জনাব,আমি কুরবানির সময় আমার মরহুম বাবার নামেও কুরবানি দিয়ে থাকি। প্রশ্ন হচ্ছে, এ কুরবানির গোশত কি সদকা করে দিতে হবে?
জনাব,আমি কুরবানির সময় আমার মরহুম বাবার নামেও কুরবানি দিয়ে থাকি। প্রশ্ন হচ্ছে, এ কুরবানির গোশত কি সদকা করে দিতে হবে?
না, সদকা করা জরুরি নয়। মৃত ব্যক্তির ছওয়াবের উদ্দেশ্যে যে নফল কুরবানি করা হয় তার গোশত সাধারণ কুরবানির মতোই। নিজেরাও খেতে পারবেন এবং অন্যকেও দিতে পারবেন।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২শেয়ার লিংক
জনাব, আমি কুরবানির সময় সফরে ছিলাম। সে সময় আমার নির্দেশেই বাড়িতে কুরবানি করা হয়। ঈদের দ্বিতীয় দিনে আমি সফর থেকে ফিরে আসি। স্থানীয় এক আলেমের কাছে শুনলাম, সফর অবস্থায় কুরবানি ওয়াজিব নয়, কিন্তু কুরবানির সময়ের ভিতরে মুকীম হলে (আর্থিক সঙ্গতি থাকলে) কুরবানি ওয়াজিব হয়। জানতে চাই, সফরে থাকা অবস্থায় যে কুরবানী দেওয়া হয়েছে তা ধারা আমার ওয়াজিব কুরবানি আদায় হয়েছে কি না?
হাঁ, সফরে থাকা অবস্থায় যে কুরবানি করা হয়েছে তা দ্বারা আপনার ওয়াজিব কুরবানি আদায় হয়ে গেছে। তাই পুনরায় কুরবানি করা জরুরি নয়।
-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১২, ৩১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯২শেয়ার লিংক
আমাদের গ্রামে রমযান মাসে সাহরীর সময় লোকদেরকে জাগ্রত করার জন্য সাইরেন ও বেল বাজানো হয়। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি? আর ঐ আওয়াজ শুনে সাহরী খাওয়া সহীহ আছে কি?
সাহরীর জন্য সাইরেন বা বেল বাজানো দোষনীয় নয়। তাই তা অনুসরণও নাজায়েয নয়। তবে এ কাজ কোনো বিচক্ষণ লোক দ্বারা করানো চাই। কেননা, এক্ষেত্রে ভুল হলে অনেকের রোযা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৫০শেয়ার লিংক
একজন লোক নির্বাচনী ক্লাব বানানোর উদ্দেশ্যে চার মাসের জন্য আমার একটি ঘর ভাড়ায় নিয়েছিল। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল মাসে তিন হাজার টাকা করে। কিন্তু ঐ লোক দু’মাসের ভাড়া সময়মতো আদায় করলেও বাকি দু’মাসের টাকা পরিশোধ করেনি। তার সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তার কাছে ভাড়া চাই। সে দিতে অস্বীকার করে। সে বলছে, ঘরটি ঠিকমতো দু’মাস ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি দু’মাস ব্যবহার হয়নি। চার মাসের টাকা কেন দিব? অন্য একজন আমাকে বলেছে, সে নাকি দলের অফিস থেকে চার মাসের ভাড়াই উঠিয়েছে। কিন্তু আমাকে দিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, সে যেহেতু দু’মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমার সাথে কৃত চুক্তি বাতিল করেনি। আর আমিও তার কাছে ঘরটি ভাড়ায় দেওয়ার কারণে অন্যের কাছে ভাড়া দিতে পারিনি। তাই আমি কি তার কাছ থেকে বাকি দু’মাসের ভাড়া পাব?
প্রশ্নোক্ত পুরো চার মাসই ঘরটি যদি ব্যবহারের উপযোগী থাকে এবং ভাড়া গ্রহিতার নিয়ন্ত্রনে থাকে তবে পূর্ণ সময়ের ভাড়াই পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভাড়াগ্রহিতা দু’মাস ব্যবহার না করলেও পুরো চার মাসের ভাড়াই আদায় করতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১১শেয়ার লিংক
দাদার বিবাহকৃত কোনো নারীকে (সৎ দাদী) বিয়ে করা বৈধ হবে কি?
দাদার স্ত্রী মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বিবাহ করা জায়েয নয়।
-সূরা নিসা ২২; তাফসীরে মাযহারী (সূরা নিসা অংশ) ২/৫৪; আহকামুল জাসসাস ২/১১২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৪; ফাতহুল কাদীর ৩/১২০; রদ্দুল মুহতার ৩/২৮শেয়ার লিংক
আমি একজন শিক্ষক। হিফয বিভাগে পড়াই। অনেক সময় নাবালেগ-অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চার কণ্ঠে সিজদার আয়াত শুনি। প্রশ্ন হল, বুঝমান অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চার কণ্ঠে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা করতে হবে কি?
হ্যাঁ, বুঝমান নাবালেগ বাচ্চার কণ্ঠে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৮; শরহুল মুনিয়্যা পৃ. ৫০০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭শেয়ার লিংক
মাস্টার আবদুর রউফের তিন ছেলে। বড় দুই ছেলেকে লেখা-পড়া করিয়ে ও বিদেশ পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু ছোট ছেলের জন্য তেমন কিছু করতে পারেননি। এজন্য মৃত্যুর সময় স্ত্রীকে ডেকে বিশ্বরোড সংলগ্ন পাঁচ গন্ডা জমি ছোট ছেলের জন্য অসিয়ত করে গেছেন। বড় ছেলেরা বিদেশ থাকায় তাদেরকে বলে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে তারা শুনে বলল, আমাদের ছোট ভাই হিসেবে আমরা তার সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। তবে বাপ-দাদার মিরাসী সম্পত্তি তাকে এককভাবে দিতে পারব না। এখন প্রশ্ন হল, এ অসিয়ত পূর্ণ করতে হবে কি না? এ অসিয়ত অমান্য করতে কোনো সমস্যা হবে কি না?
ওয়ারিসের জন্য সম্পদের অসিয়ত শরীয়তসম্মত নয়। কেউ করলেও তা কার্যকর হয় না। তাই ঐ ব্যক্তির অসিয়তটি সহীহ হয়নি। তা আমলযোগ্য নয়। হ্যাঁ, সকল ওয়ারিস স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের অংশ থেকে মৃতের ছোট ছেলেকে অতিরিক্ত কিছু দিতে চায় তবে। এর অবকাশ আছে।
-সহীহ বুখারী ১/৩৮৩; সুনানে নাসাঈ ২/১১৩; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৮২; তাকমিলা ফাতহুল কাদীর ৯/৩৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৪৯শেয়ার লিংক
একজন ইমাম সাহেব জানাযার নামাযে মাত্র তিন তাকবীর বলেই সালাম ফিরিয়েছেন। তাকে অবগত করার পর তিনি বলেন, সমস্যা নেই। নামায সহীহ হয়েছে। তাকবীর কম হলে নামায অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু মৃত ব্যক্তির অভিভাবকরা এ কথায় সন্তুষ্ট না হয়ে পরের দিন অন্য ইমাম এনে কবরের উপর নামায পড়েছে। প্রশ্ন হল, জানাযা সহীহ হয়েছে কি না? কবরের উপর দ্বিতীয় জানাযা পড়াতে কোনো অসুবিধা হবে কি না?
চার তাকবীরের কম হলে জানাযা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম জানাযা নামাযে একটি তাকবীর কম হওয়ায় সেটি আদায় হয়নি। আর পরবর্তীতে কবরকে সামনে নিয়ে যে জানাযা পড়া হয়েছে তা আদায় হয়েছে এবং শরীয়তসম্মতই হয়েছে। কারণ জানাযা ছাড়া দাফন করা হলে কিংবা আদায়কৃত নামায ফাসেদ হলে দাফনের পরও লাশ পচে যাওয়ার আগে কবরকে সামনে নিয়ে জানাযা পড়া যায়।
-সহীহ বুখারী ১/১৭৭-১৭৮; সহীহ মুসলিম ১/৩০৯; উমদাতুল কারী ৮/১৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২৪শেয়ার লিংক
আমার এক বর্গা চাষী আউশ ধানের মৌসুমে আমার প্রাপ্য পাঁচ মণ ধান করজ হিসেবে রেখে দিয়েছিল। অতপর আমনের মৌসুমে করজ পরিশোধ করতে তিন মণ সাধারণ ধান আর দু’মণ পোলাওর ধান দিয়েছে। যেহেতু পোলাওর ধানের দাম অন্যান্য ধানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তাই আমি প্রথমে নিতে অসম্মতি প্রকাশ করলেও পরে এ ধানের প্রয়োজন আছে বিধায় নিয়ে নিয়েছি। এখন প্রশ্ন হল, সাধারণ ধানের পরিবর্তে এ অধিক মূল্যের ধান গ্রহণ করা আমার জন্য বৈধ হয়েছে কি না?
করজ দেওয়ার সময় যদি উন্নত জাতের ও বেশি মূল্যের ধান দেওয়ার কিংবা যে কোনোভাবে ঋণদাতাকে লাভবান করার শর্ত না হয়ে থাকে এবং সমাজে এমন কোনো প্রচলনও না থাকে; বরং ঋণগ্রহীতা করজ পরিশোধ করার সময় স্বেচ্ছায় ভালো ধান দিয়ে থাকে তাহলে ঋণদাতার জন্য তা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে তা সুদ হবে না।
-সহীহ বুখারী ১/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৯; নুতাফ ফিলফাতাওয়া পৃ. ২৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০২; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৫শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তির ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল। তখন সে মান্নত করল যে, যদি ছেলে পাওয়া যায় তাহলে আজমীর শরীফ যাবে ও মাযারে শিরনি দিবে। তার এই মান্নত সহীহ হয়েছে কি না?
না, মান্নত হয়নি; বরং এমন নিয়ত করা গুনাহ হয়েছে। কারণ কোনো উদ্দেশ্য হাসিল হলে মাযারে যাওয়ার নিয়ত করা, সেখানে শিরনি দেওয়া ইত্যাদি শিরক ও কঠোর গুনাহর কাজ। মান্নত শুধু আল্লাহ তাআলার নামেই করা যায়। কোনো মাযার বা পীরের নামে মান্নত করা শিরক। তাই কেউ এমন নিয়ত করলেও তা পালন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উপরন্তু উক্ত নিয়তের কারণে তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।
-সহীহ বুখারী ২/৯৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৬; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি বিবাহের কিছুদিন পরে বিদেশ চলে যায়। সেখান থেকে স্ত্রীর জন্য দশ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল সেট পাঠায়। এরপর বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয়। তালাকের পর মোহর আদায়ের সময় স্বামী ঐ মোবাইলকে মোহরের অন্তর্ভুক্ত ধরে এবং বলে যে, আমি সেটা মোহর হিসেবেই দিয়েছি। কিন্তু তালাক দেওয়ার পূর্বে মোবাইল মহর হিসাবে দেওয়ার কথা জানায়নি। স্ত্রী মহর হিসাবে ধরতে সম্মত নয়। সে বলছে, মোবাইল কি মোহর হয়? জানতে চাই, উক্ত স্বামী এই মোবাইল মোহরের হিসেবের মধ্যে ধরতে পারবে কি না?
আমাদের সমাজে মোবাইল বা এ ধরনের ব্যবহারিক সামগ্রী মোহর হিসেবে দেওয়ার প্রচলন নেই। তাই এ জাতীয় দ্রব্যাদি মোহর হিসেবে দিতে চাইলে পূর্বেই স্ত্রীর সম্মতি নেওয়া জরুরি। অন্যথায় তা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু মোবাইলটি দেওয়ার সময় স্ত্রীর সাথে সেটা মোহর হিসেবে দেওয়ার কথা হয়নি তাই এখন সেটাকে মোহর হিসেবে গণ্য করার অবকাশ নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১৫০; ফাতহুল কাদীর ৩/২৫৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৩২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৮৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১৩১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৫১শেয়ার লিংক
সৌদি আরব থাকাকালীন আমি এক বাঙ্গালী থেকে এক হাজার রিয়াল কর্জ নিয়েছিলাম। এখন বাংলাদেশে আসার পর তা আদায় করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হল, রিয়ালের কোন দিনের মূল্য ধরে তা পরিশোধ করব? ঋণ গ্রহণের দিনের হিসেবে? নাকি ঋণ আদায়ের দিনের হিসাবে?
আপনি যেহেতু রিয়াল কর্জ নিয়েছিলেন সেহেতু নিয়ম তো হল তাকে রিয়ালই দিবেন। হ্যাঁ, সে যদি রিয়ালের পরিবর্তে টাকা নিতে সম্মত হয় তাহলে টাকা দিয়ে আদায় করা যাবে। তবে যে দিন ঋণ আদায় করবেন সেই দিনের রিয়ালের বাজার দর হিসাবে আদায় করতে হবে। গ্রহণের দিনের হিসাবে নয়।
-বযলুল মাজহূদ ১৫/১২; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরাহ ১/১৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৪শেয়ার লিংক
বর্তমানে বাজারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লাকি কুপন ছাড়া হয়। ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ মাল কিনলে তাকে একটি কুপন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। প্রশ্ন হল, এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা-বেচা করা কি জায়েয হবে? লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করা যাবে কি?
যদি পুরস্কারের কুপন ছাড়ার কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা না হয় কিংবা এর কারণে ক্রেতাদেরকে কোনোরূপ ধোঁকা দেওয়ার অভিপ্রায় না থাকে যথা-নিম্নমানের মাল চালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি এবং ক্রেতা শুধু পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যেই ক্রয় করে না থাকে। তাহলে এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা-বেচা করা এবং লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করাও জায়েয হবে। এটি মূলত মূল্যছাড়েরই একটি পদ্ধতি।
উল্লেখ্য, পণ্যের অধিক প্রচারের জন্য এভাবে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা পছন্দনীয় নয়; বরং পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নিয়ম হল, ব্যাপকভাবে মূল্যছাড় দেওয়া কিংবা পূর্বের মূল্য বহাল রেখে পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
-বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরাহ ২/২৩২; ফাতাওয়া মুআছিরাহ ২/৪২০শেয়ার লিংক
ঈদের নামাযে ছানা কখন পড়বে? চার তাকবীরের পরে নাকি প্রথম তাকবীরের পরে? জনৈক আলেম বলেছেন, অতিরিক্ত তাকবীরের পরে পড়বে। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
বিশুদ্ধ মতানুযায়ী ঈদের নামাযেও তাকবীরে তাহরীমার পরে অতিরিক্ত তাকবীরের আগেই ছানা পাঠ করবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮০; তাহতাবী আলামারাকী পৃ. ২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭২শেয়ার লিংক
আমি এক বাড়িতে ভাড়া থাকি। বাড়িতে কয়েকটি পুরাতন টিনের ঘর রয়েছে। একবার ঝড়-তুফান হলে একটি ঘরে বৃষ্টির সময় পানি পড়া শুরু হয় এবং টয়লেটটি পড়ে যায়। বাড়ির মালিক শহরে থাকে। এক বছর পরপর এসে ভাড়া নিয়ে যায়। তাকে ফোন করে জানালে তিনি মিস্ত্রি এনে ঠিক করে নিতে বলেন। আমি মিস্ত্রি এনে ঠিক করে নেই। কিন্তু মালিক পরবর্তীতে এ খরচ দিতে চাচ্ছে না। জানতে চাই, এ খরচ কার দায়িত্বে হবে?
ভাড়া ঘরবাড়ি মেরামতের দায়িত্ব মালিকের। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি যেহেতু মালিকের অনুমতিতেই মেরামতের কাজ করেছেন তাই এই খরচ মালিককেই দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ভাড়াটিয়ার ত্রুটির কারণে কোনো কিছু নষ্ট হয়ে থাকলে শুধু এর ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৪৮; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ ৫২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৯শেয়ার লিংক
আমি এক মসজিদের ইমাম। জনৈক মুসল্লী আমাকে তার জমি চাষাবাদ করার জন্য সাময়িক সময়ের জন্য দিয়েছে। আমি চাচ্ছি, নিজে চাষাবাদ না করে এ জমি অন্য কাউকে ভাড়ায় দিব। প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি তা বৈধ হবে?
জমির মালিক অনুমতি দিলে জমিটি অন্যত্র ভাড়া দিতে পারবেন। মালিকের অনুমতি ছাড়া ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩২০; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮১; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ ৮২৩-৮৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯০; আলজামেউস সগীর পৃ. ৪৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৭৯শেয়ার লিংক
আমি একটি প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক। আমার একটি কারখানাও রয়েছে। মাঝে মধ্যে ব্যস্ততার কারণে স্কুলে ক্লাস নিতে যেতে পারি না। তখন আমার ছোট ভাইকে (বি.এ অনার্স) ক্লাস নিতে পাঠাই। প্রশ্ন হল, আমার ভাইকে দিয়ে ক্লাস করালে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা আছে কি না?
স্কুল কর্তৃপক্ষ যেহেতু আপনাকে নিয়োগ দিয়েছে তাই আপনাকেই ক্লাস নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত ভাই বা অন্য কাউকে দিয়ে ক্লাস করানো জায়েয হবে না এবং এর দ্বারা আপনি দায়িত্বমুক্ত হতে পারবেন না। অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি আপনার অপারগতায় আপনার ভাইকে ক্লাস করার অনুমতি দেয় তবে তাকে দিয়ে ক্লাস করানো বৈধ হবে।
-শরহুল মাজাল্লা খালেদ আতাসী ২/৬৭১, মাদ্দাহ ৫৭১; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৮শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকার এক লোক প্রায় সময়ই আযান দেন। এভাবে ১০/১২ বছর যাবত আযান দিচ্ছেন। মুসল্লীরা তাঁকে মুয়াযযিনের মতো মনে করেন। তিনি আল্লাহু আকবার এর হামযাকে এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করেন এবং আকবার এর ‘বা’ কেও এক আলিফ পরিমাণ লম্বা করে থাকেন। আমরা তাঁকে এ সংক্রান্ত মাসআলা শুনিয়েছি এবং অনেকবার আযান মশকও করিয়েছি। কিন্তু তিনি সহীহভাবে আযান দিতে পারেন না। জানতে চাই, এভাবে আযান দিলে কোনো সমস্যা হবে কি না। বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
আযানে আল্লাহু আকবার এর ‘হামযা’ অথবা ‘বা’ কে টেনে বা মদ করে পড়লে আযান মাকরূহ হবে। এমন অশুদ্ধ উচ্চারণকারীর আযান দেওয়া ঠিক নয়। আযানের জন্য এমন লোক নির্বাচন করতে হবে, যিনি শুদ্ধভাবে সুন্নত তরীকায় আযান দিতে পারেন।
-সুনানে আবু দাউদ ১/৮৭; শরহুল মুনইয়া পৃ. ৩৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫১৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬; আসসিআয়াহ২/১৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৮৫শেয়ার লিংক
আমি গ্রামের এক লোকের নিকট বিশ শতাংশ জমি পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া দেই। তিনি সেই জমি অন্য একজনের নিকট বর্গা দেন। আমার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমি তাকে বললাম, আপনি বর্গা হিসাবে এই জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল পান ঐ পরিমাণ ফসল আমি আপনাকে দিয়ে দিব। তবে এ জমিটা পুনরায় অন্য একজনকে ভাড়া দিতে চাই। জানতে চাই, এ প্রস্তাবে তিনি সম্মত হলে এমন করা জায়েয হবে কি?
প্রশ্নের বিবরণ দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, আপনাদের কারবারটি প্রকারান্তরে এমনই হয়ে যাচ্ছে যেন মালিক তার জমির ভাড়াটিয়া থেকে আবার ভাড়া নিচ্ছে। আর মালিকের জন্য নিজের জিনিস ভাড়া নেওয়ার কোনো বৈধতা ফিকহে ইসলামীতে নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৭০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৯১শেয়ার লিংক
আমি গত রমযানে রোযা রেখে বিনা ওজরে তা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। ফলে আমার উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। আমি অত্যন্ত মাজুর বিধায় ষাটটি রোযা রাখতে সমর্থ নই। তাই মিসকীনদেরকে সদকা ফিতর পরিমাণ খাদ্য দিতে চাচ্ছি। এখন জানার বিষয় হল, ষাটজন মিসকীনকেই দিতে হবে? নাকি ঐ পরিমাণ খাদ্য একজনকে দিলেও চলবে?
রোযার কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য না থাকলে ষাট রোযার পরিবর্তে ষাটজন প্রাপ্তবয়স্ক মিসকীনকে দু’ বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে কিংবা ষাটজনের প্রত্যেককে এক ফিতরা পরিমাণ খাদ্য বা তার মূল্য দিতে হবে। এই ষাট রোযার পরিবর্তে একজনকে খাদ্য দিতে চাইলে এক ফিৎরা করে ষাট দিনে দিতে হবে। এক দিনে এক ব্যক্তিকে ষাট ফিতরা পরিমাণ একত্রে দিলে তার দ্বারা ষাট রোযার ফিদয়া আদায় হবে না।
-সহীহ বুখারী ১/২৬০; উমদাতুল কারী ১১/৩১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/১২; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১৩শেয়ার লিংক
من صام رمضان وأتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر
এই হাদীসটির সঠিক তরজমা কী? কেউ যদি الدهر শব্দের অর্থ ‘এক যুগ’ করে তাহলে তা কি সহীহ হবে?
হাদীসটির অর্থ-‘যে ব্যক্তি পুরো রমযান এবং এর পরে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখল সে যেন পুরো এক বছর রোযা রাখল।’
প্রশ্নোক্ত হাদীসে الدهر শব্দটি দ্বারা এক বছর বুঝানো হয়েছে। কেননা শাওয়ালের ছয় রোযার ফযিলত সম্পর্কে বর্ণিত ‘সুনানে নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ’-এর এক বর্ণনায় الدهر এর পরিবর্তে আসসানাহ অর্থাৎ এক বৎসর এসেছে। অতএব এখানেও الدهر দ্বারা আসসানাহ বা এক বৎসরই উদ্দেশ্য হবে। এক যুগ নয়।
উল্লেখ্য, আভিধানিকভাবে الدهر শব্দটি কোনো নির্দিষ্ট সময় বুঝায় না। তাই الدهر এর অর্থ যুগ নয়। আভিধানিকভাবে الدهر শব্দের যে সব অর্থ পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ :
(১) পুরো জীবন।
(২) দীর্ঘ সময়।
(৩) উল্লেখযোগ্য অনির্দিষ্ট সময়।
(৪) হাজার বছর
(৫) এক লক্ষ বছর।
উল্লেখ্য যে, হাদীসটিতে الدهر এর অর্থ যেমনিভাবে ১ বছর করা হয়েছে তেমনি কেউ কেউ পুরো জীবন অর্থেও তা ব্যবহার করেছেন। মূলত : এ দুটি কথায় কোনো বিরোধ নেই। কারণ একটি নেক আমলের ছওয়াব দশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। সে হিসেবে শাওয়ালের ছয়টিসহ ছত্রিশটি রোযা রাখা মানে তিনশ ষাট দিনই অর্থাৎ ১ বছর রোযা রাখা। অতএব যে ব্যক্তি এভাবে প্রতি বছর ছত্রিশটি রোযা রাখল সে বস্ত্তত পুরো জীবনই রোযা রাখল।
-ইকমালুল মু’লিম ৪/১৩৯; মাআরিফুস সুনান ৫/৪৪৪; ফয়যুল কাদীর ৬/১৬১; ফাতহুল মুলহিম ৩/১৮৭; আউনুল মা’বুদ ৭/৬৩শেয়ার লিংক
আমার একটি গাড়ির গ্যারেজ আছে। সেখানে বিভিন্ন কাজের জন্য মাসিক বেতন হিসেবে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় যে, মাসে ৭/৮ দিন পর্যন্ত কোনো কাজ থাকে না। ফলে কর্মচারীরা বেকার বসে থাকে। এতে কাঙ্খিত আয়ের চেয়ে অনেক কম আয় হয়। এখন জানার বিষয় হল, যদি কোনো মাসে এমন হয় তাহলে কর্মচারীদের মাসিক বেতন হতে বেকার দিনগুলোর টাকা কেটে রাখা বৈধ হবে কি?
যদি কর্মচারীগণকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা ডিউটির নির্দিষ্ট সময় চাকুরীস্থলে উপস্থিত থাকে ও কাজের জন্য প্রস্ত্তত থাকে তাহলে কাজ না থাকলেও পূর্ণ সময়ের বেতন দিতে হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাস শেষে তারা পূর্ণ মাসের বেতনই পাবে। কাজ না থাকায় বেকার দিনগুলোর বেতন কম দেওয়া বৈধ হবে না।
-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া মাদ্দাহ ৪২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০০শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি বার্ধক্যের কারণে রমযানের রোযা রাখতে অক্ষম। অপরদিকে সে দরিদ্র ও অসচ্ছল। যার দরুণ রোযার ফিদয়া আদায় করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তার জন্য রোযার দায়মুক্ত হওয়ার কোনো পন্থা আছে কি?
এ পরিস্থিতিতে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করবে। পরবর্তীতে কখনও কাযা করার কিংবা ফিদয়া আদায়ের সামর্থ্য ফিরে পেলে তখন কাযা বা ফিদয়া আদায় করে নিতে হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি রমযান মাসে বিতর নামাযের তৃতীয় রাকাতে রুকুতে ইমামের সাথে শরীক হয়েছে। সে দুআ কুনূত পড়ার সুযোগ পায়নি। প্রশ্ন হল, তার ছুটে যাওয়া রাকাতদ্বয় আদায়ের সময় তাকে দুআ কুনূত পড়তে হবে কি না?
ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় তাকে আর দুআ কুনূত পড়তে হবে না। কারণ তৃতীয় রাকাতের রুকু পাওয়ার কারণে সে দুআ কুনূত পেয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
-হাশিয়াতুত্ত্বাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১শেয়ার লিংক
প্রায় এক যুগ গত হল আমি আমার এক নিকটাত্মীয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ( বেতনভুক্ত) করছি। আমি ব্যবসা পরিচালনার পর যে পরিমাণ মুনাফা আসে ইতিপূর্বে মালিক তার পিতা, ভাই-বোনদের নিয়ে ঐ পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। তাই মালিক আমাকে খুব বিশ্বাস করে এবং অনেক দিক দিয়ে সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে।
কয়েক বছর পূর্বে আমার মালিক ব্যবসায়িক কাজে দেশের বাইরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে মহা বিপদে পড়েন এবং ঐ বিপদ থেকে উদ্ধারে আমি সবচেয়ে বেশি মেহনত করে উদ্ধার করে আনি। ঐ সময় আমি আমার মালিকের সাথে তার বাসায় দেখা করতে গেলে তিনি সুস্থ, সজ্ঞান অবস্থায় আমাকে বললেন, ‘আজ থেকে তুমি আমার দোকানের ও ব্যবসার চার আনা পার্টনার।’ তোমাকে কিছু দিনের মধ্যে দলিল করে দিব। এরপর আমি এই পর্যন্ত লজ্জায় তাকে দলিল করতে বলিনি। তিনিও আমাকে দলিল করে দেননি। কিন্তু আমি চার আনা মালিক/পার্টনার হিসেবে টাকা হিসেব করে নিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হল, ক) আমি কি তার কথার দ্বারা পার্টনার হয়ে গেছি? খ) টাকা নেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? গ) আমার পার্টনার কত দিন পর্যন্ত বহাল থাকবে? আমার মৃত্যুর পর কি পার্টনার বহাল থাকবে? ঘ) শেয়ার/পার্টনার হওয়ার জন্য কি কাগজের দলিল থাকা শর্ত? উপরোক্ত প্রশ্নগুলো বিস্তারিত জানিয়ে হারাম থেকে বেঁচে থাকার উপায় বাতলে দিবেন।
আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য আরো কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন। আপনি যেহেতু ঢাকাতেই আছেন তাই সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। অন্যথায় ফোনেও যোগাযোগ করতে পারেন।
শেয়ার লিংক
আমার মামা তার সৎ খালাকে বিবাহ করেছে। আমার নিজের নানী অর্থাৎ মামার আপন মা মারা যাওয়ার পর, নানা আরেকটি বিবাহ করেন এবং সেই নানীর আপন ছোট বোনকে মামা বিবাহ করেন। উল্লেখ্য, সে নানা মারা যাওয়ার পর তারা বিবাহ করে। এখন আমি জানতে চাচ্ছি যে, তাদের এই বিবাহ শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? তাদের ঘরে দুটি সন্তান হয়েছে। তাদের বিবাহ যদি শরীয়তসম্মত না হয় তবে ক) তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখা যাবে কি না? খ) তাদের ভুল হয়েছে বলে তাদের জানানোর পরও যদি তারা বিবাহ বিচ্ছেদ না করে তবে তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করব কি না? গ) তাদের বিবাহ নাজায়েয হলে তাদের সঙ্গে কিভাবে এটা উপস্থাপন করব। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন এবং এই অবস্থায় তারা ইবাদত-বন্দেগী করলে তা কবুল হবে কি? তাদের সন্তানদের বয়স ১০ ও ৪ বছর। এদের সৎভাবে চলতে আমাদের করণীয় কী?
সৎ মায়ের বোন মাহরাম নয়। তাকে বিবাহ করা জায়েযের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফতোয়ার কিতাবে লেখা রয়েছে। তাই আপনার মামার জন্য সৎ মার বোনকে বিবাহ করা জায়েয হয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে আপনার আত্মীয় ও পার্শ্ববর্তী লোকদের মধ্যে যারা এই মাসআলা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া আপনাদের কর্তব্য। যাতে এ নিয়ে কোনো প্রকার ঝামেলার সৃষ্টি না হয়।
বি. দ্র. : আপনি বিশেষ প্রশ্ন শিরোনামে একটি প্রশ্ন করেছেন। এটির উত্তর বিশ্লেষণ সাপেক্ষ। স্বল্প পরিসরে তা দেওয়া সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাব পাওয়া যায়। সম্ভব হলে সেগুলো দেখতে পারেন। আলকাউসারে এ ব্যাপারে কোনো এক সময় লেখা আসবে ইনশাআল্লাহ। আর বিশেষ প্রয়োজনে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন।
-সূর নিসা ২৪; আহকামুল কুরআন জাসসাস ২/১৩৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৩১; ইমদাদুল আহকাম ২/২৪৭শেয়ার লিংক
আসসালামু আলাইকুম। মেহেরবানী করে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর কুরআন-হাদীস অনুযায়ী যথার্থ উত্তর প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
ক : বদলি হজ্ব করার জন্য যার পক্ষ থেকে হজ্ব করা হবে ইহরাম বাধার সময় তার পক্ষ থেকে নিয়ত করতে হবে। কিন্তু মক্কা শরীফে পৌঁছার পর কা’বা ঘর তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করা, মিনায় জামারাসমূহে কংকর নিক্ষেপ করার সময় প্রতিটি কাজেই যার পক্ষ থেকে হজ্ব করা হচ্ছে তার পক্ষ থেকে নিয়ত করতে হবে কি না? আর যদি ঐসব প্রতিটি কাজে তার পক্ষ থেকে নিয়ত করা দরকার না হয় অথচ কেউ বদলী হজ্ব করার সময় প্রতিটি কাজেই তার পক্ষ থেকে নিয়ত করে আদায় করে তবে হজ্বের কোনো ক্ষতি হবে কি না?
খ) পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন বা অন্য কারো পক্ষ থেকে বাইতুল্লাহ শরীফ (কা’বা ঘর) নফল তওয়াফ এবং নফল উমরা হজ্ব আদায় করলে যার পক্ষ থেকে আদায় করা হবে তার পক্ষ থেকেই নিয়ত করা কর্তব্য বা উচিত কি না। আর যদি এরূপ সঠিক না হয় তবে সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি কী? তাদের পক্ষ থেকে নিয়ত করে আদায় করলে কি ভুল হবে বা আদায় হবে না?
গ) ইহরামের কাপড় এবং ইহরাম অবস্থায় ব্যবহৃত অন্যান্য কাপড় যেমন গলায় রাখার ব্যাগ, বেল্ট, টাকা রাখার ব্যাগ ইত্যাদি জেট পাউডার, হুইল পাউডার বা এ জাতীয় কোনো সাবান বা পাউডার দ্বারা ধুয়ে হজ্বে ব্যবহার করা যাবে কি না?
ঘ) ঢাকা শহরের সাপ্লাই করা পানির স্বাদ ও রং মোটামুটি ঠিক বা কোনো কোনো সময় সামান্য ঘোলাটেও হয় এবং সামান্য দুর্গন্ধ লাগে। সেই পানি দ্বারা অযু করা, কাপড় ধোয়া ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যববহার করা কেমন? আর শহরে বসবাস করে ঐ পানি ব্যবহার করা ব্যতীত বিকল্প কোনো উপায়ও নেই। এ ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
ঙ) বর্তমানে ঢাকা শহরে বা সব জায়গাতেই গোসল খানা ও পায়খানা একই কক্ষে বা রুমে থাকে। পায়খানা বা লেট্রিনের কাজের জন্য একটি পানির ট্যাপ এবং গোসল ও অন্যান্য কাজের জন্য আলাদা পানির ট্যাপ থাকে। আর সেই জায়গাগুলো সাধারণত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। তবে কদাচিত লেট্রিনের গ্যাসের সামান্য দুর্গন্ধ দেখা দেয়। এ অবস্থায় এরূপ গোসলখানায় অযু-গোসলের দুআ উচ্চারণ করে পড়া কেমন?
চ) অনেক মসজিদে মূল মসজিদের বাইরে বড় বারান্দা বা চত্বর থাকে। কোনো কোনো মসজিদ দোতলা বা তিন তলায়। এখন প্রশ্ন হল, মসজিদে ঢোকার দুআ কোনখানে পড়তে হবে?
ছ) গরু-ছাগল লালন-পালনের জন্য ভাগে দেওয়া কেমন? এ ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশ কী?
জ) কোনো অসুস্থ লোকের যে কোনো কারণে গোসল ফরয হলে এবং গোসল করা সম্ভব না হলে প্রতি ওয়াক্ত নামায আদায়ের জন্য ফরয গোসল ও অযুর জন্য আলাদাভাবে তায়াম্মুম করতে হবে কি না?
ঝ) মুখের থুথু বা সর্দি হাতে বা কাপড়ে লাগলে শরীয়তের বিধান কী? আঙ্গুলের মাথায় মুখের থুথু লাগিয়ে কুরআন শরীফের পাতা উল্টানো কেমন?
ক) শুধু ইহরামের সময় উক্ত নিয়ত করা যথেষ্ট। প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে নিয়ত করতে হবে না। তবে এভাবে নিয়ত করলেও হজ্বের কোনো ক্ষতি হবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৮
খ) যে কোনো নফল আমলের সওয়াব অন্যকে দিতে চাইলে আমল করার সময়ও তাকে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে করা যেতে পারে। আবার আমল সম্পন্ন করার পরও উক্ত আমলের সওয়াব তাকে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। সুতরাং নফল তাওয়াফ বা উমরার সওয়াবও কাউকে দিতে চাইলে তা আদায় করার সময় যেমন ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায়ের নিয়ত করা যাবে তেমনি আদায়ের পরও তাকে সওয়াব পৌঁছে দেওয়ার নিয়ত করা যাবে। উভয় অবস্থায়ই সে উক্ত আমলের সওয়াব পেয়ে যাবে।-আলবাহরুর রায়েক ৩/৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯৫
গ) ইহরাম অবস্থায় মুহরিমের জন্য জেড পাউডার, হুইল পাউডার বা এ জাতীয় যে কোনো সুগন্ধিযুক্ত পাউডার কিংবা সুগন্ধিযুক্ত সাবান কোনো কাজে ব্যবহার করা জায়েয নেই। তবে ইহরামের পূর্বে এ ধরনের পাউডার বা সাবান দ্বারা ধোয়া কাপড় বা অন্যান্য আসবাবপত্র হজ্বে তথা ইহরাম অবস্থায় ব্যবহার করা যাবে।-আলবাহরুর রায়েক ৩/২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৭
ঘ) ওয়াসার সাপ্লাই করা পানি তখনই নাপাক বলে গণ্য হবে যখন তার দুর্গন্ধ বা রং ইত্যাদি থেকে নাপাকি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বলে মনে হবে। অন্যথায় শুধু সামান্য দুর্গন্ধ বা সামান্য ঘোলাটে হলেই সন্দেহের ভিত্তিতে তা নাপাক বলা যাবে না। কারণ এখানে নাপাকির মিশ্রণ ছাড়াও দুর্গন্ধ বা ঘোলাটে হওয়ার ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সুতরাং যতক্ষণ তা নিশ্চিত নাপাকি বলে মনে না হবে ততক্ষণ তা অযু-গোসল বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে।-আলবাহরুর রায়েক ১/৮৬; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ১৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৮৬
ঙ) গোসলখানা যদি বড় হয় এবং টয়লেটের প্যান বা কমোড অযুর বেসিন বা ট্যাপ থেকে কিছুটা দূরত্বে থাকে তাহলে সেখানে অযু-গোসলের সময় দুআ পড়া যাবে। আর যদি একই জায়গায় হয় তবে মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে দুআ পড়ার অবকাশ রয়েছে।-মাআরিফুস সুনান ১/৭৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪৪
চ) মসজিদে প্রবেশের দুআ যেখান থেকে মসজিদের অংশ শুরু সেখানে প্রবেশের সময়ই পড়বে। চাই তা বারান্দা বা দোতলা-তিন তলা যাই হোক না কেন। অবশ্য আমাদের দেশে বারান্দাগুলো সাধারণত মসজিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে চত্বর মসজিদের অন্তর্ভুক্ত থাকে না। তাই এর ব্যতিক্রম হলে মসজিদ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে তারা যেন মসজিদ শুরুর সীমানা এমনভাবে চিহ্নিত করে রাখেন, যাতে সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়।-আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৫৭
ছ) গরু-ছাগল ভাগে দেওয়ার প্রচলিত অনেক পন্থাই নাজায়েয। আপনি সুনির্ধারিত কোনো পন্থার কথা উল্লেখ করেননি। তবে কারো নিকট গরু-ছাগল পালতে দিয়ে তাকে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক প্রদান করলে সে কারবার জায়েয।
জ) গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পর নতুন করে আবার গোসল ফরয না হলে যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ওযর বিদ্যমান থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ তায়াম্মুমই যথেষ্ট। তবে উক্ত তায়াম্মুমের পর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে শুধু অযু করে নিতে হবে। আর যদি অযু করতেও সক্ষম না হয় তাহলে অযুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নিবে।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৩২
ঝ) মানুষের থুথু ও সর্দি নাপাক নয়। অতএব তা শরীর বা কাপড়ে লেগে গেলে নাপাক হবে না। আর আঙ্গুলের মাথায় থুথু লাগিয়ে কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা উল্টানো যদিও নাজায়েয নয় তবে এমনটি করা অনুচিত।-সহীহ বুখারী ১/৩৮; ফাতহুল বারী ১/৪২০; উমদাতুল কারী ৩/১৭৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০৫
শেয়ার লিংক