যিলহজ্ব ১৪৩৪   ||   অক্টোবর ২০১৩

পাহাড়ের বুকে আলো

নূরুল্লাহ হুসাইন

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে। আকাশের মেঘ যেখানে মাটির খুব কাছাকাছি। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সবুজ গালিচায় মোড়া। ফুল ফল আর হাজারো বৃক্ষে ছাওয়া সব পাহাড়, পাহাড়ের বুক চিরে এঁকে বেঁকে চলে গেছে গাড়ি চলার পথ। উঁচু নিচু, চড়াই উৎড়াই।

পথের পাশেই ফুটে আছে রঙ বেরঙের ফুল। কোথাও ঘন জঙ্গল অথবা

ফল বাগান। কলা, আনারস, ইক্ষু আবার কোথাও বা আম বাগান, ফলে ভরপুর! হঠাৎ হঠাৎ এক দুইটা ঘর-বাড়ি নজরে পড়ে। কখনো দেখা যায় দল বেধে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, এদের বেশির ভাগেরই চেহারা সুরত দেখলে মনে হবে এটা বাংলাদেশ নয়, চীন কিংবা জাপানে আছি আমরা। এরাই মূলত পাহাড়ি উপজাতি বা আদিবাসী।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান। তিনটিরই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। আমাদের এবারের সফর ছিল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে।

খাগড়াছড়ি হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলার মাঝে সবচেয়ে সমতল। সৈŠন্দর্যের রাজা বলা যায়। খাগড়াছড়ির বিখ্যাত একটি পাহাড় হচ্ছে আলুটিলা, যার উপর থেকে দূরের শহরটাকে একদম ছবির মত মনে হয়।

আশে পাশে আর্মি ও বিজিবির অনেক ক্যাম্প দেখলাম। মূলত পাহাড়ে বাঙালিদের রক্ষার জন্যই এরা নিয়োজিত। কারণ উপজাতিরা বাঙালিদের তেমন একটা পছন্দ করে না। বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের। এর প্রমাণ দেখলাম খাগড়াছড়ি শহরের একটি এপার্টমেন্ট এলাকায়। একেবারে শহরে প্রবেশের গেইটে বিশাল একটি বৌদ্ধ বিহার, বৌদ্ধ মূর্তি। জানা গেল, এই বৌদ্ধ বিহারের জায়গাটি আগে ছিল এই এলাকার তাবলিগের মারকাযের জায়গা, পরে একরকম জোর করেই পাহাড়ি বৌদ্ধরা জায়গাটি ছিনিয়ে নিয়ে এখানে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেছে।

ঘটনাটি শুনে খুব অবাক হলাম। সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ল মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের কথা। ওখানকার  উগ্র বৌদ্ধদের জুলুম সহ্য করেতারা কী কষ্টেই না আছেন। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। দোকান-পাট হারিয়েছেন। হাজার হাজার মুসলমান এই কদিন আগে জীবনও হারিয়েছেন।

পুরা খাগড়াছড়ি সদরে একটিমাত্র দ্বীনী মাদরাসা। দারুল উলূম তালিমুল ইসলাম মাদরাসা। অথচ লোকসংখ্যা সেখানে কম নয়। স্থানীয় মুসলমানদের সাথে কথাবার্তা হল। তারা চান দ্বীনের খেদমত এসব অঞ্চলে বড় আকারে হোক। অনেকেই নিজেদের জমি জমা সব দিয়ে দিতে প্রস্ত্তত। শুধু প্রয়োজন একদল জানবাজ আহলে দ্বীন ও কিছু উদার আহলে খায়ের।

রাঙামাটিতে আমাদের গন্তব্য ছিল ফকিরপুর নামক একটি গ্রাম।

বেশ কয়েকটি ছোট বড় পাহাড়, টিলা আর প্রচুর জ]লাধার ঘেরা একটি গ্রাম। আকাশটা দিনে ঝলমলে আর রাতে তারাভরা। দিনে ফুল আর পাখির গান, রাতে ঝিঝির ডাক। বিদ্যুৎ নেই। আধুনিক কোলাহলপূর্ণ শহর থেকে অনেক দূরে। একেক পাহাড়ে একেকটা ঘর, সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা পরিবেশ।

কিন্তু এত এত সৌন্দর্যের মাঝেও আছে কিছু অসুন্দর, আছে কিছু কষ্ট ও বেদনা। বড় বড় শহর থেকে অনেক দূরে এই সব অজপাড়াগাঁয়ের মানুষগুলো আক্ষরিক অর্থেই একেবারেই সাধারণ, সহজ সরল।

এদের এই সরলতা পুঁজি করেই অবাধে মানুষকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে কাদিয়ানিরা। লোভ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে এই সরল মুসলমানদের বিধর্মী বানাচ্ছে কাদিয়ানী মিশনারীরা। সঠিক শিক্ষা বঞ্চিত এই মানুষগুলোকে সহজেই তারা ধর্মান্তরিত করে ফেলছে। গ্রামের পরে গ্রাম তারা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আশার ব্যাপার হচ্ছে খুব অল্প হলেও কাজ শুরু হয়েছে। এবং এর কিছু ফলাফল আমরা দেখে এসেছি। কাজের ধরণ যদি আরো ব্যাপক করা হয়, এবং একটি জামাত যদি এর জন্য ফিদা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ এই শয়তানি স্রোত রোধ করা সম্ভব হবে।

এখানে মুসলিম শিশুদের জন্য ইসলামি কোনো পাঠশালা নেই। তাই বাধ্য হয়েই তাদেরকে যেতে হয় কাদিয়ানীদের পাঠশালায়।

আলহামদুলিল্লাহ! এই সফরটি আসলে সাধারণ কোনো সফর ছিল না, এটি ছিল আমাদের জন্য অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা-সফর। এ সফরের বাঁকে বাঁকে ছিল শিক্ষার নানা উপকরণ।

প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের মাঝেও যে ভয়াবহ কুৎসিত অসুন্দর থাকতে পারে তা এখানে না এলে এত ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারতাম না।

পরিশেষে আহলে হক্বের কাছে আবেদন, সময় ও সুযোগ হাতের নাগালে থাকতে থাকতেই একদল দাঈ-আলেম ও একদল মালদার আহলে খায়ের পার্বত্য অঞ্চলের এই জায়গাগুলোতে দ্বীনী খেদমতে শামিল হোন। তাহলেই পাহাড়ের বুকে প্রকৃত সত্যের আলো ফুটে ওঠবে। একই সঙ্গে এখানে যে দ্বীনের সঙ্গে জড়িত কিছু মানুষের মেহনত ব্যয় হচ্ছে তা-ও জানতে পারতাম না। 

 

 

advertisement