জনৈক ব্যক্তি ফরয গোসলের সময় কুলি করতে ভুলে গিয়েছিল। নামায আদায়ের পর বিষয়টি স্মরণ হলে সে পুনরায় গোসল করে নামায আদায় করে। জানার বিষয় হল, ফরয গোসলে কুলি করতে ভুলে গেলে পুনরায় কি গোসল করতে হবে?
জনৈক ব্যক্তি ফরয গোসলের সময় কুলি করতে ভুলে গিয়েছিল। নামায আদায়ের পর বিষয়টি স্মরণ হলে সে পুনরায় গোসল করে নামায আদায় করে। জানার বিষয় হল, ফরয গোসলে কুলি করতে ভুলে গেলে পুনরায় কি গোসল করতে হবে?
এক্ষেত্রে শুধু কুলি করে নিলেই গোসল পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। পুনরায় গোসল করতে হবে না।
হাদীস শরীফে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি ফরয গোসল করেছে। কিন্তু শরীরের কিছু অংশে পানি পৌঁছেনি। (এখন তার করণীয় কী?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে শুধু ঐ অংশটুকু ধুয়ে নিবে। অতপর নামায আদায় করবে।
-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ১০/২৩১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৬০৯; কিতাবুল আছল ১/৩২; শরহুল মুনইয়াহ ৫০; আসসিআয়াহ ১/২৮০শেয়ার লিংক
আমি চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করি। অনেক সময় অযু থাকতেই মাসাহর মুদ্দত শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমার জন্য পুনরায় অযু করতে হবে, নাকি শুধু মোজা খুলে পা ধুয়ে নিলেই চলবে?
অযু থাকা অবস্থায় মাসহের মুদ্দত (সময়সীমা) শেষ হলে মোজা খুলে উভয় পা ধুয়ে নিলেই চলবে। পুনরায় অযু করতে হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/২৭২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/২১১; কিতাবুল আছল ১/৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১৭৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭৬শেয়ার লিংক
ঈদের নামায ঈদগাহে পড়ার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও মসজিদে পড়াটা কেমন? এ ব্যাপারে শরীয়তের দিকনির্দেশনা কী? দয়া করে জানাবেন।
ঈদের নামায ঈদগাহে পড়া সুন্নত। ঈদগাহে পড়ার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিনা ওজরে মসজিদে পড়া মাকরূহ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামায ঈদগাহেই পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামায পড়ার জন্য ঈদগাহে গমন করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯৫৬)
অবশ্য বৃষ্টির কারণে বা অন্য কোনো ওযরে যেমন জায়গা সংকুলান না হওয়া বা ঈদগাহ না থাকার কারণে মসজিদে ঈদের জামাত করা মাকরূহ নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার ঈদের দিন বৃষ্টি শুরু হল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে মসজিদে ঈদের নামায পড়েছেন।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১৬০; ফাতহুল বারী ২/৫২২; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৭; উমদাতুল কারী ৬/২৮২; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ্ব ২/২৮৯শেয়ার লিংক
একদিন মসজিদে আমার পাশে জুতা রেখে জামাতে দাঁড়িয়েছি। এরই মধ্যে দেখি যে, আমার নতুন জুতা যা প্রায় আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি তা একজন নিয়ে যাচ্ছে।
আমি এটা দেখতে পেয়ে নামাযের নিয়ত ছেড়ে দেই এবং চোর থেকে জুতা উদ্ধার করি। এরপর আবার নামাযে শরিক হই। এখন জানতে চাই জুতার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক হয়েছে, নাকি আমি গুনাহগার হয়েছি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দিয়ে জুতা উদ্ধার করা নাজায়েয হয়নি। মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জিনিস হেফাজতের জন্য নামায ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে। একাধিক তাবেঈ থেকে বর্ণিত আছে যে, নামায অবস্থায় তাদের আরোহী চলে যাচ্ছিল তখন তারা নামায ছেড়ে দিয়ে আরোহী হেফাজত করেছেন। আর কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন, এক দিরহাম অর্থাৎ ৩.০৬১৪ গ্রাম রূপা সমপরিমাণ সম্পদ হেফাযতের জন্যও নামায ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে। যা বর্তমান মূল্য হিসাবে প্রায় ৩১৫ টাকা হয়।
এছাড়া নামাযে দাঁড়ানোর আগেই জুতা/মালপত্র হেফাযতে রাখা উচিত; যেন নামায অবস্থায় এ কারণে মনোযোগ নষ্ট না হয়।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/২৬১; শরহুল মুনইয়া ৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১শেয়ার লিংক
আমাদের গ্রামে একজন লোক আছেন। যিনি অন্ধ ও দরিদ্র। তাকে পাঁচশ টাকা দেওয়ার জন্য আমি তার বাড়িতে যাই। কিন্তু লোকটি তার আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে যাওয়ায় তা আর দেওয়া হয়নি। ঐ টাকা এখনো আমার কাছে আছে। এখন প্রশ্ন হল, আমি কি এ টাকা নিজ প্রয়োজনে খরচ করতে পারব? নাকি অন্য ফকীরকে দিয়ে দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ঐ পাঁচশ টাকার মালিক আপনিই। শুধু নিয়তের কারণে তা দান করে দেওয়া জরুরি হয়ে যায়নি। তাই ঐ টাকা নিজ প্রয়োজনেও খরচ করতে পারবেন। আবার ইচ্ছা করলে দানও করতে পারবেন।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪০৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৪/৫০৩শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি ভুলে তাওয়াফে বিদা করেনি। তাওয়াফে যিয়ারতের পর অন্য কোনো তাওয়াফও করেনি। দেশে আসার পর এ ভুল ধরা পড়েছে। এখন তার করণীয় কি? তাকে কি দম দিতে হবে?
হ্যাঁ, কোনো ওজর ছাড়া তাওয়াফে বিদা ছেড়ে দিলে দম ওয়াজিব হয়। অতএব প্রশ্নোক্ত ব্যক্তিকে এ ভুলের জন্য হেরেমের এলাকায় একটি ছাগল বা দুম্বা যবাই করতে হবে। সেখানে কারো মাধ্যমে যবাই করালেও চলবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/২১; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৫০শেয়ার লিংক
ক) আমার এক বোন আছে। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়েছে। আমার আপন মা মারা গেছেন। এরপর আমার বাবা আবার বিয়ে করেছেন। জানতে চাই, আমার বোনের স্বামী আমার সৎ মার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে কি না?
খ) আমার বোন আমার নানীর আপন ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে কি না? আর আমার বউ কি নানীর ভাইয়ের সাথে দেখা দিতে পারবে?
ক) না, আপনার বোনের স্বামী আপনার সৎ মায়ের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারবে না। তার সাথে পর্দা করা জরুরি।-কিফায়াতুল মুফতী ৫/৩৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/২৩৭
শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি বাইতুল মুকাররম মসজিদে দুই রাকাত নামায আদায় করার মান্নত করেছে। অতপর সেখানে আদায় না করে অন্য মসজিদে আদায় করেছে। প্রশ্ন হল, তার মান্নত কি আদায় হয়েছে?
হ্যাঁ, তার মান্নত আদায় হয়ে গেছে। কেননা কোনো নির্ধারিত মসজিদে নামায আদায়ের মান্নত করলে সেখানেই তা আদায় করা জরুরি হয় না। বরং অন্য মসজিদে আদায় করলেও ঐ মান্নত পূর্ণ হয়ে যায়।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৭/৫৮৯, হাদীস : ১২৫৮০; আততাজরীদ ১২/৬৫১৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৪১শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় তিন তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। মসজিদের পশ্চিমে মসজিদের জায়গায় বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘর বিদ্যমান। মসজিদ কমিটি বাথরুম, প্রস্রাবখানা ও লাশ রাখার ঘরের উপরে ছাদ দিয়ে তাতে ইমাম-মুয়াযযিনের পরিবার নিয়ে থাকা, পাঠাগার ও কমিটির মিটিংয়ের জন্য রুম তৈরি করতে চাচ্ছে। এটা করা বৈধ হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ইস্তেঞ্জা খানা ও লাশ রাখার ঘরের উপর ইমাম-মুয়াযযিনের স্বপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করা এবং মসজিদের অফিস কক্ষ ও ইসলামী বই-পুস্তকের জন্য পাঠাগার করা জায়েয হবে। তবে ঐ অংশের জন্য আলাদা সিঁড়ি রাখা উচিত। যাতে করে মসজিদে যাতায়াতকারীদের কোনো প্রকার সমস্যা না হয়।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/২১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৫শেয়ার লিংক
ক) আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের পাশে এক খন্ড জমি ক্রয় করে মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দেয়। কিন্তু মাদরাসা এখনো প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ভবিষ্যতে মাদরাসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকার কিছু লোক ঐ জমিতে কলা, পেপে ইত্যাদি চাষাবাদ করে থাকে এবং তা বিক্রি করে মসজিদের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করে।
এখন জানার বিষয় হল-
ক. এভাবে মাদরাসার সম্পদ মসজিদের জন্য ব্যয় করা জায়েয হবে কি না? যদি না হয় তবে পূর্বে ব্যয়কৃত অর্থের হুকুম কী?
খ) মসজিদের মাল মসজিদের ভিতরে বিক্রি করার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
ক) মাদরাসার জন্য ওয়াকফকৃত জমির আয়ের মালিক মাদরাসা। মাদরাসা প্রতিষ্ঠা না হলেও মাদরাসার জন্যই এ জমির আয় রেখে দেওয়া জরুরি। তাই অন্য কেউ মাদরাসার জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে-এক. মাদরাসা কর্তৃপক্ষ/মুতাওয়াল্লির অনুমতি নেওয়া।
দুই. ঐ জমি ব্যবহারের জন্য মাদরাসা ফান্ডে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা। এ টাকা কোনো আমানতদার ব্যক্তির নিকট জমা রাখতে হবে, যা ভবিষ্যতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানে ব্যয় হবে। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষের উপর কর্তব্য হল, এতদিন ধরে ঐ জমি চাষাবাদ করার কারণে এর ন্যায্য ভাড়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া।-রদ্দুল মুহতার ৪/৩৬০; কিতাবুল ওয়াকফ, পৃষ্ঠা : ২০৩
খ) মসজিদের মালামালও মসজিদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা জায়েয নেই। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। ইবাদত-বন্দেগীর স্থান। ক্রয়বিক্রয়ের জায়গা মসজিদ নয়। তাই মসজিদের মালামালও বেচাকেনার প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে তা সম্পন্ন করতে হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মসজিদ আল্লাহর যিকর, নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত স্থান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৫)
অপর একটি বর্ণনায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ক্রয়বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৯
শেয়ার লিংক
আমি একটি মসজিদের মুয়াযযিন। আমাদের এলাকার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যে কুরবানীর পশু যবাই করে দেয় তাকে এর বিনিময়ে কিছু হাদিয়াও দেওয়া হয়। জানতে চাই, কুরবানীর পশু যবাই করে বিনিময় নেওয়া জায়েয হবে কি?
হ্যাঁ, কুরবানীর পশু যবাই করে এর বিনিময় নেওয়া জায়েয আছে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২; ইমদাদুল আহকাম ৪/২৬৪; কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৪৩শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকার এক কৃষক থেকে ৪০০/- টাকা দরে ১০ মণ ইরি ধান ক্রয় করেছি। চুক্তিটি এভাবে হয়েছে যে, আমি তাকে নগদ ৪,০০০/- টাকা দিয়েছি। তিনি ছয় মাস পর পর পাঁচ মণ করে ধান দিবেন। এক বছরে সম্পূর্ণ ধান পরিশোধ করবেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম কিস্তিতে তিনি পাঁচ মণ ধান দিয়েছেন। দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার সময় তিন মণ ধান দিতে চাচ্ছেন এবং বলছেন যে, ক্ষেতের ধান কম হয়েছে। তাই তিন মণ দিবেন। আর দুই মণ ধানের বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে মূল্য দিয়ে দিবেন। এখন আমার জন্য ঐ দুই মণ ধানের মূল্য নেওয়া জায়েয হবে কি?
না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য ঐ দুই মণ ধানের পরিবর্তে তার মূল্য নেওয়া জায়েয হবে না। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম পণ্য ক্রয় করবে সে যেন ঐ পণ্য ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬২
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ কৃষক থেকে ধানের পরিবর্তে মূল্য নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ঐ কৃষক বাজার থেকে ধান কিনেও দিতে পারবেন। আর যদি আপনি টাকাই নিতে চান তবে দুই মণ ধান বাবদ প্রদত্ত মূল ৮০০/- টাকাই নিতে পারবেন। এর অতিরিক্ত নেওয়া জায়েয হবে না।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬২; ইলাউস সুনান ৪/৪৩৪; ফাতহুল কাদীর ৬/২৩০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৩৫৭শেয়ার লিংক
কিছুদিন আগে আমার পিতা মারা যান। মিরাস সূত্রে একটি ট্রাক আমার মালিকানায় আসে। আমি এক ব্যক্তির সাথে এই মর্মে চুক্তি করেছি যে, এই ট্রাক তুমি চালাবে। যা আয় হবে তার অর্ধেক তুমি পাবে, আর অর্ধেক আমি। প্রশ্ন হল, আমাদের এই চুক্তি সহীহ হয়েছে কি? যদি সহীহ না হয় তাহলে এর সহীহ পন্থা কী হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ট্রাকের আয় উভয়ে ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি সহীহ হয়নি। এক্ষেত্রে ২টি নিয়মে সহীহভাবে চুক্তি করা যায়। আপনারা এর যে কোনোটি গ্রহণ করতে পারেন। যথা-১. নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে আপনি চালকের নিকট ট্রাকটি ভাড়া দিয়ে দিবেন। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ভাড়াই আপনার প্রাপ্য হবে। আর গাড়ির যাবতীয় আয় পাবে ভাড়া গ্রহিতা চালক। ২. আপনি চালককে নির্ধারিত পরিমাণ পারিশ্রমিক দিবেন। আর ট্রাক থেকে উপার্জিত সকল আয়ের মালিক আপনি হবেন। চালক শুধু তার নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পাবে।
-কিতাবুল আছল ৪/১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/২৩৫শেয়ার লিংক
আমার বন্ধু ইফতেখার ও ইহতেশাম প্রতি বছর কুরবানীর ঈদে পঞ্চাশ হাজার করে এক লক্ষ টাকা দিয়ে চামড়া ব্যবসা করে। এবার তারা আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে তাদের ব্যবসায় শরিক হতে বলে। কিন্তু আমার কাছে এত টাকা না থাকায় আমি বিশ হাজার টাকা ও চামড়া বেচাকেনার কাজে শ্রম দিতে সম্মত হই। এরপর আমাদের মাঝে এভাবে চুক্তি হয় যে, ইফতেখার পঞ্চাশ হাজার টাকা ও শ্রম দিবে। আর বিনিময়ে সে লভ্যাংশের ৪০% পাবে। ইহতেশাম শ্রমহীন পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে লভ্যাংশের ৩০% পাবে। আর আমি বিশ হাজার টাকা ও শ্রম দিয়ে পাব লভ্যাংশের ৩০%। আর ব্যবসায় লোকসান হলে সবাই নিজ নিজ লভ্যাংশ হারে দায়ভার বহন করবে। জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত চুক্তিটি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত কারবারে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। কেননা শরিকানা কারবারে যে অংশিদার শ্রম দিবে তার লভ্যাংশ মূলধনের আনুপাতিক হারের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করা জায়েয আছে। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকসানের দায়ভার বহনের চুক্তিটি শরীয়তসম্মত হয়নি। কেননা লোকসানের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, প্রত্যেক অংশিদার তার মূলধন অনুপাতে লোকসানের দায়ভার বহন করবে। লভ্যাংশের হার অনুপাতে নয়। তাই আপনাদের ঐ চুক্তিতে লোকসানের দায়ভার লভ্যাংশের হার অনুযায়ী হবে না; বরং মূলধন অনুপাতেই লোকসান বহন করতে হবে। অতএব আপনাদের ঐ চুক্তিটি এ নিয়মে সংশোধন করে নিতে হবে।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা ২৬৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩১১-৩১২শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকার অধিকাংশ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতি মৌসুমে তারা তরমুজ চাষ করে। তা ছোট অবস্থায় পুরো ক্ষেত ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয়। পরে তরমুজ বড় হলে ব্যবসায়ীরা তা উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করে। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ফল বিক্রি করা বৈধ হবে কি? বিক্রয়ের পর এ তরমুজ বিক্রেতার জমিতে রাখা জায়েয হবে কি না? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
তরমুজ ছোট থাকা অবস্থায় ক্ষেত বিক্রি করে দেওয়া জায়েয আছে। তবে বিক্রয়ের সময় তরমুজ বড় হওয়া পর্যন্ত জমিতে থাকবে এমন শর্ত করা যাবে না। শর্ত ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর বিক্রেতার সম্মতিতে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত রাখা যাবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৫৪-৫৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/৩০০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৮৩শেয়ার লিংক
এক লোক গরু যবাই করার জন্য আমাকে তার বাসার কাছে নিয়ে যায়। কসাইরা গরুটাকে উত্তর দিকে মাথা ও পূর্ব দিকে পা দিয়ে শুইয়ে দেয় এবং আমিও অজ্ঞতাবশত ঐভাবে যবাই করে দেই। যবাইয়ের সময় কুরবানীদাতা উপস্থিত ছিলেন না। পরে সে জানতে পেরে আমাকে খুব বকাঝকা করে এবং বলতে থাকে, তুমি আমার কুরবানী নষ্ট করেছ। এখন তুমি জরিমানা দিবা ইত্যাদি। এখন আমার প্রশ্ন হল, উক্ত কুরবানী কি সহীহ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, ঐ কুরবানী সহীহ হয়ে গেছে। পশু যবাইয়ের সময় পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং সীনা কিবলামুখী করে যবাই করা উত্তম।
হাদীস শরীফে আছে, জাবির রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট দুটি ভেড়া যবাই করেছেন। তিনি ভেড়া দুটির সীনা কিবলামুখী করে শুইয়ে দিলেন এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবাই করলেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৮৮; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১৬
সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ ‘‘আলমিনহাজে’’ ইমাম নববী রাহ. বলেন, এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত এবং মুসলমানদের আমলও এভাবে চলে আসছে যে, যবাইয়ের সময় পশুকে বাম পার্শ্বদেশের উপর শোয়াবে। কেননা এ পদ্ধতিতে যবাইকারীর জন্য ডান হাতে ছুরি নেওয়া এবং বাম হাত দিয়ে পশুর মাথা চেপে ধরে যবাই করা অধিকতর সহজ। (শরহে মুসলিম, নববী ১৩/১২২)
তাই ইচ্ছাকৃত এর ব্যতিক্রম করা উচিত নয়। ভুলবশত বা বেখেয়ালে হয়ে গেলে অসুবিধা নেই।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় কিছু লোক আছে, যারা সামর্থ্য না থাকার কারণে কুরবানী দিতে পারে না। তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা কুরবানীর দিন মুরগী বা হাঁস যবাই করে থাকে। আমি জানতে চাই, কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবাই করা জায়েয আছে কি?
কুরবানীর দিনেও কুরবানীর নিয়ত না করে কেবল খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁস, মুরগী ইত্যাদি যবাই করা জায়েয। এতে দোষের কিছু নেই।
তবে কুরবানীর নিয়তে কিংবা কুরবানীর সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্যে হাঁস, মুরগী যবাই করা যাবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৩/২৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬০শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি মারা গেছে। তার কেবলমাত্র আপন বোনের ছেলে ও মেয়ে জীবিত আছে। এছাড়া নিকটাত্মীয় অন্য কেউ নেই। এখন তার সম্পদ কীভাবে বণ্টন করা হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃতের সম্পদ থেকে মৃতের কাফন-দাফনের খরচ প্রয়োজন হলে তা দিবে এবং তার কোনো ঋণ থাকলে তাও আদায় করবে। আর সে কোনো বৈধ অসিয়ত করে থাকলে ঋণ আদায়ের পর অবশিষ্ট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে তা পুরো করতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সকল সম্পদ মৃতের বোনের ছেলে মেয়েদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। ছেলে দুই ভাগ আর মেয়ে এক ভাগ পাবে।
-আসসিরাজী ৬, ৬৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৯৫শেয়ার লিংক
মোকছুদুল মুমিনীন ও বেহেশতের কুঞ্জি এই কিতাবের চতুর্থ অধ্যায়ে আছে, ‘‘ওমরি কাযা নামায আদায়ের বিবরণ :
রুকনে দ্বীন কিতাবে বর্নিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, যদি কোনো লোকের বহু দিনের নামায কাযা হইয়া থাকে এবং উহার সংখ্যা তাহার স্মরণ নাই, তাহা হইলে ঐ লোকটি শুক্রবার দিন জুময়ার নামাযের পূর্বে নিম্ন নিয়মে এক সালামে চার রাকায়াত নামায পড়িবে। ইহার প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরে ৭ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার সূরা কাওছার পাঠ করিবে। এই নামায কেহ আদায় করিলে তাহার ও তাহার পিতামাতার জীবনের কাযা নামায আল্লাহ তায়ালা মাফ করিয়া দিবেন।’’
আমার জানার বিষয় হল, উক্ত কথাটি আমি কখনো কোথাও শুনিনি। যদি বাস্তবেই তা সঠিক হয়ে থাকে এবং আপনি যদি জানাতেন তাহলে খুবই উপকার হতো।
প্রশ্নোক্ত কথাটি হাদীস নয়। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। এটি শরীয়তের অনেক স্বতসিদ্ধ মৌলনীতির পরিপন্থী। মুহাদ্দীসগণ এসব বর্ণনাকে স্পষ্টভাষায় বাতিল ও জাল বলেছেন। (রদয়ুল ইখওয়ান আন মুহদাসাতি আখেরী জুমআতি রমাযান, আবদুল হাই লক্ষ্ণৌবী, পৃ. ৪০-৪৪)
তাছাড়া জীবনের ছুটে যাওয়া নামায কাযা করার শক্তি সামর্থ্য থাকলে কাযাই করতে হবে।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত দলিল প্রমাণ জানতে চাইলে মাসিক আলকাউসার ফেব্রুয়ারি ’০৫ সংখ্যাটি দেখুন। সেখানে এ বিষয়ে পৃথক একটি প্রবন্ধ লেখা হয়েছে।
আর কাযা নামাযের সংখ্যা স্মরণ না থাকলে প্রবল ধারণা অনুযায়ী একটা সংখ্যা নির্ধারণ করে এর কাযা আদায় করতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, রুকনে দ্বীন, মোকছুদুল মুমিনীন ও নেয়ামুল কুরআন জাতীয় কিতাবাদি নির্ভরযোগ্য নয়। এগুলোতে অসংখ্য জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা আছে এবং তাতে প্রচুর ভুল মাসআলা-মাসায়েল রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অলিক ও ভিত্তিহীন কাহিনীও সেগুলোতে স্থান পেয়েছে’’। তাই এসব কিতাব পড়া ঠিক নয়। সঠিক মাসআলার জন্য বেহেশতী জেওর, মাসনূন দুআর জন্য ‘হিসনে হাসীন’ (ইমাম জাযারী রাহ. কৃত) ও বিভিন্ন বিষয়ের সুন্নত আমলের জন্য ডাক্তার আবদুল হাই আরেফী রাহ.কৃত ‘উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পড়া যেতে পারে।
শেয়ার লিংক
আমরা বিভিন্ন সময় আলেমগণ থেকে দরূদ শরীফ পড়ার বিশেষ ফযীলত শুনেছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, দরূদ শরীফ কি নিজ থেকে বানিয়ে পড়লেও দরূদ আদায় হয়ে যাবে? নাকি হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদই পড়া শর্ত?
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল দরূদ শরীফ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো
পড়া সর্বাপেক্ষা উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম আরবী ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কীভাবে দরূদ পড়বেন তা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জেনে নিতেন। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে, কাব বিন উজরা রা. বলেছেন, একবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি সালাম পেশ করার পদ্ধতি তো জানলাম কিন্তু দরূদ কীভাবে পেশ করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা বল-
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد.
(সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৭০)
অন্য একটি বর্ণনায় তিনি বলেছেন, তোমরা (এভাবে দরূদ) পড়)-
اللهم اجعل صلواتك وبركاتك على آل محمد كما جعلتها على آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ৮৭২৬)
তাই যথাসম্ভব হাদীসে বর্ণিত দরূদ শরীফ পড়ার অভ্যাস করা উচিত।
এছাড়া কোনো কোনো সাহাবা থেকেও কিছু দরূদ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তাঁর সঙ্গীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা এভাবে দরূদ পড়-
اللهم اجعل صلاتك ورحمتك وبركاتك على سيد المرسلين وإمام المتقين وخاتم النبيين محمد عبدك ورسولك، إمام الخير وقائد الخير ورسول الرحمة، اللهم ابعثه مقاما محمودا يغبطه به الأولون والآخرون، اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وآل إبراهيم، إنك حميد مجيد.
(আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৮৫৯৪)
উপরোক্ত দরূদ শরীফ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে।
তাই সম্ভব হলে এগুলোও পড়বে।
অবশ্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে নিজ থেকে দরূদ শরীফের বাক্য তৈরী করা বা বুযুর্গদের মামুল কোনো দরূদ পাঠ করারও অবকাশ আছে। যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে তা নিম্নরূপ :
ক) সালাত ও সালাম সম্বলিত বাক্য হওয়া এবং ভাষা বিশুদ্ধ হওয়া।
খ) দরূদে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশাপাশি তাঁর ‘আল’ ও ‘আযওয়াজ’ অর্থাৎ পরিবার পরিজন ও স্ত্রীগণকেও অন্তর্ভুক্ত রাখা। কেননা সালাত ও সালাম দ্বারা মূল দরূদ আদায় হয়ে গেলেও দরূদের পরিপূর্ণতার জন্য এগুলোও দরকার। (দেখুন : আলকাওলুল বাদী ৮৩)
এছাড়া প্রায় সকল হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদ শরীফে ‘আল’ কে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনোটিতে ‘আযওয়াজ’ কেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সহীহ বুখারীতে (হাদীস : ৬৩৬০) এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (এভাবে দরূদ) পড় –
اللهم صل على محمد وأزواجه وذريته كما صليت على آل إبراهيم، وبارك على محمد وأزواجه وذريته كما باركت على آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.
গ) তাওহীদ পরিপন্থী বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা পরিপন্থী কোনো বিষয় না থাকা।
ঘ) হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদের চেয়ে অন্য কোনো দরূদকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও বিশেষ ফযীলতপূর্ণ মনে না করা।
ঙ) যেসব ক্ষেত্রে শরীয়তের পক্ষ হতে বিশেষ বিশেষ দরূদ শরীফ নির্ধারিত আছে। যেমন নামাযে দরূদে ইবরাহীমী সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঐ দরূদ শরীফই পাঠ করবে।
শেয়ার লিংক
একদিন আমার বোনের মেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে তার রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। ঘটনাক্রমে তার রক্তের গ্রুপের সাথে আমার রক্তের গ্রুপও মিলে যায়। আমি রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাই। কিন্তু আমার বোনের সাথে আমার মায়ের ব্যক্তিগত বৈরিতা থাকায় তিনি আমাকে রক্ত দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু জীবন বাঁচানোর তাকিদে মায়ের কথা উপেক্ষা করে রক্ত দিতে যাই। এখন প্রশ্ন হল, আমার এ কাজটি কি ভালো হয়েছে, নাকি মায়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে আমি গুনাহগার হব।
এ কারণে আপনি গুনাহগার হবেন না। বোনের এই প্রয়োজনের মুহূর্তে ভাই হিসেবে সহযোগিতা করা আপনার দায়িত্ব ছিল। এমন ক্ষেত্রে তার সাহায্য করতে বাধা দেওয়া মায়ের জন্যও ঠিক নয়। তাই আপনি রক্ত দিয়ে ঠিকই করেছেন।
অবশ্য আপনার মায়ের নিষেধাজ্ঞার প্রতি খেয়াল রেখে আপনি নিজে রক্ত না দিয়ে অন্যের থেকেও ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে পারতেন।
-ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন ৬/৩২১; ফযলুল্লাহিস সামাদ ১/৫১শেয়ার লিংক
স্কুলের ধর্ম বইয়ে কুরআন শরীফের সূরা, দুআ-দরূদ ইত্যাদি লেখা থাকে। আমাদের বাসার পাশে ভাঙ্গারি দোকানগুলোতে অনেকে পুরাতন বই বিক্রির সময় ধর্ম বইগুলোও কেজি হিসেবে বিক্রি করে। যা দ্বারা তারা প্যাকেট বানিয়ে বিক্রি করে। জানতে চাই, আল্লাহ তাআলার নাম বা কোনো আয়াত কিংবা দুআ লেখা কাগজ দিয়ে প্যাকেট বানানো ও সেগুলো পণ্য দেওয়ার কাজে ব্যবহার করার হুকুম কী?
কুরআনে কারীমের আয়াত, হাদীস শরীফ অথবা আল্লাহ তাআলার নাম কিংবা কোনো যিকির লেখা কাগজ অধিক সম্মানের যোগ্য। তা সংরক্ষণ করে রাখা জরুরি। এসব কাগজ দিয়ে প্যাকেট বানানো ও তা গ্রাহককে পণ্য দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা নাজায়েয। তাই এ ধরনের বই ও কাগজ ভাঙ্গারীর কাছে বিক্রি করাও জায়েয হবে না।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২শেয়ার লিংক
আমাদের স্কুলের এক স্যারকে বলতে শুনলাম যে, প্লেটের মাঝখান থেকে খাবার খাবে না। খেলে খাবারের বরকত থকে না। তার এ কথাটি কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আপনাদের স্যারের কথাটি সঠিক। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বরকত খাবারের মাঝখানে অবতীর্ণ হয়। অতএব তোমরা খাবারের এক পাশ থেকে খাওয়া শুরু করবে। মাঝখান থেকে খাওয়া শুরু করবে না।
(জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৮০৫)শেয়ার লিংক