সে চরম মিথ্যাবাদী। তবে এই কথাটা সত্য বলেছে। তুমি কি জান, গত তিন রাতে কার সাথে কথা বলেছ? আবু হুরায়রা রা. বললেন, না। আমি জানি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ছিল শয়তান।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৩১১

শেয়ার লিংক