সাদেকুল ইসলাম - সিলেট

৪৩৯৭. প্রশ্ন

আমার সর্দি লাগে। একসময় তা ঘন ও শক্ত হয়ে যায়। তাই ঘন সর্দির সাথে কখনো জমাটবাঁধা রক্ত বের হয়ে আসে। তাই জানতে চাচ্ছি, এভাবে সর্দির সাথে জমাটবাঁধা রক্ত বের হলে কি অযু নষ্ট হয়ে যাবে?

উত্তর

নাক দিয়ে জমাটবাঁধা রক্ত বের হলে অযু নষ্ট হয় না। তাই সর্দির সাথে জমাটবাঁধা রক্ত বের হলে অযু নষ্ট হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১/২০৩; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৮৪; আসসেআয়া ১/২১২; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯

শেয়ার লিংক

মামুন - নোয়াখালী

৪৩৯৮. প্রশ্ন

আমি আসরের নামাযের পর দাঁতের চিকিৎসা করাই। এতে মাড়ির রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং মাগরিবের পুরো ওয়াক্তেই তা অব্যাহত ছিল। উক্ত অবস্থায়ই আমি অযু করে নামায আদায় করি। এখন প্রশ্ন হল, রক্তক্ষরণের সময় নামায পড়া শুদ্ধ হয়েছে? নাকি উক্ত নামায পুনরায় পড়া আবশ্যক?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আসরের পর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে মাগরিবের শেষ সময়েও যেহেতু অব্যাহত ছিল তাই ঐ ক্ষেত্রে আপনি মাজুর বলে গণ্য হবেন। অতএব ঐ রক্তক্ষরণের সময় আপনার আদায়কৃত নামাযগুলো সহীহ হয়েছে। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই। কেননা, মাজুর ব্যক্তির জন্য অযু করার পর উক্ত ওজর ব্যতীত অযু বিনষ্টকারী অন্য কারণ পাওয়া না গেলে ওয়াক্তের ভেতর সব ধরনের নামায পড়া বৈধ।

-ফাতহুল কাদীর ১/১৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৩; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৮৪

শেয়ার লিংক

মামুন বিন শাফায়েত - চাটখিল, নোয়াখালী

৪৩৯৯. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লায় দুটি মসজিদে জুমার নামায অনুষ্ঠিত হয়। মহল্লার সকল মুসল্লীর জন্য দুটি মসজিদই যথেষ্ট। কিন্তু জনৈক দাতা মহল্লার একটি জুমা মসজিদের ২০০ গজের মধ্যে তৃতীয় একটি পাঞ্জেগানা মসজিদকে -যা তাঁর অর্থায়নে নির্মিত- জুমা মসজিদে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বাহ্যত বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু এতে পার্শ্ববর্তী মসজিদের জুমার জামাতে মুসল্লী হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় তাঁর জন্য উক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে কি না?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নতুন মসজিদকে জুমা মসজিদে রূপান্তর না করাই উত্তম। কেননা কোনো মহল্লায় একাধিক মসজিদ থাকলেও কোনো এক বা একাধিক বড় মসজিদে সকলে একত্রিত হয়ে বড় জামাতে জুমা নামায পড়া উত্তম। বড় জামাতে পড়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ছোট ছোট জামাতে জুমা আদায় করা অনুত্তম। যদিও একই মহল্লার একাধিক মসজিদে জুমার জামাত করা জায়েয আছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২০; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৫১; ফাতহুল কাদীর ২/১৫; ইলাউস সুনান ৮/৯১

শেয়ার লিংক

মাহবুবুর রহমান - ঢাকা

৪৪০০. প্রশ্ন

এক ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণের সময় সেখানেই সবাই জামাতসহ নামায আদায় করি। কারণ, মহল্লার মসজিদে তখন জামাত পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। উক্ত নামাযের পূর্বে আমাদের কেউ কেউ আযানের প্রস্তাব করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে কি আমাদের আযান দেওয়া জরুরি ছিল?

উত্তর

আপনাদের আযান না দেওয়া ভুল হয়নি। কেননা এক্ষেত্রে মসজিদের আযানই যথেষ্ট। হযরত আসওয়াদ ও আলকামা রাহ. থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন-

أَتَيْنَا عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ فِي دَارِه، فَقَالَ: أَصَلّى هؤُلَاءِ خَلْفَكُمْ؟ فَقُلنَا: لَا، قَالَ: فَقُومُوا فَصَلّوا، فَلَمْ يَأمُرْنَا بِأَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ.

আমরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর ঘরে এলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের পেছনের লোকেরা কি নামায পড়েছে? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, (তাহলে) তোমরা দাঁড়াও, নামায পড়। তখন তিনি আমাদের আযান ও ইকামতের নির্দেশ দেননি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩৪)

প্রকাশ থাকে যে, যদি এমন স্থানে জামাত করা হয়, যেখানে আশপাশ থেকে আযানের শব্দ শোনা যায় না, তবে সেখানে আযান দেওয়াই নিয়ম।

-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ১/৪০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; শরুহল মুনয়া পৃ. ৩৭২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাফিক উদ্দীন - নোয়াখালী

৪৪০১. প্রশ্ন

সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের ইমাম সাহেবের একটি হাত ভেঙ্গে যায়। ফলে প্লাস্টার করা হয়। এখন তিনি প্লাস্টারের উপর মাসেহ করে নামায পড়ান। প্রশ্ন হল, এই ইমামের পেছনে আমাদের ইক্তিদা কি সহীহ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, উক্ত ইমামের পেছনে আপনাদের নামায পড়া সহীহ হবে। কারণ, মাসেহকারীর পেছনে অন্যদের ইক্তিদা করা সহীহ।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪৭; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪২২

শেয়ার লিংক

ইফরাদ হোসেন - ঢাকা

৪৪০২. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে নতুন ইমাম সাহেব এসেছেন। আলহামদু লিল্লাহ তিনি সবদিক থেকে ভালো এবং এক মাদরাসার শিক্ষকও। তো এই বছর তাকবীরে তাশরীক শুরু হওয়ার দিন নামাযের পর পরই সবাই একবার তাকবীর বলে থেমে যান। কিন্তু ইমাম সাহেব তিনবার পড়লেন। পরে সবাই তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তিনবার পড়াও সুন্নত। তো জানার বিষয় হল, তাকবীরে তাশরীক কতবার পড়া সুন্নত।

উত্তর

ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক একবারই পড়া নিয়ম। তিনবার পড়া সুন্নত- এ কথা ঠিক নয়। তাই তিনবার তাকবীরে তাশরীক বলার প্রচলন করবে না।

-রদ্দুল মুহতার ২/১৭৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২

শেয়ার লিংক

মাহফুজুর রহমান - ভোলা

৪৪০৩. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি বসে রুকু সিজদার সাথে নামায আদায় করেন। সুস্থ থাকা অবস্থায় তার কিছু নামায কাযা হয়ে যায়। এখন তিনি সে নামাযগুলো কাযা করতে চাচ্ছেন। জানার বিষয় হল, সুস্থ অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাযগুলো বর্তমানে তিনি কীভাবে কাযা করবেন?

উত্তর

এখন তিনি যেহেতু শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছেন তাই সুস্থ অবস্থার কাযা নামাযও বসে বসে আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে। এ নিয়ে সংশয়ের প্রয়োজন নেই। কেননা কাযা নামায যখন পড়া হবে তখনকার সামর্থ্য অনুযায়ী পড়লেই আদায় হয়ে যায়।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৩৩

শেয়ার লিংক

নজরুল ইসলাম - কুড়িগ্রাম

৪৪০৪. প্রশ্ন

আমি একটি ইসলামী পত্রিকায় টাইপের কাজ করি। এক্ষেত্রে অনেক সময় সিজদার আয়াতও টাইপ করতে হয়। জানার বিষয় হল, সিজদার আয়াত টাইপ করার কারণে আমার উপর সিজদা ওয়াজিব হবে কি না?

উত্তর

সিজদা ওয়াজিব হয় মুখে আয়াত তিলাওয়াত করার দ্বারা। তাই মুখে উচ্চারণ না করে টাইপ করলে বা লিখলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৫৩২; রদ্দুল মুহতার ২/১০৩

শেয়ার লিংক

হুসাইন আহমাদ - সিলেট

৪৪০৫. প্রশ্ন

আমি ব্যবসায়িক কারণে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় সফর করি। আমার জানার বিষয় হল, সুন্নত নামাযের কি কসর আছে? আর সফর অবস্থায় সুন্নত নামাযের হুকুম কী?

উত্তর

সফরে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযই কেবল কসর করতে হয়। সুন্নত বা অন্য কোনো নামাযে কসরের বিধান নেই। তবে সুন্নতে মুআক্কাদা নামায সফর অবস্থায় মুআক্কাদা থাকে না। তাছাড়া তাড়াহুড়া ও অধিক ক্লান্তির সময় সুন্নত না পড়ার সুযোগ আছে। বিশেষত সুন্নত আদায়ের কারণে গাড়ি ফেল করা বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়ার আশংকা থাকলে অথবা অপেক্ষায় থাকা কোনো ব্যক্তি বা সফরসঙ্গীর কষ্ট হলে সুন্নত ছেড়ে দেওয়াই কর্তব্য। অবশ্য সফরে ঝামেলামুক্ত ও সুস্থ থাকলে সুন্নত পড়ে নেওয়া উত্তম।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/২৪৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৪৫; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫২৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৩১; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৫/১৭৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফাহিম - বরিশাল

৪৪০৬. প্রশ্ন

মুহতারাম মুফতী সাহেব! আমাদের গ্রামে জানাযা নামাযের পর খাটিয়া বহন করে গোরস্তানে যাওয়ার পথে তিনবার থামা হয় এবং এই থামাকে সুন্নতও বলা হয়। এর বিশুদ্ধতা কতটুকু? এক্ষেত্রে সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি কী? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

মায়্যিতের খাটিয়া বহন করার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হল, চার ব্যক্তি খাটিয়ার চার পায়া ধরে উঠাবে। এবং সম্ভব হলে প্রত্যেকে সবগুলো পায়া কাঁধে নিবে। আর সবগুলো পায়া ধরার নিয়ম ফকীহগণ এভাবে বলেছেন যে, প্রথমে একজন সামনের ডান পায়া কাঁধে নিবে। এরপর পেছনের ডান পায়া ডান কাঁধে, তারপর সামনের বাম পায়া বাম কাঁধে, সর্বশেষ পেছনের বাম পায়া বাম কাঁধে নিবে। আর লাশ বহনের সময় তিনবার থামা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে প্রতিবার কাঁধ পরিবর্তন করার প্রয়োজনে যদি দাঁড়াতে হয় তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এটিকে সুন্নত বা সওয়াবের কাজ মনে করা যাবে না।

-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা, বর্ণনা ১১৩৯৯; আলজামেউস সগীর, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ১১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৬৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬০৫; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৯২; রদ্দুল মুহতার ২/২৩১

শেয়ার লিংক

হাফেজ তাজুল ইসলাম - জামেয়া দারুল হুদা, সিলেট

৪৪০৭. প্রশ্ন

একদিন এক জানাযায় উপস্থিত হয়ে অন্যমনস্ক থাকায় মাইয়েত পুরুষ না মহিলা এর বিবরণ শুনতে পাইনি। এমতাবস্থায় কীভাবে নিয়ত করব তা বুঝতে না পেরে উক্ত জানাযায় আর শরীক হইনি। জানার বিষয় হল, জানাযার নামাযে মাইয়েত পুরুষ না মহিলা তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে নিয়ত করা কি জরুরি?

উত্তর

জানাযার নামাযে মাইয়েত পুরুষ না মহিলা তা নির্দিষ্টভাবে নিয়ত করা জরুরি নয়। বরং এই মাইয়েতের জানাযা পড়ছি এমন নিয়ত করাই যথেষ্ট। আর জানাযার প্রসিদ্ধ দুআটি নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে একই রকম। তাই মাইয়েতের অবস্থা জানা না থাকলেও প্রসিদ্ধ দুআটি পড়লেই চলবে। অতএব মাইয়েতের অবস্থা জানা না থাকার কারণে জানাযায় শরীক না হওয়া ভুল হয়েছে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৭, ১৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৩

শেয়ার লিংক

আরিফুল ইসলাম - বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

৪৪০৮. প্রশ্ন

আমার বড় বোনের প্রথম স্বামী দীর্ঘদিন জেলে। তার সহায়-সম্পত্তিও তেমন নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমরা তালাকের মাধ্যমে আমাদের বোনকে তার ছেলেসন্তানসহ নিয়ে আসি। পরে সচ্ছল স্বামীর সাথে তার বিবাহ হয়। বর্তমানে বোনের মালিকানাধীন স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা মিলে ৭০/৮০ হাজার টাকা আছে। এদিকে প্রথম ঘরের ছেলেটি তখন থেকেই আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকে। বর্তমানে তার বয়স ১৩; এখনও নাবালেগ। তার টিউশন ফি ও স্কুলের বেতন মাসে ৪/৫ হাজার টাকা- আমি পরিশোধ করে থাকি। এখন মুফতী সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন হল :

ক. আমার এ ভাগিনা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কি না?

খ. তার টিউশন ফি ও স্কুলের বেতন যদি আমি যাকাতের নিয়তে পরিশোধ করি, যাকাতের বিষয়টি তাকে না জানিয়ে, তাহলে এতে আমার যাকাত আদায় হবে কি না?

উত্তর

ক. প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার ভাগিনার বাবা যেহেতু দরিদ্র তাই সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আপনিও তাকে যাকাত দিতে পারবেন। -আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৬; মাজমাউল আনহুর ১/৩৩০

খ. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সে যেহেতু জানে যে আপনি তার পক্ষ থেকে টিউশন ফি ইত্যাদি আদায় করে থাকেন, সুতরাং যাকাতের অর্থ থেকে এগুলো দেওয়ার দ্বারা আপনার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। -কিতাবুল আছল ২/১০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৬৮; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০

শেয়ার লিংক

আবদুল গফফার - সিলেট

৪৪১০. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি একটি বিপদে পড়ে তার জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেয়। পরবর্তীতে তিনি ঐ ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এদিকে তার সংসারের খরচের জন্য জমিরও প্রয়োজন। কিন্তু বিষয়টি লজ্জায় তিনি কারো কাছে প্রকাশ করেননি। আমরা দুই-তিনজন বিষয়টি জানতে পেরে তার অগোচরে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাওনাদারকে অনুরোধ করি, তিনি যদি আমাদের কথা কাউকে না বলেন তাহলে আমরা ঐ ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করে দিব। তিনি এতে রাজি হয়েছেন। এখন আমি যদি আমার যাকাতের অর্থ দিয়ে তার অগোচরে ঋণ পরিশোধ করে দেই তাহলে আমার যাকাত আদায় হবে কি? যদি আদায় না হয় তাহলে কি শুধু তাকে কোনভাবে জানিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট হবে না তার হাতেই টাকা দিতে হবে?

উত্তর

উক্ত ব্যক্তি যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তাহলে তার অনুমতিক্রমে যাকাতের অর্থ দ্বারা তার ঋণ আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে যাকাত আদায়ের জন্য তার অনুমতি নেওয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ একথা বলাই যথেষ্ট যে, আমরা আপনার ঋণ আদায় করে দিচ্ছি। যাকাতের অর্থ সরাসরি তার হাতে দেওয়া জরুরি নয়। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কারো ঋণ পরিশোধ করলে যাকাত আদায় হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২৬৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৮; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮

শেয়ার লিংক

উম্মে আফনান - পল্লবী, ঢাকা

৪৪১১. প্রশ্ন

আমি ছেলের মা হিসেবে নিয়ত করে রেখেছি তাকে আমার এক বান্ধবীর মেয়ের সাথে বিয়ে করাব। মেয়ের পরিবারও এতে সম্মত আছে। কিন্তু ওরা দুজনই এখনও লেখাপড়া করছে। তাই ২-৩ বছর আগে বিয়ে করানোর কোনো পক্ষেরই ইচ্ছা নেই। এমতাবস্থায় তারা কি এখন থেকে শুধু ফোনে কথা বলতে পারবে? দয়া করে জানাবেন?

উত্তর

কথাবার্তা চূড়ান্ত হলেও যে পর্যন্ত বিবাহের আক্দ সম্পন্ন না হবে সে পর্যন্ত তারা একে অপরের জন্য মাহরাম নয়। এ সময় তাদের পরস্পরের দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা তথা অন্তরঙ্গতা কোনো কিছুই জায়েয নয়।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৩১৯; উমদাতুল কারী ৭/২৭৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯, ১/৪০৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩

শেয়ার লিংক

উম্মে হাবীবা - পল্লবী, ঢাকা

৪৪১২. প্রশ্ন

হুজুর আমার একটি মেয়ে হয়েছে। আমি অসুস্থতার কারণে তাকে দুধপান করাতে পারছি না। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই আমার বড় ভাই সপরিবারে থাকে। তাই আমার মেয়েকে তার মামির দুধ পান করাতে চাচ্ছি। এতে কোনো সমস্যা হবে কি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, আপনার মেয়েকে তার মামির দুধ পান করাতে পারবেন। এতে অসুবিধা নেই। আর আপনার মেয়েকে তার মামির দুধ পান করালে সেই মামির সন্তানাদি তার দুধ ভাই-বোনের মত হয়ে যাবে।

প্রকাশ থাকে যে, যেহেতু দুধপানের কারণে বিবাহ ও পর্দা বিষয়ক অনেক মাসআলার সম্মুখীন হতে হয় তাই এ বিষয়গুলো বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নেয়া উচিত।

-কিতাবুল আছল ৪/৩৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৬২; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৩২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৬; রদ্দুল মুহতার ৩/২১৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নূর হোসেন আমীন - বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

৪৪১৩. প্রশ্ন

মসজিদের বারান্দা কাকে বলে? মসজিদের অভ্যন্তরে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ যদি অভ্যন্তর সংলগ্ন আরো কিছু জায়গা নামাযের জন্য বাড়িয়ে নেয় তবে কি তা মূল মসজিদ ধরা হবে, না বারান্দা ধরা হবে?

উল্লেখ্য, বর্ধিত অংশগুলো মূল মসজিদের ছাদের সাথে এমনভাবে লাগানো যে, মূল ও বর্ধিত অংশ আলাদা করা যায় না এবং ঐ বর্ধিত অংশগুলোতে মূল মসজিদের কাতারের সাথে মিলে নামায আদায় করা হচ্ছে। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষ কী উদ্দেশ্যে বর্ধিত অংশ তৈরি করেছিল, তা জানা যায় না।

যদি ঐ বর্ধিত অংশ মূল মসজিদ বলে গণ্য হয় তবে মসজিদের আদব-ইহতেরামের সমস্ত বিধানাবলী ঐ বর্ধিত অংশের উপর বর্তাবে কি না?

প্রয়োজনীয় দলীল ও ব্যাখ্যাসহকারে উত্তর প্রদান করে বাধিত করবেন।

ভাষাগত কোনো ত্রুটির ফলে বেয়াদবি হলে অনুগ্রহ করে ক্ষমা করে দিবেন।

উত্তর

মসজিদের সাথে যুক্ত বর্ধিতাংশকে বারান্দা বলা হলেও মূলত তা মসজিদের অংশবিশেষ এবং তাতে মসজিদের আদব-ইহতেরামের সকল হুকুমই প্রযোজ্য হবে। তাই ইতিকাফকারীগণও সেখানে যেতে পারবেন। তবে নির্মাণের সময়ই যদি কর্তৃপক্ষ তা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত না করে তবে সেক্ষেত্রে ঐ বর্ধিতাংশ মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হবে না এবং মসজিদের হুকুমও তাতে প্রযোজ্য হবে না।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে যে বারান্দা থাকে তা সাধারণত মসজিদের অন্তর্ভুক্তই হয়ে থাকে। কারণ, নির্মাণকারীগণ তা মসজিদের বাহিরের জায়গা হিসাবে নির্মাণ করেন না। সুতরাং আপনাদের মসজিদটির বারান্দার ব্যাপারে যেহেতু ব্যতিক্রম কিছু জানা যায়নি তাই সেটিও মসজিদের অন্তর্ভুক্ত বলেই বিবেচিত হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৫

শেয়ার লিংক

হাফেজ মাওলানা আবূ আহমাদ - এলাকাবাসীর পক্ষে

৪৪১৪. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মসজিদের ছাদে একটি প্রসিদ্ধ কোম্পানী তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড লাগাতে চাচ্ছে। তারা বলেছে, যেহেতু মসজিদের ছাদ তাই এতে তারা কোনো ছবি ব্যবহার করবে না। আপাতত তারা পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করতে চাচ্ছে।

আমাদের এ মসজিদটি তিন তলা বিশিষ্ট। সাধারণত ছাদে নামায পড়ার প্রয়োজন হয় না। ঈদের সময় কখনো প্রয়োজন হয়। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত হল, মসজিদটি তিন তলাই থাকবে, আর বাড়ানো হবে না।

আমরা এলাকাবাসী জানতে চাচ্ছি, মসজিদের ছাদে বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড লাগানো জায়েয হবে কি না?

মুফতী সাহেবের কাছে বিনীত নিবেদন, উপরের বিবরণকে সামনে রেখে এ বিষয়ে শরীয়তের ফায়সালা জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

মসজিদের ছাদে বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড লাগানো জায়েয হবে না। কেননা, মসজিদের ছাদও মসজিদের অন্তর্ভুক্ত এবং মসজিদের মতই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। মসজিদের কোনো অংশ যেমনিভাবে উপার্জনের মাধ্যম বানানো যায় না তদ্রƒপ ছাদের ক্ষেত্রেও একই হুকুম।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪, ২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/২৮৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৮

শেয়ার লিংক

আলী হায়দার - দক্ষিণখান, ঢাকা

৪৪১৫. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদের জন্য প্রথম যে জায়গাটি ওয়াকফ করা হয়েছিল তা ছিল একদম ছোট। তাই চতুর্দিকে একেবারে আশপাশের জায়গাগুলো তখনও পর্যন্ত খালি ছিল তাই কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা ছিল পরবর্তীতে জায়গার ব্যবস্থা হলে মসজিদ সম্প্রসারণ করা হবে এবং মসজিদের জন্য অযুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এখন মসজিদের দক্ষিণ পাশে রাস্তা। উত্তর ও পূর্ব পাশে যাদের জায়াগা তারা কিছুতেই জায়গা দিতে প্রস্তুত নয়। শুধু মসজিদ বরাবর পশ্চিম পাশে বর্তমান মসজিদের দ্বিগুণ একটি জায়গা একলোক ওয়াক্ফ করেছে। তাই কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে পশ্চিমের পূর্ণ জায়গা জুড়ে মসজিদ নির্মাণ করে পূর্বদিকের যে জায়গায় বর্তমানে মসজিদ আছে তার একাংশে অযুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করবে। জানার বিষয় হল, আগে যে জায়গা মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সেখানে অযুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করা জায়েয হবে কি না? অথবা পশ্চিম পাশে কিছু জায়গা খালি রেখে সেখানে অযুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করা যাবে কি না? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

বর্তমানে যে জায়গায় মসজিদ আছে সেখানে মসজিদ ব্যতীত অযুখানা, টয়লেট বা অন্য কিছু বানানো জায়েয হবে না। ঐ স্থানকে মসজিদ হিসেবেই রাখতে হবে। মসজিদের পশ্চিমে যে জায়গা আছে তার একাংশে অযুখানা ও টয়লেট নির্মাণ করা যাবে। চাইলে বাকি অংশে মসজিদও সম্প্রসারণ করা যাবে। এক্ষেত্রে অযুখানা ও টয়লেট এভাবে বানাতে হবে, যাতে পরিবেশ পূর্ণ পরিচ্ছন্ন থাকে এবং মুসল্লীদের কোনো কষ্ট না হয়।

-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/২৮৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৪; মাজামাউল আনহুর ২/৫৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুজিবুল্লাহ - বারদোনা, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

৪৪১৬. প্রশ্ন

বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা ওয়ারিশসূত্রে ১৮০০০/-টাকা ও ১৯ শতাংশ জমি পাই। সকল টাকা-পয়সা জায়গা-জমি ঠিক পেয়েছি। তবে একটি জমি নিয়ে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়, আব্বু আমাদেরকে এ ব্যাপারে কিছু বলে যাননি। তবে আমাদের এক চাচা থেকে এ ব্যাপারে জানতে পারি।

আব্বু জীবিত থাকতেই জমিটি একজনের কাছে বন্ধক দিয়ে কিছু ঋণ নিয়েছিলেন। পরে এক উপযুক্ত খরিদ্দার পেয়ে ঋণদাতার সাথে এভাবে কথা হয় যে, ‘আমি অমুক তারিখের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করে দেব। আমাকে জমিটি এখনি বিক্রি করার জন্য দখলমুক্ত করে দেন।’ সে এতে রাজি হয় এবং আব্বু জমিটি বিক্রি করে দেন। কিন্তু আব্বু মৃত্যুর পূর্বে ঐ ঋণ পরিশোধ করেননি। আব্বু এ ব্যাপারে কোনো অসিয়তও করে যাননি। এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমাদের কয়েকটি বিষয় জানার আছে-

* আব্বুর এ ঋণ পরিশোধ করা আমাদের জন্য জরুরি কি না?

* ঋণ আদায় করলে আমরা জমিটির মালিক হব কি না?

* অন্যের কাছে বন্ধক রাখা অবস্থায় জমিটি বিক্রি করা আব্বুর জন্য ঠিক হয়েছে কি? এভাবে বিক্রি করা জায়েয আছে কি?

দয়া করে দ্রুত উত্তর জানাবেন। এ সমস্যার কারণে আমরা সম্পত্তি ভাগ করতে পারছি না।

উত্তর

কারো মৃত্যু হলে কাফন-দাফনের পর মিরাসি সম্পত্তি বণ্টনের পূর্বেই ওয়ারিসদের কর্তব্য হল, মৃতের ঋণ থাকলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে আগে তা আদায় করা। এরপর বৈধ কোনো অসিয়ত থাকলে বাকি সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে তা পূরণ করা। ঋণ আদায় ও অসিয়ত পূরণের পরেই অবশিষ্ট সম্পদ ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করতে হয়।

অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের পিতা মৃত্যুর পূর্বে বন্ধকী জমি সংক্রান্ত উক্ত ঋণ আদায়ের জন্য কোনো অসিয়ত না করলেও এ ব্যাপারে অবগত হওয়ার পর সকল ওয়ারিসের কর্তব্য হয়ে গেছে এজমালী সম্পদ থেকে এ ঋণ আদায় করে দেওয়া।

আর আপনাদের পিতা বন্ধকী জমিটি ঋণদাতার সম্মতিতেই যেহেতু অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন তাই তার ঐ বিক্রি সহীহ হয়েছে এবং ক্রেতা ঐ জমির মালিক হয়ে গেছে। এই জমিতে আপনাদের কোনো মালিকানা ও অধিকার নেই। পিতার ঋণ আদায় করে দেওয়া আপনাদের কর্তব্য। তবে এ কারণে আপনারা এই জমির মালিক হবেন না।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৭৪৭, ৭৩৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/১৮০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫০৮, ৭৫৯; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৩/১৮৯

শেয়ার লিংক

সা‘দ বিন আবু বকর - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪৪১৭. প্রশ্ন

আমি আমার এক বন্ধুকে এক লক্ষ টাকা নি¤েœাক্ত শর্তাবলীতে ব্যবসা করার জন্য দিয়েছি।

১. লোকসান হলে আমার।

২. যদি লাভ হয় তবে মূল টাকার ১৮%-২৩% লাভ দিতে হবে।

পরবর্তীতে জানতে পেরেছি, এরূপ ব্যবসায়িক চুক্তি বৈধ নয়। তাই হযরতের কাছে জিজ্ঞাসা, এ ব্যবসা থেকে অন্য কোনো পদ্ধতিতে লাভ নেওয়া যাবে কি না? কারণ, এক বছর ইতিমধ্যেই শেষ। আর বন্ধু জোর করছে টাকা নেওয়ার জন্য। যদি সে সন্তুষ্ট হয়ে কিছু লাভ দেয় তা গ্রহণ করা হারাম হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ‘মূল টাকার ১৮%-২৩% লাভ দিতে হবে’ এই শর্ত নাজায়েয হয়েছে। এর কারণে আপনাদের পুরো চুক্তিই ফাসেদ হয়ে গেছে। কেননা, মূল এক লক্ষ টাকার শতকরা ১৮%-২৩% হল ১৮০০-২৩০০ টাকা। আর এভাবে নির্দিষ্ট অংক লাভ হিসেবে নির্ধারণ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা সম্পূর্ণ হারাম। এখন যেহেতু আপনাদের চুক্তিটি ফাসেদ হয়েছে তাই আপনার বিনিয়োগকৃত এক লক্ষ টাকার উপর অর্জিত পূর্ণ মুনাফা আপনি পাবেন। আর আপনার বন্ধুকে এক বছর ব্যবসা পরিচালনার জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক দিবেন।

আর ভবিষ্যতে তার সাথে কারবার করতে চাইলে চুক্তিটি এভাবে সংশোধন করে নিতে পারেন যে, সে আপনার টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে। এরপর যদি ব্যবসায় লাভ হয় তবে লাভের এত ভাগ আপনি পাবেন এবং এত ভাগ সে পাবে (যেমন ৫০%-৫০% অথবা ৬০%-৪০%)

এছাড়া দু’জনের সমঝোতায় শতকরা হিসেবে লাভের যে কোনো হার নির্ধারণ করতে পারেন।

-কিতাবুল আছল ৪/১২৯; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৬; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হেফাযুদ্দীন - মগনামা, পেকুয়া, কক্সবাজার

৪৪১৮. প্রশ্ন

একটি পুকুরে কয়েকজন অংশীদার। সবাই অংশ হিসেবে এতে খরচ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলো। কিন্তু বর্তমান পরস্পর সম্পর্কের অবনতির কারণে কিছু অংশীদার এতে মাছ চাষ করতে সম্মত নয়। আর কয়েকজন এতে মাছ চাষ করে। আর যারা মাছ চাষ করতে সম্মত নয় তাদেরকে মাছের অংশ দিয়ে থাকে। কিন্তু তারা উক্ত মাছ গ্রহণ করে না। ফিরিয়ে দেয়। তারা ফেরৎ দেওয়া মাছ এলাকার গরীব-মিসকীনকে দিয়ে দেয়।

জানার বিষয় হল, শরীকি পুকুরে এভাবে মাছ চাষ করা এবং ফেরৎ দেওয়া মাছ গরীব-মিসকীনকে দেওয়া জায়েয আছে কি না? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

শরীকি পুকুরে মাছ চাষ করতে হলে সকল অংশীদারের সম্মতি প্রয়োজন। যদি অংশীদারদের কেউ মাছ চাষে অসম্মতি জানায় এবং অন্য অংশীদারগণ মাছ চাষ করতে আগ্রহী হয় তাহলে নিম্নের কোনো একটি পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।

১. যে শরীকগণ মাছ চাষে আগ্রহী তারা মাছ চাষে অনিচ্ছুক অংশীদারদের থেকে তাদের অংশ একটি নির্ধারিত মেয়াদের জন্য ভাড়া নিবে এবং উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত ভাড়া তাদেরকে প্রদান করবে। এক্ষেত্রে মাছ চাষকারীগণ উৎপাদিত সকল মাছের মালিক হবে। আর মাছ চাষে অনিচ্ছুকগণ তাদের অংশের নির্ধারিত ভাড়া পাবে।

২. উভয় পক্ষ আলোচনা করে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে পারে, যার মাধ্যমে একপক্ষ একটি মেয়াদের জন্য (যেমন, এক বছর/ দুই বছর/ পাঁচ বছর) ব্যবহার করবে। অপরপক্ষ পরবর্তী মেয়াদের জন্য তা ব্যবহার করবে। এভাবে মাছ চাষে ইচ্ছুক অংশীদারগণ তাদের মেয়াদের মধ্যে মাছ চাষ করতে পারবে।

উল্লেখ্য যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কিছু অংশীদার কর্তৃক ফেরৎ দেওয়া মাছ দান করে দেওয়া দূষণীয় হয়নি।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০৯; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৪২৯, ১১৭৮; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৪৯৩, ৪/১২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মোস্তফা কামাল - মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

৪৪১৯. প্রশ্ন

মোহাম্মাদপুর টাউন হলে আমার একটি দোকান আছে। আমার এক বন্ধু দোকানটি এভাবে ভাড়া নিতে চাচ্ছে যে, সে এখানে ব্যবসা করবে।  যা লাভ হবে তার ২০% আমাকে দিবে। কোনো সিকিউরিটি মানি বা অ্যাডভান্স দিবে না। জানতে চাই, এভাবে দোকান বাবদ লাভ নেওয়া সহীহ আছে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত চুক্তিতে দোকান ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে না। লাভের একটি অংশ ভাড়া হিসেবে দেওয়ার শর্তে চুক্তি করা সহীহ নয়। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হল, দোকানের ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত করে নেওয়া। যেন ভাড়াগ্রহীতার লাভ কম হোক বা বেশি দোকানের ভাড়া নির্ধারিতই থাকে।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৫

শেয়ার লিংক

খালেদ সাইফুল্লাহ - পাবনা

৪৪২০. প্রশ্ন

আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার নীতি হল, সবসময় ব্যবসার লাভের ২% মসজিদ-মাদরাসায় এবং ৩% গরিব-মিসকীনদের দান করে থাকি। বিভিন্ন সময় আমি অন্যদের থেকেও নির্দিষ্ট হারে লাভ প্রদানের চুক্তিতে বিনিয়োগ গ্রহণ করে থাকি। তাদেরকেও বিষয়টি জানিয়ে দেই যে, মোট লাভ থেকে উক্ত অংশ বাদ দিয়েই লাভ বণ্টন হবে। মুফতী সাহেবের কাছে নিবেদন, এভাবে চুক্তি করতে কোনো সমস্যা আছে কি?

উত্তর

নিজের লভ্যাংশ থেকে সদকা দেওয়া বড় সৌভাগ্য ও সওয়াবের কাজ। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ থেকে  মসজিদ-মাদরাসা ও গরীব-মিসকীনদেরকে দেওয়ার শর্ত করা সহীহ নয়। যদি এমন শর্ত করাও হয় তবে তা ফাসেদ হবে। তাই বিনিয়োগকারীদের উপর এ শর্ত চাপানো যাবে না। আর এ শর্তে চুক্তি হলেও বিনিয়োগকারীগণ উক্ত অংশ সদকা করতে বাধ্য নন। বরং তারা পরবর্তীতে তাদের লভ্যাংশের পুরোটাই দাবি করতে পারেন।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৫৪; দুররুল হুক্কাম ৩/৪৩৫

শেয়ার লিংক

সাইফ সিরাজ - ময়মনসিংহ

৪৪২১. প্রশ্ন

আমার বাবার টিনের ব্যবসা আছে। অনেকদিন থেকেই তিনি ব্যবসা করেন। ব্যবসার সম্পূর্ণ পুঁজি তার একারই। আমরা দু’ভাই বড় হওয়ার পর তিনি আমাদেরকেও ব্যবসায় লাগিয়েছেন। এখন আমরা সবাই মিলে ব্যবসা দেখাশোনা করি। আমরা দুজনই বিবাহিত। বাবা-মায়ের সাথে আমাদের সবার যৌথ সংসার। ইদানিং কোনো কারণে বড় ভাইয়ের সাথে আমার মিল হচ্ছে না। তাই চাচ্ছি, পৃথক হয়ে অন্য কোনো ব্যবসা করব। আমি গত সাত বছর দোকানে খেটেছি। এ সময়ে যখন যে প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা পূরণ করেছি। জানার বিষয় হল, উক্ত দীর্ঘ সময়ের খাটনি বাবদ আমি কি কোনো প্রাপ্য বা ব্যবসার কোনো অংশের মালিকানা দাবি করতে পারব? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাবার ব্যবসায় সম্পৃক্ততার সময় যেহেতু আপনাদের শ্রমের বিনিময়ে মাসিক বা বাৎসরিক কোনো বেতন বা ব্যবসায় আপনাদের অংশীদার হওয়ার কোনো চুক্তি হয়নি তাই আপনি এ ব্যবসা থেকে কোনো পারিশ্রমিক বা অংশ দাবি করতে পারবেন না। ব্যবসাটির সম্পূর্ণ মালিক আপনার বাবা। আপনারা দু’ভাই তার পরিবারভুক্ত ও তার সহযোগী মাত্র।

উল্লেখ্য, সন্তানেরা যদিও ব্যবসা থেকে কোনো অংশ বা পারিশ্রমিক দাবি করতে পারবে না তবুও বাবার উচিত, তারা যেহেতু দীর্ঘ সময় ব্যবসায় শ্রম দিয়েছে তাই তাদেরকে একেবারে বঞ্চিত না করা। বরং তাদেরকে এমন কিছু দেওয়া যেন তারা খুশি হয়।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১৩৯৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ২/১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩২৯

শেয়ার লিংক

নাসীরুদ্দীন - নরসিংদী

৪৪২২. প্রশ্ন

আমার একটি স’মিল আছে। এটাতে আমি বিভিন্ন লোকের অর্ডার নিয়ে তাদের গাছ চিড়ে দেই। সাধারণত মালিক নিজে গাছ নিয়ে আসে না। বরং কর্মচারির মাধ্যমে গাছ আনা-নেওয়া করে। তাই সবাইকে চিনে রাখা সম্ভব হয় না। গত কয়েক মাস থেকে কার যেন দুটি গাছ মিলে পড়ে আছে। এগুলোকে চিড়া হয়েছে। কেউ এগুলো নিতেও আসছে না এবং এগুলোর খোঁজও নিচ্ছে না। গাছগুলো দোকানে সংরক্ষণ করতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমার কী করণীয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হল, গাছ দুটির মালিকের যথাসাধ্য খোঁজ লাগানো এবং যারা সাধারণত আপনার মিলে গাছ চিড়তে আসে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা। যদি কেউ উপযুক্ত প্রমাণসহ গাছগুলো দাবি করে তাহলে তাকে সেগুলো দিয়ে দিবেন। আর যদি যথাযথ খোঁজ করার পরও মালিকের সন্ধান পাওয়া না যায় এবং সামনেও পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে কাঠগুলো বিক্রি করে আপনার গাছ চিড়ার মজুরি রেখে বাকি টাকা মালিকের পক্ষ থেকে কোনো দরিদ্রকে সদকা করে দিবেন। আর ভবিষ্যতে এ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য যারা গাছ রেখে যায় তাদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে রাখবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১১/৩; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৯৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৮৯

শেয়ার লিংক

মামুনুর রহমান - কালীস্থান বাজার, লালমনিরহাট

৪৪২৩. প্রশ্ন

আমার বড় ভাই তার স্ত্রীর জীবদ্দশায় আপন শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকায় চলে যায়। গত পাঁচ মাস পূর্বে ঐ ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এরপর পারিবারিকভাবে সমঝোতার মাধ্যমে তাদেরকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।

ভাইয়ের আগের সংসারে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমাদের আব্বা-আম্মা অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছেন। এখন আমরা চাচ্ছি, তাদের মাঝে বড় ভাইয়ের সম্পত্তি বণ্টন করে দিতে। আমাদের একজন হুযূর আত্মীয় বললেন, দ্বিতীয় স্ত্রী সম্পত্তি থেকে কোনো অংশ পাবে না।

মুহতারামের নিকট বিষয়টির সঠিক সমাধান কামনা করছি। সাথে সাথে তাদের সম্পত্তির বণ্টন-হিসাবও জানতে চাচ্ছি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় মৃতের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী মীরাস পাবে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে সে তো মৃতের স্ত্রীই নয়। কেননা স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে থাকাবস্থায় তার সহোদরা বোনকে বিবাহ করা হারাম। কুরআনুল কারীমে সুস্পষ্টভাবে তা নিষেধ করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় জনের সাথে বিবাহ হারাম হলেও যেহেতু বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের মাঝে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে তাই সে মহরের অধিকারী হবে। অতএব মহর আদায় না হয়ে থাকলে মীরাস থেকে প্রথমে মহর আদায় করে দিতে হবে। তবে সে ধার্যকৃত মহর ও মহরে মিছিলের মধ্যে যেটা কম সেটা পাবে।

আপনার ভাইয়ের সম্পত্তি বণ্টনের আগে তার কোনো ঋণ থাকলে তার মালিকানাধীন সমুদয় সম্পত্তি থেকে প্রথমে তা আদায় করতে হবে। অতপর তার কোনো বৈধ অসিয়ত থাকলে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা আদায় করতে হবে। অতপর তার রেখে যাওয়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জীবিত ওয়ারিশদের মাঝে নি¤েœ বর্ণিত শতকরা হারে বণ্টিত হবে।

ক. স্ত্রী ১২.৫%

খ. দুই ছেলে প্রত্যেকে ৩৫% করে।

গ. মেয়ে ১৭.৫%।

-সূরা নিসা (৪) : ২৩; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/১৩০; কিতাবুল আছল ১০/১৮২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬১৫, ৫৪০; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - রূপনগর, মিরপুর, ঢাকা

৪৪২৪. প্রশ্ন

আমাদের মাদরাসায় ক’দিন আগে এক লোক অনেকগুলো ব্রয়লার মুরগী দিয়েছে। সে এগুলো বাজার থেকে ড্রেসিং করে এনেছে। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। কেউ বলছে, এগুলো খাওয়া যাবে। কিন্তু আবার অনেকে বলছে ড্রেসিং করা জায়েয নেই। এগুলো খাওয়া মাকরূহে তাহরীমী। এ নিয়ে বেশ মতভেদ চলছে। আপাতত এগুলো ফ্রিজে রেখে দেয়া হয়েছে।

এখন আপনার কাছে জানতে চাই, বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত মুরগী ড্রেসিং করার পদ্ধতিটি কি শরীয়তসম্মত? ড্রেসিং করা মুরগী খাওয়া যাবে কি? দ্রুত উত্তর জানালে উপকৃত হব। আল্লাহ তাআলা আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুন- আমীন।

উত্তর

দোকানগুলোতে সাধারণত যে পদ্ধতিতে মুরগী ড্রেসিং করা হয় তাতে ঐ মুরগীর গোশত খাওয়া নাজায়েয বা মাকরূহ হয়ে যায় না। কারণ, এক্ষেত্রে মুরগী গরম পানিতে যতটুকু সময় চুবিয়ে রাখা হয়  এতে মুরগীর ভেতরের নাপাকীর প্রভাব গোশতে  পৌঁছে না। বরং এর দ্বারা শুধু লোমকূপগুলো ঢিলা ও নরম হয়ে যায়। অবশ্য যদি এত বেশি সময় তপ্ত গরম পানিতে মুরগী চুবিয়ে রাখা হয়, যার ফলে নাপাকীর প্রভাব ও গন্ধ গোশতের ভেতর চলে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ মুরগীর গোশত খাওয়া নাজায়েয হয়ে যাবে। আর যেসব মুরগী সাধারণ নিয়মে ড্রেসিং করা হয় (অর্থাৎ অধিক সময় ফুটন্ত পানিতে চুবিয়ে রাখা হয় না) সেগুলোও রান্না করার পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে পাক করে নেওয়া জরুরি।

উল্লেখ্য, ড্রেসিংয়ের প্রচলিত পদ্ধতি কিছুটা  সংশোধনযোগ্য। এতে আপত্তিকর বিষয় রয়েছে।

-ফাতহুল কাদীর ১/১৮৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৯; মাজমাউল আনহুর ১/৯১; রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৪

শেয়ার লিংক

মাওলানা আবু আহমাদ - মসজিদ কর্তৃপক্ষের পক্ষে

৪৪২৫. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদে কুরআন মাজীদের অনেক পুরনো  কপি জমা হয়ে গেছে, যেগুলো পড়া যায় না। এখন সেগুলোর ব্যাপারে কী করণীয় তা নিয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষের মধ্যে  মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। অনেকে মৌখিকভাবে বিভিন্ন আলেম থেকে বিভিন্ন ধরনের মাসআলাও নিয়ে এসেছে। তাই মসজিদ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমরা এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাচ্ছি।

মুফতী সাহেবের কাছে বিনীত নিবেদন, এ বিষয়ে দলীল-প্রমাণসহ লিখিত ফতোয়া প্রদান করে আমাদেরকে উপকৃত করবেন। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন- আমীন।

উত্তর

কুরআন মাজীদের পুরনো কপি যদি পড়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায় তাহলে সম্ভব হলে পবিত্র কোনো কিছুতে রেখে কোনো স্থানে তা হেফাযত করে রাখবে। আর এভাবে হেফাযত করা কষ্টকর হলে তা পরিষ্কার ও পবিত্র কাপড়ে পেঁচিয়ে এমন স্থানে দাফন করে দিবে, যেখানে সাধারণত মানুষ চলাচল করে না।

অথবা প্রবহমান পরিষ্কার পানিতে ভারী কোনো বস্তুর সাথে বেঁধে ডুবিয়ে দিবে। এর মাঝে যে কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১০; আলবেনায়া ১৪/৫৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২২

শেয়ার লিংক

আবু বকর ছিদ্দীক - আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ

৪৪২৬. প্রশ্ন

কখনো কুরআন শরীফের সাথে অসম্মানের আচরণ হয়ে গেলে অথবা তিলাওয়াতের আগে-পরে স্বাভাবিকভাবে আমরা কুরআনে চুমু দেই, চোখে লাগাই।

জানতে চাই, এটি শরীয়তসম্মত কি না? কেউ কেউ এটি করতে দেখলে নিষেধ করে। মেহেরবানী করে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

কুরআনে কারীম চুমু দেওয়া জায়েয আছে। ইকরিমা রা. থেকে কুরআনে কারীম চেহারায় লাগানো ও চুমু দেওয়া প্রমাণিত আছে। -সুনানে দারিমী, হাদীস ৩৩৫৩

তাই কেউ কুরআনে কারীমে চুমু দিলে তাকে বারণ করার প্রয়োজন নেই।

উল্লেখ্য, অসতর্কতাবশত কুরআন মাজীদের সাথে অসম্মানজনক কিছু হয়ে গেলে সেক্ষেত্রেও চুমু দিতে নিষেধ নেই। তবে তখন মূল করণীয় হল অসতর্কতার কারণে লজ্জিত হওয়া এবং তওবা-ইস্তিগফার করা।

-মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ১৬০৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ১৭৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৬০

শেয়ার লিংক