সাদেক হোসেন - চাঁদপুর

৫০১৩. প্রশ্ন

আমাদের স্কুলমাঠে একবার জানাযার নামায হয়। আমি অযু করে জানাযার নামাযে শরীক হই। কাতারে দাঁড়ানোর পর পাশের এক ভাই বললেন, জুতা খুলে সামনে রেখে দিন। জুতা পরে নামায হয় না। আরেক ভাই বললেন, জুতার উপরে দাঁড়ালেও নামায হবে। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার কি জুতা পরে নামায পড়াটা ঠিক হয়েছে, নাকি খালি পায়ে নামায পড়া আবশ্যক ছিল?

উত্তর

জানাযার নামাযের জায়গা যদি পাক হয় এবং জুতার উপর-নিচও পাক থাকে তাহলে জুতা পরেও জানাযার নামায পড়া যাবে। এক্ষেত্রে জুতা খোলা জরুরি নয়। অবশ্য জুতা খুলে খালি পায়ে নামায পড়লে তাতেও কোনো ক্ষতি নেই। আর যদি জায়গা অপবিত্র হয় বা জুতার নিচে নাপাকি থাকার আশংকা হয় তাহলে উক্ত জুতা পরে জানাযার নামায পড়া যাবে না। বরং এক্ষেত্রে জুতা খুলে জুতার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়া যাবে, যদি উপরাংশে নাপাকি না থাকে।

-উমদাতুল কারী ৪/১১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০; আলহাবিল কুদসী ১/১৫৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/৩৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৯; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৩৯৬

শেয়ার লিংক

রাহাত - সিলেট

৫০১৪. প্রশ্ন

একদিন আমি বাগানে মাটির কাজ করি। কাজ শেষে অযু-ইস্তেঞ্জা করে যোহরের নামায আদায় করি। মাটির কাজ করার কারণে নখের ভেতরে মাটি ঢুকেছিল। অযু করার সময় সম্পূর্ণ পরিষ্কার করতে পারিনি। কিছু মাটি নখের ভেতর থেকে গিয়েছিল। জানার বিষয় হল, আমার অযু কি হয়েছে? এবং তা দ্বারা আদায়কৃত নামাযের হুকুম কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপানার অযু হয়ে গেছে এবং উক্ত অযু দ্বারা আদায়কৃত নামাযও সহীহ হয়েছে। কারণ নখের ভেতরে লেগে থাকা মাটি বা ময়লা পানি পৌঁছার জন্য প্রতিবন্ধক নয়। তাই এতে অযু-গোসলের ক্ষতি হয় না। তবে নখ বেশি বড় না রাখা উচিত। কারণ এটা সুন্নত পরিপন্থী। আর বড় হওয়ার কারণে তাতে ময়লা আটকে কখনো কখনো ভেতেরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রেও বাধা হওয়ার আশংকা থাকে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২; আলবাহরুর রায়েক ১/৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪

শেয়ার লিংক

মাহবুব - কিশোরগঞ্জ

৫০১৫. প্রশ্ন

জনৈক মহিলার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে ৪০দিন স্রাব চালু ছিল। এরপর ১২ দিন পবিত্র থাকার পর আবার স্রাব চালু হয়েছে। এখন তার পবিত্রতার হুকুম কী?

উত্তর

নেফাস ও পরবর্তী হায়েযের মাঝে ন্যূনতম ১৫ দিন পবিত্রতা থাকা শর্ত। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত মহিলার নেফাস শেষ হয়ে যাওয়ার ১২দিন পর যে স্রাব চালু হয়েছে তা হয়েয নয়, বরং ইস্তেহাযা। মহিলাটি এক্ষেত্রে আরো তিন দিনসহ মোট ১৫ দিন পবিত্রতা গণ্য করবে। আর ইস্তেহাযার হুকুম হল, নামায-রোযার বিরতি হয় না। তবে প্রতি ওয়াক্তের শুরুতে নতুন অযু করে নিতে হয়। আর যদি ১৫ দিন পরও স্রাব চলতে থাকে তাহলে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেমের কাছে অবস্থা জানিয়ে মাসআলা জেনে নেবে। কেননা ১৫ দিনের পর স্রাব আসলে তা হায়েয হতে পারে।

-হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৭৬; মাজমাউল বাহরাইন পৃ. ৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৮৫

শেয়ার লিংক

খালেদ - যশোর

৫০১৬. প্রশ্ন

শুক্রবার জুমুআর পূর্বে কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমে গিয়েছি। কাপড় ধোয়ার পরপরই পানি শেষ হয়ে যায়। কাপড়গুলো পবিত্র ছিল, শুধু ময়লা হয়েছিল। আর আমার উপর গোসলও ফরয ছিল না। জুমুআর উদ্দেশ্যে গোসল করব। এদিকে নামাযের সময় হয়ে গিয়েছে। তাই কাপড় ধোয়া সাবান মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করে নামায পড়ে নিয়েছি। জানার বিষয় হল, সেই পানি দিয়ে গোসল করা কি আমার জন্য ঠিক হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কাপড় যেহেতু পবিত্র ছিল তাই এক্ষেত্রে কাপড় ধোয়া ওই পানি পবিত্র এবং তা الماء المستعمل তথা ব্যবহৃত পানির হুকুমে নয়। সেই পানি দিয়ে গোসল করা সহীহ হয়েছে। এবং উক্ত নামাযও সহীহ হয়েছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৪৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৪০; শরহুল মুনয়া পৃ. ৯০; হালবাতুল মুজাল্লী ১/২৭৭

শেয়ার লিংক

হাসিবুর রাহমান - বান্দরবন

৫০১৭. প্রশ্ন

আমরা বান্দরবনে পাহাড়ের উপর বসবাস করি। গরমকালে পানির অনেক সংকট হয়। বহু নিচ থেকে পানি আনতে হয়। তাই একবার পানি আনলে কমপক্ষে এক দিন তা দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কখনো কখনো বিড়াল পানিতে মুখ দিয়ে দেয়। তাই জানার বিষয় হচ্ছে, বিড়ালের মুখ দেওয়া সেই পানি কি আমরা অযু-গোসলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারব?

উত্তর

ভালো পানি থাকলে বিড়ালের ঝুটা পানি ব্যবহার করা মাকরূহ। তবে বিড়ালের ঝুটা-পানি ছাড়া অন্য ভালো পানি না থাকলে পবিত্রতার জন্য ঐ পানি ব্যবহার করা যাবে। কারণ বিড়ালের ঝুটা নাপাক নয়। হাদীস শরীফে আছে হযরত আবু কাতাদা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ، إِنّمَا هِيَ مِنَ الطّوّافِينَ عَلَيْكُمْ، أَوِ الطّوّافَاتِ.

নিশ্চয় বিড়াল (বিড়ালের ঝুটা) নাপাক নয়। কারণ এটি এমন প্রাণী, যা তোমাদের আশপাশে অধিক পরিমাণে বিচরণ করে থাকে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯২

উল্লেখ্য, পানির পাত্রসমূহ ভালোভাবে ঢেকে রাখা উচিত। যেন বিড়াল পাত্রে মুখ দিতে না পারে।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/২৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৫; ফাতহুল কাদীর ১/৯৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৬৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩১

শেয়ার লিংক

কাজী আবু সালেহ - পার্বত্য চট্টগ্রাম

৫০১৮. প্রশ্ন

আমি যে এলাকায় থাকি সেটা খ্রিস্টান অধ্যুষিত হওয়ায় সেখানে কোনো মসজিদ নেই। পাশর্^বর্তী এলাকায় যেখানে মসজিদ আছে ওখানকার আযানের শব্দ এখানে পৌঁছে না। এ অবস্থায় সাধারণত দু-চারজন একত্র হয়ে জামাতে নামায আদায় করলে আমরা আযান দিয়ে নিই। প্রশ্ন হল, যদি একাকী নামায পড়ি তাহলেও কি আযান দিয়ে নামায পড়া জরুরি? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

যে এলাকায় মসজিদ নেই কিংবা মসজিদ এত দূরে যে, আযান শুনতে পাওয়া যায় না সেখানে জামাত করে নামায আদায় করলে কিংবা একাকী নামায পড়লে উভয় অবস্থায়ই আযান দেওয়া উত্তম। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের আযান দিয়ে নামায আদায় করা ঠিক আছে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪

শেয়ার লিংক

সাদিক তায়্যিব - উত্তরা, ঢাকা

৫০১৯. প্রশ্ন

মুহতারাম! আমি ঢাকার একটি বড় মসজিদে তারাবীহ পড়াই। এবার রমযানের ২৭ তারিখে তারাবীর নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার তিন-চার আয়াত মনে মনে পড়ি, এরপর স্মরণ হলে উচ্চস্বরে সূরা ফাতিহা শুরু থেকে পড়ি। সেদিন মসজিদে ৩-৪ হাজার মুসল্লী ছিল। অনেক বড় জামাত ফেতনা হতে পারে- একথা ভেবে সাহু সিজদা দিইনি। মুহতারামের নিকট জানার বিষয় হচ্ছে, আমার এই কাজটি কি ঠিক হয়েছে? জুমা ও ঈদের নামাযের মত তারাবীর জামাত বড় হলে সাহু সিজদা ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ আছে কি না?

উত্তর

নামাযে সাহু সিজদা ওয়াজিব হলে তা দিয়ে দেওয়াই কর্তব্য। আর সাহু সিজদা দিলে ফেতনা হবে- এ কথা সবসময় ঠিক নয়। কারণ সাহু সিজদার বিধান প্রায় সব মুসল্লী জানে। তবে জুমা ও ঈদের জামাতসহ অন্য কোনো নামাযের বড় জামাতে সাহু সিজদা দেওয়ার কারণে মুসল্লীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকলে সেক্ষেত্রে সাহু সিজদা না দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তির আশংকা হলে আপনার সাহু সিজদা না দেওয়াটা ঠিক আছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে মাইকের ব্যবস্থা থাকায় সাহু সিজদার কারণে মুসল্লীদের বিভ্রান্তি হওয়ার আশংকা কম। তাই এ ধরনের ক্ষেত্রেও সাহু সিজদা করে নেওয়াই উচিত।

-কিতাবুল আছল ১/৩২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; মাজমাউল আনহুর ১/২২০; রদ্দুল মুহতার ২/৯২

শেয়ার লিংক

মাওলানা সানাউল্লাহ - খুলনা

৫০২০. প্রশ্ন

জানাযার খাটিয়া বহনের সুন্নত তরীকা কী? আমাদের এলাকায় এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি দেখা যায়। কখনো দেখা যায় কিছুদূর বহন করার পর যারা বহন করেনি তারা বহন করে। আবার কখনো পায়া পরিবর্তন করে নেয়। তাই এ বিষয়ে আমাদেরকে নির্ভরযোগ্য তথ্যসহ জানালে খুবই উপকার হবে।

উত্তর

জানাযার খাটিয়া বহন করার পদ্ধতি হল, খাটিয়ার চার পায়া চারজন (কাঁধে) বহন করবে। এবং প্রত্যেকে কাঁধ পরিবর্তন করে সবগুলো পায়া বহন করবে। এভাবে একেকজনের সবগুলো পায়া ধরা সুন্নতের অন্তুর্ভুক্ত। সবগুলো পায়া বহন করার নিয়ম ফক্বীহগণ এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, প্রথমে একজন সামনের ডান পায়া কাঁধে নেবে। তারপর পেছনের ডান পায়া, এরপর সামনের বাম পায়া, তারপর পেছনের বাম পায়া কাঁধে নেবে।

উল্লেখ্য, প্রয়োজন হলে কিছু লোক খাটিয়ার মাঝেও ধরতে পারবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৩৯৭; কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ২৩৩; কিতাবুল আছল ১/৩৪৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৬৯; ফাতহুল কাদীর ২/৯৬; ইলাউস সুনান ৮/২৮৯

শেয়ার লিংক

শাকিল আহমাদ - সাদুল্লাপুর, পাবনা

৫০২১. প্রশ্ন

মুহতারাম, গত ২৩শে আগস্ট আমার এক নিকটাত্মীয় মারা যায়। সেই মায়্যেতকে গোসল করানোর জন্য আমি ও গ্রামের ইমাম সাহেবসহ আরেকজন ছিলাম। গোসল শেষে ইমাম সাহেব হালকাভাবে চেহারাটা মুছে মায়্যেতকে অযু করিয়ে দিলেন। তারপর পুরো চেহারা ভালোভাবে না মুছিয়েই দাফন করাতে চাইলেন। তখন আমি বললাম পুরো শরীর মুছবেন না কেন? কারণ আমার জানা মতে পূর্ণ শরীর মুছতে হবে। তখন ইমাম সাহেব বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক সাহাবী মারা যাওয়ার পর জান্নাতের পানি দ্বারা তাকে গোসল করালেন এবং শরীর থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাফন করে দিলেন। (অর্থাৎ কাফন পরিয়ে) দিলেন। সুতরাং পুরো শরীর ভালোভাবে মুছার প্রয়োজন নেই।

এখন হুযুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল-

১. মায়্যেতকে গোসলের পর অযু করানো যাবে কি না? না হলে এর বিধান কী?

২. মায়্যেতকে গোসলের পর পুরো শরীর ভালোভাবে মুছতে হবে কি না? এবং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের কথা সহীহ কি না? দলীলসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

১. মায়্যেতকে গোসলের আগেই যথানিয়মে অযু করিয়ে দেওয়া সুন্নত। গোসলের পর অযু করানোর নিয়ম নেই। তাই আগে অযু করানো না হলে পরে আর করাবে না। কেননা গোসলের দ্বারা অযুও হয়ে যায়। সহীহ বুখারীর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, উম্মে আতিয়্যাহ রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক মেয়ের ইন্তেকালের পর তার গোসল প্রসঙ্গে মহিলাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন-

ابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا، وَمَوَاضِعِ الوُضُوءِ مِنْهَا.

অর্থাৎ তোমরা (গোসল করানোর ক্ষেত্রে) তাঁর ডান দিক থেকে এবং অযুর স্থানসমূহ দ্বারা শুরু করো। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৫৫)

উক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. বলেন-

يوضأ وضوءه للصلاة أولاً.

অর্থাৎ মায়্যেতকে প্রথমে নামাযের অযুর মত অযু করাবে। (শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/১৮৭)

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-

يُبْدَأُ بِالْمَيِّتِ فَيُوَضّأُ وُضُوءَهُ لِلصّلاَةِ ثُمّ يَبدَأ بِمَيَامِنِه.

মায়্যেতকে (গোসলের শুরুতে) প্রথমে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করাবে। এরপর তার ডান দিক থেকে (ধোয়া) শুরু করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১১০০১)

২. উক্ত কথা ঠিক নয়। নিয়ম হল, গোসল দেয়ার পর তার পুরো শরীর শুকনো পবিত্র কোনো কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়া। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. মায়্যেতের গোসলের বিবরণ দেওয়ার পর বলেন-

ثم تنشفه في ثوب.

অর্থাৎ এরপর কোনো কাপড় দিয়ে তার শরীর মুছে দিবে। (কিতাবুল আছল ১/৩৪৭)

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সাহাবীকে জান্নাতের পানি দ্বারা গোসল করিয়েছেন- এ কথাই ঠিক নয়। হাদীসের কিতাবে এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না; বরং হাদীস শরীফে এসেছে, হামযা ও হানযালা রা. গোসল ফরয অবস্থায় যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে বলেছেন-

رَأَيْتُ الْمَلَائِكَةَ تُغَسِّلُهُمَا.

‘আমি তাদের দুজনকে ফেরেশতাদের গোসল করাতে দেখেছি।’ (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১২০৯৪)

-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২২৫; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৯

শেয়ার লিংক

আহসান হাবীব - বাসাবো, ঢাকা

৫০২২. প্রশ্ন

আমি বালেগ হওয়ার পর ৭টি রমযান অতিবাহিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে শেষ ৩ রমযান আমি ঠিকমত রোযা রেখেছি। কোনো রোযা ছাড়িনি। বাকি ৪ রমযানে নিয়মিত রোযা রাখিনি। কোনো দিন রোযা রেখে বিনা ওজরে ভেঙে ফেলেছি। কখনো মায়ের চাপাচাপিতে ভেঙেছি। আবার কোনো দিন একেবারেই রাখিনি। তবে মনে হয়, রেখে ভেঙে ফেলার সংখ্যাই বেশি। এভাবে কত রোযা গেছে তার সঠিক হিসাব আমি বলতে পারছি না।

আমার জানা মতে, বিনা ওজরে রোযা ভাঙলে কাফফারা আদায় করতে হয়। তাই একবার লাগাতার ৬০টি রোযা রেখেছি। এ অবস্থায় আমার ঐ রোযাগুলোর কাযা কাফফারা আদায়ের ব্যাপারে শরীয়তের মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিগত রমযানগুলোতে যেসব রোযা রেখে বিনা ওজরে ভেঙে ফেলেছেন সেসব রোযার জন্য একটি কাফফারা আদায় করাই যথেষ্ট হয়েছে। এখন আপনাকে বিগত রমযানগুলোতে যে কয়টি রোযা ভেঙেছেন কিংবা একেবারেই রাখেননি এগুলোর হিসাব করে প্রত্যেকটির জন্য একটি করে রোযা কাযা করে নিতে হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/১০২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩

শেয়ার লিংক

আবু হুরাইরা - গোপালগঞ্জ

৫০২৩. প্রশ্ন

আমার পিতার ইন্তেকালের পর আমিই আমার ভাই-বোনদের দেখাশোনা করছি। কিছুদিন আগে আমার ছোট বোনের বিবাহ দিই। বিবাহে আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যদের আপ্যায়ন করি। উক্ত আপ্যায়নে অলঙ্কার ছাড়া নগদ অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী মিলে প্রায় ৪০ হাজার টাকার উপঢৌকন উঠেছে। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল এ উপঢৌকনের মালিক কে? সবগুলো আমার বোনকে দিয়ে দিতে হবে কি না? আমাদের ব্যবহার করার অনুমতি আছে কি না? মাসআলাটির সঠিক সমাধানে হুযুরের সুমর্জি কামনা করছি।

উত্তর

বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে যেসকল উপঢৌকন দেওয়া হয় তা যদি নির্দিষ্ট কাউকে দেওয়া হয়েছে বলে বোঝা যায় বা উপহারদাতা নির্দিষ্ট কারো নাম বলে দেয় তাহলে সে-ই উক্ত উপহারের মালিক বলে বিবেচিত হবে। যেমন উপহারদাতা মেয়ের নাম বলে দিলে বা মেয়ের একান্ত ব্যবহার্য জিনিসপত্র উপহার দিলে তার মালিক মেয়ে হবে। এসব উপহার তার অনুমতি ছাড়া অন্য কারো নেওয়া বৈধ হবে না। আর অন্যান্য উপহারের মালিক কে হবে- সে বিষয়টি প্রত্যেক সমাজের প্রচলন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। যেমন কোনো সমাজে যদি এমন প্রচলন থাকে যে, বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে অনির্দিষ্টভাবে যা কিছু উপহার দেওয়া হয় তা অভিভাবকদেরকেই দেওয়া উদ্দেশ্য থাকে তবে অভিভাবকগণই তার মালিক বলে বিবেচিত হবে। চাই উক্ত উপহার নগদ অর্থ হোক বা ঘরে ব্যবহারের মত কোনো সামগ্রী বা অন্য যা-ই হোক। আর কোথাও অন্য কোনো প্রচলন থাকলে সেখানে তা-ই গ্রহণযোগ্য হবে।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়ার যে প্রচলন রয়েছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে সহীহ নয়। এটা কুপ্রথার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া যেভাবে চেয়ার টেবিল নিয়ে উপহার গ্রহণ ও নিবন্ধনের আয়োজন করা হয় তা শুধু শরীয়তপরিপন্থীই নয়; বরং অনেক দৃষ্টিকটু।

প্রচলিত পদ্ধতিতে যেসকল আপত্তিকর বিষয় রয়েছে তার মধ্যে -

১. কেউ উপহার না দিলে তাকে ভিন্ন চোখে দেখা।

২. অনেকে ইচ্ছা বা সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও চক্ষু লজ্জার কারণে উপহার দিয়ে থাকে। আর এভাবে দেওয়ার কারণে তা বৈধও হয় না।

৩. উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপহার না দিতে পারলে সমালোচিত হওয়ার ভয়ে অনেকে দাওয়াতে শরিক হওয়া থেকে বিরত থাকে।

৪. তাছাড়া কৃত্তিমতা, লৌকিকতা, সৌজন্য রক্ষা ও বড় কোনো উপহার দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বাহবা কুড়ানোর মানসিকতা তো রয়েছেই। আর এ সবই ইসলামের শিক্ষা পরিপন্থী। তাই বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে এধরনের উপহার দেওয়া-নেওয়ার প্রচলন সংশোধনযোগ্য।

-ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/১১৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৮০; আলমুলতাকাত ফিল ফাতাওয়া পৃ. ৩০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৮৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৯৬

শেয়ার লিংক

আব্দুল আলীম - কেচুয়ারপুর, শরীয়তপুর

৫০২৪. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ আছে। মসজিদের জন্য যিনি জমি ওয়াকফ করেছিলেন। ওয়াকফ করার অনেক আগে (২০-২৫ বছর) সেই জমিতে তার দাদাকে কবর দেওয়া হয়েছিল। ওয়াকফ করার পর সেই জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের শেষের এক-দুই কাতার সেই কবরের উপর নির্মিত হয়েছে এবং এভাবেই দীর্ঘদিন থেকে নামায আদায় করা হচ্ছে। এখন কেউ কেউ বলছেন, কবরের উপর মসজিদ বানানো হারাম। তাই অনেকে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলতে চাচ্ছেন। অথচ মসজিদের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, আসলেই কি উক্ত মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে?

আরেকটি বিষয় জানতে চাচ্ছি, সম্প্রসারণের প্রয়োজনে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ঐ কবরটি যেহেতু অনেক পুরাতন ছিল তাই সেটি সমান করে তাতে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হয়েছে। মসজিদে নববীর নীচেও মুশরিকদের কবর ছিল। সেগুলোকে সমান করে তার উপর মসজিদে নববী নির্মাণ করা হয়েছে। সুতরাং নিচে কবর ছিল এই অজুহাতে প্রশ্নোক্ত মসজিদের বিপক্ষে কথা বলা এবং তা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা অন্যায়। জেনে রাখা দরকার যে, প্রশ্নোক্ত মসজিদটি শরয়ী মসজিদ। সুতরাং এর বিরুদ্ধে কথা বলা মসজিদের বিরোধিতা করা এবং তা ভেঙে ফেলা মসজিদ ভাঙ্গার শামিল।

উল্লেখ্য, মালিকানাধীন জমির কবরের লাশ পুরাতন হয়ে মাটির সাথে একেবারে মিশে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে সে কবর সমান করে দিয়ে তাতে মসজিদ বানানো বা সম্প্রসারণ করার সুযোগ রয়েছে।

আর প্রশ্নে ‘কবরের উপর মসজিদ বানানো হারাম’ হওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা কবর অক্ষত রেখে (অর্থাৎ কবরের চিহ্ন বহাল রেখে) তাতে মসজিদ বানানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই পুরাতন কবরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তার উপর মসজিদ নির্মাণ করতে কোনো দোষ নেই।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫২৪, ৫৩১; উমদাতুল কারী ৪/১৭৯; শরহে মুসলিম, নববী ৫/৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৩৬

শেয়ার লিংক

আহসান হাবীব - রাজশাহী

৫০২৫. প্রশ্ন

কখনো কখনো বাগানের মালিকদের থেকে এক-দুই বছরের জন্য অগ্রিম বাগানের আম ক্রয় করে নিই। আবার কখনো আম ছোট থাকাবস্থায় ক্রয় করি। পাকার সময় হলে আম পেড়ে নিয়ে আসি। হুযুরের কাছে জানার বিষয় হল, আমাদের এই লেনদেন বৈধ কি না? বৈধ না হলে বৈধ কোনো পদ্ধতি আছে কি না জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

গাছে ফল হওয়ার আগে বাগানের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়। এ ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। জাবের রা. বলেন-

نَهَى النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنْ بَيْعِ السِّنِينَ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম بيع السنين তধা অগ্রিম এক বা একাধিক বছরের জন্য (গাছের ফল) বিক্রি করা থেকে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩৬)

সুতরাং গাছে আম হওয়ার আগেই অগ্রিম আমের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হবে না। তবে বাগানের মালিকদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত আলোচনা বা ওয়াদা করা যেতে পারে। এবং সম্ভাব্য দাম নিয়েও প্রাথমিক কথা হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে গাছে আম হওয়ার পর ফলন দেখে। ফল হওয়ার আগে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পণ্য হচ্ছে আম। এখন যদি তা বেরই না হয় তাহলে কিসের বেচা-কেনা হচ্ছে। শরীয়তে এ ধরনের অস্তিত্বহীন বস্তুর বেচা-কেনার কোনো সুযোগ নেই।

-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/৬৫০; কিতাবুল আছল ২/৪৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩১০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৮৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/৩০০

শেয়ার লিংক

আলাউদ্দীন - উত্তরা, ঢাকা

৫০২৬. প্রশ্ন

আমি ঢাকায় চাকরি করি। গ্রামে আমার তেমন জায়গা-জমি নেই। একবার আমার এক চাচা একটি জমির সন্ধান পেয়ে আমাকে জানান। আমার নামে জমিটি কেনার জন্য চাচার একাউন্টে পাঁচ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিই। জমি কিনতে বিলম্ব হওয়ায় চাচা আমাকে না জানিয়ে এক লক্ষ টাকা নিজের ব্যবসায় খাটায়। জানার বিষয় হল, চাচার জন্য কি টাকা ব্যবসায় খাটানো ঠিক হয়েছে? এ টাকা দ্বারা যা লাভ হয়েছে তা কি চাচার জন্য ভোগ করা বৈধ হবে? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ঐ টাকা আপনার চাচার নিকট আমানত হিসেবে ছিল। তিনি যদি আপনার অনুমতি ছাড়া উক্ত টাকা নিজের ব্যবসায় লাগিয়ে থাকেন তবে তা জায়েয হয়নি। আমানতের খেয়ানত হয়েছে। তাই এ টাকা থেকে যা লাভ হয়েছে তা তিনি নিজে ভোগ করতে পারবেন না। বরং তা গরিব-মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/৯৭, ৭/১৪১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ৩৯০; ফাতহুল কাদীর ৬/১০৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাকিব উদ্দীন - শেরপুর

৫০২৭. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির সাথে আমি চুক্তি করতে চাচ্ছি যে, সে আমার এক বিঘা জমি চাষ করবে। চাষের জন্য বীজ, পানি, সার ইত্যাদির যাবতীয় খরচ সে বহন করবে। সিজন শেষে যা ফসল হবে তার বীজ সার ইত্যাদির খরচ বাদ দিয়ে বাকিটা দু’জনের মাঝে সমান হারে বণ্টন হবে। হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমাদের এভাবে চুক্তি করা বৈধ হবে কি না? বৈধ না হলে বৈধতার কোনো পদ্ধতি আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বর্গা চুক্তিতে উৎপাদিত ফসল থেকে চাষীর খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ফসল ভাগাভাগির চুক্তি করা জায়েয নয়। বরং উৎপাদিত সকল ফসলই ভাগাভাগি করতে হবে। এক্ষেত্রে চাষীর খরচ পোষানোর জন্য চাষীকে বেশি অংশও দেওয়া যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৬১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৩৬; মাজমাউল আনহুর ৪/১৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৭৬

শেয়ার লিংক

ছায়েদুর রহমান - শেরপুর

৫০২৮. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় জমি চাষাবাদের একটি পদ্ধতি ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে। জমির মালিক জমি দেয়। আর পরবর্তীতে বীজ, সার, হাল দেওয়া ও সেচ বাবদ খরচ উভয়ে বহন করে। বীজ রোপন ও জমি প্রস্তুত করতে যে খরচ হয় তাও উভয়ে দেয়। আর উৎপাদিত ফসল উভয়ে সমান সমান করে ভাগ করে নেয়। হুজুরের কাছে জিজ্ঞাসা হল আমাদের জমি চাষাবাদের উক্ত পদ্ধতি বৈধ কি না? অনুগ্রহপূর্বক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

জমি চাষাবাদের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি জায়েয। আপনারা এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারবেন এবং চুক্তি অনুযায়ী সমানহারে উৎপাদিত ফসল বণ্টনও করতে পারবেন। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান রাহ. বলেন-

لاَ بَأْسَ أَنْ تَكُونَ الأَرْضُ لِأَحَدِهِمَا، فَيُنْفِقَانِ جَمِيعًا، فَمَا خَرَجَ فَهُوَ بَيْنَهُمَا.

[সহীহ বুখারী ৩/১০৪ (তালীক)]

যদি ক্ষেত তাদের মধ্যে কোনো একজনের হয় আর দুজনেই তাতে খরচ করে তাহলে উৎপাদিত ফসল উভয়ে সমান হারে ভাগ করে নিতে পারবে।

-কিতাবুল আছল ৯/৫৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৩৬০; আলমাবসূত, সারাখসী ২৩/৩১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৭৮; রদ্দুল মুহতার ৬/২৮১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ তারেক - কিশোরগঞ্জ

৫০২৯. প্রশ্ন

আমরা চরাঞ্চলে বসবাস করি। এখানে আমার কিছু জমি আছে। এ অঞ্চলটি নিচু হওয়ায় বর্ষায় পানি বেশি হলে এখানের জমিগুলো প্রায় দেড়-দু’মাস চাষাবাদের অনুপযোগী থাকে। এ সময়ের ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে সংশয় হয়। অন্যান্য মালিকরা যেহেতু এ সময়ের ভাড়া আদায় করে থাকে, তাই আমিও নিই। এটা নেয়া কি বৈধ হবে? বর্ষার পর ফলন ভাল হলে তো তারা আমাদেরকে ভাড়া বেশি দেয় না। তাহলে আমরা কেন তাদের ক্ষতি বহন করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হল, ভাড়া চুক্তির সময় ঐ দেড়-দু’মাস বাদ দিয়ে বছরের বাকি অংশের কথা উল্লেখ করে ভাড়া ঠিক করা। ভাড়া গ্রহীতা যদি নয়-দশ মাসের জন্যই বর্তমানে যে ভাড়া আছে তা দ্বারা ভাড়া নিতে চায় তাহলে সেটিও জায়েয হবে। বিশেষত আপনাদের অঞ্চলের ভূমিগুলো যদি সাধারণত প্রতি বছরই প্লাবিত হয় এবং একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চাষাবাদের অনুপযোগী থাকে তাহলে চুক্তির সময় উক্ত দেড়-দু’মাসের কথা উল্লেখ না করলেও উরফ তথা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া চুক্তি সহীহ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ঐ সময় বাদ দিয়েই জমির মালিকগণ নির্ধারিত ভাড়া নিতে পারবে। আর যদি বিষয়টি এমন হয় যে, সাধারণত পুরো বছরই জমিগুলো ফসলের উপযুক্ত থাকে, কিন্তু কখনো কখনো প্লাবনের কারণে জমিগুলো কয়েক মাস পর্যন্ত চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, আর চুক্তির সময় এসব কিছু বলা ছাড়াই ভাড়া ঠিক করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে বছরের যে সময়টুকু জমিগুলো পানির নিচে ডুবে ছিল এবং চাষাবাদের অনুপযুক্ত ছিল সে সময়ের ভাড়া নেয়া বৈধ হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৬১; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ১১৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩৬

শেয়ার লিংক

আনোয়ার - মিরপুর, ঢাকা

৫০৩০. প্রশ্ন

একটি সেবা সংস্থার পক্ষ থেকে ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের দুটি প্রাইজবন্ড প্রকাশ করা হয়েছে। ঋণ প্রার্থী ব্যক্তিদর কাছে এই বন্ডগুলো ফেসভ্যালুর (গায়ের দাম) চেয়ে অধিক মূল্যে যেমন ১০০০ টাকা মূল্যমানের বন্ড ১১০০ টাকায় এবং ৫০০ টাকা মূল্যমানের বন্ড ৫৫০ টাকায় ছয়মাস বা একবছর মেয়াদে বাকিতে বিক্রি করা হয়। বন্ডবাহক সেবা সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ এজেন্ট বা শপিং সেন্টার থেকে বন্ডের বিনিময়ে নির্ধারিত নগদ অর্থ অথবা তৎমূল্যের পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ করে নিজের প্রয়োজন পূরণ করে। অপর দিকে বন্ডের দ্বিতীয় ক্রেতা (এজেন্ট বা দোকানদার) বন্ডটি সেবা সংস্থার অফিসে জমা দিয়ে যথার্থ মূল্য নগদ উঠিয়ে নেয়। উক্ত পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহীতাকে ছয়মাস বা একবছর পর তার সংগৃহীত নগদ অর্থ (১০০০ বা ৫০০) অথবা তৎমূল্যে পণ্য সামগ্রীর চেয়ে অধিক (১১০০ বা ৫৫০) পরিশোধ করতে হয়। এখন জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতির শরয়ী বিধান কী? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত পন্থায় বন্ডের লেনদেন সম্পূর্ণ সুদী কারবার। আর ইসলামে সুদ নিকৃষ্টতম হারাম। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন-

وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا

আল্লাহ তাআলা কেনা-বেচাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ.

সুদ গ্রহণকারী, এর দাতা, এর হিসাব লেখক এবং যারা এর সাক্ষী থাকে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সকলের উপর লা‘নত করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮

তাই মুসলামনদের কর্তব্য, এ ধরনের লেনদেন থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।

শেয়ার লিংক

ডা. আবদুল্লাহ - ঝিগাতলা, ধানমণ্ডি

৫০৩১. প্রশ্ন

মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হল, আমার বন্ধু একজন ফিজিও থেরাপিস্ট। তার কাছে থেরাপির মেশিনপত্র আছে। আমি অর্থপেডিক ডাক্তার। তার সাথে আমার এই মর্মে চুক্তি হয় যে আমি দুই লক্ষ টাকা দিব ফার্নিচার ডেকোরেশন ও ঘরের এ্যাডভান্স বাবদ। এরপর উভয়ে রোগী দেখব। লাভ যা আসবে দুইজনে অর্ধার্ধি ভাগ করে নিব। এই চুক্তিটি বৈধ কি না? এবং লভ্যাংশ বণ্টনের পদ্ধতিটি সঠিক কি না?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ হবে এবং উভয়ের শর্ত অনুযায়ী সমান বা কম-বেশি লভ্যাংশ বণ্টন করতে পারবেন। এরপর কখনো যৌথ কারবার সমাপ্ত করতে চাইলে মেশিনদাতা তার মেশিন নিয়ে যাবে এবং ফার্নিচার ডেকোরেশন ইত্যাদি বাবদ যে অংশীদার টাকা দিয়েছিল সে-ই এগুলো নিয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২২৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; ফাতহুল কাদীর ৫/৪০৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৪/২৭০

শেয়ার লিংক

মুনীরুল ইসলাম - বরিশাল

৫০৩২. প্রশ্ন

মুহতারাম, আমার একটি কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের দোকান আছে। অনেকে সার্ভিসিংয়ের জন্য মাদারবোর্ড নিয়ে আসলে দেখা যায়, সেটা মেরামত করার চে’ নতুন মাদারবোর্ড কিনে নেওয়াই ভালো। আমি তাদেরকে বিষয়টি বললে, অনেকে নতুন মাদারবোর্ড কিনে পুরনোটি ফেলে চলে যায়। অনেকদিন পর দেখা যায়, কোনো কোনো পুরনো মাদারবোর্ড ঠিক করে ব্যবহারযোগ্য করা সম্ভব হয়।

পরবর্তীতে যখন মেরামত করে এগুলো ব্যবহারযোগ্য হয় তখন কি এগুলো আমার জন্য বিক্রি করা জায়েয হবে? অথবা এর বিভিন্ন পার্টস অন্য মাদারবোর্ডে ব্যবহার করা জায়েয হবে? নাকি মালিককে বিষয়টি জানাতে হবে? অথচ মালিককে তো আমি চিনি না। আর মালিকও তো স্বেচ্ছায় জিনিসটি ফেলে গেছে।

যদি এগুলো মেরামত করে ব্যবহার করা বা বিক্রি করা জায়েয না হয় তাহলে ইতিপূর্বে যেগুলো বিক্রি করেছি সেগুলোর ব্যাপারে আমার করণীয় কী? আর এখনও যেগুলো রয়ে গেছে সেগুলো কী করব? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

এধরনের যন্ত্রাংশ যদি মালিক স্বেচ্ছায় ফেলে রেখে যায় তাহলে তা ঠিক করে আপনি নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। বিক্রিও করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে নিরাপদ হল, যন্ত্রের মালিককে বিষয়টি বলে নেওয়া। কারণ অনেক সময় মালিক একেবারেই মূল্যহীন মনে করে তা রেখে যায়।

-শরহুস সিয়ারিল কাবীর, সারাখসী ৩/১৪৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৩৫২; রদ্দুল মুহতার ৪/২৭৮; ইলাউস সুনান ১৩/২৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলী - যশোর

৫০৩৩. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মারা গেছে। লোকটি ছিল অবিবাহিত। তাই তার ছেলে-সন্তান স্ত্রী পরিবার-পরিজন কেউ নেই। মৃত্যুর আগে সে অসিয়ত করে গেছে, তার যাবতীয় সম্পদ মসজিদ-মাদরাসায় দিয়ে দিতে। এখন মসজিদ ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ উভয়ে তার সম্পদ দাবি করছে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির ভাই তা মেনে নিচ্ছে না। মৃতের আত্মীয় বলতে শুধু তিনিই আছেন। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। এখন আমরা সবাই (মসজিদ ও মাদারাসা কর্তৃপক্ষ ও তার ভাই) মুফতী সাহেবের শরণাপন্ন হচ্ছি, আমাদেরকে শরীয়তের সঠিক সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

লোকটি যদি তার জীবদ্দশাতে ঐ জমিন মসজিদ-মাদরাসায় দান না করে গিয়ে থাকে, বরং শুধু অসিয়ত করে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মসজিদ-মাদরাসা পাবে। কারণ সাধারণ নিয়মে অসিয়ত এক তৃতীয়াংশ সম্পদের ভেতরেই কার্যকর হয়। মসজিদ-মাদরাসার অংশ দেয়ার পর লোকটির যদি একজন ভাই ছাড়া আর কোনো ওয়ারিশ না থাকে তাহলে সে অবশিষ্ট পুরো সম্পদের মালিক হবে। অবশ্য মৃতের ভাই যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার অংশ থেকে আরো কিছু সম্পদ মসজিদ-মাদরাসার জন্য দিতে চায় তাহলে সেটি কার্যকর হবে এবং তা হবে উত্তম কাজ। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদ ও মাদরাসা সমান সমান জমির অধিকারী হবে।

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/১৬১; আলমাবসূত, সারাখসী ২৭/১৫৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২২৪; আলইখতিয়ার ৪/৩৭৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৩৭৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৫০; ইলাউস সুনান ১/৩০৩

শেয়ার লিংক

সালমান আহমদ - নরসিংদি

৫০৩৪. প্রশ্ন

অনেকের মুখে দাইয়ূস শব্দটি শোনা যায়। হুযুর! এর অর্থ কী? কুরআন হাদীসে এ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে? কেউ কেউ অন্যকে দাইয়ূস বলে গালি দেয়। এটা কি ঠিক?

উত্তর

দাইয়ূস শব্দের অর্থ হল, এমন আত্মমর্যাদাহীন ব্যক্তি, যে তার স্ত্রী বা মাহরামের ক্ষেত্রে পাপাচার (তথা ব্যভিচারকে) সমর্থন করে। মুসনাদে আহমাদের এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرّمَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَنّةَ: مُدْمِنُ الْخَمْرِ، وَالْعَاقّ، وَالدَّيُّوثُ، الّذِي يُقِرّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ.

তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ তাআলা জান্নাত হারাম করেছেন। ১. মদ্য পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি। ২. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান। ৩. দাইয়ূস অর্থাৎ ঐ আত্মমর্যাদাহীন ব্যক্তি, যে তার পরিবারের মহিলাদের ক্ষেত্রে পাপাচার অর্থাৎ ব্যভিচার ইত্যাদিকে সমর্থন করে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৩৭২)

অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

ثَلَاثٌ لَا يَدْخُلُونَ الْجَنّةَ، وَلَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: الْعَاقّ بِوَالِدَيْهِ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ الْمُتَشَبِّهَةُ بِالرِّجَالِ، وَالدّيّوثُ.

তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। ১. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।  ২. পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী। ৩. দাইয়ূস। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬১৮০)

উল্লেখ্য, কাউকে দাইয়ূস বলে গালি দেওয়া নাজায়েয। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-মিরকাতুল মাফাতীহ ৭/২২০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৬৩৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৭০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রোকনুদ্দীন - মুগদা

৫০৩৫. প্রশ্ন

আমাদের প্রেসে বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছাপানো হয়। এর মধ্যে ইসলামী কিতাবাদিও রয়েছে। (যেমন তাফসীর, হাদীসগ্রন্থ, দ্বীনী বিষয়ে বিভিন্ন কিতাবাদি)। গ্রাহকবৃন্দ আমাদেরকে যে ছাপার কাজগুলো দেন এর মধ্যে যেমন দুনিয়াবী বইপত্র থাকে তেমনি ইসলামী কিতাবাদিও থাকে। ছাপানোর সময় বিভিন্ন কারণে (যেমন মেশিনে সমস্যা হলে বা কাটিং যন্ত্র ঠিক মতো কাজ না করলে) উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাগজ উদ্বৃত্ত হয়। গ্রাহকদেরকে তাদের অর্ডার দেওয়া বইপত্র বা কিতাবাদি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সেই উদ্বৃত্ত কাগজগুলো দিয়ে আমরা বইগুলো বেঁধে দিই। যাতে বাঁধাইয়ের উপর দড়ির দাগ না পড়ে। এরপরও যেসব কাগজ অবশিষ্ট থাকে সেগুলো ভাঙ্গারির কাছে বিক্রি করে দিই। তারা সাধারণত ঠোঙা বানানোর কাজে এগুলো ব্যবহার করে থাকে। মুহতারামের নিকট জিজ্ঞাসা হল, এ কাগজগুলো এসব কাজে ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা আছে? অনুরূপভাবে এগুলো বিক্রি করা কি বৈধ হবে?

উত্তর

যেসব কাগজে আল্লাহ বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম, কুরআনের আয়াত কিংবা দ্বীনী বিষয়াদি লেখা থাকে, সেগুলো অধিক সম্মানযোগ্য। তাই সে কাগজগুলো দিয়ে বইপত্র বেঁধে দেয়া কিংবা তা ভাঙারির কাছে বিক্রি করা জায়েয নয়।

আর প্রেসের যেসব কাগজে ঐসব বিষয়াদি নেই সেগুলো দিয়ে বইপত্র বেঁধে দেওয়ার অবকাশ আছে। তবে তা ভাঙারির কাছে বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ সকল কাগজই সম্মানযোগ্য। এটি ইলমের একটি অন্যতম উপকরণ। সাধারণ ছাপানো কাগজ  বা বইপত্র অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেলে তা পুড়িয়ে ফেলবে।

-খিযানাতুল আকমাল ৩/৪৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৬

শেয়ার লিংক