আমাদের এলাকায় লাশ দাফন করার সময় গামলা বা টুকরিতে করে মহিলাদের জন্য ঘরে মাটি আনা হয়। তারা তাতে দুআ পড়ে ছুয়ে দেয়। পরে তা কবরে দেওয়া হয়। এই প্রচলনটি শরীয়তসম্মত কি না? এবং এতে তারা দাফন কাজের সওয়াব পাবে কি না?
আমাদের এলাকায় লাশ দাফন করার সময় গামলা বা টুকরিতে করে মহিলাদের জন্য ঘরে মাটি আনা হয়। তারা তাতে দুআ পড়ে ছুয়ে দেয়। পরে তা কবরে দেওয়া হয়। এই প্রচলনটি শরীয়তসম্মত কি না? এবং এতে তারা দাফন কাজের সওয়াব পাবে কি না?
আপনাদের এলাকার ওই নিয়মটি অমূলক। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং তা অবশ্যই বর্জনীয়।
শেয়ার লিংক
আমার এক আত্মীয়া এবছর হজ্বে গেছেন। তিনি বাইরে বের হলে হাত—পায়ে মোজা পরে বের হন। সে হিসাবে হজ্বের সফরেও তিনি মোজা পরেছিলেন। কিন্তু অন্য কাফেলার জনৈক মুআল্লিম বললেন যে, ইহরাম অবস্থায় হাত—পায়ে মোজা ব্যবহার করা বৈধ হবে না। এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।
মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় হাত—পায়ে মোজা পরিধান করা জায়েয। এতে ইহরামের কোনো ক্ষতি হয় না। সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. তাঁর মেয়েদেরকে ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা পরিধান করাতেন। -আল ইসতিযকার ১১/৩০
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে (ইহরাম অবস্থায়) পা—মোজা ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছেন। -আততারগীব ওয়াত তারহীব ৪/৫৭৭; মীযানুল ইতিদাল
অবশ্য হাতমোজা পরিধান না করা সম্পর্কেও হাদীস রয়েছে। ফিকহবিদগণ বলেন, মহিলাদের জন্য হাতমোজা পরিধান করার অনুমতি থাকলেও তা অনুত্তম।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১০; ফাতহুল মুলহিম ৩/২০৪; মিনহাতুল খালেক ২/৩২৩; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১১৮
আমি এক ঈদগাহের ইমাম সাহেবকে বলতে শুনেছি, “যদি কোনো ব্যক্তি ফিতরা আদায় না করে তাহলে ওই ব্যক্তির সাথে কুরবানী করলে কারো কুরবানী হবে না।” এই উক্তিকে ইসলামী শরীয়ত কি সমর্থন করে? দলীল—প্রমাণ দিয়ে জানালে উপকৃত হব।
ফিতরা ও কুরবানী সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি আমল। একটির জন্য অপরটি শর্ত নয়। সুতরাং “ফিতরা আদায় না করলে তার এবং তার শরীকের কারো কুরবানী আদায় হবে না” কথাটি ভুল। হাঁ কেউ ফিতরা আদায় না করে থাকলে পরে যে কোনো সময় দিয়ে দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। যদিও বিনা ওজরে বিলম্ব করা অনুচিত।
উল্লেখ্য, শরীয়তের হুকুম আহকাম সঠিকভাবে বলা যেমন সওয়াবের কাজ তেমনি না জেনে বলা ভয়াবহ গুনাহ। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়ায়ে শামী ২/৩৫৯
আমি সৌদি আরবে একটি কোম্পানিতে চাকুরি করি। হজ্বের মওসুমে ওই কোম্পানির বার্ষিক ব্যবসার প্রধান সময়। তাই কতৃর্পক্ষ আমাকে হজ্বের পুরো সময় ছুটি দিবে না। বড় জোর আরাফা ও মুযদালিফার দুই দিন ছুটি পাওয়া যাবে। এখন আমি জানতে চাই যে, মিনায় ১১ ও ১২ তারিখ থাকা জরুরি কি না? যদি ছুটি না পাওয়ার কারণে মিনায় অবস্থান না করে চাকুরিস্থলে থাকি এবং নিধার্রিত সময়ে এসে পাথর মেরে চলে যাই তবে আমার হজ্ব আদায় হবে কি না? মিনায় না থাকার কারণে কোনো দম ওয়াজিব হবে কি না?
হাজ্বীদের জন্য যিলহজ্বের ১১ ও ১২ তারিখ মিনায় রাত্রি যাপন করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। এটি ওয়াজিব নয়। কেউ যদি মিনায় অবস্থান না করে অন্য স্থান থেকে এসে পাথর নিক্ষেপ করে তবে পাথর মারার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে এবং এ কারণে তার উপর কোনো দম বা সাদকা ওয়াজিব হবে না। সুতরাং আপনার জন্যও উক্ত ওজরে মিনায় অবস্থান না করার অবকাশ আছে। তবে বিনা ওজরে কিংবা সাধারণ ওজরে মিনায় রাত্রিযাপন ত্যাগ করা আদৌ উচিত নয়। কারণ, হজ্বের পূর্ণ ফযীলত ও কবুলিয়ত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিপূর্ণ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪৮; তাতার খানিয়া ২/৪৬৬
সুদ ভক্ষণ করে, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী করে, হারাম মালের ব্যবসা করে, হারাম পন্থায় উপার্জন করে -এমন লোকের দান মসজিদ নিমার্ণে ব্যয় করা যাবে কি?
মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তাঁর ঘরও পবিত্র। অবৈধ সম্পদ মসজিদে লাগানো হারাম। এতে মসজিদকে অপবিত্র করা হয়। অতএব, দানকৃত বস্তু হারাম—একথা নিশ্চিত জানা থাকলে সেই মাল মসজিদে ব্যয় করা যাবে না। আর যদি দানকৃত বস্তু সম্পর্কে জানা না যায় তাহলে দেখতে হবে দাতার অধিকাংশ আয় হালাল কি না। যদি অধিকাংশ হালাল হয় তাহলে তার প্রদত্ত বস্তু নেওয়া যাবে এবং মসজিদেও ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু দাতার অধিকাংশ আয় যদি হারাম হয় তাহলে ওই ব্যক্তির দান গ্রহণ করা বৈধ হবে না এবং ওই বস্তু মসজিদে লাগানোও জায়েয হবে না।
শেয়ার লিংক
অনেকে বিদায় নেওয়ার সময় বলে, ‘আসি’। আমি এক উস্তাদের কাছে শুনেছি, বিদায় নেওয়ার সময় এই শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এতে নাকি মিথ্যা বলা হয়। এখন আমার প্রশ্ন হল, শরীয়ত অনুযায়ী বিদায় বেলায় আসি বলা কেমন? যদি না বলা যায় তবে কী বলতে হবে, বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
বিদায়ের ক্ষেত্রে ‘আসি’ শব্দ থেকে শ্রোতাগণ এটিই বোঝেন যে, লোকটি যাওয়ার অনুমতি চাচ্ছেন। আসি বলে লোকটি আবার আসবে এ কথা সেও বোঝায় না, উপস্থিত লোকরাও এমন বোঝে না। তাই এখানে মিথ্যার কিছু নেই। উল্লেখ্য, আগমনের সময় যেমন ‘সালাম’ দেওয়া সুন্নত তদ্রূপ বিদায়ের সময়ও সালামের আদান প্রদান সু্ন্নত।
শেয়ার লিংক-শুআবুল ঈমান ৬/৪৪৮—৪৪৯; জামে তিরমিযী ২/১০০; তুনানে আবু দাউদ পৃ. ৭০৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৪৯১ মিন আদাবিল ইসলাম
জনৈক ব্যক্তি অসিয়ত করে গেছে-তাকে যেন মৃত্যুর পর কাঠের বাক্সে রেখে দাফন করা হয়। প্রশ্ন হল, তার অসিয়ত মোতাবেক দাফন করা জরুরি কি না?
দাফনের নিয়ম হল, কাফন পরিহিত অবস্থায় সরাসরি মাটিতে রাখা। সুতরাং বিনা ওজরে কাঠের বাক্সে করে দাফন করা যাবে না এবং এ ব্যাপারে মৃতের অসিয়তও গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্য কবরের মাটি অতিরিক্তি নরম, বালি বা পানিযুক্ত হওয়ার কারণে বাক্স ব্যবহারের প্রয়োজন হলে অসিয়ত না করে থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে তা ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রেও সরাসরি কাঠের উপর লাশ না রেখে বাক্সের ভিতর মাটি দিয়ে তার উপর লাশ রাখবে।
শেয়ার লিংক—আলমুগনী ৩/৪৩৫; শরহুল মুহাযযাব ৫/২৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৫
কোন তাওয়াফে রমল করতে হয়? তাওয়াফে রমল করার হুকুম কী? পুরুষের মতো মহিলারাও রমল করবে কি না?
যেসকল তাওয়াফের পর সায়ী করতে হয় সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করতে হয়। রমল করা সুন্নত। তাওয়াফের মধ্যে রমল করার বিধান শুধু পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য, মহিলাগণ রমল করবে না।
শেয়ার লিংক—ফতহুল বারী ৩/৬২; উমদাতুল কারী ৭/২৪০; সুনানে আবুদাউদ ১/১৫৭; বযলুল মাজহুদ ২/২৭১; আওযাজুল মাসালিক ৩/১৭৬; আলমুগনী ২/৫৪৯; রওজাতুত তালেবীন ১/৩৪৬; মাআরেফুস সুনান ৪/২৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১২