আমাদের মা এবং তিনভাই দুবোন রেখে মুহতারাম আববা পরজগতে পাড়ি জমান। তাঁর ইন্তিকালের পর বড়ভাই ও আমি আর্থিক সংকটাপন্ন সংসারের হাল ধরি। এক পর্যায়ে বড় ভাই বিয়ে করেন এবং কিছুদিন পর তিনি ভাবীকে নিয়ে সাংসারিকভাবে আলাদা হয়ে যান। তবে সহায়-সম্পত্তি অবণ্টিত থাকে অদ্যাবধি। তাই আলাদা হওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব একা আমার ওপর এসে পড়ে; মাঠে কাজ কর্মের মাধ্যমে ছোট-ভাই বোনের লেখাপড়ার ব্যয়-ভারসহ সংসার চালাতে থাকি। এভাবে সংসার চলছে না বিধায় আলাদা হওয়া বড়ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করি যে, ভাই! আপনি রাজী হলে কিছু পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে সৌদী গেলে হয়ত ভাইবোনের লেখাপড়াসহ সংসার ভালভাবে চলবে। আর যথাসম্ভব আপনাকে সহযোগিতা করা হবে। ভাই এতে রাজী হয়ে জমি বিক্রির সময় রেজিস্ট্রীতে অংশ গ্রহণ করে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, বিদেশ গিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও সুবিধে করতে পারিনি; বরং জেলে গিয়ে জেল খেটে চলে আসতে হয়েছে। দেশে এসে পুনরায় মাঠে কাজ-কর্মের মাধ্যমে সংসার চালাতে থাকি, এক পর্যায়ে বিয়ে করি। কিছুদিন পর ব্যক্তিগতভাবে করজ করে শ্বশুরালয়ের সহযোগিতায় আবার বিদেশ যাই। এবার প্রাথমিক অবস্থার তুলনায় কিছু ভাল থাকায় ছোট ভাই বোনের লেখাপড়া করানো, আংশিক করজ পরিশোধ করাসহ সংসার পরিচালনা করি। পাশাপাশি বড়ভাইকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করতে থাকি এবং বিবাহিত অসহায় বোনদের সাহায্য করি। কিছুদিন পর পুনরায় জেলে গিয়ে অবশেষে দেশে চল আসতে হয়। বর্তমানে আমি দেশে সম্পূর্ণ বেকার। বড় ভাইসহ আমাদের আর্থিক অবস্থা বরাবরের মত এখনও সংকটাপন্ন। বড়ভাই বর্তমানে পূর্বেকার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রিলব্ধ টাকা চাচ্ছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে আমার ভাই সে জমি বিক্রি লব্ধ টাকা থেকে কোন ভাগ পাবেন কিনা? যদি পেয়ে থাকেন তাহলে বর্তমান মূল্যে নাকি যখন বিক্রি করেছি সে মূল্য হিসেবে? এ ব্যাপারে শরীয়তের ফয়সালা জানাতে আপনার সুমর্জি কামনা করছি।
উল্লেখ্য যে, (১) আমার এবং বড়ভাইয়ের আর্থিক অবস্থা বরাবর সংকটাপন্ন।
(২) বড় ভাই আলাদা হওয়ার পর ছোটভাই বোনের লেখাপড়া পরিচালনাসহ সাংসারিক ব্যয়ভার আমি একাই সম্পূর্ণ বহন করেছি এবং সংসারের উন্নতির জন্যই এবং ভাইকে সহযোগিতার মানসেই জমি বিক্রি করেছি।
(৩) সে সময় আমি অবিবাহিত ছিলাম।
(৪) বিবাহিত বোনদেরকে আমি একাই সহযোগিতা করেছি।
(৫) জমি বিক্রিলব্ধ টাকা মোটেই আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করিনি এবং বিদেশ গিয়েও কিছুই করতে পারিনি।
প্রশ্নের বিবরণ যদি সত্য হয় তাহলে আপনি যেহেতু পরিবারের খরচ নির্বাহের উদ্দেশ্যে পরিবারের পক্ষ থেকেই বিদেশ গেছেন তাই এর পিছনে ব্যয় হওয়া টাকা পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে গণ্য হবে।
অতএব বিদেশে যাওয়ার জন্য বিক্রয়কৃত জমির মূল্যের অংশ এখন কারো জন্য দাবী করা বৈধ নয় এবং সে দাবী পূরণ করাও আপনার ওপর জরুরি নয়।