বিনীত নিবেদন এই যে, আমার আব্বা একজন ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করার পর আল্লাহর দয়ায় হজ্ব যান। হজ্ব থেকে ফেরার পর তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন যে, তার এই কাজ শরীয়তসম্মত নয়। তাই, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে টাইলস, মটরস, সেনেটারী এগুলোর ব্যবসা করেন। কিন্তু কিছু পারিবারিক ও বহিরাগত কারণে তিনি নিজেই এই ব্যবসাটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এখন তিনি ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট নিজ মালিকানাধীনে নিতে চাচ্ছেন। এখন শুধু ব্যাংকটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন। উক্ত এজেন্টভুক্ত ব্যাংকটিতে ইসলামী ব্যাংক-এর সমস্ত কার্যক্রম থাকবে। যেমন- টাকা লেনদেন, বীমা করা, বিদেশে টাকা আদান-প্রদান করা, শিক্ষার্থী একাউন্ট, এটিএম বুথ ইত্যাদি। তো ব্যাংকটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম চলবে ইসলামী ব্যাংকের অধীনে। আমার আব্বু শুধু ব্যাংকটির লেনদেনের উপর কিছু পার্সেন্ট পাবেন। আর ব্যাংকটিতে কিছু গরীব বেকার মানুষদেরকে নিয়োগ দেবেন।
অতএব, মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাচ্ছি যে, আমার আব্বুর ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট নিজ মালিকানাধীন নেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ঠিক হবে। আর ঠিক না হলে এখন কী করণীয়?
বর্তমানে তিনি কর্মহীন অবস্থায় আছেন। আর কিছুদিনের মধ্যে হয়তোবা ব্যাংকটিতে যুক্ত হবেন। সুতরাং ইসলামী ব্যাংক ও ব্যাংকটির এজেন্ট সম্পর্কে যাবতীয় বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন। আর এ বিষয়টিও জানিয়ে বাধিত করবেন যে, এখন আমার আব্বুর কী করণীয়? আর এটি ঠিক না হলে কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজের পরামর্শ জানিয়ে বাধিত করবেন, যেটি সম্পূর্ণ হালাল।
বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলো শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবি করলেও বাস্তবে তাদের কার্যক্রম এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। বাস্তব পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রমগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে শরীয়া নীতিমালা পালিত হয় না; বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু কিছু কাগজপত্রে দস্তখত করানো এবং বিভিন্ন আরবী পরিভাষার ব্যবহার পর্যন্তই তা সীমিত থাকে। তাই পূর্ণ শরীয়া পালনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব ব্যাংকে চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়া এবং এর বেতনাদি বা কমিশন ভোগ করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ হবে। কেননা চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়ার মানে হলে, সরাসরি তাদের কাজে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করা। যা সংশ্লিষ্ট কারবার হালাল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আগে করা যায় না।
উল্লেখ্য, ইসলামে জীবিকা উপার্জনের বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি তা হালাল ও বৈধ পন্থায় হওয়াও অতীব জরুরি। সুতরাং আপনার বাবাকে জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল কোনো উপার্জন ব্যবস্থার অনুসন্ধান করতে হবে। দুনিয়াতে হালাল পেশার তো (চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি) অনেক আছে। অভিজ্ঞজনদের সাথে পরামর্শ করে আপনার বাবার উপযোগী যে কোনো কাজই তিনি করতে পারেন।