একবার পানি স্বল্পতার কারণে আমি অযুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাক কাপড় ধৌত করি। জানার বিষয় হল, অযুর ব্যবহৃত পানি কি পাক না নাপাক? আর পাক হলে তা দ্বারা কি নাপাক ধৌত করা যাবে?
একবার পানি স্বল্পতার কারণে আমি অযুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাক কাপড় ধৌত করি। জানার বিষয় হল, অযুর ব্যবহৃত পানি কি পাক না নাপাক? আর পাক হলে তা দ্বারা কি নাপাক ধৌত করা যাবে?
অযুর ব্যবহৃত পানি নাপাক নয়। এই পানি দ্বারা নাপাক কাপড় বা নাপাক বস্ত্ত ধোয়া এবং পাক করা জায়েয। তবে এই পানি দ্বারা অযু করা কিংবা ফরয গোসল করা যাবে না; করলে পবিত্রতা অর্জন হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪১; আদ্দুররুল মুখতার ১/২০১; মারাকিল ফালাহ ৮৭শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি অযু করার পর তার মুখের ব্রণ গলে যায় এবং তা থেকে সামান্য পানি বের হলে সে তা মুছে নেয়। প্রশ্ন হল এই পানি বের হওয়ার কারণে কি তার অযু ভেঙ্গে গেছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্রণের পানি যদি গড়িয়ে না পড়ে এবং যে পানি মুছে নিয়েছে তা সেখানে থাকলেও গড়িয়ে পড়ত না তাহলে ঐ ব্যক্তির অযু নষ্ট হয়নি। কিন্তু যদি পানি বা রক্ত গড়িয়ে পড়ে কিংবা না মুছলে তা গড়িয়ে পড়ত তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবে।
-আলজামেউস সগীর, পৃষ্ঠা : ৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬১শেয়ার লিংক
গত কিছুদিন আগে আসরের নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম বৈঠক না করে ভুলবশত দাঁড়িয়ে যান। তখন মুসল্লিরাও দাঁড়িয়ে যায়। সাথে সাথে অনেকে লোকমা দেয়। লোকমা দিলে ইমাম সাহেবসহ সবাই বসে পড়েন। নামাযের পর সাহু সিজদা আদায় করে নেন। কিন্তু নামাযের পর আমাদের মাদরাসার একজন সিনিয়র উস্তায দাঁড়িয়ে বললেন, নামায হয়নি। পুনরায় আদায় করতে হবে। আরেকজন মুফতী সাহেব বললেন, নামায হয়ে গেছে, পুনরায় পড়তে হবে না। এ অবস্থায় প্রথমজনের কথা অনুযায়ী আবার নামায আদায় করা হয়। উল্লেখ্য, ইমাম কিন্তু একজনই। আর ঐ মুফতী সাহেব নামায না পড়ে বের হয়ে যান। এখন প্রশ্ন হল, প্রথম জামাত কি সহীহ হয়েছে? যদি সহীহ হয়ে থাকে তাহলে দ্বিতীয় জামাতের হুকুম কী হবে?
বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যিনি নামায হয়ে গেছে বলেছেন তার কথাই সঠিক। প্রথম বৈঠক না করে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে নিয়ম হল, লোকমা দিলেও বৈঠকের জন্য ফিরে না আসা; বরং যথারীতি পরবর্তী রাকাতগুলো পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করা। অবশ্য নিয়ম লঙ্ঘন করে কেউ বৈঠকের জন্য ফিরে আসলেও (যেমনটি প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘটেছে) নামায ভঙ্গ হবে না। কোনো কোনো ফকীহ এক্ষেত্রে নামায ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলে থাকলেও এ মতের উপর ফতোয়া নয়।
আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করেছে তাই নামাযটি সহীহ হয়ে গেছে। সুতরাং দ্বিতীয়বার আদায়কৃত নামায নফল হয়েছে।
-ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১০১; রদ্দুল মুহতার ২/৮৪শেয়ার লিংক
সাধারণত কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় আমরা হাত ছেড়ে দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেব হাত বেঁধে রাখতে বলেন। তাই জানতে চাই, নামাযের মধ্যে কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় হাত বেঁধে রাখব, না ছেড়ে দিব? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
কুনূতে নাযিলা পড়ার সময় হাত বেঁধে রাখাই উত্তম। তবে কোনো কোনো ফকীহ হাত ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। তাই এ নিয়ে বিতর্ক করা ঠিক নয়।
-শরহুল মুনইয়াহ ৩০১; ইলাউস সুনান ৬/১২২; কিফায়াতুল মুফতী ৪/৫৩৯শেয়ার লিংক
আসর ও ফজরের পর তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় করা যাবে কি?
আসর বা ফজরের পর তাওয়াফ করলেও তাওয়াফের দুই রাকাত নামায তখন পড়বে না; বরং সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে।
আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, উমর রা. ফজরের পর তাওয়াফ করলেন। এরপর যুতুয়া নামক স্থানে চলে এলেন। অতপর যখন সূর্য উদিত হল এবং উপরে উঠল তখন তিনি তাওয়াফের দুই রাকাত নামায পড়লেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২৬; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৪৩৯
হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. যখন ফজর বা আসরের পর তাওয়াফ করতেন; এরপর যখন সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হয়ে যেত তখন প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই দুই রাকাত করে পড়ে নিতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২২
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, ফজর বা আসরের পর তাওয়াফ করতে চাইলে কর। তবে নামায পরে পড়বে। এরপর যখন সূর্য অস্ত যাবে বা উদিত হবে তখন প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত করে পড়ে নিবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৪২৪; ইলাউস সুনান ১০/৮৭; শরহু মুখতাছারিত তহাবী ১/৫৩৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৮শেয়ার লিংক
গতকাল যোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম। সময় ছিল খুবই অল্প। যে কারণে আমি নামাযের মধ্যে মসজিদের সামনের ঘড়িতে সময় দেখি। এরপর বাকি নামায পূর্ণ করি। ঘড়ি দেখার কারণে কি আমার নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে?
নামায অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ঘড়ি বা অন্য কিছুর দিকে তাকানো মাকরূহ। তাই নামাযের ভেতর আপনার ঘড়ি দেখা ঠিক হয়নি। তবে ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১৮৭; আননাহরুল ফায়েক ১/২৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪শেয়ার লিংক
কয়েকদিন আগে আমি এক এলাকায় বাসা ভাড়া নেই। মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব না থাকলে মাঝেমধ্যে এক ব্যক্তি নামায পড়ান, যার দাঁড়ি একেবারে ছোট করে ছাঁটা। বিষয়টি আমাকে কষ্ট দেয়। স্থানীয় দু’ একজনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু তার পিছনে নামায পড়তে আমার ভক্তি হয় না। এ অবস্থায় আমি কি একাকী নামায পড়ব? অনুগ্রহ করে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
দাঁড়ি অন্তত এক মুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে রাখা গুনাহ। এ ব্যাপারে চারও মাযহাব একমত। একাধিক হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার নির্দেশ এসেছে। তাই যে ব্যক্তি এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে দাড়ি রাখে সে ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এমন ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা করা মাকরূহ। এ ধরনের ক্ষেত্রে কাছাকাছি কোনো মসজিদে পরহেযগার ইমাম থাকলে সেখানে গিয়ে নামায পড়তে পারেন। কাছাকাছি কোনো মসজিদ না থাকলে এই মসজিদে হলেও জামাতের সাথে নামায পড়া কর্তব্য। কেননা একাকী নামায পড়ার চেয়ে এমন ব্যক্তির পিছনে হলেও জামাতে নামায পড়া উচিত।
প্রকাশ থাকে যে, পরহেযগার মুত্তাকী আলেমের পিছনে নামায পড়তে হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তাই ইমামের অবর্তমানেও মুত্তাকী, পরহেযগার ব্যক্তির ইমামতি করা উচিত।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৫০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৯, ১৬০শেয়ার লিংক
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতি হওয়ার কারণে মোবাইল রেকর্ডার ইত্যাদির প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই যে কোনো জায়গায় মোবাইল রেকর্ডার ইত্যাদি থেকে কুরআনের তিলাওয়াত শোনা যায়। জানার বিষয় হল, মোবাইল, টেপ রেকর্ডার ইত্যাদি থেকে সিজদার আয়াত শুনলে কি সিজদা ওয়াজিব হবে?
মোবাইল, রেকর্ডার, সিডি ইত্যাদি থেকে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হবে না। কেননা তিলাওয়াতের সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য বুঝমান, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি থেকে সরাসরি সিজদার আয়াত শ্রবণ করা শর্ত। তবে রেকর্ড থেকে সিজদার আয়াত শুনলেও সিজদা করে নেওয়া উত্তম।
-শরহুল মুনইয়াহ ৫০০; আলবাহরুর রায়েক ২/১২০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/১০৮; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৭/৪৫৬শেয়ার লিংক
আমি ইন্টারে পড়ি। কোনো কোনো রমযানে আমাদের পরীক্ষা হয়ে থাকে। আমার অনেক বন্ধুরা রোযা রাখে না। তাদের অভিভাবকরা নাকি বলে যে, পরীক্ষার সময় রোযা না রাখলে কিছু হয় না।
আমি জানতে চাই, বন্ধুদের অভিভাবকদের ঐ কথা ঠিক কি না। পরীক্ষার সময় রোযা না রাখার সুযোগ আছে কি? দয়া করে আলকাউসারে উত্তরটি ছাপলে আমাদের সকলের উপকার হবে। আল্লাহ আপনাদের কবুল করুন।
অভিভাবকদের ঐ কথা ঠিক নয়। প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থ ব্যক্তির উপর রমযানের রোযা ফরয। পরীক্ষার কারণে রোযা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরীক্ষার অজুহাতে রোযা না রাখলে ফরয ছেড়ে দেওয়ার গুনাহ হবে। তাই রমযানে পরীক্ষা হলে পূর্বে থেকেই পরীক্ষার জন্য প্রস্ত্ততি নিবে যেন রোযা রেখে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে না হয়।
উল্লেখ্য, রমযান মাস রোযা ও ইবাদত-বন্দেগীর মাস। তাই রোযা রেখে ছাত্ররা যেন ভারি পরীক্ষার চাপে না পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও খেয়াল রাখা দরকার।
-সূরা বাকারা : ১৮৩শেয়ার লিংক
আমাদের বিশজনের একটা সংগঠন আছে। আমরা সবাই মিলে টাকা জমা করি। বর্তমানে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হয়েছে। তবে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকের প্রায় আট হাজার টাকা করে জমা হয়েছে। আমাদের এই টাকার উপর কি যাকাত ওয়াজিব হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সমিতির শুধু ঐ টাকার কারণে পৃথকভাবে কারো উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না এবং সমিতির সমষ্টিগত সম্পদের উপরও যাকাত আসবে না। তবে কোনো সদস্যের নিকট যদি সমিতির টাকাসহ যাকাতযোগ্য আরো সম্পদ থাকে এবং উভয়টি মিলে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে।
-সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮-২১৯; সহীহ বুখারী ১/১৯৫; কিতাবুল আছল ২/৬৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৫৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/২৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১২৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৬শেয়ার লিংক
আমার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকার মহর অনাদায়ী আছে। যা পরবর্তী সময় আদায় করার কথা। আমি সুযোগমতো তা আদায় করব। এখন প্রতি বছর যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে এই পঞ্চাশ হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি সম্পদের যাকাত আদায় করব? নাকি তা বাদ দেওয়া যাবে না? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
আপনার স্ত্রীর মহরের টাকা যেহেতু নগদে আদায় করছেন না তাই তা বর্তমানে যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না। এখন আপনাকে পুরো সম্পদেরই যাকাত দিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩শেয়ার লিংক
কিছুদিন আগে আমার পিতা মারা যান। তিনি হজ্ব করেননি। ইন্তেকালের আগে তিনি বদলি হজ্বের অসিয়ত করে গেছেন। কিন্তু আমার পিতার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ (যার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকা) দ্বারা বর্তমানে হজ্ব করানো সম্ভব নয়। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব হুজুর বলেছেন, আমরা যদি তাকে দুই লক্ষ টাকা দেই তাহলে তিনি নিজের পক্ষ থেকে বাকি ‘আশি হাজার’ টাকা দিয়ে বাবার বদলি হজ্ব আদায় করবেন। প্রশ্ন হল, এভাবে বদলি হজ্ব আদায় করলে আমার পিতার ফরয হজ্ব আদায় হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
বদলী হজ্বের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, যার বদলি হজ্ব করা হচ্ছে তার খরচেই হজ্ব করা। কিন্তু যদি অন্য কেউ স্বেচ্ছায় কিছু খরচ করে আর যার বদলি হজ্ব করা হচ্ছে অধিকাংশ টাকা তারই হয় তবেও বদলী হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবকে দিয়ে বদলি হজ্ব করানো যাবে এবং এর দ্বারা আপনার পিতার বদলি হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৩৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৩; ফাতহুল কাদীর ৩/৬৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩২১শেয়ার লিংক
এক মেযের সাথে আমার গোপনে পরিচয় হয়। স্থায়ী সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে আমার কয়েকজন বন্ধুবান্ধবসহ একটি রেস্টুরেন্টে একত্রিত হই। আমার এক বন্ধু কাজী অফিসের পিয়ন হিসেবে একজনকে নিয়ে আসে। সে কাজী অফিস থেকে বিবাহ রেজিস্ট্রি করার কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে আসে। এছাড়াও সরকারি দলিল-স্ট্যাম্পে একটি বিবাহ হলফনামা নিয়ে আসে। সেখানে আমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার নিমিত্তে স্বাক্ষর করি এবং নিকাহনামা রেজিস্টারেও উভয়ে স্বাক্ষর করি। সেখানে চারজন পুরুষও উপস্থিত ছিল। এছাড়া বিবাহ পড়ানোর উপযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা কাজী অফিসের কেউ উপস্থিত ছিল না। উক্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ১,০০,০০১ টাকা দেনমোহরের শর্তে আমরা বিবাহ সম্পন্ন করি। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা কেউই ইজাব-কবুল বলিনি। পিয়ন আমাদের বললেন, আপনারা দুজন স্বামী স্ত্রী। এরপর আমরা যার যার মতো চলে আসি।
বিয়ের ২-৩ মাসের পর থেকে আমাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। ৩-৪ মাস পর এক পুরুষ শিক্ষক নিয়ে পর্দার ব্যাপারে আমার সাথে ওর ঝগড়া হয়। আমি রাগ করে একপর্যায়ে বলেছিলাম, তুমি যদি কালকে, পরশু এবং এর পরের দিন তার কাছে পড় তাহলে তুমি যথাক্রমে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক। পরে জানতে পারি, সে তিন দিনই পড়েছিল। এখন প্রশ্ন হল, ক) আমাদের বিবাহ কি সঠিক হয়েছিল? খ) আমাদের মধ্যে তালাক হয়েছিল কি? গ) এখন আমি পারিবারিকভাবে ওকে ঘরে তুলতে বা বিয়ে করতে চাই। এজন্য আমার কী করা উচিত বা আদৌ কি তা সম্ভব?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুসারে আপনাদের মাঝে ঐ বিবাহই সংঘটিত হয়নি। কারণ প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন যে, আপনাদের মধ্যে বিবাহের ইজাব-কবুল হয়নি। মৌখিক ইজাব-কবুল না হলে শুধু লেখালেখির দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের হলফনামা ও নিকাহনামাটি অবাস্তব। আর আপনাদের মাঝে যেহেতু বিবাহই হয়নি তাই পরবর্তীতে তালাকও পতিত হয়নি। আর আপনাদের পরস্পর এতদিন যাবত দেখা-সাক্ষাত ও মেলামেশা এবং ফোনে যোগাযোগ রাখা সম্পূর্ণ অবৈধ ও হারাম হয়েছে। আল্লাহ তাআলার দরবারে উভয়কে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। সামনে একত্রে সুষ্ঠুভাবে ঘরসংসার করতে চাইলে যথানিয়মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ৩/১০২; রদ্দুল মুহতার ৩/, ২২৭, ১২; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৩শেয়ার লিংক
জনৈক ব্যক্তি তার ছেলে সন্তান হলে একটি গরু আকীকা করার মানত করেছে। এখন তার ছেলেসন্তান হয়েছে। তার জন্য উক্ত মানত পূর্ণ করা কি জরুরি? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তার জন্য গরু দ্বারা আকীকা করা জরুরি নয়। কেননা আকীকার মানত করলে তা মানত হয় না এবং তা পূরণ করা ওয়াজিব হয় না। আকীকা করা মুস্তাহাব। ছেলেসন্তানের জন্য দুটি ছাগল আর মেয়ের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকীকা করা উত্তম। অবশ্য কেউ যদি ছেলের জন্য একটি ছাগলও জবাই করে তবুও আকীকা আদায় হয়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ছেলেসন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকীকা করেছেন। (মুয়াত্তা, ইমাম মালেক, পৃষ্ঠা : ৪০৯)
আর যদি কেউ ছাগল ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা আকীকা করতে চায় তাও জায়েয আছে। হাসান রাহ. থেকে বর্ণিত আনাস রা. সন্তানের আকীকা উট দ্বারা করেছেন।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৪৭৫৫; ইলাউস সুনান ১৭/১০৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮১; ইমদাদুল আহকাম ৪/২০৭; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৬৯৬; উমদাতুল কারী ২৩/২০৮শেয়ার লিংক
আমি একদা আমার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানে আমাকে জানাযা পড়াতে হয়। জানাযা শেষে মৃত ব্যক্তির ছেলে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে, হুজুর! এ টাকা আপনাকে হাদিয়া। আমি উক্ত টাকা গ্রহণ করিনি। জানাযা পড়ানোর পরে হাদিয়া বলে এভাবে টাকা দিলে সে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি?
ঐ টাকা না নিয়ে আপনি ঠিকই করেছেন। কেননা জানাযা পড়িয়ে বিনিময় নেওয়া জায়েয নয়। হাদিয়া বলে দিলেও নেওয়া যাবে না। তা মূলত জানাযা পড়ানোরই বিনিময়।
-রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়া ২/১৩৭; ইলাউস সুনান ১৬/১৭১; ইমদাদুল আহকাম ৩/৫২৬শেয়ার লিংক
কুরবানীর সময় গরুর হাটে গরু পছন্দ করে দামাদামি শুরু করতেই কিছু লোক এসে উপস্থিত হয়। তারা ঐ গরুর মূল্য বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে শুরু করে। সেই গরু ক্রয় করতে চাইলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। খোঁজখবর নিলে জানা যায় যে, ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের যোগসাজশ থাকে। যারা মূলত ক্রেতা নয়। কিন্তু ক্রেতা সাজে শুধু দাম বাড়ানোর জন্য। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এ কাজের হুকুম কি?
ক্রয়ের নিয়ত ছাড়া শুধু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দামাদামি করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃত ক্রেতাগণ এ কারণে প্রতারিত হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘নাজাশ’ থেকে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২১৪২)
নাজাশ হল ক্রয় করার ইচ্ছা ছাড়া শুধু অন্যকে প্ররোচিত করার জন্য দামাদামি করা এবং পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বলা।
আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রা. এমন ব্যক্তিকে সুদখোর ও খেয়ানতকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী ১/২৮৭)
আর এ ব্যাপারে বিক্রেতার সম্মতি থাকলে সেও গুনাহগার হবে। বিক্রেতা তাকে কোনো কিছু দিলে তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত ও নাজায়েয হবে।
-সহীহ মুসলিম ২/৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৩২৭; হেদায়া ৩/৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১০১; ফাতহুল কাদীর ৬/১০৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪০৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৪০৩শেয়ার লিংক
আমাদের জানামতে ব্যাংকে সাধারণত সুদী লেনদেন হয়ে থাকে। এখন যারা ব্যাংকে চাকুরি করে তাদের বেতনের টাকা হালাল কি না? আর তারা কিছু হাদিয়া দিলে তা ব্যবহার করা যাবে কি না?
সুদী ব্যাংক বা শরীয়তের বিধিনিষেধ মেনে লেনদেন করে না-এমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা নাজায়েয। এ থেকে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা হালাল নয়। এবং এর পেছনে শ্রম ব্যয় করাও জায়েয নয়। হাদীস শরীফে সুদখোর, সুদদাতা, সুদের হিসাব-কিতাবকারী ও সাক্ষ্যদাতা সকলের উপর অভিশম্পাত এসেছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত ব্যক্তির কর্তব্য হল, বৈধ কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং দ্রুত ঐ চাকুরি ছেড়ে দেওয়া। আর তাদের চাকুরির টাকা যেহেতু হালাল নয় তাই এ থেকে কাউকে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে জেনেশুনে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। অবশ্য তাদের কোনো বৈধ উপার্জন থেকে হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৮; তাকমিলা ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩শেয়ার লিংক
আমি আমার ভাগিনার জন্য আমার পরিচিত এক দোকানে একটি র্যাকেট কিনতে গেলাম। দাম জানতে চাইলে দোকানদার বলল, দাম কি এখন দিয়ে দেবেন? আমি বললাম, দু মাস পরে দেব। তখন সে বলল, এখন দাম পরিশোধ করলে ২৫০ টাকা আর দুই মাস পরে দিলে ২৬০ টাকা। এভাবে সময়ের কারণে বেশি মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হবে কি?
নগদ বিক্রির তুলনায় বাকি বিক্রিতে মূল্য কিছু বেশি নেওয়া জায়েয আছে। তবে এ ক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে বিক্রি চুক্তির সময় পণ্যের মূল্য নগদ বা বাকি তা নির্ধারণ করতে হবে। বাকি হলে তা পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে নিবে। ঐ সময়ের ভেতর মূল্য পরিশোধ না করলে পূর্ব মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে না এবং শর্তও করা যাবে না। অন্যথায় তা সুদী কারবার হয়ে যাবে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১২৩৯; ইলাউস সুনান ১৪/১৮০; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরা ১/১২-১৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭-৮শেয়ার লিংক
আমি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কয়েকজন শ্রমিককে ধান কাটার জন্য বাড়িতে নিয়ে আসি। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছার পরই বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে থাকে। এ কারণে তারা কোনো কাজই করতে পারেনি। প্রশ্ন হল, তাদেরকে এ অবস্থায় পারিশ্রমিক দেওয়া আমার উপর জরুরি কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শ্রমিকরা যেহেতু বৃষ্টির কারণে কোনো কাজই করতে পারেনি তাই তারা কোনো পারিশ্রমিক পাবে না। তাদেরকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু দেওয়া জরুরি নয়।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/২৯; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৪৮৭শেয়ার লিংক
কিছুদিন আগে আমি একটি মুরগি যবাই সম্পন্ন করার পর সেটি লাফাতে লাফাতে পাশের ডোবায় পড়ে যায়। উঠাতে বিলম্ব হওয়ায় পানির মধ্যেই তার জান চলে যায়। পরে সেটিকে পানি থেকে উঠানো হয়। এ ব্যাপারে জনৈক আলেমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আপনাদের যবাই সহীহ হয়েছে। এর গোশত খেতে কোনো সমস্যা নেই। প্রশ্ন হল, উক্ত আলেমের কথা কি সঠিক? আসলেই কি এই মুরগির গোশত খাওয়া জায়েয হবে? জানানোর অনুরোধ রইল।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মুরগির গোশত খাওয়া যাবে। উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। যবাই সম্পন্ন হওয়ার পর প্রাণী পানিতে পড়ে গেলেও যবাইয়ে কোনো ত্রুটি আসে না। সুতরাং পানিতে পড়ার পর জান গেলেও কোনো অসুবিধা নেই।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯০; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৫৯শেয়ার লিংক
খুলনার বাগেরহাট জেলায় আমার দাদার বাড়ি। সেখানে অনেক বনজঙ্গল আছে। আর বনজঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এছাড়া বর্ষার পানি কমে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে বক নামে ফসলী মাঠে। বছরের একটা সময় আমি ও আমার বন্ধু সাদিক জঙ্গলে পাখি শিকার করে থাকি। কখনো গুলি কখনো গুলতি দিয়ে। গুলি ছোড়ার আগে আমরা বিসমিল্লাহ পড়ে নেই। এরপর শিকারকৃত পাখিটাকে জীবিত ধরতে পারলে পুনরায় বিসমিল্লাহ বলে তা যবাই করি। কিন্তু কখনো কখনো শিকারকৃত পাখি গুলির আঘাতে মারা যায়। তখন আর যবাই করা সম্ভব হয় না। প্রশ্ন হল, গুলি বা গুলতি দ্বারা শিকারকৃত পাখি যবাইয়ের আগে মারা গেলে তা খাওয়া জায়েয হবে কি?
ধারবিহীন গুলি বা গুলতি দ্বারা শিকারকৃত পাখি যবাইয়ের আগে মারা গেলে তা খাওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য গুলির অগ্রভাগ যদি ধারালো হয় এবং তা ছোড়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়ে নেওয়া হয় এবং ঐ ধারালো গুলির আঘাতে প্রাণী জখম হয়ে রক্ত বের হয় তবে ঐ প্রাণী যবাইয়ের পূর্বে মারা গেলেও তা খাওয়া জায়েয হবে।
-ইলাউস সুনান ১৮/৬০; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৩/৪৮৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৬০; আলবাহরুর রায়েক ৮/২২৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৭১শেয়ার লিংক
আমার নিজের মালিকানাধীন ৬ তলা বাড়ির ২য় তলার পুরো ফ্লোর আমার কোম্পানির অফিস। ঐ ফ্লোরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধার্থে নামাযের জন্য একটি কামরা আলাদা রাখি। এতে যোহর, আসর ও মাগরিব এ তিন ওয়াক্ত নামায পড়া হয়। ঐ কামরায় অন্য কোনো কাজ করা হয় না।
আমার জানার বিষয় হল, ক) ঐ কামরা কি নামায পড়ার দরুণ মসজিদ হয়ে যাবে?
খ) আমাদের অফিস অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হলে ঐ ফ্লোর কি লিভিং রুম হিসেবে ব্যবহার করতে পারব? বা ভাড়া দিতে পারব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো স্থান মসজিদ হওয়ার জন্য তা স্থায়ীভাবে নামাযের জন্য ওয়াকফ করে দেওয়া জরুরি। অস্থায়ীভাবে কোনো স্থানে নামায আদায়ের দ্বারা তা মসজিদ হয়ে যায় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কামরার ফ্লোরটিকে আপনি যেহেতু অস্থায়ীভাবে নামায আদায়ের জন্য নির্ধারণ করেছেন তাই তা মসজিদ হয়নি। পরবর্তীতে চাইলে ঐ ফ্লোরে নিজেরা থাকতে পারবেন এবং ভাড়াও দিতে পারবেন।
-শরহুল মুনইয়াহ ৬১৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৪শেয়ার লিংক
ক) একজন পিতার কয়েকজন সন্তান আছে। তার মধ্যে ২ জন ছেলে ও ২ জন মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে এক ছেলে পিতার অবাধ্য ও ফাসেক প্রকৃতির। সে প্রায় সময় মদ-জুয়াতে লিপ্ত থাকে এবং টাকা-পয়সা নষ্ট করে। এক্ষেত্রে পিতা জীবদ্দশায় সমুদয় সম্পদ বণ্টন করতে চাইলে এই নাফরমান ছেলেকে নিজের সম্পদ হতে একেবারে বঞ্চিত করা যাবে কি?
এমদাদুল মুফতীন (২/৮৬৭)-এ ৯৫৩ প্রশ্নের উত্তরে আছে যে, ওয়ারিস যদি নাফরমান ও ফাসেক হয় তাহলে তাকে সম্পদ থেকে মাহরূম করা জায়েয আছে, নচেৎ জায়েয নেই। এই মাসআলা সঠিক কি না? বিস্তারিত দলিল প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
কোনো সন্তান যদি মদ-জুয়া, ব্যভিচারের মতো জঘণ্য গুনাহর কাজে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে এবং এসবের পেছনে টাকা-পয়সা নষ্ট করে বেড়ায় এবং এ ব্যাপারে পিতামাতার আদেশ-নিষেধ না মানে; বরং তার বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রবল আশঙ্কা হয় যে, তাকে অর্থকড়ি, সহায়-সম্পত্তি দিলে সে গুনাহর ভেতর আরো জড়িয়ে পড়বে এবং সম্পদ নষ্ট করে ফেলবে তাহলে এক্ষেত্রে পিতামাতা এ ছেলেকে কোনো সম্পদ না দিয়ে তার অন্যান্য সৎ-চরিত্রবান সন্তানদেরকে সকল সম্পদ জীবদ্দশায় বণ্টন করে দিতে পারবেন।
ইমদাদুল মুফতীনের উক্ত মাসআলাতে এ কথাই বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, কোনো সন্তান যদি মাতাপিতার অবাধ্য হয় তাহলে শুধু এ কারণে তাকে সম্পদ থেকে একেবারে বঞ্চিত করে দেওয়া ঠিক হবে না।
তদ্রূপ কোনো সন্তান যদি শরীয়তের আহকামের প্রতি যত্নবান না হয়, কিন্তু সাধারণত গুনাহর পিছনে ব্যাপকভাবে সম্পদ নষ্ট করে না, তাহলে এ
সন্তানকেও সম্পদ থেকে একেবারে মাহরুম করে দেওয়া যাবে না। এদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত না করে তাদের ইসলাহের ফিকির করবে, তাদের হেদায়েতের জন্য দুআ করবে, আলেম-ওলামার পরিবেশে নিয়ে যাবে।-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৪৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া মুহাম্মাদিয়া ২০/৪৮৯
প্রশ্ন : খ) বিনা কারণে পিতামাতা যদি নিজের সন্তানদের সম্পদ হতে বঞ্চিত করে তার জন্য গুনাহগার হবে কি না?
এক্ষেত্রে ঐ কিতাবের ৯৫৭ নং প্রশ্নের উত্তরে আছে, এক্ষেত্রে সে শক্ত গুনাহগার হবে। এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
من قطع ميراث وارثه قطع الله ميراثه من الجنة
যদি সন্তানের নাফরমানির কারণে তাকে বঞ্চিত করে দেয় তবে আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন। উক্ত হাদীস এবং এই মাসআলা সঠিক কি না? বিস্তারিত হওয়ালাসহ জানতে চাই।
উত্তর : সন্তানকে যথাযথ কারণ ছাড়া সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে পিতামাতা শক্ত গুনাহগার হবে। আর প্রশ্নোক্ত হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাহয় কিতাবুল অসায়েতে আনাস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু আল্লামা বুসিরী রাহ. উপরোক্ত হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন।
অবশ্য এ অর্থেরই একটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় উল্লেখ হয়েছে। তা হল আরবী (অর্থ) যে ব্যক্তি কারো মীরাসকে নষ্ট করবে যা আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নির্ধারণ করেছেন, তাহলে আল্লাহ তাআলাও তাকে তার মিরাস জান্নাত থেকে মাহরূম করে দিবেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩১৬৮৮
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা এই হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৭০৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৫শেয়ার লিংক
একটা ঘটনা শুনেছি যে, হযরত ফাতেমা রা.কে দাফন করার সময় আবু যর গিফারী রা. কবরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, হে কবর! তুমি কি জানো, তোমার উদরে কাকে রাখা হচ্ছে? ইনি হলেন, প্রিয় নবীর কন্যা। এ কথা বলার সাথে সাথে কবর থেকে আওয়াজ এল, আমি কাউকে চিনি না। আমি প্রত্যেকের আমল অনুযায়ী আচরণ করি। এ ঘটনাটি কতটুকু সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ঘটনাটি সত্য নয়। এটি লোকমুখে প্রচলিত বানানো ঘটনা। হাদীস-আছার ও নির্ভরযোগ্য কোনো ইতিহাস গ্রন্থে এ ঘটনা পাওয়া যায় না।
সুতরাং দলিল-প্রমাণহীন এ কথাগুলো বর্ণনা করা জায়েয হবে না। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
প্রকাশ থাকে যে, আখেরাতের হিসাব-কিতাবের বিষয়টি যে ঈমান ও আমলের ভিত্তিতেই হবে তা দ্বীনের একটি সর্বজনবিদিত শিক্ষা, যা মুসলমান মাত্রেরই জানা আছে। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম কবরকে সম্বোধন করে উপরোক্ত কথা বলতে পারেন এই কল্পনাও মূর্খতা। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায়ই প্রিয়তম কন্যা ফাতেমা রা.কে বলে গেছেন, হে ফাতেমা! জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর। কেননা আমি উপকার-অপকারের মালিক নই।-সহীহ মুসলিম ২/১১৪; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৮৫
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই সুস্পষ্ট শিক্ষার পর সাহাবীগণ কবরকে উপরোক্ত কথা কীভাবে বলতে পারেন?
শেয়ার লিংক
আযানের জবাব দেওয়ার ফযীলত কী? শুনেছি, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য সুপারিশ বা শাফাআত করবেন। কিছুদিন আগে এক আলেম থেকে আরো একটি ফযীলত শুনলাম। তা হল, যে আযানের জবাব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পরবর্তী ফযীলত কি ঠিক? এ সম্পর্কে কি কোনো হাদীস আছে?
উভয় ফযীলতই সহীহ। তবে শাফাআত লাভের বিষয়টি মূলত আযানের পর দুআউল ওসীলা পড়ার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে- (অর্থ) জাবের রা. থেকে বর্নিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দুআ বলবে,
اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمد الوسيلة والفضيلة وابعثه مقاما محمودا الذي وعدته
তার জন্য আমার শাফাআত অবধারিত হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬১৪)
আর সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি অন্তর থেকে অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে আযানের বাক্যগুলোর জবাব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন মুআযযিন বলে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ... এরপর মুআযযিনের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর জবাবে অন্তর থেকে তাই বলবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩৮৫শেয়ার লিংক
আমি স্ত্রীকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকি। প্রতিদিন প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা বাসার বাইরে থাকি। আমার এক বছরের একটি সন্তান ও চার মাসের একটি সন্তান আছে। মাঝেমাঝে এক খৃষ্টান মহিলা এসে তাদেরকে কোলে নেয় ও আদর-যত্ন করে। এভাবে মহিলাটি প্রায়ই আসে। বাসায় থাকা অবস্থায় মহিলারা সাধারণ কাপড়ে থাকে। জানতে চাই খৃষ্টান মহিলার সাথে আমার স্ত্রীর পর্দা করা কি জরুরি না?
ঐ মহিলার সাথে আপনার স্ত্রীর পর্দা করা জরুরি নয়। তবে তার সামনে শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। শরীরের আবৃত অংশ খুলবে না।
হযরত উমর রা. বলেন, যে নারী আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বজাতি ছাড়া অন্য কারো (বিধর্মী মহিলা) সম্মুখে শরীরের আবৃত অংশ প্রকাশ করা জায়েয নয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৫৫; সুনানে সায়ীদ ইবনে মানসূর-এর বরাতে।)-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭১শেয়ার লিংক
আমাদের মহল্লার কয়েকজন বৃদ্ধ মুসল্লি মসজিদে এসেই বিভিন্ন ধরনের দুনিয়াবী কথাবার্তা ও গল্প-গুজবে লিপ্ত হয়ে যান। তাদের এ কাজ আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলার বিধান কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই মসজিদ নামায ও আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৫৩৩)
মসজিদে গিয়ে গল্প-গুজব ও অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া মসজিদের উদ্দেশ্য ও আদাব পরিপন্থী। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য দ্বীনী কাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা নাজায়েয নয়। এক্ষেত্রে মসজিদের আদব ও সম্মানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। উচ্চস্বরে বলবে না এবং অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে সে দিকেও লক্ষ্য রাখবে।
-রদ্দুল মুহতার ১/৬৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২১; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৯শেয়ার লিংক
আমার বাড়ি মসজিদের একপাশে এবং মসজিদের আরেক পাশে বাজার। তাই আমি রাস্তা দিয়ে ঘুরে না গিয়ে মসজিদের ভেতর দিয়ে বাজারে যাই। একদিন এক ব্যক্তি বললেন, মসজিদের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করা জায়েয নেই। জানার বিষয় হল, আসলেই কি মসজিদের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করা জায়েয নেই?
মসজিদের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করা এবং রাস্তা বানানো জায়েয় নেই। এতে মসজিদের আদাব ক্ষুণ্ণ হয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মসজিদকে গমনাগমনের রাস্তা বানিও না। তা নামায ও যিকিরের জন্য গ্রহণ কর। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ১২/২৪২)
তাই বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদের ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া করা যাবে না। একান্তই কখনো ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায পড়ে নিবে কিংবা কোনো যিকির-তাসবীহ পাঠ করে বের হবে। যেন হাদীসের নিদের্শনার পরিপন্থী না হয়।-মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/৪২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৯শেয়ার লিংক