আমাদের পাশের বাড়িতে একটি পালিত কুকুর আছে। কুকুরটি অনেক সময় জামা-কাপড় টেনে ধরে। আবার অনেক সময় গা ঘেষতে থাকে। জানার বিষয় হল, কুকুরের শরীর কাপড়ে বা গায়ে লাগলে তা নাপাক হবে কি না? মুখ দিয়ে ধরলেই বা কী হুকুম? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আমাদের পাশের বাড়িতে একটি পালিত কুকুর আছে। কুকুরটি অনেক সময় জামা-কাপড় টেনে ধরে। আবার অনেক সময় গা ঘেষতে থাকে। জানার বিষয় হল, কুকুরের শরীর কাপড়ে বা গায়ে লাগলে তা নাপাক হবে কি না? মুখ দিয়ে ধরলেই বা কী হুকুম? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কুকুরের শরীর নাপাক নয়। এর শরীরে কাপড় স্পর্শ করলে কাপড় নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। এটি মুখ দিয়ে জামা টেনে ধরলে যদি কাপড়ে লালা লেগে যায় তবে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে। অন্যথায় নাপাক হবে না। এছাড়া কুকুরের শরীরে তরল নাপাক লেগে থাকলে সেক্ষেত্রেও তা স্পর্শ করলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া কুকুর পালা মারাত্মক গুনাহের কাজ। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন ধমকি এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদি পশু অথবা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকুর পালে ঐ ব্যক্তির প্রত্যেকদিন দুই কিরাত পরিমাণ নেকি হ্রাস পায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৭৫; জামে তিরমিযী, হাদীস, ১৪৮৭
আর এক হাদীসে আছে, এক কিরাত হল, উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৪৬৫০
সুতরাং হাদীসে উল্লেখিত কারণ ছাড়া কুকুর পালা থেকে বিরত থাকতে হবে।
-শরহুল মুনইয়াহ ১৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২০৮শেয়ার লিংক
আমি পশু খরিদ করার জন্য একদিন হাটে যাই। অসতর্কতাবশত একটি গরুর পায়ের নিচে পা পড়ে আমার পায়ের অগ্রভাগ মারাত্মক যখম হয়। ডাক্তার ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন এবং ব্যান্ডেজ খুলতে ও পানি লাগাতে নিষেধ করেছেন। এ অবস্থায় আমি কীভাবে অযু করব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি স্বাভাবিক নিয়মেই অযু করবেন। তবে ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করবেন। আর উক্ত পায়ের অবশিষ্টাংশ ধৌত করা সম্ভব হলে তা ধুয়ে নিবেন। তবে যদি পায়ের অবশিষ্টাংশ ধৌত করতে গেলে ব্যান্ডেজ ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে খালি অংশও না ধুয়ে পুরো পা মাসাহ করে নিবেন।
-সুনানে বায়হাকী ১/২২৮; কিতাবুল আছল ১/৪২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫; শরহুল মুনইয়াহ ১১৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৯০; রদ্দুল মুহতার ১/২৭৮শেয়ার লিংক
গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার নিকট পর্যাপ্ত পানিও আছে। এ অবস্থায় শুধু তায়াম্মুম করবে নাকি অযুও করতে হবে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি গোসলের পরিবর্তে শুধু তায়াম্মুম করবে। অযু করবে না। কারণ এক্ষেত্রে তায়াম্মুমই অযু-গোসল উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে। তবে গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন পবিত্রতার জন্য তাকে অযুই করতে হবে। তায়াম্মুম করলে হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/২৩২শেয়ার লিংক
কয়েকদিন হল, আমার সর্দি লেগেছে। একপর্যায়ে সর্দি ঘন ও শক্ত হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে সর্দির সাথে জমাট রক্তও বের হয়। এতে আমার অযু ভাঙ্গবে কি?
এভাবে জমাট রক্ত বের হওয়ার দ্বারা অযু ভঙ্গ হয় না। অবশ্য সর্দির সাথে তরল রক্ত গড়িয়ে পড়া পরিমাণ বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯, ১৩৪শেয়ার লিংক
নামাযের মধ্যে বায়ু চেপে রাখলে কি নামায পুণরায় পড়তে হয়? যদি ইমামের এ রকম হয়ে থাকে তবে কি তিনি মুক্তাদিরকে নিয়ে আবার নামায পড়বেন? মাসআলাটির উত্তর দ্রæত প্রদান করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। কেননা এতে নামাযের খুশু-খুযু বিঘ্নিত হয় এবং এতমিনানের সাথে নামায আদায় হয় না। এসব চাপ থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ এতমিনান ও স্থীরতার সাথে নামায আদায় করা কর্তব্য।
হাদীস ও আসারে পেশাব-পায়খানা ও বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যখন নামায দাঁড়িয়ে যায় আর তোমাদের কারো পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন দেখা দেয় সে যেন প্রথমে প্রয়োজন সেরে নেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪২
ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য হালাল নয় কারো গৃহাভ্যন্তরে অনুমতি ব্যতীত দৃষ্টিপাত করা... এবং কেউ যেন পেশাব-পায়খানার চাপ নিয়ে নামায না পড়ে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৯১
নাফে রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি পেটে বায়ুর চাপ বোধ করে। তিনি বললেন, বায়ুর চাপ বোধ করা অবস্থায় সে যেন নামায না পড়ে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮০২২
উপরোক্ত হাদীস ও আসারের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ বলেছেন, পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আরম্ভ করা মাকরূহ তাহরীমী। আর স্বাভাবিক অবস্থায় নামায শুরু করার পর নামাযের ভিতরে এমন চাপ সৃষ্টি হলে নামাযের পর্যাপ্ত ওয়াক্ত বাকি থাকা সত্তে¡ও এ অবস্থায় নামায চালিয়ে যাওয়া মাকরূহ। এ ধরনের ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দিয়ে ওযু-ইস্তিঞ্জা সেরে পূর্ণ চাপমুক্ত হয়ে নামায আদায় করা কর্তব্য।
হাঁ, নামাযের ওয়াক্ত যদি এত স্বল্প থাকে যে, প্রয়োজন সারতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে তাহলে সম্ভব হলে এ অবস্থায়ই নামায পড়ে নিবে।
অবশ্য পর্যাপ্ত ওয়াক্ত থাকার পরও কোনো ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারী যদি এ অবস্থায় নামায পড়ে নেয় তবে এমনটি করা মাকরূহ হলেও তাদের নামায আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় পড়া জরুরি নয়। তবে ভবিষ্যতে এরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।-শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪১, ৬৪৪শেয়ার লিংক
কোনো সময় তাহাজ্জুদের নামায এক রাকাত পড়ার পর সুবহে সাদিক হয়ে যায়। জানার বিষয় হল,এক্ষেত্রে করণীয় কী? নামায ছেড়ে দেওয়া, নাকি দ্বিতীয় রাকাত পড়ে নামায পূর্ণ করা?
তাহাজ্জুদ পড়ার মতো সময় আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরই নামায শুরু করা উচিত। কখনো তাহাজ্জুদ শুরু করার পর নামায অবস্থাতেই সুবহে সাদিক হয়ে গেলে নামায পূর্ণ করে নিবে। তবে এ দু’ রাকাতকে ফজরের সুন্নত গণ্য করা যাবে না। ফজরের সুন্নত পৃথকভাবেই আদায় করতে হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২-৫৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১০১; ফাতহুল কাদীর ১/২০৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪শেয়ার লিংক
কখনো কখনো আমি মাসবুক হই। কিন্তু ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর পর যখন বাকি নামায আদায় করতে দাঁড়াই তখন কখনো কখনো মনে থাকে না যে, ইমামের সাথে কয় রাকাত পেয়েছি আর কয় রাকাত ছুটেছে। সেক্ষেত্রে আমার পাশের ব্যক্তি যে আমার সাথেই নামাযে শরিক হয়েছে তাকে দেখে নামায আদায় করি। জানার বিষয় হল, এভাবে নামায আদায় করলেও কি নামায হয়ে যায়?
হাঁ, নিজের ছুটে যাওয়া রাকাতের (সংখ্যা) স্মরণ না থাকলে পাশের মুসল্লির নামাযের প্রতি খেয়াল করে নিজে নিজে সে অনুযায়ী নামায পড়লেও হয়ে যাবে। তবে নামায একাগ্রতার সাথে আদায় করা উচিত। বারবার এমনটি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।
-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৫৯; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২শেয়ার লিংক
আমি একদিন মিরপুর এক মসজিদে মাগরিবের নামায পড়েছি। ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সূরা লাহাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফালাক পড়েছেন। আমি শুনেছি, এভাবে মাঝে একটি সূরা বাদ দিয়ে পড়া মাকরূহ। তাই জানার বিষয় হল, বাস্তবেই কি আমার ঐ দিনের নামায মাকরূহ হয়েছে?
ফরয নামাযে প্রথম রাকাতে এক সূরা পড়ে ইচ্ছাকৃত মাঝে একটি ছোট সূরা রেখে দিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে পরবর্তী সূরা পড়া অনুত্তম। আর অনিচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হবে না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত এমনটি হলে অনুত্তম হয়নি। আর ইচ্ছাকৃত হলে অনুত্তম হলেও নামায আদায় হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য যে, এ হুকুম কেবল ফরযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নফল নামাযে এমন হলে কোনো অসুবিধা নেই।
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/২৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬-৫৪৭শেয়ার লিংক
কখনো আমি নামাযে মাসবুক হই। নামায শেষে ভুলক্রমে ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। পরে অন্যদের দেখে মনে হয়। জানতে চাই, এক্ষেত্রে কি আমার নামায ভেঙ্গে যাবে? নামায না ভাঙ্গলে কি আমার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে?
এক্ষেত্রে ভুলক্রমে ইমামের সাথে সালাম ফিরানোর কারণে নামায ভঙ্গ হবে না। তবে এ অবস্থায় দেখতে হবে যদি আপনার সালাম ইমামের সালামের সাথেই হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। আর যদি আপনার সালাম ইমামের সালামের পরে হয় তাহলে অবশিষ্ট নামায শেষে আপনাকে সিজদায়ে সাহু করে নিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৩৯; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৯শেয়ার লিংক
হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী নামক কিতাবে সিজদায়ে তিলাওয়াতের আয়াতসমূহ উল্লেখ করতে গিয়ে কোনো জায়গায় তিন আয়াত আবার কোথাও চার আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সূরা নজমে চার আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। তো প্রশ্ন হল, এখানে উদ্দেশ্য কি এই যে, চার আয়াতের যেকোনো এক আয়াত পড়লে সিজদা করতে হবে, আর যেখানে তিন আয়াত, যেমন সূরা নাহল-এ সেখানে তিন আয়াতের যেকোনো এক আয়াত পড়লে সিজদা করতে হবে? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? দয়া করে জানাবেন।
সূরা নাহল বা নাজম-এর উল্লিখিত তিন/চার আয়াতের যে কোনো আয়াত পড়লে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে না; বরং সিজদার শব্দ সম্বলিত আয়াত পাঠ করলেই তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে। আর সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য তিলাওয়াতে সিজদার পূর্ণ আয়াত পাঠ করা আবশ্যক নয়; বরং যেমনিভাবে সিজদার পূর্ণ আয়াত পাঠ করলে সিজদা ওয়াজিব হয় তদ্রƒপ সিজদার আয়াত থেকে সিজদা সম্বলিত শব্দসহ তার আগে বা পরের শব্দ মিলিয়ে পড়লেও সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়।
সুতরাং সূরা নাজম থেকে সিজদার পূর্ণ চার আয়াত পাঠ করা হোক বা শুধু فَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ وَ اعْبُدُوْا পড়াহোক উভয় ক্ষেত্রে সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপ সূরা নাহল থেকে কেউ যদি তিন আয়াত পড়ে বা শুধুমাত্র
وَ لِلّٰهِ یَسْجُدُ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ
পর্যন্ত পড়ে তার উপর সিজদা তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে।
প্রকাশ থাকে যে, হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকীসহ ফিকহের কিতাবাদিতে যে কোনো কোনো সিজদার আয়াতের পরিমাণ তিন/চার আয়াত পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত সিজদা সংশ্লিষ্ট মাযমূনের প্রতি লক্ষ্য রেখে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এ সবজায়গায় বিষয়বস্তুটা তিন/চার আয়াত মিলে পূর্ণ হয়েছে।
এর অর্থ এ নয় যে, সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য পূর্ণ তিন/চার আয়াতই পড়া আবশ্যক।-রদ্দুল মুহতার ২/১০৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৬১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩৭২শেয়ার লিংক
খুতবা চলাবস্থায় খুতবা প্রদানকারী এবং শ্রোতাদের জন্য আমর বিল মারূফ এবং নাহী আনিল মুনকারের হুকুম কী? এ সময় কি তাদের উপর এ হুকুম প্রযোজ্য নয়?
খুতবা চলা অবস্থায় উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য চুপ থেকে মনোযোগসহ খুতবা শোনা ওয়াজিব। এ সময় শ্রোতাদের জন্য দ্বীনী-দুনিয়াবী কোনো ধরনের কথা বলা নাজায়েয এবং কাউকে কথাবার্তা বলতে দেখলে তাকে মৌখিকভাবে বারণ করাও নিষেধ। মুসল্লিদের জন্য এ সময়ে শরীয়তের হুকুম হল, চুপ থাকা এবং মনোযোগসহ খুতবা শোনা।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় তুমি যদি পাশের ব্যক্তিকে বল ‘চুপ থাক’ তবে তুমি তা একটি অনর্থক কাজ করলে।-সহীহ বুখারী, হাসীস ৯৩৪
সুতরাং খুতবা চলা অবস্থায় শ্রোতাদের জন্য মৌখিকভাবে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার কোনো সুযোগ নেই।
অবশ্য ফিকহবিদগণ বলেন, প্রয়োজন হলে মুখে নিষেধ না করে হাত বা মাথার ইশারা-ইঙ্গিতে পাশের ব্যক্তিকে কথাবার্তা বলা বা অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা যাবে। দেখুন : হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯
কেননা ইশারা-ইঙ্গিতে নিষেধ করার বিষয়টি একাধিক সাহাবা-তাবেয়ীর আমল ও আসার দ্বারা প্রমাণিত আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা., আবদুর রহমান ইবনে আবী লায়লা, যায়েদ বিন সূহান, সুফিয়ান সাওরী, আলকামা, ইবরাহীম নাখায়ী প্রমুখ। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫২৫৯-৫২৬৩
আর খুতবা প্রদানকারী খুতবার মাঝে প্রয়োজনে লোকদেরকে কোনো দরকারি কথা বা আদেশ-নিষেধ করতে পারবেন। এটি হাদীস-আসার দ্বারা প্রমাণিত আছে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫২৫৫, ৫২৫৭শেয়ার লিংক
আমাদের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আলহামদুলিল্লাহ নামাযের প্রতি পাবন্দ আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এমনও আছে, যাদের কেউ তো একদমই নামায পড়ে না; বরং নামাযের সময় ক্যাম্পাসে বসে গল্প-গুজব, আড্ডা, খেলাধুলায় লিপ্ত থাকে। আর তাদের কেউ নামায তো পড়ে কিন্তু জামাতে আসে না। তাদেরকে নামাযী বানানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কখনো গাশত করা হয়, কখনো হাযীরী যাচাই করা হয়।
এতে কিছুটা ফায়েদা হলেও উল্লেখযোগ্য ফায়েদা হয়নি। তাই সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে কিছুদিন যাবত পরীক্ষামূলকভাবে এ পদক্ষেপ নেয়া হয় যে, প্রতিষ্ঠানের মসজিদে জামাত চলাকালীন ১০/১২ জনের একটি তদারকি দল গঠন করা হয়। যারা জামাত চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাস, খেলার মাঠ ও রাস্তায় তদারকি করে। আলহামদুলিল্লাহ এ পদ্ধতিতে যথেষ্ট ফল পাওয়া গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তদারকী দলের লোকদের অধিকাংশ সময় মাসবুক হতে হয়। কখনো একদমই জামাত ছুটে যায়। যার কারণে কেউ কেউ এ পদ্ধতির সমালোচনা করছেন। এখন জানার বিষয় হল, ক) প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনায় বিশেষ তদারকী দলের মাধ্যমে জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের ভিতরে মুসলিম বালেগ যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন আবাসিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীগণের নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াতের উক্ত পদ্ধতি চালু রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?
খ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজের দায়িত্ব পালনের কারণে মাসবুক হিসেবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কি না?
গ) জামাতে নামায চলাকালীন সময়ে নামাযের তদারকী কাজে কখনও কখনও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় মূল জামাতের নামায শেষ হয়ে যাওয়ার পর তদারকী কাজে নিয়োজিত সদস্যগণের আলাদাভাবে জামাতে নামায আদায় শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি না?
ঘ) নামায চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের যারা নামাযের পাবন্দী করছে না এমন মুসলিম বালেগ সদস্যদেরকে নামায কায়েম ও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে নিযুক্ত সদস্যগণ এখলাসের সাথে নামাযের তদারকী কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে তারা দাওয়াতী কাজের মর্যাদায় সওয়াবের অংশীদার হবেন, নাকি গুনাহগার হবেন?
ঈমানের পর পাঁচ ওয়াক্ত নামায সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুম। ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করা কুফরীতুল্য ভয়াবহ গুনাহ। এছাড়া পুরুষের জন্য ফরয নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায় করাও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম। তাই ছাত্রদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে এসে জামাতের সাথে আদায়ের জন্য দাওয়াত, গাশত, হাজিরী যাচাই ও তদারকীসহ যেসব পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ।
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের আমল আখলাক ঠিক করা, শরীয়তের হুকুম আহকামের প্রতি পাবন্দ বানানো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, দায়িত্বশীলদের জরুরী কর্তব্য। বিশেষত প্রতিষ্ঠানে থাকাবস্থায় যে সকল ছাত্র নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ ফরয হুকুমের ব্যাপারে উদাসীন বা তদারকী না করলে যাদের নামায ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস রয়েছে তাদেরকে নামাযী বানানোর লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া তো প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গুরুদায়িত্ব। তাই এ ধরনের ছাত্রের পেছনে আপনাদের চেষ্টা ও মেহনত অব্যাহত রাখুন।
তবে মসজিদের মূল জামাতে নামায আদায় করা যেহেতু শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান, অন্যদিকে প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইকামত হয়ে যাওয়ার পর জামাত চলতে থাকা অবস্থায় তদারকী করতে যাওয়া বা করতে থাকার কারণে যেহেতু তদারকী দলের জামাতে আসা থেকে বিরত থাকা হয় এবং এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত মাসবুক হতে হয়, কখনো বা পুরো জামাত ছুটে যায় তাই এসকল বিষয় থেকে দূরে থাকার জন্য তদারকী কাজের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে যে, ছাত্রদেরকে নিয়ম করে দেওয়া হবে যে ছাত্রাবাসের সকল কামরা জামাতের দশ মিনিট পূর্বে তালাবদ্ধ করে দিতে হবে এবং সকল ছাত্রকে অবশ্যই জামাতের পাঁচ মিনিট পূর্বে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে।
এ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তদারকী দল জামাতের পনেরো/ বিশ মিনিট পূর্ব থেকে কাজ শুরু করবে এবং যথাসমযে কামরা বন্ধ করে ছাত্রদেরকে মসজিদে নিয়ে আসবে। এতে তদারকীর দায়িত্বও আদায় হবে এবং মসজিদের মূল জামাতে শুরু থেকেই সকলের নামায আদায় হবে।
অবশ্য উক্ত পন্থা যদি কার্যকরী না হয় এবং জামাত শুরু করার পরও তদারকী অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হয় তাহলে তরবীয়ত ও প্রশিক্ষণমূলক এ কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে দায়িত্বশীলগণ মাসবুক হয়ে গেলে বা তাদের জামাত ছুটে গেলে এ কারণে তারা গুনাহগার হবেন না ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে দায়িত্ব শেষে তারা নিজেরা কোনো স্থানে জামাতে নামায আদায় করে নিবেন।
প্রকাশ থাকে যে, নামাযের ব্যাপারে যেসব ছাত্রের গাফলতি রয়েছে তাদেরকে তদারকী করে নামাযে নিয়ে আসার পাশাপাশি নামাযের হাকীকত, গুরুত্ব ও ফযীলত তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করাতে হবে। নামাযের ব্যাপারে গাফলতি ও শিথিলতা প্রদর্শন এবং নামায ছেড়ে দেয়ার গুনাহ ও ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বাণী শুনাতে হবে। যেন তারা কোন ধরনের তদারকী ছাড়া নিজ থেকেই নামাযের প্রতি যত্নবান হয়ে যায়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৯৩; ফাতহুল বারী ১৩/১১৩; শরহু মুসলিম, ননবী ১২/১১৩; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ১৭/২২৯, ১৭/২৬৫; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৬২১; ফয়যুল কাদীর ২/৪১৬শেয়ার লিংক
আমি একদিন জামাতে নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার সময় সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ না বলে আল্লাহু আকবার বলে ফেলেন। এতে আমার মুখ দিয়ে হাসি বের হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও চেপে রাখতে পারিনি। নামায শেষে আমার পাশের এক ভাই বললেন, নামাযে উচ্চস্বরে হাসলে অযু ভেঙ্গে যায়। তাই অযু করে আবার নামায পড়ে নাও। আমার জানার বিষয় হল, ঐ ভাইয়ের কথাটা কি ঠিক?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার হাসির আওয়াজ যদি পাশের লোক ছাড়াও অন্যরা শুনে থাকে তবে আপনার অযু নষ্ট হয়ে গেছে। নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে শব্দ করে হাসবে সে নতুন করে অযু করবে এবং পুনরায় নামায আদায় করবে। -কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৪০
আর যদি হাসির শব্দ শুধু ডান-বামের লোক শুনে, অন্যরা না শুনে তাহলে আপনার অযু ভাঙ্গেনি। তবে এতটুকু আওয়াজে হাসার কারণে নামায ভেঙ্গে গেছে। তা আবার পড়ে নিতে হবে।
-কিতাবুল আছল ১/৪৫-৪৬; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৩৯; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৩৬; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৬; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৮২; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৯৭ ইলাউস সুনান ১/১৫৮শেয়ার লিংক
আমার ফুফু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। আমার আব্বাও তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এ বছর আব্বার ইচ্ছা ছিল, আব্বার যাকাতের টাকা তাদেরকে দিবেন। কিন্তু আব্বার এক বন্ধু বললেন, আপন বোনকে তো যাকাত দেওয়া যাবে না। তাই আব্বা আর তাদেরকে যাকাত দেননি। এখন আমার জানার বিষয় হল, ঐ লোকের কথা কি ঠিক? আপন বোনকে কি যাকাত দেওয়া যায় না?
ঐ লোকের কথা ঠিক নয়। আপনার ফুফু যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে আপনার আব্বা তাকে যাকাতের টাকা দিতে পারবেন।
যুবাইদ রাহ. বলেন, আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপন বোনকে কি যাকাত দেওয়া যায়? তিনি বললেন, হাঁ। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৬৪০
এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তারাই বেশি হকদার এবং তাদেরকে দেওয়া বেশি সওয়াব। তাবেয়ী যাহহাক রাহ. বলেন, যদি তোমার অভাবী আত্মীয়-স্বজন থাকে তবে তারাই তোমার যাকাতের বেশি হকদার।
-প্রাগুক্ত, হাদীস ১০৬৩৯; কিতাবুল আছল ২/১২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২শেয়ার লিংক
জনৈক ব্যক্তির উপর দশ হাজার টাকা যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। সে এই টাকা দিয়ে কিতাব ক্রয় করে মাদরাসার কুতুবখানায় ওয়াকফ করতে চায়। এর মাধ্যমে কি তার যাকাত আদায় হবে?
কোনো প্রতিষ্ঠানে যাকাতের নিয়তে কিতাব ক্রয় করে দিলে তা দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা, যাকাত আদায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের মালিক বানিয়ে দেওয়া আবশ্যক। তাই ব্যক্তিকে মালিক না বানিয়ে প্রতিষ্ঠানে ওয়াকফ করলে তা দ্বারা যাকাত আদায় হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, মাদরাসায় দ্বীনী কিতাবাদি কিনে দেওয়া অনেক বড় সওয়াবে কাজ। এটি সদকা জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এতে দ্বীন প্রচার-প্রসার করা ও দ্বীনী কাজে সহযোগিতা করার সওয়াব হয়। এসব কাজ যাকাত-ফিতরার মাল ছাড়া নফল দান-সদকা থেকে করতে হয়। সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর এসব দ্বীনী কাজে সহায়তা করা কর্তব্য।-আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০২, ১২/১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৪৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪২, রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪শেয়ার লিংক
নিম্মলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন :
১. মুহাম্মাদ জামিল তার শ্যালক থেকে উপহার হিসেবে ছয়টি এয়ার টিকেট গ্রহণ বকরেছেন, যার আর্থিক মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা। শ্যালক যদিও মুখে উপহার কথাটি উল্লেখ করেছেন; তবে মুহাম্মাদ জামিল সাহেব গ্রহনের সময় মনে করেছিলেন এটা একটা লোন অথবা করজে হাসানা। জামিল সাহেব সেই লোনটি যেভাবেই হোক এখন পরিশোধ করতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের নিয়মটা কি?
২. জামিল সাহেবের স্ত্রীর রোগের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার থাকা খাওয়াসহ চিকিৎসা বাবদ আনুমানিক আট থেকে দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়। সেই টাকাটাও জামিল সাহেবের শ্যালক দিয়ে দিয়েছেন। তবে ধারণা যে, সেটাও তিনি উপহার হিসেবে দিয়েছেন। তবে শ্যালক মুখে সেটা উল্লেখ করেননি। এখন জামিল সাহেব সেই টাকাটাও পুনরায় দিতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ম কী।
৩. জামিল সাহেবের ছেলেমেয়েদের খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা তার শ্যালক জামিল সাহেবের স্ত্রীর হাতে প্রদান করতেন। তবে শ্যালক কখনো জামিল সাহেবের হাতে সেই টাকা প্রদান করেননি এবং সেই টাকাও মনে হয় তিনি উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। তবে প্রদানের সময় তিনি কোন কথা উল্লেখ করেননি। উল্লেখ্য যে, শ্যালক জামিল সাহেবের শশুড়ের বাড়ীকে ইন্ডাস্ট্রি করেছিল যার মালিক ছিলেন সকল ভাইবোন। মনে হয় সেই বাড়ীর ভাড়া থেকেই শ্যালক জামিল সাহেবের স্ত্রীকে ৫০০০ টাকা প্রদান করতেন। তবে শ্যালক এই বোনকে দিতেন ৫০০০ টাকা ও অন্যান্য বোনদের দিতেন ৫০০ টাকা (অন্যান্য বোনদের আর্থিক সচ্ছলতা তার চেয়ে ভাল ছিল) এখন বর্তমানে জামিল সাহেব সে টাকাটা পুনরায় ফিরিয়ে দিতে চান। এখন প্রশ্ন হল, এ টাকাটা তিনি কি তার শ্যালককে প্রদান করবেন নাকি স্ত্রীকে? এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?
৪. জামিল সাহেবের ছেলের বিদেশে উচ্চতর পড়াশুনা বাবদ জামিল সাহেবের ভায়রা তার হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার একটি চেক উপহার বাবদ প্রদান করেন। কিন্তু জামিল সাহেব টাকাটা গ্রহণের সময় বলে নেন যে, এটা লোন। এখন জামিল সাহেব সেই লোনটি পরিশোধ করতে চান। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?
৫. জামিল সাহেবের বিয়ের ধার্যকৃত মোহর ছিল ১৫,০০০০ টাকা। তিনি আনুমানিক ৬০% প্রদান করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি ধার্যকৃত পুরো টাকাটা প্রদান করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কী?
৬. জামিল সাহেবের বড় ভাই নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি পাঁচটি ফ্ল্যাট রেখে গেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, সহোদর দুই ভাই ও বিমাতা এক ভাই রেখে মারা গেছেন। দুই বোন ছিল, তারা তার মৃত্যুর পূর্বে মারা গিয়েছেন। এখন তার সম্পত্তির সঠিক বণ্টন কীভাবে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে জানতে চাই।
(১, ২, ৩) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম ঘটনায় জামিল সাহেবের শ্যালক যেহেতু উক্ত ছয়টি এয়ার টিকেট জামিল সাহেবকে সুস্পষ্টভাবে উপহার বলে প্রদান করেছেন এবং তিনি তা প্রত্যাখ্যান না করে গ্রহণ করে নিয়েছেন তাই এর দ্বারা ঐ এয়ার টিকেটগুলো তার ও তার পরিবারের জন্য হাদিয়া হিসাবে গণ্য হয়েছে এবং তারা এগুলোর মালিক হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে টিকেটগুলো গ্রহণের সময় জামিল সাহেবের মনে মনে ঋণ হিসাবে গ্রহণের নিয়ত থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
অনুরূপ ২নং ঘটনাতে জামিল সাহেবের শ্যালক বোনের চিকিৎসা খরচ বাবদ যে টাকাটা প্রদান করেছেন প্রশ্নের ভাষ্যমতে তিনি তা সেচ্ছায় নিজ থেকেই বোনের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন তাই এ টাকাও তার পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে গণ্য হবে, ঋণ গণ্য হবে না।
আর তৃতীয় ঘটনায় জামিল সাহেবের শ্যালক যে প্রতি মাসে নিজ বোনের হাতে পাঁচ হাজার করে টাকা প্রদান করত তা যদি বাবার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে বোনের প্রাপ্য অংশের ভাড়া হয়ে থাকে তবে তো সে প্রতি মাসে বোনের পাওনা ভাড়া পরিশোধ করেছে।
কিন্তু ঐ টাকা যদি ভাড়ার অংশের না হয়ে থাকে অথবা ভাড়ার টাকার সাথে নিজ থেকে অতিরিক্ত যোগ করে দেয়া হয়ে থাকে তবে ভাড়ার অতিরিক্ত অংশটা হাদিয়া বা উপহার হিসাবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রেও এ টাকা ফেরৎযোগ্য নয়।
সুতরাং উপরোক্ত তিন ঘটনাতেই শ্যালক থেকে প্রাপ্ত হাদিয়াকে ঋণ গণ্য করার সুযোগ নেই। অতএব তা পরিশোধ করা লাগবে না। জামিল সাহেব যদি শ্যালককে এখন নিজ থেকে কিছু দিতে চান তবে তা স্বতন্ত্র হাদিয়া হিসাবে ধর্তব্য হবে।
(৪) জামিল সাহেবের ভায়রা পাঁচ লক্ষ টাকার চেকটি তাকে উপহার বলে দিলেও জামিল সাহেব যেহেতু তা উপহার হিসাবে গ্রহণ করেননি; বরং তিনি তা সুস্পষ্ট লোন বলে গ্রহণ করেছেন, তাই ঐ টাকা উপহার হিসাবে গণ্য হবে না। বরং ঐ পাঁচ লক্ষ টাকা তার উপর লোন হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং এ টাকা তার ভায়রাকে পরিশোধ করে দিতে হবে।
(৫) প্রশ্নের ভাষ্যমতে জামিল সাহেব যেহেতু মোহরানার প্রায় ৬০% স্ত্রীকে আদায় করে দিয়েছেন তাই বাকি অংশ হিসাব করে পরিশোধ করে দিলে তিনি মোহরানার দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। বকেয়া অংশ থেকে অতিরিক্ত পরিশোধ করা জরুরি নয়। তবে তিনি যাদি স্ত্রীকে ধার্যকৃত মোহরানা থেকে অতিরিক্ত দিতে চান তাহলে সে এখতিয়ার তার রয়েছে।
(৬) প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির উপর কোন ঋণ থাকলে তার রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তি থেকে তা পরিশোধ করতে হবে। অতপর তার যদি কোনো বৈধ অসিয়ত থাকে তবে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা আদায় করতে হবে। এরপর বাকি সম্পত্তি তার মৃত্যুর সময় জীবিত ওয়ারিশদের মাঝে নিম্নোক্ত শতকরা হারে বণ্টিত হবে।
মৃতের স্ত্রী পাবে .................. ২৫%
সহোদর ভাই প্রত্যেকে........... ৩৭.৫ করে দুজনে মোট পাবে ............. ৭৫%
আর সহোদর ভাই বিদ্যমান থাকার কারণে বিমাতা ভাই কোন অংশ পাবে না।
উল্লেখ্য যে, মৃতের রেখে যাওয়া পাঁচটি ফ্ল্যাটের বর্তমান মূল্য হিসাব করে উপরোক্ত ওয়ারিশ অর্থাৎ মৃতের স্ত্রী ও দুই সহোদর ভাইয়ের মাঝে তাদের উল্লেখিত প্রাপ্য অনুযায়ী ভাগ হবে।-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাসসাস ৪/২০; আলমাবসূত সারাখসী ১০/১৪৬; শরহুল মাজাল্লা ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৮৮, ৭৭৪; এলাউস সুনান ১৬/৭০শেয়ার লিংক
জনৈক ব্যক্তি দেশের বাইরে থাকে। তিনি দেশের এক ধান ব্যবসায়ীর কাছে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এক লক্ষ টাকা দিয়ে রেখেছেন। তাদের মাঝে চুক্তি হল, ঐ ব্যবসায়ী তাকে লাভ হিসেবে প্রতি বছর পঁচিশ হাজার টাকা করে দিবে। এখন জানার বিষয় হল, ঐ ব্যবসায়ী তাকে প্রতি বছর যে পঁচিশ হাজার টাকা করে দিবে তা কি জায়েয হবে, নাকি সুদ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ হয়নি। কেননা এভাবে নিশ্চিত লাভ দেওয়ার শর্তে কাউকে টাকা দেওয়া সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। তাই তাদের চুক্তিটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি। আর তারা বৈধভাবে চুক্তি করতে চাইলে উভয়ের লভ্যাংশ শতকরা হারে নির্ধারণ করবে। যেমন, ব্যবসাতে যা লাভ হবে এর ৬০% পাবে টাকার মালিক আর ৪০% পাবে ব্যবসায়ী। অথবা উভয়ের সম্মতিতে লাভের অন্য যেকোনো হার নির্ধারণ করবে। ব্যবসায় লাভ হলে চুক্তিকৃত হারে উভয়ে লভ্যাংশ পাবে, লাভ না হলে কেউ কিছু পাবে না। আর ব্যবসায় লোকসান হলে পুঁজি বিনিয়োগকারী তা বহন করবে।
উল্লেখ্য যে, এ ধরনের কারবারে ব্যবসার পুরো হিসাব রাখা আবশ্যক। অনুমান করে লভ্যাংশ প্রদান করা অথবা লাভ-লোকসান যাই হোক নির্ধারিত পরিমাণ মুনাফা দেওয়া কোনোটিই বৈধ নয়।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ১৩৩শেয়ার লিংক
বর্তমানে আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্তে¡ও একরকম বাধ্য হয়েই ব্যাংকের সাথে লেনদেন অর্থাৎ টাকা জমা রাখতে হয়। তাই কোন্ ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ? দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারার ব্যাংকসমূহে চলতি হিসাব তথা সুদবিহীন হিসাব খুলে লেনদেন করা জায়েয। তবে এসব ব্যাংকে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী বা মেয়াদী হিসাব খোলা জায়েয হবে না। প্রাপ্ত সুদ নিজে ভোগ না করলেও এসব সুদী একাউন্ট খোলাই জায়েয নয়। কেননা সুদী ব্যাংকে যে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব খোলাই মূলত সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া।
আর এদেশে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে নিজে মুনাফা গ্রহণ না করার প্রত্যয় নিয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যাবে। কেননা এসব ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবগুলো মুদারাবা ভিত্তিতে হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে সুদী চুক্তি হয় না। তবে যেহেতু এই ধারার ব্যাংকগুলোর যথাযথভাবে শরীয়া পালনের বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে তাই এ ধরনের হিসাব থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেওয়াই নিরাপদ।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮, ১৫৯৯; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫ (সূরা বাকারা : ২৭৫); তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৬১৯শেয়ার লিংক
আমি বীমার মেয়াদ শেষে সুদ পেয়েছি। এই টাকাগুলো আমি কী করতে পারি?
ঐ টাকাগুলো সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। আর প্রচলিত বীমায় সুদ, জুয়া উভয়টিই রয়েছে তাই এতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। এ জন্য আপনাকে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
-সূরা বাকারা (২) : ২৭৫; সূরা মায়েদা (৫) : ৯০; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৬৭, ২৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দা ২/২/৭৩১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫শেয়ার লিংক
একজন ছাত্র একটি বুক সেলফ কিনেছে। সে এটি অন্য এক ছাত্রের কাছে এ বলে বিক্রি করেছে যে, সে কিছু টাকা কম নিবে এ শর্তে যে, এই সেলফে খালেদ ও আবু বকর দু’জন ছাত্রকেও বই রাখতে দিতে হবে। ছাত্রটি তার দেওয়া শর্ত মেনে নিয়েই সেটি ক্রয় করেছে।
এখন প্রশ্ন হল, এই শর্তের কারণে তারাও কি উক্ত বুক সেলফ ব্যবহার করতে পারবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অন্যের ব্যবহারের শর্তে সেলফটির বিক্রয় চুক্তি ফাসেদ তথা নাজায়েয হয়েছে। কেননা হাদীস শরীফে শর্তযুক্ত বিক্রিকে নিষেধ করা হয়েছে।
সুতরাং আপনাদের কর্তব্য হল, উক্ত ক্রয় চুক্তিটি বাতিল করে দিয়ে শর্তহীনভাবে আবার ক্রয়-বিক্রয় করা।-ইলাউস সুনান ১৪/১৪৬; নাসবুর রায়াহ ৪/১৭-১৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালেদ আতাসী ২/৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৯০-৯১; ফাতহুল কাদীর ৬/৭৮শেয়ার লিংক
ক) হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলার হুকুম কী? মুস্তাহাব, সুন্নত নাকি ওয়াজিব? যদি আলহামদুলিল্লাাহ না বলে তাহলে কি গুনাহ হবে?
(খ) হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ উচ্চস্বরে বলবে, নাকি আস্তে বলবে?
-জামে মা‘মার ইবনে রাশেদ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-এর শেষে সংযুক্ত), হাদীস ১৯৬৮০; আলআযকার, নববী ৪৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৮৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/২৪৭; রদ্দুল মুহতার ৬/১১৪
(ক ও খ) হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতার জন্য الحمد لله বলা মুস্তাহাব। কোনো ওজর ছাড়া তা ছেড়ে দেওয়া অনুচিত। কেউ ছেড়ে দিলে যদিও গুনাহ হবে না, তবে এর ফযিলত থেকে মাহরূম হবে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাাম ইরশাদ করেছেন, হাঁচিদাতা যেন الحمد لله বলে। আর তার (মুসলিম) ভাই জবাবে যেন يرحمك الله বলে। তখন হাঁচিদাতা যেন প্রত্যুত্তরে বলে يهديكم الله ويصلح بالكم। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৪
আর হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ উচ্চস্বরে বলবে। এক বর্ণনায় এসেছে যে, ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর বর্ণনা করেন, হাঁচিদাতার জন্য উচ্চস্বরে الحمد لله বলা উচিত। যাতে করে তার আশপাশের লোকেরা শুনতে পায়। আর হাঁচিদাতা যখন الحمد لله বলবে তখন শ্রোতাদের করণীয় হল তার জবাবে يرحمك الله বলা।-জামে মা‘মার ইবনে রাশেদ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক-এর শেষে সংযুক্ত), হাদীস ১৯৬৮০; আলআযকার, নববী ৪৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৮৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/২৪৭; রদ্দুল মুহতার ৬/১১৪শেয়ার লিংক
গত কুরবানী ঈদের আগের দিন আমার এক আত্মীয় মারা যায়। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট এক সংখ্যা পরিমাণ কালিমা পড়া হয়। সম্ভবত ১ লক্ষ পরিমাণ। যে কারণে একে লাখ কালিমা বলা হয়। এ আমলকে এতই গুরুত্ব ও এহতেমামের সাথে পালন করা হয় যে, দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জনে জনে তা বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং এ আমলের বরকতে নাকি মৃত ব্যক্তির কবর আযাব মাফ হয়ে যায়।
হযরত মুফতী সাহেবের সমীপে আমার জানার বিষয় হল, কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে এ আমলের কোনো ভিত্তি আছে কি না? থাকলে তার গুরুত্ব কী পরিমাণ ও আদায়ের তরিকা কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কালিমা তাইয়েবার ফযীলত, মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। এটি তাওহীদ ও ঈমানের কালেমা।
ইখলাসের সাথে এ কালেমা পাঠকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে। মীযানের পাল্লায় এ কালেমা সর্বাধিক ভারী হবে। হাদীস শরীফে বিশুদ্ধ সূত্রে এ ধরনের বিভিন্ন ফযীলত ও সওয়াবের কথা এ কালেমা সম্পর্কে এসেছে।
কিন্তু কোনো মৃতের ঈসালে সওয়াবের নিয়তে এ কালেমা এক লাখ পরিমাণ পাঠ করা হলে তার কবর আযাব মাফ হয়ে যায়-এ কথা সহীহ নয়। কুরআন-হাদীসের কোথাও এর প্রমাণ নেই।
সুতরাং মুসলমানদের এ ধরনের মনগড়া কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তার জন্য দান-খয়রাত করা, ব্যক্তিগতভাবে নফল ইবাদত করে ঈসালে সওয়াব করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই শরীয়ত নির্দেশিত পদ্ধতিতেই আমল করা কাম্য।শেয়ার লিংক
ইদানীং দেখা যাচ্ছে আমাদের মাদরাসার কিছু ছাত্র মাগরিবের আযানের ৭/৮ মিনিট আগে মসজিদে এসে দু হাত তোলে মোনাজাত করে। এর আগে কাউকে আমি এভাবে মোনাজাত করতে দেখিনি। তাদেরকে দেখে আমিও করতে শুরু করেছি। একদিন আমার এক সহপাঠী জিজ্ঞাসা করল, এ সময়ে মুনাজাত করার কথা কি তুমি কোনো কিতাবে পেয়েছ, নাকি দেখে দেখে আমল করছ?
ভাবলাম, সত্যিই তো। কোনো কিতাবে তো পাইনি। তাই হুজুরের কাছে আবেদন এ ব্যাপারে দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে শায়ানে শান জাযা দান করুন। আমীন।
দুআ স্বতন্ত্র একটি ইবাদত। হাদীস শরীফে দুআকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দুআর জন্য কুরআন-হাদীসে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা নেই। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ব্যাপকভাবেই দুআ করতে নির্দেশ করেছেন। যেমন কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,
ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ
(তরজমা) তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। -সূরা গাফির : ৬০
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ (তরজমা) যখন কোনো আহ্বানকারী আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি। -সূরা বাকারা (০২) : ১৮৬
বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. বলেন, যখন
ادْعُوْنِیْۤ اَسْتَجِبْ لَكُمْ ؕ
আয়াতটি নাযিল হল তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করল যে, আমরা কোন সময়টাতে দুআ করব তা যদি জানতে পারতাম তখন সূরা বাকারার এই আয়াতটি
وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ ؕ اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ.
নাযিল হয়। যাতে সুস্পষ্ট বলা আছে যে, বান্দা যখনই আল্লাহ তাআলাকে ডাকে, দুআ করে তখনই তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন এবং দুআ কবুল করে থাকেন।
তাই কোনো ব্যক্তি দিনে-রাতে যে কোনো সময় এমনকি মাগরিবের আগে বা পরে অথবা অন্য কোনো নামাযের আগে-পরে দুআ-মুনাজাত করতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই এবং এ সময় দুআর জন্য ভিন্ন দলিল খোঁজ করারও প্রয়োজন নেই। কেননা দুআর ব্যাপারে উপরোক্ত ব্যাপক নির্দেশনামূলক দলিলাদি মাগরিবের পূর্বে দুআ-মুনাজাত করাকেও শামিল করে।
উপরন্তু আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়টা বিশেষভাবেও আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হওয়া,তাসবীহ-তাহলীল ও যিকির ও দুআতে মশগুল থাকার সময়। একাধিক আয়াত ও হাদীসে তা বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَهٗ.
(তরজমা) আর আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে সংলিপ্ত রাখুন যারা তাদের রবকে সকাল ও সন্ধায় তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ডাকে। -সূরা কাহফ (১৮) : ২৮
উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, অর্থাৎ যারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহ তাআলার যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহমীদ ও তাহলীল করে এবং তার বড়ত্ব বর্ণনা করে ও তার কাছে দুআ চায়। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/১৩১
হাদীস শরীফে আছে, আবু উমামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফযরের পর থেকে সূর্যোদোয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও তাকবীর-তাহমীদ করা আমার নিকট ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে দুই বা ততোধিক গোলাম আযাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় এবং আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত (এরূপ করাটা) ইসমাঈল আ.-এর বংশধর থেকে চারজন গোলম আযাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। -আলমুজামুল কাবীর তাবারানী, হাদীস ৮০২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২১৮৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১৩২
অবশ্য এ কথা মনে রাখা দরকার যে, মুনাজাত করা উক্ত সময়ের কোনো নির্ধারিত আমল নয়। বরং যে কোনো সময়ে যেমন মুনাজাত করার সুযোগ রয়েছে তেমনি এ সময়ও তা করা যাবে।শেয়ার লিংক
ক) স্মরণশক্তি কেন বাড়ে কেন কমে (লেখক : মুফতী মুহাম্মাদ মুজীবুল হক) -এর ২৫ পৃষ্ঠায় স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ১টি কারণ উল্লেখ করেছেন যে, অতিরিক্ত পানি পান করা। কারণ অতিরিক্ত পানি কফ তৈরি করে। আর তার প্রভাব পড়ে স্মরণ শক্তির উপর। প্রায় সত্তরজন নবী এ মর্মে একমত হয়েছেন যে, অধিক বিস্মৃতি অধিক কফের কারণে হয়। আর অধিক কফ অধিক পানি পান করার কারণে হয়। আর অধিক পানি পান করতে হয় অধিক খাবার গ্রহণ করার কারণে। হুজুরের নিকট এ বিষয়ের তাহকীক জানতে চাই।
খ) লোকমুখে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, হাজরে আসওয়াদ প্রথমে সাদা বর্ণের ছিল। পরবর্তীতে লোকদের চুম্বনে তাদের গুনাহ চুষে কালো হয়ে গেছে। এ বিষয়ের বাস্তবতা কি? জানতে চাই।
গ) লোকমুখে আরেকটি কথা প্রচলিত আছে যে, ঘরে মাকড়সার জাল থাকলে অভাব অনটন দেখা দেয়। জানার বিষয় হল, কথাটার বাস্তবতা কী? মাকড়সা মারার হুকুম কি?
ক) পরিমিত পানি শরীরের জন্য দরকারি এবং উপকারী। তাই দৈনিক কী পরিমাণ পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন তা অভিজ্ঞ ডাক্তার থেকে জেনে নিবে।
আর প্রয়োজনের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত পানি পান চিকিৎসাবিদদের ভাষ্যমতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। এজন্য তারা মাত্রাতিরিক্ত পানি পানের পরামর্শও দেন না।
আর প্রশ্নে সত্তরজন নবী থেকে যে কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতিরিক্ত পানি পান প্রকারান্তরে অধিক বিস্মৃতির কারণ এটি ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো কথা কুরআন-হাদীসে নেই।
এ ধরনের একটি কথা তালীমুল মুতাআল্লিম কিতাবের হিন্দুস্তানী কপিতে পাওয়া যায়। যা সম্ভবত পাণ্ডুলিপিকারদের ভুলের কারণেই ঘটেছে। মূলত সঠিক বক্তব্য হল, اتفق سبعون طبيبا যার অর্থ হল, সত্তরজন চিকিৎসক একমত হয়েছেন। এ বক্তব্যে طبيبا শব্দটির স্থানে ঐ কপিতে نبيا এসে গেছে। যার ফলে অর্থ দাঁড়িয়েছে সত্তরজন নবী একমত হয়েছেন।
আমরা তালীমুল মুতাআল্লিমের দুটি তাহকীকী নুসখা দেখেছি। একটি হল বৈরুতের আলমাকতাবুল ইসলামী-এর নুসখা, যা ডক্টর মারওয়ান কুববানীর তাহকীককৃত। এ নুসখার ৯৭ নং পৃষ্ঠায় উক্ত বক্তব্য এভাবে আছে-
اتفق سبعون طبيبا
আরেকটি সুদানের ‘আদদারুস সুদানিয়া লিল কুতুব’-এর নুসখা। এর প্রথম সংস্করণ ১৪২৫ হিজরী, ২০০৪ ঈসায়ী। এ সংস্করণের ৪৬ পৃষ্ঠাতেও اتفق سبعون طبيبا -ই আছে।
বাকি থাকল কেন সত্তরজন চিকিৎসক এ বিষয়ে একমত হয়েছেন? প্রয়োজনে সেটিও একটি তাহকীকের বিষয়। এবং প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানে কথাটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য ছিল এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কতটুকু বাস্তবসম্মত- এসবই তাহকীকযোগ্য। যে কথা স্পষ্ট থাকা দরকার তা হল, নবীদের দিকে উক্ত কথাটিকে সম্বন্ধ করা ভিত্তিহীন। আর যে পরিমাণ পানি শরীরের জন্য প্রয়োজন তা স্মৃতি কমানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না এটিই স্বাভাবিক।
উত্তর : খ) প্রশ্নোক্ত কথাটি সঠিক। হাজরে আসওয়াদ প্রথমে সাদা ধবধবে ছিল। অতপর চুম্বনকারী এবং ইস্তেলামকারীর গুনাহসমূহের প্রভাবে তা কালো হয়ে যায়।
হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এসেছে। এটি দুধের চেয়েও অধিক শুভ্র ছিল। অতপর আদম সন্তানের গুনাহসমূহ এটিকে কালো করে দিয়েছে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৮৭৭; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২৩৩
উত্তর : গ) মাকড়সার জাল ঘরে থাকলে অভাব-অনটন দেখা দেয়- প্রশ্নের এ কথাটি অবাস্তব। কুরআন-হাদীসে এর কোনো প্রমাণ নেই। কোনো কোনো তাফসীরের কিতাবে আলী রা. থেকে এ ধরনের একটি কথা উল্লেখ আছে বলে পাওয়া যায়। কিন্তু এর সনদ মুনকার, সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই মাকড়সার জাল এবং অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা থেকে ঘর-বাড়িকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যে কর্তব্য তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর মাকড়সা মারার ক্ষেত্রে হুকুম হল, মাকড়সা যদি ক্ষতিকর বা বিষাক্ত প্রকৃতির হয় তবে তা মেরে ফেলা জায়েয। কিন্তু যদি তা ক্ষতিকর না হয় সেক্ষেত্রে না মেরে বাসা-বাড়ি থেকে তা ঝেড়ে ফেলে দেয়াই শ্রেয়।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬১; আদ্দুররুল মুখতরা ৬/৪৭৪; আলমাওসুআতুল ফিকহিয়া, কুয়েত ১৭/২৮৪; ইমদাদুল আহকাম ৪/৫১৯শেয়ার লিংক