আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি হজ্বে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী ইতোপূর্বে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছেন। এখন আমি কি আমার পিতার বদলি হজ্ব ঐ মহিলাকে দিয়ে করাতে পারব? কোনো মহিলা কি পুরুষের বদলি হজ্ব করতে পারে?
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি হজ্বে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী ইতোপূর্বে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছেন। এখন আমি কি আমার পিতার বদলি হজ্ব ঐ মহিলাকে দিয়ে করাতে পারব? কোনো মহিলা কি পুরুষের বদলি হজ্ব করতে পারে?
মহিলার সাথে মাহরাম থাকলে মহিলাকে দিয়ে বদলি হজ্ব করালেও তা আদায় হয়ে যাবে। তবে ইতোপূর্বে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছে এবং হজ্বের বিধি বিধান সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে এমন পুরুষের মাধ্যমে বদলি হজ্ব করানোই উত্তম।
Ñসহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৫৫; মানাসিক ৪৫৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৭২; আদ্দররুল মুখতার ২/৬০৩শেয়ার লিংক
আমার নানীর বোন হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন। তার ছেলেদের মধ্যে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত বা পুরা দ্বীনদার কেউ নেই। তাই তিনি আমাকে সাথে করে হজ্বে যেতে চাচ্ছেন। প্রশ্ন হল, আমি কি তার মাহরাম? তিনি কি আমার সঙ্গে হজ্বে যেতে পারবেন? দয়া করে জানাবেন।
হাঁ, নানীর বোন মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাই তিনি আপনার সঙ্গে হজ্বে যেতে পারবেন।
Ñতাফসীরে কুরতুবী ৫/৭২; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৩০শেয়ার লিংক
গত বছর আমি হজ্বে গিয়েছিলাম। সেখানে এক জোড়া স্বর্ণের চুড়ি ক্রয় করি এবং পছন্দের জন্য হাতে পরে দেখি এবং সাথে সাথে খুলে ফেলি। প্রশ্ন হল, ইহরাম অবস্থায় স্বর্ণের চুড়ি হাতে দেওয়ার কারণে কি আমার উপর কোনো দম ওয়াজিব হয়েছে?
ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য স্বর্ণ-রূপার অলঙ্কার এবং চুড়ি পরা জায়েয। তাই চুড়ি পরার কারণে আপনার উপর কোনো দম ওয়াজিব হয়নি। হযরত নাফে রাহ. বলেন,আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর স্ত্রী ও কন্যাগণ ইহরাম অবস্থায় অলঙ্কার পরতেন।
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৪১৪; ফাতহুল কাদীর ২/৩৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১০; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১১৫শেয়ার লিংক
গত জানুয়ারি মাসে আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে। ইদ্দতের এক হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পরপরই অন্য একজন পুরুষের সঙ্গে আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। এরপর থেকে দুই সপ্তাহ যাবত আমরা একসঙ্গেই থাকছি। এখন জানতে পারলাম যে, ইদ্দতের মাঝখানে হওয়ায় আমাদের বিবাহটি সহীহ হয়নি। কথাটি কি সঠিক? সঠিক হলে এখন আমাদের করণীয় কী? উল্লেখ্য, বর্তমান স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক জীবন যাপন করতে আমার পূর্ণ আগ্রহ রয়েছে।
ইদ্দত চলাকালীন অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ। তাই ইদ্দত অবস্থায় আপনাদের উক্ত বিবাহটি সহীহ হয়নি। এতদিন একত্রে বসবাস করা হারাম হয়েছে। আপনাদের কর্তব্য হল, এখনই আলাদা হয়ে যাওয়া এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা-ইস্তেগফার করা। তবে তালাক প্রদানের পর পূর্ণ ইদ্দত (তিনটি মাসিক স্রাব) অতিবাহিত হলে আপনি বর্তমান লোকটির সঙ্গে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারবেন।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৬৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৫১৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫১শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় মাদরাসার জন্য একটি জমি ওয়াকফ করা হয়। তাতে এখনও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ভবিষ্যতে মাদরাসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশেই একটি মসজিদ আছে। মাদরাসার জমিতে যে সকল ফলমূল হয় তা বিক্রি করে এর মূল্য মসজিদের জন্য ব্যয় করা হয়। এখন প্রশ্ন হল, মাদরাসার জমিতে উৎপাদিত ফসলাদির মূল্য মসজিদের কাজে লাগানো জায়েয কি না? জানালে উপকৃত হব।
মাদরাসার জমিতে উৎপাদিত ফসলাদি মাদরাসার সম্পদ। তা বিক্রি করে মাদরাসার কাজেই ব্যয় করতে হবে এবং মাদরাসার জন্যই তা সংরক্ষণ করতে হবে। এই টাকা মসজিদের কাজে ব্যয় করা জায়েয হবে না।
Ñফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৬১; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০; দুরারুল হুককাম ২/৩৬শেয়ার লিংক
এক দোকানে চোরাই মোবাইল, মেমোরি কার্ড, চার্জার ইত্যাদি স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়। মানুষ জেনে-শুনেই স্বল্প মূল্যে উপরোক্ত পণ্যগুলো ক্রয়ের জন্য সেখানে যায়। আমার কিছু বন্ধুর পীড়াপীড়িতে আমিও সেখান থেকে একটি মোবাইল কিনতে চাচ্ছি। এখন প্রশ্ন হল, জেনেশুনে চোরাই মোবাইল বা অন্য কোনো পণ্য ক্রয় করা যাবে কি? দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে উপকৃত করবেন।
চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পূর্ণ হারাম। কারণ, বিক্রেতা এ মালের মালিক নয়। অথচ ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান শর্ত হলো, বিক্রেতা পণ্যের/সম্পদের মালিক হওয়া। কারো কোনো জিনিস চুরি করা বা আত্মসাৎ করা মহাপাপ। এ পাপে লিপ্ত ব্যক্তির তাৎক্ষণিক ফরয হলো খাঁটি দিলে তওবা করা এবং চুরিকৃত জিনিসটি মালিককে ফেরত দেওয়া। তা না করে এটিকে বিক্রি করে দেওয়া চুরি এবং আত্মসাতের মতো অপরাধকে আরো প্রতিষ্ঠিত করার নামান্তর। যা স্বতন্ত্র কবীরা গুনাহ। আর যে ব্যক্তি জেনে-শুনে তা ক্রয় করল সেও এ কবীরা গুনাহে শরিক হলো। উপরন্তু এ ক্রয়-বিক্রয় যেহেতু ভুয়া তাই না ক্রেতা এ পণ্যের মালিক হবে না বিক্রেতা মূল্যের মালিক হবে। এদের উভয়ের উপর ফরয,পণ্য মূল মালিককে ফেরৎ দেওয়া।
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২২৪৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৩৭৪, ৩৪০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/১১০শেয়ার লিংক
আমাদের কাপড়ের দোকান আছে। ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান হতে মাল আনা হয় ট্রাকযোগে। ট্রাক সমিতির মালিকগণ আমাদের সাথে চুক্তি করে যে, আপনাদের প্রয়োজনে পুরো বছর আমাদের থেকে ট্রাক নিবেন অন্য কারো থেকে নয়। এভাবে পুরো বছরের জন্য চুক্তি করা হয়। এ চুক্তির হুকুম কী? আর এভাবে পুরো বছর তাদের থেকে ট্রাক নিলে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন হলে বছরান্তে কোনো মূল্যবান বস্তু গিফট দেয়। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম জানতে চাই।
মালিক সমিতির সাথে পুরো বছরের জন্য এভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়া ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত। এটা জায়েয আছে। পরবর্তীতে যখন তাদের থেকে ট্রাক নেওয়া হবে তখন ভাড়া সুনির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যেন কোনো ধরনের অস্পষ্টতা না থাকে। আর পুরো বছর তাদের থেকে ভাড়া নেওয়ার কারণে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোন গিফট দেওয়া হলে তা নেওয়া যাবে।
শেয়ার লিংক
আমার দাদা হজ্বে যাওয়ার আগে একটি ছাগল ক্রয় করে আমার বাবাকে দিয়ে বলেন, আমার পক্ষ থেকে তুমি কুরবানীটা আদায় করে দিও। কিন্তু আমার বাবা কুরবানীর দিন ঐ ছাগল দিয়ে আমার পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করেন।
এখন আমার প্রশ্ন হল, উক্ত কুরবানী কার পক্ষ থেকে আদায় হবে? উল্লেখ্য যে, আমার দাদা ধনী।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বাবা আপনার পক্ষ থেকে কুরবানীর নিয়ত করলেও তা আপনার পক্ষ থেকে হয়নি। বরং তা আপনার দাদার পক্ষ থেকেই আদায় হয়েছে। কেননা ছাগলটির মালিক আপনার দাদা। তিনি কুরবানীর জন্য ক্রয় করেছেন এবং আপনার বাবাকে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য প্রতিনিধি বানিয়েছেন। তাই পশুটি আপনার দাদার পক্ষ থেকেই কুরবানী হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
প্রকাশ থাকে যে, আপনার দাদার সুস্পষ্ট নির্দেশের পরও তার পক্ষ থেকে কুরবানী না করে আপনার পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া ঠিক হয়নি।
Ñআল মুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩০শেয়ার লিংক
আমার আম্মা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আব্বা দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন। সৎ মা (আব্বার দ্বিতীয় স্ত্রী)-এর পিতা ক’দিন পরপর আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। আমি তাকে নানা ডাকি। তাকে মাহরাম মনে করে তার সামনে অবাধে যাওয়া-আসা করতাম। কিন্তু ক’দিন আগে আমার চাচাতো বোন বলল, সৎ মায়ের পিতার সাথে পর্দা করা জরুরি। এখন জানার বিষয় হল, তার কথা কি সঠিক?
হাঁ, সে ঠিকই বলেছে। সৎ মায়ের পিতা মাহরাম নয়। তার সাথে পর্দা করা ফরয।
Ñফাতাওয়া খায়রিয়া ১/৩৯; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৫০; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১০৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১শেয়ার লিংক
বাথরুমে একাকী গোসল করার সময় অনাবৃত হওয়া যাবে কি না?
আবদ্ধ গোসলখানায় একাকি অনাবৃত হয়ে গোসল করা জায়েয। তবে বিনা প্রয়োজনে একেবারে পুরো শরীর খুলে ফেলা অনুত্তম।
Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৮; উমদাতুল কারী ৩/২২৮; শরহুল মুনইয়াহ ১/৫১; ইলাউস সুনান ২/১৭০; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৪শেয়ার লিংক
জন্মগতভাবেই আমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশে অতিরিক্ত একটি ছোট আঙ্গুল আছে। যার কারণে মানুষের সামনে যেতে আমার লজ্জা হয়। আমি চাচ্ছি, অপারেশনের মাধ্যমে আঙ্গুলটি কেটে ফেলতে। আমার জন্য কি এ কাজ করা বৈধ হবে?
অতিরিক্ত আঙ্গুল কেটে ফেললে যদি ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে তাহলে তা কেটে ফেলা বৈধ হবে। অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তা করা যাবে।
Ñফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৮৮; বাযলুল মাজহূদ ১৭/৫৪-৫৫; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬০;শেয়ার লিংক
কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে হায়েয অবস্থায় সহবাস করে। এখন তার করণীয় কী? দয়া করে জানাবেন।
হায়েয অবস্থায় জেনেশুনে স্ত্রী সহবাস করা হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তারা আপনাকে হায়েয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, তা অপবিত্রতা। অতএব তোমরা হায়েযের সময় স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাক এবং তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়। Ñসূরা বাকারা (২) : ২২২
সুতরাং ঐ ব্যক্তির কর্তব্য হল, আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তিগফার করা।
আর এক্ষেত্রে হায়েযের শুরুর দিকে সহবাস হলে এক দীনার আর শেষ দিকে হলে অর্ধ দীনার সদকা করার কথা কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাওবা-ইস্তিগফারের পাশাপাশি উপরোক্ত নিয়মে সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে।
প্রকাশ থাকে যে, দীনার একটি স্বর্ণমুদ্রা। যা বর্তমান হিসেবে ৪.৩৭৪ গ্রাম সমপরিমাণ স্বর্ণ।
Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২০১; বাযলুল মাজহূদ ২/২৭৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৭; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৮শেয়ার লিংক
কোনো মুসলমান ব্যক্তি কি কোনো অমুসলিমের ঝুটা খেতে পারবে?
অমুসলিমের ঝুটা নাপাক বা হারাম নয়। তাই প্রয়োজনে অমুসলিমের হালাল খবারের অবশিষ্টাংশ মুসলমানের জন্য খাওয়া বৈধ। অবশ্য কেউ যদি মদ বা নেশাদ্রব্য পান করার পর মুখ পবিত্র না করেই কিছু পানাহার করে তবে তার ঝুটা খাওয়া বা পান করা যাবে না।
Ñআদ্দুররুল মুখতার ১৮২২২; ফাতওয়া খানিয়া ১/১৮; শরহুল মুনইয়া ১৬৬শেয়ার লিংক