এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো নিষেধ। তাই গোসলের সময় গলার উপরে ধোয়া তার জন্য সম্ভব নয়। তেমনি অযুর সময়ও সে চেহারা ধুতে পারবে না। এখন তার গোসল ফরয হলে সে কীভাবে গোসল করবে এবং এ অবস্থায় সে কীভাবে অযু করবে?
এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো নিষেধ। তাই গোসলের সময় গলার উপরে ধোয়া তার জন্য সম্ভব নয়। তেমনি অযুর সময়ও সে চেহারা ধুতে পারবে না। এখন তার গোসল ফরয হলে সে কীভাবে গোসল করবে এবং এ অবস্থায় সে কীভাবে অযু করবে?
ঐ ব্যক্তির যতদিন চোখে পানি লাগানো নিষেধ থাকে ততদিন যেহেতু চেহারা ও মাথা ধুতে পারছে না তাই এ অবস্থায় গোসলের জন্য সে গলা ও ঘাড়সহ নিচের দিকে পুরো শরীর ধৌত করবে। আর চেহারা ও কানসহ পুরো মাথা ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে।
আর অযুর সময় পুরো চেহারা ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে। এছাড়া বাকি অযু যথানিয়মে করবে। অর্থাৎ হাত, পা ধুবে এবং মাথা মাসাহ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের রোগীর জন্য ভেজা হাত দ্বারা ব্যান্ডেজের উপর বা চোখের অংশে মাসাহ করাটা যদি ক্ষতিকর হয় তবে সেক্ষেত্রে ঐ অংশ মাসাহ না করলেও চলবে।
-আলবাহরুর রায়েক ১/১১৬; মারাকিল ফালাহ প্র. ৬৮শেয়ার লিংক
কাপড়ে বা শরীরে রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব এবং এ ধরনের নাপাকি কী পরিমাণ লাগলে নামায সহীহ হয় না? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
রক্ত, গোবর ও মানুষের প্রস্রাব নাজাসাতে গলীযার অন্তর্ভুক্ত। নাজাসাতে গলীযা যদি কাপড়ে বা শরীরে লাগে এবং তা তরল হয় (যেমন, প্রস্রাব) তাহলে সেক্ষেত্রে তা যদি দিরহামের আয়তন (অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা সমপরিমাণ)-এর কম হয় অথবা নাপাকি শক্ত হলে যেমন, গোবর তা যদি দিরহামের ওজন (বর্তমান মেট্রিক হিসাবে যা ৩.০১৬৮ গ্রাম)-এর চেয়ে কম হয় তাহলে তা না ধুয়ে নামায পড়লে নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে এ পরিমাণ অল্প নাপাকিও ধুয়ে নেওয়া ভালো। তাই সাধারণ অবস্থায় এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়া অনুত্তম।
আর যদি নাপাকি দিরহামের সমপরিমাণ হয় তাহলে তা ধুয়ে ফেলা ওয়াজিব। এ অবস্থায় নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তাই কেউ এ অবস্থায় নামায পড়লে সে নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব হবে।
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রক্ত প্রস্রাব ইত্যাদি নাপাকি যদি দিরহাম পরিমাণ হয় তাহলে তোমার নামায পুনরায় পড়ে নাও। আর যদি দিরহামের কম হয় (এবং তুমি নামাযে থাক) তাহলে ঐ অবস্থায়ই তোমার নামায পূর্ণ করো। -কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. ১৪৬
সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব রাহ., হাম্মাদ রাহ., যুহরী রাহ. প্রমুখ তাবেয়ী থেকেও এমনটি বর্ণিত আছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৯৭৮, ৩৯৭৯, ৩৯৮৩,৩৯৮৪
আর যদি নাপাকি দিরহামের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সে নাপাকি ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। এ পরিমাণ নাপাকি নিয়ে নামায পড়লে নামায হবে না।-ইলাউস সুনান ১/৪০৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৮; শরহুল মুনইয়াহ ১৭১; আননাহরুল ফায়েক ১/১৪৬; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৪৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৮৭শেয়ার লিংক
আমার সন্দেহের রোগ আছে। অযু থেকে ফারেগ হওয়ার পর পরই মনে হয় যেন মাথা মাসাহ করিনি। এই সন্দেহ হওয়ার কারণে পুনরায় মাথা মাসাহ করি। তাছাড়া কোনোক্রমেই স্বস্তি পাই না। আমি জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী এবং এই সন্দেহের রোগ দূর করার উপায় কী?
আপনার কর্তব্য, অযু করার সময় মনোযোগ সহকারে অযু করা। অতপর অযু শেষ হওয়ার পরে মাথা মাসাহ না করার ব্যাপারে যতই সন্দেহ হোক সেদিকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ না করা এবং কখনো সন্দেহের ভিত্তিতে পুনরায় মাথা মাসাহও না করা। এই সন্দেহ নিশ্চয়ই শয়তানের পক্ষ থেকে ওয়াসওয়াসা। কিছুদিন এভাবে করলে ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫০শেয়ার লিংক
যায়েদ যে স্থানে চাকরি করে সেখান থেকে তার বাড়ি শরীয়ত নির্ধারিত মুসাফিরের সীমার অনেক উপরে। এখন প্রশ্ন হল, সে বাড়িতে যাওয়ার সময় এবং বাড়ি থেকে আসার সময় রাস্তায় কছর নামায পড়বে কি? যদি কছর পড়তে হয় তাহলে সে তার বাড়ি/চাকরিস্থলে পৌঁছার কতটুকু সীমানা পর্যন্ত পড়বে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যায়েদের চাকরিস্থল যেহেতু সফরসম দূরত্বে তাই সেখানে যাতায়াতের সময় তার বাসস্থানের এলাকা ত্যাগ করার পর পথিমধ্যে সে মুসাফির গণ্য হবে এবং নামায কছর করবে। আর চাকরিস্থলে ১৫ দিনের নিয়তে কখনো থাকা না হলে সেখানেও সে মুসাফির থাকবে।
অবশ্য চাকরিস্থলে যদি কখনো ১৫ দিনের নিয়তে অবস্থান করে থাকে তবে তখন থেকে চাকরিস্থলে সে মুকীম। এক্ষেত্রে নিজ গ্রামের সীমানা অতিক্রম করার পর থেকে চাকরিস্থলের এলাকায় প্রবেশের আগ পর্যন্ত সে মুসাফির গণ্য হবে। আর চাকরিস্থলে একবার মুকীম হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীতে কখনো অল্প সময়ের জন্য গেলেও সেখানে সে মুকীম হবে।
আর এক্ষেত্রে চাকরিস্থলে সে যেহেতু মুকীম তাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে চাকরিস্থলের এলাকা অতিক্রম করার পর থেকে সে মুসাফির গণ্য হবে।-শরহুল মুনইয়াহ ৫৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭; ফাতহুল কাদীর ২/৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮, ২/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৩/৩৩৬শেয়ার লিংক
একজন ছোটবেলা থেকে নামায পড়েনি। এখন সে কত বছর থেকে নামায কাযা করবে? আর ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রেও কাযার হিসাব জানতে চায়।
নামায ফরয হয় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ছেলেদের প্রথম স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের প্রথম মাসিকের সময় থেকে। যদি ১৫ বছর পুরো হওয়ার পরও উক্ত আলামত দেখা না যায় তবে চান্দ্র বছর হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন থেকে ছেলে-মেয়ে উভয়ে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক বলে গণ্য হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকে তাহলে প্রবল ধারণা অনুযায়ী ঐ সময়টি নির্ণয় করে তখন থেকে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্তের ফরয এবং বিতর নামায কাযা করবে।
আর যদি ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কোনো আলামত না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে নামায কাযা করবে।
আর কাযা নামায আদায় করার সময় ফজরের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবে যে, আমি অনাদায়ী প্রথম ফজর নামায আদায় করছি। যোহরের ক্ষেত্রে নিয়ত করবে, আমি অনাদায়ী প্রথম যোহর আদায় করছি। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তে প্রথম অনাদায়ী নামাযটি আদায়ের নিয়ত করবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৮৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/৮৪-৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৫৪, ১৬/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৭৬, ৬/১৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৪৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১শেয়ার লিংক
আমি স্কুলে পড়ার সময় যোহর ও আসরের নামায আদায় করতে পারিনি। কারণ নামাযের সময় স্কুলে ক্লাস হত। এখন আমি সে সময়ের নামাযগুলো কাযা করছি। কিন্তু তখন কত ওয়াক্ত নামায পড়া হয়নি তা জানা নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে, অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে। আর আমার নামাযগুলো আদায়ের পদ্ধতি এই ছিল যে, যোহরের সময় মসজিদে গিয়ে যোহরের সুন্নত না পড়ে কাযা নামায পড়েছি। এছাড়া অন্য সময় কাযা আদায় করার মতো সময় আমি বের করতে পারছি না। এদিকে আমার উপর আর অনাদায়ী নামায নেই -এমনটিও বলতে পারছি না। আবার নামায বাকি আছে- এমনটিও বলতে পারছি না। তাই এখন আমার জানার বিষয় হল, আমি কি যোহরের সুন্নত বাদ দিয়ে অনাদায়ী নামায কাযা করব, নাকি আমার নামায অনাদায়ী নেই ধরে নিয়ে যোহরের সুন্নত আদায় করব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
যোহরের পূর্বের চার রাকাত নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদা। বিনা ওজরে তা নিয়মিত ছেড়ে দেওয়া গুনাহ। তাই অনাদায়ী নামায আদায়ের জন্য সুন্নত ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। এ কারণে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। ভবিষ্যতে কাযা নামায আদায় করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামায বাদ দেওয়া যাবে না।
আর প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যদি প্রবল ধারণা হয় যে, আপনার অনাদায়ী সব নামায আদায় হয়ে গেছে,কোনো অনাদায়ী নামায নেই তাহলে আর কাযা আদায় করতে হবে না। এক্ষেত্রে অনাদায়ী নামায থাকার ব্যাপারে শুধু সন্দেহ ধর্তব্য হবে না।
শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কাযা নামায আদায় করার প্রয়োজন নেই এবং তা উচিতও নয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৮২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; হাশিয়াতুশ শিলবী ১/৪৬৮শেয়ার লিংক
আমি কয়েকদিন আগে নামায সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা পড়েছি। তাতে সিজদার সময় চুল বেঁধে রাখাকে মাকরূহ বলা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, এই বিধান কি নারী-পুরুষ সবার জন্য, না শুধু পুরুষের জন্য? জানালে খুশি হব।
নামাযে চুল বেঁধে রাখা মাকরূহ- এই বিধানটি কেবল পুরুষের জন্য। মহিলাদের চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা নামাযে ঢেকে রাখা ফরয। তাই তারা চুল বেঁধে নামায পড়তে পারবে। যাতে চুল ঢেকে রাখা সহজ হয় এবং এর কোনো অংশ প্রকাশ না পায়। আর তারা চুল ছেড়ে দিয়েও নামায পড়তে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে এমনভাবে চুল ঢেকে রাখবে যেন ছেড়ে রাখার কারণে চুলের কোনো অংশ খুলে না যায়।
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৮৫৬; নাইলুল আওতার ২/৩৪০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪২শেয়ার লিংক
গত রমযানে একদিন আমি বিতরের তৃতীয় রাকাতে ইমামের সাথে শরিক হই এবং ইমামের সাথে দুআয়ে কুনূতও পড়ি। পরে যখন বাকি নামায একাকী আদায় করি তখন তৃতীয় রাকাতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে যাই। আবার দুআয়ে কুনূত পড়তে হবে কি না? পরে না পড়েই নামায সমাপ্ত করি। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায আদায় করাতে নামায শুদ্ধ হয়েছে কি?
আপনার নামায নিয়মমতোই আদায় হয়েছে। ইমামের সাথে দুআ কুনূত পড়লে ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় তৃতীয় রাকাতে দুআ কুনূত না পড়াই নিয়ম। কেননা দুআ কুনূত দুইবার পড়ার নিয়ম নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আলবাহরুর রায়েক ২/৪১; ফাতহুল কাদীর ১/৩৮০; শরহুল মুনইয়াহ ৪২১শেয়ার লিংক
একবার ফরয নামায আদায় করার পর পুণরায় জামাতে ঐ ফরয নামায আদায় করা যাবে কি?
প্রতিটি ফরয নামায তার নির্দিষ্ট ওয়াক্তে একবারই ফরয। একবার আদায় করার পর ঐ ওয়াক্তে আবার আদায় করলে তা নফল গণ্য হবে।
তাই যোহর ও ইশার নামায আদায় করার পর নফলের নিয়তে জামাতের সাথে আবার পড়তে পারবে।
তবে ফজর ও আসরের ফরয আদায়ের পর নফলের নিয়তেও দ্বিতীয়বার পড়া যাবে না। কেননা ফজর ও আসরের পর নফল পড়া মাকরূহ। আর মাগরিবের পর যদিও নফল পড়া যায় কিন্তু তিন রাকাত নফল নেই। তাই ইমামের পিছনে নফলের নিয়তে মাগরিবে শরিক না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। একান্ত শরিক হলে ইমামের সালামের পর আরো এক রাকাত একাকী পড়ে নিতে হবে।-আলবাহরুর রায়েক ২/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ২/৫১৯শেয়ার লিংক
সুতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ কতটুকু?
সুতরা কমপক্ষে একহাত পরিমাণ হওয়া উচিত। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুতরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে (সেটা কতটুকু হবে) তিনি বললেন, হাওদার লাঠির মতো। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫০০
আর আতা রাহ. বলেন, হাওদার লাঠির দৈর্ঘ্য হল, এক হাত বা তার চেয়ে বেশি।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৮৬; আলমাবসূত ১/১৯০; উমদাতুল কারী ৪/২৬৭; আল বাহরুর রায়েক ২/১৭; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪শেয়ার লিংক
চেয়ারে বসে টেবিলে সেজদা করে নামায পড়ার হুকুম কী জানতে চাই।
যে ব্যক্তি জমিনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম বা খুব কষ্ট হয় তার জন্য চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়েয। সেক্ষেত্রে সে ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করবে। রুকুর তুলনায় সিজদার জন্য কিছু বেশি ঝুঁকবে। তবে সামনে টেবিল কিংবা অন্য কোনো উঁচু বস্তু রেখে তাতে সিজদা করবে না;বরং ইশারায় সিজদা করবে। উল্লেখ্য, যে মুসল্লী যমীনে বসতে সক্ষম নয় কিন্তু দাঁড়াতে সক্ষম তাকে নামায দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে। রুকু করতে সক্ষম হলে রুকুও স্বাভাবিক নিয়মেই করবে। তারপর চেয়ারে বসে বাকি আমলগুলো আদায় করবে।
-ইলাউস সুনান ৭/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৬; আননাহরুল ফাইক ১/৩৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩শেয়ার লিংক
আমরা জানি যে, ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার পর ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য নফল নামায পড়া যায় না। আমি জানতে চাচ্ছি যে, পিছনের জীবনের কাযা নামায তখন পড়া যাবে কি না?
জী, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ব্যতীত কোনো নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে এ সময়ে কাযা নামায পড়া যাবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৩; কিতাবুল আছল ১/১২৬; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৫২-৬৫৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৫; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৮শেয়ার লিংক
আমি বর্তমানে অসুস্থ। দাঁড়িয়ে রুকু সিজদা করে নামায পড়তে পারি না। বসে ইশারায় নামায পড়ি। সুস্থতার সময় আমার কিছু নামায কাযা হয়ে গিয়েছিল। আমি জানতে চাচ্ছি যে, ঐ নামাযগুলো এখন এ অবস্থায় কাযা করলে তা আদায় হবে? জানালে উপকৃত হব।
জী, সুস্থ অবস্থার কাযা নামায অসুস্থ অবস্থায়ও আদায় করা যায়। তাই এখন যেভাবে সম্ভব সেভাবে আদায় করতে পারবেন। এতেই কাযা আদায় হয়ে যাবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৯; মারাকিল ফালাহ ২৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩৫শেয়ার লিংক
সফর থেকে বাড়িতে আসি। যোহরের সময় তখনও আধা ঘণ্টার মতো বাকি ছিল। ক্লান্তির দরুণ নামাযের কথা ভুলে যাই। হঠাৎ আসরের আযান শুনি। প্রশ্ন হল, উক্ত যোহরের কাযা কি আমাকে চার রাকাত পড়তে হবে, নাকি দুই রাকাত? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত যোহর নামাযের কাযা চার রাকাতই আদায় করতে হবে। কেননা ওয়াক্তের শেষে আপনি মুকীম ছিলেন। তখন পুরো চার রাকাতই পড়া জরুরি ছিল। তাই আদায় করতে হবে পুরো চার রাকাতই।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৭; অদদুররুল মুখতার ২/১৩১; শরহুল মুনইয়াহ ৫৪৪শেয়ার লিংক
আমাদের ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রুকু করেন। একদিন ইমাম সাহেব কেরাত শেষ করার সাথে সাথে আমি রুকুতে চলে যাই। তবে ইমামের সাথেই রুকু আদায় করেছি। এখন আমার জানার বিষয় হল, ইমামের আগে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণে আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? আমার ঐ নামায আদায় হয়েছে কি?
ইমামের আগে রুকুতে চলে যাওয়ার কারণে মাকরূহ তাহরীমী হয়েছে।
তবে ইমামের আগে রুকুতে চলে গেলেও ইমামের সাথে যেহেতু রুকু আদায় করেছেন তাই আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।
প্রকাশ থাকে যে, ইমামের আগে রুকু-সিজদা করা বা রুকু সিজদা থেকে উঠা গুনাহ। এ ব্যাপারে হাদীসে অনেক বড় ধমকি এসেছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার মাথাকে ইমামের আগে (সিজদা থেকে) উঠিয়ে নেয় তখন সে কী ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথার ন্যায় করে দিবেন! অথবা তিনি বলেছেন, তার আকৃতিকে গাধার আকৃতির ন্যায় করে দিবেন? -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৯১
আবু হুরায়রা রা. বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের আগে রুকু-সিজদা করে বা রুকু-সিজদা থেকে মাথা উঠায় তার কপাল শয়তানের হাতে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৭৫৩
অতএব এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা কর্তব্য। মুকতাদীগণ সর্বদা ইমামের তাকবীরের অনুসরণ করবে। তাহলেই এ ধরনের ভুল থেকে বিরত থাকা সম্ভব হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৪৮শেয়ার লিংক
এ রমযানে আমরা তিনজন মিলে তারাবীর নামায পড়েছি। প্রতিদিন পাঁচ-ছয় পারা তিলাওয়াত করা হত। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর বিধায় কিছুক্ষণ এক পায়ে আবার কিছুক্ষণ অন্য পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতাম। জানার বিষয় হল, নামাযে এভাবে দাঁড়ানো কি মাকরূহ?
স্বাভাবিক অবস্থায় নামাযে উভয় পায়ের উপর সমান ভর দিয়ে দাঁড়ানোই সুন্নত। বিশেষত ফরয ওয়াজিব নামাযে এর গুরুত্ব আরো বেশি। তবে অনেক দীর্ঘ কেরাত পড়া হলে কিংবা মাজুর হওয়ার কারণে উভয় পায়ের উপর সমান ভর দিয়ে দাঁড়ানো কষ্টকর হলে এক পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো যাবে।
তবে নামাযে একবার ডান দিকে আবার বাম দিকে ঢুলতে থাকা বা লাগাতার পা পরিবর্তন করতে থাকা মাকরূহ। কেননা তা একাগ্রতা ও স্থীরতা পরিপন্থী। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, তোমরা নামাযে স্থীর থাক। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩০৫
হযরত আতা রাহ. বলেন, আমি এটাই পছন্দ করি যে, নামাযে নড়াচড়া কম করা হবে এবং উভয় পায়ে সমান ভর দিয়ে দাঁড়ানো হবে। তবে যদি কেউ বয়োঃবৃদ্ধ হয় এবং উভয় পায়ে সমান ভর দিতে না পারে (তবে তার হুকুম ভিন্ন)। আর কিয়াম দীর্ঘ হলে তো কিছুক্ষণ এক পায়ে আবার কিছুক্ষণ অন্য পায়ে ভর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৪৩; ইলাউস সুনান ৫/১৪৯; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ২/৩৯০-৩৯১; শরহু মাআনিল আছার ১/১৬৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৭৫শেয়ার লিংক
নামাযের সময় চোখ খোলা রাখলে আমার দৃষ্টি এদিক-ওদিক চলে যায়। যখন যেখানে দৃষ্টি থাকা দরকার সেখানে থাকে না। এজন্য অনেক সময় চোখ বন্ধ করে রাখি। এটা আমার মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়। এ অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখাটাই কি আমার জন্য উত্তম? নাকি এর পরও চোখ খোলাই রাখব?
নামাযে চোখ খোলা রাখা এবং দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা সুন্নত। নামাযে অধিকাংশ সময় চোখ বন্ধ রাখা সুন্নতের খেলাফ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (দেখুন : তাফসীরে তবারী ৯/১৯৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় সে যেন চোখ বন্ধ না রাখে।-আলমুজামুল কাবীব, হাদীস ১০৯৫৬; ইলাউস সুনান ৫/১২১
সুতরাং চোখ খুলেই নামায পড়তে হবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
অবশ্য কারো অবস্থা যদি এমন হয় যে, নামাযে তার দৃষ্টি খুব বেশি এদিক সেদিক চলে যায় তাহলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা পর্যন্ত মাঝেমধ্যে চোখ বন্ধ রাখতে পারবে। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সিরীন রাহ. বলেন, নামাযে যার চোখ বেশি এদিক-সেদিক চলে যায় তাকে চোখ বন্ধ রাখার অনুমতি দেওয়া হত। -মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩৩০
তবে ধীরে ধীরে চোখ খোলা রেখে একাগ্রতার সঙ্গে নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৫৪শেয়ার লিংক
ইমাম সাহেব ফজরের নামায শুরু করেছেন। আমি গিয়ে মসজিদের বারান্দায় সুন্নত পড়া আরম্ভ করি। একপর্যায়ে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত পাঠ করেন এবং সিজদা দিয়ে দেন। এরপর আমি ইমাম সাহেবের সাথে প্রথম রাকাতের রুকুতে শরিক হই। আমার প্রশ্ন হল, আমি তো সিজদার আয়াত শুনেছি। কিন্তু ইমাম সাহেবের সাথে সিজদায় শরিক হতে পারিনি। এখন আমার করণীয় কী? আলাদাভাবে ঐ সিজদা আদায় করা কি আমার উপর ওয়াজিব?
না, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাকে আলাদাভাবে ঐ সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে হবে না। কেননা যে রাকাতে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করা হয়েছে সে রাকাতের রুকুতে শরিক হওয়ার কারণে ইমামের কেরাত এবং সিজদা সবই পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। তবে যে রাকাতে সিজদার আয়াত পাঠ করা হয়েছে এবং সিজদা দেওয়া হয়েছে ঐ রাকাতের রুকুতে যদি শরিক না হতেন তাহলে নামাযের পর আপনাকে পৃথকভাবে ঐ সিজদা আদায় করে নিতে হত।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৭৫; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫০১শেয়ার লিংক
অন্ধ ব্যক্তিকে মসজিদের মুয়াযযিন বানানো যাবে কি না?
অন্ধ ব্যক্তি যদি সহীহ-শুদ্ধভাবে ও যথাসময়ে আযান দিতে পারে অর্থাৎ তাকে নামাযের সময় বলে দেওয়ার মতো লোকের ব্যবস্থা থাকে তাহলে এমন লোককে মুয়াযযিন বানাতে কোনো সমস্যা নেই।
হাদীস শরীফে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুইজন মুয়াযযিন ছিলেন। বেলাল রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা.। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা. ছিলেন দৃষ্টিহীন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২শেয়ার লিংক
আমরা কয়েকজন মিলে একটি মেসে ভাড়া থাকি। একদিন আমাদের ঘুম থেকে উঠতে বিলম্ব হয়। ফলে সকলেরই ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়। তখন আমরা ঐ নামায জামাতের সাথে আদায় করি। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য কাযা নামায জামাতের সাথে পড়া কি ঠিক হয়েছে? এবং এক্ষেত্রে কিরাত জোরে পড়তে হবে কি?
জী হাঁ। জামাতের সাথে কাযা পড়া ঠিক হয়েছে। একসাথে একাধিক ব্যক্তির নামায কাযা হয়ে গেলে জামাতের সাথেই কাযা পড়া উচিত। আর কাযা নামায জামাতের সাথে আদায় করলে উচ্চস্বরে কিরাতবিশিষ্ট নামাযে ইমামকে উচ্চস্বরেই কিরাত পড়তে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পর ফজরের কাযা আদায় করেছেন এবং তাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়েছেন। -কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. হাদীস ১৬৮
উল্লেখ্য যে, কাযা নামাযের জামাত করলে তা নির্জন স্থানে করা উচিত। যেন অন্য লোকজন নামায কাযা হওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে।
-ফাতহুল কাদীর ১/১৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৩৩শেয়ার লিংক
দুই ব্যক্তি যখন জামাতে নামায আদায় করে তখন মুকতাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে যদি মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে মুক্তাদির সিজদা ইমামের আগে চলে যায় তাহলে কি মুকতাদির নামায ফাসেদ হয়ে যাবে?
মুকতাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের পায়ের গোড়ালির আগে বেড়ে না গেলে মুকতাদির নামায ফাসেদ হবে না। অতএব দাঁড়ানো অবস্থায় পা ঠিক থাকলে মুকতাদি লম্বা হওয়ার কারণে সিজদায় তার মাথা ইমামের আগে চলে গেলেও কোনো সমস্যা হবে না।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; শরহুল মুনইয়াহ ৫২০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯১শেয়ার লিংক
ফজরের নামাযের পর কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছিলাম। তিলাওয়াতের মাঝে সিজদার আয়াত এলে সঙ্গে সঙ্গে সিজদা দেইনি। তিলাওয়াত শেষ করে সিজদা আদায় করি। পরে ক্যালেন্ডার দেখে জানতে পারি যে, তেলাওয়াতটি সূর্যোদয়ের আগে হলেও সিজদাটি সূর্যোদয়ের সময় আদায় হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, আমার সিজদাটি কি আদায় হয়েছে নাকি পরে আবার তা আদায় করতে হবে?
মাকরূহ ওয়াক্তের আগে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে মাকরূহ ওয়াক্তে সিজদা দিলে তা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত সিজদাটি আদায় হয়নি। তা পুণরায় আদায় করে নিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ১/২৫০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০০; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭শেয়ার লিংক
শেষ বৈঠকে মুকতাদীর দরূদ শরীফ বা দুআ মাসূর শেষ হওয়ার আগেই যদি ইমাম সাহেব সালাম ফিরায় তাহলে মুকতাদীর করণীয় কী? দুআ-দরূদ শেষ করে সালাম ফিরাবে নাকি শেষ করার পূর্বেই ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুকতাদীর দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর শেষ না হলেও ইমাম সাহেবের সাথে সালাম ফিরাবে। কেননা, দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর পড়া সুন্নত আর ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তবে ইমাম সাহেবের উচিত একটু ধীর গতিতে পড়া যাতে মুসল্লিরা দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূর শেষ করতে পারে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০শেয়ার লিংক
আমি আসরের নামাযে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেলাম। তাই তাড়াতাড়ি করে তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাই। রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলিনি। আমার তাকবীরে তাহরীমা কি আদায় হয়েছে? নাকি ঐ নামায পুণরায় পড়তে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীর শেষ করে থাকেন তাহলে ঐ তাকবীরটি তাকবীরে তাহরীমা হিসেবে ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে আপনার নামাযও সহীহ গণ্য হবে। আর প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে রুকুর তাকবীর না বললেও অসুবিধা নেই। কেননা রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবীর বলা জরুরি নয়।
পক্ষান্তরে আপনার তাকবীর যদি রুকুতে গিয়ে শেষ হয় কিংবা রুকুর নিকটবর্তী গিয়ে শেষ হয় তাহলে আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। কেননা এক্ষেত্রে তাকবীরে তাহরীমা আদায় হয়নি। আর তাকবীরে তাহরীমা ফরয। এটা ছাড়া নামায শুরুই হয় না।-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮০-৪৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১১৯; আননারুহল ফায়েক ১/১৯৪শেয়ার লিংক
জানাযার নামাযে তিন কাতার করার হুকুম কী? এটা কি সুন্নত-মুস্তাহাব কিছু বা এতে কি বিশেষ কোনো ফযীলত আছে?
হাদীস শরীফে এসেছে, মালেক ইবনে হুবায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলমান মারা যাওয়ার পর তার জানাযায় যদি তিন কাতার মুসলমান শরিক হয় তাহলে তার জন্য (জান্নাত) অবধারিত। সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদসহ বহু হাদীস গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
রেওয়াতে এটাও আছে যে, বর্ণনাকারী মালেক ইবনে হুবায়রা রা. যখন দেখতেন লোক সংখ্যা অল্প তখন তাদেরকে (উপস্থিত লোকদেরকে) তিন কাতার করে দিতেন।
ফকীহগণ এ সংক্রান্ত হাদীসের আলোকে জানাযার নামাযে মুসল্লি সংখ্যা কম হলেও যথাসম্ভব তাদেরকে তিন কাতারে বিভক্ত করে দাঁড় করানো উত্তম বলেছেন। তবে মুসল্লি সংখ্যা অধিক হলে তিনের অধিক কাতারও করা যাবে। এবং এতে সেই ফযীলতও পাওয়া যাবে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৫৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ১০২৮; শরহুল মুসলিম নববী ৭/১৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫৮৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬১৩; আলহাদিয়্যাতুল আলাইয়্যাহ ১২৩শেয়ার লিংক
আমাদের বাড়ির পাশে ১৯৬৮ সালে আমার দাদিকে কবর দেওয়া হয়। বর্তমানে যথাযথভাবে সুরক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। এখন কবরটিকে ভেঙে তার উপর বসবাসের উদ্দেশ্যে কোনো ঘর নির্মাণ করা বৈধ হবে কি না? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরটি অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেহেতু প্রবল এবং প্রশ্নের বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কবরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় অবস্থিত তাই কবরটিকে সমান করে দিয়ে তার উপর ঘরবাড়ি নির্মাণ করা এবং সেখানে বসবাস করা জায়েয হবে।
তবে কবরটি যদি ওয়াকফিয়া জায়গায় হত তাহলে পুরাতন হলেও তাতে অন্য কিছু করা জায়েয হত না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; খানিয়া ৩/৩১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭০-৪৭১শেয়ার লিংক
জনৈক ব্যক্তি রমযানে রোযা রাখার পর বিনা ওজরে একটি রোযা ভেঙ্গে ফেলে। এখন সে বৃদ্ধ। লাগাতার দুই মাস রোযা রেখে কাফফারা আদায় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সে কি টাকা দিয়ে কাফফারা আদায় করতে পারবে? সে ক্ষেত্রে কি লাগাতার ৬০ দিন টাকা দিতে হবে? যদি সপ্তাহে দুজন-তিনজন করে দেয় তাহলে কী হবে?
সম্ভাব্য দ্রুত সময়ে জানানোর অনুরোধ রইল।
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির যদি পরবর্তীতেও লাগাতার দু মাস রোযা রাখার সামর্থ্য ফিরে পাওয়ার আশা না থাকে তাহলে সে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে পারবে। এজন্য ৬০ জন দরিদ্রকে দু বেলা তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে। অথবা ৬০জনের প্রত্যেককে দু বেলা আহারের মূল্য দিয়ে দিবে। (বর্তমানে জনপ্রতি দু বেলা খাবারের মূল্য হিসেবে ১০০/- টাকা করে দেওয়া যেতে পারে।)
এক্ষেত্রে ৬০ জনের টাকা বা ৬০ জনের খাবার ৬০ জনকে যেমন দেওয়া যায় তদ্রূপ ৬০ জনেরটা একজন দুজনকে দেওয়াও বৈধ। তবে শর্ত হল, একদিনে একজনকে একদিনের টাকাই দেওয়া যাবে। দুই তিন দিনের টাকা বা খাবার একসাথে দেওয়া যাবে না। দিলেও সেটা একদিনের জন্যই বিবেচিত হবে।
আর পুরো কাফফারার টাকা একজন দুইজনকে একদিন একদিন করে দেওয়া হোক অথবা ৬০ জনকেই তা দেওয়া হোক সেটা একসাথে বা লাগাতার হওয়া জরুরি নয়। সুতরাং সপ্তাহে দুজন তিনজন করে দিয়ে ৬০ জন পূর্ণ করলেও তা সহীহ হবে।-কিতাবুল আছল ২/১৬০-১৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬, ৪/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭৮-৪৮০শেয়ার লিংক
কেউ যদি হজ্বের সায়ী ১২ যিলহজ্বের ভিতর আংশিক বা পুরোই আদায় না করে তাহলে তার কী করণীয়? ১২ যিলহজের পর যদি সে তা আদায় করে নেয় তবে কি তার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হবে?
না, হজ্বের সায়ী আংশিক বা পুরোটা ১২ যিলহজ্বের পর আদায় করলেও কোনো জরিমানা আসবে না। কেননা হজ্বের সায়ী ১২ যিলহজ্বের ভেতর করা জরুরি নয়। তবে হজ্বের সায়ীর ক্ষেত্রে সুন্নত হল,তাওয়াফে যিয়ারতের পরপরই তা আদায় করে নেওয়া এবং পুরো সায়ী একসাথে আদায় করা। তাই কোনো ওজর ছাড়া তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করতে বিলম্ব করা অনুত্তম।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৫২; মানাসিক, মুল্লা আলি কারী পৃ. ১৭০, ১৭৯, ৩৫৬শেয়ার লিংক
আমার একজন ছোট বোন আছে। এক দেড় বছর আগে তার স্বামী তাকে তিন তালাক দিয়ে দেয়। ফলে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। অনেক দিন পর তারা আবার একসঙ্গে থাকতে আগ্রহী হয়। তখন আমার স্বামী আমার বোনকে বিয়ে করে এবং তার সঙ্গে রাত যাপন করে। এরপর তাকে তিন তালাক দিয়ে দেয়। এখন ইদ্দত শেষ হওয়ার পর আমার বোন তার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে আর কোনো বাধা আছে কি?
স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকা অবস্থায় তার বোনকে বিবাহ করা বৈধ নয়। করলেও সে বিবাহ শুদ্ধ হয় না। তাই আপনার স্বামীর সাথে আপনার বোনের বিবাহটি শুদ্ধ হয়নি এবং তার সাথে একত্রে থাকাও হারাম হয়েছে। সুতরাং এগুলোর উপর ভিত্তি করে আপনার বোনের জন্য তার পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াও বৈধ হবে না।
উল্লেখ্য, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমানে উম্মতের একটা বড় অংশের মাঝে ইসলামী শিক্ষার চর্চা এতটাই কমে এসেছে যে, ইসলামের মৌলিক বিধানাবলির জ্ঞানটুকুও অনেক মানুষের থাকে না।
হালাল-হারাম বিষয়ক বিধানাবলি তো ঐসব জরুরিয়াত (অপরিহার্য জ্ঞান)-এর অন্তর্ভুক্ত, যা অর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয। আর এক বোন বিবাহে থাকা অবস্থায় তার বোনকে বিবাহ করা যে হারাম তা তো এতই স্পষ্ট মাসআলা যে, সকলেরই তা জানা।
মোটকথা, এই মারাত্মক গুনাহের কারণে এর সাথে সম্পৃক্ত সকলকেই খাঁটি মনে তাওবা-ইস্তেগফার করা উচিত। এবং দ্বীনী ইলম অর্জন করা ও তা আমলে বাস্তবায়নের জন্য সবাইকেই পুরোপুরি সচেষ্ট হওয়া উচিত।- সূরা নিসা (৪) : ২৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১০৭; মুখতাসারুত তহাবী ৪/৩৩০; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৯৬;শেয়ার লিংক
বাবার মৃত্যুর পর আমার মা ইদ্দত পালন করছেন না। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে বাসার বাইরে চলে যান। তাকে বললে তিনি শোনেন না। তাই ইদ্দত পালন না করলে কী আযাব এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা রয়েছে তা জানতে চাই। যাতে করে আমার মাকে জানালে তিনি সঠিকভাবে ইদ্দত পালন করতে পারেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে চার মাস দশ দিন স্ত্রীর জন্য নিজ গৃহে ইদ্দত পালন করা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধান। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যায়, উক্ত স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে (ইদ্দত পালন করবে)। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৪
খুসাইফ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম,যে মহিলার স্বামী মারা গেছে সে (ইদ্দত অবস্থায়) কি ঘর থেকে বের হতে পারবে? তিনি বললেন,না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯১৯৮
সুতরাং বিনা ওজরে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া জায়েয হবে না। আর শরীয়তের হুকুমের লঙ্ঘন করাই পাপ। আর পাপ বলতেই ঈমানের উন্নতির পথে বাধা এবং আখেরাত ও কবরের যিন্দেগী সুখময় হতে বাধা। মুমিনের জন্য শুধু এতটুকু কথাই কোনো ফরয-ওয়াজিব বিধান পালনের জন্য যথেষ্ট।
অবশ্য জীবিকা কিংবা অন্য কোনো মানবিক প্রয়োজনে দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শেষ হওয়ার পর আবার বাড়িতে ফিরে আসা জরুরি। আর দিনে কোনো বিশেষ ওজরে বের হলেও রাতে অবশ্যই নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে।-ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬-১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬শেয়ার লিংক