মুহাম্মাদ সুমন মিয়া - আগারগাও, ঢাকা

১৯২৯. প্রশ্ন

আমার দাদা কিছু জায়গা কবরস্তানের জন্য ওয়াকফ করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর আমরা সে জায়গায় কিছু কাঠ গাছ লাগিয়েছিলাম। এখন সে গাছগুলো বিক্রি করে কবরস্তান সংরক্ষণের জন্য এর চারপাশে দেয়াল করতে চাই। এটা আমাদের জন্য বৈধ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হ্যাঁ, গাছগুলো বিক্রি করে সে অর্থ দ্বারা ঐ কবরস্তানের চারপাশে সীমানা-প্রাচীর করা জায়েয হবে।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম - কুমিল্লা

১৯৩০. প্রশ্ন

আমি একটি ধান মাড়ানোর মেশিন কিনেছিলাম এবং প্রতি বছর আমি নিজেই তা দ্বারা ধান মাড়িয়ে কিছু টাকা উপার্জন করতাম। কিন্তু এখন দুর্বলতার কারণে একা কাজ করতে পারি না। আমার এক বন্ধুর একটি রাইস মিল আছে। আমি পরিকল্পনা করেছি যে, আমার মেশিনটি তার রাইস মিলে স্থাপন করব এবং দুজনেই ঐ মেশিন দিয়ে কাজ করব। আমার যা উপার্জন হবে তা আমরা সমানভাবে ভাগ করে নিব। জানার বিষয় এই যে, আমার জন্য তার সাথে এই চুক্তি করা জায়েয হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি জায়েয।

আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন মিয়া - হালুয়াঘাট

১৯৩১. প্রশ্ন

আমি একজন থেকে মুদারাবা ব্যবসার জন্য টাকা নিয়েছি। ব্যবসার মাল কিনতে আমাকে প্রায়ই ঢাকা, চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে হয়। আসা-যাওয়ার পথে কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি। যেমন জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি তাহলে চিকিৎসার জন্য মুদারাবা ফাণ্ড থেকে টাকা নিতে পারব কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

ব্যবসার জন্য সফর করলে মুদারাবা কারবারি ব্যবসার ফাণ্ড থেকে কেবল সফর সংক্রান্ত খরচ নিতে পারবে। যেমন-যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচ। চিকিৎসার খরচ নিতে পারবে না। তবে পুঁজিদাতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুমতি দিলে চিকিৎসার খরচ নিতে পারবে।

বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৪৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৩/৩৭১; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৭/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৫৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু সাঈদ - আরমানিটোলা, ঢাকা

১৯৩২. প্রশ্ন

ক) ফরয নামাযের পর মোনাজাতের আগে বা মোনাজাত ব্যতীত আয়াতুল কুরসী, তাসবীহ ইত্যাদি পড়া যাবে? খ) ফরয নামাযের পর সাধারণত উচ্চ স্বরে মোনাজাত করা হয়। তখন পিছনে মাসবুক ব্যক্তিরা ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করে। এই সময় কি উচ্চস্বরে মোনাজাত করা জায়েয আছে? আর উচ্চ স্বরে মোনাজাত করার হুকুম কী?

উত্তর

(ক) যে সমস্ত নামাযের পর সুন্নত নেই যেমন ফজর ও আসর-এদুই নামাযের পর তাসবীহ, আয়াতুল কুরসী বা অন্যান্য দুআ মোনাজাতের আগে বা পরে যে কোনো সময় পড়া যাবে। আর যে সব নামাযের পর সুন্নত আছে অর্থাৎ যোহর, মাগরিব ও ইশা এসব ওয়াক্তে আয়াতুল কুরসী ও তাসবীহ সুন্নতের পর পড়া উচিত। এসব ওয়াক্তে ফরয আদায়ের পর বেশি অপেক্ষা না করে সুন্নতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া উত্তম।
সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ৬৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩২; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৩৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৫৬; ইলাউস সুনান ৩/১৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৫০
খ) মোনাজাত উচ্চ আওয়াজে বা নিম্ন আওয়াজে উভয় পদ্ধতিতেই করা জায়েয। তবে উচ্চ আওয়াজের কারণে কোনো নামাযীর নামাযে বিঘ্ন ঘটার আশংকা হলে তখন উচ্চ আওয়াজে মুনাজাত করা জায়েয নয়। সুতরাং পিছনে মাসবুক বা অন্য নামাযী থাকলে উচু আওয়াজে মুনাজাত করবে না।
সহীহ বুখারী ১/১১৬; ফাতহুল বারী ২/৩৭৯; ফায়যুল বারী ২/৩১৫; শরহুল আশবাহ হামাবী ৪/৬১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জহিরুল হক - সাভার, ঢাকা

১৯৩৩. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি কিছু মাল জমা করে রেখেছে এই উদ্দেশ্যে যে, দাম বাড়লে তা বিক্রি করবে। এমতাবস্থায় একজন তার কাছে কিছু টাকা ধার চাইল। তখন সে বলল, আমার কাছে টাকা নেই তবে এই মাল আছে। তারপর তাদের মাঝে এই মর্মে চুক্তি হল যে, টাকার পরিবর্তে মাল নিবে এবং পরে তার স্টককৃত অন্যান্য মাল যে দামে বিক্রি হবে সে হিসাবে এই মালের মূল্য পরিশোধ করবে। এ রকম চুক্তিতে কোনো সমস্যা আছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে বেচা-কেনা জায়েয় হবে না। কারণ এতে প্রথমত মূল্য সুনির্দিষ্ট হয়নি। দ্বিতীয়ত অবশিষ্ট মালগুলো কবে বিক্রি হবে এবং কোন মূল্যে বিক্রি হবে তাও অজানা। আর শরীয়তে মেয়াদী ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হওয়ার জন্য চুক্তির সময়ই পণ্যের মূল্য এবঙ পরিশোধের তারখ নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। বাকি বিক্রির কারণে নগদের চেয়ে মূল্য কিছুটা বেশি নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা নির্ধারিত করে নিতে হবে।

মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়াহ মাদ্দাহ : ২৩৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/১৫৮; আলমাদখালুল ফিকহিল আম ২/৭৬৬; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/৬৫; আলওসীত ফিল কানুনিল মাদানী ৪/৩২৫; আলগারার ওয়া আছারুহু ফিলউকূদ পৃ. ২৬০; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইনামুল হক - মালিবাগ, ঢাকা

১৯৩৪. প্রশ্ন

আমি একদিন আসরের নামাযে ইমামতি করছিলাম। চতুর্থ রাকাতের জন্য না দাঁড়িয়ে ভুলে বসে পড়ি। কিন' তখনি পিছন থেকে লোকমা শুনে উঠে পড়ি। বসা অবস্থায় কিছু পড়ার সুযোগ হয়নি। এরপর সাহু সিজদা ছাড়াই নামায শেষ করি। জানতে চাই, আমার উপর কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল?

উত্তর

হ্যাঁ, নামাযটি সহীহভাবেই আদায় হয়েছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কেননা, প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ঐ বৈঠকে অধিক সময় তথা এক রুকন পরিমাণ বিলম্ব হয়নি। আর এক্ষেত্রে এক রুকন পরিমাণ বিলম্ব না হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।

আলমুদাওয়ানাহ ১/৭৪; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/২১২; শরহুল মুহাযযাব ৩/৪১৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২২৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৯; মুগনিল মুহতাজ ১/২৩৮; আলালমারাকী পৃ. ২৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ - পল্লবী, ঢাকা

১৯৩৫. প্রশ্ন

আমাদের টিনশেড রুমের ছাদে কিছু ছিদ্র ছিল। বৃষ্টির সময় পানি পড়ত। একজন মিস্ত্রির সাথে চুক্তি করা হয় যে, ১,০০০/- টাকার বিনিময়ে সে ছাদটি মেরামত করে দিবে কোনো জায়গা দিয়ে যদি পানি পড়ে তাহলে সে কোনো টাকা নিবে না। মেরামতের পর দেখা গেল, কিছু জায়গা দিয়ে এখনো পানি পড়ে। জানতে চাই, তাকে টাকা দিতে হবে কি না? চুক্তিতে উল্লেখিত পারিশ্রমিক সে পাবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মিস্ত্রি পূর্ব ধার্যকৃত পারিশ্রমিক পাবে না; বরং সে যতটুকু মেরামত করতে পেরেছে এর ন্যায্য পারিশ্রমিক পাবে। সুতরাং সে অনুযায়ী তার পাওনা দিয়ে দিতে হবে। এখনো কোনো জায়গা দিয়ে পানি পড়ার কারণে মোটেও পারিশ্রমিক না দেওয়ার সুযোগ নেই।

সহীহ বুখারী ২২২৭; আলমাবসূত সারাখসী ১৬/৪৭; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৭/১২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ উবায়দুল্লাহ - দেওভোগ মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ

১৯৩৬. প্রশ্ন

যদি কেউ ওয়াকফিয়া মসজিদ অন্যত্র নিয়ে সে স্থানে মসজিদের অযুখানা, বাথরুম বা অন্য কিছু করার সংকল্প করে তাহলে এর হুকুম কী?

উত্তর

কোনো স্থানে একবার মসজিদ বানানো হলে তা সর্বদা মসজিদ হিসাবে বহাল রাখা জরুরি। ঐ জায়গা মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা জায়েয নয়। তাই পূর্ব থেকে মসজিদ আছে এমন স্থানে অযুখানা-বাথরুম বা অন্য কিছু করা জায়েয হবে না; বরং তা মসজিদ হিসাবেই সংরক্ষণ করতে হবে।

আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৪৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুজিবুল্লাহ - ফরিদপুর

১৯৩৭. প্রশ্ন

আমার জন্মস্থান ফরিদপুর। তবে ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় পড়াশুনা করেছি। অতঃপর ঢাকায় এক মসজিদে ইমামতি করছি এবং বিয়ে-শাদি করে বাসা ভাড়া নিয়ে ঢাকাতেই থাকি। বছরে দু’একবার দু’ একদিনের জন্য বাড়িতে যাই। সেখানে আমার আব্বা ও ভাইয়েরা থাকেন। জানার বিষয় হল, আমি তো ঢাকাকে ওয়াতনে ইকামত বানিয়েছি। এখন আমি যখন বাড়িতে যাব সেখানে আমি মুসাফির হব কি না? উল্লেখ্য, আমার পিতা যেখানে থাকেন সেটা নিজের বাড়ি নয়; বরং প্রায় চল্লিশ বছর যাবত মাদরাসার কোয়াটারে আছেন আমার জন্মস্থান এটিই এবং দু বছর পূর্বে আমার আম্মার ইনে-কালের পর তাঁকে ঐ এলাকাতেই দাফন করা হয়েছে। এখান থেকে পূর্বের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাও নেই।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ফরিদপুরের বর্তমান বাসস্থান আপনাদের ওয়াতনে আসলী। আর ঢাকা আপনার ওয়াতনে ইকামত হলেও বাবার আবাসস'ল যেহেতু আপনি ত্যাগ করার নিয়ত করেননি তাই আপনি যখন আপনার বাবার ফরিদপুরের ঐ বাড়িতে যাবেন তখন মুকিম থাকবেন। আপনাকে সেখানে পূর্ণ নামায পড়তে হবে।

বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮০; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৫৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯; রদ্দুল মুহতার ২/১৩১

শেয়ার লিংক

মাওলানা নূর মুহাম্মাদ - নারায়ণগঞ্জ

১৯৩৮. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি একটি চারতলা মার্কেট নির্মাণ করেছে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলাকে মসজিদ বানাতে চায়। জানার বিষয় হল, উক্ত মসজিদটি শরঈ মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ দুই তলা স্থায়ীভাবে মসজিদের জন্য ছেড়ে দিলে তা শরঈ মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে। উল্লেখ্য, সম্ভব হলে এক্ষেত্রে মসজিদের জন্য পৃথক সিড়ির ব্যবস্থা করা উত্তম হবে।

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৪৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; ফাতহুল কাদীর ৬/২১৮; আদ্দুররুল মুখথার ২/৫৯৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সাকিবুল হাসান - মুহাম্মাদ সাকিবুল হাসান

১৯৩৯. প্রশ্ন

অনেক সময় দেখা যায়, যে সমস্ত দোকানে পণ্যের মূল্য ফিক্সড নয় সে সকল দোকানে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে পণ্যের দাম নিয়ে দরকষাকষি হয়। পণ্যের দাম মনপুত হলে ক্রেতা পণ্য ক্রয় করে। মনপুত না হলে দোকান থেকে চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ক্রেতা যখন দোকান থেকে বের হয়ে কিছু দূর চলে আসে তখন বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্য নেওয়ার জন্য ডাকতে থাকে। ক্রেতা ফিরে না আসলে তাকে তিরস্কারমূলক কথাও বলে থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, বিক্রেতা অনেক সময় ধরে ক্রেতাকে পণ্য দেখানোর পর ক্রেতার পছন্দ না হলে সে যখন দোকান থেকে চলে আসে তখন তাকেও তিরস্কারমূলক কথা বলা হয়। এখন আমার জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রেতা ঐ পণ্যটি ক্রয় করতে বাধ্য কি না এবং উভয়ক্ষেত্রে সে ভর্ৎসনার যোগ্য হবে কি না। জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার জন্য একই মজলিসে প্রস্তাবও গ্রহণ সম্পন্ন হওয়া জরুরি। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ক্রেতা পণ্যের মূল্য প্রস্তাব করার পর বিক্রেতা তা গ্রহণ না করার কারণে বিক্রি চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। অতএব এ পরিসি'তিতে প্রস্তাবকারীর চলে যাওয়া ঠিকই আছে। ঐ স্থান ত্যাগ করার পর বিক্রেতা তাকে প্রস্তাবিত দামে দিতে চাইলেও ক্রেতার জন্য তা নেওয়া জরুরি নয়। ইচ্ছা করলে নিতেও পারে আবার নাও নিতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে ক্রেতা পণ্য ক্রয় না করলে তাকে ভর্ৎসনা করা অন্যায় হবে।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৭-৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৪; হেদায়া ৩/১৯-২০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭২; আননাহরুল ফায়েক ৩/৩৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫২৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জুনাইদ খান - সুনামগঞ্জ

১৯৪০. প্রশ্ন

আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি কবরস্তানের জন্য এক বিঘা জমি ওয়াকফ করেন। বর্তমানে তিনি বেঁচে নেই। কিন্তু এলাকার কিছু লোক কবরস্তানের জন্য ওয়াকফকৃত এক বিঘা জমি থেকে একটি অংশ কবরস্তানের জন্য রেখে অবশিষ্ট জায়গায় একটি মসজিদ ও ঈদগাহ নির্মাণ করে সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও ঈদের নামায পড়ে আসছে। আমার জানার বিষয় এই যে, ওয়াকফকারী তো এই এক বিঘা জমি কবরস্তানের জন্য ওয়াকফ করেছেন। এই জায়গায় মসজিদ ও ঈদগাহ তৈরি করা জায়েয হয়েছে কি? এবং যারা এতদিন সেখানে নামায পড়ে আসছেন তাদের নামাযের কী হুকুম? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াকফকারী যেহেতু উক্ত এক বিঘা জমি কবরস্তানের জন্যই ওয়াকফ করেছেন তাই ঐ জমি কবরস্তান হিসাবে রাখা জরুরি। ঐ জমিতে মসজিদ বা ঈদগাহ বানানো জায়েয হয়নি। তাই বর্তমান যে জায়গায় মসজিদ ও ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়েছে তা খালি করে দিতে হবে। তবে এতদিন যারা ঐ জমিতে নামায পড়ে এসেছেন তাদের নামায আদায় হয়ে গেছে। ঐ নামাযগুলো পুনরায় পড়তে হবে না।

আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৪০; তানকীহুল হামিদিয়া ১/১২৬; আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ২/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৩৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সাকলাইন - মাদারীপুর

১৯৪১. প্রশ্ন

এক বিত্তবান ব্যক্তি কুরবানীর এক মাস পূর্বে একটি কুরবানী মান্নত করে। কুরবানীর দিন সে শুধু একটি কুরবানী করে। জানার বিষয় হল, উক্ত কুরবানীর দ্বারা তার মান্নত আদায় হয়েছে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির উপর দুটি কুরবানী করা জরুরি ছিল। ১. সাধারণ ওয়াজিব কুরবানী ও ২. মান্নতের ওয়াজিব কুরবানী। যেহেতু সে একটি কুরবানী করেছে তাই এখন কুরবানীর উপযুক্ত একটি পশুর মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর সময়মতো কুরবানী না করার কারণে ইস্তিগফার করতে হবে।

বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৪-১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৮; মাবসূত সারাখসী ১২/৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শাকের হুসাইন - লাকসাম

১৯৪২. প্রশ্ন

অনেক কোম্পানি এমন আছে, যারা তাদের পণ্যের সাথে রুমাল, কলম ইত্যাদি ফ্রি দিয়ে থাকে। আমি এমন একটি কোম্পানির একটি লুঙ্গি কিনেছিলাম, যারা লুঙ্গির সাথে রুমাল ফ্রি দিয়ে থাকে। কিন' আমি যখন খরিদ করি তখন লুঙ্গির সঙ্গে রুমাল ছিল না। তাই রুমালের মূল্য বাবদ কিছু টাকা কম দিয়ে লুঙ্গিটি কিনে আনি। জানার বিষয় এই যে, বিক্রেতাকে রুমালের টাকা না দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না। জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হ্যাঁ, রুমাল বাবদ কিছু টাকা কম দেওয়া বৈধ হয়েছে। কারণ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মূলত লুঙ্গি এবং রুমাল উভয়টিই আপনার ক্রয়কৃত পণ্য। তাই রুমাল না পাওয়ার কারণে সে বাবদ মূল্য কম দেওয়া জায়েয।

আলবাহরুর রায়েক ৬/১২০; হেদায়া ৩/৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৮৪; মাজমাউল আনহুর ৩/১১৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুশাররফ হুসাইন - পটুয়াখালী

১৯৪৩. প্রশ্ন

আমি আমার অফিসের গরীব শ্রমিকদের জন্য পরিচিত লোকজনের নিকট থেকে যাকাতের টাকা এনে তাদের দিয়ে থাকি। এটা তাদের বেতন ও শ্রমের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। একজন গরীব শ্রমিক আমার কাছ থেকে কিছু ঋণ নিয়েছিল, কিন্তু সে তা পরিশোধ করতে পারছিল না। আমি তাকে বললাম, তোমাকে কিছু যাকাতের টাকা দিব। তা দিয়ে তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিও। সে ঐ টাকা দিয়ে আমার ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছে। জানার বিষয় এই যে, শ্রমিকের সাথে এ ধরনের কথার কারণে কি যাকাত আদায়ে কোনো অসুবিধা হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যাকাত আদায় হয়ে গেছে। ঐ শ্রমিকের সঙ্গে ঋণ আদায়ের বিষয়ে পূর্ব আলোচনা করার কারণে যাকাত আদায়ে কোনো সমস্যা হয়নি।

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৩৯২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২১/৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আদনান ফারুক - আদিতমারী, লালমনিরহাট

১৯৪৪. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি তার ১৩ বছর বয়সের সাবালিকা কন্যার নিকট স্থানীয় একটি ছেলের সঙ্গে তার বিবাহের ব্যাপারে তার মতামত জানতে চায়। মেয়ে হ্যাঁ, না কিছুই না বলে চুপ থাকে। তবে মেয়ে মনে মনে উক্ত বিবাহের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নারাজ ছিল। এ অবস্থায় তাদের আকদ হয় এবং এখনো মেয়েটি নারাজ হয়েই ঘর-সংসার করছে। জানতে চাই, তাদের বিবাহ সহীহ হয়েছে কি না? এবং তাদের জন্য এখন ঘর-সংসার করা কি বৈধ হচ্ছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা মতে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। কারণ বিয়ে সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়ার সময় মেয়ের চুপ থাকা এবং প্রত্যাখ্যান না করা এবং পরবর্তীতে ঘর-সংসার করা মেয়েটির সম্মতির প্রকাশ্য প্রমাণ। সুতরাং এক্ষেত্রে নারাজ থাকার অর্থ এই বিয়ে তার মনোপুত না হওয়া এবং এ স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসারে সন'ষ্ট না হওয়া। এটি বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক নয়। অসন'ষ্টচিত্তে সম্মতি দিলেও বিয়ে সহীহ হয়ে যায়।

সহীহ মুসলিম ১/৪৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৬৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবেদ কামাল - জাজিরা, শরীয়তপুর

১৯৪৫. প্রশ্ন

আমি জনৈক আলেমকে বলতে শুনেছি যে, জুমআ ও ঈদের খুতবা পাঠের সময় খতীব সাহেবের ডান-বামে তাকিয়ে খুতবা পাঠ করা সুন্নত তরীকা নয়। সুন্নত তরীকা হল, মুসল্লীদের দিকে ফিরে খুতবা পাঠ করা। জানতে চাই, ঐ আলেমের বক্তব্য সঠিক কি না?

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ আলেমের কথা ঠিক। খুতবার সময় মুসল্লীদের দিকে ফিরে খুতবা দেওয়া সুন্নত। বিনা প্রয়োজনে বক্তাদের মতো ডানে-বামে চেহারা ঘোরানো ঠিক নয়।

জামে তিরমিযী ১/৬৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/৮৮; উমাদাতুল কারী ৬/২২১; শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৯৯; মাআরিফুস সুনান ৪/৩৬৫; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৩/১৭৮; খুতবাতুল জুমআ ওয়া আহকামুহাল ফিকহিয়্যা পৃ. ২৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৫৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; রওযাতুত তালিবীন ২/৩২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু আবদুল্লাহ - কুমিল্লা

১৯৪৬. প্রশ্ন

তারাবীর দুই রাকাত নামাযের প্রথম রাকাতে যে পৃষ্ঠা থেকে পড়া হয়েছে দ্বিতীয় রাকাতে কি তার পূর্বের পৃষ্ঠা থেকে পড়া যাবে? যেমন-কেউ প্রথম রাকাতে কোনো পারার তৃতীয় পৃষ্ঠা পড়ল। দ্বিতীয় রাকাতে চতুর্থ পৃষ্ঠা পড়ার পূর্বে প্রথম পৃষ্ঠার ছুটে যাওয়া একটি আয়াত পড়ে নিল। তারতীবের এ সামান্য ত্রুটির কারণে কি নামাযে কোনো সমস্যা হবে?

উত্তর

তারাবীর নামাযে এভাবে পেছন থেকে পড়ার অবকাশ আছে। এতে নামাযের ক্ষতি হবে না। খতম পুরা করার জন্য ছুটে যাওয়া আয়াত এভাবে পড়া যেতে পারে। তবে ছুটে যাওয়া আয়াত পড়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য পরবর্তী আয়াতগুলো পড়ে নেওয়া ভালো।

ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৮, ১/১১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৮, ২/২৫৪; শরহুল মুনইয়্যাহ পৃ. ৪০৭, ৪৯৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৩৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ বশিরুল্লাহ - কুমিল্লা

১৯৪৭. প্রশ্ন

এক বন্ধুর কাছে আমার ১০,০০০/- টাকা পাওনা ছিল। সে ব্যবসার জন্য আমার কাছে টাকা চাইলে আমি বললাম, এ মুহূর্তে আমার নিকট টাকা নেই। তোমার কাছে আমার যে ১০, ০০০/- টাকা পাওনা আছে তা দিয়ে ব্যবসা কর। ঐ টাকা এখন আমার প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে ব্যবসায় যা লাভ হবে এর অর্ধেক আমার অর্ধেক তোমার। এভাবে চুক্তি করা কি সহীহ হয়েছে? সহীহ না হলে কী করণীয়?

উত্তর

ঋণগ্রহীতা থেকে পাওনা টাকা হস্তগত করার আগে তা ঋণগ্রহীতাকে ব্যবসার পুঁজি হিসাবে দেওয়ার প্রস্তাব বৈধ নয়। তাই প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়নি। তবে ঋণদাতা যদি ঐ টাকা ঋণগ্রহীতা থেকে বুঝে নেওয়ার পর পুনরায় ব্যবসার জন্য তাকে প্রদান করে তাহলে কারবার জায়েয হবে।

ফাতহুল কাদীর ৭/৪১৭; আলইনায়া ৭/৪১৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; আশশারহুল কাবীর ৩/৪৫৫; আশশারহুছ ছগীর ৩/৬৮৫; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৭/১৮২; তুহফাতুল মুহতাজ ২/৪১৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল বারী - নেত্রকোনা

১৯৪৮. প্রশ্ন

কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর যদি মারা যায় অথবা চুরি হয়ে যায় তাহলে কি আরেকটি পশু ক্রয় করে কুরবানী করতে হবে?

উত্তর

ঐ ব্যক্তি যদি ধনী হয়ে থাকে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় তাহলে তাকে অন্য পশু ব্যবস্থা করে কুরবানীর সময়ের মধ্যে কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। আর যদি সে এমন গরীব হয় যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সেক্ষেত্রে তাকে আর কিছুই করতে হবে না।

সুনানে কুবরা বায়হাকী ৯/২৮৯; মাজমাউল আনহুর ৪/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফয়জুল ইসলাম - ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

১৯৪৯. প্রশ্ন

আমরা একটি গ্রামে কিছু জমি ক্রয় করি। জমির মালিক জমি মেপে আমাদের বুঝিয়ে দেন এবং দলিলও করা হয়। আমরা সেখানে বাড়ি নির্মাণ করে পনের বছর যাবত বসবাস করছি। জমি বিক্রেতা ইন্তেকাল করেছেন। এখন প্রকাশ পেয়েছে যে, দলিলে উল্লেখিত দাগ নাম্বার অনুযায়ী আমাদের জমি অন্য স্থানে। যেখানে আমরা অবস্থান করছি সেখানে নয়। তাই বিক্রেতার উত্তরাধিকারীগণ আমাদেরকে এ জমি ছেড়ে দলিলে যে দাগ নাম্বার রয়েছে সেখথানে চলে যেতে চাপ দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমি কি উক্ত জমি ছাড়তে বাধ্য?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এখন যে দাগে বাড়ি আছে এটাই যেহেতু জমির মালিক থেকে কিনেছেন এবং জমির মালিক নিজে তা বুঝিয়ে দিয়েছে এবং এর ভিত্তিতেই আপনি সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছেন তাই সে সময় বাস্তবেই এই জমিটি যদি বিক্রেতার সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে, দলিলে দাগ নাম্বার ভুল হয়েছে। অতএব শরীয়তের দৃষ্টিতে আপনি উক্ত জমি ছাড়তে বাধ্য নন; বরং বিক্রেতার ওয়ারিসদের কর্তব্য হল, আপনাদের নামে ভুল সংশোধনী দলিল করে দেওয়া। অবশ্য সমঝোতার ভিত্তিতে তারা যদি এ স্থান থেকে আপনাকে স্থানান্তর করতে অনুরোধ করে তবে এ কারণে যা ক্ষতি হবে তা দেওয়া তাদের উপর জরুরি হবে।

হেদায়া ৩/২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২২৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৬২; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৬২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৯৮

শেয়ার লিংক

রফিকুল ইসলাম - কান্দিপাড়া, গফরগাও

১৯৫০. প্রশ্ন

আমরা জানি, হযরত ইবরাহীম আ.-এর কুরবানীর ঘটনা তাঁর পুত্র হযরত ইসমাঈল আ.-এর সাথে হয়েছিল। কিন' ক’দিন আগে আমাদের এক স্যার যিনি ধর্ম পড়ান, বললেন যে, হযরত ইবরাহীম আ.কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাঁর পুত্র ইসহাক আ.কে যবেহ করার জন্য। জানতে চাই, এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য বক্তব্য কোনটি?

উত্তর

তাফসীরবিদ, হাদীস-বিশারদ ও ঐতিহাসিকগণের মতে নির্ভরযোগ্য মত হল হযরত ইবরাহীম আ.-এর কুরবানীর ঘটনা তাঁর স্ত্রী হযরত হাজেরা রা.-এর গর্ভের পুত্র হযরত ইসমাঈল আ.-এর সাথে হয়েছিল। আলকুরআনের বর্ণনাভঙ্গি এদিকেই ইঙ্গিত করে। কুরআন মজীদের একটি আয়াত (তরজমা) আমি তাকে ইসহাকের জন্মলাভের সুসংবাদ দিলাম এবং ইসহাকের পরবর্তীতে ইয়াকুবেরও। (সূরা হুদ : ৭১) উক্ত আয়াতে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, যার ব্যাপারে কুরবানীর আদেশ করা হয়েছিল তিনি হযরত ইসহাক আ. নন। কারণ উক্ত আয়াতে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে যে, ইসহাক আ. জীবিত থাকবেন। তাঁর ঔরসে ইয়াকুব আ. জন্ম লাভ করবেন। যদি ইসহাক আ.-এর সাথে কুরবানীর ঘটনা ঘটত তাহলে তাঁর সম্পর্কে উক্ত কথা বলা হত না। কেননা, যার ব্যাপারে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছে তাঁর ব্যাপারে উক্ত কথা বললে কুরবানীর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো অর্থ থাকে না। এছাড়া আরো বহু দলীল-প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত যে, কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈল আ.-এর সাথে হয়েছিল। ইসহাক আ.-এর সাথে নয়। এটিকে ইসহাক আ.-এর সাথে যুক্ত করা ঠিক নয়।

শেয়ার লিংক

শামীম আহমদ - কলাবাগান, ঢাকা

১৯৫১. প্রশ্ন

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. কত বছর বয়সে ইনে-কাল করেন? তাঁর জানাযা কে পড়িয়েছেন? হযরত আয়েশা রা. হযরত ফাতেমা রা.-এর বড় না ছোট? তাদের বয়সের তফাত কত?

উত্তর

হযরত ফাতিমা রা. আম্মাজান আয়েশার চেয়ে ৫ বছরের বড় ছিলেন। আর আম্মাজান ৬৬ বছর বয়সে ৫৮ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর জানাযা হযরত আবু হুরাইরা রা. পড়িয়েছেন।

আলইসাবা ৪/৩৪৭-৩৪৯; উসদুল গাবা ৪/৩৭৭, ৫/৩৪১; ইস্তিয়াব ২/৭৫২, ৪/১৮৮১; আলমুজতাবা ৬৩; সীরাতে সাইয়িদা আয়েশা রা. ১৫১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আদীব হাসান - চট্টগ্রাম

১৯৫২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় প্রচলন যে, আযান-ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় তর্জনীতে চুমু খেয়ে চোখে বুলিয়ে দেওয়া। হযরত আবু বকর রা. নাকি এই আমল করতেন এবং বর্ণনা করতেন যে, যে ব্যক্তি তা করবে তার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। জানতে চাই এই হাদীসটি সহীহ কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত আমলটি এবং এ সম্পর্কিত বর্ণনা মূলত ‘মুসনাদে দাইলামী’তে রয়েছে। প্রখ্যাত হাদীস-বিশারদগণ বর্ণনাটি ভিত্তিহীন ও জাল বলেছেন। হাফেয সাখাভী রাহ. বলেন, এটি প্রমাণিত নয়। (আলমাকাসিদুল হাসানাহ ৪৫০-৪৫৯) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. বলেন, মুআজ্জিনের শাহাদাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যাতগুলো রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে সবগুলোই বানোয়াট। (তাইসীরুল মাকাল হাদীস : ১২৩; রাহে সুন্নাত ২৪৩) আল্লামা লখনভী রাহ. বলেন, সত্যি কথা হল, ইকামত কিংবা অন্য কোথাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শ্রবণ করা মাত্রই নখে চুমু খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়া) সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস বা সাহাবীর কোনো আছর বা আমল বর্ণিত হয়নি। যে তা দাবি করবে সে চরম মিথ্যাবাদী। আর এটি একটি নিকৃষ্টতম বিদআত। শরীয়তের কিতাবসমূহে যার কোনো ভিত্তি নেই। (আসসিয়ায়াহ ২/৪৬)

আরো দেখুন : আলমাসনূ ১৬৮-১৭০; তাযকিরাতুল মাওজূআত ৩৪; কাশফুল খাফা ২/২০৬-২০৭; প্রচলিত জাল হাদীস

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শাব্বীর আহমদ - ফুলপুর

১৯৫৩. প্রশ্ন

: আমাদের সমাজে এই ধারণা প্রচলিত আছে যে, কোনো মৃতের জন্য সত্তর হাজার বার কালিমা তাইয়্যেবা পড়লে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। কেউ কেউ নিজে জীবদ্দশায় এই উদ্দেশ্যে সত্তর হাজার বার কালেমা পড়ে। তবে মৃতের জন্য পড়ানোর রেওয়াজটা বেশি। জানতে চাই, এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কি না?

উত্তর

এটি কোনো হাদীসে নেই। এটি লোকমুখে প্রচলিত কথা, যার কোনো ভিত্তি নেই। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি সহীহ বা জয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই।’ (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/৩২৩) প্রকাশ থাকে যে, কালিমা তাইয়্যেবা পড়া উত্তম জিকর। একাধিক হাদীসে এই কালিমা পাঠ করার ফযীলত এসেছে। এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করবে সে জান্নাতে যাবে।-মুসনাদে আহমদ ৪/৪১১ তাই নিজের জন্য কালেমা পড়া কিংবা মৃতের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে পড়া ভালো। কিন্তু প্রশ্নোক্ত নিয়মটি ঠিক নয়। আর ঈসালে সওয়াবের জন্য অন্যকে পারিশ্রমিক দিয়ে কালিমা তাইয়্যেবা পড়ানো, কুরআন খতম করানো, বা কোনো জিকর করানো বৈধ নয়। এতে মৃতের নিকট কোনো সওয়াব পৌছে না। উপরন্তু ইবাদতকে অর্থোপার্জনের মাধ্যমে বানানোর কারণে গুনাহ হবে।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইউনুস - শেখেরটেক, মুহাম্মদপুর

১৯৫৪. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় প্রসিদ্ধ আছে যে, কারো বাড়িতে পেঁচা বসলে সেখানে কোনো বিপদ হবে। পেঁচাকে অমঙ্গলজনক মনে করা হয়। জানতে চাই ঐ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?

উত্তর

আপনাদের এলাকার ঐ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পেঁচা অন্যান্য পাখির মতোই একটি পাখি। এর সাথে কোনো অনিষ্ট জড়িত নেই এবং এটি কোনো অমঙ্গলের নিদর্শনও নয়। একে অমঙ্গলজনক মনে করা সম্পূর্ণ ভুল। ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগেও একে অমঙ্গলজনক মনে করা হত। হাদীস শরীফে এই ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে খণ্ডন করা হয়েছে এবং এই ধারণাকে শিরকী বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাই তা পরিহার করা কর্তব্য।

শেয়ার লিংক