মোজার উপর মাসাহ করার সময়সীমা মুকীমের জন্য একদিন একরাত আর মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত। এখন জানার বিষয় হল, পবিত্র অবস্থায় মোজা পরার পর মুকীমের জন্য মাসাহর সময়সীমা ২৪ ঘণ্টা নাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা পর্যন্ত। জানালে উপকৃত হব।
মোজার উপর মাসাহ করার সময়সীমা মুকীমের জন্য একদিন একরাত আর মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত। এখন জানার বিষয় হল, পবিত্র অবস্থায় মোজা পরার পর মুকীমের জন্য মাসাহর সময়সীমা ২৪ ঘণ্টা নাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা পর্যন্ত। জানালে উপকৃত হব।
মোজার উপর মাসেহর সময়সীমা মুকীমের জন্য ২৪ ঘণ্টা ও মুসাফিরের জন্য ৭২ ঘণ্টা। এটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ওয়াক্তের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আর মাসেহর সময়সীমা শুরু হবে পবিত্রতা হাসিল করে মোজা পরিধান করার পর উক্ত পবিত্রতা ভঙ্গ হওয়ার সময় থেকে। এ প্রসঙ্গে আলী রা. হতে বর্ণিত হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মোজার উপর মাসেহর সময়সীমা) মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত আর মুকীমের জন্য একদিন একরাত নির্ধারণ করেছেন।
-সহীহ মুসলিম ১/১৩৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১২৬; শরহুল মুনইয়া ১০৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭১; আসসিআয়াহ ১/৫৬২শেয়ার লিংক
আমি আপেল ইত্যাদি খাওয়ার সময় কামড় দেওয়ার জায়গায় অতি সামান্য রক্ত লক্ষ করি। কিন্তু থুথু ফেললে তেমন কিছু দেখি না। কিংবা সামান্য একটু চিহ্ন দেখতে পাই। এই কারণে আমার অযু ভঙ্গ হয় কি না? জানালে উপকৃত হব।
আপেল বা দাঁত দিয়ে কামড়ানো খাবারে যে সামান্য রক্ত দেখতে পেয়েছেন তা যেহেতু অতি সামান্য তাই এ কারণে অযু নষ্ট হয়নি। আর থুথুর সঙ্গে যে সামান্য রক্তের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন ঐ সামান্য পরিমাণ রক্তও অযু ভঙ্গের কারণ নয়। কেননা, থুথুর চেয়ে রক্ত বেশি হলে কিংবা অন্তত সমান সমান হলেই কেবল অযু নষ্ট হয়। এ পরিমাণ রক্ত বের হলে থুথু টকটকে লাল বা লালচে বর্ণ ধারণ করবে। আর এর কম হলে থুথু হলদে বা প্রায় সাদা থাকবে এ অবস্থায় অযু ভাঙ্গবে না। তবে আপেলের যে জায়গায় রক্ত লেগেছে তা খাবেন না; বরং ফেলে দিবেন।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৯৩; কিতাবুল আছল ১/৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৮; শরহুল মুনইয়াহ ১৩২শেয়ার লিংক
আমাদের বাড়ি থেকে বি বাড়িয়া শহর দুই কিলোমিটার দূরে এবং
বি.বাড়িয়া রেলস্টেশন আমাদের বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে বি বাড়িয়া শহরে অবস্থিত। আমাদের বাড়ি থেকে বি বাড়িয়া শহর পর্যন্ত রাস্তার দু পার্শ্বে বাড়িঘর আছে। এখন আমার জানার বিষয় হল :
ক) আমি যদি চট্টগ্রামে যাই তাহলে যাওয়া এবং আসার সময় বি বাড়িয়া রেলস্টেশনে নামায কসর পড়ব কি না?
খ) সফরের উদ্দেশে বের হলে বলা হয়, এলাকার বাইরে থেকে কসর শুরু হয়। এক্ষেত্রে এলাকা বলতে কী বুঝায়?
উল্লেখ্য, বি বাড়িয়া শহর আমাদের ইউনিয়নের বাইরে।
বি.বাড়িয়া রেলস্টেশন যেহেতু আপনার গ্রামের বাইরে অবস্থিত তাই চট্টগ্রামে যাওয়া এবং চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে বি বাড়িয়া রেলস্টেশনে আপনি মুসাফির গণ্য হবেন। সুতরাং উক্ত রেলস্টেশনে আপনি নামায কসর পড়বেন।
খ) এলাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বসবাসের আবাদি অঞ্চল। অর্থাৎ গ্রামে বসবাসকারীর জন্য তার নিজের গ্রাম আর শহরে বসবাসকারীর জন্য শহরের নির্ধারিত সীমানা তার এলাকা হিসেবে গণ্য হবে।
-শরহুল মুনইয়া ৫৩৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২১; মাজমাউল আনহুর ১/২৩৮শেয়ার লিংক
একবার আমার নামাযে ভুল হয়েছিল, যার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। সাহু সিজদা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। স্মরণ হয়েছে দুআ মাছুরা পড়ার পর। ঐ সময় আমি একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা আদায় করেছি। এরপর যথানিয়মে নামায শেষ করেছি। এখন আমি জানতে চাই, ঐ সময় সাহু সিজদা করাতে নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
না, সমস্যা হয়নি। আপনার নামায আদায় হয়ে গেছে।
-কিতাবুল আছল ১/২৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৯১শেয়ার লিংক
এক ব্যক্তি এক রাকাতে ভুলে তিনটি সিজদা করে এবং সাহু সিজদা না করেই নামায শেষ করে। এমতাবস্থায় তার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সিজদা করার কারণে ঐ ব্যক্তির উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। সাহু সিজদা না করার কারণে তাকে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৩১৯, হাদীস : ৩৫২৪; কিতাবুল আছল ১/২৪২; মাবসূত, সারাখসী ১/২২৮-২২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩০৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১শেয়ার লিংক
আমার এক ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছে এবং আমি একামত ছাড়াই কাযা করি। কিন্তু একজন আলেমের কাছে শুনলাম, কাযা নামাযের জন্যও ইকামত দিতে হবে। উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক? তাহলে কি আমাকে পুনরায় কাযা আদায় করতে হবে? দয়া করে জানাবেন।
কাযা নামাযের জন্যও আযান ও ইকামত দেওয়া সুন্নত। তবে আযান ইকামত না দেওয়ার কারণে বিগত দিনের কাযা নামায পুনরায় পড়তে হবে না।
উল্লেখ্য একাকী কাযা আদায় করলে নিম্নস্বরে আযান ও ইকামত দিবে। এমনিভাবে যদি কোনো মসজিদে কাযা নামায আদায় করা হয় তাহলে জামাতে পড়লেও উঁচু আওয়াজে আযান ইকামত দেওয়া যাবে না; বরং শুধু জামাতের লোকজন শুনতে পায় এবং অন্যদের বিঘ্ন না ঘটে এতটুকু উঁচু শব্দ করতে পারবে।
-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ৯৯৭; সুনানে নাসায়ী ১/৭৬-৭৭; কিতাবুল আছল ১/১৩৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮০শেয়ার লিংক
আমি নামাযে সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাত এরপর হাটু রাখি। এরপর ইমাম সাহেবের কাছে শুনেছি যে, সিজদায় প্রথমে হাটু এরপর হাত রাখতে হবে। এখন জানতে চাচ্ছি, এর মধ্যে কোন মতটি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ইমাম সাহেবের কথাই সঠিক। সিজদায় যাওয়ার সময় নিয়ম হল, জমিনে প্রথমে হাটু রাখা এরপর হাত রাখা। হাদীস শরীফে আছে, হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিজদায় যাওয়ার সময় হাতের পূর্বে হাটু রাখতে এবং সিজদা থেকে উঠার সময় হাটুর পূর্বে হাত জমিন থেকে উঠাতে দেখেছি। (সুনানে আবু দাউদ ১/১২২)
অবশ্য বৃদ্ধ বা মাজুর যাদের এভাবে সিজদা করতে কষ্ট হয় তারা চাইলে জমিনে আগে হাত রাখতে পারবেন।-জামে তিরমিযী ১/৩৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৭১৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৯১; শরহুল মুনইয়া ৩২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০২শেয়ার লিংক
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব জুমার নামাযে মেহরাবের কাছে দাঁড়ান আর ওয়াক্তিয়া নামাযগুলোতে মেহরাব ছেড়ে এক কাতার পিছনে দাঁড়ান। এখন আমার জানার বিষয় হল, ইমাম সাহেব ওয়াক্তিয়া নামাযে মেহরাব ছেড়ে এক কাতার পিছনে দাঁড়ানো জায়েয কি না। আর জায়েয হলেও তা অনুত্তম হবে কি না। জানিয়ে বাধিত করবেন।
ইমাম সাহেবের জন্য মেহরাবে দাঁড়ানো সুন্নত। বিনা ওজরে মেহরাব বরাবর পিছনে কাতারের ঠিক মাঝখানে দাড়ালে অনুত্তম হবে।
-রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২১১; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ৩০/৩৬০শেয়ার লিংক
আমি তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত আঙ্গুল মিলানো অবস্থায় কান পর্যন্ত উঠাই। কিন্তু আমাকে একজন বললেন, তাকবীরে তাহরীমার সময় আঙ্গুল স্বাভাবিকভাবে ফাঁকা রাখতে হয়। তার কথা কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানোর সময় হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক নিয়মে ফাঁকা রাখা সুন্নত। এ সময় আঙ্গুল মিলিয়ে রাখার বিধান নেই।
-মাবসূত ১/১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৫; শরহুল মুনইয়াহ ৩০০শেয়ার লিংক
আমি একটি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ব্যবসায়িক কাজে আমাকে প্রায় রমযানেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সফর করতে হয়। সফর অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক হলেও সফর তো সফরই। তদুপরি ক্ষুধা-তৃষ্ণাসহ শারীরিক দুর্বলতা জনিত কারণে সফর আরো কষ্টকর হয়ে উঠে। এ রমযানেও সফর করতে হয়েছে। প্রশ্ন হল, দিনের শুরুতে যেহেতু আমি মুকীম, তাই আমি রোযা রাখি। এখন সফরে বের হওয়ার পর সফরের ওজরে আমি রোযা ভাঙ্গতে পারব কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
মুকীম অবস্থায় রোযা শুরু করার পর সফরে বের হয়ে সাধারণ কষ্টের কারণে রোয ভাঙ্গা জায়েয নয়। তবে কখনো রোযা রাখা যদি অস্বাভাবিক কষ্টকর হয়ে যায় এবং পানাহার না করলে অসুস্থ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে তখন রোযা ভাঙ্গা জায়েয। এ হুকুমটি সকল রোযাদারের জন্যই প্রযোজ্য। বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, যখন রমযান মাসে কোনো ব্যক্তি রোযা রাখে, অতপর সফরের ইচ্ছায় বাহির হয় তবে সে যেন ওই দিন রোযা না ভাঙ্গে। অবশ্য তার যদি অধিক পিপাসিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা হয় তাহলে রোযা ভাঙ্গবে এবং পরবর্তীতে এর কাযা করে নিবে।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/২৭০, হাদীস : ৭৭৬৬; উমদাতুল কারী ১১/৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৩১; ফাতহুল কাদীর ২/২৮৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৫শেয়ার লিংক
যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কারা যাকাত পাবে না। জানালে কৃতজ্ঞ হব।
যাকাতদাতার সরাসরি উর্ধ্বতন যেমন-পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি উপরের দিকে ও অধস্তন যেমন-পুত্র-কন্যা, পৌত্র-পৌত্রী, দোহিত্র-দোহিত্রী, এভাবে নীচের দিকের কেউ যাকাত নিতে পারবে না। এবং স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবে না। এ ছাড়া অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন যেমন, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, মামা-মামি, খালা-খালু, ফুফা-ফুফু ইত্যাদি যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত দরিদ্র হলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে।
-সুনানে বায়হাকী ৭/২৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২০৬-২০৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪২৬শেয়ার লিংক
একজন ব্যক্তির উপর হজ্ব ফরয হয়নি। কিন্তু তিনি যদি হাদিয়ার টাকা দিয়ে হজ্ব করেন তাহলে তার ফরয হজ্ব আদায় হবে কি? পরবর্তীতে তিনি বদলি হজ্ব করতে পারবেন কি না? একই সময়ে অর্থাৎ একই সফরে ফরয হজ্ব এবং বদলি হজ্ব করা যায় কি না? আবার একই সফরে নফল হজ্ব ও বদলি হজ্ব করা যায় কি না?
সুনির্দিষ্টভাবে নিজের নফল হজ্ব বা অন্য কারো বদলি হজ্বের নিয়ত না করলে হাদিয়ার টাকা দিয়ে হজ্ব করলেও তা দ্বারা নিজের ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। সুতরাং ঐ ব্যক্তি পরবর্তীতে হজ্ব আদায়ে সামর্থবান হলেও তার উপর দ্বিতীয়বার হজ্ব করা ফরয হবে না। আর এই ব্যক্তি পরবর্তীতে বদলি হজ্বও করতে পারবে।-মানাসিক ৬২; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৭৫
এক বছরে এক ব্যক্তি কেবল একটি হজ্ব আদায় করতে পারে। তাই কেউ যদি নিজের ফরয বা নফল হজ্ব আদায়ের নিয়ত করে তাহলে ঐ বছর সে অন্য কারো পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব করতে পারবে না। এমনিভাবে কারো পক্ষ থেকে বদলি হজ্ব আদায় করলে তা বদলিই হবে। হজ্বকারী সওয়াবের ভাগী হবে বটে, কিন্তু ঐ হজ্ব দ্বারা নিজের ফরয বা নফল হজ্ব আদায় হবে না।
-মানাসিক ৪৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০২; রদ্দুল মুহতার ২/৬০১শেয়ার লিংক
আমি এ বছর হজ্ব পালনের ইচ্ছা করেছি। সহীহ তরীকায় হজ্ব পালন করার জন্য হজ্ব সংক্রান্ত সহীহ মাসায়েল জানতে আগ্রহী। তাই নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
ক) ৮ যিলহজ্ব মক্কা মুকাররমা থেকে মিনায় কখন গমন করা উত্তম?
খ) ৮ যিলহজ্ব যোহর থেকে ৯ যিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় আদায় করার শরয়ী বিধান কী?
গ) ৮ যিলহজ্ব যোহর থেকে ৯ যিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত এক নাগাড়ে মিনায় অবস্থান করা ও ৮ যিলহজ্ব মিনায় শুধু রাত যাপন করার শরয়ী বিধান কী?
ক) ৮ যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর মিনায় রওয়ানা করা মুস্তাহাব। তাই ৮ যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পূর্বে কিংবা ৭ যিলহজ্ব মিনায় চলে যাওয়া অনুত্তম। অবশ্য মুআল্লিমের পক্ষ থেকে নিতে বাধ্য করলে তখন যাওয়া দোষণীয় হবে না।-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪০২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩৫; আলবাহরুল আমীক ৩/১৪০৭
খ) ৮ যিলহজ্ব যোহর থেকে ৯ যিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় আদায় করা সুন্নত। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত জাবের রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ যিলহজ্ব মিনায় গমন করেছেন এবং সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর নামায পড়েছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৭৮, হাদীস : ১৪৭৫৫; সহীহ মুসলিম ১/৩৯৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. বলেন, সুন্নত হল ইমাম যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর মিনায় পড়বেন। এরপর মিনা হতে আরাফায় রওয়ানা করবেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৭৯, হাদীস : ১৪৭৬০; মানাসিক ১০৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৪৬; রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩)
গ) ৮ যিলহজ্ব দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। আর এই দিনে যোহর থেকে ৯ তারিখ সকাল পর্যন্ত পুরো সময় এক নাগাড়ে সেখানে অবস্থান করা মুস্তাহাব।-গুনইয়াতুন নাসিক ১৪৬; রদ্দুল মুহতার ২/৫০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯৩; আততাজরীদ ৪/১৯৫৭; আলইখতিয়ার ১/১৬০
শেয়ার লিংক
জনৈক ব্যক্তি হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেছে। বন্ধু-বান্ধবদের জানানোর সুযোগ পায়নি। একদিন সে তার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল পথিমধ্যে তার এক বন্ধু তাকে বলল, তোমার সাথে এই মেয়েটি কে? সে তখন কৌশলগতভাবে বলল, সে আমার বোন। আমার প্রশ্ন হল, উল্লেখিত অবস্থায় কি তার স্ত্রী হারাম হয়ে গেছে? যদি হারাম হয়ে থাকে তাহলে করণীয় কী?
স্ত্রীকে বোন বলার কারণে সে স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যায়নি। তবে বোন বলার কারণে দুটি গুনাহ হয়েছে : ১. স্ত্রীকে বোন বলা, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। ২. মিথ্যা বলা, যা হারাম কাজ। সুতরাং লোকটিকে তাওবা করে নিতে হবে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২১০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭০; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৮; ফাতহুল কাদীর ৪/৯১; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৫৩শেয়ার লিংক
আমি কিছুদিন পূর্বে একটি দোকান থেকে ২০০/- টাকা মূল্যে একটি দেয়াল ঘড়ি ক্রয় করি এবং তা বাসায় নিয়ে যাই। একদিন পর ঐ দোকানদার ঘড়ির মূল্য বাবদ আরো ১০০/- টাকা দাবি করল। সে আমাকে ম্যামো দেখিয়ে বলল, এটা ক্রয় করতেই ২৭০/-টাকা খরচ পড়েছে। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আরো ১০০/- টাকা দেওয়া আমার জন্য জরুরি কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি দোকানদারকে অতিরিক্ত ১০০/- টাকা দিতে বাধ্য নন। তবে বেচা-কেনার ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ ভুল বা অসাবধানতাবশত কিছু বলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে শরীয়তের শিক্ষা হল অন্য পক্ষ যেন তাকে এ বিষয়ে ছাড় দেয়। তাই বিক্রেতার কথা যদি সত্য হয় তাহলে আপনার নৈতিক দায়িত্ব হবে তাকে ন্যায্য মূল্য দিয়ে দেওয়া। যাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩২৮২; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৩৫৬; হেদায়া ৩/২০শেয়ার লিংক
আমি যায়েদের সাথে ধান বিক্রির জন্য এ মর্মে অগ্রিম চুক্তি করতে চাচ্ছি যে, সে আমাকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিবে আর পাঁচ দিন পর আমি তাকে দশ মণ নির্দিষ্ট প্রকার ধান দিব। জানার বিষয় হল, উক্ত সময়ের জন্য অগ্রিম খরিদ লেনদেন করা বৈধ হবে কি?
হ্যাঁ, এত অল্প সময়ের জন্যও কারবারটি জায়েয হবে। কারণ প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বাইয়ে সালাম (অগ্রিম খরিদ) চুক্তি। আর বাইয়ে সালাম চুক্তি স্বল্প মেয়াদের জন্যও জায়েয।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৪৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/৪; আলমাজমূ ১২/১৮৮শেয়ার লিংক
এক লোক আমার নিকট একটি মোবাইল বিক্রি করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি জানি, এটা সে চুরি করে এনেছে। তা জানা সত্ত্বেও আমার জন্য ঐ মোবাইল ক্রয় করা বৈধ হবে কি?
বিক্রেতা মোবাইলটি চুরি করে এনেছে একথা জানা থাকলে আপনার জন্য তা ক্রয় করা জায়েয হবে না। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনেশুনে চুরিকৃত বস্ত্ত ক্রয় করল সে চুরির অপরাধে শরিক হয়ে গেল। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১১/৩৩৭)
বিখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সিরীন রাহ. আবীদা আসসালমানী রাহ.কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি চুরিকৃত বস্ত্ত ক্রয় করতে পারব, অথচ আমি জানি এটা চুরিকৃত বস্ত্ত? তিনি বললেন, না, তুমি তা ক্রয় করতে পার না। (প্রাগুক্ত)
-শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬২; ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৯/৩২১; ইতরে হেদায়া ৬০শেয়ার লিংক
আমাদের এলাকায় ব্যাপক রেওয়াজ আছে যে, বিত্তবান লোকেরা দরিদ্র শ্রেণীর লোকদেরকে গরু-ছাগল পোষার জন্য ক্রয় করে দেয়। দরিদ্র লোকেরা গরু-ছাগল পালে আর বছর দেড়েক পর তা বিক্রি করে। বিক্রিলব্ধ টাকা থেকে ক্রয়মূল্য বাদ দিয়ে লাভটুকু উভয়ে সমানভাবে ভাগ করে নেয়। প্রশ্ন হল, এ ধরনের চুক্তি করা সহীহ কি না। যদি সহীহ না হয় তাহলে এ ধরনের কারবার করার কোনো সহীহ পন্থা আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
গরু-ছাগল পালনের প্রশ্নোল্লেখিত পদ্ধতিটি শরীয়তের ইজারা-নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে সহীহ তরীকায় চুক্তি করতে চাইলে নিম্নের পন্থাটি অবলম্বন করা যেতে পারে। গরুর মালিক গরু পালনকারীর সঙ্গে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে চুক্তি করবে। গরুতে অংশিদারিত্বের চুক্তি করবে না। অর্থাৎ গরুর পূর্ণ মালিকানা গরুর মালিকেরই থাকবে। গরুর সব ধরনের খরচও তাকে বহন করতে হবে। গরু বিক্রি করা হলে এর বিক্রিলব্ধ পুরো টাকা সেই পাবে। এতে গরু পালনকারীর কোনো অংশ থাকবে না। সে গরুর দেখাশুনা ও লালন-পালনের জন্য শুধু নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৩৪৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৫; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৫৪২শেয়ার লিংক
এক লোক একটি হাঙ্গেরি মোবাইল সেট ক্রয়ের উদ্দেশ্যে এক মোবাইল দোকানদারকে বলল, আমাকে একটি হাঙ্গেরি নকিয়া মোবাইল সেট দিন। দোকানদার তাকে হাঙ্গেরি নকিয়া সেটের বদলে একটি চায়না নকিয়া সেট দিল এবং তার থেকে হাঙ্গেরি নকিয়া সেটের দাম রাখল। লোকটি বাসায় গিয়ে দেখল যে, এটা হাঙ্গেরি নকিয়া সেট নয়; বরং চায়না নকিয়া সেট। এখন আমার জানার বিষয় হল, ঐ ব্যক্তি মোবাইল সেটটি ফেরত দিতে পারবে কি না। আর না পারলে অতিরিক্ত মূল্য ফেরত নিতে পারবে কি না। জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু বিক্রেতা ঐ ব্যক্তিকে হাঙ্গেরি নকিয়া সেটের পরিবর্তে চায়না সেট দিয়েছে তাই তার জন্য ঐ সেটটি ফেরত দেওয়ার অধিকার রয়েছে। সুতরাং ঐ ব্যক্তি সেটটি ফেরত দিতে চাইলে দোকানদার হয়ত তাকে সেটার পরিবর্তে হাঙ্গেরী সেট দিবে। কিংবা ক্রেতা যদি চায়না সেটটিই ন্যায্য মূল্যে নিজের কাছে রেখে দিতে চায় এবং বিক্রেতাও তাতে সম্মত হয় সেক্ষেত্রে বিক্রেতা অতিরিক্ত মূল্য ক্রেতাকে ফেরত দিয়ে দিবে।
-ফাতহুল কাদীর ৫/৫৩০; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/৫৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৩২০; শরহুল মাজাল্লা ২/২৫৩শেয়ার লিংক
জনৈক কিষাণ এক মাড়াইকলের মালিককে বলল যে, তুমি আমার এই ধানগুলো মাড়িয়ে দিবে। তোমাকে মাড়াইকৃত ধান থেকে এক মণ ধান দিব। জানার বিষয় হল, এভাবে কারবার সহীহ হবে কি না। আর যদি সহীহ না হয় তাহলে এ কারবার করার কোনো সহীহ পদ্ধতি আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাড়াইকৃত ধান থেকেই পারিশ্রমিক দেওয়ার চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কারণ এভাবে মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে হাদীস শরীফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদীসে গম পিষার বিনিময়ে পিষণকারীকে ঐ আটা থেকে এক কাফীয প্রদানের শর্ত করা থেকে বারণ করেছেন। (সুনানে বায়হাকী ৫/৩৩৯; শরহু মুশকিলুল আছার ২/১৮৬
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. কোনো তাতীকে কাপড় বুনার জন্য এ শর্তে সুতা দেওয়া অপছন্দ করতেন যে, সে এর দ্বারা কাপড় বুনে তৈরি কাপড়ের এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ নিবে (আর বাকিটা মালিক নিবে)। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১১/২০০, হাদীস : ২১৯৭৫)
এক্ষেত্রে সহীহ তরীকায় কারবার করতে চাইলে মাড়াইকৃত ধান থেকেই দিতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না; বরং নির্ধারিত মানের নির্দিষ্ট ধান দেওয়ার চুক্তি করবে। এরপর ধানের মালিক যে কোনো ধান দিতে পারবে। এমনকি শর্ত অনুযায়ী হলে মাড়াইকৃত ধান থেকেও তা দিতে পারবে।
-সুনানে দারাকুতনী ৩/৪৭, হাদীস : ১৯৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৭; মাবসূত ১৬/৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/২৬, ১১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৩শেয়ার লিংক
আমার একটি ইলেক্ট্রনিক্স দোকান আছে। তাতে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির সাথে বিক্রি করি। এখন জানার বিষয় হল, এভাবে ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টির শর্তে বিক্রি করা জায়েয হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির শর্তে ক্রয়-বিক্রয় করা এবং এর দ্বারা উপকৃত হওয়া উভয়টি জায়েয। এটি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি সহায়ক শর্ত।
-আদ্দুররুল মুখতার ৫/৮৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৩৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৮০; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৬৩৫শেয়ার লিংক
আমার একটি ইলেক্ট্রনিক্স দোকান আছে। তাতে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির সাথে বিক্রি করি। এখন জানার বিষয় হল, এভাবে ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টির শর্তে বিক্রি করা জায়েয হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ওয়ারেন্টি ও গ্যারান্টির শর্তে ক্রয়-বিক্রয় করা এবং এর দ্বারা উপকৃত হওয়া উভয়টি জায়েয। এটি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য একটি সহায়ক শর্ত।
-আদ্দুররুল মুখতার ৫/৮৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৩৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৮০; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৬৩৫শেয়ার লিংক
আমি দুই লক্ষ টাকা দিয়ে কিছু জায়গা ক্রয় করেছি। এক লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছি। আর অবশিষ্ট এক লক্ষ টাকা এক বছর পর দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। ছয় মাস পর বিক্রেতার টাকার প্রয়োজন হলে সে আমাকে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে বলে। আমি বললাম, যদি বিশ হাজার টাকা কম নেন তাহলে অবশিষ্ট টাকা এখনই পরিশোধ করে দিব। নতুবা এক বছর পরই টাকা নিতে হবে। লোকটি আমার কথায় রাজি হয়ে গেল। জানার বিষয় হল, আমার জন্য এ বিশ হাজার টাকা কম দেওয়া জায়েয হবে কি?
না, এভাবে সময়ের আগে দেওয়ার শর্তে নির্ধারিত মূল্য থেকে কম দেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না। হযরত কায়েস রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.কে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমরা ব্যবসার পণ্য নিয়ে বসরা ও শামে যাই। এগুলো আমরা বাকিতে বিক্রি করি। অতপর আমরা সেখান থেকে চলে আসার সময় হলে ক্রেতারা বলে, বিক্রিত মূল্য থেকে কিছু টাকা কম নিন তাহলে অবশিষ্ট টাকা আমরা এখনই আদায় করে দিব। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. তিনবার আমার বাহু চেপে ধরে মানুষকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখ, এই ব্যক্তি আমাকে সুদ গ্রহণের ফতোয়া দিতে আদেশ করছে।
তখন আমি বললাম, না। আমি তো এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে শরঈ হুকুম জানতে চাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, না। এ ধরনের কারবার বৈধ হবে না।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৪৩৬৮; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৭; হেদায়া-ফাতহুল কাদীর ৭/৩৯৬; আলইসতিযকার ৫/৫০০; আলমুগনী ৭/২১; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/২৫শেয়ার লিংক
আমি একটি বিষয়ে মান্নত করেছিলাম যে, অমুক বিষয়টি সমাধা হলে তিনদিন রোযা রাখব। জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমাকে ধারাবাহিকভাবে তিন দিন রোযা রাখতে হবে নাকি ভিন্ন ভিন্ন করে রাখলেও চলবে। উল্লেখ্য, মান্নতের সময় ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখার নিয়ত ছিল না।
মান্নতের সময় যেহেতু ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখার নিয়ত ছিল না তাই ভিন্ন ভিন্ন করেও রাখতে পারবেন। এতে মান্নত আদায় হয়ে যাবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৯শেয়ার লিংক
‘মুমিনের নিয়ত তার আমলে চেয়ে শ্রেয়’ এটা কি হাদীস? হাদীস হলে হুকুমসহ জানাবেন।
‘মুমিনের নিয়ত তার আমল অপেক্ষা শ্রেয়’-এটি জয়ীফ সনদে বর্ণিত একটি হাদীস। ইমাম বায়হাকী রাহ. হাদীসটিকে জয়ীফ বলেছেন। তবে ইমাম সাখাভী রাহ. এর সপক্ষে আরো হাদীস পেশ করেছেন, যদ্বারা তা ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়।
-মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৩০১; আলমাকাসিদুল হাসানাহ পৃ. ৭০১শেয়ার লিংক
তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ও দুররে মানুুসুরে একটি হাদীস পেয়েছি। তা হল, ‘যে ব্যক্তি ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ উভয় কিতাবে বলা হয়েছে যে, ইমাম নাসায়ী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমি নাসায়ী শরীফে হাদীসটি খুঁজে পাইনি। মেহেরবানী করে জানাবেন যে, হাদীসটি নাসায়ী শরীফের কোথায় আছে। আর যদি নাসায়ী শরীফে না থাকে তাহলে হাদীসের কোন কিতাবে আছে আর হাদীসটির হুকুম কী?
উক্ত হাদীসটি ইমাম নাসায়ী রাহ. তাঁর ‘সুনানে কুবরা’ তে ‘আমালুল ইয়াউমি ওয়াললাইলা’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। হাদীস নং ৯৯২৮। আর দরসে নেযামীতে পঠিত নাসায়ী শরীফ নামে যে প্রসিদ্ধ কিতাব রয়েছে তা সুনানে কুবরা থেকে বাছাইকৃত সংকলন। এর নাম ‘আলমুজতাবা’। এই কিতাবে ওই হাদীসটি নেই। হাদীসটির একাধিক সনদসহ আলমুজামুল কাবীর, তবারানী (হাদীস : ৭৫৩২) ও আলমুজামুল আওসাত, তবারানী (হাদীস : ৮০৬৪) উল্লেখ আছে।
ইমাম মুনযিরী রাহ. হাদীসটির হুকুম সম্পর্কে বলেন, ‘ইমাম নাসায়ী রাহ. এবং তবারানী রাহ. একাধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি সনদ সহীহ। (আততারগীব ওয়াততারহীব হাদীস : ২৩৭৬)
মাজমাউয যাওয়াইদে একটি সনদকে ‘জাইয়েদ’ বলা হয়েছে। (মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১২৮)
শেয়ার লিংক
রবিউল আওয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, যিলকদ-এই মাসগুলোতে বিশেষ কোনো রোযা-নামাযের কথা কুরআন-হাদীসে আছে কি না?
প্রশ্নোক্ত মাসগুলোতে বিশেষ কোনো নামায বা রোযার কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তবে যিলকদ মাস যেহেতু আশহুরে হুরূম তথা চার সম্মানিত মাসের অন্যতম তাই এ মাসে নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা আশহুরে হুরূমে নফল রোযা রাখার কথা হাদীসে রয়েছে।
একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, তুমি আশহুরে হুরূমে রোযা রাখ।-লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ২৮৫, ২৮৬; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৪২৫; বাযলুল মাজহূদ ১১/২৯০; আউনুল মাবুদ ৭/৫৮; নায়লুল আওতার ৪/৩১৮; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৪১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৫; আলফাযাইলু ওয়াল আহকাম লিশশুহূরি ওয়াল আইয়াম, আল্লামা আবদুল করীম গুমথালভী পৃ. ২০শেয়ার লিংক