শরীফ হাসান - নেত্রকোণা

৬৪৬৩. প্রশ্ন

আমাদের সমাজে একটা কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, যখন কোনো পশু খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন এমন পশু জবাই করা ও খাওয়া ঠিক নয়। বিশেষত যখন এমন মনে হয় যে, পশুটি হয়তো বেশিদিন বাঁচবে না।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, শরীয়তে এমন পশু খাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি?

উত্তর

প্রাণীর অসুস্থতা দুই ধরনের হতে পারে

এক. এমন অসুস্থতা, যার দরুন সেটির গোশত খেলে মানব শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়া এবং ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে এমন প্রাণীর গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। এবং কোনো বিক্রেতা রোগের বিষয়টির সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য ঘোষণা ছাড়া এধরনের প্রাণী বা এর গোশত বিক্রি করতে পারবে না। এটি শরীয়তে নিষিদ্ধ আলগারারআলখিদা’-এর শামিল হবে।

দুই. কোনো প্রাণীর এমন সাধারণ অসুস্থতা, যা তার গোশতে তেমন প্রভাব ফেলে না এবং তা মানব শরীরের জন্য তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করে বলেও প্রমাণিত নয়। সে ধরনের অসুস্থ প্রাণীর গোশত খেতে কোনো অসুবিধা নেই। এবং সে প্রাণী বা এর গোশত বিক্রি করতেও বাধা নেই।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৪৬৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৬; আদ্দুররুর মুখতার ৬/৩০৮

শেয়ার লিংক

হামেদ আশরাফ - ডেমরা, ঢাকা

৬৪৬৪. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার বাবা মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি আম্মাকে বলেন, সব ছেলে মেয়েরই তো বিয়ে শাদী করালাম। শুধু রাশেদ আর খালেদ বাকি আছে। আমার এআইবিএল একাউন্টগুলো ওদেরকে দিয়ে দিও, যেন বিয়ের সময় ওরা খরচ করতে পারে। তখন ওয়ারিশরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সকলেই বাবার কথায় সম্মতি জানান। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর মিরাস বণ্টনের প্রসঙ্গ আসলে কয়েকজন সেই ওসিয়তটি কার্যকর করতে অস্বীকৃতি জানান এবং ওই টাকাগুলো মিরাসের অংশ অনুযায়ী বণ্টন করে দিতে বলেন। তো এক্ষেত্রে আমাদের কী করণীয়? দয়া করে সঠিক সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উল্লেখ্য, বাবার মৃত্যুর সময় সকল ওয়ারিশ প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের মধ্যে যারা ওসিয়তটি কার্যকর করতে সম্মত হচ্ছে না তাদের অংশে তা কার্যকর হবে না। বরং এক্ষেত্রে উক্ত টাকা থেকেও মিরাসের অংশ অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য দিয়ে দিতে হবে। যদিও তাদের জন্য উচিত হল, বাবার হুকুম পালন করে এবং বাবার সামনে প্রদানকৃত নিজেদের সম্মতির ওপর বহাল থেকে বর্তমানেও ওসিয়তটি মেনে নিয়ে তা কার্যকর করা। একান্ত যদি তারা এতে সম্মত না-ই হয়, তাহলে ওসিয়তটি কার্যকর করতে বর্তমানে যারা সম্মত, উক্ত টাকা থেকে শুধু তাদের অংশেই ওসিয়তটি কার্যকর হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩১৩৬৫; কিতাবুল আছল ৫/৪২৯; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/১৬৭; তুহফাতুল ফুকাহা ৩/২০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৩৭৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৫১

শেয়ার লিংক

হাসনাইন - ভোলা

৬৪৬৫. প্রশ্ন

জনৈক মহিলাকে তার স্বামী এক তালাকে বায়েন প্রদান করে। মহিলার ইদ্দত চলাকালীন হঠাৎ একদিন উক্ত স্বামী গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, উক্ত তালাকপ্রাপ্তা মহিলা কি তাঁর ঐ স্বামীর মিরাস সম্পত্তির হকদার হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ নারী তার তালাকদাতা স্বামী থেকে মিরাস পাবে না। কেননা মৃত্যুশয্যাগ্রস্ত (مرض الموت) নয়, এমন ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে বায়েন তালাক প্রদান করে, তবে উক্ত তালাকের ইদ্দতের ভেতর তালাকদাতা স্বামী মারা গেলেও সে তার থেকে মিরাস পায় না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৫; আলবাহরুর রায়েক ৪/৪৩রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৬

শেয়ার লিংক

যায়েদ - যাত্রাবাড়ি

৬৪৬৬. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আমি এক দোকানের পাশে ভুলে ছাতা রেখে চলে আসি। কিন্তু আমার মনে পড়ছিল না, কোথায় ছাতাটি রেখেছি। এক সপ্তাহ পর ঐ দোকানে গিয়ে দোকানের কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় যে, দোকানের পাশে ছাতা পড়ে থাকতে দেখে আশেপাশে বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসা করে তার মালিক খোঁজে। অবশেষে না পেয়ে দোকানের মালিককে জানিয়ে সে তা দোকানেই হেফাজত করে রাখে। কিন্তু দুদিন আগে দোকানের আরো কিছু জিনিসের সাথে ছাতাটিও চুরি হয়ে গেছে। তাই সে এখন তা আর দিতে পারছে না।

হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমি কি তার থেকে জরিমানাস্বরূপ উক্ত ছাতার মূল্য বা ঐ ধরনের ছাতা নিতে পারব? দয়া করে বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বাস্তবেই যদি ছাতাটি যথাযথ হেফাজত করে রাখার পর চুরি হয়ে থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে লোকটি থেকে উক্ত ছাতার জরিমানা দাবি করা আপনার জন্য বৈধ হবে না। কেননা এক্ষেত্রে তার কোনো অবহেলা ছিল না। তাই এর জরিমানাও তার ওপর আসবে না।

-কিতাবুল আছল ৯/৫০৯; আলহাবিল কুদসী ২/১৯১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৯০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২০৯; ফাতহুল কাদীর ৫/৩৪৯

শেয়ার লিংক

উসামা - সাভার, ঢাকা

৬৪৬৭. প্রশ্ন

সপ্তাহ খানেক আগে জামা বানানোর জন্য এক টেইলার্সে যাই। সেখানে গিয়ে দোকানিকে একটি কাপড় দিয়ে বললাম, এই কাপড়টি দিয়ে যদি আমার মাপের জামা হয়, তাহলে একটি জামা বানিয়ে দিন। তখন সে আমার থেকে জামার মাপ নিয়ে কাপড়টি খুলে কিছুক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে বলল, হাঁ, তা দিয়ে আপনার মাপের জামা বানানো যাবে। পরে ডেলিভারির দিন আমি জামাটি আনতে গেলে দর্জি মাস্টার আমাকে বলল যে, প্রথমে তো বলেছিলাম, তা দিয়ে আপনার মাপের জামা হবে; কিন্তু কাপড়টি কাটার পর দেখলাম, তা দিয়ে আপনার জামা হবে না। এখন সে আমাকে ঐ কাটা কাপড়টি ফেরত দিতে চাচ্ছে।

জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় আমি কি তার থেকে কাটা কাপড়টি ফেরত নিতে বাধ্য? এর পরিবর্তে তার থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে পারব না? সে তো প্রথমে তা দিয়ে জামা বানাতে পারবে  বলেছে।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দর্জি মাস্টার যেহেতু ঐ কাপড়টি দিয়ে আপনার মাপের জামা বানাতে পারবে বলেছে, এজন্যই আপনি তাকে জামা বানানোর জন্য কাপড়টি দিয়েছেন, তাই এক্ষেত্রে কাপড়টি কাটার পর তা দ্বারা আপনার মাপের জামা না হলে আপনি তার থেকে কাপড়টির জরিমানা নিতে পারবেন। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনি চাইলে তার থেকে কাপড়টি না নিয়ে এর মূল্য দাবি করতে পারবেন।

-আলহাবিল কুদসী ২/৯৬; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ১২/২০০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৭১৪

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - শিবচর

৬৪৬৮. প্রশ্ন

আল্লাহর রহমতে প্রায় এক বছর হল আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং বর্তমানে সচ্ছলতার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করছি। কিন্তু আমার বৃদ্ধ মা-বাবা এবং একমাত্র বোন এখনো অমুসলিম। মা-বাবার কোনো সম্পদ নেই। মামা এবং খালার পরিবার এখন তাদের দেখাশুনা করছেন।

জানার বিষয় হল, অমুসলিম মা-বাবার খরচাদি দেওয়া কি আমার দায়িত্বে পড়ে?

উত্তর

মা-বাবা অমুসলিম হলেও তারা যদি অভাবী হয়, তাহলে তাদের প্রয়োজনীয় খরচাদি (যেমন খাবার, পোশাক ইত্যাদি) দেওয়া সামর্থ্যবান সন্তানের জন্য জরুরি। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দরিদ্র মা-বাবাকে তাদের প্রয়োজনীয় খরচাদি দেওয়া আপনার ওপর আবশ্যক।

-কিতাবুল আছল ১০/৩৪২; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/২২৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৬৩; ফাতহুল কাদীর ৪/২২০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৬৩১

শেয়ার লিংক

খালেদ - ফেনী

৬৪৬৯. প্রশ্ন

আমার বেশ কয়েকটি মাছের খামার আছে। সেখান থেকে মাছ উঠিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বড় বড় ড্রামের ভেতর পানিতে জিইয়ে রাখি। কিন্তু জিইয়ে রাখতে গিয়ে কখনো কখনো কিছু মাছ সেখানে মারা যায়।

জানার বিষয় হল, ড্রামের ভেতর মরে যাওয়া উক্ত মাছগুলো খাওয়া যাবে কি? নাকি তা ফেলে দিতে হবে? আশা করি জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু উক্ত মাছগুলো ড্রামের ভেতর সংকীর্ণ জায়গায় অল্প পানিতে আবদ্ধ করে রাখার কারণে মারা গেছে, তাই তা খাওয়া জায়েয হবে। এতে অসুবিধা নেই। তবে যে মাছ পুকুর বা জলাশয়ে কোনো কারণ ছাড়া এমনিতেই মারা যায়- তা খাওয়া জায়েয নয়।

-কিতাবুল আছল ৫/৩৭১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৭; আলমুহীতুর বুরহানী ৮/৪৩৫; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ৮/২৮৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪২

শেয়ার লিংক