আমি একবার ভুলে অযুর মধ্যে হাত ধোয়ার পর পা ধুয়ে ফেলি। এরপর মাথা মাসাহ করি। জানতে চাই, আমার অযু সহীহ হয়েছে কি? অযুর মধ্যে ক্রমানুসরণ কি জরুরি? তা ছুটে গেলে অযু সহীহ হবে কি?
আমি একবার ভুলে অযুর মধ্যে হাত ধোয়ার পর পা ধুয়ে ফেলি। এরপর মাথা মাসাহ করি। জানতে চাই, আমার অযু সহীহ হয়েছে কি? অযুর মধ্যে ক্রমানুসরণ কি জরুরি? তা ছুটে গেলে অযু সহীহ হবে কি?
হ্যাঁ, আপনার অযু হয়ে গেছে। অযুর অঙ্গগুলো ধোয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে মুখ, এরপর হাত ধোয়া অতপর মাথা মাসাহ করা এবং সবশেষে পা ধোয়া-এভাবে তরতীবের সাথে অযু করা সুন্নত। এর প্রতি যত্নবান হতে হবে। তবে কখনো এ তারতীব ছুটে গেলে অযু শুদ্ধ হয়ে যাবে। পুনরায় অযু করা লাগবে না।
-মুসনাদে আহমদ ১/৫৯, হাদীস : ৪২১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৬; কিতাবুল আছল ১/৩০; মাবসূত, সারাখসী ১/৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮শেয়ার লিংক
আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে দেখা যায়-
ক) যে কোনো একটি সূরার শুরুতে বড় আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া সুন্নত।
খ) সূরা ইখলাস তিনবার পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া মুস্তাহাব। অনুগ্রহপূর্বক এই দুই মাসআলার বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে ফয়সালা জানানোর অনুরোধ রইল।
ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত, যা দুই সূরার মাঝে পার্থক্য করার জন্য আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং মুসল্লিদেরকে পরিপূর্ণ খতম শোনাতে চাইলে যে কোনো একটি সূরার শুরুতে উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। অন্যথায় এ কারণে মুসল্লিদের খতম অপূর্ণ থেকে যাবে। আর ইমামের জন্য সব নামাযেই সূরা ফাতিহা এবং সকল সূরার শুরুতে অনুচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ বলা
মুস্তাহাব।-আসসিআয়াহ ২/১৭০; ইহকামুল কানত্বরা ফী আহকামিল বাসমালাহ ১/৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৮; মাজমুআতুল ফাতাওয়া, লাখনভী রাহ. ১/৩১৫
খ) কুরআন মজীদ খতম করার ক্ষেত্রে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার কোনো বিধান শরীয়তে নেই। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকেও এমন কোনো আমলের প্রমাণ নেই। ফিকহবিদগণ এই আমলকে অপছন্দ করেছেন। সুতরাং তারাবীতে কুরআন খতমের সময় সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার প্রচলনটি ঠিক নয়। তাই এ থেকে বিরত থাকবে এবং অন্য সূরার ন্যায় যথানিয়মে একবারই পড়বে।-ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৫০৯; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫১০
শেয়ার লিংক
ক) আমি শুনেছি, তিলাওয়াতের কারণে যত সিজদাই ওয়াজিব হোক চৌদ্দটি সিজদা করে নিলে সবগুলো সিজদা আদায় হয়ে যাবে। জানার বিষয় হল, কথাটি ঠিক কি না?
প্রশ্ন : খ) অনেক সময় দেখা যায়, নামাযে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর আলাদা সিজদা না করে নামাযের সিজদার মাধ্যমেই তা আদায় করে নেন, কিন্তু অনেক মুকতাদি সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের বিষয়টি বুঝতে না পারার কারণে নামাযের সিজদার সাথে তিলাওয়াতের সিজদার নিয়ত করে না। জানার বিষয় হল, এভাবে মুকতাদির তিলাওয়াতের সিজদা আদায় হবে কি? তাদের জন্য কি নিয়ত করার হুকুম নেই?
ক) পুরো কুরআন মজীদে তিলাওয়াতে সিজদার আয়াত মোট চৌদ্দটি। সুতরাং পুরো কুরআন মজীদ খতম করার পর চৌদ্দটি সিজদা করে নিলে এক খতমের সকল সিজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রশ্নোক্ত কথা দ্বারা যদি এটা উদ্দেশ্য হয় যে, একাধিক খতম করে কিংবা সারা জীবন যত তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে সবগুলোর জন্য চৌদ্দটি সিজদা আদায় করে নিলেই যথেষ্ট হবে-তবে এ ধারণা ঠিক নয়। বরং যতগুলো সিজদার আয়াত যতবার তিলাওয়াত করা হয়েছে সবগুলোর জন্য পৃথক পৃথক সিজদা দিতে হবে। শুধু এক বৈঠকে একটি সিজদার আয়াত একাধিকবার পড়লে সেক্ষেত্রে একটি সিজদা ওয়াজিব হবে।
প্রকাশ থাকে যে, সিজদায়ে তিলাওয়াত বিলম্ব না করে সিজদার আয়াতের পরেই আদায় করা উচিত।-শরহুল মুনইয়া ৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮
খ) নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর যদি আরো দু আয়াতের বেশি তিলাওয়াত করার পূর্বেই নামাযের রুকু-সিজদা করা হয় তাহলে নামাযের সিজদার মাধ্যমে ইমাম-মুকতাদি সকলের তিলাওয়াতের সিজদা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তিলাওয়াতে সিজদার জন্য ভিন্নভাবে নিয়ত করা শর্ত নয়। এমনকি সিজদার আয়াত পড়া হয়েছে বা সিজদা ওয়াজিব হয়েছে একথা মুকতাদিগণ না বুঝলেও তাদের সিজদা আদায় হয়ে যাবে। তবে সর্বক্ষেত্রে তিলাওয়াতে সিজদার জন্য নামাযেই পৃথকভাবে সিজদা করা উত্তম।
আর যদি সিজদার আয়াতের পর দুই আয়াতের বেশি পড়া হয় তাহলে নামাযের সিজদার মাধ্যমে তিলাওয়াতের সিজদাটি আদায়ের সুযোগ থাকবে না। সেক্ষেত্রে তিলাওয়াতের জন্য নামাযেই ভিন্নভাবে সিজদা করতে হবে।-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭০; রদ্দুল মুহতার ২/১১১শেয়ার লিংক
ফরয নামাযের তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা সূরার অংশ বিশেষ পড়লে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে কি না? এ প্রশ্নের জবাব আলেমদের নিকট থেকে দুভাবে পেয়েছি। রুকুতে যেতে বিলম্ব হয়েছে বিধায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে-কেউ এমন কথা বলেন। আর কেউ বলেন, ওয়াজিব হবে না। কোনটি সঠিক? জানালে উপকৃত হব।
ফরযের শেষ দুই রাকাতে ভুলে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলালেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার কথাটি ঠিক নয়। এবং ওয়াজিব হওয়ার পেছনে যে কারণ বলা হয়েছে তাও যথার্থ নয়। কেননা ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার পরপরই রুকু না করে বিলম্ব করলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না।
-ফাতহুল কাদীর ১/৪৩৮; শরহুল মুনইয়া ৩৩১; রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৯শেয়ার লিংক
শুনেছি, কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের কাছে দাঁড়িয়ে দুআ করলে মৃত ব্যক্তি নিজে সাহস পান এবং ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হয়। কুরআন-হাদীসের আলোকে জানতে চাই, উক্ত কথাগুলো সঠিক কি না?
প্রশ্নোল্লিখিত কথা দুটির প্রায় কাছাকাছি বক্তব্য নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় আছে, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে কিছু সময় অবস্থান করলে তার নিঃসঙ্গতাভাব দূর হয়।
অপর একটি বর্ণনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সেখানে তার মাগফিরাতের জন্য এবং সে যেন দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সেজন্য দুআ করার কথা বর্ণিত হয়েছে।
বর্ণনা দুটি নিম্নে পেশ করা হল-
এক. আবদুর রহমান ইবনে শুমাছা আলমহরী রাহ. বলেন, আমর ইবনে আস রা. যখন মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন তখন তার কাছে আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে (প্রথমে আমাকে কবরে রেখে) আমার উপর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি দিবে। এরপর একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যে পরিমাণ সময় লাগে ততটুকু সময় আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন এর দ্বারা আমার নিঃসঙ্গতার ভীতি দূর হয়ে যায় এবং আমি আমার রবের প্রেরিত দূতকে বুঝে-শুনে জবাব দিতে পারি। (সহীহ মুসলিম ১/৭৬, হাদীস : ১২১; মুসনাদে আহমদ ৪/১৯৯)
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার উববী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীসে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার কবরের পাশে অবস্থান করার কথা এজন্য বলা হয়েছে যেন এ সুবাদে সে কবরের সওয়াল-জওয়াবে দৃঢ় থাকতে পারে।-শরহুল উববী ১/৩৮৬
অপর বর্ণনাটি হল, উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাইয়্যেতকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং দুআ কর। যেন আল্লাহ তাআলা তাকে দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার তাওফীক দান করেন। কেননা সে এখনই জিজ্ঞাসিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ ২/৪৫৯, হাদীস : ৩২১৩
আরো দেখুন : আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪/৫৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৪২
শেয়ার লিংক
গত রমযানে একবার শেষ রাতে আমার খুব বমি হয়। এজন্য আমি সাহরী খেতে পারিনি। রোযা রাখারও ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু সকাল দশটার দিকে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর বেশ হালকা বোধ হতে থাকে। তখন আমি আমার বড় ভাইয়ের পরামর্শ মতো নিয়ত করে ঐ দিনের রোযা পূর্ণ করি। এতে আমার রোযা সহীহ হয়েছে কি না জানালে উপকৃত হব।&
হ্যাঁ, আপনার উক্ত রোযা আদায় হয়ে গেছে। কেননা সাহরী খাওয়া সুন্নত, এটি রোযার অংশ নয়। সাহরী না খেলেও রোযা হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ ২/৩৭৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৯৭) আর রমযান মাসে কোনো কারণে রাতে নিয়ত করতে না পারলে এবং সুবহে সাদিকের পর থেকে রোযা ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া না গেলে মধ্যাহ্নের পূর্ব (অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের আগ) পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ থাকে। তবে রাতে নিয়ত করে নেওয়াই উত্তম।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪০৪; কিতাবুল আছল ২/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৭শেয়ার লিংক
আমি ২৫ রমযানে দিনের বেলা ভুলক্রমে খেয়ে ফেলি। খাওয়া শেষে রোযা ভেঙ্গে গেছে ধারণা করে ইচ্ছাকৃত খেয়ে নেই। প্রশ্ন হল এমতাবস্থায় আমাকে ঐ রোযার কাযা এবং কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে কি না? নাকি শুধু কাযা আদায় করে নিলেই চলবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
আপনাকে ঐ রোযাটির কাযা আদায় করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, রোযা অবস্থায় ভুলবশত খাওয়ার পর রোযা ভেঙ্গে ফেলা ঠিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কোনো আলেম থেকে মাসআলা জেনে নেওয়া আবশ্যক ছিল।
-জামেউস সগীর ১৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১-৪০৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৭; ফাতহুল কাদীর ২/২৯৩শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি রমযান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফের নিয়ত করেছেন। তবে অনিবার্য কারণবশত তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি। এখন নিয়ত ভঙ্গ হওয়ার ফলে তার করণীয় কী?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি যেহেতু ইতিকাফের শুধু নিয়ত করেছে, মান্নত করেনি তাই এ কারণে তার উপর ইতিকাফ করা ওয়াজিব হয়নি। তাই ইতিকাফ না করার কারণে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হয়নি।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ৩৮২শেয়ার লিংক
আমি মোহর বাবদ ৪ ভরি স্বর্ণালংকারের মালিক। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এছাড়া যাকাতযোগ্য অন্য কোনো সম্পদ আমার নেই। আমার স্বামী তার বেতন থেকে প্রতি মাসে হাত খরচের জন্য ১০০০/-টাকা দিয়ে থাকেন, যা আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় হয়ে যায়। মাস শেষে আর কোনো টাকা অবশিষ্ট থাকে না। প্রশ্ন হল, আমাকে কি ঐ অলংকারের যাকাত আদায় করতে হবে?
আপনার কাছে যেহেতু ঐ স্বর্ণালংকার ব্যতীত রূপা, টাকা-পয়সা বা ব্যবসার সম্পদ নেই এবং আপনার মালিকানাধীন স্বর্ণও নেসাব পরিমাণ নয় তাই আপনাকে ঐ অলংকারের যাকাত আদায় করতে হবে না।
-মাবসূত সারাখসী ২/১৯০, ১৯৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৫৬-১৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৫৪শেয়ার লিংক
রশীদ আহমদ নগদ এক কোটি টাকার মালিক। এখন সে ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা লোন নিয়ে ৫০ লক্ষ টাকার মেশিনারিজ এবং ৫০ লক্ষ টাকার কাঁচামাল কিনেছে। যখন তার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে তখন তার কাছে নগদ এক কোটি টাকা, ৫০ লক্ষ টাকার মেশিনারিজ ও ৫০ লক্ষ টাকার তৈরি মাল এবং ৩০ লক্ষ টাকার কাঁচামাল ছিল। জানার বিষয় হলর, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় রশীদ আহমদ উক্ত সম্পদের মোট কত টাকার যাকাত আদায় করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী রশীদ আহমদের সম্পদের মধ্যে যাকাতযোগ্য সম্পদ হল নগদ এক কোটি টাকা এবং ৫০ লক্ষ টাকার তৈরি মাল ও ৩০ লক্ষ টাকার কাঁচামালসহ মোট এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। সে ঋণ নিয়ে যে ৫০ লক্ষ টাকার কাঁচা মাল কিনেছে তা এসব যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকার শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত আদায় করতে হবে। আর ঋণের যে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে মেশিনারিজ কিনেছে সে টাকা উন্নয়নধর্মী ঋণ হওয়ায় যাকাতযোগ্য টাকা থেকে বাদ যাবে না।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৪; আবহাছু ফিকহিয়্যাহ ফী কাযায়ায যাকাতিল মুআসিরা ১/৩১৭-৮, ৩২১; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৪৬; যাকাতুদ দুয়ূন ৬০; জাদীদ ফিকহী মাকালাত ৩/৫৫-৫৬শেয়ার লিংক
অনেকেই একাধিকবার হজ্ব করেন। প্রতিবারই ইহরামের জন্য নতুন কাপড় ক্রয় করেন। প্রশ্ন হল, ইহরামের জন্য নতুন কাপড় পরিধান করা উত্তম নাকি পুরাতন কাপড় (যা পূর্বে ইহরামের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে) পরিধান করা উত্তম?
ইহরামের জন্য দুটি নতুন কাপড় কিংবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ধৌত পুরাতন কাপড় পরিধাণ করা উত্তম। প্রতি বছর নতুন কাপড় পরিধান করা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। আর পুরাতন কাপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হলে তাই ইহরামের জন্য যথেষ্ট। তা মোটেও অনুত্তম নয়।
-মাবসূত, সারাখসী ৪/৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২০; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৫/৭৭; শরহুল মুহাযযাব ৭/২২৭শেয়ার লিংক
আমার নানার উপর হজ্ব ফরয। তিনি এখনো তা আদায় করেননি। আমরা তাকে হজ্বের জন্য তাগাদা দিয়ে আসছিলাম। এরই মধ্যে গত বছর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে অনেকদিন যাবত শয্যাশায়ী ছিলেন। একদিন আমরা তার হজ্বের বিষয়ে আলোচনা করছিলাম তখন তিনি মান্নত করেছিলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে সুস্থ করলে আগামী বছরই ইনশাআল্লাহ হজ্ব করব। আল্লাহর রহমতে তিনি এখন সুস্থ।
প্রশ্ন হল, উক্ত মান্নতের কারণে কি নানাজানের ফরয হজ্ব ছাড়াও আরেকটি হজ্ব করতে হবে? যদি দুটি হজ্ব করতে হয় তবে কোনটি আগে করবে। ফরয হজ্ব নাকি মান্নতের হজ্ব? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার নানাজানের ঐ কথার কারণে পৃথক কোনো হজ্ব তার উপর ওয়াজিব হয়নি। তাই এখন তিনি হজ্ব করলে তার ফরয হজ্বটিই আদায় হবে। অতএব আপনার নানার কর্তব্য হল, আগামী হজ্বের মৌসুমেই তার ফরয হজ্বটি আদায় করে নেওয়া।
-আতাজনীস ওয়ালমাযীদ ২/৪৭৩; আলবাহরুল আমীক ৪/২২১৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬শেয়ার লিংক
আমার এক পরিচিত লোক, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব। গত কুরবানীর ঈদে কুরবানীর জন্য একটি পশু ক্রয় করে বাজার থেকে আনার সময় পথিমধ্যে তা হারিয়ে যায়। এরপর তিনি আরেকটি পশু কিনেন। ঘটনাক্রমে পরে হারানো পশুটিও পাওয়া যায় এবং তিনি উভয়টি কুরবানী করেন।
এখন জানার বিষয় হল, তার উপর উভয়টি কুরবানী করা কি জরুরি ছিল? নাকি যেকোনো একটি কুরবানী করলেই যথেষ্ট হত? জনৈক ব্যক্তি বলেছেন, উভয়টি কুরবানী করা তার উপর জরুরি ছিল।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উভয় পশু কুরবানী করাটা উত্তম কাজ হয়েছে। এক্ষেত্রে উভয়টি কুরবানী করা জরুরি ছিল না। যেকোনো একটি কুরবানী করলেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যেত। প্রশ্নোক্ত লোকটির কথা ঠিক নয়।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪১৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/৩৬২শেয়ার লিংক
জনৈক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু এবার কুরবানীর পশু ক্রয় করতে পারেনি। এভাবেই কুরবানীর দিনগুলো চলে যায়। এমতাবস্থায় তার করণীয় কী? সে কি পশু ক্রয় করে জবাই করে দিবে?
যেহেতু কুরবানীর দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে গেছে তাই এখন আর পশু জবাই করবে না। বরং এক্ষেত্রে কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৩; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২১শেয়ার লিংক
খালিদ ৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে, যার দ্বারা মোটামুটিভাবে তার সংসার চলে। গত কয়েকদিন পূর্বে তার আম্মা ইন্তেকাল করেন। পিতা আগেই মারা গেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর তার মামারা তার আম্মার পৈত্রিক সম্পত্তি (৬ শতাংশ জমি, যার প্রতি শতাংশের মূল্য প্রায় এক লক্ষ টাকা) তার ও তার তিন বোনের নামে ১.৫ শতাংশ করে সমানভাবে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। এছাড়া খালিদের উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই। তবে বর্তমানে তার কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা আছে। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় খালিদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি না?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী খালিদ মীরাস সূত্রে ১.৫ শতাংশ জমির মালিক হয়েছে তা যেহেতু তার প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ এবং তার মূল্যও নেসাব পরিমাণের বেশি (অর্থাৎ প্রায় এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা) তাই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯
প্রকাশ থাকে যে, মায়ের সম্পত্তি তার ছেলেমেয়ের মাঝে সমান বণ্টন করা বৈধ হয়নি। কুরআন মজীদের হুকুম হল, মেয়ের তুলনায় ছেলে দ্বিগুণ মীরাসের হকদার।
শেয়ার লিংক
আমার এক চাচার বিয়ে হয়েছে বছর খানেক আগে। বিয়েতে মোহর ধার্য করা হয়নি। এখন ঐ চাচির পরিবার হতে মোহর পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। চাচার সম্পদ থেকে চাচির মোহর দেওয়া কি ওয়াজিব?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচার সম্পদ থেকে চাচির মোহর আদায় করা জরুরি। কেননা, মোহর স্ত্রীর প্রাপ্য হক। মোহর আদায় না করে স্বামী মারা গেলে স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে সম্পদ বণ্টনের পূর্বেই অন্যান্য ঋণের ন্যায় এটিও আদায় করতে হয়। মোহর যদি পূর্বে ধার্য করা না হয় (যেমন প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পূর্বে মোহর ধার্য ছিল না) তাহলে সেক্ষেত্রে মোহরে মিছিল আদায় করতে হয়। মোহরে মিছিল হল, স্ত্রীর পিতার দিকের বিবাহিতা মহিলা আত্মীয় অর্থাৎ বোন, ফুফু ও চাচাতো বোনদের মধ্যে যারা দ্বীনদারী, বয়স, সৌন্দর্য, গুণাবলি, বংশ মর্যাদা ও জ্ঞান-গরিমা ইত্যাদিতে তার মতো হয় তাদের মোহরের অনুপাতে অনুরূপ মোহর নির্ধারণ করা।
-মাবসূত, সারাখসী ৫/৬২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪৬; রদ্দুল মুহতার ৩/১৩৭শেয়ার লিংক
ফাতেমা ও সামিয়া আপন বোন। ফাতেমা আমার দুধ বোন। সে আমার মায়ের দুধ পান করেছে। সামিয়ার সাথে আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। আমি জানতে চাই, সামিয়ার সাথে আমার বিয়ে সহীহ হবে কি না?
হ্যাঁ, সামিয়ার সাথে আপনার বিয়ে সহীহ হবে। কারণ তার সাথে আপনার আত্মীয়তার বা দুধের কোনো সম্পর্ক নেই। দুধের সম্পর্ক তার বোন ফাতেমার সাথে সামিয়ার সাথে নয়।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০০; রদ্দুল মুহতার ৩/২১৭; আলমুফাসসাল ফী আহকামিল মারআ ৬/২৪১শেয়ার লিংক
চাচী-মামীর সাথে কি পর্দা করা জরুরি? কোন কোন মহিলা আত্মীয়ের সাথে দেখা করা বৈধ আর কাদের সাথে দেখা করা বৈধ নয় বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
হ্যাঁ, চাচী-মামীর সাথে পর্দা করা জরুরি। যে সকল নারীর সাথে দেখা সাক্ষাত করা বৈধ তাদের তালিকা নিম্নে দেওয়া হল -
১. আপন মা এবং বিমাতা বা সৎমা (পিতার স্ত্রী)
২. নানী, নানীর মা এভাবে উর্ধ্বতন আত্মীয়গণ
৩. দাদী, দাদীর মা এভাবে তদুর্ধ্ব মাগণ
৪. কন্যা, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী তদ্রূপ পোত্রী, প্রপোত্রী এভাবে তদনিম্ন সকল
স্তরের কন্যা।
৫. ভগ্নি (সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৬. ফুফু (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৭. খালা (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
৮. ভ্রাতুষ্পুত্রী (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়) অনুরূপ তাদের কন্যা ও তদনিম্ন কন্যাগণ।
৯. বোনের কন্যা (ভাগ্নি) আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় অনুরূপ তাদের কন্যা ও তদনিম্ন কন্যাবর্গ
১০. দুধ মা, দুধ বোন
১১. স্ত্রীর মাতৃবর্গ তথা স্ত্রীর মা (শাশুড়ি), নানী, তদুর্ধ্ব মাতাসমূহ। অনুরূপ স্ত্রীর দাদী ও তদুর্ধ্ব মাতাসমূহ
১২. স্ত্রীর কন্যা (পূর্বের স্বামী থেকে), কন্যার কন্যা ও তদনিম্ন সকল কন্যা
১৩. পুত্রের স্ত্রী, পৌত্রের স্ত্রী এবং তদনিম্ন স্তরের সকল পৌত্রের স্ত্রীগণ। অনুরূপ দৌহিত্রের স্ত্রী এবং তদনিম্ন
স্তরের দৌহিত্রের স্ত্রীবর্গ।
উপরোক্ত মহিলা আত্মীয়াগণ ছাড়া অন্যান্য মহিলা আত্মীয়া-অনাত্মীয়ার সাথে পর্দা করা জরুরি। যেমন চাচী, মামী, চাচাত, মামাত ও ফুফাত বোন ভাতিজার বৌ, ভাগিনার বৌ, ভাবী, শালিকা ইত্যাদি।
-সূরা নিসা (৪) : ২৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৩২, ১২৯; মাআরিফুল কুরআন ২/৩৫৮; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২৮শেয়ার লিংক
ক) ...।
খ) ফিকহের কিতাবে বহু স্থানে বাইয়ে সরফ শিরোনামে অনেক আলোচনা আছে। যেমন বলা হয়েছে, স্বর্ণের সাথে স্বর্ণের এবং রূপার সাথে রূপার বিনিময় করতে চাইলে বেশকম করা জায়েয নেই। অর্থাৎ ক্রয়বিক্রয় করতে চাইলে সমান সামন ছাড়া অতিরিক্ত দেওয়া হারাম হবে। সেটা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এখান থেকে প্রশ্ন জাগে যে, আমাদের দেশের টাকা যেহেতু কাগজের, স্বর্ণ বা রূপার নয় তাহলে আমরা যে নষ্ট বা ছেঁড়া-ফাটা টাকা নতুন চকচকে টাকা দিয়ে পরিবর্তন করি অথচ ছেঁড়া ২০ টাকা দিলে ভালো ১৫ টাকা দেওয়া হয় অর্থাৎ সমান সমান হওয়ার যে হুকুম কিতাবে বলা হয়েছে তা ঠিক থাকে না। তাহলে আমাদের এ পদ্ধতি কি সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে? বিস্তারিত জানিয়ে সমস্যার সঠিক সমাধান দিলে সম্মানির হুজুরের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
ক) আপনার প্রশ্নটি অস্পষ্ট। এতে কোম্পানির কারবারের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হয়নি। তাই আপনি মাসআলাটি সরাসরি বা ফোনে জেনে নিন। নতুবা পুনরায় স্পষ্ট করে প্রশ্ন লিখুন।
খ) হ্যাঁ, এক দেশীয় মুদ্রার পরস্পর লেনদেনের ক্ষেত্রেও কমবেশি করা নাজায়েয এবং সুদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দেশীয় ছেঁড়া বা পুরাতন টাকা দিয়ে নতুন টাকা কমবেশি করে আদানপ্রদান করা নাজায়েয। কারণ বর্তমানে কাগজি নোটগুলোই আদানপ্রদানের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ-রূপার মুদ্রার স্থান দখল করে নিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ছেঁড়া-ফাটা নোট যদি চালানো সম্ভব না হয় তাহলে ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবর্তন করে নিবে।
-বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/১৬৪-১৬৬; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২২; আততাযাখখুমুন নকদী ফিলফিকহিল ইসলামী ৭৩; মাজাল্লাহ মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী ৩/১৯৬৫শেয়ার লিংক
একটি মাল নগদ মূল্যে ক্রয় করলে যে মূল্য নেওয়া হয় কিস্তিতে তা ক্রয় করলে তার চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া হয়। এরূপ ক্রয়-বিক্রয় শরীয়তসম্মত কি না? জমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি এই পদ্ধতিতে ক্রয়বিক্রয় করা শরীয়তসম্মত হবে কি না?
হ্যাঁ, নগদ মূল্যের তুলনায় কিস্তিতে বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি দাম নেওয়া জায়েয আছে। তবে এক্ষেত্রে বাকির মেয়াদ এবং পণ্যের মূল্য চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। আর পণ্য নগদে হস্তান্তর করতে হবে। উভয়টি বাকি রাখা যাবে না। এছাড়া কিস্তি আদায়ে বিলম্ব হলে চুক্তির সময় যে মূল্য ধার্য করা হয়েছিল তার চেয়ে দাম বাড়িয়ে নেওয়া জায়েয হবে না।
উল্লেখ্য যে, জমি এবং তৈরি ফ্ল্যাটও কিস্তিতে কেনা জায়েয। তবে এগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময় বিক্রেতার বা ক্রেতার পক্ষ থেকে শরীয়ত পরিপন্থী শর্তাবলিও আরোপ করা হয়ে থাকে। তাই এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে হলে বিজ্ঞ আলেম থেকে এর শর্তাবলি সুনির্দিষ্টভাবে জেনে নেওয়া আবশ্যক।
হযরত শুবা ইবনুল হাজ্জাজ রাহ. (মৃত্যু : ১৬০ হি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাকাম ইবনে উতাইবা এবং হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমকে এক ক্রেতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সে অন্যের থেকে পণ্য ক্রয় করে আর বিক্রেতা তাকে বলে যে, নগদ মূল্যে কিনলে এত টাকা আর বাকিতে কিনলে এত টাকা। (এতে কোনো অসুবিধা আছে কি?) তারা উভয়ে বললেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যদি (মজলিস ত্যাগ করার পূর্বে) কোনো একটি (মূল্য) চূড়ান্ত করে নেয় তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই।
দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৮৩৬; জামে তিরমিযী ১/১৪৭; মাবসূত ১৩/৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪২; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/৭-৮শেয়ার লিংক
ঈদ ও বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোতে দেখা যায়, এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ট্রেনের আগাম টিকেট ক্রয় করে তা ক্রয়মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। আবার কখনো এমন হয় যে, কোনো যাত্রী ট্রেনের আগাম টিকেট ক্রয়ের পর সফরের সিদ্ধান্ত বাদ দেওয়ার কারণে তা অন্যত্র বিক্রি করতে বাধ্য হন। এখন আমার জানার বিষয় হল, এই উভয় ক্ষেত্রে টিকেট অন্যত্র বিক্রি করা যাবে কি না? আর বিক্রি করা গেলে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করতে পারবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোল্লিখিত উভয় ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট বিক্রি করা যাবে না। অবশ্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যে বা তার চেয়ে কমে বিক্রি করা যাবে। আর অন্যের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে টিকেট ক্রয় করা এবং এ ধরনের কারবারকে পেশা বানানো জায়েয নয়।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৪৯৭৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/৬৯৩, হাদীস : ২৩৭৬০; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৯১শেয়ার লিংক
আমি একটি মান্নত করেছি এভাবে যে, চাকরিটা যদি হয়ে যায় তাহলে ৪০ দিন ১০০ বার দরূদ শরীফ পড়ব। আলহামদুলিল্লাহ চাকরিটা আমার হয়ে গেছে। এখন জানতে চাই, ৪০ দিন দরূদ শরীফ পড়া কি আমার উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে?
হ্যাঁ, উক্ত মান্নতের কারণে আপনার উপর ৪০ দিন ১০০ বার করে দরূদ শরীফ পড়া ওয়াজিব হয়ে গেছে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৩৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ২/৩৩৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/৫৬২শেয়ার লিংক
এক লোকের কাছে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ চেয়েছিলাম। কিন্তু এক মাস পর যেহেতু তার টাকার প্রয়োজন ছিল তাই সে আমাকে টাকা দিতে চাচ্ছিল না। আমি বললাম, কসম করে বলছি, এক মাস পর আপনার টাকা দিয়ে দিব। একথা বলার পর সে আমাকে ঋণ দেয়। কিন্তু কারণবশত এক মাস পর আমি তার ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। আরো দুই মাস পর পরিশোধ করেছি। আমাকে এক লোক বলেছে, কসমের সাথে আল্লাহর নাম না বললে কসম হয় না। জানতে চাই, তার কথা কি ঠিক? আমার উল্লেখিত কসমটি কি সংঘটিত হয়নি?
ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলার নাম নিয়ে কসম করলে যেমনিভাবে কসম সংঘটিত হয় তদ্রূপ আল্লাহ তাআলার নাম না নিয়ে শুধু কসম শব্দ ব্যবহার করলেও তা সংঘটিত হয়ে যায়। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, আমি শপথ করছি আর আল্লাহ তাআলার নামে শপথ করছি-উভয়টি দ্বারাই কসম সংঘটিত হয়।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৪৭২
সুতরাং আপনার প্রশ্নোক্ত কথা দ্বারা কসম হয়ে গেছে। এরপর সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করার কারণে কসমটি ভঙ্গ হয়েছে। এজন্য আপনাকে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।
-কিতাবুল আছল ৩/১৭৫; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৩শেয়ার লিংক
আমার মামাতো ভাই এক সরকারী অফিসে চাকরি করে। অফিসের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হল কাদিয়ানী। ধীরে ধীরে ঐ লোকের সাথে মামাতো ভাইয়ের বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে সেও কাদিয়ানী হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ)
কাদিয়ানী হওয়ার পর সে মসজিদের জন্য একটি জমি ওয়াকফ করেছে। কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেব বলছেন, কাদিয়ানীর ওয়াকফ সহীহ হয় না। সুতরাং এ জমির আয় মসজিদে খরচ করা যাবে না। জানতে চাই, আসলেই কি কাদিয়ানীর ওয়াকফ সহীহ হয় না? ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক?
ইমাম সাহেব ঠিক বলেছেন। কোনো মুসলমান কাদিয়ানী মত গ্রহণ করলে তার ঈমান থাকে না। সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের ওয়াকফ সহীহ নয়। অতএব ঐ ব্যক্তির ওয়াকফ সহীহ হবে না। তবে ওয়াকফ করার পর যদি কাদিয়ানী মতবাদ ত্যাগ করে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত ওয়াকফ সহীহ বলে গণ্য হবে।
-কানূনুল আদল ওয়াল ইনসাফ লিল কাযা আলা মুশকিলাতুল আওকাফ পৃ. ৩৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৪০০, ৩৪২; আহকামুল আওকাফ, মুসতাফা যারকা ৫৬শেয়ার লিংক
যায়েদের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সে সায়েমাকে বিবাহ করেছে। পূর্বে সায়েমার বিবাহ হয়েছিল লাবীবের সাথে। লাবীব থেকে তার একজন সন্তানও আছে। যার নাম রাকীব। জানার বিষয় হল, সায়েমার বর্তমান স্বামী যায়েদ থেকে রাকীব মিরাছ পাবে কি না?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী রাকীব যায়েদের ওয়ারিশ নয়। তাই সে যায়েদ থেকে মিরাছ পাবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/২৮৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/২১৬; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ৫১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৪৭শেয়ার লিংক
কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা অবস্থায় কেউ সালাম দিলে তিলাওয়াতকারীর করণীয় কী?
কুরআন মজীদ তিলাওয়াতে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া ঠিক নয়। সালাম দিলে তার বিঘ্ন হবে এই আশঙ্কা থাকলে সালাম দেওয়া গুনাহ। তথাপি কেউ যদি তিলাওয়াতরত ব্যক্তিকে সালাম দেয় তাহলে তিলাওয়াত বন্ধ করে তার উত্তর দেওয়া আবশ্যক নয়। তবে উত্তর দিতে চাইলে ওয়াফকের জায়গা পর্যন্ত পড়ে সালামের উত্তর দিবে।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬১৭-৬১৮, ৬/৪১৫শেয়ার লিংক
ইমাম মুসলিম রাহ. কার অনুরোধক্রমে তার সহীহ মুসলিম সংকলন করতে আরম্ভ করেন? তাঁর নাম কি ছিল? এবং তার আবেদনের ভাষ্য কীরূপ ছিল? বরাতসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
তারীখে বাগদাদ, তারীখুল ইসলাম লিযযাহাবীসহ নির্ভরযোগ্য একাধিক তারীখ ও সিয়ারগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম মুসলিম রাহ. তাঁর বিশিষ্ট শাগরিদ আহমদ ইবনে সালামার (মৃত্যু : ২৮৬ হিজরী) অনুরোধে সহীহ মুসলিম সংকলন করতে আরম্ভ করেন। তারীখের ঐ সকল গ্রন্থে তার আবেদন হুবহু উদ্ধৃত হয়নি বলে আমরা তাঁর ভাষ্য কী ছিল তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। তবে সহীহ মুসলিমের ভূমিকায় স্বয়ং ইমাম মুসিলমের বক্তব্য থেকে ঐ আবেদনের ভাষ্য সহজে অনুমান করা যায়।
-সহীহ মুসলিম ১/২; তারীখে বাগদাদ ৪/১৮৬; তারীখুল ইসলাম ওয়া ওফায়াতুল মাশাহির ওয়াল আলাম ২১/৪০শেয়ার লিংক
একটি হাদীসে দেখলাম, নামাযে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এটি হল ইখতিলাস। জানতে চাই, ইখতিলাস শব্দের অর্থ কী এবং এর দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত হাদীসটি সহীহ বুখারীতে আছে (১/১০৪, হাদীস : ৭৫১)। পূর্ণ হাদীসটি হল-
عن عائشة رضي الله تعالى عنها قالت : سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الالتفات في الصلاة، فقال هو اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد.
শেয়ার লিংক