খাইরুদ্দীন - মুহাম্মদপুর, ঢাকা

৬৬৫৪. প্রশ্ন

হুযুর, কিছুদিন আগে এক দুর্ঘটনায় আমার বাম হাতের কব্জির দিকে মারাত্মক জখম হয়। ডাক্তার ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে তাতে পানি লাগাতে নিষেধ করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় আমি ওযু করব কীভাবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি বাম হাত ছাড়া অন্যান্য অঙ্গে পানি ব্যবহার করে স্বাভাবিক নিয়মেই ওযু করবেন। বাম হাতের ব্যান্ডেজের ওপর ভেজা হাত দ্বারা মাসেহ করবেন আর ব্যান্ডেজের অংশে পানি না লাগিয়ে অবশিষ্ট অংশ ধৌত করা সম্ভব হলে তা পানি দ্বারা ধুয়ে নেবেন। অন্যথায় যতটুকু অংশ ধোয়া সম্ভব তা ধৌত করবেন। অবশিষ্ট অংশ ভেজা হাতে মুছে নেবেন।

নাফে‘ রাহ. বর্ণনা করেন

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ تَوَضَّأَ وَكَفُّهُ مَعْصُوبَةٌ فَمَسَحَ عَلَى الْعَصَائِبِ وَغَسَلَ سِوَى ذَلِكَ.

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হাতের কব্জি ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় ওযু করেন। তখন তিনি ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করেন এবং অবশিষ্ট অংশ পানি দ্বারা ধৌত করেন। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১/২২৮)

* >المبسوط< للسرخسي ১/১২২ : قال (وإذا كان به جدري أو جراحات في بعض جسده فإن كان محدثا فالمعتبر أعضاء الوضوء) فإن كان أكثره صحيحا فعليه الوضوء في الصحيح، وإن كان أكثره مجروحا فعليه التيمم دون غسل الصحيح منه.

কিতাবুল আছল ১/৪২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৮০, ৪২৫; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৮

শেয়ার লিংক

খালেদ সাইফুল্লাহ - মুগদা, ঢাকা

৬৬৫৫. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমি বাসায় ওযু করে মসজিদে রওনা হই। বাসা থেকে বের হতেই আরেকজন মুসল্লির সাথে দেখা হয়। তিনি বলেন, আপনার পা গোড়ালির দিক দিয়ে শুকনো। অর্থাৎ ওযুর সময় ভেজেনি। আমি তাকিয়ে দেখি, আসলেই এই অংশটি ভেজেনি। তখন মসজিদে গিয়ে শুধু ঐ অংশটি ধুয়ে নামায আদায় করি।

প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি পুনরায় ওযু করা আবশ্যক ছিল? শুধু সেই শুকনো অংশটি ধোয়ার দ্বারা কি আমার ওযু সম্পন্ন হয়েছে? সেই ওযু দ্বারা আদায়কৃত নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, পরবর্তীতে শুধু গোড়ালির শুকনো অংশটি ধুয়ে নেওয়া ঠিক হয়েছে এবং এর দ্বারা আপনার ওযু সম্পন্ন হয়ে গেছে। অতএব ঐ ওযু দ্বারা আদায়কৃত নামাযও সহীহ হয়েছে। কেননা, ওযুতে যদি কোনো অঙ্গ শুকনো থেকে যায়, আর এর ভেতর ওযু ভঙ্গ হওয়ার কোনো কারণ সংঘটিত না হয়, তাহলে শুধু সেই অংশ ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। নতুন করে ওযু করা আবশ্যক নয়।

উবাইদ ইবনে উমাইর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَأَى رَجُلاً فِي رِجْلِهِ لُمْعَةٌ لَمْ يُصِبْهَا الْمَاءُ حِينَ يَطَّهَّرُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ : بِهَذَا الْوُضُوءِ تَحْضُرُ الصَّلاَةَ؟! وَأَمَرَهُ أَنْ يَغْسِلَ اللُّمْعَةَ وَيُعِيدَ الصَّلاَةَ.

ওমর রা. একবার এক লোককে দেখতে পেলেন, ওযুতে তার পায়ের একটি অংশ শুকনো থেকে গেছে। তাকে বললেন, এমন অসম্পূর্ণ ওযু নিয়েই নামায পড়তে চলে এসেছ? তখন তিনি তাকে সেই শুকনো অংশটি ধুয়ে পুনরায় নামায পড়ার নির্দেশ দেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৪৯)

* كتاب >الأصل< للشيباني ১/২৪ : قلت: أرأيت رجلا توضأ فبدأ برجليه قبل ذراعيه أو بذراعيه قبل وجهه أو مسح رأسه قبل أن يغسل وجهه أو ترك بعض أعضائه حتى جف ما قد غسل أو فعل ذلك في غسله ثم غسل ما بقي؟ قال: يجزيه غسله، ووضوؤه تام.

মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা ১/১৫৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৫৬; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫০

শেয়ার লিংক

আনোয়ার শাহ - মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ

৬৬৫৬. প্রশ্ন

আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় মারা যান। জানাযার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে পৌঁছতে নামায আরম্ভ হয়ে যায়। তখন আমার ওযু ছিল না। আশেপাশে ওযু করার মতো পানিও ছিল না। পরে তাড়াতাড়ি তায়াম্মুম করে নামাযে শরীক হয়ে যাই।

হুযুরের কাছে জানতে চাই, আমার কাজটি কি ঠিক হয়েছে? আমার নামায কি আদায় হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। কেননা, জানাযার নামাযের ক্ষেত্রে ওযু করতে গেলে নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নেওয়ার সুযোগ আছে।

আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন

إذَا خِفْتَ أَنْ تَفُوتَكَ الْجِنَازَةُ وَأَنْتَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ فَتَيَمَّمْ وَصَلِّ.

ওযু করতে গেলে যদি তোমার জানাযার নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে তুমি তায়াম্মুম করেই জানাযা নামায পড়ে নাও। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৫৮৬)

* >المبسوط< للسرخسي ১/১১৮ : قال (وتيمم لصلاة الجنازة في المصر إذا خاف فوتها) وكذلك لصلاة العيد عندنا.

কিতাবুল আছল ১/৯৬; আলহাবিল কুদসী ১/১২৮আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৩২২; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৪১

শেয়ার লিংক

আরিফুল ইসলাম - আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ

৬৬৫৭. প্রশ্ন

মুহতারাম, আমি একজন ইমাম। মাঝে মাঝে সিজদায় গেলে আমার রাকাত সংখ্যা স্মরণে থাকে না। সেক্ষেত্রে আমি তাকবীর বলার পর পেছনে থাকা মুসল্লীদের দিকে আড়চোখে খেয়াল করি। তারা বসে পড়লে আমিও বসে পড়ি আর তারা দাঁড়িয়ে গেলে আমিও দাঁড়িয়ে যাই।

হুযুরের কাছে জানতে চাই, এ কারণে আমার নামাযে কোনো সমস্যা হবে? এতে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

না, চেহারা কেবলামুখী রেখে শুধু আড়চোখে মুসল্লীদের ওঠা-বসা লক্ষ করে রাকাত সংখ্যা স্মরণ করলে নামাযের ক্ষতি হবে না এবং এ কারণে সাহু সিজদাও আবশ্যক হবে না।

তবে মনে রাখতে হবে, নামায পূর্ণ মনোযোগের সাথে আদায় করা কাম্য। বিশেষত ইমামের জন্য তা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাকাত সংখ্যা ভুলে যাওয়া এবং রাকাত সংখ্যা বোঝার জন্য পেছনে মুসল্লীদের দিকে খেয়াল করা অনুচিত কাজ। এমনটি যেন বারবার না হয় সেদিকে যত্নবান হওয়া উচিত।

* >الأجناس< للناطفي ১/১১৩ : وإن كان يصلي بالقوم، فلما صلى ركعتين وسجد للسجدة الثانية شك، فلا يدري هي الركعة الثانية أو الأولى، أو هي الرابعة؟ فلحظ إلى من خلفه على أنهم إن قاموا قام، وإن قعدوا قعد وتعمد لحظته لذلك، فلا بأس به، ولا سهو عليه.

ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২২; খিযানাতুল আকমাল ১/১৬০; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/২৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩১; রদ্দুল মুহতার ২/৯৪

শেয়ার লিংক

উম্মে তাবাসসুম - ডেমরা, ঢাকা

৬৬৫৮. প্রশ্ন

আমার মেয়ে হিফয পড়ছে। মাদরাসায় সবক শোনানোর আগে প্রতিদিন আমি ওর সবক শুনি। ঋতু চলাকালীনও ওর পড়া শুনতে হয়। সেদিন ঋতু চলা অবস্থায় ওর সবক শুনছিলাম। তখন ওর সবকে একটি সিজদার আয়াত ছিল।

জানতে চাচ্ছি, আমি যে এ অবস্থায় তার থেকে সিজদার আয়াত শুনেছি, পবিত্র হওয়ার পর কি আমাকে এর জন্য সিজদা আদায় করতে হবে?

উত্তর

না, পবিত্র হওয়ার পর আপনাকে এক্ষেত্রে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে হবে না। কেননা ঋতু চলা অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না।

মুগীরা রাহ. থেকে বর্ণিত

عَنْ إبْرَاهِيمَ،أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي الْحَائِضِ تَسْمَعُ السَّجْدَةَ، قَالَ : لاَ تَسْجُدُ، هِيَ تَدَعُ مَا هُوَ أَعْظَمُ مِنَ السَّجْدَةِ، الصَّلاَة الْمَكْتُوبَةَ.

ঋতু চলা অবস্থায় যে মহিলা সিজদার আয়াত শুনেছে, তার সম্পর্কে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, সে সিজদা আদায় করবে না। সে তো (এ অবস্থায়) সিজদার চেয়ে বড় ইবাদত নামাযই পড়ছে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৪৩৪৭)

কিতাবুল আছল ১/২৭২; আলফাতাওয়াস সুগরা, সদরুশ শাহীদ ১/৭০বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮

শেয়ার লিংক

ইউসুফ তাশফীন - চিটাগাংরোড, নারায়নগঞ্জ

৬৬৫৯. প্রশ্ন

আমার কাছে একজন বৃদ্ধ মানুষ কুরআন কারীম ও নামায শিখতে আসেন। আমি তাকে দুআয়ে কুনূত শেখানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে তা মুখস্থ করতে পারছেন না।

জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে তার কী করণীয়?

উত্তর

বিতির নামাযে দুআয়ে কুনূত পড়া ওয়াজিব। তবে প্রসিদ্ধ দুআটি

)اللّهُمَّ  إنَّا نَسْتَعِيْنُك(...

পড়া ওয়াজিব নয়; বরং তা পড়া সুন্নত। তাই যথাসম্ভব এ দুআটি পড়ারই চেষ্টা করবে। তবে দুআয়ে কুনূত হিসেবে যে কোনো দুআ-ইস্তিগফার পাঠ করলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন

لَيْسَ فِي قُنُوتِ الْوِتْرِ شَيْءٌ مُوَقَّتٌ، إنَّمَا هُوَ دُعَاءٌ وَاسْتِغْفَارٌ.

বিতিরের কুনূতের জন্য বিশেষ কোনো দুআ নির্ধারিত নেই; বরং তাতে যে কোনো দুআ-ইস্তিগফার পড়া যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩০৩২৮)

অতএব, প্রসিদ্ধ এ দুআটি যদি কারো জানা না থাকে, তবে তিনি দুআ হিসাবে

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.

পড়তে পারেন। কিংবা তিনবার اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ বা يَا رَبِّ-ও পড়ে নিতে পারেন।

এসব দুআ দ্বারাও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তিকে উপরোক্ত দুআ, ইস্তিগফারের বাক্য বা আরো কোনো সহজ বাক্য শিখিয়ে দিতে পারেন।

* >التجنيس والمزيد< ২/৮৮ : من لا يحسن الدعاء فى الوتر بالعربية، فإما أن يقول: ্রاللهم اغفر لناগ্ধ، ويكرر هذا ثلاث مرات أو أكثر، وهو اختيار الفقيه أبي الليث رحمة الله عليه. .. وإما أن يقول: ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنةً... إلى آخره، وهذا اختيار مشايخنا رحمهم الله. قال رضى الله عنه: وذكر الصدر الشهيد حسام الدين رحمة الله عليه في غير هذا الكتاب أنه يقول: ্রيا ربগ্ধ ثلاث مرات، ونسبه إلى فتاوى أهل سمرقند.

কিতাবুল আছল ১/১৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৪; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৭৪;

শেয়ার লিংক

ফাতেমা - লক্ষ্মীপুর

৬৬৬০. প্রশ্ন

আমাদের বাজারে বিধবার কাপড় বলে সাদা কাপড় বিক্রি করা হয়। সে হিসেবে বিধবার জন্য সাদা কাপড় কিনে আনা হয়।

জানার বিষয় হল, বিধবার জন্য ইদ্দত পালনকালে কি সাদা কাপড় পরা জরুরি? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

বিধবার জন্য ইদ্দতের সময় সাদা কাপড় পরা জরুরি নয়; বরং সাজসজ্জা প্রকাশ পায় এ ধরনের কাপড় ছাড়া সাধারণ ছাপার কাপড় ও হালকা রঙিন কাপড়ও তখন পরতে পারবে। মূল বিষয় হল, ইদ্দতের এ চার মাস দশ দিন সুন্দর ও সাজসজ্জার কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকা জরুরি।

হাদীস শরীফে এসেছে, উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

لاَ يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ فَوْقَ ثَلاَثٍ إِلَّا عَلَى زَوْجٍ، فَإِنَّهَا لاَ تَكْتَحِلُ وَلاَ تَلْبَسُ ثَوْبًا مَصْبُوغًا، إِلَّا ثَوْبَ عَصْبٍ.

আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মহিলার জন্য স্বামী ছাড়া অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক পালন করা বৈধ নয়। )স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে( এসময় সুরমা ও সাজগোজ হয় এমন রঙিন কাপড় ব্যবহার করবে না। তবে সাধারণ ও হালকা রঙিন কাপড় ব্যবহার করতে পারবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৪২)

* >تبيين الحقائق< ৩/২৬৮ : ولا يحل لها لبس الممشق، وهو المصبوغ بالمشق، وهو المغرة، ولا بأس بلبس المصبوغ أسود؛ لأنه لا يقصد به الزينة، وذكر في الغاية أن لبس العصب مكروه، وهو ثوب موشى يعمل في اليمن، وقيل ضرب من برود اليمن، ينسج أبيض، ثم يصبغ بعد ذلك، ولو لم يكن لها ثوب سوى المصبوغ، فلا بأس بلبسه للضرورة؛ إذ ستر العورة واجب، وذكر الحلواني أن المراد بالثياب المذكورة الجدد منها، أما لو كان خلقا بحيث لا تقع به الزينة، فلا بأس به.

আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩১

শেয়ার লিংক

উসামা - চট্টগ্রাম

৬৬৬১. প্রশ্ন

আমি একজন প্রবাসী। তিন মাস আগে প্রবাসে থাকাবস্থায় দেশের একটি মেয়ের সাথে আমার বিবাহ সম্পন্ন হয়। আমার পক্ষ থেকে আমার পিতা ওকীল হয়ে এ বিয়ের কার্য সম্পাদনা করেন। আমাদের দুজনেরই এটি প্রথম বিবাহ। বিয়ের মোহর হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা ধার্য হয়। এক লক্ষ টাকা নগদ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট টাকা পরে দেওয়ার কথা হয়। বিয়ের পর মাসখানেক আমার স্ত্রীর সাথে শুধু ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। মাসখানেক পর সে হঠাৎ এক অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনার দেড় মাস পর আমি দেশে ফিরি। কিছুদিন যাবৎ মেয়ের অভিভাবকরা আমার কাছে মেয়ের মোহরের অবশিষ্ট টাকা দাবি করছে।

মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, তার সাথে যেহেতু আমার ঘর সংসারই হয়নি, তাই এ অবস্থায়ও কি মোহরের বাকি চার লাখ টাকা আদায় করা জরুরি? যদি জরুরি হয় তবে কাকে দিব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিবাহের পর স্ত্রীর সাথে আপনার কোনো দেখা-সাক্ষাৎ না হলেও স্ত্রীর মৃত্যুর পর ধার্যকৃত পূর্ণ মোহর আদায় করা আপনার ওপর আবশ্যক হয়ে গেছে। কারণ বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কোনো একজন মারা গেলে এর পূর্বে তাদের পরস্পর নির্জনবাস না হলেও এক্ষেত্রে ধার্যকৃত পূর্ণ মোহরই স্বামীর ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়। অবশ্য অনাদায়ী মোহরের টাকা যেহেতু এখন আপনার স্ত্রীর মীরাছ সম্পত্তি হয়ে গেছে, আর মীরাছ অনুযায়ী স্বামী হিসেবে আপনি তার অর্ধেক সম্পদের হকদার, তাই এক্ষেত্রে মোহরের বাকি চার লাখ টাকা পুরোটাই আপনাকে আদায় করতে হবে না; বরং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এর অর্ধেক অর্থাৎ দুই লাখ টাকা রেখে দিয়ে তার ওয়ারিশদেরকে শুধু বাকি দুই লাখ টাকা দিলেই হবে।

* >المحيط البرهاني< ৪/১৫৪ : وكما يتأكد جميع المهر بالدخول، وبالخلوة الصحيحة، يتأكد بموت أحدهما.

* >شرح الجامع الصغير< لقاضي خان ২/৫২০ : فإن علم أنها ماتت أولا فنصيب الزوج من ذلك يسقط؛ لأنه ورث دينا على نفسه، فيسقط بقدر ما ملك.

বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৮৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৫৩৮; ফাতহুল কাদীর ৩/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৬

শেয়ার লিংক

সালমান - সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম

৬৬৬২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক লোক কবরস্থানের জন্য কয়েক শতাংশ জমি ওয়াকফের ওসিয়ত করেন। কিন্তু জমিটির মূল্য বেশি হওয়ায় তার ছেলেরা তাতে আপত্তি জানিয়ে অন্য একটি জমি যেন ওয়াকফ করা হয় সে আবেদন করে। ফলে ঐ লোক জমিটির ওয়াকফের ওসিয়ত প্রত্যাহার করে নেয় এবং ছেলেদের কথা অনুযায়ী অন্য একটি জমি ওয়াকফের ওসিয়ত করে।

এখন প্রশ্ন হল, ঐ লোক প্রথমেই যে জমিটি ওয়াকফের ওসিয়ত করেছে, পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া গ্রহণযোগ্য হয়েছে, নাকি পূর্বের জমিটি ওয়াকফের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে?

উত্তর

ওসিয়ত কার্যকর হয় ওসিয়তকারীর মৃত্যুর পর। ওসিয়তকারী জীবদ্দশায় ওসিয়তে রদবদল বা প্রত্যাহার করতে পারে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম জমিটিকে ওয়াকফের জন্য ওসিয়ত করার পর ওসিয়ত প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং এর পরিবর্তে অন্য জমি ওয়াকফের ওসিয়ত করা দুটোই সহীহ হয়েছে।

আতা, তাউস ও আবু শা‘ছা রাহ. বলেন

يُغَيِّرُ الرَّجُلُ مِنْ وَصِيَّتِهِ مَا شَاءَ فِي الْعِتْقِ وَغَيْرِهِ.

অর্থাৎ ওসিয়তকারী নিজ ওসিয়তের ব্যাপারে যা চায় পরিবর্তন করতে পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৬৩৮৩)

* >المحيط البرهاني< ৯/১৬৫: رجل وقف بعد وفاته وقفا صحيحا، فله أن يرجع عنه؛ لأن الوقف بعد الوفاة وصية، وللموصي أن يرجع في وصيته.

শরহু মুখতাসারিল কারখী, কুদূরী ৮/১০২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৪৮; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ৯/৯৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫৮

শেয়ার লিংক

ইসহাক খান - চান্দিনা, কুমিল্লা

৬৬৬৩. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কয়েকটি আম বাগান আছে। কয়েক বছর ধরে আম কিছুটা বড় হলেই ব্যবসায়ীরা এসে বাগানের মালিকদের সাথে চুক্তি করে সব আম কিনে নেয়। এরপর বড় হয়ে পাকা পর্যন্ত তা গাছেই রেখে দেয়।

জানার বিষয় হল, এভাবে অপরিপক্ব আম ক্রয় করে তা বড় হওয়া পর্যন্ত গাছে রেখে দেওয়া কি বৈধ আছে? আর এক্ষেত্রে আম ক্রয়ের পর গাছে রেখে দেওয়ার কারণে বাগান মালিক অতিরিক্ত টাকা দাবি করতে পারবে কি?

উত্তর

গাছে আম আসার পর এর ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে। তবে ক্রয়ের সময় আম বড় হওয়া পর্যন্ত কিংবা পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত গাছে রেখে দেওয়ার শর্ত করা যাবে না।

অবশ্য চুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত না করে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন করার পর বিক্রেতার সম্মতিতে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত বা নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত তা গাছে রেখে দিতে পারবে। এতে অসুবিধা নেই। তবে এর জন্য বিক্রেতা অতিরিক্ত কিছু দাবি করতে পারবে না।

* >شرح مختصر الكرخي< ৩/১৪০ : قال أبو الحسن: بيع جميع الثمر الموجود في شجرة جائز، وكذلك سائر الغلات من الحنطة والشعير والسمسم إذا كان موجوداً، وإن كان قبل بدو صلاحها، إذا لم يشترط الترك، اشترط أخذ ذلك من وقته أو لم يشترط.

কিতাবুল আছল ২/৪১৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৮৩; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৯০; আলবাহরুর রায়েক ৫/৩০০; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৫৪

শেয়ার লিংক

রুবেল মিয়া - নড়াইল

৬৬৬৪. প্রশ্ন

এক ব্যক্তিকে তার বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন তাদের জন্য কুরবানীর পশু (গরু) কিনে দিতে বলে। সে বাজার থেকে গরু কিনে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। তবে সে এক্ষেত্রে কিছু লাভ করে। যেমন, এক লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনলে সে তাদের কাছ থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা নেয়। এক্ষেত্রে সে তাদের কাছে গরুটি বিক্রি করছে এমন নিয়ত করে; কিন্তু তারা বিষয়টির কিছুই জানে না। তার জন্য কি এভাবে লাভ নেওয়া বৈধ হবে?

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির জন্য লাভের নামে উক্ত টাকা নেওয়া বৈধ হবে না। কারণ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি ক্রেতাদের পক্ষ থেকে ক্রয়-প্রতিনিধি মাত্র; বিক্রেতা নয়। অর্থদাতারা তাকে কেবল পশু ক্রয়ের দায়িত্ব প্রদান করেছে। সুতরাং মাঝখান থেকে তার জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতা সেজে লাভ খাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। এতে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করার গুনাহ হবে। ইতিপূর্বে এ পন্থায় লাভের নামে টাকা নেওয়া হলে তা মালিকদেরকে ফেরত দেওয়া জরুরি।

উল্লেখ্য, ক্রয়-প্রতিনিধির জন্য এভাবে বিক্রেতা সেজে লাভ গ্রহণ নাজায়েয হলেও সে অবশ্য এ কাজটি পারিশ্রমিক গ্রহণের শর্তে করতে পারে। অর্থাৎ দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই সে ক্রেতাদেরকে বলে দেবে যে, আমাকে এ কাজের জন্য এ পরিমাণ পারিশ্রমিক দিতে হবে। সেক্ষেত্রে কাজটি সম্পাদনের বিনিময়ে যে পারিশ্রমিকের চুক্তি হবে, কাজ শেষে চুক্তি অনুযায়ী তা সে পাবে। এছাড়া গরু ক্রয় করতে গিয়ে যাতায়াত ভাড়া ও চা-নাস্তার ন্যায়সংগত খরচও ক্রয়-প্রতিনিধি নিতে পারবে।

আর যদি সে তাদের কাছে গরু বিক্রি করে লাভ গ্রহণ করতে চায়, তাহলে সে তাদের পক্ষ থেকে গরু কেনার দায়িত্ব গ্রহণ না করে তাদেরকে স্পষ্ট বলে দিতে হবে যে, আমিই গরু ক্রয়-বিক্রয় করে থাকি। তাই আমি আপনাদের জন্য গরু ক্রয় না করে বরং আমি নিজেই আপনাদের কাছে কাক্সিক্ষত গরু বিক্রি করব। এভাবে যদি সে তাদেরকে পরিষ্কার বলে নেয়, তাহলে এরপর সে গরু ক্রয় করে চুক্তি ও পছন্দ অনুযায়ী তাদের কাছে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু সে নিজে তাদের কাছে গরু বিক্রি করছে এ কথা তাদেরকে কিছুই না বলে একতরফাভাবে নিজে নিজে বিক্রেতা সেজে গোপনে লাভ নেওয়া কিছুতেই বৈধ হবে না।

* >المبسوط< للسرخسي ১৯/৩৪ : فإن الوكيل بشراء شيء بعينه لو لم يضف العقد إلى الموكل؛ يقع للموكل، بخلاف النكاح، حتى إذا أضافه إلى نفسه كان العقد له دون الموكل، فعرفنا أنه معبر عنه.

আলমুহীতুর রাযাবী ৮/১৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৬৭; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ৩/৬০৩

শেয়ার লিংক

মনিরুজ্জামান - যশোর

৬৬৬৫. প্রশ্ন

আমার বাড়ির পুকুরের চারপাশে বেশ কিছু খালি জায়গা আছে। এখন আমি এলাকার একজনকে কিছু পেঁপে গাছের চারা কিনে দিতে চাচ্ছি। সে পুকুরপাড়ে সেগুলো লাগাবে এবং পরিচর্যা ও যাবতীয় দেখাশোনা করবে। উৎপাদিত ফল উভয়ে অর্ধেক হারে ভাগ করে নেব।

জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা কি বৈধ হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সহীহ হওয়ার জন্য এর মেয়াদ নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি এবং এক্ষেত্রে কমপক্ষে এতটুকু পরিমাণ সময় নির্ধারণ করতে হবে, যে সময়ের মধ্যে সাধারণত ফল এসে তা উপযুক্ত হয়ে ওঠে।

এভাবে চুক্তিটি করলে তা সহীহ হবে। এরপর উভয় পক্ষের জন্য চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত ফল দুইভাগে ভাগ করে নেওয়া বৈধ হবে।

* >المبسوط< للسرخسي ২৩/১০৩ : ولو دفع إلى رجل غراس شجر أو كرم أو نخل قد علق في الأرض، ولم يبلغ الثمر على أن يقوم عليه ويسقيه ويلقح نخله، فما خرج من ذلك فهو بينهما نصفان، فهذه معاملة فاسدة إلا أن يسمي سنين معلومة. ... ولو دفع إليه نخلا أو شجرا أو كرما معاملة أشهرا معلومة يعلم أنها لا تخرج ثمرة في تلك المدة، بأن دفعها أول الشتاء إلى أول الربيع،فهذا فاسد. ...ولو اشترطا وقتا قد يبلغ الثمر في تلك المدة وقد يتأخر عنها جاز.

আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৪১২; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/২৮৩; জামিউর রুমূয ৩/২৭৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৮৭

শেয়ার লিংক

শাহেদ আলী - ঢাকা

৬৬৬৬. প্রশ্ন

কোনো কোনো মুরগির দোকানে কখনো কখনো মুরগি জবাইয়ের সাথে সাথেই গরম পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং মুরগি পানিতে ছটফট করে মারা যায়। আমার প্রশ্ন হল, এমন মুরগি খাওয়া কি হালাল হবে?

উত্তর

এমনটি করা অন্যায় ও গুনাহের কাজ। জবাইয়ের পর মুরগির ছটফট বন্ধ হওয়ার পূর্বে এভাবে একে গরম পানিতে ছেড়ে দিয়ে কষ্ট দেওয়া মাকরুহ। তবে মুরগির জবাই যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পর যদি গরম পানিতে রাখা হয়, তাহলে এ কারণে উক্ত মুরগি খাওয়া হারাম হয়ে যায় না; বরং তা হালাল হিসাবেই বহাল থাকে। কেননা, এক্ষেত্রে মুরগি পানিতে পড়ার পর নিস্তেজ হলেও এটির মৃত্যু পানিতে পড়ার কারণে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়; বরং এর মৃত্যু জবাইয়ের কারণেই হয়েছে। তাই এটি জবাইবিহীন মৃত প্রাণীর হুকুমে হবে না।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দোকানগুলোতে ড্রেসিংয়ের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। ক্রেতা ও বাজার দায়িত্বশীলদের কর্তব্য, দোকানদারদেরকে জবাই ও ড্রেসিং সংক্রান্ত সঠিক মাসআলা শিখিয়ে সে অনুযায়ী আমল করানো।

* >المبسوط< للسرخسي ১২/৩ : قال (وإن ذبح الشاة فاضطربت فوقعت في ماء، أو تردت في موضع لم يضرها شيء)؛ لأن فعل الذكاة قد استقر فيها فإنما انزهق حياتها به، ولا معتبر باضطرابها بعد استقرار الذكاة، فهذا لحم وقع في ماء، أو سقط من موضع.

সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৫৫; কিতাবুল আছল ৫/৩৯৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৬

শেয়ার লিংক

গুফরান - বিবিরহাট, চট্টগ্রাম

৬৬৬৭. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার এক খালাকে দেখলাম, তিনি মাথা আঁচড়ানোর পর যে চুলগুলো মাথা থেকে চিরুনির সাথে চলে আসল, সেগুলো একটি পলিথিনে জমা করে রাখছেন। পলিথিনে আগের চুলও ছিল। খালাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি চুল, নখ এভাবে একত্র করে একটা পরিমাণ হওয়ার পর তা মাটিতে পুঁতে রাখি। যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া ভালো নয়।

হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার খালার কথা কি সঠিক? এর কি কোনো ভিত্তি আছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, আপনার খালা ঠিকই বলেছেন। নখ, চুল কাটার পর সেগুলো মাটির নিচে পুঁতে রাখা উত্তম। মাটিতে না পুঁতে যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। এছাড়া নারীদের চুল, নখ কাটার পর পরপুরুষের যেন দৃষ্টিগোচর না হয় সেদিক থেকেও তা নিরাপদ বিষয়।

একটি দুর্বল সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন

كَانَ يَأْمُرُ بِدَفْنِ الشَّعْرِ وَالْأَظْفَارِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুল, নখ পুঁতে রাখার নির্দেশ দিতেন। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৬৪৮৮)

ইমাম আহমাদ রাহ.-এর প্রসিদ্ধ শাগরেদ মুহান্না বলেন

سألت أحمد عن الرجل يأخذ من شعره ومن أظفاره أيدفنه أو يلقيه؟ قال: يدفنه. قلت: بلغك فيه شيء؟ قال: كان ابن عمر يدفنه.

আমি ইমাম আহমাদ রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ তার চুল, নখ কাটার পর সে কি তা (মাটির নিচে) পুঁতে রাখবে, না ফেলে দেবে?

তিনি বললেন, সে তা পুঁতে রাখবে। আমি বললাম, এ ব্যাপারে আপনার কাছে কি (হাদীস-আছারের) কোনো বর্ণনা পৌঁছেছে? তিনি বললেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. তা পুঁতে রাখতেন। (কিতাবুত তারাজ্জুল, পৃষ্ঠা ৬০)

ইবরাহীম ইবনে মুহাজির রাহ. মুজাহিদ রাহ. সম্পর্কে বলেন

أنَّهُ كَانَ إذَا قَلَّمَ أَظْفَارَهُ دَفَنَهَا، أَوْ أَمَرَ بِهَا فَدُفِنَتْ.

তিনি নখ কাটার পর সেগুলো মাটির নিচে পুঁতে দিতেন। অথবা তার আদেশে মাটির নিচে পুঁতে দেওয়া হত। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬১৭৫)

সুতরাং নখ, চুল কাটার পর তা মাটির নিচে পুঁতে রাখাই উত্তম।

ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪১; মাজমাউল আনহুর ৪/২২৬; আলমুজতাবা, যাহেদী ৫/৩৩৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৫

শেয়ার লিংক

শাকের - নড়াইল

৬৬৬৮. প্রশ্ন

আমার বড় আপু আমাকে একটি মিশ্রধাতুর আংটি গিফট করেছেন। এতে নাকি রুপাও আছে। তাই আপু আমাকে তা ব্যবহার করতে বলছেন। পরে আমি তা নিয়ে জুয়েলারিতে যাই। তারা বলছে, এতে রুপা নেই। পুরোটাই অন্যান্য ধাতুর  (লোহা, দস্তা, কাঁসা ইত্যাদির) যা বাহির থেকে দেখতে রুপার মতো মনে হয়। হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমি কি তা ব্যবহার করতে পারব?

উত্তর

না, আংটিটি যেহেতু রুপার নয়, তাই আপনার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা পুরুষের জন্য কেবল রুপার আংটি ব্যবহার করা জায়েয। সেটিও এক মিসকাল (৪.৩৭৪ গ্রাম)-এর কম। রুপা ছাড়া অন্যান্য ধাতুর আংটি ব্যবহার করা নিষেধ।

হাদীস শরীফে এসেছে, আমর ইবনুল আস রা. বলেন

أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي يَدِهِ خَاتَمٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَأَعْرَضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْهُ، فَلَمَّا رَأَى الرَّجُلُ كَرَاهِيَتَهُ ذَهَبَ فَأَلْقَى الْخَاتَمَ، وَأَخَذَ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ فَلَبِسَهُ، وَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: هَذَا شَرٌّ، هَذَا حِلْيَةُ أَهْلِ النَّارِ، فَرَجَعَ فَطَرَحَهُ، وَلَبِسَ خَاتَمًا مِنْ وَرِقٍ، فَسَكَتَ عَنْهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল। তাকে স্বর্ণের আংটি পরিহিত দেখে নবীজী তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ঐ ব্যক্তি যখন দেখল যে নবীজী তা অপছন্দ করছেন তখন গিয়ে সে ঐ আংটি খুলে ফেলল। পরে একটি লোহার আংটি বানালো এবং সেটি পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল। তখন তিনি বললেন, এটা তো আরো মন্দ। এটা জাহান্নামীদের অলংকার। তখন সে লোহার এই আংটিও ফেলে দিল। এরপর সে একটি রুপার আংটি পরল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। (আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ১০২১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫১৮)

জামে তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, এক লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল

مِنْ أَيِّ شَيْءٍ أَتَّخِذُهُ؟ قَالَ: مِنْ وَرِقٍ، وَلَا تُتِمَّهُ مِثْقَالًا.

আমি কীসের আংটি বানাব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রুপা দিয়ে বানাও। তবে এক মিসকাল পূর্ণ কর না। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৭৮৫)

অবশ্য অন্য ধাতুর আংটি যদি ওপরে রুপা দিয়ে এভাবে মোড়ানো থাকে যে, ভেতরের সেই ধাতু বাহির থেকে দৃশ্যমান হয় না, তবে তা ব্যবহার করা পুরুষের জন্য জায়েয আছে।

হাদীস শরীফে এসেছে, মুআইকীব রা. বলেন

كَانَ خَاتَمُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ حَدِيدٍ مَلْوِيٌّ عَلَيْهِ فِضَّةٌ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আংটি ছিল রুপা দিয়ে মোড়ানো লোহার। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২২১)

* >بدائع الصنائع< ৪/৩১৬-৩১৭ : (ومنها) الفضة ... فيكره للرجال استعمالها في جميع ما يكره استعمال الذهب فيه إلا التختم به، إذا ضرب على صيغة ما يلبسه الرجال ولا يزيد على المثقال؛ لما روينا من حديث النعمان بن بشير رضي الله عنهما. ... وأما التختم بما سوى الذهب والفضة من الحديد والنحاس والصفر فمكروه للرجال والنساء جميعا؛ لأنه زي أهل النار لما روينا من الحديث.

আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৪৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭০; আলমুহীতুর রাযাবী ৫/১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৫৯ 

শেয়ার লিংক