প্রফেসর হযরত মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান সাহেব-এর হজ্বের কিছু ঘটনা
কাবা ঘরের সামনে এক বৃদ্ধ
কাবা ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা। কাবার দিকে তাকিয়ে থাকা সওয়াবের কাজ। সময় থাকলে হাজ্বীরা এমনিতেই কাবার দিকে তাকিয়ে থাকেন। যারা কাবার আশেক, তাদের দৃষ্টি ভিজে যায়। রহমতের ঢল দেখা যায় না। এটা উপলব্ধির বিষয়। লোকটা কাবা দেখছে না। কেবল তাকিয়ে আছে। এওকি সম্ভব? সম্ভব। লোকটা চোখে দেখে না। অন্ধ। জন্মান্ধ না। কি এক এক্সিডেন্টে চোখ খারাপ হয়ে গেছে। কোন চিকিৎসাতেই আর ভাল হয়নি। দীর্ঘদেহী। ফর্সা চেহারা। মুখে সাদা লম্বা দাড়ি। বয়স ষাটের কম হবে না। চেহারায় একটা সতেজ ভাব। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির চেহারা এত ঝলমল করে না। দেখে বাংলাদেশী মনে হয়েও হয় না। মাতাফে তাওয়াফ শুরুর জায়গায় একটা দাগ টানা আছে। এ দাগ বরাবর হারাম শরীফের বারান্দায় একটা সবুজ বাতি আছে। এটা চবিবশ ঘণ্টা জ্বলছে। ঠিক তার নীচে বসে আছে লোকটা। সামনে মাতাফে নামার সিঁড়ি।
১৯৯৭ সাল। আবদুল্লাহর প্রথম হজ্ব। হযরতের সাথে এসেছে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সরকারী চাকুরি করে। বয়স ত্রিশ হয়নি এখনো। হজ্জে তামাত্তু করার নিয়ত। তাকে প্রথমে উমরা করতে হবে। একটু আগে তাওয়াফ শেষ করেছে। জমজমের পানি খেয়ে সবুজ বাতির নীচে এসে বসেছে বেশিক্ষণ হয়নি। হযরত তাকে এখানে বসে থাকতে বলেছেন। কাফেলায় মোট ঊনচল্লিশজন। কিছু মাজুর লোক আছেন। হযরত তাদেরকে সায়ী করানোর জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে গিয়েছেন। পাহাড় আর পাহাড় নেই।
এসি ঘরের মধ্যে পাহাড়ের মাথাটুকু বেরিয়ে আছে।
সবুজ বাতির নীচ থেকে সাফা পাহাড় দেখা যায় না। হযরত না আসা পর্যন্ত কাজ নেই। আবদুল্লাহ কাবার দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে পেছনে তাকাচ্ছে। হযরত আবার চলে আসেন কিনা। পেছনে তাকাতেই লোকটার দিকে দৃষ্টি গেল তার। লোকটা মনে হয় কাউকে খুঁজছেন। আবদুল্লাহর মায়া হল। বৃদ্ধ মানুষ। হারিয়ে গেছেন কিনা কে জানে। আবদুল্লাহ লোকটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
Are you searching anyone?
(আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?) ইংরেজীতে বলল। লোকটাকে দেশী মনে হচ্ছে না। অবাক করে দিয়ে লোকটা জবাব দিল, ‘আমি বাংলাদেশী। এখন ইংল্যান্ডে থাকি। সেখান থেকে হজ্ব করতে এসেছি। আমি চোখে দেখি না। আমি আমার সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলেছি।’
আবদুল্লাহ বিস্ময়ে তার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল। লোকটার চোখগুলো খোলা। সে চোখে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিস্ময়ের ঘোরেই আবার জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি তাওয়াফ করেছেন?’
‘জ্বি। তাওয়াফ করে নামায পড়েছি। নামায পড়ে আর সঙ্গীকে পাচ্ছি না।’
এর মধ্যে হযরত এসে হাজির। লোকটার সাথে কথা বলতে দেখে হযরত জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে তিনি?’ আবদুল্লাহ সব খুলে বলল। হযরত বললেন, ‘তুমি তার কাছে থাক। আমি আসছি।’
হযরত একটু পরেই এলেন। আবদুল্লাহকে আর কিছুই করতে হয়নি। হযরত তাকে সোজা সায়ী করাতে নিয়ে গেলেন। একটা হুইল চেয়ার ভাড়া করলেন। লোকটা টাকা দিতে চাইল। হযরত নিলেন না। নিজেই বিল দিলেন। সায়ী শেষ হল। হযরতের গ্রুপের সবার সায়ী এখনো শেষ হয়নি। হযরত লোকটাকে নিয়ে হারাম শরীফের বাইরে এলেন। মুআল্লিমরা সব হাজ্বীদের একটা কার্ড দেয়। কার্ডে নাম-ঠিকানা লেখা থাকে। লোকটার গলায় সেটা ঝুলানো আছে। হযরত এখন তাকে তার বাসায় পৌঁছে দেবেন।
হারাম শরীফের বাইরে অনেক রোদ। রাস্তার পিচ যেন গলে আছে। লোকটার পায়ে স্যান্ডেল নেই। হযরত নিজ পায়ের স্যান্ডেল তাকে দিলেন। কিছুতেই তিনি সেটা পরবেন না। হযরতের সঙ্গে এসব বিষয়ে পারা যায় না। লোকটা স্যান্ডেল পরল। তারপর হযরত নিজে হাতে ধরে প্রায় আধ ঘন্টা হেঁটে তার ঠিকানায় তাকে পৌঁছে দিলেন। আবদুল্লাহ সাথেই ছিল। তার সাক্ষী হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার
ছিল না।
মীনার তাঁবুতে আগুন
যিলহজ্ব মাসের আট তারিখ। হাজ্বীরা সব মীনায় এসে তাঁবুতে উঠেছে। হাজার হাজার তাঁবু। সাদা মেঘের মত শ্বেত-শুভ্র। এ শুভ্রতায় হঠাৎ করেই অন্ধকার ছেয়ে গেল। এত মানুষের মধ্যে কত রকম বিপদই হতে পারে। এজন্য প্রস্ত্ততিও কম ছিল না। সবকিছু ছাপিয়ে এক কঠিন বিপদ নেমে এল মীনায়। রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে তাঁবুতে আগুন লেগে গেল। তাঁবুর পর তাঁবু পুড়তে লাগল। তাঁবুগুলো ফায়ার প্রুফ না। এজন্য আগুন খুবই দ্রুত ছড়াচ্ছে। স্পেশাল হেলিকপ্টারে করে পানি দেয়া হচ্ছে। সাইরেন বাজিয়ে অনবরত ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি যাচ্ছে। ভারী বাতাসে পোড়া গন্ধ। কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যুর খবরে চারিদিকে কান্নার আওয়াজ। কত হাজ্বী শহীদ হলেন কে জানে! হযরতের তাঁবু থেকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে না। সকাল এগারটা বাজে। আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে।
বিপদে মানুষের বুদ্ধি-বিবেক কমে যায়। বিপদের ভয়াবহতা যত বাড়ে, ততই বিবেক নিস্তেজ হতে থাকে। চোখের সামনে মৃত্যু দেখলে একসময় হুঁশও থাকে না। তখন মরার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। মীনার তাঁবুতে আগুন লাগার পর থেকে মানুষ দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করছে। কে কোথায় যাচ্ছে, ঠিক নেই। মানুষের কান্নার শব্দ, চিৎকার আর ফায়ার সার্ভিসের লোকদের মাইকিংয়ে পুরো এলাকায় ভয়াবহ ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সত্তর হাজার তাঁবু ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে। হযরতের তাঁবু থেকে আগুন অনেক দূরে। তবে মুআল্লিমের লোকেরা আগুন ধরার আশংকায় সব তাঁবু খুলে ফেলতে শুরু করেছে। হযরতের তাঁবুও খুলে ফেলছে। হযরত সবাইকে বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমাদের তাঁবু পর্যন্ত আগুন আসবে না। মালামাল কিছু নেয়ার দরকার নেই। শুধু নিজে তাঁবু থেকে বাইরে বের হয়ে আসেন।’ অনেকে শুনল। বেশিরভাগ শুনল না। তারা সব লাগেজ নিয়ে তাঁবু ছাড়ল। মহিলাদের কাঁধেও ছিল বড় বড় লাগেজের বোঝা। সেগুলো টানতে টানতে তারা কোথায় যে সরে গেল, আর দেখা গেল না।
হযরত তাঁবু থেকে বেশি দূরে যাননি। তাঁবুর পাশেই প্রশস্ত রাস্তা। সেই রাস্তার পার ঘেঁষে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে ঘেরাও দেয়া হয়েছে। এ সীমানার ভেতর কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। অনেক মানুষের ভিড়। ভিড়ের কারণে হযরতকে পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে না। আবদুল্লাহ তার বাবা-মাকে নিয়ে তাবু থেকে বের হয়েছে। তারা তাঁবু থেকে আরও দূরে কোথাও সরে যেতে চাচ্ছেন। আবদুল্লাহ হযরতের কথা বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। আশেপাশে পরিচিত কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সবাই মনে হয় নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিয়েছেন। একটু খোঁজাখুঁজির পর দূর থেকে সে হযরতকে দেখল। চারিদিকে হট্টগোলের শব্দ। সৌদি সরকারের পুলিশ বাহিনী পুরো এলাকা পাহারা দিচ্ছে। অনবরত মাইকে এনাউন্সমেন্ট করে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। বাবা-মাকে নিরাপদে রেখে আবদুল্লাহ হযরতের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়াল। হযরত অনবরত কেঁদে চলেছেন। সশব্দে একটা দু’আ পড়ছেন। দু’আটা কুরআন শরীফের একটা আয়াত।
يا نار كونى بردا وسلاما على ابراهيم
‘হে আগুন! ইব্রাহীমের উপরে তুমি শান্তিদায়ক শীতল হয়ে যাও।’ যারা আগুনে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে হযরত এ দু’আ পড়ছেন। আর কাঁদছেন। আশেপাশে কে আছে ভ্রূক্ষেপ নেই।
এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। নিজের আপন ভাই আহত হলে আমরা কষ্ট পাই। অন্য মুসলমান ভাইয়ের কষ্ট দেখে সেরকম অনুভব করি না। আমরা এভাবেই বেড়ে উঠেছি। আমাদের সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম ধর্মের মানবিক আচরণের কিছুই শেখায় না। পরিবেশ -পরিস্থিতি এমন করে তৈরী হয়েছে যে, রিলিজিয়ান স্টাডির প্রয়োজন অনুভূত হয় না। সেটা ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য টাকা কামাই করার চিন্তাই মূল হয়ে উঠেছে। নামায পড়লে টাকা আসে না, এজন্য এটা বাদ। পর্দা করলে সেকেলে হতে হয়, এজন্য এগুলো থেকে সযতনে দূরে থাকে। ফ্রি মিক্সিংয়ে যুগে ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বলাই অপরাধ হয়ে গেছে। সেখানে অন্য মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কেমন করে গড়ে উঠবে? আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যতই বলুন না কেন, মানবতাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম - এটা আসলে ধর্মহীনতার শুরু। অধর্ম দিয়ে আর যাই হোক, সৎ চরিত্র গড়ে ওঠে না। যারা নিজেকে ভাল চরিত্রের অধিকারী বলে ভাবেন, আখিরাতের বিশ্বাস ছাড়া সেটাও অপূর্ণ। সুযোগ পেলেই তাতে অপরাধ জায়গা করে নেয়। তারপর ভালোর মুখোশ পরে সমাজপতি হয়ে বেঁচে থাকে। এরকম একটা সমাজে থেকে হযরতের অন্তঃকরণে অন্য মুসলমান ভাইয়ের প্রতি এত দরদ কীভাবে এল? অন্যের বিপদে নিজে কিছু করতে না পারার কষ্টে অবিরাম চোখের পানি ফেলছেন তিনি। এটা কীভাবে সম্ভব? আবদুল্লাহর ভাবনা কূল কিনারা পায় না। শক্ত করে হযরতের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেও দুআটা পড়ার চেষ্টা করে। একটু পর তার চোখেও পানি এসে যায়।
পথ হারানো হাজ্বী
ফজরের নামায শেষ হয়েছে একটু আগে। হারাম শরীফের বাইরে খোলা চত্ত্বর। সাদা মার্বেল পাথরের ফ্লোর। বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে পাথরগুলো। প্রচন্ড রোদেও ঠান্ডা থাকে। নামায শেষ হয়ে গেলে চত্ত্বরের অনেক জায়গা খালি পড়ে থাকে। হযরত এসময় একটু চা খেতে পছন্দ করেন। চা খাওয়ার জন্য এই খোলা চত্ত্বরেই জায়নামায বিছিয়ে বসে পড়েন। যারা পাশে থাকে তারাও এ সময়টা উপভোগ করেন।
চত্ত্বরের কাছেই হিলটন টাওয়ার। এ টাওয়ারের নীচ তলায় অনেকগুলো চায়ের দোকান। আবদুল্লাহ চা নিয়ে এসে দেখে হযরত শুয়ে আছেন। গভীর ঘুম। চোখ বন্ধ করলেই যিনি ঘুমাতে পারেন, তাকে ডাকা সহজ না। হযরতকে ডাকতে হয়নি। তিনি ঘুমিয়েছেন দশ মিনিটের জন্য। চা আনতে এর চেয়ে বেশি সময় লাগার কথা না। চা নিয়ে দাঁড়াতেই হযরত চোখ খুললেন। আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে বসলেন। যেন সারারাত ঘুমিয়ে উঠেছেন। আসলে তিনি গতকাল রাতে ঘুমাতেই পারেননি। সামান্য সময়ের জন্য শুয়েছিলেন। তারপর একটা স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আর শুয়ে থাকতে পারেননি। তখন অনেক রাত। এমনভাবে ঘর থেকে বের হলেন, কেউ টের পেল না। বাকী সময়টা বাইতুল্লাহয় কাটিয়ে ফজরের আগে আবার ঘরে ফিরেছেন। চা খেয়ে সবাইকে বাসার দিকে যেতে হবে। একটু ঘুমিয়ে হোটেলে এসে সকালের নাস্তা খেতে হবে। এক-দেড় ঘন্টা ঘুমের সুযোগ পাওয়া যাবে। আব্দুল্লাহর চোখও বন্ধ হয়ে আসছে।
সবাই বাসার দিকে চলে গেছে। হযরত আবদুল্লাহর হাত ধরে এগুচ্ছেন। এসময় একজন হাজ্বী সাহেবের সাথে দেখা হল। হাজ্বী সাহেব বৃদ্ধ মানুষ। বাংলাদেশী। বাসা হারিয়ে ফেলেছেন। যাকে কাছে পাচ্ছেন, তার কাছেই সাহায্য চাচ্ছেন। হযরতকে দেখে এগিয়ে এলেন। তার সমস্যার কথা বললেন। হযরত আর বাসায় ফিরলেন না। বৃদ্ধ হাজ্বী সাহেবকে নিয়ে রওনা হলেন। তাকে তার বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। আবদুল্লাহও হযরতের সাথে চলল।
মিসফালাহ বাজার ফেলে একটু সামনে এগুলেই ফ্লাইওভার। এর আশেপাশেই হাজ্বী সাহেবের মুআল্লিমের অফিস। হযরত সেদিকে যাচ্ছেন। যাবার পথে আরেকজন হাজ্বীকে পাওয়া গেল। তিনিও হারিয়ে গেছেন। হাঁটতে হাঁটতে তার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। বাসা হারিয়ে দেশে ফেরার আশাও মনেহয় ছেড়ে দিয়েছেন। হযরতকে দেখে কেঁদেকেটে অস্থির। হযরত এবার দুজনকে নিয়ে চলছেন।
সূর্য উঠেছে অনেক আগে। সকালের ঠন্ডা ভাবটা নেই। অনেকখানি পথ ইতিমধ্যে হাঁটা হয়ে গেছে। হযরত হাজ্বী সাহেবদের নিয়ে একটু বিশ্রাম করতে চাইলেন। রাস্তার পাশে আইল্যান্ডে অনেকে বসে আছে। পথ হারানো হাজ্বী সাহেবদেরকে নিয়ে হযরত সেখানে বসলেন। রাস্তায় তেমন কোন গাড়ি নেই। নামাযের শুরু আর শেষে এ রাস্তায় খুব ভিড় হয়। এজন্য সাধারণ গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। একটা পুলিশের গাড়ি বিকট শব্দ করে ভিড়ের মধ্যে এগুচ্ছে। আবদুল্লাহকে হযরত বললেন, ‘চল, হাজ্বীদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি।’ রাস্তার পাশেই দোকান। জুস আর স্যান্ডউইচ আনতে হবে। আবদুল্লাহ একাই যেতে চাচ্ছিল। কিন্তু হাজ্বী সাহেবদেরকে বসিয়ে রেখে হযরতও দোকানে ঢুকলেন।
জুস বানাতে সময় লাগে না। বানানোই থাকে। স্যান্ডউইচটা কেবল বানিয়ে দিতে হয়। খাবারগুলো নিতে পাঁচ-ছয় মিনিট লাগল। আব্দুল্লাহর হাতে খাবার। বাইরে বের হতেই হযরত খুব অবাক হলেন। হারানো হাজ্বী সাহেবরা নেই। তারা চলে গেছে। আশেপাশে তাকিয়েও তাদেরকে দেখা গেল না। আব্দুল্লাহ হাসি আর চেপে রাখতে পারেনি। হযরতও হেসে উঠলেন। এটা কী হল? পথ হারানো হাজ্বী আবার কোন পথে হারিয়ে গেল? আর কিছু তো করার নেই। আব্দুল্লাহকে নিয়ে হযরত বাসায় ফিরলেন। দুজনের চোখেই রাজ্যের ঘুম। রাজ্যের ঘুম মানে কী? যে ঘুমের জন্য রাজ্য ত্যাগ করা যায়! ষ