অনেক সময় বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথেই বমি করে দেয়। বমিকৃত ঐ দুধে কোনো দুর্গন্ধ পাওয়া যায় না। জানতে চাচ্ছি, ঐ বমি যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে কি কাপড় নাপাক হয়ে যাবে?
অনেক সময় বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথেই বমি করে দেয়। বমিকৃত ঐ দুধে কোনো দুর্গন্ধ পাওয়া যায় না। জানতে চাচ্ছি, ঐ বমি যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে কি কাপড় নাপাক হয়ে যাবে?
বাচ্চার গলার ভেতর দুধ যাওয়ার পর যদি সে সাথে সাথেও বমি করে দেয় আর তা মুখ ভরে হয়, তবে তা নাপাক গণ্য হবে। তা যদি হাতের তালুর গভীরতা পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণ শরীরে বা কাপড়ে লাগে, তাহলে তা ধুয়ে পাক করা জরুরি। নতুবা নামায সহীহ হবে না। অবশ্য যদি এ পরিমাণের চেয়ে কম লাগে, তাহলে নামায হয়ে যাবে।
আর যদি বমি মুখ ভরে না হয় কিংবা বাচ্চা যদি দুধ না গিলে মুখ থেকেই তা বের করে দেয়, তাহলে তা নাপাক গণ্য হবে না। অতএব তা না ধুয়ে নামায পড়লেও তা আদায় হয়ে যাবে।
শেয়ার লিংক* >الفتاوى التاتارخانية< ২/৩৫৭ : النسفية: سئل عن صبي رضيع ارتضع من أمه، ثم قاء، فأصاب ثياب الأم، قال: إن كان ملء فيه فهو نجس، فإذا زاد على قدر الدرهم منع جواز الصلاة، وإن كان أقل من ملء فيه فليس بنجس.
–আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৭২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৫; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/২৭১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১২৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৪৯; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৮
ওযু না থাকা অবস্থায় হ্যান্ডগ্লাভস পরে কুরআন মাজীদ ধরা যাবে?
না, ওযু না থাকা অবস্থায় হ্যান্ডগ্লাভস পরে মুসহাফ (কুরআন মাজীদের কপি) ধরা যাবে না। কেননা ওযুবিহীন অবস্থায় শরীরে পরিহিত কোনো কাপড় দ্বারা মুসহাফ স্পর্শ করা জায়েয নয়। গ্লাভস দ্বারা মুসহাফ ধরতে চাইলে সেটি হাত থেকে খুলে তা দ্বারা ধরতে পারবে।
শেয়ার লিংক* >تبيين الحقائق< ১/১৬৬ : ولا يجوز لهم مس المصحف بالثياب التي يلبسونها؛ لأنها بمنزلة البدن.
–আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৪৭; আলহাবিল কুদসী ১/১১১; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৯; আদ্দুররুল মুনতাকা ১/৪২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৯৯
শীতের মৌসুমে কারো যদি ফজরের আগ দিয়ে গোসল ফরয হয় এবং অসুস্থতার কারণে ডাক্তার ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে নিষেধ করে। এদিকে নামাযের সময়ও এত অল্প বাকি যে, গরম পানি করে গোসল করতে গেলে নামাযের সময় শেষ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার করণীয় কী? তায়াম্মুম করে কি নামায পড়ে নেবে?
না, এক্ষেত্রে গরম পানির ব্যবস্থা করা গেলে নামায কাযা হওয়ার আশঙ্কায়ও তায়াম্মুম করা বৈধ হবে না; বরং গরম পানি দ্বারা গোসল করেই নামায পড়তে হবে। কেননা সে পানি (গরম করে হলেও) ব্যবহারে সক্ষম। আর পানি ব্যবহারে সক্ষম ব্যক্তির জন্য তায়াম্মুম বৈধ নয়।
উল্লেখ্য, ফরয নামায যেন কিছুতেই কাযা না হয়– এ ব্যাপারে সুস্থতা-অসুস্থতা সর্বক্ষেত্রেই সতর্কতা জরুরি। অসুস্থতাবশত অবহেলার আদৌ সুযোগ নেই; বরং অসুস্থতার সময়ও নিজ অবহেলায় নামায কাযা করে ফেলা গুনাহ।
শেয়ার লিংক* >بدائع الصنائع< ১/১৭১ : ولو أجنب في ليلة باردة يخاف على نفسه الهلاك لو اغتسل، ولم يقدر على تسخين الماء ولا على أجرة الحمام في المصر، أجزأه التيمم في قول أبي حنيفة. وقال أبو يوسف ومحمد: إن كان في المصر لا يجزئه. ... حتى لو قدر على الاغتسال بوجه من الوجوه لا يباح له التيمم.
–কিতাবুল আছল ১/১০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬০; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৩১; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৪৬
ঈদের নামাযে আমার মসজিদে যেতে দেরি হয়ে যায়। ফলে এক রাকাত নামায ছুটে যায়। ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পর আমি ঐ রাকাতটি আদায়ের জন্য দাঁড়াই। যেহেতু তা প্রথম রাকাত ছিল, তাই আমি কেরাত শুরু করার পূর্বেই অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলি, এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায শেষ করি।
জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতিতে নামায আদায় করা কি নিয়মসম্মত হয়েছে?
না, ছুটে যাওয়া রাকাতটি আদায়ের ক্ষেত্রে ঐ রাকাতের শুরুতেই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলা নিয়মসম্মত হয়নি; বরং এক্ষেত্রে নিয়ম ছিল, কেরাত শেষ করে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তাকবীর বলা। কেননা ঈদের নামাযে প্রথম রাকাত ছুটে গেলে তা আদায়ের নিয়ম হল, ইমাম সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে এই রাকাতেও দ্বিতীয় রাকাতের মতোই প্রথমে কেরাত পড়বে, এরপর অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে রুকু করবে।
হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন–
يُكَبِّرُ مَعَهُ فِي هَذِهِ مَا أَدْرَكَ مِنْهَا، وَيَقْضِي الَّتِي فَاتَتْهُ وَيُكَبِّرُ فِيهَا مِثْلَ تَكْبِيرِ الإِمَامِ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ.
অর্থাৎ ইমামের সঙ্গে যে রাকাতটি পেয়েছে তাতে ইমামের সঙ্গেই তাকবীর বলবে। এরপর ছুটে যাওয়া রাকাত আদায় করবে এবং তাতে ইমামের দ্বিতীয় রাকাতের মতো (অর্থাৎ রুকুর আগে) তাকবীর বলবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৮৬৩)
অবশ্য এক্ষেত্রে ঐ রাকাতের শুরুতে তাকবীর বলাটা নিয়মসম্মত না হলেও এভাবে পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে। তাই আপনার উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে।
শেয়ার লিংক* كتاب >الأصل< للشيباني ১/৩২২ : قلت: أرأيت رجلا أدرك مع الإمام ركعة من العيد، فلما سلم الإمام قام يقضي، كيف يكبر؟ قال: يقرأ بفاتحة القرآن وبسورة، ثم يكبر أربع تكبيرات يركع بآخرهن.
–খিযানাতুল আকমাল ১/৭২, ৯২; আলহাবিল কুদসী ১/২৪৪; ফাতহুল কাদীর ২/৪৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৫৮২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৪
মাঝেমধ্যে এমন হয় যে, ওযু করে এসে দেখি, মসজিদে জামাত শুরু হয়ে গেছে। রাকাত ছুটে যাওয়ার ভয়ে পাঞ্জাবির হাতা কনুইয়ের নিচে না নামিয়েই জামাতে শরিক হয়ে যাই।
জানার বিষয় হল, হাতা গুটিয়ে রাখার কারণে কি নামাযে কোনো অসুবিধা হবে? এক্ষেত্রে হাতা ওভাবে রেখে দেওয়াই উত্তম, নাকি নামিয়ে নেওয়া উত্তম?
জামার হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। তাই হাতা গোটানো থাকলে নামাযের আগেই তা নামিয়ে নেবে। কেউ যদি হাতা গোটানো অবস্থায় নামায শুরু করে দেয়, তাহলে নামাযের ভেতরই অল্প অল্প করে হাতা নামিয়ে নেবে।
শেয়ার লিংক* >فتاوى قاضيخان< ১/১৩৫ : ولو صلى رافعا كميه إلى المرفقين كره.
–সহীহ বুখারী, হাদীস ৮১০; উমদাতুল কারী ৬/৯১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১১; আলমুলতাকাত, পৃ. ৫২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪০;
রমযানে আমি ‘কিয়ামুল লাইলে’ কুরআন খতম করি। একবার ত্রিশ নম্বর পারা তিলাওয়াতের সময় ভুলক্রমে দুইটি সূরা ছুটে যায় এবং সেই নামাযেই দ্বিতীয় রাকাতে তা স্মরণ হয়। তখন আমি দ্বিতীয় রাকাতে পড়তে থাকা সূরাটি শেষ করে ছুটে যাওয়া দুইটি সূরা পড়ে নিই।
জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে তো আমার আগের সূরা পরে আর পরের সূরা আগে পড়া হয়েছে। এতে কি আমার নামাযে কোনো সমস্যা হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত কারণে আপনার নামাযে কোনো সমস্যা হয়নি। নফল নামাযে সূরা আগ-পর হয়ে গেলে, অর্থাৎ প্রথম রাকাতে পরের সূরা আর পরের রাকাতে পূর্বের সূরা পড়া, অথবা একই রাকাতে আগ-পর হয়ে যাওয়া মাকরূহ নয়। সুতরাং আপনি যেহেতু ‘কিয়ামুল লাইল’ তথা নফল নামাযেই এমনটি করেছেন, তাও আবার ইচ্ছাকৃত নয়; বরং ভুলে হয়েছে, তাই এটি দূষণীয় বলে ধর্তব্য হবে না। তবে নফল নামাযেও ইচ্ছাকৃত এমনটি না করাই ভালো।
শেয়ার লিংক* >المحيط البرهاني< ২/৪৭ : وإذا قرأ في ركعة سورة وقرأ في الركعة الأخرى سورة فوق تلك السورة، أو قرأ في ركعة سورة ثم قرأ في تلك الركعة سورة أخرى فوق تلك السورة، يكره، ... وهذا كله في الفرائض، فأما في السنن فلا يكره، هكذا ذكر صدر الإسلام أبو اليسر رحمه الله في زلة القاري.
–খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১৯৩
গতকাল আমি জুমার পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। তৃতীয় রাকাতে থাকা অবস্থায় খুতবা শুরু হয়ে যায়। ফলে নামায চার রাকাত পূর্ণ করব, নাকি এ অবস্থায়ই নামায ছেড়ে দিব– তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। শেষে সংক্ষেপে চার রাকাতই পূর্ণ করি।
হুজুুরের কাছে জানতে চাই, খুতবা চলা অবস্থায় আমার জন্য কি নামায পূর্ণ করা ঠিক হয়েছে?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তখন নামায ছেড়ে না দিয়ে চার রাকাত পূর্ণ করে আপনি ঠিকই করেছেন। কেননা জুমার পূর্বের সুন্নতে তৃতীয় রাকাত শুরু করার পর খুতবা শুরু হয়ে গেলে নিয়ম হল, সংক্ষিপ্ত কেরাতে চার রাকাত পূর্ণ করে নেওয়া। অবশ্য তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর আগে খুতবা শুরু হয়ে গেলে দুই রাকাতেই নামায শেষ করে দেবে। এক্ষেত্রে ‘কাবলাল জুমার’ এ চার রাকাত জুমার পর আদায় করে নেবে।
শেয়ার লিংক* >فتاوى قاضيخان< ১/৭৫ : فإن افتتح الأربع قبل الجمعة، ثم خرج الإمام، ذكر في النوادر أنه إن كان صلى ركعة يضيف إليها أخرى، ويخفف القراءة، يقرأ بفاتحة الكتاب وشيء من السورة، وبه أخذ المشايخ. ... وإذا سلم على رأس الركعتين حكي عن الشيخ الإمام أبي محمد بن الفضل رحمه الله تعالى أنه قال يقضي أربعا.
>شرح مختصر الطحاوي< للإسبيجابي ১/৪৩৩ : وكذلك إن صلى ثلاثا يضيف إليها أخرى.
–শরহুল জামিইস সাগীর, কাযীখান ১/১১৫; যাদুল ফাকীর, পৃ. ১৬৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৪৩; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৪
আমার দাদির বয়স প্রায় ৯৫ বছর। শারীরিকভাবে তিনি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে নামাযে দাঁড়ালে ঠিকমতো সূরা-কেরাত পড়তে পারেন না। নামাযের আমলগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে পারেন না। এজন্য নামাযের সময় হলে আমার বোন তাকে ওযু করিয়ে নামাযে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং নামাযের আমলগুলো একের পর এক স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি এখন এভাবে নামায পড়েন।
জানার বিষয় হল, এভাবে পড়লে কি তার নামায আদায় হবে?
হাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে আপনার দাদির নামায আদায় সহীহ হচ্ছে। কেননা অসুস্থতা বা বয়সের কারণে যার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে গেছে, ফলে নামাযের ফরয ওয়াজিবগুলো ধারাবাহিকভাবে স্মরণ করে নিজে নিজে নামায আদায় করতে পারে না, তাকে পাশ থেকে কেউ যদি বলে বলে দেয় আর সে অনুযায়ী তার সাধ্যমতো যতটুকু সম্ভব নামায পড়ে নেয়, তবেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে। পরবর্তীতে এর ফিদইয়া আদায় করতে হবে না।
বিশিষ্ট তাবেয়ী রুকাইন ইবনে রাবী রাহ. বলেন–
دَخَلْتُ عَلَى أَسْمَاءَ وَهِيَ تُصَلِّي وَهِيَ عَجُوزٌ، وَامْرَأَةٌ تَقُولُ لَهَا: ارْكَعِي وَاسْجُدِي.
একবার আমি আসমা রা.-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছেন। দেখলাম, তিনি নামায পড়ছেন আর একজন মহিলা তাকে বলে দিচ্ছেন, এখন রুকু করুন। এখন সিজদা করুন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৪৯৭)
শেয়ার লিংক* >نفع المفتي والسائل< ص ১২৯ : في >القنية<: (شم) : أي شرف الأئمة المكي: مريض يشتبه عليه أعداد الركعات والسجدات لا يلزمه الأداء، ولو أداها بتلقين غيره، ينبغي أن يجزيه، ... قلت: وبهذا يخرج حكم جواز صلاة الشيخ الفاني الذي وصل إلى أرذل العمر ويشتبه عليه أعداد الركعات في الصلاة، فينبغي أن تجوز بتلقين غيره.
–আলবাহরুর রায়েক ২/১১৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৩৪; আদ্দুররুল মুনতাকা ১/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০০
এই রমযানের শেষের দিকে আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তবে আল্লাহর রহমতে সবগুলো রোযাই রাখতে পেরেছি। শুধু একদিন বিকালের দিকে জ্বর একটু বেড়ে গেলে ডাক্তারের নির্দেশে সাপোজিটরি (ংঁঢ়ঢ়ড়ংরঃধৎু) নিতে হয়। প্রশ্ন হল, এ কারণে কি সেদিনের রোযা ভেঙে গিয়েছিল?
আপনার ঐ দিনের রোযা আদায় হয়নি। কেননা মলদ্বারের ভেতর কোনো ওষুধ ব্যবহার করলে রোযা ভেঙে যায়। তাই সেদিনের রোযাটি আপনাকে কাযা করে নিতে হবে। তবে এ কারণে কোনো কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না।
শেয়ার লিংক* >وثائق النوازل< ১/৫২৮ (قرار مجمع الفقه الإسلامي بالهند): يفسد الصوم إذا وصل الدواء إلى موضع الحقنة (الجزء الأخير لأنبوبة إخراج فضلات الجسم حيث يبتدئ المعى الكبير)، سواء أكان الدواء سائلا أو غير سائل.
–খিযানাতুল আকমাল ১/২৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৮
রমযানে আমি একদিন সাহরীর সময় ঘুম থেকে উঠে ডাইনিং রুমের ঘড়ি দেখে সাহরী করা শুরু করি। এবং শেষ সময় পর্যন্ত সাহরী করি। খাবার শেষে মোবাইলে সময় দেখে বুঝতে পারি যে, সাহরীর সময় দশ মিনিট আগেই শেষ হয়ে গেছে। আর আমি ডাইনিং রুমের যে ঘড়িটি দেখে সাহরী করেছি, সেটি দশ মিনিট স্লো ছিল। অর্থাৎ আমার সাহরী গ্রহণ ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর হয়েছে। ফলে রোযা ভেঙে গেছে জেনে দিনের বেলায় আড়ালে পানাহারও করেছি।
হুজুরের কাছে জানতে চাই, এক্ষেত্রে সাহরীর সময় শেষ হওয়ার পর ওয়াক্ত আছে মনে করে খাওয়ার কারণে কি আমার ওপর কাফ্ফারা আবশ্যক হবে? এক্ষেত্রে রোযা ভেঙে গেছে মনে করে দিনের বেলায় পানাহার করাও কি ঠিক হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়নি; বরং ঐ দিনের রোযাটি শুধু কাযা করে নিলেই হবে। কেননা কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় সাহরীর সময় শেষ হওয়ার পর জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভেঙে ফেললে। কোনো বিভ্রান্তির কারণে সাহরীর সময় আছে মনে করে পানাহার করলে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না। তবে এক্ষেত্রে সুবহে সাদিকের পর পানাহারের কারণে আপনার রোযাটি সহীহ না হলেও এরপর দিনের বেলা পানাহার করা ঠিক হয়নি। আপনার জন্য রোযাদারের ন্যায় পূর্ণ দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা
আবশ্যক ছিল।
মাকহুল রাহ. বলেন–
سُئِلَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ عَنْ رَجُلٍ تَسَحَّرَ، وَهُوَ يَرَى أَنَّ عَلَيْهِ لَيْلًا، وَقَدْ طَلَعَ الْفَجْرُ، قَالَ: إِنْ كَانَ شَهْرُ رَمَضَانَ صَامَهُ، وَقَضَى يَوْمًا مَكَانَهُ.
কোনো ব্যক্তি রাত বাকি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করেছে– তার ব্যাপারে আবু সাঈদ খুদরী রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যদি রমযান মাসে হয়ে থাকে, তাহলে বাকি দিন রোযা অবস্থায় থাকবে। আর এর পরিবর্তে একদিন রোযা কাযা করে নেবে। (সুনানে বাইহাকী ৪/২১৬)
সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. বলেন–
إذَا أَكَلَ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَضَى عَلَى صِيَامِهِ، وَقَضَى يَوْمًا مَكَانَهُ.
যদি কেউ সাহরীর সময় আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করে, তাহলে সে ঐ দিন রোযা অবস্থায় কাটাবে এবং এর পরিবর্তে এক দিনের রোযা কাযা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯১৩৪)
শেয়ার লিংক* كتاب >الأصل< ২/১৪৫ : قلت: أرأيت رجلا تسحر وهو لا يعلم بطلوع الفجر وقد طلع الفجر، ثم علم بعد ذلك أنه كان أكل والفجر طالع، وذلك في رمضان؟
قال: يتم صوم يومه ذلك، وعليه قضاؤه، ولا كفارة عليه.
قلت: فلم ألقيت عنه الكفارة؟ قال: لأنه أكل وهو لا يعلم بطلوع الفجر.
–শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৪৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৯; মাজমাউল আনহুর ১/৩৫৭
গত রমযানে আমার দাদু অসুস্থ ও শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি রোযা রেখেছেন। একদিন রোযা অবস্থায় তিনি ভুলে পানি পান করতে জগ থেকে গ্লাসে পানি নিচ্ছেন। ইত্যবসরে আমি তা দেখে ফেলি এবং সাথে সাথে তাকে রোযার কথা মনে করিয়ে দিই। তিনি আর পানি পান করেননি।
পরে আমার আম্মু তা জানতে পেরে আমার ওপর ভীষণ রাগ করেন এবং বলেন, তোমার দাদু অসুস্থ মানুষ। তাকে রোযার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি। জানার বিষয় হল, আম্মুর কথাটি কি ঠিক?
হাঁ, আপনার দাদুকে ঐ সময় রোযার কথা স্মরণ না করিয়ে দেওয়াই উত্তম ছিল। কেননা, অসুস্থ ও শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিকে যদি কেউ রোযা অবস্থায় ভুলে পানাহার করতে দেখে, তবে তাকে রোযার কথা স্মরণ না করানোই উত্তম।
কিন্তু রোযাদার শারীরিকভাবে সুস্থ ও শক্তি-সামর্থ্যবান হলে এ অবস্থায় তাকে রোযার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া কর্তব্য। এক্ষেত্রে তাকে পানাহার করতে দেখার পরও রোযার কথা স্মরণ না করিয়ে দেওয়া মাকরূহ। অবশ্য সর্বাবস্থায়ই ঐ ব্যক্তির রোযা আদায় হয়ে যাবে। ভুলে পানাহার করার কারণে তাকে এর কাযা করতে হবে না।
শেয়ার লিংক* >البحر الرائق< ২/২৭১ : والأولى أن لا يذكره إن كان شيخا؛ لأن ما يفعله الصائم ليس بمعصية، فالسكوت عنه ليس بمعصية، ولأن الشيخوخة مظنة المرحمة، وإن كان شابا يقوى على الصوم، يكره أن لا يخبره، والظاهر أنها تحريمية.
–সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৩; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ১৩১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৪০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৬৭; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ৩৬০
আমার চাচা কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। চাচার ওপর অনেক ঋণ রয়ে গেছে। তিনি সম্পদ হিসেবে যা কিছু রেখে গেছেন, তা থেকে সামান্য কিছুই পরিশোধ করা যাবে। বাকি অনেক টাকা ঋণ অপরিশোধিত থেকে যাবে। এদিকে চাচাতো ভাইদের আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো না।
আমার প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় আমি কি আমার যাকাতের টাকা দিয়ে চাচার ঋণ পরিশোধ করতে পারব?
মৃতের পক্ষ থেকে যাকাতের টাকা দিয়ে পাওনাদারকে ঋণ পরিশোধ করা যায় না। তবে আপনার মৃত চাচার ঋণ পরিশোধের জন্য আপনি তার দরিদ্র ওয়ারিশকে নিজ যাকাতের অর্থ দিতে পারেন। সে নিজের জন্য যাকাত গ্রহণ করার দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এরপর সে ঐ টাকা দিয়ে মৃতের ঋণ পরিশোধ করে দিতে পারবে।
শেয়ার লিংক* >المبسوط< للسرخسي ২/২০২ : ولا يجزئ في الزكاة عتق رقبة ولا الحج، ولا قضاء دين ميت ولا تكفينه. ... والأصل فيه أن الواجب فيه فعل الإيتاء في جزء من المال، ولا يحصل الإيتاء إلا بالتمليك، فكل قربة خلت عن التمليك لا تجزئ عن الزكاة. ... وكذلك قضاء دين الميت؛ فإنه لا يملك الميت شيئا، وما يأخذه صاحب الدين يأخذه عوضا عن ملكه.
–মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৭১৭০; শরহু মুখতাসারিল কারখী, কুদূরী ২/১৮৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৪
এবছর আমি আমার এক আত্মীয়কে যাকাত দেওয়ার জন্য কিছু সামানা কিনে রেখেছিলাম। ইচ্ছা ছিল, সে আমাদের বাড়িতে এলে এগুলো তাকে দিয়ে দেব। এরই মাঝে আমাদের বাড়িতে চুরি হয়। ঘরের বিভিন্ন সামানার সাথে তখন যাকাতের সেই সামানাগুলোও চুরি হয়ে যায়।
জানার বিষয় হল, আমি এসব সামানা যেহেতু যাকাতের উদ্দেশ্যেই কিনেছি, এতে কি আমার যিম্মা থেকে এ যাকাত আদায় হয়ে গেছে, নাকি এক্ষেত্রে আমাকে নতুন করে এই যাকাত আদায় করতে হবে?
ঐ সামানাগুলো চুরি হওয়ার দ্বারা আপনার যাকাত আদায় বা মাফ হয়ে যায়নি। কেননা যাকাতের নিয়তে কোনো বস্তু বা টাকা নিজের কাছে পৃথক করে রাখলেও তা নিজের মালিকানাতেই থেকে যায়। তাই কোনো কারণে তা খোয়া গেলে নিজের সম্পদ খোয়া গেছে বলেই ধর্তব্য হবে। আর যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির হাতে তা পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক। এর আগে যাকাত আদায় হয় না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে এ যাকাত আদায় করতে হবে।
শেয়ার লিংক* >فتاوى قاضيخان< ১/২৬৩ : رجل وجب عليه زكاة المائتين، فأفرز خمسة من ماله، ثم ضاعت منه تلك الخمسة، لا تسقط عنه الزكاة، ولو مات صاحب المال بعد أن أفرز الخمسة، كانت الخمسة ميراثا عنه.
–খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৮; আযযিয়াউল মা‘নাবী ৩/৪৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৯
আমি একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করি। আমার এক সাথি আর্থিকভাবে অসচ্ছল; যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। কিছুদিন আগে সে একটি মাকতাবা থেকে কিছু কিতাব বাকিতে কিনে আনে। মাকতাবার মালিক বারবার তাগাদা দিলেও সে আর্থিক সংকটের কারণে কিতাবগুলোর মূল্য পরিশোধ করতে পারছিল না। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে আমি আব্বুকে তার কথা জানাই। আব্বু আমার কাছে তার জন্য এ বাবদ হাদিয়া হিসাবে কিছু টাকা দেন। পরে তাকে জানাই যে, আব্বু আপনার জন্য কিতাবের মূল্য পরিশোধ বাবদ কিছু টাকা হাদিয়া পাঠিয়েছেন। আমি টাকাগুলো পরিশোধ করে দিচ্ছি। সে এতে সম্মতি জানায়। মাকতাবার মালিক আমার ঘনিষ্ঠ মানুষ বিধায় আমি টাকাটি সরাসরি তার কাছে দিয়ে দিই। পরবর্তীতে জানতে পারি যে, আব্বু তখন টাকাগুলো যাকাতের নিয়তে দিয়েছিলেন।
জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আব্বুর যাকাত কি আদায় হয়েছে? কারণ টাকাগুলো সরাসরি তার হাতে দেওয়া হয়নি। আবার তাকে যাকাত না বলে হাদিয়া বলা হয়েছে। অতএব যাকাতের টাকা এভাবে দেওয়াটা কি ঠিক হয়েছে এবং এর দ্বারা যাকাত আদায় হয়েছে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিতার যাকাত আদায় হয়ে গেছে। কেননা যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাতের টাকা সরাসরি উপযুক্ত ব্যক্তির হাতেই দেওয়া জরুরি নয়; বরং তার সম্মতিক্রমে তার কোনো দেনা পরিশোধ করে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, হাদিয়ার কথা বলে যাকাতের টাকা দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। স্পষ্টভাবে যাকাতের কথা বলে দেওয়া জরুরি নয়।
শেয়ার লিংক* كتاب >الأصل< للشيباني ২/১০৪ : قلت: أرأيت رجلا قضى دين رجل حي مغرم من زكاته بأمره أيجزيه ذلك من زكاة ماله؟ قال: نعم.
–মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৫৪, ২/২৬৮
ইহরাম অবস্থায় মাস্ক ব্যবহারের হুকুম কী? আমি একবার ইহরাম অবস্থায় কোনো ওজর ছাড়াই তিন-চার ঘণ্টা মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলাম। তখন আমার এক সাথি বললেন, ইহরাম অবস্থায় মাস্ক পরা যায় না। তখন আমি খুলে ফেলি। তাই আমি এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম জানতে চাচ্ছি। এখন আমার ওপর কোনো কাফ্ফারা আসবে কি?
প্রশ্নোক্ত কারণে আপনাকে জরিমানাস্বরূপ একটি সদকাতুল ফিতর পরিমাণ বা তার মূল্য গরিব কাউকে দান করতে হবে। কেননা ইহরাম অবস্থায় চেহারা ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ। কেউ যদি ইহরাম অবস্থায় চেহারার এক চতুর্থাংশ বা তার বেশি বারো ঘণ্টা বা এর বেশি সময় ঢেকে রাখে, তাহলে দম ওয়াজিব হয়। আর বারো ঘণ্টার কম সময় (এক ঘণ্টার বেশি) ঢেকে রাখলে একটি সদকাতুল ফিতর পরিমাণ দান করা ওয়াজিব হয়। আর এ সদকা যেকোনো জায়গায় আদায় করা যাবে। তবে হেরেম এলাকার দরিদ্রদের দেওয়া উত্তম।
শেয়ার লিংক* >المبسوط< للسرخسي ৪/১২৮ : وإن غطى المحرم ربع رأسه أو وجهه يوما فعليه دم، وإن كان دون ذلك فعليه صدقة.
–আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৫৪, ২৫১, ২৪০; রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৭
এবার হজ্বের সময় তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করি। কিন্তু তাওয়াফের প্রথম চক্করে রমল করতে ভুলে যাই। স্মরণ হওয়ার পর শুধু দ্বিতীয় ও তৃতীয় চক্করে রমল করি। জানার বিষয় হল, প্রথম চক্করে রমল না করার কারণে কি আমার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে?
আর ভুলক্রমে প্রথম চক্করে রমল ছেড়ে দিলে এরপর অবশিষ্ট দুই চক্করেই শুধু রমল করবে, নাকি চতুর্থ চক্করে রমল করে রমলের তিন চক্কর পূর্ণ করবে?
না, প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে আপনার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। তবে উক্ত তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নত। শরীয়তসম্মত ওযর ছাড়া তা ছাড়া যাবে না। অবশ্য ভুলে না করে থাকলে তাতে অসুবিধা নেই। আর প্রথম চক্করে রমল ছেড়ে দিলেও শুধু পরবর্তী দুই চক্করেই রমল করবে। তৃতীয় চক্কর পূর্ণ করার জন্য চতুর্থ চক্করে রমল করবে না। রমলের কোনো কাযা নেই।
শেয়ার লিংক* >المبسوط< للسرخسي ৪/৪৬ : وترك الرمل في طواف الحج والعمرة، والسعي في بطن الوادي بين الصفا والمروة، لا يوجب عليه شيئا، غير أنه مسيء إذا كان لغير عذر.
وفيه أيضا ৪/৪৯ : وإن مشى في الثلاثة الأول أو في بعضها ثم ذكر ذلك، لم يرمل فيما بقي؛ لأن الرمل في الأشواط الثلاثة سنة، فإذا فاتت من موضعها لا تقضى.
–খিযানাতুল আকমাল ১/৩৩৫, ৩৩৬; আলবাহরুল আমীক ২/১১৬০, ১১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬; মানাসিকে মোল্লা আলী আলকারী ১৩৩, ১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৮
আমাদের এলাকার মসজিদের দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ চলছে। এ নির্মাণ কাজের জন্য খরচের কথা বলে এক দ্বীনদার লোক দুই লক্ষ টাকা দান করেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা মসজিদের নির্মাণ কাজ থেকেও জানাযা ও ঈদের নামাযের জন্য মসজিদের সামনের জায়গায় মাঠ প্রস্তুত করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, এবং টাকাগুলো ঐ খাতেই খরচ করতে চাচ্ছি।
এখন জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য এ দুই লক্ষ টাকা মসজিদের নির্মাণ কাজে ব্যয় না করে উক্ত খাতে খরচ করা জায়েয হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দাতা যেহেতু মসজিদের নির্মাণ কাজে খরচের জন্য টাকাগুলো দান করেছেন, তাই এই টাকা মসজিদের নির্মাণ খাতেই ব্যয় করা জরুরি। জানাযা ও ঈদের নামাযের মাঠ প্রস্তুতের কাজে তা ব্যয় করা যাবে না। মসজিদ সংশ্লিষ্ট জানাযা ও ঈদের নামাযের মাঠের কাজ সাধারণ তহবিল থেকে করা যাবে। আর ঐ খাতগুলোর কথা উল্লেখ করে পৃথকভাবে অনুদান সংগ্রহ করা গেলে তা হবে সবচেয়ে উত্তম কাজ।
শেয়ার লিংক* >المحيط البرهاني< ৯/১৩৩ : وفى فتاوى أبى الليث: سئل الفقيه أبو جعفر رحمه الله تعالى عمن قال: جعلت حجرتي لدهن سراج المسجد، ولم يزد على هذا، صارت الحجرة وقفا على المسجد بما قال، ليس له الرجوع، ولا له أن يجعله لغيره، وهذا إذا سلمه إلى المتولي عند محمد، وليس للمتولى أن يصرف غلتها إلى غير الدهن؛ لأن الواقف وقفها على دهن المسجد.
–আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৫৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২২; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ৯/৬০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬১
আমার এক প্রতিবেশী ইতালী যাওয়ার সময় আমার থেকে বারো লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে। তখন সে আমার কাছে আট ভরি স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখেছে। এ স্বর্ণগুলো আমি আমার বাসায় রাখা নিরাপদ মনে করিনি। তাই আমি তা একটি ব্যাংকের লকারে রেখেছি।
জানার বিষয় হল, লকারে রাখার কারণে ব্যাংকে প্রদেয় চার্জ আমি কি পরবর্তীতে ঋণগ্রহীতা আমার ঐ প্রতিবেশী থেকে নিতে পারব?
বন্ধকি অলংকারগুলো হেফাজতের উদ্দেশ্যে লকারে রাখার চার্জ আপনাকেই বহন করতে হবে। বন্ধকদাতা থেকে এর খরচ দাবি করা আপনার জন্য ঠিক হবে না। কারণ বন্ধকি বস্তুর সংরক্ষণ চার্জ বন্ধকগ্রহীতার ওপরই বর্তায়। বন্ধকদাতার ওপর নয়।
শেয়ার লিংক* >تحفة الفقهاء< ৩/৪৩ : وأما نفقة الرهن فعلى وجهين : فكل نفقة ومؤونة كانت لمصلحة الرهن وتبقيته، فعلى الراهن، وكل ما كان لحفظه أو لرده إلى يد المرتهن أو لرد جزء منه فات بسبب حادث، فعلى المرتهن.
–আলমুহীতুর রাযাবী ৮/৩৩৫; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৫/৭৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৫৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৮৭; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৩/১৬৬
আমি একটি ভবনে ফুলটাইম দারোয়ান হিসেবে নিয়োজিত আছি। এখানে একজন নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। তার সন্তানকে প্রতিদিন স্কুলে আনা নেওয়া করার জন্য তার একজন লোকের প্রয়োজন। সে আমাকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব করেছে এবং বলেছে, এর বিনিময়ে মাসে আমাকে এক হাজার টাকা করে দেবে।
হুজুরের কাছে জানতে চাই, বাড়ির মালিককে না জানিয়ে আমার জন্য এ প্রস্তাব গ্রহণ করা কি বৈধ হবে?
আপনি যদি ঐ বাড়িতে পূর্ণ সময়ের জন্য দারোয়ানের দায়িত্বে থাকেন, তাহলে বাড়ি মালিকের অনুমতি ছাড়া উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা আপনার জন্য বৈধ হবে না। এক্ষেত্রে পাহারা বাদ দিয়ে অন্য কোনো কাজ বিনিময় নিয়ে হোক বা বিনিময় ছাড়া কোনোভাবেই নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া করা বৈধ নয়।
শেয়ার লিংক* >المحيط البرهاني< ১২/৬৫ : قال الفقيه أبو بكر رحمه الله: عندي أن الحارس أجير خاص، ألا ترى أنه لو أراد أن يشغل نفسه في صنف آخر، لم يكن له ذلك، والفتوى على قول الفقيه أبي بكر والفقيه أبي جعفر رحمه الله.
–আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৪০৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৪৩; মি‘রাজুদ দিরায়া ৭/৩১০; দুরারুল হুক্কাম ২/২৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭০
হুজুর, আমি আমার এক আত্মীয় থেকে মুদারাবা চুক্তিকে এক লক্ষ টাকা নিয়েছি। চুক্তির সময় নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসার শর্ত করা হয়নি। বর্তমানে শাকসবজির দাম অনেক বেশি। আমারও চাষের অভিজ্ঞতা আছে। তাই আমি এই টাকা দিয়ে জমি ভাড়া নিয়ে সবজি চাষ করতে চাচ্ছি।
প্রশ্ন হল, মুদারাবা চুক্তিতে টাকা নিয়ে ব্যবসা না করে জমি ভাড়া নিয়ে চাষাবাদ করা কি বৈধ হবে?
হাঁ, এক্ষেত্রে জমি ভাড়া নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে চাষাবাদ করাও আপনার জন্য বৈধ হবে। কেননা, জমি ভাড়া নিয়ে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হওয়াও ব্যবসার একটি প্রকার। পুঁজিদাতার পক্ষ থেকে যদি এ ধরনের কারবার করতে কোনো বাধা না থাকে, তাহলে মুদারিবের জন্য জমি ভাড়া নিয়ে তাতে চাষাবাদ করে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে তা ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শেয়ার লিংক* كتاب >الأصل< للشيباني ৪/১৯২ : وإذا دفع الرجل إلى الرجل مالا مضاربة وأمره أن يعمل فيه برأيه أو لم يأمره بشيء من ذلك، فأخذ المضارب المال واستأجر ببعضه أرضا بيضاء، ثم اشترى ببعض المال المضاربة طعاما أو شعيرا فزرعه في الأرض، فربح أو وضع، فإن هذا جائز، وهو على المضاربة، وهذا عندنا بمنزلة التجارة.
–বাদায়েউস সানায়ে ৫/১২২; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১৫৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/১৯৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮
আমাদের প্রতিবেশী এক মেয়ের ডান হাতের বৃদ্ধাঙুলির পাশে অতিরিক্ত একটি আঙুল উঠেছে। এটা তার কাছে বেশ অস্বস্তিকর মনে হয় এবং এ কারণে সে মানুষজনের কাছে হাত বের করতে সংকোচবোধ করে। এজন্য তার বাবা চাচ্ছে, অপারেশন করে অতিরিক্ত আঙুলটি কেটে ফেলবে।
হুজুরের কাছে জানতে চাই, এমনটি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কি না?
হাঁ, অতিরিক্ত আঙুলটি অপারেশন করে কেটে ফেললে যদি হাতের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তাহলে তা কেটে ফেলা জায়েয হবে।
শেয়ার লিংক* >فتاوى قاضيخان< ৩/৪১০ : و في الفتاوى إذا أراد أن يقطع إصبعا زائدة أو شيئا آخر، قال أبو نصر رحمه الله تعالى : إن كان الغالب على من قطع مثل ذلك الهلاك فإنه لا يفعل؛ لأنه تعريض النفس للهلاك، وإن كان الغالب هو النجاة فهو في سعة من ذلك.
–আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৪৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৮৮; শরহু মানযুমাতি ইবনি ওয়াহবান ২/১৬৯