যুবায়ের - শিবপুর, নরসিংদী

৬৬৩২. প্রশ্ন

গত কয়েক সপ্তাহ আগে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে আমি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাই। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পর আমি এখন মোটামুটি সুস্থ। তবে ডাক্তার আমার মাথার ব্যান্ডেজ খুলতে এবং তাতে পানি লাগাতে নিষেধ করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় আমার গোসল ফরয হয়েছে। এখন আমি কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জনের জন্য আপনাকে গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ব্যান্ডেজের অংশ ছাড়া পুরো শরীর পানি দ্বারা ধুয়ে নেবেন। আর ব্যান্ডেজের আশপাশে যতটুকু পর্যন্ত পানি পৌঁছানো সম্ভব, ততটুকু পানি দ্বারা ধুতে হবে। ব্যান্ডেজ ও এর আশেপাশের যতটুকু ধোয়া সম্ভব হবে না, তা ভেজা হাত দ্বারা মাসেহ করে নেবেন।

* >بدائع الصنائع< /১৭৭ : ولو كان ببعض أعضاء الجنب جراحة أو جدري، فإن كان الغالب هو الصحيح غسل الصحيح، وربط على السقيم الجبائر، ومسح عليها.

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ১/৪২২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৯; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ১২৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৫৭

শেয়ার লিংক

মুস্তাফিজুর রহমান - কুমারখালী, কুষ্টিয়া

৬৬৩৩. প্রশ্ন

শীতকালে আমি সাধারণত কাপড়ের মোজা পরে এর ওপর চামড়ার মোজা পরি।

জানার বিষয় হল, এভাবে কাপড়ের মোজার ওপর চামড়ার মোজা পরা অবস্থায় চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করা কি সহীহ হবে?

উত্তর

হাঁ, এক্ষেত্রে চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করা সহীহ হবে। চামড়ার মোজার ভেতর কাপড়ের মোজা পরলেও ওই চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করতে কোনো অসুবিধা নেই।

 

* >غاية البيان< /৩২০ : ولأن ما جاز المسح عليه إذا لم يكن بينه وبين الرجل حائل جاز المسح عليه إذا كان بينهما حائل، كخف إذا كان تحته خف أو لفافة.

মুহিম্মাতুল মুফতী ১/২১৬; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮২; মাজমাউল আনহুর ১/৭৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১১১

শেয়ার লিংক

ফারিহা মাহজাবীন - সাভার, ঢাকা

৬৬৩৪. প্রশ্ন

আমি মাঝেমধ্যেই বাবুর পেশাবের ভেজা কাঁথা, কাপড় বাথরুমের স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে রাখি। এতে স্ট্যান্ডটি ভিজে যায়। ধোয়ার পর ভেজা কাপড়গুলো ওই স্ট্যান্ডেই আবার রাখতে হয়। ততক্ষণে সাধারণত সেটা শুকিয়ে যায়। কিন্তু ধোয়ার পরপরই তাতে কাপড় রাখলে তো কাপড় থেকে তাতে পানি ঝরতে থাকবে। ফলে ওই নাপাক স্ট্যান্ডটি ভিজে এর পানি কাপড়ে লাগবে।

তাই জানার বিষয় হল, ধোয়া কাপড়গুলো স্ট্যান্ডে রাখার আগে কি সেটা ধুয়ে পাক করে নিতে হবে, নাকি শুকিয়ে গেলেই তা পাক হয়ে যাবে?

উত্তর

না, স্ট্যান্ডটি শুধু শুকিয়ে যাওয়ার দ্বারা পবিত্র হবে না; বরং সেটিকে পানি দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে, কিংবা অন্তত পবিত্র ভেজা কাপড় বা ভেজা টিস্যু, ন্যাপকিন ইত্যাদি দ্বারা ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। এরপর তাতে ধোয়ার পরপরই পবিত্র ভেজা কাপড় রাখা যাবে।

তাই আপনার কর্তব্য হল, নাপাক ভেজা কাপড় নামিয়ে নেওয়ার পর স্ট্যান্ডটি এভাবে পাক করে নেওয়া। অতঃপর তাতে ওই ধোয়া পাক কাপড় রাখা।

 

* >حلبة المجلي< /৫০৯ : والذي يظهر أن النجاسة إذا كانت يابسة ذات جرم تطهر بالحت والمسح بما فيه بلل طاهر من خرقة أو غيرها حتى يذهب أثرها مع عينها، وإن كانت يابسة ليست بذات جرم كالبول والخمر، فبالمسح بما ذكرناه لا غير، فإنها لا تذهب بالجفاف على ما هو الظاهر. وإن كانت رطبة تطهر بالمسح، سواء كانت ذات جرم أو لا، وسواء كان المسح بخرقة مبتلة أو غير مبتلة أو بغيرها.

শরহু মুখতাসারিল কারখী ১/১৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১০

শেয়ার লিংক

নাঈম আহমাদ - নারায়ণগঞ্জ

৬৬৩৫. প্রশ্ন

আমি মুকীম অবস্থায় পূর্ণ এক দিন মোজার ওপর মাসেহ করি। মাসেহের সময় শেষ হওয়ার পর আমি মোজা খুলে পুনরায় ওযু করি। তখন আমার এক বন্ধু বলে যে, তোমার তো ওযু ছিলই। আবার ওযু করার কী প্রয়োজন? মোজা খুলে শুধু পা ধুয়ে নেওয়াই তো যথেষ্ট।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমার বন্ধুর কথা কি ঠিক? ওযু অবস্থায় মাসেহের সময় শেষ হয়ে গেলে কি মোজা খুলে শুধু পা ধুয়ে নিলেই যথেষ্ট হয়ে যায়?

উত্তর

হাঁ, ওই ব্যক্তি ঠিকই বলেছেন। ওযু থাকা অবস্থায় মোজার ওপর মাসেহের সময় শেষ হয়ে গেলে মোজা খুলে শুধু পা ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে পুনরায় ওযু করা আবশ্যক নয়। তবে পুনরায় ওযু করে নেওয়া উত্তম।

 

* >تحفة الفقهاء< /৮৮ : إذا انقضت مدة المسح يسقط ويجب عليه غسل القدمين دون الوضوء بكماله إن كان متوضئا، وإن كان محدثا يجب عليه الوضوء بكماله.

বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৮; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৪৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৩৫; রদ্দুল মুহতার ১/২৭৬

শেয়ার লিংক

মামুনুর রশীদ - মগবাজার, ঢাকা

৬৬৩৬. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদটি রাস্তার পাশে অবস্থিত। জুমার সময় অনেক মুসল্লি এখানে নামায পড়তে আসে। মসজিদের ভেতরে সবার জায়গা সংকুলান হয় না। তাই রাস্তার ওপরও চাটাই বিছিয়ে তিন চার কাতার করতে হয়। রাস্তার পাশে একটা ড্রেন আছে, যা দিয়ে এখানকার সব ময়লা ও নাপাক পানি যায়। ড্রেনের ওপর ঢালাই করা স্লাব বসানো আছে। যার ফলে নিচের ময়লা বা নাপাকীর কোনো আলামত ওপরে প্রকাশ পায় না। তাই ওই স্লাবের ওপরও চাটাই বিছানো হয়। প্রথম কাতারের বেশিরভাগ অংশ ঐ স্লাবের ওপর থাকে।

আমার জানার বিষয় হল, নিচে নাপাকী থাকার কারণে ওই স্লাবের ওপর চাটাই বিছিয়ে নামায পড়তে কোনো অসুবিধা আছে কি?

উত্তর

ওই স্লাবের ওপর দাঁড়িয়ে নামায পড়লেও নামায আদায় হয়ে যাবে। কারণ, ময়লা আবর্জনা স্লাবের নিচে থাকে। স্লাবে তো কোনো নাপাকী নেই। তাই এর ওপর নামায আদায় হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করা উচিত নয়।

 

* >الفتاوى الهندية< /৬২ : والآجر إذا كان أحد وجهيهما نجسا، فقام على الوجه الطاهر وصلى جاز،مفروشة كانت أو موضوعة. هكذا في فتاوى قاضي خان.

খিযানাতুল আকমাল ১/১২৮; আলমুহীতুর রাযাবী ১/১৪৫; আলফাতাওয়াস সুগরা, সাদরুশ্ শহীদ ১/৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৭৬; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২০২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ১২৯

শেয়ার লিংক

সাদ সাইয়াফ - কুমিল্লা

৬৬৩৭. প্রশ্ন

কাজে ব্যস্ত থাকায় গতকাল যোহরের সময় মসজিদে যেতে পারিনি। তাই ঘরেই যোহরের নামায আদায় করি। সালাম ফেরানোর সময় ভুলবশত প্রথমে বামদিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। এরপর শুধু ডানদিকে সালাম ফিরিয়ে মুসল্লা থেকে উঠে আসি।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, পুনরায় বামদিকে সালাম না ফেরানোর কারণে কি নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে?

উত্তর

আপনার উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পুনরায় বামদিকে সালাম না ফেরানোই নিয়মসম্মত হয়েছে। কেননা নামাযে ভুলে প্রথমে বামদিকে সালাম ফিরিয়ে ফেললে ডানদিকে সালাম ফেরানোর পর পুনরায় বামদিকে সালাম না ফেরানোই নিয়ম।

তবে নামাযে আগে বামদিকে সালাম ফেরানো সুন্নতের খেলাফ। তাই ইচ্ছাকৃত এমনটি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

* >المحيط البرهاني< /১২৮ : فإن سلم أولا عن يساره فسلم عن يمينه، لا يعيد عن يساره.

বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০২; আলমুহীতুর রাযাবী ১/২৫০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩২৫; আযযিয়াউল মা'নাবী ২/১৮৭; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ১৪৯

শেয়ার লিংক

সিফাতুল্লাহ - শিবচর, মাদারীপুর

৬৬৩৮. প্রশ্ন

আমি একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। প্রুফ দেখা এবং টাইপ করা আমার কাজ। মাঝে মাঝে কাজ করার সময় সিজদার আয়াত চলে আসে। সেক্ষেত্রে আমি আয়াতটি মুখে উচ্চারণ না করে শুধু নজর বুলিয়ে যাই এবং টাইপের সময়ও মুখে উচ্চারণ না করে আয়াতটি লিখে ফেলি। জানার বিষয় হল, এভাবে মুখে উচ্চারণ না করে শুধু নজর বুলানো কিংবা টাইপ করার দ্বারা কি আমার ওপর সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

না, শুধু সিজদার আয়াতের দিকে তাকানোর দ্বারা এবং মুখে উচ্চারণ না করে টাইপ করার দ্বারা সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে না। কেননা সিজদা ওয়াজিব হয় মুখে উচ্চারণ করে পড়ার দ্বারা। মুখে উচ্চারণ না করে শুধু আয়াত দেখার দ্বারা বা দেখে টাইপ করার দ্বারা সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না।

তবে মনে রাখতে হবে, সিজদার আয়াত যদি মুখে উচ্চারণ করা হয় আর তা অনুচ্চ স্বরেও হয়, তাহলেও সিজদা ওয়াজিব হবে।

 

* >خلاصة الفتاوى< /১৮৪ : ولا يجب بكتابة القرآن، والحاصل أن الوجوب إنما يكون بأحد الأمرين، إما بالتلاوة أو بالسماع.

ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫০০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩২১

শেয়ার লিংক

মাসউদ - সাভার, ঢাকা

৬৬৩৯. প্রশ্ন

আমি হেফযখানায় শিক্ষকতা শুরু করেছি। আমার ছাত্রদের মধ্যে বেশিরভাগই নাবালেগ। তাদের সবক শোনার সময় সিজদার আয়াতও শুনতে হয়।

প্রশ্ন হল, তাদের থেকে সিজদার আয়াত শোনার কারণে কি আমার ওপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে?

উত্তর

হাঁ, এ বয়সী নাবালেগ থেকে সিজদার আয়াত শুনলেও আপনার ওপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে। কেননা বুঝমান নাবালেগ থেকে সিজদার আয়াত শুনলেও শ্রবণকারীর ওপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়।

 

* >حلبة المجلي< /৫৮৩ : فتجب بالسماع من الكافر والصبي المميز.

কিতাবুল আছল ১/২৭২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯; রদ্দুল মুহতার ২/১০৭

শেয়ার লিংক

রায়হান রাফী - মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা

৬৬৪০. প্রশ্ন

নামাযের মধ্যে প্রায় সময়ই আমার হাই আসে। এক্ষেত্রে আমার কী করা উচিতজানালে কৃতজ্ঞ হব ।

উত্তর

হাই নামাযের ভেতর আসুক বা বাইরে, সর্বাবস্থায় প্রথমেই তা রোধ করার চেষ্টা করবে।

হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ: فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا تَثَاءَبَ ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ.

অর্থাৎ, হাই শয়তানের তরফ থেকে হয়। সুতরাং তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন যথাসাধ্য তা রোধ করে। কেননা কেউ হাই তুললে শয়তান তাকে নিয়ে হাসে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৬)

অন্য এক হাদীসে বিশেষভাবে নামাযের ক্ষেত্রেও এ হুকুম এসেছে। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ، فَلْيَكْظِمْ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ.

অর্থাৎ, নামাযের মধ্যে তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন যথাসম্ভব তা রোধ করে। কেননা, শয়তান এ সময় (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১২৬২)

অতএব নামাযে হাই আসলে তা রোধ করার চেষ্টা করা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং হাই আসলে প্রথমেই যদি ঠোঁট চেপে তা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হয়, তবে সেটিই করবে। আর এভাবে (নামাযের ভেতর বা এর বাইরে) হাই রোধ করা সম্ভব হোক বা না হোক, সর্বাবস্থায় হাই যদি এসেই যায়, তাহলে তখন এক হাত দ্বারা মুখ ঢেকে নেবে।

বাদায়েউস সানায়ে ১/৫০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৩১; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ১৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৫; ফাতহুল বারী ১০/৬৭২

শেয়ার লিংক

আনিসুল ইসলাম - শিবচর, মাদারীপুর

৬৬৪১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক লোক নতুন বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে শহরে চলে গেছে। পূর্বে তার আরেক স্ত্রী ছিল। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে সে আগের স্ত্রীকে ভরণপোষণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সে মহিলা তার স্বামীর বাড়িতে থাকলেও তার যাবতীয় খরচাদি তার বাবাই অল্প অল্প করে দিয়ে থাকে। ওই মহিলার বাবা ও স্বামী দুজনই মোটামুটি সচ্ছল। কিন্তু ওই মহিলার নিজ মালিকানায় প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এমতাবস্থায় তাকে কি যাকাত দেওয়া যাবে? এক লোক বলেছেন মহিলার বাবা ও স্বামী যেহেতু সচ্ছল, তাই তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। তার কথা কি ঠিক?

 

উত্তর

না, ওই কথা ঠিক নয়। মহিলাটির নিজ মালিকানায় যেহেতু প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, তাই তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে। তার বাবা ও স্বামী সচ্ছল হলেও তাকে যাকাত দিতে অসুবিধা নেই। তাছাড়া তার স্বামী সচ্ছল হলেও সে তো তাকে ভরণপোষণ দিচ্ছে না। আর তার বাবাও অল্প অল্প করে খরচ প্রদান করে। ফলে সে বাস্তবেও অভাবী।

অবশ্য যে মহিলার স্বামী সম্পদশালী এবং স্ত্রীকে যথাযথভাবে ভরণপোষণ প্রদান করে এবং স্বামীর সম্পদ নিজের মতোই ব্যবহার করতে পারে, এমন মহিলার মালিকানায় নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলেও তার জন্য বিশেষ জরুরত ছাড়া যাকাত গ্রহণ করা ঠিক হবে না। কেননা সে বাস্তবে অভাবী নয়। অথচ যাকাত হল দরিদ্রের হক।

 

* >المبسوط< للسرخسي ৩/১২ : فإن صرف إلى زوجة غني وهي فقيرة، أو إلى بنت بالغة لغنى، وهي فقيرة جاز في قول أبي حنيفة ومحمد رحمهما الله تعالى؛ لأنه صرفها إلى الفقير، واستحقاقها النفقة على الغنى لا يخرجها من أن تكون مصرفا.

ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হারুন - মোহাম্মদপুর

৬৬৪২. প্রশ্ন

সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা এবং সুদী ব্যাংকের সুদের টাকা কোন্ ধরনের ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে? বা কোন্ কোন্ খাতে ব্যয় করা যাবে? মাসআলা জানানোর জন্য সদয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

উত্তর

সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা হোক বা ব্যাংক একাউন্টের সুদের টাকা, সব প্রকারের সুদের টাকা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত গরীবদেরকে সদকা করে দিবে। এ টাকা সরাসরি তার হাতে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আবার এ টাকা দিয়ে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেও তাকে দেওয়া যেতে পারে। তদ্রƒপ দরিদ্র ব্যক্তির সম্মতিতে তার ঋণও পরিশোধ করে দেওয়া যেতে পারে।

উল্লেখ্য যে, সুদ জঘন্যতম হারাম। তাই সুদী একাউন্ট খোলাই জায়েয নয়। আর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করাই তো হয় সুদ পাওয়ার জন্য। এছাড়া সুদের টাকা গরীবদেরকে সদকা করে দেওয়ার নিয়তেও সুদী চুক্তিতে জড়ানোর সুযোগ নেই। তাই মুসলমানদের এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

 

* >الحاوي القدسي< ১/৩০০ : ومصارف العشر وسائر الصدقات الواجبات مصارف الزكاة.

আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১৭২; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৭৫; আলইখতিয়ার ২/৫৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯, ৫/৯৯

শেয়ার লিংক

যুবায়ের আহমাদ - চাঁদপুর

৬৬৪৩. প্রশ্ন

হুজুর, আমি কায়রো জামিয়াতুল আযহারে পড়াশোনা করি। কয়েক বছর আগে আমার নানা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি আমাকে দিয়ে তার বদলী হজ্ব করানোর ওসিয়ত করে যান। আমি আগামী বছর নানার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করার জন্য বাংলাদেশ থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছি। আমি শুনেছি যে, বদলী হজ্ব যার পক্ষ থেকে করা হয়, তার নিজ দেশ থেকেই আদায় করতে হয়। তো এ ক্ষেত্রে হজ্ব সম্পন্ন করার পর পুনরায় সেই দেশে ফিরে আসাও কি জরুরি? আমি যদি হজ্ব শেষে বাংলাদেশে না এসে কায়রো চলে আসি। এতে কোনো অসুবিধা আছে কি?

 

উত্তর

আপনি বদলী হজ্ব সম্পন্ন করে বাংলাদেশে না এসে কায়রো চলে যেতে পারবেন। কেননা বদলী হজ্ব প্রেরকের দেশ থেকে করা জরুরি হলেও হজ্ব সম্পন্ন করে আবার সেই দেশে ফিরে আসা জরুরি নয়। তবে সম্ভব হলে সেই দেশে ফিরে আসাই উত্তম।

 

* >بدائع الصنائع< ২/৪৬০ : ولو أحج رجلا يؤدي الحج ويقيم بمكة جاز؛ لأن فرض الحج صار مؤديا بالفراغ عن أفعاله. والأفضل أن يحج ثم يعود إليه، لأن الحاصل للآمر ثواب النفقة، فمهما كانت النفقة أكثر كان الثواب أكثر وأوفر.

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৫০; আলইয়ানাবী' ১/২৬৯; আলগায়া, সারুজী ৯/৪৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৮; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়া ১/১৪; আলমানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৫৪

শেয়ার লিংক

রায়হান - ডেমরা, ঢাকা

৬৬৪৪. প্রশ্ন

আমরা একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করি। কয়েকমাস আগে আমরা রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে দাওয়াতী সফরে গিয়েছিলাম। সেখানে তিনটা কাদিয়ানী পরিবারের পেছনে দাওয়াতের মেহনত করা হয়। প্রায় সপ্তাহ খানেক মেহনত করার পর একটি কাদিয়ানী পরিবার ইসলাম ধর্মে ফিরে আসে। তারা পূর্বে মুসলমান ছিল। কয়েক বছর আগে ইসলাম ত্যাগ করে কাদিয়ানী হয়ে গিয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ। তাদের মধ্যে একজনের হজ্ব করার সামর্থ্য আছে। তবে সে কাদিয়ানী হওয়ার আগে একাধিকবার হজ্ব করেছিল।

জানার বিষয় হল, নতুন করে ইসলাম গ্রহণের পর এখন তার ওপর পুনরায় হজ্ব ফরয হবে কি?

উত্তর

হাঁ, এখন তার ওপর পুনরায় হজ্ব করা ফরয। কেননা লোকটি কাদিয়ানী হয়ে যাওয়ার কারণে সে ইসলাম থেকে খারেজ হয়ে গেছে এবং এর আগে মুসলিম থাকা অবস্থায় হজ্বসহ তার আদায়কৃত সমস্ত নেক আমল বাতিল হয়ে গেছে। তাই এরপর পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করার পর তার যদি হজ্ব করার সামর্থ্য থাকে, তাহলে তার ওপর পুনরায় হজ্ব করা ফরয হবে।

 

* >مختصر اختلاف العلماء< ২/২৩৮ : من حج للإسلام ثم ارتد ثم أسلم، قال أصحابنا يعيد الحج.

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৬০৯১; আততাজরীদ ৪/২১৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৯৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৮২; ফাতহুল কাদীর ৫/২৩২; আলমানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৫১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মদুল্লাহ - মিরপুর

৬৬৪৫. প্রশ্ন

এ বছর ইনশাআল্লাহ আমি হজ্ব আদায় করতে যাব। কিন্তু আমি ঠান্ডার রোগী। ঠান্ডা লাগার কারণে গলাও খুব ব্যথা করে। তাই মাঝে মাঝে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে রাখতে হয়।

এখন জানতে চাচ্ছি, ইহরাম অবস্থায় আমি কি গলায় মাফলার ব্যবহার করতে পারব? ব্যবহার করলে কি আমার ওপর কোনো জরিমানা আসবে?

উত্তর

হাঁ, ইহরাম অবস্থায় আপনি গলায় মাফলার ব্যবহার করতে পারবেন। এ কারণে কোনো জরিমানা আসবে না। কেননা ইহরাম অবস্থায় ঘাড়, গলা ঢেকে রাখা নিষেধ নয়।

 

* >الفتاوى الخانية< ১/২৮৯ : ولا بأس للمحرم أن يغطي أذنيه أو من لحيته ما دون الذقن.

আলমুহীতুর রাযাবী ২/২৩৭; ফাতহুল কাদীর ২/৪৪৪; আলমানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ১২৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৮

শেয়ার লিংক

ফাহিম হাসান - যাত্রাবাড়ী

৬৬৪৬. প্রশ্ন

বছরখানেক আগে একজন ব্যবসায়ী ছেলের সঙ্গে আমার এক আত্মীয়ার বিবাহ হয়। মহর ধার্য করা হয় দেড় লক্ষ টাকা। এর মধ্যে এক লক্ষ টাকা তারা নগদ পরিশোধ করে। আর বাকি পঞ্চাশ হাজার দুই বছর পর দেওয়ার কথা। বিবাহের পর কয়েক মাস যেতে না যেতেই ছেলের পরকীয়াসহ বিভিন্ন চারিত্রিক সমস্যা ধরা পড়ে। মেয়ের পরিবার তাকে ফেরানোর চেষ্টা করলে সে মেয়েটির ওপর আরো ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। এবং তার ওপর বিভিন্ন রকমের অত্যাচার করতে শুরু করে। এমতাবস্থায় মেয়েটির জন্য তার সংসার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে বাধ্য হয়ে ছেলেটিকে তালাকের জন্য পীড়াপীড়ি করলে ছেলেটি এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে খোলা করতে রাজি হয়। কোনো উপায় না থাকায় মেয়ের পরিবার তা মেনে নিয়ে তাকে এক লাখ টাকা দিয়ে খোলা করে। জানতে চাই, এক্ষেত্রে ছেলের জন্য উক্ত টাকা গ্রহণ করা বৈধ হয়েছে কি? আর মহরের অনাদায়ী পঞ্চাশ হাজার টাকার কী বিধান হবে?

উত্তর

স্বামীর অন্যায় ও দোষের কারণে খোলা তালাক হলে স্বামীর জন্য স্ত্রী থেকে কোনো বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ নয়।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

فَإِنْ جَاءَ مِنْ قِبَلِهِ لَمْ يَحِلَّ لَهُ مَا أَخَذَ مِنْهَا.

খোলা তালাক যদি স্বামীর কারণে হয়, তাহলে স্ত্রী থেকে সে যা নিয়েছে তা বৈধ হবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১১৮২৫)

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি স্বামীর অন্যায় ও দোষের কারণে মহিলাটি খোলা তালাক গ্রহণ করে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে স্বামীর জন্য খোলার বিনিময়ে উক্ত টাকা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে। তবে খোলা তালাকের কারণে মহরের বকেয়া পঞ্চাশ হাজার টাকা মাফ হয়ে গেছে। তাই মহরের অনাদায়ী টাকা স্বামীর আদায় করতে হবে না।

 

* >بدائع الصنائع< ৩/২৩৫ :  فإن كان من قبل الزوج فلا يحل له أخذ شيء من العوض على الخلع.

মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১১৮১৫; কিতাবুল আছল ৪/৫৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৩৭; যাদুল ফুকাহা ২/৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮৮; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৫২

শেয়ার লিংক

খাইরুন্নেসা - মাগুরা

৬৬৪৭. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার স্বামীর ইন্তেকাল হয়। মৃত্যুর আগে তার বাড়িতে আমি যে ঘরে থাকতাম এখন একা ওই ঘরে থাকতে আমার কষ্ট হয়। আমার স্বামীর ওই বাড়িতে এ ঘরের পাশে আমাদের আরেকটি ঘর আছে। যেখানে আমরা আগে থাকতাম। বর্তমানে আমার ছেলে ও তার স্ত্রী থাকে। এখন আমি কি তাদের সাথে ওই ঘরে থাকতে পারব? এতে ইদ্দত পালনে কোনো সমস্যা হবে?

 

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইদ্দতের সময় আপনি ওই ঘরটিতেও থাকতে পারবেন। এতে অসুবিধা নেই। কেননা স্বামীর বাড়িতে তার একাধিক ঘর থাকলে ইদ্দত অবস্থায় স্ত্রীর জন্য সেই ঘরগুলোতে যাওয়া এবং এর যে কোনোটিতে থাকা জায়েয আছে। স্বামীর সাথে সে যে ঘরে থাকত, ইদ্দত অবস্থায় তাতেই আবদ্ধ থাকা জরুরি নয়।

 

* >الأصل< للشيباني ৪/৪০৮ : وللمطلقة أن تخرج من بيتها إلى الدار، وأن تبيت في أي بيوت الدار شاءت. وكذلك المتوفى عنها زوجها.

আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৭১; রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩৫

শেয়ার লিংক

আশরাফুজ্জামান - যশোর

৬৬৪৮. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মসজিদের জন্য যে চাঁদা কালেকশন করা হয় তা দিয়ে মাসিক খরচ মেটানোর পরও কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। মসজিদ ফান্ডের এই টাকা দিয়ে কি সামাজিক বিভিন্ন কাজ যেমন, নলকূপ খনন, বৃক্ষরোপণ, গরীবকে সাহায্য প্রদান ইত্যাদি করা বৈধ হবে?

উত্তর

না, মসজিদ ফান্ডের উদ্বৃত্ত টাকা গরীবকে দান করা বা সমাজ-কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা বৈধ হবে না। কেননা দাতাগণ টাকাগুলো মসজিদের উদ্দেশ্যেই দিয়ে থাকে। তাই তা কেবল মসজিদ ও মসজিদ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনেই ব্যবহার করা জরুরি। মসজিদের প্রয়োজনীয় খরচাদি নির্বাহের পর টাকা উদ্বৃত্ত থেকে গেলে তা মসজিদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের জন্য জমা রাখা যেতে পারে। মসজিদের প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজ করা যেতে পারে। মুসল্লি ও ইমাম, মুআযযিন, খাদেমদের সুবিধাদি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। কিন্তু মসজিদ ও এতদসংশ্লিষ্ট খাত ভিন্ন অন্য ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাবে না।

উল্লেখ্য, কোনো মসজিদের তহবিলে অনেক বেশি টাকা জমা হয়ে গেলে টাকা কমে আসার পূর্ব পর্যন্ত সেই মসজিদের জন্য নতুন করে অনুদান না নিয়ে দাতাদেরকে অন্য মসজিদে দান করতে বলবে।

 

* >المحيط البرهاني< ৯/১৩৮ : الفاضل من وقف المسجد هل يصرف إلى الفقراء؟ قيل: لا يصرف، وأنه صحيح، ولكن يشترى به مستغلا للمسجد.

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৬৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৪৯৫; ইলাউস সুনান ১৩/২০০

শেয়ার লিংক

আব্দুল্লাহ - সাভার ঢাকা

৬৬৪৯. প্রশ্ন

আমার বাসা সাভার নবীনগর। মালিবাগে চাকরি করি। এই লাইনের বাসগুলো নবীনগরের কথা বলে যাত্রী উঠায়। কিন্তু রাত হয়ে গেলে এবং যাত্রী বেশি না থাকলে অনেক সময় তারা গাবতলীতে সবাইকে নামিয়ে দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই আমি এরকম সম্ভাবনা থাকলে বাসে ওঠার সময় বলে উঠি যে, নবীনগর পর্যন্ত না গেলে এক টাকাও ভাড়া দিব না। তারপরও অনেক সময় তারা গাবতলীতে নামিয়ে দেয়।

জানার বিষয় হল, এভাবে বলে বাসে ওঠার পর যদি গাবতলীতে নামিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে কি তাকে গাবতলী পর্যন্ত বাসভাড়া দিতে হবে, নাকি ভাড়া না দিলেও চলবে?

উত্তর

বাস চালকদের এ আচরণ অন্যায়। নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার কথা বলে যাত্রী উঠিয়ে যাত্রী কমের অজুহাতে মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া অনৈতিক ও গুনাহের কাজ। অনিবার্য কোনো ওযর ব্যতীত ওয়াদার বরখেলাফ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে তাদের এ কাজটি অন্যায় হলেও নির্ধারিত গন্তব্যের আগে যাত্রীদের নামিয়ে দিলে যতটুকু পথ অতিক্রম করেছে তার ভাড়া না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাসওয়ালাদের সাথে এমন কথা বলে নিলেও যে পরিমাণ পথ অতিক্রম করবে তাকে তার নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করা জরুরি হবে। অবশ্য গাড়িটি যদি বিরতিহীন হয় এবং সে মাঝপথের কোনো স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সে বিরতিহীন গাড়ির ভাড়া পাবে না; বরং লোকাল গাড়ির ভাড়া পাবে।

 

* >الأصل< للشيباني ৪/৩১ : أرأيت إن قال: إن بلغت إلى بغداد على هذه الدابة فلك عشرة دراهم، وإلا فلا شيء لك، فوقع الكراء على هذا وركبها فلم تبلغه ونفقت الدابة أو لم تنفق، هل له أجر على هذا؟ قال: عليه أجر مثلها بقدر ما سار عليه.

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, ইসবীজাবী ৩/১২৯৫; গায়াতুল বায়ান ১৩/৩৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩২৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৩

শেয়ার লিংক

ইয়ামীন - মুহাম্মদপুর

৬৬৫০. প্রশ্ন

আমি ও আমার এক বন্ধু শহরে যৌথভাবে ফলের ব্যবসা শুরু করেছিলাম। মূলধন তার চেয়ে আমার বেশি ছিল। তিন চার মাস হল ব্যবসা চলছে। আল্লাহর রহমতে লোকসান হয়নি। কিন্তু গত সপ্তাহে আমার বন্ধু আকস্মিকভাবে ইন্তেকাল করে। এখন তার ওয়ারিশরা ব্যবসায় তার অংশের টাকাগুলো চাচ্ছে।

তাই জানার বিষয় হল, আমাদের যৌথ ব্যবসা চুক্তি কি শেষ হয়ে গেছে? ওয়ারিশদেরকে তার অংশের টাকা দিয়ে দিতে হবে, নাকি যৌথ ব্যবসা চলমান রাখার সুযোগ আছে?

উত্তর

আপনার বন্ধু মৃত্যুবরণ করার পর তার সঙ্গে আপনার ব্যবসা চুক্তিটি শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসায় তার অংশের মালিক এখন তার ওয়ারিশগণ। তাই মৃত ওই শরীকের মূলধন লভ্যাংশসহ তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া আপনার ওপর জরুরি।

 

* >فتح القدير< ৫/৪১২ : (قوله : وإذا مات أحد الشريكين أو ارتد ولحق بدار الحرب بطلت الشركة) مفاوضة كانت أو عنانا ... ولا فرق في ثبوت البطلان بين ما إذا علم الشريك بموت شريكه وعدم علمه بذلك، حتى لا تنفذ تصرفات الآخر على الشركة؛ لأنه عزل حكمي، فإن ملكه يتحول شرعا إلى وارثه، علم موته أو لا، فلا يمكن توقفه.

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৩/২৬০; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১০৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৫৬; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৩৭; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ ১৩৫২

শেয়ার লিংক

আলাউদ্দীন - ঝালকাঠী

৬৬৫১. প্রশ্ন

শহরে আমাদের তিনজনের যৌথ একটা জায়গা আছে। অন্য দুই জনকে না জানিয়ে একজন (মুঈনুদ্দীন) তার দুই শতাংশ এক আত্মীয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে আমাদের দুইজনের একজন (সেলিম ভাই) বিষয়টি জানার পর তিনিও আমাকে জানাননি; বরং তিনি প্রিএমশনের দাবি করেন এবং ক্রেতার সাথে এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলেন। এর পরে যখন আমি জানতে পারি, তখন ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করি, এবং আমিও প্রিএমশনের (শুফআর)  ভিত্তিতে ওই জায়গাটুকু কেনার দাবি করি। তখন ক্রেতা আমাকে বলেছেন, সেলিম ভাইয়ের সাথে তো আমার কথা হয়েছে তিনি কেনার দাবি করেছেন। আপনার বিষয়ে তো আমি কিছু জানি না।

এখন আমার প্রশ্ন হল, যৌথ সম্পত্তির বিক্রীত অংশে সেলিম ভাই শুফআ দাবি করার পর যেহেতু আমি জানতে পেরেছি, তাই এক্ষেত্রে আমি কি তাতে শুফআ দাবি করার অধিকার রাখি না? এবং দাবি করতে পারলে কতটুকুতে পারব? আর এক্ষেত্রে মুঈনুদ্দীন ভাইয়ের ওই আত্মীয় (যিনি ক্রেতা তিনি) কি কোনো অংশ রেখে দেওয়ার অধিকার রাখেন?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনিও যৌথ মালিকানাধীন ওই জমির অংশীদার, তাই অন্য শরীক আপনার আগে তাতে শুফআ দাবি করলেও আপনি উক্ত জমিতে শুফআ দাবির পূর্ণ অধিকার রাখেন। এক্ষেত্রে উক্ত জমিতে বিক্রেতা ছাড়া এর অংশীদার যেহেতু কেবল আপনারা দুজনই তাই বিক্রীত ওই অংশ পুরোটাই আপনারা উভয়ে নিতে চাইলে শুফআর ভিত্তিতে প্রত্যেকে অর্ধেক অর্ধেক করে সেটি কেনার অধিকার রাখেন।

এক্ষেত্রে শুফআর দাবিদার আপনারা উভয় শরিক সম্মত না হলে উক্ত ক্রেতার ওই জমির কোনো অংশ ক্রয়সূত্রে লাভ করার অধিকার থাকবে না।

* >المبسوط< للسرخسي ১৪/৯৭ : ولهذا كانت الشفعة عندنا على عدد الرءوس دون مقادير الأنصباء، والدور.

কিতাবুল আছল ৯/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪৫৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৬, ২১৯; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ ১০১৩

শেয়ার লিংক

মাওলানা আব্দুর রকিব - শিবচর, মাদারীপুর

৬৬৫২. প্রশ্ন

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক মুরগি জবাই করা হয়। কিন্তু বাবুর্চিরা অনেকেই বেনামাযী থাকে। এতগুলো মুরগি জবাই করার সময় 'বিসমিল্লাহ' বলে না। কোনো এক অনুষ্ঠানে আমি নিজেই দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে গেলে ফিতনার আশঙ্কা প্রবল। তাহলে কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলে উক্ত খাদ্য গ্রহণের হুকুম কী?

উত্তর

জবাইকৃত প্রাণীর গোশত হালাল হওয়ার জন্য 'বিসমিল্লাহ' বলে তা জবাই করা জরুরি। জবাইয়ের সময় ইচ্ছাকৃত বা অবহেলাবশত 'বিসমিল্লাহ' বলা ছেড়ে দিলে ওই প্রাণীর গোশত হালাল হয় না; বরং তা হারাম হয়ে যায়। অবশ্য কোনো মুসলমান জবাই করার সময় 'বিসমিল্লাহ' বলতে ভুলে গেলে এ কারণে ওই প্রাণী হারাম হয়ে যাবে না। সেক্ষেত্রে এর গোশত খাওয়া জায়েয হবে।

অতএব যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, কোনো প্রাণী জবাই করার সময় জবাইকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলা করে 'বিসমিল্লাহ' বলা ছেড়ে দিয়েছে, তাহলে ওই প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ হবে না। তবে কোনো ক্ষেত্রে যদি 'বিসমিল্লাহ' বলা হল কি হল না এমনটি নিশ্চিত না হওয়া যায়, তাহলে অনেকে এক্ষেত্রে অবহেলা করে থাকে কেবল এ সন্দেহে তা খাওয়া নাজায়েয হয়ে যাবে না; বরং একজন মুসলমান জবাই করলে সে 'বিসমিল্লাহ' বলেছে এমনটিই ধরে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সুনিশ্চিত না হয়ে সন্দেহ করা ঠিক নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রা. বর্ণনা করেন

أَنَّ قَوْمًا قَالُوْا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ قَوْمًا يَأْتُوْنَا بِاللَّحْمِ، لاَ نَدْرِيْ: أَذُكِرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ أَمْ لاَ؟ فَقَالَ: سَمُّوْا عَلَيْهِ أَنْتُمْ وَكُلُوْهُ.

একদল লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমাদের নিকট কতক লোক গোশত নিয়ে আসে। আমরা জানি না, সেই পশু জবাইয়ের সময় 'বিসমিল্লাহ' বলা হয়েছিল কি না। (এই গোশত কি আমরা খেতে পারব?) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেরা 'বিসমিল্লাহ' পড়ে তা খেয়ে নাও। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫০৭)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আব্দুল বার রাহ. বলেন

وإنما قال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ذلك ليعلمهم أن المسلم لا يظن به ترك التسمية على ذبيحته، ولا يظن به إلا الخير، وأمره محمول على ذلك ما خفي أمره حتى يتبين فيه غيره.

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ কথা বলে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, মুসলমানের ব্যাপারে অযথাই সন্দেহ করা যাবে না যে, সে জবাইয়ের সময় 'বিসমিল্লাহ' বলা ছেড়ে দিয়েছে; বরং তার ব্যাপারে সুধারণাই রাখতে হবে। এবং বিপরীত কোনো কিছু প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার কাজ সঠিক পন্থায় হয়েছে বলেই গণ্য করা হবে। (অর্থাৎ সে 'বিসমিল্লাহ' বলে জবাই করেছে এমনটিই ধরে নেওয়া হবে)। (আলইস্তিযকার ৪/২৪৯)

সুতরাং সাধারণ অবস্থায় মুসলমানদের কোনো অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে মুসলমান কর্তৃক জবাইকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েয হবে; যদি না সুনিশ্চিতভাবে ভিন্ন কিছু প্রমাণিত হয়।

উল্লেখ্য, প্রশ্নকারী ঠিকই বলেছেন যে, বর্তমানে জবাইয়ের ব্যাপারে অনেকের কাছ থেকে অবহেলা লক্ষ করা যায়। বিশেষত বাজারের মুরগি দোকানী এবং অনুষ্ঠানের বাবুর্চি কর্তৃক এমন অবহেলা ও অসতর্কতার কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়। তাই এসব ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার। মুরগি খরিদ করতে গেলে যদি তা দোকানের লোক দিয়ে জবাই করানো হয়, তাহলে কাছে থেকে তাকে দিয়ে ভালোভাবে 'বিসমিল্লাহ' বলিয়ে শুদ্ধভাবে জবাই করানোই সতর্কতার দাবি। এমনিভাবে অনুষ্ঠানগুলোতে জবাইয়ের সময় জবাইয়ের নিয়ম জানা আছে এমন কাউকে তাদের কাছে রাখা উচিত। যেন কর্মীরা 'বিসমিল্লাহ' বলে যথাযথভাবে জবাই কার্য সম্পন্ন করে।

তবে পূর্বেই বলা হয়েছে, কোথাও কোথাও জবাইকারীদের থেকে এমন অবহেলা হয়ে থাকলেও বাস্তবে কোনো ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে এই অবহেলার প্রমাণ পাওয়া না গেলে শুধু উক্ত সন্দেহের কারণে সেখানকার গোশত খাওয়া নাজায়েয হয়ে যাবে না।

কিতাবুল আছল ৫/৩৯৬; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৪৯; ফাতহুল বারী ৯/৫৫১; ইলাউস সুনান ১৭/৭৮; বাযলুল মাজহুদ ১৩/৭৪

শেয়ার লিংক

উমায়ের হাসান - চাঁদপুর

৬৬৫৩. প্রশ্ন

আমাদের মাদরাসায় বেফাক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আশপাশের অনেক মাদরাসা থেকে ছাত্ররা এখানে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। প্রতি বছর পরীক্ষার পর হলরুম সাফাইয়ের সময় বিভিন্নজনের ফেলে যাওয়া কলম, স্কেল, ফ্লুইড ইত্যাদি পাওয়া যায়। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কিছুদিন তা সংরক্ষণ করে রাখে এবং ওই সমস্ত মাদরাসায় সংবাদ পাঠায়। কিন্তু সাধারণত কেউ তা নিতে আসে না। এ অবস্থায় সেগুলো অন্যান্য ছাত্রদের দিয়ে দেওয়া যাবে কি না?

উত্তর

বস্তুগুলো যদি এমন হয় যে, এর মালিক সেগুলো নিতে আসবে না বলেই প্রবল ধারণা হয়, তবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ চাইলে তা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদেরকে আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রাখতে পারেন যে, কেউ যদি এমন কোনো জিনিস রেখে চলে যায়, তবে সেটি তার পক্ষ থেকে অন্যদের দিয়ে দেওয়া হবে এবং সে তা আর নিতে আসবে না বলে ধরে নেওয়া হবে।

 

* >المبسوط< للسرخسي ১১/২ : ثم ما يجده نوعان: (أحدهما) ما يعلم أن مالكه لا يطلبه، كقشور الرمان والنوى. (والثاني) ما يعلم أن مالكه يطلبه. فالنوع الأول له أن يأخذه وينتفع به.

মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/২১৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৩৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৯০; রদ্দুল মুহতার ৪/২৭৮

শেয়ার লিংক